ইসলামের ইতিহাস প্রমাণ করে যে, ইসলামের তৃতীয় খলীফা হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর খেলাফতের শেষের দিকে মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক বিশৃংখলার সূচনা হয়। অতঃপর ইসলামের চতুর্থ খলীফা হযরত মাওলা আলী মুশকিল কোশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর খেলাফত কালে এসে এ বিশৃংখলা প্রকট আকার ধারণ করে। অতঃপর মুসলমানদের মধ্যে নতুন দু'টি দলের আবির্ভাব ঘটে। একটি হলো খারেজী অপরটি শিয়া। এ দু'দলের কোন দলেই যারা যোগ দেননি, বরং দু'সম্মানিত সাহাবী হযরত মাওলা আলী মুশকিল কোশা ও আমিরুল মোমেনীন হযরত আমির মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুমার সাথে ছিলেন; তারাই হক দলে ছিলেন। কারণ তাদের মধ্যে কোন ধরণের আকীদাগত ভ্রান্তি মোটেই ছিলনা। উভয়ের মধ্যে যে মতানৈক্য ছিল তা রাজনৈতিক। অন্যদিকে খারেজী ও শিয়া দলের আবির্ভাব প্রথমদিকে রাজনৈতিক কারণে হলেও পরবতীর্তে দু'দলেই পৃথক পৃথক ধর্মীয় দলের রূপ পরিগ্রহ করে এবং ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতে শুরু করে। অতএব, ঐ সময় যে সব মুসলমান উপরোক্ত দু'টি নতুন দলের কোনটি সমর্থন করেননি এবং ইসলামের মূল ধারায় প্রতিষ্ঠিত ছিলেন তারাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত। যদিও বা তখন তারা এ নামে পরিচিত হয় নি।
আবির্ভুত দল দুটির মধ্যে তুলনামূলকভাবে খারেজীদের কর্মকান্ড ও অপতৎপরতা ইসলাম, মুসলমান ও রাষ্ট্রের জন্য অধিকতর হুমকির কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়।তখন হযরত মাওলা আলী মুশকিল কোশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ইসলামী ঐক্য রক্ষার মানসে খারেজীদের বুঝিয়ে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন। হযরত আবুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুকে এ উদ্দেশ্যে নাহরাওয়ানে সমবেত প্রায় দশ হাজার খারেজীদের নিকট প্রেরণ করেন। তিনি তাদের বুঝান, এতে প্রায় পাঁচ হাজারের মত খারেজী দল ত্যাগ করে মাওলা আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর দলে ফিরে আসে। আবশিষ্ট পাঁচ হাজারের বিরুদ্ধে হযরত মাওলা আলী মুশকিল কোশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ৩৩ হিজরীতে যুদ্ধাভিযান পরিচালনা করে তাদের নির্মূল করেন। এ সম্পর্কে বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণিত আছে । যেমন-
হযরত আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,(খারেজীদের সম্পর্কে) আমি হুযুর সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে (বিস্তারিত) শুনেছি এবং আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাদেরকে হত্যা করেছেন। আমিও তার সাথে ছিলাম। এমন এক ব্যক্তিকে আনা হলো যার বৈশিষ্ট্যসমূহ ঐভাবেই ছিল যেভাবে হুযুর সাল্লাল্লাহু হলো তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম (খারেজীদের সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসসমূহে) বর্ণনা দিয়েছেন । (বোখারী খণ্ড শরীফ ২য় , পৃষ্ঠা ১০২৪)।
