কোরবানীর হুকুম ও নেসাব

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">কুরবানির হুকুম ও কুরবানির নেসাব।<br /><br />হানাফী মাযহাবের মত অনুযায়ী মুকীম, বালেগ, সুস্থ মস্তিস্কের মুসলমানের জন্যে যদি তার কাছে কুরবানির দিন সমূহে নেসাব পরিমান সম্পত্তি  থাকে তাহলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।<br />[সূরা কাওছার আয়াত ২, ইবনে মাযাঃ ২/১০৪৪ মাজমাউল আনহুরঃ ৪/১৬৭]।<br /><br />কুরবানির নেসাব<br />____________<br />শুধু স্বর্ণ হলে সাড়ে সাত ভরি আর শুধু রুপা হলে সাড়ে বায়ান্ন ভরি অথবা তার সমপরিমান হাজতে আসলিয়া তথা প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদ থাকা।<br />[সূত্রঃ ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়াঃ ৫/৩৯৩ বাদায়েউস সানায়েঃ ৬/২৭০ শামীঃ ৬/৩১২]।<br /><br />হাজতে আছলিয়া বলতে বুঝায়, মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান পেশায় ব্যবহারিত সম্পদ, দ্বীনি শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কিতাবসমূহ এবং যে সকল বস্তু মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে প্রয়োজন হয়। আর যে সকল জিনিস মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে প্রয়োজন হয় না তা হাজতে আছলিয়ার অন্তর্ভ্ক্তু নয়। যেমন, টিভি, রেডিও, প্রয়োজোন অতিরিক্ত একাধিক মোবাইল, তিন সেটের অতিরিক্ত কাপড় (ফাতওয়ায়ে শামী), প্রয়োজন অতিরিক্ত ঘর বা প্লট, বড় বড় ডেগ যা সব সময় কোন প্রয়োজনে আসে না এবং ঘরের ঐ সমস্ত জিনিস যা ঘরের সুন্দর্যের জন্য রাখা হয়েছে। ইত্যাদি, ইত্যাদি।<br />[সূত্রঃ আল মাওসূয়াতুল ফেকহিয়্যাহঃ ৬/৩৫ কাওয়াইদুল ফিকহিয়্যাঃ ২৫৭ ফাতওয়ায়ে শামীঃ ৬/৩১২ ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়াঃ ৫/৩২৬]।<br /><br />কুরবানীর নেসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে কোনো দিন থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে।<br />[সূত্রঃ বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২]।<br /><br />নাবালেগ শিশু-কিশোর তদ্রূপ যে সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন নয়, নেসাবের মালিক হলেও তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। অবশ্য তার অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষে কুরবানী করলে তা সহীহ হবে।<br />[সূত্রঃ বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬]।<br /><br />নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানী দেওয়া অভিভাবকের উপর ওয়াজিব নয়; বরং মুস্তাহাব।<br />[সূত্রঃ রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৫; ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫]।<br /><br />মুসাফেরের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।<br />[সূত্রঃ হেদায়াঃ ৪/৪৪৩; মাবসূতে সারাখসীঃ ৮/১২]।<br /><br />কোরবানীর সময় তিন দিন : ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ্ব। এটি সহীহ ‘মারফূ হুকমী’ হাদীসে স্পষ্টভাবে আছে, যা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকার। তদ্রূপ সাধারণ মারফূ হাদীস দ্বারাও তা প্রমাণিত।<br />সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিমসহ হাদীসের প্রসিদ্ধ কিতাবসমূহে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঐ বিখ্যাত হাদীস বিভিন্ন সাহাবীর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, যাতে তিন রাতের পর ঘরে কোরবানীর গোশত রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল দরিদ্র মানুষের সহায়তা। কারণ ঐ বছর ঈদুল আযহার সময় আশপাশ থেকে অনেক দরিদ্র মানুষ সমবেত হয়েছিলেন।<br />সহীহ বুখারীতে ঐ হাদীসের পাঠ এই-<br /><br />من ضحى منكم فلا يصبحن بعد ثالثة وبقي في بيته منه شيء.<br /><br />[সূত্রঃ সহীহ বুখারী, কিতাবুল আযাহী, বাব : ১৬, হাদীস : ৫৫৬৯]।<br /><br />সহীহ মুসলিমে হযরত জাবির রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসের পাঠ এই-<br /><br />كنا لا نأكل من لحوم بدننا فوق ثلاث مني، فارخص لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال : كلوا وتزودوا …<br /><br />[সূত্রঃ সহীহ মুসলিম, কিতাবুল আযাহী, হাদীস ৫০৬৭]।<br /><br />এ হাদীস থেকে বোঝা যায়, শরীয়তের দৃষ্টিতে কুরবানীর সময় তিন দিন। তবে এই সময়ের পরও কোরবানীর গোশত সংরক্ষণের যে সাধারণ বৈধতা ছিল একটি বিশেষ সামাজিক প্রয়োজনে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা রহিত করে দিয়েছিলেন পরে আবার তার অবকাশ প্রদান করেন। ঐ অবকাশের। হাদীসগুলোতে কোথাও একথা নেই যে, তিনি কোরবানীর গোশত সংরক্ষণের অবকাশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চতুর্থ দিনও কোরবানী করার অনুমতি দিয়েছেন।<br /><br />قال الإمام أبو بكر الرازي الجصاص : فدلت هذه الأخبار على أن جواز الأضحية مقصور على هذه الأيام، لأنه إذا كان منهيا عن تبقية اللحم أكثر من ثلاث والذبح لا محالة قبل ذلك علمنا أن الذبح مقصور على ثلاث.<br />وقد روي في بعض ألفاظ حديث علي رضي ا لله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى أن يبقى عندكم من نسككم شيء بعد الثلاث، فهو على الحي والمذبوح جميعا، لأن اللفظ يتناولهما. انتهى<br />وقال الإمام ابن قدامة الحنبلي في المغني : ولنا أن النبي صلى الله عليه وسلم نهى عن ادخار لحوم الأضاحي فوق ثلاث، ولا يجوز الذبح في وقت لا يجوز ادخارالأضحية إليه. انتهى<br />[সূত্রঃ শরহু মুখতাসারিত তহাবী, জাসসাস ৭/৩৩২-৩৩৩; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ১৩/৩৮৭]।<br /><br />সাহাবায়ে কেরামও সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, কোরবানীর সময় তিন দিন বলাবাহুল্য, এটা তাঁরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ থেকেই গ্রহণ করেছেন। কারণ ইবাদতের সময়সীমা তো নিছক যুক্তি-বুদ্ধির দ্বারা নির্ধারিত হতে পারে না। তাই এ ধরনের বর্ণনাকে পরিভাষায় ‘মারফূ হুকমী’ বলে, যা মারফূ হাদীসেরই একটি প্রকার।<br /><br />সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্য-<br />১. হযরত আনাস রা. বলেন, ‘যবেহ (কোরবানী) করা যায় ঈদের (দিনের) পর আর দুই দিন।’<br />الذبح بعد العيد يومان<br />এই বর্ণনার সনদ সহীহ।<br />দেখুন : আহকামুল কুরআন, তহাবী, ২/২০৬; আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ৯/২৯৭; আলমুহাল্লা, ইবনে হাযম ৭/৪৯৯।<br /><br />২. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, ‘ঈদুল আযহার (দিনের) পর আযহা (কুরবানী) দুই দিন।’<br />الأضحى يومان بعد يوم الأضحى.<br />এই বর্ণনার সনদ সহীহ, বরং আসাহহুল আসানীদ (শ্রেষ্ঠ সনদ)-এর অন্যতম।<br />দেখুন : আল মুয়াত্তা, ইমাম মালিক باب الضحية عما في بطن المرأة، وذكر أيام الأضحى হাদীস : ২০৩৮।<br /><br />৩. আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, ‘আযহা (কোরবানী) তিন দিন।’ অন্য বর্ণনায় আছে, ‘কোরবানী করা যায় ইয়াওমুন নহর (কোরবানীর দিন)-এর পর আরও দুই দিন।’<br />الأضحى ثلاثة أيام، وفي لفظ : النحر يومان بعد يوم النحر، وأفضلها يوم النحر.<br />এ বর্ণনা বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়েছে। ইবনুত তুরকুমানী রাহ. তহাবীর সনদকে ‘জাইয়েদ’ বলেছেন।<br />দেখুন : আহকামুল কুরআন তহাবী আল জাওহারুন নাকী, (সুনানে কুবরা বাইহাকীর সাথে মুদ্রিত) ৯/২৯৬।<br /><br />৪. আবু হুরায়রা রা. বলেন, ‘আযহা (কোরবানী) হচ্ছে তিন দিন।’<br />الأضحى ثلاثة أيام<br />[সূত্রঃ আলমুহাল্লা, ইবনে হাযম-ইলাউস সুনান ১২/২৩২-১৩৩]।<br /><br />৫. আলী ইবনে আবী তালিব রা. থেকে বর্ণিত, ‘কোরবানী তিন দিন।’<br /><br />النحر ثلاثة أيام، وفي لفظ النحر ثلاثة أيام أفضلها أولها.<br />[সূত্রঃ আলমুয়াত্তা, ইমাম মালিক, প্রাগুক্ত ; আহকামুল কুরআন, তহাবী ২/২০৫; ই’লাউস সুনান ১২/২৩২]।<br /><br />৬. ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, ‘কোরবানী শুধু এই তিন দিনই করা যায়।’<br /><br />إنما النحر في هذه الثلاثة الأيام<br />[সূত্রঃ আলমুহাল্লা, ইবনে হাযম-ইলাউস সুনান ১২/২৩২]।<br /><br />সাহাবায়ে কেরামের এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ইমাম তহাবী রাহ. ঐ মূলনীতি উল্লেখ করেছেন, যার ভিত্তিতে পরিষ্কার প্রতীয়মান হয় যে, বিষয়টি তাঁরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই গ্রহণ করেছেন এবং যে কারণে এই বর্ণনাগুলো ‘মারফু হুকমী’র পর্যায়ভুক্ত হয়।<br />দ্র. আহকামুল কুরআন, তহাবী ২/২০৮।<br />একই কথা অতি সহজ ও সংক্ষেপে বলেছেন ইমাম আবু বকর রাযী আলজাসসাস রাহ.। তাঁর আলোচনায় মূল পাঠ উদ্ধৃত করা হল।<br /><br />فإن مقادير الأوقات التي تتعلق بها صحة الفروض لا تعلم من طريق المقاييس، وإنما طريقها التوقيف أو الاتفاق. وقد حصل الاتفاق والسنة في الثلاث. فأثبتناها ولم نثبت ما فوقها، لعدم الدلالة عليه. انتهى<br />[সূত্রঃ শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৭/৩৩৩<br />আরো দেখুন : আহকামুল কুরআন জাসসাস ৩/২৩৪ সূরা হজ্বের আলোচনায়]।<br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj7SsTEJ7qsFO1Onll9ds_sG_TeM48l29Y21fa__Ntx_ttxXSDiiSW7NnQtzAzQIvr6fF793C2GOk4UC-4twHM6oq6xC7UWAorj-Z47RIXp4O2JLMEpqG403rG_SaPODvuJFNfuKLE9D_9v/s1600/Korbani-4jpeg.jpeg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="215" data-original-width="270" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj7SsTEJ7qsFO1Onll9ds_sG_TeM48l29Y21fa__Ntx_ttxXSDiiSW7NnQtzAzQIvr6fF793C2GOk4UC-4twHM6oq6xC7UWAorj-Z47RIXp4O2JLMEpqG403rG_SaPODvuJFNfuKLE9D_9v/s1600-rw/Korbani-4jpeg.jpeg" /></a></div><br /><br />বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, ‘আযহা (কোরবানী) তিন দিন। ইওয়ামুন নাহর ও তার পর দুই দিন।’ অন্য বর্ণনায়, ‘আযহা (কোরবানী) তিন দিন : ইয়াওমুন নাহ্র ও তার পর দুই দিন। আর আইয়ামুত তাশরীক হচ্ছে ইয়াওমুন নাহর-এর পর তিন দিন।’<br /><br />الأضحى ثلاثة أيام : يوم النحر ويومان بعده. رواه الإمام أبو حنيفة في كتاب الآثار رقم ٧٨٦ وقال محمد : وبه نأخذ، وهو قول أبي حنيفة. وفي رواية أبي يوسف عنه زيادة …وأيام التشريق ثلاثة أيام بعد يوم النحر.<br />[সূত্রঃ কিতাবুল আছার, ইমাম আবু হানীফা, (ইমাম মুহাম্মাদ রাহ.-এর বর্ণনা) হাদীস : ৭৮৬; (ইমাম আবু ইউসুফ রাহ.-এর বর্ণনা) হাদীস : ৩০৬]।<br /><br />ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালিক, ইমাম সুফিয়ান ছাওরী, ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান, ইমাম যফর ইবনুল হুযাইল, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রাহিমুাহুল্লাহ) প্রমুখ বিখ্যাত মুজতাহিদ ইমামগণের সিদ্ধান্তও তাও। সুতরাং একে ‘ভিত্তিহীন’ বলা চরম মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়।<br />কোনো কোনো আহলে ইলম কুরবানীর সময় চার দিন হওয়ার কথাও বলেছেন। আতা ইবনে আবী রাবাহ, হাসান বসরী, ওমর ইবনে আব্দুল আযীয (রাহিমাহুমুল্লাহ) থেকে তা বর্ণিত হয়েছে। সেটিও একটি ইজতিহাদী মত। ইমাম শাফেয়ী রাহ. এই মত গ্রহণ করেছেন।<br />তবে এই দুই মতের কেউই অপর মতকে ভিত্তিহীন বলেননি। শরীয়তের যে বিষয়গুলোতে উভয় দিকে দলীল থাকার কারণে আহলে ইলমের মাঝে ইজতিহাদগত মতভেদ হয়েছে সেসব বিষয়ে একটি মত গ্রহণ করে অন্য মতকে ভিত্তিহীন বলা অপরিপক্কতার পরিচয় বহন করে। এটা সাম্প্রতিক সময়ের শুযুয ও বিচ্ছিন্নতা, যা সালাফের যুগে ছিল না। এ উপসর্গের বিষয়ে সতর্কতা কাম্য।<br />আর কোরবানীর সময় চার দিন হওয়ার বিষয়ে জুবাইর ইবনে মুতইম রা.-এর সূত্রে বর্ণনাকৃত যে রেওয়ায়েতের কথা প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে তার সনদ ‘মুনকাতি’ ও বিচ্ছিন্ন। তাছাড়া ঐ বর্ণনার আলোচিত অংশটি অনেক ইমামের মতে ‘মা’লূল’ অর্থাৎ তা এ হাদীসের শক্তিশালী বর্ণনাগুলোতে পাওয়া যায় না।<br />[বিস্তারিত : আহকামুল কুরআন তহাবী ২/২০৬; আহকামুল কুরআন জাসসাস ৩/২৩৪-২৩৫;আলইসতিযকার ১৫/২০৩-২০৪; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ১৩/৩৮৭; আলমাজমূ শরহুল মুহাযযাব ৮/৩৬১; আলজাওরুন নাকী (সুনানে কুবরার সাথে) ৯/২৯৬; নাসবুর রায়াহ ৪/২১২-২১৩; ইলাউস সুনান ১২/২৩১]।<br /><br />রাতে কুরবানী করা-<br />১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাতেও কুরবানী করা জায়েয। তবে দিনে কুরবানী করাই ভালো।<br />[সূত্রঃ মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১৪৯২৭; মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/২২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, কাযীখান ৩/৩৪৫, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩]।<br /><br />কুরবানীর উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পশু সময়ের পর যবাই করলে-<br />কুরবানীর দিনগুলোতে যদি জবাই করতে না পারে তাহলে খরিদকৃত পশুই সদকা করে দিতে হবে। তবে যদি (সময়ের পরে) জবাই করে ফেলে তাহলে পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি জীবিত পশুর চেয়ে কমে যায় তাহলে যে পরিমাণ মূল্য হ্রাস পেল তা-ও সদকা করতে হবে।<br />[সূত্রঃ বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০-৩২১]।<br /><br />কোন কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে-<br />উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়।<br />[সূত্রঃ কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫]।<br /><br />গরু ও ছাগল খাসী করার শারঈ বিধি-নিষেধ-<br />খাসী করা জায়েয। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাসী করা ছাগল কুরবানী করেছেন।<br />[সূত্রঃ ছহীহ্ ইবনু মাজাহ্ হা/৩১২২; মিশকাত হা/১৪৬১, বায়হাক্বী, ইরওয়া হা/১১৩৮]।<br />যে হাদীছে নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে [সূত্রঃ বায়হাক্বী, ছহীহুল জামে‘ হা/৬৯৬০] সে সম্পর্কে ইমাম নববী রহঃ বলেন, সেগুলি হারাম পশুর বেলায় প্রযোজ্য।<br />দ্র: মাছাবীহুত তানভীর ‘আলা ছহীহিল জামে‘ ২/১৫ পৃ:।<br /><br />নর ও মাদা পশুর কুরবানী-<br />যেসব পশু কুরবানী করা জায়েয সেগুলোর নর-মাদা দুটোই কুরবানী করা যায়।<br />[সূত্রঃ কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫]।<br /><br />কুরবানীর পশু বাচ্চা দিলে ওই বাচ্চা জবাই না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম। যদি সদকা না করে তবে কুরবানীর পশুর সাথে বাচ্চাকেও জবাই করবে এবং গোশত সদকা করে দিবে।<br />[সূত্রঃ কাযীখান ৩/৩৪৯, আলমগীরী ৫/৩০১, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩]।<br /><br />কুরবানীর পশুর বয়সসীমা-<br />উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।<br />উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে না।<br />[সূত্রঃ কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫-২০৬]।<br /><br />ঋণগ্রস্থ ব্যক্তির যদি তার সম্পদের তুলনায় ঋণ বেশী হয় বা সমান হয়, অথবা ঋণ আদায় করার পর তার কাছে নেসাব পরিমান সম্পদ বাকি না থাকে তাহলে এমন ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।<br />[সূত্রঃ ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়াঃ ৫/৩৯২]।<br /><br />যদি কোন মহিলার কাছে কিছু স্বর্ণ এবং অল্প কিছু টাকা থাকে আর উভয়টা মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমপরিমান টাকা হয় তাহলে সে মহিলার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। তার স্বামীর কুরবানী দ্বারা তার পক্ষ থেকে ওয়াজিব কুরবানী আদায় হবে না।<br />[সূত্রঃ ফাতওয়ায়ে শামীঃ ২/২৯৮]।<br /><br />স্বামী আর স্ত্রীর কাছে যদি আলাদা আলাদাভাবে নেসাব পরিমান সম্পদ থাকে তাহলে তাদের উভয় জনকে স্বতন্ত্র কুরবানী করতে হবে।<br />[সূত্রঃ বুখারীঃ ৭/৯৯ তাতারখানিয়াঃ ১৭/৪০৫; মুলতাকাতুল আবহুরঃ ৪/১৬৬]।<br /><br />একটি প্রশ্ন ও জবাব - আমি আমার, আমার স্ত্রী, সন্তান, মা এবং মৃত বাবার নামে কোরবানী দেয়ার উদ্দেশ্যে যদি কোন পশু ক্রয় করি এবং সেটি কোরবানী করলে আমার স্ত্রী উপর যে কোরবানী ওয়াজিব হয়েছে সেটা কি আদায় হবে?<br /><br />উত্তর- কোরবানির উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পশুটিতে স্বামী তার স্ত্রীর পক্ষে যে কোরবানি ওয়াজিব হয়েছে তা আদায়ের জন্যে কুরবানির গরু ইত্যাদি পশুতে অংশ রাখলে স্ত্রীর পক্ষ থেকে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে।<br />উল্লেখ্য সন্তান মা বা বাবার পক্ষ থেকে কোরবানির উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পশুতে অনুরুপ অংশ রাখলে সন্তানের দ্বারা মায়ের বা বাবার পক্ষ থেকে উক্ত ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে।<br />অনুরুপে ভাই ভাইয়ের পক্ষ থেকে কোরবানির উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পশুতে অংশ রেখে ওয়াজিব আদায়ের ভূমিকা রাখতে পারেন।<br /><br />এমন ব্যক্তি যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় সে যদি কুরবানির দিনগুলোতে কুরবানির নিয়তে কোন পশু ক্রয় করে তাহলে তার উপর সেটি কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়।<br />[সূত্রঃ ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়াঃ ৫/৩৯১ বাদায়েউস সানায়েঃ ৬/২৬৪]।<br /><br />যৌথ পরিবারের সবাই যদি আলাদা আলাদা ভাবে নিসাব পরিমান সম্পত্তির মালিক হয় তাহলে সকলের পক্ষ থেকে একটা কুরবানী করলে কিংবা এই বছর এক জনের নামে আরেক বছর আরেক জনের নামে আরেক বছর আরেক জনের নামে কুরবানী করলে কুরবানী আদায় হবে না। বরং সবাইকে স্বতন্ত্র কুরবানী করতে হবে।<br />[সূত্রঃ আদ দুররুল মুখতার মায়া শামীঃ ২/২৩১ মাজমাউল আনহুরঃ ৪/১৬৬]।<br /><br />জিবিকা নির্বাহের জন্য যতটুকু ফসলের জমির প্রয়োজন শুধুমাত্র ততটুকু জমি ও তার ফসল হাজতে আছলিয়ার অন্তর্ভুক্ত। এর অতিরিক্ত জমি ও তার ফসলের মূল্য হিসাব করে নেসাব পরিমান সম্পদের মালিক হলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।<br />[সূত্রঃ ফাতওয়ায়ে শামীঃ ৬/৩১২]।<br /><br />যদি কোন ব্যক্তির কাছে প্রয়োজন অতিরিক্ত জমি থাকে, কিন্তু তার কাছে কুরবানী করার মত নগদ টাকা না থাকে তাহলে তার উপর ঋণ করে হলেও কুরবানী করা ওয়াজিব।<br />[সূত্রঃ ফাতওয়ায়ে শামীঃ ৬/৩১২]।<br /><br />একটি পরিবারের একজনের কোরবানি সবার জন্যে যথেষ্ট কিনা।<br />____________<br />এক পরিবারের পক্ষ থেকে একজন কোরবানী করলে সবার পক্ষ থেকে কিছুতেই কুরবানী আদায় হবে না। এক পরিবারের পক্ষ থেকে একজন রোযা রাখলে যেমন সবার পক্ষ থেকে আদায় হবে না।<br /><br />এক পরিবারের পক্ষ থেকে একজন হজ্ব করলে সবার পক্ষ থেকেও হজ্ব আদায় হবে না।<br /><br />অনুরুপে এক পরিবারের পক্ষ থেকে একজন সদকায়ে ফিতির আদায় করলে সবার সদকায়ে ফিতির আদায় হয়ে যাবে না।<br /><br />একজন নামায পড়লে সবার নামায পড়া হয়ে যাবে না।<br /><br />ঠিক তেমনি একজন কুরবানী করলে সবার আদায় কখনই হবে না।<br /><br />নামায, রোযা, হজ্বের মত কুরবানীও একটি ইবাদত। যা প্রতিটি ব্যক্তির উপর আলাদাভাবে আবশ্যক হয়। একজন আদায় করলে আরেকজনের আদায় হবে কিভাবে? এটিতো একটি অযৌক্তিক ও হাস্যকর কথা।<br /><br />কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে-<br /><br />أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ [٥٣:٣٨]<br /><br />কিতাবে এই আছে যে,কোন ব্যক্তি কারও বোঝা নিজে বহন করবে না। [সূরা নাজম-৩৮}<br /><br />কিছু হাদীসের মাধ্যমে যে বুঝা যায় যে, সাহাবাগণ প্রথম যুগে পুরো পরিবারের মাঝে একনজই কুরবানী করতেন, এসব হাদীসের মানে হল, আমরাও বলি পরিবারের মাঝে যার উপর কুরবানী আবশ্যক সে কুরবানী করবে। যদি দুইজনের উপর আবশ্যক থাকে তাহলে দুইজন করবে। আর যদি একজনের উপর আবশ্যক থাকে, তাহলে একজন করবে।<br /><br />তো ইসলামের শুরু যুগে সাহাবায়ে কেরামের মাঝে দারিদ্রতা ছিল। এতটা স্বচ্ছলতা ছিল না। আর পরিবারের মাঝে উপার্জনকারী যেহেতু একজনই হতো, তাই স্বাভাবিকভাবে ঘরের কর্তার উপরই কুরবানী আবশ্যক হতো, আর তিনি কুরবানী করতেন। আর এর গোস্ত পুরো পরিবারই খেতো। এ হল পুরো পরিবারের পক্ষ থেকে সাহাবীদের কুরবানী করার মানে।<br /><br />এর মানে এটা কখনোই ছিল না যে, পরিবারের সবার উপর কুরবানী আবশ্যক। কিন্তু তারা কেউ কুরবানী করতো না, শুধু একজনই করতেন। সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে এমনটি কিছুতেই ভাবা যায় না।<br /><br />তাছাড়া কেউ কেউ এ দলীল পেশ করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এক বকরী পুরো উম্মতের পক্ষ থেকে কুরবানী করতেন। তাই এক কুরবানী পুরো পরিবারের পক্ষ থেকে হয়ে যাবে।<br /><br />একথাটিও ঠিক নয়। কারণ এক হল দায়িত্ব হিসেবে কুরবানী করা। আরেক হল সওয়াব পৌছানো। আবশ্যক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে কুরবানী একজন ব্যক্তির জন্য একটিই হবে। বাকি একজন কুরবানী করে কোটি মানুষের জন্য ঈসালে সওয়াব করতে পারবে। এতে কোন সমস্যা নেই। যেমন রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম নিজের কুরবানী করার পর সেটির ঈসালে সওয়াব সমস্ত উম্মতের জন্য করেছেন। এর দ্বারা পুরো পরিবারের ওয়াজিব কুরবানী একজন আদায় করলেই হয়ে যাবার কোন প্রমাণ হয় না।<br />[সূত্রঃ তুহফাতুল আলমায়ী-৪/৪৩৭-৪৩৮]।<br /><br />এমন ব্যক্তি যার উপর কুরবানী ওয়াজিব তার শশুর বাড়ি থেকে কিংবা অন্য কোন জায়গা থেকে কোন পশু হাদিয়া আসে তাহলে সে যদি অন্য পশু ক্রয় না করে সে পশু দ্বারা কুরবানী করে তাহলে তার ওয়াজিব কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। কেননা, তাকে হাদীয়া দেয়ার মাধ্যমে সে পশুটার মালিক হয়ে যায় বিধা সে যে কোন কাজে সেটা ব্যবহার করতে পারবে।<br />[সূত্রঃ বাদায়েউস সানায়েঃ ৫/৭৭]।<br /><br />যদি কোন ব্যক্তি নিজের পক্ষ থেকে ওয়াজিব কুরবানী করে আর এতে করে কোন মৃত ব্যক্তির জন্য শুধুমাত্র সাওয়াব পৌঁছানোর নিয়ত করে তাহলে তা জায়েয হবে। তার কুরবানী আদায় হবে। আর যদি সে ব্যক্তি নিজের পক্ষ থেকে না করে মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে নফল কুরবানী করে তাহলে তার ওয়াজিব কুরবানী আদায় হবে না।<br />[সূত্রঃ ফাতওয়ায়ে শামীঃ ৬/৩৫]।<br /><br />যদি কোন ব্যক্তির সকল টাকা হারাম পন্থায় উপার্জিত হয় এবং তার আর কোন হালাল উপার্জন না থাকে তাহলে এমন ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব না। তার সাথে কেউ যদি কুরবানীতে শরীক হয় তাহলে শরীকদারের কুরবানীও আদায় হবে না।<br />[সূত্রঃ বজলুল মজহুদঃ ১/৩৮]।<br /><br />কোনো অংশীদারের গলদ নিয়ত হলে-<br />যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানী না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানী করে তাহলে তার কুরবানী সহীহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরীকদের কারো কুরবানী হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরীক নির্বাচন করতে হবে।<br />[সূত্রঃ বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, কাযীখান ৩/৩৪৯]।<br /><br />কয়েকজন মিলে কুরবানী করার ক্ষেত্রে জবাইয়ের আগে কোনো শরীকের মৃত্যু হলে তার ওয়ারিসরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করার অনুমতি দেয় তবে তা জায়েয হবে। নতুবা ওই শরীকের টাকা ফেরত দিতে হবে। অবশ্য তার<br />স্থলে অন্যকে শরীক করা যাবে।<br />[সূত্রঃ বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৬, কাযীখান ৩/৩৫১]।<br /><br />কুরবানীর গরু, মহিষ ও উটে আকীকার নিয়তে শরীক হতে পারবে। এতে কুরবানী ও আকীকা দুটোই সহীহ হবে।<br />[সূত্রঃ তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬২]।<br /><br />কুরবানীর পশু হারিয়ে যাওয়ার পরে যদি আরেকটি কেনা হয় এবং পরে হারানোটিও পাওয়া যায় তাহলে কুরবানীদাতা গরীব হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) দুটি পশুই কুরবানী করা ওয়াজিব। আর ধনী হলে কোনো একটি কুরবানী করলেই হবে। তবে দুটি কুরবানী করাই উত্তম।<br />[সূত্রঃ সুনানে বায়হাকী ৫/২৪৪, ইলাউস সুনান ১৭/২৮০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৯, কাযীখান ৩/৩৪৭]।<br /><br />কুরবানির পশু ক্রয় করার পর যদি তা হারিয়ে যায় কিংবা চুরি হয়ে যায় তাহলে ক্রেতা যদি এমন ব্যক্তি হয় যার উপর কুরবানী ওয়াজিব ছিলো তাহলে তাকে আরেকটা পশু ক্রয় করে কুরবানী করতে হবে। আর যদি ক্রেতা এমন ব্যক্তি যার উপর কুরবানী ওয়াজিব ছিলো না তাহলে তার জন্য আরেকটা ক্রয় করে কুরবানী করা জরুরী নয়।<br />[সূত্রঃ বাদায়েউস সানায়েঃ ৫/৬৬]।<br /><br />কুরবানীর পশু বাচ্চা দিলে ওই বাচ্চা জবাই না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম। যদি সদকা না করে তবে কুরবানীর পশুর সাথে বাচ্চাকেও জবাই করবে এবং গোশত সদকা করে দিবে।<br />[সূত্রঃ কাযীখান ৩/৩৪৯, আলমগীরী ৫/৩০১, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩]।<br /><br />যদি কোন ধনী ব্যক্তি মান্নত করে, আমার যদি অমুক কাজটা হয় তাহলে আমি আল্লাহর ওয়াস্তে একটা পশু কুরবানী দেবো। তাহলে তার উপর দুইটা কুরবানী ওয়াজিব হবে। একটা মান্নত কারণে আরেকটা ধনী হওয়ার কারণে।<br />[সূত্রঃ আদ দুররুল মুখতার মায়া শামীঃ ৬/৩৩২ কেফায়াতুল মুফতীঃ ৮/১৯৭]।<br /><br />যদি কোন ব্যক্তি মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করে তাহলে তার হুকুম হলো, যদি মৃত ব্যক্তি ওসীয়ত করে যায় এবং তার রেখে যাওয়া সম্পদের একতৃতীয়াংশ থেকে তা আদায় করা সম্ভব হয় তাহলে মৃতের পক্ষ থেকে ওয়ারিসদের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। তখন সমস্ত গোশ্ত সদকা করে দিতে হবে। আর যদি ওসীয়ত না করে যায় অথবা করেছে কিন্তু তার রেখে যাওয়া সম্পদের একতৃতীয়াংশ থেকে কুরবানী করা সম্ভব না। তাহলে এমতাবস্থায় মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করা জায়েয। তখন সে কুরবানির গোশ্তগুলো অন্য কুরবানির মত ধনী গরীব এবং কুরবানী দাতা সহ সবাই খেতে পারবে।<br />[সূত্রঃ খানিয়া মায়া হিন্দিয়াঃ ৩/৩৫২ ফাতওয়ায়ে শামীঃ ৬/৩৩৫]।<br /><br />যাদের একলা কুরবানী দেওয়ার ক্ষমতা নাই কিন্তু ইচ্ছা আছে তাদের প্রতি পরামর্শ-<br /><br />কুরবানী করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যারা সামর্থ না থাকায় কুরবানী করতে পারেন না তাদের কুরবানী করার উপায়ঃ<br />যে সকল লোক এককভাবে কুরবানী দিতে অক্ষম বা যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় অথচ তারা কিছু লোক মিলে পশু কিনে যবেহ করে গোশত বণ্টন করে অথবা হাটবাজার থেকে গোশত কিনে খেয়ে থাকে। এ সকল লোকেরা যদি ইচ্ছে করে তবে তারাও কুরবানীর ফযীলত ও ছওয়াব লাভ করতে পারে। এ সকল ব্যক্তিদের করণীয় হচ্ছেঃ-<br />তারা হাটবাজার থেকে গোশত না কিনে বরং কিছু লোক মিলে কুরবানীর পশু কিনে এক বা একাধিক নামে কুরবানী করতে পারে।<br /><br />যেহেতু কুরবানীর পশু উট, গরু ও মহিষে ৭ নাম এবং দুম্বা, মেষ বা ভেড়া, বকরী, খাসীতে ১ নাম দেয়ার হুকুম রয়েছে।<br /><br />তাই যদি ৪০ জন ব্যক্তি মিলে ১টি উট, গরু বা মহিষ কিনে ৭ নামে বা তার থেকে কম নামে কুরবানী করে গোশত বণ্টন করে নেয়, তাতেও কুরবানী শুদ্ধ হবে।<br /><br />তদ্রুপ ১টি খাসী তিনজনে মিলে খরীদ করে, যদি ১ নামে কুরবানী করে গোশত বণ্টন করে নেয়, তবে সে কুরবানীও শুদ্ধ হবে।<br /><br />তবে স্মরণীয় যে, যারা শরীক হয়ে এ ধরণের কুরবানী দিবে তারা প্রত্যেকে চাইবে যে, নিজেদের নামে কুরবানী দিয়ে কুরবানীর ফযীলত হাছিল করতে। আর উট, গরু ও মহিষে সাত নামের বেশি এবং দুম্বা, ছাগল ও ভেড়াতে এক নামের বেশি দেয়া যায় না। কার নাম দিবে বা কার নাম বাদ দিবে, এ নিয়ে ঝগড়া-ফ্যাসাদ ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হবে।<br /><br />এছাড়াও যদি কারো পক্ষ থেকে দেয়া হয়, অন্য কেউ প্রকাশ্যে আপত্তি না করলেও অন্তরে সম্মতি না থাকে তাহলে কুরবানী শুদ্ধ হবেনা। কারণ একজনের টাকা দিয়ে অন্যজনের পক্ষ থেকে কুরবানী করলে কুরবানী শুদ্ধ হবেনা টাকাওয়ালার সম্মতি ব্যতিত।<br /><br />সেজন্য নাম দেয়ার ক্ষেত্রে উত্তম তরীক্বা ও আদব হচ্ছে, যদি কুরবানীর পশু এক নামে কুরবানী করা হয়, তাহলে মহান আল্লাহ পাক এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে কুরবানী করে সকল শরীক সমানভাবে গোশত বণ্টন করে নিবে। এতে যেমন তাদের কুরবানী নিশ্চিতরূপে মহান আল্লাহ পাক এর দরবার শরীফ-এ কবুল ও মঞ্জুর হবে, সাথে সাথে তাদের জন্য ফযীলত, বারাকাত, ফুয়ুজাত, নিয়ামত, রহমত, মাগফিরাত, নাযাত সর্বপোরি মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খাছ সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করার উসীলাও হবে।<br /><br />যে সকল প্রাণীতে সাত নামে কুরবানী দেয়ার বিধান রয়েছে, তাতে প্রথমতঃ এক নাম মহান আল্লাহ পাক এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে এবং বাকী ছয় নাম পর্যায়ক্রমে<br /><br />- হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সম্মানিত আব্বা-আম্মা আলাইহিমাস সালামদের পক্ষ থেকে,<br />- হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম তাঁদের পক্ষ থেকে।<br />- হযরত আহলু বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামদের পক্ষ থেকে।<br />এছাড়াও<br />- হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম।<br />- হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম।<br />- হযরত হাজেরা আলাইহাস সালাম।<br />- হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম।<br />- হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম। ও<br />- হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম।<br />তাঁদের পক্ষ থেকে ইচ্ছে মুতাবিক কুরবানী দিতে পারে।<br /><br />তাহলে এতে কোন ফিৎনা পয়দা হবেনা, সাথে সাথে কুরবানীর দিন মহান আল্লাহ পাক এর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় আমল হচ্ছে- কুরবানী করা, তাও আদায় হলো। আর কুরবানীর বরকতময় গোশতও লাভ হলো। সাথে সাথে গুণাহর কাজ থেকেও বেঁচে গেলো। সুবহানাল্লাহ!<br /><br />একইভাবে যে সকল প্রাণীতে ১ জনের নাম দেয়া যায়, সেক্ষেত্রেও উপরোক্ত নিয়মে তাঁদের যে কোনজনের পক্ষ থেকে কুরবানী করে শরীকদাতারা সমভাবে গোশত বন্টন করে দিতে পারেন।<br /><br />মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে কুরবানীর দিন তাঁর প্রিয় আমল কুরবানী করার তাওফীক দান করুন। আমীন।<br />______________</div>

