তালকীন কি? তালকীনের ফজীলত, তালকীন বিদআত নয় সুন্নাহ।
লেখক, সংকলকঃ (Masum Billah Sunny)
ওহাবী সালাফীরা প্রায় সব সময়ই বলে থাকে মৃত ব্যক্তির জন্য কিংবা মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে আল-কুরআন পাঠ করলে তা কোন কাজে আসে না। তাদের ধারণা আমল যার যার। মৃত্যুর পর একজনের জন্য অন্যজনের আমলের সওয়াব প্রেরণ করা হলে তা কোন কাজেই আসে না।
যদিও তাদের অনেকেই ইহা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে তবুও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে তারা কতিপয় ভূল ব্যাখ্যা দিয়েছে। তাই এ বিষয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ রেখে তালকীন সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
তালকীন কি?
═══════
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সুন্নত হল, মৃত্যু শয্যায় শায়িত ব্যক্তিকে [লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ] এর তালকীন দেয়া।
তালকীন দেওয়ার অর্থ হল: তার পাশে বসে তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করা।
তালকীন বিদআত নয় সুন্নাহঃ
═══════════════
তথাকথিত Ahle Haq media এর ওহাবী ব্লগার [লুৎফুর রহমান ফরায়েজী] তালকীন সম্পর্কিত ইমাম তাবারানী হাদিসকে দুর্বল বলে এই আমল করা উচিত নয় বলে ফতোয়া দিয়েছে উক্ত পোস্টে আমি অধম (মাসুম বিল্লাহ সানি) তার উপযুক্ত জবাব দেয়ার চেষ্টা করলাম।
এ বিষয়ে যেহেতু এক জামাত সাহাবায়ে কেরাম থেকে বিভিন্ন সূত্রে ভিন্ন ভিন্ন সনদে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যার একটি দুর্বল হলেও অপরগুলো শক্তিশালী হওয়ায় একে অপরকে শক্তিশালী করে। ফলে সবগুলোর উপর বিশ্বাস রেখে আমল করা যায়। তাছাড়া আমলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদিস গ্রহণযোগ্য এ মর্মে ইমামগণের ইজমা রয়েছে।
তালকীন সম্পর্কিত হাদিস বর্ণনাকারীগণঃ
═══════════════
তালকীনের উদ্দেশ্য ও ফজীলতঃ
═══════════════
👉 মুয়ায বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন:
« مَنْ كَانَ آخِرُ كَلاَمِهِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ »
“যার শেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
★ সুনান আবু দাউদ, অনুচ্ছেদ: তালকীন। [মানঃ সহীহ]
👉 হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্নিত, হযরত (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মৃত্যু পথযাত্রীকে (মৃত্যুর পুর্ব মূহুর্তে) কালিমার তালকীন দান কর৷ কেননা মৃত্যুর সময় যার শেষ কথা হবে [লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ] সে জান্নাতে প্রবেশ করবে৷
★ মুসলিম ২১৬২ : অধ্যায়ঃ মুমূর্ষু ব্যক্তিকে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-এর তালকীন দেয়া। [হাদিসের মানঃ সহিহ]
তালকীন সম্পর্কে বিস্তারিতঃ
═══════════════
👉 ওহাবি সালাফীদের ইমাম ইবনে কাইয়্যেম বলেনঃ
”অতীতকাল থেকে ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরকে কবরে তালকীন করার নিয়ম চলে আসছে। অর্থাৎ,কলেমা-এ-তাইয়্যেবাহ তাঁদেরকে পড়ে শোনানো হয়ে থাকে। ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ যে ইন্তেকালের পরে শুনতে পান, তালকীনের মাধ্যমেও তা প্রমাণিত হয়। এছাড়া তালকীনের দ্বারা ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ উপকৃত হন; তা না হলে তালকীন করার কোনো অর্থ-ই হয় না।
★ [ইবনে কাইয়্যেম কৃত ’কিতাবুর রূহ’, ২০ পৃষ্ঠা]
👉 আবূ সা‘ঈদ খুরদী (রাঃ) ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তারা বলেন,
بَابُ مَا يُقَالُ عِنْدَ مَنْ حَضَرَهُ الْمَوْتُ
عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ وَأَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: لَقِّنُوا مَوْتَاكُمْ لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
পরিচ্ছদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট যা বলতে হয়
রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে যায় (মুমূর্ষু অবস্থায়) তাকে কালিমা ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই) তালকীন দিও।
👉 আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ حَدَّثَنَا أَبُو خَالِدٍ الْأَحْمَرُ عَنْ يَزِيدَ بْنِ كَيْسَانَ عَنْ أَبِي حَازِمٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم لَقِّنُوا مَوْتَاكُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ
রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মুমূর্ষ ব্যক্তিদের “লা ইলাহ ইল্লাল্লাহ”-এর তালকীন দাও।
👉 আনাস বিন মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) এক আনছারী ছাহাবীকে দেখতে গিয়ে বললেন, হে মামা! আপনি ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করুন। তখন সে বলল, মামা, না চাচা? তিনি বললেন, না বরং মামা। সে বলল, আমার জন্য কালেমা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করা উত্তম হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ’।
👉 আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ بِلَالٍ عَنْ عُمَارَةَ بْنِ غَزِيَّةَ عَنْ يَحْيَى بْنِ عُمَارَةَ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم لَقِّنُوا مَوْتَاكُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ
রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মুমূর্ষ ব্যক্তিদের “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু”-এর তালকীন দাও।
👉 হযরত আবূ উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন:
“যখন তোমাদের কোন মুসলমান ভাই মৃত্যুবরণ করে, তাকে কবরে সমাহিত করার পর তোমাদের মধ্যে একজন তার কবরের শিয়রে দাঁড়িয়ে বলবে:
- হে অমুকের ছেলে অমুক! তখন সে তা শুনতে পাবে, কিন্তু উত্তর দিবে না।
- অতঃপর যখন আবারো বলবে: হে অমুকের ছেলে অমুক! তখন মৃত ব্যক্তি সোজা হয়ে বসে পড়বে।
- আবার যখন বলবে: হে অমুকের ছেলে অমুক! তখন সে বলবে: আল্লাহ্ তাআলা তোমার উপর দয়া করুক। তুমি আমাকে শিখিয়ে দাও। কিন্তু মৃত ব্যক্তির একথা তোমরা শুনতে পাবে না। অতঃপর সে (তালকীনকারী) বলবে:
اُذْكُرْ مَاخَرَجْتَ عَلَيْهِ مِنَ الدُّنْيَا: شَهَادَةَ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ (صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم) وَاَنَّكَ رَضِيْتَ بِاللهِ رَبًّا وَّبِالْاِسْلَامِ دِيْنًا وَّ بِمُحَمَّدٍ (صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم) نَبِيًّا وَّ بِالْقُرْاٰنِ اِمَامًا ـ
অনুবাদ: “তুমি তা স্মরণ করো, যা বলে তুমি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছ অর্থাৎ,
- একথা সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ (ﷺ) তাঁর বান্দা ও রাসূল।
এবং এটাও বলো যে,
- তুমি আল্লাহ্কে প্রতিপালক হিসেবে,
- ইসলামকে আল্লাহর মনোনীত ধর্ম হিসেবে,
- হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল হিসেবে এবং
- কুরআন মজীদকে ইমাম হিসেবে মনে-প্রাণে স্বীকৃতি দিয়েছ এবং এর উপর সন্তুষ্ট ছিলে।”
তালকীনকারী এ কথা বলার পর মুনকার-নকীর ফিরিশতাদ্বয় একে অপরের হাত ধরে বলবেন: চলো আমরা চলে যাই। তার পাশে বসে থেকে আমাদের কোন লাভ নেই যাকে লোক দলীল শিখিয়ে দিয়েছে। এক ব্যক্তি রহমতে আলম (ﷺ) এর নিকট আরয করল, যদি তার মায়ের নাম জানা না থাকে, তখন কিভাবে তালকীন করবে? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন: “হাওয়া رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہَا এর দিকে সম্পর্কিত করবে।”
Note : অমুকের ছেলে অমুকের স্থলে মৃত ব্যক্তি ও তার মায়ের নাম নিবে।
👉 ইমাম আহমদ হাম্বল (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরকে তালকীন করা একটি নেক কাজ; মানুষের আ’মল থেকে তা প্রমাণিত হয়। তালকীন সম্পর্কে মু’জাম তাবরানী গ্রন্থের মধ্যে হযরত আবূ উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি হাদীসও রয়েছে। হাদীসটি হলো, নূরনবী (ﷺ) এরশাদ ফরমান: ‘কোনো ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কবরে মাটি দেয়ার পর তোমাদের একজন তাঁর শিয়রের দিকে দাঁড়িয়ে তাঁর নাম ও তাঁর মায়ের নাম ধরে ডাক দেবে। কেননা, ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তি তা শুনতে পান, কিন্তু উত্তর দিতে পারেন না। দ্বিতীয়বার তাঁর নাম ধরে ডাক দিলে তিনি উঠে বসেন। আর তৃতীয়বার ডাক দিলে তিনি উত্তর দেন, কিন্তু তোমরা তা শুনতে পাও না। তোমরা তালকীনের মাধ্যমে বলবে, আল্লাহ পাক আপনার প্রতি রহম করুন, আমাদের তালকীনের দ্বারা আপনি উপকৃত হোন। তারপর বলবে, আপনি তাওহীদ ও রেসালাতের যে স্বীকৃতি দিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, তা স্মরণ করুন। অর্থাৎ,
- লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ বাক্যটি পাঠ করুন ও তা স্মরণ রাখুন।
- আল্লাহ্কে প্রতিপালক হিসেবে,
- দ্বীন ইসলাম,
- হযরত মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নবুয়্যত এবং
- কুরআন মজীদ যে আমাদের পথপ্রদর্শনকারী,
এ সব বিষয়ে যে আপনি রাজি ছিলেন, তাও স্মরণ করুন।’
এই তালকীন শুনে মুনকার-নকীর ফেরেশতা দু’জন সেখান থেকে সরে যান এবং বলেন, চলো আমরা ফিরে যাই। এর কাছে থাকার আমাদের আর কোনো প্রয়োজন নেই। এ ব্যক্তিকে তাঁর ঈমান ও আকীদা-বিশ্বাস সম্পর্কে সব কিছুই স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। আর তাই তিনি তালকীনের মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন।”
★ [ইবনে কাইয়্যেম কৃত ’কিতাবুর রূহ’, ২০ পৃষ্ঠা, বাংলা সংস্করণ]
👉 হযরত মায়াকিল ইবনে ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেনঃ হযরত নবী কারীম (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ
তোমরা তোমাদের মৃতদের উপর সূরা ইয়াসিন পাঠ করো!এতে তার মৃতের যন্ত্রনা হ্রাস পাবে৷ (আবু দাউদ ৩১২৩)
👉 আবদুল্লাহ বিন জা‘ফার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا أَبُو عَامِرٍ حَدَّثَنَا كَثِيرُ بْنُ زَيْدٍ عَنْ إِسْحَقَ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ جَعْفَرٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم لَقِّنُوا مَوْتَاكُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ الْحَلِيمُ الْكَرِيمُ سُبْحَانَ اللهِ رَبِّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ الْحَمْدُ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَيْفَ لِلْأَحْيَاءِ قَالَ أَجْوَدُ وَأَجْوَدُ
রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মুমূর্ষ ব্যক্তিদের,
-“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালীমুল কারীম, সুবহানাল্লাহি রব্বিল আরশিল আযীম, আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন”
এর তালকীন দাও। তারা বলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! জীবিত (সুস্থ) ব্যক্তিদের বেলায় এ দুআ কেমন হবে? তিনি বললেনঃ অধিক উত্তম, অধিক উত্তম।
[হাদিসের মানঃ দুর্বল, আমলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদিস গ্রহণযোগ্য]
মুমূর্ষু ব্যক্তির জন্য করণীয় সম্পর্কে আরো কিছু হাদিসঃ
রাসূল (ﷺ) মুমূর্ষু ব্যক্তিদের তালক্বীন প্রদানে উৎসাহিত করে বলেন,
لَقِّنُوْا مَوْتَاكُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، فَإِنَّ نَفْسَ الْمُؤْمِنِ تَخْرُجُ رَشْحًا، وَنَفَسَ الْكَافِرِ تَخْرُجُ مِنْ شِدْقِهِ، كَمَا تَخْرُجُ نَفْسُ الْحِمَار-
‘তোমরা তোমাদের মৃত্যুপথযাত্রীকে কালেমা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’র তালক্বীন দিবে (অর্থাৎ তার কানের কাছে আস্তে আস্তে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করতে থাকবে)। কেননা মুমিনদের আত্মা ঘর্মাক্ত হয়ে (অর্থাৎ দ্রুত) বের হয়। অপরদিকে কাফিরদের আত্মা গাধার আত্মার ন্যায় চোয়াল দিয়ে বের হয়। [1]
রাসূল (ﷺ) আরো বলেন,
لَقِّنُوا مَوْتَاكُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، فَإِنَّهُ مَنْ كَانَ آخِرُ كَلِمَتِهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ عِنْدَ الْمَوْتِ، دَخَلَ الْجَنَّةَ يَوْمًا مِنَ الدَّهْرِ، وَإِنْ أَصَابَهُ قَبْلَ ذَلِكَ مَا أَصَابَهُ-
‘তোমরা তোমাদের মৃত্যুপথযাত্রীকে কালেমা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’র তালক্বীন দিবে। কেননা মৃত্যুর সময় যার শেষ বাক্য ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ্’ হবে সে কোন এক সময় জান্নাতে প্রবেশ করবে। ইতিপূবে সে যে আমলই করে থাকুক না কেন’।[2]
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِذَا حَضَرْتُمُ الْمَرِيْضَ، أَوِ الْمَيِّتَ، فَقُولُوا خَيْرًا، فَإِنَّ الْمَلَائِكَةَ يُؤَمِّنُوْنَ عَلَى مَا تَقُوْلُوْنَ-
উম্মে সালামা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘কোন অসুস্থ বা মৃত (আসন্ন) ব্যক্তির নিকটে তোমরা হাযির হ’লে তার সম্পর্কে ভাল কথা বলবে। কেননা তোমরা যা বল সে সম্পর্কে ফেরেশতাগণ আমীন বলেন’।[3]
