মসলকে আলা হযরত কি ও কেন?

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">মসলক এ আ’লা হযরত  কি ও কেন?   <br />*********************************<br />সৈয়দ মাওলানা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আযহারী<br />খতিব, মুসাফিরখানা জামে মসজিদ, নন্দনকানন, চট্টগ্রাম। সহকারী অধ্যাপক, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।<br />===============================================<br /><br />প্রথমেই একথা ভালভাবে বুঝে নেয়া দরকার ‘মসলকে আলা হযরত’ মানে নতুন কোন মসলক বা মাযহাবের নাম নয় বরং সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তবে তাবেয়ীন, ছালেহীন এবং মুসলিম জাতির মহান আলেম ও বিজ্ঞজনরা যে মসলক বা পথের উপর ছিলেন সেটাই মূলত ‘মসলকে আ’লা হযরত’।<br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgWqIHECn9GkbQYZsh5AUrLGj2MfqToZKqSbyAlkJbS0qZe7SVGtft4IorBZI44cBsQ97xonne2ooeCvpp_XSwSRDx-bX1ZAxAvAx7PUOikHlpsKXTCpGfZNlCOCAbISeMlpUQZbj8Z_OzB/s1600/alahazrat_dargah.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="360" data-original-width="546" height="210" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgWqIHECn9GkbQYZsh5AUrLGj2MfqToZKqSbyAlkJbS0qZe7SVGtft4IorBZI44cBsQ97xonne2ooeCvpp_XSwSRDx-bX1ZAxAvAx7PUOikHlpsKXTCpGfZNlCOCAbISeMlpUQZbj8Z_OzB/s320-rw/alahazrat_dargah.jpg" width="320" /></a></div><br /><br />এ নামকরণের মূল কারণ হলো- আজ থেকে প্রায় দুই শতাব্দী পূর্বে উপমহাদেশের জমিনে জন্ম লাভ করেছে নতুন নতুন অনেক ফেরকাহ্, আর এ ফেরকাসমূহের প্রবর্তক বা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদা-বিশ্বাস ও আচার অনুষ্ঠানকে শিরক ও বিদআত হিসেবে আখ্যায়িত করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়। বিশেষ করে ইসমাইল দেহলভী নজদী -ওয়াহাবী কর্তৃক প্রবর্তিত ভ্রান্ত আক্বিদা ভারত উপমহাদেশে আমদানী পূর্বক তা বাজারজাত করার লক্ষ্যে ‘তাক্বভীয়াতুল ঈমান’ নামক যে পুস্তকটি রচনা করে এতে রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ইলমে গায়ব’ হাযের-নাযের, শাফায়াত, সাহায্য তলব, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্’ বলে আহŸান করা, হায়াতুন্নবী, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর ইখতিয়ার বা ক্ষমতা ইত্যাদি সকল প্রকার আকায়েদকে শিরক-বিদআত হিসেবে আখ্যায়িত করেছে অথচ এ আক্বিদাহ্সমূহ ইসলামের প্রারম্ভ থেকেই ক্বোরআন হাদিস দ্বারা বিশুদ্ধ-সহীহ্ আক্বিদা হিসেবে সকলের নিকট পরিচিত ও গৃহীত হয়েছে।<br />অনুরূপভাবে মিলাদ-কিয়াম, সালাত-সালাম, ইসালে সাওয়াব, ওরস ইত্যাদি কর্মকান্ড যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীদের মাঝে প্রচলিত এবং বিজ্ঞ আলেম ও জ্ঞানীদের নিকট পুণ্যময় আমল হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু এ সকল নতুন ফেরকার প্রবর্তক ও ধারক-বাহকের উপরোক্ত আক্বিদা ও আমলগুলোকে শিরক-বিদআত আখ্যায়িত করে সরল প্রাণ মুসলমানদের নিকট তা গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করল।<br /><br />এ অবস্থায় সে সময়ের আহলে সুন্নাতের বিজ্ঞ আলেমগণ তাঁদের লিখনির মাধ্যমে এ সকল সর্বজন স্বীকৃত-বিশুদ্ধ আকায়েদ ও আমল সংরক্ষণে কাজ করেন এবং তাঁরা লিখা, বক্তব্য ও মুনাযারা বা সম্মুখ বিতর্কের মাধ্যমে প্রতিটি প্রশ্নের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেন।<br /><br />ঈমান-আক্বিদা সংরক্ষনের এ যুগ সন্ধিক্ষণে ভারত উপমহাদেশে জন্মলাভ করেন ইমাম আহমদ রেযা খাঁন রহমাতুল্লাহি আলায়হি। যিনি ছিলেন যুগে এক অদ্বিতীয় আলেম, যাঁকে আল্লাহ্ তায়ালা সুগভীর জ্ঞান ও হিকমত দ্বারা ধন্য করেছেন এবং তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় ৫৫টি শাখা-প্রশাখায় বিচরণ ও পান্ডিত্য অর্জন করেন। বিশেষ করে ‘ইলমে ফিক্বহ’-এ তৎকালীন সময়ে তাঁর কোন সমকক্ষতার দাবীদার ছিলনা। যার স্বীকৃতি তাঁর বিরুদ্ধাচরণকারীরাও দিতে বাধ্য হয়েছিল।<br />তাই তিনি দেখতে পেলেন সমকালীন ওলামা-মাশায়েখ তাঁদের লিখনী ও বক্তব্যের মাধ্যমে বাতিল ফেরকাগুলো কর্তৃক উপস্থাপিত প্রশ্ন ও আপত্তিগুলোর জবাব দিয়ে আসছেন এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সঠিক আক্বিদাসহ জনসমক্ষে উপস্থাপনের মাধ্যমে ঈমান ও আক্বিদা সংরক্ষণ করে আসছেন।<br /><br />তখন তিনিও এ মহান খেদমতে নিজেকে ন্যস্ত করে দিলেন এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বায়েদসমূহের সমর্থনে অকাট্য দলিল-প্রমাণাদির এক মহাসম্ভার প্রস্তুত করলেন এবং এক একটি আক্বিদার সমর্থনে একাধিক স্বতন্ত্র কিতাব-গ্রন্থ রচনা করেন। পাশাপাশি তাঁর সময়কার প্রচলিত নানা আচার-অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় রীতি-নীতি নিয়েও তিনি গবেষণা করেন এবং তৎমধ্যে যেগুলো কোরআন-হাদিস সমর্থিত ছিল এগুলোর সমর্থনে তিনি অসংখ্য কিতাবাদি রচনা করেন। আর যা কোরআন-হাদিস সমর্থিত ছিলনা তার খন্ডনেও তিনি প্রচুর পুস্তকাদি লিখেন।<br />এভাবে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে সহ¯্রাধিক কিতাবের এক মহা ভান্ডার মুসলিম জাতিকে উপহার দেন। সুতরাং তিনি বাতিল ফেরকাহ্সমূহের খন্ডনে এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকায়েদ ও আমলের সমর্থনে যে মহান খেদমত আঞ্জাম দিয়েছিলেন এর ফলে তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ওলামাগণের কাতারে সর্বপ্রথম স্থানে সমাসীন হয়ে যান। আর আহলে সুন্নাতের এ মহান খেদমত ও প্রতিনিধিত্বের কারণে এক সময়ে এ আক্বিদাসমূহ তাঁর দিকে নিসবত বা সম্পর্কিত হতে থাকে। এক পর্যায়ে অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়ালো যে, তাঁকে সর্বস্তরের সুন্নী মুসলমানগণ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের এক মহান দিক নির্দেশক হিসেবেই স্বীকৃতি দিতে লাগল। আহলে সুন্নাত মানেই ইমাম আহমদ রেযা, আর ইমাম আহমদ রেযা মানেই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত। আর এ কারণেই যখন কোন হেজাযী বা সিরিয়াবাসী অথবা কোন ইরাকী বা ইয়ামনবাসী কিংবা কোন মিসরী বা সুদানীও যদি মদিনা শরীফে গিয়ে ‘এয়া রাসূলাল্লাহ্’ বলে আহŸান করে তখন নজদীরা তাকে ‘বেরলভী’ই বলে আখ্যায়িত করে, যদিওবা তার সাথে ভারতের ‘বেরলী’ শহরের কোন সম্পর্কই নেই।<br /><br />এমনিভাবে যদি কেউ ‘এয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনার সুপারিশ প্রত্যাশা করছি, বলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট শাফায়াত কামনা করে তখন সে আরব উপদ্বীপের লোক হলেও ওয়াহাবী-নজদীরা তাকে ‘বেরলভী’ বলে আখ্যায়িত করে থাকে অথচ ‘বেরলভী’ তাকেই বলা উচিত যে ভারতের ‘বেরলী’ শহরে বসবাস করে। কিন্তু তার কারণ আপনার নিকট স্পষ্ট আর তাহলো- উপরোক্ত আক্বিদাসমূহ মূলত সেই আকায়েদ যা সলফে সালেহীনগণ পোষণ করতেন, আর ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলায়হি এগুলোকে দলীল-প্রমাণাদি দ্বারা সুদৃঢ় ও মজবুতভাবে উপস্থাপন করেছেন এবং আক্বায়েদের প্রমাণের ক্ষেত্রে তাঁর অবাদানই ছিল সর্বাধিক। যার ফলে তিনি ভারতবর্ষের আলেমগণের মধ্যে সর্বাধিক প্রসিদ্ধি ও গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেন।<br /><br />পাশাপাশি এ আকিদাগুলো ইমাম আহমদ রেযার দিকে এতবেশী নিসবত বা সম্পর্কিত হয়ে গেছে যে, পৃথিবীর যে কোন মুসলমানই যদি এ আক্বিদার বিশ্বাসী ও সমর্থক হয় তখন তাকে ইমাম আহমদ রেযার দিকে নিসবত করে ‘বেরলভী’ই বলে আখ্যায়িত করা হয়।<br /><br />যেহেতু ভারত উপমহাদেশে নানা ফেরকার এক বিপুল সম্ভার বিদ্যমান। তাই প্রকৃত ‘আহরে সুন্নাত ওয়াল জামাত’ এর সঠিক পরিচয় লাভ করা অত্যন্ত দুরূহ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা দেওবন্দীরাও নিজেদেরকে ‘আহলে সুন্নাত’ হিসেবেই প্রকাশ করে থাকে। অথচ ওয়াহাবী ও দেওবন্দীদের মূল আকিদা ও এক ও অভিন্ন। শুধু পার্থক্য হলো- ওয়াহাবীরা নিজেদেরকে ‘আহলে হাদিস’ হিসেবে দাবী করে এবং চার মাযহাবের কোন মাযহাবের ইমামের তাকলিদ অনুসরণ করে না। পক্ষান্তরে দেওবন্দীরা যদিওবা তাকলীদ বা চার মাযহাবের কোন এক মাযহাবের অনুসারী কিন্তু তারা ওয়াহাবী আকায়েদকেও হক্ব বা সত্য হিসাবে মানে ও স্বীকার করে। তাই বর্তমান যুগে প্রকৃত আহলে সুন্নাত কারা তা বুঝে উঠা বা চিহ্ণিত করা মুশকিলের ব্যাপার।<br /><br />এ কারণেই আমাদের বিজ্ঞ আলেমগণ ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’কে অন্যান্য ফেরকাহ্ আলাদাভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ‘মসলকে আলা হযরত’ ব্যবহারকে সমীচীন মনে করেছেন।<br /><br />আর এর সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো, এখন যে ব্যক্তি ‘মসলকে আলা হযরত’ কে স্বীকারকারী হিসেবে প্রমাণিত হবে তখন এমনিতেই তার সম্পর্কে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবে যে, এ ব্যক্তি ইলমে গায়ব, হাযের-নাযের, সাহায্য প্রার্থনা (ইসতায়ানাত), শাফায়াত ইত্যাদিকে মান্যকারী এবং আহলে সুন্নাতের অন্যান্য আমল ও আচার-অনুষ্ঠান তথা ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম, মিলাদ-কিয়াম, সালাত-সালাম ইত্যাদিকেও পূণ্য ও সওয়াবের আমল হিসেবে মেনে নেয়।<br />যদি কেউ একথা বলে যে, ‘না, নিজেকে শুধু সুন্নী দাবী করাই যথেষ্ট’ তখন আমি তার উদ্দেশ্যে বলবঃ জনাব! যদি কেউ নিজেকে সুন্নী দাবী করে তাহলে আপনি তাকে কিভাবে বুঝবেন যে, সে কোন ধরনের সুন্নী? হানাফী মাযহাবের অনুসারী হয়েও ওয়াহাবী আকিদাকে হক্ব বা সত্য হিসেবে মান্যকারী, নাকি ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্! ¯েøাগানধারী?<br /><br />তাহলে প্রমাণিত হলো- শুধু ‘সুন্নী’ বললে কারও সঠিক পরিচয় পাওয়া যাবেনা, কিন্তু কেউ যদি নিজেকে ‘বেরলভী সুন্নী’ বলে তাহলে সাথে সাথে বুঝা যাবে যে, এ ব্যক্তি হানাফীও এবং প্রকৃত সুন্নীও। অথবা কেউ নিজেকে ‘মসলকে আলা হযরত’ এর অনুসারী হিসেবে প্রকাশ করে তখনও ওই মুসলমানের আক্বিদা ও চিন্তাধারা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।<br /><br />প্রত্যেক যুগে আহলে ঈমান তথা হক্বপন্থীদের পরিচয় পেশ করা আবশ্যক ছিল। দেখুন, মক্কা ভ‚মিতে যখন ইসলামের দাওয়াত প্রচারিত হলো তখনকার ঈমানদারদের পরিচয় ছিল-‘মুসলমান’ তখন যে কেউ নিজেকে মুসলমান বলতো তাতে বুঝা যেত, সে আল্লাহ্ তা‘আলার ওয়াহ্দানিয়্যাত এবং রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর রিসালতকে বিশ্বাস করে এবং তাঁর সুন্নত বা নির্দেশানুযায়ী আমলকারী তথা ‘আহলে সুন্নাত’ এর অনুসারী। কিন্তু এক শতাব্দী যেতে না যেতে ঈমানদার বা আহলে হক্বের পরিচয়ের জন্য নতুন একটি শব্দ সংযোজনের প্রয়োজন হয়ে পড়ল, আর তা হলো ‘সুন্নী’ তার কারণ হলো- তখন এমন একটি নতুন ফেরকা উদ্ভব হলো যারা হযরত আবু বকর সিদ্দিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু, ফারুকে আযম এবং ওসমান যুন নুরাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমকে নানা অপবাদ দিতে শুরু করল। তাঁদেরকে বরহক খলিফা হিসেবে মানতে অস্বীকৃতি জানাল এবং তাঁদেরকে লা’নত দিতে লাগল। কিন্তু এসব কিছুর পরও তারা নিজেদেরকে মুসলমান হিসেবেই দাবী করতে লাগল। এ কারণে সে সময়ের হক্বপন্থীরা নিজেদের সঠিক পরিচয়ের জন্য একটি অতিরিক্ত শব্দ সংযোজন করল আর তা হলো ‘সুন্নী মুসলমান’<br /><br />এ সময় কেউ যদি নিজেকে শুধু মুসলমান বলত তখন তার সম্পর্কে এ প্রশ্ন জাগত যে, সে কোন মুসলমান? হযরত  সিদ্দিকে আকবর, হযরত ফারুকে আযম এবং হযরত ওসমানে গনি রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমকে গালিগালাজকারী মুসলমান? নাকি তাঁদের প্রতি সম্মান-তাজিম প্রদর্শনকারী এবং তাঁদের জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে রহমত কামনাকারী মুসলমান?<br /><br />আর যদি কেউ নিজেকে ‘সুন্নী মুসলমান’ বলে তখন তার সম্পর্কে এ ধারণা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, তিনি খোলাফায়ে রাশেদাকে সম্মানকারী মুসলমান এভাবে খোলাফায়ে রাশেদার প্রতি লানতকারী ‘রাফেজী সম্প্রদায়ের বিপরীতে ‘আহলে সুন্নাত’ এর একটি আলাদা পরিচয় প্রতিষ্ঠিত হলো, আর তাহলো- ‘‘সুন্নী মুসলমান।’’<br /><br />এরই ধারাবাহিকতায় কিছুলোক প্রশ্ন করে থাকে যে, হানাফী শাফেয় মালেকী ও হাম্বলী এ চারটি মাযহাব থাকার পরও ‘মসলকে আলা হযরত’ নামে পঞ্চম একটি নতুন মাযহাবের আবার প্রয়োজন কি? উত্তরে বলতে পারি এ কথা জেনে রাখা দরকার যে, ‘মসলকে আলা হযরত’ নতুন কোন মাযহাবের নাম নয় বরং উদ্দেশ্যই হলো- একথা প্রমাণ করা যে, ‘উপরিউক্ত চার মাযহাব হক ও সত্য। তাই এ চার মাযহাবের কোন একটি তাকলীদ (অনুসরণ) করা ওয়াজিব বা আবশ্যক। যা ইমাম আহমদ রেযার কিতাবাদি থেকে প্রমাণিত। তাই কোন শাফেয়ী বা হাম্বলী মাযহাবের অনুসারীও যদি নিজেকে ‘মসলকে আলা হযরত’ এর দিকে নিসবত করে তাহলে তার বক্তব্য থেকে এ সথা বুঝা যাবে যে, সে ফেকহী ফরযী বা আমলী দিক থেকে স্বীয় ইমামের অনুসারী পাশাপাশি আকিদাও আহলে সুন্নাতের আচার অনুষ্ঠানাদিরও সমর্থক ও বিশ্বাসী।<br />আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলে হয়না, আর তা হলো- বিরুদ্ধাচরণকারীরা এ বলে বেড়ায় যে, ‘এটি একটি পঞ্চম মাযহাব’ আমরা তাদের উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জসহ ঘোষনা করতে পারিঃ আপনারা কি প্রমাণ করতে পারবেন যে, ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলায়হি কোন একটি আক্বিদাকে কোরআন-হাদিসের দলিল ব্যতিরেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন?<br />যে কোন বিষয়ের উপর তাঁর কিতাব খুলে দেখুন, দেখতে পাবেন তিনি প্রতিটি আকিদা প্রমাণের জন্য কোরআন-হাদিসের পাশাপাশি সলফে সালেহীনদের মতামত ও বক্তব্য তুলে ধরেছেন।<br /><br />সত্যকে জানতে হলে শর্ত হলো- উগ্রতাকে পরিহার করে নিরপেক্ষভাবে তাঁর পুস্তকাদি পাঠ করা। এতে একথা দিবালোকের ন্যায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে যে, আলা হযরত তাই বলেছেন যা চৌদ্দশত বছর ধরে আহলে হক আলেম ও ফক্বীহগণ বলে আসছেন।<br /><br />তাও যদি কেউ মানতে রাজি না হয় এবং ‘মসলক’ শব্দটি ব্যবহারে আপত্তি থাকে, আর একে একটি নতুন মাযহাব হিসেবে আখ্যায়িত করতে চায় তাহলে ওহাহাবী-দেওবন্দীদের উদ্দেশ্যে বলব আপনারা কি জবাব দেবেন যে, আপনাদেরই সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক মওলভী মোহাম্মদ ইকরাম তার ‘হাওযে কাওছার’ এ শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ মুহাদ্দেছ দেহলভীর আকিদা ও চিন্তাধারা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি ‘মসলকে শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ্’ শব্দটি বারবার ব্যবহার করেছেন।<br />তাহলে বলবেন কি! চার মাযহাবের বাইরে পঞ্চম বা ষষ্ঠ একটি মাযহাব হলো- ‘মসলকে শাহ্ওয়ালী উল্লাহ্’’? আপনার যে উত্তরটি হবে সেটি আমাদেরও উত্তর।</div>

