মাযহাবের বিরুদ্ধে যুক্তি ও তার খন্ডন

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">লেখার এই অংশে আমরা সালাফীদের বিভিন্ন যুক্তি [১,২,৩] সম্পর্কে জানবো – কেন তাঁরা মনে করেন মাজহাব বাদ দিয়ে কুরআন আর সহীহ হাদিসের অনুসরণ করতে হবে? একই সাথে আমি সালাফীদের যুক্তিগুলোকে খন্ডন করারও চেষ্টা করব। যুক্তি-খন্ডন করতে যেয়ে আমি বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মালিকি মাজহাবের উসুল (“Set of Principles”) কে উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করব। কারণ, যুক্তি-খন্ডনের কথাগুলো আমি মূলত: শেইখ হামযা ইউসুফের লেকচার [৪] থেকে নিয়েছি যিনি একজন মালিকি ইমাম।<br />সালাফী যুক্তি ১: সকল বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে আমাদের কুরআন ও সহীহ হাদিস মানতে হবে। কিন্তু, প্রচলিত মাজহাবগুলোতে আমরা এমন অনেক বিধান দেখি, যেগুলো সহীহ হাদিস বিরোধী। কাজেই মাজহাবের অনুসরণ করা যাবে না।<br />যুক্তি-খন্ডন: এ কথা অনস্বীকার্য যে আমাদের সব ব্যাপারে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ মানতে হবে। কিন্তু এমন অনেক সুন্নাহ আছে, যা হাদিস আকারে লিপিবদ্ধ হয়নি কিন্তু মদীনার সাহাবাদের মধ্যে সেই সুন্নাহগুলোর প্রচলন ছিল। ইমাম মালিক এই ক্ষেত্রে সহীহ হাদিসের বিপরীতে সাহাবাদের আমলকে প্রাধান্য দিয়েছেন।  যেমন – শুক্রবারে নফল রোযা রাখা যাবে না, এটা সহীহ হাদিস। কিন্তু, ইমাম মালিক মদীনায় তাবেঈ’নদের মধ্যে শুক্রবারে নফল রোযা রাখার প্রচলন দেখেছেন। এই তাবেঈ’নরা সরাসরি সাহাবাদের থেকেই এই আমল শিখেছেন। ইমাম মালিকের মতে, হয়তো পরবর্তীতে “শুক্রবারে নফল রোজা রাখা যাবে না” হাদিসের বিপরীতে “শুক্রবারে নফল রোজা রাখা উচিত” এর হুকুম রাসূলুল্লাহ(সা) দিয়েছিলেন, ফলে আগের হুকুমটি বাতিল (Abrogate) হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু ঐ হুকুমটি হাদিস আকারে আমাদের কাছে পৌঁছায়নি, পৌঁছেছে সাহাবাদের আমলের (Practise) মাধ্যমে।  কাজেই, মালিকি মাজহাব অনুসারে শুক্রবারে নফল রোযা রাখা সুন্নাত, যদিও এর বিপরীতে সহিহ হাদিস আছে [৪]! সুতরাং,  চতুর্থ পয়েন্টের  “কুরআন ও হাদিসকে সেভাবে বুঝতে হবে যেভাবে সাহাবী ও সালাফরা বুঝেছিলেন” – মাজহাবীরা মনে করে এই মূলনীতি সালাফীরা যতটা অনুসরণ করে, তারা তার চেয়েও বেশী অনুসরন করে।<br />সালাফী যুক্তি ২: মাজহাবগুলো যখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তখন ইমাম বুখারী (মৃত্যু ২৫৬ হিজরী) ও ইমাম মুসলিমের (মৃত্যু ২৬১ হিজরী) মতো সহীহ হাদিস গ্রন্থগুলো লেখা হয়নি। ফলে, মাজহাবের ইমামরা অনেক সহীহ হাদিস সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। অথবা, কোনো হাদিসকে উনারা হয়তো দুর্বল বলে বাদ দিয়েছিলেন, কিন্তু ঐ হাদিসটি অন্য কোনো সনদে সহীহ ছিল, যা জানা গিয়েছিলো পরবর্তী সময়ে। এই কারণে মাজহাবগুলোতে এমন অনেক মতামত দেখা যায়, যা সহীহ হাদিস বিরোধী।<br />যুক্তি-খন্ডন: এই যুক্তিটা বিভিন্ন কারণে [৪] দুর্বল। যেমন –<br />প্রথমত:  হাদিস সংকলন শুরু হয়েছিলো রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জীবিতকালেই। একথা সুপ্রসিদ্ধ যে, আবু হুরাইরা(রা), ইবনে আব্বাস(রা), আমর ইবনুল আস(রা) সহ প্রচুর সাহাবী লিখিত আকারে হাদিস সংরক্ষণ করেছিলেন [১৫]। এই সব কিতাবের হাদিসগুলি পরবর্তী যুগের হাদিসগ্রন্থগুলোর (যেমন – বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী ইত্যাদি) মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়েছে। তাই, মদীনার সাহাবারা-তাবেঈনরা বুখারী-মুসলিমের হাদিসগুলো জানতেন না, এ কথা অমূলক।<br />দ্বিতীয়ত: বেশীরভাগ হাদিসের উৎস মূলত মদীনা শহর, আর ইমাম মালিক তাঁর সারাটা জীবন মদীনায় কাটিয়েছেন তাবেঈনদের কাছে পড়াশুনা করে। ইমাম মালিক সরাসরি ৬০০ তাবেঈনের কাছ থেকে হাদিস ও ফিকহ শিখেছেন, আর এই ৬০০ তাবেঈন শিখেছেন সরাসরি সাহাবীদের কাছ থেকে, মদীনায় তখন ১০ হাজার সাহাবী ছিল।  ইমাম মালিক হাদিস শিখেছেন ঐ যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস হিশাম ইবনে ‘উরওয়া, ইবনে শিহাব আল-যুহরীর মতো বাঘা মুহাদ্দিসদের কাছ থেকে। আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে আহকাম (হালাল-হারাম) সংক্রান্ত হাদিসের সংখ্যা কিন্তু খুব বেশী নয়। কাজেই, ইমাম মালিক কোনো বিষয়ের আহকাম সংক্রান্ত সহীহ হাদিসগুলো জানতেন না এই সম্ভাবনা খুবই কম।<br />তৃতীয়ত: যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেই যে ইমাম মালিক ১০%-১৫% সহীহ হাদিস জানতেন না, তবুও আপনি বলতে পারবেন না যে, মালিকি মাজহাব সহীহ হাদিস এর উপর আমল করে না। এর কারণ হলো, আমরা আগেই বলেছি “মাজহাব” বলতে বুঝায় “উসুল” বা Set of Principles, মাজহাব বলতে কোনো নির্দিষ্ট শারঈ’ বিধানকে বুঝায় না। ইমাম মালিকের মৃত্যুর পর থেকে যখনই নতুন কোনো হাদিস পাওয়া গেছে তখনই মালিকি মাজহাবের আলেমরা সেই নতুন হাদিসের আলোকে তাঁদের বিধানে পরিবর্তন এনেছেন, কিন্তু ইমাম মালিকের দেয়া “উসুল” অনুসরণ করেছেন। একই ব্যাপার অন্য মাজহাবগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যেমন – ইমাম আবু হানিফার ছাত্র শাইবানী (মৃত্যু ১৮৯ হিজরী) বহু ক্ষেত্রে নতুন হাদিসের আলোকে ইমাম আবু হানিফার মতের বিরোধী মতামত দিয়েছেন। কিন্তু, তারপরেও ইমাম শাইবানী হানাফী মাজহাবের অনুসারী, কারণ তিনি ইমাম আবু হানিফার “উসুল” অনুসরণ করেছেন। গত ১১০০ বছর ধরে বিভিন্ন মাজহাবের আলেমরা এভাবে করেই নতুন পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে তাঁদের মতামতে পরিবর্তন এনেছেন।<br />উল্লেখ্য যে, হানাফী মাজহাবের উসুল অনেক অংশেই নেয়া হয়েছে কুফার সাহাবাদের কাছ থেকে [২৮]। আলী(রা) তাঁর খিলাফত মদীনা থেকে কুফায় সরিয়ে নেয়ার পর, বহু সংখ্যক সাহাবী কুফায় চলে আসেন। আলী (রা) সাহাবীদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফকিহ আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদকে কুফার কাজী নিযুক্ত করেন। আর কুফার সাহাবীদের উসুলই হানাফী মাজহাবের উসুল।<br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg9rDZvjMSqjADTVTi3qq7YCAb1YMs4EfRUMQmhZhiDzljjFH0-R1f8MALUYZMEvMWgH1L3DhbB1jlLnkHkDu065eGqUDg2Z9JLaPd2jf7wVX0FKvhIJwtHZrxJ-TFHHJrW2Inb7tHJQYeK/s1600/download+%25282%2529.png" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="168" data-original-width="300" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg9rDZvjMSqjADTVTi3qq7YCAb1YMs4EfRUMQmhZhiDzljjFH0-R1f8MALUYZMEvMWgH1L3DhbB1jlLnkHkDu065eGqUDg2Z9JLaPd2jf7wVX0FKvhIJwtHZrxJ-TFHHJrW2Inb7tHJQYeK/s1600-rw/download+%25282%2529.png" /></a></div><br />সালাফী যুক্তি ৩: মাজহাবগুলি তাদের ইমামের মতামত এর বিপরীতে সহীহ হাদিস পাওয়া যাওয়ার পরেও সহীহ হাদিসের অনুসরণ না করে তাদের ইমামের মতামতকে অনুসরণ করে। কিন্তু, সকল মাজহাবের ইমামই কি বলেননি “সহীহ হাদিসই আমার মাজহাব”?<br />উত্তর: প্রত্যেক ইমামই যথাসাধ্য সহীহ হাদিস অনুসরণ করেছেন এবং সেই মাজহাবের আলেমরাও সবসময় সহীহ হাদিসের ভিত্তিতেই বিধান দিয়েছেন। কিন্তু, আমাদের মনে রাখতে হবে যে সহীহ হাদিসকে সেভাবেই বুঝতে হবে যেভাবে সাহাবারা বুঝেছিলেন (৪ নং পয়েন্ট)। এমন বহু সহীহ হাদিস আছে যেগুলো অন্য সহীহ হাদিস বা কুরআনের আয়াত দ্বারা অবলুপ্ত (Abrogate) হয়ে গেছে, আবার এমনও সহীহ হাদিস আছে যেগুলো ১০০% সত্য হওয়ার পরেও সাহাবারা সেগুলির উপর আমল করতেন না, কেন করতেন না সেটা আমাদের অনেক ক্ষেত্রে জানা আছে, অনেক ক্ষেত্রে জানা নেই।<br />আসুন মালিকি মাজহাব থেকে একটা উদাহরণ দেখা যাক। ইমাম মালিক তার মুওয়াত্তায় নামাজে দাড়িয়ে হাত বুকে রাখতে হবে এই সংক্রান্ত হাদিস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু, ইমাম মালিকই তাঁর মাজহাবে হাত ছেড়ে নামাজ পড়তে বলেছেন। কেন? কারণ, ঐ যে – “হাদিস বুঝতে হবে যেভাবে সাহাবারা তা বুঝেছিলেন”। ইমাম মালিক মদীনায় সংখ্যাগরিষ্ঠ তাবেঈ’নদের হাত ছেড়ে নামাজ পড়তে দেখেছেন, তাবেঈনরা এটা দেখেছেন মদীনার সাহাবাদের কাছ থেকে। ইমাম মালিকের এই মতের পক্ষের হাদিসও কিন্তু বুখারী শরীফেই আছে [২৩,২৪,২৫]। বর্ণিত হাদিসটিতে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) একজন সাহাবীকে শিখিয়েছেন কিভাবে নামাজ পড়তে হবে, কিন্তু তিনি তাকে হাত বাঁধার কথা বলেননি।  মালিকি মাজহাবের মতে, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কখনো কখনো হাত বেঁধে নামাজ পড়েছেন এটা দেখানোর জন্য যে, ইচ্ছা করলে এভাবেও নামাজ পড়া যায়। উল্লেখ্য, অনেকে বলে থাকে যে, ইমাম মালিক মৃত্যুর আগের শেষ কয়দিন “হাতে ব্যথা থাকার কারণে” হাত না বেঁধে নামাজ পড়তেন – এই কথার কোনও ভিত্তি নেই [৪]।<br />আবার অনেক ক্ষেত্রে এমনও হয়েছে যে, অনেক সুন্নাহ/হাদিস আছে যা সালাফদের জানা ছিল, কিন্তু সেই সুন্নাহটি সহীহ হাদিস আকারে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে নাই। কারণ, ইমাম বুখারী (মৃত্যু ২৫৬ হিজরী) বা ইমাম মুসলিম (মৃত্যু ২৬১ হিজরী) যেহেতু মাজহাবের ইমামদের প্রায় ৫০/৬০ বছর পর হাদিস সংগ্রহ শুরু করেছেন, এমন হতেই পারে – যে হাদিসটি ইমাম মালিক বা ইমাম আবু হানিফার কাছে সহীহ ছিল, তা বুখারী-মুসলিমের যুগে আসতে আসতে যইফ (দুর্বল) হয়ে গেছে। কিন্তু, মাজহাবের ইমামরা সেই সুন্নাহ সম্পর্কে সহীহ সনদে অবগত ছিলেন এবং সেই অনুসারে তাদের মাস’আলা দিয়েছেন।<br />“হাদিসের এ সকল গ্রন্থ সংকলিত হওয়ার পূর্বে যে সব ইমাম অতিক্রান্ত হয়ে গেছেন তাঁরা পরবর্তীদের চেয়ে অনেক বেশী হাদিসের জ্ঞান রাখতেন। কারণ, তাঁদের নিকটে এমন বহু হাদিস ছিল যা আমাদের পর্যন্ত মাজহুল (অজ্ঞাত) বা মুনকাতি’ (বিচ্ছিন) সনদে পৌঁছেছে কিংবা আদৌ পৌঁছেনি”।  (রাফউল মালাম আনিল আয়িম্মাতিল আ’লাম – ইবনে তাইমিয়াহ – পৃষ্ঠা ১৮। [১৯]<br />সালাফী যুক্তি ৪: সাহাবাদের তো কোনো মাজহাব ছিল না, আপনারা মাজহাব পেলেন কোত্থেকে?<br />যুক্তি-খন্ডন: আমরা আগেই বলেছি কুরআন ও সুন্নাহ অনুসারে বিধান দেয়ার “উসুল” (Set of Principles) কেই মাজহাব বলে। সাহাবীরাও কিছু “উসুল” অনুসরণ করেই বিধান দিতেন। একথা সুবিদিত যে মদীনার সাহাবাদের “উসুল” (Set of Principles) , কুফার সাহাবাদের “উসুল” (Set of Principles)  থেকে আলাদা ছিল [৪,৭]।<br />আর আপনি যদি সাহাবাদের পদ্ধতিই অনুসরণ করতে চান তাহলে আমি বলব সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে ইমাম মালিকের মাজহাব অনুসরণ করা। কারণ, ইমাম মালিকের জীবদ্দশায় এই মাজহাবের নাম কিন্তু মালিকি মাজহাব ছিল না, এর নাম ছিল “মাদানী মাজহাব”, কারণ মদীনার সাহাবী ও তাবেঈনরা এই “উসুল” অনুসরণ করতেন। ইমাম মালিক শুধু সেই “উসুল” কে একটা সিস্টেম এর মধ্যে এনে লিপিবদ্ধ করে একে মাজহাব এর রূপ দিয়েছেন।<br />সালাফী যুক্তি ৫: সব মাজহাব যদি একই কুরআন আর সুন্নাহ এর অনুসরণ করে থাকে, তাহলে এদের বিধানগুলো এত আলাদা কেন?<br />যুক্তি-খন্ডন: একই কুরআন – সুন্নাহ অনুসরণ করার পরেও বিধান আলাদা হয় আলাদা “উসুল” [৪,৬,১৯] এর কারণে। “উসুল” এর এই পার্থক্যের কিছু উদাহরণ দেখুন –<br />ইমাম মালিক মুরসাল হাদিস (যে হাদিস সাহাবা নয় বরং তাবেঈ’ থেকে বর্ণিত হয়েছে) গ্রহণ করেছেন, আর ইমাম শাফেঈ’ শুধু নির্দিষ্ট কিছু তাবেঈ’র মুরসাল হাদিস নিয়েছেন।<br />ইমাম মালিক মদীনার তাবেঈ’দের আমলকে সহীহ হাদিসের বিপরীতে প্রাধান্য দিয়েছেন। তাঁর যুক্তি হলো – যে মদীনার মাটিতে ১০ হাজার সাহাবা শুয়ে আছেন, সেই মদীনার সাহাবা ও তাবেঈ’দের আমল সহীহ হাদিসের চাইতেও শক্ত দলীল (আবার সেই ৪ নং পয়েন্ট)। কারণ, হাদিস বুঝার ক্ষেত্রে আমাদের চাইতে তাঁদের জ্ঞান নি:সন্দেহে বেশী ছিল।<br />কিছু মুতাওয়াতির হাদিস (যে হাদিস তার সনদের প্রত্যেক স্তরে বহু মানুষ দ্বারা বর্ণিত হয়েছে) আছে যেগুলি কুরআনের আয়াতের সাথে আপাত: দৃষ্টিতে সাংঘর্ষিক (Apparently Conflicting)। এই ক্ষেত্রে কি কুরআনের আয়াত নেয়া হবে নাকি হাদিসকে নেয়া হবে – তা নিয়ে মাজহাবগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। একেক মাজহাব এক্ষেত্রে একেকটাকে প্রাধান্য দিয়েছে।<br />যদি কোনও আহাদ হাদিস (যে হাদিসের সনদের  প্রতিটা স্তরে তিনজনের বেশী বর্ণনাকারী পাওয়া যায় না) কুরআনের কোনো প্রতিষ্ঠিত নীতির সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে হানাফী মাজহাব হাদিস সহীহ হওয়া সত্ত্বেও, সেটা না নিয়ে কিয়াস ব্যবহার করে। এটা একটা কারণ যার ফলে আমরা হানাফী মাজহাবে সহীহ হাদিস বিরোধী এত আহকাম (Islamic Ruling) দেখতে পাই।<br />কোন্‌ হাদিসগুলো ‘আম (General), আর কোন্‌ হাদিসগুলো খাস (Specific/Exception) – এই বিষয়ে ইমামদের মতপার্থক্যের কারণেও ফিকহী পার্থক্য হয়।<br />অন্যদিকে হাম্বালী ও সালাফীরা হাদিসকে আক্ষরিক ভাবে মেনে চলেন, ফলে আমরা হাদিসের কিতাবগুলিতে যে হাদিসগুলি পাই, সেগুলোর সাথে এই মাজহাবগুলোর সরাসরি মিল সবচেয়ে বেশী।<br />আবু-বকর(রা) ও উমার(রা) এর মতপার্থক্য [২৯]: “উসুল” এর এই ধরনের পার্থক্য সাহাবাদের সময় থেকেই ছিল, আর তাবেঈনদের মধ্যে তো ছিলই। দুইজন সম্পূর্ন ভিন্ন বিধান এর অনুসারী হয়েও দুইজনেই সঠিক হতে পারে, যদি তাদের নিয়ত হয় আল্লাহর ﷻ হুকুমকে মনে চলা। শ্রেষ্ঠ দুই সাহাবী আবু বকর(রা) ও উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) অসংখ্য বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করতেন, তারপরেও তারা দুইজনেই রাসূলুল্লাহ(ﷺ)-কে নিঁখুতভাবে অনুসরণ করেছেন [২৭]। যেমন – আবু বকর(রা) এর খিলাফতকালে সাহাবীদের যে ভাতা দেয়া হতো, তা সকল সাহাবার জন্য সমান অংকের ছিল। আবু বকর(রা) এর যুক্তি ছিল – মহান আল্লাহ ﷻ কুরআনে বলেছেন যে তিনি সকল সাহাবার উপরই সন্তুষ্ট (http://quran.com/9/100) , তাই তাঁরা সবাই সমান ভাতা পাবেন।<br />অন্যদিকে, উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) খলীফা হওয়ার পরেই এই নিয়মের পরিবর্তন করলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, যারা ইসলাম প্রচারের প্রথম দিকে তা গ্রহন করেছে, তারা যে কষ্ট সহ্য করেছে সেই তুলনায় যারা পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে তারা অনেক কম কষ্ট সহ্য করেছে, ফলে তাদের মর্যাদাও কম। কে কত আগে ইসলাম গ্রহণ করেছে এর ভিত্তিতে তিনি ভাতার স্কেল নির্ধারণ করেন। এখানে আবু বকর(রা) ও উমার(রা) এর মতামত সম্পুর্ণ বিপরীত – কিন্তু তাঁরা দুইজনেরই নিয়ত ছিল রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কে  নিঁখুতভাবে অনুসরণ করা। সাহাবাদের জীবন ঘাঁটলে এরকম অগুনতি পরষ্পর-বিরোধী মতামত পাওয়া যায় [২৭]। কিন্তু, যেহেতু তাঁদের প্রত্যেকেরই নিয়ত শুদ্ধ ছিল, কাজেই যিনি যে বিধান অনুসরণ করেছেন, তাঁর জন্য সেটাই শুদ্ধ ছিল।<br />সালাফী যুক্তি ৬: শাফেঈ’ মাজহাব বলে অজু করে স্ত্রীকে স্পর্শ করলে অজু থাকে না, হানাফী মাজহাব বলে অজু থাকে। কিন্তু, দুইটা তো একই সাথে সঠিক হতে পারে না। তার চাইতে যে মতামতটা অধিকতর সঠিক সেটা অনুসরণ করাই কি উচিত না?<br />যুক্তি-খন্ডন: প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেক মাজহাব তাদের “উসুল” (Set of Principles) অনুসারে যেটা সবচেয়ে সঠিক সেটাই বেছে নিয়েছে। “স্ত্রীকে স্পর্শ করলেও অজু থাকে” – হানাফী মাজহাবে এটাই সঠিক। কারণ, আবু দাউদের সহীহ হাদিসে আছে – রাসূলুল্লাহ(ﷺ) অজু করার পর আয়েশা(রা) কে স্পর্শ করা সত্ত্বেও আবার অজু না করেই নামাজ পড়েছেন। অন্যদিকে, শাফেঈ’ মাজহাব এর মতে  “স্ত্রীকে স্পর্শ করলে অজু থাকে না ” –  এটাই সঠিক (এই বিষয়ে শাফেঈ মাজহাবের বিস্তারিত প্রমাণের জন্য এই লেখাটি পড়ুন)। কারণ, তাদের মতে সূরা মায়িদার ৬ নং আয়াতে আল্লাহ ﷻ বলেছেন – “স্ত্রীকে স্পর্শ করলে অজু থাকবে না” এবং এই আয়াতটি আবু দাউদের হাদিসের উপর প্রাধান্য পাবে, ফলে আবু দাউদের হাদিসের বিধানটি অবলুপ্ত (Abrogate) হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। কাজেই, আপনি যদি বলে থাকেন ইমাম আবু হানিফা এর মতামত এক্ষেত্রে ইমাম শাফেঈ’র মতামতের চেয়ে বেশী সঠিক, তাহলে আপনি আসলে বলছেন যে সেটা আপনার “উসুল” অনুসারে বেশী সঠিক।<br />সালাফী যুক্তি ৭: আব্বাসীয় শাসন আমলে এরকম ফতোয়া ছিল যে, হানাফীরা শাফেঈদের বিয়ে করতে পারবে না। শুধু তাই না, দামেস্ক ও মক্কায় চার মাজহাবের জন্য চারটি পৃথক মিহরাব ছিল এবং তারা ভিন্ন ভিন্ন জামাতে নামাজ পড়ত। কাজেই, এভাবে করে মাজহাব কি মুসলিম উম্মাহ এর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে নাই?<br />উত্তর: মাজহাব নিয়ে এ ধরনের বাড়াবাড়ি অতীতে হয়েছে একথা সত্য এবং মাজহাবের নামে মুসলিম উম্মাহর এইরকম বিভক্তি মোটেও কাম্য নয় [৪]। কিন্তু, আপনি যখন জানবেন কেন এরকম করা হয়েছিল, তখন পুরো বিষয়টাকে ভিন্ন দৃষ্টিভংগীতে দেখতে পারবেন।<br />হানাফী আর শাফেঈ’রা একে অপরকে বিয়ে করতে পারবে না —এই ফতোয়া এই জন্য দেয়া হয়েছিল যে, দুইটি ভিন্ন মাজহাবের বিয়ে সংক্রান্ত বিধি-বিধানগুলো ভিন্ন হওয়ায়, একজন মুফতীর পক্ষে কিছু কিছু ব্যাপারে মতামত (Islamic Ruling) দেয়া কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যেমন – এক মাজহাব মনে করে ডিভোর্সের জন্য একবার তালাক বলতে হবে, আর আরেক মাজহাব মনে করে ডিভোর্সের জন্য তিনবার তালাক বলতে হবে।  স্বামী-স্ত্রী দুইজন যদি দুই ভিন্ন মাজহাবের মানুষ হয়, তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায় যে, কোন্ মাজহাব অনুসারে তাদের মামলা পরিচালনা করা হবে? এই ধরনের ঝামেলা এড়ানোর জন্য তখনকার মুফতিরা “এক মাজহাবের মানুষ অন্য মাজহাবের মানুষকে বিয়ে করতে পারবে না” – জাতীয় উদ্ভট ফতোয়া দিয়েছিল, যেটা ছিল সম্পূর্ণ ভুল। তাদের উচিত ছিল কিভাবে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বজায় রাখা যায় তা নিয়ে চিন্তা করা [৪]।<br />মক্কায় আর দামেস্কে চার মাজহাবের জন্য চার মিহরাব স্থাপন হলো মাজহাব-সন্ত্রাসের এক চরম উদাহরণ, যা অস্বীকার করার উপায় নাই [৪]। কিন্তু এর দোষ আপনি মাজহাবকে দিতে পারেন না, এর জন্য দোষ দিতে হবে মানুষের চরমপন্থী চিন্তাভাবনাকে। চরমপন্থী চিন্তা-ভাবনা সব সময়ই খারাপ, তা সে মাজহাব নিয়েই হোক, সালাফীবাদ নিয়েই হোক আর নাস্তিকতা নিয়েই হোক। মাজহাবী চরমপন্থার যে উদাহরণ আপনি দিচ্ছেন, সেই একইরকম উদাহরণ নাস্তিকেরা ব্যবহার করে এটা প্রমাণ করার জন্য যে “ধর্ম খারাপ”। কারণ, ধর্মের কারণে আগের শতাব্দীগুলোতে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেছে। কিন্তু, ভেবে দেখুন আগের শতাব্দীর সেই গণহত্যাগুলোর জন্য কি ধর্ম দায়ী নাকি মানুষের চরমপন্থী চিন্তা-ভাবনা আর অন্য মতের প্রতি অসহিষ্ণুতা দায়ী?<br />সালাফী যুক্তি ৮: রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন সেভাবে নামাজ পড় যেভাবে আমাকে নামাজ পড়তে দেখ, তারপরেও মাজহাবীরা সহীহ হাদিসের বিপরীতে নামাজ পড়ে  কেন?<br />উত্তর: লক্ষ্য করুন – রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন – “সেভাবে নামাজ পড়ো যেভাবে আমাকে নামাজ পড়তে দেখ” (বুখারী)। মাজহাবীদের মতে – রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর মতো করে নামাজ পড়ার দাবী যতটা ইমাম মালিক, ইমাম আবু হানিফা করতে পারেন, শাইখুল হাদিস আলবানী ততটুকু করতে পারেন না [৪]। কারণ, ইমাম আবু হানিফা নামাজের মাস’আলা নিয়েছেন মূলত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ এর ছাত্রদের থেকে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ মক্কার প্রথম ১০ জন ইসলাম গ্রহনকারীদের একজন যিনি দীর্ঘ ২০ বছর রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ পড়েছেন। সাহাবারা রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কে নামাজ পড়তে “দেখেছেন”, আবার তাবেঈ’রা সাহাবাদের নামাজ পড়তে “দেখেছেন”। আপনাকে স্বীকার করতে হবে – কোন কিছু “পড়ে শেখার” চেয়ে উস্তাদের কাছ থেকে সরাসরি “দেখে শিখলে” ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।<br />অন্যদিকে, ইমাম মালিক তাঁর নামাজের মাস’আলাগুলো নিয়েছেন [৪] প্রধানত: আব্দুল্লাহ ইবনে ‘উমার(রা) এর ছাত্র ও মুক্তিকৃত দাস নাফি’ (মৃত্যু ১১৭ হিজরী) থেকে, আর নাফি’ নিয়েছেন আব্দুল্লাহ ইবনে ‘উমার(রা) থেকে, যিনি সব সাহাবীদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কে সবচেয়ে অনুকরণ বেশী করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার(রা) সেই ধরনের জুতা পড়তেন যা রাসূলুল্লাহ(ﷺ) পড়তেন, ঠিক একই কাপড় পড়তেন যা রাসূলুল্লাহ(ﷺ) পড়তেন। তাহলে এটা কিভাবে সম্ভব যে উনি নামাজ পড়তেন যেভাবে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) পড়তেন না? ইমাম বুখারী নিজে “ইমাম মালিক -> নাফি’ -> আব্দুল্লাহ ইবনে উমার -> রাসূলুল্লাহ(ﷺ)” এর সনদ কে “স্বর্ণালী সনদ” (সিলসিলাতুল যাহাব / The Golden Chain of Narrators) বলে আখ্যায়িত করেছেন।     এখন আপনিই বলেন – রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কিভাবে নামাজ পড়েছেন, সেই নামাজ কি ইমাম মালিক বেশী বলতে পারবেন, না ১৪০০ বছর পরের কোনও আলেম সঠিকভাবে বলতে পারবে?<br />আমাদের মনে রাখতে হবে, কিছু কিছু সুন্নাহ আছে যেগুলো লিখিত আকারে সংরক্ষিত হয়নি। সাহাবারা, তাবেঈ’রা  অনেক সুন্নাহই সংরক্ষণ করেছেন তাদের কাজের (Practise) মাধ্যমে। আর মাজহাবের ইমামরা অনেক ক্ষেত্রেই সহীহ হাদিসকে বাদ দিয়ে সালাফদের কাজকে (Practise) প্রাধান্য দিয়েছেন। এর কারণ হলো সেই ৪ নং পয়েন্ট – “হাদিস বুঝতে হবে যেভাবে সাহাবারা বুঝেছিলেন”। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় – মালিকি মাজহাবে “রাফ’উল ইয়াদাইন” করা হয় না। যদিও ইমাম মালিক রাফ’উল ইয়াদাইনের হাদিস সম্পর্কে জানতেন। ইমাম মালিকের মতামত হচ্ছে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) মাঝে মধ্যে রাফ’উল ইয়াদাইন করে দেখিয়েছেন যে, নামাজের যে কোনো আল্লাহু আকবারের সাথে চাইলে হাত তোলা যায়, এটা মাকরুহ নয়। এই মতামতের পিছনে যুক্তি কি? এর যুক্তি হলো – রাফ’উল ইয়াদাইনের হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবা আব্দুল্লাহ ইবনে উমার(রা) নিজেই নামাজে রাফ’উল ইয়াদাইন করতেন না, কাজেই এর থেকে বুঝা যায় রাসূলুল্লাহ(ﷺ)ও সাধারণত রাফ’উল ইয়াদাইন করতেন না। তাই, ইমাম মালিক রাফ’উল ইয়াদাইনের হাদিস জানা সত্ত্বেও তার পক্ষে মত দেননি।<br />আরেকটা ব্যাপার লক্ষ্যনীয় যে – রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কিন্তু বলেছেন – “সেভাবে নামাজ পড়ো যেভাবে আমাকে পড়তে দেখ” (বুখারী), তিনি বলেননি – “সেভাবে নামাজ পড়ো যেভাবে আমাকে নিয়ে লেখা হয়েছে”।  উপরে বর্ণিত কারণে – এই “দেখার” ব্যাপারটা কেউ যদি দাবী করতে পারে তবে সেটা ইমাম মালিক, ইমাম আবু হানিফারা যতটুকু করতে পারেন, ১৪০০ বছর পরের কেউ ততটুকু করতে পারবে না।<br /><br /><br /></div>