কোরবানীর হুকুম ও নেসাব

কুরবানির হুকুম ও কুরবানির নেসাব। হানাফী মাযহাবের মত অনুযায়ী মুকীম, বালেগ, সুস্থ মস্তিস্কের মুসলমানের জন্যে যদি তার কাছে কুরবানির দিন সমূহে ন...

Read more »

ভাগে কোরবানী জায়েজ

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">শরীকানা বা ভাগে কুরবানী শুধু মুসাফিরের জন্য নাকী মুকিমের জন্যও প্রযোজ্য সে সম্পর্কে।<br /><br />আমাদের সমাজে লামাযহাবীরা বলে থাকে শুধু মাত্র মসাফির অবস্থায় এক গরুতে শরীকানা কুরবানী করা যাবে; মুকীম অবস্থায় করা যাবেনা। মুকীম অবস্থায় এক গরুতে একজনের বেশী কুরবানী করতে পারবেনা। অথচ তাদের এ বক্তব্য সালাফের মতামতের পরিপূর্ণ বিরোধী। তাদের মত এরূপ উদ্ভট মন্তব্য এর আগে কেউ করেনি। না কোন মুহাদ্দীস না কোন ইমাম।<br />মুহাদ্দীসগণের নীতি হচ্ছে হাদীস দ্বারা তারা যা বুঝেছেন সেটাই তারা শিরোনামে উল্লেখ করেন। তারা যে সকল হাদীস দিয়ে শরীকানা কুরবানী শুধুমাত্র মুকীমের জন্য খাস করে, সেই হাদীসগুলো আনার ক্ষেত্রে মুহাদ্দীসগণ কোথাও ‘সফরে কুরবানী’ বা এই হাদীস সফরের সাথে খাস এমন কথা কোথাও বলেন নি।<br /><br />এখন আমরা হাদীসটি দেখি,<br /><br />عن ابن عباس قال: كنا مع رسول الله صلى الله عليه و سلم في سفرِ فحضر الأضحى، فاشتركنا في البقرة سبعة و في البعير عشرة. [رواه الترمذي والنسائي وابن ماجه]<br /><br />হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমরা সফরে ছিলাম। এমতাবস্থায় কুরবানীর সময় উপস্থিত হল। তাই আমরা একটি গাভীতে সাত জন শরীক হলাম এবং উটে দশ জন।<br />[সূত্রঃ তিরমিযী, হাদীস ১৫৩৭; নাসাঈ, হাদীস ৪৪০৪; ইবনু মাজাহ, হাদীস ৩১৩১/ মুসনাদ আহমদ ৩/৩০৩]।<br /><br />হাদীস সম্পর্কে মুহাদ্দীসদের মতামত<br />__________<br />মুহাদ্দিসগণ যেহেতু তাঁদের হাদীস গ্রন্থে যেই সব শিরোনাম/অনুচ্ছেদ নির্ধারণ করেন, তাঁদের ফিক্হ তথা বুঝ হিসাবে । তাই আমরা এখানে দেখবো যে, উপরোক্ত হাদীসটি বিভিন্ন মুহাদ্দিসগণ কোন নামের অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন বা তাঁরা সেই অনুচ্ছেদের শিরোনাম কী নির্ণয় করেছেন, যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারব সেটা কোন বিষয়ের হাদীস।<br /><br />১- ইমাম তিরমিযী (রহ) হাদীসটি যেই অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন, তার শিরোনাম হচ্ছে, ‘باب ما جاء في الاشتراك في الأضحية’। অর্থাৎ কুরবানীতে শরীক হওয়ার অনুচ্ছেদ। অতঃপর তিনি হুদায়বিয়ায় উট ও গরুতে ৭ জন করে শরীক হয়ে কুরবানী করার আর একটি হাদীস বর্ণনা করেন এবং বলেন:<br /><br />والعمل على هذا عند أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم و غيرهم.<br /><br />‘এর উপর সাহাবা এবং অন্যান্য আহলে ইলমগণের আমল রয়েছে’।<br />এই বাক্যটির ব্যাখ্যায় লামজহাবী আলেম মুবারকপূরী বলেন:<br /><br />قوله (والعمل على هذا عند أهل العلم إلخ) أي على جواز اشتراك السبعة في البعير والبقرة في الهدي والأضحية- تحفة الأحوذي ৫/ ৭৩<br /><br />‘অর্থাৎ হাদ্ঈ ও কুরবানীর উট ও গরুতে সাত জন শরীক হওয়ার বৈধতার ব্যপারে (আমল রয়েছে)’।<br />[সূত্রঃ তুহ্ফাতুল আহ্ ওয়াযী,৫/৭৩]।<br /><br />হযরত ইবনে মাসঊদ রা. থেকে এক বর্ণনা পাওয়া যায়,<br /><br />308 – قال: وثنا يوسف بن أبي يوسف عن أبيه عن أبي حنيفة، عن حماد، عن إبراهيم، عن ابن مسعود رضي الله عنه أنه قال: «البقرة تجزئ في الأضحى عن سبعة أناس» الآثار لأبي يوسف (ص: 62)<br /><br />হযরত আবু ইউসূফ র. ইমাম আবু হানীফার সূত্রে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউস রাযি. এর বক্তব্য বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, কুরবানীর ক্ষেত্রে একটি গরু সাতজন ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট।<br />[সূত্রঃ কিতাবুল আসার, পৃ. ৬২, হাদীস ৩০৮]।<br />এই আসারে মুকিম নাকী মুসাফির পার্থক্য না করেই সাতজন শরীক হবার কথা এসেছে।<br /><br />২- ইমাম নাসাঈ যেই অনুচ্ছেদে হাদীসটি নিয়ে আসেন, তার নামকরণ করা হয় এই ভাবে: ‘باب ما تجزئ عنه البدنة في الضحايا’। অর্থ, অনুচ্ছেদ, কুরবানীতে একটি উট কত জনের পক্ষে যথেষ্ট’।<br />[সূত্রঃ সুনানে নাসাঈ, , অনুচ্ছেদ নং ১৫]।<br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh8id9NZKNwC8ytXx81rTw4RafJFasBxF11IrOuIobP9SB7z3uPJqoPlS6Kum2F8_a0_ZutyM0aqfOx1wjfGaHLR_d09A6BvbaClGaXA5BzXKuROqPSOz0XWnLLhtdjCciVHWufW3rNQvCn/s1600/Korbani-4jpeg.jpeg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="215" data-original-width="270" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh8id9NZKNwC8ytXx81rTw4RafJFasBxF11IrOuIobP9SB7z3uPJqoPlS6Kum2F8_a0_ZutyM0aqfOx1wjfGaHLR_d09A6BvbaClGaXA5BzXKuROqPSOz0XWnLLhtdjCciVHWufW3rNQvCn/s1600-rw/Korbani-4jpeg.jpeg" /></a></div><br /><br />৩- ইবনু মাজাহ আযাহী/কুরবানী অধ্যায়ে যেই অনুচ্ছেদে হাদীসটি উল্লেখ করেন,তার শিরোনাম এইরূপ: ‘باب عن، كم تجزئ البدنة والبقرة’। অর্থ, অনুচ্ছেদ, একটি গরু ও উট কত জনের পক্ষে যথেষ্ট’।<br />[সূত্রঃ সুনানে ইবনে মাজাহ অনুচ্ছেদ নং ২৬/৫]।<br /><br />৪- আবু দাউদে অনুচ্ছেদের নামকরণ করেছেন, باب في البقر والجزور عن كم تجزئ “গরু ও উট কত জনের পক্ষে যথেষ্ট” তিনি যাবের রা. এর সূত্রে বর্ণনা করেন।<br /><br />ইমাম নববী (রঃ) বলেন,<br /><br />وأجمعوا على أن الشاة لا يجوز الاشتراك فيها وفي هذه الأحاديث أن البدنة تجزي عن سبعة والبقرة عن سبعة وتقوم كل واحدة مقام سبع شياه- شرح النووي على مسلم (9/ 67)<br /><br />অর্থাৎ, এ বিষয়ে উম্মাতের উলামাগণ একমত যে, ছাগল দিয়ে শরীকানা কুরবানী বৈধ নয়, তবে একটি উটে সাতজন অংশীদার হয়ে এবং একটি গরুতেও সাতজন অংশীদার হয়ে যদি কুরবানী করে তা হলে তা শরীয়ত সম্মত, কারণ উট ও গরুর প্রতিটি ভাগ একটি ছাগলের সমতুল্য।<br />[সূত্রঃ শরহে মুসলিম ৯/৬৭]।<br /><br />হুদাইবিয়ার ঘটনায় সাহাবিগণ আল্লাহর রাসূলের সাথে একটি উট ও গরু সাত জনের পক্ষে কুরবানী করেন মর্মে যেই হাদীসটি মুসলিম সহ অন্যান্য মুহাদ্দিস বর্ণনা করেন। সেই সম্পর্কে সাহেবে আউনুল মা’বুদ বলেন:<br /><br />قال في السبل دل الحديث على جواز الاشتراك في البدنة والبقرة وأنهما يجزيان عن سبعة وهذا في الهدي ويقاس عليه الأضحية بل قد ورد فيها نص -عون المعبود وحاشية ابن القيم (7/ 362)<br /><br />‘সুবুলে বলা হয়েছেঃ হাদীসটি উট ও গরুতে শরীক হওয়া জায়েজের প্রমাণ এবং উভয়ে সাত জনের পক্ষে যথেষ্ট। এটা হাদঈর ক্ষেত্রে এবং কুরবানীকে এর উপর কিয়াস করা হবে; বরং কুরবানীর সম্পর্কে নাস বা দলীল এসেছে’….।<br />[সূত্রঃ আউনুল মা’বূদ,৭/৩৬২]।<br />অতঃপর তিনি ইবনে আব্বাস (রাযি:) থেকে বর্ণিত হাদীসটি উল্লেখ করেন, যাতে গরুতে ৭ জন এবং উটে ১০ জন শরীক হওয়ার বর্ণনা এসেছে।<br /><br />মুহাদ্দিসগণের উপরোক্ত অনুচ্ছেদ সমূহ ও বিদগ্ধ উলামাগণের ব্যাখ্যানুযায়ী আমরা একথা স্পষ্ট রূপে বুঝতে সক্ষম যে, হাদীসটি থেকে মুকীম ও মুসাফিরের মধ্যে পার্থক্য করা ছাড়াই তাঁরা গরু ও উটের কুরবানীতে শরীক হওয়ার বৈধতা বুঝেছেন। অর্থাৎ হাদীসটি কেবল সফর অবস্থায় কুরবানীতে শরীক হওয়ার সম্পর্কে নির্দিষ্ট, এমন নয়। তাই তাঁদের কেউই এটা সফরের সাথে নির্দিষ্ট, এমন কোন অনুচ্ছেদ লেখেন নি আর না ব্যাখ্যাকারীগণ সেই দিকে ইঙ্গিত করেছেন।<br /><br />ইমাম ও ফুকাহাদের মতামত<br />____________<br />ইবনে হাযম তার কিতাবে উল্লেখ করেন,<br /><br />وقال أبو حنيفة، وسفيان الثوري، والأوزاعي، والشافعي، وأحمد، وإسحاق، وأبو ثور، وأبو سليمان: تجزئ البقرة، أو الناقة عن سبعة فأقل أجنبيين وغير أجنبيين يشتركون فيها، ولا تجزئ عن أكثر، ولا تجزئ الشاة إلا عن واحد.- المحلى بالآثار (6/ 45)<br /><br />ঈমামে আযম আবু হানীফা, সুফ্ইয়ান সাওরী, আওযায়ী, শাফেয়ী, আহমদ, ইসহাক্ব, আবু সাউর এবং আবু সুলায়মান বলেন: একটি গরু কিংবা একটি উট সাত কিংবা তার থেকে কম সংখ্যকের পক্ষে যথেষ্ট, তারা পারস্পারিক পরিচিত হোক অথবা না হোক। তারা তাতে শরীক হতে পারে, তবে এর থেকে বেশী সংখ্যার পক্ষে যথেষ্ট হবে না’।<br />[সূত্রঃ আল্ মুহাল্লা, ইবনু হায্ম,৬/৪৫ পৃঃ]।<br /><br />ইবনু কুদামাহ (রহ) তাঁর প্রসিদ্ধ মুগনী গ্রন্থে ১৭৬৮ নং মাসআলার ব্যাখ্যায় বলেন:<br /><br />وجملته أنه يجوز أن يشترك في التضحية بالبدنة والبقرة سبعة، واجبا كان أو تطوعا، سواء كانوا كلهم متقربين -المغني لابن قدامة (9/ 458)<br /><br />ফলকথা উট ও গরুতে সাত জন শরীক হয়ে কুরবানী দেওয়া বৈধ। সেটা ওয়াজিব হোক কিংবা নফল। তারা সকলে নৈকট্যের আশাবাদী হোক কিংবা কেউ নৈকট্যের আর অন্য কেউ গোশতের। এটাই শাফেয়ী বলেন। মালেক বলেন: হাদ্ঈতে শরীক হওয়া জায়েজ নয়’।<br />[সূত্রঃ আল মুগনী, ১৩/৩৯২]।<br /><br />ইনবু হায্ম (রহ) তাঁর আল্ মুহাল্লা গ্রন্থে ৯৮৪ নং মাস্আলা বর্ণনায় বলেন:<br /><br />[مسألة يشترك في الأضحية الواحدة الجماعة]<br />984 – مسألة: وجائز أن يشترك في الأضحية الواحدة أي شيء كانت الجماعة من أهل البيت وغيرهم، وجائز أن يضحي الواحد بعدد من الأضاحي «ضحى رسول الله – صلى الله عليه وسلم – بكبشين أملحين» كما ذكرنا آنفا ولم ينه عن أكثر من ذلك، والأضحية فعل خير، فالاستكثار من الخير حسن. -المحلى بالآثار (6/ 45)<br /><br />‘একটি কুরবানীতে শরীক হওয়া বৈধ, সেই দলটি একটি বাড়ির সদস্য হোক কিংবা বিভিন্ন বাড়ির এবং এক জনের একাধিক কুরবানী করাও বৈধ, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুটি ভেড়া কুরবানী করেন যেমন একটু আগে বর্ণনা করেছি এবং তিনি(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) এর অতিরিক্ত করতে নিষেধ করেননি। কুরবানী একটি সৎ কাজ। আর বেশী বেশী সৎ কাজ করা উত্তম।<br /><br />উট কিংবা গরুর ভাগে শরীক হয়ে কুরবানী দেয়া সম্পর্কে সউদী স্থায়ী উলামা পরিষদের ফাতওয়াঃ<br /><br />لفتوى رقم ( 2416 )<br />س: هل يجوز الاشتراك في الأضحية، وكم عدد المسلمين<br />الذين يشتركون في الأضحية، وهل يكونون من أهل بيت واحد، وهل الاشتراك في الأضحية بدعة أم لا؟<br />ج: يجوز أن يضحي الرجل عنه وعن أهل بيته بشاة، والأصل في ذلك ما ثبت عنه صلى الله عليه وسلم أنه كان يضحي بالشاة الواحدة عنه وعن أهل بيته، متفق عليه، وما رواه مالك ، وابن ماجه ، والترمذي وصححه، عن عطاء بن يسار قال: سألت أبا أيوب الأنصاري: كيف كانت الضحايا فيكم على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ قال: كان الرجل في عهد النبي صلى الله عليه وسلم يضحي بالشاة عنه وعن أهل بيته، فيأكلون ويطعمون، حتى تباهى الناس فصاروا كما ترى .<br />وتجزئ البدنة والبقرة عن سبعة، سواء كانوا من أهل بيت<br />واحد أو من بيوت متفرقين، وسواء كان بينهم قرابة أو لا؛ لأن النبي صلى الله عليه وسلم أذن للصحابة في الاشتراك في البدنة والبقرة كل سبعة في واحدة، ولم يفصل ذلك. والله أعلم.<br />وبالله التوفيق وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه وسلم.<br />প্রশ্ন: কুরবানীতে শরীক হওয়া জায়েজ কি, মুসলিমদের কত সংখ্যক লোক তাতে শরীক হতে পারে, তারা কি এক পরিবারের হবে এবং কুরবানীতে শরীক হওয়ার বিষয়টি কি বিদআত?<br />উত্তর: [তারা প্রথমে একটি ছাগলের কুরবানী, যা একটি বাড়ির সদস্যদের পক্ষে যথেষ্ট তা উল্লেখ করেন, অতঃপর বলেন] এবং একটি উট ও একটি গরু সাত জনের পক্ষে যথেষ্ট। সেই সাত জন একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হোক কিংবা বিভিন্ন পরিবারের, তাদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকুক কিংবা না থাকুক; কারণ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবিদের মধ্যে প্রত্যেক সাত জনকে একটি উটে ও গরুতে শরীক হওয়ার অনুমতি দেন। ওয়াল্লাহু আ’লাম।<br />[সূত্রঃ ফাতাওয়াল্ লাজনা আদ্দায়িমাহ,১১/৪০১-৪০২,ফাতওয়া নং ২৪১৬]।<br /><br />এই মত পোষণকারীদের বলবো:<br />১- কুরআন-সুন্নাহকে বুঝার ব্যাপারে সালাফী নীতি হচ্ছে, তা ঐভাবে বুঝা যে ভাবে আমাদের পূর্বসুরীগণ বুঝেছেন। এই নীতির আলোকে আমরা উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে তাঁদের মতামত ভাল ভাবে জানতে পারছি যে, তাঁরা কেউই এই মত প্রকাশ করেন নি যে, ভাগা কুরবানীর বিষয়টি মুসাফিরের সাথে সম্পৃক্ত; বরং তারা বিষয়টি আম/ব্যাপক হিসাবে বুঝেছেন এবং তা মুক্বীমদের জন্যেও প্রযোজ্য মনে করেছেন। আর তারা যেভাবে বুঝতেন সেভাবে বুঝাই উত্তম।<br /><br />২- যদি এই কারণে শরীকানায় কুরবানী করাকে সফরের সাথে খাস করা হয় যে, এটা সফরে ঘটেছিল মুকীম অবস্থায় ঘটেনি। তাহলে বলবো: নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন কাজ সফরে সংঘটিত হলে সেটা কি সফরের সাথে খাস হয়ে যায়, না বিধানটি আম/অনির্দিষ্ট থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত তা দলীলের মাধ্যমে খাস না করা হয়?<br />আসলে নবী কারিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) এর কথা, কাজ ও সম্মতি অনির্দিষ্ট অর্থেই ব্যবহৃত হয়, যতক্ষণে নির্দিষ্টের প্রমাণ না পাওয়া যায়। তাই উসূলে ফিক্হের একটি মূল কায়েদা হচ্ছে ‘‘আল্ ইবরাতু বি উমূমিল্ লাফযি বি খসূসিস্ সাবাব’ অর্থ, শব্দের অনির্দিষ্ট বিবেচ্য নির্দিষ্ট কারণ নয়’। অর্থাৎ অনির্দিষ্ট তথা আম শব্দ ও বিধান অনির্দিষ্ট হিসাবেই প্রযোজ্য হবে, যদিও বিধানটি বা শব্দটি কোন নির্দিষ্ট কারণে বলা হয়ে থাকে। তাই কুরবানীতে শরীক হওয়ার ঘটনাটি যদিও একটি খাস অবস্থা অর্থাৎ সফরাবস্থায় ঘটেছে কিন্তু সেটা সেই অবস্থার সাথে খাস/নির্দিষ্ট হবে না বরং আম/অনির্দিষ্ট হিসাবে প্রযোজ্য হবে।<br /><br />৩- সফর অবস্থায় ভাগা কুরবানীকে খাসকারী সম্মানিত লেখক বলেন: ‘বিগত বিদ্বানগণের যুগে সম্ভবত: মুক্বীম<br />অবস্থায় ভাগা কুরবানীর প্রশ্ন উত্থাপিত হয় নি’। [সূত্রঃ মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীকা/১৯] আমি বলবো: উত্থাপিত হয়েছে যেমন হাদ্ঈ ও উযহিয়্যার হাদীসগুলি দ্বারা প্রমাণিত। তাছাড়া প্রাচীন ফুকাহাগণ এই মর্মে মতামত পেশ করেছেন যে, উত্তম কুরবানী কি? তাতে তাঁরা উট-গরুর ভাগের কথা উল্লেখ করেছেন। ইবনু কুদামাহ বলেন: ‘সর্ব্বোত্তম কুরবানী হচ্ছে উটের কুরবানী, অতঃপর গরু, তার পর ছাগল, তারপর উটের অংশ তারপর গরুর অংশ। এটা আবু হানীফা ও শাফেয়ীর মন্তব্য’।<br />[দেখুন,মুগনী,১৩/৩৬৬]।<br /><br />৪- উপরোক্ত লেখক মুকীম অবস্থায় শরীকানায় কুরবানী চলবে না মর্মে একটি যুক্তি পেশ করে লিখেন: ‘এক্ষণে যদি আমরা ভাগা কুরবানী করি, তাহলে পশুর হাড়-হাড্ডি ও গোশত ভাগ করতে পারবো, কিন্তু তার জীবন ভাগ করতে পারব কি’? [মাসায়েলে কুরবানী/২০] আমি বলবো: এটি একটি কেয়াস। এর প্রয়োজন এই স্থানে তেমন নেই। তবে যেহেতু তিনি নিজেই এটা স্বীকার করেন যে, সফর অবস্থায় একটি গরু বা উটে সাত জন শরীক হতে পারে, সেহেতু বলা উচিৎ হবে যে, যদি সফর অবস্থায় একটি পশুর জীবন ৭ ভাগ হতে পারে, তো মুকীম অবস্থায় অসুবিধা কোথায়?<br />______________</div>

ভাগে কোরবানী জায়েজ

