আমরা অনেককে দেখলেই বলি এনি আল্লাহর অলি। আসলে আল্লাহর অলি কে? আমরা কাকে বলবো তিনি আল্লাহর অলি। কুরআন হাদিসে কাদেরকে অলি বলা হয়েছে?

‘অলি’ শব্দটি আরবি। এর অর্থ অভিভাবক, মুরব্বি, বন্ধু। আরবি ভাষায় ‘আউলিয়া’ শব্দটি ‘অলি’র বহুবচন। শব্দগতভাবে কখনো কখনো অলি শব্দের অর্থ করা হয় শাসক, অভিভাবক বা কর্তা।

একাধিক হাদিসে অলিদের পরিচয় দেওয়া হয়েছে এভাবে। হজরত সাইদ ইবনে জুবাইর (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেছেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর অলি কারা?’ মহানবী (সা.) বলেছেন, যাদের দেখলে আল্লাহর কথা মনে হয়। (ইবনে মাজাহ, ইবনে কাসির)

অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কিছু লোক এমন আছে, যারা নবীও নয়, শহীদও নয়। কিন্তু কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে তাদের মর্যাদা দেখে নবী ও শহীদরা তাদের ওপর ঈর্ষা করবেন। মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! তারা কারা? জবাবে তিনি বলেন, তারা সেসব লোক, যারা কেবল আল্লাহর জন্য একে অন্যকে ভালোবাসে। তাদের মধ্যে নেই কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক, নেই কোনো ধনসম্পদের সম্পর্ক। (কেয়ামতের দিন) তাদের চেহারা হবে নুরানি (উজ্জ্বল)। তারা নুরের মিম্বরের ওপর থাকবে। যখন মানুষ ভয় পায়, তখন তারা ভয় পাবে না। যখন মানুষ দুঃখ পায়, তখন তারা দুঃখ পাবে না। তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) ওপরে একটি আয়াত পাঠ করেন। (আবু দাউদ ও তাফসিরে মুনির)

অলি সম্পর্কে কুরআনে এসেছে, আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, (তারাই আল্লাহর অলি) যারা ইমান আনে এবং তাকওয়া (পরহেজগারি) অবলম্বন করে। (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৬৩)

তাফসির: আগের আয়াতে আল্লাহর অলিদের বিষয়ে বলা হয়েছিল, তাদের কোনো ভয় নেই। তারা ব্যথিত হবেন না, চিন্তিতও হবেন না। তাদের কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়ের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা নেই। এটা আল্লাহর ঘোষণা। এটা আল্লাহর ওয়াদা। আল্লাহর ওয়াদা সত্য। আলোচ্য আয়াতে আল্লাহর অলিদের পরিচয় দেওয়া হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, আল্লাহর অলি তারাই, যারা খাঁটি ইমানদার। যারা ইমানের দাবি পূরণ করে। কাজকর্মে নিজেদের বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটায়। তাঁরা শরিয়তের বিধিনিষেধ মেনে চলে। তারা তাকওয়া ও খোদাভীতির গুণে গুণান্বিত। এই আয়াত থেকে জানা যায়, আল্লাহর খাঁটি ইমানদার বান্দারাই আল্লাহর অলি। এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, যারা ইমান আনে আল্লাহ তাদের অলি। তিনি তাদের অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে যান। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৫৭) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, তোমাদের অলি হলেন আল্লাহ, তার রাসুল ও মুমিনরা, যারা বিনয়াবনত হয়ে নামাজ আদায় করে ও জাকাত দেয়। (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৫৫)

অলির মর্যাদাঃ একটি হাদিসে এসেছে আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহপাক বলেছেন যে ব্যক্তি আমার অলীর সাথে শত্রুতা করে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করছি। আমার বান্দার প্রতি যা ফরয করেছি তা দ্বারাই সে আমার অধিক নৈকট্য লাভ করে। আমার বান্দা নফল কাজের মাধ্যমেও আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে। অবশেষে আমি তাকে ভালবেসে ফেলি। যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে, তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে এবং তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে চলাফেরা করে। সে আমার কাছে কিছু চাইলে, আমি তাকে তা দেই। সে যদি আমার নিকট আশ্রয় কামনা করে, তাহলে আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি যা করার ইচ্ছা করি, সে ব্যাপারে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগি না কেবল মুমিনের আত্মার ব্যাপার ছাড়া। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার মন্দকে অপছন্দ করি। (বুখারী: ৬৫০২)

উল্লিখিত আলোচনা থেকে জানা যায়, ইসলামী শরিয়তের পরিপূর্ণ অনুসরণ ছাড়া আল্লাহর অলি হওয়ার সুযোগ নেই। যেসব লোক পীর, ফকিরের বেশ ধারণ করে, অথচ তারা ইসলামের বিধিনিষেধ মেনে চলে না, তারা কিছুতেই আল্লাহর অলি হতে পারে না। তারা ইসলামের প্রতিনিধি নয়। তাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।

Top