মাযহাবের বিরুদ্ধে যুক্তি ও তার খন্ডন

লেখার এই অংশে আমরা সালাফীদের বিভিন্ন যুক্তি [১,২,৩] সম্পর্কে জানবো – কেন তাঁরা মনে করেন মাজহাব বাদ দিয়ে কুরআন আর সহীহ হাদিসের অনুসরণ করতে হব...

Read more »

মাযহাবের বিরুদ্ধে যুক্তি ও তার খন্ডন

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"> লেখার এই অংশে আমরা সালাফীদের বিভিন্ন যুক্তি [১,২,৩] সম্পর্কে জানবো – কেন তাঁরা মনে করেন মাজহাব বাদ দিয়ে কুরআন আর সহীহ হাদিসের অনুসরণ করতে হবে? একই সাথে আমি সালাফীদের যুক্তিগুলোকে খন্ডন করারও চেষ্টা করব। যুক্তি-খন্ডন করতে যেয়ে আমি বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মালিকি মাজহাবের উসুল (“Set of Principles”) কে উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করব। কারণ, যুক্তি-খন্ডনের কথাগুলো আমি মূলত: শেইখ হামযা ইউসুফের লেকচার [৪] থেকে নিয়েছি যিনি একজন মালিকি ইমাম।<br /> সালাফী যুক্তি ১: সকল বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে আমাদের কুরআন ও সহীহ হাদিস মানতে হবে। কিন্তু, প্রচলিত মাজহাবগুলোতে আমরা এমন অনেক বিধান দেখি, যেগুলো সহীহ হাদিস বিরোধী। কাজেই মাজহাবের অনুসরণ করা যাবে না।<br /> যুক্তি-খন্ডন: এ কথা অনস্বীকার্য যে আমাদের সব ব্যাপারে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ মানতে হবে। কিন্তু এমন অনেক সুন্নাহ আছে, যা হাদিস আকারে লিপিবদ্ধ হয়নি কিন্তু মদীনার সাহাবাদের মধ্যে সেই সুন্নাহগুলোর প্রচলন ছিল। ইমাম মালিক এই ক্ষেত্রে সহীহ হাদিসের বিপরীতে সাহাবাদের আমলকে প্রাধান্য দিয়েছেন।  যেমন – শুক্রবারে নফল রোযা রাখা যাবে না, এটা সহীহ হাদিস। কিন্তু, ইমাম মালিক মদীনায় তাবেঈ’নদের মধ্যে শুক্রবারে নফল রোযা রাখার প্রচলন দেখেছেন। এই তাবেঈ’নরা সরাসরি সাহাবাদের থেকেই এই আমল শিখেছেন। ইমাম মালিকের মতে, হয়তো পরবর্তীতে “শুক্রবারে নফল রোজা রাখা যাবে না” হাদিসের বিপরীতে “শুক্রবারে নফল রোজা রাখা উচিত” এর হুকুম রাসূলুল্লাহ(সা) দিয়েছিলেন, ফলে আগের হুকুমটি বাতিল (Abrogate) হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু ঐ হুকুমটি হাদিস আকারে আমাদের কাছে পৌঁছায়নি, পৌঁছেছে সাহাবাদের আমলের (Practise) মাধ্যমে।  কাজেই, মালিকি মাজহাব অনুসারে শুক্রবারে নফল রোযা রাখা সুন্নাত, যদিও এর বিপরীতে সহিহ হাদিস আছে [৪]! সুতরাং,  চতুর্থ পয়েন্টের  “কুরআন ও হাদিসকে সেভাবে বুঝতে হবে যেভাবে সাহাবী ও সালাফরা বুঝেছিলেন” – মাজহাবীরা মনে করে এই মূলনীতি সালাফীরা যতটা অনুসরণ করে, তারা তার চেয়েও বেশী অনুসরন করে।<br /> সালাফী যুক্তি ২: মাজহাবগুলো যখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তখন ইমাম বুখারী (মৃত্যু ২৫৬ হিজরী) ও ইমাম মুসলিমের (মৃত্যু ২৬১ হিজরী) মতো সহীহ হাদিস গ্রন্থগুলো লেখা হয়নি। ফলে, মাজহাবের ইমামরা অনেক সহীহ হাদিস সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। অথবা, কোনো হাদিসকে উনারা হয়তো দুর্বল বলে বাদ দিয়েছিলেন, কিন্তু ঐ হাদিসটি অন্য কোনো সনদে সহীহ ছিল, যা জানা গিয়েছিলো পরবর্তী সময়ে। এই কারণে মাজহাবগুলোতে এমন অনেক মতামত দেখা যায়, যা সহীহ হাদিস বিরোধী।<br /> যুক্তি-খন্ডন: এই যুক্তিটা বিভিন্ন কারণে [৪] দুর্বল। যেমন –<br /> প্রথমত:  হাদিস সংকলন শুরু হয়েছিলো রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জীবিতকালেই। একথা সুপ্রসিদ্ধ যে, আবু হুরাইরা(রা), ইবনে আব্বাস(রা), আমর ইবনুল আস(রা) সহ প্রচুর সাহাবী লিখিত আকারে হাদিস সংরক্ষণ করেছিলেন [১৫]। এই সব কিতাবের হাদিসগুলি পরবর্তী যুগের হাদিসগ্রন্থগুলোর (যেমন – বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী ইত্যাদি) মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়েছে। তাই, মদীনার সাহাবারা-তাবেঈনরা বুখারী-মুসলিমের হাদিসগুলো জানতেন না, এ কথা অমূলক।<br /> দ্বিতীয়ত: বেশীরভাগ হাদিসের উৎস মূলত মদীনা শহর, আর ইমাম মালিক তাঁর সারাটা জীবন মদীনায় কাটিয়েছেন তাবেঈনদের কাছে পড়াশুনা করে। ইমাম মালিক সরাসরি ৬০০ তাবেঈনের কাছ থেকে হাদিস ও ফিকহ শিখেছেন, আর এই ৬০০ তাবেঈন শিখেছেন সরাসরি সাহাবীদের কাছ থেকে, মদীনায় তখন ১০ হাজার সাহাবী ছিল।  ইমাম মালিক হাদিস শিখেছেন ঐ যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস হিশাম ইবনে ‘উরওয়া, ইবনে শিহাব আল-যুহরীর মতো বাঘা মুহাদ্দিসদের কাছ থেকে। আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে আহকাম (হালাল-হারাম) সংক্রান্ত হাদিসের সংখ্যা কিন্তু খুব বেশী নয়। কাজেই, ইমাম মালিক কোনো বিষয়ের আহকাম সংক্রান্ত সহীহ হাদিসগুলো জানতেন না এই সম্ভাবনা খুবই কম।<br /> তৃতীয়ত: যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেই যে ইমাম মালিক ১০%-১৫% সহীহ হাদিস জানতেন না, তবুও আপনি বলতে পারবেন না যে, মালিকি মাজহাব সহীহ হাদিস এর উপর আমল করে না। এর কারণ হলো, আমরা আগেই বলেছি “মাজহাব” বলতে বুঝায় “উসুল” বা Set of Principles, মাজহাব বলতে কোনো নির্দিষ্ট শারঈ’ বিধানকে বুঝায় না। ইমাম মালিকের মৃত্যুর পর থেকে যখনই নতুন কোনো হাদিস পাওয়া গেছে তখনই মালিকি মাজহাবের আলেমরা সেই নতুন হাদিসের আলোকে তাঁদের বিধানে পরিবর্তন এনেছেন, কিন্তু ইমাম মালিকের দেয়া “উসুল” অনুসরণ করেছেন। একই ব্যাপার অন্য মাজহাবগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যেমন – ইমাম আবু হানিফার ছাত্র শাইবানী (মৃত্যু ১৮৯ হিজরী) বহু ক্ষেত্রে নতুন হাদিসের আলোকে ইমাম আবু হানিফার মতের বিরোধী মতামত দিয়েছেন। কিন্তু, তারপরেও ইমাম শাইবানী হানাফী মাজহাবের অনুসারী, কারণ তিনি ইমাম আবু হানিফার “উসুল” অনুসরণ করেছেন। গত ১১০০ বছর ধরে বিভিন্ন মাজহাবের আলেমরা এভাবে করেই নতুন পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে তাঁদের মতামতে পরিবর্তন এনেছেন।<br /> উল্লেখ্য যে, হানাফী মাজহাবের উসুল অনেক অংশেই নেয়া হয়েছে কুফার সাহাবাদের কাছ থেকে [২৮]। আলী(রা) তাঁর খিলাফত মদীনা থেকে কুফায় সরিয়ে নেয়ার পর, বহু সংখ্যক সাহাবী কুফায় চলে আসেন। আলী (রা) সাহাবীদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফকিহ আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদকে কুফার কাজী নিযুক্ত করেন। আর কুফার সাহাবীদের উসুলই হানাফী মাজহাবের উসুল।<br /> <div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"> <a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgzq8FHIEPyhapqW2Gq-aBPhPpxNT2DlrU2Ov_21TXxDd8I259TIin1gKfhucA4R4YrtMjQ3I4snRZI5Uk1n_29v4M7cxfF_woHDeDeACmMpIyBH1jiGC60skfa5LATPuWCqIyJJde3FnQk/s1600/download+%25282%2529.png" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="168" data-original-width="300" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgzq8FHIEPyhapqW2Gq-aBPhPpxNT2DlrU2Ov_21TXxDd8I259TIin1gKfhucA4R4YrtMjQ3I4snRZI5Uk1n_29v4M7cxfF_woHDeDeACmMpIyBH1jiGC60skfa5LATPuWCqIyJJde3FnQk/s1600-rw/download+%25282%2529.png" /></a></div> <br /> সালাফী যুক্তি ৩: মাজহাবগুলি তাদের ইমামের মতামত এর বিপরীতে সহীহ হাদিস পাওয়া যাওয়ার পরেও সহীহ হাদিসের অনুসরণ না করে তাদের ইমামের মতামতকে অনুসরণ করে। কিন্তু, সকল মাজহাবের ইমামই কি বলেননি “সহীহ হাদিসই আমার মাজহাব”?<br /> উত্তর: প্রত্যেক ইমামই যথাসাধ্য সহীহ হাদিস অনুসরণ করেছেন এবং সেই মাজহাবের আলেমরাও সবসময় সহীহ হাদিসের ভিত্তিতেই বিধান দিয়েছেন। কিন্তু, আমাদের মনে রাখতে হবে যে সহীহ হাদিসকে সেভাবেই বুঝতে হবে যেভাবে সাহাবারা বুঝেছিলেন (৪ নং পয়েন্ট)। এমন বহু সহীহ হাদিস আছে যেগুলো অন্য সহীহ হাদিস বা কুরআনের আয়াত দ্বারা অবলুপ্ত (Abrogate) হয়ে গেছে, আবার এমনও সহীহ হাদিস আছে যেগুলো ১০০% সত্য হওয়ার পরেও সাহাবারা সেগুলির উপর আমল করতেন না, কেন করতেন না সেটা আমাদের অনেক ক্ষেত্রে জানা আছে, অনেক ক্ষেত্রে জানা নেই।<br /> আসুন মালিকি মাজহাব থেকে একটা উদাহরণ দেখা যাক। ইমাম মালিক তার মুওয়াত্তায় নামাজে দাড়িয়ে হাত বুকে রাখতে হবে এই সংক্রান্ত হাদিস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু, ইমাম মালিকই তাঁর মাজহাবে হাত ছেড়ে নামাজ পড়তে বলেছেন। কেন? কারণ, ঐ যে – “হাদিস বুঝতে হবে যেভাবে সাহাবারা তা বুঝেছিলেন”। ইমাম মালিক মদীনায় সংখ্যাগরিষ্ঠ তাবেঈ’নদের হাত ছেড়ে নামাজ পড়তে দেখেছেন, তাবেঈনরা এটা দেখেছেন মদীনার সাহাবাদের কাছ থেকে। ইমাম মালিকের এই মতের পক্ষের হাদিসও কিন্তু বুখারী শরীফেই আছে [২৩,২৪,২৫]। বর্ণিত হাদিসটিতে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) একজন সাহাবীকে শিখিয়েছেন কিভাবে নামাজ পড়তে হবে, কিন্তু তিনি তাকে হাত বাঁধার কথা বলেননি।  মালিকি মাজহাবের মতে, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কখনো কখনো হাত বেঁধে নামাজ পড়েছেন এটা দেখানোর জন্য যে, ইচ্ছা করলে এভাবেও নামাজ পড়া যায়। উল্লেখ্য, অনেকে বলে থাকে যে, ইমাম মালিক মৃত্যুর আগের শেষ কয়দিন “হাতে ব্যথা থাকার কারণে” হাত না বেঁধে নামাজ পড়তেন – এই কথার কোনও ভিত্তি নেই [৪]।<br /> আবার অনেক ক্ষেত্রে এমনও হয়েছে যে, অনেক সুন্নাহ/হাদিস আছে যা সালাফদের জানা ছিল, কিন্তু সেই সুন্নাহটি সহীহ হাদিস আকারে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে নাই। কারণ, ইমাম বুখারী (মৃত্যু ২৫৬ হিজরী) বা ইমাম মুসলিম (মৃত্যু ২৬১ হিজরী) যেহেতু মাজহাবের ইমামদের প্রায় ৫০/৬০ বছর পর হাদিস সংগ্রহ শুরু করেছেন, এমন হতেই পারে – যে হাদিসটি ইমাম মালিক বা ইমাম আবু হানিফার কাছে সহীহ ছিল, তা বুখারী-মুসলিমের যুগে আসতে আসতে যইফ (দুর্বল) হয়ে গেছে। কিন্তু, মাজহাবের ইমামরা সেই সুন্নাহ সম্পর্কে সহীহ সনদে অবগত ছিলেন এবং সেই অনুসারে তাদের মাস’আলা দিয়েছেন।<br /> “হাদিসের এ সকল গ্রন্থ সংকলিত হওয়ার পূর্বে যে সব ইমাম অতিক্রান্ত হয়ে গেছেন তাঁরা পরবর্তীদের চেয়ে অনেক বেশী হাদিসের জ্ঞান রাখতেন। কারণ, তাঁদের নিকটে এমন বহু হাদিস ছিল যা আমাদের পর্যন্ত মাজহুল (অজ্ঞাত) বা মুনকাতি’ (বিচ্ছিন) সনদে পৌঁছেছে কিংবা আদৌ পৌঁছেনি”।  (রাফউল মালাম আনিল আয়িম্মাতিল আ’লাম – ইবনে তাইমিয়াহ – পৃষ্ঠা ১৮। [১৯]<br /> সালাফী যুক্তি ৪: সাহাবাদের তো কোনো মাজহাব ছিল না, আপনারা মাজহাব পেলেন কোত্থেকে?<br /> যুক্তি-খন্ডন: আমরা আগেই বলেছি কুরআন ও সুন্নাহ অনুসারে বিধান দেয়ার “উসুল” (Set of Principles) কেই মাজহাব বলে। সাহাবীরাও কিছু “উসুল” অনুসরণ করেই বিধান দিতেন। একথা সুবিদিত যে মদীনার সাহাবাদের “উসুল” (Set of Principles) , কুফার সাহাবাদের “উসুল” (Set of Principles)  থেকে আলাদা ছিল [৪,৭]।<br /> আর আপনি যদি সাহাবাদের পদ্ধতিই অনুসরণ করতে চান তাহলে আমি বলব সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে ইমাম মালিকের মাজহাব অনুসরণ করা। কারণ, ইমাম মালিকের জীবদ্দশায় এই মাজহাবের নাম কিন্তু মালিকি মাজহাব ছিল না, এর নাম ছিল “মাদানী মাজহাব”, কারণ মদীনার সাহাবী ও তাবেঈনরা এই “উসুল” অনুসরণ করতেন। ইমাম মালিক শুধু সেই “উসুল” কে একটা সিস্টেম এর মধ্যে এনে লিপিবদ্ধ করে একে মাজহাব এর রূপ দিয়েছেন।<br /> সালাফী যুক্তি ৫: সব মাজহাব যদি একই কুরআন আর সুন্নাহ এর অনুসরণ করে থাকে, তাহলে এদের বিধানগুলো এত আলাদা কেন?<br /> যুক্তি-খন্ডন: একই কুরআন – সুন্নাহ অনুসরণ করার পরেও বিধান আলাদা হয় আলাদা “উসুল” [৪,৬,১৯] এর কারণে। “উসুল” এর এই পার্থক্যের কিছু উদাহরণ দেখুন –<br /> ইমাম মালিক মুরসাল হাদিস (যে হাদিস সাহাবা নয় বরং তাবেঈ’ থেকে বর্ণিত হয়েছে) গ্রহণ করেছেন, আর ইমাম শাফেঈ’ শুধু নির্দিষ্ট কিছু তাবেঈ’র মুরসাল হাদিস নিয়েছেন।<br /> ইমাম মালিক মদীনার তাবেঈ’দের আমলকে সহীহ হাদিসের বিপরীতে প্রাধান্য দিয়েছেন। তাঁর যুক্তি হলো – যে মদীনার মাটিতে ১০ হাজার সাহাবা শুয়ে আছেন, সেই মদীনার সাহাবা ও তাবেঈ’দের আমল সহীহ হাদিসের চাইতেও শক্ত দলীল (আবার সেই ৪ নং পয়েন্ট)। কারণ, হাদিস বুঝার ক্ষেত্রে আমাদের চাইতে তাঁদের জ্ঞান নি:সন্দেহে বেশী ছিল।<br /> কিছু মুতাওয়াতির হাদিস (যে হাদিস তার সনদের প্রত্যেক স্তরে বহু মানুষ দ্বারা বর্ণিত হয়েছে) আছে যেগুলি কুরআনের আয়াতের সাথে আপাত: দৃষ্টিতে সাংঘর্ষিক (Apparently Conflicting)। এই ক্ষেত্রে কি কুরআনের আয়াত নেয়া হবে নাকি হাদিসকে নেয়া হবে – তা নিয়ে মাজহাবগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। একেক মাজহাব এক্ষেত্রে একেকটাকে প্রাধান্য দিয়েছে।<br /> যদি কোনও আহাদ হাদিস (যে হাদিসের সনদের  প্রতিটা স্তরে তিনজনের বেশী বর্ণনাকারী পাওয়া যায় না) কুরআনের কোনো প্রতিষ্ঠিত নীতির সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে হানাফী মাজহাব হাদিস সহীহ হওয়া সত্ত্বেও, সেটা না নিয়ে কিয়াস ব্যবহার করে। এটা একটা কারণ যার ফলে আমরা হানাফী মাজহাবে সহীহ হাদিস বিরোধী এত আহকাম (Islamic Ruling) দেখতে পাই।<br /> কোন্‌ হাদিসগুলো ‘আম (General), আর কোন্‌ হাদিসগুলো খাস (Specific/Exception) – এই বিষয়ে ইমামদের মতপার্থক্যের কারণেও ফিকহী পার্থক্য হয়।<br /> অন্যদিকে হাম্বালী ও সালাফীরা হাদিসকে আক্ষরিক ভাবে মেনে চলেন, ফলে আমরা হাদিসের কিতাবগুলিতে যে হাদিসগুলি পাই, সেগুলোর সাথে এই মাজহাবগুলোর সরাসরি মিল সবচেয়ে বেশী।<br /> আবু-বকর(রা) ও উমার(রা) এর মতপার্থক্য [২৯]: “উসুল” এর এই ধরনের পার্থক্য সাহাবাদের সময় থেকেই ছিল, আর তাবেঈনদের মধ্যে তো ছিলই। দুইজন সম্পূর্ন ভিন্ন বিধান এর অনুসারী হয়েও দুইজনেই সঠিক হতে পারে, যদি তাদের নিয়ত হয় আল্লাহর ﷻ হুকুমকে মনে চলা। শ্রেষ্ঠ দুই সাহাবী আবু বকর(রা) ও উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) অসংখ্য বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করতেন, তারপরেও তারা দুইজনেই রাসূলুল্লাহ(ﷺ)-কে নিঁখুতভাবে অনুসরণ করেছেন [২৭]। যেমন – আবু বকর(রা) এর খিলাফতকালে সাহাবীদের যে ভাতা দেয়া হতো, তা সকল সাহাবার জন্য সমান অংকের ছিল। আবু বকর(রা) এর যুক্তি ছিল – মহান আল্লাহ ﷻ কুরআনে বলেছেন যে তিনি সকল সাহাবার উপরই সন্তুষ্ট (http://quran.com/9/100) , তাই তাঁরা সবাই সমান ভাতা পাবেন।<br /> অন্যদিকে, উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) খলীফা হওয়ার পরেই এই নিয়মের পরিবর্তন করলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, যারা ইসলাম প্রচারের প্রথম দিকে তা গ্রহন করেছে, তারা যে কষ্ট সহ্য করেছে সেই তুলনায় যারা পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে তারা অনেক কম কষ্ট সহ্য করেছে, ফলে তাদের মর্যাদাও কম। কে কত আগে ইসলাম গ্রহণ করেছে এর ভিত্তিতে তিনি ভাতার স্কেল নির্ধারণ করেন। এখানে আবু বকর(রা) ও উমার(রা) এর মতামত সম্পুর্ণ বিপরীত – কিন্তু তাঁরা দুইজনেরই নিয়ত ছিল রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কে  নিঁখুতভাবে অনুসরণ করা। সাহাবাদের জীবন ঘাঁটলে এরকম অগুনতি পরষ্পর-বিরোধী মতামত পাওয়া যায় [২৭]। কিন্তু, যেহেতু তাঁদের প্রত্যেকেরই নিয়ত শুদ্ধ ছিল, কাজেই যিনি যে বিধান অনুসরণ করেছেন, তাঁর জন্য সেটাই শুদ্ধ ছিল।<br /> সালাফী যুক্তি ৬: শাফেঈ’ মাজহাব বলে অজু করে স্ত্রীকে স্পর্শ করলে অজু থাকে না, হানাফী মাজহাব বলে অজু থাকে। কিন্তু, দুইটা তো একই সাথে সঠিক হতে পারে না। তার চাইতে যে মতামতটা অধিকতর সঠিক সেটা অনুসরণ করাই কি উচিত না?<br /> যুক্তি-খন্ডন: প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেক মাজহাব তাদের “উসুল” (Set of Principles) অনুসারে যেটা সবচেয়ে সঠিক সেটাই বেছে নিয়েছে। “স্ত্রীকে স্পর্শ করলেও অজু থাকে” – হানাফী মাজহাবে এটাই সঠিক। কারণ, আবু দাউদের সহীহ হাদিসে আছে – রাসূলুল্লাহ(ﷺ) অজু করার পর আয়েশা(রা) কে স্পর্শ করা সত্ত্বেও আবার অজু না করেই নামাজ পড়েছেন। অন্যদিকে, শাফেঈ’ মাজহাব এর মতে  “স্ত্রীকে স্পর্শ করলে অজু থাকে না ” –  এটাই সঠিক (এই বিষয়ে শাফেঈ মাজহাবের বিস্তারিত প্রমাণের জন্য এই লেখাটি পড়ুন)। কারণ, তাদের মতে সূরা মায়িদার ৬ নং আয়াতে আল্লাহ ﷻ বলেছেন – “স্ত্রীকে স্পর্শ করলে অজু থাকবে না” এবং এই আয়াতটি আবু দাউদের হাদিসের উপর প্রাধান্য পাবে, ফলে আবু দাউদের হাদিসের বিধানটি অবলুপ্ত (Abrogate) হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। কাজেই, আপনি যদি বলে থাকেন ইমাম আবু হানিফা এর মতামত এক্ষেত্রে ইমাম শাফেঈ’র মতামতের চেয়ে বেশী সঠিক, তাহলে আপনি আসলে বলছেন যে সেটা আপনার “উসুল” অনুসারে বেশী সঠিক।<br /> সালাফী যুক্তি ৭: আব্বাসীয় শাসন আমলে এরকম ফতোয়া ছিল যে, হানাফীরা শাফেঈদের বিয়ে করতে পারবে না। শুধু তাই না, দামেস্ক ও মক্কায় চার মাজহাবের জন্য চারটি পৃথক মিহরাব ছিল এবং তারা ভিন্ন ভিন্ন জামাতে নামাজ পড়ত। কাজেই, এভাবে করে মাজহাব কি মুসলিম উম্মাহ এর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে নাই?<br /> উত্তর: মাজহাব নিয়ে এ ধরনের বাড়াবাড়ি অতীতে হয়েছে একথা সত্য এবং মাজহাবের নামে মুসলিম উম্মাহর এইরকম বিভক্তি মোটেও কাম্য নয় [৪]। কিন্তু, আপনি যখন জানবেন কেন এরকম করা হয়েছিল, তখন পুরো বিষয়টাকে ভিন্ন দৃষ্টিভংগীতে দেখতে পারবেন।<br /> হানাফী আর শাফেঈ’রা একে অপরকে বিয়ে করতে পারবে না —এই ফতোয়া এই জন্য দেয়া হয়েছিল যে, দুইটি ভিন্ন মাজহাবের বিয়ে সংক্রান্ত বিধি-বিধানগুলো ভিন্ন হওয়ায়, একজন মুফতীর পক্ষে কিছু কিছু ব্যাপারে মতামত (Islamic Ruling) দেয়া কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যেমন – এক মাজহাব মনে করে ডিভোর্সের জন্য একবার তালাক বলতে হবে, আর আরেক মাজহাব মনে করে ডিভোর্সের জন্য তিনবার তালাক বলতে হবে।  স্বামী-স্ত্রী দুইজন যদি দুই ভিন্ন মাজহাবের মানুষ হয়, তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায় যে, কোন্ মাজহাব অনুসারে তাদের মামলা পরিচালনা করা হবে? এই ধরনের ঝামেলা এড়ানোর জন্য তখনকার মুফতিরা “এক মাজহাবের মানুষ অন্য মাজহাবের মানুষকে বিয়ে করতে পারবে না” – জাতীয় উদ্ভট ফতোয়া দিয়েছিল, যেটা ছিল সম্পূর্ণ ভুল। তাদের উচিত ছিল কিভাবে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বজায় রাখা যায় তা নিয়ে চিন্তা করা [৪]।<br /> মক্কায় আর দামেস্কে চার মাজহাবের জন্য চার মিহরাব স্থাপন হলো মাজহাব-সন্ত্রাসের এক চরম উদাহরণ, যা অস্বীকার করার উপায় নাই [৪]। কিন্তু এর দোষ আপনি মাজহাবকে দিতে পারেন না, এর জন্য দোষ দিতে হবে মানুষের চরমপন্থী চিন্তাভাবনাকে। চরমপন্থী চিন্তা-ভাবনা সব সময়ই খারাপ, তা সে মাজহাব নিয়েই হোক, সালাফীবাদ নিয়েই হোক আর নাস্তিকতা নিয়েই হোক। মাজহাবী চরমপন্থার যে উদাহরণ আপনি দিচ্ছেন, সেই একইরকম উদাহরণ নাস্তিকেরা ব্যবহার করে এটা প্রমাণ করার জন্য যে “ধর্ম খারাপ”। কারণ, ধর্মের কারণে আগের শতাব্দীগুলোতে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেছে। কিন্তু, ভেবে দেখুন আগের শতাব্দীর সেই গণহত্যাগুলোর জন্য কি ধর্ম দায়ী নাকি মানুষের চরমপন্থী চিন্তা-ভাবনা আর অন্য মতের প্রতি অসহিষ্ণুতা দায়ী?<br /> সালাফী যুক্তি ৮: রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন সেভাবে নামাজ পড় যেভাবে আমাকে নামাজ পড়তে দেখ, তারপরেও মাজহাবীরা সহীহ হাদিসের বিপরীতে নামাজ পড়ে  কেন?<br /> উত্তর: লক্ষ্য করুন – রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন – “সেভাবে নামাজ পড়ো যেভাবে আমাকে নামাজ পড়তে দেখ” (বুখারী)। মাজহাবীদের মতে – রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর মতো করে নামাজ পড়ার দাবী যতটা ইমাম মালিক, ইমাম আবু হানিফা করতে পারেন, শাইখুল হাদিস আলবানী ততটুকু করতে পারেন না [৪]। কারণ, ইমাম আবু হানিফা নামাজের মাস’আলা নিয়েছেন মূলত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ এর ছাত্রদের থেকে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ মক্কার প্রথম ১০ জন ইসলাম গ্রহনকারীদের একজন যিনি দীর্ঘ ২০ বছর রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ পড়েছেন। সাহাবারা রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কে নামাজ পড়তে “দেখেছেন”, আবার তাবেঈ’রা সাহাবাদের নামাজ পড়তে “দেখেছেন”। আপনাকে স্বীকার করতে হবে – কোন কিছু “পড়ে শেখার” চেয়ে উস্তাদের কাছ থেকে সরাসরি “দেখে শিখলে” ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।<br /> অন্যদিকে, ইমাম মালিক তাঁর নামাজের মাস’আলাগুলো নিয়েছেন [৪] প্রধানত: আব্দুল্লাহ ইবনে ‘উমার(রা) এর ছাত্র ও মুক্তিকৃত দাস নাফি’ (মৃত্যু ১১৭ হিজরী) থেকে, আর নাফি’ নিয়েছেন আব্দুল্লাহ ইবনে ‘উমার(রা) থেকে, যিনি সব সাহাবীদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কে সবচেয়ে অনুকরণ বেশী করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার(রা) সেই ধরনের জুতা পড়তেন যা রাসূলুল্লাহ(ﷺ) পড়তেন, ঠিক একই কাপড় পড়তেন যা রাসূলুল্লাহ(ﷺ) পড়তেন। তাহলে এটা কিভাবে সম্ভব যে উনি নামাজ পড়তেন যেভাবে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) পড়তেন না? ইমাম বুখারী নিজে “ইমাম মালিক -> নাফি’ -> আব্দুল্লাহ ইবনে উমার -> রাসূলুল্লাহ(ﷺ)” এর সনদ কে “স্বর্ণালী সনদ” (সিলসিলাতুল যাহাব / The Golden Chain of Narrators) বলে আখ্যায়িত করেছেন।     এখন আপনিই বলেন – রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কিভাবে নামাজ পড়েছেন, সেই নামাজ কি ইমাম মালিক বেশী বলতে পারবেন, না ১৪০০ বছর পরের কোনও আলেম সঠিকভাবে বলতে পারবে?<br /> আমাদের মনে রাখতে হবে, কিছু কিছু সুন্নাহ আছে যেগুলো লিখিত আকারে সংরক্ষিত হয়নি। সাহাবারা, তাবেঈ’রা  অনেক সুন্নাহই সংরক্ষণ করেছেন তাদের কাজের (Practise) মাধ্যমে। আর মাজহাবের ইমামরা অনেক ক্ষেত্রেই সহীহ হাদিসকে বাদ দিয়ে সালাফদের কাজকে (Practise) প্রাধান্য দিয়েছেন। এর কারণ হলো সেই ৪ নং পয়েন্ট – “হাদিস বুঝতে হবে যেভাবে সাহাবারা বুঝেছিলেন”। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় – মালিকি মাজহাবে “রাফ’উল ইয়াদাইন” করা হয় না। যদিও ইমাম মালিক রাফ’উল ইয়াদাইনের হাদিস সম্পর্কে জানতেন। ইমাম মালিকের মতামত হচ্ছে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) মাঝে মধ্যে রাফ’উল ইয়াদাইন করে দেখিয়েছেন যে, নামাজের যে কোনো আল্লাহু আকবারের সাথে চাইলে হাত তোলা যায়, এটা মাকরুহ নয়। এই মতামতের পিছনে যুক্তি কি? এর যুক্তি হলো – রাফ’উল ইয়াদাইনের হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবা আব্দুল্লাহ ইবনে উমার(রা) নিজেই নামাজে রাফ’উল ইয়াদাইন করতেন না, কাজেই এর থেকে বুঝা যায় রাসূলুল্লাহ(ﷺ)ও সাধারণত রাফ’উল ইয়াদাইন করতেন না। তাই, ইমাম মালিক রাফ’উল ইয়াদাইনের হাদিস জানা সত্ত্বেও তার পক্ষে মত দেননি।<br /> আরেকটা ব্যাপার লক্ষ্যনীয় যে – রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কিন্তু বলেছেন – “সেভাবে নামাজ পড়ো যেভাবে আমাকে পড়তে দেখ” (বুখারী), তিনি বলেননি – “সেভাবে নামাজ পড়ো যেভাবে আমাকে নিয়ে লেখা হয়েছে”।  উপরে বর্ণিত কারণে – এই “দেখার” ব্যাপারটা কেউ যদি দাবী করতে পারে তবে সেটা ইমাম মালিক, ইমাম আবু হানিফারা যতটুকু করতে পারেন, ১৪০০ বছর পরের কেউ ততটুকু করতে পারবে না।<br /> <br /> <br /></div>