শরীকানা বা ভাগে কুরবানী শুধু মুসাফিরের জন্য নাকী মুকিমের জন্যও প্রযোজ্য সে সম্পর্কে। আমাদের সমাজে লামাযহাবীরা বলে থাকে শুধু মাত্র মসাফির অবস...

Read more »

ভাগে কোরবানী জায়েজ

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"> শরীকানা বা ভাগে কুরবানী শুধু মুসাফিরের জন্য নাকী মুকিমের জন্যও প্রযোজ্য সে সম্পর্কে।<br /> <br /> আমাদের সমাজে লামাযহাবীরা বলে থাকে শুধু মাত্র মসাফির অবস্থায় এক গরুতে শরীকানা কুরবানী করা যাবে; মুকীম অবস্থায় করা যাবেনা। মুকীম অবস্থায় এক গরুতে একজনের বেশী কুরবানী করতে পারবেনা। অথচ তাদের এ বক্তব্য সালাফের মতামতের পরিপূর্ণ বিরোধী। তাদের মত এরূপ উদ্ভট মন্তব্য এর আগে কেউ করেনি। না কোন মুহাদ্দীস না কোন ইমাম।<br /> মুহাদ্দীসগণের নীতি হচ্ছে হাদীস দ্বারা তারা যা বুঝেছেন সেটাই তারা শিরোনামে উল্লেখ করেন। তারা যে সকল হাদীস দিয়ে শরীকানা কুরবানী শুধুমাত্র মুকীমের জন্য খাস করে, সেই হাদীসগুলো আনার ক্ষেত্রে মুহাদ্দীসগণ কোথাও ‘সফরে কুরবানী’ বা এই হাদীস সফরের সাথে খাস এমন কথা কোথাও বলেন নি।<br /> <br /> এখন আমরা হাদীসটি দেখি,<br /> <br /> عن ابن عباس قال: كنا مع رسول الله صلى الله عليه و سلم في سفرِ فحضر الأضحى، فاشتركنا في البقرة سبعة و في البعير عشرة. [رواه الترمذي والنسائي وابن ماجه]<br /> <br /> হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমরা সফরে ছিলাম। এমতাবস্থায় কুরবানীর সময় উপস্থিত হল। তাই আমরা একটি গাভীতে সাত জন শরীক হলাম এবং উটে দশ জন।<br /> [সূত্রঃ তিরমিযী, হাদীস ১৫৩৭; নাসাঈ, হাদীস ৪৪০৪; ইবনু মাজাহ, হাদীস ৩১৩১/ মুসনাদ আহমদ ৩/৩০৩]।<br /> <br /> হাদীস সম্পর্কে মুহাদ্দীসদের মতামত<br /> __________<br /> মুহাদ্দিসগণ যেহেতু তাঁদের হাদীস গ্রন্থে যেই সব শিরোনাম/অনুচ্ছেদ নির্ধারণ করেন, তাঁদের ফিক্হ তথা বুঝ হিসাবে । তাই আমরা এখানে দেখবো যে, উপরোক্ত হাদীসটি বিভিন্ন মুহাদ্দিসগণ কোন নামের অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন বা তাঁরা সেই অনুচ্ছেদের শিরোনাম কী নির্ণয় করেছেন, যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারব সেটা কোন বিষয়ের হাদীস।<br /> <br /> ১- ইমাম তিরমিযী (রহ) হাদীসটি যেই অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন, তার শিরোনাম হচ্ছে, ‘باب ما جاء في الاشتراك في الأضحية’। অর্থাৎ কুরবানীতে শরীক হওয়ার অনুচ্ছেদ। অতঃপর তিনি হুদায়বিয়ায় উট ও গরুতে ৭ জন করে শরীক হয়ে কুরবানী করার আর একটি হাদীস বর্ণনা করেন এবং বলেন:<br /> <br /> والعمل على هذا عند أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم و غيرهم.<br /> <br /> ‘এর উপর সাহাবা এবং অন্যান্য আহলে ইলমগণের আমল রয়েছে’।<br /> এই বাক্যটির ব্যাখ্যায় লামজহাবী আলেম মুবারকপূরী বলেন:<br /> <br /> قوله (والعمل على هذا عند أهل العلم إلخ) أي على جواز اشتراك السبعة في البعير والبقرة في الهدي والأضحية- تحفة الأحوذي ৫/ ৭৩<br /> <br /> ‘অর্থাৎ হাদ্ঈ ও কুরবানীর উট ও গরুতে সাত জন শরীক হওয়ার বৈধতার ব্যপারে (আমল রয়েছে)’।<br /> [সূত্রঃ তুহ্ফাতুল আহ্ ওয়াযী,৫/৭৩]।<br /> <br /> হযরত ইবনে মাসঊদ রা. থেকে এক বর্ণনা পাওয়া যায়,<br /> <br /> 308 – قال: وثنا يوسف بن أبي يوسف عن أبيه عن أبي حنيفة، عن حماد، عن إبراهيم، عن ابن مسعود رضي الله عنه أنه قال: «البقرة تجزئ في الأضحى عن سبعة أناس» الآثار لأبي يوسف (ص: 62)<br /> <br /> হযরত আবু ইউসূফ র. ইমাম আবু হানীফার সূত্রে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউস রাযি. এর বক্তব্য বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, কুরবানীর ক্ষেত্রে একটি গরু সাতজন ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট।<br /> [সূত্রঃ কিতাবুল আসার, পৃ. ৬২, হাদীস ৩০৮]।<br /> এই আসারে মুকিম নাকী মুসাফির পার্থক্য না করেই সাতজন শরীক হবার কথা এসেছে।<br /> <br /> ২- ইমাম নাসাঈ যেই অনুচ্ছেদে হাদীসটি নিয়ে আসেন, তার নামকরণ করা হয় এই ভাবে: ‘باب ما تجزئ عنه البدنة في الضحايا’। অর্থ, অনুচ্ছেদ, কুরবানীতে একটি উট কত জনের পক্ষে যথেষ্ট’।<br /> [সূত্রঃ সুনানে নাসাঈ, , অনুচ্ছেদ নং ১৫]।<br /> <div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"> <a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi2qUIFvE-zeS4KcLJU376LX2TajPc87AvPcxQoHy63OTRCAEre7aZ3eOMwEZI0WSX9QvrEO_kbBDsOgB_QBg6C6XFT_bz_rOaMt3y-87ZkU5VieKRYtXrXxVO4q3PQnFGwa-712PCxF7fA/s1600/Korbani-4jpeg.jpeg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="215" data-original-width="270" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi2qUIFvE-zeS4KcLJU376LX2TajPc87AvPcxQoHy63OTRCAEre7aZ3eOMwEZI0WSX9QvrEO_kbBDsOgB_QBg6C6XFT_bz_rOaMt3y-87ZkU5VieKRYtXrXxVO4q3PQnFGwa-712PCxF7fA/s1600-rw/Korbani-4jpeg.jpeg" /></a></div> <br /> <br /> ৩- ইবনু মাজাহ আযাহী/কুরবানী অধ্যায়ে যেই অনুচ্ছেদে হাদীসটি উল্লেখ করেন,তার শিরোনাম এইরূপ: ‘باب عن، كم تجزئ البدنة والبقرة’। অর্থ, অনুচ্ছেদ, একটি গরু ও উট কত জনের পক্ষে যথেষ্ট’।<br /> [সূত্রঃ সুনানে ইবনে মাজাহ অনুচ্ছেদ নং ২৬/৫]।<br /> <br /> ৪- আবু দাউদে অনুচ্ছেদের নামকরণ করেছেন, باب في البقر والجزور عن كم تجزئ “গরু ও উট কত জনের পক্ষে যথেষ্ট” তিনি যাবের রা. এর সূত্রে বর্ণনা করেন।<br /> <br /> ইমাম নববী (রঃ) বলেন,<br /> <br /> وأجمعوا على أن الشاة لا يجوز الاشتراك فيها وفي هذه الأحاديث أن البدنة تجزي عن سبعة والبقرة عن سبعة وتقوم كل واحدة مقام سبع شياه- شرح النووي على مسلم (9/ 67)<br /> <br /> অর্থাৎ, এ বিষয়ে উম্মাতের উলামাগণ একমত যে, ছাগল দিয়ে শরীকানা কুরবানী বৈধ নয়, তবে একটি উটে সাতজন অংশীদার হয়ে এবং একটি গরুতেও সাতজন অংশীদার হয়ে যদি কুরবানী করে তা হলে তা শরীয়ত সম্মত, কারণ উট ও গরুর প্রতিটি ভাগ একটি ছাগলের সমতুল্য।<br /> [সূত্রঃ শরহে মুসলিম ৯/৬৭]।<br /> <br /> হুদাইবিয়ার ঘটনায় সাহাবিগণ আল্লাহর রাসূলের সাথে একটি উট ও গরু সাত জনের পক্ষে কুরবানী করেন মর্মে যেই হাদীসটি মুসলিম সহ অন্যান্য মুহাদ্দিস বর্ণনা করেন। সেই সম্পর্কে সাহেবে আউনুল মা’বুদ বলেন:<br /> <br /> قال في السبل دل الحديث على جواز الاشتراك في البدنة والبقرة وأنهما يجزيان عن سبعة وهذا في الهدي ويقاس عليه الأضحية بل قد ورد فيها نص -عون المعبود وحاشية ابن القيم (7/ 362)<br /> <br /> ‘সুবুলে বলা হয়েছেঃ হাদীসটি উট ও গরুতে শরীক হওয়া জায়েজের প্রমাণ এবং উভয়ে সাত জনের পক্ষে যথেষ্ট। এটা হাদঈর ক্ষেত্রে এবং কুরবানীকে এর উপর কিয়াস করা হবে; বরং কুরবানীর সম্পর্কে নাস বা দলীল এসেছে’….।<br /> [সূত্রঃ আউনুল মা’বূদ,৭/৩৬২]।<br /> অতঃপর তিনি ইবনে আব্বাস (রাযি:) থেকে বর্ণিত হাদীসটি উল্লেখ করেন, যাতে গরুতে ৭ জন এবং উটে ১০ জন শরীক হওয়ার বর্ণনা এসেছে।<br /> <br /> মুহাদ্দিসগণের উপরোক্ত অনুচ্ছেদ সমূহ ও বিদগ্ধ উলামাগণের ব্যাখ্যানুযায়ী আমরা একথা স্পষ্ট রূপে বুঝতে সক্ষম যে, হাদীসটি থেকে মুকীম ও মুসাফিরের মধ্যে পার্থক্য করা ছাড়াই তাঁরা গরু ও উটের কুরবানীতে শরীক হওয়ার বৈধতা বুঝেছেন। অর্থাৎ হাদীসটি কেবল সফর অবস্থায় কুরবানীতে শরীক হওয়ার সম্পর্কে নির্দিষ্ট, এমন নয়। তাই তাঁদের কেউই এটা সফরের সাথে নির্দিষ্ট, এমন কোন অনুচ্ছেদ লেখেন নি আর না ব্যাখ্যাকারীগণ সেই দিকে ইঙ্গিত করেছেন।<br /> <br /> ইমাম ও ফুকাহাদের মতামত<br /> ____________<br /> ইবনে হাযম তার কিতাবে উল্লেখ করেন,<br /> <br /> وقال أبو حنيفة، وسفيان الثوري، والأوزاعي، والشافعي، وأحمد، وإسحاق، وأبو ثور، وأبو سليمان: تجزئ البقرة، أو الناقة عن سبعة فأقل أجنبيين وغير أجنبيين يشتركون فيها، ولا تجزئ عن أكثر، ولا تجزئ الشاة إلا عن واحد.- المحلى بالآثار (6/ 45)<br /> <br /> ঈমামে আযম আবু হানীফা, সুফ্ইয়ান সাওরী, আওযায়ী, শাফেয়ী, আহমদ, ইসহাক্ব, আবু সাউর এবং আবু সুলায়মান বলেন: একটি গরু কিংবা একটি উট সাত কিংবা তার থেকে কম সংখ্যকের পক্ষে যথেষ্ট, তারা পারস্পারিক পরিচিত হোক অথবা না হোক। তারা তাতে শরীক হতে পারে, তবে এর থেকে বেশী সংখ্যার পক্ষে যথেষ্ট হবে না’।<br /> [সূত্রঃ আল্ মুহাল্লা, ইবনু হায্ম,৬/৪৫ পৃঃ]।<br /> <br /> ইবনু কুদামাহ (রহ) তাঁর প্রসিদ্ধ মুগনী গ্রন্থে ১৭৬৮ নং মাসআলার ব্যাখ্যায় বলেন:<br /> <br /> وجملته أنه يجوز أن يشترك في التضحية بالبدنة والبقرة سبعة، واجبا كان أو تطوعا، سواء كانوا كلهم متقربين -المغني لابن قدامة (9/ 458)<br /> <br /> ফলকথা উট ও গরুতে সাত জন শরীক হয়ে কুরবানী দেওয়া বৈধ। সেটা ওয়াজিব হোক কিংবা নফল। তারা সকলে নৈকট্যের আশাবাদী হোক কিংবা কেউ নৈকট্যের আর অন্য কেউ গোশতের। এটাই শাফেয়ী বলেন। মালেক বলেন: হাদ্ঈতে শরীক হওয়া জায়েজ নয়’।<br /> [সূত্রঃ আল মুগনী, ১৩/৩৯২]।<br /> <br /> ইনবু হায্ম (রহ) তাঁর আল্ মুহাল্লা গ্রন্থে ৯৮৪ নং মাস্আলা বর্ণনায় বলেন:<br /> <br /> [مسألة يشترك في الأضحية الواحدة الجماعة]<br /> 984 – مسألة: وجائز أن يشترك في الأضحية الواحدة أي شيء كانت الجماعة من أهل البيت وغيرهم، وجائز أن يضحي الواحد بعدد من الأضاحي «ضحى رسول الله – صلى الله عليه وسلم – بكبشين أملحين» كما ذكرنا آنفا ولم ينه عن أكثر من ذلك، والأضحية فعل خير، فالاستكثار من الخير حسن. -المحلى بالآثار (6/ 45)<br /> <br /> ‘একটি কুরবানীতে শরীক হওয়া বৈধ, সেই দলটি একটি বাড়ির সদস্য হোক কিংবা বিভিন্ন বাড়ির এবং এক জনের একাধিক কুরবানী করাও বৈধ, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুটি ভেড়া কুরবানী করেন যেমন একটু আগে বর্ণনা করেছি এবং তিনি(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) এর অতিরিক্ত করতে নিষেধ করেননি। কুরবানী একটি সৎ কাজ। আর বেশী বেশী সৎ কাজ করা উত্তম।<br /> <br /> উট কিংবা গরুর ভাগে শরীক হয়ে কুরবানী দেয়া সম্পর্কে সউদী স্থায়ী উলামা পরিষদের ফাতওয়াঃ<br /> <br /> لفتوى رقم ( 2416 )<br /> س: هل يجوز الاشتراك في الأضحية، وكم عدد المسلمين<br /> الذين يشتركون في الأضحية، وهل يكونون من أهل بيت واحد، وهل الاشتراك في الأضحية بدعة أم لا؟<br /> ج: يجوز أن يضحي الرجل عنه وعن أهل بيته بشاة، والأصل في ذلك ما ثبت عنه صلى الله عليه وسلم أنه كان يضحي بالشاة الواحدة عنه وعن أهل بيته، متفق عليه، وما رواه مالك ، وابن ماجه ، والترمذي وصححه، عن عطاء بن يسار قال: سألت أبا أيوب الأنصاري: كيف كانت الضحايا فيكم على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ قال: كان الرجل في عهد النبي صلى الله عليه وسلم يضحي بالشاة عنه وعن أهل بيته، فيأكلون ويطعمون، حتى تباهى الناس فصاروا كما ترى .<br /> وتجزئ البدنة والبقرة عن سبعة، سواء كانوا من أهل بيت<br /> واحد أو من بيوت متفرقين، وسواء كان بينهم قرابة أو لا؛ لأن النبي صلى الله عليه وسلم أذن للصحابة في الاشتراك في البدنة والبقرة كل سبعة في واحدة، ولم يفصل ذلك. والله أعلم.<br /> وبالله التوفيق وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه وسلم.<br /> প্রশ্ন: কুরবানীতে শরীক হওয়া জায়েজ কি, মুসলিমদের কত সংখ্যক লোক তাতে শরীক হতে পারে, তারা কি এক পরিবারের হবে এবং কুরবানীতে শরীক হওয়ার বিষয়টি কি বিদআত?<br /> উত্তর: [তারা প্রথমে একটি ছাগলের কুরবানী, যা একটি বাড়ির সদস্যদের পক্ষে যথেষ্ট তা উল্লেখ করেন, অতঃপর বলেন] এবং একটি উট ও একটি গরু সাত জনের পক্ষে যথেষ্ট। সেই সাত জন একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হোক কিংবা বিভিন্ন পরিবারের, তাদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকুক কিংবা না থাকুক; কারণ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবিদের মধ্যে প্রত্যেক সাত জনকে একটি উটে ও গরুতে শরীক হওয়ার অনুমতি দেন। ওয়াল্লাহু আ’লাম।<br /> [সূত্রঃ ফাতাওয়াল্ লাজনা আদ্দায়িমাহ,১১/৪০১-৪০২,ফাতওয়া নং ২৪১৬]।<br /> <br /> এই মত পোষণকারীদের বলবো:<br /> ১- কুরআন-সুন্নাহকে বুঝার ব্যাপারে সালাফী নীতি হচ্ছে, তা ঐভাবে বুঝা যে ভাবে আমাদের পূর্বসুরীগণ বুঝেছেন। এই নীতির আলোকে আমরা উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে তাঁদের মতামত ভাল ভাবে জানতে পারছি যে, তাঁরা কেউই এই মত প্রকাশ করেন নি যে, ভাগা কুরবানীর বিষয়টি মুসাফিরের সাথে সম্পৃক্ত; বরং তারা বিষয়টি আম/ব্যাপক হিসাবে বুঝেছেন এবং তা মুক্বীমদের জন্যেও প্রযোজ্য মনে করেছেন। আর তারা যেভাবে বুঝতেন সেভাবে বুঝাই উত্তম।<br /> <br /> ২- যদি এই কারণে শরীকানায় কুরবানী করাকে সফরের সাথে খাস করা হয় যে, এটা সফরে ঘটেছিল মুকীম অবস্থায় ঘটেনি। তাহলে বলবো: নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন কাজ সফরে সংঘটিত হলে সেটা কি সফরের সাথে খাস হয়ে যায়, না বিধানটি আম/অনির্দিষ্ট থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত তা দলীলের মাধ্যমে খাস না করা হয়?<br /> আসলে নবী কারিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) এর কথা, কাজ ও সম্মতি অনির্দিষ্ট অর্থেই ব্যবহৃত হয়, যতক্ষণে নির্দিষ্টের প্রমাণ না পাওয়া যায়। তাই উসূলে ফিক্হের একটি মূল কায়েদা হচ্ছে ‘‘আল্ ইবরাতু বি উমূমিল্ লাফযি বি খসূসিস্ সাবাব’ অর্থ, শব্দের অনির্দিষ্ট বিবেচ্য নির্দিষ্ট কারণ নয়’। অর্থাৎ অনির্দিষ্ট তথা আম শব্দ ও বিধান অনির্দিষ্ট হিসাবেই প্রযোজ্য হবে, যদিও বিধানটি বা শব্দটি কোন নির্দিষ্ট কারণে বলা হয়ে থাকে। তাই কুরবানীতে শরীক হওয়ার ঘটনাটি যদিও একটি খাস অবস্থা অর্থাৎ সফরাবস্থায় ঘটেছে কিন্তু সেটা সেই অবস্থার সাথে খাস/নির্দিষ্ট হবে না বরং আম/অনির্দিষ্ট হিসাবে প্রযোজ্য হবে।<br /> <br /> ৩- সফর অবস্থায় ভাগা কুরবানীকে খাসকারী সম্মানিত লেখক বলেন: ‘বিগত বিদ্বানগণের যুগে সম্ভবত: মুক্বীম<br /> অবস্থায় ভাগা কুরবানীর প্রশ্ন উত্থাপিত হয় নি’। [সূত্রঃ মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীকা/১৯] আমি বলবো: উত্থাপিত হয়েছে যেমন হাদ্ঈ ও উযহিয়্যার হাদীসগুলি দ্বারা প্রমাণিত। তাছাড়া প্রাচীন ফুকাহাগণ এই মর্মে মতামত পেশ করেছেন যে, উত্তম কুরবানী কি? তাতে তাঁরা উট-গরুর ভাগের কথা উল্লেখ করেছেন। ইবনু কুদামাহ বলেন: ‘সর্ব্বোত্তম কুরবানী হচ্ছে উটের কুরবানী, অতঃপর গরু, তার পর ছাগল, তারপর উটের অংশ তারপর গরুর অংশ। এটা আবু হানীফা ও শাফেয়ীর মন্তব্য’।<br /> [দেখুন,মুগনী,১৩/৩৬৬]।<br /> <br /> ৪- উপরোক্ত লেখক মুকীম অবস্থায় শরীকানায় কুরবানী চলবে না মর্মে একটি যুক্তি পেশ করে লিখেন: ‘এক্ষণে যদি আমরা ভাগা কুরবানী করি, তাহলে পশুর হাড়-হাড্ডি ও গোশত ভাগ করতে পারবো, কিন্তু তার জীবন ভাগ করতে পারব কি’? [মাসায়েলে কুরবানী/২০] আমি বলবো: এটি একটি কেয়াস। এর প্রয়োজন এই স্থানে তেমন নেই। তবে যেহেতু তিনি নিজেই এটা স্বীকার করেন যে, সফর অবস্থায় একটি গরু বা উটে সাত জন শরীক হতে পারে, সেহেতু বলা উচিৎ হবে যে, যদি সফর অবস্থায় একটি পশুর জীবন ৭ ভাগ হতে পারে, তো মুকীম অবস্থায় অসুবিধা কোথায়?<br /> ______________</div>

