হযরত ইমাম কাবীর আহমাদ রেফায়ী রহঃ [মৃত্যু ৫৭৮ হিজরী] কে ইমাম যাহাবী রহঃ [মৃত্যু ৭৪৮ হিজরী] সীয়ারু আলামিন নুবালা ২১/৭৭ পৃষ্ঠায় বলেন, তিনি ইমামুল কুদওয়াহ, যাহেদ, আলআবেদ, শাইখুল আরেফীন ছিলেন।
♦♦♦ফাজায়েলে হজ্বে বর্ণিত ঘটনাটি হলঃ
শাইখ যাকারিয়া এর লিখিত
‘ফাযায়েলে হজ্ব’ নামক কিতাবে (হজ্জের
সাথে সম্পর্কিত)‘নবী প্রেমের বিভিন্ন
কাহিনী’ নামক শিরনামের অধিনে ১২ নম্বর
কাহিনীটি নিম্নরুপ
বিখ্যাত ছুফী ও বুজুর্গ হজরত শায়েখ
আহমদ রেফায়ী (রাহঃ) ৫৫৫ হিজরী সনে
হজ্ব সমাপন করিয়া জেয়ারতের জন্য মদিনায়
হাজির হন। তিনি রওজা শরিফের সামনে দাড়াইয়া
এ দুইটা বরাত পড়েন —
“দূরে থাকা অবস্থায় আমি আমার রূহকে
হুজুর (ছঃ) এর খেদমতে পাঠাইয়া দিতাম, সে
আমার নায়েব হইয়া আস্তানা শরীফে চুম্বন
করিত। আজ আমি সশরীরে দরবারে হাজির
হইয়াছি। কাজেই হুজুর আপন দস্ত মোবারক
বাড়াইয়া দিন যেন আমার ঠোঁট তাহা চুম্বন
করিয়া তৃপ্তি হাছেল করিতে পারে।”
বয়াত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কবর শরীফ
হইতে হাত মোবারক বাহির হইয়া আসে এবং
হযরত রেফায়ী রাহঃ তাহা চুম্বন করিয়া ধন্য
হন।”
বলা হয় বা কথিত আছে , সেই সময়ে
মসজিদে নববীতে নব্বই হাজার
লোকের সমাগম ছিল। সকলেই বিদ্যুতের
মত হাত মোবারকের চমক দেখিতে পায়।
তাদের মধ্যে মাহবূবে ছোবহানী
হজরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ)
ছিলেন।
{ফাযায়েলে আমাল, ২য় খন্ড, ফাযায়েলে হজ্ব উর্দু-১৩০-১৩১, বাংলা ফাযায়েলে হজ্ব-২৩১}
সালাফের কিতাবে উক্ত ঘটনাটি বিশুদ্ধ সনদে তা বিধৃত হয়েছে।
ইমাম আব্দুল করীম বিন মুহাম্মদ রেফায়ী রহঃ [মৃত্যু ৬২৩ হিজরী] বলেন,
اخبرني شيخنا الامام الحجة القدوة ابو الفرج عمر الفاروثي الواسطي قال حج سيدناوشيخنا السيد احمد الرفاعي عام خمس وخمسين وخمسمائة فلما وصل المدينة…….
ইমাম রেফায়ী রহঃ। তিনি শুনেছেন, ইমাম আবুল ফরজ উমার ফারূছী থেকে। তিনি ইমাম কাবীর রেফায়ী রহঃ থেকে। [সাওয়াদুল আইনাঈন-১০-১১]
ইমাম আব্দুল করীম বিন মুহাম্মদ রেফায়ী রহঃ। [মৃত্যু ৬২৩ হিজরী]
ইমাম যাহাবী রহঃ তার ব্যাপারে বলেন,
شَيْخُ الشَّافِعِيَّةِ، عَالِمُ العَجمِ وَالعَربِ، إِمَامُ الدِّينِ
তিনি শাফী মাযহাবের শায়েখ, আরব আজমের শায়েখ এবং দ্বীনের ইমাম।
ইমাম তাজুদ্দীন সুবকী রহঃ [মৃত্যু ৬৪৩ হিজরী] বলেন,
أظنُ أنّي لم أرَ في بلاد العَجَم مثله
আমি তার মত ব্যক্তি আজমের শহরের কোথাও দেখিনি বলে মনে হয়।
ইমাম নববী রহঃ [মৃত্যু ৬৭৬ হিজরী] বলেন,
الرَّافعيّ من الصالحين المُتَمكّنين، كانت لَهُ كراماتٌ كثيرة ظاهرة.
ইমাম রেফায়ী রহঃ নেক বান্দা, তার অনেক জাহেরী কারামত রয়েছে।
ইমাম ইবনুস সাফফার রহঃ [মৃত্যু ৬৪৮ হিজরী] বলেন,
هُوَ شيخُنا، أمامُ الدِّين وناصر السُّنَّة صِدقًا.
