হাক্কানী ওলামা কেরামের নিকট তাবলিগের দাওয়াত দেবে না
হকানী ওলামা কেরামের নিকট তাবলিগের দাওয়াত দেবে না, এ হলো তাবলিগ জামাতের মুবাল্লিগদের উদ্দেশ্যে মৌং ইলিয়াসের নসিহত। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তোমরা তাবলিগের আসল গুরুত্ব ভালভাবে বুঝিয়ে তাদেরকে নিশ্চিত করতে পারবেনা যে, তাদের অপরাপর দ্বীনি কর্মকাণ্ডের তুলনায় এ কাজ অধিক উপকারী। ফলে তারা তোমাদের কথা মানবেন না। আর যখন তারা একবার না করে দেবেন কখনো হ্যাঁ করানো সম্ভব হবে না। অতঃপর এর আরো একটি খারাপ ফলাফলও দাঁড়াতে পারে যে, তাঁদের ভক্ত-অনুরক্তগণ তোমাদের কথা শুনবে না। আর এও সম্ভব যে, স্বয়ং তোমাদের মধ্যে দুদোল্যমান অবস্থার হতে পারে। সুতরাং তাঁদের খেদমতে শুধুমাত্র ফায়েদা অর্জনের উদ্দেশ্যে যাবে। কিন্তু তাদের চতুর্পার্শ্বে অধিক মেহনতের মাধ্যমে তাবলিগের কাজ করতে হবে।(মালফুযাত, পৃষ্ঠা ৩৪ ও ৩৫)।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! গভীর মনোযোগ সহকারে অনুধাবন করুন! তাবলিগের স্বরূপ উন্মোচনে সচেষ্ট হোন! এ কেমন তাবলিগ যার দাওয়াত হক্কানী ওলামা কেরামের নিকট দিতে জোরালোভাবে নিষেধ করা হচ্ছে। তাবলিগের মুখ্য উদ্দেশ্য যদি প্রকৃত ইসলামের প্রচার প্রসার হয়, তাহলে এটা এমন কি জটিল কঠিন বিষয়ে পরিণত হল যে, হক্কানী ওলামা কেরাম এর গুরুত্ব বুঝে উঠতে পারবেন না। আর তাবলিগের উপকারিতা টুকু হক্কানী আলেমদেরকে বুঝাতে অক্ষম এমন সব অথর্ব ব্যক্তিই বা কেন মুবাল্লিগের দায়িত্ব পালন করবে? তাবলিগের আসল উদ্দেশ্য যদি ইসলাম হয়, তাহলে হক্কানী ওলামায়ে কেরামইতো সবার চেয়ে বেশী বুঝবেন। তাবলিগে নিশ্চয়ই মারাত্মক কোন অপশক্তি নিহিত আছে। না হয় কেন হক্কানী ওলামা কেরাম একবার সাড়া না দিলে এটা হ্যাঁ করা মুশকিল হয়ে পড়বে। এতে আরও প্রমাণিত হয় যে, হক্কানী আলেমগণ প্রচলিত ইলিয়াসী তাবলিগের বিরুদ্ধে; সুতরাং এটা বর্জনীয়। বস্তুতঃ হকানী আলেমের নিকট তাবলিগের দাওয়াত দিতে নিষেধ করার মূল কারণ হলো, থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়বে। আসল চেহারা প্রকাশ পেয়ে যাবে। অন্তর্নিহিত রহস্য ফাঁস হয়ে যাবে।
➖➖➖
তাবলিগ জামাতের দিকে ওলামা কেরামের আগ্রহ নেই
একদা মৌং ইলিয়াস বললেন, আলেমগণ এদিকে আসছেন মা; আমি কি করব? হায়! আল্লাহ আমি কি করব? উপস্থিত লোকজন আরয করলেন, সবাই এসে যাবে, আপনি দোয়া করুন। তখন তিনি বললেন, আমি তো দোয়াও করতে অক্ষম। তোমরাই দোয়া কর (মালফুযাত, পৃষ্ঠা ৫৮ ও ৫৯)।
সত্যিই তাবলিগ জামাতে আলেমের বড়ই অভাব। তিনি যে অনুশোচনা করেছেন,তা বিপক্ষের আলেমদের উদ্দেশ্য নয়; বরং ওহাবী আলেমদের উদ্দেশ্য বাংলাদেশের খ্যাতিমান ওহাবী আলেমদের কেউ কোন সময় তাবলিগের কাজে অংশ গ্রহণ করেছেন বলে জানা নেই। আবার তারা বিরোধিতাও করেন না দলীয় স্বার্থে।
➖➖➖
মৌং ইলিয়াস-এর কাম্য একটি নতুন দল সৃষ্টি করা
একদা মৌং ইলিয়াস (মুবাল্লিগদের উদ্দেশ্যে) বলেন, আমি চাই তোমরা কিছু দিন আমার নিকট অবস্থান করো। তাহলে তোমরা আমার আসল উদ্দেশ্য বুঝতে সক্ষম হবে। এটা দূর থেকে বুঝতে পারবে না। এটা আমি জানি যে, তোমরা তাবলিগে অংশগ্রহণ করছ। জলসাসমূহে তাকরীরও করছ তোমাদের বক্তব্যে
উপকার হচ্ছে কিন্তু এটা ঐ তাবলিগ নয় যা আমার কাম্য। (মালফুযাত, পৃষ্ঠা ৪১)
প্রশ্ন হচ্ছে প্রচলিত তাবলিগ কি তার কাম্য তাবলিগ না অন্য কিছু। এতদ বিষয়ে তিনি ঘুমের ঘোরে স্পষ্ট ভাবে বলে দেয়ার অনুমতি পেয়েছেন কি না তাও জানা নেই। তাবলিগ তার কাংখিত লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে কি না তাও বুঝা যাচ্ছে না। একদা মৌং ইলিয়াস তার জনৈক শিষ্য জাহিরুল হাসানকে লক্ষ্য করে বললেন
میاه ظهیر الحسن میرا مدعا کوئی نهیں پاتا- لوگ سمجتے هیں یه تحریك صلواة هے- میں قسم سے کهتا هوں که یه هرگز تحریك صلواة نهیں ایك دن بڑی حسرت سے فرمایه که مجهے ایك نیا قوم بنانا هے-
মিয়া জহিরুল হাসান আমার উদ্দেশ্য কেউ বুঝে না। মানুষ মনে করে যে, এটা (তাবলিগ জামাত) নামাযের আন্দোলন। আমি কসম করে বলছি যে, এটা নামাযের আন্দোলন নয়। একদিন আফসোস করে বললেন, আমার একটি নতুন দল সৃষ্টি করতে হবে। (তাবলিগ দর্পন, পৃষ্ঠা ৬৫-৬৬ )
আলোচ্য উদ্ধৃতি দ্বারা মৌং ইলিয়াসের আসল উদ্দেশ্য দিবালোকের মত পরিস্কার হয়ে উঠেছে। কালেমা, নামায এবং তালীম বাহানা মাত্র। আসল উদ্দেশ্য একটি নতুন দল সৃষ্টি করা। মৌং ইসমাইল দেহলভীর দৃষ্টিতে হানাফী, শাফেয়ী, কাদেরী, চিশতী ইত্যাদি দলগঠন যদি বেদআত হয়। মৌং ইলিয়াসের নতুন দল।সৃষ্টি করা বেদাত হবে না। (তাকবিয়াতুল ঈমান,পৃষ্ঠা ৮৫)