ভাগে কোরবানী জায়েজ

শরীকানা বা ভাগে কুরবানী শুধু মুসাফিরের জন্য নাকী মুকিমের জন্যও প্রযোজ্য সে সম্পর্কে। আমাদের সমাজে লামাযহাবীরা বলে থাকে শুধু মাত্র মসাফির ...

Read more »

ভাগে কোরবানী জায়েজ

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"><br />শরীকানা বা ভাগে কুরবানী শুধু মুসাফিরের জন্য নাকী মুকিমের জন্যও প্রযোজ্য সে সম্পর্কে।<br /><br /><br /><br />আমাদের সমাজে লামাযহাবীরা বলে থাকে শুধু মাত্র মসাফির অবস্থায় এক গরুতে শরীকানা কুরবানী করা যাবে; মুকীম অবস্থায় করা যাবেনা। মুকীম অবস্থায় এক গরুতে একজনের বেশী কুরবানী করতে পারবেনা। অথচ তাদের এ বক্তব্য সালাফের মতামতের পরিপূর্ণ বিরোধী। তাদের মত এরূপ উদ্ভট মন্তব্য এর আগে কেউ করেনি। না কোন মুহাদ্দীস না কোন ইমাম।<br /><br />মুহাদ্দীসগণের নীতি হচ্ছে হাদীস দ্বারা তারা যা বুঝেছেন সেটাই তারা শিরোনামে উল্লেখ করেন। তারা যে সকল হাদীস দিয়ে শরীকানা কুরবানী শুধুমাত্র মুকীমের জন্য খাস করে, সেই হাদীসগুলো আনার ক্ষেত্রে মুহাদ্দীসগণ কোথাও ‘সফরে কুরবানী’ বা এই হাদীস সফরের সাথে খাস এমন কথা কোথাও বলেন নি।<br /><br /><br /><br />এখন আমরা হাদীসটি দেখি,<br /><br /><br /><br />عن ابن عباس قال: كنا مع رسول الله صلى الله عليه و سلم في سفرِ فحضر الأضحى، فاشتركنا في البقرة سبعة و في البعير عشرة. [رواه الترمذي والنسائي وابن ماجه]<br /><br /><br /><br />হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমরা সফরে ছিলাম। এমতাবস্থায় কুরবানীর সময় উপস্থিত হল। তাই আমরা একটি গাভীতে সাত জন শরীক হলাম এবং উটে দশ জন।<br /><br />[সূত্রঃ তিরমিযী, হাদীস ১৫৩৭; নাসাঈ, হাদীস ৪৪০৪; ইবনু মাজাহ, হাদীস ৩১৩১/ মুসনাদ আহমদ ৩/৩০৩]।<br /><br /><br /><br />হাদীস সম্পর্কে মুহাদ্দীসদের মতামত<br /><br />__________<br /><br />মুহাদ্দিসগণ যেহেতু তাঁদের হাদীস গ্রন্থে যেই সব শিরোনাম/অনুচ্ছেদ নির্ধারণ করেন, তাঁদের ফিক্হ তথা বুঝ হিসাবে । তাই আমরা এখানে দেখবো যে, উপরোক্ত হাদীসটি বিভিন্ন মুহাদ্দিসগণ কোন নামের অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন বা তাঁরা সেই অনুচ্ছেদের শিরোনাম কী নির্ণয় করেছেন, যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারব সেটা কোন বিষয়ের হাদীস।<br /><br /><br /><br />১- ইমাম তিরমিযী (রহ) হাদীসটি যেই অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন, তার শিরোনাম হচ্ছে, ‘باب ما جاء في الاشتراك في الأضحية’। অর্থাৎ কুরবানীতে শরীক হওয়ার অনুচ্ছেদ। অতঃপর তিনি হুদায়বিয়ায় উট ও গরুতে ৭ জন করে শরীক হয়ে কুরবানী করার আর একটি হাদীস বর্ণনা করেন এবং বলেন:<br /><br /><br /><br />والعمل على هذا عند أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم و غيرهم.<br /><br /><br /><br />‘এর উপর সাহাবা এবং অন্যান্য আহলে ইলমগণের আমল রয়েছে’।<br /><br />এই বাক্যটির ব্যাখ্যায় লামজহাবী আলেম মুবারকপূরী বলেন:<br /><br /><br /><br />قوله (والعمل على هذا عند أهل العلم إلخ) أي على جواز اشتراك السبعة في البعير والبقرة في الهدي والأضحية- تحفة الأحوذي ৫/ ৭৩<br /><br /><br /><br />‘অর্থাৎ হাদ্ঈ ও কুরবানীর উট ও গরুতে সাত জন শরীক হওয়ার বৈধতার ব্যপারে (আমল রয়েছে)’।<br /><br />[সূত্রঃ তুহ্ফাতুল আহ্ ওয়াযী,৫/৭৩]।<br /><br /><br /><br />হযরত ইবনে মাসঊদ রা. থেকে এক বর্ণনা পাওয়া যায়,<br /><br /><br /><br />308 – قال: وثنا يوسف بن أبي يوسف عن أبيه عن أبي حنيفة، عن حماد، عن إبراهيم، عن ابن مسعود رضي الله عنه أنه قال: «البقرة تجزئ في الأضحى عن سبعة أناس» الآثار لأبي يوسف (ص: 62)<br /><br /><br /><br />হযরত আবু ইউসূফ র. ইমাম আবু হানীফার সূত্রে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউস রাযি. এর বক্তব্য বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, কুরবানীর ক্ষেত্রে একটি গরু সাতজন ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট।<br /><br />[সূত্রঃ কিতাবুল আসার, পৃ. ৬২, হাদীস ৩০৮]।<br /><br />এই আসারে মুকিম নাকী মুসাফির পার্থক্য না করেই সাতজন শরীক হবার কথা এসেছে।<br /><br /><br /><br />২- ইমাম নাসাঈ যেই অনুচ্ছেদে হাদীসটি নিয়ে আসেন, তার নামকরণ করা হয় এই ভাবে: ‘باب ما تجزئ عنه البدنة في الضحايا’। অর্থ, অনুচ্ছেদ, কুরবানীতে একটি উট কত জনের পক্ষে যথেষ্ট’।<br /><br />[সূত্রঃ সুনানে নাসাঈ, , অনুচ্ছেদ নং ১৫]।<br /><br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><br /><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj7SsTEJ7qsFO1Onll9ds_sG_TeM48l29Y21fa__Ntx_ttxXSDiiSW7NnQtzAzQIvr6fF793C2GOk4UC-4twHM6oq6xC7UWAorj-Z47RIXp4O2JLMEpqG403rG_SaPODvuJFNfuKLE9D_9v/s1600/Korbani-4jpeg.jpeg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="215" data-original-width="270" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj7SsTEJ7qsFO1Onll9ds_sG_TeM48l29Y21fa__Ntx_ttxXSDiiSW7NnQtzAzQIvr6fF793C2GOk4UC-4twHM6oq6xC7UWAorj-Z47RIXp4O2JLMEpqG403rG_SaPODvuJFNfuKLE9D_9v/s1600-rw/Korbani-4jpeg.jpeg" /></a></div><br /><br /><br /><br /><br />৩- ইবনু মাজাহ আযাহী/কুরবানী অধ্যায়ে যেই অনুচ্ছেদে হাদীসটি উল্লেখ করেন,তার শিরোনাম এইরূপ: ‘باب عن، كم تجزئ البدنة والبقرة’। অর্থ, অনুচ্ছেদ, একটি গরু ও উট কত জনের পক্ষে যথেষ্ট’।<br /><br />[সূত্রঃ সুনানে ইবনে মাজাহ অনুচ্ছেদ নং ২৬/৫]।<br /><br /><br /><br />৪- আবু দাউদে অনুচ্ছেদের নামকরণ করেছেন, باب في البقر والجزور عن كم تجزئ “গরু ও উট কত জনের পক্ষে যথেষ্ট” তিনি যাবের রা. এর সূত্রে বর্ণনা করেন।<br /><br /><br /><br />ইমাম নববী (রঃ) বলেন,<br /><br /><br /><br />وأجمعوا على أن الشاة لا يجوز الاشتراك فيها وفي هذه الأحاديث أن البدنة تجزي عن سبعة والبقرة عن سبعة وتقوم كل واحدة مقام سبع شياه- شرح النووي على مسلم (9/ 67)<br /><br /><br /><br />অর্থাৎ, এ বিষয়ে উম্মাতের উলামাগণ একমত যে, ছাগল দিয়ে শরীকানা কুরবানী বৈধ নয়, তবে একটি উটে সাতজন অংশীদার হয়ে এবং একটি গরুতেও সাতজন অংশীদার হয়ে যদি কুরবানী করে তা হলে তা শরীয়ত সম্মত, কারণ উট ও গরুর প্রতিটি ভাগ একটি ছাগলের সমতুল্য।<br /><br />[সূত্রঃ শরহে মুসলিম ৯/৬৭]।<br /><br /><br /><br />হুদাইবিয়ার ঘটনায় সাহাবিগণ আল্লাহর রাসূলের সাথে একটি উট ও গরু সাত জনের পক্ষে কুরবানী করেন মর্মে যেই হাদীসটি মুসলিম সহ অন্যান্য মুহাদ্দিস বর্ণনা করেন। সেই সম্পর্কে সাহেবে আউনুল মা’বুদ বলেন:<br /><br /><br /><br />قال في السبل دل الحديث على جواز الاشتراك في البدنة والبقرة وأنهما يجزيان عن سبعة وهذا في الهدي ويقاس عليه الأضحية بل قد ورد فيها نص -عون المعبود وحاشية ابن القيم (7/ 362)<br /><br /><br /><br />‘সুবুলে বলা হয়েছেঃ হাদীসটি উট ও গরুতে শরীক হওয়া জায়েজের প্রমাণ এবং উভয়ে সাত জনের পক্ষে যথেষ্ট। এটা হাদঈর ক্ষেত্রে এবং কুরবানীকে এর উপর কিয়াস করা হবে; বরং কুরবানীর সম্পর্কে নাস বা দলীল এসেছে’….।<br /><br />[সূত্রঃ আউনুল মা’বূদ,৭/৩৬২]।<br /><br />অতঃপর তিনি ইবনে আব্বাস (রাযি:) থেকে বর্ণিত হাদীসটি উল্লেখ করেন, যাতে গরুতে ৭ জন এবং উটে ১০ জন শরীক হওয়ার বর্ণনা এসেছে।<br /><br /><br /><br />মুহাদ্দিসগণের উপরোক্ত অনুচ্ছেদ সমূহ ও বিদগ্ধ উলামাগণের ব্যাখ্যানুযায়ী আমরা একথা স্পষ্ট রূপে বুঝতে সক্ষম যে, হাদীসটি থেকে মুকীম ও মুসাফিরের মধ্যে পার্থক্য করা ছাড়াই তাঁরা গরু ও উটের কুরবানীতে শরীক হওয়ার বৈধতা বুঝেছেন। অর্থাৎ হাদীসটি কেবল সফর অবস্থায় কুরবানীতে শরীক হওয়ার সম্পর্কে নির্দিষ্ট, এমন নয়। তাই তাঁদের কেউই এটা সফরের সাথে নির্দিষ্ট, এমন কোন অনুচ্ছেদ লেখেন নি আর না ব্যাখ্যাকারীগণ সেই দিকে ইঙ্গিত করেছেন।<br /><br /><br /><br />ইমাম ও ফুকাহাদের মতামত<br /><br />____________<br /><br />ইবনে হাযম তার কিতাবে উল্লেখ করেন,<br /><br /><br /><br />وقال أبو حنيفة، وسفيان الثوري، والأوزاعي، والشافعي، وأحمد، وإسحاق، وأبو ثور، وأبو سليمان: تجزئ البقرة، أو الناقة عن سبعة فأقل أجنبيين وغير أجنبيين يشتركون فيها، ولا تجزئ عن أكثر، ولا تجزئ الشاة إلا عن واحد.- المحلى بالآثار (6/ 45)<br /><br /><br /><br />ঈমামে আযম আবু হানীফা, সুফ্ইয়ান সাওরী, আওযায়ী, শাফেয়ী, আহমদ, ইসহাক্ব, আবু সাউর এবং আবু সুলায়মান বলেন: একটি গরু কিংবা একটি উট সাত কিংবা তার থেকে কম সংখ্যকের পক্ষে যথেষ্ট, তারা পারস্পারিক পরিচিত হোক অথবা না হোক। তারা তাতে শরীক হতে পারে, তবে এর থেকে বেশী সংখ্যার পক্ষে যথেষ্ট হবে না’।<br /><br />[সূত্রঃ আল্ মুহাল্লা, ইবনু হায্ম,৬/৪৫ পৃঃ]।<br /><br /><br /><br />ইবনু কুদামাহ (রহ) তাঁর প্রসিদ্ধ মুগনী গ্রন্থে ১৭৬৮ নং মাসআলার ব্যাখ্যায় বলেন:<br /><br /><br /><br />وجملته أنه يجوز أن يشترك في التضحية بالبدنة والبقرة سبعة، واجبا كان أو تطوعا، سواء كانوا كلهم متقربين -المغني لابن قدامة (9/ 458)<br /><br /><br /><br />ফলকথা উট ও গরুতে সাত জন শরীক হয়ে কুরবানী দেওয়া বৈধ। সেটা ওয়াজিব হোক কিংবা নফল। তারা সকলে নৈকট্যের আশাবাদী হোক কিংবা কেউ নৈকট্যের আর অন্য কেউ গোশতের। এটাই শাফেয়ী বলেন। মালেক বলেন: হাদ্ঈতে শরীক হওয়া জায়েজ নয়’।<br /><br />[সূত্রঃ আল মুগনী, ১৩/৩৯২]।<br /><br /><br /><br />ইনবু হায্ম (রহ) তাঁর আল্ মুহাল্লা গ্রন্থে ৯৮৪ নং মাস্আলা বর্ণনায় বলেন:<br /><br /><br /><br />[مسألة يشترك في الأضحية الواحدة الجماعة]<br /><br />984 – مسألة: وجائز أن يشترك في الأضحية الواحدة أي شيء كانت الجماعة من أهل البيت وغيرهم، وجائز أن يضحي الواحد بعدد من الأضاحي «ضحى رسول الله – صلى الله عليه وسلم – بكبشين أملحين» كما ذكرنا آنفا ولم ينه عن أكثر من ذلك، والأضحية فعل خير، فالاستكثار من الخير حسن. -المحلى بالآثار (6/ 45)<br /><br /><br /><br />‘একটি কুরবানীতে শরীক হওয়া বৈধ, সেই দলটি একটি বাড়ির সদস্য হোক কিংবা বিভিন্ন বাড়ির এবং এক জনের একাধিক কুরবানী করাও বৈধ, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুটি ভেড়া কুরবানী করেন যেমন একটু আগে বর্ণনা করেছি এবং তিনি(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) এর অতিরিক্ত করতে নিষেধ করেননি। কুরবানী একটি সৎ কাজ। আর বেশী বেশী সৎ কাজ করা উত্তম।<br /><br /><br /><br />উট কিংবা গরুর ভাগে শরীক হয়ে কুরবানী দেয়া সম্পর্কে সউদী স্থায়ী উলামা পরিষদের ফাতওয়াঃ<br /><br /><br /><br />لفتوى رقم ( 2416 )<br /><br />س: هل يجوز الاشتراك في الأضحية، وكم عدد المسلمين<br /><br />الذين يشتركون في الأضحية، وهل يكونون من أهل بيت واحد، وهل الاشتراك في الأضحية بدعة أم لا؟<br /><br />ج: يجوز أن يضحي الرجل عنه وعن أهل بيته بشاة، والأصل في ذلك ما ثبت عنه صلى الله عليه وسلم أنه كان يضحي بالشاة الواحدة عنه وعن أهل بيته، متفق عليه، وما رواه مالك ، وابن ماجه ، والترمذي وصححه، عن عطاء بن يسار قال: سألت أبا أيوب الأنصاري: كيف كانت الضحايا فيكم على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ قال: كان الرجل في عهد النبي صلى الله عليه وسلم يضحي بالشاة عنه وعن أهل بيته، فيأكلون ويطعمون، حتى تباهى الناس فصاروا كما ترى .<br /><br />وتجزئ البدنة والبقرة عن سبعة، سواء كانوا من أهل بيت<br /><br />واحد أو من بيوت متفرقين، وسواء كان بينهم قرابة أو لا؛ لأن النبي صلى الله عليه وسلم أذن للصحابة في الاشتراك في البدنة والبقرة كل سبعة في واحدة، ولم يفصل ذلك. والله أعلم.<br /><br />وبالله التوفيق وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه وسلم.<br /><br />প্রশ্ন: কুরবানীতে শরীক হওয়া জায়েজ কি, মুসলিমদের কত সংখ্যক লোক তাতে শরীক হতে পারে, তারা কি এক পরিবারের হবে এবং কুরবানীতে শরীক হওয়ার বিষয়টি কি বিদআত?<br /><br />উত্তর: [তারা প্রথমে একটি ছাগলের কুরবানী, যা একটি বাড়ির সদস্যদের পক্ষে যথেষ্ট তা উল্লেখ করেন, অতঃপর বলেন] এবং একটি উট ও একটি গরু সাত জনের পক্ষে যথেষ্ট। সেই সাত জন একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হোক কিংবা বিভিন্ন পরিবারের, তাদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকুক কিংবা না থাকুক; কারণ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবিদের মধ্যে প্রত্যেক সাত জনকে একটি উটে ও গরুতে শরীক হওয়ার অনুমতি দেন। ওয়াল্লাহু আ’লাম।<br /><br />[সূত্রঃ ফাতাওয়াল্ লাজনা আদ্দায়িমাহ,১১/৪০১-৪০২,ফাতওয়া নং ২৪১৬]।<br /><br /><br /><br />এই মত পোষণকারীদের বলবো:<br /><br />১- কুরআন-সুন্নাহকে বুঝার ব্যাপারে সালাফী নীতি হচ্ছে, তা ঐভাবে বুঝা যে ভাবে আমাদের পূর্বসুরীগণ বুঝেছেন। এই নীতির আলোকে আমরা উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে তাঁদের মতামত ভাল ভাবে জানতে পারছি যে, তাঁরা কেউই এই মত প্রকাশ করেন নি যে, ভাগা কুরবানীর বিষয়টি মুসাফিরের সাথে সম্পৃক্ত; বরং তারা বিষয়টি আম/ব্যাপক হিসাবে বুঝেছেন এবং তা মুক্বীমদের জন্যেও প্রযোজ্য মনে করেছেন। আর তারা যেভাবে বুঝতেন সেভাবে বুঝাই উত্তম।<br /><br /><br /><br />২- যদি এই কারণে শরীকানায় কুরবানী করাকে সফরের সাথে খাস করা হয় যে, এটা সফরে ঘটেছিল মুকীম অবস্থায় ঘটেনি। তাহলে বলবো: নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন কাজ সফরে সংঘটিত হলে সেটা কি সফরের সাথে খাস হয়ে যায়, না বিধানটি আম/অনির্দিষ্ট থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত তা দলীলের মাধ্যমে খাস না করা হয়?<br /><br />আসলে নবী কারিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) এর কথা, কাজ ও সম্মতি অনির্দিষ্ট অর্থেই ব্যবহৃত হয়, যতক্ষণে নির্দিষ্টের প্রমাণ না পাওয়া যায়। তাই উসূলে ফিক্হের একটি মূল কায়েদা হচ্ছে ‘‘আল্ ইবরাতু বি উমূমিল্ লাফযি বি খসূসিস্ সাবাব’ অর্থ, শব্দের অনির্দিষ্ট বিবেচ্য নির্দিষ্ট কারণ নয়’। অর্থাৎ অনির্দিষ্ট তথা আম শব্দ ও বিধান অনির্দিষ্ট হিসাবেই প্রযোজ্য হবে, যদিও বিধানটি বা শব্দটি কোন নির্দিষ্ট কারণে বলা হয়ে থাকে। তাই কুরবানীতে শরীক হওয়ার ঘটনাটি যদিও একটি খাস অবস্থা অর্থাৎ সফরাবস্থায় ঘটেছে কিন্তু সেটা সেই অবস্থার সাথে খাস/নির্দিষ্ট হবে না বরং আম/অনির্দিষ্ট হিসাবে প্রযোজ্য হবে।<br /><br /><br /><br />৩- সফর অবস্থায় ভাগা কুরবানীকে খাসকারী সম্মানিত লেখক বলেন: ‘বিগত বিদ্বানগণের যুগে সম্ভবত: মুক্বীম<br /><br />অবস্থায় ভাগা কুরবানীর প্রশ্ন উত্থাপিত হয় নি’। [সূত্রঃ মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীকা/১৯] আমি বলবো: উত্থাপিত হয়েছে যেমন হাদ্ঈ ও উযহিয়্যার হাদীসগুলি দ্বারা প্রমাণিত। তাছাড়া প্রাচীন ফুকাহাগণ এই মর্মে মতামত পেশ করেছেন যে, উত্তম কুরবানী কি? তাতে তাঁরা উট-গরুর ভাগের কথা উল্লেখ করেছেন। ইবনু কুদামাহ বলেন: ‘সর্ব্বোত্তম কুরবানী হচ্ছে উটের কুরবানী, অতঃপর গরু, তার পর ছাগল, তারপর উটের অংশ তারপর গরুর অংশ। এটা আবু হানীফা ও শাফেয়ীর মন্তব্য’।<br /><br />[দেখুন,মুগনী,১৩/৩৬৬]।<br /><br /><br /><br />৪- উপরোক্ত লেখক মুকীম অবস্থায় শরীকানায় কুরবানী চলবে না মর্মে একটি যুক্তি পেশ করে লিখেন: ‘এক্ষণে যদি আমরা ভাগা কুরবানী করি, তাহলে পশুর হাড়-হাড্ডি ও গোশত ভাগ করতে পারবো, কিন্তু তার জীবন ভাগ করতে পারব কি’? [মাসায়েলে কুরবানী/২০] আমি বলবো: এটি একটি কেয়াস। এর প্রয়োজন এই স্থানে তেমন নেই। তবে যেহেতু তিনি নিজেই এটা স্বীকার করেন যে, সফর অবস্থায় একটি গরু বা উটে সাত জন শরীক হতে পারে, সেহেতু বলা উচিৎ হবে যে, যদি সফর অবস্থায় একটি পশুর জীবন ৭ ভাগ হতে পারে, তো মুকীম অবস্থায় অসুবিধা কোথায়?<br /><br />______________</div><br />