অমুসলিমদেরকেও কালেমা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’র তালক্বীন দেওয়া যাবে। রাসূল (ﷺ)-এর চাচা আবু ত্বালিবের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হ’লে তাকে লক্ষ্য করে বললেন, চাচাজান, ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ কালেমাটি একবার পড়ুন, তাহ’লে আমি আপনার জন্য আল্লাহর নিকট কথা বলতে পারব’।[4]
এছাড়া এক ইহূদী বালক নবী করীম (ﷺ)-এর খিদমত করত। সে একবার অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী করীম (ﷺ) তাকে দেখার জন্য আসলেন। তিনি তার মাথার নিকট বসে তাকে বললেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ কর। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তুমি কালেমা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ কর। সে তখন তার পিতার দিকে তাকাল, যে তার নিকটেই ছিল। পিতা তাকে বলল, আবুল কাসেম [নবী (ﷺ)]-এর কথা মেনে নাও। তখন সে ইসলাম গ্রহণ করল। রাসূল (ﷺ) সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় এরশাদ করলেন, যাবতীয় প্রশংসা সে আল্লাহর, যিনি তাকে জাহান্নাম হ’তে মুক্তি দিলেন’। [5]
এর কিছুক্ষণ পর সে মারা যায়।
ইবনুল মুবারকের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে লোকেরা তাকে বেশী বেশী কালেমার তালক্বীন দেওয়া শুরু করে। তখন তিনি বলেন, তোমরা ভালো কাজ করছ না। আমার মৃত্যুর পর তোমরা লোকদের কষ্টে ফেলে দিবে। তোমরা যখন আমাকে তালক্বীন দিবে আর আমি কালেমা পাঠ করব এবং অন্য কোন কথা বলব না তখন তোমরা আর কিছু বলবে না। আর যদি কথা বলি তাহ’লে আবার তালক্বীন দিবে যাতে শেষ কালেমা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ হয়।[6]
শায়খ ওছায়মীন বলেন, মুমূর্ষু ব্যক্তির অবস্থার উপর ভিত্তি করে তালক্বীন দিতে হবে। সে খাঁটি মুমিন হ’লে বা কাফির হ’লে কালেমা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ পাঠের নির্দেশ দিতে হবে। আর দুর্বল হৃদয়ের মানুষ হ’লে তার নিকট কেবল কালেমা বা অনুরূপ কিছু পাঠ করতে হবে’।[7]
[1]. মু‘জামুল কাবীর হা/১০৪১৭;
ছহীহাহ হা/২১৫১; ছহীহুল জামে‘ হা/৫১৪৯।
[2]. ছহীহ ইবনু হিববান হা/৩০০৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৫১৫০, সনদ ছহীহ।
[3]. মুসলিম হা/৯১৯; মিশকাত হা/১৬১৭।
[4]. বুখারী হা/৩৮৮৪; মুসলিম হা/২৪।
[5]. বুখারী হা/১৩৫৬, ১৩৪২; মিশকাত হা/১৫৭৪।
[6]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৮/৪১৮, শারহুল মুমতে‘ ৫/১৭৭।
[7]. শারহুল মুমতে‘ ৫/১৭৭
লেখক, সংকলকঃ (Masum Billah Sunny)
ওহাবী সালাফীরা প্রায় সব সময়ই বলে থাকে মৃত ব্যক্তির জন্য কিংবা মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে আল-কুরআন পাঠ করলে তা কোন কাজে আসে না। তাদের ধারণা আমল যার যার। মৃত্যুর পর একজনের জন্য অন্যজনের আমলের সওয়াব প্রেরণ করা হলে তা কোন কাজেই আসে না।
যদিও তাদের অনেকেই ইহা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে তবুও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে তারা কতিপয় ভূল ব্যাখ্যা দিয়েছে। তাই এ বিষয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ রেখে তালকীন সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
তালকীন কি?
═══════
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সুন্নত হল, মৃত্যু শয্যায় শায়িত ব্যক্তিকে [লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ] এর তালকীন দেয়া।
তালকীন দেওয়ার অর্থ হল: তার পাশে বসে তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করা।
তালকীন বিদআত নয় সুন্নাহঃ
═══════════════
তথাকথিত Ahle Haq media এর ওহাবী ব্লগার [লুৎফুর রহমান ফরায়েজী] তালকীন সম্পর্কিত ইমাম তাবারানী হাদিসকে দুর্বল বলে এই আমল করা উচিত নয় বলে ফতোয়া দিয়েছে উক্ত পোস্টে আমি অধম (মাসুম বিল্লাহ সানি) তার উপযুক্ত জবাব দেয়ার চেষ্টা করলাম।
এ বিষয়ে যেহেতু এক জামাত সাহাবায়ে কেরাম থেকে বিভিন্ন সূত্রে ভিন্ন ভিন্ন সনদে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যার একটি দুর্বল হলেও অপরগুলো শক্তিশালী হওয়ায় একে অপরকে শক্তিশালী করে। ফলে সবগুলোর উপর বিশ্বাস রেখে আমল করা যায়। তাছাড়া আমলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদিস গ্রহণযোগ্য এ মর্মে ইমামগণের ইজমা রয়েছে।
তালকীন সম্পর্কিত হাদিস বর্ণনাকারীগণঃ
═══════════════
- 👉হযরত মুয়ায বিন জাবাল (রাঃ)
- 👉হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)