➖➖➖
ওহাবীদের নিকট মৌং ইলিয়াসের মর্যাদা
১৩৬৩ হিজরী রজব মাসে প্রচলিত ছয় উসুল ভিত্তিক তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মৌং রশীদ আহমদ গাংগুহীর স্নেহ ধন্য শিষ্য মৌং ইলিয়াস মৃত্যুবরণ করেন। যখন ময়দানে তার কফিন রাখা হল তখন মাওলানা যাকারিয়া ও মাওলানা ইউসূফ সমবেত লোকজনদের ময়দানের নিম্নভাগে সমবেত হতে নির্দেশ দিলেন এবং তাদের উদ্দেশ্যে -
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ
(অর্থাৎ নিশ্চয়ই মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসুল। তার আগে অনেক রাসুল চলে গেছেন। আল কোরআনের এ আয়াত পড়ে বক্তব্য রাখলেন। সমবেদনা প্রকাশ ও নছিহতের জন্য এইক্ষণে এর চেয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয় বস্তু কি হতে পারে? (দ্বীনী দাওয়াত পৃষ্ঠা ১৮৬ মৌং আবুল হাসান আলনদভী; তাবলিগী জামাত, পৃষ্ঠা ৪৭ তাবলিগ দর্পন, পৃষ্ঠা ৬২)।
উল্লেখ্য যে, হুযুর সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর শোকে মূহ্যমান সাহাবা কেরামকে শান্তনাদানের উদ্দেশ্যে হযরত আবু বকর ছিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আলোচ্য আয়াত তেলাওয়াত পূৰ্বক বক্তব্য রেখেছিলেন। পবিত্র কোরআনে মৃত্যু সম্পর্কিত একাধিক আয়াত বিদ্যমান যথা-
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ
ইত্যাদি। এগুলোর আলোকে বক্তব্য না রেখে পূৰ্বোল্লেখিত আয়াতকে শিরোনাম করে বক্তব্য প্রদান কি এদিকে ইংগিত বহন করে না যে, ওহাবীদের নিকট মৌং ইলিয়াসের মর্যাদা একজন রাসুলের চেয়ে কম ছিলনা। এটা তাড়াহুড়ার ভিত্তিতেও ছিল না। বরং পরিকল্পিত ভাবে ছিল। কারণ এর পূর্বে মানযুর নো'মানী প্রথমোক্ত আয়াতের আলোকে বক্তব্য রেখেছেন। (দ্বীনী দাওয়াত, পৃষ্ঠা ১৮১, তাবলিগ জামাত, পৃষ্ঠা ৪৭)
➖➖➖
মৌং ইলিয়াসের প্রতি বৃটিশ সরকারের আর্থিক সাহায্য
জমিয়তে ওলামা দেওবন্দ -এর মহাসচিব মৌং হেফযুর রহমান নিজে স্বীকার করেছেন যে, মৌং ইলিয়াস এর তাবলিগী আন্দোলন প্রথম দিকে হুকুমতের পক্ষথেকে হাজী রশীদ আহমদ মারফত কিছু টাকা পেত। পরে বন্ধ হয়ে গেছে। (মোকালামাতুস সাদরাইন, পৃষ্ঠা ৮: দেওবন্দ থেকে প্রকাশিত; তাবলিগী জামাত, পৃষ্ঠা ৯৯, ইলিয়াসী জামাত, পৃষ্ঠা ১৩)।
বস্তুতঃ তাবলিগ জামাতকে কোন সময় চাঁদা সংগ্রহ করতে দেখা যায়নি। কিন্তু তাদের এ বিশ্বব্যাপী কর্মকাণ্ডের পেছনে যে বিরাট ব্যয় সে অর্থের উৎস আজও রহস্যাবৃত । কেউ যদি বলে যে, জামাতের লোকদের সাহায্যে পরিচালিত হয় তা পুরোপুরি বিশ্বাস যোগ্য নয়, কারণ খারেজী মাদ্রাসা গুলোও তাদের ধনী শ্রেণীর লোকদের আর্থিক সাহায্যেই পরিচালিত হয়। এতদ সত্ত্বেও সর্বপ্রকার চাঁদা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু তাবলিগের বেলায় এধরণের কোন চাঁদা সংগ্রহের কোন তথ্য পাওয়া যায় না। তবে আলোচ্য উদ্ধৃতি থেকে তাদের আর্থিক সংস্থানের বিষয়টি কিছুটা ধারণা করা যায়।
➖➖➖
তাবলিগী জামাত
তাবলিগ জামাত -এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন মৌং ইলিয়াছ মেওয়াতি কাম্পালতী বাল্যকালে শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে মৌং রশিদ আহমদ গাহীর নিকট হাজির হন। দীর্ঘ দশ বছর যাবৎ তার নিকট শিক্ষা লাভ করেন। ছাত্র জীবনেই তিনি গাংগুহীর নিকট মুরীদ হন। মৌং আলী হাসান নদভী হযরত মৌং ইলিয়াস আওর উনকি দাওয়াত’ নামক কিতাবের ৪৫ পৃষ্ঠায় লিখেন, "হযরত যৌং ইলিয়াস জনাব গাংগুহীর সোহবত এবং তার মজলিসের সম্পদ সাত দিনে লাভ করেন। মৌং ইলিয়াস দশ বছর হতে বিশ বছর বয়স পর্যন্ত মোট দশ বছর কাল গাংগুহীর সোহবতে থাকেন। মৌং গাংগুহীর মৃত্যুর পর মৌং ইলিয়াস মৌং মাহমুদুল হাসানের নিকট মুরীদ হতে চাইলে তিনি তাকে মৌং খলীল আহমদ। আম্বটভীর নিকট মুরীদ হতে বললেন; অতঃপর তিনি মৌং খলীল আহমদের নিকট মুরীদ হলেন। (তাবলিগ দপন, পৃষ্ঠা ৫৯ ও ৬০)।
আলোচ্য উদ্বৃতি দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, প্রচলিত তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মৌং ইলিয়াস দু'জন প্রখ্যাত দেওবন্দী ওহাবী আলেমের নৈকট্য প্ৰাপ্ত শিষ্য। অনেক সময় প্রচলিত তাবলিগ জামাতের লোকজন সরলপ্রাণ মুসলমানদের নিকট নিজেদের ওহাবীয়াত গোপন করার উদ্দেশ্যে বলে থাকে, এ তাবলিগ জামাত কারো প্রতিষ্ঠিত নয়, এটা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারী জামাত। কালেমার দাওয়াত দানে লিপ্ত। তাই এখানে প্রচলিত তাবলিগী জামাতের উদ্বৃতি পেশ করা হলো।
হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহমাতুল্লাহি আলাইহির কবরকে আল্লাহ পাক নুরের দ্বারা পরিপূর্ণ করিয়ে দিন, হযুর পাক সাল্লাল্লাহ তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা কেরামের সেই তাবলিগের কাজকে জামাতের আদলে পুনরায় নয়দিল্লীর বাস্তিয়ে নিজামুদ্দিনে শুরু করেছেন। (তাবলিগী সফর, পৃষ্ঠা ৫ কৃতঃ মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ)।
এটাও একটা চরম ধোকাবাজি। কারণ, হযুর সাল্লাল্লাহ তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা কেরামের ‘তাবলিগ” এর সাথে প্রচলিত তাবলিগের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
একঃ হুযুর সাল্লাল্লাহ তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা কেরামের কালেমার দাওয়াত ছিল কাফের মুশরিকদের নিকট। আর প্রচলিত তাবলিগের দাওয়াত হলো মুসলমানদের নিকট।
দুইঃ প্রথমোক্ত তাবলিগে ছয় উসুল ছিল না। ইলিয়াস তাবলিগ ছয় উসুল ভিত্তিক।
তিনঃ প্রথমোক্ত তাবলিগে “গাশত" চিল্লা ইত্যাদি ছিল না। ইলিয়াসী তাবলিগে গাশত ও বিভিন্ন প্রকারের চিল্লা রয়েছে।
চারঃ প্রথমোক্ত তাবলিগে এতো বড় বড় সাওয়াবের প্রতিশ্রুতি ছিল না। যেভাবে ইলিয়াসী তাবলিগে আছে।
পাঁচঃ প্রথমোক্ত তাবলিগের মূল বিষয় ছিল ইসলাম। ইলিয়াসী তাবলিগের আসল উদ্দেশ্য হলো মৌং আশরাফ আলী খানভীর তালীম (দর্শন) প্রচার করা। প্রচলিত তাবলিগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে মৌং ইলিয়াস বলেন, “হযরত মৌং থানভী বড় কাজ করেছেন। অতএব, আমার ইচ্ছে হলো যে, তালীম হবে তার এবং তাবলিগের পদ্ধতি হবে আমার। এমনিভাবে তার (থানভীর) তালীম ব্যাপকভাবে প্রসারিত হবে’ (মানুযাতে ইলিয়াস, পৃষ্ঠা ৫৮ ও ৫০)।
এতে প্রমাণিত হলো যে, যদিও তাবলিগ জামাত প্রকাশ্যে বলে বেড়ায়, তাদের উদেশ্য মুসলমানদেরকে কালেমা নামায ইত্যাদির তালীম ও প্রশিক্ষণ দেয়া। কিন্তু আসলে তা নয়; মূল উদ্দেশ্য হলো মৌং আশরাফ আলী থানভীর তালীম প্রচার করা। সুতরাং এখানে থানভীর ভালীমের আংশিক আলোচনা করা প্রয়োজন। যাতে করে সরল প্রাণ মুসলমান তাবলিগ জামাতের স্বরূপ কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে সক্ষম হয়।
দারুল উলুম দেওবন্দের মজলিশে সুরার সদস্য মৌং আহমদ সাইদ আকবরাবাদী তার মাসিক বোরহান' পত্রিকায় থানভী সম্পর্কে লিখেন, ব্যক্তিগত বিষয়াবলীতে সূক্ষ্ম ব্যাখ্যা দেখেও না দেখার ভান করার চরিত্র মৌলানার (খানভীর) মধ্যে ছিল তার প্রমাণ এ ঘটনা থেকে মিলে। একদা তার মুরীদ মৌলানার (থানভীর) নিকট লিখল যে, "আমি রাত্রি বেলায় স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি শুদ্ধভাবে কলেমা-এ-শাহাদাত উচ্চারণ করতে খুব চেষ্টা করছি। কিন্তু প্ৰত্যেক বারই এভাবে উচ্চারিত হলো৷- لااله الاالله اشرف علي رسول الله (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আশরাফ আলী রাসুলুল্লাহ)।
মাওলানা আহমদ সাঈদ এতে মন্তব্য করেন, অত্যন্ত স্পষ্ট যে, এটা কুকরী কালেমা। শয়তানের ধোকা, নফসের প্রতারণা, তুমি তাড়াতাড়ি তাওবা করো। এবং ইস্তেগফার করো। কিন্তু থানভী এ ধরণের কোন উত্তর না দিয়ে শুধু এতটুকু বলে শেষ করলেন যে, ‘আমার প্রতি তোমার মুহাব্বত খুব বেশী, এসব তারই ফল। (মাসিক বোরহান, ফেব্রুয়ারী ১৯৫২; তাবলিগ জামাত, পৃষ্ঠা ৫৫ ও ৫৬; ইলিয়াসী জামাত, পৃষ্ঠা ৭ ও ৮)।
স্বপ্নাবস্থায় এভাবে ভুল হবার বিষয়টি জাগ্রত হবার পর মনে পড়লে তা দূরিভূত করার উদ্দেশ্যে দরুদ শরীফ পড়ছিলাম। তাও বলতেছিলাম এভাবে الهم صلي سيدناونبيناومولانااشرف علي (আল্লাহুম্মা সারেআলা সাইয়্যেদিনা ওয়া নাবীয়্যেনা ওয়া মৌলানা আশরাফ আলী) এ বিষয়টি উক্ত মুরীদ তাকে পত্র মারফত অবগত করলে থানভী তাওবা ইস্তেগফারের নির্দেশ না দিয়ে বরং উৎসাহিত করলেন এ বলে, এ ঘটনায় এ কথার শান্তনা নিহিত যে, তুমি যার প্রতি মনোযোগী (থানভী) তিনি আল্লাহর সাহায্যক্রমে সুন্নাতের অনুসারী'। (আল এমাদ পৃষ্ঠ, ৩৪; তাবলিগী জামাত, পৃষ্ঠা
৫৭; জাআল হক, পৃষ্ঠা ৪২৩; ইলিয়াসী জামাত, পৃষ্ঠা ৭ ও ৮)।
উপরোক্ত দু'টি উদ্বৃতি থেকে মৌং আশরাফ আলী থানভীর মনোভাব কি, তা সহজে অনুমেয়। উত্তরে তার কি বলা উচিত ছিল, আর বললেন কি!