ভাগে কোরবানী জায়েজ

শরীকানা বা ভাগে কুরবানী শুধু মুসাফিরের জন্য নাকী মুকিমের জন্যও প্রযোজ্য সে সম্পর্কে। আমাদের সমাজে লামাযহাবীরা বলে থাকে শুধু মাত্র মসাফির অবস...

Read more »

ভাগে কোরবানী জায়েজ

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">শরীকানা বা ভাগে কুরবানী শুধু মুসাফিরের জন্য নাকী মুকিমের জন্যও প্রযোজ্য সে সম্পর্কে।<br /><br />আমাদের সমাজে লামাযহাবীরা বলে থাকে শুধু মাত্র মসাফির অবস্থায় এক গরুতে শরীকানা কুরবানী করা যাবে; মুকীম অবস্থায় করা যাবেনা। মুকীম অবস্থায় এক গরুতে একজনের বেশী কুরবানী করতে পারবেনা। অথচ তাদের এ বক্তব্য সালাফের মতামতের পরিপূর্ণ বিরোধী। তাদের মত এরূপ উদ্ভট মন্তব্য এর আগে কেউ করেনি। না কোন মুহাদ্দীস না কোন ইমাম।<br />মুহাদ্দীসগণের নীতি হচ্ছে হাদীস দ্বারা তারা যা বুঝেছেন সেটাই তারা শিরোনামে উল্লেখ করেন। তারা যে সকল হাদীস দিয়ে শরীকানা কুরবানী শুধুমাত্র মুকীমের জন্য খাস করে, সেই হাদীসগুলো আনার ক্ষেত্রে মুহাদ্দীসগণ কোথাও ‘সফরে কুরবানী’ বা এই হাদীস সফরের সাথে খাস এমন কথা কোথাও বলেন নি।<br /><br />এখন আমরা হাদীসটি দেখি,<br /><br />عن ابن عباس قال: كنا مع رسول الله صلى الله عليه و سلم في سفرِ فحضر الأضحى، فاشتركنا في البقرة سبعة و في البعير عشرة. [رواه الترمذي والنسائي وابن ماجه]<br /><br />হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমরা সফরে ছিলাম। এমতাবস্থায় কুরবানীর সময় উপস্থিত হল। তাই আমরা একটি গাভীতে সাত জন শরীক হলাম এবং উটে দশ জন।<br />[সূত্রঃ তিরমিযী, হাদীস ১৫৩৭; নাসাঈ, হাদীস ৪৪০৪; ইবনু মাজাহ, হাদীস ৩১৩১/ মুসনাদ আহমদ ৩/৩০৩]।<br /><br />হাদীস সম্পর্কে মুহাদ্দীসদের মতামত<br />__________<br />মুহাদ্দিসগণ যেহেতু তাঁদের হাদীস গ্রন্থে যেই সব শিরোনাম/অনুচ্ছেদ নির্ধারণ করেন, তাঁদের ফিক্হ তথা বুঝ হিসাবে । তাই আমরা এখানে দেখবো যে, উপরোক্ত হাদীসটি বিভিন্ন মুহাদ্দিসগণ কোন নামের অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন বা তাঁরা সেই অনুচ্ছেদের শিরোনাম কী নির্ণয় করেছেন, যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারব সেটা কোন বিষয়ের হাদীস।<br /><br />১- ইমাম তিরমিযী (রহ) হাদীসটি যেই অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন, তার শিরোনাম হচ্ছে, ‘باب ما جاء في الاشتراك في الأضحية’। অর্থাৎ কুরবানীতে শরীক হওয়ার অনুচ্ছেদ। অতঃপর তিনি হুদায়বিয়ায় উট ও গরুতে ৭ জন করে শরীক হয়ে কুরবানী করার আর একটি হাদীস বর্ণনা করেন এবং বলেন:<br /><br />والعمل على هذا عند أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم و غيرهم.<br /><br />‘এর উপর সাহাবা এবং অন্যান্য আহলে ইলমগণের আমল রয়েছে’।<br />এই বাক্যটির ব্যাখ্যায় লামজহাবী আলেম মুবারকপূরী বলেন:<br /><br />قوله (والعمل على هذا عند أهل العلم إلخ) أي على جواز اشتراك السبعة في البعير والبقرة في الهدي والأضحية- تحفة الأحوذي ৫/ ৭৩<br /><br />‘অর্থাৎ হাদ্ঈ ও কুরবানীর উট ও গরুতে সাত জন শরীক হওয়ার বৈধতার ব্যপারে (আমল রয়েছে)’।<br />[সূত্রঃ তুহ্ফাতুল আহ্ ওয়াযী,৫/৭৩]।<br /><br />হযরত ইবনে মাসঊদ রা. থেকে এক বর্ণনা পাওয়া যায়,<br /><br />308 – قال: وثنا يوسف بن أبي يوسف عن أبيه عن أبي حنيفة، عن حماد، عن إبراهيم، عن ابن مسعود رضي الله عنه أنه قال: «البقرة تجزئ في الأضحى عن سبعة أناس» الآثار لأبي يوسف (ص: 62)<br /><br />হযরত আবু ইউসূফ র. ইমাম আবু হানীফার সূত্রে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউস রাযি. এর বক্তব্য বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, কুরবানীর ক্ষেত্রে একটি গরু সাতজন ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট।<br />[সূত্রঃ কিতাবুল আসার, পৃ. ৬২, হাদীস ৩০৮]।<br />এই আসারে মুকিম নাকী মুসাফির পার্থক্য না করেই সাতজন শরীক হবার কথা এসেছে।<br /><br />২- ইমাম নাসাঈ যেই অনুচ্ছেদে হাদীসটি নিয়ে আসেন, তার নামকরণ করা হয় এই ভাবে: ‘باب ما تجزئ عنه البدنة في الضحايا’। অর্থ, অনুচ্ছেদ, কুরবানীতে একটি উট কত জনের পক্ষে যথেষ্ট’।<br />[সূত্রঃ সুনানে নাসাঈ, , অনুচ্ছেদ নং ১৫]।<br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj7SsTEJ7qsFO1Onll9ds_sG_TeM48l29Y21fa__Ntx_ttxXSDiiSW7NnQtzAzQIvr6fF793C2GOk4UC-4twHM6oq6xC7UWAorj-Z47RIXp4O2JLMEpqG403rG_SaPODvuJFNfuKLE9D_9v/s1600/Korbani-4jpeg.jpeg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="215" data-original-width="270" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj7SsTEJ7qsFO1Onll9ds_sG_TeM48l29Y21fa__Ntx_ttxXSDiiSW7NnQtzAzQIvr6fF793C2GOk4UC-4twHM6oq6xC7UWAorj-Z47RIXp4O2JLMEpqG403rG_SaPODvuJFNfuKLE9D_9v/s1600-rw/Korbani-4jpeg.jpeg" /></a></div><br /><br />৩- ইবনু মাজাহ আযাহী/কুরবানী অধ্যায়ে যেই অনুচ্ছেদে হাদীসটি উল্লেখ করেন,তার শিরোনাম এইরূপ: ‘باب عن، كم تجزئ البدنة والبقرة’। অর্থ, অনুচ্ছেদ, একটি গরু ও উট কত জনের পক্ষে যথেষ্ট’।<br />[সূত্রঃ সুনানে ইবনে মাজাহ অনুচ্ছেদ নং ২৬/৫]।<br /><br />৪- আবু দাউদে অনুচ্ছেদের নামকরণ করেছেন, باب في البقر والجزور عن كم تجزئ “গরু ও উট কত জনের পক্ষে যথেষ্ট” তিনি যাবের রা. এর সূত্রে বর্ণনা করেন।<br /><br />ইমাম নববী (রঃ) বলেন,<br /><br />وأجمعوا على أن الشاة لا يجوز الاشتراك فيها وفي هذه الأحاديث أن البدنة تجزي عن سبعة والبقرة عن سبعة وتقوم كل واحدة مقام سبع شياه- شرح النووي على مسلم (9/ 67)<br /><br />অর্থাৎ, এ বিষয়ে উম্মাতের উলামাগণ একমত যে, ছাগল দিয়ে শরীকানা কুরবানী বৈধ নয়, তবে একটি উটে সাতজন অংশীদার হয়ে এবং একটি গরুতেও সাতজন অংশীদার হয়ে যদি কুরবানী করে তা হলে তা শরীয়ত সম্মত, কারণ উট ও গরুর প্রতিটি ভাগ একটি ছাগলের সমতুল্য।<br />[সূত্রঃ শরহে মুসলিম ৯/৬৭]।<br /><br />হুদাইবিয়ার ঘটনায় সাহাবিগণ আল্লাহর রাসূলের সাথে একটি উট ও গরু সাত জনের পক্ষে কুরবানী করেন মর্মে যেই হাদীসটি মুসলিম সহ অন্যান্য মুহাদ্দিস বর্ণনা করেন। সেই সম্পর্কে সাহেবে আউনুল মা’বুদ বলেন:<br /><br />قال في السبل دل الحديث على جواز الاشتراك في البدنة والبقرة وأنهما يجزيان عن سبعة وهذا في الهدي ويقاس عليه الأضحية بل قد ورد فيها نص -عون المعبود وحاشية ابن القيم (7/ 362)<br /><br />‘সুবুলে বলা হয়েছেঃ হাদীসটি উট ও গরুতে শরীক হওয়া জায়েজের প্রমাণ এবং উভয়ে সাত জনের পক্ষে যথেষ্ট। এটা হাদঈর ক্ষেত্রে এবং কুরবানীকে এর উপর কিয়াস করা হবে; বরং কুরবানীর সম্পর্কে নাস বা দলীল এসেছে’….।<br />[সূত্রঃ আউনুল মা’বূদ,৭/৩৬২]।<br />অতঃপর তিনি ইবনে আব্বাস (রাযি:) থেকে বর্ণিত হাদীসটি উল্লেখ করেন, যাতে গরুতে ৭ জন এবং উটে ১০ জন শরীক হওয়ার বর্ণনা এসেছে।<br /><br />মুহাদ্দিসগণের উপরোক্ত অনুচ্ছেদ সমূহ ও বিদগ্ধ উলামাগণের ব্যাখ্যানুযায়ী আমরা একথা স্পষ্ট রূপে বুঝতে সক্ষম যে, হাদীসটি থেকে মুকীম ও মুসাফিরের মধ্যে পার্থক্য করা ছাড়াই তাঁরা গরু ও উটের কুরবানীতে শরীক হওয়ার বৈধতা বুঝেছেন। অর্থাৎ হাদীসটি কেবল সফর অবস্থায় কুরবানীতে শরীক হওয়ার সম্পর্কে নির্দিষ্ট, এমন নয়। তাই তাঁদের কেউই এটা সফরের সাথে নির্দিষ্ট, এমন কোন অনুচ্ছেদ লেখেন নি আর না ব্যাখ্যাকারীগণ সেই দিকে ইঙ্গিত করেছেন।<br /><br />ইমাম ও ফুকাহাদের মতামত<br />____________<br />ইবনে হাযম তার কিতাবে উল্লেখ করেন,<br /><br />وقال أبو حنيفة، وسفيان الثوري، والأوزاعي، والشافعي، وأحمد، وإسحاق، وأبو ثور، وأبو سليمان: تجزئ البقرة، أو الناقة عن سبعة فأقل أجنبيين وغير أجنبيين يشتركون فيها، ولا تجزئ عن أكثر، ولا تجزئ الشاة إلا عن واحد.- المحلى بالآثار (6/ 45)<br /><br />ঈমামে আযম আবু হানীফা, সুফ্ইয়ান সাওরী, আওযায়ী, শাফেয়ী, আহমদ, ইসহাক্ব, আবু সাউর এবং আবু সুলায়মান বলেন: একটি গরু কিংবা একটি উট সাত কিংবা তার থেকে কম সংখ্যকের পক্ষে যথেষ্ট, তারা পারস্পারিক পরিচিত হোক অথবা না হোক। তারা তাতে শরীক হতে পারে, তবে এর থেকে বেশী সংখ্যার পক্ষে যথেষ্ট হবে না’।<br />[সূত্রঃ আল্ মুহাল্লা, ইবনু হায্ম,৬/৪৫ পৃঃ]।<br /><br />ইবনু কুদামাহ (রহ) তাঁর প্রসিদ্ধ মুগনী গ্রন্থে ১৭৬৮ নং মাসআলার ব্যাখ্যায় বলেন:<br /><br />وجملته أنه يجوز أن يشترك في التضحية بالبدنة والبقرة سبعة، واجبا كان أو تطوعا، سواء كانوا كلهم متقربين -المغني لابن قدامة (9/ 458)<br /><br />ফলকথা উট ও গরুতে সাত জন শরীক হয়ে কুরবানী দেওয়া বৈধ। সেটা ওয়াজিব হোক কিংবা নফল। তারা সকলে নৈকট্যের আশাবাদী হোক কিংবা কেউ নৈকট্যের আর অন্য কেউ গোশতের। এটাই শাফেয়ী বলেন। মালেক বলেন: হাদ্ঈতে শরীক হওয়া জায়েজ নয়’।<br />[সূত্রঃ আল মুগনী, ১৩/৩৯২]।<br /><br />ইনবু হায্ম (রহ) তাঁর আল্ মুহাল্লা গ্রন্থে ৯৮৪ নং মাস্আলা বর্ণনায় বলেন:<br /><br />[مسألة يشترك في الأضحية الواحدة الجماعة]<br />984 – مسألة: وجائز أن يشترك في الأضحية الواحدة أي شيء كانت الجماعة من أهل البيت وغيرهم، وجائز أن يضحي الواحد بعدد من الأضاحي «ضحى رسول الله – صلى الله عليه وسلم – بكبشين أملحين» كما ذكرنا آنفا ولم ينه عن أكثر من ذلك، والأضحية فعل خير، فالاستكثار من الخير حسن. -المحلى بالآثار (6/ 45)<br /><br />‘একটি কুরবানীতে শরীক হওয়া বৈধ, সেই দলটি একটি বাড়ির সদস্য হোক কিংবা বিভিন্ন বাড়ির এবং এক জনের একাধিক কুরবানী করাও বৈধ, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুটি ভেড়া কুরবানী করেন যেমন একটু আগে বর্ণনা করেছি এবং তিনি(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) এর অতিরিক্ত করতে নিষেধ করেননি। কুরবানী একটি সৎ কাজ। আর বেশী বেশী সৎ কাজ করা উত্তম।<br /><br />উট কিংবা গরুর ভাগে শরীক হয়ে কুরবানী দেয়া সম্পর্কে সউদী স্থায়ী উলামা পরিষদের ফাতওয়াঃ<br /><br />لفتوى رقم ( 2416 )<br />س: هل يجوز الاشتراك في الأضحية، وكم عدد المسلمين<br />الذين يشتركون في الأضحية، وهل يكونون من أهل بيت واحد، وهل الاشتراك في الأضحية بدعة أم لا؟<br />ج: يجوز أن يضحي الرجل عنه وعن أهل بيته بشاة، والأصل في ذلك ما ثبت عنه صلى الله عليه وسلم أنه كان يضحي بالشاة الواحدة عنه وعن أهل بيته، متفق عليه، وما رواه مالك ، وابن ماجه ، والترمذي وصححه، عن عطاء بن يسار قال: سألت أبا أيوب الأنصاري: كيف كانت الضحايا فيكم على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ قال: كان الرجل في عهد النبي صلى الله عليه وسلم يضحي بالشاة عنه وعن أهل بيته، فيأكلون ويطعمون، حتى تباهى الناس فصاروا كما ترى .<br />وتجزئ البدنة والبقرة عن سبعة، سواء كانوا من أهل بيت<br />واحد أو من بيوت متفرقين، وسواء كان بينهم قرابة أو لا؛ لأن النبي صلى الله عليه وسلم أذن للصحابة في الاشتراك في البدنة والبقرة كل سبعة في واحدة، ولم يفصل ذلك. والله أعلم.<br />وبالله التوفيق وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه وسلم.<br />প্রশ্ন: কুরবানীতে শরীক হওয়া জায়েজ কি, মুসলিমদের কত সংখ্যক লোক তাতে শরীক হতে পারে, তারা কি এক পরিবারের হবে এবং কুরবানীতে শরীক হওয়ার বিষয়টি কি বিদআত?<br />উত্তর: [তারা প্রথমে একটি ছাগলের কুরবানী, যা একটি বাড়ির সদস্যদের পক্ষে যথেষ্ট তা উল্লেখ করেন, অতঃপর বলেন] এবং একটি উট ও একটি গরু সাত জনের পক্ষে যথেষ্ট। সেই সাত জন একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হোক কিংবা বিভিন্ন পরিবারের, তাদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকুক কিংবা না থাকুক; কারণ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবিদের মধ্যে প্রত্যেক সাত জনকে একটি উটে ও গরুতে শরীক হওয়ার অনুমতি দেন। ওয়াল্লাহু আ’লাম।<br />[সূত্রঃ ফাতাওয়াল্ লাজনা আদ্দায়িমাহ,১১/৪০১-৪০২,ফাতওয়া নং ২৪১৬]।<br /><br />এই মত পোষণকারীদের বলবো:<br />১- কুরআন-সুন্নাহকে বুঝার ব্যাপারে সালাফী নীতি হচ্ছে, তা ঐভাবে বুঝা যে ভাবে আমাদের পূর্বসুরীগণ বুঝেছেন। এই নীতির আলোকে আমরা উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে তাঁদের মতামত ভাল ভাবে জানতে পারছি যে, তাঁরা কেউই এই মত প্রকাশ করেন নি যে, ভাগা কুরবানীর বিষয়টি মুসাফিরের সাথে সম্পৃক্ত; বরং তারা বিষয়টি আম/ব্যাপক হিসাবে বুঝেছেন এবং তা মুক্বীমদের জন্যেও প্রযোজ্য মনে করেছেন। আর তারা যেভাবে বুঝতেন সেভাবে বুঝাই উত্তম।<br /><br />২- যদি এই কারণে শরীকানায় কুরবানী করাকে সফরের সাথে খাস করা হয় যে, এটা সফরে ঘটেছিল মুকীম অবস্থায় ঘটেনি। তাহলে বলবো: নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন কাজ সফরে সংঘটিত হলে সেটা কি সফরের সাথে খাস হয়ে যায়, না বিধানটি আম/অনির্দিষ্ট থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত তা দলীলের মাধ্যমে খাস না করা হয়?<br />আসলে নবী কারিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) এর কথা, কাজ ও সম্মতি অনির্দিষ্ট অর্থেই ব্যবহৃত হয়, যতক্ষণে নির্দিষ্টের প্রমাণ না পাওয়া যায়। তাই উসূলে ফিক্হের একটি মূল কায়েদা হচ্ছে ‘‘আল্ ইবরাতু বি উমূমিল্ লাফযি বি খসূসিস্ সাবাব’ অর্থ, শব্দের অনির্দিষ্ট বিবেচ্য নির্দিষ্ট কারণ নয়’। অর্থাৎ অনির্দিষ্ট তথা আম শব্দ ও বিধান অনির্দিষ্ট হিসাবেই প্রযোজ্য হবে, যদিও বিধানটি বা শব্দটি কোন নির্দিষ্ট কারণে বলা হয়ে থাকে। তাই কুরবানীতে শরীক হওয়ার ঘটনাটি যদিও একটি খাস অবস্থা অর্থাৎ সফরাবস্থায় ঘটেছে কিন্তু সেটা সেই অবস্থার সাথে খাস/নির্দিষ্ট হবে না বরং আম/অনির্দিষ্ট হিসাবে প্রযোজ্য হবে।<br /><br />৩- সফর অবস্থায় ভাগা কুরবানীকে খাসকারী সম্মানিত লেখক বলেন: ‘বিগত বিদ্বানগণের যুগে সম্ভবত: মুক্বীম<br />অবস্থায় ভাগা কুরবানীর প্রশ্ন উত্থাপিত হয় নি’। [সূত্রঃ মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীকা/১৯] আমি বলবো: উত্থাপিত হয়েছে যেমন হাদ্ঈ ও উযহিয়্যার হাদীসগুলি দ্বারা প্রমাণিত। তাছাড়া প্রাচীন ফুকাহাগণ এই মর্মে মতামত পেশ করেছেন যে, উত্তম কুরবানী কি? তাতে তাঁরা উট-গরুর ভাগের কথা উল্লেখ করেছেন। ইবনু কুদামাহ বলেন: ‘সর্ব্বোত্তম কুরবানী হচ্ছে উটের কুরবানী, অতঃপর গরু, তার পর ছাগল, তারপর উটের অংশ তারপর গরুর অংশ। এটা আবু হানীফা ও শাফেয়ীর মন্তব্য’।<br />[দেখুন,মুগনী,১৩/৩৬৬]।<br /><br />৪- উপরোক্ত লেখক মুকীম অবস্থায় শরীকানায় কুরবানী চলবে না মর্মে একটি যুক্তি পেশ করে লিখেন: ‘এক্ষণে যদি আমরা ভাগা কুরবানী করি, তাহলে পশুর হাড়-হাড্ডি ও গোশত ভাগ করতে পারবো, কিন্তু তার জীবন ভাগ করতে পারব কি’? [মাসায়েলে কুরবানী/২০] আমি বলবো: এটি একটি কেয়াস। এর প্রয়োজন এই স্থানে তেমন নেই। তবে যেহেতু তিনি নিজেই এটা স্বীকার করেন যে, সফর অবস্থায় একটি গরু বা উটে সাত জন শরীক হতে পারে, সেহেতু বলা উচিৎ হবে যে, যদি সফর অবস্থায় একটি পশুর জীবন ৭ ভাগ হতে পারে, তো মুকীম অবস্থায় অসুবিধা কোথায়?<br />______________</div>