মাযহাবের বিরুদ্ধে যুক্তি ও তার খন্ডন

লেখার এই অংশে আমরা সালাফীদের বিভিন্ন যুক্তি [১,২,৩] সম্পর্কে জানবো – কেন তাঁরা মনে করেন মাজহাব বাদ দিয়ে কুরআন আর সহীহ হাদিসের অনুসরণ করতে হ...

Read more »

মাযহাবের বিরুদ্ধে যুক্তি ও তার খন্ডন

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"><br />লেখার এই অংশে আমরা সালাফীদের বিভিন্ন যুক্তি [১,২,৩] সম্পর্কে জানবো – কেন তাঁরা মনে করেন মাজহাব বাদ দিয়ে কুরআন আর সহীহ হাদিসের অনুসরণ করতে হবে? একই সাথে আমি সালাফীদের যুক্তিগুলোকে খন্ডন করারও চেষ্টা করব। যুক্তি-খন্ডন করতে যেয়ে আমি বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মালিকি মাজহাবের উসুল (“Set of Principles”) কে উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করব। কারণ, যুক্তি-খন্ডনের কথাগুলো আমি মূলত: শেইখ হামযা ইউসুফের লেকচার [৪] থেকে নিয়েছি যিনি একজন মালিকি ইমাম।<br /><br />সালাফী যুক্তি ১: সকল বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে আমাদের কুরআন ও সহীহ হাদিস মানতে হবে। কিন্তু, প্রচলিত মাজহাবগুলোতে আমরা এমন অনেক বিধান দেখি, যেগুলো সহীহ হাদিস বিরোধী। কাজেই মাজহাবের অনুসরণ করা যাবে না।<br /><br />যুক্তি-খন্ডন: এ কথা অনস্বীকার্য যে আমাদের সব ব্যাপারে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ মানতে হবে। কিন্তু এমন অনেক সুন্নাহ আছে, যা হাদিস আকারে লিপিবদ্ধ হয়নি কিন্তু মদীনার সাহাবাদের মধ্যে সেই সুন্নাহগুলোর প্রচলন ছিল। ইমাম মালিক এই ক্ষেত্রে সহীহ হাদিসের বিপরীতে সাহাবাদের আমলকে প্রাধান্য দিয়েছেন।  যেমন – শুক্রবারে নফল রোযা রাখা যাবে না, এটা সহীহ হাদিস। কিন্তু, ইমাম মালিক মদীনায় তাবেঈ’নদের মধ্যে শুক্রবারে নফল রোযা রাখার প্রচলন দেখেছেন। এই তাবেঈ’নরা সরাসরি সাহাবাদের থেকেই এই আমল শিখেছেন। ইমাম মালিকের মতে, হয়তো পরবর্তীতে “শুক্রবারে নফল রোজা রাখা যাবে না” হাদিসের বিপরীতে “শুক্রবারে নফল রোজা রাখা উচিত” এর হুকুম রাসূলুল্লাহ(সা) দিয়েছিলেন, ফলে আগের হুকুমটি বাতিল (Abrogate) হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু ঐ হুকুমটি হাদিস আকারে আমাদের কাছে পৌঁছায়নি, পৌঁছেছে সাহাবাদের আমলের (Practise) মাধ্যমে।  কাজেই, মালিকি মাজহাব অনুসারে শুক্রবারে নফল রোযা রাখা সুন্নাত, যদিও এর বিপরীতে সহিহ হাদিস আছে [৪]! সুতরাং,  চতুর্থ পয়েন্টের  “কুরআন ও হাদিসকে সেভাবে বুঝতে হবে যেভাবে সাহাবী ও সালাফরা বুঝেছিলেন” – মাজহাবীরা মনে করে এই মূলনীতি সালাফীরা যতটা অনুসরণ করে, তারা তার চেয়েও বেশী অনুসরন করে।<br /><br />সালাফী যুক্তি ২: মাজহাবগুলো যখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তখন ইমাম বুখারী (মৃত্যু ২৫৬ হিজরী) ও ইমাম মুসলিমের (মৃত্যু ২৬১ হিজরী) মতো সহীহ হাদিস গ্রন্থগুলো লেখা হয়নি। ফলে, মাজহাবের ইমামরা অনেক সহীহ হাদিস সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। অথবা, কোনো হাদিসকে উনারা হয়তো দুর্বল বলে বাদ দিয়েছিলেন, কিন্তু ঐ হাদিসটি অন্য কোনো সনদে সহীহ ছিল, যা জানা গিয়েছিলো পরবর্তী সময়ে। এই কারণে মাজহাবগুলোতে এমন অনেক মতামত দেখা যায়, যা সহীহ হাদিস বিরোধী।<br /><br />যুক্তি-খন্ডন: এই যুক্তিটা বিভিন্ন কারণে [৪] দুর্বল। যেমন –<br /><br />প্রথমত:  হাদিস সংকলন শুরু হয়েছিলো রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জীবিতকালেই। একথা সুপ্রসিদ্ধ যে, আবু হুরাইরা(রা), ইবনে আব্বাস(রা), আমর ইবনুল আস(রা) সহ প্রচুর সাহাবী লিখিত আকারে হাদিস সংরক্ষণ করেছিলেন [১৫]। এই সব কিতাবের হাদিসগুলি পরবর্তী যুগের হাদিসগ্রন্থগুলোর (যেমন – বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী ইত্যাদি) মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়েছে। তাই, মদীনার সাহাবারা-তাবেঈনরা বুখারী-মুসলিমের হাদিসগুলো জানতেন না, এ কথা অমূলক।<br /><br />দ্বিতীয়ত: বেশীরভাগ হাদিসের উৎস মূলত মদীনা শহর, আর ইমাম মালিক তাঁর সারাটা জীবন মদীনায় কাটিয়েছেন তাবেঈনদের কাছে পড়াশুনা করে। ইমাম মালিক সরাসরি ৬০০ তাবেঈনের কাছ থেকে হাদিস ও ফিকহ শিখেছেন, আর এই ৬০০ তাবেঈন শিখেছেন সরাসরি সাহাবীদের কাছ থেকে, মদীনায় তখন ১০ হাজার সাহাবী ছিল।  ইমাম মালিক হাদিস শিখেছেন ঐ যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস হিশাম ইবনে ‘উরওয়া, ইবনে শিহাব আল-যুহরীর মতো বাঘা মুহাদ্দিসদের কাছ থেকে। আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে আহকাম (হালাল-হারাম) সংক্রান্ত হাদিসের সংখ্যা কিন্তু খুব বেশী নয়। কাজেই, ইমাম মালিক কোনো বিষয়ের আহকাম সংক্রান্ত সহীহ হাদিসগুলো জানতেন না এই সম্ভাবনা খুবই কম।<br /><br />তৃতীয়ত: যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেই যে ইমাম মালিক ১০%-১৫% সহীহ হাদিস জানতেন না, তবুও আপনি বলতে পারবেন না যে, মালিকি মাজহাব সহীহ হাদিস এর উপর আমল করে না। এর কারণ হলো, আমরা আগেই বলেছি “মাজহাব” বলতে বুঝায় “উসুল” বা Set of Principles, মাজহাব বলতে কোনো নির্দিষ্ট শারঈ’ বিধানকে বুঝায় না। ইমাম মালিকের মৃত্যুর পর থেকে যখনই নতুন কোনো হাদিস পাওয়া গেছে তখনই মালিকি মাজহাবের আলেমরা সেই নতুন হাদিসের আলোকে তাঁদের বিধানে পরিবর্তন এনেছেন, কিন্তু ইমাম মালিকের দেয়া “উসুল” অনুসরণ করেছেন। একই ব্যাপার অন্য মাজহাবগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যেমন – ইমাম আবু হানিফার ছাত্র শাইবানী (মৃত্যু ১৮৯ হিজরী) বহু ক্ষেত্রে নতুন হাদিসের আলোকে ইমাম আবু হানিফার মতের বিরোধী মতামত দিয়েছেন। কিন্তু, তারপরেও ইমাম শাইবানী হানাফী মাজহাবের অনুসারী, কারণ তিনি ইমাম আবু হানিফার “উসুল” অনুসরণ করেছেন। গত ১১০০ বছর ধরে বিভিন্ন মাজহাবের আলেমরা এভাবে করেই নতুন পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে তাঁদের মতামতে পরিবর্তন এনেছেন।<br /><br />উল্লেখ্য যে, হানাফী মাজহাবের উসুল অনেক অংশেই নেয়া হয়েছে কুফার সাহাবাদের কাছ থেকে [২৮]। আলী(রা) তাঁর খিলাফত মদীনা থেকে কুফায় সরিয়ে নেয়ার পর, বহু সংখ্যক সাহাবী কুফায় চলে আসেন। আলী (রা) সাহাবীদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফকিহ আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদকে কুফার কাজী নিযুক্ত করেন। আর কুফার সাহাবীদের উসুলই হানাফী মাজহাবের উসুল।<br /><br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><br /><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhn00-YVcRUeR5fm3KBRnVHaS_q6sykW9cWvIGDxwUAijZEZghKF-1NDpfKd5HIGZBq7a3VcgrCa7ObtwajaV2hafCuJ6GV_sA_cgDj0oyiAOryZDSPTtexS9eRXXBhhfRiMcLjEOg2fQdl/s1600/download+%25282%2529.png" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="168" data-original-width="300" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhn00-YVcRUeR5fm3KBRnVHaS_q6sykW9cWvIGDxwUAijZEZghKF-1NDpfKd5HIGZBq7a3VcgrCa7ObtwajaV2hafCuJ6GV_sA_cgDj0oyiAOryZDSPTtexS9eRXXBhhfRiMcLjEOg2fQdl/s1600-rw/download+%25282%2529.png" /></a></div><br /><br /><br />সালাফী যুক্তি ৩: মাজহাবগুলি তাদের ইমামের মতামত এর বিপরীতে সহীহ হাদিস পাওয়া যাওয়ার পরেও সহীহ হাদিসের অনুসরণ না করে তাদের ইমামের মতামতকে অনুসরণ করে। কিন্তু, সকল মাজহাবের ইমামই কি বলেননি “সহীহ হাদিসই আমার মাজহাব”?<br /><br />উত্তর: প্রত্যেক ইমামই যথাসাধ্য সহীহ হাদিস অনুসরণ করেছেন এবং সেই মাজহাবের আলেমরাও সবসময় সহীহ হাদিসের ভিত্তিতেই বিধান দিয়েছেন। কিন্তু, আমাদের মনে রাখতে হবে যে সহীহ হাদিসকে সেভাবেই বুঝতে হবে যেভাবে সাহাবারা বুঝেছিলেন (৪ নং পয়েন্ট)। এমন বহু সহীহ হাদিস আছে যেগুলো অন্য সহীহ হাদিস বা কুরআনের আয়াত দ্বারা অবলুপ্ত (Abrogate) হয়ে গেছে, আবার এমনও সহীহ হাদিস আছে যেগুলো ১০০% সত্য হওয়ার পরেও সাহাবারা সেগুলির উপর আমল করতেন না, কেন করতেন না সেটা আমাদের অনেক ক্ষেত্রে জানা আছে, অনেক ক্ষেত্রে জানা নেই।<br /><br />আসুন মালিকি মাজহাব থেকে একটা উদাহরণ দেখা যাক। ইমাম মালিক তার মুওয়াত্তায় নামাজে দাড়িয়ে হাত বুকে রাখতে হবে এই সংক্রান্ত হাদিস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু, ইমাম মালিকই তাঁর মাজহাবে হাত ছেড়ে নামাজ পড়তে বলেছেন। কেন? কারণ, ঐ যে – “হাদিস বুঝতে হবে যেভাবে সাহাবারা তা বুঝেছিলেন”। ইমাম মালিক মদীনায় সংখ্যাগরিষ্ঠ তাবেঈ’নদের হাত ছেড়ে নামাজ পড়তে দেখেছেন, তাবেঈনরা এটা দেখেছেন মদীনার সাহাবাদের কাছ থেকে। ইমাম মালিকের এই মতের পক্ষের হাদিসও কিন্তু বুখারী শরীফেই আছে [২৩,২৪,২৫]। বর্ণিত হাদিসটিতে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) একজন সাহাবীকে শিখিয়েছেন কিভাবে নামাজ পড়তে হবে, কিন্তু তিনি তাকে হাত বাঁধার কথা বলেননি।  মালিকি মাজহাবের মতে, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কখনো কখনো হাত বেঁধে নামাজ পড়েছেন এটা দেখানোর জন্য যে, ইচ্ছা করলে এভাবেও নামাজ পড়া যায়। উল্লেখ্য, অনেকে বলে থাকে যে, ইমাম মালিক মৃত্যুর আগের শেষ কয়দিন “হাতে ব্যথা থাকার কারণে” হাত না বেঁধে নামাজ পড়তেন – এই কথার কোনও ভিত্তি নেই [৪]।<br /><br />আবার অনেক ক্ষেত্রে এমনও হয়েছে যে, অনেক সুন্নাহ/হাদিস আছে যা সালাফদের জানা ছিল, কিন্তু সেই সুন্নাহটি সহীহ হাদিস আকারে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে নাই। কারণ, ইমাম বুখারী (মৃত্যু ২৫৬ হিজরী) বা ইমাম মুসলিম (মৃত্যু ২৬১ হিজরী) যেহেতু মাজহাবের ইমামদের প্রায় ৫০/৬০ বছর পর হাদিস সংগ্রহ শুরু করেছেন, এমন হতেই পারে – যে হাদিসটি ইমাম মালিক বা ইমাম আবু হানিফার কাছে সহীহ ছিল, তা বুখারী-মুসলিমের যুগে আসতে আসতে যইফ (দুর্বল) হয়ে গেছে। কিন্তু, মাজহাবের ইমামরা সেই সুন্নাহ সম্পর্কে সহীহ সনদে অবগত ছিলেন এবং সেই অনুসারে তাদের মাস’আলা দিয়েছেন।<br /><br />“হাদিসের এ সকল গ্রন্থ সংকলিত হওয়ার পূর্বে যে সব ইমাম অতিক্রান্ত হয়ে গেছেন তাঁরা পরবর্তীদের চেয়ে অনেক বেশী হাদিসের জ্ঞান রাখতেন। কারণ, তাঁদের নিকটে এমন বহু হাদিস ছিল যা আমাদের পর্যন্ত মাজহুল (অজ্ঞাত) বা মুনকাতি’ (বিচ্ছিন) সনদে পৌঁছেছে কিংবা আদৌ পৌঁছেনি”।  (রাফউল মালাম আনিল আয়িম্মাতিল আ’লাম – ইবনে তাইমিয়াহ – পৃষ্ঠা ১৮। [১৯]<br /><br />সালাফী যুক্তি ৪: সাহাবাদের তো কোনো মাজহাব ছিল না, আপনারা মাজহাব পেলেন কোত্থেকে?<br /><br />যুক্তি-খন্ডন: আমরা আগেই বলেছি কুরআন ও সুন্নাহ অনুসারে বিধান দেয়ার “উসুল” (Set of Principles) কেই মাজহাব বলে। সাহাবীরাও কিছু “উসুল” অনুসরণ করেই বিধান দিতেন। একথা সুবিদিত যে মদীনার সাহাবাদের “উসুল” (Set of Principles) , কুফার সাহাবাদের “উসুল” (Set of Principles)  থেকে আলাদা ছিল [৪,৭]।<br /><br />আর আপনি যদি সাহাবাদের পদ্ধতিই অনুসরণ করতে চান তাহলে আমি বলব সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে ইমাম মালিকের মাজহাব অনুসরণ করা। কারণ, ইমাম মালিকের জীবদ্দশায় এই মাজহাবের নাম কিন্তু মালিকি মাজহাব ছিল না, এর নাম ছিল “মাদানী মাজহাব”, কারণ মদীনার সাহাবী ও তাবেঈনরা এই “উসুল” অনুসরণ করতেন। ইমাম মালিক শুধু সেই “উসুল” কে একটা সিস্টেম এর মধ্যে এনে লিপিবদ্ধ করে একে মাজহাব এর রূপ দিয়েছেন।<br /><br />সালাফী যুক্তি ৫: সব মাজহাব যদি একই কুরআন আর সুন্নাহ এর অনুসরণ করে থাকে, তাহলে এদের বিধানগুলো এত আলাদা কেন?<br /><br />যুক্তি-খন্ডন: একই কুরআন – সুন্নাহ অনুসরণ করার পরেও বিধান আলাদা হয় আলাদা “উসুল” [৪,৬,১৯] এর কারণে। “উসুল” এর এই পার্থক্যের কিছু উদাহরণ দেখুন –<br /><br />ইমাম মালিক মুরসাল হাদিস (যে হাদিস সাহাবা নয় বরং তাবেঈ’ থেকে বর্ণিত হয়েছে) গ্রহণ করেছেন, আর ইমাম শাফেঈ’ শুধু নির্দিষ্ট কিছু তাবেঈ’র মুরসাল হাদিস নিয়েছেন।