আক্বীকা, খতনা, ছেলে-মেয়েদের বিসমিল্লাখানী (সর্ব প্রথম আরবী সবকদান অনুষ্ঠান), মৃত ব্যক্তির রূহের মাগফেরাত কামনাৰ্থে ফাতেহা, শবে বরাতের হালুয়া, মুহররমের অনুষ্ঠান, অলীদের ফাতেহা, নযর-নেয়ায ইত্যাদি ছেড়ে দাও। নিজেও করোনা, অন্যের ঘরে হলে তাতেও যোগদান করো না। (কাসদুসসাবীল, পৃষ্ঠা২৫ ও ২৬; তাবলিগী জামাত, পৃষ্ঠা ৬৩)।
বেহেশতী যেওর একটি কিতাব, (থানভী কর্তৃক রচিত) এটি হয়তো নিজে পড় অথবা শুন এবং এটা অনুযায়ী চলো।
এখন দেখা যাক বেহেস্তী যেওরে কি আছে, আলী বখশ, হসাইন বখশ, আবদুন্নবী ইত্যাদি নাম রাখা, এভাবে বলা যদি আল্লাহ ও রাসুল চান তাহলে অমুখ কাজ সম্পন্ন হবে, বলা শিরক। (বেহেস্তী যেওর, প্রথম খ০ পৃষ্ঠা ৩)
হুযুর সাল্লাল্লাহ তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে সামান্য ইলমে গায়ব আছে এ ধরণের ইলমে গায়ব বা অদৃশ্য জ্ঞানতো যায়েদ, আমর, এমনকি প্রত্যেক শিশু, পাগল বরং সকল জীব-জন্তুরও আছে। (হেফজুল ঈমান পৃষ্ঠা ১৬)।
এ হলো মৌং আশরাফ আলী থানভীর তালীমের কয়েকটি দৃষ্টান্ত। কারো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, থানভীর যাবতীয় রচনাবলীতে কি কোন ভাল বিষয় নেই। হ্যা অবশ্যই আছে। কিন্তু দ্বীন, ঈমান কোন পণ্য সামগ্রী নয় যে, ভাল-মন্দ মিলিয়ে নেয়া যায়। ঈমান ধ্বংস হয়ে যাবার জন্য নবী করিম সাল্লাল্লাহ তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহান শানে একাধিক বে-আদবী করতে হবে এমনটি নয়; বরং একটি মাত্র অবমাননাকর উক্তিই যথেষ্ট। হযুর সাল্লাল্লাহ তা'আলা। আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইলমে গায়েবকে চতুষ্পদ জন্তুর ইলমের সাথে তুলনা করা কি মহান রাসূল সাল্লাল্লাহ তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে চরম বেয়াদবী নয়? এতো বড় জঘন্য বেয়াদবীর পর তার ভাল দিকগুলোর কোনই গুরুত্ব নেই ।
আসল কথা হলো, যখন দেওবন্দী-ওহাবীয়াত মুসলমানদের নিকট বিতর্কিত হয়ে গেল এবং তাদের স্বরপ সকলের নিকট উন্মোচিত হলো, তখন ওহাবীয়াত প্রচারের এক সুপরিকল্পিত পন্থা উদ্ভাবন করা হলো তাবলিগ জামাত । কালিমা-নামাযের নামে ওহাবী বানানোর এক কার্যকরী উপায়। এটাকে সরলপ্রাণ মুসলমানদের নিকট গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য বড় বড় সাওয়াবের প্রতিশ্রুতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাবলিগ জামাতে এক রাকাত নামায পড়লে সাত লক্ষ রাকাতের সাওয়াব, এক চিরা দিলে সাত হজের সাওয়াব, সাত পয়সা তাবলিগে গিয়ে খরচ করলে সাত লক্ষ পয়সার সাওয়াব ইত্যাদি । (বদরপুরের বাহাস, পৃষ্ঠা ৮ ও ৯)।
➖➖➖
প্রচলিত তাবলিগের তরীকা স্বপ্নে প্রাপ্ত
একদা (ইলিয়াস) বললো, স্বপ্ন নবুওয়াতের ৪৬ ভাগের একভাগ। কেউ কেউ স্বপ্নযোগে এমন উন্নতি লাভ করেন, যা রিয়াযাত (সাধনা) ও মোশাহেদা দ্বারা লাভ করা যায় না। কারণ, তারা স্বপ্নের মাধ্যমে বিশুদ্ধ জ্ঞান লাভ করেন। যা নুবুয়্যাতের অংশ। জ্ঞান দ্বারা কেউ উন্নতি লাভ করেনা; মারফত দ্বারা নৈকট্য বৃদ্ধি পায়। এজন্যই বর্ণিত হয়েছে, বলুন, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে অধিক জ্ঞান দাও। অতঃপর তিনি বললেন আজকাল স্বপ্নযোগো বিশুদ্ধ জ্ঞান লাভ করে থাকি। অতএব, তোমরা চেষ্টা কর যাতে আমার ঘুম বেশী হয়। খুশকির কারণে ঘুম কম হচ্ছিল, তখন আমি-হাকিম ও ডাক্তারের পরামর্শ ক্রমে মাথায় তৈল মালিশ করেছি। ফলে ঘুমে উন্নতি হয়েছে (সুনিদ্রা হয়েছে)। তিনি বলেন, এ তাবলিগের পদ্ধতি আমি স্বপ্নযোগে লাড করেছি। আল্লাহ তা'আলার বাণী-
كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ
এর তাফসীর স্বপ্নে এভাবে উদঘাটিত হয়েছে যে, তোমরা নবীদের মত মানুষের জন্য আবির্ভূত হয়েছ। এ অর্থ- শব্দ দ্বারা বিকৃত করার মধ্যে এদিকে ইংগিত রয়েছে যে, এক স্থানে বসে এ কাজ হবে না, বরং দ্বারে দ্বারে বেরুবার প্রয়োজন হবে। (মালফুযাতে ইলিয়াছ, পৃষ্ঠা ৫০; কাশফুশ শোবহা আনিল জামাতিত তাবলিগীয়া, পৃষ্ঠা ৫ ইস্তাম্বুল তুর্কী)।