আলোচ্য হাদিসে নাহরাওয়ানের যুদ্ধের কথাই বিবৃত হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, বাতিল ফিরকার বাহ্যিক ইসলামী আচরণে মুগ্ধ হতে নেই; বরং তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে ইসলামের স্বার্থে যেভাবে হযরত মাওলা আলী মুশকিল কোশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সাহাবা কেরামকে সঙ্গে তাদেরকে নিয়ে প্রতিহত করেছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অনেক মুসলমান বর্তমানে বিরাজমান বাতিল ফিরকা সমূহকে প্রতিরোধ করা কর্মসূচীতে সহযোগিতার স্থলে উল্টো তাদের বাহ্যিক চাল চলনের প্রশংসা করে। আবার কেউ কেউ তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেরও সমর্থন করে এবং এ কথা বলে নিজের স্বচ্ছতা প্রকাশ করে, “আমি তাদের আক্বীদা সমর্থন করি না, তবে অন্য কোন উল্লেখযোগ্য ইসলামী দল না থাকায় তাদেরকে সমর্থন করি । কতো বড় আত্মঘাতি কাজ! যাদেরকে ইসলামের দৃষ্টিতে আক্কীদাগত ভ্রান্তির কারণে গোমরাহ, পথভ্রষ্ট ও জাহান্নামী দল হিসেবে চিহ্নিত করবে, আবার তাদেরকে ইসলামী দল মনে করা স্ববিরোধী । এদের উচিত এ ধরণের দ্বি-মুখী পন্থা অবলম্বন না করে সুন্নী মতাদর্শ ভিত্তিক রাজনৈতিক অন্দোলনে শরীক হওয়া।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আরো প্রমাণিত হয় যে, সুন্নী ওলামা কেরাম, পীর মাশায়িখ ও বুদ্ধিজীবিদের প্রধানতম কর্তব্য হলো বাতিল পন্থীদেরকে সুন্নীয়াতের পথে আনার উদ্দেশ্যে সকল কার্যকরী পন্থা অবলম্বন করা। এতদসত্ত্বেও সত্য পথে ফিরে না আসলে তাদেরকে সরলপ্রাণ মুসলমানদের ঈমান আক্বীদা রক্ষার মানসে সার্বিকভাবে প্রতিহত ও নির্মূল করা যেমনি ভাবে হযরত মাওলা আলী মুশকিল কোশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু করেছেন।
অতঃপর হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে বিভিন্ন সময় বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় নতুন নতুন ভ্রান্তদলের আবির্ভাব ও আত্মপ্রকাশ ঘটে। ইসলামের মূল ধারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের ইমাম, মুজতাহিদ ও জগত বরেণ্য আলেমগণ মৌখিকভাবে এদের ভ্রান্তমতবাদ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করেছেন। খোলাফায়ে রাশেদীনের পর থেকে অদ্যাবধি আবির্ভূত অসংখ্য বাতিল ফিরকার মধ্যে প্রায় সবগুলোই বিলুপ্ত; কিন্তু আজ। আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের ইমামগণ, মুজতাহিদ ও বিজ্ঞ ওলামা কেরামের কিতাবাদি থেকে ঐসব ফিরকার ভ্রান্ত আক্বীদা, কর্মকাণ্ড ও ধ্বংসাত্মক তৎপরতা অবহিত হচ্ছি। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের সাথে সম্পৃক্ত রেখে ঈমান সহকারে ইহকাল অতিবাহিত করে পরকালের পথ সুগম করতে পারি।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিশ্ববরেণ্য ইমামগণ, মুজতাহেদীন ও বিজ্ঞ ওলামা কেরাম যুগে যুগে বাতিল ফিরকা সমূহের ভ্রান্তআক্বীদা খণ্ডন করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের আক্বীদাসমূহ সরলপ্রাণ মুসলমানদের নিকট কিতাবাকারে পেশ করেছেন। হানাফী মাযহাবের মহান ইমাম হযরত আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে শুরু করে অন্যান্য মাজহাবের ইমামগণও এ বিষয়ে পৃথক পৃথক কিতাব রচনা করে গেছেন। যেগুলো 'আকাঈদ শাস্ত্র 'র নির্ভরযোগ্য কিতাব