<br /><br />ইমাম মালিক মদীনার তাবেঈ’দের আমলকে সহীহ হাদিসের বিপরীতে প্রাধান্য দিয়েছেন। তাঁর যুক্তি হলো – যে মদীনার মাটিতে ১০ হাজার সাহাবা শুয়ে আছেন, সেই মদীনার সাহাবা ও তাবেঈ’দের আমল সহীহ হাদিসের চাইতেও শক্ত দলীল (আবার সেই ৪ নং পয়েন্ট)। কারণ, হাদিস বুঝার ক্ষেত্রে আমাদের চাইতে তাঁদের জ্ঞান নি:সন্দেহে বেশী ছিল।<br /><br />কিছু মুতাওয়াতির হাদিস (যে হাদিস তার সনদের প্রত্যেক স্তরে বহু মানুষ দ্বারা বর্ণিত হয়েছে) আছে যেগুলি কুরআনের আয়াতের সাথে আপাত: দৃষ্টিতে সাংঘর্ষিক (Apparently Conflicting)। এই ক্ষেত্রে কি কুরআনের আয়াত নেয়া হবে নাকি হাদিসকে নেয়া হবে – তা নিয়ে মাজহাবগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। একেক মাজহাব এক্ষেত্রে একেকটাকে প্রাধান্য দিয়েছে।<br /><br />যদি কোনও আহাদ হাদিস (যে হাদিসের সনদের  প্রতিটা স্তরে তিনজনের বেশী বর্ণনাকারী পাওয়া যায় না) কুরআনের কোনো প্রতিষ্ঠিত নীতির সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে হানাফী মাজহাব হাদিস সহীহ হওয়া সত্ত্বেও, সেটা না নিয়ে কিয়াস ব্যবহার করে। এটা একটা কারণ যার ফলে আমরা হানাফী মাজহাবে সহীহ হাদিস বিরোধী এত আহকাম (Islamic Ruling) দেখতে পাই।<br /><br />কোন্‌ হাদিসগুলো ‘আম (General), আর কোন্‌ হাদিসগুলো খাস (Specific/Exception) – এই বিষয়ে ইমামদের মতপার্থক্যের কারণেও ফিকহী পার্থক্য হয়।<br /><br />অন্যদিকে হাম্বালী ও সালাফীরা হাদিসকে আক্ষরিক ভাবে মেনে চলেন, ফলে আমরা হাদিসের কিতাবগুলিতে যে হাদিসগুলি পাই, সেগুলোর সাথে এই মাজহাবগুলোর সরাসরি মিল সবচেয়ে বেশী।<br /><br />আবু-বকর(রা) ও উমার(রা) এর মতপার্থক্য [২৯]: “উসুল” এর এই ধরনের পার্থক্য সাহাবাদের সময় থেকেই ছিল, আর তাবেঈনদের মধ্যে তো ছিলই। দুইজন সম্পূর্ন ভিন্ন বিধান এর অনুসারী হয়েও দুইজনেই সঠিক হতে পারে, যদি তাদের নিয়ত হয় আল্লাহর ﷻ হুকুমকে মনে চলা। শ্রেষ্ঠ দুই সাহাবী আবু বকর(রা) ও উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) অসংখ্য বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করতেন, তারপরেও তারা দুইজনেই রাসূলুল্লাহ(ﷺ)-কে নিঁখুতভাবে অনুসরণ করেছেন [২৭]। যেমন – আবু বকর(রা) এর খিলাফতকালে সাহাবীদের যে ভাতা দেয়া হতো, তা সকল সাহাবার জন্য সমান অংকের ছিল। আবু বকর(রা) এর যুক্তি ছিল – মহান আল্লাহ ﷻ কুরআনে বলেছেন যে তিনি সকল সাহাবার উপরই সন্তুষ্ট (http://quran.com/9/100) , তাই তাঁরা সবাই সমান ভাতা পাবেন।<br /><br />অন্যদিকে, উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) খলীফা হওয়ার পরেই এই নিয়মের পরিবর্তন করলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, যারা ইসলাম প্রচারের প্রথম দিকে তা গ্রহন করেছে, তারা যে কষ্ট সহ্য করেছে সেই তুলনায় যারা পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে তারা অনেক কম কষ্ট সহ্য করেছে, ফলে তাদের মর্যাদাও কম। কে কত আগে ইসলাম গ্রহণ করেছে এর ভিত্তিতে তিনি ভাতার স্কেল নির্ধারণ করেন। এখানে আবু বকর(রা) ও উমার(রা) এর মতামত সম্পুর্ণ বিপরীত – কিন্তু তাঁরা দুইজনেরই নিয়ত ছিল রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কে  নিঁখুতভাবে অনুসরণ করা। সাহাবাদের জীবন ঘাঁটলে এরকম অগুনতি পরষ্পর-বিরোধী মতামত পাওয়া যায় [২৭]। কিন্তু, যেহেতু তাঁদের প্রত্যেকেরই নিয়ত শুদ্ধ ছিল, কাজেই যিনি যে বিধান অনুসরণ করেছেন, তাঁর জন্য সেটাই শুদ্ধ ছিল।<br /><br />সালাফী যুক্তি ৬: শাফেঈ’ মাজহাব বলে অজু করে স্ত্রীকে স্পর্শ করলে অজু থাকে না, হানাফী মাজহাব বলে অজু থাকে। কিন্তু, দুইটা তো একই সাথে সঠিক হতে পারে না। তার চাইতে যে মতামতটা অধিকতর সঠিক সেটা অনুসরণ করাই কি উচিত না?<br /><br />যুক্তি-খন্ডন: প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেক মাজহাব তাদের “উসুল” (Set of Principles) অনুসারে যেটা সবচেয়ে সঠিক সেটাই বেছে নিয়েছে। “স্ত্রীকে স্পর্শ করলেও অজু থাকে” – হানাফী মাজহাবে এটাই সঠিক। কারণ, আবু দাউদের সহীহ হাদিসে আছে – রাসূলুল্লাহ(ﷺ) অজু করার পর আয়েশা(রা) কে স্পর্শ করা সত্ত্বেও আবার অজু না করেই নামাজ পড়েছেন। অন্যদিকে, শাফেঈ’ মাজহাব এর মতে  “স্ত্রীকে স্পর্শ করলে অজু থাকে না ” –  এটাই সঠিক (এই বিষয়ে শাফেঈ মাজহাবের বিস্তারিত প্রমাণের জন্য এই লেখাটি পড়ুন)। কারণ, তাদের মতে সূরা মায়িদার ৬ নং আয়াতে আল্লাহ ﷻ বলেছেন – “স্ত্রীকে স্পর্শ করলে অজু থাকবে না” এবং এই আয়াতটি আবু দাউদের হাদিসের উপর প্রাধান্য পাবে, ফলে আবু দাউদের হাদিসের বিধানটি অবলুপ্ত (Abrogate) হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। কাজেই, আপনি যদি বলে থাকেন ইমাম আবু হানিফা এর মতামত এক্ষেত্রে ইমাম শাফেঈ’র মতামতের চেয়ে বেশী সঠিক, তাহলে আপনি আসলে বলছেন যে সেটা আপনার “উসুল” অনুসারে বেশী সঠিক।<br /><br />সালাফী যুক্তি ৭: আব্বাসীয় শাসন আমলে এরকম ফতোয়া ছিল যে, হানাফীরা শাফেঈদের বিয়ে করতে পারবে না। শুধু তাই না, দামেস্ক ও মক্কায় চার মাজহাবের জন্য চারটি পৃথক মিহরাব ছিল এবং তারা ভিন্ন ভিন্ন জামাতে নামাজ পড়ত। কাজেই, এভাবে করে মাজহাব কি মুসলিম উম্মাহ এর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে নাই?<br /><br />উত্তর: মাজহাব নিয়ে এ ধরনের বাড়াবাড়ি অতীতে হয়েছে একথা সত্য এবং মাজহাবের নামে মুসলিম উম্মাহর এইরকম বিভক্তি মোটেও কাম্য নয় [৪]। কিন্তু, আপনি যখন জানবেন কেন এরকম করা হয়েছিল, তখন পুরো বিষয়টাকে ভিন্ন দৃষ্টিভংগীতে দেখতে পারবেন।<br /><br />হানাফী আর শাফেঈ’রা একে অপরকে বিয়ে করতে পারবে না —এই ফতোয়া এই জন্য দেয়া হয়েছিল যে, দুইটি ভিন্ন মাজহাবের বিয়ে সংক্রান্ত বিধি-বিধানগুলো ভিন্ন হওয়ায়, একজন মুফতীর পক্ষে কিছু কিছু ব্যাপারে মতামত (Islamic Ruling) দেয়া কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যেমন – এক মাজহাব মনে করে ডিভোর্সের জন্য একবার তালাক বলতে হবে, আর আরেক মাজহাব মনে করে ডিভোর্সের জন্য তিনবার তালাক বলতে হবে।  স্বামী-স্ত্রী দুইজন যদি দুই ভিন্ন মাজহাবের মানুষ হয়, তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায় যে, কোন্ মাজহাব অনুসারে তাদের মামলা পরিচালনা করা হবে? এই ধরনের ঝামেলা এড়ানোর জন্য তখনকার মুফতিরা “এক মাজহাবের মানুষ অন্য মাজহাবের মানুষকে বিয়ে করতে পারবে না” – জাতীয় উদ্ভট ফতোয়া দিয়েছিল, যেটা ছিল সম্পূর্ণ ভুল। তাদের উচিত ছিল কিভাবে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বজায় রাখা যায় তা নিয়ে চিন্তা করা [৪]।<br /><br />মক্কায় আর দামেস্কে চার মাজহাবের জন্য চার মিহরাব স্থাপন হলো মাজহাব-সন্ত্রাসের এক চরম উদাহরণ, যা অস্বীকার করার উপায় নাই [৪]। কিন্তু এর দোষ আপনি মাজহাবকে দিতে পারেন না, এর জন্য দোষ দিতে হবে মানুষের চরমপন্থী চিন্তাভাবনাকে। চরমপন্থী চিন্তা-ভাবনা সব সময়ই খারাপ, তা সে মাজহাব নিয়েই হোক, সালাফীবাদ নিয়েই হোক আর নাস্তিকতা নিয়েই হোক। মাজহাবী চরমপন্থার যে উদাহরণ আপনি দিচ্ছেন, সেই একইরকম উদাহরণ নাস্তিকেরা ব্যবহার করে এটা প্রমাণ করার জন্য যে “ধর্ম খারাপ”। কারণ, ধর্মের কারণে আগের শতাব্দীগুলোতে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেছে। কিন্তু, ভেবে দেখুন আগের শতাব্দীর সেই গণহত্যাগুলোর জন্য কি ধর্ম দায়ী নাকি মানুষের চরমপন্থী চিন্তা-ভাবনা আর অন্য মতের প্রতি অসহিষ্ণুতা দায়ী?<br /><br />সালাফী যুক্তি ৮: রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন সেভাবে নামাজ পড় যেভাবে আমাকে নামাজ পড়তে দেখ, তারপরেও মাজহাবীরা সহীহ হাদিসের বিপরীতে নামাজ পড়ে  কেন?<br /><br />উত্তর: লক্ষ্য করুন – রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন – “সেভাবে নামাজ পড়ো যেভাবে আমাকে নামাজ পড়তে দেখ” (বুখারী)। মাজহাবীদের মতে – রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর মতো করে নামাজ পড়ার দাবী যতটা ইমাম মালিক, ইমাম আবু হানিফা করতে পারেন, শাইখুল হাদিস আলবানী ততটুকু করতে পারেন না [৪]। কারণ, ইমাম আবু হানিফা নামাজের মাস’আলা নিয়েছেন মূলত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ এর ছাত্রদের থেকে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ মক্কার প্রথম ১০ জন ইসলাম গ্রহনকারীদের একজন যিনি দীর্ঘ ২০ বছর রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ পড়েছেন। সাহাবারা রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কে নামাজ পড়তে “দেখেছেন”, আবার তাবেঈ’রা সাহাবাদের নামাজ পড়তে “দেখেছেন”। আপনাকে স্বীকার করতে হবে – কোন কিছু “পড়ে শেখার” চেয়ে উস্তাদের কাছ থেকে সরাসরি “দেখে শিখলে” ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।<br /><br />অন্যদিকে, ইমাম মালিক তাঁর নামাজের মাস’আলাগুলো নিয়েছেন [৪] প্রধানত: আব্দুল্লাহ ইবনে ‘উমার(রা) এর ছাত্র ও মুক্তিকৃত দাস নাফি’ (মৃত্যু ১১৭ হিজরী) থেকে, আর নাফি’ নিয়েছেন আব্দুল্লাহ ইবনে ‘উমার(রা) থেকে, যিনি সব সাহাবীদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কে সবচেয়ে অনুকরণ বেশী করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার(রা) সেই ধরনের জুতা পড়তেন যা রাসূলুল্লাহ(ﷺ) পড়তেন, ঠিক একই কাপড় পড়তেন যা রাসূলুল্লাহ(ﷺ) পড়তেন। তাহলে এটা কিভাবে সম্ভব যে উনি নামাজ পড়তেন যেভাবে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) পড়তেন না? ইমাম বুখারী নিজে “ইমাম মালিক -> নাফি’ -> আব্দুল্লাহ ইবনে উমার -> রাসূলুল্লাহ(ﷺ)” এর সনদ কে “স্বর্ণালী সনদ” (সিলসিলাতুল যাহাব / The Golden Chain of Narrators) বলে আখ্যায়িত করেছেন।     এখন আপনিই বলেন – রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কিভাবে নামাজ পড়েছেন, সেই নামাজ কি ইমাম মালিক বেশী বলতে পারবেন, না ১৪০০ বছর পরের কোনও আলেম সঠিকভাবে বলতে পারবে?<br /><br />আমাদের মনে রাখতে হবে, কিছু কিছু সুন্নাহ আছে যেগুলো লিখিত আকারে সংরক্ষিত হয়নি। সাহাবারা, তাবেঈ’রা  অনেক সুন্নাহই সংরক্ষণ করেছেন তাদের কাজের (Practise) মাধ্যমে। আর মাজহাবের ইমামরা অনেক ক্ষেত্রেই সহীহ হাদিসকে বাদ দিয়ে সালাফদের কাজকে (Practise) প্রাধান্য দিয়েছেন। এর কারণ হলো সেই ৪ নং পয়েন্ট – “হাদিস বুঝতে হবে যেভাবে সাহাবারা বুঝেছিলেন”। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় – মালিকি মাজহাবে “রাফ’উল ইয়াদাইন” করা হয় না। যদিও ইমাম মালিক রাফ’উল ইয়াদাইনের হাদিস সম্পর্কে জানতেন। ইমাম মালিকের মতামত হচ্ছে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) মাঝে মধ্যে রাফ’উল ইয়াদাইন করে দেখিয়েছেন যে, নামাজের যে কোনো আল্লাহু আকবারের সাথে চাইলে হাত তোলা যায়, এটা মাকরুহ নয়। এই মতামতের পিছনে যুক্তি কি? এর যুক্তি হলো – রাফ’উল ইয়াদাইনের হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবা আব্দুল্লাহ ইবনে উমার(রা) নিজেই নামাজে রাফ’উল ইয়াদাইন করতেন না, কাজেই এর থেকে বুঝা যায় রাসূলুল্লাহ(ﷺ)ও সাধারণত রাফ’উল ইয়াদাইন করতেন না। তাই, ইমাম মালিক রাফ’উল ইয়াদাইনের হাদিস জানা সত্ত্বেও তার পক্ষে মত দেননি।<br /><br />আরেকটা ব্যাপার লক্ষ্যনীয় যে – রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কিন্তু বলেছেন – “সেভাবে নামাজ পড়ো যেভাবে আমাকে পড়তে দেখ” (বুখারী), তিনি বলেননি – “সেভাবে নামাজ পড়ো যেভাবে আমাকে নিয়ে লেখা হয়েছে”।  উপরে বর্ণিত কারণে – এই “দেখার” ব্যাপারটা কেউ যদি দাবী করতে পারে তবে সেটা ইমাম মালিক, ইমাম আবু হানিফারা যতটুকু করতে পারেন, ১৪০০ বছর পরের কেউ ততটুকু করতে পারবে না।<br /><br /><br /><br /><br /></div><br />

মাযহাবের বিরুদ্ধে যুক্তি ও তার খন্ডন

লেখার এই অংশে আমরা সালাফীদের বিভিন্ন যুক্তি [১,২,৩] সম্পর্কে জানবো – কেন তাঁরা মনে করেন মাজহাব বাদ দিয়ে কুরআন আর সহীহ হাদিসের অনুসরণ করতে হব...