পূৰ্বোল্লেখিত উদ্ধৃতিতে বলা হয়েছে যে, এটা রাসুল সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা কেরামেরই পুরান তাবলিগ । আর এখানে বলছে, এ তরীকা স্বপ্নে প্রাপ্ত। সুতরাং নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, প্রচলিত তাবলিগ জামাত ও তার কর্মপদ্ধতি হুযুর করিম সাল্লাল্লাহ তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা কেরামের নয় বরং ইলিয়াসের স্বপ্নে প্রাপ্ত। এখানে এটিও প্রতীয়মান হয়, তার নিকট বিশুদ্ধ জ্ঞানার্জনের একমাত্র উপায় স্বপ্ন। যার কারণে তিনি ঘুম বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে চিকিৎসা গ্রহণের পরও অনুসারীদেরকে ঘুম বৃদ্ধির আরো উন্নত উপায় আছে কি না খুঁজে বের করার লক্ষ্যে বলেছেন, "তোমরাও চেষ্টা কর যাতে আমার ঘুম বেশী হয়।”বিশুদ্ধ জ্ঞানার্জনের লক্ষ্যে দিবা-রাত্রিতে কতক্ষণ তিনি ঘুমাতে চান বোধগম্য হচ্ছে না)। এ কেমন বুযর্গী! আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের নিকট ঘুমেও ওহী আসত। কিন্তু কোন নবী ঘুম বৃদ্ধির জন্য এতো তৎপর হননি। অপরদিকে এ ধরণের ব্যাখ্যা এযাবৎ কোন তাফসীরকারক আলোচ্য আয়াতের করেননি। কৃত্রিম উপায়ে ঘুম বৃদ্ধি করে অর্জিত তরীকা কৃত্রিম না হয়ে আর কি হবে?
➖➖➖
তাবলিগী জামাত সম্পর্কে মওদূদী
একসময় তাবলিগ জামাতের পক্ষথেকে মওদুদীর নিকট এ প্রস্তাব পেশ করা হয় যে, সাধারণ মানুষের মধ্যে (জামাতে ইসলামীর) কাজ করার জন্য মৌং ইলিয়াসের তাবলিগ পদ্ধতি অবলম্বন করার জন্য। এ প্রস্তাব সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে মৌং মওদুদী বললেন, আমি তাদের তাবলিগ পদ্ধতি সম্পর্কে যতটুকু অবগতি অর্জন করেছি, এতে আমি আস্থাশীল নই। (রৌদাদ-তৃতীয় এজতেমা, পৃষ্ঠা ৭১, প্রস্তাব নং ১৭, তাম্বীহাত, পৃষ্ঠা ১৬, তাবলিগী জামাত, পৃষ্ঠা ১১৭)
➖➖➖
তাবলিগ জামাতে কোন ধরণের লোকদের আধিক্য
এক শ্রেণীর অবসরপ্রাপ্ত চাকুরীজীবি, ব্যবসায়ী, সম্পদশালী, আধুনিক শিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত ও অশিক্ষিত লোকদের উপস্থিতিই তাবলিগ জামাতে বেশী। আলেমদের সংখ্যা খুবই নগণ্য, এজন্য স্বয়ং প্রতিষ্ঠাতা মৌং ইলিয়াসও আফসোস করেছেন।
তাবলিগ জামাত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা পেশ করা হলো সত্যান্বেষী পাঠকদের সমীপে। এসব তথ্যাবলী যাচাই পূর্বক এ দল সম্পর্কে নিজে সচেতন হোন। অপরকেও সচেতন করুন। আমরা "তাবলিগে দ্বীন" বা ইসলামের প্রচারের বিরোধী নই। দ্বীন তো বিশ্বব্যাপী প্রচার প্রসার লাভ করেছে আউলিয়া কেরামের তাবলিগের মাধ্যমে। আমরা কি কারণে মৌং ইলিয়াসের প্রতিষ্ঠিত ছয় উসুল ভিত্তিক তাবলিগের বিরোধীতা করি তা উপরোক্ত আলোচনায় ফুটে উঠেছে। এ দল সম্পূর্ণভাবে ওহাবী আক্বীদায় বিশ্বাসী তাতে সন্দেহ পোষণ করার অবকাশ নেই। সুতরাং ঐ সব ভ্রান্ত আক্বীদার পূনঃ আলোচনা নিষ্প্রয়োজন।
➖➖➖
উপসংহার
ইসলামের দীর্ঘ ইতিহাসে ইসলামের ছদ্মবেশে ইসলাম ও মুসলমানদের ঈমান, আক্বীদা, আমল, আখলাক-চরিত্র, তাহযীব-তামাদ্দুন, শিক্ষা-সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে কতো বিপর্যয় ঘটানো হয়েছে, তার হিসেব কজনই বা রাখে। বাস্তব সত্য হলো মুসলমানদের মধ্যে ইসলামের ছদ্মবেশেই সৃষ্ট দলাদলির ফলে মুসলমানদের ঐক্যের অপূরনীয় ক্ষতি সাধিত হয়েছে। আজও মুসলমানদের মূল দূর্বলতা এটাকে ঘিরে। মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশের কথা বাদ দিয়ে, বাংলাদেশের কথা চিন্তা করলেই তা নিশ্চিতরূপে সত্য প্রমাণিত হয়। আজ বাংলাদেশের মুসলমানগণ-সুন্নী-ওহাবী-তাবলিগী, আহলে হাদিস ও মওদূদী ইত্যাদি দলে বিভক্ত। সুন্নী জামাআত আল্লাহর অপার অনুগ্রহ, হুযুর পুরনুর সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেহেরবাণী ও আউলিয়া কেরামের দৃষ্টির ফলেনঅদ্যাবধি ইসলামের আক্বীদা আমলের ধারাবাহিকতাকে বুকে ধারণ করে বাতিল ফিরকার মোকাবিলায় আছে। অপরদিকে বাতিল ফিরকাগুলো সুনীয়াতের বিরুদ্ধে বহুমুখী যড়যন্ত্রে লিপ্ত। সুন্নী জামাআতকে হেয়প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে নানাভাবে সুন্নীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার অব্যাহত রেখেছে। তন্মধ্যে জঘন্য ষড়যন্ত্র হলো, এসব দল নিজেদের অসংখ্য ভ্রান্ত আক্বীদা সত্ত্বেও নিজেদেরকে সুন্নী বলে দাবী করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। নিজেদের