ভাগে কোরবানী জায়েজ

শরীকানা বা ভাগে কুরবানী শুধু মুসাফিরের জন্য নাকী মুকিমের জন্যও প্রযোজ্য সে সম্পর্কে। আমাদের সমাজে লামাযহাবীরা বলে থাকে শুধু মাত্র মসাফির অবস...

Read more »

৬ তাকবীরের ঈদের নামাজ

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">ছয় তাকবীরে ঈদের নামাযের সহীহ হাদীস সম্পর্কে আলোচনা।<br /><br />হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে তাঁর বিভিন্ন শাগরিদ এ কথা যেমন বর্ণনা করেছেন যে, তিনি দুই ঈদের নামাযে ৯টি করে তাকবীর দিতেন তেমনি একাধিক সূত্রে এর ব্যাখ্যাও বর্ণিত হয়েছে। আর উভয় ধরনের বর্ণনাই হাদীসের কিতাবে কমবেশি বিদ্যমান আছে।<br />একটি বর্ণনা এই-<br /><br />أخبرنا محمد بن أبان، عن أبي إسحاق، عن أبي الأحوص، عن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه أنه كان يكبر في العيدين تسعاً تسعاً : كان يبتدئ بالتكبيرة التي يفتتح بها الصلاة، ثم يكبر ثلاثاً ثم يقرأ، ثم يكبر الخامسة فيركع بها، ثم يسجد، ثم يقوم فيقرأ، ثم يكبر ثلاثاً، ثم يكبر الرابعة فيركع بها.<br />অর্থাৎ ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান রাহ. মুহাম্মাদ ইবনে আবান থেকে, তিনি আবু ইসহাক (আমর ইবনে আবদুল্লাহ সাবিয়ী) থেকে, তিনি আবুল আহওয়াছ থেকে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি (ইবনে মাসউদ রা.) দুই ঈদের নামাযে ৯টি করে তকবীর দিতেন। যে তাকবীর দ্বারা নামায শুরু করতেন সেই তাকবীর দ্বারা ৯ তাকবীরের প্রথম তাকবীর দিতেন। তারপর ৩ তাকবীর দিয়ে কুরআন পড়তেন। ৫ম তাকবীর দ্বারা রুকু করতেন। তারপর সেজদা করতেন। (দ্বিতীয় রাকাতের জন্য) দাঁড়িয়ে কুরআন পড়তেন। তারপর ৩ তাকবীর দিতেন। ৪র্থ তাকবীর দ্বারা রুকু করতেন।<br />[সূত্রঃ কিতাবুল হুজ্জা আলা আহলিল মাদীনা ১/৩০৪]।<br />মুহাম্মাদ ইবনে আবানের মতো ইমাম সুফিয়ান ছাওরীও আবু ইসহাক সাবেয়ী থেকে ভিন্ন সনদে একই কথা বর্ণনা করেছেন।<br />তাঁর বর্ণনাটি এই-<br />عن الثوري، عن أبي إسحاق، عن علقمة والأسود بن يزيد، أن ابن مسعود كان يكبر في العيدين تسعاً تسعاً : أربعاً قبل القراءة، ثم كبر فركع، وفي الثانية يقرأ، فإذا فرغ كبر أربعاً ثم ركع.<br />অর্থাৎ ইমাম আবদুর রায্যাক রাহ. (সুফিয়ান) ছাওরী থেকে, তিনি আবু ইসহাক থেকে, তিনি আলকামা ও আসওয়াদ ইবনে ইয়াযিদ থেকে, তাঁরা ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি (ইবনে মাসউদ রা.) দুই ঈদের নামাযে ৯টি করে তাকবীর দিতেন। কুরআন পাঠের আগে ৪টি। তারপর তাকবীর দিয়ে রুকু করতেন। দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়িয়ে কুরআন পড়তেন। কুরআন পড়া শেষ হলে ৪ তাকবীর দিতেন। তারপর রুকু করতেন।<br />[সূত্রঃ মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ৫৬৮৬]।<br />ইবনে মাসউদ রা.-এর আমলে যেমন তেমনি ফতোয়ায়ও ৯ তাকবীরের একই ব্যাখ্যা বিদ্যমান আছে।<br />একটি ফতোয়া এই-<br /><br />عن معمر، عن أبي إسحاق، عن علقمة والأسود بن يزيد قال : كان ابن مسعود جالساً وعنده حذيفة وأبو موسى الأشعري، فسألهما سعيد بن العاص عن التكبير في الصلاة يوم الفطر والأضحى، فجعل هذا يقول : سل هذا، وهذا يقول: سل هذا، فقال له حذيفة : سل هذا ـ لعبد الله بن مسعود ـ فسأله، فقال ابن مسعود : يكبر أربعاً ثم يقرأ، ثم يكبر فيركع، ثم يقوم في الثانية فيقرأ، ثم يكبر أربعاً بعد القراءة.<br />অর্থাৎ ইমাম আবদুর রায্যাক রাহ. মা‘মার থেকে, তিনি আবু ইসহাক (আমর ইবনে আবদুল্লাহ সাবিয়ী) থেকে, তিনি আলকামা ও আসওয়াদ থেকে বর্ণনা করেছেন, তাঁরা বলেছেন, একবার ইবনে মাসউদ রা. বসে ছিলেন। তাঁর কাছে হুযায়ফা রা. ও আবু মূসা আশআরী রা.ও ছিলেন। সায়ীদ ইবনুল আস উভয়কে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাযের তাকবীর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে এঁ ওঁকে ওঁ এঁকে জিজ্ঞাসা করতে বলেন। শেষে হুযায়ফা রা. ইবনে মাসউদ রা.-এর দিকে ইশারা করে বললেন, তাঁকে জিজ্ঞাসা কর। জিজ্ঞাসা করলে ইবনে মাসউদ রা. বললেন, ৪ তাকবীর দিয়ে কুরআন পড়বে। তারপর তাকবীর দিয়ে রুকু করবে। দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়িয়ে কুরআন পড়বে। তারপর ৪ তাকবীর দিবে।<br />[সূত্রঃ মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ৫৬৮৭]।<br />ইমাম ইবনে হাযম (৪৫৬ হি.) ‘আলমুহাল্লা’  গ্রন্থে  (৫/৯৩) এর সাথে আরেকটি আছার উল্লেখ করেবলেন, هذان إسنادان في غاية الصحة ‘এ দু’টি সনদ উঁচুপর্যায়ের সহীহ।’<br />হাফেয ইবনে হাজার রাহ. (৮৫২) বলেন, بإسناد صحيح‘আবদুর রায্যাক এটি সহীহ সনদে বর্ণনাকরেছেন।’<br />[সূত্রঃ আদদিরায়া (হিদায়ার সাথে মুদ্রিত) ১/১৭৩]।<br />আবু ইসহাক সাবিয়ী রাহ. থেকে তাঁর আরেকজন শাগরিদ ইমাম সুফিয়ান ছাওরীও ভিন্ন সূত্রে একই ফতোয়া বর্ণনা করেছেন।<br />তাঁর বর্ণনাটি এই-<br /><br />حدثنا وكيع، عن سفيان، عن أبي إسحاق، عن عبد الله بن أبي موسى، وعن حماد، عن إبراهيم:  أن أميراً من أمراء الكوفةথقال سفيان، أحدهما : سعيد بن العاص، وقال الآخر: الوليد بن عقبةথبعث إلى عبد الله بن مسعود وحذيفة بن اليمان وعبد الله بن قيس فقال : إن هذا العيد قد حضر فما ترون؟ فأسندوا أمرهم إلى عبد الله، فقال : تكبر تسعاً : تكبيرة تفتتح بها الصلاة، ثم تكبر ثلاثاً ثم تقرأ سورة، ثم تكبر ثم تركع، ثم تقوم فتقرأ سورة، ثم تكبر أربعاً تركع بإحداهن.<br />অর্থাৎ ইমাম ইবনে আবী শাইবা রাহ. ওকী থেকে, তিনি সুফিয়ান (ছাওরী) থেকে, তিনি আবু ইসহাক থেকে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনে আবী মূসা থেকে, ওকী এটি হাম্মাদ ইবনে আবী সুলায়মান থেকেও বর্ণনা করেছেন, তিনি ইবরাহীম নাখায়ী থেকে, তাঁরা (আবদুল্লাহ ইবনে আবী মূসা ও ইবরাহীম নাখায়ী) বলেছেন, কূফার এক আমীর (বর্ণনাকারী ছাওরী বলেন, সায়ীদ ইবনুল আস, অন্য বর্ণনাকারী হাম্মাদ বলেন, ওলীদ ইবনে ওকবা) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান ও আবদুল্লাহ ইবনে কায়স রা.-কে ডেকে পাঠালেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ঈদ হাজির হয়েছে (এর নিয়ম সম্পর্কে) আপনারা কী বলেন? তাঁরা সকলেই এর দায়িত্ব দেন ইবনে মাসউদ রা.-কে। ইবনে মাসউদ রা. বললেন, ৯ তাকবীর দিবে। ১ তাকবীর দিয়ে নামায শুরু করবে। তারপর ৩ তাকবীর দিয়ে সূরা পড়বে। তারপর তাকবীর দিয়ে রুকু করবে। দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে সূরা পড়বে। তারপর ৪ তাকবীর দিয়ে একটা দ্বারা রুকু করবে।<br />[সূত্রঃ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৫৭৪৮]।<br />বদরুদ্দীন আইনী রাহ. (৮৫৫হি.) বলেন,أخرجه من ثلاث طرق صحاح‘ইমাম তহাবী ইবনে মাসউদ রা.-এর এ ফতোয়া তিনটি সহীহ সূত্রে বর্ণনাকরেছেন(তার মধ্যে এ সূত্রটিও রয়েছে)।<br />[দ্রষ্টব্য. নুখাবুল আফকার  ১৬/৪৫১]।<br />এ বর্ণনাগুলো থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, ইবনে মাসউদ রা. ঈদের নামাযে যে ৯ তাকবীর দিতেন তাতে নামাযের শুরুর এক তাকবীর ও রুকুর দুই তাকবীর গণ্য ছিল। অর্থাৎ মোট ৯ তাকবীর, তার মধ্যে ৩ টি যেকোনো নামাযের বিধান। বাকি ৬টি ঈদের নামাযের জন্য বিশেষ বিধান।<br />বিশিষ্ট সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকেও ৯ তাকবীরের একই ব্যাখ্যা বর্ণিত আছে।<br />বর্ণনাটি এই-<br /><br />حدثنا إبراهيم بن مرزوق قال : ثنا عبد الصمد بن عبد الوارث قال: ثنا شعبة قال : ثنا قتادة وخالد الحذاء، عن عبد الله بن الحارث أنه صلى خلف ابن عباس رضي الله عنهما في العيد،  فكبر أربعاً ثم قرأ، ثم كبر فركع، ثم قام في الثانية فقرأ، ثم كبر ثلاثاً، ثم كبر فركع<br />অর্থাৎ ইমাম তহাবী রাহ. ইবরাহীম ইবনে মারযূক থেকে, তিনি আবদুস সামাদ ইবনে আবদুল ওয়ারিছ থেকে, তিনি শুবা থেকে, তিনি কাতাদা ও খালিদ (ইবনে মেহরান) আলহায্যা থেকে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনে হারিছ থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি ইবনে আব্বাস রা.-এর পেছনে ঈদের নামায পড়তে গিয়ে লক্ষ করেছেন, তিনি ৪ তাকবীর দিয়ে কুরআন পড়েছেন। তারপর তাকবীর দিয়ে রুকু করেছেন। দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়িয়ে কুরআন পড়ে ৩ তাকবীর দিয়েছেন। তারপর তাকবীর দিয়ে রুকু করেছেন।<br />[সূত্রঃ শরহু মাআনিল আছার ৪/৫৭০]।<br />ইমাম ইবনে হাযম এর সাথে আরেকটি আছার উদ্ধৃতকরে লেখেন, هذان إسنادان في غاية الصحة ‘এ দু’টিসনদ উঁচু পর্যায়ের সহীহ।’ ইবনুত তুরকুমানী রাহ. (৭৫০হি.) বলেন, هذا سند صحيح ‘এটি সহীহ সনদ।’বদরুদ্দীন আইনী রাহ. বলেন,<br /> أخرجه من طريقين صحيحين<br />‘ইমাম তহাবী এটি দু’টি সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন।’<br />[সূত্রঃ আলমুহাল্লা ৫/৯৩; আলজাওহারুন নাকী ৩/২৮৭; নুখাবুল আফকার ১৬/৪৪৮]।<br />আসলে শুধু ইবনে মাসউদ ও ইবনে আব্বাস রা.-ই নন, সাহাবী-তাবেয়ীদের মধ্যে যাঁদের থেকে ৯ তাকবীরের কথা বর্ণিত হয়েছে, (যেমন আবু মূসা আশআরী, হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান, মুগীরা ইবনে শুবা, আনাস ইবনে মালেক রা., মাসরূক ইবনুল আজদা, আলকামা ইবনে ইয়াযিদ, আসওয়াদ ইবনে ইয়াযিদ, সায়ীদ ইবনুল মুসায়্যিব, হাসান বছরী, মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন, আমের ইবনে শারাহীল শাবী, আবু কিলাবা, ইবরাহীম নাখায়ী প্রমুখ) তাঁদের সকলের পদ্ধতি এক ও অভিন্ন।<br />এ আলোচনা থেকে এ বিষয়টিও পরিষ্কার হয়ে গেল যে, এসকল সাহাবী-তাবেয়ীর ঈদের নামাযের পদ্ধতি তা-ই যাকে আজ চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে যে এ পদ্ধতির নাকি কোনো দলীল নেই?! অথচ তারা ঠিক সেভাবেই নামায পড়েন যেভাবে নামায পড়তেন বড় বড় সাহাবী-তাবেয়ী। অর্থাৎ মোট ৯ তাকবীরে। তার মধ্যে ১টি তাহরীমার তাকবীর, ২টি রুকুর আর ৬টি ঈদের বিশেষ বিধান।<br />আর এই যে বলা হয়, ঈদের নামাযে ৬ তাকবীর, এর অর্থ তো এই না যে, মোট ৬ তাকবীর। এর অর্থ বরং নামাযের শুরুর এক তাকবীর ও রুকুর দুই তাকবীর ছাড়া ৬ তাকবীর। অর্থাৎ অতিরিক্ত ৬ তাকবীর। তাহরীমা ও রুকুর দুই তাকবীর সব নামাযে বিদ্যমান থাকায় তা উল্লেখ না করে শুধু ৬ তাকবীরের কথা বলা হয়, যা ঈদের নামাযের জন্য বিশেষ বিধান।<br />ঈদের তাকবীর গণনার ক্ষেত্রে তাহরীমা বা রুকুর তাকবীর বাদ দেওয়ার উদাহরণ হাদীস-আছারের কিতাবেও পাওয়া যায়। একটি উদাহরণ দেখুন :<br />হযরত মাকহুল থেকে বর্ণিত, সায়ীদ ইবনুল আস রাহ.-এর কাছে যিনি উপস্থিত ছিলেন তিনি আমাকে বর্ণনা করেছেন, তিনি (সায়ীদ ইবনুল আস) ‘আসহাবে শাজারা’র ৪ সাহাবীকে ডেকে পাঠালেন। তিনি তাঁদের ঈদের তাকবীর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা বলেন, ৮ তাকবীর দিবে।<br />বর্ণনাকারী বলেন, আমি ইবনে সীরীনের কাছে তা উল্লেখ করলে তিনি বলেন, বর্ণনাকারী সত্য বলেছেন তবে নামাযের শুরুর তাকবীরটি ছেড়ে দিয়েছেন!<br />সনদসহ বর্ণনাটির আরবী পাঠ এই-<br />حدثنا هشيم، عن ابن عون، عن مكحول قال : أخبرني من شهد سعيد بن العاص أرسل إلى أربعة نفر من أصحاب الشجرة، فسألهم عن التكبير في العيد فقالوا : ثمان تكبيرات.<br /> قال : فذكرت ذلك لابن سيرين فقال : صدق ولكنه أغفل تكبيرة فاتحة الصلاة.<br />[সূত্রঃ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা নং ৫৭৪৫২]।<br />মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন রাহ. (১১০ হি.)-এর উদ্দেশ্য, সাহাবীগণ মূলত ৯ তাকবীরের কথাই বলেছিলেন। কিন্তু বর্ণনাকারী নামাযের শুরুর তাকবীরটি উল্লেখ করেননি।<br />সারকথা এই যে, ৯ তাকবীর বা সাধারণ পরিভাষায় অতিরিক্ত ৬ তাকবীর, এ দুয়ের মধ্যে শব্দগত কিছু পার্থক্য থাকলেও আমলগত কোনো পার্থক্য নেই।<br />এবার মূল আলোচনায় আসা যাক। ঈদের নামাযে মোট ৯ তাকবীর বা সাধারণ পরিভাষায় অতিরিক্ত ৬ তাকবীর, এ বিষয়ে সবচেয়ে সহীহ  হাদীস হল বিশিষ্ট তাবেয়ী কাসিম আবু আবদুর রহমানের হাদীস, যা তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন। এটি ইমাম তহাবী রাহ. (৩২১ হি.) তাঁর ‘শরহু মাআনিল আছার’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।<br />সনদসহ হাদীসটির আরবী পাঠ নিম্নরূপ:<br /><br />علي بن عبد الرحمن ويحيى بن عثمان قد حدثانا قالا : ثنا عبد الله بن يوسف، عن يحيى بن حمزة قال : حدثني الوضين بن عطاء أن القاسم أبا عبد الرحمن حدثه قال : حدثني بعض أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : صلى بنا النبي صلى الله عليه وسلم يوم عيد  فكبر أربعاً  وأربعاً، ثم أقبل علينا بوجهه حين انصرف قال : لا تنسوا كتكبير الجنائز وأشار بأصابعه وقبض إبهامه.<br />অর্থাৎ ইমাম তহাবী রাহ. আলী ইবনে আবদুর রহমান ও ইয়াহইয়া ইবনে উসমান থেকে, তারা আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ থেকে, তিনি ইয়াহইয়া ইবনে হামযা থেকে, তিনি ওযীন ইবনে আতা থেকে, তিনি কাসিম আবু আবদুর রহমান থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক সাহাবী বর্ণনা করেছেন। তিনি (সাহাবী) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে ঈদের নামায পড়েছেন, তাতে তিনি ৪টি করে তাকবীর দিয়েছেন। নামায শেষে আমাদের দিকে ফিরে বললেন, ভুলে যেয়ো না, (ঈদের নামাযের তাকবীর) জানাযার নামাযের মত। এ কথা বলে তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি গুটিয়ে বাকি ৪ আঙুল দ্বারা ইশারা করলেন।<br />[সূত্রঃ শরহু মাআনিল আছার ৪/৫৬৮]।<br />পাঠকগণ আগে লক্ষ করেছেন যে, ঈদের তাকবীর গণনার ক্ষেত্রে কখনো কখনো তাকবীরে তাহরীমা উল্লেখ করা হত না। সে হিসেবে এ হাদীসটি ৯ তাকবীরের পক্ষে দলীল বিবেচিত হয় এবং বহু ফকীহ-মুহাদ্দিস এটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দলীলস্বরূপ পেশও করেছেন।<br /><br />সনদের প্রাসঙ্গিক আলোচনা<br />____________<br />এই হাদীসের সনদ সহীহ, এর রাবীগণ সকলেই ছিকা। ইমাম তহাবী রাহ. হাদীসটি বর্ণনা করে লেখেন,<br />فهذا حديث حسن الإسناد، وعبد الله بن يوسف ويحيى بن حمزة والوضين والقاسم كلهم أهل رواية معروفون بصحة الرواية، ليس كمن روينا عنه الآثار الأول، فإن كان هذا الباب من طريق صحة الإسناد يؤخذ، فإن هذا أولى أن يؤخذ به مما خالفه.<br />অর্থাৎ ‘এই হাদীসের সনদ ‘হাসান’।৩ আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ, ইয়াহইয়া ইবনে হামযা, ওযীন ও কাসিম, সকলেই সহীহ হাদীস বর্ণনায় প্রসিদ্ধ। এঁরা প্রথমোক্ত (১২ তাকবীর বিষয়ক) হাদীসগুলোর বর্ণনাকারীদের মত নন। সুতরাং ঈদের তাকবীর প্রসঙ্গে সনদগত বিশুদ্ধতা বিবেচিত হলে এটি এর বিপরীত হাদীস অপেক্ষা গ্রহণের অধিক উপযুক্ত।’<br />ইমাম বদরুদ্দীন আইনী রাহ. ‘নুখাবুল আফকার’ গ্রন্থে (১৬/৪৪২) বলেন, هذا إسناد صحيح ورجاله ثقات ‘এটি সহীহ সনদ এবং এর রাবীগণ ছিকা।’<br />জরহ-তাদীল ও আসমাউর রিজালের কিতাব থেকে এই রাবীদের জীবনী অধ্যয়ন করলে পাঠকগণ স্পষ্ট দেখবেন যে, এঁরা সকলেই ছিকা ও নির্ভরযোগ্য, যেমনটি ইমাম তহাবী ও আইনী রাহ. বলেছেন।<br />এখানে শুধু দু’জন রাবী সম্পর্কে ইমামদের কিছু বক্তব্য উল্লেখ করা হল।<br />কাসিম আবু আবদুর রহমান<br />কাসিম আবু আবদুর রহমান ছিকা তথা হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য এবং দামেশকের বিশিষ্ট ফকীহও বটে। ৪ ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীন (২৩৩হি.) বুখারী (২৫৬হি.), আবু হাতেম (২৭৭হি.), ইয়াকুব ইবনে শাইবা (২৬২হি.), ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান (২৭৭হি.), তিরমিযী (২৭৯হি.), আবু ইসহাক হারাবী (২৮৫হি.) প্রমুখ তাঁকে ছিকা বলেছেন।