নাহমাদুহু ওয়া নুছাল্লী নুছাল্লিমু আলা রাসুলিহীল কারীম।
:
বর্তমান সময়ে হযরত নবী করিম (দঃ) কে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হওয়ার প্রতিবন্ধকতা হিসেবে নাস্তিক ভাইয়েরা যে অভিযোগটি বারবার সামনে নিয়ে আসে তা হলো নবীজির সাথে মা আয়েশার বিয়ে ও বয়স।
আয়েশার বয়স শুধু ঐতিহাসিক একটা তথ্য, এর কোন ব্যবহারিক মূল্য নেই। এ সংক্রান্তে কোরআনে বা অন্য আর কোথাও কিছু বর্ণিত হয়নি। হাদিসের যে অংশ কোরানের সাথে সামন্জস্যপূর্ণ সেটাই গ্রহণ করা উচিত। এখানে গোঁড়ামীর আশ্রয় নেয়া কাম্য নয়। একটি হাদীসের সাথে অন্য হাদীসের অসমাঞ্জস্য থাকলে, কোরআনের সাথে মিলিয়ে সত্যটা গ্রহন করতে হবে। এর জন্যে অন্যান্য সকল হাদীসে সন্দেহ পোষন কোনভাবেই কাম্য নয়। হাদীস সংগ্রাহকদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাও অবান্তর। বর্ণনাকারীর ভুল হলে সেটার জন্যে হাদীস সংগ্রাহককে দোষারোপ করা একটি সুষ্পষ্ট জুলুম। যে হাদীস আল-কোরআনের সাথে কন্ট্রাডিক্ট করবে সেক্ষেত্রে কোরআনই প্রাধান্য পাবে। এটাই ইসলামের শ্বাশত বিধান।
:
এ ব্যাপারে আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা বিভিন্ন সময়ে তথ্য উপাত্তভিত্তিক যথোপযুক্ত উত্তর প্রদান করে সঠিক বিষয়টি সবার সামনে তুলে ধরেছেন।আলহামদুলিল্লাহ!যাই হোক আজকে আমার আলোচনার বিষয় মা আয়েশার বিয়ে কি আদৌ ছয় বছর বয়সে হয়েছিল??নাকি এর চেয়েও বেশী..... প্রথমেই আমরা একটু পর্যবেক্ষন করবো মা আয়েশার বিবাহ সংক্রান্ত হাদিছগুলো...আয়েশার ছয় বছর বয়সে বিয়ে সংক্রান্ত কুতুবে সিত্তাতে যে হাদিছগুলো এসেছে তা একটি খবরে ওয়াহিদ হাদিছ যা হিসাম ইবনে উরওয়া নামক এক রাবী বর্ণনা করেছেন।তার এ বর্ণনায় যে তালগোল পাকিয়ে গন্ডগোল লাগিয়েছেন এবং এ বর্ণনার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন তার যথেষ্ট কারণ বিদ্যমান আছে...
:
বর্তমান সময়ে হযরত নবী করিম (দঃ) কে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হওয়ার প্রতিবন্ধকতা হিসেবে নাস্তিক ভাইয়েরা যে অভিযোগটি বারবার সামনে নিয়ে আসে তা হলো নবীজির সাথে মা আয়েশার বিয়ে ও বয়স।
আয়েশার বয়স শুধু ঐতিহাসিক একটা তথ্য, এর কোন ব্যবহারিক মূল্য নেই। এ সংক্রান্তে কোরআনে বা অন্য আর কোথাও কিছু বর্ণিত হয়নি। হাদিসের যে অংশ কোরানের সাথে সামন্জস্যপূর্ণ সেটাই গ্রহণ করা উচিত। এখানে গোঁড়ামীর আশ্রয় নেয়া কাম্য নয়। একটি হাদীসের সাথে অন্য হাদীসের অসমাঞ্জস্য থাকলে, কোরআনের সাথে মিলিয়ে সত্যটা গ্রহন করতে হবে। এর জন্যে অন্যান্য সকল হাদীসে সন্দেহ পোষন কোনভাবেই কাম্য নয়। হাদীস সংগ্রাহকদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাও অবান্তর। বর্ণনাকারীর ভুল হলে সেটার জন্যে হাদীস সংগ্রাহককে দোষারোপ করা একটি সুষ্পষ্ট জুলুম। যে হাদীস আল-কোরআনের সাথে কন্ট্রাডিক্ট করবে সেক্ষেত্রে কোরআনই প্রাধান্য পাবে। এটাই ইসলামের শ্বাশত বিধান।
:
এ ব্যাপারে আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা বিভিন্ন সময়ে তথ্য উপাত্তভিত্তিক যথোপযুক্ত উত্তর প্রদান করে সঠিক বিষয়টি সবার সামনে তুলে ধরেছেন।আলহামদুলিল্লাহ!যাই হোক আজকে আমার আলোচনার বিষয় মা আয়েশার বিয়ে কি আদৌ ছয় বছর বয়সে হয়েছিল??নাকি এর চেয়েও বেশী..... প্রথমেই আমরা একটু পর্যবেক্ষন করবো মা আয়েশার বিবাহ সংক্রান্ত হাদিছগুলো...আয়েশার ছয় বছর বয়সে বিয়ে সংক্রান্ত কুতুবে সিত্তাতে যে হাদিছগুলো এসেছে তা একটি খবরে ওয়াহিদ হাদিছ যা হিসাম ইবনে উরওয়া নামক এক রাবী বর্ণনা করেছেন।তার এ বর্ণনায় যে তালগোল পাকিয়ে গন্ডগোল লাগিয়েছেন এবং এ বর্ণনার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন তার যথেষ্ট কারণ বিদ্যমান আছে...
