ইসলামে প্রতিবেশীর অধিকার

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">عَنْ ابن عبَّاس رَضَىَ الله عنه قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُوْلُ لَيْسَ المُؤْمنُ الَّذى يَشبَعُ وجَاره جائعٌ اِلى جَنْبِه – (رواه البيهقى)<br /><br />অনুবাদ: হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে এ কথা বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি তৃপ্তিসহকারে উদর পূর্তি করে খায় আর তারই প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে সে ঈমানদার নয়। [বায়হাকী শরীফ]<br /><br />প্রাসঙ্গিক আলোচনা<br />বর্ণিত হাদীস শরীফে ইসলামে প্রতিবেশীর হক তথা অধিকার প্রসঙ্গে মুমিনদের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে। মানুষ সামাজিক জীব, সমাজে বসবাসকারী প্রতিটি সৃষ্টির প্রতি মানুষের দায়-দায়িত্ব হক তথা তাদের অধিকার সংরক্ষণ এবং তাদের প্রতি সদয় ও সদ্ব্যবহারের নির্দেশ রয়েছে মানবতার ধর্ম পবিত্র ইসলামে। মানুষের ডানে বামে সামনে ও পেছনে অর্থাৎ চারপাশের চল্লিশ বাড়ি পর্যন্ত যারা বসবাস করেন তারা সকলেই প্রতিবেশী। নিজের সন্তান-সন্তুতি ও স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন থাকার ব্যাপারে যেভাবে ইসলামে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে তেমনিভাবে প্রতিবেশীর অধিকারের প্রতি যতœবান থাকা তথা সচেতন থাকার শিক্ষা দেয়া হয়েছে ইসলামী জীবন বিধানে। ইসলামে নিজের ক্ষতি অনিষ্টতা ও অকল্যাণ যেমন সমর্থন করে না তেমনিভাবে অন্যজনের ক্ষতিসাধন তথা সুখ শান্তি ও নিরাপত্তা বিনষ্টকারী কোন কার্যকলাপ আচার আচরণ অনুমোদন করে না। ইসলাম মানে শান্তি মুসলিম অর্থ শান্তিকামী। সর্বস্তরে সর্বক্ষেত্রে প্রতিটি পর্যায়ে শান্তি প্রতিষ্ঠাই ইসলামের মূল শিক্ষা ও মহানবীর আদর্শ।<br />আজকের মুসলিম সমাজ ইসলামের সুমহান শিক্ষা ও মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শ থেকে বিচ্যুতির কারণেই বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের করুণ দুরবস্থা। মুসলমানদের নৈতিক অধঃপতন, চারিত্রিক অবক্ষয়, শঠতা-কপটতা, অনাচার-পাপাচার, মিথ্যাচার ইত্যাদি অবক্ষয় গর্হিত ক্রিয়াকলাপই মুসলমানদের পশ্চাদপদতা ও বিপর্যয়ের মূল কারণ। ইসলামে শুধু একজন মুসলিমের অধিকার সংরক্ষণের কথা বলা হয়নি, জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি শ্রেণির মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও তার ন্যায্য পাওনার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজকের সমাজে প্রতিবেশীর হক তথা অধিকার উপেক্ষিত। প্রতিবেশীর অধিকারের প্রতি চরমভাবে উদাসীন। অথচ ইসলাম এ ব্যাপারে কঠোর সতর্কতা আরোপ করেছে। হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে-<br />عن ابى شريخ رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم والله لايؤمن والله لَايُؤْمِنُ واللهِ لايؤمن قيل من يا رسول الله قال الذى لايأمن جارهُ بوائقه- (متفق عليه)<br />হযরত আবু শুরাইহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, আল্লাহর কসম! ঐ ব্যক্তি ঈমানদার নয়, আল্লাহর কসম ঐ ব্যক্তি ঈমানদার নয়, আল্লাহর কসম ঐ ব্যক্তি ঈমানদার নয়- জিজ্ঞেস করা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! ঐ ব্যক্তি কে? তিনি উত্তর দিলেন, ঐ ব্যক্তি যার অত্যাচার ও অপকার হতে তার প্রতিবেশীরা নিরাপদে থাকে না। [বুখারী ও মুসলিম শরীফ]<br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjo3YvWphrWzXUcHE2uKm-nqIOq6MrNB_yjrUAw7_2kjgn-Uhs-UCTyB_cLwtpMiQvf8LIEDVwtcisFhWwrPEW1GvPQFNpYr21dDsETE_SGn3xv2yquWH7ity3rOZ81yC1DeIfzejEIerOU/s1600/%25E0%25A6%25AA%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25A4%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25AC%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25B6%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25B0-%25E0%25A6%2585%25E0%25A6%25A7%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%2595%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B0.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="341" data-original-width="536" height="203" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjo3YvWphrWzXUcHE2uKm-nqIOq6MrNB_yjrUAw7_2kjgn-Uhs-UCTyB_cLwtpMiQvf8LIEDVwtcisFhWwrPEW1GvPQFNpYr21dDsETE_SGn3xv2yquWH7ity3rOZ81yC1DeIfzejEIerOU/s320-rw/%25E0%25A6%25AA%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25A4%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25AC%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25B6%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25B0-%25E0%25A6%2585%25E0%25A6%25A7%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%2595%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B0.jpg" width="320" /></a></div><br /><br />প্রতিবেশীর প্রতি ভালো-মন্দ ব্যবহারের পরিণতি<br />সমাজে এক শ্রেণির নর-নারী আছে, যারা নামায রোজা হজ্ব যাকাত দান সাদকাহ ইত্যাদি পুন্যময় আমল করেন অথচ প্রতিবেশীর প্রতি নিকৃষ্ট আচরণ করেন। প্রতিবেশীকে গালমন্দ করেন, অশ্লীলভাষা কটূবাক্য দ্বারা প্রতিবেশীর অন্তরে কষ্ট দেয়। সামান্য বিষয় নিয়েও প্রতিবেশীর সাথে ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়। প্রতিবেশীর ব্যাপারে কুৎসা রটনা করে সমালোচনা করে। প্রতিবেশী দুর্বল হলে কূটকৌশলে তার সম্পত্তি আত্মসাৎ করতেও পিছপা হয় না। বিভিন্নভাবে প্রতিবেশীকে হয়রানি করে এ ধরনের ধার্মিকতা কোন কাজে আসবে না, বরং তার করুণ পরিণতি হবে ভয়াবহ জাহান্নাম। আর কোন বান্দার মধ্যে নামায রোজা দান সাদকার পরিমাণ কম হলেও তিনি যদি প্রতিবেশীর হক বা দায়িত্ব যথাযথভাবে আদায় করেন এর উত্তম প্রতিদান হিসেবে তার জন্য রয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ। হাদীস শরীফে আছে-<br />عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رجل يا رسول اللهِ اِنَّ فلانَةٌ تذكَرُ من كثرة صلاتها وصيامها وصدقتها غيرانها تُوذِىْ جيرانَهَا بلسانها قال هى فى النار قال يا رسول الله اِنَّ فلانَةٌ تذكَرُ قِلَّةُ صيامها وصدقتها وصلاتها وانّها تصدّق بالاثوار من الاقط ولاتوذى بلسانها جيرانَها قال هى فى الجنّة- (رواه احمد)<br />অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল ইয়া রাসূলাল্লাহ্! অমুক মহিলার সঠিক নামায রোজা ও দান সাদকার কারণে তাকে স্মরণ করা হয়, তবে সে তার জিহ্বা দ্বারা তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দিয়ে থাকে। হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, সে জাহান্নামী। উক্ত ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো ইয়া রাসূলাল্লাহ্! অমুক মহিলার স্বল্প রোজা, স্বল্প দান-সাদকা ও স্বল্প নামাযের বিষয় মানুষের মধ্যে আলোচনা করা হয়, তবে সে পনিরের টুকরা বিশেষ দান করে থাকে এবং তার জবান দ্বারা প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না। তিনি এরশাদ করেন সে জান্নাতী। [আহমদ]<br /><br />প্রতিবেশীর অধিকার প্রসঙ্গে হযরত জিব্রাঈল (আ.)’এর তাকিদ<br />প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে জিব্রাঈল আলায়হিস্ সালাম প্রতিনিয়ত গুরুত্বারোপ করতেন। নিু বর্ণিত হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে-<br />عن عائشة وابن عمر رضى الله عنهما قال النبى صلى الله عليه وسلم مازال جبرائيل يوصينى بالجار حتى ظننت انه سَيُورَّثه- (رواه مسلم)<br />অথ: হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা ও হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, জিব্রাঈল আলায়হিস্ সালাম সর্বদা আমাকে প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে তাকিদ দিচ্ছিলেন, এমনকি আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম তিনি অনতিবিলম্বে তাদেরকে (প্রতিবেশীকে) আমার ওয়ারিশ করে দেবেন। [মুসলিম শরীফ]<br /><br />প্রতিবেশীর মূল্যায়ন ভাল-মন্দের মাপকাঠি<br />নিজের ভাল-মন্দ কর্মের স্বীকৃতি অন্যজনের মূল্যায়ন ও মতামতের উপর নির্ভরশীল। অনেকেই প্রতিনিয়ত অন্যায় অপরাধ ও মন্দ কর্মের তথা অপকর্মে নিমজ্জিত থাকার পরও মোটেই অনুতপ্ত নন, দোষী হওয়ার পরও নিজেকে নির্দোষ মনে করেন, অন্যজনের মতামত ও মূল্যায়নকে গুরুত্ব দেয় না। অন্যায় করার পরও প্রশংসা পেতে চান। এ শ্রেণির মানুষ অহংকারী দাম্ভিক। তারা অপরের মতামতকে সম্মান করে না। নিজের সংশোধন হওয়ার চেষ্টা করে না। কেউ সংশোধনের পরামর্শ বা মতামত ব্যক্ত করলে তাদেরকে শত্র“ মনে করে। অন্যজনের বিশ্লেষণ পর্যালোচনা মূল্যায়ন ও প্রদর্শিত পন্থা গ্রহণ করতে পারা মহানুভবতার পরিচায়ক। প্রতিবেশীর পক্ষ থেকে ভাল স্বীকৃতি পাওয়া গৌরবের ও আনন্দের। নিু বর্ণিত হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে-<br />عن ابن مسعود رضى الله عنه قال قال رجل للنبى صلى الله عليه وسلم يا رسول الله كيف لِىْ ان اَعْلَمَ اذا احسِنتُ واذا اسأتُ فقال النبى اذا سمعت جيرانَكَ يقولُونَ قد اَحسنت فقد اَحْسَنت واذا سَمِعْتَ يَقُولُوْن قد اسأت فقد اسأت- (رواه ابن ماجه)<br />হযরত আবদল্লাহ্ ইবনে মসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! নবীজি এরশাদ করেন, যখন তা তুমি তোমার প্রতিবেশীকে বলতে শুনবে যে তুমি ভাল করছ তবে প্রকৃতই তুমি ভাল করেছ। আর যখন প্রতিবেশীকে বলতে শুনবে তুমি মন্দ করছ তবে মনে করবে তুমি মন্দ করেছ।<br />[ইবনে মাযাহ]<br /><br />সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম আদর্শ নবী মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের প্রদর্শিত পথে সত্যান্বেষী মুক্তিকামী মানুষের সর্বাঙ্গীন সুখ শান্তি মঙ্গল ও কল্যাণ নিহিত। তাই আসুন মহানবীর হাদীসের আলোকে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠায় প্রতিবেশীর প্রতি সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করি। প্রতিবেশীর কল্যাণ ও উন্নয়নে এগিয়ে আসুন। প্রতিবেশীর প্রতি সুসম্পর্ক করুন। প্রতিবেশীর প্রতি দূরত্ব নয় নিবিড়<br />সম্পর্ক স্থাপন করুন। তাদের সুখে দুঃখে সাড়া দিন, তাদের দাওয়াত সাদরে গ্রহণ করুন। তাদের অনুষ্ঠানাদিতে সাধ্যানুযায়ী উপহার বিনিময় করুন। তাদের বাসা বাড়িতে যাতায়তের পথে প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার অমানবিক আচরণ পরিহার করুন। পারস্পরিক সহযোগিতামূলক প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য সামগ্রী আদান প্রদানে সহযোগিতা করুন। পার্শ্ববর্তী পরিবার দরিদ্র বলে তাদেরকে উপেক্ষা ও অবজ্ঞামূলক আচারণ থেকে বিরত থাকুন। মানুষ মানুষের জন্য এ নীতিতে সুন্দর শালীন ও মার্জিত আচরণ করুন। আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের সন্তুষ্টি অর্জনই আমাদের কাম্য। আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে প্রতিবেশীর অধিকার সুরক্ষায় তাওফিক নসীব করুন। আ-মী-ন।<br /><br /><br /></div>

ইসলামে প্রতিবেশীর অধিকার

عَنْ ابن عبَّاس رَضَىَ الله عنه قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُوْلُ لَيْسَ المُؤْمنُ الَّذى يَشبَعُ وجَاره ...

Read more »

হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর স্ত্রীগণ সমগ্র জাহানের স্ত্রীলোকদের চেয়ে উত্তম

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র বিবিগণের ভিন্ন ভিন্ন মর্যাদার বিস্তারিত বিবরণ<br />আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ ফরমান-<br />يَا نِسَآءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِّنَ النِّسَآءِ ۚ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوفًا (৩২)<br />তরজমা: হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মতো নও, যদি আল্লাহকে ভয় করো তা হলে কথায় এমন কোমলতা অবলম্বন করো না যে, অন্তরের রোগী কিছু লোভ করে; হাঁ, ভালো কথা বলো। [সূরা আহযাব: আয়াত-৩২, কান্যুল ঈমান] এ আয়াত শরীফে, পূর্ব ও পরবর্তী আয়াতগুলো সহকারে, বাহ্যত হুযূর-ই আন্ওয়ার সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র বিবিগণকে হিদায়ত করা হচ্ছে এবং তাঁদের ফযীলতসমূহ (গুণাবলী) উল্লেখ করা হয়েছে; কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে এটা হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর না’ত শরীফই। এ’তে আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেছেন, ‘‘হে আমার পয়গাম্বরের স্ত্রীগণ! তোমরা অন্যান্য নারীর মতো নও! তোমাদের মর্যাদা ও তোমাদের বিধানাবলী অনেকটা ভিন্নতর; কিন্তু এসব মর্যাদা ও ফযীলত কেন হলো? এগুলো এ জন্য যে, তোমরা নবীর স্ত্রী।’’<br />যে সম্মানিত সত্তার সাথে সম্পর্কের কারণে এ মহত্ব অর্জিত হয়, ওই পবিত্র সত্তার সম্মান ও মহত্ব কেমন হবে, তাতো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।<br />এ আয়াত শরীফ থেকে নি¤œলিখিত কয়েকটা বিষয় প্রতীয়মান হয়-<br />এক. হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর স্ত্রীগণ সমগ্র জাহানের স্ত্রীলোকদের চেয়ে উত্তম। কেননা, এখানে نساء (বিবিগণ) নিঃশর্তভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত মরিয়ম ও হযরত আসিয়া (ফিরআউনের স্ত্রী) এবং হযরত মূসা আলায়হিস্ সালাম-এর মা, রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুন্না আজমা‘ঈন আপন আপন যুগের নারীদের চেয়ে উত্তম ছিলেন; কিন্তু হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর পবিত্র বিবিগণ প্রতিটি যুগের স্ত্রীদের থেকে উত্তম ও অধিকতর ফযীলতমন্ডিত। যেমন- বনী ইসরাঈলের জন্য এরশাদ হয়েছে- اِنِّىْ فَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعٰلَمِيْنَ (আমি তোমাদেরকে সমগ্র বিশ্ববাসীর উপর বুযুর্গী বা মহত্ব দিয়েছি।) সুতরাং ওই যুগের লোকদের উপরও বাস্তবিকপক্ষে তাঁরা উত্তম ছিলেন। আর এখন ‘গোলামানে মোস্তফা’ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সমস্ত উম্মত থেকে উত্তম।<br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi4pgO4xc0-qBi6lvM0d1FzNpwSzV5SzA_e7hPlnho5xBwSb9VvfKLfte1n3L3bD2lqeC2PzooGLSgf8GqE6XKtwEFjTSM0yaNdf9HQlVlIQAUrlID64dZIM0LdvoxYiM7qYoKWZ2zJ6YXg/s1600/FB_IMG_1512236405078-719x350.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="350" data-original-width="719" height="155" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi4pgO4xc0-qBi6lvM0d1FzNpwSzV5SzA_e7hPlnho5xBwSb9VvfKLfte1n3L3bD2lqeC2PzooGLSgf8GqE6XKtwEFjTSM0yaNdf9HQlVlIQAUrlID64dZIM0LdvoxYiM7qYoKWZ2zJ6YXg/s320-rw/FB_IMG_1512236405078-719x350.jpg" width="320" /></a></div><br />দুই. এ বিষয়ে কথা রয়ে গেছে যে, হযরত ফাতিমা যাহ্রা কি উত্তম, না হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বাহ্ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা) উত্তম? কেউ কেউ বলেন, হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বাহ্ অধিকতর উত্তম, এ আয়াত শরীফের কারণে; বরং হুযূর-ই আক্রামের সমস্ত সাহেবযাদী থেকে হুযূরের পবিত্র বিবিগণ উত্তম। কেননা, এ আয়াতে কারো শর্ত আরোপ করা হয়নি; দ্বিতীয়ত এ সাহেবযাদীগণ হলেন আওলাদ (বংশধর), আর পবিত্র বিবিগণ হলেন মা। বস্তুত মা মাখদূমাহ্ হন, (অর্থাৎ যাঁদের সেবা ও সম্মান করা হয় এমন হয়ে থাকেন।)<br />তিন. জান্নাতে হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বাহ্ ও অন্যান্য পবিত্র বিবি হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বসবাস করবেন। আর হযরত ফাত্বিমা যাহ্রা থাকবেন হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সাথে। এসব কারণে বুঝা যায় যে, সাহেবযাদীগণ থেকে হুযূর-ই আক্রামের পবিত্র বিবিগণ উত্তম।<br />আর কেউ কেউ বলেন, হযরত ফাতিমা যাহরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা পবিত্র বিবিগণ অপেক্ষা উত্তম। তাও নি¤œলিখিত কতিপয় কারণে-<br />এক. তাঁর পবিত্র শরীরের রক্ত ও মাংস রসূলকুল শ্রেষ্ঠ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এরই থেকে; অর্থাৎ তাঁর পবিত্রতা সত্তাগত। কেননা, তিনি হুযূর মোস্তফার অংশ। আর পবিত্র বিবিগণের (শারীরিক উপাদানগুলো) অন্যান্য বান্দার।<br />দুই. হযরত ফাত্বিমা যাহরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা সমস্ত জান্নাতী নারীর সরদার। এ কারণে তাঁর উপাধি ‘সাইয়্যেদাতুন্নিসা’। আর জান্নাতী নারীগণের মধ্যে উম্মাহাতুল মু’মিনীন (মু’মিনদের মাগণ)ও রয়েছেন।<br />তিন. হযরত ফাতিমা যাহরা মাহবূবে খোদা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর একই আকৃতির।<br />চার. হযরত ফাত্বিমা যাহরা ‘হায়েয’ ও ‘নিফাস’ (যথাক্রমে মাসিক ঋতু¯্রাব ও সন্তান প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ) থেকে পবিত্র। [সূত্র. মাদারিজুন্নুবূয়ত] এজন্য তাঁকে ‘যাহরা’ অথবা ‘বাতূল’ অথবা ‘ফাত্বিমা’ বলা হয়। ‘যাহরা’ মানে জান্নাতের ফুলের কলি, ‘ফাতিমা’ ও ‘বাতূল’ মানে দুনিয়ায় অবস্থান করা সত্ত্বেও দুনিয়ার মোহ থেকে মুক্ত। যেমন (পংক্তি)<br />بتول و فاطمه زهراء لقب اس واسطے آيا<br />كه دنيا ميں رهيں اور ديں پته جنت كى نكهت كا<br />অর্থ: বাতূল, ফাতিমা ও যাহরা উপাধিগুলো তিনি এজন্যই পেয়েছেন যে, তিনি অবস্থান করেছেন দুনিয়ায়, কিন্তু ঠিকানা বলে দিয়েছেন, জান্নাতের সৌরভের।<br />ইমাম সারাখসীর ‘কিতাবুল কারাহিয়্যাহ: বাবুল লাম্স’-এ উল্লেখ করা হয়েছে- হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত খাতূনে জান্নাতের শরীর মুবারকের ঘ্রাণ নিতেন। আর বলতেন, ‘‘আমি তার শরীর থেকে জান্নাতের খুশ্বু পাচ্ছি।’’<br />[সূত্র. দিওয়ান-ই সালিক, কৃত. হাকীমুল উম্মত আল্লামা<br />আহমদ ইয়ার খান নঈমী আলায়হির রাহমাহ] এতে হুযূর-ই আক্রামের পবিত্র বিবিগণ ও সন্তানদের অনেক প্রশংসা ব্যাখ্যাসহকারে উল্লেখ করা হয়েছে; কিন্তু ফয়সালা এ যে, প্রথমত এসব বিষয়ে আলোচনা করা যাবে না, যেমন- ‘ফাতাওয়া-ই শামী: বাবুল কুফূ’তে উদ্ধৃত হয়েছে যে, ‘‘বরং উভয় হযরত আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় মুনিব-<br />এক মহিলা যিনি মাহবূব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মাহবূবাহ। আরেক মহিলা যিনি মাহবূব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হিস্ সালাম-এর কলিজার টুকরা (কন্যা)। রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা। ক্বিয়ামতে যদি তাঁদের মধ্যে কারো পাদুকাযুগলও হাতে আসে, তবে আমরা অধমদের নৌযান তীরে লেগে যাবে। যদি এ ফয়সালা মনঃপূত হয়, তবে একথাই বলো- কোন কোন দিক দিয়ে হযরত খাতূন-ই জান্নাত উত্তম, আবার কোন কোন দিক দিয়ে হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বাহ্ উত্তম। রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা।<br />এ আয়াত শরীফ থেকে একথাও প্রতীয়মান হয় যে, শরীয়তের বিধানাবলীতেও হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালামের পবিত্র বিবিগণ অন্যান্য নারীর মতো নন। যেমন-অন্য নারীগণ তালাক্ব কিংবা স্বামীর ওফাতের পর অন্য বিবাহ্ করতে পারে; কিন্তু এ মহীয়সী মহিলাগণ হলেন মুসলমানদের মা। অন্য নারীগণ স্বামীর উত্তরাধিকার পায়। কিন্তু এ মহীয়সীরা পান না। অন্য নারীদের স্বপ্নদোষ হয়; কিন্তু মু’মিনদের মহীয়সী মায়েরা তা থেকে মুক্ত। কেননা স্বপ্নদোষ শয়তানের প্রভাব থেকে হয়; কিন্তু মাহবূব আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর বিবিগণ পর্যন্ত শয়তান পৌঁছতে পারে না। [সূত্র. মিশকাত: বাবুল গোসল] হযরত উম্মে সালামাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা নারীদের স্বপ্নদোষের কথা শুনে আশ্চর্যবোধ করেছিলেন। উম্মাহাতুল মু’মিনীন হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর ওফাত শরীফের পর নিজেদের মাথার চুলগুলো ছেঁটে ফেলেছিলেন।<br />[সূত্র. মুসলিম শরীফ: গোসলের পানির পরিমাণের বর্ণনা শীর্ষক অধ্যায়] কেননা, এখন তাঁদের সাজ সজ্জার কোন প্রয়োজনই থাকেনি। অথচ অন্য নারীদের চুল ছাঁটা কিংবা মুন্ডানো হারাম। তাঁদের পবিত্র ঘরে হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম দাফন হয়েছেন। অন্য নারীদের ঘরে তাদের স্বামী দাফন হয় না। মোটকথা, অনেক বিধানে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে।<br />বিশেষভাবে বুঝা যায় যে, সমস্ত পবিত্র বিবি গোটা বিশ্বের নারীদের চেয়ে উত্তম। এতদ্সত্ত্বেও তাঁদের পরস্পরের মধ্যে মর্যাদাগত পার্থক্য বিদ্যমান। হযরত খাদীজাতুল ক্বুবরা, হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা অন্যান্য পবিত্র বিবি অপেক্ষা উত্তম। হযরত আয়েশার শাদী মুবারক হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর বংশ হযরত খাদীজাতুল ক্বুবরা থেকে প্রসার লাভ করেছে। হযরত খাদীজার জীবদ্দশায় হুযূর-ই আক্রাম অন্য শাদী করেননি। সবসময় হুযূর-ই আকরাম হযরত খাদীজাতুল কুবরার পক্ষ থেকে ক্বোরবানী ইত্যাদি করেছেন।<br />হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বাহ্ জ্ঞান ও গুণে সমস্ত নারীর মধ্যে অনুপম ও অদ্বিতীয়। সাহাবা-ই কেরামের জ্ঞানগত বিরোধ তিনি মীমাংসা করতেন। তাঁর উপাধি হয়েছে- ‘মাহবূবাহ্-ই মাহবূবে রাব্বুল আলামীন’। তাঁর বিছানা শরীফে হুযূর-ই আক্রামের উপর ওহী এসেছে। তাঁকে হযরত জিব্রাঈল সালাম আরয করেছেন। হুযূর-ই আক্রামের ভেসাল (ওফাত) শরীফ তাঁর কোল ও বক্ষ শরীফের উপর হয়েছে। তাঁর হুজুরা শরীফ ক্বিয়ামত পর্যন্ত ফিরিশ্তা, মানুষ ও জিনদের যিয়ারতস্থল হয়েছে। কেননা, এ হুজুরা শরীফই হুযূর-ই আক্রামের আরামগাহ্ হয়েছে। খোদ্ হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বাহ্, হযরত আবূ বকর সিদ্দীক্বের কন্যা, নবীকুল সরদারের উভয় জগতে স্ত্রী। কবির ভাষায়-<br />جن كى پهلو هو نبى كى آخرى آرام گاه<br />جن كے حجرےميں قيامت تك نبى هوں جاگز يں<br />অর্থ: যাঁর পার্শদেশ হলো নবী করীমের শেষ বিশ্রামস্থল, যাঁর হুজুরা শরীফে ক্বিয়ামত পর্যন্ত নবী করীমের আরামের স্থান হয়েছে।<br />যখন হযরত আয়েশার বিপক্ষে কিছুলোক অপবাদ দিলো, তখন ‘সুরা-ই নূর’ তাঁর নূরানিয়াত ও চারিত্রিক পবিত্রতা বর্ণনা করেছে। এখনও বরং ক্বিয়ামত পর্যন্ত যে মুসলমানই ক্বোরআন পড়বে, সে তাঁর পবিত্রতার সাক্ষ্য দেবে। আ’লা হযরত আলায়হির রাহমাহ্ বলেন-<br />وه جوهےسورۀ نور جن كى گواه ـ ان كى نورانى صورت په لاكواں سلام<br />অর্থ: ওই মহীয়সী মহিলা, যাঁর চারিত্রিক পবিত্রতার সাক্ষ্য হয়েছে সূরা নূর, তাঁর নূরানী অবয়বের উপর লাখো সালাম।<br /><br /><br /></div>

হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর স্ত্রীগণ সমগ্র জাহানের স্ত্রীলোকদের চেয়ে উত্তম

নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র বিবিগণের ভিন্ন ভিন্ন মর্যাদার বিস্তারিত বিবরণ আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ ফরমান- يَا نِسَآ...

Read more »

পবিত্র ক্বোরআনের শপথ, হুযূর-ই আকরাম আল্লাহর রসুল

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">পবিত্র ক্বোরআনের শপথ: হুযূর-ই আকরাম আল্লাহ্র রসূল<br />আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন –<br />يٰسۤ- وَالْقُرْاٰنِ الْحَكِيْمِ- َاِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِيْنَ-<br /><br />তরজমা: ইয়া-সী—-ন। হিকমতময় ক্বোরআনের শপথ! নিশ্চয় আপনি প্রেরিত (রসূল)। [সূরা ইয়া-সীন: আয়াত ১-৩] এ আয়াত শরীফও হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর না’ত (প্রশংসা)। মক্কার কাফিরগণ বলতো, ‘‘আপনি আল্লাহর রসূল নন।’’ এর জবাবে মহান রব এরশাদ করেছেন, ‘‘হে মাহবূব! ক্বোরআনের শপথ, আপনি আমার রসূল।’’<br />এ আয়াতে তিনটি কলেমা বা বাক্য রয়েছে- ১. ইয়া-সী—-ন, ২. ওয়াল ক্বোরআ-নিল হাকীম এবং ৩. ইন্নাকা লামিনাল মুরসালীন। এ তিনটি কলেমায় পৃথক পৃথক তৃপ্তি, মজা বা সূক্ষ্ম বিষয় রয়েছে-<br />‘ইয়া-সী—-ন।’ এ দু’টি অক্ষর ‘মুতাশা-বিহাত’ (দ্ব্যর্থ বোধক শব্দাবলী)’র অন্তর্ভুক্ত। এর সঠিক অর্থ মহান রব জানেন এবং তাঁর মাহবূব আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম জানেন; তবুও তাফসীরকারকগণ কতিপয় ভিন্ন অর্থ (তা’ভীল)-ও করেছেন। যেমন-<br />প্রথম, ‘ইয়া- সী—-ন’ হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নাম মুবারক। আর এর পূর্বে ‘ইয়া’ উহ্য রয়েছে। অর্থাৎ ওহে ইয়া-সীন—-ন!<br />দ্বিতীয়, ‘ইয়া’ হলো সম্বোধন সূচক শব্দ, আর ‘সী—-ন’ মানে সরদার। এটা দ্বারা ‘সাইয়্যেদুল আলামী-ন’ বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ- হে বিশ্ববাসীদের সরদার!<br />তৃতীয়, এটা সূরার নাম।<br />এ আয়াতে আল্লাহ্ তা‘আলা ক্বোরআন-ই করীমের শপথ করেছেন। এ’তে ক্বোরআন-ই পাকের মহত্ব প্রকাশ পায়। কেননা, মহান রব যে বস্তুর শপথ করেন, এ শপথ দ্বারা ওই বস্তুর মহত্ব প্রকাশ পায়। আমরা (সাধারণ মানুষ) যে সব শপথ করি, ওই গুলো দ্বারা আমাদের বক্তব্যকে মজবূত করাই উদ্দেশ্য থাকে। (আর আল্লাহ্ তা‘আলা যে জিনিসের শপথ করেন, ওই শপথ দ্বারা ওই জিনিসের মহত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এখানে হুযূর-ই আকরামের রিসালতের ব্যাপক বর্ণনা করেছেন। (এখানে আরো লক্ষণীয় যে,) অন্য কোন নবীর নবূয়তের পক্ষে শপথ করা হয়নি।<br />মোটকথা, এ আয়াত দ্বারা কয়েক পদ্ধতিতে হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর না’ত (প্রশংসা) প্রমাণিত।<br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiQY07OPBf5GWlnZhz4dWpTK8Xzci0oubb3Mo9LEGJB-tN-3CgkPgwl3SMVGG5X3x8zc4Wlka8YVEpWMBOvcfIB-yyktjj16a1BpCdMXhjr9WhyphenhyphenmYyAmsp6ronsKE4_7iGC_m0zgDAJ9EKh/s1600/FB_IMG_14519838134680677-720x350.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="351" data-original-width="720" height="155" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiQY07OPBf5GWlnZhz4dWpTK8Xzci0oubb3Mo9LEGJB-tN-3CgkPgwl3SMVGG5X3x8zc4Wlka8YVEpWMBOvcfIB-yyktjj16a1BpCdMXhjr9WhyphenhyphenmYyAmsp6ronsKE4_7iGC_m0zgDAJ9EKh/s320-rw/FB_IMG_14519838134680677-720x350.jpg" width="320" /></a></div><br /><br />ইসলাম গ্রহণের ফলে পূর্ববর্তী সব গুনাহ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়<br />‘আবদ’ মানে গোলামও, ‘খাদিম’ও<br />আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন-<br />قُلْ يَاعِبَادِىَ الَّذِيْنَ اَسْرَفُوْا عَلٰى اَنْفُسِهِمْ لَاتَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللهِ- اِنَّ اللهَ يَغْفِرُا الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا-<br /><br />তরজমা: হে হাবীব, আপনি বলে দিন, হে আমার ওই সব বান্দা! যারা নিজেদের প্রাণের প্রতি যুল্ম করেছো, আল্লাহ্র রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ্ সব গুনাহ্ ক্ষমা করে দেন। [সূরা যুমার: আয়াত- ৫৩] এ আয়াত শরীফও হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর প্রকাশ্য ও সুস্পষ্ট না’ত বা প্রশংসা। এর শানে নুযূল (অবতরণের প্রেক্ষাপট) হচ্ছে- এক দল মানুষ আরয করলো, ‘‘হে আল্লাহ্র হাবীব! আমাদের গুনাহ্ও কি মাফ হয়ে যাবে?’’ এর উত্তরে এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে এবং এতে এরশাদ হয়েছে- হে মাহবূব! আপনি বলে দিন, ‘‘হে আমার বান্দারা! যারা অপরাধ (গুনাহ) করেছো, মহান রবের রহমত থেকে নিরাশ হয়োনা, ইসলামে এসে যাও! আর এ রহমতের সমুদ্রে ডুব দাও, ফলে সব ধরনের ময়লা-আবর্জনা থেকে পবিত্র হয়ে যাবে।<br />এ আয়াতে যেই عبادى (আমার বান্দারা) এরশাদ হয়েছে, তা দ্বারা হয়তো আল্লাহর বান্দাগণ বুঝানো উদ্দেশ্যে, তখন কিন্তু এর পূর্বে এ কয়েকটা শব্দ উহ্য মানতে হবে-<br />এক. يَقُوْلُ اللهُ يَاعِبَادِىْ (অর্থাৎ আল্লাহ্ বলছেন, ‘‘হে আমার বন্দারা!) কেননা, তখন তা قُلْ (আপনি বলুন)-এর সাথে সম্পৃক্ত হবে না।<br />দুই. اَسْرَفُوْا عَلٰى اَنْفُسَهُمْ (যারা নিজেদের প্রাণের উপর যুল্ম করেছে)-এর অর্থে এ শর্ত জুড়ে নিতে হবে যে, তা থেকে মুশরিক ও কাফিররা খারিজ থাকবে; শুধু ঈমানদারগণই তাতে শামিল থাকবে। কেননা, আল্লাহর বান্দা তো সবাই। কিন্তু মুশরিকদের শির্কের তো ক্ষমা হতে পারে না। কারণ, অন্যত্র আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেছেন- اِنَّ اللهَ لَايَغْفِرُ اَنْ يُشْرِكَ بِهِ- (নিশ্চয় আল্লাহ্ এটা ক্ষমা করেন না যে, তাঁর সাথে শির্ক করা হবে।) আল্লাহ্্ তা‘আলা শির্ক (কুফর) ক্ষমা করেন না।<br />অথবা, يَاعِبَادِىْ মানে রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর বান্দাগণ। অর্থাৎ তাঁর গোলামগণ। عَبْد শব্দের অর্থ عابد (আবিদ বা ইবাদতকারী) ও হতে পারে خادم (খাদিম)ও হতে পারে।<br />সুতরাং এখন আয়াত শরীফের অর্থ দাঁড়ায়- ‘হে মাহবূব! আপনি বলে দিন, ‘‘হে আমার গোলামরা!’’ এতদ্ভিত্তিতে, তা থেকে কাফিরগণ আপসে বের হয়ে গেলো। কেননা, হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর খিদমতগার তো মুসলমানগণই। এমতাবস্থায় আয়াতে কোন অতিরিক্ত বাক্য উহ্য মানার দরকার হলো না।<br />এখন দেখুন- এ অর্থের সমর্থনে কতিপয় উদ্ধৃতি-<br />এক. ওহাবী-দেওবন্দীদের মান্যবর ব্যক্তি মৌলভী আশরাফ আলী থানভী সাহেব এ অর্থ গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, এখানে عبادى (আমার আবদগণ!) মানে হুযূর আলায়স্ িসালাতু ওয়াস্ সালাম-এর বান্দাগণ।<br />দুই. মসনভী শরীফও এ অর্থ নিয়েছে। যেমন-<br />بدইهٔ خود خواند احمد در رشاد- جمله عالم را بخواں قل يا عباد<br />يا عبادى كهه كے هم كو شاه نے- اپنا بدনه كر ليا پرح تجھ كو كيا<br /><br />অর্থাৎ খোদ হুযূর-ই আকরাম আহমদ মুজতাবা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম يَاعِبَادِىْ (হে আমার বান্দাগণ) বলে আমাদেরকে তাঁর বান্দা করে নিয়েছেন। এতে তোমার ক্ষতি কি?<br />মাসআলা<br />‘আবদুন্নবী’ (عبد النبى) ও ‘আবদুর রসূল’ (عبد الرسول) ইত্যাদি নাম রাখা সম্পূর্ণ জায়েয এবং পবিত্র ক্বোরআন দ্বারা প্রমাণিত। মহান রব এরশাদ ফরমাচ্ছেন-مِنْ عِبَادِكُمْ وَاِمَائِكُمْ (তোমাদের খাদিম ও তোমাদের দাসীগণ!) আরবে আমভাবে বলা হয়- عَبْدِىْ অর্থাৎ আমার গোলাম।<br />তিন. ‘দুররুল মুখতার’ প্রণেতার ওস্তাদের ওস্তাদ মহোদয়ের নাম ‘আবদুন্নবী খলীল’ (عبد النبى خليل) (দেখুন- র্দুরুল মুখ্তার-এর ভূমিকা, যেখানে তিনি তাঁর ওস্তাদদের শাজরা (জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের পরম্পরা) উল্লেখ করেছেন।<br />হাদীস শরীফে এ মর্মে যেই নিষেধ এসেছে- عَبْدِىْ ও اَمَتِىْ বলো না, এ নিষেধ মুস্তাহাব নির্দেশক। যেমন- বলা হয়েছে- আঙ্গুরকে ‘কারাম’ বলো না। কেননা, ‘কারাম’ হচ্ছে মুসলিম। [বোখারী ইত্যাদি] সাহাবা-ই কেরাম বারংবার বলেছেন- كُنْتُ عَبْدَهُ وَخَادِمَهُ (আমি তাঁর অর্থাৎ হুযূর-ই আকরামের গোলাম ও খাদিম ছিলাম)। এর পূর্ণাঙ্গ আলোচনা ‘জা-আল হক্বক্বু ওয়া যাহাক্বাল বাত্বিল’ নামক পুস্তকে দেখুন। তাতে এমন সব প্রমাণ দেওয়া হয়েছে, যেগুলোর খণ্ডন, ইন্শা-আল্লাহ্, বিরুদ্ধবাদীগণ করতে পারবে না।<br />لَاتَقْنَطُوْا (তোমরা নিরাশ হয়ো না) থেকে বুঝা গেলো যে, আল্লাহর রহমত থেকে হতাশ হওয়া বান্দার জন্য শোভা পায় না, বরং নিজের গুনাহ্গুলো দেখে মহান রবকে ভয় করবে। আল্লাহ্র রহমতের মধ্যে গভীরভাব চিন্তা-ভাবনা করে সেটার প্রার্থী হয়ে থাকবে। আ’লা হযরত বলেন-<br />گنه رضا كا حساب كيا وه اگر چه لاكهوں سے هيں سوا<br />مره ائے عفو ترے عفو كا نه حساب هے نه شمار هے<br /><br />অর্থাৎ রেযার গুনাহ্র আবার হিসাব কি জিনিস? তা যদিও লক্ষকেও ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু হে মহা ক্ষমাশীল, তোমার ক্ষমার না হিসাব আছে, না গণনা।<br />মহান পবিত্র খোদা সমস্ত গুনাহ্ ক্ষমা করবেন, কিন্তু বান্দাদের হক্বগুলোর বেলায় প্রাপকদের থেকে ক্ষমা করিয়ে নেবেন। যেমন আক্বাইদের কিতাবাদি ইত্যাদিতে উল্লেখ করা হয়েছে।<br /><br /><br /></div>

পবিত্র ক্বোরআনের শপথ, হুযূর-ই আকরাম আল্লাহর রসুল

পবিত্র ক্বোরআনের শপথ: হুযূর-ই আকরাম আল্লাহ্র রসূল আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন – يٰسۤ- وَالْقُرْاٰنِ الْحَكِيْمِ- َاِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِيْ...

