ইমাম শাফেঈ (রহ:)-এর পুরো নাম মোহাম্মদ ইবনে ইদ্রিস ইবনে আব্বাস ইবনে উসমান ইবনে শাফেঈ। তাঁর পূর্বপুরুষদের মধ্যে ৮ম প্রপিতামহ হাশেম ইবনে আব্দিল মোত্তালেবের চাচা হাশেম ছিলেন রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর পূর্বপুরুষ। ইমাম সাহেবের ৫ম প্রপিতামহ সায়িব বদরের যুদ্ধে শত্রু পক্ষে অবস্থান করলেও পরবর্তীকালে তিনি ও তাঁর ছেলে শাফেঈ সাহাবী হবার মর্যাদা লাভ করেন। এই কারণে ইমাম সাহেবকে ‘আশ্ শাফেঈ’ বলা হয়। তাঁর মাতা সাহেবানী ছিলেন একজন শরীফা, মানে ইমাম হাসান (রা:)-এর বংশধর। ইমাম শাফেঈ (রহ:)-এর জন্ম গাযায় ১৫০ হিজরী মোতাবেক ৭৬৭ সালে এবং বেসাল মিসরে ২০৪ হিজরী/৮২০ সালে। দু’বছর বয়সে তাঁকে মক্কা মোকাররমায় নেয়া হয, যেখানে তিনি শৈশবকালে আল-কুরআন হেফয করেন এবং মাত্র ১০ বছর বয়সে ইমাম মালেক (রা:)-এর ‘মুওয়াত্তা’ হাদীসের গ্রন্থটি মুখস্থ করেন। পনেরো বছর বয়সে তিনি ফতোওয়া জারি আরম্ভ করেন। একই বছর তিনি মদীনা মোনাওয়ারায় যান এবং সেখানে ইমাম মালেক (রহ:)-এর কাছ থেকে ইসলামী জ্ঞান ও ফয়েয (আধ্যাত্মিক জ্ঞান) লাভ করেন। তিনি বাগদাদে আসেন ১৮৫ হিজরী সালে। দু’বছর পরে তিনি হজ্জ্ব উপলক্ষে মক্কা মোয়াযযমায় গমন করেন। হিজরী ১৯৮ সালে তিনি আবার বাগদাদে প্রত্যাবর্তন করেন এবং ১৯৯ সালে মিসরে বসতি আরম্ভ করেন। তাঁর বেসাল শরীফের দীর্ঘকাল পরে কেউ কেউ তাঁর জিসম মোবারক বাগদাদে ফেরত নিতে চাইলে তাঁর মাযার খনন করা হয়। ওই সময় মাযার শরীফ থেকে কস্তুরিগন্ধ বের হয়ে খননকারী লোকদেরকে বেহাল করে দেয়। তারা খনন কাজ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ইসলামী জ্ঞান, এবাদত-বন্দেগী, যুহদ, মা’রেফত, ধীশক্তি, স্মরণশক্তি ও কুলপরিচয়ে তিনি ছিলেন তাঁর সময়কার ইমামবৃন্দের পাশাপাশি তাঁর আগেকার ইমামদেরও পুরোধা। তাঁর মযহাব দূর-দূরান্তে প্রসার লাভ করে। আল-হারামাইন ও আল-আরদ্ আল-মুকাদ্দাস (প্যালেস্টাইন)-এর অধিবাসীরা সবাই শাফেঈ মযহাবের অনুসারী হন। ইমাম শাফেঈ (রহ:) ছিলেন নিম্নবর্ণিত হাদীসে কৃত ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তব রূপ; মহানবী (দ:) এরশাদ ফরমান,
কুরাইশ গোত্রের আলেম-ব্যক্তি পৃথিবীকে জ্ঞান দ্বারা পরিপূর্ণ করবেন।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:)-এর পুত্র আবদুল্লাহ তাঁর বাবাকে ইমাম শাফেঈ (রহ:)-এর জন্যে কেন এতো বেশি বেশি তিনি দোয়া করেন এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তাঁর বাবা ইমাম সাহেব জবাবে বলেন,
ওহে পুত্র! মানুষের মাঝে ইমাম শাফেঈ (রহ:)-এর মর্যাদা হলো আকাশে সূর্যের উপস্থিতির মতো। তিনি আত্মার (ব্যাধি) নিরাময়কারীস্বরূপ।
ওই দিনগুলোতে ‘মুওয়াত্তা’ হাদীসগ্রন্থে সংকলিত হয়েছিল ৯৫০০ হাদীস। পরবর্তীকালে তা থেকে যাচাই-বাছাই করে বর্তমানের ১৭০০টি হাদীসের সংকলন হিসেবে এটি আকৃতি পায়। ইমাম শাফেঈ (রহ:)-এর উপনাম ছিল ‘নাসিরুস্ সুন্নাহ’ (ধর্মের সাহায্যকারী)। মাত্র চার বছরের অল্প সময়ে তিনি একটি মযহাবের গোড়াপত্তন করার ঘটনাটি সত্যি বিস্ময়কর। ইমাম সাহেবের জীবনী ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করে ৪০টিরও বেশি বই অদ্যাবধি লেখা হয়েছে।