হিশাম ইবনে উরওয়া’র স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা সম্পর্কে : হিশাম ইবনে উরওয়া কর্তৃক বর্ণিত মওকূফ হাদীসটির বর্ননাকারীদের শেষ ব্যক্তি হিশাম ইবনে উরওয়া । তিনি তার পিতা থেকে হাদীসটি শুনেছিলেন। হাদীসটি মূলত খবরে ওয়াহিদ স্তরের একটি হাদীস। হিসাম ইবনে উরওয়া তিনি তার জীবনের প্রথম ৭১ (একাত্তর) বছর মদিনায় কাটালেও এ মর্মে কোনো হাদীস মদিনার কেউ তার নিকট থেকে শোনেনি। এমনকি তার বিখ্যাত ছাত্র হযরত মালিক বিন আনাস (রহ)ও এরকম কোনো হাদীস উল্লেখ করেননি। হিশাম ইবনে উরওয়া তিনি জীবনের শেষ দিনগুলো ইরাকে অতিবাহিত করেন । একারণেই হাদীসটির বর্ননাকারীদের অবশিষ্ট সকলেই ইরাকের অধিবাসী। তার সম্পর্কে যা জানা যায় তা হল-
ইমাম ইয়াকুব ইবনে শাইবাহ (রহ) বলেছেন : “হিশাম ইবনে উরওয়া’র যেসব হাদিস ইরাকিরা বর্ণনা করেন শুধুমাত্র সেগুলো ছাড়া সকল হাদীসই বিশ্বাসযোগ্য ।”
ইমাম মালিক বিন আনাস যিনি হিশাম ইবনে উরওয়া’র ছাত্র ছিলেন, তিনি ইরাকিদের মাধ্যমে বর্ণিত হিশামের হাদীসগুলোকে সন্দেহ করে সেগুলো বাতিল করে দেন। মালিক বিন আনাস (রহ)-এর বক্তব্য :
ﺃﻥَّ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻣﺎﻟﻚ ﻗﺎﻝ: ﺇﻥَّ ﺣﺪﻳﺚ ﻫﺸﺎﻡ ﺑﺎﻟﻌﺮﺍﻕ ﻻ ﻳﻘﺒﻞ .
অর্থ – নিশ্চয় ইরাকি রাবী থেকে হিশামের কোনো রেওয়ায়েত গ্রহণযোগ্য নয়। (সুত্র – তাহযীবুত তাহযীব, লেখক ইবনে হাজার আসকালানী (রহ); বইটি হাদীস বর্ণনাকারীদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে লিখিত।)
ইমাম মালেক (রহ)বলেছেন, সে শেষ বয়সে ( তথা ৭১ বছর বয়সে) মদিনা থেকে ইরাক চলে যাওয়ার পর স্মৃতিশক্তি হারিয়ে পেলেছিল। ফলে তার বর্ণনায় অনেক কিছুই উল্টোপাল্টা হয়ে যেত। সেজন্য তার থেকে কোনো ইরাকী রাবি যত হাদিসই বর্ণনা করবে, সেগুলো গ্রহণযোগ্য হবেনা। (উল্লেখ্য, বুখারী শরীফে হযরত হিশাম বিন উরওয়া তিনি ইরাকি রাবী থেকেই এটি বর্ণনা করেছেন)। [সূত্র : তাহযীবুত তাহযীব, লেখক ইবনে হাজার আসকালানী (রহ)]
প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ ইমাম আবুল হাসান ইবনে ক্বাত্তান (রহঃ) ‘বায়ানুল ওয়াহাম ওয়াল ইবহাম‘ (بيان الوهم و الإبهام) কিতাবে লিখেছেন – أن هشام اختلط في آخر عمره অর্থ – হিশাম ইবনে উরওয়া শেষ বয়সে উল্টাপাল্টা করে পেলত।’
ইমাম যাহাবী (রহঃ) ‘মিযানুল ই’তিদাল‘ কিতাবের ৪র্থ খন্ডের ৩০১-৩০২ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন – هشام بن عروة أحد الأعلام، حجة إمام، لكن في الكبر تناقض حفظه و لم يختلط أبداً. অর্থ – হিশাম ইবনে উরওয়া (রহঃ) তিনি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অন্যতম ছিলেন। নির্ভরযোগ্য ইমাম ছিলেন। তবে বৃদ্ধাবস্থায় তার স্মৃতিলোপ পায় অথচ (ইতিপূর্বে) তিনি কখনো উল্টাপাল্টা করেননি।’
এবার দেখুন মুহাদ্দিছগনের উপরোক্ত মতামত অনুযায়ী উরওয়া ইবনে হিশামের তাদলিসের চিত্র।
সহীহ বুখারী সহ বেশ কয়েকটি গ্রন্থে হাদিছটি এসেছে তা নিম্নরূপ।
أَخْبَرَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ أَنْبَأَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، قَالَ حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تَزَوَّجَهَا وَهِيَ بِنْتُ سِتٍّ وَبَنَى بِهَا وَهِيَ بِنْتُ تِسْعٍ .
Grade: Sahih (Darussalam)
Reference : Sunan an-Nasa'i 3255
In-book reference : Book 26,
Hadith 60
English translation : Vol. 4,
Book 26, Hadith 3257
In-book reference : Book 26,
Hadith 60
English translation : Vol. 4,
Book 26, Hadith 3257
অর্থাৎ হিসাব ইবনে উরওয়া তিনি তার পিতা থেকে শুনেছেন এবং তিনি রাবী আবু মুয়াবিয়ার কাছে বর্ণনা করছেন মা আয়েশার ছয় বছর বয়সে বিয়ে হয় নয় বছর বয়সে সংসার করেন।
এবার একই ব্যাক্তি থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিছ দেখুন邏
It was narrated that 'Aishah said:
"The Messenger of Allah married me when I was seven years old, and he consummated the marriage with me when I was nine."
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ النَّضْرِ بْنِ مُسَاوِرٍ، قَالَ حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ سُلَيْمَانَ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ تَزَوَّجَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِسَبْعِ سِنِينَ وَدَخَلَ عَلَىَّ لِتِسْعِ سِنِينَ .