Read more »

নবী করীম (দুরূদ) তো কখনও গুনাহর ইচ্ছাও করেননি

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"><div style="text-align: justify;">নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তো কখনও গুনাহর ইচ্ছাও করেননি</div><div style="text-align: justify;">আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেন –</div><div style="text-align: justify;">اِنَّا فَتَحْنَالَكَ فَتْحًا مُّبِيْنًا- لِّيَغْفِرُ لَكَ اللهُ مَاتَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَاتَأَخَّرَ-</div><div style="text-align: justify;">তরজমা: নিশ্চয় আমি আপনার জন্য সুষ্পষ্ট বিজয় দান করেছি, যাতে আল্লাহ্ আপনার কারণে ক্ষমা করে দেন আপনার পূর্ববর্তীদের ও আপনার পরবর্তীদের গুনাহ্ . . .। [সূরা ফাত্হ: আয়াত- ১-২, কান্যুল ঈমান]</div><div style="text-align: justify;"><br /></div><div style="text-align: justify;">এ আয়াত শরীফও হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর প্রশংসা সমষ্টি। এর শানে নুযূল এযে, একদা হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম স্বপ্নে দেখেছিলেন যে, তিনি তাঁর সাহাবীদের সাথে নিয়ে নিরাপদে মক্কায় প্রবেশ করেছেন, কা’বা শরীফের চাবি নিয়েছেন, তাওয়াফ করেছেন, ওমরাহ্ করেছেন। তিনি সাহাবীগণকে স্বপ্নের সংবাদ দিলেন। সবাই খুশী হলেন। তারপর হুযূর-ই আকরাম ওমরাহ্ করার ইচ্ছা করলেন। সুতরাং তিনি এক হাজার চারশ’ সাহাবীকে সাথে নিয়ে ৬ষ্ঠ হিজরীর ১ যিলক্বদ রওনা হলেন। মক্কা মুর্কারামার পথে যুল হুলায়ফায় ইহরাম বাঁধলেন। যখন ‘আসফান নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন খবর এলো যে, মক্কার কাফিরগণ যুদ্ধ করার জন্য প্রচুর যুদ্ধ সামগ্রী নিয়ে প্রস্তুত।</div><div style="text-align: justify;"><br /></div><div style="text-align: justify;">যখন মুসলমানগণ হুদায়বিয়াহ্ নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন মুসলমানদের দিক থেকে কয়েকজনকে মক্কার কাফিরদের নিকট প্রেরণ করা হলো। তাঁরা মক্কার কাফিরদেরকে বললেন, ‘‘হুযূর সাইয়্যেদে আলম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ওমরাহ্ করার জন্য তাশরীফ এনেছেন। যুদ্ধের ইচ্ছা তাঁর নেই। ‘‘কিন্তু মক্কার কাফিরগণ তা বিশ্বাস করলো না। শেষ পর্যন্ত তারা ওরওয়াহ্ ইবনে মাস‘ঊদ সাক্বাফীকে অবস্থাদি দেখার জন্য হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর নিকট পাঠালো। ওরওয়াহ্ এসে হুযূর-ই আকরামের প্রতি সাহাবা-ই কেরামের আদব প্রদর্শন ও হুযূর মোস্তফার পবিত্র মজলিসের দৃশ্য দেখে হতভম্ভ হয়ে গেলো, ওরওয়াহ্ দেখলো- হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম যখন হাত মুবারক ধুতেন, তখন সাহাবা-ই কেরাম ওই হুযূর-ই আকরামের ওই ব্যবহৃত পানি আহরণের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছিলেন। যদি কখনো হুযূর-ই আকরাম থুথু ফেলতেন, তখন তাও আহরণ করার জন্য সাহাবা-ই কেরাম প্রতিযোগিতা মূলকভাবে চেষ্টা করছিলেন। যিনি তা পেয়ে যেতেন, তিনি তা বরকতের জন্য চেহারা ও শরীরে মালিশ করে নিতেন। হুযূর-ই আকরামের শরীর মুবারক থেকে কোন লোম শরীফ ঝরে পড়তেই তা সাহাবাই কেরাম অতি আদব সহকারে নিয়ে সংরক্ষণ করছিলেন এবং সেটাকে নিজের প্রাণের চেয়েও বেশী প্রিয় হিসেবে রেখে দিচ্ছিলেন। যখন হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম কথা বলতেন, তখন সবাই নিশ্চুপ হয়ে যেতেন। আর কেউ ওই পবিত্র মজলিসে চোখ উপরের দিকে তুলে দেখতেন না। তা ছিলো যেন এক জ্ঞান ও প্রজ্ঞা (বিজ্ঞান) এবং আদব, গাম্ভীর্য ও সম্ভ্রমের মজলিস। অথবা এভাবে বলুন, ‘যেন যমীনের উপরে ‘ক্বুদসী’ (পবিত্রাত্মা) নেমে এসেছেন।</div><div style="text-align: justify;"><br /></div><div style="text-align: justify;">ওরওয়াহ্ ফিরে গিয়ে এসব ঘটনা পূর্ণাঙ্গভাবে মক্কার কাফিরদেরকে বললো। আরো বললো, ‘‘আমি বড় থেকে বড়তর বাদশাহ্র দরবার দেখেছি, কিন্তু যেমন (হযরত) মুহাম্মদ (রাসূলুল্লাহ্)-এর মুক্তাবর্ষী দরবার দেখেছি, তেমন দরবার না আজ পর্যন্ত দেখেছি, না শুনেছি। কাজেই তোমরা তাঁর বিরুদ্ধে গিয়ে সফলকাম হতে পারবে না।</div><div style="text-align: justify;">ক্বোরাঈশ বংশীয়রা বললো, ‘‘এটা বলো না, আমরা এ বছর তাঁকে ফিরিয়ে দেবো। তিনি আগামী বছর আসবেন।’’ যেসব সাহাবী হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর পক্ষ থেকে আলাপ-আলোচনার জন্য গিয়ে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুও ছিলেন। তিনি দশজন সাহাবীকে সাথে নিয়ে মক্কাবাসীদের নিকট গিয়েছিলেন। তাঁরা মক্কাবাসীদেরকে বুঝালেন। আর বললেন, ‘‘তোমরা হুযূর-ই আকরাম আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালামকে ওমরাহ্ করতে বাধা দিওনা।’’ কিন্তু তারা জেদ ছাড়লো না। মক্কা মুর্কারামায় হযরত ওসমানকে তিন দিন পর্যন্ত রাখা হলো। মক্কার কাফিরগণ তাঁর সমীপে আরয করলো, ‘‘আপনি চাইলে খানা-ই কা’বার তাওয়াফ করতে পারবেন।’’ কিন্তু হযরত ওসমান বললেন, ‘‘আমার দ্বারা এটা হতে পারবে না যে, হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর পূর্বে তাওয়াফ করে নেবো!’’</div><div style="text-align: justify;"><br /></div><div style="text-align: justify;">এদিকে মুসলমানদের মধ্যে খবর এলো যে, হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে মক্কার কাফিরগণ শহীদ করে ফেলেছে। এ খবর আসলে হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম সমস্ত মুসলমান থেকে এমর্মে বায়‘আত নিলেন যে, ‘যদি যুদ্ধ করতে হয়, তবে কেউ যেন তা থেকে বিরত না থাকে।’ এ বায়‘আতকে ‘বায়‘আত-ই রিদওয়ান’ বলা হয়, যা এক কাঁটাযুক্ত গাছের নিচে সম্পন্ন হয়েছিলো। এ ঘটনার বিবরণ এ সূরার শেষভাগে এসেছে।</div><div style="text-align: justify;"><br /></div><div style="text-align: justify;">শেষ পর্যন্ত এ মর্মে সন্ধি হলো যে, এ বছর হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম ফিরে যাবেন এবং পরবর্তী বছর তাশরীফ এনে ওমরাহ্ পালন করবেন। যখন সন্ধিপত্র লিপিবদ্ধ হলো, তখন এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে। আর ইরশাদ হয়েছে, ‘‘হে মাহবূব! আমি আপনাকে বিজয় দিয়ে দিয়েছি। কেননা, এ সন্ধি মক্কা বিজয়ের মাধ্যম হয়ে গেছে। আর অনেক বিজয় এর পর অর্জিত হয়েছে। এ হলো এ আয়াতের শানে নুযূল (অবতরণের) প্রেক্ষাপট। এখন এ’তে দু’টি বিষয় অত্যন্ত লক্ষ্যণীয়: প্রথমত, ‘বিজয়’ মানে কি? দ্বিতীয়ত এযে, لِيَغْفِرَلَكَ اللهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ- -এর মর্মার্থ কি?</div><div style="text-align: justify;"><br /></div><div style="text-align: justify;">‘তাফসীর-ই রূহুল বয়ান’ প্রণেতা মহোদায় ‘ফাত্হ’ (বিজয়)-এর কয়েকটা ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন- প্রথমত, এখানে ‘ফাত্হ’ (বিজয়) মানে ‘ফাত্হে মক্কা’ (মক্কা বিজয়)। কিন্তু এটা বাহ্যত সংঘটিত ঘটনার বিপরীত মনে হচ্ছে। কেননা, এখনো তো মক্কাবাসীরা ওমরাহ্ও করতে দেয়নি এবং মুসলমানদেরকে ফিরে যেতে হলো। আর فَتَحْنَا অতীতকাল বাচক ক্রিয়াপদ, যার অর্থ হয়- ‘আমি বিজয় দিয়ে দিয়েছি।’ এর জবাবে বলা যাবে ‘হুদায়বিয়ার সন্ধি হয়ে যাওয়া-ই হচ্ছে ‘বিজয়’। কারণ, মক্কার কাফিরগণ চেষ্টা করেছিলো যেন সন্ধি না হয়। আর হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর ইচ্ছা ছিলো সন্ধি হয়ে যাক। সুতরাং কাফিরগণ যা চেয়েছিলো তা হয়নি, কিন্তু আল্লাহ্র হাবীব আল্লায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম যা চেয়েছিলেন, তা-ই হয়েছে। এটাই তো বিজয়।</div><div style="text-align: justify;"><br /></div><div style="text-align: justify;">অথবা, এর জবাবে বলা যাবে- এ সন্ধি বিজয়ের মাধ্যম (কারণ) হয়েছিলো। এজন্য এটাকে রূপকভাবে বিজয় বলা হয়েছে।</div><div class="separator" style="clear: both; text-align: justify;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgqiZPwSIU5wD0AFlifWegZfgmWaI0ftKGUqpGl6BreJbLraK-E-bJZ_CCowHUThSP6Uxbp7U8JQhoUD_9D4rmF4_yomp_vWQm2Q3tOOfEIV2jSDrUmflO10LQcrytK64iQWKgCGMaa5QQZ/s1600/3d841e08a37a2713ef5af7e52749c5c2.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="144" data-original-width="320" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgqiZPwSIU5wD0AFlifWegZfgmWaI0ftKGUqpGl6BreJbLraK-E-bJZ_CCowHUThSP6Uxbp7U8JQhoUD_9D4rmF4_yomp_vWQm2Q3tOOfEIV2jSDrUmflO10LQcrytK64iQWKgCGMaa5QQZ/s1600-rw/3d841e08a37a2713ef5af7e52749c5c2.jpg" /></a></div><div style="text-align: justify;"><br /></div><div style="text-align: justify;"><br /></div><div style="text-align: justify;">অথবা, যেহেতু এখন বিজয় নিশ্চিত হয়েছিলো, সেহেতু সেটাকে বিজয় বলা হয়েছে। কেননা, আরবের লোকেরা নিশ্চিত বিষয়কে অতীতকাল বাচক ক্রিয়া (শব্দ) দ্বারা বর্ণনা করেন। সুতরাং এখানেও অতীতকাল বাচক ক্রিয়া বলা হয়েছে।</div><div style="text-align: justify;"><br /></div><div style="text-align: justify;">অথবা, এ জন্য যে, এ সন্ধির কারণে কাফিরগণ মুসলমানের সাথে মেলামেশা করতে থাকে। আর এ মেলামেশার সুবাদে অনেক লোক ওই বছরই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে।</div><div style="text-align: justify;"><br /></div><div style="text-align: justify;">অথবা, ‘ফাত্হ’ মানে খুলে দেওয়া। সুতরাং আয়াতের অর্থ হলো- হে মাহবূব! (আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম) আমি আপনার জন্য দরজা খুলে দিয়েছি।</div><div style="text-align: justify;"><br /></div><div style="text-align: justify;">এ অর্থও হতে পারে যে, প্রথমে ইরশাদ হয়েছে- عِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا اِلَّا هُوَ-</div><div style="text-align: justify;">অর্থাৎ: গায়বের চাবিগুচ্ছ মহান রবের নিকট রয়েছে, ওইগুলো তিনি ব্যতীত আর কেউ জানে না। এতদিন প্রশ্ন ছিলো- এসব চাবি দ্বারা কারো জন্য গায়বের ভাণ্ডারের দরজা খুলেছেন কি না? এখানে ইরশাদ করেছেন- اِنَّا فَتَحْنَا لَكَ (আমি, হে মাহবূব! নিশ্চয় আপনার জন্য খুলে দিয়েছি।)</div><div style="text-align: justify;"><br /></div><div style="text-align: justify;">বাকী রইলো দ্বিতীয় আলোচনা। তা হচ্ছে ذَنْبِكَ (আপনার গুনাহ্)। এটার মর্মার্থ কি? সমস্ত মুসলমানের সর্বসম্মত আক্বীদা হচ্ছে- সম্মানিত নবীগণ মা’সূম (সমস্ত গুনাহ্ থেকে পবিত্র, নিষ্পাপ)। আর ‘তাফসীরাত-ই আহমদিয়া’ এ আয়াত لَايَنَالُ عَهْدِى الظَّالِمِيْنَ -এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন- ‘আমাদের হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম না নুবূয়ত প্রকাশের পূর্বে, না নুবূয়ত প্রকাশের পর, একটি মাত্র ক্ষুদ্র মুহূর্তের জন্য গুনাহ্র ইচ্ছাটুকুও করেননি। এতদসত্ত্বেও আয়াতের অর্থ কি? এ কারণে মুহাদ্দিসগণ ও মুফাস্সিরগণ এ আয়াতেরও অনেক ব্যাখ্যা দিয়েছেন।</div><div style="text-align: justify;"><br /></div><div style="text-align: justify;">‘মাদারিজুন্নুবূয়ত’ (শায়খ মুহাক্বক্বিক্ব-ই দেহলভী) বলেছেন, এ আয়াতে مَا تَقَدَّمَ মানে হযরত আদমের ভুল-ত্র“টিগুলো আর مَا تَأَخَّرَ মানে উম্মতের গুনাহ্ ক্ষমা করে দিয়েছেন। সুতরাং ‘রূহুল বয়ান’ প্রণেতা মহোদয় এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ‘‘হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর ওসীলা নিয়ে দো‘আ করলে তা কবূল হয়েছে। কোন কোন সম্মানিত বিজ্ঞ ব্যক্তি, একথাও বলেছেন, ‘এখানে খাত্বা-ই ইজতিহাদী; (ইজতিহাদগত ত্র“টি) বুঝানো হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, يَغْفِرُ মানে يَعْصِمُ , অর্থাৎ আল্লাহ্ তা‘আলা আপনাকে বিগত সময়ও গুনাহ্ থেকে মুক্ত (নিরাপদ) রেখেছেন, আগামীতেও আপনাকে সংরক্ষিত রাখবেন। অর্থাৎ আপনি গুনাহ থেকে নিরাপদ (মুক্ত-পবিত্র)।</div><div style="text-align: justify;"><br /></div><div style="text-align: justify;">কেউ কেউ বলেছেন, উম্মতের গুনাহকে হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর শাফা‘আতের দামনের দিকে সম্পৃক্ত করে দেওয়া হয়েছে। আর সর্বদা উম্মতদের গুনাহ্ সম্মানিত নবীগণের বদান্যতার দিকে সম্পৃক্ত হয়ে থাকে।</div><div style="text-align: justify;"><br /></div><div style="text-align: justify;">অর্থাৎ: গুনাহ্ ও অপরাধ কখনো গুনাহ্গারের দিকে সম্পৃক্ত হয়ে, কখনো ক্ষমার দায়িত্বগ্রহণকারীর দিকে। যেমন- মুক্কাদ্দমাকে অপরাধীও বলে ‘আমার মুকাদ্দমা’ আর উকিল এবং জজ সাহেবও বলেন, ‘আমার মুক্কাদ্দমা।’ কিন্তু অর্থ হয় ভিন্ন ভিন্ন। অপরাধীর মুকাদ্দমা এ অর্থে যে, অপরাধী তাতে গ্রেফতার হয়, আর উকিল ও জজ সাহেবের মুকাদ্দমা এ অর্থে যে, তাঁরা সেটার (যথাক্রমে উপস্থাপন ও ফয়সালা বা রায় প্রদানের) যিম্মাদার (দায়িত্ব প্রাপ্ত)। সুতরাং গুনাহ্গারদের গুনাহ্ যাতে তারা গ্রেফতার হয়, হুযূর-ই আকরামের বদান্যতার দিকে সম্পৃক্ত। তাও এ অর্থে যে, তিনি তাদের পক্ষে সুপারিশ করার দায়িত্ব নিয়েছেন- দয়া পরবশ হয়ে।</div><div style="text-align: justify;"><br /></div><div style="text-align: justify;">অথবা, ذَنْبِكَ মানে ওই গুনাহ্, যেগুলোকে হুযূর-ই আকরাম গুনাহ্ সাব্যস্ত করেছেন। কেননা, যদি হুযূর-ই আকরাম তাশরীফ না আনতেন, তবে কোন কাজ গুনাহ্ হিসেবে চিহ্নিত হতো না। অর্থাৎ তাঁর বর্ণিত গুনাহ্। (রূহুল বয়ান) যেমন- বলা হয়- ‘চুরি ও যিনা ইত্যাদি আল্লাহর হারাম কৃত গুনাহ। কবির ভাষায়-</div><div style="text-align: justify;">كركے تمهار ے گناه مانںইত تمهارى پناه- تم كهو دامن ميں ﺁتم په كروڑوں درود-</div><div style="text-align: justify;">অর্থ: (বান্দা) আপনার গুনাহ্ করে আপনারই আশ্রয় প্রার্থনা করে, আর আপনি বলেন, ‘আমার আচঁলে এসে যাও! আপনার দরবারে জানাই কোটি কোটি দুরূদ।</div><div style="text-align: justify;"><br /></div><div style="text-align: justify;">এজন্য কোন কোন সম্মানিত বিজ্ঞ ব্যক্তি বলেন, হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম গুনাহ্ (ভুল) করেন নি, বরং ভুল-ত্র“টির কারণ ওই খবীস (দুষ্ট) মানুষই হয়েছে, যারা হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম-এর পৃষ্ঠ মুবারকে ছিলো। আল্লাহ্ এটা চাননি যে, এ খবীসগণ জান্নাতে পয়দা হোক। সুতরাং বলা হলো, ‘‘হে আদম! আপনি যমীনে গিয়ে তাদেরকে ফেলে দিয়ে আসুন! তারপর জান্নাতে তাশরীফ নিয়ে আসুন!’’</div><div style="text-align: justify;">[সূত্র: রূহুল বয়ান: এ আয়াতের ব্যাখ্যায়, মিরক্বাত শরহে মিশকাত]</div><div style="text-align: justify;"><br /></div><div style="text-align: justify;">‘নবীগণ (আলায়হিমুস্ সলাম) নিষ্পাপ’’-এর পূর্ণাঙ্গ গবেষণা লব্ধ বিবরণ, আমার (মুফতি আহমদ ইয়ার খান) পুস্তিকা ‘ক্বহরে কিবরিয়া বর মুনকিরীন-ই ‘আস্মতে আম্বিয়া’য় দেখুন। এ ধরনের সমস্ত আয়াত, যেগুলো থেকে বে-দ্বীনগণ (ভ্রান্ত আক্বীদা পোষণকারীগণ) দলীল গ্রহণ করে, সব ক’টির ব্যাখ্যাগুলো ও সপ্রমাণ খণ্ডন তাতে অতি মজার পদ্ধতিতে বর্ণনা করা হয়েছে।</div><div style="text-align: justify;"><br /></div><div style="text-align: justify;">সুক্ষ্ম বিষয়</div><div style="text-align: justify;">‘তাফসীর-ই রূহুল বয়ান’ প্রণেতা মহোদয় এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, হুযূর আলায়হিস্ সালামকে তিনটি বিজয় দান করা হয়েছে- ১. ‘নিকটবর্তী বিজয়’, তা হচ্ছে- হৃদয়ের দরজা খুলে দেওয়া, এবং সেটাকে রহস্যাদি সম্পর্কে অবহিত করা, ২. ‘সুস্পষ্ট বিজয়’, তা হচ্ছে- হুযূর মোস্তফার রূহ মুবারকের দরজা খুলে দেওয়া এবং ৩. ‘নিঃশর্ত বিজয়’। তা হচ্ছে নিজের সাহায্যের দরজা হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর জন্য খুলে দেওয়া। এর দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে- اِذَا جَاءَ نَصْرُ اللهُ والْفَتْحُ এর মধ্যে।</div><div style="text-align: justify;">সাল্লাল্লাহু তা‘আলাহি ওয়া আলা আ-লিহী ওয়া আস্হাবিহী ওয়া বা-রাকা ওয়াসাল্লাম।</div><div style="text-align: justify;"><br /></div><div style="text-align: justify;"><br /></div></div>

নবী করীম (দুরূদ) তো কখনও গুনাহর ইচ্ছাও করেননি

নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তো কখনও গুনাহর ইচ্ছাও করেননি আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেন – اِنَّا فَتَحْنَالَكَ فَتْحًا مُّبِيْ...