Read more »

মাযহাবের বিরুদ্ধে যুক্তি ও তার খন্ডন

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">লেখার এই অংশে আমরা সালাফীদের বিভিন্ন যুক্তি [১,২,৩] সম্পর্কে জানবো – কেন তাঁরা মনে করেন মাজহাব বাদ দিয়ে কুরআন আর সহীহ হাদিসের অনুসরণ করতে হবে? একই সাথে আমি সালাফীদের যুক্তিগুলোকে খন্ডন করারও চেষ্টা করব। যুক্তি-খন্ডন করতে যেয়ে আমি বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মালিকি মাজহাবের উসুল (“Set of Principles”) কে উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করব। কারণ, যুক্তি-খন্ডনের কথাগুলো আমি মূলত: শেইখ হামযা ইউসুফের লেকচার [৪] থেকে নিয়েছি যিনি একজন মালিকি ইমাম।<br />সালাফী যুক্তি ১: সকল বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে আমাদের কুরআন ও সহীহ হাদিস মানতে হবে। কিন্তু, প্রচলিত মাজহাবগুলোতে আমরা এমন অনেক বিধান দেখি, যেগুলো সহীহ হাদিস বিরোধী। কাজেই মাজহাবের অনুসরণ করা যাবে না।<br />যুক্তি-খন্ডন: এ কথা অনস্বীকার্য যে আমাদের সব ব্যাপারে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ মানতে হবে। কিন্তু এমন অনেক সুন্নাহ আছে, যা হাদিস আকারে লিপিবদ্ধ হয়নি কিন্তু মদীনার সাহাবাদের মধ্যে সেই সুন্নাহগুলোর প্রচলন ছিল। ইমাম মালিক এই ক্ষেত্রে সহীহ হাদিসের বিপরীতে সাহাবাদের আমলকে প্রাধান্য দিয়েছেন।  যেমন – শুক্রবারে নফল রোযা রাখা যাবে না, এটা সহীহ হাদিস। কিন্তু, ইমাম মালিক মদীনায় তাবেঈ’নদের মধ্যে শুক্রবারে নফল রোযা রাখার প্রচলন দেখেছেন। এই তাবেঈ’নরা সরাসরি সাহাবাদের থেকেই এই আমল শিখেছেন। ইমাম মালিকের মতে, হয়তো পরবর্তীতে “শুক্রবারে নফল রোজা রাখা যাবে না” হাদিসের বিপরীতে “শুক্রবারে নফল রোজা রাখা উচিত” এর হুকুম রাসূলুল্লাহ(সা) দিয়েছিলেন, ফলে আগের হুকুমটি বাতিল (Abrogate) হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু ঐ হুকুমটি হাদিস আকারে আমাদের কাছে পৌঁছায়নি, পৌঁছেছে সাহাবাদের আমলের (Practise) মাধ্যমে।  কাজেই, মালিকি মাজহাব অনুসারে শুক্রবারে নফল রোযা রাখা সুন্নাত, যদিও এর বিপরীতে সহিহ হাদিস আছে [৪]! সুতরাং,  চতুর্থ পয়েন্টের  “কুরআন ও হাদিসকে সেভাবে বুঝতে হবে যেভাবে সাহাবী ও সালাফরা বুঝেছিলেন” – মাজহাবীরা মনে করে এই মূলনীতি সালাফীরা যতটা অনুসরণ করে, তারা তার চেয়েও বেশী অনুসরন করে।<br />সালাফী যুক্তি ২: মাজহাবগুলো যখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তখন ইমাম বুখারী (মৃত্যু ২৫৬ হিজরী) ও ইমাম মুসলিমের (মৃত্যু ২৬১ হিজরী) মতো সহীহ হাদিস গ্রন্থগুলো লেখা হয়নি। ফলে, মাজহাবের ইমামরা অনেক সহীহ হাদিস সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। অথবা, কোনো হাদিসকে উনারা হয়তো দুর্বল বলে বাদ দিয়েছিলেন, কিন্তু ঐ হাদিসটি অন্য কোনো সনদে সহীহ ছিল, যা জানা গিয়েছিলো পরবর্তী সময়ে। এই কারণে মাজহাবগুলোতে এমন অনেক মতামত দেখা যায়, যা সহীহ হাদিস বিরোধী।<br />যুক্তি-খন্ডন: এই যুক্তিটা বিভিন্ন কারণে [৪] দুর্বল। যেমন –<br />প্রথমত:  হাদিস সংকলন শুরু হয়েছিলো রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জীবিতকালেই। একথা সুপ্রসিদ্ধ যে, আবু হুরাইরা(রা), ইবনে আব্বাস(রা), আমর ইবনুল আস(রা) সহ প্রচুর সাহাবী লিখিত আকারে হাদিস সংরক্ষণ করেছিলেন [১৫]। এই সব কিতাবের হাদিসগুলি পরবর্তী যুগের হাদিসগ্রন্থগুলোর (যেমন – বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী ইত্যাদি) মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়েছে। তাই, মদীনার সাহাবারা-তাবেঈনরা বুখারী-মুসলিমের হাদিসগুলো জানতেন না, এ কথা অমূলক।<br />দ্বিতীয়ত: বেশীরভাগ হাদিসের উৎস মূলত মদীনা শহর, আর ইমাম মালিক তাঁর সারাটা জীবন মদীনায় কাটিয়েছেন তাবেঈনদের কাছে পড়াশুনা করে। ইমাম মালিক সরাসরি ৬০০ তাবেঈনের কাছ থেকে হাদিস ও ফিকহ শিখেছেন, আর এই ৬০০ তাবেঈন শিখেছেন সরাসরি সাহাবীদের কাছ থেকে, মদীনায় তখন ১০ হাজার সাহাবী ছিল।  ইমাম মালিক হাদিস শিখেছেন ঐ যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস হিশাম ইবনে ‘উরওয়া, ইবনে শিহাব আল-যুহরীর মতো বাঘা মুহাদ্দিসদের কাছ থেকে। আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে আহকাম (হালাল-হারাম) সংক্রান্ত হাদিসের সংখ্যা কিন্তু খুব বেশী নয়। কাজেই, ইমাম মালিক কোনো বিষয়ের আহকাম সংক্রান্ত সহীহ হাদিসগুলো জানতেন না এই সম্ভাবনা খুবই কম।<br />তৃতীয়ত: যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেই যে ইমাম মালিক ১০%-১৫% সহীহ হাদিস জানতেন না, তবুও আপনি বলতে পারবেন না যে, মালিকি মাজহাব সহীহ হাদিস এর উপর আমল করে না। এর কারণ হলো, আমরা আগেই বলেছি “মাজহাব” বলতে বুঝায় “উসুল” বা Set of Principles, মাজহাব বলতে কোনো নির্দিষ্ট শারঈ’ বিধানকে বুঝায় না। ইমাম মালিকের মৃত্যুর পর থেকে যখনই নতুন কোনো হাদিস পাওয়া গেছে তখনই মালিকি মাজহাবের আলেমরা সেই নতুন হাদিসের আলোকে তাঁদের বিধানে পরিবর্তন এনেছেন, কিন্তু ইমাম মালিকের দেয়া “উসুল” অনুসরণ করেছেন। একই ব্যাপার অন্য মাজহাবগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যেমন – ইমাম আবু হানিফার ছাত্র শাইবানী (মৃত্যু ১৮৯ হিজরী) বহু ক্ষেত্রে নতুন হাদিসের আলোকে ইমাম আবু হানিফার মতের বিরোধী মতামত দিয়েছেন। কিন্তু, তারপরেও ইমাম শাইবানী হানাফী মাজহাবের অনুসারী, কারণ তিনি ইমাম আবু হানিফার “উসুল” অনুসরণ করেছেন। গত ১১০০ বছর ধরে বিভিন্ন মাজহাবের আলেমরা এভাবে করেই নতুন পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে তাঁদের মতামতে পরিবর্তন এনেছেন।<br />উল্লেখ্য যে, হানাফী মাজহাবের উসুল অনেক অংশেই নেয়া হয়েছে কুফার সাহাবাদের কাছ থেকে [২৮]। আলী(রা) তাঁর খিলাফত মদীনা থেকে কুফায় সরিয়ে নেয়ার পর, বহু সংখ্যক সাহাবী কুফায় চলে আসেন। আলী (রা) সাহাবীদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফকিহ আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদকে কুফার কাজী নিযুক্ত করেন। আর কুফার সাহাবীদের উসুলই হানাফী মাজহাবের উসুল।<br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhn00-YVcRUeR5fm3KBRnVHaS_q6sykW9cWvIGDxwUAijZEZghKF-1NDpfKd5HIGZBq7a3VcgrCa7ObtwajaV2hafCuJ6GV_sA_cgDj0oyiAOryZDSPTtexS9eRXXBhhfRiMcLjEOg2fQdl/s1600/download+%25282%2529.png" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="168" data-original-width="300" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhn00-YVcRUeR5fm3KBRnVHaS_q6sykW9cWvIGDxwUAijZEZghKF-1NDpfKd5HIGZBq7a3VcgrCa7ObtwajaV2hafCuJ6GV_sA_cgDj0oyiAOryZDSPTtexS9eRXXBhhfRiMcLjEOg2fQdl/s1600-rw/download+%25282%2529.png" /></a></div><br />সালাফী যুক্তি ৩: মাজহাবগুলি তাদের ইমামের মতামত এর বিপরীতে সহীহ হাদিস পাওয়া যাওয়ার পরেও সহীহ হাদিসের অনুসরণ না করে তাদের ইমামের মতামতকে অনুসরণ করে। কিন্তু, সকল মাজহাবের ইমামই কি বলেননি “সহীহ হাদিসই আমার মাজহাব”?<br />উত্তর: প্রত্যেক ইমামই যথাসাধ্য সহীহ হাদিস অনুসরণ করেছেন এবং সেই মাজহাবের আলেমরাও সবসময় সহীহ হাদিসের ভিত্তিতেই বিধান দিয়েছেন। কিন্তু, আমাদের মনে রাখতে হবে যে সহীহ হাদিসকে সেভাবেই বুঝতে হবে যেভাবে সাহাবারা বুঝেছিলেন (৪ নং পয়েন্ট)। এমন বহু সহীহ হাদিস আছে যেগুলো অন্য সহীহ হাদিস বা কুরআনের আয়াত দ্বারা অবলুপ্ত (Abrogate) হয়ে গেছে, আবার এমনও সহীহ হাদিস আছে যেগুলো ১০০% সত্য হওয়ার পরেও সাহাবারা সেগুলির উপর আমল করতেন না, কেন করতেন না সেটা আমাদের অনেক ক্ষেত্রে জানা আছে, অনেক ক্ষেত্রে জানা নেই।<br />আসুন মালিকি মাজহাব থেকে একটা উদাহরণ দেখা যাক। ইমাম মালিক তার মুওয়াত্তায় নামাজে দাড়িয়ে হাত বুকে রাখতে হবে এই সংক্রান্ত হাদিস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু, ইমাম মালিকই তাঁর মাজহাবে হাত ছেড়ে নামাজ পড়তে বলেছেন। কেন? কারণ, ঐ যে – “হাদিস বুঝতে হবে যেভাবে সাহাবারা তা বুঝেছিলেন”। ইমাম মালিক মদীনায় সংখ্যাগরিষ্ঠ তাবেঈ’নদের হাত ছেড়ে নামাজ পড়তে দেখেছেন, তাবেঈনরা এটা দেখেছেন মদীনার সাহাবাদের কাছ থেকে। ইমাম মালিকের এই মতের পক্ষের হাদিসও কিন্তু বুখারী শরীফেই আছে [২৩,২৪,২৫]। বর্ণিত হাদিসটিতে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) একজন সাহাবীকে শিখিয়েছেন কিভাবে নামাজ পড়তে হবে, কিন্তু তিনি তাকে হাত বাঁধার কথা বলেননি।  মালিকি মাজহাবের মতে, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কখনো কখনো হাত বেঁধে নামাজ পড়েছেন এটা দেখানোর জন্য যে, ইচ্ছা করলে এভাবেও নামাজ পড়া যায়। উল্লেখ্য, অনেকে বলে থাকে যে, ইমাম মালিক মৃত্যুর আগের শেষ কয়দিন “হাতে ব্যথা থাকার কারণে” হাত না বেঁধে নামাজ পড়তেন – এই কথার কোনও ভিত্তি নেই [৪]।<br />আবার অনেক ক্ষেত্রে এমনও হয়েছে যে, অনেক সুন্নাহ/হাদিস আছে যা সালাফদের জানা ছিল, কিন্তু সেই সুন্নাহটি সহীহ হাদিস আকারে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে নাই। কারণ, ইমাম বুখারী (মৃত্যু ২৫৬ হিজরী) বা ইমাম মুসলিম (মৃত্যু ২৬১ হিজরী) যেহেতু মাজহাবের ইমামদের প্রায় ৫০/৬০ বছর পর হাদিস সংগ্রহ শুরু করেছেন, এমন হতেই পারে – যে হাদিসটি ইমাম মালিক বা ইমাম আবু হানিফার কাছে সহীহ ছিল, তা বুখারী-মুসলিমের যুগে আসতে আসতে যইফ (দুর্বল) হয়ে গেছে। কিন্তু, মাজহাবের ইমামরা সেই সুন্নাহ সম্পর্কে সহীহ সনদে অবগত ছিলেন এবং সেই অনুসারে তাদের মাস’আলা দিয়েছেন।<br />“হাদিসের এ সকল গ্রন্থ সংকলিত হওয়ার পূর্বে যে সব ইমাম অতিক্রান্ত হয়ে গেছেন তাঁরা পরবর্তীদের চেয়ে অনেক বেশী হাদিসের জ্ঞান রাখতেন। কারণ, তাঁদের নিকটে এমন বহু হাদিস ছিল যা আমাদের পর্যন্ত মাজহুল (অজ্ঞাত) বা মুনকাতি’ (বিচ্ছিন) সনদে পৌঁছেছে কিংবা আদৌ পৌঁছেনি”।  (রাফউল মালাম আনিল আয়িম্মাতিল আ’লাম – ইবনে তাইমিয়াহ – পৃষ্ঠা ১৮। [১৯]<br />সালাফী যুক্তি ৪: সাহাবাদের তো কোনো মাজহাব ছিল না, আপনারা মাজহাব পেলেন কোত্থেকে?<br />যুক্তি-খন্ডন: আমরা আগেই বলেছি কুরআন ও সুন্নাহ অনুসারে বিধান দেয়ার “উসুল” (Set of Principles) কেই মাজহাব বলে। সাহাবীরাও কিছু “উসুল” অনুসরণ করেই বিধান দিতেন। একথা সুবিদিত যে মদীনার সাহাবাদের “উসুল” (Set of Principles) , কুফার সাহাবাদের “উসুল” (Set of Principles)  থেকে আলাদা ছিল [৪,৭]।<br />আর আপনি যদি সাহাবাদের পদ্ধতিই অনুসরণ করতে চান তাহলে আমি বলব সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে ইমাম মালিকের মাজহাব অনুসরণ করা। কারণ, ইমাম মালিকের জীবদ্দশায় এই মাজহাবের নাম কিন্তু মালিকি মাজহাব ছিল না, এর নাম ছিল “মাদানী মাজহাব”, কারণ মদীনার সাহাবী ও তাবেঈনরা এই “উসুল” অনুসরণ করতেন। ইমাম মালিক শুধু সেই “উসুল” কে একটা সিস্টেম এর মধ্যে এনে লিপিবদ্ধ করে একে মাজহাব এর রূপ দিয়েছেন।<br />সালাফী যুক্তি ৫: সব মাজহাব যদি একই কুরআন আর সুন্নাহ এর অনুসরণ করে থাকে, তাহলে এদের বিধানগুলো এত আলাদা কেন?<br />যুক্তি-খন্ডন: একই কুরআন – সুন্নাহ অনুসরণ করার পরেও বিধান আলাদা হয় আলাদা “উসুল” [৪,৬,১৯] এর কারণে। “উসুল” এর এই পার্থক্যের কিছু উদাহরণ দেখুন –<br />ইমাম মালিক মুরসাল হাদিস (যে হাদিস সাহাবা নয় বরং তাবেঈ’ থেকে বর্ণিত হয়েছে) গ্রহণ করেছেন, আর ইমাম শাফেঈ’ শুধু নির্দিষ্ট কিছু তাবেঈ’র মুরসাল হাদিস নিয়েছেন।<br />ইমাম মালিক মদীনার তাবেঈ’দের আমলকে সহীহ হাদিসের বিপরীতে প্রাধান্য দিয়েছেন। তাঁর যুক্তি হলো – যে মদীনার মাটিতে ১০ হাজার সাহাবা শুয়ে আছেন, সেই মদীনার সাহাবা ও তাবেঈ’দের আমল সহীহ হাদিসের চাইতেও শক্ত দলীল (আবার সেই ৪ নং পয়েন্ট)। কারণ, হাদিস বুঝার ক্ষেত্রে আমাদের চাইতে তাঁদের জ্ঞান নি:সন্দেহে বেশী ছিল।<br />কিছু মুতাওয়াতির হাদিস (যে হাদিস তার সনদের প্রত্যেক স্তরে বহু মানুষ দ্বারা বর্ণিত হয়েছে) আছে যেগুলি কুরআনের আয়াতের সাথে আপাত: দৃষ্টিতে সাংঘর্ষিক (Apparently Conflicting)। এই ক্ষেত্রে কি কুরআনের আয়াত নেয়া হবে নাকি হাদিসকে নেয়া হবে – তা নিয়ে মাজহাবগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। একেক মাজহাব এক্ষেত্রে একেকটাকে প্রাধান্য দিয়েছে।<br />যদি কোনও আহাদ হাদিস (যে হাদিসের সনদের  প্রতিটা স্তরে তিনজনের বেশী বর্ণনাকারী পাওয়া যায় না) কুরআনের কোনো প্রতিষ্ঠিত নীতির সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে হানাফী মাজহাব হাদিস সহীহ হওয়া সত্ত্বেও, সেটা না নিয়ে কিয়াস ব্যবহার করে। এটা একটা কারণ যার ফলে আমরা হানাফী মাজহাবে সহীহ হাদিস বিরোধী এত আহকাম (Islamic Ruling) দেখতে পাই।<br />কোন্‌ হাদিসগুলো ‘আম (General), আর কোন্‌ হাদিসগুলো খাস (Specific/Exception) – এই বিষয়ে ইমামদের মতপার্থক্যের কারণেও ফিকহী পার্থক্য হয়।<br />অন্যদিকে হাম্বালী ও সালাফীরা হাদিসকে আক্ষরিক ভাবে মেনে চলেন, ফলে আমরা হাদিসের কিতাবগুলিতে যে হাদিসগুলি পাই, সেগুলোর সাথে এই মাজহাবগুলোর সরাসরি মিল সবচেয়ে বেশী।<br />আবু-বকর(রা) ও উমার(রা) এর মতপার্থক্য [২৯]: “উসুল” এর এই ধরনের পার্থক্য সাহাবাদের সময় থেকেই ছিল, আর তাবেঈনদের মধ্যে তো ছিলই। দুইজন সম্পূর্ন ভিন্ন বিধান এর অনুসারী হয়েও দুইজনেই সঠিক হতে পারে, যদি তাদের নিয়ত হয় আল্লাহর ﷻ হুকুমকে মনে চলা। শ্রেষ্ঠ দুই সাহাবী আবু বকর(রা) ও উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) অসংখ্য বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করতেন, তারপরেও তারা দুইজনেই রাসূলুল্লাহ(ﷺ)-কে নিঁখুতভাবে অনুসরণ করেছেন [২৭]। যেমন – আবু বকর(রা) এর খিলাফতকালে সাহাবীদের যে ভাতা দেয়া হতো, তা সকল সাহাবার জন্য সমান অংকের ছিল। আবু বকর(রা) এর যুক্তি ছিল – মহান আল্লাহ ﷻ কুরআনে বলেছেন যে তিনি সকল সাহাবার উপরই সন্তুষ্ট (http://quran.com/9/100) , তাই তাঁরা সবাই সমান ভাতা পাবেন।<br />অন্যদিকে, উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) খলীফা হওয়ার পরেই এই নিয়মের পরিবর্তন করলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, যারা ইসলাম প্রচারের প্রথম দিকে তা গ্রহন করেছে, তারা যে কষ্ট সহ্য করেছে সেই তুলনায় যারা পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে তারা অনেক কম কষ্ট সহ্য করেছে, ফলে তাদের মর্যাদাও কম। কে কত আগে ইসলাম গ্রহণ করেছে এর ভিত্তিতে তিনি ভাতার স্কেল নির্ধারণ করেন। এখানে আবু বকর(রা) ও উমার(রা) এর মতামত সম্পুর্ণ বিপরীত – কিন্তু তাঁরা দুইজনেরই নিয়ত ছিল রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কে  নিঁখুতভাবে অনুসরণ করা। সাহাবাদের জীবন ঘাঁটলে এরকম অগুনতি পরষ্পর-বিরোধী মতামত পাওয়া যায় [২৭]। কিন্তু, যেহেতু তাঁদের প্রত্যেকেরই নিয়ত শুদ্ধ ছিল, কাজেই যিনি যে বিধান অনুসরণ করেছেন, তাঁর জন্য সেটাই শুদ্ধ ছিল।<br />সালাফী যুক্তি ৬: শাফেঈ’ মাজহাব বলে অজু করে স্ত্রীকে স্পর্শ করলে অজু থাকে না, হানাফী মাজহাব বলে অজু থাকে। কিন্তু, দুইটা তো একই সাথে সঠিক হতে পারে না। তার চাইতে যে মতামতটা অধিকতর সঠিক সেটা অনুসরণ করাই কি উচিত না?<br />যুক্তি-খন্ডন: প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেক মাজহাব তাদের “উসুল” (Set of Principles) অনুসারে যেটা সবচেয়ে সঠিক সেটাই বেছে নিয়েছে। “স্ত্রীকে স্পর্শ করলেও অজু থাকে” – হানাফী মাজহাবে এটাই সঠিক। কারণ, আবু দাউদের সহীহ হাদিসে আছে – রাসূলুল্লাহ(ﷺ) অজু করার পর আয়েশা(রা) কে স্পর্শ করা সত্ত্বেও আবার অজু না করেই নামাজ পড়েছেন। অন্যদিকে, শাফেঈ’ মাজহাব এর মতে  “স্ত্রীকে স্পর্শ করলে অজু থাকে না ” –  এটাই সঠিক (এই বিষয়ে শাফেঈ মাজহাবের বিস্তারিত প্রমাণের জন্য এই লেখাটি পড়ুন)। কারণ, তাদের মতে সূরা মায়িদার ৬ নং আয়াতে আল্লাহ ﷻ বলেছেন – “স্ত্রীকে স্পর্শ করলে অজু থাকবে না” এবং এই আয়াতটি আবু দাউদের হাদিসের উপর প্রাধান্য পাবে, ফলে আবু দাউদের হাদিসের বিধানটি অবলুপ্ত (Abrogate) হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। কাজেই, আপনি যদি বলে থাকেন ইমাম আবু হানিফা এর মতামত এক্ষেত্রে ইমাম শাফেঈ’র মতামতের চেয়ে বেশী সঠিক, তাহলে আপনি আসলে বলছেন যে সেটা আপনার “উসুল” অনুসারে বেশী সঠিক।<br />সালাফী যুক্তি ৭: আব্বাসীয় শাসন আমলে এরকম ফতোয়া ছিল যে, হানাফীরা শাফেঈদের বিয়ে করতে পারবে না। শুধু তাই না, দামেস্ক ও মক্কায় চার মাজহাবের জন্য চারটি পৃথক মিহরাব ছিল এবং তারা ভিন্ন ভিন্ন জামাতে নামাজ পড়ত। কাজেই, এভাবে করে মাজহাব কি মুসলিম উম্মাহ এর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে নাই?<br />উত্তর: মাজহাব নিয়ে এ ধরনের বাড়াবাড়ি অতীতে হয়েছে একথা সত্য এবং মাজহাবের নামে মুসলিম উম্মাহর এইরকম বিভক্তি মোটেও কাম্য নয় [৪]। কিন্তু, আপনি যখন জানবেন কেন এরকম করা হয়েছিল, তখন পুরো বিষয়টাকে ভিন্ন দৃষ্টিভংগীতে দেখতে পারবেন।<br />হানাফী আর শাফেঈ’রা একে অপরকে বিয়ে করতে পারবে না —এই ফতোয়া এই জন্য দেয়া হয়েছিল যে, দুইটি ভিন্ন মাজহাবের বিয়ে সংক্রান্ত বিধি-বিধানগুলো ভিন্ন হওয়ায়, একজন মুফতীর পক্ষে কিছু কিছু ব্যাপারে মতামত (Islamic Ruling) দেয়া কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যেমন – এক মাজহাব মনে করে ডিভোর্সের জন্য একবার তালাক বলতে হবে, আর আরেক মাজহাব মনে করে ডিভোর্সের জন্য তিনবার তালাক বলতে হবে।  স্বামী-স্ত্রী দুইজন যদি দুই ভিন্ন মাজহাবের মানুষ হয়, তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায় যে, কোন্ মাজহাব অনুসারে তাদের মামলা পরিচালনা করা হবে? এই ধরনের ঝামেলা এড়ানোর জন্য তখনকার মুফতিরা “এক মাজহাবের মানুষ অন্য মাজহাবের মানুষকে বিয়ে করতে পারবে না” – জাতীয় উদ্ভট ফতোয়া দিয়েছিল, যেটা ছিল সম্পূর্ণ ভুল। তাদের উচিত ছিল কিভাবে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বজায় রাখা যায় তা নিয়ে চিন্তা করা [৪]।<br />মক্কায় আর দামেস্কে চার মাজহাবের জন্য চার মিহরাব স্থাপন হলো মাজহাব-সন্ত্রাসের এক চরম উদাহরণ, যা অস্বীকার করার উপায় নাই [৪]। কিন্তু এর দোষ আপনি মাজহাবকে দিতে পারেন না, এর জন্য দোষ দিতে হবে মানুষের চরমপন্থী চিন্তাভাবনাকে। চরমপন্থী চিন্তা-ভাবনা সব সময়ই খারাপ, তা সে মাজহাব নিয়েই হোক, সালাফীবাদ নিয়েই হোক আর নাস্তিকতা নিয়েই হোক। মাজহাবী চরমপন্থার যে উদাহরণ আপনি দিচ্ছেন, সেই একইরকম উদাহরণ নাস্তিকেরা ব্যবহার করে এটা প্রমাণ করার জন্য যে “ধর্ম খারাপ”। কারণ, ধর্মের কারণে আগের শতাব্দীগুলোতে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেছে। কিন্তু, ভেবে দেখুন আগের শতাব্দীর সেই গণহত্যাগুলোর জন্য কি ধর্ম দায়ী নাকি মানুষের চরমপন্থী চিন্তা-ভাবনা আর অন্য মতের প্রতি অসহিষ্ণুতা দায়ী?<br />সালাফী যুক্তি ৮: রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন সেভাবে নামাজ পড় যেভাবে আমাকে নামাজ পড়তে দেখ, তারপরেও মাজহাবীরা সহীহ হাদিসের বিপরীতে নামাজ পড়ে  কেন?<br />উত্তর: লক্ষ্য করুন – রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন – “সেভাবে নামাজ পড়ো যেভাবে আমাকে নামাজ পড়তে দেখ” (বুখারী)। মাজহাবীদের মতে – রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর মতো করে নামাজ পড়ার দাবী যতটা ইমাম মালিক, ইমাম আবু হানিফা করতে পারেন, শাইখুল হাদিস আলবানী ততটুকু করতে পারেন না [৪]। কারণ, ইমাম আবু হানিফা নামাজের মাস’আলা নিয়েছেন মূলত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ এর ছাত্রদের থেকে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ মক্কার প্রথম ১০ জন ইসলাম গ্রহনকারীদের একজন যিনি দীর্ঘ ২০ বছর রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ পড়েছেন। সাহাবারা রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কে নামাজ পড়তে “দেখেছেন”, আবার তাবেঈ’রা সাহাবাদের নামাজ পড়তে “দেখেছেন”। আপনাকে স্বীকার করতে হবে – কোন কিছু “পড়ে শেখার” চেয়ে উস্তাদের কাছ থেকে সরাসরি “দেখে শিখলে” ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।<br />অন্যদিকে, ইমাম মালিক তাঁর নামাজের মাস’আলাগুলো নিয়েছেন [৪] প্রধানত: আব্দুল্লাহ ইবনে ‘উমার(রা) এর ছাত্র ও মুক্তিকৃত দাস নাফি’ (মৃত্যু ১১৭ হিজরী) থেকে, আর নাফি’ নিয়েছেন আব্দুল্লাহ ইবনে ‘উমার(রা) থেকে, যিনি সব সাহাবীদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কে সবচেয়ে অনুকরণ বেশী করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার(রা) সেই ধরনের জুতা পড়তেন যা রাসূলুল্লাহ(ﷺ) পড়তেন, ঠিক একই কাপড় পড়তেন যা রাসূলুল্লাহ(ﷺ) পড়তেন। তাহলে এটা কিভাবে সম্ভব যে উনি নামাজ পড়তেন যেভাবে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) পড়তেন না? ইমাম বুখারী নিজে “ইমাম মালিক -> নাফি’ -> আব্দুল্লাহ ইবনে উমার -> রাসূলুল্লাহ(ﷺ)” এর সনদ কে “স্বর্ণালী সনদ” (সিলসিলাতুল যাহাব / The Golden Chain of Narrators) বলে আখ্যায়িত করেছেন।     এখন আপনিই বলেন – রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কিভাবে নামাজ পড়েছেন, সেই নামাজ কি ইমাম মালিক বেশী বলতে পারবেন, না ১৪০০ বছর পরের কোনও আলেম সঠিকভাবে বলতে পারবে?<br />আমাদের মনে রাখতে হবে, কিছু কিছু সুন্নাহ আছে যেগুলো লিখিত আকারে সংরক্ষিত হয়নি। সাহাবারা, তাবেঈ’রা  অনেক সুন্নাহই সংরক্ষণ করেছেন তাদের কাজের (Practise) মাধ্যমে। আর মাজহাবের ইমামরা অনেক ক্ষেত্রেই সহীহ হাদিসকে বাদ দিয়ে সালাফদের কাজকে (Practise) প্রাধান্য দিয়েছেন। এর কারণ হলো সেই ৪ নং পয়েন্ট – “হাদিস বুঝতে হবে যেভাবে সাহাবারা বুঝেছিলেন”। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় – মালিকি মাজহাবে “রাফ’উল ইয়াদাইন” করা হয় না। যদিও ইমাম মালিক রাফ’উল ইয়াদাইনের হাদিস সম্পর্কে জানতেন। ইমাম মালিকের মতামত হচ্ছে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) মাঝে মধ্যে রাফ’উল ইয়াদাইন করে দেখিয়েছেন যে, নামাজের যে কোনো আল্লাহু আকবারের সাথে চাইলে হাত তোলা যায়, এটা মাকরুহ নয়। এই মতামতের পিছনে যুক্তি কি? এর যুক্তি হলো – রাফ’উল ইয়াদাইনের হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবা আব্দুল্লাহ ইবনে উমার(রা) নিজেই নামাজে রাফ’উল ইয়াদাইন করতেন না, কাজেই এর থেকে বুঝা যায় রাসূলুল্লাহ(ﷺ)ও সাধারণত রাফ’উল ইয়াদাইন করতেন না। তাই, ইমাম মালিক রাফ’উল ইয়াদাইনের হাদিস জানা সত্ত্বেও তার পক্ষে মত দেননি।<br />আরেকটা ব্যাপার লক্ষ্যনীয় যে – রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কিন্তু বলেছেন – “সেভাবে নামাজ পড়ো যেভাবে আমাকে পড়তে দেখ” (বুখারী), তিনি বলেননি – “সেভাবে নামাজ পড়ো যেভাবে আমাকে নিয়ে লেখা হয়েছে”।  উপরে বর্ণিত কারণে – এই “দেখার” ব্যাপারটা কেউ যদি দাবী করতে পারে তবে সেটা ইমাম মালিক, ইমাম আবু হানিফারা যতটুকু করতে পারেন, ১৪০০ বছর পরের কেউ ততটুকু করতে পারবে না।<br /><br /><br /></div>