ভ্রান্তি ও গোমরাহীর লক্ষে "আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের" পরিচয় সম্বলিত পুস্তিকাও প্রকাশ করেছে। এমতাবস্থায় তাদের স্বরূপ উন্মোচন করা একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এ উদ্দেশ্যেই এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। এখানে আমি কোরআন, সুন্নাহ ও নির্ভরযোগ্য কিতাবের আলোকে “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত" এর পরিচয়, আকাঈদ, পাশাপাশি বাতিল ফিরকাগুলোর ভ্রান্ত আক্বীদা ঐসব দলের কিতাবাদি থেকে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি। যাতে পাঠক সমাজ সহজে এসব দলের মোটামুটি পরিচয় লাভে সক্ষম হয় এবং তাদের সুন্নী দাবী করার অসারতা বুঝে উঠতে পারে। শুধুমাত্র তাদের বাহ্যিক চাল-চলন, বক্তৃতা-বিবৃতি এবং সর্বোপরি ইসলামী অনুশাসন কায়েমের লক্ষ্যে আকর্ষণীয় বক্তব্য শুনে নিজেকে এসব দলে জড়িয়ে ফেলেছেন। তারা যেন ঈমান-আক্বীদার সর্বাধিক গুরুত্ব অনুধাবন করে ঐসব দলের মৌলিক দূর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে নিজ অবস্থানের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সাথে সাথে ঐসব ভাইদের উদ্দেশ্যেও যারা সুন্নী-ওহাবী বা সুন্নী মওদুদী মতভেদকে খুঁটিনাটি বিষয় বলে মন্তব্য করে এগুলোর গভীরে যেতে বাধা সৃষ্টি করে এবং এ মতভেদের জন্য ঢালাও ভাবে সুন্নী ওলামা কেরামকে দায়ী করে থাকে।
প্রিয় পাঠক বৃন্দ!
আল্লাহ মিথ্যা বলতে পারেন, রাসুল করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের অদৃশ্য জ্ঞান যায়েদ, আমর, শিশু, পাগল, চতুষ্পদ জন্তু ও সকল জীব-জন্তুর জ্ঞানের মত, তিনি দেয়ালের পেছনের বিষয়ও জানেনা, তিনি বড় ভাইয়ের মত, তিনি মানবীয় দূর্বলতা থেকে মুক্ত নন, তিনি নবুওয়্যাতের তেইশ বছরে অনেক ভুলক্রটি করেছেন ইত্যাদি বিষয় গুলো কি খুটি নাটি? এসব বিশ্বাস কি কোরআন সুন্নাহ সম্মত? এ ধরণের বিশ্বাস পোষণ করলে কি ঈমান নষ্ট হবে না? এসব তো তাদের লিখিত এবং এসব কারণে মুসলমানদের মধ্যে দলাদলি নিশ্চিত। তদুপরি এসব বিষয় লিখাও হয়েছে মুসলমানদের মধ্যে দলাদলি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে। সুতরাং তাদের লিখিত আপত্তিকর বিষয়ের ফলে সৃষ্ট দলাদলির জন্য সুন্নী আলেমগণ কেন দায়ী হবেন?
অতএব, আসুন!
উপরোক্ত আপত্তিকর বিষয় গুলোকে বর্জন পূর্বক ইসলামের একমাত্র সঠিক রূপরেখা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত" এর আক্বীদাকে শক্তহাতে ধারণ করে ইসলামের শাশ্বত আদর্শ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ ভাবে অগ্রসর হই। আল্লাহ তা'আলা ও তার প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহায় হোন।
আমিন! বেহুরমাতি সাইয়্যেদিল মুরসালিন সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়া আসহাবিহী ওয়া আউলিয়া-এ- মিল্লাতিহী ওয়া ওলামা-এ-উম্মাতিহী আজমাঈন।
তথ্যপুঞ্জি
০১. কোরআন শরীফ
০২. কানযুল ইমানঃ ইমাম আহমদ রেযা খাঁ বেরলভী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)
০৩. তাফসীর-এ-খামাইনুল ইরফানঃ সদরুল আফাযিল আল্লামা ননঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)
০৪. বোখারী শরীফঃ ইমাম মুহম্মদ ইবনে ইসমাইল বোখারী (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি)
০৫. মুসলীম শরীফঃ ইমাম মুসলীম ইবনে হাজ্জাজ কুশারী (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি)
০৬. নাসায়ী শরীফঃ ইমাম আহমদ ইবনে শোয়াইব আন্নাসায়ী (রাহমাতুলাহি আলাইহি)
০৭. আবু দাউদ শরীফঃ ইমাম আবু দাউদ সুলাইমান ইবনে আশআছ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)
০৮. তিরমিযী শরীফঃ ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ঈসা তিরমিযী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)
০৯. ইবনে মাজাহ শরীফঃ ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইয়াজিদ ইবনে মাজা কাহিনী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)
১০. মিশকাত শরীফঃ ইমাম অলী উদ্দীন খতীব তিবরিযী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)