Read more »

ইসলামে ফাতেহার গুরুত্ব

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">ইসলামে ফাতেহার গুরুত্ব<br />ইসলামের নামে বিভিন্ন বাতিল ফির্ক্বা সৃষ্টি হয়ে তারা অনেক সাওয়াবদায়ক, বৈধ ও নেক আমল নিয়ে বিতর্ক শুরু করেছে। ক্বোরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যা দিয়ে তারা অনেক নেক আমলকে মন্দ বিদ্‘আত বলে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের পক্ষ থেকে যুগে যুগে ওই বাতিলপন্থীদের দাঁতভাঙ্গা জবাব প্রদানের মাধ্যমে সঠিক মাসআলা উপস্থাপন করার প্রয়াসও চলমান আছে ও থাকবে। এ ক্ষুদ্র পরিসরে ইসলামী অনুষ্ঠানাদির আরো কিছু মাসআলা ক্বোরআন, সুন্নাহ ও ইমামদের মতামতের মাধ্যমে পেশ করার প্রয়াস পাচ্ছি। এমন উপকারী অনুষ্ঠানাদির মধ্যে ‘ফাতিহা’ অন্যতম।<br />‘ফাতিহা’-এর অর্থ হলো উম্মুক্ত করা। পরিভাষার মধ্যে ‘ফাতিহা’ ক্বোরআনের সূরা- ফাতিহাকে ‘ফাতিহা’ বলা হয়। অনুরূপ কোন মুসলমান মৃত্যুবরণ করলেও তার দাফনের তিন দিন শোক পালনের পর খানা-পিনা ও ফলাহারের আয়োজন করে সেখানে সূরা ফাতিহাসহ ক্বোরআন মাজীদের আরো কিছু আয়াত ও সূরা তেলাওয়াত এবং যিক্র-আযকার ও মীলাদ পাঠ করে মুনাজাতের মাধ্যমে এগুলোর সাওয়াব মৃত ব্যক্তির রূহে পৌঁছিয়ে দেওয়াকে ফাতেহা বলা হয়। ক্বোরআন-সুন্নাহর আলোকে দৈহিক ও আর্থিক এবাদতের সাওয়াব অন্য ঈমানদারকে বখশিশ করা জায়েয। ক্বোরআন মাজীদে ঈমানদারদের জন্য একে অপরের অনুকূলে দো‘আ করার হুকুম রয়েছে। এমন কি জানাযার নামায মৃত ব্যক্তির দো‘আর জন্য আদায় করা হয়।<br />ফাতিহা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী অনুষ্ঠান<br />ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানের নাম। এতে ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতের কর্ম বিধান রয়েছে। যে কর্মগুলো আল্লাহ্ তা‘আলা কর্তৃক তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে তথা ক্বোরআন-সুন্নাহর দলীলের আলোকে এ উম্মতের জন্য প্রদান করা হয়েছে। বিনিময়ে পরকালে সাওয়াব প্রদানের সু সংবাদ দেওয়া হয়েছে। এক কথায় আমলসমূহকে সালিহাত (صالحات) তথা সৎকর্মসমূহ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ নেক আমলসমূহের জন্য আমলকারীর ঈমানকে আবশ্যক ও পূর্বশর্ত সাব্যস্ত করা হয়েছে। ঈমান ব্যতীত কোন নেক আমল তথা ফরয, ওয়াজিব সুন্নাত, মুস্তাহাব, শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়। ঈমানবিহীন আমলের কোন সাওয়াব আল্লাহর পক্ষ থেকে না পাওয়া শরীয়তের সিদ্ধান্ত। ইসলামের নেক আমলসমূহের মধ্যে কিছু আমল সরাসরি ক্বোরআন-সুন্নাহ দ্বারা সাব্যস্ত। যেমনঃ নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, বিবাহ, ব্যবসা-বাণিজ্য, জিহাদ বা পারিবারিক কার্যক্রম ইত্যাদি। আর কিছু আমল ক্বোরআন-সুন্নাহর আলোকে শরীয়তের মৌলিক নিয়মাবলীর অনুসরণে সাব্যস্ত হয়েছে, মুজতাহিদ ইমামগণের ইজতিহাদের মাধ্যমে নেক আমল বলে সাব্যস্ত করেছেন।<br />হযরত সা’দ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু কুপ খনন করে বলেন- هذِهِ لِاُمِّ سَعْدٍ অর্থাৎ এটা উম্মে সা’দের কূপ। এ হাদীস শরীফের আলোকে ফক্বীহ্গণ ঈসালে সাওয়াব করা (সাওয়াব পৌঁছানো)-এর পক্ষে অভিমত দিয়েছেন; কিন্তু শারীরিক ইবাদতগুলোর মধ্যে নামায, রোযা ইত্যাদির বদলা অর্থাৎ অন্য কেউ আদায় করলে হবে না; কিন্তু হজ্জ্বের মধ্যে স্থলাভিষিক্ত বা বদলী করা জায়েয- ইবাদতে মালীও (আর্থিক ইবাদত) সামিল থাকার কারণে। যা হোক নামায রোযা সম্পন্ন করার মধ্যে বদলী জায়েয না হলেও এর সাওয়াব অন্য কাউকে দেওয়া যাবে।<br />হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন-<br />مَنْ يَضْمَنُ لِىْ مِنْكُمْ اَنْ ىُّصَلِّىَ فِىْ مَسْجِدِ الْعَشَّارِ رَكْعَتَيْنِ وَيَقُوْلُ هذِه لِاَبِىْ هُرَيْرَةَ<br />অর্থাৎ ‘‘তোমাদের মধ্যে কে আমার জন্য আশ্শার মসজিদে দু’রাক্‘আত নামায পড়ে বলবে এটা আবূ হুরায়ার জন্য, এ আমলের কে জিম্মাদার হবে?’’ এটা দ্বারা বুঝা গেলো যে, ঈসালে সাওয়াব করা শরীয়ত মতে জায়েয।<br />এ ঈসালে সাওয়াবের শাখাসমূহের মধ্যে ফাতিহা দেয়া, যেমন, কারো মৃত্যুর পর চার দিনের ফাতিহা, দশ দিনের ফাতিহা, চেহলাম বা চল্লিশা এবং বার্ষিক ফাতিহা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। আর ফাতিহার মধ্যে ক্বোরআন তিলাওয়াত, দুরূদ শরীফ পাঠ, যিক্র-আয্কার করা, সাথে সাথে সদক্বাহ্-খয়রাত এবং খানা-পিনার ব্যবস্থার মাধ্যমে সবগুলোর সওয়াব সমস্ত নবী, ওলী, মু’মিন-মু’মিনাত, বিশেষত মৃত ব্যক্তি, যার উপলক্ষে অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়, তার রূহে বখ্শিশ করা হয়।<br />ফাতিহার দলীল: ‘সূরা আন্‘আম- وَهذَا كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণিত আছে যে-<br />عَنْ حُمَيْدِ نِ الْاَعْرَجِ قَالَ مَنْ قَرَءَ الْقُرْانَ ثُمَّ دَعَا اَمَّنَ عَلى دُعَآئِه اَرْبَعَةُ الَافِ مَلَكٍ ثُمَّ لاَ يَزَالُوْنَ يَدْعُوْنَ لَه وَيَسْتَغْفِرُوْنَ وَيُصَلُّوْنَ عَلَيْهِ اِلَى الْمَسَاءِ اَوْاِلَى الصَّبَاحِ<br />অর্থাৎ: হযরত হুমাইদুল আ’রাজ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ক্বোরআনুল কারীম তেলাওয়াত করে ও খতম দিয়ে দো‘আ করবে, তার ওই দো‘আর সাথে চার হাজার নূরানী ফেরেশতা আমীন বলে। এরপর ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত অথবা সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ব্যক্তির জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দো‘আ করতে থাকে।<br />প্রতীয়মান হল যে, খতমে ক্বোরআনের সময় দো‘আ ক্ববূল হয়। আর ঈসালে সাওয়াবই দো‘আ। তাই সেখানে খতমে ক্বোরআন পড়া উত্তম।<br />দুররে মুখতার- بَابُ الدَّفْنِ -এ قِرَاةٌ لِّلْمَيِّتِ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-<br />وَفِى الْحَدِيْثِ مَنْ قَرَءَ الْاِخْلاَصَ اَحَدَ عَشَرَ مَرَّةَ ثُمَّ وَهَبَ اَجْرَهَا لِلْاَمْوَاتِ اُعْطِىَ مِنَ الْاَجْرِ بِعَدَدِ الْاَمْوَاتِ<br />অর্থাৎ হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, কোন এক ব্যক্তি ১১ বার সূরা ইখলাস পাঠ করে এর সাওয়াব মৃত ব্যক্তিদের রূহে পৌঁছাবে তাকে মৃতদের সংখ্যানুপাতে সাওয়াব দেয়া হবে।<br />উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে-<br />وَيُقْرَءُ مِنَ الْقُرْانِ مَاتَيَسَّرَلَه مِنَ الْفَاتِحَةِ وَاَوَّلُ سُوْرَةِ الْبَقْرَةِ اِلى اَلْمَفْلِحُوْنَ وَايَةُ الْكُرْسِىِّ وَامَنَ الرَّسُوْلُ وَسُوْرَةُ يٰس وَتَبٰرَكَ الَّذِىْ وَسُوْرَةُ التَّكَاثُرِ اِثْنَىْ عَشَرَةَ مَرَّةً اَوْاِحْدى عَشَرَةَ اَوْ سَبْعًا اَوْ ثَلاَثًا ثُمَّ يَقُوْلُ اَللهُمَّ اَوْصِلْ ثَوَابَ مَاقَرْأنًا اِلى فُلاَنٍ اَوْ اِلَيْهِمْ<br />অর্থাৎ এবং ক্বোরআন মজীদ থেকে পড়া হবে যা পড়া তার জন্য সহজ হবে; যেমন- সূরা ফাতিহা, সূরা বাক্বারার শুরুর আয়াতগুলো। ‘আল মুফলিহূন’ পর্যন্ত, আয়াতুর কুরসি, আ-মানার রসূলু…, সূরা ইয়া-সীন, তাবা-রাকাল্লাযী, সূরা তাকাসূর, ১২ বার, অথবা এগারবার, অথবা সাতবার অথবা তিনবার, অতঃপর বলবে, ‘আল্লা-হুম্মা…, ‘অর্থাৎ হে আল্লাহ্, আমরা যা পড়লাম তার সাওয়াব অমুক অথবা অমুকের প্রতি পৌঁছিয়ে দাও!<br />তথা শরীয়তের এসব বিধানের গ্রন্থাবলীর ইবারতের মধ্যে প্রচলিত ফাতিহার নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে।<br />এভাবে হানাফী মাযহাবের অন্যতম ফক্বীহ্ শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী বর্ণনা করেন, যে খাবার হযরত ইমাম হাসান ও হযরত হুসাইনের ফাতিহা-নিয়াযের নিয়্যতে হাযির করা হয় এবং সেখানে চার ক্বুল, সূরা ফাতিহা, ও দুরূদ শরীফ পাঠ করা হয়, তা অধিক বরকতময়। তিনি আরো উল্লেখ করেন, কোন বুযুর্গ ওলীউল্লাহ্র ফাতেহা উপলক্ষে দুধ, শিরনী ইত্যাদি তৈরী করে খাওয়ানো শরীয়ত মতে জায়েয।<br />শাহ্ অলিউল্লাহ্ মুহাদ্দিস দেহলভী ইন্তিক্বালের ৩য় দিনে ফাতিহা প্রদান প্রসঙ্গে শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী বর্ণনা করেন যে, ৩য় দিনে এত লোকের সমাগম হল, যা গণনার বাইরে ছিল। সেখানে ৮১ বার-এর অধিক খতমে ক্বোরআন এবং অসংখ্য তাহলীল পাঠ করা হয়েছে।<br />ফাতিহার আরেকটি নিয়ম, খাবার সামনে রেখে কিছু সূরা-র্ক্বি‘আত, দুরূদ শরীফ পাঠ করে হাত উঠিয়ে দো‘আ করা এবং ওইগুলোর সাওয়াব নবী, ওলী ও মু’মিনগণকে বখশিশ করা। এই প্রচলিত নিয়মটি বিভিন্ন হাদীসে পাকের মাধ্যমে সাব্যস্ত। ফলে এটা শরীয়ত মতে এ সুন্নাতের পর্যায়ে পড়ে।<br />হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি কিছু খেজুর হুযূর-ই পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে নিয়ে আসলাম এবং এর বরকতের জন্য দো‘আ করতে আরয করলাম, তখন-فَضَمَّهُنَّ ثُمَّ دَعَالِىْ فِيْهِنَّ بِالْبَرَكَةِ খেজুরগুলো নিয়ে মিশালেন এবং বরকতের জন্য দো‘আ করছেন।<br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhlilY8vTx4UboyB8nmFwx8gEO9E7c5cKR92S36zUCvsaP-OFCKAFQXGZEjaFoUM5R67fGupuSXMa00W8_H6BMjeVFjE8-FYIyp4z3WGP8sKdYfOHfP4FAk2Umox1zlJCe1c3Ve8LIsPHFe/s1600/za31871fsyev.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="547" data-original-width="437" height="320" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhlilY8vTx4UboyB8nmFwx8gEO9E7c5cKR92S36zUCvsaP-OFCKAFQXGZEjaFoUM5R67fGupuSXMa00W8_H6BMjeVFjE8-FYIyp4z3WGP8sKdYfOHfP4FAk2Umox1zlJCe1c3Ve8LIsPHFe/s320-rw/za31871fsyev.jpg" width="255" /></a></div><br />তাবূকের যুদ্ধে মুসলমান সৈন্যদের রসদ ফুরিয়ে এলো। তখন হুযূর-ই করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলেন, যার কাছে যা অল্প-স্বল্প রসদ আছে, তা নিয়ে এসো। দস্তরখানা বিছানো হলো। সেখানে সকলেই কিছু কিছু রসদ রাখলেন-<br />فَدَعَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْبَرْكَةِ ثُمَّ قَالَ خُذُوا فِىْ اَوْعِيَتِكُمْ<br />অর্থাৎ ওই উপস্থিত রসদের উপর বরকতের দো‘আ করলেন এবং বললেন, ‘‘এখান থেকে তোমরা তোমাদের পাত্রে নিয়ে যাও।’’<br />হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শাদীর প্রাক্কালে উম্মে সুলায়ম (হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর মাতা) ওয়ালীমা হিসাবে কিছু খাবার তৈরী করলেন, অনেক লোকজনকে দাওয়াত করা হল। বর্ণনাকারী বলেন, তখন হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম তিনি وَضَعَ يَدَه عَلى تِلْكَ الْحَيْسَةِ وَتَكَلَّمَ بِمَاشَآءَ اللهُ অর্থাৎ হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ওই খাবারের উপর হাত রেখে কিছু পড়লেন।<br />এভাবে হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু খন্দকের যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সামান্য খাবার তৈরী করে হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে দাওয়াত করলেন। হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সাহাবা-ই কেরামকে নিয়ে হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর বাড়ীতে তাশরীফ আনলেন। فَاَخْرَجَتْ لَه عَجِيْنًا فَبَصَقَ فِيْهِ وَبَارَكَ হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সামনে খামিরা পেশ করা হলো। সেখানে হুযূর-ই আক্রাম ‘লু‘আব মুবারক’ অর্থাৎ থুথু শরীফ দিলেন এবং বরকতের জন্য দো‘আ করলেন।<br />এভাবে আরো ফাতিহার অনেক দলীল রয়েছে, যেগুলো দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, ফাতেহা দেয়া শুধু বৈধ নয়; বরং তা অনেক বরকত হাসিলের ওসীলাও।<br />আর আমরা মুসলমান সদা-সর্বদা বরকতের মুখাপেক্ষী। তাছাড়া ফাতিহার মধ্যে দু’ধরনের ইবাদতের সংমিশ্রণ হয়ঃ তিলাওয়াতে ক্বোরআন ও যিক্র এবং সদক্বা-খয়রাত। এ উভয় কাজ পৃথকভাবেও সাওয়াবের হবার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। ফাতিহার মধ্যে এ দুই ইবাদতকে একত্রিত করা হয়। তাই এটা কিভাবে হারাম হয়? কোন ঈমানদার ব্যক্তি এটাকে হারাম ও অবৈধ বলতে পারে না। আর যদি বলে, তবে শরীয়তে হালাল বস্তুকে হারাম বললে যে অপরাধ হয়, সে অপরাধে অপরাধী হবে। এমনকি তার ঈমানের ব্যাপারেও সন্দেহ থাকবে। বিরানী খাওয়া ক্বোরআনের ও হাদীসের সরাসরি দলীল দ্বারা সাব্যস্ত নয়; কিন্তু তা হালাল হলো এ কারণে যে, বিরানী তো চাউল, গোশত এবং ঘি-মসল্লা ইত্যাদি দিয়ে পাকানো হয়। এসব ক’টি বস্তুই হালাল খাবার। এভাবে ফাতিহায়ও হালাল খাবার তৈরী করা হয়; তারপর ক্বোরআন তেলাওয়াত ও যিক্র-আযকার করা হয়। পরিশেষে, দো‘আ ও ঈসালে সাওয়াব করা হয়। যেহেতু এ সব বস্তু পৃথক পৃথকভাবে জায়েয, সুতরাং সম্মিলিতভাবেও জায়েয।<br />ফাতেহার খাবারকে সামনে রেখে দো‘আ করা সুন্নাত। (উপরে উল্লেখিত বর্ণনাদি দ্বারা সাব্যস্ত;) যেমনিভাবে জানাযার নামাযে মৃতকে সামনে রেখে নামায ও দো‘আ করা হয়, অনুরূপভাবে কবরকে সামনে রেখে দাঁড়িয়ে যিয়ারত ও দো‘আ করা হয়; যা হাদীসে পাক দ্বারা সাব্যস্ত। হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ক্বোরবানীর ছাগল জবেহ করার পর সামনে- اَللهُمَّ هَذَا مِنْ اُمَّةِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ বলে দো‘আ করেছেন।<br />ফাতিহার মধ্যে যদি খাবার সামনে রেখে ঈসালে সাওয়াব করা হয়, তাহলে শরীয়তের পক্ষ থেকে বাধা কিসের? কোন ঈমানদার নিষেধের পক্ষে যাবে না। আর যদি বলা হয় ‘বিসমিল্লাহ্’ বলে খাবার শুরু করলে ফাতিহা হয়ে যায়, প্রচলিত ফাতিহার প্রয়োজন নেই, তখন বলা যাবে ‘বিসমিল্লাহ্’ও ক্বোরআন শরীফের আয়াত। খাবারের সামনে ক্বোরআন পাঠ করে ফাতিহা দেয়া যদি নিষেধ হয়, তাহলে খাবারের পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ্’ পড়াও নিষেধ হবে। সম্ভবত ফাতিহার বিরোধিরা বিস্মিল্লাহ পড়াও বাদ দেয়, তাদের সঙ্গী শয়তানকে শরীক করার জন্য।’<br />মোটকথা, ফাতেহা ইসলামী অনুষ্ঠানাবলীর অন্যতম অনুষ্ঠান, যা ১৪০০ বছরাধিকাল যাবৎ ঈমানদাররা পালন করে আসছেন। সুতরাং এটা ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হলো।<br /><div>এ ফাতেহা বিভিন্ন নামে প্রচলিত যথা- ৪ দিনের ফাতেহা, ১০ দিনের ফাতেহা, ৪০ দিনের ফাতিহা, বাৎসরিক ফাতেহা, নতুন নতুন ফলাদির ফাতেহা ইত্যাদি। এ সব ফাতেহাও বরকতের ওসীলা হয়</div></div>

ইসলামে ফাতেহার গুরুত্ব

ইসলামে ফাতেহার গুরুত্ব ইসলামের নামে বিভিন্ন বাতিল ফির্ক্বা সৃষ্টি হয়ে তারা অনেক সাওয়াবদায়ক, বৈধ ও নেক আমল নিয়ে বিতর্ক শুরু করেছে। ক্বোরআন-সু...

Read more »