আজও বিশ্ব মুসলিমের পাথেয় হিসেবে বিদ্যমান। তন্মধ্যে ফিকহে আকবর' 'আম্বাঈদ-এ-নাসাফী' শরহে আকাঈদ-এ-নাসাফী' আকিদাতুত তাহাবী শরহে মাওকীফ' ইত্যাদি মৌলিক আকাঈদ গ্রন্থ হিসেবে বিশ্ব ওলামার নিকট গ্রহণযোগ্য। অতঃপর এগুলোর ব্যাখ্যায়ও আরো অনেক আকাঈদ কিতাবাদি রচিত হয়েছে সময়ের তাগিদে। তেমনিভাবে ভবিষ্যতেও হবে। কারণ যখনই কোন নতুন ভ্রান্তদলের আবির্ভাব ঘটবে, তখন স্বাভাবিক কারণে তাদের স্বরূপ উন্মোচন করা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের বিজ্ঞ ওলামাকেরামের উপর ওয়াজিব হয়ে পড়বে, যাতে সরলপ্রাণ মুসলমানগণ নিজের ঈমান-আক্বীদা ও আমলকে হিফাজত করতে সক্ষম হন। কারণ ইসলামের ছদ্মবেশে আবির্ভুত বাতিল দলসমূহের ভ্রান্তি সম্পর্কে অবহিত হওয়া সাধারণ মুসলমানদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়।
যুগে যুগে বাতিল ফিরকাসমূহের আত্মপ্রকাশের অব্যাহত ধারা হিসেবে হিজরী বার’শ শতাব্দীতে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদীর ফিতনা ও ভ্রান্ত মতবাদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সে মুসলমানদের অসংখ্য বৈধ ও সওয়াব জনক আমলসমূহকে শিরক-বিদয়াত ফতওয়া দিয়ে এক নতুন ফিতনার গোড়াপত্তন করে। ইতিহাসে যা নজদী ফিতনা বা ওহাবী ফিতনা হিসেবে পরিচিত। 'নজদ' (বর্তমান রিয়াদ, সৌদি আরবের রাজধানী) হতে ফিতনা বের হবে মর্মে বিশুদ্ধ হাদিসে বর্ণিত তথ্যের সত্যতা অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণিত হলো।
ইসলামের ছদ্মবেশে প্রকাশিত এ ওহাবী ফিতনার স্বরূপ উন্মোচন ও খণ্ডন করে বিশ্ব বরেণ্য ওলামা কেরাম কলম ধরেছেন। তাঁদের নাম ও গ্রন্থের তালিকা নিম্নরূপ-
(১) শেখ মুহাম্মদ ইবনে সোলয়মান কুরদী,
(২) আল্লামা আদুল্লাহ ইবনে আবদিল লফিত শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি । তিনি মুহাম্মদ ইবনে আবদিল ওহাব নজদীর ওস্তাদ। তার রচিত কিতাবের নাম "সাইফুল জিহাদ লেমুদায়ীল ইজতেহাদ",
(৩) আল্লামা আফিফুদ্দীন আবদুল্লাহ ইবনে দাউদ হাম্বলী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, তাঁর কিতাবের নাম "আস্ সাওয়াই ওয়ার রাআদ"।
(৪ )আল্লামা মুহাক্কিক মুহাম্মদ ইবনে আবদির রহমান আফালিক হাম্বলী, তার কিতাব “তাহাক্কুমুল মুকাল্লেদীন বেমান ইদ্দায়া তাজদীদাদ্দীন",
(৫) আল্লামা আহমদ ইবনে আলী আল কাবায়ী বসরী শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি,
(৬) আল্লামা আব্দুল ওহাব ইবনে আহমদ বরকাত শাফেয়ী আহমদী মক্কী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি,
(৭) শেখ আতা আল-মক্কী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, তাঁর কিতাব "আস্ সায়েফুল হিন্দী ফি ওনকিন নজদী"
(৮) শেখ আল্লাহ ইবনে ইসা মুগিনী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি,
(৯) শেখ আহমদ মিসরী এহসায়ী (রঃ),
(১০) বাইতুল মোক্বাদ্দাস-এর একজন আলেম। তার কিতাবের নাম "আসসুয়ুফুস সাফাক্বাল ফী আনকারা আলাল আউলিয়া বাদাল ইন্তেকাল,
(১১) সৈয়দ আলভী ইবনে আহমদ হাদ্দাদ, তাঁর কিতাব "আসায়ফুল বাতিল লে ওনুকিল মুনকির আলাল আকাবের,
(১২) শেখ মুহাম্মদ ইবনে শেখ আহমদ ইবনে আবদিল লতিফ আল এহসায়ী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি,