মসলকে আলা হযরত কি ও কেন?

মসলক এ আ’লা হযরত  কি ও কেন?    ********************************* সৈয়দ মাওলানা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আযহারী খতিব, মুসাফিরখানা জামে মসজিদ, নন্...

Read more »

মসলকে আলা হযরত কি ও কেন?

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"> মসলক এ আ’লা হযরত  কি ও কেন?   <br /> *********************************<br /> সৈয়দ মাওলানা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আযহারী<br /> খতিব, মুসাফিরখানা জামে মসজিদ, নন্দনকানন, চট্টগ্রাম। সহকারী অধ্যাপক, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।<br /> ===============================================<br /> <br /> প্রথমেই একথা ভালভাবে বুঝে নেয়া দরকার ‘মসলকে আলা হযরত’ মানে নতুন কোন মসলক বা মাযহাবের নাম নয় বরং সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তবে তাবেয়ীন, ছালেহীন এবং মুসলিম জাতির মহান আলেম ও বিজ্ঞজনরা যে মসলক বা পথের উপর ছিলেন সেটাই মূলত ‘মসলকে আ’লা হযরত’।<br /> <div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"> <a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgbTsfuIhq2gr0jzKCNKyI79wO1gLRdW3zRhY8db2mbXmYU-XU6mthB58dvPy3nyOgigzdGYyzzBQ8PCH0WDyqroyH49wbf_HqzD3riYul0ezFFNjad033gEtLdnnEGm361fc0wpNx2XIrf/s1600/alahazrat_dargah.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="360" data-original-width="546" height="210" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgbTsfuIhq2gr0jzKCNKyI79wO1gLRdW3zRhY8db2mbXmYU-XU6mthB58dvPy3nyOgigzdGYyzzBQ8PCH0WDyqroyH49wbf_HqzD3riYul0ezFFNjad033gEtLdnnEGm361fc0wpNx2XIrf/s320-rw/alahazrat_dargah.jpg" width="320" /></a></div> <br /> <br /> এ নামকরণের মূল কারণ হলো- আজ থেকে প্রায় দুই শতাব্দী পূর্বে উপমহাদেশের জমিনে জন্ম লাভ করেছে নতুন নতুন অনেক ফেরকাহ্, আর এ ফেরকাসমূহের প্রবর্তক বা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদা-বিশ্বাস ও আচার অনুষ্ঠানকে শিরক ও বিদআত হিসেবে আখ্যায়িত করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়। বিশেষ করে ইসমাইল দেহলভী নজদী -ওয়াহাবী কর্তৃক প্রবর্তিত ভ্রান্ত আক্বিদা ভারত উপমহাদেশে আমদানী পূর্বক তা বাজারজাত করার লক্ষ্যে ‘তাক্বভীয়াতুল ঈমান’ নামক যে পুস্তকটি রচনা করে এতে রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ইলমে গায়ব’ হাযের-নাযের, শাফায়াত, সাহায্য তলব, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্’ বলে আহŸান করা, হায়াতুন্নবী, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর ইখতিয়ার বা ক্ষমতা ইত্যাদি সকল প্রকার আকায়েদকে শিরক-বিদআত হিসেবে আখ্যায়িত করেছে অথচ এ আক্বিদাহ্সমূহ ইসলামের প্রারম্ভ থেকেই ক্বোরআন হাদিস দ্বারা বিশুদ্ধ-সহীহ্ আক্বিদা হিসেবে সকলের নিকট পরিচিত ও গৃহীত হয়েছে।<br /> অনুরূপভাবে মিলাদ-কিয়াম, সালাত-সালাম, ইসালে সাওয়াব, ওরস ইত্যাদি কর্মকান্ড যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীদের মাঝে প্রচলিত এবং বিজ্ঞ আলেম ও জ্ঞানীদের নিকট পুণ্যময় আমল হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু এ সকল নতুন ফেরকার প্রবর্তক ও ধারক-বাহকের উপরোক্ত আক্বিদা ও আমলগুলোকে শিরক-বিদআত আখ্যায়িত করে সরল প্রাণ মুসলমানদের নিকট তা গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করল।<br /> <br /> এ অবস্থায় সে সময়ের আহলে সুন্নাতের বিজ্ঞ আলেমগণ তাঁদের লিখনির মাধ্যমে এ সকল সর্বজন স্বীকৃত-বিশুদ্ধ আকায়েদ ও আমল সংরক্ষণে কাজ করেন এবং তাঁরা লিখা, বক্তব্য ও মুনাযারা বা সম্মুখ বিতর্কের মাধ্যমে প্রতিটি প্রশ্নের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেন।<br /> <br /> ঈমান-আক্বিদা সংরক্ষনের এ যুগ সন্ধিক্ষণে ভারত উপমহাদেশে জন্মলাভ করেন ইমাম আহমদ রেযা খাঁন রহমাতুল্লাহি আলায়হি। যিনি ছিলেন যুগে এক অদ্বিতীয় আলেম, যাঁকে আল্লাহ্ তায়ালা সুগভীর জ্ঞান ও হিকমত দ্বারা ধন্য করেছেন এবং তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় ৫৫টি শাখা-প্রশাখায় বিচরণ ও পান্ডিত্য অর্জন করেন। বিশেষ করে ‘ইলমে ফিক্বহ’-এ তৎকালীন সময়ে তাঁর কোন সমকক্ষতার দাবীদার ছিলনা। যার স্বীকৃতি তাঁর বিরুদ্ধাচরণকারীরাও দিতে বাধ্য হয়েছিল।<br /> তাই তিনি দেখতে পেলেন সমকালীন ওলামা-মাশায়েখ তাঁদের লিখনী ও বক্তব্যের মাধ্যমে বাতিল ফেরকাগুলো কর্তৃক উপস্থাপিত প্রশ্ন ও আপত্তিগুলোর জবাব দিয়ে আসছেন এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সঠিক আক্বিদাসহ জনসমক্ষে উপস্থাপনের মাধ্যমে ঈমান ও আক্বিদা সংরক্ষণ করে আসছেন।<br /> <br /> তখন তিনিও এ মহান খেদমতে নিজেকে ন্যস্ত করে দিলেন এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বায়েদসমূহের সমর্থনে অকাট্য দলিল-প্রমাণাদির এক মহাসম্ভার প্রস্তুত করলেন এবং এক একটি আক্বিদার সমর্থনে একাধিক স্বতন্ত্র কিতাব-গ্রন্থ রচনা করেন। পাশাপাশি তাঁর সময়কার প্রচলিত নানা আচার-অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় রীতি-নীতি নিয়েও তিনি গবেষণা করেন এবং তৎমধ্যে যেগুলো কোরআন-হাদিস সমর্থিত ছিল এগুলোর সমর্থনে তিনি অসংখ্য কিতাবাদি রচনা করেন। আর যা কোরআন-হাদিস সমর্থিত ছিলনা তার খন্ডনেও তিনি প্রচুর পুস্তকাদি লিখেন।<br /> এভাবে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে সহ¯্রাধিক কিতাবের এক মহা ভান্ডার মুসলিম জাতিকে উপহার দেন। সুতরাং তিনি বাতিল ফেরকাহ্সমূহের খন্ডনে এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকায়েদ ও আমলের সমর্থনে যে মহান খেদমত আঞ্জাম দিয়েছিলেন এর ফলে তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ওলামাগণের কাতারে সর্বপ্রথম স্থানে সমাসীন হয়ে যান। আর আহলে সুন্নাতের এ মহান খেদমত ও প্রতিনিধিত্বের কারণে এক সময়ে এ আক্বিদাসমূহ তাঁর দিকে নিসবত বা সম্পর্কিত হতে থাকে। এক পর্যায়ে অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়ালো যে, তাঁকে সর্বস্তরের সুন্নী মুসলমানগণ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের এক মহান দিক নির্দেশক হিসেবেই স্বীকৃতি দিতে লাগল। আহলে সুন্নাত মানেই ইমাম আহমদ রেযা, আর ইমাম আহমদ রেযা মানেই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত। আর এ কারণেই যখন কোন হেজাযী বা সিরিয়াবাসী অথবা কোন ইরাকী বা ইয়ামনবাসী কিংবা কোন মিসরী বা সুদানীও যদি মদিনা শরীফে গিয়ে ‘এয়া রাসূলাল্লাহ্’ বলে আহŸান করে তখন নজদীরা তাকে ‘বেরলভী’ই বলে আখ্যায়িত করে, যদিওবা তার সাথে ভারতের ‘বেরলী’ শহরের কোন সম্পর্কই নেই।<br /> <br /> এমনিভাবে যদি কেউ ‘এয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনার সুপারিশ প্রত্যাশা করছি, বলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট শাফায়াত কামনা করে তখন সে আরব উপদ্বীপের লোক হলেও ওয়াহাবী-নজদীরা তাকে ‘বেরলভী’ বলে আখ্যায়িত করে থাকে অথচ ‘বেরলভী’ তাকেই বলা উচিত যে ভারতের ‘বেরলী’ শহরে বসবাস করে। কিন্তু তার কারণ আপনার নিকট স্পষ্ট আর তাহলো- উপরোক্ত আক্বিদাসমূহ মূলত সেই আকায়েদ যা সলফে সালেহীনগণ পোষণ করতেন, আর ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলায়হি এগুলোকে দলীল-প্রমাণাদি দ্বারা সুদৃঢ় ও মজবুতভাবে উপস্থাপন করেছেন এবং আক্বায়েদের প্রমাণের ক্ষেত্রে তাঁর অবাদানই ছিল সর্বাধিক। যার ফলে তিনি ভারতবর্ষের আলেমগণের মধ্যে সর্বাধিক প্রসিদ্ধি ও গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেন।<br /> <br /> পাশাপাশি এ আকিদাগুলো ইমাম আহমদ রেযার দিকে এতবেশী নিসবত বা সম্পর্কিত হয়ে গেছে যে, পৃথিবীর যে কোন মুসলমানই যদি এ আক্বিদার বিশ্বাসী ও সমর্থক হয় তখন তাকে ইমাম আহমদ রেযার দিকে নিসবত করে ‘বেরলভী’ই বলে আখ্যায়িত করা হয়।<br /> <br /> যেহেতু ভারত উপমহাদেশে নানা ফেরকার এক বিপুল সম্ভার বিদ্যমান। তাই প্রকৃত ‘আহরে সুন্নাত ওয়াল জামাত’ এর সঠিক পরিচয় লাভ করা অত্যন্ত দুরূহ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা দেওবন্দীরাও নিজেদেরকে ‘আহলে সুন্নাত’ হিসেবেই প্রকাশ করে থাকে। অথচ ওয়াহাবী ও দেওবন্দীদের মূল আকিদা ও এক ও অভিন্ন। শুধু পার্থক্য হলো- ওয়াহাবীরা নিজেদেরকে ‘আহলে হাদিস’ হিসেবে দাবী করে এবং চার মাযহাবের কোন মাযহাবের ইমামের তাকলিদ অনুসরণ করে না। পক্ষান্তরে দেওবন্দীরা যদিওবা তাকলীদ বা চার মাযহাবের কোন এক মাযহাবের অনুসারী কিন্তু তারা ওয়াহাবী আকায়েদকেও হক্ব বা সত্য হিসাবে মানে ও স্বীকার করে। তাই বর্তমান যুগে প্রকৃত আহলে সুন্নাত কারা তা বুঝে উঠা বা চিহ্ণিত করা মুশকিলের ব্যাপার।<br /> <br /> এ কারণেই আমাদের বিজ্ঞ আলেমগণ ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’কে অন্যান্য ফেরকাহ্ আলাদাভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ‘মসলকে আলা হযরত’ ব্যবহারকে সমীচীন মনে করেছেন।<br /> <br /> আর এর সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো, এখন যে ব্যক্তি ‘মসলকে আলা হযরত’ কে স্বীকারকারী হিসেবে প্রমাণিত হবে তখন এমনিতেই তার সম্পর্কে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবে যে, এ ব্যক্তি ইলমে গায়ব, হাযের-নাযের, সাহায্য প্রার্থনা (ইসতায়ানাত), শাফায়াত ইত্যাদিকে মান্যকারী এবং আহলে সুন্নাতের অন্যান্য আমল ও আচার-অনুষ্ঠান তথা ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম, মিলাদ-কিয়াম, সালাত-সালাম ইত্যাদিকেও পূণ্য ও সওয়াবের আমল হিসেবে মেনে নেয়।<br /> যদি কেউ একথা বলে যে, ‘না, নিজেকে শুধু সুন্নী দাবী করাই যথেষ্ট’ তখন আমি তার উদ্দেশ্যে বলবঃ জনাব! যদি কেউ নিজেকে সুন্নী দাবী করে তাহলে আপনি তাকে কিভাবে বুঝবেন যে, সে কোন ধরনের সুন্নী? হানাফী মাযহাবের অনুসারী হয়েও ওয়াহাবী আকিদাকে হক্ব বা সত্য হিসেবে মান্যকারী, নাকি ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্! ¯েøাগানধারী?<br /> <br /> তাহলে প্রমাণিত হলো- শুধু ‘সুন্নী’ বললে কারও সঠিক পরিচয় পাওয়া যাবেনা, কিন্তু কেউ যদি নিজেকে ‘বেরলভী সুন্নী’ বলে তাহলে সাথে সাথে বুঝা যাবে যে, এ ব্যক্তি হানাফীও এবং প্রকৃত সুন্নীও। অথবা কেউ নিজেকে ‘মসলকে আলা হযরত’ এর অনুসারী হিসেবে প্রকাশ করে তখনও ওই মুসলমানের আক্বিদা ও চিন্তাধারা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।<br /> <br /> প্রত্যেক যুগে আহলে ঈমান তথা হক্বপন্থীদের পরিচয় পেশ করা আবশ্যক ছিল। দেখুন, মক্কা ভ‚মিতে যখন ইসলামের দাওয়াত প্রচারিত হলো তখনকার ঈমানদারদের পরিচয় ছিল-‘মুসলমান’ তখন যে কেউ নিজেকে মুসলমান বলতো তাতে বুঝা যেত, সে আল্লাহ্ তা‘আলার ওয়াহ্দানিয়্যাত এবং রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর রিসালতকে বিশ্বাস করে এবং তাঁর সুন্নত বা নির্দেশানুযায়ী আমলকারী তথা ‘আহলে সুন্নাত’ এর অনুসারী। কিন্তু এক শতাব্দী যেতে না যেতে ঈমানদার বা আহলে হক্বের পরিচয়ের জন্য নতুন একটি শব্দ সংযোজনের প্রয়োজন হয়ে পড়ল, আর তা হলো ‘সুন্নী’ তার কারণ হলো- তখন এমন একটি নতুন ফেরকা উদ্ভব হলো যারা হযরত আবু বকর সিদ্দিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু, ফারুকে আযম এবং ওসমান যুন নুরাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমকে নানা অপবাদ দিতে শুরু করল। তাঁদেরকে বরহক খলিফা হিসেবে মানতে অস্বীকৃতি জানাল এবং তাঁদেরকে লা’নত দিতে লাগল। কিন্তু এসব কিছুর পরও তারা নিজেদেরকে মুসলমান হিসেবেই দাবী করতে লাগল। এ কারণে সে সময়ের হক্বপন্থীরা নিজেদের সঠিক পরিচয়ের জন্য একটি অতিরিক্ত শব্দ সংযোজন করল আর তা হলো ‘সুন্নী মুসলমান’<br /> <br /> এ সময় কেউ যদি নিজেকে শুধু মুসলমান বলত তখন তার সম্পর্কে এ প্রশ্ন জাগত যে, সে কোন মুসলমান? হযরত  সিদ্দিকে আকবর, হযরত ফারুকে আযম এবং হযরত ওসমানে গনি রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমকে গালিগালাজকারী মুসলমান? নাকি তাঁদের প্রতি সম্মান-তাজিম প্রদর্শনকারী এবং তাঁদের জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে রহমত কামনাকারী মুসলমান?<br /> <br /> আর যদি কেউ নিজেকে ‘সুন্নী মুসলমান’ বলে তখন তার সম্পর্কে এ ধারণা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, তিনি খোলাফায়ে রাশেদাকে সম্মানকারী মুসলমান এভাবে খোলাফায়ে রাশেদার প্রতি লানতকারী ‘রাফেজী সম্প্রদায়ের বিপরীতে ‘আহলে সুন্নাত’ এর একটি আলাদা পরিচয় প্রতিষ্ঠিত হলো, আর তাহলো- ‘‘সুন্নী মুসলমান।’’<br /> <br /> এরই ধারাবাহিকতায় কিছুলোক প্রশ্ন করে থাকে যে, হানাফী শাফেয় মালেকী ও হাম্বলী এ চারটি মাযহাব থাকার পরও ‘মসলকে আলা হযরত’ নামে পঞ্চম একটি নতুন মাযহাবের আবার প্রয়োজন কি? উত্তরে বলতে পারি এ কথা জেনে রাখা দরকার যে, ‘মসলকে আলা হযরত’ নতুন কোন মাযহাবের নাম নয় বরং উদ্দেশ্যই হলো- একথা প্রমাণ করা যে, ‘উপরিউক্ত চার মাযহাব হক ও সত্য। তাই এ চার মাযহাবের কোন একটি তাকলীদ (অনুসরণ) করা ওয়াজিব বা আবশ্যক। যা ইমাম আহমদ রেযার কিতাবাদি থেকে প্রমাণিত। তাই কোন শাফেয়ী বা হাম্বলী মাযহাবের অনুসারীও যদি নিজেকে ‘মসলকে আলা হযরত’ এর দিকে নিসবত করে তাহলে তার বক্তব্য থেকে এ সথা বুঝা যাবে যে, সে ফেকহী ফরযী বা আমলী দিক থেকে স্বীয় ইমামের অনুসারী পাশাপাশি আকিদাও আহলে সুন্নাতের আচার অনুষ্ঠানাদিরও সমর্থক ও বিশ্বাসী।<br /> আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলে হয়না, আর তা হলো- বিরুদ্ধাচরণকারীরা এ বলে বেড়ায় যে, ‘এটি একটি পঞ্চম মাযহাব’ আমরা তাদের উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জসহ ঘোষনা করতে পারিঃ আপনারা কি প্রমাণ করতে পারবেন যে, ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলায়হি কোন একটি আক্বিদাকে কোরআন-হাদিসের দলিল ব্যতিরেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন?<br /> যে কোন বিষয়ের উপর তাঁর কিতাব খুলে দেখুন, দেখতে পাবেন তিনি প্রতিটি আকিদা প্রমাণের জন্য কোরআন-হাদিসের পাশাপাশি সলফে সালেহীনদের মতামত ও বক্তব্য তুলে ধরেছেন।<br /> <br /> সত্যকে জানতে হলে শর্ত হলো- উগ্রতাকে পরিহার করে নিরপেক্ষভাবে তাঁর পুস্তকাদি পাঠ করা। এতে একথা দিবালোকের ন্যায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে যে, আলা হযরত তাই বলেছেন যা চৌদ্দশত বছর ধরে আহলে হক আলেম ও ফক্বীহগণ বলে আসছেন।<br /> <br /> তাও যদি কেউ মানতে রাজি না হয় এবং ‘মসলক’ শব্দটি ব্যবহারে আপত্তি থাকে, আর একে একটি নতুন মাযহাব হিসেবে আখ্যায়িত করতে চায় তাহলে ওহাহাবী-দেওবন্দীদের উদ্দেশ্যে বলব আপনারা কি জবাব দেবেন যে, আপনাদেরই সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক মওলভী মোহাম্মদ ইকরাম তার ‘হাওযে কাওছার’ এ শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ মুহাদ্দেছ দেহলভীর আকিদা ও চিন্তাধারা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি ‘মসলকে শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ্’ শব্দটি বারবার ব্যবহার করেছেন।<br /> তাহলে বলবেন কি! চার মাযহাবের বাইরে পঞ্চম বা ষষ্ঠ একটি মাযহাব হলো- ‘মসলকে শাহ্ওয়ালী উল্লাহ্’’? আপনার যে উত্তরটি হবে সেটি আমাদেরও উত্তর।</div>

মসলকে আলা হযরত কি ও কেন?

মসলক এ আ’লা হযরত  কি ও কেন?    ********************************* সৈয়দ মাওলানা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আযহারী খতিব, মুসাফিরখানা জামে মসজিদ,...

Read more »

মসলকে আলা হযরত কি ও কেন?