ইসলামে ফাতেহার গুরুত্ব

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"> ইসলামে ফাতেহার গুরুত্ব<br /> ইসলামের নামে বিভিন্ন বাতিল ফির্ক্বা সৃষ্টি হয়ে তারা অনেক সাওয়াবদায়ক, বৈধ ও নেক আমল নিয়ে বিতর্ক শুরু করেছে। ক্বোরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যা দিয়ে তারা অনেক নেক আমলকে মন্দ বিদ্‘আত বলে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের পক্ষ থেকে যুগে যুগে ওই বাতিলপন্থীদের দাঁতভাঙ্গা জবাব প্রদানের মাধ্যমে সঠিক মাসআলা উপস্থাপন করার প্রয়াসও চলমান আছে ও থাকবে। এ ক্ষুদ্র পরিসরে ইসলামী অনুষ্ঠানাদির আরো কিছু মাসআলা ক্বোরআন, সুন্নাহ ও ইমামদের মতামতের মাধ্যমে পেশ করার প্রয়াস পাচ্ছি। এমন উপকারী অনুষ্ঠানাদির মধ্যে ‘ফাতিহা’ অন্যতম।<br /> ‘ফাতিহা’-এর অর্থ হলো উম্মুক্ত করা। পরিভাষার মধ্যে ‘ফাতিহা’ ক্বোরআনের সূরা- ফাতিহাকে ‘ফাতিহা’ বলা হয়। অনুরূপ কোন মুসলমান মৃত্যুবরণ করলেও তার দাফনের তিন দিন শোক পালনের পর খানা-পিনা ও ফলাহারের আয়োজন করে সেখানে সূরা ফাতিহাসহ ক্বোরআন মাজীদের আরো কিছু আয়াত ও সূরা তেলাওয়াত এবং যিক্র-আযকার ও মীলাদ পাঠ করে মুনাজাতের মাধ্যমে এগুলোর সাওয়াব মৃত ব্যক্তির রূহে পৌঁছিয়ে দেওয়াকে ফাতেহা বলা হয়। ক্বোরআন-সুন্নাহর আলোকে দৈহিক ও আর্থিক এবাদতের সাওয়াব অন্য ঈমানদারকে বখশিশ করা জায়েয। ক্বোরআন মাজীদে ঈমানদারদের জন্য একে অপরের অনুকূলে দো‘আ করার হুকুম রয়েছে। এমন কি জানাযার নামায মৃত ব্যক্তির দো‘আর জন্য আদায় করা হয়।<br /> ফাতিহা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী অনুষ্ঠান<br /> ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানের নাম। এতে ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতের কর্ম বিধান রয়েছে। যে কর্মগুলো আল্লাহ্ তা‘আলা কর্তৃক তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে তথা ক্বোরআন-সুন্নাহর দলীলের আলোকে এ উম্মতের জন্য প্রদান করা হয়েছে। বিনিময়ে পরকালে সাওয়াব প্রদানের সু সংবাদ দেওয়া হয়েছে। এক কথায় আমলসমূহকে সালিহাত (صالحات) তথা সৎকর্মসমূহ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ নেক আমলসমূহের জন্য আমলকারীর ঈমানকে আবশ্যক ও পূর্বশর্ত সাব্যস্ত করা হয়েছে। ঈমান ব্যতীত কোন নেক আমল তথা ফরয, ওয়াজিব সুন্নাত, মুস্তাহাব, শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়। ঈমানবিহীন আমলের কোন সাওয়াব আল্লাহর পক্ষ থেকে না পাওয়া শরীয়তের সিদ্ধান্ত। ইসলামের নেক আমলসমূহের মধ্যে কিছু আমল সরাসরি ক্বোরআন-সুন্নাহ দ্বারা সাব্যস্ত। যেমনঃ নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, বিবাহ, ব্যবসা-বাণিজ্য, জিহাদ বা পারিবারিক কার্যক্রম ইত্যাদি। আর কিছু আমল ক্বোরআন-সুন্নাহর আলোকে শরীয়তের মৌলিক নিয়মাবলীর অনুসরণে সাব্যস্ত হয়েছে, মুজতাহিদ ইমামগণের ইজতিহাদের মাধ্যমে নেক আমল বলে সাব্যস্ত করেছেন।<br /> হযরত সা’দ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু কুপ খনন করে বলেন- هذِهِ لِاُمِّ سَعْدٍ অর্থাৎ এটা উম্মে সা’দের কূপ। এ হাদীস শরীফের আলোকে ফক্বীহ্গণ ঈসালে সাওয়াব করা (সাওয়াব পৌঁছানো)-এর পক্ষে অভিমত দিয়েছেন; কিন্তু শারীরিক ইবাদতগুলোর মধ্যে নামায, রোযা ইত্যাদির বদলা অর্থাৎ অন্য কেউ আদায় করলে হবে না; কিন্তু হজ্জ্বের মধ্যে স্থলাভিষিক্ত বা বদলী করা জায়েয- ইবাদতে মালীও (আর্থিক ইবাদত) সামিল থাকার কারণে। যা হোক নামায রোযা সম্পন্ন করার মধ্যে বদলী জায়েয না হলেও এর সাওয়াব অন্য কাউকে দেওয়া যাবে।<br /> হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন-<br /> مَنْ يَضْمَنُ لِىْ مِنْكُمْ اَنْ ىُّصَلِّىَ فِىْ مَسْجِدِ الْعَشَّارِ رَكْعَتَيْنِ وَيَقُوْلُ هذِه لِاَبِىْ هُرَيْرَةَ<br /> অর্থাৎ ‘‘তোমাদের মধ্যে কে আমার জন্য আশ্শার মসজিদে দু’রাক্‘আত নামায পড়ে বলবে এটা আবূ হুরায়ার জন্য, এ আমলের কে জিম্মাদার হবে?’’ এটা দ্বারা বুঝা গেলো যে, ঈসালে সাওয়াব করা শরীয়ত মতে জায়েয।<br /> এ ঈসালে সাওয়াবের শাখাসমূহের মধ্যে ফাতিহা দেয়া, যেমন, কারো মৃত্যুর পর চার দিনের ফাতিহা, দশ দিনের ফাতিহা, চেহলাম বা চল্লিশা এবং বার্ষিক ফাতিহা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। আর ফাতিহার মধ্যে ক্বোরআন তিলাওয়াত, দুরূদ শরীফ পাঠ, যিক্র-আয্কার করা, সাথে সাথে সদক্বাহ্-খয়রাত এবং খানা-পিনার ব্যবস্থার মাধ্যমে সবগুলোর সওয়াব সমস্ত নবী, ওলী, মু’মিন-মু’মিনাত, বিশেষত মৃত ব্যক্তি, যার উপলক্ষে অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়, তার রূহে বখ্শিশ করা হয়।<br /> ফাতিহার দলীল: ‘সূরা আন্‘আম- وَهذَا كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণিত আছে যে-<br /> عَنْ حُمَيْدِ نِ الْاَعْرَجِ قَالَ مَنْ قَرَءَ الْقُرْانَ ثُمَّ دَعَا اَمَّنَ عَلى دُعَآئِه اَرْبَعَةُ الَافِ مَلَكٍ ثُمَّ لاَ يَزَالُوْنَ يَدْعُوْنَ لَه وَيَسْتَغْفِرُوْنَ وَيُصَلُّوْنَ عَلَيْهِ اِلَى الْمَسَاءِ اَوْاِلَى الصَّبَاحِ<br /> অর্থাৎ: হযরত হুমাইদুল আ’রাজ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ক্বোরআনুল কারীম তেলাওয়াত করে ও খতম দিয়ে দো‘আ করবে, তার ওই দো‘আর সাথে চার হাজার নূরানী ফেরেশতা আমীন বলে। এরপর ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত অথবা সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ব্যক্তির জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দো‘আ করতে থাকে।<br /> প্রতীয়মান হল যে, খতমে ক্বোরআনের সময় দো‘আ ক্ববূল হয়। আর ঈসালে সাওয়াবই দো‘আ। তাই সেখানে খতমে ক্বোরআন পড়া উত্তম।<br /> দুররে মুখতার- بَابُ الدَّفْنِ -এ قِرَاةٌ لِّلْمَيِّتِ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-<br /> وَفِى الْحَدِيْثِ مَنْ قَرَءَ الْاِخْلاَصَ اَحَدَ عَشَرَ مَرَّةَ ثُمَّ وَهَبَ اَجْرَهَا لِلْاَمْوَاتِ اُعْطِىَ مِنَ الْاَجْرِ بِعَدَدِ الْاَمْوَاتِ<br /> অর্থাৎ হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, কোন এক ব্যক্তি ১১ বার সূরা ইখলাস পাঠ করে এর সাওয়াব মৃত ব্যক্তিদের রূহে পৌঁছাবে তাকে মৃতদের সংখ্যানুপাতে সাওয়াব দেয়া হবে।<br /> উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে-<br /> وَيُقْرَءُ مِنَ الْقُرْانِ مَاتَيَسَّرَلَه مِنَ الْفَاتِحَةِ وَاَوَّلُ سُوْرَةِ الْبَقْرَةِ اِلى اَلْمَفْلِحُوْنَ وَايَةُ الْكُرْسِىِّ وَامَنَ الرَّسُوْلُ وَسُوْرَةُ يٰس وَتَبٰرَكَ الَّذِىْ وَسُوْرَةُ التَّكَاثُرِ اِثْنَىْ عَشَرَةَ مَرَّةً اَوْاِحْدى عَشَرَةَ اَوْ سَبْعًا اَوْ ثَلاَثًا ثُمَّ يَقُوْلُ اَللهُمَّ اَوْصِلْ ثَوَابَ مَاقَرْأنًا اِلى فُلاَنٍ اَوْ اِلَيْهِمْ<br /> অর্থাৎ এবং ক্বোরআন মজীদ থেকে পড়া হবে যা পড়া তার জন্য সহজ হবে; যেমন- সূরা ফাতিহা, সূরা বাক্বারার শুরুর আয়াতগুলো। ‘আল মুফলিহূন’ পর্যন্ত, আয়াতুর কুরসি, আ-মানার রসূলু…, সূরা ইয়া-সীন, তাবা-রাকাল্লাযী, সূরা তাকাসূর, ১২ বার, অথবা এগারবার, অথবা সাতবার অথবা তিনবার, অতঃপর বলবে, ‘আল্লা-হুম্মা…, ‘অর্থাৎ হে আল্লাহ্, আমরা যা পড়লাম তার সাওয়াব অমুক অথবা অমুকের প্রতি পৌঁছিয়ে দাও!<br /> তথা শরীয়তের এসব বিধানের গ্রন্থাবলীর ইবারতের মধ্যে প্রচলিত ফাতিহার নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে।<br /> এভাবে হানাফী মাযহাবের অন্যতম ফক্বীহ্ শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী বর্ণনা করেন, যে খাবার হযরত ইমাম হাসান ও হযরত হুসাইনের ফাতিহা-নিয়াযের নিয়্যতে হাযির করা হয় এবং সেখানে চার ক্বুল, সূরা ফাতিহা, ও দুরূদ শরীফ পাঠ করা হয়, তা অধিক বরকতময়। তিনি আরো উল্লেখ করেন, কোন বুযুর্গ ওলীউল্লাহ্র ফাতেহা উপলক্ষে দুধ, শিরনী ইত্যাদি তৈরী করে খাওয়ানো শরীয়ত মতে জায়েয।<br /> শাহ্ অলিউল্লাহ্ মুহাদ্দিস দেহলভী ইন্তিক্বালের ৩য় দিনে ফাতিহা প্রদান প্রসঙ্গে শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী বর্ণনা করেন যে, ৩য় দিনে এত লোকের সমাগম হল, যা গণনার বাইরে ছিল। সেখানে ৮১ বার-এর অধিক খতমে ক্বোরআন এবং অসংখ্য তাহলীল পাঠ করা হয়েছে।<br /> ফাতিহার আরেকটি নিয়ম, খাবার সামনে রেখে কিছু সূরা-র্ক্বি‘আত, দুরূদ শরীফ পাঠ করে হাত উঠিয়ে দো‘আ করা এবং ওইগুলোর সাওয়াব নবী, ওলী ও মু’মিনগণকে বখশিশ করা। এই প্রচলিত নিয়মটি বিভিন্ন হাদীসে পাকের মাধ্যমে সাব্যস্ত। ফলে এটা শরীয়ত মতে এ সুন্নাতের পর্যায়ে পড়ে।<br /> হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি কিছু খেজুর হুযূর-ই পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে নিয়ে আসলাম এবং এর বরকতের জন্য দো‘আ করতে আরয করলাম, তখন-فَضَمَّهُنَّ ثُمَّ دَعَالِىْ فِيْهِنَّ بِالْبَرَكَةِ খেজুরগুলো নিয়ে মিশালেন এবং বরকতের জন্য দো‘আ করছেন।<br /> <div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"> <a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhMSXv0X5yWoSj_IvlzT0RS4_l2Zpk8E1A9PB1noql4-veUWVYS_8eaRPdO0itGDX2_EqAsM0xARAHR14BfpS9od_GvnkXlFHb8pAdvyGUyEAf7d397wpbxTkXORqReKz87ELOGDcWvS-6Y/s1600/za31871fsyev.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="547" data-original-width="437" height="320" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhMSXv0X5yWoSj_IvlzT0RS4_l2Zpk8E1A9PB1noql4-veUWVYS_8eaRPdO0itGDX2_EqAsM0xARAHR14BfpS9od_GvnkXlFHb8pAdvyGUyEAf7d397wpbxTkXORqReKz87ELOGDcWvS-6Y/s320-rw/za31871fsyev.jpg" width="255" /></a></div> <br /> তাবূকের যুদ্ধে মুসলমান সৈন্যদের রসদ ফুরিয়ে এলো। তখন হুযূর-ই করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলেন, যার কাছে যা অল্প-স্বল্প রসদ আছে, তা নিয়ে এসো। দস্তরখানা বিছানো হলো। সেখানে সকলেই কিছু কিছু রসদ রাখলেন-<br /> فَدَعَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْبَرْكَةِ ثُمَّ قَالَ خُذُوا فِىْ اَوْعِيَتِكُمْ<br /> অর্থাৎ ওই উপস্থিত রসদের উপর বরকতের দো‘আ করলেন এবং বললেন, ‘‘এখান থেকে তোমরা তোমাদের পাত্রে নিয়ে যাও।’’<br /> হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শাদীর প্রাক্কালে উম্মে সুলায়ম (হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর মাতা) ওয়ালীমা হিসাবে কিছু খাবার তৈরী করলেন, অনেক লোকজনকে দাওয়াত করা হল। বর্ণনাকারী বলেন, তখন হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম তিনি وَضَعَ يَدَه عَلى تِلْكَ الْحَيْسَةِ وَتَكَلَّمَ بِمَاشَآءَ اللهُ অর্থাৎ হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ওই খাবারের উপর হাত রেখে কিছু পড়লেন।<br /> এভাবে হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু খন্দকের যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সামান্য খাবার তৈরী করে হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে দাওয়াত করলেন। হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সাহাবা-ই কেরামকে নিয়ে হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর বাড়ীতে তাশরীফ আনলেন। فَاَخْرَجَتْ لَه عَجِيْنًا فَبَصَقَ فِيْهِ وَبَارَكَ হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সামনে খামিরা পেশ করা হলো। সেখানে হুযূর-ই আক্রাম ‘লু‘আব মুবারক’ অর্থাৎ থুথু শরীফ দিলেন এবং বরকতের জন্য দো‘আ করলেন।<br /> এভাবে আরো ফাতিহার অনেক দলীল রয়েছে, যেগুলো দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, ফাতেহা দেয়া শুধু বৈধ নয়; বরং তা অনেক বরকত হাসিলের ওসীলাও।<br /> আর আমরা মুসলমান সদা-সর্বদা বরকতের মুখাপেক্ষী। তাছাড়া ফাতিহার মধ্যে দু’ধরনের ইবাদতের সংমিশ্রণ হয়ঃ তিলাওয়াতে ক্বোরআন ও যিক্র এবং সদক্বা-খয়রাত। এ উভয় কাজ পৃথকভাবেও সাওয়াবের হবার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। ফাতিহার মধ্যে এ দুই ইবাদতকে একত্রিত করা হয়। তাই এটা কিভাবে হারাম হয়? কোন ঈমানদার ব্যক্তি এটাকে হারাম ও অবৈধ বলতে পারে না। আর যদি বলে, তবে শরীয়তে হালাল বস্তুকে হারাম বললে যে অপরাধ হয়, সে অপরাধে অপরাধী হবে। এমনকি তার ঈমানের ব্যাপারেও সন্দেহ থাকবে। বিরানী খাওয়া ক্বোরআনের ও হাদীসের সরাসরি দলীল দ্বারা সাব্যস্ত নয়; কিন্তু তা হালাল হলো এ কারণে যে, বিরানী তো চাউল, গোশত এবং ঘি-মসল্লা ইত্যাদি দিয়ে পাকানো হয়। এসব ক’টি বস্তুই হালাল খাবার। এভাবে ফাতিহায়ও হালাল খাবার তৈরী করা হয়; তারপর ক্বোরআন তেলাওয়াত ও যিক্র-আযকার করা হয়। পরিশেষে, দো‘আ ও ঈসালে সাওয়াব করা হয়। যেহেতু এ সব বস্তু পৃথক পৃথকভাবে জায়েয, সুতরাং সম্মিলিতভাবেও জায়েয।<br /> ফাতেহার খাবারকে সামনে রেখে দো‘আ করা সুন্নাত। (উপরে উল্লেখিত বর্ণনাদি দ্বারা সাব্যস্ত;) যেমনিভাবে জানাযার নামাযে মৃতকে সামনে রেখে নামায ও দো‘আ করা হয়, অনুরূপভাবে কবরকে সামনে রেখে দাঁড়িয়ে যিয়ারত ও দো‘আ করা হয়; যা হাদীসে পাক দ্বারা সাব্যস্ত। হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ক্বোরবানীর ছাগল জবেহ করার পর সামনে- اَللهُمَّ هَذَا مِنْ اُمَّةِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ বলে দো‘আ করেছেন।<br /> ফাতিহার মধ্যে যদি খাবার সামনে রেখে ঈসালে সাওয়াব করা হয়, তাহলে শরীয়তের পক্ষ থেকে বাধা কিসের? কোন ঈমানদার নিষেধের পক্ষে যাবে না। আর যদি বলা হয় ‘বিসমিল্লাহ্’ বলে খাবার শুরু করলে ফাতিহা হয়ে যায়, প্রচলিত ফাতিহার প্রয়োজন নেই, তখন বলা যাবে ‘বিসমিল্লাহ্’ও ক্বোরআন শরীফের আয়াত। খাবারের সামনে ক্বোরআন পাঠ করে ফাতিহা দেয়া যদি নিষেধ হয়, তাহলে খাবারের পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ্’ পড়াও নিষেধ হবে। সম্ভবত ফাতিহার বিরোধিরা বিস্মিল্লাহ পড়াও বাদ দেয়, তাদের সঙ্গী শয়তানকে শরীক করার জন্য।’<br /> মোটকথা, ফাতেহা ইসলামী অনুষ্ঠানাবলীর অন্যতম অনুষ্ঠান, যা ১৪০০ বছরাধিকাল যাবৎ ঈমানদাররা পালন করে আসছেন। সুতরাং এটা ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হলো।<br /> <div> এ ফাতেহা বিভিন্ন নামে প্রচলিত যথা- ৪ দিনের ফাতেহা, ১০ দিনের ফাতেহা, ৪০ দিনের ফাতিহা, বাৎসরিক ফাতেহা, নতুন নতুন ফলাদির ফাতেহা ইত্যাদি। এ সব ফাতেহাও বরকতের ওসীলা হয়</div> </div>

ইসলামে ফাতেহার গুরুত্ব

ইসলামে ফাতেহার গুরুত্ব ইসলামের নামে বিভিন্ন বাতিল ফির্ক্বা সৃষ্টি হয়ে তারা অনেক সাওয়াবদায়ক, বৈধ ও নেক আমল নিয়ে বিতর্ক শুরু করেছে। ক্বোরআন-...

Read more »