Grade: Sahih (Darussalam)
Reference :{নাসায়ী}
অর্থাৎ মা আয়েশার সাত বছর বয়সে বিয়ে হয় এবং নয় বছর বয়সে নবীজির সাথে সংসার করেন।
প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন পূর্বে তিনি আবু মুয়াবিয়ার কাছে বর্ণনা করেছিলেন ছয় বছর আবার সেই একই ব্যাক্তি হিসাম ইবনে উরওয়া জাফর ইবনে সোলায়মানের কাছে বর্ণনা করছেন মা আয়েশার সাত বছর বয়সে বিয়ে হয় নয় বছর বয়সে নবীজির সংসারে যান।
দ্যাট মিনস বুঝা যাচ্ছে উরওয়া এখানে তাদলিস করেছেন।তাছাড়া ইসলামি শরীয়তে উলুমুল হাদিছের নীতিনুযায়ী যখন একজন রাবী থেকে ভিন্ন ভিন্ন রেওয়ায়েত আসবে তখন তাকে বলা হয় মুযতারিব রাবী আর মুযতারিব রাবীর হাদিছ সহীহ হলেও "লাইসা ফি হুজ্জত" অর্থাৎ দলীল হিসেবে গণ্য নয়।সুতরাং সেই দৃষ্টিকোন থেকে আইনী মাসআলায় হিসাম ইবনে উরওয়ার এই তথ্যটি প্রত্যাখাত।
:
তবে অন্য সহীহ সূত্রে নয় বছর বয়সে বিয়ে সংক্রান্ত মা আয়েশা থেকে হাদিছ নাসায়ী {5355 ইফাঃ} শরীফে বর্ণিত হয়েছে কিন্তু তা হচ্ছে মা আয়েশার ক্বওল অর্থাৎ মওকূপ হাদিছ নবীজির মারফু হাদিছ নয়।আর পবিত্র কুরআনের মোকাবেলায় সাহাবীর মওকূপ হাদিছ কখনই ঠিকে থাকার যোগ্যতা রাখেনা।এ ব্যাপারে কুরআন কি বলে দেখুনঃ
দ্যাট মিনস বুঝা যাচ্ছে উরওয়া এখানে তাদলিস করেছেন।তাছাড়া ইসলামি শরীয়তে উলুমুল হাদিছের নীতিনুযায়ী যখন একজন রাবী থেকে ভিন্ন ভিন্ন রেওয়ায়েত আসবে তখন তাকে বলা হয় মুযতারিব রাবী আর মুযতারিব রাবীর হাদিছ সহীহ হলেও "লাইসা ফি হুজ্জত" অর্থাৎ দলীল হিসেবে গণ্য নয়।সুতরাং সেই দৃষ্টিকোন থেকে আইনী মাসআলায় হিসাম ইবনে উরওয়ার এই তথ্যটি প্রত্যাখাত।
:
তবে অন্য সহীহ সূত্রে নয় বছর বয়সে বিয়ে সংক্রান্ত মা আয়েশা থেকে হাদিছ নাসায়ী {5355 ইফাঃ} শরীফে বর্ণিত হয়েছে কিন্তু তা হচ্ছে মা আয়েশার ক্বওল অর্থাৎ মওকূপ হাদিছ নবীজির মারফু হাদিছ নয়।আর পবিত্র কুরআনের মোকাবেলায় সাহাবীর মওকূপ হাদিছ কখনই ঠিকে থাকার যোগ্যতা রাখেনা।এ ব্যাপারে কুরআন কি বলে দেখুনঃ
"এতিমদের প্রতি বিশেষ নজর রাখবে যে পর্যন্ত না তারা বিয়ের বয়সে পৌঁছে। যদি তাদের মধ্যে বুদ্ধি-বিবেচনার উন্মেষ আঁচ করতে পার, তবে তাদের সম্পদ তাদের হাতে অর্পন করতে পার।"
:
(সুরা নিসা আয়াত ৬)
:
(সুরা নিসা আয়াত ৬)
এ আয়াতের দিকে লক্ষ্য করলে কোন অবস্থাতেই ইসলাম বাল্য বিবাহকে সমর্থন করে বলে মনে হয়না।তাছাড়া ঐতিহাসিক তথ্য এবং অপরাপর সহীহ হাদিছ দ্বারা আরেকটি সহীহ হাদিছকে rejected করা যায় যার আলোচনা সামনে আসছে।
:
এবার আসুন মা আয়েশা থেকে আরো কিছু হাদিছ বর্ণিত হয়েছে তা একটু দেখি...
:
এবার আসুন মা আয়েশা থেকে আরো কিছু হাদিছ বর্ণিত হয়েছে তা একটু দেখি...
১) হযরত আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আমি আল্লাহর রাসুলের উপস্থিতিতে পুতুল নিয়ে খেলা করতাম আমার বান্ধবীরাও আমার সাথে খেলত। যখন আল্লাহর রাসুল (সঃ) বাড়ীতে প্রবেশ করতেন, তখন ওরা পুতুলগুলো লুকিয়ে নিত। কিন্তু তিনি (সঃ) তাদেরকে আমার সাথে একত্রে খেলতে বলতেন। [সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৬১৩০ ; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-২৪৪০ ]
(২) একবার রাসুল (সঃ) ঘরে কিছু পুতুল দেখতে পেয়ে আয়িশা (রাঃ) কে বললেন, এগুলো কী? তিনি (রাঃ) বললেন, এগুলো আমার পুতুল। এগুলোর মধ্যে একটি পাখাওয়ালা ঘোড়া ছিল। [সহিহ আবু দাউদ, হাদিস নং-২২৮১৩]
জবাব : আমরা হাদিস গুলোর অনেক জবাব দিয়েছি। তবে সংক্ষেপে এতটুকু জেনে নিন যে, ১নং হাদিসের বিষয়বস্তু হযরত আয়েশা’র বিয়ের আগের সময়ের সাথে এবং বাপের বাড়ির সাথেই সম্পর্কিত। কারণ, সাধারণত বাপের বাড়িতে থাকাকালেই বান্ধবীদের সাথে মেলামেশার সুযোগ থাকে। হাদিসের বর্ণনাভঙ্গি কিন্তু এটাই বুঝাচ্ছে। আর তখন হযরত আয়েশার বিয়ে হবার প্রশ্নই আসতে পারেনা। কারণ তখনো পর্যন্ত তিনি শিশুই ছিলেন। সুতরাং হাদিসটি সহিহ এবং বিশ্লেষণ এটাই। অতএব, এটি আমার নাতিদীর্ঘ তথ্যভিত্তিক রচনার বিরুদ্ধে যায়নি।
.
আর পরের হাদিসটির বিষয়বস্তু অবশ্য বিয়ের পরে ও স্বামীর বাড়িতে থাকাকালীন সময়ের সাথেই সম্পর্কিত। আর এখানে সূক্ষ্ণভাবে চিন্তা করলে বুঝবেন যে, এ হাদিসে হযরত আয়েশার (রা) বক্তব্যটি কিভাবে রয়েছে? এখানে তিনি পুতুলগুলো নিজের সেলপ বা আলমারিতে সযত্নে রেখে দেয়ার কথাই বলতে চেয়েছেন, কিন্তু পুতুল নিয়ে খেলাধুলা করতেন—এরকম কোনো কথারই তিনি বলেননি কিংবা বলার কোনো প্রমাণও নেই। হাদিসের ভাষ্য দেখুন: ” এগুলো আমার পুতুল। এগুলোর মধ্যে একটি পাখাওয়ালা ঘোড়াও ছিল।” (সহিহ আবু দাউদ, হাদিস নং-২২৮১৩ )।
.
অতএব বুঝা গেল যে, পরের রেওয়ায়ত দ্বারা হযরত আম্মাজান আয়েশা (রা) তিনি যেন বুঝাতে চেয়েছেন যে, আমি ইতিপূর্বে এ পুতুলগুলো নিয়ে বান্ধবীদের সাথে বাপের বাড়িতে খেলাধুলা করেছিলাম। বিয়ের সময় স্বামীর বাড়িতে স্মৃতিস্বারক হিসেবে সেগুলো সংগে করে নিয়েও আসি। স্বামীর বাড়িতে নিজের নিকট এগুলো যত্নের সাথে রেখে দিই। প্রিয় স্বামী মুহাম্মদ (সা) একদা এসব পুতুল দেখে পেললেন। অমনি তিনি এক প্রকারের বিস্ময়ের স্বরে জিজ্ঞেস করলেন “এগুলো কী, হে আয়েশা!“। হাদিসের বর্ণনাভঙ্গি এমনটাই বুঝাচ্ছে। একটু গভীর ভাবে চিন্তা করে হাদিস দুটো উপলব্ধি করতে হবে।
.
সুতরাং, বলা যায় যে, উপরুল্লিখিত হাদিস দুটো আপন আপন জায়গায় সঠিক। শুধুমাত্র আমাদের বুঝার সমস্যা। অতএব এ হাদিসও আমার নাতিদীর্ঘ লেখাটির বিরুদ্ধে যায়নি। কেননা, এ হাদিস দ্বারা আর যাইহোক—হযরত আয়েশা তিনি স্বামীর বাড়িতে থাকাকালেও পুতুল খেলেছেন এরকম কোনো কথা বুঝায়নি।
.
আর পরের হাদিসটির বিষয়বস্তু অবশ্য বিয়ের পরে ও স্বামীর বাড়িতে থাকাকালীন সময়ের সাথেই সম্পর্কিত। আর এখানে সূক্ষ্ণভাবে চিন্তা করলে বুঝবেন যে, এ হাদিসে হযরত আয়েশার (রা) বক্তব্যটি কিভাবে রয়েছে? এখানে তিনি পুতুলগুলো নিজের সেলপ বা আলমারিতে সযত্নে রেখে দেয়ার কথাই বলতে চেয়েছেন, কিন্তু পুতুল নিয়ে খেলাধুলা করতেন—এরকম কোনো কথারই তিনি বলেননি কিংবা বলার কোনো প্রমাণও নেই। হাদিসের ভাষ্য দেখুন: ” এগুলো আমার পুতুল। এগুলোর মধ্যে একটি পাখাওয়ালা ঘোড়াও ছিল।” (সহিহ আবু দাউদ, হাদিস নং-২২৮১৩ )।
.
অতএব বুঝা গেল যে, পরের রেওয়ায়ত দ্বারা হযরত আম্মাজান আয়েশা (রা) তিনি যেন বুঝাতে চেয়েছেন যে, আমি ইতিপূর্বে এ পুতুলগুলো নিয়ে বান্ধবীদের সাথে বাপের বাড়িতে খেলাধুলা করেছিলাম। বিয়ের সময় স্বামীর বাড়িতে স্মৃতিস্বারক হিসেবে সেগুলো সংগে করে নিয়েও আসি। স্বামীর বাড়িতে নিজের নিকট এগুলো যত্নের সাথে রেখে দিই। প্রিয় স্বামী মুহাম্মদ (সা) একদা এসব পুতুল দেখে পেললেন। অমনি তিনি এক প্রকারের বিস্ময়ের স্বরে জিজ্ঞেস করলেন “এগুলো কী, হে আয়েশা!“। হাদিসের বর্ণনাভঙ্গি এমনটাই বুঝাচ্ছে। একটু গভীর ভাবে চিন্তা করে হাদিস দুটো উপলব্ধি করতে হবে।
.
সুতরাং, বলা যায় যে, উপরুল্লিখিত হাদিস দুটো আপন আপন জায়গায় সঠিক। শুধুমাত্র আমাদের বুঝার সমস্যা। অতএব এ হাদিসও আমার নাতিদীর্ঘ লেখাটির বিরুদ্ধে যায়নি। কেননা, এ হাদিস দ্বারা আর যাইহোক—হযরত আয়েশা তিনি স্বামীর বাড়িতে থাকাকালেও পুতুল খেলেছেন এরকম কোনো কথা বুঝায়নি।
আশাকরি এবার সর্বসাধারণ মুসলিম এবং অমুসলিম সবার ভুল ভাঙ্গবে। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে সহিহ কথা এবং বিশুদ্ধ তথ্য মেনে তা প্রচার করার তাওফিক দিন, আমীন।
☆☆☆☆☆☆☆☆☆
{বিবাহের সময় মা আয়েশার সম্ভাব্য বয়স}♧
:
এ ব্যপারে যে বর্ণনাটি সবচেয়ে বেশী উদ্ধৃত হয় তা হচ্ছে রাসুল (সা.) যখন বিয়ের প্রস্তাব দেন তখন আয়েশা (রা.)-এর বয়স ছিল ছয় এবং তিনি যখন তাকে বিয়ে করেন তখন তার বয়স ছিল নয়। মানুষ এটাকে প্রতিষ্ঠিত সত্য বলে গ্রহন করে থাকে। কিন্তু যখন আমরা এসব বর্ণনা এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট সমস্ত বিষয়গুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করি, তখন আমরা দেখতে পাই, এসব বর্ণনা এমনকি প্রাথমিক নিরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হতে পারেনা।
:
এ ব্যপারে যে বর্ণনাটি সবচেয়ে বেশী উদ্ধৃত হয় তা হচ্ছে রাসুল (সা.) যখন বিয়ের প্রস্তাব দেন তখন আয়েশা (রা.)-এর বয়স ছিল ছয় এবং তিনি যখন তাকে বিয়ে করেন তখন তার বয়স ছিল নয়। মানুষ এটাকে প্রতিষ্ঠিত সত্য বলে গ্রহন করে থাকে। কিন্তু যখন আমরা এসব বর্ণনা এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট সমস্ত বিষয়গুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করি, তখন আমরা দেখতে পাই, এসব বর্ণনা এমনকি প্রাথমিক নিরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হতে পারেনা।