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"><br />মসলক এ আ’লা হযরত  কি ও কেন?   <br /><br />*********************************<br /><br />সৈয়দ মাওলানা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আযহারী<br /><br />খতিব, মুসাফিরখানা জামে মসজিদ, নন্দনকানন, চট্টগ্রাম। সহকারী অধ্যাপক, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।<br /><br />===============================================<br /><br /><br /><br />প্রথমেই একথা ভালভাবে বুঝে নেয়া দরকার ‘মসলকে আলা হযরত’ মানে নতুন কোন মসলক বা মাযহাবের নাম নয় বরং সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তবে তাবেয়ীন, ছালেহীন এবং মুসলিম জাতির মহান আলেম ও বিজ্ঞজনরা যে মসলক বা পথের উপর ছিলেন সেটাই মূলত ‘মসলকে আ’লা হযরত’।<br /><br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><br /><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgJQO8TjM0ImY44BBW9tG27DGJmFBdmkclmO2_ZALHZ3FQAAOjsSvlr4Ye8zsNZzST0sAdgpjTnLQ0G2muMY4m0Xw4Z-eqZGWAuyLfpl96m6Bb0G8-VFCLwWkiyjGkE67FNNKL3FVbnSACm/s1600/alahazrat_dargah.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="360" data-original-width="546" height="210" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgJQO8TjM0ImY44BBW9tG27DGJmFBdmkclmO2_ZALHZ3FQAAOjsSvlr4Ye8zsNZzST0sAdgpjTnLQ0G2muMY4m0Xw4Z-eqZGWAuyLfpl96m6Bb0G8-VFCLwWkiyjGkE67FNNKL3FVbnSACm/s320-rw/alahazrat_dargah.jpg" width="320" /></a></div><br /><br /><br /><br /><br />এ নামকরণের মূল কারণ হলো- আজ থেকে প্রায় দুই শতাব্দী পূর্বে উপমহাদেশের জমিনে জন্ম লাভ করেছে নতুন নতুন অনেক ফেরকাহ্, আর এ ফেরকাসমূহের প্রবর্তক বা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদা-বিশ্বাস ও আচার অনুষ্ঠানকে শিরক ও বিদআত হিসেবে আখ্যায়িত করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়। বিশেষ করে ইসমাইল দেহলভী নজদী -ওয়াহাবী কর্তৃক প্রবর্তিত ভ্রান্ত আক্বিদা ভারত উপমহাদেশে আমদানী পূর্বক তা বাজারজাত করার লক্ষ্যে ‘তাক্বভীয়াতুল ঈমান’ নামক যে পুস্তকটি রচনা করে এতে রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ইলমে গায়ব’ হাযের-নাযের, শাফায়াত, সাহায্য তলব, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্’ বলে আহŸান করা, হায়াতুন্নবী, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর ইখতিয়ার বা ক্ষমতা ইত্যাদি সকল প্রকার আকায়েদকে শিরক-বিদআত হিসেবে আখ্যায়িত করেছে অথচ এ আক্বিদাহ্সমূহ ইসলামের প্রারম্ভ থেকেই ক্বোরআন হাদিস দ্বারা বিশুদ্ধ-সহীহ্ আক্বিদা হিসেবে সকলের নিকট পরিচিত ও গৃহীত হয়েছে।<br /><br />অনুরূপভাবে মিলাদ-কিয়াম, সালাত-সালাম, ইসালে সাওয়াব, ওরস ইত্যাদি কর্মকান্ড যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীদের মাঝে প্রচলিত এবং বিজ্ঞ আলেম ও জ্ঞানীদের নিকট পুণ্যময় আমল হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু এ সকল নতুন ফেরকার প্রবর্তক ও ধারক-বাহকের উপরোক্ত আক্বিদা ও আমলগুলোকে শিরক-বিদআত আখ্যায়িত করে সরল প্রাণ মুসলমানদের নিকট তা গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করল।<br /><br /><br /><br />এ অবস্থায় সে সময়ের আহলে সুন্নাতের বিজ্ঞ আলেমগণ তাঁদের লিখনির মাধ্যমে এ সকল সর্বজন স্বীকৃত-বিশুদ্ধ আকায়েদ ও আমল সংরক্ষণে কাজ করেন এবং তাঁরা লিখা, বক্তব্য ও মুনাযারা বা সম্মুখ বিতর্কের মাধ্যমে প্রতিটি প্রশ্নের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেন।<br /><br /><br /><br />ঈমান-আক্বিদা সংরক্ষনের এ যুগ সন্ধিক্ষণে ভারত উপমহাদেশে জন্মলাভ করেন ইমাম আহমদ রেযা খাঁন রহমাতুল্লাহি আলায়হি। যিনি ছিলেন যুগে এক অদ্বিতীয় আলেম, যাঁকে আল্লাহ্ তায়ালা সুগভীর জ্ঞান ও হিকমত দ্বারা ধন্য করেছেন এবং তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় ৫৫টি শাখা-প্রশাখায় বিচরণ ও পান্ডিত্য অর্জন করেন। বিশেষ করে ‘ইলমে ফিক্বহ’-এ তৎকালীন সময়ে তাঁর কোন সমকক্ষতার দাবীদার ছিলনা। যার স্বীকৃতি তাঁর বিরুদ্ধাচরণকারীরাও দিতে বাধ্য হয়েছিল।<br /><br />তাই তিনি দেখতে পেলেন সমকালীন ওলামা-মাশায়েখ তাঁদের লিখনী ও বক্তব্যের মাধ্যমে বাতিল ফেরকাগুলো কর্তৃক উপস্থাপিত প্রশ্ন ও আপত্তিগুলোর জবাব দিয়ে আসছেন এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সঠিক আক্বিদাসহ জনসমক্ষে উপস্থাপনের মাধ্যমে ঈমান ও আক্বিদা সংরক্ষণ করে আসছেন।<br /><br /><br /><br />তখন তিনিও এ মহান খেদমতে নিজেকে ন্যস্ত করে দিলেন এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বায়েদসমূহের সমর্থনে অকাট্য দলিল-প্রমাণাদির এক মহাসম্ভার প্রস্তুত করলেন এবং এক একটি আক্বিদার সমর্থনে একাধিক স্বতন্ত্র কিতাব-গ্রন্থ রচনা করেন। পাশাপাশি তাঁর সময়কার প্রচলিত নানা আচার-অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় রীতি-নীতি নিয়েও তিনি গবেষণা করেন এবং তৎমধ্যে যেগুলো কোরআন-হাদিস সমর্থিত ছিল এগুলোর সমর্থনে তিনি অসংখ্য কিতাবাদি রচনা করেন। আর যা কোরআন-হাদিস সমর্থিত ছিলনা তার খন্ডনেও তিনি প্রচুর পুস্তকাদি লিখেন।<br /><br />এভাবে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে সহ¯্রাধিক কিতাবের এক মহা ভান্ডার মুসলিম জাতিকে উপহার দেন। সুতরাং তিনি বাতিল ফেরকাহ্সমূহের খন্ডনে এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকায়েদ ও আমলের সমর্থনে যে মহান খেদমত আঞ্জাম দিয়েছিলেন এর ফলে তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ওলামাগণের কাতারে সর্বপ্রথম স্থানে সমাসীন হয়ে যান। আর আহলে সুন্নাতের এ মহান খেদমত ও প্রতিনিধিত্বের কারণে এক সময়ে এ আক্বিদাসমূহ তাঁর দিকে নিসবত বা সম্পর্কিত হতে থাকে। এক পর্যায়ে অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়ালো যে, তাঁকে সর্বস্তরের সুন্নী মুসলমানগণ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের এক মহান দিক নির্দেশক হিসেবেই স্বীকৃতি দিতে লাগল। আহলে সুন্নাত মানেই ইমাম আহমদ রেযা, আর ইমাম আহমদ রেযা মানেই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত। আর এ কারণেই যখন কোন হেজাযী বা সিরিয়াবাসী অথবা কোন ইরাকী বা ইয়ামনবাসী কিংবা কোন মিসরী বা সুদানীও যদি মদিনা শরীফে গিয়ে ‘এয়া রাসূলাল্লাহ্’ বলে আহŸান করে তখন নজদীরা তাকে ‘বেরলভী’ই বলে আখ্যায়িত করে, যদিওবা তার সাথে ভারতের ‘বেরলী’ শহরের কোন সম্পর্কই নেই।<br /><br /><br /><br />এমনিভাবে যদি কেউ ‘এয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনার সুপারিশ প্রত্যাশা করছি, বলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট শাফায়াত কামনা করে তখন সে আরব উপদ্বীপের লোক হলেও ওয়াহাবী-নজদীরা তাকে ‘বেরলভী’ বলে আখ্যায়িত করে থাকে অথচ ‘বেরলভী’ তাকেই বলা উচিত যে ভারতের ‘বেরলী’ শহরে বসবাস করে। কিন্তু তার কারণ আপনার নিকট স্পষ্ট আর তাহলো- উপরোক্ত আক্বিদাসমূহ মূলত সেই আকায়েদ যা সলফে সালেহীনগণ পোষণ করতেন, আর ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলায়হি এগুলোকে দলীল-প্রমাণাদি দ্বারা সুদৃঢ় ও মজবুতভাবে উপস্থাপন করেছেন এবং আক্বায়েদের প্রমাণের ক্ষেত্রে তাঁর অবাদানই ছিল সর্বাধিক। যার ফলে তিনি ভারতবর্ষের আলেমগণের মধ্যে সর্বাধিক প্রসিদ্ধি ও গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেন।<br /><br /><br /><br />পাশাপাশি এ আকিদাগুলো ইমাম আহমদ রেযার দিকে এতবেশী নিসবত বা সম্পর্কিত হয়ে গেছে যে, পৃথিবীর যে কোন মুসলমানই যদি এ আক্বিদার বিশ্বাসী ও সমর্থক হয় তখন তাকে ইমাম আহমদ রেযার দিকে নিসবত করে ‘বেরলভী’ই বলে আখ্যায়িত করা হয়।<br /><br /><br /><br />যেহেতু ভারত উপমহাদেশে নানা ফেরকার এক বিপুল সম্ভার বিদ্যমান। তাই প্রকৃত ‘আহরে সুন্নাত ওয়াল জামাত’ এর সঠিক পরিচয় লাভ করা অত্যন্ত দুরূহ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা দেওবন্দীরাও নিজেদেরকে ‘আহলে সুন্নাত’ হিসেবেই প্রকাশ করে থাকে। অথচ ওয়াহাবী ও দেওবন্দীদের মূল আকিদা ও এক ও অভিন্ন। শুধু পার্থক্য হলো- ওয়াহাবীরা নিজেদেরকে ‘আহলে হাদিস’ হিসেবে দাবী করে এবং চার মাযহাবের কোন মাযহাবের ইমামের তাকলিদ অনুসরণ করে না। পক্ষান্তরে দেওবন্দীরা যদিওবা তাকলীদ বা চার মাযহাবের কোন এক মাযহাবের অনুসারী কিন্তু তারা ওয়াহাবী আকায়েদকেও হক্ব বা সত্য হিসাবে মানে ও স্বীকার করে। তাই বর্তমান যুগে প্রকৃত আহলে সুন্নাত কারা তা বুঝে উঠা বা চিহ্ণিত করা মুশকিলের ব্যাপার।<br /><br /><br /><br />এ কারণেই আমাদের বিজ্ঞ আলেমগণ ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’কে অন্যান্য ফেরকাহ্ আলাদাভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ‘মসলকে আলা হযরত’ ব্যবহারকে সমীচীন মনে করেছেন।<br /><br /><br /><br />আর এর সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো, এখন যে ব্যক্তি ‘মসলকে আলা হযরত’ কে স্বীকারকারী হিসেবে প্রমাণিত হবে তখন এমনিতেই তার সম্পর্কে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবে যে, এ ব্যক্তি ইলমে গায়ব, হাযের-নাযের, সাহায্য প্রার্থনা (ইসতায়ানাত), শাফায়াত ইত্যাদিকে মান্যকারী এবং আহলে সুন্নাতের অন্যান্য আমল ও আচার-অনুষ্ঠান তথা ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম, মিলাদ-কিয়াম, সালাত-সালাম ইত্যাদিকেও পূণ্য ও সওয়াবের আমল হিসেবে মেনে নেয়।<br /><br />যদি কেউ একথা বলে যে, ‘না, নিজেকে শুধু সুন্নী দাবী করাই যথেষ্ট’ তখন আমি তার উদ্দেশ্যে বলবঃ জনাব! যদি কেউ নিজেকে সুন্নী দাবী করে তাহলে আপনি তাকে কিভাবে বুঝবেন যে, সে কোন ধরনের সুন্নী? হানাফী মাযহাবের অনুসারী হয়েও ওয়াহাবী আকিদাকে হক্ব বা সত্য হিসেবে মান্যকারী, নাকি ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্! ¯েøাগানধারী?<br /><br /><br /><br />তাহলে প্রমাণিত হলো- শুধু ‘সুন্নী’ বললে কারও সঠিক পরিচয় পাওয়া যাবেনা, কিন্তু কেউ যদি নিজেকে ‘বেরলভী সুন্নী’ বলে তাহলে সাথে সাথে বুঝা যাবে যে, এ ব্যক্তি হানাফীও এবং প্রকৃত সুন্নীও। অথবা কেউ নিজেকে ‘মসলকে আলা হযরত’ এর অনুসারী হিসেবে প্রকাশ করে তখনও ওই মুসলমানের আক্বিদা ও চিন্তাধারা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।<br /><br /><br /><br />প্রত্যেক যুগে আহলে ঈমান তথা হক্বপন্থীদের পরিচয় পেশ করা আবশ্যক ছিল। দেখুন, মক্কা ভ‚মিতে যখন ইসলামের দাওয়াত প্রচারিত হলো তখনকার ঈমানদারদের পরিচয় ছিল-‘মুসলমান’ তখন যে কেউ নিজেকে মুসলমান বলতো তাতে বুঝা যেত, সে আল্লাহ্ তা‘আলার ওয়াহ্দানিয়্যাত এবং রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর রিসালতকে বিশ্বাস করে এবং তাঁর সুন্নত বা নির্দেশানুযায়ী আমলকারী তথা ‘আহলে সুন্নাত’ এর অনুসারী। কিন্তু এক শতাব্দী যেতে না যেতে ঈমানদার বা আহলে হক্বের পরিচয়ের জন্য নতুন একটি শব্দ সংযোজনের প্রয়োজন হয়ে পড়ল, আর তা হলো ‘সুন্নী’ তার কারণ হলো- তখন এমন একটি নতুন ফেরকা উদ্ভব হলো যারা হযরত আবু বকর সিদ্দিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু, ফারুকে আযম এবং ওসমান যুন নুরাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমকে নানা অপবাদ দিতে শুরু করল। তাঁদেরকে বরহক খলিফা হিসেবে মানতে অস্বীকৃতি জানাল এবং তাঁদেরকে লা’নত দিতে লাগল। কিন্তু এসব কিছুর পরও তারা নিজেদেরকে মুসলমান হিসেবেই দাবী করতে লাগল। এ কারণে সে সময়ের হক্বপন্থীরা নিজেদের সঠিক পরিচয়ের জন্য একটি অতিরিক্ত শব্দ সংযোজন করল আর তা হলো ‘সুন্নী মুসলমান’<br /><br /><br /><br />এ সময় কেউ যদি নিজেকে শুধু মুসলমান বলত তখন তার সম্পর্কে এ প্রশ্ন জাগত যে, সে কোন মুসলমান? হযরত  সিদ্দিকে আকবর, হযরত ফারুকে আযম এবং হযরত ওসমানে গনি রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমকে গালিগালাজকারী মুসলমান? নাকি তাঁদের প্রতি সম্মান-তাজিম প্রদর্শনকারী এবং তাঁদের জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে রহমত কামনাকারী মুসলমান?<br /><br /><br /><br />আর যদি কেউ নিজেকে ‘সুন্নী মুসলমান’ বলে তখন তার সম্পর্কে এ ধারণা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, তিনি খোলাফায়ে রাশেদাকে সম্মানকারী মুসলমান এভাবে খোলাফায়ে রাশেদার প্রতি লানতকারী ‘রাফেজী সম্প্রদায়ের বিপরীতে ‘আহলে সুন্নাত’ এর একটি আলাদা পরিচয় প্রতিষ্ঠিত হলো, আর তাহলো- ‘‘সুন্নী মুসলমান।’’<br /><br /><br /><br />এরই ধারাবাহিকতায় কিছুলোক প্রশ্ন করে থাকে যে, হানাফী শাফেয় মালেকী ও হাম্বলী এ চারটি মাযহাব থাকার পরও ‘মসলকে আলা হযরত’ নামে পঞ্চম একটি নতুন মাযহাবের আবার প্রয়োজন কি? উত্তরে বলতে পারি এ কথা জেনে রাখা দরকার যে, ‘মসলকে আলা হযরত’ নতুন কোন মাযহাবের নাম নয় বরং উদ্দেশ্যই হলো- একথা প্রমাণ করা যে, ‘উপরিউক্ত চার মাযহাব হক ও সত্য। তাই এ চার মাযহাবের কোন একটি তাকলীদ (অনুসরণ) করা ওয়াজিব বা আবশ্যক। যা ইমাম আহমদ রেযার কিতাবাদি থেকে প্রমাণিত। তাই কোন শাফেয়ী বা হাম্বলী মাযহাবের অনুসারীও যদি নিজেকে ‘মসলকে আলা হযরত’ এর দিকে নিসবত করে তাহলে তার বক্তব্য থেকে এ সথা বুঝা যাবে যে, সে ফেকহী ফরযী বা আমলী দিক থেকে স্বীয় ইমামের অনুসারী পাশাপাশি আকিদাও আহলে সুন্নাতের আচার অনুষ্ঠানাদিরও সমর্থক ও বিশ্বাসী।<br /><br />আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলে হয়না, আর তা হলো- বিরুদ্ধাচরণকারীরা এ বলে বেড়ায় যে, ‘এটি একটি পঞ্চম মাযহাব’ আমরা তাদের উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জসহ ঘোষনা করতে পারিঃ আপনারা কি প্রমাণ করতে পারবেন যে, ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলায়হি কোন একটি আক্বিদাকে কোরআন-হাদিসের দলিল ব্যতিরেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন?<br /><br />যে কোন বিষয়ের উপর তাঁর কিতাব খুলে দেখুন, দেখতে পাবেন তিনি প্রতিটি আকিদা প্রমাণের জন্য কোরআন-হাদিসের পাশাপাশি সলফে সালেহীনদের মতামত ও বক্তব্য তুলে ধরেছেন।<br /><br /><br /><br />সত্যকে জানতে হলে শর্ত হলো- উগ্রতাকে পরিহার করে নিরপেক্ষভাবে তাঁর পুস্তকাদি পাঠ করা। এতে একথা দিবালোকের ন্যায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে যে, আলা হযরত তাই বলেছেন যা চৌদ্দশত বছর ধরে আহলে হক আলেম ও ফক্বীহগণ বলে আসছেন।<br /><br /><br /><br />তাও যদি কেউ মানতে রাজি না হয় এবং ‘মসলক’ শব্দটি ব্যবহারে আপত্তি থাকে, আর একে একটি নতুন মাযহাব হিসেবে আখ্যায়িত করতে চায় তাহলে ওহাহাবী-দেওবন্দীদের উদ্দেশ্যে বলব আপনারা কি জবাব দেবেন যে, আপনাদেরই সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক মওলভী মোহাম্মদ ইকরাম তার ‘হাওযে কাওছার’ এ শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ মুহাদ্দেছ দেহলভীর আকিদা ও চিন্তাধারা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি ‘মসলকে শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ্’ শব্দটি বারবার ব্যবহার করেছেন।<br /><br />তাহলে বলবেন কি! চার মাযহাবের বাইরে পঞ্চম বা ষষ্ঠ একটি মাযহাব হলো- ‘মসলকে শাহ্ওয়ালী উল্লাহ্’’? আপনার যে উত্তরটি হবে সেটি আমাদেরও উত্তর।</div><br />