<br />দূরী বলেন, আমি ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীনকে বলতে শুনেছি,<br />القاسم أبو عبد الرحمن ثقة<br />‘কাসিম আবু আবদুর রহমান ছিকা।’<br />[সূত্রঃ তারিখে ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীন, দূরী ২/৩৩০]।<br />ইমাম তিরমিযী বলেন, আমি মুহাম্মাদ (ইবনে ইসমাঈল বুখারী)-কে বলতে শুনেছি, ثقة القاسم‘কাসিম ছিকা।’<br />[সূত্রঃ সুনানে তিরমিযী, হাদীস ৩১৯৫-এর আলোচনা]।<br />ইমাম আবু হাতেম বলেন,<br />حديث الثقات عنه مستقيم لا بأس به، وإنما ينكر عنه الضعفاء.<br />‘ছিকা রাবীদের মাধ্যমে বর্ণিত তাঁর হাদীস সঠিক। তাঁর মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। তাঁর থেকে মুনকার রেওয়ায়েত তো বর্ণনা করে দুর্বল রাবীরা।’<br />[সূত্রঃ তারিখে দিমাশক ৪৯/১০৮]।<br />ইমাম ইয়াকুব ইবনে শাইবা, ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান ও তিরমিযী রাহ. বলেন, ثقة القاسم ‘কাসিম ছিকা।’<br />[সূত্রঃ তারিখে দিমাশক ৪৯/১০৮; আলমারিফাতু ওয়াততারিখ ৩/৩৭৫; সুনানে তিরমিযী, হাদীস ৪২৮, ২৭৩১-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য]।<br />আবু ইসহাক হারাবী বলেন, كان من ثقات المسلمين‘তিনি ছিকা মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।’<br />[সূত্রঃ তাহযীবুত তাহযীব ৮/৩২৪]।<br />  <br />ওযীন ইবনে আতা<br />ওযীন ইবনে আতাও ছিকা। ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীন, আহমদ ইবনে হাম্বল (২৪১হি.) ও আবদুর রহমান ইবনে ইবরাহীম দুহাইম (২৪৫হি.) তাঁকে ছিকা বলেছেন।<br />দারিমী বলেন, ইবনে মায়ীন বলেছেন,  ثقة الوضين بن عطاء ‘ওযীন ইবনে আতা ছিকা।’<br />মুহাম্মাদ ইবনে আউফ বলেন, ইবনে মায়ীন বলেছেন,لا بأس به  ‘তাঁর মধ্যে কোনো সমস্যা নেই।’<br />[সূত্রঃ তাহযীবুল কামাল ৩০/৪৫০-৪৫১]।<br />আবদুল্লাহ বলেন, আমার পিতা (ইমাম আহমদ) বলেছেন, الوضين بن عطاء ثقة ‘ওযীন ইবনে আতা ছিকা।’<br />অন্যত্র তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, ليس به بأس ‘তাঁর মধ্যে কোনো সমস্যা নেই।’<br />[সূত্রঃ আলইলাল ওয়া মারিফাতুর রিজাল, ইমাম আহমদ ২/৫৩৮, ৩/১১৫]।<br />আবু যুরআ দিমাশকী বলেন, আমি আবদুর রহমান ইবনে ইবরাহীম দুহাইমকে তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ثقة ‘সে ছিকা।’<br />[সূত্রঃ তারিখে আবু যুরআ ১/৩৯৪]।<br />ইমাম ইবনে আদী (৩৬৫হি.) ‘আলকামিল ফী যুআফাইর রিজাল’ গ্রন্থে (৮/৩৭৭) তাঁর জীবনীতে কিছু বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন, وللوضين أحاديث غير ما ذكرت، وما أدري بأحاديثه بأساً ‘তাঁর আরো হাদীস আছে। আমি তাঁর হাদীসে কোনো সমস্যা মনে করি না।’<br />ইবনে হিব্বান রাহ. (৩৫৪হি.) তাঁকে ‘ছিকাত’ গ্রন্থে (৭/৫৬৪) উল্লেখ করেছেন।<br />এ আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, কাসিম আবু আবদুর রহমান ও ওযীন ইবনে আতা  উভয়ই ছিকা।<br />এখানে এ বিষয়টিও স্মরণ রাখতে হবে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ঈদের নামাযে ৯ তাকবীর দিতেন, এ শুধু জনৈক সাহাবীর একার বর্ণনা নয়, আরো বহু সাহাবী তা বর্ণনা করেছেন। আর আমলরূপে তো অসংখ্য সাহাবী বর্ণনা করেছেন। উপরন্তু এটি আমলে মুতাওয়ারাছ তথা যুগ পরম্পরায় চলে আসা ব্যাপক ও অনুসৃত কর্মধারার মাধ্যমে প্রমাণিত। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, মুগীরা ইবনে শুবা, আবু মূসা আশআরী, হুযায়ফা রা.সহ অনেক বড় বড় সাহাবী-তাবেয়ীর আমল তাই ছিল এবং মানুষকে তাঁরা এরই তালীম দিয়েছেন।<br />তো বিষয়বস্তুর দিক থেকে আলোচিত হাদীসটির বিশুদ্ধতা খাইরুল কুরূনের ‘আমলে মুতাওয়ারাছ’-এর মাধ্যমে প্রমাণিত এবং এর বিশুদ্ধতা তখন এক স্বীকৃত বিষয় ছিল। একই সাথে এটি সনদগতভাবেও সহীহ। ইমাম তহাবী রাহ.সহ বিভিন্ন মুহাদ্দিস একে সহীহ বলেছেন।<br />ইমাম তহাবীর ইন্তেকাল ৩২১ হিজরীতে। এরপর সুদীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও কোনো ফকীহ-মুহাদ্দিস হাদীসটি সম্পর্কে কোনো আপত্তি করেননি। ইমাম বায়হাকী রাহ. (৪৫৮হি.) ‘আসসুনানুল কুবরা’ও ‘মারিফাতুস সুনানি ওয়ালআছার’ গ্রন্থে নিয়মিত তহাবী রাহ.-এর আলোচনার ‘নকদ’ করতে চেষ্টা করেন। কিন্ত এই হাদীস সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।<br />এ সত্ত্বেও সম্প্রতি একশ্রেণির লোককে এতে কিছু আপত্তি করতে দেখা যায়, যা তাদের জরহ-তাদীল শাস্ত্রের নিয়মনীতি, প্রয়োগ-পদ্ধতি এবং হাদীস অনুসরণের পন্থা সম্পর্কে অজ্ঞতারই পরিচায়ক।<br /><br />কিছু আপত্তি<br />____________<br />বাংলাদেশের মুযাফ্ফর বিন মুহসিন লেখেন, “...বিভিন্ন ত্রুটির কারণে তা নিতান্তই যঈফ, যা দলীল গ্রহণের একেবারেই অযোগ্য।<br />প্রথমত : এর সনদে দুইজন অভিযুক্ত রাবী আছে। (ক) ক্বাসেম ইবনু আব্দুর রহমার আবু আব্দুর রহমান শামী নামক রাবী যঈফ। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, আলী ইবনু ইয়াযীদ কাসেম থেকে উদ্ভুত ঘটনা বর্ণনা করেছে। আর তার থেকে ছাড়া এরকম আর কাউকে বর্ণনা করতে দেখিনি। ইমাম আজলী (রহঃ) বলেন, ‘সে শক্তিশালী নয়’। ইয়াকূব ইবনু শাইবাহ বলেন, ‘যাদেরকে যঈফ সাব্যস্ত করা হয় সে তাদের মধ্যে একজন’। ইবনু হাজার (রহঃ)সহ অধিকাংশ মুহাদ্দিছই তাকে ‘অজ্ঞাত’ বলে অভিযুক্ত করেছেন। তাছাড়া ইমাম আহমাদ, আবু হাতেম, ইবনু মাঈন (রহঃ) প্রমুখ মুহাদ্দিছ তার বর্ণিত হাদীছসমূহকে ছহীহ হাদীছের বিরোধী বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। গিলাবী বলেন, ‘সে হাদীছ বর্ণনায় অস্বীকৃত’। ... প্রকৃতপক্ষে সে হাদীছ বর্ণনার ব্যাপারে মুনকার রাবী। এ সমস্ত ত্রুটির কারণে ইবনু হিব্বানের উক্তি তুলে ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) চূড়ান্ত মন্তব্য করে বলেন,<br />‘আমার বক্তব্য হ’ল- ইবনু হিব্বান বলেছেন, ছাহাবীদের থেকে সে বিভ্রান্তিকর হাদীছ বর্ণনা করে থাকে’।<br />(খ) ওয়াযীন ইবনে আত্বা নামে একজন দুর্বল রাবী রয়েছে। ইবনু সা’দ বলেন, ‘সে হাদীস বর্ণনায় যঈফ’। ইবনু ক্বানে বলেন, ‘সে যঈফ’। ইমাম জাওযজানী বলেন, ‘হাদীছ বর্ণনায় সে অত্যন্ত দুর্বল’। ...ইবনু হাজার আসক্বালানীও তার সম্পর্কে স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত দুর্বল বলে অভিযোগ করেছেন। অনেক ক্ষেত্রে সে যে ছহীহ হাদীছের বিপরীত বর্ণনা করেছে তা প্রমাণ করেই ইবনু হাজার আসক্বালানী তাকে মুনকার বলে চূড়ান্ত মন্তব্য করেছেন। ..কেউ কেউ ‘তার সমস্যা নেই’ বলে নরম ভাষায় মন্তব্য করলেও ।...<br />দ্বিতীয়ত : এই বর্ণনাটিও মরফূ নয়। ...এটিও ত্রুটিপূর্ণভাবে আব্দুর রহমান শামী থেকে মারফূ হিসাবে বর্ণিত হয়েছে।...<br />....<br />চতুর্থত : সরাসরি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত সকল ছহীহ হাদীছের বিরোধী। অতএব ছহীহ হাদীছের বিপরীতে এমন ত্রুটিপূর্ণ বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না ...।”<br />[সূত্রঃ ছহীহ হাদীছের কষ্টিপাথরে ঈদের তাকবীর পৃ. ২৩-২৪]।<br />সচেতন পাঠক মাত্রই উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন যে, মুযাফ্ফর বিন মুহসিন এখানে কী কী ভ্রান্তির শিকার হয়েছেন এবং বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন! পাঠকবর্গের সহজতার জন্য নিম্নে অতি সংক্ষেপে এ আপত্তিগুলোর কিছু পর্যালোচনা করা হল।<br />এক. ইমাম ইবনে মায়ীন, বুখারী, আবু হাতেম, ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান, ইয়াকুব ইবনে শাইবা, তিরমিযী রাহ.সহ বড় বড় ও অধিকাংশ জরহ-তাদীলের ইমাম কাসিম আবু আবদুর রহমানকে ছিকা বলেছেন। কিন্তু তিনি এগুলো সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে কেবল ইমাম আহমদ, ইজলী, গাল্লাবী ও ইবনে হিব্বানের বক্তব্য উল্লেখ করেছেন। এঁদের মধ্যে শুধু ইমাম আহমদ আপত্তির কারণ বয়ান করেছেন। তাই দেখা যাক তাঁর আপত্তির কারণ কী?<br />আবু বকর আলআছরাম বলেন, একবার ইমামআহমদ রাহ.-এর সামনেالدباغ طهور, এ হাদীসটি  উল্লেখ করা হলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন,<br /><br />يروى على بن يزيد عنه أعاجيب وتكلم فيهما وقال: ما أرى هذا إلا من قبل القاسم.<br />অর্থাৎ ‘আলী ইবনে ইয়াযিদ কাসিম আবু আবদুর রহমান থেকে কিছু অদ্ভুত রেওয়ায়েত বর্ণনা করে। এরপর উভয় সম্পর্কে আপিত্ত করে বলেন, আমি মনে করি, এটা কাসিমের পক্ষ থেকেই হয়েছে’?!<br />এখানে আমরা লক্ষ করলাম যে, ইমাম আহমদ রাহ. কাসিমের ‘বর্ণিত হাদীসসমূহ’ অর্থাৎ সমস্ত হাদীস বা ওযীন ইবনে আতার সূত্রে বর্ণিত হাদীস প্রত্যাখ্যান করেননি। তিনি এমন কিছু হাদীস সম্পর্কে আপত্তি করেছেন, যা তাঁর থেকে আলী ইবনে ইয়াযিদ বর্ণনা করেছে। অথচ আলোচিত হাদীসটি আলী ইবনে ইয়াযিদের সূত্রে বর্ণিত নয়, এটি তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন ওযীন ইবনে আতা, যিনি ছিকা। সুতরাং এই হাদীসের ব্যাপারে ইমাম আহমদ রাহ.-এর এ বক্তব্য উদ্ধৃত করা অনুচিত।<br />দ্বিতীয়ত আলী ইবনে ইয়াযিদের সূত্রে বর্ণিত কিছু হাদীস সম্পর্কে যে আপত্তি করা হয়েছে ইমাম ইবনে মায়ীন, বুখারী ও আবু হাতেম রাহ. প্রমুখের মতে তা-ও সঠিক নয়। তাঁরা কাসিম আবু আবদুর রহমানকে ছিকা বলার পাশাপাশি এ-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তাঁর মাধ্যমে বর্ণিত কিছু হাদীসে যে আপত্তিকর বিষয় পাওয়া গিয়েছে, এর ‘ইল্লত’ তিনি নন, তাঁর কিছু যয়ীফ শাগরিদ। কেননা আপত্তিকর বিষয় পাওয়া গিয়েছে শুধু যয়ীফ শাগরিদদের মাধ্যমে বর্ণিত কিছু হাদীসে, যা থেকে বোঝা যায় যে, এর ইল্লত এরাই, তিনি নন।<br />ইবনুল জুনাইদ বলেন, আমি ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীনকে বলতে শুনেছি, ‘কাসিম আবু আবদুর রহমান ছিকা। এঁরা (দুর্বল বর্ণনাকারীরা) তাঁর থেকে যা মারফূরূপে বর্ণনা করে, ছিকা বর্ণনাকারীগণ তা মুরসালরূপে বর্ণনা করেন।’<br />অন্যত্র বলেন, এবং এ-ও বলতে শুনেছি যে, ‘কাসিম আবু আবদুর রহমান ছিকা। এই হাদীসগুলো তাঁর থেকে ছিকা রাবীগণও বর্ণনা করেন কিন্তু মারফূরূপে নয়।’<br />এরপর তিনি বলেন, ‘কোনো কোনো যয়ীফ রাবী এমন আছে যাদের বর্ণনাই তাদের যয়ীফ হওয়া নির্দেশ করে।’<br />[সূত্রঃ সুআলাতে ইবনুল জুনাইদ পৃ. ৩৯৬, ৪০৯]।<br />ইবনে মায়ীন রাহ.-এর উদ্দেশ্য, কাসিমের কিছু হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে তাঁর শাগরিদদের মধ্যে ইখতিলাফ হয়েছে। র্দ্বুল শাগরিদরা মারফূরূপে বর্ণনা করে আর ছিকাগণ মুরসালরূপে বর্ণনা করেন। এই মুরসাল বর্ণনাকে মারফূ বানিয়ে ফেলার দোষ ঐ দুর্বলদেরই, তাঁর নয়।<br />মুহাম্মাদ ইবনে উমর বলেন, ইবনে মায়ীন বলেছেন, আলী ইবনে ইয়াযিদ কাসিম থেকে, তিনি আবু উমামা থেকে, এই সূত্রে বর্ণিত সব হাদীস যয়ীফ।’<br />[সূত্রঃ তাহযীবুল কামাল ২১/১৭৯]।<br />বলাবাহুল্য, এ হাদীসগুলোকে যয়ীফ বলা হয়েছে আলী ইবনে ইয়াযিদের কারণেই।<br />আবু হাতেম রাহ.-এর এ বক্তব্য আগেই উল্লেখিত হয়েছে যে, ‘ছিকাদের মাধ্যমে বর্ণিত তাঁর হাদীস সঠিক। তাঁর মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। তাঁর থেকে মুনকার রেওয়ায়েত তো বর্ণনা করে দুর্বল রাবীরা।’<br />মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম বলেন, আমি আবু হাতেম রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আলী ইবনে ইয়াযিদ কাসিম থেকে, তিনি আবু উমামা থেকে, এই সূত্রে বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে আপনি কী বলেন? উত্তরে তিনি বললেন, ‘এগুলো যয়ীফ।’<br />[সূত্রঃ তাহযীবুল কামাল ২১/১৮১]।<br />তিরমিযী রাহ. তাঁর ‘সুনান’ গ্রন্থে কাসিমের একাধিক হাদীস বর্ণনা করেছেন।<br />এসব হাদীস সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য নিম্নরূপ:  <br />*هذا حديث حسن صحيح غريب من هذا الوجه، والقاسم هو ابن عبد الرحمن يكنى أبا عبد الرحمن،... وهو ثقة شامي، وهو صاحب أبي أمامة.<br />*هذا حديث حسن صحيح غريب، وهو أصح عندي من حديث معاوية بن صالح.<br />*هذا حديث حسن غريب.<br />*هذا حديث حسن صحيح غريب.<br />*هذا إسناد ليس بالقوي، قال محمد: وعبيد الله بن زحر ثقة، وعلي بن يزيد ضعيف، والقاسم هو ابن عبد الرحمن يكنى أبا عبد الرحمن... وهو ثقة والقاسم شامي.<br />*هذا حديث غريب إنما يروى من حديث القاسم عن أبي أمامة، والقاسم ثقة وعلي بن يزيد يضعف في الحديث، سمعت محمداً يقول: القاسم ثقة وعلي بن يزيد يضعف.<br />এখানে আমরা দেখলাম, তিরমিযী রাহ. তাঁর ৩টিহাদীসকে ‘হাসানুন সহীহুন গরীব’, ১টিকে ‘হাসানুন গরীব’, ১ টিকে ‘গরীব’ আর ১টিকে ‘শক্তিশালী নয়’বলেছেন। সেই সাথে এ দিকেও ইশারা করেছেন যে, এই গারাবত বা দুর্বলতার ‘ইল্লত’ আলী ইবনে ইয়াযিদ, কাসিম নন।<br />[সূত্রঃ সুনানে তিরমিযী, হাদীস ৪২৮, ১৬২৭, ১৬৬৯, ২৬৮৫, ২৭৩১, ৩১৯৫, এর আলোচনা]।<br />মোদ্দাকথা এই যে, কাসিম আবু আবদুর রহমান ছিকা। আর আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.-এর করা আপত্তি এখানে মোটেই প্রযোজ্য নয়। উপরন্তু অনেক ইমাম তা খ-নও করেছেন।<br />  <br />দুই. ইয়াকুব ইবনে শাইবা রাহ.-এর বক্তব্যটি তিনি ইমাম যাহাবী কৃত ‘মীযানুল ইতিদাল’ থেকে নিয়েছেন। তাই প্রথমে দেখা যাক সেখানে তা কীভাবে আছে। যাহাবী রাহ. ইমাম তিরমিযীর বক্তব্য ‘তিনি ছিকা’ উদ্ধৃত করে বলেন,<br />وقال يعقوب بن شيبة: منهم من يضعفه.<br />অর্থাৎ ‘এবং ইয়াকুব ইবনে শাইবা বলেছেন, তাদের (ইমামদের) কেউ কেউ তাঁকে (কাসিমকে) যয়ীফ বলেন।’<br />এ হল ‘মীযানুল ইতিদাল’র পাঠ আর এটাকেই মুযাফ্ফর বিন মুহসিন ‘যাদেরকে যঈফ সাব্যস্ত করা হয় সে তাদের মধ্যে একজন’ বানিয়ে দিয়েছেন! যার অর্থ অনেকটা এরকম, তিনি সর্বসম্মত যয়ীফ! অথচ ‘মীযানুল ইতিদাল’-এর ওই পাঠ থেকেও বোঝা যায় যে, কোনো কোনো ইমাম তাঁকে ছিকাও বলেছেন এবং বাস্তবতাও তাই। এটা স্বয়ং ইয়াকুব ইবনে শাইবা রাহ.-এর বক্তব্যেই বিদ্যমান আছে। তাঁর পুরো বক্তব্য লক্ষ করুন,<br />قد اختلف الناس فيه، فمنهم من يضعف روايته، ومنهم من يوثقه.<br />অর্থাৎ ‘তাঁর (কাসিম আবু আবদুর রহমানের) ব্যাপারে ইমামদের ইখতিলাফ হয়েছে। কেউ কেউ যয়ীফ বলেন আর কেউ কেউ ছিকা বলেন।’<br />[সূত্রঃ তারিখে দিমাশক ৪৯/১১৩; তাহযীবুল কামাল ২৩/৩৮৯; তাহযীবুত তাহযীব ৮/৩২৪]।<br />তার চেয়েও বড় বিষয় এই যে, ইয়াকুব ইবনে শাইবা রাহ. এখানে কাসিম সম্পর্কে ইমামদের যে ইখতিলাফ আছে কেবল সেটাই উল্লেখ করেছেন, নিজের মত এখানে উল্লেখ করেননি। তা উল্লেখ করেছেন অন্যত্র এবং সেখানে তিনি তাঁকে ছিকা বলেছেন। মুহাম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে ইয়াকুব বলেন, আমার দাদা (ইয়াকুব ইবনে শাইবা) বলেছেন القاسم أبو عبد الرحمن ثقة ‘কাসিম আবু আবদুর রহমান ছিকা।’<br />[সূত্রঃ তারিখেদিমাশক ৪৯/১০৮; তাহযীবুল কামাল ২৩/৩৮৯; তাহযীবুত তাহযীব ৮/৩২৪]।<br /><br />তিন. ইবনে হাজার রাহ.সহ অধিকাংশ মুহাদ্দিস কাসিমকে কোথায় ‘অজ্ঞাত’ বলে অভিযুক্ত করেছেনসেটার উদ্ধৃতি তিনি দেননি এবং সম্ভবও নয়। ইবনেহাজার রাহ. ‘তাকরীবুত তাহযীব’ গ্রন্থে (পৃ. ৫২৫) তাঁকে নূন্যতম صدوق বলেছেন। আর এ বাক্য দ্বারা তাঁর কী উদ্দেশ্য সেটা তো তিনি নিজেই বলে দিয়েছেন। ‘তাকরীবুত তাহযীব’-এর ভূমিকায় তিনি লিখেছেন,<br />الرابعة : من قصر عن درجة الثالثة قليلاً، وإليه الإشارة بصدوق أولا بأس به...