হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন আল্লাহ তায়ালার সর্বপ্রথম সৃষ্টি। যখন আসমান-জমিন, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-নত্র, পাহাড়-পর্বত, সাতসমুদ্র, জ্বিন-ইনসান, কিছুই ছিল না। তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় হাবিব মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নূর মোবারক সৃষ্টি করেন এবং ঘোষণা করেন খাতামুন নাবিয়্যিন তথা শেষ নবী। তাই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন সৃষ্টিকুলের মূল। তিনিই হচ্ছেন সর্বপ্রথম নবী। আবার দুনিয়াতে আগমনের দিক থেকে তিনি হচ্ছেন সর্বশেষ নবী।
এ প্রসঙ্গে আল্লামা শেখ আব্দুল হক মোহাদ্দিসে দেহলভী রাদিয়াল্লাহু আনহু স্বীয় মাদারিজুন নবুয়ত কিতাবের ভূমিকায় সূরা হাদিদের আয়াত-
هو الاول والاخر والظاهر والباطن وهو بكل شئ عليم-
অর্থ, তিনিই আদি, তিনিই অন্ত, তিনিই ব্যক্ত, তিনিই গুপ্ত এবং তিনিই সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত।
এর তাফসির করতে গিয়ে বলেন- উক্ত আয়াতে কারীমার শব্দাবলীতে যেমন মহান আল্লাহ তায়ালার হাম্দ ও প্রশংসা রয়েছে ঠিক তেমনিভাবে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাত ও সিফাতের বর্ণনাও রয়েছে। রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সিফত বা গুণ الاول এ জন্য যে আল্লাহপাক সর্বপ্রথম তাঁর হাবিবের নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন। অতএব সৃষ্টির দিক থেকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম বা আউয়াল। আল্লাহর হাবিব নিজেই এরশাদ করেছেন اول ماخلق الله نورى অর্থাৎ আল্লাহপাক সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন। উল্লেখ্য যে, আল্লাহর হাবিব নবুয়তের দিক থেকেও প্রথম। যেহেতু তিনি ইরশাদ করেছেন كنت نبيا وان ادم لمنجدل فى طينة অর্থাৎ আমি ঐ সময় নবী ছিলাম যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম মাটির খামীরের মধ্যে বিদ্যমান ছিলেন।
আলমে মিসাকে الست بربكم আমি কি তোমাদের প্রভূ নই? এ প্রশ্নের সর্বপ্রথম জবাবদাতা ছিলেন তিনিই। এবং তিনিই সর্বপ্রথম ঈমান আনয়ন করেছেন। যেমন ইরশাদ হচ্ছে-
وبذالك امرت وانا اول المسلمين-
অর্থ- এর উপর আমি আদিষ্ট হয়েছি, আর আমি সর্বপ্রথম মুসলিম। (সূরা আনআম ১৬৩)।
মিশকাত শরীফের ৫১৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে-
عن العرباض بن سارية عن رسول الله صلى الله عليه وسلم انه قال انى عند الله مكتوب خاتم النبيين وان ادم لمنجدل فى طينة وسأخبر باول امرى دعوة ابراهيم- وبشارة عيسى رؤيا امى التى رأت حين وضعتنى- وقد خرج لها نور اضاء لها منه قصور الشام
অর্থ, হযরত ইরবাদ বিন সারিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর দেহ মোবারক মাটির সাথে মিশ্রিত ছিল তখন আমি আল্লাহর নিকট খাতামুন নাবিয়্যিন তথা শেষ নবী হিসেবে মনোনীত ছিলাম। আর অচিরেই তোমাদেরকে আমার প্রথম অবস্থার সংবাদ দেব। আমি হচ্ছি ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর দোয়া, ঈসা আলাইহিস সালাম এর সুসংবাদ এবং আমার আম্মার চাক্ষুস দর্শন যা তিনি আমাকে আমার প্রসবকালীন সময়ে দেখেছিলেন। তাঁর থেকে এমন একটা নূর প্রকাশ হয়েছিল যা দ্বারা সিরিয়ার প্রাসাদগুলো আলোকিত হয়েছিল। (শরহে সুন্নাহ)
এ হাদিসটি ইমাম আহমদ মুসনাদ গ্রন্থে, ইমাম হাকিম মুস্তাদরিক গ্রন্থে ও ইমাম ইবনে হাব্বান মাওরিদুয যামআন গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদিস-
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قالوا يا رسول الله متى وجبت لك النبوة- قال وادم بين الروح والجسد (رواه ترمذى)
অর্থ, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- সাহাবায়ে কেরামদের অনেকে আরজ করলেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার নবুয়ত কখন থেকে আবশ্যক হয়েছে? তিনি বললেন যখন আদম আলাইহিস সালাম রূহ এবং শরীরের মধ্যে মিশ্রিত ছিলেন তখন থেকে আমার নবুয়ত আবশ্যক হয়েছে। (তিরমিজী, কিতাবুল মানাকিব, মুস্তাদরিক লিল হাকিম)
এ প্রসঙ্গে ইমাম আহমদ ও ইমাম হাকিম আরো একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন-
عن مسيرة الفجر قال قلت يارسول الله متى كنت نبيا وفى لفظ متى كتبت- قال وادم بين الروح والجسد-
অর্থ:-হযরত মাছিরাতুল ফাজর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কখন নবী হয়েছেন? তিনি জবাব দিলেন যখন আদম আলাইহিস সালাম রূহ এবং শরীরের মধ্যে মিশ্রি“ত ছিলেন তখন আমি নবী ছিলাম। (মুসনাদে আহমদ, মুস্তাদরিক লিল হাকিম)
হযরত আব্দুল্লাহ বিন শাকিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিস-
عن عبد الله بن شقيق عن رجل قال قلت يا رسول الله متى جعلت نبيا قال وادم بين الروح والجسد (رواه احمد)
অর্থ:- হযরত আব্দুল্লাহ বিন শাকিক রাদিয়াল্লাহু আনহু একজন সাহাবি থেকে বর্ণনা করেছেন- তিনি বলেন- আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনাকে কখন নবী মনোনীত করা হয়েছে? তিনি জবাবে বললেন- যখন আদম আলাইহিস সালাম রূহ ও শরীরের মধ্যে মিশ্রিত ছিলেন। (মুসনাদে আহমদ)
উপরে লিখিত তিনখানা হাদিসশরীফ দ্বারা ইহাই প্রমাণিত হয় যে, সমস্ত সাহাবায়ে কেরামদের আক্বিদা ও বিশ্বাস ছিল রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীতে আগমনের পূর্বেই নবী হিসেবে মনোনীত ছিলেন। কারণ চল্লিশ বছর বয়সে যে, প্রথম ওহি নাজিল হয়েছিল তা সকলের নিকট দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট ছিল। এর পরেও সাহাবায়ে কেরামগণ বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ আপনাকে কখন নবুয়ত প্রদান করা হয়েছে? এতে প্রমাণিত হয় তারা ওহি নাজিলের কথা জানতে চাননি বরং সর্বপ্রথম কখন নবী মনোনীত হয়েছিলেন তাই জানতে চেয়েছেন। যার দরুণ নবীজী জবাবে বলেছেন- আমি তখন নবী মনোনীত হয়েছি যখন আদম আলাইহিস সালাম এর রূহ শরীরের সঙ্গে মিশ্রিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে ইমাম তাবরানী স্বীয় গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন-
عن عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لما اقترف ادم الخطيئة قال يا رب بحق محمد لما غفرت لى- قال وكيف عرفت محمدا؟ قال لانك لما خلقتنى بيدك ونفخت فى من روحك رفعت رأسى- فرأيت على قوائم العرش مكتوبا لا اله الا الله محمد رسول الله- فعلمت انك لم تضف الى اسمك الا احب الخلق اليك- قال صدقت يا ادم ولولا محمد ما خلقتك (الخصائص الكبرى)
অর্থ:- হযরত উমর বিন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যখন আদম আলাইহিস সালাম একটি খাত্বা করে ফেললেন তখন বললেন হে প্রভু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উসিলায় আমাকে মা কর। তখন আল্লাহ বললেন- মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কিভাবে চিনলেন? আদম আলাইহিস সালাম বললেন- যখন আপনি আমাকে স্বীয় কুদরতে সৃজন করে আমার প্রতি রূহ প্রদান করলেন, তখন আমি আমার মাথা উত্তোলন করলাম অতঃপর আরশের মধ্যে লিখিত দেখতে পেলাম-
لا اله الا الله محمد رسول الله
তখন আমি বুঝতে পারলাম, আপনার নামের সাথে যার নাম যুক্ত করেছেন নিশ্চয়ই তিনি সৃষ্টিজগতের মধ্যে আপনার সবচেয়ে প্রিয়। তখন আল্লাহ বললেন- হে আদম তুমি সত্যি বলেছ যদি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম না হতেন তাহলে আমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না। (খাসাইসুল কোবরা)
ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতি রাদিয়াল্লাহু আনহু খাসাইসুল কুবরা গ্রন্থে শেখ তকী উদ্দিন সুবুকি রাদিয়াল্লাহু আনহু এর التعطيم والمنة কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে لتؤمنن به ولتنصرنه আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বর্ণনা করেছেন-
فى هذه الاية من التنويه بالنبى صلى الله عليه وسلم وتعظيم قدره العلى ما لا يخفى- وفيه مع ذالك انه على تقدير مجيئه فى زمانهم يكون الامر مرسلا اليهم- فتكون نبوته ورسالته عامة لجميع الخلق من زمان ادم الى يوم القيامة- وتكون الانبياء واممهم كلهم من امته- ويكون قوله بعثت الى الناس كافة- لايختص به الناس من زمانه الى يوم القيامة- بل يتناول من قبلهم ايضا- ويتبين بذالك معنى قوله صلى الله عليه وسلم كنت نبيا وادم بين الروح والجسد।।।
والنبى صلى الله عليه وسلم خير الخلق- فلا كمال لمخلوق اعظم من كماله ولا محل اشرف من محله- فعرفنا بالخير والصحيح حصول ذالك الكمال من قبل خلق ادم لنبينا صلى الله عليه وسلم من ربه سبحانه- وانه اعطاه النبوة من ذالك الوقت- ثم اخذله المواثيق على الانبياء- ليعلموا انه المقدم عليهم وانه نبيهم ورسولهم-
অর্থ:- আল্লাহর বানী তোমরা সে রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তাকে সাহায্য করবে।
এ আয়াতের মাধ্যমে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উচ্চ মর্যাদা ও মহান ফজিলত সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এবং সাথে সাথে ইহাও প্রতীয়মান হয় যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমন অন্যান্য নবীদের যামানায় নির্ধারণ হলে তিনি তাদের প্রতি রাসূল হিসেবেই আগমন করতেন।
অতএব মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুয়ত ও রিসালত হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র সৃষ্টিরাজির জন্য ব্যাপৃত এবং সমস্ত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম ও তাঁদের উম্মতগণ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মত হিসেবে গণ্য হবেন। যেমন নবীজীর বাণী بعثت الى الناس كافة অর্থ: আমি সমগ্র মানবজাতির প্রতি প্রেরিত।
উক্ত হাদিসে মানবজাতি বলতে শুধুমাত্র মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয় বরং তাঁর পূর্ববর্তী মানবমণ্ডলীকেও সংযুক্ত করে। এ ব্যাখ্যা রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিুের হাদিসশরীফ প্রমাণ করে-
كنت نبيا وادم بين الروح والجسد
অর্থ:- আমি তখন নবী ছিলাম যখন আদম আলাইহিস সালাম রূহ ও শরীর মোবারকের মধ্যে ছিলেন।
একটু পরে লেখেন- নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন সৃষ্টির সেরা। সুতরাং তাঁর কামালিয়তের চেয়ে অধিক শ্রেষ্ঠ কোন মাখলুক হতে পারে না। এবং তাঁর মর্তবার চেয়ে অধিক মর্তবাবান কেউ হতে পারে না। আর আমরা সহিহ হাদিস দ্বারা অবগত হলাম আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ উচ্চ মর্যাদা আদম আলাইহিস সালাম এর সৃষ্টির পূর্বেই তাঁর প্রভূর কাছ থেকে লাভ করেছেন। এবং সে সময়েই তাঁকে নবুয়ত প্রদান করা হয়েছে। অতঃপর সমস্ত আম্বিয়াদের কাছ থেকে এ অঙ্গীকার গ্রহণ করা হয়েছে (তাঁরা যেন সে রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করেন এবং তাঁর সাহায্য করেন)। যাতে করে তাঁরা অবগত হন যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের অগ্রগামী হবেন এবং তিনি তাঁদের নবী ও রাসূল হবেন। (খাসাইসুল কোবরা)
এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
واذ اخذ الله ميثاق النبيين لما اتيتكم من كتاب وحكمة ثم جائكم رسول مصدق لما معكم لتؤمنن به ولتنصرنه- قال ءاقررتم واخذتم على ذالكم اصرى قالوا اقررنا قال فاشهدوا وانا معكم من الشاهدين