- 👉হযরত আবূ উমামা (রাঃ)
- 👉হযরত আবূ সা‘ঈদ খুরদী (রাঃ)
- 👉হযরত আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)
- 👉হযরত আবদুল্লাহ বিন জা‘ফার (রাঃ)
- 👉হযরত মায়াকিল ইবনে ইয়াসার (রাঃ)
- 👉আনাস বিন মালেক (রাঃ)
তালকীনের উদ্দেশ্য ও ফজীলতঃ
═══════════════
👉 মুয়ায বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন:
« مَنْ كَانَ آخِرُ كَلاَمِهِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ »
“যার শেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
★ সুনান আবু দাউদ, অনুচ্ছেদ: তালকীন। [মানঃ সহীহ]
👉 হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্নিত, হযরত (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মৃত্যু পথযাত্রীকে (মৃত্যুর পুর্ব মূহুর্তে) কালিমার তালকীন দান কর৷ কেননা মৃত্যুর সময় যার শেষ কথা হবে [লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ] সে জান্নাতে প্রবেশ করবে৷
★ মুসলিম ২১৬২ : অধ্যায়ঃ মুমূর্ষু ব্যক্তিকে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-এর তালকীন দেয়া। [হাদিসের মানঃ সহিহ]
তালকীন সম্পর্কে বিস্তারিতঃ
═══════════════
👉 ওহাবি সালাফীদের ইমাম ইবনে কাইয়্যেম বলেনঃ
”অতীতকাল থেকে ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরকে কবরে তালকীন করার নিয়ম চলে আসছে। অর্থাৎ,কলেমা-এ-তাইয়্যেবাহ তাঁদেরকে পড়ে শোনানো হয়ে থাকে। ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ যে ইন্তেকালের পরে শুনতে পান, তালকীনের মাধ্যমেও তা প্রমাণিত হয়। এছাড়া তালকীনের দ্বারা ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ উপকৃত হন; তা না হলে তালকীন করার কোনো অর্থ-ই হয় না।
★ [ইবনে কাইয়্যেম কৃত ’কিতাবুর রূহ’, ২০ পৃষ্ঠা]
👉 আবূ সা‘ঈদ খুরদী (রাঃ) ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তারা বলেন,
بَابُ مَا يُقَالُ عِنْدَ مَنْ حَضَرَهُ الْمَوْتُ
عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ وَأَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: لَقِّنُوا مَوْتَاكُمْ لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
পরিচ্ছদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট যা বলতে হয়
রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে যায় (মুমূর্ষু অবস্থায়) তাকে কালিমা ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই) তালকীন দিও।
- তথ্যসূত্রঃ [হাদিসের মানঃ সহিহ]
- ১.সহীহ মুসলিম ৯১৬, ৯১৭,
- অনুচ্ছেদ: মৃত্যু শয্যায় শায়িত ব্যক্তিকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর তালকীন প্রদান।
- ২.আত্ তিরমিযী ৯৭৬,
- ৩.নাসায়ী ১৮২৬,
- ৪.ইবনু মাজাহ্ ১৪৪৪, ১৪৪৫,
- ৫.ইবনু আবী শায়বাহ্ ১০৮৬৪,
- ৬.সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৯৮,
- ৭.শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৬৫,
- ৮.ইরওয়া ৬৮৬,
- ৯.সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫১৪৮।
- ১০.মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদিস নম্বরঃ [1616], অধ্যায়ঃ জানাযা (كتاب الجنائز),
- পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি, পরিচ্ছদঃ মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট যা বলতে হয়।
👉 আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ حَدَّثَنَا أَبُو خَالِدٍ الْأَحْمَرُ عَنْ يَزِيدَ بْنِ كَيْسَانَ عَنْ أَبِي حَازِمٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم لَقِّنُوا مَوْتَاكُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ
রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মুমূর্ষ ব্যক্তিদের “লা ইলাহ ইল্লাল্লাহ”-এর তালকীন দাও।
- তথ্যসূত্রঃ [হাদিসের মানঃ সহিহ]
- ১. মুসলিম ৯১৭
- ২. ইরওয়াহ ৩/১৪৯।
- ৩. সুনানে ইবনে মাজাহঃ অধ্যায় জানাযাহ
- ৬/৩ : পরিচ্ছদঃ মুমূর্ষু ব্যক্তিকে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-এর তালকীন দেয়া, হাদিস ১৪৪৪।
- ৪. সহীহ মুসলিম (ইফাঃ) / অধ্যায়ঃ ১২/ জানাযা সম্পর্কিত (كتاب الجنائز)
- হাদিস নম্বরঃ ১৯৯৭ | 1997 | ۱۹۹۷
- পরিচ্ছদঃ ১. মুমূর্ষকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু এর তালকীন করা।
- উসমান, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়রা ও আমরুন নাকিদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত।
- ৫. সহীহ মুসলিম (ইফাঃ) / অধ্যায়ঃ ১২/ জানাযা সম্পর্কিত (كتاب الجنائز)
- হাদিস নম্বরঃ ১৯৯৬ | 1996 | ۱۹۹٦
- পরিচ্ছদঃ ১. মুমূর্ষকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু এর তালকীন করা। মানঃ সহিহ (Sahih)
- কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... সুলায়মান ইবনু বিলাল (রহঃ) সবাই ঐ সনদে বর্ণনা করেছেন।
👉 আনাস বিন মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) এক আনছারী ছাহাবীকে দেখতে গিয়ে বললেন, হে মামা! আপনি ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করুন। তখন সে বলল, মামা, না চাচা? তিনি বললেন, না বরং মামা। সে বলল, আমার জন্য কালেমা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করা উত্তম হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ’।
- ১.আহমাদ হা/১২৫৮৫;
- ২.আবু ইয়া‘লা হা/৩৫১২;
- ৩.মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৩৯২২, সনদ ছহীহ।
👉 আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ بِلَالٍ عَنْ عُمَارَةَ بْنِ غَزِيَّةَ عَنْ يَحْيَى بْنِ عُمَارَةَ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم لَقِّنُوا مَوْتَاكُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ
রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মুমূর্ষ ব্যক্তিদের “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু”-এর তালকীন দাও।
- তথ্যসূত্রঃ [হাদিসের মানঃ সহিহ]
- ১.মুসলিম ৯১৬,
- ২.তিরমিযী ৯৭৬
- ৩.নাসায়ী ১৮২৬,
- ৪.আবূ দাউদ ৩১১৭,
- ৫.আহমাদ ১০৬১০,
- ৬.ইরওয়াহ ৬৮৬,
- ৭.সুনানে ইবনে মাজাহঃ অধ্যায় জানাযাহ
- ৬/৩ : পরিচ্ছদঃ মুমূর্ষু ব্যক্তিকে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-এর তালকীন দেয়া, হাদিসঃ ১৪৪৫
- ৮.সহীহ মুসলিম (ইফাঃ) / অধ্যায়ঃ ১২/ জানাযা সম্পর্কিত (كتاب الجنائز)
- হাদিস নম্বরঃ ১৯৯৫ | 1995 | ۱۹۹۵
- পরিচ্ছদঃ ১. মুমূর্ষকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু এর তালকীন করা।
- মানঃ সহিহ (Sahih)
- আবূ কামিল জাহদারী ফূযয়াল ইবনু হুসায়ন ও উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত।
👉 হযরত আবূ উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন:
“যখন তোমাদের কোন মুসলমান ভাই মৃত্যুবরণ করে, তাকে কবরে সমাহিত করার পর তোমাদের মধ্যে একজন তার কবরের শিয়রে দাঁড়িয়ে বলবে:
- হে অমুকের ছেলে অমুক! তখন সে তা শুনতে পাবে, কিন্তু উত্তর দিবে না।
- অতঃপর যখন আবারো বলবে: হে অমুকের ছেলে অমুক! তখন মৃত ব্যক্তি সোজা হয়ে বসে পড়বে।
- আবার যখন বলবে: হে অমুকের ছেলে অমুক! তখন সে বলবে: আল্লাহ্ তাআলা তোমার উপর দয়া করুক। তুমি আমাকে শিখিয়ে দাও। কিন্তু মৃত ব্যক্তির একথা তোমরা শুনতে পাবে না। অতঃপর সে (তালকীনকারী) বলবে:
اُذْكُرْ مَاخَرَجْتَ عَلَيْهِ مِنَ الدُّنْيَا: شَهَادَةَ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ (صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم) وَاَنَّكَ رَضِيْتَ بِاللهِ رَبًّا وَّبِالْاِسْلَامِ دِيْنًا وَّ بِمُحَمَّدٍ (صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم) نَبِيًّا وَّ بِالْقُرْاٰنِ اِمَامًا ـ
অনুবাদ: “তুমি তা স্মরণ করো, যা বলে তুমি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছ অর্থাৎ,
- একথা সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ (ﷺ) তাঁর বান্দা ও রাসূল।
এবং এটাও বলো যে,
- তুমি আল্লাহ্কে প্রতিপালক হিসেবে,
- ইসলামকে আল্লাহর মনোনীত ধর্ম হিসেবে,
- হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল হিসেবে এবং
- কুরআন মজীদকে ইমাম হিসেবে মনে-প্রাণে স্বীকৃতি দিয়েছ এবং এর উপর সন্তুষ্ট ছিলে।”
তালকীনকারী এ কথা বলার পর মুনকার-নকীর ফিরিশতাদ্বয় একে অপরের হাত ধরে বলবেন: চলো আমরা চলে যাই। তার পাশে বসে থেকে আমাদের কোন লাভ নেই যাকে লোক দলীল শিখিয়ে দিয়েছে। এক ব্যক্তি রহমতে আলম (ﷺ) এর নিকট আরয করল, যদি তার মায়ের নাম জানা না থাকে, তখন কিভাবে তালকীন করবে? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন: “হাওয়া رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہَا এর দিকে সম্পর্কিত করবে।”
- তথ্যসূত্রঃ