মাযহাবের বিরুদ্ধে যুক্তি ও তার খন্ডন

লেখার এই অংশে আমরা সালাফীদের বিভিন্ন যুক্তি [১,২,৩] সম্পর্কে জানবো – কেন তাঁরা মনে করেন মাজহাব বাদ দিয়ে কুরআন আর সহীহ হাদিসের অনুসরণ করতে হব...

Read more »

রওজা মোবারক ও মিম্বর শরীফের ফযীলত

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যায়দ আল-মাযিনী(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্নিত,রসুলে পাক সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান,”আমার ঘর এবং আমার মিম্বরের মাঝখানে বেহেশতের বাগানসমুহের মধ্যে থেকে একটি বাগান আছে” ( বুখারী শরীফ, খঃ২;পৃঃ ৬১;হাদিস নং:১১৯৫।<br />মুসলিম শরীফ, খঃ২,পৃঃ ১০১০;হাদিস নংঃ৫০০,১৩৯০)<br /><br />কোন কোন রেওয়ায়েতে বর্নিত আছে,<br />হযরত আবু সাঈদ খুদরী(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্নিত,রসুলে পাক সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,”আমার কবর এবং আমার মিম্বরের মাঝখানে বেহেশতের বাগানসমুহের মধ্যে থেকে একটি বাগান আছে। ( মুসনাদে আহমদ, খঃ১৮;পৃঃ ১৫৪;হাদিসঃ ১১৬১০)<br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiQY07OPBf5GWlnZhz4dWpTK8Xzci0oubb3Mo9LEGJB-tN-3CgkPgwl3SMVGG5X3x8zc4Wlka8YVEpWMBOvcfIB-yyktjj16a1BpCdMXhjr9WhyphenhyphenmYyAmsp6ronsKE4_7iGC_m0zgDAJ9EKh/s1600/FB_IMG_14519838134680677-720x350.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="351" data-original-width="720" height="155" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiQY07OPBf5GWlnZhz4dWpTK8Xzci0oubb3Mo9LEGJB-tN-3CgkPgwl3SMVGG5X3x8zc4Wlka8YVEpWMBOvcfIB-yyktjj16a1BpCdMXhjr9WhyphenhyphenmYyAmsp6ronsKE4_7iGC_m0zgDAJ9EKh/s320-rw/FB_IMG_14519838134680677-720x350.jpg" width="320" /></a></div><br /><br />বুখারির রেওয়ায়েতে আরো বর্নিত আছে যে,<br />আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত,রসুলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,”আমার মিম্বর আমার হাওযের ওপর” (বুখারী, খঃ২;পৃঃ৬১;হাদিসঃ১১৯৬)<br /><br />কোন কোন রেওয়ায়েতে বর্নিত আছে যে,<br />হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্নিত,রসুলে পাক সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,”  আমার মিম্বর বেহেশতের দরজায় অথবা বেহেশতের উচ্চ বাগানে অবস্থিত”  (মুসনাদে আহমদ,খঃ২৩; পৃঃ ৩৬৭;হাদিসঃ১৫১৮৭)<br /><br />মিম্বরের নিকটে মিথ্যা কসম করার ওপর বিশেষভাবে ধমক দেওয়া হয়েছে।<br />হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)হতে বর্নিত,রসুলে পাক সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,”যে ব্যক্তি মুসলমানদের হক ধ্বংস করার জন্য আমার মিম্বরের নিকটে মিথ্যা শপথ গ্রহণ করবে, সে নিজের অবস্থান দোযখে তৈরী করবে।”   (সুনানে আবূ দাউদ, খঃ৩,পৃঃ২২২;হাদিসঃ৩২৪৬)<br /><br />অপর হাদিসে বলা হয়েছে<br />হযরত উমামা ইবনে সা’লাবা(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্নিত,রসুলে পাক সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,”যে ব্যক্তি মুসলমানদের হক ধ্বংস করার জন্য আমার মিম্বরেরর নিকটে মিথ্যা শপথ গ্রহণ করবে, তার ওপর আল্লাহর,ফেরেশতাদের এবং লোকদের অভিশাপ”  (সুনানে নাসাঈ, খঃ৫; পৃঃ৪৩৭;হাদিসঃ৫৯৭৪)<br /><br />বাস্তব ক্ষেত্রে যখন মিম্বরের স্থানটি বেহেশতের অংশবিশেষ, তখন কোরআন মাজীদেরর আয়াতঃ”তোমরা বেহেশতের মধ্যে বাজে ও মিথ্যা কথা শুনতে পাবে না” ( সূরা নাবা- ৭৮:৩৫)<br />এই আয়াত অনুসারে বেহেশতে যেমন মিথ্যার অস্তিত্ব বিলুপ্ত, সে স্থানে মিথ্যা থাকতে পারে না।সুতারাং মিম্বরের নিকটে মিথ্যা বলা হারাম হবে।<br /><br /><br /></div>

রওজা মোবারক ও মিম্বর শরীফের ফযীলত

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যায়দ আল-মাযিনী(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্নিত,রসুলে পাক সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান,”আমার ঘর এবং আমার মিম্...

Read more »

দরুদ শরীফ পাঠে গুনাহ মাফ ও মর্যাদা বৃদ্ধি

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">রসুলে পাক সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,” যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ শরীফ পড়বে,আল্লাহ তা’আলা তার উপর দশটি রহমত বর্ষণ করবেন এবং তাকে দশটি সওয়াব দেওয়া হবে।অর্থাৎ- দশটি দরজা বুলন্দ করা হবে।( নাসাঈ শরীফ, মিশকাত শরীফ-৮৬পৃঃ)<br /><br />আবু হুরায়রা(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণনা করেন। তিনি করীম সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-<br />“আমার উপর দরুদ শরীফ পাঠের কারণে পুলছিরাত আলোকিত হবে।যে ব্যক্তি শুক্রবারে আমার উপর ৮০ বার দরুদ পাঠ করবে তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।(দারে কুতনী, জাওয়াহেরুল বিহার,৪র্থ খন্ড, পৃঃ ১৬৩)<br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj7V8Fst4Xf2RU9RURDmfnsyZiahN5hvFu3wYacSDHDuo_To336PCilFMhF5chO5GMfQI92HuSnI1Es7sycBZh_3grdNRYR5UDVjOhtq4g2aR5vI6vBDqK0QSLsybCfms4zoamx9woMccLw/s1600/22310205_2049614555257583_6199689139750854563_n.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="270" data-original-width="600" height="144" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj7V8Fst4Xf2RU9RURDmfnsyZiahN5hvFu3wYacSDHDuo_To336PCilFMhF5chO5GMfQI92HuSnI1Es7sycBZh_3grdNRYR5UDVjOhtq4g2aR5vI6vBDqK0QSLsybCfms4zoamx9woMccLw/s320-rw/22310205_2049614555257583_6199689139750854563_n.jpg" width="320" /></a></div><br /><br />কাহিনীঃ<br />হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত,হাশরের দিনে খুবই গরম হবে,মিযান আদল কায়েম হবে।মানুষের জীবনের আমল সমূহের হিসাব নিকাশের ব্যবস্থা করা হবে।প্রত্যেক ব্যক্তি প্রকম্পিত থাকবে।চক্ষু থেকে পানি বের হবে।রোযে আযল থেকে আরম্ভ করে কিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষকে ভিড়ের মধ্যে একটি ময়দানে একত্রিত করা হবে।মানুষেরা এই ভিড়ে হযরত আদম আলাইহিস সালামকে খোজাখুজি করবে।তিনি সবুজ রঙ্গের পোশাক পড়ে আরশের নীচে তাশরীফ রাখবেন।তিনি দেখবেন যে তার সন্তানের মধ্যে কে কে জান্নাতে প্রবেশ করছে।কোন কোন লোক জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। এমতাবস্থায় হযরত আদম আলাইহিস সালাম স্বচক্ষে দেখবেন যে,নবী করীম সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক উম্মতকে ফেরেশতাগণ টেনে টেনে জাহান্নামেরর দিকে নিয়ে যাচ্ছে।এটা দেখে হযরত আদম আলাইহিস সালাম আহবান করবেন,হে আহমদ,হে আহমদ,তিনি জবাব দেবেন লব্বাইক ইয়া আবাল বশর,সৈয়ুদুনা আদম আলাইহিস সালাম বলবেন- দেখ দেখ আপনার এক উম্মতকে ফেরেশতাগণ জাহান্নামের দিকে নিয় যাচ্ছে। হযরত আদম আলাইহিস সালামের এই কথা শুনে হযরত মুহাম্মদ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের উম্মতের দিতে দৌড়ে গিয়ে ফেরেশতাদেরকে বলবেন- হে আল্লাহ তা’আলার দূত! একটু দাঁড়ান।এ ব্যক্তিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। ফেরেশতাগণ আরজ করবেন- আমরা কঠরোতা অবলম্বনকারী ফেরেশতা।আমরা আল্লাহ তা’আলার হুকুম থেকে বিন্দুমাত্র নড়ি না।আমরা তার হুকুম থেকে মুখ ফিরায় না।সেই সময় সৈয়দে দো’আলম সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের দু’হাত মোবারক তুলে আল্লাহ তা’আলার নিকট আরজ করবেন- হে আল্লাহ!  আপনি আমার সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে,আমাকে আমার উম্মতের ব্যাপারে মাথা ঘামাতে হবে না।<br />এখন ওয়াদা পূরণ করার সময় এসেছে।খুব তড়িৎ আরশে ইলাহী থেকে আহবান করা আসল- আমার হাবিবের আনূগত্য কর।ফেরেশতারা পুনরায় তাকে মিযান আদলের নিকটে নিয়ে আসবেন।সেখানে তার আমলসমূহ দ্বিতীয় বার মেফে দেখানো হল।হযরত সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সাদা কাগজ তার নেকীর পাল্লায় দিয়ে দিলেন।মিযান মুহুর্তের মধ্যে ভারী হয়ে গেল।পাপের পাল্লা হালকা হয়ে গেল এবং নেকীর পাল্লা ভারী হয়ে গেল।বদী নেকীর মোকাবেলায় অনেক কমে গেল।সাথে সাথে সেই ব্যক্তির ভাগ্য বদলে গেল।তারপর একটি আহবান এলো। এখন এ বান্দার গণনা নেকী লোকদের মধ্যে হয়ে গেল।এখন তাকে জান্নাতে নিয়ে যাও।যখন ফেরেশতারা সেই ব্যক্তিকে জান্নাতে যাওয়ার জন্য বলবে, তখন সে তাদেরকে বলবে-কিছুক্ষণ থাম।আমি ওই সম্মানিত ব্যক্তির কাছে আরজ করি।সে ব্যক্তি  তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে আরজ করবে- আমার পিতা -মাতা আপনার কদমে উৎসর্গ হোক;আপনি কতই সুন্দর এবং দয়ালু।বলবেন- জনাব! আপনি কোন সম্মানিত জাত? আপনি আমাকে জাহান্নামের সেই মহাবিপদ থেকে রক্ষা করছেন।উত্তরে তিনি এরশাদ করবেন- আমি তোমার নবী হযরত মুহাম্মদ(দঃ)।আর সাদা কাগজটি হল সেই দরুদ শরীফ যেটা তুমি আমার উপর একবার পড়েছিলে।আমি তা সংরক্ষণ করেছিলাম।যেন প্রয়োজনের সময় তোমার কাজে আসে।আজ প্রয়োজন মিটাতে ব্যবহৃত হয়েছে।<br />★★★জাওয়াহিরুল বিহার, ৪র্থ খন্ড, ১৬৭পৃঃ।<br />আল্লাহুম্মা সাল্লেআলা সায়িদিনা মুহাম্মাদিন ওয়াআলা আলী সাইয়িদিনা মুহাম্মাদিন ওয়াবারিক ওয়া সাল্লিম।<br /><br /><br /></div>

দরুদ শরীফ পাঠে গুনাহ মাফ ও মর্যাদা বৃদ্ধি

রসুলে পাক সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,” যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ শরীফ পড়বে,আল্লাহ তা’আলা তার উপর দশটি রহমত বর্ষণ করবেন এবং...

Read more »

ইবনে তাইমিয়ার মৃত্যু, শিরিক বেদাতের আড্ডা

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">___________________________________________________________<br />হাফিয ইবনু কাসীর (ইবনু তাইমিয়্যাহ এর ছাত্র) ঘটনা উল্লেখ করে বলেন,<br />ইবনু তাইমিয়্যাহ দিমাশকে ইন্তেকাল করেন। গোসল দেয়ার পূর্বে একদল লোক মৃতদেহের পাশে বসলেন এবং কোর’আন তেলাওয়াত করলেন। (উল্লেখ্য, লা-মাযহাবীরা মৃত ব্যক্তির পাশে কোর’আন তেলাওয়াতকে বেদ’আত বলে থাকে) এবং তারা মৃতদেহ দর্শন করে এবং মৃতদেহ চুম্বন করে বরকত হাসিল করলেন। অতঃপর তারা সেখান থেকে চলে গেলেন। এরপর একদল মহিলা এসে উপস্থিত হলেন। তারাও একইভাবে কোর’আন তেলাওয়াত, দর্শন, এবং চুম্বন করে বরকত হাসিল করলেন এবং চলে গেলেন। (উল্লেখ্য, এগুলো লামাযহাবীদের নিকট চরম বেদ’আত)<br />অনেক আলোচনা। আগ্রহী ব্যক্তি আরবী এবারত পড়ে নেবেন।<br />অতঃপর যখন তাঁর জানাযা শেষ হলো, তখন তাঁকে (মাকবারাতুস সুফিয়্যাহ) সুফীদের কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হলো এবং তাঁর ভাই শরফুদ্দীন আব্দুল্লাহ এর পাশে দাফন করা হলো।<br />(উল্লেখ্য, লা-মাযহাবীরা সুফীদেরকে মুশরিক বলে থাকে। তারমানে তাদের কথা মত, তাদের শায়েখুল ইসলামকে মুশরিকদের কবরস্থানে দাফন করা হলো। শায়খুল ইসলামের শেষ ঠিকানা হলো মুশরিকদের কবরস্থানে!)<br />ইবনু কাসীর বলছেন,<br />ইবনু তাইমিয়্যাহ এর ইন্তেকাল উপলক্ষে ১৫ হাজার মহিলা এবং প্রায় ২লক্ষ পুরুষ উপস্থিত হয়েছিল। মহিলারা অনেক কান্নাকাটি ও করেছিল।<br />এরপর ইবনু কাসীর বলেন,<br />ইবনু তাইমিয়্যাহকে গোসল দেয়ার পর যে পানি অবশিষ্ট ছিল, একদল লোক তা পান করলো। আরেকদল লোক বরই পাতাগুলো ভাগাভাগি করে নিয়ে গেল যা গোসলের পর অবশিষ্ট রয়েছিল। (অবশ্যই এ কাজ গুলো করা হয়েছিল বরকত হাসিলের নিয়ত করে। আর লা-মাযহাবীরা বলে এটা বেদ’আত, হারাম)<br />এরপর ইবনু কাসীর বলছেন,<br />ইবনু তাইমিয়্যাহর মাথায় উকুন ছিল বিধায় তিনি গলায় তাগা ব্যবহার করতেন।<br />(খাইছে, লা-মাযহাবীরা বলে থাকে, তাবিজ, তাগা ঝুলানো স্পষ্ট শিরক। তারমানে তাদের শায়খুল ইসলাম উকুনের ভয়ে ঐ শিরক কাজ তাঁর জীবনে করলেন! উকুনের যদি এতই ভয়, তো আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন, তাগা ঝুলাবেন কেন, তাই না?)<br />ইবনু কাসীর বলছেন, ঐ তাগাকে ১৫০ দিরহামে বিক্রয় করা হলো। আর তাঁর মাথায় ব্যবহৃত টুপিটি ৫০০ দিরহামে বিক্রয় করা হলো।<br />(অবশ্যই যারা কিনেছিলেন, তারা বরকত হাসিলের জন্য এত দাম দিয়ে এগুলো কিনেছিলেন, তাই নয় কি?)<br />এরপর ইবনু কাসীর বলছেন,<br />ইবনু তাইমিয়্যাহ এর ইনতেকাল উপলক্ষে অনেক খতম আদায় করা হলো। আর অনেকদিন পর্যন্ত ইবনু তাইমিয়্যাহ এর কবরের পাশে লোকজন দিন রাত (২৪ ঘন্টা) অবস্থান করেছিল। তারা সেখানে ঘুমাতো এবং ভোর করতো।<br />( হায় আল্লাহ, এ তো দেখি, রীতিমত উরস আর কবরপূজা। তারমানে, অনেকদিন পর্যন্ত ইবনু তাইমিয়্যাহ এর কবরের পূজা অর্চনা করা হলো, তাও আবার দিন রাত একই সমান্তরাল গতিতে! লাগাও এবার ফতোয়া।)<br />_____________________________________<br />এ হলো তোমাদের শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ এর ঘটনা, লিখেছেন তারই ছাত্র হাফিয ইবনু কাসীর তাঁর আল বিদায়াহ ওয়ান নেহায়াহ নামক কিতাবে।<br />ব্যাটারা,<br />তোমরা তো মুখে শিরক আর বেদ’আতের ফতোয়া দিয়ে থাক, এবার কী বলবে? তাই বলি, ধর্ম নিয়ে ব্যাবসা ছাড় আর চুপ থাক, নইলে তোমাদের আরো যা কিছু কুকীর্তি আছে, সব একে একে প্রকাশ করা হবে।<br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgc9CSFgzoLA4o_QiFrEaDHUIUMkT81JTyvLa_ZjlZNHryedyNIzBSVuPYMvIoty5Dte1N9AarN1prDVxnlDKQP7kp4gR1Gl4Gd0P1l6alPXI6W2yD56As03DJ-W-t74ShoD-1hKrPs03xL/s1600/fb_img_1452012977867.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="405" data-original-width="720" height="180" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgc9CSFgzoLA4o_QiFrEaDHUIUMkT81JTyvLa_ZjlZNHryedyNIzBSVuPYMvIoty5Dte1N9AarN1prDVxnlDKQP7kp4gR1Gl4Gd0P1l6alPXI6W2yD56As03DJ-W-t74ShoD-1hKrPs03xL/s320-rw/fb_img_1452012977867.jpg" width="320" /></a></div><br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjmPudPKHN1npPRfdfEUIBUkQa02xyEahY374D2X0cPSNo5YkkKm5fVWAG0MdVtGex7QGW8SHJKtOdHvK6lFiLnurakGR_7tL4JhIce7ugOo1vsgdXvSsm3cVnhzLdYlr1mMV5sWJv2tcXV/s1600/fb_img_1452012981260.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="716" data-original-width="516" height="320" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjmPudPKHN1npPRfdfEUIBUkQa02xyEahY374D2X0cPSNo5YkkKm5fVWAG0MdVtGex7QGW8SHJKtOdHvK6lFiLnurakGR_7tL4JhIce7ugOo1vsgdXvSsm3cVnhzLdYlr1mMV5sWJv2tcXV/s320-rw/fb_img_1452012981260.jpg" width="230" /></a></div><br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhp3LwV4h9mCZgML_GzTgr0emKvw0ygYs-r4D0uMazMJOdm-3RmsTVcQIYMjM-tTLZO_cHslBxknQbBAv878MckdBCYBTJJwyxMhVWTVHBamVoIESybgMiAmrjQNn50Em6CZ6L8VBsCQOyC/s1600/fb_img_1452012985354.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="997" data-original-width="720" height="320" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhp3LwV4h9mCZgML_GzTgr0emKvw0ygYs-r4D0uMazMJOdm-3RmsTVcQIYMjM-tTLZO_cHslBxknQbBAv878MckdBCYBTJJwyxMhVWTVHBamVoIESybgMiAmrjQNn50Em6CZ6L8VBsCQOyC/s320-rw/fb_img_1452012985354.jpg" width="231" /></a></div><br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjwy1DhEKBaqZaQevZNTH3C1RVZ_GsX1tYY5sqaEYUi-ZWdQp8V_fy6mokxehLqPFU_gsly6IC-Z1ePPAetgNvxiCYeveCSZfN3GxuK9QiPGVD3Fciv5AhSKs3cVcq1k1F4YOAoUr6LkyF0/s1600/fb_img_1452012988915.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="997" data-original-width="720" height="320" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjwy1DhEKBaqZaQevZNTH3C1RVZ_GsX1tYY5sqaEYUi-ZWdQp8V_fy6mokxehLqPFU_gsly6IC-Z1ePPAetgNvxiCYeveCSZfN3GxuK9QiPGVD3Fciv5AhSKs3cVcq1k1F4YOAoUr6LkyF0/s320-rw/fb_img_1452012988915.jpg" width="231" /></a></div><br /><br /></div>

ইবনে তাইমিয়ার মৃত্যু, শিরিক বেদাতের আড্ডা

___________________________________________________________ হাফিয ইবনু কাসীর (ইবনু তাইমিয়্যাহ এর ছাত্র) ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ইবনু তাইমিয়্যা...

Read more »

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">৭৮৬ লিখলে এর দ্বারা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর সওয়াব লেখা হবে কি? আর এটি কেন লেখা শুরু হয়? দয়া করে  জানারে কৃতজ্ঞ থাকবো।<br /><br />উত্তর<br /><br />بسم الله الرحمن الرحيم<br /><br />৭৮৬ মূলত বিসমিল্লাহ শব্দের সংখ্যা। বিসমিল্লাহের সংখ্যা অনুপাতে তা লেখা হয়ে থাকে। এটা লেখা দ্বারা বিসমিল্লাহ লেখার সওয়াব আদায় হবে না। এটা পড়ার দ্বারাও বিসমিল্লাহ বলার সওয়াব আদায় হবে না। যেমন পবিত্র কুরআনের আয়াতের সংখ্যা বের করে কেউ তা পড়লে যেমন কুরআন পড়ার সওয়াব হবে না, তেমনি বিসমিল্লাহ এর সংখ্যা ৭৮৬ লিখলে বা পড়লে সেই সওয়াব অর্জন হবে না।<br /><br />তবে এটি কেন লেখা হয়? এটি একটি মৌলিক প্রশ্ন। আমাদের অনেক আকাবীরগণ তাদের চিঠিতে এটি লিখেছেন মর্মে আমরা জানতে পারি।<br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjFghmTaYo5zP3ZCUqi6ujodZEN8XFNed-llDxY1HZVBAovFRTiT6UR8kupzwxtG98A0X8fzJ6fxmLu3Nd80F0sSZ5JLkcpsXcoy1QNjlozqVc98FK82fDEjAm7HhEEuW5yWFPEvVIbAVIw/s1600/bassmallah-1024x346.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="346" data-original-width="1024" height="108" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjFghmTaYo5zP3ZCUqi6ujodZEN8XFNed-llDxY1HZVBAovFRTiT6UR8kupzwxtG98A0X8fzJ6fxmLu3Nd80F0sSZ5JLkcpsXcoy1QNjlozqVc98FK82fDEjAm7HhEEuW5yWFPEvVIbAVIw/s320-rw/bassmallah-1024x346.jpg" width="320" /></a></div><br /><br />আসলে তারা এটি এজন্য লিখতেন যে, যেহেতু চিঠি বা এমন পত্র যা অপমানজনক অবস্থায় পড়তে পারে, মাটিতে ফেলা দেয়া হতে পারে এমন বা চিঠিতে সরাসরি বিসমিল্লাহ লিখলে যদি এটির অপমান করা হয়। বা মাটিতে ফেলে অবমাননা করা হয় এ শংকায় তারা বিসমিল্লাহ এর দিকে ইংগিত করার জন্য এ সংখ্যা লিখে দিতেন। যারা দ্বারা যিনি লেখাটি পড়বেন। তিনি যেন এ ইংগিতবহ সংখ্যা দেখে বিসমিল্লাহ পড়ে পত্রটি বা চিঠিটি বা বইটি পড়া শুরু করে।<br /><br />অর্থাৎ মূল বিসমিল্লাহ এটি নয়। কিন্তু বিসমিল্লাহ এর প্রতি ইংগিতবহ। পাঠক এটি দেখে নিজে নিজে বিসমিল্লাহ পড়ে নেবার প্রতি ইংগিত করা হয়ে থাকে এ সংখ্যা দিয়ে। {আপকি মাসায়েল আওর ইনকা হল-২/৫৭১, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া-৩/৩৪০}<br /><br />والله اعلم بالصواب<br /><br /><br /></div>

৭৮৬ লিখলে এর দ্বারা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর সওয়াব লেখা হবে কি? আর এটি কেন লেখা শুরু হয়? দয়া করে  জানারে কৃতজ্ঞ থাকবো। উত্তর بسم الله ...

Read more »

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"> ৭৮৬ লিখলে এর দ্বারা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর সওয়াব লেখা হবে কি? আর এটি কেন লেখা শুরু হয়? দয়া করে  জানারে কৃতজ্ঞ থাকবো।<br /> <br /> উত্তর<br /> <br /> بسم الله الرحمن الرحيم<br /> <br /> ৭৮৬ মূলত বিসমিল্লাহ শব্দের সংখ্যা। বিসমিল্লাহের সংখ্যা অনুপাতে তা লেখা হয়ে থাকে। এটা লেখা দ্বারা বিসমিল্লাহ লেখার সওয়াব আদায় হবে না। এটা পড়ার দ্বারাও বিসমিল্লাহ বলার সওয়াব আদায় হবে না। যেমন পবিত্র কুরআনের আয়াতের সংখ্যা বের করে কেউ তা পড়লে যেমন কুরআন পড়ার সওয়াব হবে না, তেমনি বিসমিল্লাহ এর সংখ্যা ৭৮৬ লিখলে বা পড়লে সেই সওয়াব অর্জন হবে না।<br /> <br /> তবে এটি কেন লেখা হয়? এটি একটি মৌলিক প্রশ্ন। আমাদের অনেক আকাবীরগণ তাদের চিঠিতে এটি লিখেছেন মর্মে আমরা জানতে পারি।<br /> <div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"> <a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiUQI8I-jbRC5FSig5twIO54fekFg3i1sqEa9uG_jAmtRpKSaasFMhSFaI1F-Yn6cbhclYaDgtUpqtN-CPgHwHLL7jYhwlIxNJ8do6elUbps0grkVcOTfL0BmtFLJUDNas4ru92Tb27hcr4/s1600/bassmallah-1024x346.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="346" data-original-width="1024" height="108" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiUQI8I-jbRC5FSig5twIO54fekFg3i1sqEa9uG_jAmtRpKSaasFMhSFaI1F-Yn6cbhclYaDgtUpqtN-CPgHwHLL7jYhwlIxNJ8do6elUbps0grkVcOTfL0BmtFLJUDNas4ru92Tb27hcr4/s320-rw/bassmallah-1024x346.jpg" width="320" /></a></div> <br /> <br /> আসলে তারা এটি এজন্য লিখতেন যে, যেহেতু চিঠি বা এমন পত্র যা অপমানজনক অবস্থায় পড়তে পারে, মাটিতে ফেলা দেয়া হতে পারে এমন বা চিঠিতে সরাসরি বিসমিল্লাহ লিখলে যদি এটির অপমান করা হয়। বা মাটিতে ফেলে অবমাননা করা হয় এ শংকায় তারা বিসমিল্লাহ এর দিকে ইংগিত করার জন্য এ সংখ্যা লিখে দিতেন। যারা দ্বারা যিনি লেখাটি পড়বেন। তিনি যেন এ ইংগিতবহ সংখ্যা দেখে বিসমিল্লাহ পড়ে পত্রটি বা চিঠিটি বা বইটি পড়া শুরু করে।<br /> <br /> অর্থাৎ মূল বিসমিল্লাহ এটি নয়। কিন্তু বিসমিল্লাহ এর প্রতি ইংগিতবহ। পাঠক এটি দেখে নিজে নিজে বিসমিল্লাহ পড়ে নেবার প্রতি ইংগিত করা হয়ে থাকে এ সংখ্যা দিয়ে। {আপকি মাসায়েল আওর ইনকা হল-২/৫৭১, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া-৩/৩৪০}<br /> <br /> والله اعلم بالصواب<br /> <br /> <br /></div>

৭৮৬ লিখলে এর দ্বারা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর সওয়াব লেখা হবে কি? আর এটি কেন লেখা শুরু হয়? দয়া করে  জানারে কৃতজ্ঞ থাকবো। উত্তর بسم ...

Read more »

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"><br />৭৮৬ লিখলে এর দ্বারা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর সওয়াব লেখা হবে কি? আর এটি কেন লেখা শুরু হয়? দয়া করে  জানারে কৃতজ্ঞ থাকবো।<br /><br /><br /><br />উত্তর<br /><br /><br /><br />بسم الله الرحمن الرحيم<br /><br /><br /><br />৭৮৬ মূলত বিসমিল্লাহ শব্দের সংখ্যা। বিসমিল্লাহের সংখ্যা অনুপাতে তা লেখা হয়ে থাকে। এটা লেখা দ্বারা বিসমিল্লাহ লেখার সওয়াব আদায় হবে না। এটা পড়ার দ্বারাও বিসমিল্লাহ বলার সওয়াব আদায় হবে না। যেমন পবিত্র কুরআনের আয়াতের সংখ্যা বের করে কেউ তা পড়লে যেমন কুরআন পড়ার সওয়াব হবে না, তেমনি বিসমিল্লাহ এর সংখ্যা ৭৮৬ লিখলে বা পড়লে সেই সওয়াব অর্জন হবে না।<br /><br /><br /><br />তবে এটি কেন লেখা হয়? এটি একটি মৌলিক প্রশ্ন। আমাদের অনেক আকাবীরগণ তাদের চিঠিতে এটি লিখেছেন মর্মে আমরা জানতে পারি।<br /><br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><br /><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgAx-R_S3W9gc2b3D5AMiN5hlVCPME89fPWA8VN8HJRMGRinoH2XlC3S55RESxeqccQLtHYr0It99JV3yrLWFnF_F9YrEmnKg8Tw5Tam1fsXAVVgLlvV56luMFSuc9mIOXi7AmaNe5ZpM1u/s1600/bassmallah-1024x346.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="346" data-original-width="1024" height="108" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgAx-R_S3W9gc2b3D5AMiN5hlVCPME89fPWA8VN8HJRMGRinoH2XlC3S55RESxeqccQLtHYr0It99JV3yrLWFnF_F9YrEmnKg8Tw5Tam1fsXAVVgLlvV56luMFSuc9mIOXi7AmaNe5ZpM1u/s320-rw/bassmallah-1024x346.jpg" width="320" /></a></div><br /><br /><br /><br /><br />আসলে তারা এটি এজন্য লিখতেন যে, যেহেতু চিঠি বা এমন পত্র যা অপমানজনক অবস্থায় পড়তে পারে, মাটিতে ফেলা দেয়া হতে পারে এমন বা চিঠিতে সরাসরি বিসমিল্লাহ লিখলে যদি এটির অপমান করা হয়। বা মাটিতে ফেলে অবমাননা করা হয় এ শংকায় তারা বিসমিল্লাহ এর দিকে ইংগিত করার জন্য এ সংখ্যা লিখে দিতেন। যারা দ্বারা যিনি লেখাটি পড়বেন। তিনি যেন এ ইংগিতবহ সংখ্যা দেখে বিসমিল্লাহ পড়ে পত্রটি বা চিঠিটি বা বইটি পড়া শুরু করে।<br /><br /><br /><br />অর্থাৎ মূল বিসমিল্লাহ এটি নয়। কিন্তু বিসমিল্লাহ এর প্রতি ইংগিতবহ। পাঠক এটি দেখে নিজে নিজে বিসমিল্লাহ পড়ে নেবার প্রতি ইংগিত করা হয়ে থাকে এ সংখ্যা দিয়ে। {আপকি মাসায়েল আওর ইনকা হল-২/৫৭১, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া-৩/৩৪০}<br /><br /><br /><br />والله اعلم بالصواب<br /><br /><br /><br /><br /></div><br />

৭৮৬ লিখলে এর দ্বারা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর সওয়াব লেখা হবে কি? আর এটি কেন লেখা শুরু হয়? দয়া করে  জানারে কৃতজ্ঞ থাকবো। উত্তর بسم الله ...

Read more »

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">৭৮৬ লিখলে এর দ্বারা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর সওয়াব লেখা হবে কি? আর এটি কেন লেখা শুরু হয়? দয়া করে  জানারে কৃতজ্ঞ থাকবো।<br /><br />উত্তর<br /><br />بسم الله الرحمن الرحيم<br /><br />৭৮৬ মূলত বিসমিল্লাহ শব্দের সংখ্যা। বিসমিল্লাহের সংখ্যা অনুপাতে তা লেখা হয়ে থাকে। এটা লেখা দ্বারা বিসমিল্লাহ লেখার সওয়াব আদায় হবে না। এটা পড়ার দ্বারাও বিসমিল্লাহ বলার সওয়াব আদায় হবে না। যেমন পবিত্র কুরআনের আয়াতের সংখ্যা বের করে কেউ তা পড়লে যেমন কুরআন পড়ার সওয়াব হবে না, তেমনি বিসমিল্লাহ এর সংখ্যা ৭৮৬ লিখলে বা পড়লে সেই সওয়াব অর্জন হবে না।<br /><br />তবে এটি কেন লেখা হয়? এটি একটি মৌলিক প্রশ্ন। আমাদের অনেক আকাবীরগণ তাদের চিঠিতে এটি লিখেছেন মর্মে আমরা জানতে পারি।<br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgAx-R_S3W9gc2b3D5AMiN5hlVCPME89fPWA8VN8HJRMGRinoH2XlC3S55RESxeqccQLtHYr0It99JV3yrLWFnF_F9YrEmnKg8Tw5Tam1fsXAVVgLlvV56luMFSuc9mIOXi7AmaNe5ZpM1u/s1600/bassmallah-1024x346.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="346" data-original-width="1024" height="108" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgAx-R_S3W9gc2b3D5AMiN5hlVCPME89fPWA8VN8HJRMGRinoH2XlC3S55RESxeqccQLtHYr0It99JV3yrLWFnF_F9YrEmnKg8Tw5Tam1fsXAVVgLlvV56luMFSuc9mIOXi7AmaNe5ZpM1u/s320-rw/bassmallah-1024x346.jpg" width="320" /></a></div><br /><br />আসলে তারা এটি এজন্য লিখতেন যে, যেহেতু চিঠি বা এমন পত্র যা অপমানজনক অবস্থায় পড়তে পারে, মাটিতে ফেলা দেয়া হতে পারে এমন বা চিঠিতে সরাসরি বিসমিল্লাহ লিখলে যদি এটির অপমান করা হয়। বা মাটিতে ফেলে অবমাননা করা হয় এ শংকায় তারা বিসমিল্লাহ এর দিকে ইংগিত করার জন্য এ সংখ্যা লিখে দিতেন। যারা দ্বারা যিনি লেখাটি পড়বেন। তিনি যেন এ ইংগিতবহ সংখ্যা দেখে বিসমিল্লাহ পড়ে পত্রটি বা চিঠিটি বা বইটি পড়া শুরু করে।<br /><br />অর্থাৎ মূল বিসমিল্লাহ এটি নয়। কিন্তু বিসমিল্লাহ এর প্রতি ইংগিতবহ। পাঠক এটি দেখে নিজে নিজে বিসমিল্লাহ পড়ে নেবার প্রতি ইংগিত করা হয়ে থাকে এ সংখ্যা দিয়ে। {আপকি মাসায়েল আওর ইনকা হল-২/৫৭১, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া-৩/৩৪০}<br /><br />والله اعلم بالصواب<br /><br /><br /></div>

৭৮৬ লিখলে এর দ্বারা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর সওয়াব লেখা হবে কি? আর এটি কেন লেখা শুরু হয়? দয়া করে  জানারে কৃতজ্ঞ থাকবো। উত্তর بسم الله ...

Read more »

যার ছায়া জমীনে পড়ে না

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">[আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু<br />আ’লা রাসূলিহীল কারীম,<br />ওয়া আ’লা আলিহী ওয়া আসহাবিহী আজমাঈন]<br />স্রষ্টার সৃষ্টিজগতের মাঝে তাঁর নিকট<br />সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন,<br />আমাদের আক্বা, সাইয়্যেদুল মুরসালিন,<br />খাতামুন নাবিয়্যিন হুজুর পুরনূর হযরত মুহাম্মাদুর<br />রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা।<br />পৃথিবী নামক ধরায় ইসলামকে পরিপূর্ণতা দান<br />করতে তিনি প্রকাশিত হন শেষ<br />নবী হিসেবে সকল নবীগণের<br />শেষে। তাঁর অসংখ্য অগণিত মু’জিযার<br />সমারোহ ঘটেছিল সেদিন পৃথিবীর<br />বুঁকে। যা কিনা তাঁর প্রতি খোদা তায়ালা’র<br />প্রদত্ত নবুওয়তেরই প্রমাণ বহন করে।<br />এমন এমন সব মু’জিযা’র ধারক এবং বাহক<br />ছিলেন তিনি, যা কিনা পূর্ববর্তী কোন<br />আম্বিয়ায়ে আলাইহিমুস সালামকে দান<br />করা হয়নি। এমন অজস্র মু’জিযার মধ্যে অন্যতম মু’জিযা ছিল,<br />নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র কোন ছায়া ছিল না।<br />যমীনে যখন হাটতেন, সূর্য বা চন্দ্র যা কিছুই হোক<br />না কেন, কোন কিছুতেই তাঁর ছায়া পড়তো না। কারণ<br />তিনি ছিলেন ‘নূর’। আর নূরের তো কোন ছায়া থাকে না। এ<br />যেন কুর’আনের সেই আয়াতেরই বাস্তব প্রতিফলন,<br />যেখানে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করছেন,<br />অর্থাৎ নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ<br />থেকে একটা নূর এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে। (সূরা মায়িদা আয়াত-<br />১৫)<br />এ বিষয়ে আরো পরিস্কার হতে আমারা এখন প্রামাণ্য<br />আকারে জানার চেষ্টা করবো। যাতে উল্লেখ<br />থাকবে হাদীস শরীফ সহ আইয়াম্মায়ে কিরামের<br />উক্তি সর্বশেষে থাকবে এ বিষয়ে বিরোধীগণের<br />মুরুব্বীদের উক্তি।<br />আল্লামা নাসাফী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর<br />‘তাফসীরে মাদারীক’ গ্রন্থে খলিফাতুর রাসূল হযরত ওসমান<br />রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণনা করেন,<br />ﻗﺎﻝ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺎﺍﻭﻗﻊ ﻇﻠﻚ ﻋﻠﻰ ﺍﻻﺭﺽ ﻟﺌﻼ ﻳﻀﻊ ﺍﻧﺴﺎﻥ<br />ﻗﺪ ﻣﻪ ﻋﻠﻰ ﺫﻟﻚ ﺍﻟﻈﻞ<br />অনুবাদঃ হযরত উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হুজুর সাল্লাল্লাহু<br />তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে আরজ করলেন,<br />আল্লাহ তা’আলা আপনার<br />ছায়া যমীনে ফেলেননি যাতে কোন মানুষ তার উপর<br />পা রাখতে না পারে। [১]<br />যুগবরেণ্য ইমাম সায়্যিদিনা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক ও<br />মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ<br />ইবনে জাওযী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইবনে আব্বাস<br />রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন,<br />ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻟﻠﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻇﻞ ﻭﻟﻢ ﻳﻘﻢ ﻣﻊ ﺍﻟﺸﻤﺲ ﻗﻂ ﺍﻻﻏﻠﺐ<br />ﺿﻮﺋﻪ ﺿﻮﺀ ﺍﻟﺸﻤﺲ ﻭﻟﻢ ﻳﻘﻢ ﻣﻊ ﺳﺮﺍﺝ ﻗﻂ ﺍﻻﻏﻠﺐ ﺿﻮﺋﻪ ﺿﻮﺀ ﺍﻟﺴﺮﺍﺝ<br />অনুবাদঃ হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছায়া ছিল না।<br />তিনি যখনই সূর্যের মুখোমুখি দন্ডায়মান হতেন তাঁর নূর<br />সূর্যের আলোর উপর প্রবল থাকত এবং প্রদীপের<br />আলোতে দন্ডায়মান হলে তাঁর নূরের জ্যোতি ওটার<br />দীপ্তিতে ম্লান করে দিত।[২]<br />তাবেয়ী হযরত যাক্ওয়ান রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন,<br />ﺍﻥًّ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻳﺮﻯ ﻟﻪ ﻇﻞ ﻓﻰ ﺷﻤﺲ ﻭﻻ ﻗﻤﺮ<br />অনুবাদঃ হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর<br />ছায়া না সূযালোকে দেখো যেতো না চন্দ্রালোকে।<br />[৩]<br />ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর কিতাব<br />‘খাসায়েসে কোবরায়’ হুজুর সাল্লাল্লাহু<br />তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছায়া ছিল না এই বিষয়ে একটি অধ্যায়<br />রচনা করেছেন এবং এই যাক্ওয়ানের হাদীস<br />বর্ণনা করতঃ বলেন,<br />ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺳﺒﻊ ﻣﻦ ﺧﺼﺎﺋﺼﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻥّ ﻇﻠﻪ ﻛﺎﻥ ﻻ ﻳﻘﻊ ﻋﻠﻰ<br />ﺍﻻﺭﺽ ﻭﺍﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻧﻮﺭﺍ ﻓﻜﺎﻥ ﺍﺫﺍ ﻣﻀﻰ ﻓﻰ ﺍﻟﺸﻤﺲ ﺍﻭ ﺍﻟﻘﻤﺮ ﻻﻳﻨﻈﺮ ﻟﻪ ﻇﻞ<br />অনুবাদঃ ইবনে সাবা বলেছেন, এটা হুজুর সাল্লাল্লাহু<br />তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বৈশিষ্ট্যাবলীর অন্তর্গত যে,<br />হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর<br />ছায়া যমীনে পড়তো না এবং তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ নূর।<br />তিনি যখন সূযালোক কিংবা চন্দ্রালোকে চলতেন, তাঁর<br />ছায়া দেখা যেতো না। [৪]<br />ইমাম কাযী আয়ায রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,<br />ﻭﻣﺎ ﺫﻛﺮ ﻣﻦ ﺍﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻻ ﻇﻞ ﻟﺸﺨﺼﻪ ﻓﻰ ﺷﻤﺲ ﻭﻻ ﻗﻤﺮ ﻻﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻧﻮﺭﺍ ﻭﺍﻥ<br />ﺍﻟﺬﺑﺎﺏ ﻛﺎﻥ ﻻﻳﻘﻊ ﻋﻠﻰ ﺟﺴﺪﻩ ﻭﻻ ﺛﻴﺎﺑﻪ<br />অনুবাদঃ তাঁর নবুওয়াত ও রিসালাতের প্রমাণাদির মধ্যে এটাও<br />উল্লেখ করা হয়েছে যে, তাঁর শরীর মোবারকের<br />ছায়া হতো না, না সূর্যালোকে না চন্দ্রালোকে। কারণ<br />তিনি ছিলেন নূর । তাঁর শরীর ও পোষাকে মাছি বসত না। [৫]<br />আল্লামা ইমাম শিহাবুদ্দিন খিফাজী মিশরী তাঁর ব্যাখ্যায় বলেন,<br />হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামা এর ছায়া মুবারক তাঁর<br />মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্বের কারণে যমীনে ফেলা হয়নি।<br />অথচ আশ্চর্য সমস্ত মানুষ তাঁর ছায়ায় বিশ্রাম করছে! অতঃপর<br />বলেন, কুরআনুল কারীমের উক্তি মতে তিনি উজ্জ্বল নূর<br />এবং নূরের কোন ছায়া থাকে না। [৬]<br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj-Tcca1PosqS3tdD9P2OnUm8eeyrYWogAMqZU_52-7FazCGF3HiIvFzUQd6D13J3iD6bn05M6vdFStUptWYsCzn147gKCWomCrZwiEPq9QTgR0GAt7WTupddEKTlLNAWViGK4BsB9Du0pM/s1600/FB_IMG_1524074796053-564x350.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="350" data-original-width="564" height="198" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj-Tcca1PosqS3tdD9P2OnUm8eeyrYWogAMqZU_52-7FazCGF3HiIvFzUQd6D13J3iD6bn05M6vdFStUptWYsCzn147gKCWomCrZwiEPq9QTgR0GAt7WTupddEKTlLNAWViGK4BsB9Du0pM/s320-rw/FB_IMG_1524074796053-564x350.jpg" width="320" /></a></div><br />আল্লামা ইমাম আহমদ ইবনে মুহাম্মদ<br />কুস্তোলানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,<br />ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻟﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻇﻞ ﻓﻰ ﺷﻤﺲ ﻭﻻ ﻗﻤﺮ<br />অনুবাদঃ বিশ্বকুল সরদার হুজুর সাল্লাল্লাহু<br />তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র ছায়া না সূর্যালোকে ছিল,<br />না চন্দ্রালোকে ।[৭]<br />ইমাম মুহাম্মদ জুরকানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,<br />ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻟﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻇﻞ ﻓﻰ ﺷﻤﺲ ﻭﻻ ﻗﻤﺮ ﻻﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻧﻮﺭﺍ<br />অনুবাদঃ হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াল্লাম-এর<br />ছায়া না সূর্যালোকে ছিল, না চন্দ্রালোকে। কারণ তিনি ছিলেন<br />নূর।[৮]<br />আল্লামা হুসাইন ইবনে মুহা্ম্মদ<br />দিয়ারেবকরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,<br />ﻟﻢ ﻳﻘﻊ ﻇﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻻﺭﺽ ﻭﻻ ﺭﺍﺉ ﻟﻪ ﻇﻞ ﻓﻰ ﺷﻤﺲ ﻭﻻ ﻗﻤﺮ<br />অনুবাদঃ হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র<br />ছায়া যমীনে পরতো না, না সূর্যালোকে দেখা যেত<br />না চন্দ্রালোকে।[৯]<br />ইমাম ইবনে হাজার মাক্কী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,<br />ﻭﻣﻤﺎ ﻳﺆﻳﺪ ﺍﻧﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺿﺎﺀ ﻧﻮﺭﺍ ﺍﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﺍﺫﺍ ﻣﺸﻰ ﻓﻰ<br />ﺍﻟﺸﻤﺲ ﻭ ﺍﻟﻘﻤﺮ ﻻ ﻳﻈﻬﺮ ﻟﻪ ﻇﻞ ﻻﻧﻪ ﻻ ﻳﻈﻬﺮ ﺍﻻ ﺍﻟﻜﺜﻴﻒ ﻭﻫﻮ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ<br />ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺪ ﺧﻠﺼﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﺳﺎﺋﺮ ﺍﻟﻜﺜﺎ ﻓﺎﺕ ﺍﻟﺠﺴﻤﺎﻧﻴﺔ ﻭﺳﻴﺮﻩ ﻧﻮﺭﺍ ﺻﺮﻓﺎ<br />ﻻ ﻳﻈﻬﺮ ﻟﻪ ﻇﻞ ﺍﺻﻼ<br />অনুবাদঃ হুজুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পূর্ণ নূর<br />হওয়ার সমর্থন এ থেকে হয় যে,<br />সূযালোকে কিংবা চন্দ্রালোকে তাঁর ছাঁয়া হতো না। কারণ<br />ছাঁয়া তো হয় জড় দেহের আর হুজুর সাল্লাল্লাহু<br />তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামককে আল্লাহ তা’আলা সকল শারীরিক<br />জড়তা থেকে নিখুঁত করতঃ সম্পূর্ণ নূরে পরিপূর্ণ<br />করেছিলেন। অতএব হুজুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ‍ওয়াসাল্লাম-<br />এর কোন ছাঁয়া ছিল না। [১০]<br />ইমামে রব্বানী মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,<br />হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র ছায়া ছিল না। কারণ ইহ<br />জগতে প্রত্যেক ব্যক্তির ছায়া তাঁর চেয়েও সূক্ষ্মতর হয়।<br />যেহেতু হুজুর সাল্লাল্লাহু<br />আলাইহি ওয়া সাল্লামা অপেক্ষা সূক্ষ্মতম কোন বস্তু<br />জগতে নাই, অতএব হুজুরের হুজুরের<br />ছায়া কিরুপে হতে পারে ? [১১]<br />শায়খুল মুহাদ্দেসীন হযরত মাওলানা শাহ আব্দুল হক্ব<br />মুহাদ্দীসে দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,<br />ﻭﻧﮧ ﺑﻮﺩ ﻣﺮﺍﮞ ﺣﻀﺮﺕ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺭﺍﺳﺎﯾﮧ ﻧﮧ ﺩﺭ ﺁﻓﺘﺎﺏ ﻭﻧﮧ ﺩﺭ<br />ﻗﻤﺮ<br />অনুবাদঃ হুজুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র<br />ছায়া না সূর্যালোকে ছিল, না চন্দ্রালোকে। [১২]<br />এতক্ষন তো আমরা এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কিরাম,আসলাফে কিরাম<br />এবং আইয়াম্মায়ে মুসলিমাহ এর উক্তি সহ জানলাম। অতীব<br />পরিতাপের বিষয় যে, বর্তমান সমাজে নব্য আবির্ভূত হওয়া কিছু<br />বিদ’আতী সম্প্রদায় দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট এই<br />বিষয়টিকে অস্বীকার করে আসছে। তাই এবার জানবো এ<br />বিষয়কে অস্বীকারকারীদের মুরুব্বীদের উক্তি।<br />বিরোধীগণদের মুরুব্বী আশরাফ<br />আলী থানবী বলেছে,<br />ﯾﮧ ﺑﺎﺕ ﻣﺸﮭﻮﺭ ﮨﮯ ﮐﮧ ﺣﻀﻮﺭ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭ ﺳﻠﻢ ﮐﮯ ﺳﺎﯾﮧ ﻧﮩﯿﮟ ﺗﮭﺎ<br />‏( ﺍﺳﻠﺌﮯ ﮐﮧ ‏) ﮨﻤﺎﺭﮮ ﺣﻀﻮﺭ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺳﺮﺗﺎ ﭘﺎ ﻧﻮﺭ ﺗﮭﮯ۔<br />অনুবাদঃ এ কথা প্রসিদ্ধ যে, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু<br />আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র কোন ছায়া ছিল না। (আর তা এজন্য যে)<br />আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু<br />আলাইহি ওয়া সাল্লামা আপাদমস্তক নূর ছিলেন।[১৩]<br />বিরোধীদের অন্য মুরব্বী রশিদ আহমদ<br />গাঙ্গুহী বলেছে,<br />ﻭﺣﻖ ﺗﻌﺎﻟﯽ ﺍﻥ ﺟﻨﺎﺏ ﺳﻼﻣﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﺭﺍﻧﻮﺭ ﻓﺮﻣﻮﺩ ﻭ ﺑﮧ ﺗﻮﺍﺗﺮ ﺛﺎﺑﺖ ﺷﺪ ﮐﮧ ﺍﮞ<br />ﺣﻀﺮﺕ ﻋﺎﻟﯽ ﺳﺎﯾﮧ ﻧﮧ ﺩﺍﺷﺘﻨﺪ ﻇﺎﮬﺮ ﺍﺳﺖ ﮐﮧ ﺑﺠﺰ ﻧﻮﺭ ﮬﻤﮧ ﺍﺟﺴﺎﻡ ﻇﻞ ﻣﯽ<br />ﺩﺍﺭﻧﺪ<br />অনুবাদঃ আল্লাহ তায়ালা তাঁকে নূর ফরমায়েছেন। আর<br />সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, তাঁর (সাল্লাল্লাহু<br />আলাইহি ওয়া সাল্লামা) ছায়া ছিল না এবং প্রকাশমান যে, নূর ব্যতীত<br />সমুদয় জড় দেহের ছায়া থাকে। [১৪]<br />আশা রাখছি উপরোক্ত<br />আলোচনা থেকে সত্যান্বেষী মহল উপকৃত হবেন।<br />মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে সত্য বুঝার<br />এবং তাতে অনড় থাকার তাওফিক দিন। আমিন,বিহুরমাতি সাইয়্যিদিল<br />মুরসালিন।<br />তথ্যসূত্রঃ<br />———————————<br />১। তাফসীরে মাদারিক,পৃষ্ঠা-৩২১<br />২। জুরকানি আলাল মাওয়াহিব,খন্ড৪ পৃষ্ঠা-২২০,শরহে শামায়িল লিল্<br />মুনাদী,খন্ড ১ পৃষ্ঠা-৪৭<br />৩। তিরমিযী ফি নাওয়াদিরিল উসূল, যুরকানী আলাল<br />মাওয়অহিব,খন্ড-৪,পৃষ্ঠা-২৪০<br />৪। যুরকানী আলাল মাওয়াহিব,খন্ড-৪,<br />পৃষ্ঠা-২০২,খাসায়েসে কোবরা খন্ড-১ পৃষ্ঠা-৬৮<br />৫। শিফা শরীফ ,খন্ড-১,পৃষ্ঠা-২৪২<br />৬। নাসীমুর রিয়ায<br />৭। জুরকানী আলাল মাওয়াহিব খন্ড-৪ পৃষ্ঠা-২২০<br />৮। জুরকানী খন্ড-৪,পৃষ্ঠা-২২০<br />৯। কিতাবুল খামীস ফি আহওয়ালী আনফাসে নাফীস<br />১০। আফযালুল কুরা<br />১১। মাকতুবাত শরীফ<br />১২। মাদারিজুন্নবুয়ত,পৃষ্ঠা-২৬<br />১৩। শুকরুন নে’মাতি বিযিকরির রাহমাতির রাহমাতি<br />১৪। ইমদাদুস সলুক, পৃষ্ঠা-৮৫<br /><br /><br /></div>

