প্রমান নং ১: হযরত বুরায়দা (রা:) থেকে বর্ণিত, হযরত রাসূলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, “ইতিপূবে আমি তোমাদেরকে কবর যেয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন থেকে যেয়ারত করো (মুসলিম শরীফ, মেশকাত ১৫৪ পৃষ্ঠা)।

ব্যাখ্যা : এ হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শায়খ আব্দুলহক মোহাদ্দীসে দেহেলভী (রাহ:) লিখেছেন যে, অজ্ঞতার যুগ সবেমাত্র পার হওয়ায় রাসূলুলাহ (দ:) কবর যেয়ারত নিষেধ করেছিলেন এই আশংকায় যেমুসলমানরা পুরনো জীবনধারায় প্রত্যাবর্তন করবেন তবে মানুষেরা যখন ইসলামী ব্যবস্থার সাথে ভালভাবে পরিচিত হলেন, তখন প্রিয় নবী (দ:) যেয়ারতকে অনুমতি দিলেন (আশ্আতুল লোমআত, ১ম খন্ড, ৭১৭পৃষ্ঠা)

প্রমান নং ২ : হযরত ইবনে মাসউদ (রা:) থেকে বর্ণিত,  রাসূলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, “আমি তোমাদের কবর যেয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন থেকে যেয়ারত করো” (ইবনেমাজাহ, মেশকাত পৃষ্ঠা ১৫৪)।

প্রমান নং ৩ : মোহাম্মদ বিন নোমান (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদফরমান, “যে ব্যক্তি প্রতি শুক্রবার তার পিতা-মাতার বাতাঁদের যে কোনো একজনের কবর যেয়ারত করেতাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং পুণ্যবান একজনহিসেবে তার নাম লেখা হবে” (মেশাকাত, ১৫৪ পৃষ্ঠা)।

প্রমান নং ৪ : ইমাম শাফেয়ী (রহ:)- এর আকিদা : আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (রহ:) ইমাম শাফেয়ী(রহ:)-এর কথা উদ্ধৃত করেন, যিনি বলেন, “আমি ইমাম আবু হানিফা (রহ:)- এর সাহায্য প্রার্থনা করি এবং তাঁর মাযার যেয়ারত করি আমার যখন কোনো কিছুরপ্রয়োজন হয় তখন আমি দু’রাকাত নামায আদায় করেইমাম আবু হানিফা (র:)- এর মাযার যেয়ারত করি এবং তৎক্ষণাৎ আমার প্রয়োজন পূরণ 
হয়ে যায়” (রাদ্দুলমোহ্তার, ১ম খন্ড, ৩৮ পৃষ্ঠা)। শায়খ আব্দুল হকদেহেলভীও লিখেন: “ইমাম শাফেয়ী (রহ:) বলেছেন যে, হযরত মূসা কাযেমের (রহ:) মাযারে তাৎক্ষণিক দোয়াকবুল হয়” (আশ্আতুল লোমআত, ১ম খন্ড, ৭১৫পৃষ্ঠা)।

প্রমান নং ৫ : ইমাম সাবী মালেকী (রাহ:)-এর আকিদা- বিশ্বাস “আল্লাহর নৈকট্যের জন্যে ওসীলা অন্বেষণ করো”- আল্ কুরআন (৫:৩৫)- এর এই আয়াতটি ব্যাখ্যাকালে ইমাম সাবী (রহ:) বলেন. “আল্লাহ্ ভিন্ন অপর কারো  এবাদত- বন্দেগী করছেন মনে করে আউলিয়ায়ে কেরামের মাযার যেয়ারতকারী মুসলমানদেরকে কাফের আখ্যা দেয়া স্পষ্ট গোমরাহী।তাঁদের মাযার যেয়ারত  করা আল্লাহ্ ভিন্ন অন্য কারো এবাদত- বন্দেগী নয়, এটা হলো আল্লাহ্ যাঁদেরকে ভালবাসেন তাঁদেরকে ভালবাসার নিদর্শন” (তাফসীরেসাবী, ১ম খন্ড, ২৪৫ পৃষ্ঠা)