ইসলামে ফাতেহার গুরুত্ব

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"><br />ইসলামে ফাতেহার গুরুত্ব<br /><br />ইসলামের নামে বিভিন্ন বাতিল ফির্ক্বা সৃষ্টি হয়ে তারা অনেক সাওয়াবদায়ক, বৈধ ও নেক আমল নিয়ে বিতর্ক শুরু করেছে। ক্বোরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যা দিয়ে তারা অনেক নেক আমলকে মন্দ বিদ্‘আত বলে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের পক্ষ থেকে যুগে যুগে ওই বাতিলপন্থীদের দাঁতভাঙ্গা জবাব প্রদানের মাধ্যমে সঠিক মাসআলা উপস্থাপন করার প্রয়াসও চলমান আছে ও থাকবে। এ ক্ষুদ্র পরিসরে ইসলামী অনুষ্ঠানাদির আরো কিছু মাসআলা ক্বোরআন, সুন্নাহ ও ইমামদের মতামতের মাধ্যমে পেশ করার প্রয়াস পাচ্ছি। এমন উপকারী অনুষ্ঠানাদির মধ্যে ‘ফাতিহা’ অন্যতম।<br /><br />‘ফাতিহা’-এর অর্থ হলো উম্মুক্ত করা। পরিভাষার মধ্যে ‘ফাতিহা’ ক্বোরআনের সূরা- ফাতিহাকে ‘ফাতিহা’ বলা হয়। অনুরূপ কোন মুসলমান মৃত্যুবরণ করলেও তার দাফনের তিন দিন শোক পালনের পর খানা-পিনা ও ফলাহারের আয়োজন করে সেখানে সূরা ফাতিহাসহ ক্বোরআন মাজীদের আরো কিছু আয়াত ও সূরা তেলাওয়াত এবং যিক্র-আযকার ও মীলাদ পাঠ করে মুনাজাতের মাধ্যমে এগুলোর সাওয়াব মৃত ব্যক্তির রূহে পৌঁছিয়ে দেওয়াকে ফাতেহা বলা হয়। ক্বোরআন-সুন্নাহর আলোকে দৈহিক ও আর্থিক এবাদতের সাওয়াব অন্য ঈমানদারকে বখশিশ করা জায়েয। ক্বোরআন মাজীদে ঈমানদারদের জন্য একে অপরের অনুকূলে দো‘আ করার হুকুম রয়েছে। এমন কি জানাযার নামায মৃত ব্যক্তির দো‘আর জন্য আদায় করা হয়।<br /><br />ফাতিহা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী অনুষ্ঠান<br /><br />ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানের নাম। এতে ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতের কর্ম বিধান রয়েছে। যে কর্মগুলো আল্লাহ্ তা‘আলা কর্তৃক তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে তথা ক্বোরআন-সুন্নাহর দলীলের আলোকে এ উম্মতের জন্য প্রদান করা হয়েছে। বিনিময়ে পরকালে সাওয়াব প্রদানের সু সংবাদ দেওয়া হয়েছে। এক কথায় আমলসমূহকে সালিহাত (صالحات) তথা সৎকর্মসমূহ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ নেক আমলসমূহের জন্য আমলকারীর ঈমানকে আবশ্যক ও পূর্বশর্ত সাব্যস্ত করা হয়েছে। ঈমান ব্যতীত কোন নেক আমল তথা ফরয, ওয়াজিব সুন্নাত, মুস্তাহাব, শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়। ঈমানবিহীন আমলের কোন সাওয়াব আল্লাহর পক্ষ থেকে না পাওয়া শরীয়তের সিদ্ধান্ত। ইসলামের নেক আমলসমূহের মধ্যে কিছু আমল সরাসরি ক্বোরআন-সুন্নাহ দ্বারা সাব্যস্ত। যেমনঃ নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, বিবাহ, ব্যবসা-বাণিজ্য, জিহাদ বা পারিবারিক কার্যক্রম ইত্যাদি। আর কিছু আমল ক্বোরআন-সুন্নাহর আলোকে শরীয়তের মৌলিক নিয়মাবলীর অনুসরণে সাব্যস্ত হয়েছে, মুজতাহিদ ইমামগণের ইজতিহাদের মাধ্যমে নেক আমল বলে সাব্যস্ত করেছেন।<br /><br />হযরত সা’দ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু কুপ খনন করে বলেন- هذِهِ لِاُمِّ سَعْدٍ অর্থাৎ এটা উম্মে সা’দের কূপ। এ হাদীস শরীফের আলোকে ফক্বীহ্গণ ঈসালে সাওয়াব করা (সাওয়াব পৌঁছানো)-এর পক্ষে অভিমত দিয়েছেন; কিন্তু শারীরিক ইবাদতগুলোর মধ্যে নামায, রোযা ইত্যাদির বদলা অর্থাৎ অন্য কেউ আদায় করলে হবে না; কিন্তু হজ্জ্বের মধ্যে স্থলাভিষিক্ত বা বদলী করা জায়েয- ইবাদতে মালীও (আর্থিক ইবাদত) সামিল থাকার কারণে। যা হোক নামায রোযা সম্পন্ন করার মধ্যে বদলী জায়েয না হলেও এর সাওয়াব অন্য কাউকে দেওয়া যাবে।<br /><br />হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন-<br /><br />مَنْ يَضْمَنُ لِىْ مِنْكُمْ اَنْ ىُّصَلِّىَ فِىْ مَسْجِدِ الْعَشَّارِ رَكْعَتَيْنِ وَيَقُوْلُ هذِه لِاَبِىْ هُرَيْرَةَ<br /><br />অর্থাৎ ‘‘তোমাদের মধ্যে কে আমার জন্য আশ্শার মসজিদে দু’রাক্‘আত নামায পড়ে বলবে এটা আবূ হুরায়ার জন্য, এ আমলের কে জিম্মাদার হবে?’’ এটা দ্বারা বুঝা গেলো যে, ঈসালে সাওয়াব করা শরীয়ত মতে জায়েয।<br /><br />এ ঈসালে সাওয়াবের শাখাসমূহের মধ্যে ফাতিহা দেয়া, যেমন, কারো মৃত্যুর পর চার দিনের ফাতিহা, দশ দিনের ফাতিহা, চেহলাম বা চল্লিশা এবং বার্ষিক ফাতিহা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। আর ফাতিহার মধ্যে ক্বোরআন তিলাওয়াত, দুরূদ শরীফ পাঠ, যিক্র-আয্কার করা, সাথে সাথে সদক্বাহ্-খয়রাত এবং খানা-পিনার ব্যবস্থার মাধ্যমে সবগুলোর সওয়াব সমস্ত নবী, ওলী, মু’মিন-মু’মিনাত, বিশেষত মৃত ব্যক্তি, যার উপলক্ষে অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়, তার রূহে বখ্শিশ করা হয়।<br /><br />ফাতিহার দলীল: ‘সূরা আন্‘আম- وَهذَا كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণিত আছে যে-<br /><br />عَنْ حُمَيْدِ نِ الْاَعْرَجِ قَالَ مَنْ قَرَءَ الْقُرْانَ ثُمَّ دَعَا اَمَّنَ عَلى دُعَآئِه اَرْبَعَةُ الَافِ مَلَكٍ ثُمَّ لاَ يَزَالُوْنَ يَدْعُوْنَ لَه وَيَسْتَغْفِرُوْنَ وَيُصَلُّوْنَ عَلَيْهِ اِلَى الْمَسَاءِ اَوْاِلَى الصَّبَاحِ<br /><br />অর্থাৎ: হযরত হুমাইদুল আ’রাজ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ক্বোরআনুল কারীম তেলাওয়াত করে ও খতম দিয়ে দো‘আ করবে, তার ওই দো‘আর সাথে চার হাজার নূরানী ফেরেশতা আমীন বলে। এরপর ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত অথবা সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ব্যক্তির জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দো‘আ করতে থাকে।<br /><br />প্রতীয়মান হল যে, খতমে ক্বোরআনের সময় দো‘আ ক্ববূল হয়। আর ঈসালে সাওয়াবই দো‘আ। তাই সেখানে খতমে ক্বোরআন পড়া উত্তম।<br /><br />দুররে মুখতার- بَابُ الدَّفْنِ -এ قِرَاةٌ لِّلْمَيِّتِ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-<br /><br />وَفِى الْحَدِيْثِ مَنْ قَرَءَ الْاِخْلاَصَ اَحَدَ عَشَرَ مَرَّةَ ثُمَّ وَهَبَ اَجْرَهَا لِلْاَمْوَاتِ اُعْطِىَ مِنَ الْاَجْرِ بِعَدَدِ الْاَمْوَاتِ<br /><br />অর্থাৎ হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, কোন এক ব্যক্তি ১১ বার সূরা ইখলাস পাঠ করে এর সাওয়াব মৃত ব্যক্তিদের রূহে পৌঁছাবে তাকে মৃতদের সংখ্যানুপাতে সাওয়াব দেয়া হবে।<br /><br />উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে-<br /><br />وَيُقْرَءُ مِنَ الْقُرْانِ مَاتَيَسَّرَلَه مِنَ الْفَاتِحَةِ وَاَوَّلُ سُوْرَةِ الْبَقْرَةِ اِلى اَلْمَفْلِحُوْنَ وَايَةُ الْكُرْسِىِّ وَامَنَ الرَّسُوْلُ وَسُوْرَةُ يٰس وَتَبٰرَكَ الَّذِىْ وَسُوْرَةُ التَّكَاثُرِ اِثْنَىْ عَشَرَةَ مَرَّةً اَوْاِحْدى عَشَرَةَ اَوْ سَبْعًا اَوْ ثَلاَثًا ثُمَّ يَقُوْلُ اَللهُمَّ اَوْصِلْ ثَوَابَ مَاقَرْأنًا اِلى فُلاَنٍ اَوْ اِلَيْهِمْ<br /><br />অর্থাৎ এবং ক্বোরআন মজীদ থেকে পড়া হবে যা পড়া তার জন্য সহজ হবে; যেমন- সূরা ফাতিহা, সূরা বাক্বারার শুরুর আয়াতগুলো। ‘আল মুফলিহূন’ পর্যন্ত, আয়াতুর কুরসি, আ-মানার রসূলু…, সূরা ইয়া-সীন, তাবা-রাকাল্লাযী, সূরা তাকাসূর, ১২ বার, অথবা এগারবার, অথবা সাতবার অথবা তিনবার, অতঃপর বলবে, ‘আল্লা-হুম্মা…, ‘অর্থাৎ হে আল্লাহ্, আমরা যা পড়লাম তার সাওয়াব অমুক অথবা অমুকের প্রতি পৌঁছিয়ে দাও!<br /><br />তথা শরীয়তের এসব বিধানের গ্রন্থাবলীর ইবারতের মধ্যে প্রচলিত ফাতিহার নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে।<br /><br />এভাবে হানাফী মাযহাবের অন্যতম ফক্বীহ্ শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী বর্ণনা করেন, যে খাবার হযরত ইমাম হাসান ও হযরত হুসাইনের ফাতিহা-নিয়াযের নিয়্যতে হাযির করা হয় এবং সেখানে চার ক্বুল, সূরা ফাতিহা, ও দুরূদ শরীফ পাঠ করা হয়, তা অধিক বরকতময়। তিনি আরো উল্লেখ করেন, কোন বুযুর্গ ওলীউল্লাহ্র ফাতেহা উপলক্ষে দুধ, শিরনী ইত্যাদি তৈরী করে খাওয়ানো শরীয়ত মতে জায়েয।<br /><br />শাহ্ অলিউল্লাহ্ মুহাদ্দিস দেহলভী ইন্তিক্বালের ৩য় দিনে ফাতিহা প্রদান প্রসঙ্গে শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী বর্ণনা করেন যে, ৩য় দিনে এত লোকের সমাগম হল, যা গণনার বাইরে ছিল। সেখানে ৮১ বার-এর অধিক খতমে ক্বোরআন এবং অসংখ্য তাহলীল পাঠ করা হয়েছে।<br /><br />ফাতিহার আরেকটি নিয়ম, খাবার সামনে রেখে কিছু সূরা-র্ক্বি‘আত, দুরূদ শরীফ পাঠ করে হাত উঠিয়ে দো‘আ করা এবং ওইগুলোর সাওয়াব নবী, ওলী ও মু’মিনগণকে বখশিশ করা। এই প্রচলিত নিয়মটি বিভিন্ন হাদীসে পাকের মাধ্যমে সাব্যস্ত। ফলে এটা শরীয়ত মতে এ সুন্নাতের পর্যায়ে পড়ে।<br /><br />হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি কিছু খেজুর হুযূর-ই পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে নিয়ে আসলাম এবং এর বরকতের জন্য দো‘আ করতে আরয করলাম, তখন-فَضَمَّهُنَّ ثُمَّ دَعَالِىْ فِيْهِنَّ بِالْبَرَكَةِ খেজুরগুলো নিয়ে মিশালেন এবং বরকতের জন্য দো‘আ করছেন।<br /><br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><br /><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi__NS-3Ks4AdtphEv9PQ4ZtIlUwaanOwKEuOo3pQUTTSz7OwyxoK1TBABxPZ4k_hZwHl1aw2G5iaZpu8MM4GHZvwpxWUtkopvDMfTrPraTuu4o7dP9TQnXarEdAxUnn8ock7dssS79vey2/s1600/za31871fsyev.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="547" data-original-width="437" height="320" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi__NS-3Ks4AdtphEv9PQ4ZtIlUwaanOwKEuOo3pQUTTSz7OwyxoK1TBABxPZ4k_hZwHl1aw2G5iaZpu8MM4GHZvwpxWUtkopvDMfTrPraTuu4o7dP9TQnXarEdAxUnn8ock7dssS79vey2/s320-rw/za31871fsyev.jpg" width="255" /></a></div><br /><br /><br />তাবূকের যুদ্ধে মুসলমান সৈন্যদের রসদ ফুরিয়ে এলো। তখন হুযূর-ই করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলেন, যার কাছে যা অল্প-স্বল্প রসদ আছে, তা নিয়ে এসো। দস্তরখানা বিছানো হলো। সেখানে সকলেই কিছু কিছু রসদ রাখলেন-<br /><br />فَدَعَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْبَرْكَةِ ثُمَّ قَالَ خُذُوا فِىْ اَوْعِيَتِكُمْ<br /><br />অর্থাৎ ওই উপস্থিত রসদের উপর বরকতের দো‘আ করলেন এবং বললেন, ‘‘এখান থেকে তোমরা তোমাদের পাত্রে নিয়ে যাও।’’<br /><br />হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শাদীর প্রাক্কালে উম্মে সুলায়ম (হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর মাতা) ওয়ালীমা হিসাবে কিছু খাবার তৈরী করলেন, অনেক লোকজনকে দাওয়াত করা হল। বর্ণনাকারী বলেন, তখন হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম তিনি وَضَعَ يَدَه عَلى تِلْكَ الْحَيْسَةِ وَتَكَلَّمَ بِمَاشَآءَ اللهُ অর্থাৎ হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ওই খাবারের উপর হাত রেখে কিছু পড়লেন।<br /><br />এভাবে হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু খন্দকের যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সামান্য খাবার তৈরী করে হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে দাওয়াত করলেন। হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সাহাবা-ই কেরামকে নিয়ে হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর বাড়ীতে তাশরীফ আনলেন। فَاَخْرَجَتْ لَه عَجِيْنًا فَبَصَقَ فِيْهِ وَبَارَكَ হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সামনে খামিরা পেশ করা হলো। সেখানে হুযূর-ই আক্রাম ‘লু‘আব মুবারক’ অর্থাৎ থুথু শরীফ দিলেন এবং বরকতের জন্য দো‘আ করলেন।<br /><br />এভাবে আরো ফাতিহার অনেক দলীল রয়েছে, যেগুলো দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, ফাতেহা দেয়া শুধু বৈধ নয়; বরং তা অনেক বরকত হাসিলের ওসীলাও।<br /><br />আর আমরা মুসলমান সদা-সর্বদা বরকতের মুখাপেক্ষী। তাছাড়া ফাতিহার মধ্যে দু’ধরনের ইবাদতের সংমিশ্রণ হয়ঃ তিলাওয়াতে ক্বোরআন ও যিক্র এবং সদক্বা-খয়রাত। এ উভয় কাজ পৃথকভাবেও সাওয়াবের হবার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। ফাতিহার মধ্যে এ দুই ইবাদতকে একত্রিত করা হয়। তাই এটা কিভাবে হারাম হয়? কোন ঈমানদার ব্যক্তি এটাকে হারাম ও অবৈধ বলতে পারে না। আর যদি বলে, তবে শরীয়তে হালাল বস্তুকে হারাম বললে যে অপরাধ হয়, সে অপরাধে অপরাধী হবে। এমনকি তার ঈমানের ব্যাপারেও সন্দেহ থাকবে। বিরানী খাওয়া ক্বোরআনের ও হাদীসের সরাসরি দলীল দ্বারা সাব্যস্ত নয়; কিন্তু তা হালাল হলো এ কারণে যে, বিরানী তো চাউল, গোশত এবং ঘি-মসল্লা ইত্যাদি দিয়ে পাকানো হয়। এসব ক’টি বস্তুই হালাল খাবার। এভাবে ফাতিহায়ও হালাল খাবার তৈরী করা হয়; তারপর ক্বোরআন তেলাওয়াত ও যিক্র-আযকার করা হয়। পরিশেষে, দো‘আ ও ঈসালে সাওয়াব করা হয়। যেহেতু এ সব বস্তু পৃথক পৃথকভাবে জায়েয, সুতরাং সম্মিলিতভাবেও জায়েয।<br /><br />ফাতেহার খাবারকে সামনে রেখে দো‘আ করা সুন্নাত। (উপরে উল্লেখিত বর্ণনাদি দ্বারা সাব্যস্ত;) যেমনিভাবে জানাযার নামাযে মৃতকে সামনে রেখে নামায ও দো‘আ করা হয়, অনুরূপভাবে কবরকে সামনে রেখে দাঁড়িয়ে যিয়ারত ও দো‘আ করা হয়; যা হাদীসে পাক দ্বারা সাব্যস্ত। হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ক্বোরবানীর ছাগল জবেহ করার পর সামনে- اَللهُمَّ هَذَا مِنْ اُمَّةِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ বলে দো‘আ করেছেন।<br /><br />ফাতিহার মধ্যে যদি খাবার সামনে রেখে ঈসালে সাওয়াব করা হয়, তাহলে শরীয়তের পক্ষ থেকে বাধা কিসের? কোন ঈমানদার নিষেধের পক্ষে যাবে না। আর যদি বলা হয় ‘বিসমিল্লাহ্’ বলে খাবার শুরু করলে ফাতিহা হয়ে যায়, প্রচলিত ফাতিহার প্রয়োজন নেই, তখন বলা যাবে ‘বিসমিল্লাহ্’ও ক্বোরআন শরীফের আয়াত। খাবারের সামনে ক্বোরআন পাঠ করে ফাতিহা দেয়া যদি নিষেধ হয়, তাহলে খাবারের পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ্’ পড়াও নিষেধ হবে। সম্ভবত ফাতিহার বিরোধিরা বিস্মিল্লাহ পড়াও বাদ দেয়, তাদের সঙ্গী শয়তানকে শরীক করার জন্য।’<br /><br />মোটকথা, ফাতেহা ইসলামী অনুষ্ঠানাবলীর অন্যতম অনুষ্ঠান, যা ১৪০০ বছরাধিকাল যাবৎ ঈমানদাররা পালন করে আসছেন। সুতরাং এটা ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হলো।<br /><br /><div><br />এ ফাতেহা বিভিন্ন নামে প্রচলিত যথা- ৪ দিনের ফাতেহা, ১০ দিনের ফাতেহা, ৪০ দিনের ফাতিহা, বাৎসরিক ফাতেহা, নতুন নতুন ফলাদির ফাতেহা ইত্যাদি। এ সব ফাতেহাও বরকতের ওসীলা হয়</div><br /></div><br />

ইসলামে ফাতেহার গুরুত্ব

ইসলামে ফাতেহার গুরুত্ব ইসলামের নামে বিভিন্ন বাতিল ফির্ক্বা সৃষ্টি হয়ে তারা অনেক সাওয়াবদায়ক, বৈধ ও নেক আমল নিয়ে বিতর্ক শুরু করেছে। ক্বোরআন-সু...

Read more »