(১৩) আল্লামা আবদুল্লাহ ইবনে ইব্রাহীম মীরগণী
রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (তায়েফে অবস্থানকারী), তার কিতাব- "তাহরীদুল আগ্নীয়া আলাল ইস্তেগাছাতে বিল আম্বিয়া ওয়াল আউলিয়া",
(১৪) সৈয়দ আলাভী আহমদ আল হাদ্দাদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, তাঁর কিতাব" আল এন্তেসার
লিল আউলিয়ায়িল আবরার",
(১৫) আল্লামা সৈয়দ আলমুনয়েমী রাহমাতুল্লাহি
আলাইহি,
(১৬) আল্লামা সৈয়দ আদুর রহমান বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি,
(১৭) আল্লামা সৈয়দ আলাভী ইবনে হাদ্দাদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, তার কিতাব "মিছবাহুল আনাম ওয়া জালাউয্ যালাম",
(১৮) আল্লামা সুলাইমান ইবনে আবদিল
ওয়াহাব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, ( মুহাম্মদ ইবনে আবদিল ওহাব নজদীর ভাই) তার কিতাব- "আচ্ছাওয়ায়িকুল ইলাহীয়া",
(১৯) আল্লামা মুহাক্কিক আশ শেখ সালেহ আল কাওয়াশ আততিউনিশী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি,
(২০) আল্লামা সৈয়দ দাউদ আল বাগদাদী আল-হানাফী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি,
(২১) আশ শেখ ইবনে গালবোন আলুলাইভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি,
(২২) সৈয়দ মোস্তাফা আল মিসরী আল বুলাকী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি,
(২৩) সৈয়দ আত্তাবাতায়ী আল বসরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি,
(২৪) আল্লামা শেখ ইব্রাহীম আসসামনুদী
আল মানসুরী, তাঁর কিতাব- "সায়াদাতুদ দারাইন,"
(২৫) মুফতি-এ-মক্কা আল্লামা সৈয়দ আহমদ যিনী দাহলান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, তাঁর কিতাব "ফিতনাতুল ওহাবীয়্যাহ",
(২৬) শেখ ইউসুফ নিব্ হানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, তার কিতাব "শাওয়াহেদুল হক ফিত তাওয়াসসুল বেসাইয়্যেদিল খালক্ব",
(২৭) শেখ জামিল সাদকী আযযুহাদী আল বাগদাদী। তাঁর কিতাব- "আল ফজরুসসাদেক",
(২৮) শেখ আল মাশরেকী আল মালেকী আল জাযায়েরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, তাঁর কিতাব "ইযহারুল উকুক আম মানয়িত্ তাওয়াচ্ছুল মিন্ নবী ওয়াল অবিলীয়ীচ্ছুদুক",
(২৯) আল্লামা মাখদুম মুফতি ফা 'র্স আশ শেখ আলী মাহদী আল ওয়াযানী,
(৩০) শেখ মোস্তাফা আল হাম্মামী আল মিসরী, তাঁর কিতাব-"গাউসুল ইবাদ বে বয়ানির রাশাদ",
(৩১) আশ শেখ ইব্রাহিম হালিমী আলকাদেরী আল ইস্কান্দরী, তাঁর কিতাব "জালালুল হক ফী কাশফে আহওয়ালে আশরারিল খালক",
(৩২) শেখ হাসান আশ্ শাত্তী আল হাম্বলী আদ দেমাশকী, তাঁর কিতাব- ফী হুকমিত তাওয়াসসুল বিল আম্বীয়া ওয়াল আউলিয়া
(৩৩) শেখ হাছান খাযবক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি,তাঁর কিতাব- "আল মাক্বালাতুল ওয়াফিয়া ফীর রদ্দে আলাল ওহাবীয়াহ",
(৩৪) শেখ আতাউল কাসম আদদেমাশকী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি,
(৩৫) আল্লামা শেখ আব্দুল আযীয আল কুরাইশী আল আজালী আল মালেক আল ইহসায়ী,
(৩৬) আল্লামা শেখ সালাম আল আযযামী, তাঁর কিতাব- "আল বারাহীনুচ্ছাতেয়া",