১১. নুরুল আনওয়ারঃ আল্লাম শেখ আহমদ মোল্লা যিওয়ান (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)
১২. কিতাবুল মিলাল ওয়ান্নাহাল ১ম খন্ডঃ ইমাম আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইবনে আবদুল করিম
আশশাহরাস্তানী, ওফাত ৫৪৭ হিজরী, দারুন্নাদওয়াজিল জাদীদা, বৈরুত, লেবানন
১৩. নুরুল ইযাহঃ মুহাম্মদ সাঈদ এত সন্স তাহেরানে কুতুব, কোরআন মহল, মৌং মোছাফের খানা, করাচী, পাকিস্তান
১৪. সিরাতে মুস্তাকীমঃ মৌং ইসমাইল দেহলভী, এদারাতুর রশিদিয়া, দেওবন্দ ইউ পি
১৫. নিবরাসঃ আল্লামা মুহাদ্দিস আবদুল আজীজ পরহারভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, শাহ আবদুল হক একাডেমী, দারুল উলুম মুজাহেরিয়া এমদাদিয়া বন্দিয়াল শরীফ
১৬. তারীখে মাযহাবে শিয়া (উর্দুঃ) মৌং আবদুস শুকুর , দারুল এশায়াত, করাচী
১৭. ইরানী ইনকিলাব (উর্দুঃ) মৌং মুহামদ মানযুর নো'মানী
১৮. মাসিক বাইয়্যেনাত (উর্দু: তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশকঃ মুহাম্মদ ফিরোজ, এজুকেশনাল প্ৰেস, করাচী
১৯. ইসলাম আওর খামেনী মাযহাব (উর্দুঃ) মৌং বদর আলকাদেরী, আল মাজমাউল ইসলাম, মুবারকপুর, আযমগড়, ইউ, পি, প্রথম সংস্করণ জুন ১৯৯৪
২০. ইমাম আহমদ রেযা আওর রদ্দে শিয়া (উর্দু: মৌং আবদুল হাকিম শরফ কাদেরী, প্রকাশকঃ বযমে কাসেম বরাতী, ১২৩ ছাপলা ইস্ত্ৰিট, কাহাবাদার, করাচী। প্রথম সংস্করণ ১৯৮৬
২১. শিয়া-সুন্নী ইখতেলাফ (উর্দু); মৌং ওবাইদুল হক জালালাবাদী, সাবেক প্রধান মুদাররিস, সরকারী আলীয়া মাদ্রাসা, ঢাকা। প্রকাশকঃ মজলিছে এলমী-জামেয়া ইসলামীয়া মাদানীয়া, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা। প্রথম সংস্করণ ১৯৮৪
২২. শিয়া ধর্ম (বাংলা)ঃ শায়খুল হাদিস আল্লাম ফজলুল করিম নকশবলী (রাহমাতুল্লাহিন আলাইহি), সাবেক প্রধান মুহাদিস, জামেয়া আহমদীয়া সুন্নীয়া আলীয়া মদ্রাসা,ষোলশহর, চট্টগ্রাম
২৩. ফতোয়া -এ-আযীযীয়া (বাসীঃ) হযরত আল্লামা শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)
২৪. শীঈয়াত ও মোতা (উর্দুঃ) মৌং রফিক আহমদ, প্রাকশকঃ আশরাফীয়া নাইব্রেরী, জামেয়া ইসলামীয়া রোড, পটিয়া,চট্টগ্রাম
২৫. মুসলিম সংস্কৃতির ইতিহাসঃ আরাফাত পাবলিকেশন, ১১ প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০ পুনঃ মুদ্রণ ১৯৯৫
২৬. আনওয়ারে আফতাবে সাদাকাত (উর্দুঃ) আল্লামা কাযী ফজল আহমদ সুন্নী হানাফী, নকশবন্দী, মুজাদ্দদেদী, প্রকাশনায়ঃ কুতুব খানা এ সিমনাবী আন্দরকোট, মিরাট, ভারত
২৭. তাকবিয়াতুল ঈমানঃ মৌং ইসমাঈল দেহলভী। মাকতাবাএ-থানভী দেউবন্দ, সংস্করণ ১লা এপ্রিল ১৯৮৪
২৮. আহকামুদ্দাওয়াতিল মুবাওয়াজাঃ মুফতী ফয়সুল্লাহ সাহেব, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম, প্রকাশনায়ঃ আঞ্জুমানে এহইয়ায়ে সুন্নাত, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম
২৯ রেসালায়ে হাতেফঃ কারী মৌং রশীদ আহমদ সাহেব চাটগামী, কুতুবখানা রশিদী ঈসাপুর রোড, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম
৩০. দেওবন্দী আকাঈদঃ প্রকাশনায়ঃ নায়েবে জামাতে আহলে সুন্নাত, রশীদ নগর, নায়াল ছাহেব রোড, নাকপুর ১৮
৩১. জামালে হকঃ আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী আশরাফী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। প্রকাশনায়: মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁ নঈমী কুতুবখানা, গুজরাট, পাকিস্তান
৩২. তারীখে ওহাবীয়াঃ মৌং আবুল হাসান মুহাম্মদ রমযান কাদেরী শিরকাতে কাদেরীয়া শানজুরো,সিন্ধু প্রদেশ, পাকিস্তান
৩৩. আদদুরারুচ্ছানীয়াঃ শায়খুল ইসলাম আল্লামা সৈয়দ আহমদ ইবনে যি'নী দাহলান মক্কী শাফেয়ী,ইস্তাম্বুল সংস্করণ ১৯৭৮
৩৪. ফিতনাতুল ওহাবীয়াঃ শায়খুল ইসলাম আল্লামা সৈয়দ আহমদ ইবনে যি'নী দাহলান মক্কী শাফেয়ী,ইস্তাম্বুল সংস্করণ ১৯৭৮
৩৫. কিতাবুত তাওহীদ ও মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদী, মীর মুহাম্মদ কুতুব খানা, মারকাযে ইলম ও আদব, আরামবাগ, করাচী