সর্বপ্রথম আমাদের যে বিষয়টি বুঝতে হবে তা হচ্ছে, রাসুল (সা)-এর সময় আরব সমাজের অধিকাংশই ছিল নিরক্ষর এবং খুব কম লোকই লিখতে বা পড়তে পারত। বড় বড় ঘটনাগুলোর সন তারিখ হিসেব রাখার জন্য যেখানে কোন নির্দিষ্ট ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হত না, সেখানে মানুষের জন্ম মৃত্যুর তারিখ হিসেব রাখার কথাতো বাদই দেয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আমরা পড়ি, রাসূল (সা.) জন্মগ্রহন করেছেন ‘হাতির বছরে’। হাতির বছর বলতে বোঝায় সেই বছর যে বার আবিসিনিয়ার সেনাপতি ইয়েমেন থেকে মক্কা এসেছিল এক বিরাট সেনাবাহি নী নিয়ে কাবা ঘর ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে। একটি বড় হাতি সৈন্য বাহিনীর সামনে মার্চ করে আসছিল আর তাই ঘটনাটি এবং বছরটি হাতির নামে পরিচিত হয়। রাসূল (সা.)-এর সময় আরবে মানুষের বয়স সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো বিভ্রান্তিকর এবং অনির্দিষ্ট ছিল।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সাধারণ ধারণা হচ্ছে, খাদিজা (রা.)-এর সাথে রাসূল (সা.)-এর বিয়ের সময় রাসুল (সা.)-এর বয়স ছিল ২৫ অন্যদিকে খাদিজা (রা.)-এর বয়স ছিল ৪০। “ইবনে হিশাম” রচিত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সিরাতগ্রন্থে এরকম উল্লেখ থাকলেও সে সময় রাসুল (সা.)-এর বয়স সম্পর্কে আরো দু’টি ভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে খাদিজা (রা.)-এর সাথে বিয়ের সময় রাসূল (সা.)-এর বয়স ছিল ৩০, অন্যটিতে বলা হয়েছে ২৯।
সে সময় খাদিজা (রা.) বয়স কত ছিল সে সম্পর্কেও বর্ণনার বিভিন্নতা আছে । কোথাও বলা হয়েছে সে সময় তার বয়স ছিল ৩৫ কোথাও বলা হয়েছে ২৫। রাসূল (সা.)-এর সাহাবীদের মধ্যে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্যদের একজন ছিলেন রাসূল (সা.)-এর চাচাতো ভাই ইবনে আব্বাস (রা.)। তার থেকে একটি বর্ণনা পাওয়া যায়, যেখানে তিনি বলেছেন, বিয়ের সময় রাসূল (সা.) ও তার স্ত্রী উভয়ের বয়সই ছিল ২৮ বছর।
খাদিজা (রা.)-এর গর্ভে রাসূল (সা.)-এর ছয়টি সন্তান জন্মগ্রহন করেছে। এদিক থেকে বিচার করলে বিয়ের সময় তার বয়স চল্লিশ ছিল এমন ধারণা করার উপায় নেই, অথচ এটাই হচ্ছে সবচেয়ে প্রচলিত বর্ণনা। প্রকৃতপক্ষে তার বয়স এর চেয়ে অনেক কম হবার কথা। তার বয়স ২৮ অথবা ২৫ ছিল এমন বর্ণনাই অনেক বেশী যুক্তিসঙ্গত মনে করা যেতে পারে।
যাই হোক এবার আমরা ঐতিহাসিক কিছু তথ্য উপাত্ত ও অপরাপর সহীহ হাদিছ দিয়ে বিয়ের সময় মা আয়েশার প্রকৃত বয়সটা উদঘাটন করার চেষ্টা করবো।
যাই হোক এবার আমরা ঐতিহাসিক কিছু তথ্য উপাত্ত ও অপরাপর সহীহ হাদিছ দিয়ে বিয়ের সময় মা আয়েশার প্রকৃত বয়সটা উদঘাটন করার চেষ্টা করবো।
হাবিবুল্লাহ হুজুরেপাক (সাঃ) এর সাথে আয়েশা (রাঃ) এর বিয়ে হয় তৃতীয় হিজরী সনের শাওয়াল মাসে বা ৬২৩-৬২৪ খ্রিষ্টাব্দ। যদিও বলা হয়, হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর জন্ম ৬১৪ খৃষ্টাব্দে কিন্তু সহীহ বুখারীতে এসেছে আল কোরআনের ৫৪ তম অধ্যায় নাজিলকালে আয়েশা (রাঃ) একজন কিশোরী (Jariyah) বয়স্কা ছিলেন। উল্লেখ্য ৫৪তম উক্ত অধ্যায় নাযিল হয় ৬১২ খৃষ্টাব্দের দিকে। সে হিসাবে হযরত আয়েশার বয়স তখন ১০ বছর হলেও ৬২৩-৬২৪ খৃষ্টাব্দ সালে তাঁর বয়স কোনো ভাবেই ২০ বছরের নিচে নয়।
✔✔(Sahih Bukhari, kitabu’l-tafsir, Arabic, Bab Qaulihi Bal al- sa`atu Maw`iduhum wa’l-sa`atu adha’ wa amarr)
অধিকাংশ বর্ণনাকারির মতে হযরত আয়েশা (রাঃ) বদরের যুদ্ধ (৬২৪ খৃষ্টাব্দে) এবং ওহুদের যুদ্ধ (৬২৫ খৃষ্টাব্দে) ইত্যাদিতে অংশগ্রহন করেছেন। উল্লেখ্য যে রাসুল (সাঃ) এর বাহিনীতে ১৫ বছরের কম বয়স্ক কেউ গ্রহণযোগ্য ছিলনা এবং তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। সুতরাং সেসময় যে হযরত আয়েশা’র বয়স ৬ বা ৯ ছিলনা, তা বলাই বাহুল্য।
A narrative regarding Ayesha’s participation in the battle of `Uhud is given in Bukhari, (Kitabu’l-jihad wa’l-siyar, Arabic, Bab Ghazwi’l-nisa’ wa qitalihinna ma`a’lrijal; that all boys under 15 were sent back is given in Bukhari, Kitabu’l- maghazi, Bab ghazwati’l- khandaq wa hiya’l-ahza’b, Arabic).
অধিকাংশ ইতিহাসবিদ মতে, হযরত আয়েশার বোন আসমা ছিলেন তাঁর চেয়ে দশ বছরের বড়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, আসমা ৭৩ হিজরী সনে যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন তাঁর বয়স ছিল ১০০ বছর। সে হিসাবে ১লা হিজরীতে
{(১০০-৭৩)=২৭} তাঁর বয়স হয় ২৭ বছর। তাহলে সে হিসেবে হযরত আয়েশার বয়স যে তখন ১৭ এর কম ছিলনা, তা বোঝা যায়। তাহলে ৬২৩-৬২৪ খৃষ্টাব্দ তাঁর বয়স ১৮/১৯ বছর।
{(১০০-৭৩)=২৭} তাঁর বয়স হয় ২৭ বছর। তাহলে সে হিসেবে হযরত আয়েশার বয়স যে তখন ১৭ এর কম ছিলনা, তা বোঝা যায়। তাহলে ৬২৩-৬২৪ খৃষ্টাব্দ তাঁর বয়স ১৮/১৯ বছর।
✔✔(সিয়ারু আলামিন নুবালাঃ Al- Zahabi, Vol 2, Pg 289, Arabic,}
✔✔ (Al- Bidayah wa’l- nihayah, Ibn Kathir, Vol 8, Pg 371, Arabic, Dar al-fikr al-`arabi, Al-jizah, 1933).