প্রমান নং ৬ : সুলতানুল মাশায়েখ হযরত নিযামউদ্দীনআউলিয়ার আকিদা-বিশ্বাস হযরত নিজামউদ্দীন আউলিয়া  (রহ:) বলেন যে মওলানা কাটহেলী একবারতাঁর নিজের ঘটনা বর্ণনা করেন: কোনো এক বছরদিল্লীতে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। আমি একটি বাজার এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলাম  আর  তখন আমার খিদে পেয়েছিল । আমি কিছু খাবার  কিনে  মনে মনে বল্লাম, এখাবার আমার একা খাওয়া উচিৎ নয়; এটা কারো সাথেভাগাভাগি করতে হবে। এমতাবস্থায়  আমি এক বৃদ্ধমানুষের দেখা পেলাম যাঁর গায়ে চাদর মোড়ানো ছিল।আমি তাঁকে বল্লাম,  ওহে খাজা! আমি গরিব  এবংআপনাকেও গরিব মনে হচ্ছে। মওলানা কাটহেলী  ওইবৃদ্ধকে খাবার গ্রহণের জন্যে আমন্ত্রণ জানালেন এবংতিনি তা গ্রহণ করলেন। মওলানা কাটহেলী বলেন,  আমরা যখন খাচ্ছিলাম তখন আমি ওই বয়স্কমরুব্বীকে জানালাম যে আমি ২০ টাকা (রূপী) ঋণগ্রস্ত। এ কথা  শুনে ওই বয়স্ক মরুব্বী আমাকেখাওয়া চালিয়ে যেতে তাগিদ দিলেন এবং ওই ২০ টাকা(রূপী) এনে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন। আমি আপন মনে ভাবলাম, তিনি এই টাকা পাবেন কোথায়? খাওয়া শেষেসেই বয়স্ক মরুব্বী উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে মসজিদেনিয়ে গে এই মসজিদের ভেতরে একটি মাযার অবস্থিতছিল। তিনি ওই মাযারের কাছে  কী যেন চাইলেন। তাঁরহাতে যে ছোট লাঠি  ছিল তা দ্বারা  দু’বার মাযারেআলতোভাবে ছুঁয়ে তিনি বল্লেন, এই লোকের ২০ টাকাপ্রয়োজন, তাকে তা দেবেন। অতঃপর বয়স্ক  মরুব্বী আমার দিকে ফিরে বল্লেন, ‘মওলানা, ফিরে যান;  আপনি আপনার ২০ টাকা পাবেন।’ আমি এ কথা শুনেওই মরুব্বীর হাতে চুমো খেলাম এবং শহরের দিকেফিরে চল্লাম। আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না কীভাবে আমিওই ২০ টাকা  খুঁজে পাবো। আমার সাথে একটা চিঠি ছিল যা কারো  বাসায় আমাকে পৌঁছে দেবার কথাছিল। ওই চিঠি  যথাস্থানে নিয়ে গেলে আমি জনৈক তুর্কীব্যক্তির দেখা পাই। তিনি তাঁর গৃহ- ভৃত্যদের বল্লেন আমাকে ওপর তলায়  নিয়ে যাবার জন্যে। আমি তাঁকেচেনার চেষ্টা  করেও মনে  করতে পারলাম না, কিন্তু তিনিবার বার বলছিলেন কোনো এক সময় নাকি আমিতাঁকে সাহায্য করেছিলাম। আমি তাঁকে  না চেনার কথা বল্লেও তিনি আমাকে  চিনতে পেরেছেন বলে জানালেন।আমরা এভাবে  কিছুক্ষণ কথাবর্তা বল্লাম। অতঃপরতিনি ভেতর  থেকে  ফিরে এসে আমার হাতে ২০ টাকাগুজে দিলেন (ফাওয়াইদ আল ফাওয়াদ, ১২৪ পৃষ্ঠা)