৩৬. আততাযীরু মিনাল বেদআ (বাংলাঃ) শেখ আবদুল আযীয বিন ব্যয, প্রধান কর্মকর্তা, ইসলামী গবেষণা ও প্রচারণা পরিষদ, সৌদী আরব। প্রকাশনায়ঃ জামেয়া সালাদিয়া ত্রিশাল, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ
৩৭. আত তাওয়াসসুল বিন্নবী ওয়া জাহলাতুল ওহাবীয়ীনঃ আল্লামা আবু হামেদ ইবনে মারযুক, ইস্তাম্বুল, তুৰ্কী, সংস্করণ ১৯৭৬
৩৮. তারীখে নজদ ও হেজাযঃ আল্লামা মুফতী আবদুল কাইয়ুম কাদেরী, তাজেদারে হেরম পাকলিকেশিং কোং, হাওড়া, ভারত। প্রথম সংস্করণ ১৩৯৮ হিজরী
৩৯. বারাহীনে কাতেয়াঃ মৌং খলীল আহমদ আম্বিটভী, মাকতবা-এ-বেলালী, সাডোরা, ভারত
৪০. আশশেহাবুচ্ছাাকিব: মৌং হোসাইন আহমদ মাদানী দেওবন্দী সাহেব, কুতুবখানা এযাযীয়া, দেওবন্দ, ছাহারামপুর
৪১. আল ঈমান ওয়াল ইসলামঃ হযরতুল আল্লামা যিয়াউদ্দীন বাগদাদী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইস্তাম্বুল, তুর্কী
৪২. ওহাবী চিন্তাধারাঃ আশরাফ জাহাঙ্গীর একাডেমী, চট্টগ্রাম
৪৩. আকাবেরে দেওবন্দকা তাকফিরী আফসানাঃ মৌং হাসান আলী রেজাভী কাদেরী, মাকতাবা-এ-ফারদীয়া, জিন্নাহ রোড, সাহিইউয়াল
৪৪. হেকায়াতে আউলিয়া : মৌং আশরাফ আলী খানভী ও মৌং কারী মুহাম্মদ তৈয়ব, মুহতামিম দেওবন্দ মাদ্রাসা
৪৫. তাবলিগ দর্পন। হাফেজ মুঈনুল ইসলাম, প্রাক্তন কর্মকতা, ইসলামীক ফাউন্ডেশন, দ্বিতীয় সংস্করণ ১৯৮০
৪৬. তাবলিগ জামাতঃ আল্লামা আরশাদ দ আলকাদেরী, মাকতাবা-এ-জামে নুর, জামশিদপুর, বিহার, ভারত
৪৭. মালফুযাতে ইলিয়াসঃ মৌং মানযুর নোমানী, আল ফোরকান বুক ডিপো, ৩১ নয়াগাঁও, মাগরাবী, লখনো, ভারত । সংস্করণ ১৯৭৮
৪৮. বেহেস্তী যেওয়ারঃ মৌং আশরাফ আলী খানভী, নিউ তাজ অফিস, দিল্লী, ভারত
৪৯. বদরপুরের বাহাস; প্রকাশক। মোঃ মনিরুল হক, চেয়ারম্যান ৮নং মাইবাখার ইউনিয়ন পরিষদ, খাদা- চান্দিনা, কুমিল্লা
৫০. ইসলামী জামাতঃ হযরত আল্লামা মুফতি রেফাকাত হোসাইন সাহেব (রাহমাতুঙ্গাহি আলাইহি), আনাইদ বুক ডিপো, পারর্ক মঞ্জিল, ওয়াজিদারা, বানিসর, উড়িষ্যা, ভারত
৫১. কাশফুশ শোবহা আনিল জামাআতিত তাবলিগীয়াঃ ইশিক ভাকফী, ইস্তাম্বুল, তুর্কী ১৯৮০
৫২. তারীখে ইসলাম খেলাফতে রাশেদা ও বনু উমাইয়ঃ আল্লামা মূফতি আমিমূল ইহসান (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), কোরআন মনযিল, বাবুবাজার, ঢাকা
৫৩. তালবীসে-এ-ইবলিসঃ ইমাম ইবনে যৌযী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), মকতাবা এ-থানভী, দেওবন্দ, ইউ, পি
৫৪. মিরকাত শরহে মিশকাত ১ম খন্ডঃ মোল্লা আলী কারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি), মৌলভী মুহাম্মদ ইবনে গোলাম রসূল সুরতী সন্স, ১৩২/১৩৪ নং জামানী মহল্লা বোম্বাই
৫৫. বাহরুর বায়েক ৮ম খন্ডঃ আল্লামা মুহাম্মদ ইবনে হোসাইন ইবনে আলী আততৌরী দারুল কুতুবিল আরাবিয়াতিল কুবরা, মিশর
৫৬. মিরআত শরহে মিশকাত ১ম খন্ডঃ হাকিমুল উম্মত আল্লামা মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী আশরাফী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) নঈমী কুতুৰ খানা, গুজরাট, পাকিস্তান
৫৭. জামাতে ইসলামী কা শীষমহলঃ আল্লামা মোস্তাক আহমদ নেযামী, মাকতাবাএ পাছবাঁ, ভারত
৫৮. মাওঃ মওদুদী কে ছাত মেরী রেফাকাত কী ছারওযিস্ত আওর আব মেরা মাওকাফঃ মৌং মুহাম্মদ মানযুর নোমানী, আল ফোরকান বুক ডিপো ৩১ নয়াগাঁও মাগরবী, নযীরাবাদ, লখনো
৫৯. ইসলামের হাকীকতঃ মৌং মওদূদী, ইসলামীক পাবলিকেশন্স লিঃ ১৬ বায়তুল মোকাররম (দোতলা) ঢাকা। ১০ম প্রকাশ- ১৯৭৬
৬০. মিষ্টার মওদূদীর নতুন ইসলামঃ মাওলানা হাবীবুর রহমান মূসা, লৌহজং বিক্রমপুর, প্রকাশকাল ১৯৮৫
৬১. মওদুদী ছাহেব আকাবেরে উম্মত কী নযর মেঃ মাও. হাকীম মুহাম্মদ আখতার ছাহেব, কুতুব খানা এশাআতুল উলুম, ছাহারানপুর, ভারত
৬২. জামাতে ইসলামীঃ আল্লামা আরশাদ আলকাদেরী, মাকতাবাতুল হাবীব, জামেয়া হাবীৰীয়া, ইলাহাবাদ, ভারত
৬৩. লন্ডনের ভাষণঃ মৌং মওদুদী, জুলকারনাইন পাবলিকেশন্স, ঢাকা, মুদ্রণ অক্টোবর ১৯৭৬
৬৪. আসসবহুল জাদীদঃ ত্রৈমাসিক আরবী পত্রিকা, ৪র্থ বর্ষ, ২য় সংখ্যা, রবীউসসানী-রজব, ১৪০৪ হিজরী পটিয়া জমিরিয়া মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম
৬৫. আততাওহীদঃ মাসিক পত্রিকা, বর্ষ ২৭, সংখ্যা ৮, রবিউসসানী ১৪১৮ হিজরী জামেয়া ইসলামীয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম