রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমন উপলে পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহফিল করা জুলুস করা অত্যন্ত বরকতময় ও সওয়াবের কাজ। যার দলিলভিত্তিক আলোচনা পরবর্তী পৃষ্ঠায় আসবে ইনশাআল্লাহ। প্রথমে আমি এ ব্যাপারে হামিদী সাহেবের বক্তব্যটি পেশ করতে চাই। তিনি লিখেছেন-
‘মিলাদুন্নবীর আলোচনার জন্য ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখ নির্দিষ্ট করা এবং রাস্তায় রাস্তায় মিছিল বাহির করা বিদআত। কারণ ইহার কোন প্রমাণ কোরআন হাদিসে নেই এবং কোন সাহাবি, তাবেয়ি বা আয়িম্মায়ে মুজতাহিদগণ কোন দিন নবীর জন্ম উপলে ঈদে মিলাদুন্নবী নাম দিয়ে রাস্তায় রাস্তায় মিছিল বাহির করেছেন বা কোন অনুষ্ঠান করেছেন এমন কোন প্রমাণ কোরআন হাদীসে নেই। ’
হামিদী সাহেব বলতে চেয়েছেন ১২ই রবিউল আউয়াল উপলে মিছিল বের করা বা ঈদে মিলাদুন্নবী নাম দিয়ে অনুষ্ঠান করা বিদআত। দলিল হিসেবে তিনি বলেছেন এর কোন প্রমাণ কোরআন হাদিসে নাই। অতঃপর তিনি বলেছেন- কোন আয়িম্মায়ে মুজতাহিদীন ঈদে মিলাদুন্নবী নাম দিয়ে অনুষ্ঠান করেছেন এমন কোন প্রমাণ কোরআন হাদিসে নাই। তার এ কথাটি হাস্যকর। কারণ কোন আয়িম্মায়ে মুজতাহিদীনের আমল কোরআন হাদিসে বর্ণিত হয় না। বরং তাদের লিখিত কিতাবে বর্ণিত হয়। সুতরাং আয়িম্মায়ে মুজতাহিদীনের আমল কোরআনের আয়াতে থাকা বা হাদিসের ইবারতে থাকা দবি করা প্রলাপমাত্র।
এবার আসুন আয়িম্মায়ে কেরামদের লিখিত কিতাব থেকে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন সম্বন্ধে আলোচনা করি।
নবম শতকের মুজাদ্দিদ জগৎবিখ্যাত ইমাম আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ুতি রাদিয়াল্লাহু আনহু মিলাদশরীফের উপর ‘হুসনুল মাকসাদ ফি আমালিল মাওলিদ’ নামক স্বতন্ত্র একটি কিতাব রচনা করেছেন। যা তাঁর الحاوى للفتاوى নামক বিখ্যাত ফতোয়ার কিতাবে একত্রিত করা হয়েছে। সেখানে তিনি লিখেছেন-
وبعد فقد وقع السؤال عن عمل المولد النبوى فى شهر ربيع الاول ما حكمه من حيث الشرع؟ وهل هو محمود ام مذموم؟ وهل يثاب فاعله اولا؟
অর্থ: রবিউল আউয়াল মাসে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছে যে, শরিয়তের দৃষ্টিতে এর হুকুম কি? ইহা প্রশংসনীয় নাকি নিন্দনীয়? আমলকারীর জন্য কোন সওয়াব হবে কি না?