<br />অর্থাৎ ‘চতুর্থ, যে তৃতীয় স্তর তথা ছিকার চেয়ে কিছুটা নিম্নের হয়। আর তার দিকেই ইঙ্গিতকরা হবে  صدوقবা  لا بأس به ..দ্বারা।’<br />[সূত্রঃ তাকরীবুততাহযীব পৃ. ৯৬]।<br />আর ইমাম ইবনে মায়ীন, বুখারী, আবু হাতেম, ইয়াকুব ইবনে শাইবা, ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান, তিরমিযী, আবু ইসহাক হারাবী তো তাঁকে ছিকা বলেছেন। আর দু-একজন মাত্র যয়ীফ বলেছেন।কিন্তু ‘অজ্ঞাত’ বলেন নি কেউই।<br /><br />চার. ইমাম আহমদ, আবু হাতেম, ইবনে মায়ীন রাহ. প্রমুখ মুহাদ্দিস কোথায় তাঁর বর্ণিত হাদীস সমূহকে সহীহ হাদীসের বিরোধী বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন?! এঁরা তো তাঁকে ছিকা বলেছেন।<br /><br />পাঁচ. ‘তাহযীবুত তাহযীব’ মূলত হাযেফ আবুলহাজ্জাজ মিয্যী রাহ. (৭৪২হি.) রচিত ‘তাহযীবুলকামাল’ থেকে সংক্ষেপিত। ইবনে হাজার রাহ. এতে প্রথমে ‘তাহযীবুল কামাল’ গ্রন্থে উল্লেখিত বক্তব্য গুলো উদ্ধৃত করেন। এরপর এতে অনুল্লেখিত কিছু বক্তব্য উদ্ধৃত করেন। এক্ষেত্রে তিনি শুরুতে قلت বলেন, যাতে ‘তাহযীবুল কামাল’-এর আলোচনা আর তাঁর বর্ধিতের মাঝে পার্থক্য হয়। ‘তাহযীবুত তাহযীব-এর ভূমিকায় তিনি পরিষ্কার লিখেছেন,<br /><br />وما زدته في أثناء التراجم قلت في أوله: >قلت<، فجميع ما بعد >قلت< فهو من زيادتي إلى آخر الترجمة.<br />অর্থাৎ ‘রাবীর জীবনীতে আমি যা বাড়াব তার আগেقلت বলব। সুতরাং قلت -এর পর থেকে জীবনীর শেষপর্যন্ত যা কিছু আছে সবই আমার বাড়ানো।’<br />[সূত্রঃ তাহযীবুত তাহযীব ১/৫]।<br /><br />এ থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, قلت বাক্যটি মিয্যী রাহ.-এর আলোচনা আর ইবনে হাজার রাহ.-এর বর্ধিতের মাঝে পার্থক্য চিহ্ন মাত্র, মন্তব্য সূচক নয়। সুতরাং ইবনে হিব্বানের বক্ত্যবকে ইবনে হাজার রাহ.-এর মন্তব্য মনে করা ভুল।<br />আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, ইবনে হিব্বানের ওই বক্তব্য চরম আপত্তিকর। যাহাবী রাহ. তা খণ্ডন করতে গিয়ে বলেন,<br /><br />قلت : قد وثقه ابن معين من وجوه عنه.<br />অর্থাৎ ‘আমি বলব, ইবনে মায়ীন রাহ. তাঁকে (কাসিম আবু আবদুর রহমানকে) ছিকা বলেছেন, যা তাঁর থেকে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।’<br />[সূত্রঃ মীযানুল ইতিদাল ৩/৩৭৩]।<br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiUB5RMcdB1uNfcpm1DeSG9yPZOdU9vkJWU4MUpxcosskqo5DTLoQeBXHmSnTElGUmYyVdv1IPojbPshtPN-Q1WnPTnn8Swqe-Bg2dyqRicbp-SFv6uzqX4-Pjm2Ia82TtnCQMSqVYfbvGG/s1600/20170623_202955.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="374" data-original-width="420" height="284" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiUB5RMcdB1uNfcpm1DeSG9yPZOdU9vkJWU4MUpxcosskqo5DTLoQeBXHmSnTElGUmYyVdv1IPojbPshtPN-Q1WnPTnn8Swqe-Bg2dyqRicbp-SFv6uzqX4-Pjm2Ia82TtnCQMSqVYfbvGG/s320-rw/20170623_202955.jpg" width="320" /></a></div><br /><br />ছয়. আহমদ ইবনে হাম্বল, ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীন, ইবনে হিব্বান, ইবনে আদী রাহ.সহ বড় বড় ও অধিকাংশ আইম্মায়ে জরহ-তাদীল ওযীন ইবনেআতাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। আর যে কজন তাঁকে যয়ীফ বলেছেন এঁরা মাকাম-মর্যাদার দিক থেকে ওঁদের চেয়ে নিম্নের। একারণে ওঁদের প্রশংসার  (তাওছীক) বিপরীতে এঁদের সমালোচনা (জরহ) গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয় না। ইমাম যাহাবী রাহ. (৭৪৮হি.) ‘আলকাশিফ’ গ্রন্থে (৪/৪৫০) সম্ভবত সেদিকেই ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন। তিনি  লেখেন, ثقة وبعضهم ضعفه ‘তিনি (ওযীন) ছিকা  (নির্ভরযোগ্য), কেউ কেউ তাঁকে যয়ীফ বলেছেন।’<br />নূরুদ্দীন হাইছামী রাহ. (৮০৭ হি.) ‘মাজমাউয যাওয়াইদ’ গ্রন্থে (৫/২৯৩) এক হাদীসের আলোচনায় বলেছেন,<br />وثقه أحمد وابن معين وابن حبان، وضعفه من هو دونهم في المنزلة<br />‘তাঁকে ছিকা বলেছেন ইমাম আহমদ, ইবনে মায়ীন ও ইবনে হিব্বান। আর যয়ীফ বলেছেন যারা এঁদের চেয়ে নিম্নের স্তরের।’<br /><br />সাত. ইবনে হাজার রাহ. ‘তাকরীবুত তাহযীব’ গ্রন্থে (পৃ. ৬৭৪) ওযীন ইবনে আতা সম্পর্কে কেবল বলেছেন, سيء الحفظ ‘তাঁর স্মৃতি খারাপ।’ আর ‘স্মৃতি খারাপ’ আর ‘স্মৃতি শক্তি অত্যন্ত দুর্বল’ দুটো  এক পর্যায়ের নয়।<br />তাছাড়া ওযীন ইবনে আতা সম্পর্কে ইবনে হাজাররাহ.-এর এ বক্তব্য না ইমামদের বিস্তারিত বক্তব্য গুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না যাহাবী রাহ.-এর বক্তব্যের সাথে। বরং স্বয়ং তাঁর (অন্য কিতাবের) বক্তব্যের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তিনি ‘ফাতহুলবারী’ গ্রন্থে  (২/৫৫৯) এক হাদীস সম্পর্কে, যার সনদে ওযীন ইবনে আতা আছেন বলেছেন, إسناده قوي ‘এরসনদ শক্তিশালী।’<br />আট. ইবনে হাজার রাহ. ‘তাহযীবুত তাহযীব’ গ্রন্থে قلت বলে মুহাদ্দিস সাজীর একটি বক্তব্য উল্লেখ করেছেন।<br />তিনি লেখেন,<br />قلت: وقال الساجي: عنده حديث واحد منكر غير محفوظ عن علقمة، عن عبد الرحمن بن عائذ، عن علي: حديث "العينان وكاء السه...<br />অর্থাৎ ‘আমি (ইবনে হাজার) বলব, সাজী বলেছেন, তাঁর (ওযীন ইবনে আতার) একটি মুনকার বর্ণনা আছে, যা তিনি আলকামা থেকে, তিনি আবদুর রহমান ইবনে আয়িয থেকে, তিনি আলী রা. থেকে বর্ণনা করেছেন...।’<br />[সূত্রঃ তাহযীবুত তাহযীব ১১/১২১]।<br /><br />এ থেকে পরিষ্কার যে, ইবনে হাজার রাহ. এখানে ওযীন ইবনে আতাকে মুনকার বলে চূড়ান্ত মন্তব্য করেন নি। তিনি কেবল قلت বলে সাজীর এ বক্তব্য উল্লেখ করেছেন, ‘তাঁর একটি মুনকার বর্ণনা আছে...।’<br />আর পাঠকগণ আগে স্বয়ং ইবনে হাজারের জবানিতে দেখেছেন যে, قلت দ্বারা তাঁর উদ্দেশ্য ‘তাহযীবুলকামাল’-এ অনুল্লেখিত কিছু বক্তব্য কেবল উল্লেখ করা, মন্তব্য করা নয়।<br />উপরন্তু সাজী রাহ. এখানে ওযীন ইবনে আতাকে মুনকার বলেন নি, তিনি শুধু বলেছেন, ‘তাঁর একটি মুনকার বর্ণনা আছে। আর ‘তার একটি মুনকার বর্ণনা আছে’ ও ‘তিনি মুনকার’ দুটোর মাঝে আসমান-জমিন ফারাক। একটি মুনকার বর্ণনার কারণে রাবী মুনকার হয়ে যায় না।<br />তাছাড়া সাজী যে বর্ণনাটিকে মুনকার আখ্যা দিয়েছেন সেটা আসলে মুনকার কি না, হলে এর ইল্লতকে, এ বিষয়ে মুহাদ্দিসদের মতভেদ আছে।<br />দেখুন : আলবদরুল মুনীর ২/৪২৫-৪২৯; নাসবুর রায়াহ১/৪৪-৪৫; ইলালে ইবনে আবী হাতেম ১/৪৭; মুখতাসারু সুনানি আবি দাউদ ১/১৪৫; তাহযীবুততাহযীব ১১/১২১]।<br /><br />নয়. ‘তার হাদীসে কোনো সমস্যা নেই’, এটি প্রশংসা-বাক্য। এর সাধারণ অর্থ, রাবী ‘ছিকা’র চেয়ে একটু নিম্নের, যার হাদীসকে ‘হাসান’ বলা হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে তা ‘ছিকা’র অর্থেও ব্যবহৃত হয়েছে। জরহ-তাদীলের কিতাবে এর অসংখ্য উদাহরণ আছে।<br /><br />দশ. এই হাদীসটি মারফূ নয় তো কি? মারফূ তো ঐ হাদীসকেই বলে যাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী বা কর্ম বর্ণনা করা হয়। আর এখানে তো তাঁরই আমল বর্ণনা করা হয়েছে।<br />কোনো ইমাম কি এটি মারফূ হওয়া অস্বীকার করেছেন বা কোনো রাবী কি তা মারফূ ছাড়া অন্যভাবে বর্ণনা করেছে? কিছুই নয়। একারণেই পরমুহূর্তে তিনি কথা ঘুরিয়ে দিয়েছেন, ‘এটি ত্রুটিপূর্ণ ভাবে আব্দুর রহমান শামী থেকে মারফূ হিসাবে বর্ণিত হয়েছে’!? তো এখানে তিনি এটি মারফূ হওয়া স্বীকার করেছেন। তাহলে আগে কেন বললেন, এটি মারফূ নয়? এটা পাঠককে বিভ্রান্তি ও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলার একটা অপকৌশল। পাঠকগণ দেখেছেন, এই হাদীসের রাবীগণ সকলেই ছিকা এবং এর সনদে কোনো ত্রুটি নেই।<br /><br />এগারো. ১২ তাকবীর বিষয়ক হাদীসগুলোর পর্যালোচনা থেকে বোঝা যায় যে, এ বিষয়ে প্রমাণিত মাত্র দু-একটি হাদীসই। তা-ও সহীহ স্তরের নয়, হাসান পর্যায়ের।<br />আর সহীহ ধরে নেওয়া হলেও হাদীস অনুসরণের অনুসৃত ও মাসনূন পদ্ধতি কি এই যে, দু-একটি সহীহ হাদীসের কারণে সনদগত ভাবে সহীহআর আমলগতভাবে মুতাওয়ারাছ একটি হাদীসকেপ্রত্যাখ্যান করে দেওয়া? সুন্নাহ্ সম্মত পদ্ধতি তো বরং এ কথা স্বীকার করা যে, উভয় পদ্ধতিই নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত, তিনি কখনো এভাবে করেছেন, কখনো ওভাবে। অন্যথায় একই কথা  তো অন্যদেরও বলার সুযোগ থাকবে।<br /><br />সারকথা এই যে, আলোচিত হাদীসটি সনদগত ভাবে সহীহ (ইমাম তহাবী ও বদরুদ্দীন আইনী রাহ. একে সহীহ বলেছেন এবং বহু ফকীহ-মুহাদ্দিস এর দ্বারা দলীল পেশ করেছেন)। আর আমলগত ভাবে মুতাওয়ারাছ। আর একে যয়ীফ সাব্যস্ত করার জন্য যা কিছুর অবতারণা করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অবাস্তব ও শাস্ত্রীয় নিয়মনীতি বহির্ভূত।<br /><br />বেশ ক’জন গাইরে মুকাল্লিদ আলেমও তা স্বীকার করেছেন।<br />লা মাযহাবী আলবানী (১৪২০হি.) তার  ‘সিলসিলাতুলআহাদীসিস সহীহা’ গ্রন্থে ইমাম তহাবী রাহ.-এর বক্তব্য সমর্থন করার পর লেখেন, ‘সুতরাং এটি (ইমাম) আবু দাউদ প্রমুখ ‘হাসান’ সনদে আবুআয়েশার সূত্রে আবু হুরায়রা রা.-এর যে হাদীস বর্ণনা করেছেন সেটার শক্তিশালী ‘শাহিদ’। ... এটি মূলত একটি বিরল ও শক্তিশালী বর্ণনা, যা ইমাম তহাবী রাহ. আমাদের জন্য সংরক্ষণ করেছেন...। এর শক্তি আরো বৃদ্ধি পায় আবদুর রায্যাক রাহ. যা বর্ণনা করেছেন তা দ্বারা...।’<br />এরপর তিনি কিছু আছার উল্লেখ করে বলেন, ‘এসব শক্তিশালী আছার শিরোনামের হাদীস তথা আলোচিত হাদীসের সমর্থন করে। এগুলো মওকূফ হলেও মারফূর হুকুমে। কারণ এ ধরনের বিষয়ে (রাসূলের) নির্দেশনা ছাড়া এক জামাত সাহাবীর ঐক্য সম্ভব নয়। এ জাতীয় বিষয় যদি মওকূফ রূপেও বর্ণিত হত তবু দলীল বিবেচিত হত। অথচ তা দু’টি মারফূ সূত্রেবর্ণিত হয়েছে, একটি শিরোনামের হাদীস অন্যটি এরশাহিদ আবু আয়েশার হাদীস...।’<br />[সূত্রঃ সিলসিলাতুলআহাদীসিস সহীহা, হদীস ২৯৯৭]।<br />তার আলোচনার আরবী পাঠ এই,<br /><br />...فالحديث شاهد قوي بهذا الإسناد لما أخرجه أبو داود وغيره بإسناد حسن عن أبي عائشة جليس لأبي هريرة... وهي في الحقيقة رواية عزيزة جيدة،مما حفظه لنا الإمام الطحاوي رحمه الله،... ويزداد قوة بما رواه عبد الرزاق... فهذه آثار كثيرة قوية تشهد لحديث الترجمة، وهي وإن كانت موقوفة، فهي في حكم المرفوع، لأنه يبعد عادة أن يتفق جماعة منهم على مثله دون توقيف، ولو جاء مثله غير مرفوع لكان حجة، فكيف وقد جاء مرفوعا من وجهين أحدهما حديث الترجمة، والآخر شاهده المذكور عن أبي عائشة...<br /><br />কিছু আছার<br />৯ তাকবীরের পক্ষে কিছু আছার আগে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে আরো কিছু উল্লেখ করা হল।<br />১. আবদুল্লাহ ইবনে হারিছ থেকে বর্ণিত, আমি ইবনে আব্বাস রা.-কে বছরায় ঈদের নামাযে ৯ তাকবীর দিতে দেখেছি এবং মুগীরা ইবনে শুবা রা.-কেও অনুরূপ করতে দেখেছি।<br />ইসমাইল ইবনে আবুল ওলীদ বলেন, আমি খালিদকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইবনে আব্বাস রা. কীভাবে তাকবীর দিয়েছেন? উত্তরে তিনি আমাদের মা‘মার ও ছাওরীর সূত্রে বর্ণিত আবু ইসহাকের হাদীসে ইবনে মাসউদ রা. যেভাবে তাকবীর দিয়েছেন ঠিক তাই বর্ণনা করেছেন।<br />[সূত্রঃ মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ৫৬৮৯]।<br />সনদসহ আছারটির আরবী পাঠ এই,<br /><br />عبد الرزاق قال : أخبرنا إسماعيل بن أبي الوليد قال : حدثنا خالد الحذاء، عن عبد الله بن الحارث قال : شهدت ابن عباس كبر في صلاة العيد بالبصرة تسع تكبيرات...<br />قال : وشهدت المغيرة بن شعبة فعل ذلك أيضاً. فسألت خالداً كيف فعل ابن عباس؟ ففسر لنا كما صنع ابن مسعود في حديث معمر والثوري عن أبي إسحاق سواء.<br />হাফেয ইবনে হাজার রাহ. বলেন, إسناده صحيح ‘এরসনদ সহীহ’।<br />[সূত্রঃ আদদিরায়া ১/১৭৩]<br /><br />২. মুহাম্মাদ (ইবনে সীরীন) থেকে বর্ণিত, আনাস রা. বলেন, নামাযের তাকবীর (তাকবীরে তাহরীমা)সহ৯ তাকবীর হবেÑ প্রথম রাকাতে ৫টি আর দ্বিতীয় রাকাতে ৪টি।<br />[সূত্রঃ শরহু মাআনিল আছার ৪/৫৭৩]।<br /><br />সনদসহ বর্ণনাটির আরবী পাঠ এই,<br /><br />حدثنا أبو بكرة قال : ثنا روح قال : ثنا الأشعث، عن محمد، عن أنس بن مالك رضي الله عنه أنه قال : تسع تكبيرات : خمس في الأولى، وأربع في الأخيرة مع تكبيرة الصلاة.<br />বদরুদ্দীন আইনী রাহ. ‘নুখাবুল আফকার’ গ্রন্থে  (১৬/৪৫৪) বলেন, أخرجه من طريقين صحيحين ‘ইমামতহাবী এটি দু’টি সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন।’<br /><br />৩. ইবরাহীম নাখায়ী থেকে বর্ণিত, আসওয়াদ ওমাসরূক ঈদের নামাযে ৯ তাকবীর দিতেন।<br />[প্রাগুক্ত ৪/৫৭৪]।<br /><br />সনদসহ আছারটির আরবী পাঠ এই,<br />حدثنا أبو بكرة قال : ثنا روح قال : ثنا شعبة قال : سمعت منصوراً يحدث عن إبراهيم، عن الأسود ومسروق أنهما كانا يكبران في العيدين تسع تكبيرات.<br />বদরুদ্দীন আইনী ‘নুখাবুল আফকার’ গ্রন্থে  (১৬/৪৫৮) বলেন, فأخرجه أيضاً بإسناد صحيح ‘ইমামতহাবী এটিও সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।’<br /><br />৪. খালিদ (ইবনে মেহরান আলহায্যা) থেকে বর্ণিত, আবু কিলাবা বলেন, দুই ঈদের নামাযে তাকবীর ৯টিকরে।<br />[সূত্রঃ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৫৭৬২]।<br />সনদসহ বর্ণনাটির আরবী পাঠ এই,<br /><br />حدثنا الثقفي، عن خالد، عن أبي  قلابة قال : التكبير في العيدين تسع تسع.<br />৫. হিশাম (ইবনে হাস্সান) থেকে বর্ণিত, হাসান (বছরী) ও মুহাম্মাদ (ইবনে সীরীন) ৯ তাকবীর দিতেন। [প্রাগুক্ত, বর্ণনা ৫৭৬৫]।<br />সনদসহ আছারটির আরবী পাঠ এই,<br /><br />حدثنا إسحاق الأزرق، عن هشام، عن الحسن ومحمد أنهما كانا يكبران تسع تكبيرات.<br />আরো দেখুন : শরহু মাআনিল আছার, নুখাবুল আফকারসহ) ১৬/৪৫৯-৪৬০।<br /><br />৬. শাইবানী (সুলায়মান ইবনে আবী সুলায়মান) থেকে বর্ণিত, শাবী ও মুসায়্যিব (ইবনে রাফি) বলেন, ঈদের নামাযে ৯ তাকবীর হবে, প্রথম রাকাতে ৫টি, দ্বিতীয় রাকাতে ৪টি। আর দুই কেরাতের মাঝে কোনো তাকবীর নেই।<br />[প্রাগুক্ত, বর্ণনা ৫৭৭৪]<br /><br />সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই,<br /><br />حدثنا إسحاق بن منصور قال : حدثنا أبو كدينة، عن الشيباني، عن الشعبي والمسيب قالا : الصلاة يوم العيدين  تسع تكبيرات، خمس في الأولى وأربع في الآخرة، ليس بين القراءتين تكبيرة.<br /><br />৭. ইবরাহীম নাখায়ী থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা.-এর শাগরিদগণ ঈদের নামাযে ৯ তাকবীর  দিতেন।<br />[প্রাগুক্ত, বর্ণনা ৫৭৬১]।<br />সনদসহ আছারটির আরবী পাঠ এই,<br />حدثنا إسحاق الأزرق، عن الأعمش، عن إبراهيم: أن أصحاب عبد الله كانوا يكبرون في العيد تسع تكبيرات .<br />৮. আবু মা‘শার (যিয়াদ ইবনে কুলায়ব) থেকে বর্ণিত, ইবরাহীম নাখায়ী বলেন, ৯ তাকবীর হবে।<br />[সূত্রঃ শরহু মাআনিল আছার ৪/৫৭৫]।<br /><br />সনদসহ বর্ণনাটির আরবী পাঠ এই,<br /><br />حدثنا أبو بكرة قال : ثنا روح قال : ثنا سعيد، عن أبي معشر، عن إبراهيم النخعي قال:  تسع تكبيرات.<br />বদরুদ্দীন আইনী ‘নুখাবুল আফকার’ গ্রন্থে (১৬/৪৫৯) বলেন,<br />فأخرجه أيضاً بإسناد صحيح<br />‘ইমাম তহাবী এটিও সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।’<br />_______________</div>

৬ তাকবীরের ঈদের নামাজ

ছয় তাকবীরে ঈদের নামাযের সহীহ হাদীস সম্পর্কে আলোচনা। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে তাঁর বিভিন্ন শাগরিদ এ কথা যেমন বর্ণনা করেছেন যে, তিন...

Read more »