মসলকে আলা হযরত কি ও কেন?

মসলক এ আ’লা হযরত  কি ও কেন?    ********************************* সৈয়দ মাওলানা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আযহারী খতিব, মুসাফিরখানা জামে মসজিদ, নন্...

Read more »

মসলকে আলা হযরত কি ও কেন?

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">মসলক এ আ’লা হযরত  কি ও কেন?   <br />*********************************<br />সৈয়দ মাওলানা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আযহারী<br />খতিব, মুসাফিরখানা জামে মসজিদ, নন্দনকানন, চট্টগ্রাম। সহকারী অধ্যাপক, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।<br />===============================================<br /><br />প্রথমেই একথা ভালভাবে বুঝে নেয়া দরকার ‘মসলকে আলা হযরত’ মানে নতুন কোন মসলক বা মাযহাবের নাম নয় বরং সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তবে তাবেয়ীন, ছালেহীন এবং মুসলিম জাতির মহান আলেম ও বিজ্ঞজনরা যে মসলক বা পথের উপর ছিলেন সেটাই মূলত ‘মসলকে আ’লা হযরত’।<br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgJQO8TjM0ImY44BBW9tG27DGJmFBdmkclmO2_ZALHZ3FQAAOjsSvlr4Ye8zsNZzST0sAdgpjTnLQ0G2muMY4m0Xw4Z-eqZGWAuyLfpl96m6Bb0G8-VFCLwWkiyjGkE67FNNKL3FVbnSACm/s1600/alahazrat_dargah.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="360" data-original-width="546" height="210" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgJQO8TjM0ImY44BBW9tG27DGJmFBdmkclmO2_ZALHZ3FQAAOjsSvlr4Ye8zsNZzST0sAdgpjTnLQ0G2muMY4m0Xw4Z-eqZGWAuyLfpl96m6Bb0G8-VFCLwWkiyjGkE67FNNKL3FVbnSACm/s320-rw/alahazrat_dargah.jpg" width="320" /></a></div><br /><br />এ নামকরণের মূল কারণ হলো- আজ থেকে প্রায় দুই শতাব্দী পূর্বে উপমহাদেশের জমিনে জন্ম লাভ করেছে নতুন নতুন অনেক ফেরকাহ্, আর এ ফেরকাসমূহের প্রবর্তক বা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদা-বিশ্বাস ও আচার অনুষ্ঠানকে শিরক ও বিদআত হিসেবে আখ্যায়িত করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়। বিশেষ করে ইসমাইল দেহলভী নজদী -ওয়াহাবী কর্তৃক প্রবর্তিত ভ্রান্ত আক্বিদা ভারত উপমহাদেশে আমদানী পূর্বক তা বাজারজাত করার লক্ষ্যে ‘তাক্বভীয়াতুল ঈমান’ নামক যে পুস্তকটি রচনা করে এতে রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ইলমে গায়ব’ হাযের-নাযের, শাফায়াত, সাহায্য তলব, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্’ বলে আহŸান করা, হায়াতুন্নবী, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর ইখতিয়ার বা ক্ষমতা ইত্যাদি সকল প্রকার আকায়েদকে শিরক-বিদআত হিসেবে আখ্যায়িত করেছে অথচ এ আক্বিদাহ্সমূহ ইসলামের প্রারম্ভ থেকেই ক্বোরআন হাদিস দ্বারা বিশুদ্ধ-সহীহ্ আক্বিদা হিসেবে সকলের নিকট পরিচিত ও গৃহীত হয়েছে।<br />অনুরূপভাবে মিলাদ-কিয়াম, সালাত-সালাম, ইসালে সাওয়াব, ওরস ইত্যাদি কর্মকান্ড যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীদের মাঝে প্রচলিত এবং বিজ্ঞ আলেম ও জ্ঞানীদের নিকট পুণ্যময় আমল হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু এ সকল নতুন ফেরকার প্রবর্তক ও ধারক-বাহকের উপরোক্ত আক্বিদা ও আমলগুলোকে শিরক-বিদআত আখ্যায়িত করে সরল প্রাণ মুসলমানদের নিকট তা গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করল।<br /><br />এ অবস্থায় সে সময়ের আহলে সুন্নাতের বিজ্ঞ আলেমগণ তাঁদের লিখনির মাধ্যমে এ সকল সর্বজন স্বীকৃত-বিশুদ্ধ আকায়েদ ও আমল সংরক্ষণে কাজ করেন এবং তাঁরা লিখা, বক্তব্য ও মুনাযারা বা সম্মুখ বিতর্কের মাধ্যমে প্রতিটি প্রশ্নের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেন।<br /><br />ঈমান-আক্বিদা সংরক্ষনের এ যুগ সন্ধিক্ষণে ভারত উপমহাদেশে জন্মলাভ করেন ইমাম আহমদ রেযা খাঁন রহমাতুল্লাহি আলায়হি। যিনি ছিলেন যুগে এক অদ্বিতীয় আলেম, যাঁকে আল্লাহ্ তায়ালা সুগভীর জ্ঞান ও হিকমত দ্বারা ধন্য করেছেন এবং তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় ৫৫টি শাখা-প্রশাখায় বিচরণ ও পান্ডিত্য অর্জন করেন। বিশেষ করে ‘ইলমে ফিক্বহ’-এ তৎকালীন সময়ে তাঁর কোন সমকক্ষতার দাবীদার ছিলনা। যার স্বীকৃতি তাঁর বিরুদ্ধাচরণকারীরাও দিতে বাধ্য হয়েছিল।<br />তাই তিনি দেখতে পেলেন সমকালীন ওলামা-মাশায়েখ তাঁদের লিখনী ও বক্তব্যের মাধ্যমে বাতিল ফেরকাগুলো কর্তৃক উপস্থাপিত প্রশ্ন ও আপত্তিগুলোর জবাব দিয়ে আসছেন এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সঠিক আক্বিদাসহ জনসমক্ষে উপস্থাপনের মাধ্যমে ঈমান ও আক্বিদা সংরক্ষণ করে আসছেন।<br /><br />তখন তিনিও এ মহান খেদমতে নিজেকে ন্যস্ত করে দিলেন এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বায়েদসমূহের সমর্থনে অকাট্য দলিল-প্রমাণাদির এক মহাসম্ভার প্রস্তুত করলেন এবং এক একটি আক্বিদার সমর্থনে একাধিক স্বতন্ত্র কিতাব-গ্রন্থ রচনা করেন। পাশাপাশি তাঁর সময়কার প্রচলিত নানা আচার-অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় রীতি-নীতি নিয়েও তিনি গবেষণা করেন এবং তৎমধ্যে যেগুলো কোরআন-হাদিস সমর্থিত ছিল এগুলোর সমর্থনে তিনি অসংখ্য কিতাবাদি রচনা করেন। আর যা কোরআন-হাদিস সমর্থিত ছিলনা তার খন্ডনেও তিনি প্রচুর পুস্তকাদি লিখেন।<br />এভাবে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে সহ¯্রাধিক কিতাবের এক মহা ভান্ডার মুসলিম জাতিকে উপহার দেন। সুতরাং তিনি বাতিল ফেরকাহ্সমূহের খন্ডনে এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকায়েদ ও আমলের সমর্থনে যে মহান খেদমত আঞ্জাম দিয়েছিলেন এর ফলে তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ওলামাগণের কাতারে সর্বপ্রথম স্থানে সমাসীন হয়ে যান। আর আহলে সুন্নাতের এ মহান খেদমত ও প্রতিনিধিত্বের কারণে এক সময়ে এ আক্বিদাসমূহ তাঁর দিকে নিসবত বা সম্পর্কিত হতে থাকে। এক পর্যায়ে অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়ালো যে, তাঁকে সর্বস্তরের সুন্নী মুসলমানগণ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের এক মহান দিক নির্দেশক হিসেবেই স্বীকৃতি দিতে লাগল। আহলে সুন্নাত মানেই ইমাম আহমদ রেযা, আর ইমাম আহমদ রেযা মানেই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত। আর এ কারণেই যখন কোন হেজাযী বা সিরিয়াবাসী অথবা কোন ইরাকী বা ইয়ামনবাসী কিংবা কোন মিসরী বা সুদানীও যদি মদিনা শরীফে গিয়ে ‘এয়া রাসূলাল্লাহ্’ বলে আহŸান করে তখন নজদীরা তাকে ‘বেরলভী’ই বলে আখ্যায়িত করে, যদিওবা তার সাথে ভারতের ‘বেরলী’ শহরের কোন সম্পর্কই নেই।<br /><br />এমনিভাবে যদি কেউ ‘এয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনার সুপারিশ প্রত্যাশা করছি, বলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট শাফায়াত কামনা করে তখন সে আরব উপদ্বীপের লোক হলেও ওয়াহাবী-নজদীরা তাকে ‘বেরলভী’ বলে আখ্যায়িত করে থাকে অথচ ‘বেরলভী’ তাকেই বলা উচিত যে ভারতের ‘বেরলী’ শহরে বসবাস করে। কিন্তু তার কারণ আপনার নিকট স্পষ্ট আর তাহলো- উপরোক্ত আক্বিদাসমূহ মূলত সেই আকায়েদ যা সলফে সালেহীনগণ পোষণ করতেন, আর ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলায়হি এগুলোকে দলীল-প্রমাণাদি দ্বারা সুদৃঢ় ও মজবুতভাবে উপস্থাপন করেছেন এবং আক্বায়েদের প্রমাণের ক্ষেত্রে তাঁর অবাদানই ছিল সর্বাধিক। যার ফলে তিনি ভারতবর্ষের আলেমগণের মধ্যে সর্বাধিক প্রসিদ্ধি ও গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেন।<br /><br />পাশাপাশি এ আকিদাগুলো ইমাম আহমদ রেযার দিকে এতবেশী নিসবত বা সম্পর্কিত হয়ে গেছে যে, পৃথিবীর যে কোন মুসলমানই যদি এ আক্বিদার বিশ্বাসী ও সমর্থক হয় তখন তাকে ইমাম আহমদ রেযার দিকে নিসবত করে ‘বেরলভী’ই বলে আখ্যায়িত করা হয়।<br /><br />যেহেতু ভারত উপমহাদেশে নানা ফেরকার এক বিপুল সম্ভার বিদ্যমান। তাই প্রকৃত ‘আহরে সুন্নাত ওয়াল জামাত’ এর সঠিক পরিচয় লাভ করা অত্যন্ত দুরূহ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা দেওবন্দীরাও নিজেদেরকে ‘আহলে সুন্নাত’ হিসেবেই প্রকাশ করে থাকে। অথচ ওয়াহাবী ও দেওবন্দীদের মূল আকিদা ও এক ও অভিন্ন। শুধু পার্থক্য হলো- ওয়াহাবীরা নিজেদেরকে ‘আহলে হাদিস’ হিসেবে দাবী করে এবং চার মাযহাবের কোন মাযহাবের ইমামের তাকলিদ অনুসরণ করে না। পক্ষান্তরে দেওবন্দীরা যদিওবা তাকলীদ বা চার মাযহাবের কোন এক মাযহাবের অনুসারী কিন্তু তারা ওয়াহাবী আকায়েদকেও হক্ব বা সত্য হিসাবে মানে ও স্বীকার করে। তাই বর্তমান যুগে প্রকৃত আহলে সুন্নাত কারা তা বুঝে উঠা বা চিহ্ণিত করা মুশকিলের ব্যাপার।<br /><br />এ কারণেই আমাদের বিজ্ঞ আলেমগণ ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’কে অন্যান্য ফেরকাহ্ আলাদাভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ‘মসলকে আলা হযরত’ ব্যবহারকে সমীচীন মনে করেছেন।<br /><br />আর এর সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো, এখন যে ব্যক্তি ‘মসলকে আলা হযরত’ কে স্বীকারকারী হিসেবে প্রমাণিত হবে তখন এমনিতেই তার সম্পর্কে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবে যে, এ ব্যক্তি ইলমে গায়ব, হাযের-নাযের, সাহায্য প্রার্থনা (ইসতায়ানাত), শাফায়াত ইত্যাদিকে মান্যকারী এবং আহলে সুন্নাতের অন্যান্য আমল ও আচার-অনুষ্ঠান তথা ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম, মিলাদ-কিয়াম, সালাত-সালাম ইত্যাদিকেও পূণ্য ও সওয়াবের আমল হিসেবে মেনে নেয়।<br />যদি কেউ একথা বলে যে, ‘না, নিজেকে শুধু সুন্নী দাবী করাই যথেষ্ট’ তখন আমি তার উদ্দেশ্যে বলবঃ জনাব! যদি কেউ নিজেকে সুন্নী দাবী করে তাহলে আপনি তাকে কিভাবে বুঝবেন যে, সে কোন ধরনের সুন্নী? হানাফী মাযহাবের অনুসারী হয়েও ওয়াহাবী আকিদাকে হক্ব বা সত্য হিসেবে মান্যকারী, নাকি ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্! ¯েøাগানধারী?<br /><br />তাহলে প্রমাণিত হলো- শুধু ‘সুন্নী’ বললে কারও সঠিক পরিচয় পাওয়া যাবেনা, কিন্তু কেউ যদি নিজেকে ‘বেরলভী সুন্নী’ বলে তাহলে সাথে সাথে বুঝা যাবে যে, এ ব্যক্তি হানাফীও এবং প্রকৃত সুন্নীও। অথবা কেউ নিজেকে ‘মসলকে আলা হযরত’ এর অনুসারী হিসেবে প্রকাশ করে তখনও ওই মুসলমানের আক্বিদা ও চিন্তাধারা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।<br /><br />প্রত্যেক যুগে আহলে ঈমান তথা হক্বপন্থীদের পরিচয় পেশ করা আবশ্যক ছিল। দেখুন, মক্কা ভ‚মিতে যখন ইসলামের দাওয়াত প্রচারিত হলো তখনকার ঈমানদারদের পরিচয় ছিল-‘মুসলমান’ তখন যে কেউ নিজেকে মুসলমান বলতো তাতে বুঝা যেত, সে আল্লাহ্ তা‘আলার ওয়াহ্দানিয়্যাত এবং রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর রিসালতকে বিশ্বাস করে এবং তাঁর সুন্নত বা নির্দেশানুযায়ী আমলকারী তথা ‘আহলে সুন্নাত’ এর অনুসারী। কিন্তু এক শতাব্দী যেতে না যেতে ঈমানদার বা আহলে হক্বের পরিচয়ের জন্য নতুন একটি শব্দ সংযোজনের প্রয়োজন হয়ে পড়ল, আর তা হলো ‘সুন্নী’ তার কারণ হলো- তখন এমন একটি নতুন ফেরকা উদ্ভব হলো যারা হযরত আবু বকর সিদ্দিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু, ফারুকে আযম এবং ওসমান যুন নুরাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমকে নানা অপবাদ দিতে শুরু করল। তাঁদেরকে বরহক খলিফা হিসেবে মানতে অস্বীকৃতি জানাল এবং তাঁদেরকে লা’নত দিতে লাগল। কিন্তু এসব কিছুর পরও তারা নিজেদেরকে মুসলমান হিসেবেই দাবী করতে লাগল। এ কারণে সে সময়ের হক্বপন্থীরা নিজেদের সঠিক পরিচয়ের জন্য একটি অতিরিক্ত শব্দ সংযোজন করল আর তা হলো ‘সুন্নী মুসলমান’<br /><br />এ সময় কেউ যদি নিজেকে শুধু মুসলমান বলত তখন তার সম্পর্কে এ প্রশ্ন জাগত যে, সে কোন মুসলমান? হযরত  সিদ্দিকে আকবর, হযরত ফারুকে আযম এবং হযরত ওসমানে গনি রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমকে গালিগালাজকারী মুসলমান? নাকি তাঁদের প্রতি সম্মান-তাজিম প্রদর্শনকারী এবং তাঁদের জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে রহমত কামনাকারী মুসলমান?<br /><br />আর যদি কেউ নিজেকে ‘সুন্নী মুসলমান’ বলে তখন তার সম্পর্কে এ ধারণা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, তিনি খোলাফায়ে রাশেদাকে সম্মানকারী মুসলমান এভাবে খোলাফায়ে রাশেদার প্রতি লানতকারী ‘রাফেজী সম্প্রদায়ের বিপরীতে ‘আহলে সুন্নাত’ এর একটি আলাদা পরিচয় প্রতিষ্ঠিত হলো, আর তাহলো- ‘‘সুন্নী মুসলমান।’’<br /><br />এরই ধারাবাহিকতায় কিছুলোক প্রশ্ন করে থাকে যে, হানাফী শাফেয় মালেকী ও হাম্বলী এ চারটি মাযহাব থাকার পরও ‘মসলকে আলা হযরত’ নামে পঞ্চম একটি নতুন মাযহাবের আবার প্রয়োজন কি? উত্তরে বলতে পারি এ কথা জেনে রাখা দরকার যে, ‘মসলকে আলা হযরত’ নতুন কোন মাযহাবের নাম নয় বরং উদ্দেশ্যই হলো- একথা প্রমাণ করা যে, ‘উপরিউক্ত চার মাযহাব হক ও সত্য। তাই এ চার মাযহাবের কোন একটি তাকলীদ (অনুসরণ) করা ওয়াজিব বা আবশ্যক। যা ইমাম আহমদ রেযার কিতাবাদি থেকে প্রমাণিত। তাই কোন শাফেয়ী বা হাম্বলী মাযহাবের অনুসারীও যদি নিজেকে ‘মসলকে আলা হযরত’ এর দিকে নিসবত করে তাহলে তার বক্তব্য থেকে এ সথা বুঝা যাবে যে, সে ফেকহী ফরযী বা আমলী দিক থেকে স্বীয় ইমামের অনুসারী পাশাপাশি আকিদাও আহলে সুন্নাতের আচার অনুষ্ঠানাদিরও সমর্থক ও বিশ্বাসী।<br />আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলে হয়না, আর তা হলো- বিরুদ্ধাচরণকারীরা এ বলে বেড়ায় যে, ‘এটি একটি পঞ্চম মাযহাব’ আমরা তাদের উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জসহ ঘোষনা করতে পারিঃ আপনারা কি প্রমাণ করতে পারবেন যে, ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলায়হি কোন একটি আক্বিদাকে কোরআন-হাদিসের দলিল ব্যতিরেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন?<br />যে কোন বিষয়ের উপর তাঁর কিতাব খুলে দেখুন, দেখতে পাবেন তিনি প্রতিটি আকিদা প্রমাণের জন্য কোরআন-হাদিসের পাশাপাশি সলফে সালেহীনদের মতামত ও বক্তব্য তুলে ধরেছেন।<br /><br />সত্যকে জানতে হলে শর্ত হলো- উগ্রতাকে পরিহার করে নিরপেক্ষভাবে তাঁর পুস্তকাদি পাঠ করা। এতে একথা দিবালোকের ন্যায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে যে, আলা হযরত তাই বলেছেন যা চৌদ্দশত বছর ধরে আহলে হক আলেম ও ফক্বীহগণ বলে আসছেন।<br /><br />তাও যদি কেউ মানতে রাজি না হয় এবং ‘মসলক’ শব্দটি ব্যবহারে আপত্তি থাকে, আর একে একটি নতুন মাযহাব হিসেবে আখ্যায়িত করতে চায় তাহলে ওহাহাবী-দেওবন্দীদের উদ্দেশ্যে বলব আপনারা কি জবাব দেবেন যে, আপনাদেরই সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক মওলভী মোহাম্মদ ইকরাম তার ‘হাওযে কাওছার’ এ শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ মুহাদ্দেছ দেহলভীর আকিদা ও চিন্তাধারা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি ‘মসলকে শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ্’ শব্দটি বারবার ব্যবহার করেছেন।<br />তাহলে বলবেন কি! চার মাযহাবের বাইরে পঞ্চম বা ষষ্ঠ একটি মাযহাব হলো- ‘মসলকে শাহ্ওয়ালী উল্লাহ্’’? আপনার যে উত্তরটি হবে সেটি আমাদেরও উত্তর।</div>

মসলকে আলা হযরত কি ও কেন?

মসলক এ আ’লা হযরত  কি ও কেন?    ********************************* সৈয়দ মাওলানা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আযহারী খতিব, মুসাফিরখানা জামে মসজিদ, নন্...