✔✔{ Taqribu’l-tehzib, Ibn Hajar Al- Asqalani, Pg 654, Arabic, Bab fi’l-nisa’, al- harfu’l-alif, Lucknow}
প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আল তাবারী’র বই (Tarikhu’l-umam wa’l-mamlu’k,) থেকে পাওয়া যায়, হযরত আবু বকর (রাঃ) এর চার সন্তান ছিলেন যাঁরা সকলেই ইসলামপূর্ব যুগে জন্মগ্রহন করেন। (ইসলামপূর্ব যুগ ৬১০ খৃষ্টাব্দ শেষ হয়)। তাহলে নিশ্চয়ই হযরত আয়েশা (রাঃ) এর জন্ম ৬১০ খৃষ্টাব্দ এর পূর্বে। সে হিসাবেও তিনি বিবাহের সময় ৬/৯ বছর বয়স্কা ছিলেন না।
✔✔{Tarikhu’l-umam wa’l-mamlu’k, Al-Tabari, Vol 4, Pg 50, Arabic, Dara’l-fikr, Beirut, 1979}
আরেক প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে হাইসাম থেকে জানা যায় হযরত আয়েশা (রাঃ) হযরত উমর ইবন আল খাত্তাব (রাঃ) এর বেশ আগে ইসলাম গ্রহন করেন। (উমর ইবন আল খাত্তাব (রাঃ) ৬১৬ খৃষ্টাব্দে ইসলাম গ্রহন করেন)। আবার হযরত আবু বকর (রাঃ) ইসলাম গ্রহন করেন ৬১০ খৃষ্টাব্দে। সুতরাং হযরত আয়েশা (রাঃ) ও ৬১০ এর কাছাকাছি সময়েই ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। তার অর্থ আবারো দাঁড়ায় যে তিনি ৬১০ খৃষ্টাব্দের আগেই জন্মগ্রহন করেছিলেন এবং কোন ধর্ম গ্রহন করবার নূন্যতম বয়স (৬/৭ হলেও) তাঁর ছিল। তাহলে ৬২৩-৬২৪ সালে তার বয়স প্রায় ১৮-২০ হয়।
✔✔{Al-Sirah al- Nabawiyyah, Ibn Hisham, vol 1, Pg 227 – 234 and 295, Arabic, Maktabah al- Riyadh al- hadithah, Al- Riyadh}
✔✔হাম্বলি মাযহাবের ইমাম, আহমাদ ইবনে হাম্বাল তাঁর মুসনাদগ্রন্থে (৬/২১০) উল্লেখ করেছেন, বিবি খাদিযাহ (রাঃ) এর মৃত্যুর পরে (৬২০ খৃষ্টাব্দ) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্য খাওলাহ خولة নামের একজন ২টা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন। যার মধ্যে হযরত আয়েশার (রাঃ) এর কথা উল্লেখ করবার সময় একজন পূর্ণবয়স্ক যুবতী হিসেবেই উল্লেখ করেন কোন ছোট্ট শিশু طفل/Baby হিসেবে নয়।
{Musnad, Ahmad ibn Hanbal, Vol 6, Pg 210, Arabic, Dar Ihya al-turath al- `arabi, Beirut}
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও সহিহ বুখারীর অন্যতম ভাষ্যকার ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ)-এর একটি কিতাবের নাম ﺍﻹﺻﺎﺑﺔ ﻓﻲ ﺗﻤﻴﻴﺰ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ (আল-ইছাবাহ ফী তাময়ীঝিস সাহাবাহ)। কিতাবটির ৪র্থ খণ্ডের ৩৭৭ নং পৃষ্ঠায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, হযরত ফাতেমা (রা)- এর জন্মের ৫ বছর পর হযরত আয়েশা (রা) জন্মগ্রহণ করেন। আর ফাতেমা (রাঃ) এর জন্মের সময় রাসুল (সাঃ) এর বয়স ছিল ৩৫ বছর। সে হিসেবে আয়েশা (রাঃ) এর জন্মের সময় মুহাম্মদ (সাঃ) এর বয়স ৪০ হবার কথা। ফলে তাঁদের বিয়ের সময় আয়েশা (রাঃ) ৬/৯ না, বরং ১৪-১৫ বছর বয়স হবার কথা।
✔✔{Al-isabah fi tamyizi’l- sahabah, Ibn Hajar al- Asqalani, Vol 4, Pg 377, Arabic, Maktabatu’l- Riyadh al- haditha, al- Riyadh,1978}
উপরোল্লেখিত ঐতিহাসিক তথ্যাধির আলোকে আম্মাজান আয়েশার বয়স সম্পর্কে আমরা যতোটুকু সিদ্ধান্তে আসতে পারি তা হচ্ছে ১৪ থেকে ২০ বছরের মধ্যে যে কোন একটি বয়সেই মা আয়েশার বিয়ে হয়েছিল।এটাই সর্বাধিক গ্রহনযোগ্য মত।
::::
:
✔একটি বিভ্রান্তির নিরসনঃঐতিহাসিক তথ্য কি সহীহ হাদিছকে Rejected করতে পারে?????