- ১. ইমাম তাবারানীঃ আল মু’জামুল কাবীরঃ ৮ম খন্ড, ২৫০ পৃষ্ঠা, হাদীস-৭৯৭৯
- ২. ইমাম তাবারানীঃ আল মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-৩৯১৮।
- ৩. ফাতাওয়া মাহমুদিয়া-১৩/৭৫-৭৬,
- ৪. কিতাবুন নাওয়াজেল-৬/২২৬
- ৫. ইবনে কাইয়্যেমঃ’কিতাবুর রূহ’, ২০ পৃষ্ঠা, বাংলা সংস্করণ
Note : অমুকের ছেলে অমুকের স্থলে মৃত ব্যক্তি ও তার মায়ের নাম নিবে।
👉 ইমাম আহমদ হাম্বল (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরকে তালকীন করা একটি নেক কাজ; মানুষের আ’মল থেকে তা প্রমাণিত হয়। তালকীন সম্পর্কে মু’জাম তাবরানী গ্রন্থের মধ্যে হযরত আবূ উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি হাদীসও রয়েছে। হাদীসটি হলো, নূরনবী (ﷺ) এরশাদ ফরমান: ‘কোনো ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কবরে মাটি দেয়ার পর তোমাদের একজন তাঁর শিয়রের দিকে দাঁড়িয়ে তাঁর নাম ও তাঁর মায়ের নাম ধরে ডাক দেবে। কেননা, ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তি তা শুনতে পান, কিন্তু উত্তর দিতে পারেন না। দ্বিতীয়বার তাঁর নাম ধরে ডাক দিলে তিনি উঠে বসেন। আর তৃতীয়বার ডাক দিলে তিনি উত্তর দেন, কিন্তু তোমরা তা শুনতে পাও না। তোমরা তালকীনের মাধ্যমে বলবে, আল্লাহ পাক আপনার প্রতি রহম করুন, আমাদের তালকীনের দ্বারা আপনি উপকৃত হোন। তারপর বলবে, আপনি তাওহীদ ও রেসালাতের যে স্বীকৃতি দিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, তা স্মরণ করুন। অর্থাৎ,
- লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ বাক্যটি পাঠ করুন ও তা স্মরণ রাখুন।
- আল্লাহ্কে প্রতিপালক হিসেবে,
- দ্বীন ইসলাম,
- হযরত মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নবুয়্যত এবং
- কুরআন মজীদ যে আমাদের পথপ্রদর্শনকারী,
এ সব বিষয়ে যে আপনি রাজি ছিলেন, তাও স্মরণ করুন।’
এই তালকীন শুনে মুনকার-নকীর ফেরেশতা দু’জন সেখান থেকে সরে যান এবং বলেন, চলো আমরা ফিরে যাই। এর কাছে থাকার আমাদের আর কোনো প্রয়োজন নেই। এ ব্যক্তিকে তাঁর ঈমান ও আকীদা-বিশ্বাস সম্পর্কে সব কিছুই স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। আর তাই তিনি তালকীনের মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন।”
★ [ইবনে কাইয়্যেম কৃত ’কিতাবুর রূহ’, ২০ পৃষ্ঠা, বাংলা সংস্করণ]
👉 হযরত মায়াকিল ইবনে ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেনঃ হযরত নবী কারীম (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ
তোমরা তোমাদের মৃতদের উপর সূরা ইয়াসিন পাঠ করো!এতে তার মৃতের যন্ত্রনা হ্রাস পাবে৷ (আবু দাউদ ৩১২৩)
👉 আবদুল্লাহ বিন জা‘ফার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا أَبُو عَامِرٍ حَدَّثَنَا كَثِيرُ بْنُ زَيْدٍ عَنْ إِسْحَقَ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ جَعْفَرٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم لَقِّنُوا مَوْتَاكُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ الْحَلِيمُ الْكَرِيمُ سُبْحَانَ اللهِ رَبِّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ الْحَمْدُ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَيْفَ لِلْأَحْيَاءِ قَالَ أَجْوَدُ وَأَجْوَدُ
রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মুমূর্ষ ব্যক্তিদের,
-“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালীমুল কারীম, সুবহানাল্লাহি রব্বিল আরশিল আযীম, আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন”
এর তালকীন দাও। তারা বলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! জীবিত (সুস্থ) ব্যক্তিদের বেলায় এ দুআ কেমন হবে? তিনি বললেনঃ অধিক উত্তম, অধিক উত্তম।
[হাদিসের মানঃ দুর্বল, আমলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদিস গ্রহণযোগ্য]
- তথ্যসূত্রঃ
- ১.সুনানে ইবনে মাজাহঃ অধ্যায় জানাযাহ
- ৬/৩ : পরিচ্ছদঃ মুমূর্ষু ব্যক্তিকে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-এর তালকীন দেয়া, হাদিসঃ ১৪৪৫
- ২.মিশকাত ১৬২৬,
- ৩.যঈফাহ ৪৩১৭, কিন্তু মুমূর্ষু ব্যক্তিদেরকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু তালকীন দাও এ বাক্য সহীহ।
- [উক্ত হাদিসের রাবী ইসহাক বিন আবদুল্লাহ বিন জা'ফার সম্পর্কে মুহাদ্দিসগন বলেন, তিনি অপরিচিত]
মুমূর্ষু ব্যক্তির জন্য করণীয় সম্পর্কে আরো কিছু হাদিসঃ