যার ছায়া জমীনে পড়ে না

[আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আ’লা রাসূলিহীল কারীম, ওয়া আ’লা আলিহী ওয়া আসহাবিহী আজমাঈন] স্রষ্টার সৃষ্টিজগতের মাঝে...

Read more »

যার ছায়া জমীনে পড়ে না

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"> [আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু<br /> আ’লা রাসূলিহীল কারীম,<br /> ওয়া আ’লা আলিহী ওয়া আসহাবিহী আজমাঈন]<br /> স্রষ্টার সৃষ্টিজগতের মাঝে তাঁর নিকট<br /> সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন,<br /> আমাদের আক্বা, সাইয়্যেদুল মুরসালিন,<br /> খাতামুন নাবিয়্যিন হুজুর পুরনূর হযরত মুহাম্মাদুর<br /> রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা।<br /> পৃথিবী নামক ধরায় ইসলামকে পরিপূর্ণতা দান<br /> করতে তিনি প্রকাশিত হন শেষ<br /> নবী হিসেবে সকল নবীগণের<br /> শেষে। তাঁর অসংখ্য অগণিত মু’জিযার<br /> সমারোহ ঘটেছিল সেদিন পৃথিবীর<br /> বুঁকে। যা কিনা তাঁর প্রতি খোদা তায়ালা’র<br /> প্রদত্ত নবুওয়তেরই প্রমাণ বহন করে।<br /> এমন এমন সব মু’জিযা’র ধারক এবং বাহক<br /> ছিলেন তিনি, যা কিনা পূর্ববর্তী কোন<br /> আম্বিয়ায়ে আলাইহিমুস সালামকে দান<br /> করা হয়নি। এমন অজস্র মু’জিযার মধ্যে অন্যতম মু’জিযা ছিল,<br /> নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র কোন ছায়া ছিল না।<br /> যমীনে যখন হাটতেন, সূর্য বা চন্দ্র যা কিছুই হোক<br /> না কেন, কোন কিছুতেই তাঁর ছায়া পড়তো না। কারণ<br /> তিনি ছিলেন ‘নূর’। আর নূরের তো কোন ছায়া থাকে না। এ<br /> যেন কুর’আনের সেই আয়াতেরই বাস্তব প্রতিফলন,<br /> যেখানে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করছেন,<br /> অর্থাৎ নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ<br /> থেকে একটা নূর এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে। (সূরা মায়িদা আয়াত-<br /> ১৫)<br /> এ বিষয়ে আরো পরিস্কার হতে আমারা এখন প্রামাণ্য<br /> আকারে জানার চেষ্টা করবো। যাতে উল্লেখ<br /> থাকবে হাদীস শরীফ সহ আইয়াম্মায়ে কিরামের<br /> উক্তি সর্বশেষে থাকবে এ বিষয়ে বিরোধীগণের<br /> মুরুব্বীদের উক্তি।<br /> আল্লামা নাসাফী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর<br /> ‘তাফসীরে মাদারীক’ গ্রন্থে খলিফাতুর রাসূল হযরত ওসমান<br /> রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণনা করেন,<br /> ﻗﺎﻝ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺎﺍﻭﻗﻊ ﻇﻠﻚ ﻋﻠﻰ ﺍﻻﺭﺽ ﻟﺌﻼ ﻳﻀﻊ ﺍﻧﺴﺎﻥ<br /> ﻗﺪ ﻣﻪ ﻋﻠﻰ ﺫﻟﻚ ﺍﻟﻈﻞ<br /> অনুবাদঃ হযরত উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হুজুর সাল্লাল্লাহু<br /> তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে আরজ করলেন,<br /> আল্লাহ তা’আলা আপনার<br /> ছায়া যমীনে ফেলেননি যাতে কোন মানুষ তার উপর<br /> পা রাখতে না পারে। [১]<br /> যুগবরেণ্য ইমাম সায়্যিদিনা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক ও<br /> মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ<br /> ইবনে জাওযী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইবনে আব্বাস<br /> রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন,<br /> ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻟﻠﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻇﻞ ﻭﻟﻢ ﻳﻘﻢ ﻣﻊ ﺍﻟﺸﻤﺲ ﻗﻂ ﺍﻻﻏﻠﺐ<br /> ﺿﻮﺋﻪ ﺿﻮﺀ ﺍﻟﺸﻤﺲ ﻭﻟﻢ ﻳﻘﻢ ﻣﻊ ﺳﺮﺍﺝ ﻗﻂ ﺍﻻﻏﻠﺐ ﺿﻮﺋﻪ ﺿﻮﺀ ﺍﻟﺴﺮﺍﺝ<br /> অনুবাদঃ হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছায়া ছিল না।<br /> তিনি যখনই সূর্যের মুখোমুখি দন্ডায়মান হতেন তাঁর নূর<br /> সূর্যের আলোর উপর প্রবল থাকত এবং প্রদীপের<br /> আলোতে দন্ডায়মান হলে তাঁর নূরের জ্যোতি ওটার<br /> দীপ্তিতে ম্লান করে দিত।[২]<br /> তাবেয়ী হযরত যাক্ওয়ান রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন,<br /> ﺍﻥًّ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻳﺮﻯ ﻟﻪ ﻇﻞ ﻓﻰ ﺷﻤﺲ ﻭﻻ ﻗﻤﺮ<br /> অনুবাদঃ হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর<br /> ছায়া না সূযালোকে দেখো যেতো না চন্দ্রালোকে।<br /> [৩]<br /> ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর কিতাব<br /> ‘খাসায়েসে কোবরায়’ হুজুর সাল্লাল্লাহু<br /> তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছায়া ছিল না এই বিষয়ে একটি অধ্যায়<br /> রচনা করেছেন এবং এই যাক্ওয়ানের হাদীস<br /> বর্ণনা করতঃ বলেন,<br /> ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺳﺒﻊ ﻣﻦ ﺧﺼﺎﺋﺼﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻥّ ﻇﻠﻪ ﻛﺎﻥ ﻻ ﻳﻘﻊ ﻋﻠﻰ<br /> ﺍﻻﺭﺽ ﻭﺍﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻧﻮﺭﺍ ﻓﻜﺎﻥ ﺍﺫﺍ ﻣﻀﻰ ﻓﻰ ﺍﻟﺸﻤﺲ ﺍﻭ ﺍﻟﻘﻤﺮ ﻻﻳﻨﻈﺮ ﻟﻪ ﻇﻞ<br /> অনুবাদঃ ইবনে সাবা বলেছেন, এটা হুজুর সাল্লাল্লাহু<br /> তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বৈশিষ্ট্যাবলীর অন্তর্গত যে,<br /> হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর<br /> ছায়া যমীনে পড়তো না এবং তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ নূর।<br /> তিনি যখন সূযালোক কিংবা চন্দ্রালোকে চলতেন, তাঁর<br /> ছায়া দেখা যেতো না। [৪]<br /> ইমাম কাযী আয়ায রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,<br /> ﻭﻣﺎ ﺫﻛﺮ ﻣﻦ ﺍﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻻ ﻇﻞ ﻟﺸﺨﺼﻪ ﻓﻰ ﺷﻤﺲ ﻭﻻ ﻗﻤﺮ ﻻﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻧﻮﺭﺍ ﻭﺍﻥ<br /> ﺍﻟﺬﺑﺎﺏ ﻛﺎﻥ ﻻﻳﻘﻊ ﻋﻠﻰ ﺟﺴﺪﻩ ﻭﻻ ﺛﻴﺎﺑﻪ<br /> অনুবাদঃ তাঁর নবুওয়াত ও রিসালাতের প্রমাণাদির মধ্যে এটাও<br /> উল্লেখ করা হয়েছে যে, তাঁর শরীর মোবারকের<br /> ছায়া হতো না, না সূর্যালোকে না চন্দ্রালোকে। কারণ<br /> তিনি ছিলেন নূর । তাঁর শরীর ও পোষাকে মাছি বসত না। [৫]<br /> আল্লামা ইমাম শিহাবুদ্দিন খিফাজী মিশরী তাঁর ব্যাখ্যায় বলেন,<br /> হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামা এর ছায়া মুবারক তাঁর<br /> মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্বের কারণে যমীনে ফেলা হয়নি।<br /> অথচ আশ্চর্য সমস্ত মানুষ তাঁর ছায়ায় বিশ্রাম করছে! অতঃপর<br /> বলেন, কুরআনুল কারীমের উক্তি মতে তিনি উজ্জ্বল নূর<br /> এবং নূরের কোন ছায়া থাকে না। [৬]<br /> <div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"> <a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEilHIOhUnQuslG66w5BrHr0N-5_QDdcBRzN6ppg8TkPJmMGbafx8J7QDkRSw9MCblIqPH50OgqTn4iXLn80HDcJWvjZuKOATffSDCpaF_yvJSPcJKFsH0DXMoTbZ5A8QwUbKmxisaKZ1u4A/s1600/FB_IMG_1524074796053-564x350.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="350" data-original-width="564" height="198" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEilHIOhUnQuslG66w5BrHr0N-5_QDdcBRzN6ppg8TkPJmMGbafx8J7QDkRSw9MCblIqPH50OgqTn4iXLn80HDcJWvjZuKOATffSDCpaF_yvJSPcJKFsH0DXMoTbZ5A8QwUbKmxisaKZ1u4A/s320-rw/FB_IMG_1524074796053-564x350.jpg" width="320" /></a></div> <br /> আল্লামা ইমাম আহমদ ইবনে মুহাম্মদ<br /> কুস্তোলানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,<br /> ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻟﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻇﻞ ﻓﻰ ﺷﻤﺲ ﻭﻻ ﻗﻤﺮ<br /> অনুবাদঃ বিশ্বকুল সরদার হুজুর সাল্লাল্লাহু<br /> তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র ছায়া না সূর্যালোকে ছিল,<br /> না চন্দ্রালোকে ।[৭]<br /> ইমাম মুহাম্মদ জুরকানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,<br /> ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻟﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻇﻞ ﻓﻰ ﺷﻤﺲ ﻭﻻ ﻗﻤﺮ ﻻﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻧﻮﺭﺍ<br /> অনুবাদঃ হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াল্লাম-এর<br /> ছায়া না সূর্যালোকে ছিল, না চন্দ্রালোকে। কারণ তিনি ছিলেন<br /> নূর।[৮]<br /> আল্লামা হুসাইন ইবনে মুহা্ম্মদ<br /> দিয়ারেবকরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,<br /> ﻟﻢ ﻳﻘﻊ ﻇﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻻﺭﺽ ﻭﻻ ﺭﺍﺉ ﻟﻪ ﻇﻞ ﻓﻰ ﺷﻤﺲ ﻭﻻ ﻗﻤﺮ<br /> অনুবাদঃ হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র<br /> ছায়া যমীনে পরতো না, না সূর্যালোকে দেখা যেত<br /> না চন্দ্রালোকে।[৯]<br /> ইমাম ইবনে হাজার মাক্কী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,<br /> ﻭﻣﻤﺎ ﻳﺆﻳﺪ ﺍﻧﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺿﺎﺀ ﻧﻮﺭﺍ ﺍﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﺍﺫﺍ ﻣﺸﻰ ﻓﻰ<br /> ﺍﻟﺸﻤﺲ ﻭ ﺍﻟﻘﻤﺮ ﻻ ﻳﻈﻬﺮ ﻟﻪ ﻇﻞ ﻻﻧﻪ ﻻ ﻳﻈﻬﺮ ﺍﻻ ﺍﻟﻜﺜﻴﻒ ﻭﻫﻮ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ<br /> ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺪ ﺧﻠﺼﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﺳﺎﺋﺮ ﺍﻟﻜﺜﺎ ﻓﺎﺕ ﺍﻟﺠﺴﻤﺎﻧﻴﺔ ﻭﺳﻴﺮﻩ ﻧﻮﺭﺍ ﺻﺮﻓﺎ<br /> ﻻ ﻳﻈﻬﺮ ﻟﻪ ﻇﻞ ﺍﺻﻼ<br /> অনুবাদঃ হুজুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পূর্ণ নূর<br /> হওয়ার সমর্থন এ থেকে হয় যে,<br /> সূযালোকে কিংবা চন্দ্রালোকে তাঁর ছাঁয়া হতো না। কারণ<br /> ছাঁয়া তো হয় জড় দেহের আর হুজুর সাল্লাল্লাহু<br /> তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামককে আল্লাহ তা’আলা সকল শারীরিক<br /> জড়তা থেকে নিখুঁত করতঃ সম্পূর্ণ নূরে পরিপূর্ণ<br /> করেছিলেন। অতএব হুজুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ‍ওয়াসাল্লাম-<br /> এর কোন ছাঁয়া ছিল না। [১০]<br /> ইমামে রব্বানী মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,<br /> হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র ছায়া ছিল না। কারণ ইহ<br /> জগতে প্রত্যেক ব্যক্তির ছায়া তাঁর চেয়েও সূক্ষ্মতর হয়।<br /> যেহেতু হুজুর সাল্লাল্লাহু<br /> আলাইহি ওয়া সাল্লামা অপেক্ষা সূক্ষ্মতম কোন বস্তু<br /> জগতে নাই, অতএব হুজুরের হুজুরের<br /> ছায়া কিরুপে হতে পারে ? [১১]<br /> শায়খুল মুহাদ্দেসীন হযরত মাওলানা শাহ আব্দুল হক্ব<br /> মুহাদ্দীসে দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,<br /> ﻭﻧﮧ ﺑﻮﺩ ﻣﺮﺍﮞ ﺣﻀﺮﺕ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺭﺍﺳﺎﯾﮧ ﻧﮧ ﺩﺭ ﺁﻓﺘﺎﺏ ﻭﻧﮧ ﺩﺭ<br /> ﻗﻤﺮ<br /> অনুবাদঃ হুজুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র<br /> ছায়া না সূর্যালোকে ছিল, না চন্দ্রালোকে। [১২]<br /> এতক্ষন তো আমরা এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কিরাম,আসলাফে কিরাম<br /> এবং আইয়াম্মায়ে মুসলিমাহ এর উক্তি সহ জানলাম। অতীব<br /> পরিতাপের বিষয় যে, বর্তমান সমাজে নব্য আবির্ভূত হওয়া কিছু<br /> বিদ’আতী সম্প্রদায় দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট এই<br /> বিষয়টিকে অস্বীকার করে আসছে। তাই এবার জানবো এ<br /> বিষয়কে অস্বীকারকারীদের মুরুব্বীদের উক্তি।<br /> বিরোধীগণদের মুরুব্বী আশরাফ<br /> আলী থানবী বলেছে,<br /> ﯾﮧ ﺑﺎﺕ ﻣﺸﮭﻮﺭ ﮨﮯ ﮐﮧ ﺣﻀﻮﺭ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭ ﺳﻠﻢ ﮐﮯ ﺳﺎﯾﮧ ﻧﮩﯿﮟ ﺗﮭﺎ<br /> ‏( ﺍﺳﻠﺌﮯ ﮐﮧ ‏) ﮨﻤﺎﺭﮮ ﺣﻀﻮﺭ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺳﺮﺗﺎ ﭘﺎ ﻧﻮﺭ ﺗﮭﮯ۔<br /> অনুবাদঃ এ কথা প্রসিদ্ধ যে, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু<br /> আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র কোন ছায়া ছিল না। (আর তা এজন্য যে)<br /> আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু<br /> আলাইহি ওয়া সাল্লামা আপাদমস্তক নূর ছিলেন।[১৩]<br /> বিরোধীদের অন্য মুরব্বী রশিদ আহমদ<br /> গাঙ্গুহী বলেছে,<br /> ﻭﺣﻖ ﺗﻌﺎﻟﯽ ﺍﻥ ﺟﻨﺎﺏ ﺳﻼﻣﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﺭﺍﻧﻮﺭ ﻓﺮﻣﻮﺩ ﻭ ﺑﮧ ﺗﻮﺍﺗﺮ ﺛﺎﺑﺖ ﺷﺪ ﮐﮧ ﺍﮞ<br /> ﺣﻀﺮﺕ ﻋﺎﻟﯽ ﺳﺎﯾﮧ ﻧﮧ ﺩﺍﺷﺘﻨﺪ ﻇﺎﮬﺮ ﺍﺳﺖ ﮐﮧ ﺑﺠﺰ ﻧﻮﺭ ﮬﻤﮧ ﺍﺟﺴﺎﻡ ﻇﻞ ﻣﯽ<br /> ﺩﺍﺭﻧﺪ<br /> অনুবাদঃ আল্লাহ তায়ালা তাঁকে নূর ফরমায়েছেন। আর<br /> সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, তাঁর (সাল্লাল্লাহু<br /> আলাইহি ওয়া সাল্লামা) ছায়া ছিল না এবং প্রকাশমান যে, নূর ব্যতীত<br /> সমুদয় জড় দেহের ছায়া থাকে। [১৪]<br /> আশা রাখছি উপরোক্ত<br /> আলোচনা থেকে সত্যান্বেষী মহল উপকৃত হবেন।<br /> মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে সত্য বুঝার<br /> এবং তাতে অনড় থাকার তাওফিক দিন। আমিন,বিহুরমাতি সাইয়্যিদিল<br /> মুরসালিন।<br /> তথ্যসূত্রঃ<br /> ———————————<br /> ১। তাফসীরে মাদারিক,পৃষ্ঠা-৩২১<br /> ২। জুরকানি আলাল মাওয়াহিব,খন্ড৪ পৃষ্ঠা-২২০,শরহে শামায়িল লিল্<br /> মুনাদী,খন্ড ১ পৃষ্ঠা-৪৭<br /> ৩। তিরমিযী ফি নাওয়াদিরিল উসূল, যুরকানী আলাল<br /> মাওয়অহিব,খন্ড-৪,পৃষ্ঠা-২৪০<br /> ৪। যুরকানী আলাল মাওয়াহিব,খন্ড-৪,<br /> পৃষ্ঠা-২০২,খাসায়েসে কোবরা খন্ড-১ পৃষ্ঠা-৬৮<br /> ৫। শিফা শরীফ ,খন্ড-১,পৃষ্ঠা-২৪২<br /> ৬। নাসীমুর রিয়ায<br /> ৭। জুরকানী আলাল মাওয়াহিব খন্ড-৪ পৃষ্ঠা-২২০<br /> ৮। জুরকানী খন্ড-৪,পৃষ্ঠা-২২০<br /> ৯। কিতাবুল খামীস ফি আহওয়ালী আনফাসে নাফীস<br /> ১০। আফযালুল কুরা<br /> ১১। মাকতুবাত শরীফ<br /> ১২। মাদারিজুন্নবুয়ত,পৃষ্ঠা-২৬<br /> ১৩। শুকরুন নে’মাতি বিযিকরির রাহমাতির রাহমাতি<br /> ১৪। ইমদাদুস সলুক, পৃষ্ঠা-৮৫<br /> <br /> <br /></div>

যার ছায়া জমীনে পড়ে না

[আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আ’লা রাসূলিহীল কারীম, ওয়া আ’লা আলিহী ওয়া আসহাবিহী আজমাঈন] স্রষ্টার সৃষ্টিজগতের ...

Read more »