:
:
জবাবঃ--একটা হাদিছ সহীহ জয়ীফ নির্ণয় করা হয় রাবীর অবস্থা দেখে।আর হাদিছের গ্রন্থগুলোতে সর্বোচ্চ ৮/১০ স্তর থেকে সর্বোনিম্ন ৩ স্তরের হাদিছ রয়েছে।{স্তর বলতে একজন অপরজন থেকে শুনে বর্ণনা করার সংখ্যা}।এই স্তর গুলোতে হয়তো কেউ কেউ ভুল তথ্য দিয়েছেন এটা হাদিছ সংগ্রাহকদের ক্রুটি নয়। কিন্তু সম্মানিত ইমামগন তাদের উপর আস্থা রেখে হাদিছ সংগ্রহ করেছেন।পরিতাপের বিষয় তা পরবর্তিতে অন্যান্য রেওয়ায়েত দ্বারা rejected হয়ে যায়।সেরকম কয়েকটি রেওয়ায়েত তুলে ধরা হলো।
:
Attention:{বিঃদ্রঃ-এই তথ্যগুলো কোন হাদিছের ইমামগনকে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্য নয় বরং সবার বুঝার সুবিধার্থে উদাহরনসূরূপ ঠেনে আনা}
:
:
১) বুখারী শরীফের তৌহিদ অধ্যায়ে ইমাম বুখারী সংকলণ করেছেনঃ শারিক হযরত আনাস হতে রাসূলের মিরাজ সংক্রান্ত একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। কোরআনের সর্বপ্রথম আয়াত নাযিল হবার পূর্বে রাসূল (সা) কাবা গৃহে নিদ্রারত ছিলেন, তিনি স্বপ্নে দেখলেন তিনিজন ফেরেশতা তার নিকট এসে তার সম্মানের ব্যাপারে কথা বলে চলে গেলেন। দ্বিতীয় রাত্রিতেও একই ঘটনা ঘটল কিন্তু তৃতীয় রাত্রিতে স্বয়ং রাসূলকেই (সা) মিরাজে নিয়ে যাওয়া হল।
::::
:
✔একটি বিভ্রান্তির নিরসনঃঐতিহাসিক তথ্য কি সহীহ হাদিছকে Rejected করতে পারে?????
:
:
জবাবঃ--একটা হাদিছ সহীহ জয়ীফ নির্ণয় করা হয় রাবীর অবস্থা দেখে।আর হাদিছের গ্রন্থগুলোতে সর্বোচ্চ ৮/১০ স্তর থেকে সর্বোনিম্ন ৩ স্তরের হাদিছ রয়েছে।{স্তর বলতে একজন অপরজন থেকে শুনে বর্ণনা করার সংখ্যা}।এই স্তর গুলোতে হয়তো কেউ কেউ ভুল তথ্য দিয়েছেন এটা হাদিছ সংগ্রাহকদের ক্রুটি নয়। কিন্তু সম্মানিত ইমামগন তাদের উপর আস্থা রেখে হাদিছ সংগ্রহ করেছেন।পরিতাপের বিষয় তা পরবর্তিতে অন্যান্য রেওয়ায়েত দ্বারা rejected হয়ে যায়।সেরকম কয়েকটি রেওয়ায়েত তুলে ধরা হলো।
:
Attention:{বিঃদ্রঃ-এই তথ্যগুলো কোন হাদিছের ইমামগনকে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্য নয় বরং সবার বুঝার সুবিধার্থে উদাহরনসূরূপ ঠেনে আনা}
:
:
১) বুখারী শরীফের তৌহিদ অধ্যায়ে ইমাম বুখারী সংকলণ করেছেনঃ শারিক হযরত আনাস হতে রাসূলের মিরাজ সংক্রান্ত একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। কোরআনের সর্বপ্রথম আয়াত নাযিল হবার পূর্বে রাসূল (সা) কাবা গৃহে নিদ্রারত ছিলেন, তিনি স্বপ্নে দেখলেন তিনিজন ফেরেশতা তার নিকট এসে তার সম্মানের ব্যাপারে কথা বলে চলে গেলেন। দ্বিতীয় রাত্রিতেও একই ঘটনা ঘটল কিন্তু তৃতীয় রাত্রিতে স্বয়ং রাসূলকেই (সা) মিরাজে নিয়ে যাওয়া হল।
ইমাম আসকালানী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ এই হাদীসের বক্তব্য মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। সকলেই জানে যে রাসূল (সা) মিরাজে গিয়েছিলেন নবুয়ত প্রাপ্তির পর এবং মদিনায় হিযরত এর পূর্বে।
২) বুখারী শরীফের মুগাযী অধ্যায়ে ইমাম বুখারী সংকলণ করেছেনঃ হযরত উসমানের মৃত্যুর পর বদর যুদ্ধে অংশ নেয়া আর কোন সাহাবা জীবিত ছিলেন না। এবং হাররার যুদ্ধের পর হুদায়বিয়া যুদ্ধে অংশ নেয়া আর কোন সাহাবা জীবিত ছিলেন না।
ইমামা আসকালানী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন হাদীসটি মিথ্যা। হযরত আলী সহ অনেক বদর যোদ্ধাই উসমানের মৃত্যুর পর জীবিত ছিলেন। হাদীসটির ২য় অংশটাও ভুল।
৩) বুখারী শরীফের তাফসির অধ্যায়ে ইমাম বুখারী সংকলণ করেছেনঃ শেষ বিচারের দিন যখন হযরত ইবরাহিম তার পিতাকে দেখবেন তিনি আল্লাহর কাছে আরজ করবেন, '' তুমি আমার কাছে ওয়াদা করেছিলে যে শেষ বিচারের দিন তুমি আমাকে দুঃখিত করবেনা।'' আল্লাহ উত্তরে বলবেন, '' অবিশ্বাসীদের জন্য আমি জান্নাত নিষিদ্ধ করেছি।''
ইমাম আসকালানী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ এই হাদীসটি ভুল। কেননা এটি কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন যে যখন হযরত ইবরাহিম জেনেছিলেন যে তার পিতা আল্লাহর শত্রু তখন থেকেই তিনি পিতার জন্য দোয়া করা ছেড়ে দিয়েছিলেন। এছাড়া এই হাদীস পড়লে মনে হয় যে আল্লাহ ওয়াদা করে সেই ওয়াদা রক্ষা করেন নাই।
৪) বুখারী শরীফের তৌহিদ অধ্যায়ে ইমাম বুখারী সংকলণ করেছেনঃ আবু হুরায়রা বর্ণনা করেন যে নবী (সা) বলেছেন, বিচার দিবসে যখন আল্লাহ দোজখীদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন তখন জাহান্নাম বলবে আরও দাও। তখন আল্লাহ এক নতুন জাতি সৃষ্টি করে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। জাহান্নাম আবারো বলবে আমি আরও চাই। তখন আল্লাহ আরও একটি জাতি সৃষ্টি করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করলে তাতেও জাহান্নাম পূর্ণ হবেনা। তখন আল্লাহ নিজের পা জাহান্নামের উপর রাখলে জাহান্নাম পূর্ণ হবে।