আল্লামা আবু হামেদ ইবনে মারযুক তাঁর রচিত কিতাব, আততাওয়াসসুল বিন্নবী ওয়া জাহলাতুল ওহাবীয়ীন-এর মধ্যে এ তালিকা পেশ করেছেন।
এতে পাক-ভারত উপমহাদেশের ওহাবী মতবাদের খওনে লিখিত কিতাবের নামসমূহ আসেনি। ঐগুলোর নামসহ পেশ করতে গেলে শুধু মুহাম্মদ ইবনে আবদিল ওহাব নজদীর ভ্রান্ত মতবাদের খন্ডনে লিখিত কিতাবসমূহের তালিকা সম্বলিত একটি পুস্তিকা হবে। তার ভ্রান্তমতবাদ প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে মুসলিম বিশ্বের চার মাযহাবের আলেমগণ তার ভ্রান্তির খণ্ডনে ও মুখোশ উন্মোচনে হাতে কলম নেন কারণ, চার মাযহাবের ইমামগণ ও অনুসারীগণ আক্বীদাগত দিক থেকে এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ সবাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতেরই অনুসারী। এমনকি তার পিতা হযরত আল্লামা আব্দদুল ওহাব ও সহোদর ভাই সোলাইমান ইবনে আবদিল ওহাব তার বাতিল মতবাদ খগুনে এগিয়ে আসেন।
অতঃপর মুহাম্মদ ইবনে আবদিল ওহাব নজদীর ভ্রান্তমতবাদ আরব বিশ্বের বাইরেও বিস্তৃতি লাভ করে। বিশেষতঃ পাক-ভারত উপমহাদেশে দেওবন্দে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ওহাবী মতবাদ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রসার লাভ করতে শুরু করে। তখন পাক-ভারতে ওলামা কেরাম এ ভ্রান্তমতবাদ খন্ডনে জোরালো ভূমিকা পালন করেন। তন্মধ্যে-
★আল্লামা শাহ আব্দুল আযিয মুহাদ্দিস দেহলভী,
★আল্লামা ফজলে হক খায়রাবাদী,
★আল্লামা ফজলে রসূল বদায়ুনী,
★আল্লামা রিয়াসত আলী রামপুর রাহমাতুল্লাহি আলাইহিমদের নাম উল্লেখযোগ্য।
এ সময় পাক-ভারত উপমহাদেশে নজদী মতবাদের মাধ্যমে মুসলমানদের ঐক্যে স্থায়ী ফাটল সৃষ্টির লক্ষ্যে ইসলামের চির শক্র ইয়াহুদী-নাসারা চক্র অর্থের বিনিময়ে নজদী মতবাদের এমন কিছু কিতাব লিখায় যদ্বারা মুসলমানদের মধ্যে অত্যন্ত সহজভাবে স্থায়ী ফাটল ধরবে। তন্মধ্যে-
★মৌং ইসমাঈল দেহলভীর “তাকবিয়াতুল ঈমান",
★মৌং খলীল আহমদ আম্বিটবীর “বারাহিনে কাতেয়া”,
★দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মৌং কাসেম নানুতভীর “তাহযীরুন্নাস" ও
★মৌং আশরাফ আলী থানভীর "হিফযুল ঈমান" সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য।
এসব কিতাবে এমন অনেক ভ্রান্ত আক্বিদা ও বিশ্বাস প্রচার করা হলো, যা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের আক্বীদার সম্পূর্ণ পরিপন্থী । (ওহাবীদের আকাঈদ আলোচনায় এগুলো পরে
আসছে)। এ বিভক্তি আজও বিদ্যমান।
এমতাবস্থায় মুসলিম মিল্লাতকে সত্যের দিশা দান ও দীনের সংস্কার কার্যসম্পাদনের লক্ষ্যে হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীর মহান মুজাদ্দিদ ইমাম আহমদ রেযা খান ফায়েলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির আবির্ভাব হয়। তিনি খোদা প্রদত্ত অপরিসীম জ্ঞান ও প্রতিভার মাধ্যমে বিশ্ব মুসলিমের নিকট এ ভ্রান্ত মতবাদের মুখোশ উন্মোচনে সফলভাবে সক্ষম হলেন। তার সংস্কার কার্যের প্রভাব হারামাইন শরীফাইন (মক্কা ও মদীনা শরীফ) সহ পুরো মুসলিম বিশ্বে পুরোপুরিভাবে বিস্তার লাভ করল। তিনি কুফরী আক্বীদার কারণে পাঁচ ব্যক্তি যথাক্রমে-
★দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মৌং কাসেম নানুতভী,
★মৌং রশিদ আহমদ গাংগুহী
★মৌং খলীল আহমদ আম্বেটভী.