ইসলামে ফাতেহার গুরুত্ব

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"><div style="text-align: justify;"><b>ইসলামে ফাতেহার গুরুত্ব</b></div><div style="text-align: justify;"><br /></div><div style="text-align: justify;">ইসলামের নামে বিভিন্ন বাতিল ফির্ক্বা সৃষ্টি হয়ে তারা অনেক সাওয়াবদায়ক, বৈধ ও নেক আমল নিয়ে বিতর্ক শুরু করেছে। ক্বোরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যা দিয়ে তারা অনেক নেক আমলকে মন্দ বিদ্‘আত বলে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের পক্ষ থেকে যুগে যুগে ওই বাতিলপন্থীদের দাঁতভাঙ্গা জবাব প্রদানের মাধ্যমে সঠিক মাসআলা উপস্থাপন করার প্রয়াসও চলমান আছে ও থাকবে। এ ক্ষুদ্র পরিসরে ইসলামী অনুষ্ঠানাদির আরো কিছু মাসআলা ক্বোরআন, সুন্নাহ ও ইমামদের মতামতের মাধ্যমে পেশ করার প্রয়াস পাচ্ছি। এমন উপকারী অনুষ্ঠানাদির মধ্যে ‘ফাতিহা’ অন্যতম।</div><div style="text-align: justify;">‘ফাতিহা’-এর অর্থ হলো উম্মুক্ত করা। পরিভাষার মধ্যে ‘ফাতিহা’ ক্বোরআনের সূরা- ফাতিহাকে ‘ফাতিহা’ বলা হয়। অনুরূপ কোন মুসলমান মৃত্যুবরণ করলেও তার দাফনের তিন দিন শোক পালনের পর খানা-পিনা ও ফলাহারের আয়োজন করে সেখানে সূরা ফাতিহাসহ ক্বোরআন মাজীদের আরো কিছু আয়াত ও সূরা তেলাওয়াত এবং যিক্র-আযকার ও মীলাদ পাঠ করে মুনাজাতের মাধ্যমে এগুলোর সাওয়াব মৃত ব্যক্তির রূহে পৌঁছিয়ে দেওয়াকে ফাতেহা বলা হয়। ক্বোরআন-সুন্নাহর আলোকে দৈহিক ও আর্থিক এবাদতের সাওয়াব অন্য ঈমানদারকে বখশিশ করা জায়েয। ক্বোরআন মাজীদে ঈমানদারদের জন্য একে অপরের অনুকূলে দো‘আ করার হুকুম রয়েছে। এমন কি জানাযার নামায মৃত ব্যক্তির দো‘আর জন্য আদায় করা হয়।</div><div style="text-align: justify;"><b>ফাতিহা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী অনুষ্ঠান</b></div><div style="text-align: justify;"><br /></div><div style="text-align: justify;">ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানের নাম। এতে ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতের কর্ম বিধান রয়েছে। যে কর্মগুলো আল্লাহ্ তা‘আলা কর্তৃক তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে তথা ক্বোরআন-সুন্নাহর দলীলের আলোকে এ উম্মতের জন্য প্রদান করা হয়েছে। বিনিময়ে পরকালে সাওয়াব প্রদানের সু সংবাদ দেওয়া হয়েছে। এক কথায় আমলসমূহকে সালিহাত (صالحات) তথা সৎকর্মসমূহ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ নেক আমলসমূহের জন্য আমলকারীর ঈমানকে আবশ্যক ও পূর্বশর্ত সাব্যস্ত করা হয়েছে। ঈমান ব্যতীত কোন নেক আমল তথা ফরয, ওয়াজিব সুন্নাত, মুস্তাহাব, শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়। ঈমানবিহীন আমলের কোন সাওয়াব আল্লাহর পক্ষ থেকে না পাওয়া শরীয়তের সিদ্ধান্ত। ইসলামের নেক আমলসমূহের মধ্যে কিছু আমল সরাসরি ক্বোরআন-সুন্নাহ দ্বারা সাব্যস্ত। যেমনঃ নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, বিবাহ, ব্যবসা-বাণিজ্য, জিহাদ বা পারিবারিক কার্যক্রম ইত্যাদি। আর কিছু আমল ক্বোরআন-সুন্নাহর আলোকে শরীয়তের মৌলিক নিয়মাবলীর অনুসরণে সাব্যস্ত হয়েছে, মুজতাহিদ ইমামগণের ইজতিহাদের মাধ্যমে নেক আমল বলে সাব্যস্ত করেছেন।</div><div style="text-align: justify;">হযরত সা’দ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু কুপ খনন করে বলেন- هذِهِ لِاُمِّ سَعْدٍ অর্থাৎ এটা উম্মে সা’দের কূপ। এ হাদীস শরীফের আলোকে ফক্বীহ্গণ ঈসালে সাওয়াব করা (সাওয়াব পৌঁছানো)-এর পক্ষে অভিমত দিয়েছেন; কিন্তু শারীরিক ইবাদতগুলোর মধ্যে নামায, রোযা ইত্যাদির বদলা অর্থাৎ অন্য কেউ আদায় করলে হবে না; কিন্তু হজ্জ্বের মধ্যে স্থলাভিষিক্ত বা বদলী করা জায়েয- ইবাদতে মালীও (আর্থিক ইবাদত) সামিল থাকার কারণে। যা হোক নামায রোযা সম্পন্ন করার মধ্যে বদলী জায়েয না হলেও এর সাওয়াব অন্য কাউকে দেওয়া যাবে।</div><div style="text-align: justify;">হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন-</div><div style="text-align: justify;">مَنْ يَضْمَنُ لِىْ مِنْكُمْ اَنْ ىُّصَلِّىَ فِىْ مَسْجِدِ الْعَشَّارِ رَكْعَتَيْنِ وَيَقُوْلُ هذِه لِاَبِىْ هُرَيْرَةَ</div><div style="text-align: justify;">অর্থাৎ ‘‘তোমাদের মধ্যে কে আমার জন্য আশ্শার মসজিদে দু’রাক্‘আত নামায পড়ে বলবে এটা আবূ হুরায়ার জন্য, এ আমলের কে জিম্মাদার হবে?’’ এটা দ্বারা বুঝা গেলো যে, ঈসালে সাওয়াব করা শরীয়ত মতে জায়েয।</div><div style="text-align: justify;">এ ঈসালে সাওয়াবের শাখাসমূহের মধ্যে ফাতিহা দেয়া, যেমন, কারো মৃত্যুর পর চার দিনের ফাতিহা, দশ দিনের ফাতিহা, চেহলাম বা চল্লিশা এবং বার্ষিক ফাতিহা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। আর ফাতিহার মধ্যে ক্বোরআন তিলাওয়াত, দুরূদ শরীফ পাঠ, যিক্র-আয্কার করা, সাথে সাথে সদক্বাহ্-খয়রাত এবং খানা-পিনার ব্যবস্থার মাধ্যমে সবগুলোর সওয়াব সমস্ত নবী, ওলী, মু’মিন-মু’মিনাত, বিশেষত মৃত ব্যক্তি, যার উপলক্ষে অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়, তার রূহে বখ্শিশ করা হয়।</div><div style="text-align: justify;"><br /></div><div style="text-align: justify;"><b>ফাতিহার দলীল: ‘</b>সূরা আন্‘আম- وَهذَا كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণিত আছে যে-</div><div style="text-align: justify;">عَنْ حُمَيْدِ نِ الْاَعْرَجِ قَالَ مَنْ قَرَءَ الْقُرْانَ ثُمَّ دَعَا اَمَّنَ عَلى دُعَآئِه اَرْبَعَةُ الَافِ مَلَكٍ ثُمَّ لاَ يَزَالُوْنَ يَدْعُوْنَ لَه وَيَسْتَغْفِرُوْنَ وَيُصَلُّوْنَ عَلَيْهِ اِلَى الْمَسَاءِ اَوْاِلَى الصَّبَاحِ</div><div style="text-align: justify;">অর্থাৎ: হযরত হুমাইদুল আ’রাজ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ক্বোরআনুল কারীম তেলাওয়াত করে ও খতম দিয়ে দো‘আ করবে, তার ওই দো‘আর সাথে চার হাজার নূরানী ফেরেশতা আমীন বলে। এরপর ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত অথবা সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ব্যক্তির জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দো‘আ করতে থাকে।</div><div style="text-align: justify;">প্রতীয়মান হল যে, খতমে ক্বোরআনের সময় দো‘আ ক্ববূল হয়। আর ঈসালে সাওয়াবই দো‘আ। তাই সেখানে খতমে ক্বোরআন পড়া উত্তম।</div><div style="text-align: justify;">দুররে মুখতার- بَابُ الدَّفْنِ -এ قِرَاةٌ لِّلْمَيِّتِ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-</div><div style="text-align: justify;">وَفِى الْحَدِيْثِ مَنْ قَرَءَ الْاِخْلاَصَ اَحَدَ عَشَرَ مَرَّةَ ثُمَّ وَهَبَ اَجْرَهَا لِلْاَمْوَاتِ اُعْطِىَ مِنَ الْاَجْرِ بِعَدَدِ الْاَمْوَاتِ</div><div style="text-align: justify;">অর্থাৎ হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, কোন এক ব্যক্তি ১১ বার সূরা ইখলাস পাঠ করে এর সাওয়াব মৃত ব্যক্তিদের রূহে পৌঁছাবে তাকে মৃতদের সংখ্যানুপাতে সাওয়াব দেয়া হবে।</div><div style="text-align: justify;">উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে-</div><div style="text-align: justify;">وَيُقْرَءُ مِنَ الْقُرْانِ مَاتَيَسَّرَلَه مِنَ الْفَاتِحَةِ وَاَوَّلُ سُوْرَةِ الْبَقْرَةِ اِلى اَلْمَفْلِحُوْنَ وَايَةُ الْكُرْسِىِّ وَامَنَ الرَّسُوْلُ وَسُوْرَةُ يٰس وَتَبٰرَكَ الَّذِىْ وَسُوْرَةُ التَّكَاثُرِ اِثْنَىْ عَشَرَةَ مَرَّةً اَوْاِحْدى عَشَرَةَ اَوْ سَبْعًا اَوْ ثَلاَثًا ثُمَّ يَقُوْلُ اَللهُمَّ اَوْصِلْ ثَوَابَ مَاقَرْأنًا اِلى فُلاَنٍ اَوْ اِلَيْهِمْ</div><div style="text-align: justify;">অর্থাৎ এবং ক্বোরআন মজীদ থেকে পড়া হবে যা পড়া তার জন্য সহজ হবে; যেমন- সূরা ফাতিহা, সূরা বাক্বারার শুরুর আয়াতগুলো। ‘আল মুফলিহূন’ পর্যন্ত, আয়াতুর কুরসি, আ-মানার রসূলু…, সূরা ইয়া-সীন, তাবা-রাকাল্লাযী, সূরা তাকাসূর, ১২ বার, অথবা এগারবার, অথবা সাতবার অথবা তিনবার, অতঃপর বলবে, ‘আল্লা-হুম্মা…, ‘অর্থাৎ হে আল্লাহ্, আমরা যা পড়লাম তার সাওয়াব অমুক অথবা অমুকের প্রতি পৌঁছিয়ে দাও!</div><div style="text-align: justify;">তথা শরীয়তের এসব বিধানের গ্রন্থাবলীর ইবারতের মধ্যে প্রচলিত ফাতিহার নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে।</div><div style="text-align: justify;">এভাবে হানাফী মাযহাবের অন্যতম ফক্বীহ্ শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী বর্ণনা করেন, যে খাবার হযরত ইমাম হাসান ও হযরত হুসাইনের ফাতিহা-নিয়াযের নিয়্যতে হাযির করা হয় এবং সেখানে চার ক্বুল, সূরা ফাতিহা, ও দুরূদ শরীফ পাঠ করা হয়, তা অধিক বরকতময়। তিনি আরো উল্লেখ করেন, কোন বুযুর্গ ওলীউল্লাহ্র ফাতেহা উপলক্ষে দুধ, শিরনী ইত্যাদি তৈরী করে খাওয়ানো শরীয়ত মতে জায়েয।</div><div style="text-align: justify;">শাহ্ অলিউল্লাহ্ মুহাদ্দিস দেহলভী ইন্তিক্বালের ৩য় দিনে ফাতিহা প্রদান প্রসঙ্গে শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী বর্ণনা করেন যে, ৩য় দিনে এত লোকের সমাগম হল, যা গণনার বাইরে ছিল। সেখানে ৮১ বার-এর অধিক খতমে ক্বোরআন এবং অসংখ্য তাহলীল পাঠ করা হয়েছে।</div><div style="text-align: justify;">ফাতিহার আরেকটি নিয়ম, খাবার সামনে রেখে কিছু সূরা-র্ক্বি‘আত, দুরূদ শরীফ পাঠ করে হাত উঠিয়ে দো‘আ করা এবং ওইগুলোর সাওয়াব নবী, ওলী ও মু’মিনগণকে বখশিশ করা। এই প্রচলিত নিয়মটি বিভিন্ন হাদীসে পাকের মাধ্যমে সাব্যস্ত। ফলে এটা শরীয়ত মতে এ সুন্নাতের পর্যায়ে পড়ে।</div><div style="text-align: justify;">হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি কিছু খেজুর হুযূর-ই পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে নিয়ে আসলাম এবং এর বরকতের জন্য দো‘আ করতে আরয করলাম, তখন-فَضَمَّهُنَّ ثُمَّ دَعَالِىْ فِيْهِنَّ بِالْبَرَكَةِ খেজুরগুলো নিয়ে মিশালেন এবং বরকতের জন্য দো‘আ করছেন।</div><div class="separator" style="clear: both; text-align: justify;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi__NS-3Ks4AdtphEv9PQ4ZtIlUwaanOwKEuOo3pQUTTSz7OwyxoK1TBABxPZ4k_hZwHl1aw2G5iaZpu8MM4GHZvwpxWUtkopvDMfTrPraTuu4o7dP9TQnXarEdAxUnn8ock7dssS79vey2/s1600/za31871fsyev.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="547" data-original-width="437" height="320" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi__NS-3Ks4AdtphEv9PQ4ZtIlUwaanOwKEuOo3pQUTTSz7OwyxoK1TBABxPZ4k_hZwHl1aw2G5iaZpu8MM4GHZvwpxWUtkopvDMfTrPraTuu4o7dP9TQnXarEdAxUnn8ock7dssS79vey2/s320-rw/za31871fsyev.jpg" width="255" /></a></div><div style="text-align: justify;"><br /></div><div style="text-align: justify;">তাবূকের যুদ্ধে মুসলমান সৈন্যদের রসদ ফুরিয়ে এলো। তখন হুযূর-ই করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলেন, যার কাছে যা অল্প-স্বল্প রসদ আছে, তা নিয়ে এসো। দস্তরখানা বিছানো হলো। সেখানে সকলেই কিছু কিছু রসদ রাখলেন-</div><div style="text-align: justify;">فَدَعَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْبَرْكَةِ ثُمَّ قَالَ خُذُوا فِىْ اَوْعِيَتِكُمْ</div><div style="text-align: justify;">অর্থাৎ ওই উপস্থিত রসদের উপর বরকতের দো‘আ করলেন এবং বললেন, ‘‘এখান থেকে তোমরা তোমাদের পাত্রে নিয়ে যাও।’’</div><div style="text-align: justify;">হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শাদীর প্রাক্কালে উম্মে সুলায়ম (হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর মাতা) ওয়ালীমা হিসাবে কিছু খাবার তৈরী করলেন, অনেক লোকজনকে দাওয়াত করা হল। বর্ণনাকারী বলেন, তখন হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম তিনি وَضَعَ يَدَه عَلى تِلْكَ الْحَيْسَةِ وَتَكَلَّمَ بِمَاشَآءَ اللهُ অর্থাৎ হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ওই খাবারের উপর হাত রেখে কিছু পড়লেন।</div><div style="text-align: justify;">এভাবে হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু খন্দকের যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সামান্য খাবার তৈরী করে হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে দাওয়াত করলেন। হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সাহাবা-ই কেরামকে নিয়ে হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর বাড়ীতে তাশরীফ আনলেন। فَاَخْرَجَتْ لَه عَجِيْنًا فَبَصَقَ فِيْهِ وَبَارَكَ হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সামনে খামিরা পেশ করা হলো। সেখানে হুযূর-ই আক্রাম ‘লু‘আব মুবারক’ অর্থাৎ থুথু শরীফ দিলেন এবং বরকতের জন্য দো‘আ করলেন।</div><div style="text-align: justify;">এভাবে আরো ফাতিহার অনেক দলীল রয়েছে, যেগুলো দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, ফাতেহা দেয়া শুধু বৈধ নয়; বরং তা অনেক বরকত হাসিলের ওসীলাও।</div><div style="text-align: justify;">আর আমরা মুসলমান সদা-সর্বদা বরকতের মুখাপেক্ষী। তাছাড়া ফাতিহার মধ্যে দু’ধরনের ইবাদতের সংমিশ্রণ হয়ঃ তিলাওয়াতে ক্বোরআন ও যিক্র এবং সদক্বা-খয়রাত। এ উভয় কাজ পৃথকভাবেও সাওয়াবের হবার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। ফাতিহার মধ্যে এ দুই ইবাদতকে একত্রিত করা হয়। তাই এটা কিভাবে হারাম হয়? কোন ঈমানদার ব্যক্তি এটাকে হারাম ও অবৈধ বলতে পারে না। আর যদি বলে, তবে শরীয়তে হালাল বস্তুকে হারাম বললে যে অপরাধ হয়, সে অপরাধে অপরাধী হবে। এমনকি তার ঈমানের ব্যাপারেও সন্দেহ থাকবে। বিরানী খাওয়া ক্বোরআনের ও হাদীসের সরাসরি দলীল দ্বারা সাব্যস্ত নয়; কিন্তু তা হালাল হলো এ কারণে যে, বিরানী তো চাউল, গোশত এবং ঘি-মসল্লা ইত্যাদি দিয়ে পাকানো হয়। এসব ক’টি বস্তুই হালাল খাবার। এভাবে ফাতিহায়ও হালাল খাবার তৈরী করা হয়; তারপর ক্বোরআন তেলাওয়াত ও যিক্র-আযকার করা হয়। পরিশেষে, দো‘আ ও ঈসালে সাওয়াব করা হয়। যেহেতু এ সব বস্তু পৃথক পৃথকভাবে জায়েয, সুতরাং সম্মিলিতভাবেও জায়েয।</div><div style="text-align: justify;">ফাতেহার খাবারকে সামনে রেখে দো‘আ করা সুন্নাত। (উপরে উল্লেখিত বর্ণনাদি দ্বারা সাব্যস্ত;) যেমনিভাবে জানাযার নামাযে মৃতকে সামনে রেখে নামায ও দো‘আ করা হয়, অনুরূপভাবে কবরকে সামনে রেখে দাঁড়িয়ে যিয়ারত ও দো‘আ করা হয়; যা হাদীসে পাক দ্বারা সাব্যস্ত। হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ক্বোরবানীর ছাগল জবেহ করার পর সামনে- اَللهُمَّ هَذَا مِنْ اُمَّةِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ বলে দো‘আ করেছেন।</div><div style="text-align: justify;">ফাতিহার মধ্যে যদি খাবার সামনে রেখে ঈসালে সাওয়াব করা হয়, তাহলে শরীয়তের পক্ষ থেকে বাধা কিসের? কোন ঈমানদার নিষেধের পক্ষে যাবে না। আর যদি বলা হয় ‘বিসমিল্লাহ্’ বলে খাবার শুরু করলে ফাতিহা হয়ে যায়, প্রচলিত ফাতিহার প্রয়োজন নেই, তখন বলা যাবে ‘বিসমিল্লাহ্’ও ক্বোরআন শরীফের আয়াত। খাবারের সামনে ক্বোরআন পাঠ করে ফাতিহা দেয়া যদি নিষেধ হয়, তাহলে খাবারের পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ্’ পড়াও নিষেধ হবে। সম্ভবত ফাতিহার বিরোধিরা বিস্মিল্লাহ পড়াও বাদ দেয়, তাদের সঙ্গী শয়তানকে শরীক করার জন্য।’</div><div style="text-align: justify;">মোটকথা, ফাতেহা ইসলামী অনুষ্ঠানাবলীর অন্যতম অনুষ্ঠান, যা ১৪০০ বছরাধিকাল যাবৎ ঈমানদাররা পালন করে আসছেন। সুতরাং এটা ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হলো।</div><div style="text-align: justify;">এ ফাতেহা বিভিন্ন নামে প্রচলিত যথা- ৪ দিনের ফাতেহা, ১০ দিনের ফাতেহা, ৪০ দিনের ফাতিহা, বাৎসরিক ফাতেহা, নতুন নতুন ফলাদির ফাতেহা ইত্যাদি। এ সব ফাতেহাও বরকতের ওসীলা হয়।</div></div>

ইসলামে ফাতেহার গুরুত্ব

ইসলামে ফাতেহার গুরুত্ব ইসলামের নামে বিভিন্ন বাতিল ফির্ক্বা সৃষ্টি হয়ে তারা অনেক সাওয়াবদায়ক, বৈধ ও নেক আমল নিয়ে বিতর্ক শুরু করেছে। ক্বোরআন-সু...

Read more »

মুমিনের চারটি উত্তম বৈশিষ্ট্য

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">عَنْ عبد الله بن عمرو رضى الله عنه اَنَّ رسولَ الله صلى الله عليه وسلم قال اربع ان كن فيك فلا عليك ما فاتك من الدّنيا حِفْظُ امانة وصدق حديث وحسنُ خليقةٍ وعفة فى طُعمة- (رواه احمد و بيهقى)<br /><br />অনুবাদ: হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, চারটি জিনিস যদি তোমার মধ্যে থাকে দুনিয়ার কোন জিনিস হাত ছাড়া হয়ে গেলেও তোমার ক্ষতি হবে না। আমানত সংরক্ষন করা, সত্য কথা বলা, উত্তম চরিত্র ও খাবার পবিত্র হওয়া।<br />[সূত্র: মুসনাদে আহমদ হাদীস: ৬৩৬৫, আহমদ, বায়হাক্বী, মিশকাত, হাদীস:৪৯৯৪]<br /><br />রাভী পরিচিতি<br />নাম আবদুল্লাহ, উপনাম আবু মুহাম্মদ, আবু আবদুর রহমান ও আবু নুসাইর, পিতার নাম আমর ইবনে আস, মাতার নাম রীতা বিনতে মুনাব্বেহ। তিনি তাঁর পিতার পূর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ৫ম অথবা ৮ম হিজরিতে ইসলাম গ্রহণ করেন। প্রিয় রাসূলের পবিত্র জীবদ্দশায় তিনি প্রায় সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ইয়ারমুকের যুদ্ধে পিতা হযরত আমর ইবনে আস জেহাদের ঝাণ্ডা পুত্র আবদুল্লাহ্র হাতে তুলে দেন। তিনি অসাধারণ ধীশক্তি ও স্মৃতি শক্তির অধিকারী ছিলেন। তিনি হাফেজে ক্বোরআন ছিলেন, আরবি ও হিব্র“ ভাষায় তাঁর সুনিপুন দক্ষতা ছিল। আসমানী কিতাব তাওরাত ও ইঞ্জিলের বিষয়ে গভীর জ্ঞান ছিল। রসূলুল্লাহ্র হাদীস লিখন ও সংরক্ষণে তিনি অনন্য ভূমিকা রাখেন। ‘সাদেকা’ নামক তাঁর লিখিত একটি রিসালা রয়েছে। তিনি ৬০০ মতান্তরে ৭০০ হাদীস বর্ণনা করেন। তৎমধ্যে সতেরটি মুত্তাফাক আলায়হি, আটটি ইমাম বোখারী এবং বিশটি ইমাম মুসলিম এককভাবে উল্লেখ করেন। ৬৫ হিজরিতে ৭২ বৎসর বয়সে মিসরের ফুসতাত নগরীতে তিনি ইন্তেকাল করেন। স্বীয় আবাস স্থলে তাকে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়।<br /><br />প্রাসঙ্গিক আলোচনা<br />তাকওয়া ভিত্তিক জীবন গঠনে একজন মুমিন বান্দাকে যে, গুণাবলী অর্জন করতে হয়। যে গুণাবলী ধারণ করলে একজন মানুষ প্রকৃত আদর্শবান ও চরিত্র মানুষরূপে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের নৈকট্য অর্জনে ধন্য হয়। সর্বোপরি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে জান্নাতী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে, আলোচ্য হাদীস শরীফে এমন চারটি উত্তম ও মহৎ গুণাবলী সম্পর্কে আলোকপাত হয়েছে।<br />এ চারটি গুণাবলী মুমিন জীবনের অমূল্য সম্পদ। প্রতিটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা উপস্থাপনের লক্ষ্যে এ সংক্ষিপ্ত প্রয়াস।<br /><br />আমানত সংরক্ষণ করা<br />আমানত অর্থ কারো নিকট কোন কিছু রেখে নিরাপদে থাকা যায় বা শান্তি পাওয়া যায়। প্রচলিত অর্থে কারো কাছে কোন অর্থ সম্পদ, বস্তু, সামগ্রী, গচ্ছিত রাখাকে আমানত বলা হয়। যিনি গচ্ছিত বস্তুকে বিশ্বস্ততার সাথে সংরক্ষণ করেন, যথাযথভাবে হিফাজত করেন। মালিক চাওয়া মাত্র গচ্ছিত বস্তু কোন টালবাহানা ছাড়া প্রত্যার্পন করেন। তিনি আল্ আমীন তথা বিশ্বস্ত সত্যবাদী হিসেবে স্বীকৃত। এর প্রচলন জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে পরিদৃষ্ট। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিটি স্তরে প্রতিটি বিষয়ে আমানত রক্ষা করা, ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। লেনদেনের আমানত, কথার আমানত- যেসব বিষয়ে প্রকাশিত হলে যেসব কথা বললে, পারস্পরিক সম্পর্ক অবনতি ঘটবে, মনোমালিন্য ও সংঘাত সৃষ্টি হবে। ঝগড়া বিবাদ সৃষ্টি হবে, অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। এমন বিষয় প্রকাশ না করা ও না বলা আমানত। সর্বক্ষেত্রে আমানত রক্ষা করা একজন মুমিনের পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য।<br />এভাবে একজন চাকরিজীবী তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে সম্পাদন করা পবিত্র আমানত। যেমন একজন শিক্ষক তাঁর দায়িত্ব পালনে আমানতদারিতা রক্ষা করবে। যখন তিনি তাঁর কর্তব্য কর্ম সম্পাদনে অবহেলা করবেন না, দায়িত্বে ফাঁকিবাজি করবেন না, অশিক্ষা কুশিক্ষা দিয়ে শিক্ষার্থীকে বিপথগামী করবেন না, ভুলতথ্য, ভুল ব্যাখ্যা, অপব্যাখ্যা ও শিক্ষাক্ষেত্রে অনৈতিক পন্থায় শিক্ষার্থীকে পরিচালিত করবেন না তখন তিনি একজন বিশ্বস্ত সত্যবাদী আদর্শবান ও আমানতদার শিক্ষকরূপে গণ্য হবেন। সে ক্ষেত্রে এ পেশায় তার বেতন ভাতা তার জন্য হালাল উপার্জন হিসেবে গণ্য হবে। পক্ষান্তরে তিনি যদি পাঠদানে অনীহা প্রকাশ করেন, তার জন্য বরাদ্দকৃত পূর্ণ সময় যদি তিনি সঠিকভাবে পাঠদান না করেন বিষয় বহির্ভূত আলাপ-আলোচনা কথা-বার্তা গল্প গুজব হাসি তামাশা, অপ্রাসঙ্গিক অপ্রয়োজনীয় কথা-বার্তা বলে সময় অতিক্রম করেন, শিক্ষার্থীদের মূল্যবান জীবন নষ্ট করেন, এভাবে অযথা অনর্থক সময় নষ্ট করে তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ যদি ধ্বংস করে দেন তাহলে মূলত তিনি আমানত খিয়ানত করলেন। এ খিয়ানতের অপরাধে শরয়ী বিচারে যতটুকু সময় দায়িত্ব পালনে খিয়ানত করেছেন ততটুকু পরিমাণ বেতন গ্রহণ করাও তার জন্য হারাম হয়ে যাবে। একজন মুমিন আমানত রক্ষা করার ব্যাপারে সর্বদা সচেষ্ট থাকবে। আমানত দারিতাকে আল্লাহ্ পাক মুমিনের অন্যতম গুণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। পবিত্র ক্বোরআনে এরশাদ হয়েছে-<br />والذين هم لِاَمَنَتِهِمْ وعهدهم راعون<br />এরা সেই লোক যারা আমানতের প্রতি লক্ষ্য রাখে এবং স্বীয় অঙ্গীকার হেফাজত করে।<br />পবিত্র ক্বোরআনে আরো এরশাদ হয়েছে-<br />ان الله يأمرُكم ان تُوَدُّوا الْاَمَنَتِ الى اهلها-<br />অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা যেন আমানত তার মালিককে প্রত্যার্পণ করো।<br />[সূরা: আননিসা-৫৮] প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের অসংখ্য হাদীস শরীফে আমানত দারিতার মহৎ গুণকে ঈমান বলা হয়েছে। এরশাদ হয়েছে-<br />عن انس رضى الله عنه قال فلَمَّا خطبنا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لاايمان لمن لاامانة له ولادين لمن لا عهد له- (رواه البيهقى)<br />হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যখন আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন, তিনি বলেন, যার আমানত দারিতা নেই তার ঈমান নেই, আর যে ওয়াদা পালন করে না তার মধ্যে দ্বীন নেই। [বায়হাক্বী] সততা ন্যায় পরায়ণতা, বিশ্বস্ততা ও আমানতদারিতা রক্ষা না করা অঙ্গীকার ভঙ্গ করা, কথায় কথায় মিথ্যাচার করা ইত্যাদি গর্হিত আচরণকে মুনাফিকির নিদর্শন রূপে সাব্যস্ত করা হয়েছে। হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে-<br />اَيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلَاثٌ اِذَا حَدَّثْ كَذَب- وَاِذَا وَعَدَ اَخْلَفَ وَاِذَا اُوْتمن خَانَ-<br />অর্থ: মুনাফিকের নিদর্শন তিনটি- কথা বললেই মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে- ভঙ্গ করে, যখন তার কাছে কোন বস্তু আমানত রাখা হয় তা খিয়ানত করে।<br />[সহীহ বোখারী শরীফ: হাদীস- ৩৩, সুনানে তিরমিযী: হাদীস – ২৫৫৬]<br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj3si2Q0980NtkpDTtikH6qfi9VtxkciwRbRQNPhP5FfI4XoxJ27zgUlGcN38gZPPn0d2scHUmQ2UbFoEjfa4eudzxkYj5g7oENla7vecY7SE9KxCqkdl_vD1CXH-Vs_BPVKHdvQ8VlPqIR/s1600/maxresdefault+%25281%2529.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="720" data-original-width="1280" height="180" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj3si2Q0980NtkpDTtikH6qfi9VtxkciwRbRQNPhP5FfI4XoxJ27zgUlGcN38gZPPn0d2scHUmQ2UbFoEjfa4eudzxkYj5g7oENla7vecY7SE9KxCqkdl_vD1CXH-Vs_BPVKHdvQ8VlPqIR/s320-rw/maxresdefault+%25281%2529.jpg" width="320" /></a></div><br />সত্য কথা বলা<br />সততা, সত্যবাদিতা, সত্য প্রিয়তা, মুমিন জীবনের একটি গুরুত্ব পূর্ণ মহৎগুণ, সৎ চিন্তা করলে সত্য কথা বললে, সত্য পথে চললে জীবনে সাফল্য আসে। এ পথ কুসমাস্তীর্ণ নয় কন্টকাকীর্ণ। পার্থিব জীবনে ভয় ভীতি, লোভ লালসা ভোগ বিলাসের মোহ ত্যাগ করে যে সত্যকে আঁকড়িয়ে ধরেছে, সত্য ও ন্যায়ের পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সত্যের পথে অটল অবিচল রয়েছে সত্য প্রকাশে নির্ভীক আপোষহীন, অকুতোভয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিবেদিতপ্রাণ প্রকৃত পক্ষে তারাই মুমিন মুত্তাকী, সৌভাগ্যবান জান্নাতী ব্যক্তি। সত্যবাদীদের পদাঙ্ক অনুসরণ, তাদের সঙ্গ ও সাহচর্য লাভের জন্য, মহান আল্লাহ্ পাক মুমিন বান্দাকে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করেছেন। এরশাদ হয়েছে-<br />يَااَيها الَّذِيْنَ اَمَنُوْا اَتَّقُوْا الله وَكُونُوا مَعَ الصَّدقِيْنَ-<br />হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ্কে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও। [সূরা: আত্ তাওবা- ১১৯] শঠতা, কপটতা, মুনাফিকি চরিত্র, দ্বিমুখী, ভ্রান্ত মতবাদী, অসৎ চিন্তা চেতনার অধিকারী বাতিল মতাদর্শী নবীদ্রোহী ক্বোরআন সুন্নাহর বিকৃতকারী, অপব্যাখ্যাকারী, ব্যক্তি স্বার্থে ও দলীয় স্বার্থে ইসলাম নামধারী মুনাফিক চক্রের সকল প্রকার অশুভ তৎপরতা, পরকালে তাদের ধ্বংস অনিবার্য করে তুলবে। জাহান্নাম তাদের জন্য অপরিহার্য ও সুনিশ্চিত হয়ে যাবে। একমাত্র সত্যান্বেষী সত্যপন্থী সত্যবাদী লোকেরাই কিয়ামতের দিবসে প্রকৃতভাবে লাভবান হবে। ইসলামের একমাত্র সঠিক রূপরেখা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শালোকে সত্য প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে যারা অবিরাম দৃঢ় প্রত্যয়ী পরকালের কঠিন সময়ে তারাই হবে সফলকাম ও বিজয়ী। তাদের সততা, নিষ্ঠা, সত্যবাদীতা তাদেরকে জান্নাতে নিয়ে যাবে, পবিত্র ক্বোরআনে এরশাদ হয়েছে-<br />قَالَ اللهُ هَذَا يَوْمَ يَنْفَعُ الصِّدِّقِيْنَ صِدْقُهُمْ-<br />আল্লাহ্ তা’আলা বলেন আজকের দিনে সত্যবাদীদের সত্যবাদিতা তাদের উপকারে আসবে। [সূরা: মায়িদাহ্-১১৯] হাদীস শরীফে এসেছে-<br />عليكم باالصدق فان الصدق يهدى الى البر وان البر يهدى الى الجنة-<br />তোমাদের উপর সত্যবাদিতা অপরিহার্য। নিশ্চয়ই সত্যবাদিতা সৎকর্মের দিকে পরিচালিত করে। সৎকর্ম জান্নাতের পথ প্রদর্শন করে।<br /><br />উত্তম চরিত্র<br />চরিত্র মানব জীবনের এক অমূল্য সম্পদ। মহান আল্লাহ্ ও তার প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম একজন আদর্শ মানুষের জন্য যে সব উত্তম চারিত্রিক গুণাবলী অর্জন অপরিহার্য করেছেন তা অর্জন করতে পারলে একজন ব্যক্তির ইহলৌকিক পারলৌকিক জীবন শান্তিময় হয়। তাকওয়াভিত্তিক আদর্শ জীবনই উত্তম চরিত্রের মাপকাঠি। এ ক্ষেত্রে গোটা বিশ্ববাসীর জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় আদর্শ চরিত্রের অনন্য অনুপম মডেল হচ্ছেন, আমাদের প্রিয় নবী সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম আদর্শ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম। তাঁর পবিত্র জীবনাদর্শই বিশ্ব মানবতার জন্য উত্তম চরিত্রের এক উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত। তাঁর সুমহান আদর্শ চরিত্রের প্রশংসায় মহান আল্লাহ্ পাক এরশাদ করেন-<br />اِنَّكَ لَعَلَى خُلْقٍ عَظِيْم-<br />অর্থ: নিশ্চয়ই আপনি সুমহান চরিত্রের উপর অধিষ্ঠিত।<br />[সূরা: কালাম-৬৮] প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অসীম ত্যাগ ধৈর্য্য মাধুর্য চরিত্র ও ব্যবহারিক জীবনের আদর্শ দিয়ে আরবের মানুষ গুলোকে ঈমানের আলোয় উদ্ভাসিত পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত করেছিলেন। তিনি এরশাদ করেছেন-<br />بعثت لاتمم مكارم الاخلاق-<br />আমি উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা বিধানের জন্যই প্রেরিত হয়েছি। বর্তমানেও পৃথিবীর অশান্ত পরিবেশ পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ আদর্শ সমাজ বিনির্মানে রসূলুল্লাহ্র পবিত্র জীবনাদর্শই একমাত্র সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধিপূর্ণ সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম।<br /><br />হালাল রিযক ও পবিত্র খাবার<br />হাদীসে বর্ণিত শেষোক্ত বাণীটি মুমিন জীবনের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ। বান্দার সকল প্রকার ইবাদত বন্দেগী পূণ্যময় আমল নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, দান-সাদকা, আল্লাহর দরবারে প্রতিটি আমলের গ্রহণযোগ্যতা হালাল রিযক তথা পবিত্র খাবারের উপর নির্ভরশীল। আল্লাহ্ পাক আমাদের আমল করার তৌফিক দিন। আ-মী-ন।<br /><br /></div>