প্রমান নং ৭ : আল্লামা জামী (রহ:)-এর আকিদা-বিশ্বাসআল্লামা জামী (রহ:) শায়খ আবুল হারিস আওলাসী(রহ:)-কে উদ্ধৃত করেন,  যিনি বলেন যে হযরত  যুন্নূনমিসরী (রহ:) সম্পর্কে তিনি অনেক কিছু শুনেছেন। তাইকিছু মাসআলা সম্পর্কে জানতে আল্লামা জামী (রহ:) তাঁর সাথে দেখা করার কথা মনস্থ করেন। কিন্তু যখন তিনি মিসর পৌঁছেন তখন জানতে পারেন যে হযরতযুন্নূন মিসরী (রহ:) বেসালপ্রাপ্ত (খোদার সাথে পর পারেমিলিত) হয়েছেন। এমতাবস্থায় আল্লামা জামী (রহ:) তাঁর মাযারে  যান এবং মোরাকাবায় বসেন। কিছুক্ষণপরে তিনি  হয়রান বোধ করেন এবং ঘুমিয়ে পড়েন।অতঃপর তিনি  হযরত যুন্নূন মসরী (রহ:)-কে স্বপ্নেদেখেন এবং তাঁর  প্রশ্নগুলো উত্থাপন করেন। শায়খমিসরী তাঁর সব প্রশ্নের  উত্তর দেন এবং তাঁর কাঁধ থেকেবোঝা নামিয়ে দেন (নাফহাত আল্ উনস্ ১৯৩ পৃষ্ঠা)।

প্রমান নং ৮ : ইমাম ইবনে হাজর মক্কী শাফেয়ী (রহ:)-এর আকিদা ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (রহ:) লিখেন, উলামা ও যাদের প্রয়োজন তাঁদের মধ্যে এই আচারসবসময়ই চালু ছিল যে তাঁরা ইমাম আবু হানিফা (রহ:)-এর মাযারে যেতেন এবং নিজেদের অসুবিধা দূর করারজন্যে তাঁর মাধ্যমে দোয়া করতেন। এ সকল ব্যক্তি এটাকে সাফল্য লাভের একটা ওসীলা মনে করতেন এবং এর অনুশীলন দ্বারা বড় ধরনের পুরস্কার লাভকরতেনা বাগদাদে থাকাকালীন সব সময়েই ইমামশাফেয়ী (রহ:) ইমাম আবু হানিফা (রহ:)-এর মাযারেযেতেন এবং  তাঁর কাছে আশীর্বাদ তালাশ করতেন।যখন আমার  (ইমাম ইবনে হাজর) কোনো প্রয়োজনদেখা দেয়, তখন আমি দু’রাকাত নামায আদায় করেতাঁর মাযারে যাই এবং তাঁর ওসীলায় দোয়া করি। ফলেআমার অসুবিধা  তক্ষণি দূর হয়ে যায় (খায়রাত আল্হিসান, ১৬৬ পৃষ্ঠা)।

প্রমান নং ৯ : শায়খ আব্দুল হক দেহেলভী (রহ:)-এরআকিদা শায়খ আব্দুল হক দেহেলভী (রহ:) লিখেন: “কবর যেয়ারত করা মোস্তাহাব (প্রশংসনীয়) এ ব্যপারেঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে” (আশআতুল লোমআত, ১মখন্ড, ৭১৫ পৃষ্ঠা)। তিনি আরও লিখেন: “যেয়ারতের সময়  কবরস্থদেরকে সম্মান প্রদর্শন করা ওয়াজিব(অবশ্য কর্তব্য), বিশেষ করে পুণ্যবান বান্দাদের ক্ষেত্রে। তাঁরা যাহেরী  জিন্দেগীতে থাকাকালীন তাঁদেরকে সম্মানপ্রদর্শন করা যেমন প্রয়োজনীয় ছিল, একইভাবে তাঁদের মাযারেও তা প্রদর্শন করা জরুরি। কেননা, মাযারস্থ বুযুর্গানে দ্বীন  যেসাহায্য করে থাকেন, তা তাঁদের প্রতি যেয়ারতকারীদেরপ্রদর্শিত ভক্তি-শ্রদ্ধার ও সম্মানের ওপরই  নির্ভর  করে” (আশআতুল লোমআত, ১ম খন্ড ৭১০ পৃষ্ঠা)।