রাসূল (ﷺ) মুমূর্ষু ব্যক্তিদের তালক্বীন প্রদানে উৎসাহিত করে বলেন,
لَقِّنُوْا مَوْتَاكُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، فَإِنَّ نَفْسَ الْمُؤْمِنِ تَخْرُجُ رَشْحًا، وَنَفَسَ الْكَافِرِ تَخْرُجُ مِنْ شِدْقِهِ، كَمَا تَخْرُجُ نَفْسُ الْحِمَار-
‘তোমরা তোমাদের মৃত্যুপথযাত্রীকে কালেমা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’র তালক্বীন দিবে (অর্থাৎ তার কানের কাছে আস্তে আস্তে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করতে থাকবে)। কেননা মুমিনদের আত্মা ঘর্মাক্ত হয়ে (অর্থাৎ দ্রুত) বের হয়। অপরদিকে কাফিরদের আত্মা গাধার আত্মার ন্যায় চোয়াল দিয়ে বের হয়। [1]
রাসূল (ﷺ) আরো বলেন,
لَقِّنُوا مَوْتَاكُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، فَإِنَّهُ مَنْ كَانَ آخِرُ كَلِمَتِهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ عِنْدَ الْمَوْتِ، دَخَلَ الْجَنَّةَ يَوْمًا مِنَ الدَّهْرِ، وَإِنْ أَصَابَهُ قَبْلَ ذَلِكَ مَا أَصَابَهُ-
‘তোমরা তোমাদের মৃত্যুপথযাত্রীকে কালেমা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’র তালক্বীন দিবে। কেননা মৃত্যুর সময় যার শেষ বাক্য ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ্’ হবে সে কোন এক সময় জান্নাতে প্রবেশ করবে। ইতিপূবে সে যে আমলই করে থাকুক না কেন’।[2]
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِذَا حَضَرْتُمُ الْمَرِيْضَ، أَوِ الْمَيِّتَ، فَقُولُوا خَيْرًا، فَإِنَّ الْمَلَائِكَةَ يُؤَمِّنُوْنَ عَلَى مَا تَقُوْلُوْنَ-
উম্মে সালামা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘কোন অসুস্থ বা মৃত (আসন্ন) ব্যক্তির নিকটে তোমরা হাযির হ’লে তার সম্পর্কে ভাল কথা বলবে। কেননা তোমরা যা বল সে সম্পর্কে ফেরেশতাগণ আমীন বলেন’।[3]
অমুসলিমদেরকেও কালেমা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’র তালক্বীন দেওয়া যাবে। রাসূল (ﷺ)-এর চাচা আবু ত্বালিবের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হ’লে তাকে লক্ষ্য করে বললেন, চাচাজান, ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ কালেমাটি একবার পড়ুন, তাহ’লে আমি আপনার জন্য আল্লাহর নিকট কথা বলতে পারব’।[4]
এছাড়া এক ইহূদী বালক নবী করীম (ﷺ)-এর খিদমত করত। সে একবার অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী করীম (ﷺ) তাকে দেখার জন্য আসলেন। তিনি তার মাথার নিকট বসে তাকে বললেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ কর। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তুমি কালেমা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ কর। সে তখন তার পিতার দিকে তাকাল, যে তার নিকটেই ছিল। পিতা তাকে বলল, আবুল কাসেম [নবী (ﷺ)]-এর কথা মেনে নাও। তখন সে ইসলাম গ্রহণ করল। রাসূল (ﷺ) সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় এরশাদ করলেন, যাবতীয় প্রশংসা সে আল্লাহর, যিনি তাকে জাহান্নাম হ’তে মুক্তি দিলেন’। [5]
এর কিছুক্ষণ পর সে মারা যায়।
ইবনুল মুবারকের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে লোকেরা তাকে বেশী বেশী কালেমার তালক্বীন দেওয়া শুরু করে। তখন তিনি বলেন, তোমরা ভালো কাজ করছ না। আমার মৃত্যুর পর তোমরা লোকদের কষ্টে ফেলে দিবে। তোমরা যখন আমাকে তালক্বীন দিবে আর আমি কালেমা পাঠ করব এবং অন্য কোন কথা বলব না তখন তোমরা আর কিছু বলবে না। আর যদি কথা বলি তাহ’লে আবার তালক্বীন দিবে যাতে শেষ কালেমা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ হয়।[6]
শায়খ ওছায়মীন বলেন, মুমূর্ষু ব্যক্তির অবস্থার উপর ভিত্তি করে তালক্বীন দিতে হবে। সে খাঁটি মুমিন হ’লে বা কাফির হ’লে কালেমা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ পাঠের নির্দেশ দিতে হবে। আর দুর্বল হৃদয়ের মানুষ হ’লে তার নিকট কেবল কালেমা বা অনুরূপ কিছু পাঠ করতে হবে’।[7]
[1]. মু‘জামুল কাবীর হা/১০৪১৭;
ছহীহাহ হা/২১৫১; ছহীহুল জামে‘ হা/৫১৪৯।
[2]. ছহীহ ইবনু হিববান হা/৩০০৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৫১৫০, সনদ ছহীহ।
[3]. মুসলিম হা/৯১৯; মিশকাত হা/১৬১৭।
[4]. বুখারী হা/৩৮৮৪; মুসলিম হা/২৪।
[5]. বুখারী হা/১৩৫৬, ১৩৪২; মিশকাত হা/১৫৭৪।
[6]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৮/৪১৮, শারহুল মুমতে‘ ৫/১৭৭।
[7]. শারহুল মুমতে‘ ৫/১৭৭