والجواب: عندى ان اصل عمل المولد الذى هو اجتماع الناس وقراة ماتيسر من القران ورواية الاخبار الواردة فى مبدأ امر النبى صلى الله عليه وسلم وما وقع فى مولده من الايات ثم يمدلهم سماط يأكلونه وينصرفون من غير زيادة على ذالك هو من البدع الحسنة التى يثاب عليها صاحبها لما فيه من تعظيم قدر النبى صلى الله عليه وسلم واظهار الفرح والاستبشار بمولده الشريف-
অর্থ: জবাব- মিলাদুন্নবীর মাহফিল আয়োজন করা, লোকজন সমবেত হওয়া কোরআনুল কারীম থেকে যথাসাধ্য তিলাওয়াত করা, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রাথমিক অবস্থা সংক্রান্ত হাদিস বর্ণনা করা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্মকালীন মু’জিজা বর্ণনা করা, অতঃপর খাবারের ব্যবস্থা করা, লোকজনদের মধ্যে অপচয় ব্যতীত বিতরণ করা ইত্যাদি হল বিদআতে হাসানাহ বা উত্তম কাজ। এতে আমলকারীদের জন্য সওয়াব রয়েছে। কারণ এর মাধ্যমে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মান প্রদর্শন ও তাঁর আগমনে খুশি হওয়া প্রকাশ পায়। (আল হাবী লিল ফাতাওয়া)
এবার দেখুন দেওবন্দী মসলকের পীর হাজি ইমদাদ উল্লা মোহাজিরে মক্বী (রহ। ) মিলাদুন্নবী মাহফিল সম্বন্ধে কি লিখেছেন।
তিনি فیصلہ ھفت مسئلہ কিতাবে বলেন-
فقیر کا مشرب یہ ہے کہ محفل مولود میں شریک ہوتا ہوں بلکہ برکات کا ذریعہ سمجہ کر ہر سال منعقد کرتا ہو اور قیام میں لطف اور لذت پاتا ہو-
অর্থ: আমার নীতি হচ্ছে, আমি মিলাদ মাহফিলে যোগদান করি। বরং একে বরকতের উসিলা মনে করে আমি নিজেই প্রতি বছর এর আয়োজন করে থাকি এবং আনন্দ ও তৃপ্তি পেয়ে থাকি।
এ ব্যাপারে আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘মাসাবাতা মিনাস সুন্নাহ’ কিতাবে আল্লামা ইমাম কাসতালানী রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘মাওয়াহিবে লাদুনিয়া’ কিতাবে, এবং আল্লামা আলী বিন বুরহান উদ্দিন হলবী রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘সীরাতে হলবিয়া’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন-
لا زال اهل الاسلام يحتفلون شهر مولده عليه السلام ويعملون الولائم ويتصدقون فى لياله بانواع الصدقات ويظهرون السرور ويزيدون فى المبرات ويعتون بقرائة مولده الكريم ويظهرعليهم من بركاته كل فضل عميم-
অর্থ: মুসলমানগণ সর্বদা নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম মাসে মাফিল করে থাকেন। সে উপলে আনন্দভোজাদি প্রস্তুত করে থাকেন এবং ঐ রাতসমূহে বিভিন্ন প্রকার দান-খয়রাত ও আনন্দ প্রকাশ করে থাকেন এবং মিলাদশরীফ পাঠ করার ক্ষেত্রে অতি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। যার বরকতে তাদের উপর বিভিন্ন প্রকারের কল্যাণ সাধিত হয়। (হাকিকতে মিলাদ)
সম্মানিত পাঠকগণ! নবম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ুতি রাদিয়াল্লাহু আনহু। যার কিতাব আরবে আজমে প্রসিদ্ধ। বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশে সরকারি, বেসরকারি মাদ্রাসা এবং বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ইমাম সুয়ুতি রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কিতাব না পড়লে আলেম হওয়া যায় না। এমন কি কওমী মাদ্রাসার একটি কাসের নামই রাখা হয়েছে ‘জালালাইন জামাত’। সে জালালাইন কিতাবের লিখক হলেন ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতি রাদিয়াল্লাহু আনহু ও ইমাম জালাল উদ্দিন মহল্লী রাদিয়াল্লাহু আনহু।
অতএব ইমাম সুয়ুতি রাদিয়াল্লাহু আনহু ফতোয়া প্রদান করে গেছেন মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন উপলে মাহফিল আয়োজন করা শিরনী তাবারুকের ব্যবস্থা করা উত্তম কাজ। এবং এতে সওয়াব নিহিত রয়েছে।
তাছাড়া হাজি ইমদাদ উল্লাহ মোহাজিরে মক্বী (রহ। ), আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী রাদিয়াল্লাহু আনহু, ইমাম কাস্তালানী রাদিয়াল্লাহু আনহু, ইমাম হলভী রাদিয়াল্লাহু আনহুসহ জগৎবিখ্যাত আয়িম্মায়ে কেরাম রবিউল আউয়াল মাসে মাহফিলে মওলুদ আয়োজন করা জায়েজ ও সওয়াবের কাজ বলে ফতোয়া প্রদান করে গেছেন।
আমি বলব যেখানে ইমাম সুয়ুতি রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ফতোয়া মওজুদ সেখানে হামিদীর বক্তব্য প্রলাপ বৈ কিছুই নয়।
Home
»
কিতাবঃ বিভ্রান্তির অবসান
» মিলাদুন্নবী উদযাপন প্রসঙ্গে হামিদীর প্রলাপ নবুয়ত প্রাপ্তির সময়কালঃ [কিতাবঃ বিভ্রান্তির অবসান (ঈদে মিলাদুন্নবী ﷺ প্রসঙ্গে) 🖋হাফেজ ইকরাম উদ্দীন]