ইমাম আসকালানী ফাথ-উল-বারী গ্রন্থে এবং হাফিজ ইবনে কাইয়াম, আবুল হাসান কুছবি এবং অন্যান্য হাদীস পন্ডিতগণ বলেছেনঃ এই হাদীসটি জাল, কারণ উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে যে আল্লাহ নতুন এক জাতি সৃষ্টি করে তাদেরকে দোজখে নিক্ষেপ করবেন। এই হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী নতুন সৃষ্ট জাতি পাপ করার সুযোগই পাবেননা, তো আল্লাহ কিভাবে তাদেরকে দোজখে নিক্ষেপ করবেন যেখানে আল্লাহ নিজেই কোরানে আরও ঘোষনা দেন যে তিনি কারও উপর অবিচার/জুলুম করবেননা? (সূরা কাহফ-৪৯)। এছাড়া আল্লাহ তায়ালা কোরানে নিজেই বলেছেন তিনি দোজখ পূর্ণ করবেন শয়তানের অনুসারী দ্বারা (সূরা ছোয়াদ-৮৫)।
৫) বুখারী শরীফের আম্বিয়া অধ্যায়ে ইমাম বুখারী সংকলণ করেছেনঃ হযরত আদম ষাট ফুট লম্বা ছিলেন।
ইমাম আসকালানী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ এই হাদীসটি বিশ্বাসযোগ্য না, হাদীসটি সত্য হলে পূর্বের জাতিগুলোর বাড়িঘর আমাদের চাইতে বড় হত কিন্তু বাস্তবে তেমনটি দেখা যায়না।
৬) বুখারী শরীফের খয়বার অধ্যায়ে ইমাম বুখারী সংকলণ করেছেনঃ আবু মুসা বলেছেন যে আমাদের রাসূল খয়বরের দিকে যাচ্ছিলেন। তার পিছনের লোকেরা জোড়ে আল্লাহু আকবর বলে চিতকার করছিলেন। রাসূল তখন তাদেরকে চিতকার করতে নিষেধ করে স্বাভাবিক আওয়াজে আল্লাহু আকবর বলতে বলেছিলেন।
ইমাম আসকালানী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ এটি সত্য হতে পারেনা। বুখারীরই অন্য হাদীসে আছে যে আবু মুসা নবীর সাক্ষাত পেয়েছিলেন খয়বর যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবার পর।
৭) বুখারী শরীফের খয়বার অধ্যায়ে ইমাম বুখারী সংকলণ করেছেনঃ আবু হুরায়রা কর্তৃক বর্ণিত, খয়বরের যুদ্ধে মুসলিমরা জয়ী হয়েছিল এবং সেই যুদ্ধে এক ব্যক্তি খুব সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেছিল, আমাদের রাসূল (সা) বলেছিলেন সে জাহান্নামে যাবে।
ইমাম আসকালানী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ এই হাদীসটি পড়লে মনে হয় আবু হুরায়রা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু আবু হুরায়রা নবীর সাক্ষাত পেয়েছিলেন খয়বরের যুদ্ধের পর। ইমাম বুখারী এই হাদীসটি লিখার সময় নিশ্চই পূর্ণ মনোযোগী ছিলেননা।
৮) বুখারী শরীফের মাযুকিরা ফিল আসওয়াক অধ্যায়ে ইমাম বুখারী সংকলণ করেছেনঃ আবু হুরায়রা বলেছেন-''আমি আল্লাহর নবীর সাথে বনু কাইনুকার বাজারে গিয়েছিলাম এবং তিনি সেথায় ফাতিমার বাগানে বসেছিলেন।
ইমাম আসকালানী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ এই হাদীসে বেশ কিছু শব্দ মিসিং হয়েছে। কারণ বনু কাইনুকায় ফাতিমার কোন বাড়ি/বাগান ছিলনা। মুসলিমের হাদীস থেকে সেই শব্দগুলো অবশ্য পাওয়া যায়। মুসলিমের হাদীসে আছে প্রথমে বনু কাইনুকায় গিয়ে পরবর্তীতে নবী ফাতিমার বাগানে গিয়েছিলেন। ফাতিমার বাড়িটি ছিল নবীর স্ত্রীদের বাড়িগুলোর মাঝামাঝি।
৯) বুখারী শরীফের যাকাত অধ্যায়ে ইমাম বুখারী সংকলণ করেছেন যেঃ নবীর মৃত্যুর পর তার স্ত্রীদের মাঝে উম্মুল মুমীনিন সাওদা-ই সর্বপ্রথম ইন্তেকাল করেছিলেন।
ইমাম আসকালানী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে ইমাম বুখারী ভুল বলেছেন, কেননা সাওদা নয় উম্মুল মুমীনিন জয়নাব সর্বপ্রথম ইন্তেকাল করেছিলেন। ইমাম ইবনে জাযি বলেছেন এটা খুব অবাক করা ব্যাপার যে ইমাম বুখারী এটা লিখেছেন, কারণ এই তথ্যটি ভুল। এছাড়া ইমাম নববী এই হাদীসটি ভুল বলেছেন।
১০) বুখারী শরীফের জানাইজ অধ্যায়ে ইমাম বুখারী সংকলণ করেছেনঃ নবীর স্ত্রী উম্মে হাবিবা শুনেছিলেন যে তার বাবা সিরিয়াতে মৃত্যুবরণ করেছেন।
ইমাম আসকালানী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, সকল স্কলারগণই একমত যে উম্মে হাবিবার পিতা মদিনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। ইমাম বুখারী ভুল করেছেন।
১১) বুখারী শরীফের মুগাযী অধ্যায়ে ইমাম বুখারী সংকলণ করেছেনঃ খাবাইব বিন আদ্দি বদর যুদ্ধে হারিসকে হত্যা করেছিলেন।
ইমাম আসকালানী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন যে বেশীরভাগ স্কলার একমত যে খাবাইব বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণই করেন নাই।
১২) বুখারী শরীফের ফাযায়েল উল উসমান অধ্যায়ে ইমাম বুখারী সংকলণ করেছেনঃ হযরত উসমান এক ব্যক্তিকে আশি বার চাবুক মেরেছিলেন।
ইমাম আসকালানী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ এই তথ্যটি সঠিক নয়
প্রিয় পাঠক আমরা দেখতে পেলাম স্বয়ং বুখারী শরীফ থেকেই অনেক হাদিছের তথ্য ঐতিহাসিক তথ্যাধির কাছে rejected হয়ে যাচ্ছে এভাবে আরো অনেক উদাহরন দেওয়া যাবে।তাই পোষ্টের আকার বৃদ্ধি না করে চূড়ান্তভাবে বলতে চাই বিয়ের সময় মা আয়েশার বয়স কোন অব্স্থাতেই ৬/৯ হতে পারেনা বরং ১৪ থেকে ২০ বছরের মধ্যে যে কোন একটি হওয়ায় অধিক যৌক্তিক।
আল্লাহ সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুক।
আল্লাহ সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুক।