শবে মিলাদ শবে কদর হতে উত্তম
================
উস্তাযুল মুহাদ্দিসিন আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রাঃ) তদীয় ‘মাসাবাতা মিনাসসুন্নাহ’ নামক কিতাবের ৭৭/৭৮ পৃষ্ঠায় লিখেন-
اذا قلنا انه ولد ليلا فتلك الليلة افضل من ليلة القدر بلاشبهة لان ليلة المولودة ليلة ظهوره صلى الله عليه وسلم وليلة القدر معطاةله০
অর্থাৎ মিলাদ শরীফের রাত্রি শবে কদর হতে যে উত্তম তাতে সন্দেহের অবকাশ মাত্র নেই। কেননা মিলাদ শরীফের রাত আল্লাহর হাবিবের
দুনিয়াতে আবির্ভূত হওয়ার রাত্রি এবং শবে কদর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তা’য়ালা দান করেছেন।
ইমাম কাস্তালানী ‘মাওয়াহিবে লাদুনিয়া’ নামক কিতাবের ১ম জিলদের ২৬/২৭ পৃষ্ঠায় শবে কদর হতে শবে মিলাদ যে উত্তম এর তিনটি দলিল পেশ করেছেন-
احدها ان ليلة المولود ليلة ظهو ره صلى الله عليه وسلم وليلة القدر معطاة له وما شرف بظهور ذات المشرف من اجله اشرف مما شرف بسبب ما اعطيه ولا نزاع فى ذلك فكانت ليلة المولودبهذا الاعتبار افضل০
الثانى ان ليلة القدر شرفت بنزول الملائكة فيها وليلة المولود شرفت بظهوره صلى الله عليه وسلم فيها ومن شرفت به ليلة المولود افضل ممن شرفت بهم ليلة القدر على الاصح المرتضى فتكون ليلة المولود افضل০
الثالث ان ليلة القدر وقع التفضل فيها على امة محمد صلى الله عليه وسلم وليلة المولود الشريف وقع التفضل فيها على سائر الموجودات فهو الذى بعثه الله عز وجل رحمة للعالمين فعمت به النعمة على جميع الخلائق০
অর্থাৎ ১ম দলিল- মিলাদুন্নবীর রাতে আল্লাহর হাবিব এই পৃথিবীতে শুভাগমন করেছেন এবং কদরের রাত তাঁকে দান করা হয়েছে। আর ঐ বিষয়ে কোন বিতর্ক নেই, যে রাত তাঁকে দান করার কারণে সম্মানিত হয়েছে, সে রাত হতে ঐ রাত উত্তম যে রাতে স্বয়ং তিনি আগমন করার
কারণে সম্মানিত হয়েছে। সুতরাং এই দৃষ্টিকোণ থেকে শবে মিলাদ শবে কদর হতে উত্তম।
২য় দলিল- নিশ্চয় কদরের রাত সম্মানিত হয়েছে, ফেরেশতাগণ এই রাতে জমিনে অবতীর্ণ হওয়ার কারণে এবং মিলাদুন্নবীর রাত সম্মানিত হয়েছে, এ রাতে স্বয়ং হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীতে আগমন করার কারণে। যে রাত আল্লাহর হাবিবের আগমনের কারণে সম্মানিত হয়েছে, তা উত্তম ঐ রাত হতে, যে রাতে সম্মানিত হয়েছে ফেরেশতাগণ জমিনে অবতীর্ণ হওয়ার কারণে। এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত যে মিলাদুন্নবীর রাত উত্তম।
৩য় দলিল- নিশ্চয় শবে কদরের ফজিলত শুধুমাত্র উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য খাস পান্তরে শবে মিলাদের ফজিলত সমস্ত মাখলুকাতের জন্য আম বা ব্যাপক। কেননা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তা’য়ালা রাহমাতুল্লিল আলামিন করে প্রেরণ করছেন।
সবিস্তার আলোচনা
(ক) সরকারে কায়েনাত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রাতে হযরত আব্দুল্লাহ এবং হযরত আমিনা রাদিয়াল্লাহু আনহুমার উসিলায় দুনিয়াতে তাশরিফ আনয়ন করেছিলেন সে রাতের নামই হলো ‘শবে মিলাদ’ বা মিলাদ শরীফের রাত এবং শবে মিলাদ আল্লাহর হাবিবের দুনিয়াতে তাশরিফ আনয়ন করার বদৌলতে সম্মানিত হয়েছে। পান্তারে ‘শবে কদর’ বা মহামূল্যবান রাত আল্লাহ পাক সরকারে কায়েনাত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দান করেছেন। প্রকাশ থাকে যে, ‘দানকৃত বস্তু’ যাকে দান করা হয়েছে, সে ব্যক্তি হতে উত্তম হতে পারে না বরং যাকে দান করা হয়েছে সে ব্যক্তিই ‘দানকৃত বস্তু’ হতে উত্তম হয়ে থাকেন। যেহেতু ‘শবে কদর’ আল্লাহর হাবিবকে দান করা হয়েছে, সেহেতু শবে কদর হল ‘দানকৃত’ এবং দানকৃত বস্তু (শবে কদর) হতে যাকে দান করা হয়েছে। (হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিনি যে উত্তম তাতে সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে না।
উত্তম জিনিসের প্রকাশ যেখানে হয় সে জায়গাই প্রকাশিত জিনিসের মর্যাদা অনুযায়ী সম্মান লাভ করে থাকে। যেমন পরশমণি। পরশমণি যেখানে ষ্পর্শ করে সেখানেই তো স্বর্ণরূপে পরিগণিত হয়ে যায়। সুতরাং ‘শবে মিলাদ’(যে রাত্রিতে স্বয়ং নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়াতে আবির্ভূত হয়েছেন) শবে কদর (যে রাত্রিতে হুজুরকে দান করা হয়েছে) হতে উত্তম বলে প্রমাণিত হল।
(খ) অসংখ্য ফেরেশতা জমিনে অবতীর্ণ হওয়ার দরুণ ‘শবে কদর’ সম্মান লাভ করেছে। পান্তরে সরকারে কায়েনাত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়াতে আবির্ভূত হওয়ার তোফায়েলে ‘মিলাদ শরীফের’ রাত সম্মানিত হয়েছে।
দেখুন, জমিনে নূরনবীর আবির্ভাব ও ফেরেশতাগণের অবতরণ উভয়ের মধ্যে কত ব্যবধান!
আল্লাহর হাবিব স্বশরীরে জীবিতাবস্থায় মদীনা তৈয়্যবাতে রওজা পাকে শায়িত আছেন, স্বশরীরে বিশ্বের সর্বত্র পরিভ্রমণ করে থাকেন, তাঁর শরীর মোবারকের সঙ্গে যে মাটি লাগান আছে সে মাটির মর্তবা (সম্মান) আল্লাহ পাকের আরশ হতেও অনেক গুণে বেশি। সুতরাং নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রাতে আবির্ভূত হয়েছেন সে রাতের ফজিলত যে বেশি হবে, এতে কি সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে? কখনই না।
(গ) আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ‘কদরের রাত’ দান করেছেন, শুধুমাত্র উম্মতে মুহাম্মদীর উপর এহসান করার মানসে, সকল সৃষ্ট জীবের উপর নয়। পান্তরে মিলাদ শরীফের রাত্রিতে শুধু উম্মতে মুহাম্মদীর উপরই নয় বরং সমস্ত সৃষ্ট জীবের উপর এহসান করেছেন, কেননা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সিফত বা গুণ ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ অর্থাৎ আল্লাহর হাবিব সমস্ত সৃষ্টির জন্য রহমত, এ কারণেই আল্লাহর নিয়ামত আসমান ও জমিনের সমস্ত সৃষ্টির উপর আম (একরূপ) হয়ে গিয়েছে। সুতরাং মিলাদ শরীফেল রাতে আল্লাহ পাক আম রহমত করেছেন, সেহেতু শবে মিলাদ শবে কদর হতে উত্তম বলে বিবেচিত হয়েছে।