Read more »

কিতাব: নবীগণ (আলায়হিমুস সালাম) স্বশরীরে জীবিত, লেখক: ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতী (রহ) [পর্ব ১]

<p dir="ltr"><b>কিতাব: নবীগণ (আলায়হিমুস সালাম) স্বশরীরে জীবিত, লেখক: ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতী (রহ) [পর্ব ১]</b></p><p dir="ltr">নবীগণ (আলায়হিমুস সালাম) স্বশরীরে রওযা শরীফে জীবিত; কিন্তু অন্য একটি বর্ণনায় দেখা যা<u>য়</u>-</p><p dir="ltr">হাদিস ১ :</p><p dir="ltr"><b>প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম </b>এরশাদ করেছেন:</p><p dir="ltr"><i><b>“যখন কোন ব্যক্তি আমার প্রতি সালাম প্রেরণ করে তখন আল্লাহ তা'আলা আমার প্রতি</b></i><br><i><b>আমার রূহকে ফিরিয়ে দেন যাতে আমি তার সালামের উত্তর দিই।"</b></i></p><p dir="ltr">এ হাদীসের বাহ্যিক অর্থ দ্বারা বুঝা যায় যে, প্রিয়নবীর রূহ মুবারক তাঁর নবীগণ দেহ মুবারক থেকে কখনও কখনও পৃথক ও বিচ্ছিন্ন হয় ।<br>সুতরাং এ উভয় হাদিসের মধ্যকার সমন্বয় সাধন কিভাবে হবে?<br>সশরীরে জীবিত ইমাম সুমুতী রাহমাতুল্লাহি তা'আলা আলায়হি এ প্রশ্নের উত্তরে বলছেন,<br>এটি খুব সুন্দর একটি প্রশ্ন, যা নিয়ে চিন্তাভাবনা ও গবেষণা করা জরুরী ।</p><p dir="ltr">সুতরাং আমি বলছি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এবং অন্যান্য নবী-রাসূলগণের নিজ নিজ রওযা শরীফে জীবিত থাকার বিষয়টি <b>আমাদের সকলের নিকট সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত ও সর্বজন স্বীকৃত ।</b> কেননা এ তত্ত্বের বিষয়ে আমাদের নিকট অনেক দলীল ও প্রমাণ বিদ্যমান এবং এ ক্ষেত্রে<br><b>প্রমাণিত দলীলগুলো মুতাওয়াতির' পর্যায়ের।</b>অর্থাৎ যেগুলো এত অধিক সংখ্যক রাভী (বর্ণনাকারী) বর্ণনা করেছেন, যাতে কোন ধরনের সন্দেহের অবকাশ থাকে না।</p><p dir="ltr">আর <b><i>ইমাম বাইহাকী রাহমাতুল্লাহি তাআলা আলায়হিও নবীগণ আলায়হিস এর নিজেদের রওযা শরীফে জীবিত থাকার প্রমাণ স্বরূপ একটি স্বতন্ত্র পুস্তিকা রচনা করেছেন। পুস্তিকাটির নাম হল:</i></b><br><b><i>(হায়াতুল আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামু ফী কুবুরিহিম)</i></b></p><p dir="ltr">নবীগণ (আলায়হিমুস সালাম) সশরীরে জীবিত<br>এ বিষয়ের প্রমাণ স্বরূপ বর্ণিত হাদিসগুলোর মধ্য থেকে নিমে কয়েকটি<br>উল্লেখ করা গেলঃ</p><p dir="ltr">হাদিস ২ :</p><p dir="ltr"><b><i>ইমাম মুসলিম তার সহীহতে সাহাবী হযরত আনাস ইবনে মালেক </i></b>থেকে বর্ণনা করেন, <br>তিনি বলেন,</p><p dir="ltr"><b><i>“যে রাত্রিতে আমাকে ইসরা ও মি'রাজ করানো হলো, ওই রাত্রিতে আমি এলাম, অন্য এক বর্ণনায় আছে আমি, হযরত মূসা আলায়হিস সালাম-এর কবর শরীফের পাশ দিয়ে গেলাম । তখন আমি দেখতে পেলাম যে, হযরত মূসা আলায়হিস সালাম লাল বর্ণের।</i></b><br><b><i>টিলার পাশে স্বীয় কবর শরীফে দাড়িয়ে নামাজ আদায় করছেন।</i></b></p><p dir="ltr">হাদিস ৩ :</p><p dir="ltr"><b>আবু নু'আয়ম ইস্পাহানী তার রচিত ‘হুলয়াতুল আওলিয়া’ নামক প্রসিদ্ধ।</b><br>হাদিসগ্রন্থে <b>হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস</b>রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন:<br><b><i>“নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম গমন করেছেন হযরত</i></b><br><b><i>মূসা আলায়হিস সালাম-এর কবর শরীফের পাশ দিয়ে । আর তিনি নিজ</i></b><br><b><i>কবর শরীফে দাড়িয়ে নামায আদায় করছিলেন ।”</i></b></p><p dir="ltr">হাদিস ৪ :</p><p dir="ltr"><b>আবু ইয়ালা তার মুসনাদ'-এ এবং ইমাম বায়হাক্কী রাহমাতুল্লাহি তাআলা আলায়হি তার “হায়াতুল আম্বিয়া” নামক কিতাবে হযরত আনাস</b> রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, <br>প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,</p><p dir="ltr"><i><b>“নবীগণ আলায়হিমুস সালাম নিজেদের কবর শরীফে জীবিত এবং তারা সেখানে</b></i><br><i><b>নামায আদায় করেন ।"</b></i></p><p dir="ltr"><b><i>ইমাম</i></b> <i><b>আবু নু'আইম তার হুয়াতুল আউলিয়া</b></i>তে <b><i>ইউসুফ ইবনে আতিয়্যাহ</i></b> থেকে বর্ণনা করেন,<br>↓ <br>তিনি বলেন, “আমি <i><b>হযরত সাবেত আল-বুনানী</b></i><br>রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুকে <br>↓<br><b><i>হুমাইদ আতত্বাভীলকে</i></b> জিজ্ঞেস করতে শুনেছি: আপনার নিকট কি এমন কোন তথ্য আছে যা প্রমাণ করে যে,</p><p dir="ltr"><b><i>নবীগণ আলায়হিমুস সালাম ব্যতীত অন্য কেউ নিজ কবরে নামায পড়েন?” </i></b><br><b><i>তিনি বললেন, “না”।</i></b></p><p dir="ltr">হাদিস ৫ :</p><p dir="ltr"><b>ইমাম আবু দাউদ এবং ইমাম বাইহাক্কী</b>রাহমাতুল্লাহি তা'আলা আলায়হি।<br><b><i>হযরত আওস ইবনে আওস আস সাকাফী</i></b>থেকে বর্ণনা করেন:<br><b><i>প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম </i></b>এরশাদ করেন,</p><p dir="ltr"><b><i>"নিশ্চয় তোমাদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হলো- জুমার দিন । সুতরাং এদিনে তোমরা</i></b><br><b><i>আমার প্রতি অধিক পরিমাণে দুরূদ শরীফ প্রেরণ কর । কেননা তোমাদের</i></b><br><b><i>দুরূদ শরীফগুলো আমার নিকট পেশ করা হয়। সাহাবীগণ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুম বললেন, “এয়া রাসুলাল্লাহ। আপনার নিকট আমাদের সালাত কিভাবে পেশ করা সম্ভব? কেননা আপনি তো ইন্তিকাল করবেন এবং আপনার দেহ মাটি খেয়ে ফেলবে?" তখন প্ৰিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাদের এ ভুল ধারণাকে সংশোধন করে দিয়ে বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা হারাম করে দিয়েছেন মাটির উপর নবীগণের দেহ মুবারককে গ্রাস করা ।”</i></b></p><p dir="ltr">হাদিস ৬ :</p><p dir="ltr"><b>ইমাম বায়হান্ধী শু'আবুল ঈমান' গ্রন্থে </b>এবং <b>ইমাম</b> <b>ইস্পাহানী “আত তারগীব"</b> নামক কিতাবে <i><b>হযরত আবু হোরাইরা রাদিয়াল্লাহু</b></i>তা'আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন,<br>“<b>হযরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম</b> এরশাদ করেন,</p><p dir="ltr"><i><b>"যে ব্যক্তি আমার কবরের নিকট উপস্থিত থেকে আমার উপর সালাত পাঠ করে, আমি তার সালাত শুনতে পাই (ও জবাব দেই) । আর যে অনুপস্থিত থেকে আমার প্রতি সালাত (সালাম) প্রেরণ করে তা আমার নিকট পৌছানো হয়।</b></i></p><p dir="ltr">হাদিস ৭ :</p><p dir="ltr"><b>ইমাম বোখারী তার ‘তারিখ-এ কাবীর' </b>গ্রন্থে <b>হযরত আম্মার </b>রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, <br><b>রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম</b> এরশাদ করেন,</p><p dir="ltr"><b>“নিশ্চয় আমাকে আল্লাহ তা'আলা এমন একজন ফেরেশতা দিয়েছেন, যে আমার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে যখন আমি ইনতিকাল করবো তখন থেকে, অতঃপর যে কোন বান্দা আমার উপর সালাত পাঠ করবে, সাথে সাথে সে আমাকে তা বলে দেবে, 'হে আল্লাহর মহা প্রশংসিত মাহবুব! অমুকের পুত্র অমুক,</b><br><b>আপনার প্রতি দুরূদ প্রেরণ করছে । ওই ফিরিশতা দুরূদ প্রেরণকারীর নাম</b><br><b>ও তার পিতার নামসহ উল্লেখ করবে, অতঃপর আল্লাহ তা’আলা সেটার বিনিময়ে দশটি রহমত নাযিল করবেন । আল্লাহ তার প্রতি সালাম নাযিল করুন।</b></p><p dir="ltr"><b>হাদিস ৮ :</b></p><p dir="ltr"><b><i>ইমাম বায়হাকী </i></b>রাহমাতুল্লাহি তাআলা আলাইহি <b><i>হযরত আনাস </i></b>রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:<br><b><i>নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম </i></b>এরশাদ করেন:</p><p dir="ltr"><b>"নবীগণ আলায়হিমুস সালামকে তাদের ইত্তিকালের পর কবরে চল্লিশ রাতের বেশী রাখা হয়না, বরং তারা আল্লাহ তা'আলার কুদরতের সামনে নামায আদায় করতে থাকেন- কিয়ামতের পূর্বে শিঙ্গায় ফুক দেয়ার আগ পর্যন্ত ।</b></p><p dir="ltr"><b>হাদিস ৯ :</b></p><p dir="ltr"><b><i>হযরত সুফিয়ান সাওরী তার আল জামে তে</i></b>লিখেন: <b><i>একজন শায়খ আমার নিকট হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব </i></b>থেকে বর্ণনা করে বলেন:</p><p dir="ltr"><b>কোন নবী তাঁর কবরে চল্লিশ দিনের বেশী অবস্থান করেননি; বরং তারা তাদের কবর থেকে উত্তোলন পর্যন্ত জীবিতই থাকবেন ।"</b></p><p dir="ltr"><i><b>ইমাম বায়হাকী</b></i><b> </b>বলেন<b>,</b></p><p dir="ltr"><b>“উপরোক্ত বর্ণনার পরিপ্রেক্ষিতে তারা ইন্তিকালের</b> <b>পরও অন্যান্য জীবিতদের ন্যায় জীবিত, আল্লাহ তাদেরকে যেখানে অবস্থান</b><b>করাবেন, তাঁরা সেখানে অবস্থান করতে থাকবেন।”</b></p><p dir="ltr"><b><i>অত:পর ইমাম বায়হাকী রাহমাতুল্লাহি তাআলা আলায়হি বলেন,</i></b></p><p dir="ltr"><b>নিশ্চয় নবীগণ আলায়হিমুস সালাম-এর ইন্তিকালের পরও জীবিত থাকার স্বপক্ষে অনেক প্রমাণ পাওয়া যায় ।"</b></p><p dir="ltr">প্রমাণ স্বরূপ তিনি ইসরা ও মি'রাজের ঘটনা<br>এবং এ রাতে নবীগণের সাথে তাঁর সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর কথা এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তাদের আলায়হিস সালাম কথা বলার বিশুদ্ধ ঘটনা ও রেওয়ায়াতগুলো বর্ণনা করেন।</p><p dir="ltr"><b>হাদিস ১০ :</b></p><p dir="ltr"><b><i>ইমাম বায়হাকী </i></b>রাহমাতুল্লাহি তা'আলা আলায়হি<b><i> প্রিয় নবীর ইসরা ও মি'রাজের ঘটনা</i></b>বর্ণনার ক্ষেত্রে <b><i>হযরত আবু হোরাইরা</i></b>রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহ-এর রেওয়ায়তটি উল্লেখ করেন। তাতে রয়েছে-</p><p dir="ltr"><b>“আমি আমাকে দেখতে পেলাম একদল সম্মানিত নবীর দলে। আর হযরত মূসা</b><br><b>আলায়হিস সালামকে দেখলাম তিনি দাঁড়িয়ে নামায পড়ছেন দেখলাম তিনি উপমাযোগ্য ব্যক্তি। তার চুল কোকড়ানো দেখে মনে হচ্ছিল- তিনি শানুয়া সম্প্রদায়ের লোক।</b><br><b>আবার দেখলাম হযরত ঈসা আলায়হিস সালাম দাড়িয়ে নামায পড়ছেন ।</b><br><b>ওদিকে হযরত ইবরাহীম আলায়হিস সালামও দাড়িয়ে নামায আদায় করছেন। তিনি আলায়হিস সালাম দেখতে প্রায় আমার মতই । অতঃপর নামাযের সময় এল । আর আমি তাদের সকলের ইমাম হিসেবে নামায আদায় করলাম ।”</b></p><p dir="ltr"><b>হাদিস ১১ :</b></p><p dir="ltr"><i><b>ইমাম বায়হাকী </b></i>রাহমাতুল্লাহি তা'আলা আনহ নিমের হাদীসের আলোকে বলেছেন: <br>প্ৰিয় নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-</p><p dir="ltr"><b>“কিয়ামতের দিনে মানুষ সংজ্ঞাহীন হয়ে যাবে। তখন আমিই সর্বপ্রথম সজাগ হবো ।”</b></p><p dir="ltr">এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন- এ <b>হাদীস</b> শরীফে একথাও প্রমাণ করে যে,</p><p dir="ltr"><i><b>"আল্লাহ তা'আলা নবীগণের প্রতি তাদের রূহ ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাই তারা মহান</b></i><br><i><b>আল্লাহর দরবারে জীবিত, শহীদগণের ন্যায় । অতপর যখন শিঙ্গায় প্রথম ফুক দেয়া হবে তখন তারাও অন্যান্যদের ন্যায় সংজ্ঞাহীন হয়ে যাবেন। এটি কোন দিক থেকেই মৃত্যু নয়; বরং শুধু অনুভূতি শক্তি লোপ পাওয়া মাত্র।</b></i></p><p dir="ltr"><b>হাদিস </b><b>১২ :</b></p><p dir="ltr"><b>ইমাম আবু ইয়া'লা</b> তার <b>মুসনাদে</b><i><b> হযরত আবু হোরায়রা</b></i> রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ<br>তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি- “নিশ্চয় যে মহান রবে কুদরতের হাতে আমার জীবন তার শপথ করে বলছি- </p><p dir="ltr"><b><i>হযরত ঈসা আলায়হিস সালাম অবতরণ করবেন। অতপর তিনি যদি আমার কবরের</i></b><br><b><i>সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে “হে হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা! বলে আহবান</i></b> <b><i>করেন, তাহলে আমি নিশ্চয় তাঁর আহবানে সাড়া দেব ।</i></b></p><p dir="ltr"><b>হাদিস </b><b>১৩ :</b></p><p dir="ltr"><b>হযরত আবু নু'আয়ম ইস্পাহানী তার ‘দালায়েলুন নুবুয়্যাত”-এ হযরত</b> <b>সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব </b>রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন-</p><p dir="ltr"><b><i>'হাররা-এর রাতগুলোতে আমি মসজিদে নবভী শরীফে আশ্রয় নিলাম। তখন মসজিদে নবভী শরীফে আমি ছাড়া আর কেউ ছিল না । কিন্তু যখনই নামাযের সময় হতো, তখন আমি প্রিয়নবীর কবর শরীফ থেকে আযান শুনতে পেতাম ।</i></b></p><p dir="ltr"><b><i>হাদিস ১৪ :</i></b></p><p dir="ltr"><b><i>হযরত যুবাইর ইবনে বাকার তার ‘আখবারুল মাদিনাতে হযরত সাঈদ </i></b><b><i>ইবনে মুসাইয়্যাব থেকে বর্ণনা করেন : তিনি বলেন, আমি হারা- এর </i></b><b><i>রাতগুলোতে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর </i></b><b><i>কবর শরীফে প্রতিটি নামাযের সময় আযান ও ইকামত শুনতে পেতাম ।</i></b><b><i>যতদিন পর্যন্ত মানুষ মদিনায় ফিরে আসেনি ততদিন পর্যন্ত তা শুনতে </i></b><b><i>পেয়েছি ।</i></b></p><p dir="ltr"><b><i>হাদিস ১৫ :</i></b></p><p dir="ltr"><b><i>ইমাম ইবনে সা’দ তার আত ত্বাবান্ধাত’ নামক কিতাবে হযরত সাঈদ </i></b><b><i>ইবনে মুসাইয়্যাব থেকে বর্ণনা করেন: </i></b></p><p dir="ltr"><b><i>"তিনি হাররা এর দিনগুলোতে যখন </i></b><b><i>অকাতরে মানুষ হত্যা করা হচ্ছিল তখন মসজিদে নববী শরীফে </i></b><b><i>আত্মগোপন করেন। তিনি বলেন- যখনি নামাযের সময় উপস্থিত হতো </i></b><b><i>তখন আমি কবর শরীফ থেকে আযানের শব্দ বের হতে শুনতাম।</i></b><br><br><br></p>