মুমিনের চারটি উত্তম বৈশিষ্ট্য

عَنْ عبد الله بن عمرو رضى الله عنه اَنَّ رسولَ الله صلى الله عليه وسلم قال اربع ان كن فيك فلا عليك ما فاتك من الدّنيا حِفْظُ امانة وصدق حديث...

Read more »

কস্তুরীর চেয়েও সুগন্ধিময় ঘাম মোবারক

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">কস্তুরীর চেয়েও সুগন্ধিময় ঘাম মোবারক عن انس بن مالك قال خَدَمْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم عشر سنين فما قال اُفٍّ قَطٌ وما قال لشئ صَنَعْتُهُ لِمَ صَنَعْتَهُ ولا لِشَئٍ تركتُه لِمَ تركْتَهُ وكانَ رسول الله صلى الله عليه وسلم من احسن الناس خُلْقًا ولا مسْت حَزًا قطٌ وَلَا حَرِيْرًا قَطّ وَلَاشَيْئًا كَانَ اَلْيَنَ من كفّ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَلاَ شممت مسْكًا قطّ ولا عطرًا كان اطيب من عَرَق رسلول الله صلى الله عليه وسلم – (شَمَائِلُ النَّبى) অনুবাদ: হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি দীর্ঘ দশ বৎসর যাবত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমত করেছি। তিনি কখনো উহ্ (শব্দ) পর্যন্ত বলেননি। (আমার আচরণে ব্যবহারে কর্মে তিনি বিরক্তি বা অসন্তোষ প্রকাশ করেননি) আমার কৃত কোন কর্মের জন্য তিনি আমাকে কখনো বলেননি, তুমি একাজ কেন করলে? অথবা কোন কাজ না করায় এ কথাও বলেননি এটা তুমি কেন করোনি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। আমি রেশম ও পশমের মিশ্রণে প্রস্তুতকৃত কাপড়ও নিজ হস্তে স্পর্শ করে দেখেছি, এবং খাঁটি রেশমি কাপড়ও স্পর্শ করেছি। কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম -এর হাতের চেয়ে অধিক নরম ও কোমল কিছু স্পর্শ করিনি। আমি কস্তুরির ঘ্রাণও নিয়েছি এবং আতরের ঘ্রাণও নিয়েছি কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম -এর শরীরের ঘাম থেকে অধিক সুঘ্রাণযুক্ত কিছুই পাইনি। [শামায়েলে তিরমিযী]<br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjAE4S58dcKHxze6vC_Dky1XhpUwONY_sjCJxFyJnDAE33nbZRjTGWQMoMi8CUGDLulJfJJmVJfWjHghqFLqS2REkBqARJoGd1Xj-RSR3YUNOdkzn8T3hCaJ0VFe0mPd4MSoQyJYt3QhtEd/s1600/FB_IMG_14519838134680677-720x350.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="351" data-original-width="720" height="155" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjAE4S58dcKHxze6vC_Dky1XhpUwONY_sjCJxFyJnDAE33nbZRjTGWQMoMi8CUGDLulJfJJmVJfWjHghqFLqS2REkBqARJoGd1Xj-RSR3YUNOdkzn8T3hCaJ0VFe0mPd4MSoQyJYt3QhtEd/s320-rw/FB_IMG_14519838134680677-720x350.jpg" width="320" /></a></div><br /><br /> প্রাসঙ্গিক আলোচনা বর্ণিত হাদীস শরীফে প্রিয়নবী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম -এর অসংখ্য গুণাবলী ও ব্যবহারিক জীবনের অনুপম আদর্শ, চরিত্র ও সৌন্দর্যের বর্ণনা বিধৃত হয়েছে। তিনি ছিলেন মানব ইতিহাসের সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ অনুসরনীয় ও অনুকরণীয় আদর্শের সর্বোত্তম মডেল। ইসলামী জীবন বিধানের সমস্ত সুন্দর গুণ, বৈশিষ্ট্য ফুলের মতো ফুটে উঠে তাঁর পবিত্র জীবনাদর্শে। মানব জাতি একটি সুন্দর, পবিত্র, উন্নত, আদর্শ, মহৎ জীবন, উদার নৈতিক জীবন গঠনে একটি পূতঃপবিত্র পূর্ণাঙ্গ নির্দেশিকা খুঁজে পাবে তাঁরই পবিত্র জীবনে। তাঁর খাদেম ও সাহাবী হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র প্রতি তাঁর অনুপম চারিত্রিক গুণাবলীর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তাঁর ব্যবহারিক আদর্শে। এতে আরো বর্ণিত হয়েছে তাঁর দৈহিক পবিত্রতার সৌন্দর্য, সুন্দর ও কোমলভাবে কথা বলার শিক্ষা, নিজ অধীনস্তদের প্রতি কর্কশ ভাষায় কথা না বলার শিক্ষা, কথা বার্তায় শ্রোতার অন্তরে কষ্ট না দেয়ার শিক্ষা। কথাবার্তা বলার সময় বিতর্ক না করার, অযথা, অনর্থক ও বাজে কথা না বলার এবং কথা বার্তায় অন্যকে হতাশ ও নিরাশ না করার শিক্ষা বর্ণিত হাদীস শরীফে প্রতিফলিত হয়েছে। এ ছাড়াও হাদীসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম -এর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, অনুপম সুন্দরতম চিত্তাকর্ষক পরিপাটি অবয়ব অসাধারণ, সৌন্দর্যের আধাঁর নূরানিয়াতের ঝলক চিত্রিত হয়েছে। মিশক আম্বরের চেয়েও দেহের সৌরভ অনন্য অসাধারণ হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর অপর বর্ণনায় এসেছে- كان رسول الله صلى الله عليه وسلم ازهر اللّون كانَّ عَرَقَهُ اللَّوْلُو اذا مشى تكفّا وما مشيت ديباجَةً ولا حرِيْرًا الين من كفّ رسول الله صلى الله عليه وسلم ولاشممت مسكًا ولا عنبرة اطيب من رائحة النّبى صلى عليه وسلم- (رواه البخارى ومسلم) অর্থ: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম -এর বর্ণ ছিল স্বচ্ছ। উজ্জ্বল ঝকঝকে। তাঁর ঘাম বিন্দু ছিল যেন মনিমুক্তা, যখন তিনি চলতেন সামনের দিকে ঝুঁকে চলতেন, আমি এমন কোন রেশমি কাপড় স্পর্শ করিনি যা রাসূলুল্লাহর হস্ততালু অপেক্ষা অধিক নরম ও কোমল। আমি এমন কোন মিশক বা আম্বরের ঘ্রাণ নিইনি যা নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম -এর দেহের সৌরভ (ঘাম মোবারক) অপেক্ষা অধিক সুগন্ধিময়। [বোখারী ও মুসলিম শরীফ] তাঁর জ্যোতির্ময় চেহারা সাহাবায়ে কেরাম যখনই প্রিয়নবীর উপমা দিতেন চন্দ্র ও সূর্যের সঙ্গে উপমা দিতেন কেননা মানবজাতি তথা প্রাকৃতিক জগতে এ দুটি জ্যোতির্ময় সৃষ্টির চেয়ে উজ্জ্বল জ্যোতির্ময় পদার্থ আর কিছুই নেই। হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু প্রিয় নবীজির সৌন্দর্যের বর্ণনা ব্যক্ত করেন যে- مَا رَايْتُ شيئًا احسن من رسول الله صلى الله عليه وسلم كانّ الشمس تجرى فى وجهه واذا ضحك يتلالاء نورهُ فى الجدور- অর্থ: আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা অধিক সুন্দর আর কাউকে দেখিনি। তাঁর মুখমন্ডলে যেন সূর্য উদ্ভাসিত। আর যখন তিনি হাসতেন তাঁর দ্বীপ্তি প্রাচীরে চকচকে আলো ছড়াত। হযরত কা’ব ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এরশাদ করেন- كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا سرا ستنار وجهه كانه وجهه قطعة قمر وكنا نعرف ذالك- رواه البخارى ومسلم) অর্থ: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যখন খুশী হতেন, তখন তাঁর চেহারা মোবারক ঝলমল করত। এমনকি মনে হতো তা এক টুকরা চাঁদ আমরা সকলেই তা চিনতাম। ঘাম মোবারক সংগ্রহ হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর মাতা হযরত উম্মে সুলাইম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা দুপুরের বিশ্রাম অবস্থায় প্রিয় রাসূলের নির্গত ঘাম মোবারক একটি শিশিতে ভর্তি করছিলেন। প্রিয় নবী জাগ্রত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হে উম্মে সুলাইম তুমি এ কি করছো? তিনি আরজ করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ্! এটা আপনার ঘাম মোবারক যা আমাদের খুশবুতে মিশ্রিত করব। এটি সর্বোত্তম খুশবু। [সহীহ মুসলিম শরীফ] হুযূরের প্রস্রাব মোবারক পবিত্র প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত উম্মে আয়মন নামক মহিলা সাহাবীকে বললেন, আমার এ প্রস্রাব বাইরে ফেলে দিয়ে আস। হযরত উম্মে আয়মন সবটুকু পান করে ফেললেন। নবীজি জিজ্ঞেস করলেন প্রস্রাবগুলো কি করলে? বললেন, তা-তো আমি সবটুকু পান করে নিয়েছি। হযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার শরীরে দোজখের আগুন স্পর্শ হওয়া হারাম করা হয়েছে। হুযূর (দ.)’র শারীরিক সুগন্ধি মহান আল্লাহ্ পাক তাঁর প্রিয় হাবীব এর দেহ মোবারক সুগন্ধিময় করে সৃষ্টি করেছেন। যে পথে তিনি যাতায়াত করতেন সে পথের অলিগলি সুগন্ধিতে ভরে উঠতো। চারদিকে সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়তো। হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এ অবস্থার বর্ণনা করেছেন- كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا مرّ فى طرق المدينة وجدوا منه رائحة الطيب وقال مرّ رسول الله صلى الله عليه وسلم من هذا الطريق- অর্থ: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মদীনায় কোনো পথ দিয়ে যাতায়াত করলে লোকেরা ওই পথে আকর্ষণীয় সুগন্ধি পেতো। তারা বলত এ পথ দিয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম গমন করেছেন। [দালায়িলুন নবুয়ত: পৃষ্ঠা ২৮০, খাসায়েসে কুবরা: খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৬৭] হযরত জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে- انَّ النبى صلى الله عليه وسلم لم يسلك طريقا فيتبعه احد الاعرف انه قد سلكه من طيب عرقه اوقال من ريح عرقهِ- অর্থ: নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যে পথ দিয়ে গমন করতেন সে রাস্তা সুগন্ধিতে ভরে উঠতো। অনুসন্ধানকারী সুগন্ধি পেয়ে বুঝে নিতেন যে, প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এ পথ দিয়ে গমন করেছেন। [মিশকাত শরীফ: পৃষ্ঠা ৫১৭] আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি কতই সুন্দর বলেছেন- بهينى بهينى مهك پر مهكتى درود پيارى پيارى نفاست په لاكهون سلام- উচ্চারণ: ভীনি ভীনি মহক্ পর মহকতী দরূদ পিয়ারী পিয়ারী নফাসত পে লাখোঁ সালাম। অর্থাৎ হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম -এর মন মাতানো সুরভি মদীরায় সৌরভ মন্ডিত দরূদ। তাঁর প্রিয় পবিত্র সৌন্দর্যের প্রতি লক্ষ সালাম। [সূত্র: কাসীদা-এ সালাম: ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ, পৃষ্ঠা ৫০০] ওরওয়াহ্ ইবনে মাসঊদের মন্তব্য নবীজির ঘাম মোবারক, প্রস্রাব মোবারক, থুথু মোবারক ও রক্ত মোবারক পবিত্র ও মোবারক। নবীজির প্রতি সাহাবায়ে কেরামের অকৃত্রিম ভক্তি শ্রদ্ধা ভালোবাসা ও অসাধারণ আনুগত্য ছিল রীতিমত অতুলনীয়। ওরওয়াহ্ ইবনে মাসউদ যিনি হুদায়বিয়ার চুক্তিকালে মক্কা থেকে দূত হিসেবে এসে নবীজির নূরানী দরবারে নবীজির প্রতি সাহাবায়ে কেরামের মহব্বত ভালোবাসার বিস্ময়কর নমুনা দেখে স্বজাতি কুরাইশদের নিকট গিয়ে আবেগময় কন্ঠে ঘোষণা করেন, হে আমার কুরাইশ জাতির ভাইয়েরা, আমি পৃথিবীর বড় বড় রাজা বাদশাহদের দরবারে গিয়েছি। রোমের বাদশা, পারস্য রাজা কাইসার ও কিসরা এবং নাজ্জাসাীর রাজ দরবারের আলীশান মর্যাদা ও শান শওকত দেখেছি। কিন্তু আল্লাহর শপথ করে বলছি, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীরা তাঁকে যে অকৃত্রিম মর্যাদা ও সম্মান প্রদর্শন করে তা ক্রয়কৃত ক্রীতদাসও রাজা বাদশাদের সাথে করে না। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম থুথু নিক্ষেপ করলে তাঁর অনুসারীরা তা হাতে নিয়ে নেয় আপন শরীর ও মুখমন্ডলে মালিশ করে নেয়। তিনি যখন অজু করেন তাঁর ব্যবহৃত পানির এক ফোঁটা পাওয়ার জন্য পরস্পর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। তিনি কোন বিষয়ে আদেশ করলে প্রত্যেকে সর্বাগ্রে তা পালনে সচেষ্ট হয়। তাঁর সম্মুখে কেউ উচ্চস্বরে কথা বলে না। পূর্ণ দৃষ্টিতে কেউ তাঁর দিকে দেখেনা। তোমরা যদি আমার কথা শ্রবণ কর তাহলে তাঁর সাথে সন্ধিতে আবদ্ধ হয়ে যাও। ইসলামী জাগরণের কবি ফররুখ আহমদের অনবদ্য কাব্যের দুটি পংক্তি উল্লেখ পূর্বক লেখার যবনিকা টানছি। তোমার রওজা মোবারকে আজো সেই খুশবুর বইছে বাণ চামেলীর ঘ্রাণ অশ্রুর বাণ এখনো সেখানে অনির্বাণ। মহান আল্লাহ্ তাঁর প্রিয় হাবীবের মর্যাদা বুঝার তৌফিক দিন আ-মী-ন। </div>

কস্তুরীর চেয়েও সুগন্ধিময় ঘাম মোবারক

কস্তুরীর চেয়েও সুগন্ধিময় ঘাম মোবারক عن انس بن مالك قال خَدَمْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم عشر سنين فما قال اُفٍّ قَطٌ وما قال لشئ ص...

Read more »