অর্থ: আর আল্লাহ যখন নবীগণের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন যে, আমি তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত যা দান করেছি। অতঃপর তোমাদের নিকট একজন রাসূল আসবেন তোমাদের কিতাবকে সত্যায়িত করার জন্য। তখন নিশ্চয় তোমরা তাঁর প্রতি ঈমান আনবে এবং তাঁকে সাহায্য করবে। তিনি বললেন- তোমরা কি স্বীকার করছো এবং এই শর্তে আমার অঙ্গীকার গ্রহণ করছো? তারা বলল, আমরা স্বীকার করছি। তিনি বললেন তাহলে এবার সাক্ষী থাক। আর আমিও তোমাদের সাথে সাী রইলাম। (সূরা আল ইমরান- ৮১)
উপরোক্ত আয়াতে ঐ শপথনামার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে যা মিসাক বা প্রতিশ্র“তি দিবসে সমস্ত নবীদের কাছ থেকে গ্রহণ করা হয়েছিল। আল্লাহতায়ালা সমস্ত নবীদের রূহকে একত্রিত করে এ অঙ্গীকারনামা গ্রহণ করেছিলেন। তখন সমস্ত নবীগণ স্বীকার করেছিলেন আমাদের বর্তমানেই যদি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করেন তবে আমরা তাঁর প্রতি ঈমান আনবো এবং তাঁর সাহায্য করবো।
উক্ত আয়াত থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, এক লক্ষ অথবা দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রাসূল যারা দুনিয়াতে আসবেন তাদের সকলকেই আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে প্রেরণের পূর্বেই নবী মনোনীত করেছেন। যেমন উক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে রূহানী জগতেই নবী বলে সম্বোধন করেছেন।
হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম সম্বন্ধে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
فاشارت اليه قالوا كيف نكلم من كان فى المهد صبيا -قال انى عبد الله اتني الكتاب وجعلنى نبيا-
অর্থ:- অতঃপর তিনি (মারইয়াম) হাত দ্বারা সন্তানের প্রতি ইঙ্গিত করলেন। তারা বলল যে, কোলের শিশু তার সাথে আমরা কেমন করে কথা বলবো। সে বললো (ঈসা) আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী বানিয়েছেন। (সূরা মারইয়াম- ২৯-৩০)
এ আয়াতে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এর সেই মুজিযার বর্ণনা দেয়া হয়েছে যে, যখন পরিবারের লোকজন মারইয়াম আলাইহিস সালামকে ভর্ৎসনা করতে লাগল, তখন ঈসা আলাইহিস সালাম মায়ের দুধ পান করছিলেন। তিনি তাদের ভর্ৎসনা শুনে স্তন্য ছেড়ে দেন এবং বাম দিকে পাশ ফিরে তাদের দিকে মনোযোগ দেন। অতঃপর তর্জনি আঙুল খাঁড়া করে বললেন-
انى عبد الله اتانى الكتاب وجعلنى نبيا-
অর্থ:- আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব প্রদান করেছেন এবং আমাকে নবী মনোনীত করেছেন।
এবার ল করুন হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম সম্বন্ধে আল্লাহ কী বলেছেন-
ييحى خذ الكتاب بقوة - واتينه الحكم صبيا-
অর্থ:- হে ইয়াহইয়া দৃঢ়তার সাথে এই গ্রন্থ ধারণ কর। আমি তোমাকে শৈশবেই হুকুম তথা নবুয়ত দান করেছিলাম। (মারইয়াম-১২)
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন-
واتيناه الحكم النبوة صبيا ابن ثلاث سنين
অর্থ: ইয়াহইয়া আলাইহিস সালামকে নবুয়তের হুকুম দেয়া হয়েছিল মাত্র তিন বছর বয়সে। (জালালাইন)
সম্মানিত পাঠকগণ উল্লেখিত আলোচনা থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, আমাদের নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টির শুরু থেকেই নবী মনোনীত হয়েছেন।
অথচ তথাকথিত হামিদী সাহেব বারংবার লেখেছেন জন্ম থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত তিনি নবুয়তি পাননি এবং তখন তিনি উম্মতের জন্য অনুকরণীয় আদর্শও ছিলেন না। (নাউজুবিল্লাহ)
Home
»
কিতাবঃ বিভ্রান্তির অবসান
» সৃষ্টির শুরু থেকেই মুহাম্মদ ﷺ নবী নবুয়ত প্রাপ্তির সময়কালঃ [কিতাবঃ বিভ্রান্তির অবসান (শানে নবুওয়াত) 🖋হাফেজ ইকরাম উদ্দীন]