কিতাব: নবীগণ (আলায়হিমুস সালাম) স্বশরীরে জীবিত, লেখক: ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতী (রহ) [পর্ব ১]

কিতাব: নবীগণ (আলায়হিমুস সালাম) স্বশরীরে জীবিত, লেখক: ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতী (রহ) [পর্ব ১] নবীগণ (আলায়হিমুস সালাম) স্বশরীরে রওযা শরীফে জীব...

Read more »

সাহাবীগণের দৃষ্টিতে ইলমে গায়েবঃ (১ম পর্ব)

<p dir="ltr"><b>সাহাবীগণের দৃষ্টিতে ইলমে গায়েবঃ (১ম পর্ব) (প্রিন্স ঠাকুর রেজভী)</b></p> <p dir="ltr"><b>নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইলমে গায়েবের ব্যাপারে সম্মানিত সাগাবীগণের কী মনোভাব ছিল সেই ব্যাপারে সামান্য কিছু দলিল ভিত্তিক আলোচনা করা হল--- </b></p> <p dir="ltr"><b>১/ হযরত রাবি'য়া ইবনে কা'ব (রা) থেকে বর্ণিত,  ইসলাম গ্রহণের আগে হযরত আবু বকর (রা) সিরিয়ায় একটি স্বপ্ন দেখে সেখানকার এক খ্রীস্টান পাদ্রীর কাছে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে গিয়েছিলেন। স্বপ্নের ব্যাখ্যায় পাদ্রী বলেন -- তোমার সাথে একজন নবীর দেখা হবে এবং তুমি তাঁর পরে খলিফা হবে। </b></p> <p dir="ltr"><b>পরবর্তীতে হযরত আবু বকর (রা) মক্কায় ফিরে এসে নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এঁর কাছে এসে বলেন-- "আপনি যে নবী তার প্রমাণ কী?"</b></p> <p dir="ltr"><b>জবাবে নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- "" তুমি যে সিরিয়ায় স্বপ্নটি দেখেছিলে সেটিই আমার সত্য নবী হওয়ার প্রমাণ! ""</b></p> <p dir="ltr"><b>একথা শুনে হযরত আবু বকর (রা) তাৎক্ষনাৎ কলেমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেলেন। (হুবুহু উদ্ধৃত নয়) </b></p> <p dir="ltr"><b>[দলিল - </b><br> <b>(ক) ইমাম জালাল উদ্দিন সৈয়ুতি (রহ) লিখিত "খাসায়েসুল কুবরা" ; ১ম খন্ড ৫১ পৃষ্টা।</b><br> <b>(খ) ইমাম ইবনে আসাকির (রহ) লিখিত "তারিখে দামেস্ক" ; ৩০ পৃষ্টা। ]</b></p> <p dir="ltr"><b>২/ হযরত উমর (রা) বলেন,  নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে সৃষ্টির শুরু থেকে আলোচনা আরম্ভ করে জান্নাতী ও জাহান্নামীরা যথাক্রমে জান্নাত ও জাহান্নামে প্রবেশ করা পর্যন্ত সবকিছু বর্ণনা করেন। এই বর্ণনা যাঁরা পেরেছেন তাঁরা সংরক্ষণ করেছেন,  আর যাঁরা পারেন নি তাঁরা ভুলে গেলেন৷ (হুবুহু উদ্ধৃত নয়)</b></p> <p dir="ltr"><b>[দলিল- </b><br> <b>(ক) সহিহ বুখারী শরীফ,  হাদিস নং - ৩১৯২।</b><br> <b>(খ) আবু দাউদ শরীফ, হাদুস নং -৪২৪০। ] </b></p> <p dir="ltr"><b>৩/ হযরত ওমাইর বিন জাবির (রা) থেকে বর্ণিত, হযরত উমর (রা) এর কাছে নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন -  ইয়েমেনবাসীদের মধ্যে মুরাদ গোত্রের একজন ব্যাক্তি আসবে ; সে মায়ের অনেক সেবাযত্ন করবে; তার শরীরে কুষ্ঠরোগ হয়েছিল, যার ১ দিরহাম পরিমাণ চিহ্ন তখনও থাকবে। সেই ব্যাক্তি আসলে তার কাছে তুমি দোয়া চাইবে। </b></p> <p dir="ltr"><b>পরবর্তীতে নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এঁর বর্ণিত প্রতিটি কথা সত্য হয় এবং হযরত উমর (রা) ইয়েমেন থেকে আগত সেই ব্যাক্তির কাছে দোয়া চান। (হুবুহু উদ্ধৃত নয়)</b></p> <p dir="ltr"><b>[দলিল-- </b><br> <b>(ক) মুসলিম শরীফ,  হাদিস নং- ২৫৪২</b><br> <b>(খ) আল মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং- ৫৭১৯] </b><br> <b>৪/ হযরত আলী (রা) বলেন,  নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন - "রওজায়ে খাখ" নামক স্থানে এক মহিলার কাছে লুকানো একটি চিঠি আছে। ওর কাছ থেকে সেই চিঠিটা নিয়ে এস। </b><br> <b>অতঃপর , সেই নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে সেই মহিলাকে পাওয়া গেলেও ওর কাছে তল্লাশি করেও চিঠি পাওয়া যায়নি।</b></p> <p dir="ltr"><b>শেষে হযরত আলী (রা) বলেন-- নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিথ্যা বলেন না। তাড়াতাড়ি চিঠিটা বের করে দাও,  অন্যথায় তোমাকে উলঙ্গ করে চিঠি বের করব। শেরে খোদা আলী (রা) এর এই কঠোর মনোভাব দেখে মহিলাটি নিজের শরীরের গোপনীয় স্থান থেকে চিঠিটি বের করে দিলেন৷ (হুবুহু উদ্ধৃত নয়)</b></p> <p dir="ltr"><b>[দলিল-- </b><br> <b>(ক) সহিহ বুখারী শরীফ, হাদিস নং- ৩৯৮৩</b><br> <b>(খ) মুসলিম শরীফ, হাদিস নং- ২৪৯৪ ] </b></p> <p dir="ltr"><b>৫/ হযরত আনাস বিন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত, একদিন নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবী আবু বকর (রা), উমর (রা) এবং ওসমান (রা) কে নিয়ে উহুদ পাহাড়ের উপর চড়ার পরে পাহাড় কম্পন শুরু হয়। তখন নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- হে উহুদ পাহাড় থাম! তোমার উপর একজন নবী,  একজন সিদ্দিক এবং দুজন শহীদ আছে। (হুবুহু উদ্ধৃত নয় ) </b></p> <p dir="ltr"><b>[ দলিল- </b><br> <b>(ক) সহিহ বুখারী শরীফ,  হাদিস নং ৩৬৭৫ এবং ৩৬৮৬</b><br> <b>(খ) সুনানে তিরমিযী শরীফ,  হাদিস নং ৩৬৯৭]</b></p> <p dir="ltr"><b>উপরোক্ত প্রতিটি হাদিস শরীফে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েবের খবর বলেছেন। সাহাবীগন সবাই নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখে গায়েবের খবর শোনার পরেও কেউ অস্বীকার করেন নি। সকল সাহাবী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করেছেন যে, নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েবের খবর জানেন এবং তিনি গায়েবীভাবে যা যা বলেছেন সবই সত্য। </b></p> <p dir="ltr"><b>সুতরাং, প্রমাণ হল নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইলমে গায়েবের ব্যাপারে সুন্নী রেজভীদের আক্বিদা এবং সাহাবীগণের আক্বিদা হুবুহু এক। </b></p> <p dir="ltr"><b>আল্লাহ সকল ঈমানদারকে সুন্নী রেজভী পরিপন্থী জাহান্নামী ফির্কাগুলির হাত থেকে রক্ষা করুন। আমিন।</b></p> <div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"> <a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiWB7H5ORhgT4JDj9sC-JzgY7QLSkF4_6YzDIyS7xMMe0u9m63XCsPPCOzDJ7CYNTaQiJzpiAn7Qyie6u-nK77FCtw2MyDPKAW1AgqCq0gM1AM_VBfEXWxUF92kZZOrpF374JMA8n4ZSsE/s1600/FB_IMG_15405348083453390.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"> <img border="0" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiWB7H5ORhgT4JDj9sC-JzgY7QLSkF4_6YzDIyS7xMMe0u9m63XCsPPCOzDJ7CYNTaQiJzpiAn7Qyie6u-nK77FCtw2MyDPKAW1AgqCq0gM1AM_VBfEXWxUF92kZZOrpF374JMA8n4ZSsE/s640-rw/FB_IMG_15405348083453390.jpg"> </a> </div>

সাহাবীগণের দৃষ্টিতে ইলমে গায়েবঃ (১ম পর্ব)

সাহাবীগণের দৃষ্টিতে ইলমে গায়েবঃ (১ম পর্ব) (প্রিন্স ঠাকুর রেজভী) নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইলমে গায়েবের ব্যা...

Read more »