★মৌং আশরাফ আলী থানভী ও
★মীর্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে কাফের সাব্যস্ত করে ফতোয়া লিখে হারামাইন শরীফাইনে অবস্থানকারী চার মাজহাবের জগত বরেণ্য ওলামা কেরামের নিকট পেশ করেন।
তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান ফাযেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির ফতোয়ার সমর্থনে নিজ নিজ অভিমত লিখিতভাবে প্রদান করেন। যা “হুসামুল হারামাইন আলা মানহারিল কুফরে ওয়াল মাইন” নামে মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়।
(১) অনুরূপভাবে তিনি শিয়া, ওহাবী, কাদিয়ানীসহ অপরাপর ভ্রান্ত মতবাদের বিরুদ্ধে নির্ভরযোগ্য কিতাবাদি লিখে হিজরী চতুর্দশ শতাব্দির 'মুজাদ্দিদ’-এর দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়াও তিনি প্রায় পঞ্চান্ন বিষয়ের উপর সহস্রাধিক অমূল্য গ্রন্থ রচনা করেন। এ মহান মুজাদ্দিদ ১৯২১ সালে ইন্তেকাল করেন। পাক-ভারত উপমহাদেশে তিনি 'আ'লা হযরত' হিসেবে পরিচিত। তার সমসাময়িক বিশ্বের আরো অনেক সুন্নী আলেম ওহাবী মতবাদ খন্ডনে কিতাব রচনা করে সরলপ্রাণ মুসলমানদের ওহাবী-দেওবন্দীদের গোমরাহী ও ভ্রান্তি সম্পর্কে অবহিত করেন। মৌং ইসমাঈল দেহলভী কর্তৃক লিখিত ঈমান বিধ্বংসী কিতাব ‘তাকবিয়াতুল ঈমান'-এর খণ্ডনে বিশ্বের চল্লিশজন বিজ্ঞ আলেম পৃথক পৃথক কিতাব লিখেন। তন্মধ্যে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার মাওলানা মুখলেসুর রহমান চাটগামী অন্যতম। তিনি "শরহুসসুদুর বে-দফয়ীশ্ সুরুর" অন্য নামে- ‘তাফবীয়াতুল ঈমান রদ্দে তাকবীয়াতুল ঈমান" নামে ফারসী ভাষায় দলিল সম্বলিত একটি অমূল্য গ্রন্থ লিখেন। এটা ‘তানকীদে তাকবিয়াতুল ঈমান’ নামে উর্দু ভাষায় ভারতে প্রকাশিত হয়েছে।
অতঃপর পাক-ভারত উপমহাদেশে ওহাবী মতবাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য গ্রন্থ রচিত হয়। অনুরূপভাবে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুন্নী ওলামা কেরাম এ মতবাদের অসারতা ও ভ্ৰষ্টতা তুলে ধরার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা ফাজেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির পর তাঁর শিষ্য ও খলীফাগণ ওহাবী, তাবলিগী,আহলে হাদিস, কাদিয়ানী ও শিয়াদের, বিরুদ্ধে কলমের জিহাদ অব্যাহত রাখেন। ভারত ও পাকিস্তানে যারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের মতাদর্শ রক্ষায় ও বাতিল প্রতিরোধে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছেন তাদের তালিকা বেশ দীর্ঘ। তন্মধ্যে-
★সদরুল আফাযিল হযরত আল্লামা সৈয়দ নঈমউদ্দীন মুরাদাবাদী,
★ হাকিমুল উম্মত মুফাসসিরে কোরআন হযরত আল্লামা মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী আশরাফী,
★সদরুশ শরীয়ত আল্লামা আমজাদ আলী রেজভী,
★গযযালীয়ে যামান, হযরত আল্লামা আহমদ সাঈদ কাযেমী ,
★মুফতি-এ-আযাম-এ হিন্দ হযরত আল্লামা মোস্তাফা রেযা খাঁ বেরলভী,
★মুহাদ্দিসে আযম-এ-হিন্দ হযরত আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ আশরাফী কাসওয়াসাবী,
★হাফেজে মিল্লাত হযরত আল্লামা আবদুল আযীয মুবারকপুরী,
★হযরত আল্লামা ওকারুদ্দীন,
★হযরত আল্লামা শফী ওকাড়বী,
★ হযরত আল্লামা সরদার আহমদ লায়লপুরী এবং
★ হযরত আল্লামা হাশমত আলী খাঁ রেজভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহিমদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও আরো অনেক বিশ্ববরেণ্য ওলামা কেরাম সারাটা জীবন ইসলামের মূল ধারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের খিদমত আঞ্জাম দিয়ে জান্নাতবাসী হয়েছেন।
বাংলাদেশের ধর্মীয় অঙ্গনে ওহাবীয়াতের অনুপ্রবেশ একশ বছরের অধিক হবে না। যেসব এলাকা বর্তমানে ওহাবীদের প্রভাবাধীন, সেসব এলাকার বয়োবৃদ্ধ সুন্নীদের সাক্ষাৎকারে প্রমাণিত যে, ঐসব এলাকায় পঞ্চাশ-যাট বছর পূর্বে হয় ধর্মীয় কার্যাবলী সুন্নী মতাদর্শের আলোকে সম্পাদিত হতো। কেহ দেওবন্দ মাদ্রাসায় লেখা-পড়া করে আসার পর সে ফাতেহা, মীলাদ কেয়াম ইত্যাদি পূণ্য কাজকে বেদআত বলে ফতোয়া দেয় এবং মুসলমানদের মধ্যে দলাদলি সৃষ্টি করে। এমনি করে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ ঘৃণ্য মতবাদ প্রচারের লক্ষ্যে বাংলাদেশে খারেজী মাদ্রাসা গুলো প্রতিষ্ঠিত হয়। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের প্রকাশনার মাধ্যমেও বাংলাদেশে ওহাবী মতবাদ প্রচার করছে।
যখন বাংলাদেশের ধর্মীয় অঙ্গনে ওহাবী মতবাদের আগ্রাসন মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং সরলপ্রাণ মুসলমানদের ঈমান, আকীদা ও আমলের উপর কুপ্রভাব বিস্তার করে, তখন এদেশের সুন্নী ওলামা কেরাম আর বসে থাকতে পারেননি। দেশব্যাপী তাদের বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসলেন। শুরু হলো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোনাযারা (তর্কযুদ্ধ) মাহফিল । এক্ষেত্রে সুন্নী ওলামা কেরামের তালিকা অনেক দীর্ঘ। যাঁরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের আক্বীদা ও আদর্শের প্রচার-প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন এবং সরলপ্রাণ মুসলমানদের নিকট বাতিলের মুখোশ উন্মোচনে সফল ভাবে সক্ষম হয়েছেন, দেশের সর্বস্তরের সুন্নী মুসলমান তাদের কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ। এক্ষেত্রে যাদের ভূমিকা সৰ্বাধিক আলোচিত তাদের দু’জন হলেন,
★ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে দীন-ও-মিল্লাত, আশেকে রাসুল হযরতুল আল্লামা গাজী "সৈয়দ মুহাম্মদ আযিযুল হক "শেরে বাংলা" আল কাদেরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, যিনি আমরণ বাতিলের বিরুদ্ধে , বিশেষতঃ ওহাবীদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে ‘মুজাহিদে মিল্লাত’ এর সম্মানিত খেতাব ও সকল প্রকার ভ্রান্তির বিরুদ্ধে অপরিসীম সাহসিকতার কারণে, "শের-এ-বাংলা" উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। তিনি গোটা জীবন ওহাবীদের সাথে অনেক মোনাযারা করে সফলভাবে জয়ী হয়েছেন। তাকে জানার জন্য তার জীবনালেখ্য অধ্যয়নের আহবান রইল ।
অপরজন হলেন,
★মুজাহিদে আযম, হযরতুলহাজ্ব আল্লামা সৈয়দ আবেদ শাহ মোজাদ্দেদী আল মাদানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি।
মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহে তিনি যেমন দীর্ঘ জীবন লাভে ধন্য হয়েছেন, তেমনি তার সংগ্রামী জীবনের ইতিহাসও দীর্ঘ। ভারত ও বাংলাদেশে সুন্নীয়াতের প্রচার-প্রসারে তার ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । বিশেষতঃ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে সুন্নী জামাআতের বিজ্ঞ আলেম ও মুনাযির হিসেবে তিনি সর্বজন স্বীকৃত। তার নাম শ্ৰবণেই বাতিলপন্থী ওহাবী, তাবলিগী ও গায়রে মুকাল্লিদগণ ছিল কম্পমান। তাঁর গঠনমূলক ভূমিকার ফলে অনেক বাতিলপন্থী নিজেদের ভ্রান্তি উপলব্ধি করতে পেরে তওবা করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের আক্বীদা ও আদর্শ গ্রহণ করে নাজাতের পথ সুগম করেছেন।
আলোচিত দু’জনই ওয়ায নসিহত, মুনাযারা (বিতর্ক মাহফিল) ও লিখনীর মাধ্যমে বাতিল ফিরকাসমূহের ভ্রান্ত আক্বিদা খণ্ডন করেছেন। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে সুন্নী মতাদর্শ ভিত্তিক মাদ্রাসাও প্রতিষ্ঠা করেছেন। আরবী, ফাসী ও উর্দু ভাষায় লিখিত তাদের অমূল্য গ্রন্থসমূহের বঙ্গানুবাদ আজ সময়ের দাবী। এ দাবী পূরণে সকল সুন্নী মুসলমানদের এগিয়ে আসতে হবে। অতঃপর এ মহান ইমামের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকার ফলে তৈরী হয়েছে অসংখ্য দক্ষ ও বিজ্ঞ সুন্নী আলেম; যারা তাদের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে সুন্নী মতাদর্শের প্রচার-প্রসারে ভূমিকা পালন করে আসছেন।
সাংগঠনিক পদ্ধতিতে সুন্নী আন্দোলন
দেশব্যাপী সুন্নী ওলামা কেরামের কোন একক সংগঠনের অস্তিত্বের কথা জানা নেই। এক সময় এর প্রয়োজনীয়তাও তেমন প্রকট ছিল না। তাই আমাদের পূর্ববর্তী সম্মানিত সুন্নী ওলামা কেরাম নিজ নিজ অঞ্চল থেকে সুন্নীয়াতের খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। তাছাড়া সে সময় প্রতিপক্ষদেরও দেশব্যাপী একক কোন সাংগঠনিক অবস্থান ছিল না। তাই হয়তো তৎকালীন সুন্নী ওলামা কেরাম এর বিশেষ প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেননি। অতীতে এ ব্যাপারে একাধিকবার উদ্যোগের কথা জানা গেলেও তার কোন সফল বাস্তবায়ন হয়নি নানা কারণে। কিন্তু, আজ দেশব্যাপী সুন্নী ওলামা কেরামেরও সুসংগঠিত হওয়া সময়ের দাবী।বাতিল পন্থীগণ যখন দেশব্যাপী নানা সংগঠনের মাধ্যমে নিজেদের ভ্রান্ত মতবাদ প্রচারে জোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত, তখন সুন্নী ওলামা কেরামের বিক্ষিপ্ত অবস্থান ও কর্মতৎপরতা আদৌ সময়োচিত নয়। এ ক্ষেত্রে আগে থেকেই সুন্নী ওলামায়ে কেরামের অসচেতনতা বাতিল পন্থীদেরকে "আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আত" নামে তথাকথিত সংগঠন করে দেশের সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে চরমভাবে ধোকা দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। আজ সুন্নী মুসলমানদের মাযহাবী, রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজিবী ও ছাত্র সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। পাক আমলের কথা বাদ দিলেও স্বাধীনতার পরও যদি সুন্নী ওলামা কেরাম নিজেদের সার্বিক অবস্থান সুসংহত করার লক্ষ্যে এগিয়ে আসতেন তাহলে আজ সুন্নী মুসলমান ও তাদের কোমলমতি সন্তানরা বাতিলের খপপরে পড়ত না।ধর্মহীন রাজনীতির আগ্রাসন ও সুন্নী অঙ্গনের সাংগঠনিক শূন্যতা অনেককে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাতিলপন্থীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণে বাধ্য করেছে-এ কথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।