প্রমান নং ১০ : শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্ দেহেলভীর আকিদা- বিশ্বাস শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্ লিখেন যে তাঁর পিতা শাহ্আব্দুর রহীম বলেছেন, “একবার আমি হযরত খাজা কুতুব উদ্দীন বখতেয়ার বাকী (রহ:)-এর মাযার শরীফ যেয়ারত করতে যাই। এমতাবস্থায় তাঁর রূহ মোবারক আমার সামনে দৃশ্যমান হন এবং আমাকে বলেন যেআমার একজন পুত্র সন্তান জন্ম লাভ করবে, আরআমি যেন ওর নাম রাখি কুতুবউদ্দীন আহমদ। ওইসময় আমার স্ত্রী  বয়স্ক হয়ে গিয়েছিল এবং সন্তান ধারণের বয়স  পেরিয়েছিল। তাই শায়খের এ কথা শুনে আমি মনে  মনে ভাবলাম সম্ভবত  আমার নাতি হতে যাচ্ছে। হযরত বখতেয়ার কাকী (রহ:)  আমার মনের কথা  বুঝতে পেরে সন্দেহ দূরকরে দিলেন এ কথা বলে যে তিনি নাতির খোশ-খবরী (শুভ সংবাদ) দেন নি, বরং আমার  নিজের একজনপুত্র সন্তানের কথা বলেছেন। কিছু কাল  পরে আমি আবার বিয়ে করি  এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর  গর্ভে (শাহ্) ওয়ালি উল্লাহর জন্ম হয়।”  শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্  বলেন, ’আমার জন্মের সময় আমার বাবা ওই ঘটনার  কথা ভুলে গিয়ে ছিলেন আর তাই আমার নাম  রেখেছিলেন ওয়ালিউল্লাহ্। তাঁর যখন এ ঘটনার কথা মনে  পড়ে যায়, তখন তিনি আমার দ্বিতীয় নাম রাখেন কুতুবউদ্দীনআহমদ। (আনফাস্ আল্ আরেফীন, ১১০ পৃষ্ঠা)।

প্রমান নং ১১ : শাহ্ আব্দুল আযীয দেহেলভীরআকিদা-বিশ্বাস শাহ্ আব্দুল আযীয লিখেন: “শরহেমাকাসিদ  গ্রন্থে লেখা আছে যে মাযার যেয়ারত করাউপকারী এবং মাযারস্থ আউলিয়ায়ে কেরামের রূহ্মোবারক উপকার সাধন করতে সক্ষম।বাস্তবিকই বেসাল (খোদার সাথে  পরলোকে মিলিত) -প্রাপ্ত হবারপরে আউলিয়ায়ে  কেরামের রূহ্ মোবারক তাঁদের শরীরও মাযারের সাথে সম্পর্ক রাখেন। তাই কেউ যখনকোনো  ওলীর মাযার  যেয়ারত করেন এবং ওই ওলীরপ্রতি মনোযোগ দেন, তখন উভয় রূহের মধ্যেযোগাযোগ স্থাপিত হয়।  এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করা হয়েছে যে আউলিয়ায়ে কেরাম জীবিতাবস্থায় বেশিসাহায্য করতে সক্ষম না বেসালপ্রাপ্ত অবস্থায়। কিছু উলামায়ে কেরাম বলেছেন যে বেসাল প্রাপ্ত আউলিয়া বেশি সাহায্য করতে সক্ষম; আর কিছু  উলামা  হুজুরপূর নূর (দ:)- এর একটি হাদীস এ মতের স্বপক্ষে পেশকরে তা প্রমাণ করেছেন; হাদীসটিতে এরশাদ হয়েছে- ইযা তাহাই- ইয়্যারতুম ফীল উমুরে, ফাসতা’ঈনূ মিনআহলিল কুবূর- অর্থ: ’যখন তোমরা কোনো ব্যাপারে পেরেশানগ্রস্ত হও, তখন মাযারস্থ (আউলিয়া)-দেরকাছে সাহায্য প্রার্থনা করো’। শায়খ আব্দুল হক দেহেলভী (রহ:) শরহে মেশকাত গ্রন্থে বলেছেন যে এইবিষয়টির পরিপন্থী কোনো দালিলিক প্রমাণ কুরআন ওসুন্নাহ্ কিংবা সালাফবৃন্দের বাণীতে বিদ্যমান নেই (ফতোওয়ায়ে আযীযিয়া, ২য় খন্ড, ১০৮ পৃষ্ঠা)।

Top