তিনি আমাদের শায়েখ, দ্বীনের ইমাম এবং সুন্নাতের সত্যিকার সাহায্যকারী [যিন্দাকারী] ছিলেন।
দেখুন- সীয়ারু আলামিন নুবালা-২২/২৫২।
তারীখুল ইসলাম লিজযাহাবী-১৩/৭৪২।
ইমাম ইজ্জুদ্দীন আবুল ফরজ উমর আলফারূছী রহঃ। [মৃত্যু ৫৮৫ হিজরী]
ইমাম রেফায়ী রহঃ [মৃত্যু ৬২৩ হিজরী] তার ব্যাপারে বলেন,
ইমাম হুজ্জাত ও কুদওয়াহ। [সাওয়াদুল আইনাঈন-১০]
شيخنا امام الفقهاء وسيد العلماء ابو الفرج عمر الفاروثي
আরেক স্থানে বলেন, আমাদের শায়েখ, ইমামুল ফুক্বাহা, সাইয়্যিদুল উলামা আবুল ফরজ উমর আলফারূছী রহঃ। [সাওয়াদুল আইনাঈন-৮]
ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহঃ [মৃত্যু ৬৭৬ হিজরী] বলেন,
إمام الفقهاء والمحدثين وشيخ أكابر الفقهاء والعلماء العاملين الشيخ عز الدين عمر أبي الفرج الفاروثي الواسطي
ইমাম আহমাদ বিন ইবরাহীম আলফারূছী রহঃ [মৃত্যু ৬৯৪ হিজরী] বলেন,
الامام الفقيه أبي الفرج عمر الفاروثي
ইমাম, ফক্বীহ আবুল ফরজ উমর আলফারূছী রহঃ। [ইরশাদুল মুসলিমীন-৮৮]
ইমাম তাক্বীউদ্দীন আব্দুর রহমান আলআনসারী রহঃ [মৃত্যু ৭৪৪ হিজরী] বলেন,
العارف الكبير ولي الله العلامة السند الثبت الفقيه المقري المحدث أبي الفرج عمر الفاروثي
আলআরেফুল কাবীর, ওয়ালীআল্লাহ, আলমুসনাদ, সাবেত, ফক্বীহ, মুকরী, আলমুহাদ্দিস, আবুল ফরজ উমর ফারূছী রহঃ। [তরয়াকুল মুহিব্বীন-১/৮]
সুতরাং বুঝা গেল, তিনিও সিকা ও মজবুত ব্যক্তি।
ইমাম শায়েখ কাবীর আহমাদ রেফায়ী রহঃ [মৃত্যু ৫৭৮ হিজরী]
তার ব্যাপারে ইমাম যাহাবী রহঃ [মৃত্যু ৭৪৮ হিজরী] বলেন,
الإِمَامُ، القُدْوَةُ، العَابِدُ، الزَّاهِدُ، شَيْخُ العَارِفِيْن
ইমাম, কুদওয়াহ, আবেদ, যাহেদ, শাইখুল আরেফীন। [সিয়ারু আলামিন নুবালা-২১/৭৭]
ইমাম তাযুদ্দীন সুবকী রহঃ [মৃত্যু ৭৭১ হিজরী] বলেন,
أحد أَوْلِيَاء الله العارفين والسادات المشمرين أهل الكرامات الباهرة أَبُو الْعَبَّاس بن أبي الْحسن بن الرِّفَاعِي المغربي
আল্লাহর ওলী, যাহেরী কারামতওয়ালা, আরেফীন ও সাদাতের অন্তর্ভূক্ত। [তাবক্বাতুস শাফেয়িয়্যাহ লিসসুবকী-৬/২৩]
ইমাম ইবনে খাল্লিকান রহঃ [মৃত্যু ৬৮১ হিজরী] এবং ইমাম খালীল বিন আইবেক সাফাদী রহঃ [মৃত্যু ৬৮১ হিজরী এ দুই ইমাম বলেন,
كَانَ رجلا صَالحا شافعيا فَقِيها
তিনি নেক বান্দা শাফেয়ী ফক্বীহ ছিলেন। [তাবক্বাতুস শাফেয়িয়্যাহ লিইবনে কাযী শাইবা-২/৫]
الزَّاهِد الْكَبِير سُلْطَان العارفين فِي زَمَانه
তিনি বড় যাহেদ, তার জমানার সুলতানুল আরেফীন ছিলেন। [আলওয়াফী বিলওয়াফিয়্যাত-৭/১৪৩]
সুতরাং বুঝা গেল যে, এ সনদটি বিশুদ্ধ।
ইমাম রেফায়ী রহঃ [মৃত্যু ৬২৩ হিজরী [সিকা রাবী] যা আলোচনা ইতোপূর্বে গিয়েছে। তিনি বলেন,
শায়েখ আব্দুস শামী আলহাশেমী রহঃ [মৃত্যু ৫৮০ হিজরী] যাকে খোদ ইমাম রেফায়ী রহঃ সনদুল মুহাদ্দিসীন, ইমাম ইজ্জুদ্দীন আলাফারূছী রহঃ [মৃত্যু ৬৯৪ হিজরী] শায়েখুশ শায়েখ এবং ইমাম আবু আব্দুল্লাহ [মৃত্যু ৬৩৭ হিজরী] তাকে শরীফ, সালেহ এবং আবেদ বলে মন্তব্য করেছেন।
[ইরশাদুল মুসলিমীন-২৬৫, তারীখ ইবনে দাবীছী-৭৯, নং-১৪৮]
শায়েখ আব্দুস শামী আলহাশেমী রহঃ যার আসল নাম হল, মুহাম্মদ বিন আব্দুস শামী আলহাশেমী রহঃ। কিন্তু তাকে আব্দুস শামী আলহাশেমী বলা হয়ে থাকে। কোন কোন মুহাদ্দিস তাকে তার কুনিয়্যাত আবু তালিব শারফুদ্দীন বলেও উল্লেখ করেছেন। [ইরশাদুল মুসলিমীন-৯০]
সিকা রাবী আব্দুস শামী রহঃ বলেন,
আমি উক্ত ঘটনার চাক্ষুস সাক্ষ্যি। যাতে হযরত কাবীর আহমাদ রেফায়ী রহঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মুসাফাহা করেছেন। [সাওয়াদুল আইনাঈন-৯-১০]
সুতরাং উক্ত ঘটনাকে ভিত্তিহীন বলাটা পূর্ববর্তীদের কিতাব ও হাকীকত সম্পর্কে অজ্ঞতা ছাড়া আর কী হতে পারে?
যেসব কিতাবে উক্ত ঘটনা এসেছে!
ইমাম আলী বিন আঞ্জাব রহঃ [মৃত্যু ৬৭৪ হিজরী] । যাকে উলামায়ে কেরাম, ইমাম, মুহাদ্দিস, মুআররিখে কাবীর, ফাযেল, আদীব বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। দেখুন- তারীখুল ইসলাম লিজযাহাবী-১৫/২৭৮, তাবক্বাতুল হুফফাজ লিসসুয়ুতী-১/৫১২, নং-১১২৭, তাবক্বাতুস শাফেয়িয়্যাহ লিকাযী শাইবা-২/১৪০]
তিনি তার কিতাবে ৫টি ভিন্ন সনদে কাবীর আহমাদ রেফায়ী রহঃ এর ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন।
[মুখতাছার তারীখুল খুলাফা-৯৭-৯৯]
ইমাম আলী বিন আলহাসান বিন আহমাদ আলওয়াসেতী রহঃ [মৃত্যু ৭৩৩ হিজরী]। যাকে হাফেজ জাহাবী রহঃ ইমামুল কুদওয়াহ, আলকানিত্ব, যাহেদ এবং বড় শানওয়ালা বলে মন্তব্য করেছেন। [মু’জামু শুয়ুখুল কাবীর লিজযাহাবী-৩৬৫, আদদুরারুল কামীনাহ লিইবনে হাজার-৩/৩৭, নং-৮২]
তিনিও তার কিতাব “খুলাসাতুল আকছীর ফী নাসীবে সাইয়্যিদুনা রেফায়ী আলকাবীর” নামক গ্রন্থে উক্ত ঘটনা এনেছেন। [খুলাসাতুল আকছীর-৩০]
মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আলমাখজূমী রহঃ [মৃত্যু ৮৮৫ হিজরী]। যিনি নিজের সময়কার শাইখুল ইসলাম ছিলেন। [আলআলাম লিযযারকালী-৬/২৩৮]
তিনিও তার কিতাব “সিহাহুল আখবার” নামক গ্রন্থে শায়েখ রেফায়ী রহঃ এর ঘটনাটি সনদসহ উল্লেখ করেছেন। [সিহাউল আখবার-৬৯]
ইমাম ইজ্জুদ্দীন আহমাদ বিন ইব্রাহীম আলফারূছী রহঃ [মৃত্যু ৬৯৪ হিজরী]। যাকে ইমাম যাহাবী রহঃ ইমাম, মুকরী, ওয়ায়েজ, মুফাসসির, খতীব, শাইখুশ শায়েখ, ফক্বীহ, সালাফী, মুদাররিস, কিরাতের অভিজ্ঞ, মুফতী, আবেদ এবং সুফী বলেছেন। [তারীখুল ইসলাম-১৫/৭৮২]
এই ইমাম মুফতী শায়েখও তার কিতাব “ইরশাদুল মুসলিমীন” এ এ ঘটনা সনদসহ বর্ণনা করেছেন। [ইরশাদুল মুসলিমীন-৮৮]
শায়েখ ইজ্জুদ্দীন আহমাদ সাঈদ রহঃ। [মৃত্যু ৬৭০ হিজরী] তিনিও তার কিতাবে উক্ত ঘটনা নকল করেছেন। দেখুন-আলমাআরেফুল মুহাম্মাদিয়া-৫৯]
শায়েখ শরফুদ্দীন মুহাম্মদ বিন আব্দুস শামী রহঃ [মৃত্যু ৫৮০ হিজরী]। তিনিও তার কিতাবে উক্ত ঘটনা বর্ণনা করেছেন। দেখুন- আলবুরহানুল মুআইয়্যিদ-১২, ইরশাদুল মুসলিমীন-১৫৪]
শায়েখ মুহাম্মদ বিন আব্দুস শামী রহঃ শায়েখ কাবীর রেফায়ী রহঃ এর ছাত্র ছিলেন। সুতরাং তার বর্ণনাটির সনদেরও কোন প্রয়োজন নেই।
হাফেজ তাক্বীউদ্দীন আব্দুর রহমান আলওয়াসেতী রহঃ [মৃত্যু ৭৪৪ হিজরী] এর মত হাফিজে হাদীস ও মুহাদ্দিস তার কিতাবে উক্ত ঘটনা উদ্ধৃত করেছেন। দেখুন-তরয়াকুল মুহিব্বীন-১/১২]
ইমাম, হাফিজ, মুহাদ্দিস আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী রহঃ [মৃত্যু ৯১১ হিজরী] যাকে উলামাগণ ইমাম, হাফিজ, তাজুল মুফাসসিরীন বলে মন্তব্য করেছেন। তিনিও তার কিতাবে উক্ত ঘটনা উদ্ধৃত করেছেন। দেখুন-তানবীরুল হালক লিসসুয়ূতী-৫১]
এই রেসালা সুয়ুতী রহঃ এর কিতাব “আলহাওয়ী লিলফাতাওয়া” গ্রন্থের মাঝে বিদ্যমান। যেখান থেকে শায়খুল হাদীস জাকারিয়া রহঃ ফাযায়েলে হজ্বে নকল করেছেন। সেই সাথে উক্ত কিতাবের রেফারেন্সও উল্লেখ করেছেন।
আল্লামা আহমাদ বিন মুহাম্মদ আলওয়াত্রী রহঃ [মৃত্যু ৯৮০ হিজরী]। যাকে উলামায়ে কেরাম ইমামুল কাবীর, আল্লামা, আরিফবিল্লাহ ইত্যাদি বলে মন্তব্য করেছেন। দেখুন- আলআলাম লিযযিরকালী-১/২৩৪, হিলয়াতুল বাশার-১৩]
তিনিও তার কিতাব “রউজাতুন নাজিরীন” এ উক্ত ঘটনা নকল করেছেন। দেখুন-রউজাতুন নাজিরীন-৫৪]
ইমাম মুহাম্মদ বিন আব্দুর রউফ আলমানায়ী রহঃ [মৃত্যু ১০৩১ হিজরী]। যাকে উলামাগণ আরিফবিল্লাহ, উস্তাজুল কাবীর, ইমামুল কাবীর, আলিম এবং দ্বীন ও ফুনুনের বড় উলামা বলে মন্তব্য করেছেন। [খুলাসাতুল আছার-২/১৯৩, আলআলাম লিযযিরকালী-৬/২০৪]
তিনিও তার কিতাবে উক্ত ঘটনা নকল করেছেন। দেখুন- আলকাওয়াকিবুদ দুররিয়্যাহ-২/২২০]
আমরা মাত্র দশটি কিতাবের রেফারেন্স পেশ করলাম। যেসব কিতাবে উক্ত ঘটনাটি নকল করা হয়েছে। অনেকেই বিশুদ্ধ সনদসহ উল্লেখ করেছেন। লম্বা না হলে আরো পেশ করা হতো। সালাফের কিতাবের মাঝে প্রায় ৫০টি কিতাবের উর্দ্ধে কিতাবের মাঝে উক্ত ঘটনাটি নকল করা হয়েছে।
এসব মুহাদ্দিস, মুহাক্কিক, ও বড় বড় শায়েখগণ তাদের কিতাবে সনদসহ তা নকল করেছেন। এরপরও যদি কোন অন্ধ উক্ত ঘটনাটিকে বানোয়াট বলে তাহলে আসলে আমাদের কিছু বলার নেই।
************************************
[[[[[[[ প্রথম সনদ ]]]]]]]
ইমাম আব্দুল কারীম বিন মুহাম্মাদ আর রাফা’ঈ রহ. (মৃত্যুঃ ৬২৩ হিঃ) বলেনঃ
اخبرني شيخنا الامام الحجة القدوة ابو الفرج عمر الفاروثي الواسطي قال حج سيدناوشيخنا السيد احمد الرفاعي عام خمس وخمسين وخمسمائة فلما وصل المدينة…….
ইমাম রাফা’ঈ রহ.—> ইমাম আবুল ফার্জ উমর আল ফারুসি রহ. —> ইমাম কাবীর আহমাদ রাফি’ঈ রহ.
[ সাওয়াদ উল আইনাইনঃ পৃ:১০-১১]
((((( প্রথম রাবী সম্পর্কে আলোচনা )))))
[১] ইমাম আবদুল কারীম বিন মুহাম্মাদ আর রাফা’ঈ রহ. ( মৃত্যুঃ ৬২৩ হিঃ) সম্পর্কে
ক) ইমাম যহাবী রহ. (মৃত্যুঃ ৭৪৮ হিঃ) তার প্রশংসা করে বলেন,
شَيْخُ الشَّافِعِيَّةِ، عَالِمُ العَجمِ وَالعَربِ، إِمَامُ الدِّينِ
তিনি শাফীঈদের শাইখ । আরব আযমের আলিম এবং দ্বীনের ইমাম।
খ) ইমাম তাকীউদ্দীন রহ. (মৃত্যুঃ ৬৪৩ হিঃ) বলেন,
أظنُ أنّي لم أرَ في بلاد العَجَم مثله
আমার ধারনা মতে দেশের শহরে তার মত আর কাউকে দেখি নি।
গ) ইমাম নববী রহ. (মৃত্যু ৬৭৬ হিঃ) বলেন,
الرَّافعيّ من الصالحين المُتَمكّنين، كانت لَهُ كراماتٌ كثيرة ظاهرة.
ইমাম রাফা’ঈ রহ. ছিলেন নেককার, মুত্তাকিন এবং তার অনেক প্রকাশ্য কারামত রয়েছে।
ঘ) ইমাম ইবনে উস সাফফার রহ. (মৃত্যুঃ৬৪৮ হিঃ) বলেন,
هُوَ شيخُنا، أمامُ الدِّين وناصر السُّنَّة صِدقًا.
ইমাম রাফা’ঈ রহ. আমাদের শাইখ, দ্বীনের ইমাম এবং সুন্নাতকে জীন্দাকারী।
[ দেখুনঃ সিয়ার আলামুন নুবালা: খন্ড-২২,পৃ-২৫২] এবং
[তারীখ উল ইসলাম লিয যহাবী: খন্ড- ১৩,পৃ-৭৪২]
সুতরাং এটা স্পষ্ট হল যে, ইমাম রাফা’ঈ (রহ) একজন সিক্বাহ এবং সত্যবাদী রাবী।
((((( দ্বিতীয় রাবী সম্পর্কে আলোচনা )))))
[২] ইমাম আবুল ফার্জ উমর আল ফারুসি রহ (মৃত্যুঃ ৫৮৫ হিঃ) সম্পর্কে –
ক) ইমাম রাফা’ঈ রহ. ( মৃত্যুঃ ৬২৩ হিঃ) বলেন,
তিনি হলেন ইমাম, দলীল এবং ক্বিদওয়াহ [ সাওয়াদুল আইনাইনঃপৃ-১০]
একই কিতাবের অন্যত্র তিনি বলেনঃ
شيخنا امام الفقهاء وسيد العلماء ابو الفرج عمر الفاروثي
আবুল ফার্জ উমর আল ফারুসি রহ. হলেন আমাদের শাইখ, ফকীহদের ইমাম এবং উলামাদের নেতা [ সাওয়াদুল আইনাইনঃপৃ-০৮]
খ) ইমাম সুয়ুতী রহ. ( মৃত্যুঃ ৬৭৬ হিঃ) তার স্বলিখিত কিতাব ” শারফ উল মুত্তাহাম ” এ লিখেনঃ
إمام الفقهاء والمحدثين وشيخ أكابر الفقهاء والعلماء العاملين الشيخ عز الدين عمر أبي الفرج الفاروثي الواسطي
তিনি হলেন মুহাদ্দিস এবং ফুকাহাদের ইমাম, বড় ফকীহ, উলামা এবং আলিমদের শাইখ।
গ) ইমাম আহমেদ বিন ইবরাহিম আল ফারুসী রহ. (মৃত্যুঃ ৬৯৪ হিঃ) বলেন
الامام الفقيه أبي الفرج عمر الفاروثي
.আবুল ফার্জ উমর আল ফারুসী রহ. হলেন ইমামদের ফকিহ। ( ইরশাদ উল মুসলিমিন, পৃ- ৮৮)
ঘ) ইমাম তাক্বীউদ্দীন আবদুর রহমান আল আনসারী আল ওয়াসতী রহ. (মৃত্যুঃ ৭৪৪) বলেনঃ
العارف الكبير ولي الله العلامة السند الثبتالفقيه المقري المحدث أبي الفرج عمر الفاروثي
আবুল ফার্জ ওমর ফারুসি রহ. হলেন আল আরিফুল কাবীর, ওয়ালিউল্লাহ, আল্লামা, আল মুসনাদ, আল সাবাত, ফকিহ, মুহাদ্দিস। [তারীখুল মাহবীনঃ খন্ড-০১; পৃ-৮]
অরএব, প্রমাণিত হল যে, ইমাম আবুল ফার্জ উমর আল ফারুসি রহ হলেন সিক্বাহ, মজবুত এবং হুজ্জাত।
((((( তৃতীয় রাবী সম্পর্কে আলোচনা )))))
[৩] ইমাম কাবীর আহমাদ আর রিফা’ঈ রহ. (মৃত্যুঃ ৫৭৮ হিঃ) সম্পর্কে,,,,
ক) ইমাম যহাবী রহ.( মৃত্যুঃ ৭৪৮ হিঃ) বলেন:
الإِمَامُ، القُدْوَةُ، العَابِدُ، الزَّاهِدُ، شَيْخُ العَارِفِيْن
ইমাম, ক্বিদওয়া, ইবাদাতকারী (আবিদ), দুনিয়াত্যাগী এবং আরিফীনদের শাইখ।
. [ সিয়ার আলামুন নুবালা; খন্ড -২১; পৃ-৭৭]
খ) ইমাম তাজউদ্দীন সুবকী রহ. (মৃত্যুঃ ৭৭১ হিঃ) বলেন
أحد أَوْلِيَاء الله العارفين والسادات المشمرين أهل الكرامات الباهرة أَبُو الْعَبَّاس بن أبي الْحسن بن الرِّفَاعِي المغربي
ইমাম রিফা’ঈ রহ ছিলেন আওলিয়া আল্লাহ, আ’রিফিন এবং সাদাত ও প্রকাশ্য কারামত ওয়ালা । [তাবকাত উশ শাফীইয়া লিস সুবকী রহ; খন্ড-০৬; পৃ-২৩]
গ) ইমাম ইবনে খালকান রহ. (মৃত্যুঃ ৬৮১ হিঃ) এবং ইমাম খলীল বিন আইবাক আস সাফাদি রহ. (মৃত্যুঃ ৬৮১ হিঃ) এই দুইজন আলিমই ইমাম কাবীর আহমাদ আর রিফা’ঈ রহ. সম্বন্ধে বলেনঃ
كَانَ رجلا صَالحا شافعيا فَقِيها
তিনি ছিলেন সলিহীন (নেককার), শাফীই ফকীহ।
[তাবকাত উশ শাফীইয়া লি ইবনে কাজী শাইবা রহ; খন্ড-০২; পৃ-০৫]
ঘ) আস সাফাদি রহ. অন্যত্র বলেন:
الزَّاهِد الْكَبِير سُلْطَان العارفين فِي زَمَانه
তিনি ছিলেন বড় যাহিদ (দুনিয়াত্যাগী) , যামানার আরিফিনদের সুলতান। [ আল ওয়াফি বিল ওয়াফিইয়াত; খন্ড-০৭, পৃ-১৪৩]
[ সিয়ার আ’লামুন নুবালা:খন্ড-২১,পৃ-৭৭]
[তাবক্বাত উশ শাফীয়্যাহ লিস সুবকি রহ: খন্ড-০৬,পৃ-২৩; ]
[ তাবক্বাত উশ শাফীয়্যাহ লি ইবনে ক্বাযি শাইবা: খন্ড-০২,পৃ-৫;]
[ আল ওয়াফি বিল ওয়াফিইয়াত; খন্ড-০৭, পৃ-১৪৩]
অতএব প্রমাণিত হল,ইমাম কাবীর আহমাদ আর রিফা’ঈ রহ.ও “সিক্বাহ”।
সুতরাং সনদটি সহিহ হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
[[[[[[[ দ্বিতীয় সনদ ]]]]]]]
ইমাম রাফা’ঈ রহ (মৃত্যুঃ ৬২৩ হিঃ) বর্ননা করেন,
সিক্বাহ রাবী শাইখ আব্দুস সামী রহ. বলেন, আমি ঐ ঘটনাটি স্বচক্ষে দেখেছি। যেখানে হযরত কাবীর আহমাদ রিফা’ঈ রহ. রাসুলুল্লাহ (সা) এর সাথে মুসাফাহ করছেন।
ইমাম রাফা’ঈ রহ.—> শাইখ আবদুস সামী আল হাসমী আল ওয়াসতী রহ.
((((( প্রথম রাবী সম্পর্কে আলোচনা )))))
১) ইমাম আব্দুল কারীম বিন মুহাম্মাদ আর রাফা’ঈ রহ. (মৃত্যুঃ ৬২৩ হিঃ): ইমাম রাফা’ঈ রহ. একজন সিক্বাহ রাবী। যার আললোচনা উপরে করা হয়েছে।
((((( দ্বিতীয় রাবী সম্পর্কে আলোচনা )))))
২) শাইখ আবদুস সামী আল হাসমী আল ওয়াসতী রহ. (মৃত্যুঃ ৫৮০ হিঃ):
শাইখ আবদুস সামী আল হাসমী আল ওয়াসতী রহ. (মৃত্যুঃ ৫৮০ হিঃ)। যিনি খোদ ইমাম রাফা’ঈ রহ. এর সনদ উল মুহাদ্দিসীন। ইমাম ইযউদ্দীন আল ফারুসী রহ. (মৃত্যুঃ ৬৯৪ হিঃ) এর শাইখের শাইখ এবং আবু আব্দুল্লাহ আদ দুবাইসী রহ. (মৃত্যুঃ ৬৩৭ হিঃ) আব্দুস সামী (রহ) কে শারীফ, সত্যবাদী এবং আবিদ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
[ ইরশাদুল মুসলিমীন: পৃ-২৬৫]
[ তারীখ ইবন উদ দুবাইসি: পৃ-৭৯]
বি. দ্রঃ শাইখ আবদুস সামী আল হাশমি রহ. এর আসল নাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুস সামী আল হাশমী রহ.। আবার তাকে আব্দুস সামী আল হাশমী আল ওয়াসতী রহ.ও বলা হয় তবে অধিকাংশ মুহাদ্দিসীনের কাছে তার কুনিয়াত নাম আবু তালিব রহ. আবার শারফুদ্দীনও বলা হয়ে থাকে। [ ইরশাদুল মুসলিমীন: পৃ-৯০]
— —————————————– —————————————— ————–
[[[[[[[ তৃতীয় সনদ ]]]]]]]
ইমাম, মুফতি, আবিদ এবং সালাফি শাইখ ইয উদ্দীন রহ. তার লিখিত কিতাব ” ইরশাদ উল মুসলিমীন ” এ এই ওয়াক্বিয়াটি সনদসহ নকল করেছেন।
اخبرني ابي الحافظ محيي الدين ابو اسحاق ابراهيم عن ابيه الشيخ عمر قال له
كنت مع سيدنا و مفزعنا و شيخنا السيد احمد الكبير الرفاعي الحسيني…….
ইমাম ইয-উদ্দীন আহমাদ বিন ইবরাহিম রহ—> ইমাম আবু ইসহাক্ব ইবরাহিম আল ফারুসি রহ.–> ইমাম আবু ফার্জ আল ফারুসি রহ. —–> সায়্যিদ কাবীর আহমাদ রিফা’ঈ রহ.
[ ইরশাদ উল মুসলিমীনঃ পৃ-৮৮]
((((( প্রথম রাবী সম্পর্কে আলোচনা )))))
(১)ইমাম ইয-উদ্দীন আহমাদ বিন ইবরাহিম আল ফারুসি রহ. (মৃত্যুঃ৬৯৪ হিঃ)। যিনি একজন সিক্বাহ রাবী। যার সম্পর্কে ইমাম যহাবী রহ বলেনঃ তিনি হলেন ইমাম, আল মুক্বরি, বক্তা, মুফাসসির,খাতীব, শাইখদের শাইখ, ফকীহ, সালাফি, মুদাররিস,মুফতি, আবিদ, এবং সুফী। [ তারীখুল ইসলামঃ খন্ড-১৫,পৃ-৭৮২]
((((( দ্বিতীয় রাবী সম্পর্কে আলোচনা )))))
২) ইমাম আবু ইসহাক্ব ইব্রাহিম আল ফারুসি রহ.ও একজন সিক্বাহ রাবী।
>>যার সম্পর্কে ইমাম ইয-উদ্দীন আহমাদ বিন ইবরাহিম রহ. বলেন, তিনি হাফিয, সিক্বাহ,সাঈদ,সালীহ।
[ দেখুনঃ ইরশাদুল মুসলিমীন: পৃ-৮৮, ১০৫]
>>ইমাম সুয়ুতী রহ. ( মৃত্যুঃ ৯১১ হিঃ) তার রিসালা ” শার্ফ উল মুত্তাহাম” এ ইমাম আবু ইসহাক্ব ইব্রাহিম আল ফারুসি রহ. কে উস্তায উল আসীল, আল্লামা উল জালীল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
>>শাইখুল ইসলাম মাখযূমি রহ. ( মৃত্যুঃ৮৮৫ হিঃ) তাকে হুজ্জাত (দলিল)বলেছেন। [ সিহাহুল আখবার: পৃ-৬৯]
((((( তৃতীয় ও চতুর্থ রাবী সম্পর্কে আলোচনা )))))
৩) ইমাম আবু ফার্জ আল ফারুসি রহ.( মৃত্যুঃ ৫৮৫ হিঃ) এবং
৪) সায়্যিদ কাবীর আহমাদ রিফা’ঈ রহ. ( মৃত্যুঃ ৫৭৮ হিঃ) সম্পর্কে আলোচনা উপরে(প্রথম সনদে) করা হয়েছে। যেখানে দুইজনই সিক্বাহ প্রমাণিত হয়েছে।
সুতরাং প্রমাণিত হল যে,সনদটি বিলকুল সহিহ।
– —————————————– —————————————— ————–
[[[[[[[ চতুর্থ সনদ ]]]]]]]
স্বয়ং শাইখ শারফুদ্দীন মুহাম্মাদ বিন সামী রহ. (মৃত্যুঃ ৫৮০ হিঃ) ইমাম কাবীর আহমাদ রিফা’ঈ রহ. এর কিতাব ” আল বুরহান উল মু-আয়্যাদ”এর মুকাদ্দামে এই কারামতটি বয়ান করেছন। [আল বুরহান উল মু-আয়্যাদ: পৃ-১২, ইরশাদ উল মুসলিমীনঃ পৃ-১৫৪]
প্রকাশ থাকে যে, শাইখ শারফুদ্দীন মুহাম্মাদ বিন সামী রহ. হলেন ইমাম কাবীর আহমাদ রিফা’ঈ রহ.এর শাগরিদ।
তো সনদটি সহিহ হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশই নেই।
— —————————————– —————————————— ————–
[[[[[[[ পঞ্চম সনদ ]]]]]]]
ইমাম উল হাফিয উল মুহাদ্দিস, জালাল উদ্দীন আস সুয়ুতী রহ. (মৃত্যুঃ ৯১১ হিঃ)। যিনি হলেন উলামাদের ইমাম, হাফিয, মুফাসসীরিনদের তাজ এবং মুহাদ্দিসীনদের ইমাম। [ দেখুনঃ আল আ’লাম লিয যিরকালিঃ খন্ড:০৩,পৃ-৩০১]
তিনিও এই ওয়াক্বিয়াটি তার রিসালা “তনভীর উল হালাক ” এ সনদ সহ উল্লেখ করেছেন।
[ দেখুনঃ তানভীর উল হালাক লিস সুয়ুতীঃ পৃ-৫১]
এই রিসালাটি সুয়ুতী রহ. এর ” আল হাওয়ী লিল ফাতওয়া লিস সুয়ুতী ” কিতাবে মওজুদ রয়েছে।
যেখান থেকেই হযরত মাওলানা যাকারিয়্যা রহ. এই ঘটনাটি নকল করেছেন এবং এরই হাওয়ালা দিয়েছেন।
ইমাম জালালুদ্দিন সূয়তী(রহ) —> শায়েখ কামাল উদ্দিন রহ.—> শায়েখ শামসুদ্দিন জাযিরী রহ—> শায়েখ যয়নুদ্দীন রহ.—–> ইমাম ইয-উদ্দীন আহমাদ বিন ইবরাহিম রহ—> ইমাম আবু ইসহাক্ব ইবরাহিম আল ফারুসি রহ.–> ইমাম আবু ফার্জ আল ফারুসি রহ. —–> সায়্যিদ কাবীর আহমাদ রিফা’ঈ রহ.
এই সনদটি এখানে উল্লেখ না করলেও হতো। কেননা এই সনদটি পূর্বে উল্লেখিত তৃতীয় সনদেরই বর্ধিতাংশ। আর যা সহিহ হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এটা কেবল এইজন্য উল্লেখ করেছি যেহেতু শাইখ যাকারিয়্যা রহ. এই ঘটনাটি ইমাম জালাল উদ্দীন আস সুয়ুতী রহ. এর কিতাব থেকে চয়ন করেছেন।
— —————————————– —————————————— ————–
অসংখ্য নির্ভরযোগ্য (সিক্বাহ) উলামায়ে কেরাম এবং মুহাদ্দিস, মুফাসসীরিনগন উক্ত ওয়াক্বিয়াটি তাদের নিজেদের কিতাবে নকল করেছেন। তাদের মধ্যে কিয়দাংশ——
♦[১] ইমাম আলী বিন আনজাব রহ. (মৃত্যুঃ ৬৭৪ হিঃ)। যিনি উলামাদের ইমাম, মুহাদ্দিস, আল মুয়াররিখ উল কাবীর, ফাযিল,সাহিত্যিক।
[ তারীখ উল ইসলাম লিয যহাবী: খন্ড-১৫, পৃ-২৭৮;]
[তাবক্বাত উল হুফফায লিয সুয়ুতী: খন্ড -০১, পৃ-৫১২,
[ তাবক্বাত উশ শাফীইয়া লিয ক্বাযী শাইবা: খন্ড-০২; পৃ-১৪০]
তিনি তার কিতাবে ৫ টি আলাদা আলাদা সনদে শাইখ কাবীর আহমেদ রিফা’ঈ রহ এর ঘটনাটি নকল করেছেন। [ মুখতাসার তারীখ উল খুলাফা: পৃ-৯৭-৯৯]
♦[২] ইমাম আলী ইবনুল হাসান বিন আহমাদ আল ওয়াসতী রহ. (মৃত্যুঃ ৭৩৩ হিঃ)। যার সম্পর্কে হাফিয যহাবী রহ. বলেন তিনি ইমামুল ক্বুদওয়া, আবিদ,ক্বানিত,যাহিদ এবংউঁচু মর্যাদা সম্পন্ন।
[দেখুনঃ মুয়াজ্জামুল শুয়ুখুল কাবীর লিয যহাবী: পৃ-৩৬৫; আদ- দুররুল কামিনাহ লি ইবনে হাজার: খন্ড-০৩, পৃ-৩৭]
তিনি তার স্বরচিত কিতাব” খুলাসাতুলল আকসীর ফী নাসাব সাইয়্যিদিনা রিফা’ঈ আল কাবীর” এ উক্ত কারামত নকল করেছেন। ( খুলাসাতুল আকসীর: পৃ-৩০)
♦[৩]মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল মাখযুমি রহ.( মৃত্যুঃ৮৮৫ হিঃ)। যিনি তার সময়ের শাইখুল ইসলাম ছিলেন। [ দেখুনঃ আল আ’লাম লিয যিরকালি: খন্ড-০৬,পৃ-২৩৮]
তিনি তার কিতাবব “সিহাহুলল আখবার” এ হযরত শাইখ কাবীর আহমাদ রিফা’ঈ রহ এর ঘটনাটি সনদ সমেত উল্লেখ করেছেন। [ সিহাহুল আখবার: পৃ-৬৯]
♦[৪] শাইখ ইয-উদ্দীন আহমাদ আস- সায়্যাদ রহ. (মৃত্যুঃ ৬৭০ হিঃ)। যার সম্পর্কে ইমাম আহমাদ ইয-উদ্দীন আল ফারুসি রহ( মৃত্যুঃ ৬৯৪ হিঃ) বলেনঃ
السبط الاعظم,كنز العرفان, فطب الزمان, غوث الرجال, كعبة اهل الاحوال, رفيع العماد, ابو علي السيد عز الدين احمد ابن الرفاعي
তিনি বড় খান্দান ওয়ালা, মারিফাতের সমৃদ্ধ ভান্ডার, যামানার কুতুব, মানুষের সাহায্যকারী এবং বড় মর্তবা ওয়ালা। [ইরশাদ উল মুসলিমীনঃপৃ২০৩]
তিনিও তার কিতাবে কাবীর আহমাদ রিফা’ঈ রহ. এর ঘটনাটি নকল করেছেন।
[ আল মুআ’রিফুল মুহাম্মাদিয়া: পৃ-৫৯]
♦[৫] হাফিয তাক্বীউদ্দীন আবদুরর রহমান আল ওয়াসতী রহ. (মৃত্যুঃ ৭৪৪ হিঃ)। তিনি হলেন উলামাদের ইমাম, শাইখ,মুফতি,মুহাদ্দিস,আল্লামা এবং হাদিসের হাফিয।
আল-মুজ্যামুল মুখতাস বিল মুহাদ্দিসীন লিয যহাবী: খন্ডঃ০১, পৃ-১৩৭;
আল ওয়াফি বিল ওয়াফিইয়াত লিস সাফাদি: খন্ড:১৮,পৃ-১০৪;
আল ওয়াফিইয়াত লি ইবনে রাফি: খন্ড-০৩, পৃ-৪৬০;
আল আ’লান লিয যিরকালিঃ খন্ড:০৩, পৃ-৩১৪]
এই হাদিসের হাফিয এবং মুহাদ্দিস রহ.ও তার কিতাবে শাইখ ইমাম কাবীর আহমাদ রিফা’ঈ রহ. ঘটনাটি নকল করেছেন। [ দেখুনঃ তারীআখুল মাহবিন: খন্ড:০১, পৃ-১২]
♦[৬] আল্লামা আহমাদ বিন মুহাম্মাদ রহ. (মৃত্যুঃ ৯৮০হিঃ)। যাকে উলামা গন ইমাম উল কাবীর, আল্লামা, আরিফবিল্লাহ, তীক্ষ্ণ স্মরনশক্তি ওয়ালা, মাহির, অধিক সমজ রাখনে ওয়ালা ইত্যাদি বিশেষণে বিশেষায়িত করেছেন।
[দেখুনঃ আল আ’লাম লিয যিরকালিঃ খন্ড:০১, পৃ-২৩৪;]
তিনি তার কিতাব “রওজাতুন নাযিরীন” এ উক্ত ঘটনাটি নকল করেছেন।
[ রওজাতুন নাযিরীন: পৃ-৫৪]
♦[৭] ইমাম মুহাম্মাদ বিন আবদুর রওফ আল মানাওয়ী রহ (মৃত্যুঃ ১০৩১ হিঃ)। যার সম্পর্কে উলামাদের বক্তব্য হল, তিনি আরিফবিল্লাহ, উস্তাদ উল কাবীর, ইমাম উল কাবীর আলিম এবং দ্বীনের বড় উলামা ইত্যাদি।
[ দেখুনঃ খুলাসাতুল আসার: খন্ড- ০২, পৃ-১৯৩ ; ]
[আল আ’লাম লিয যিরকালিঃ খন্ড-০৬, পৃ-১৯৩]
তিনি তার কিতাব ” কাওয়াকিব উর দুররিয়্যাহ” তে এই ওয়াক্বিয়াটি নকল করেছেন।
[ দেখুনঃ আল কাওয়াকিব উর দুররিয়্যাহ: খন্ড-০২, পৃ-২২০]
– —————————————– —————————————— ————–
আরও যে সমস্ত ইমামগন উক্ত ওয়াক্বিয়াটি তাদের কিতাবে নকল করেছেন, তাদের কিয়দাংশ নিচে উল্লেখ করা হলঃ
[১] ইমাম আহমাদ ইয-উদ্দীন আস সাইয়্যাদ রহ. ( মৃত্যুঃ ৬৭০ হিঃ) ” আত-তারীখ উল ক্বাওঈম” কিতাবে
[২] ক্বাসিম বিন মুহাম্মাদ আল ওয়াসতী রহ. (মৃত্যুঃ ৬৮০ হিঃ) “উম্মুল বারাহীন” কিতাবে
[৩] শাইখ আলী আল হাদ্দাদি রহ. (মৃত্যুঃ ৭৩৩হিঃ) “রাবী উল আশিক্বীন ” কিতাবে
[৪] আল্লামা মুহাম্মাদ বিন আবু বকর আল আনসারী আল ওয়াসতী রহ. (মৃত্যুঃ ৭৫০ হিঃ) ” রওজাতুল আ’ইয়ান ” কিতাবে
[৫] শাইখ আবদুর রহমান বিন আব্দুস সালাম আস সাফুরি রহ. (মৃত্যুঃ৮৯৪ হিঃ) “নুযযহাতুল মাজালিস” কিতাবে
[৬] ইমাম আব্দুল খাদার বিন মুহাম্মাদ আল হুসাইনি রহ. (মৃত্যু ১০৩৩ হিঃ) তার কিতাব “কাসফুন নিক্বাব” এ
[৭] আল্লামা আলি বিন ইবরাহিম আল হালাবি রহ.( মৃত্যু – ১০৩৩ হিঃ) “তা’রিফু আহলে ইসলাম ওয়াল ঈমান” কিতাবে
[৮] আল্লামা খাফফাজি রহ. (মৃত্যুঃ ১০৬৯ হিঃ) ” নাসীব উর রিয়াদ” কিতাবে
[৯] শাইখ ছায়াদী রহ. তার “ওয়াযায়িফি আহমাদী ” কিতাবে
[১০] শাইখ আততার রহ. তার “আত তাজকিরাহ” কিতাবে
[১১] শেখ আবুল কাসিম বরজঞ্জী রহ. “ইজাবাতুতদ্বায়ী” কিতাবে
[১২] ইমাম শা’রানী রহ. “মানাকিবুস সলিহীন” কিতাবে
[১৩] শাইখ মুহাম্মাদ ওয়াসিতী রহ. ” বাহজাতুল কুবরা” কিতাবে
[১৪] শাইখ সাবী মিসরী রহ. “আসরারি রাহমানী ” কিতাবে
[১৫] শাইখ ঈদ হুসাইনী রহ. “আননাজমু সাব্বায়ী” কিতাবে
[১৬] শাইখ আল্লামা খাফফাজী রহ. ” শারহুশ শিফা” কিতাবে
[১৭] শাইখ আলী ওয়াসিতী রহ ” খাযানাতুল আসীর” কিতাবে
[১৮] আল্লামা সামিরায়ী রহ. “মাজালিসি রিফা’ঈ ” কিতাবে
[১৯] শাইখ আবদুল হুদা সায়াদী রহ. ” আত-তারীকাত উর রিফা’ঈ ” কিতাবে
[২০] আল্লামা যাফর আহমাদ উসমানী রহ. ” বুনইয়ানুল মুশাইয়্যাদ” কিতাবে
[২১] শাইখ ইউনুস সামিরায়ী রহ. “হায়াতুস সাইয়্যিদ রিফা’ঈ ” কিতাবে
শাইখ ইমাম কাবীর আহমাদ রিফা’ঈ রহ. ঘটনাটি নকল করেছেন।
যেসব বিখ্যাত মুহাদ্দিস হাদীসটি তাদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন,
১. ইবনে আবিদ দুনিয়া রহ., মান আশা বা’দাল মাউত। হাদীস নং ৫৮
২. মুসনাদে আব্দ ইবনে হুমাইদ, হাদীস নং ১১৬৪
৩.ফাওয়াইদু তামাম আর-রাজী, হাদীস নং ২১৭
৪. আল-জামে লি আখলাকির রাবী, খতীব বাগদাদী, হাদীস নং ১৩৭৮
৫. আল-বা’স, ইবনে আবি দাউদ, হা.৫
৬.আজ-জুহদ, ইমাম ওকী ইবনুল জাররাহ, হাদীস নং৮৮
৭. আজ-জুহদ, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ.
৮. মাজালিস মিন আমালি ইবনে মান্দাহ, ইবনে মান্দাহ, হাদীস নং ৩৯৩
৯. আল-মাতালিবুল আলিয়া, ইবনে হাজার আসকালানী রহ. হাদীস নং ৮০৭
১০. ফুনুনুল আজাইব, হা.১৯
১১. শরহুস সুদুর, জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহ. পৃ.৪২-৪৩
ঘটনাটি বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত। তামাম আর-রাজী এটি সরাসরি রাসূল স. থেকে বর্ণনা করেছেন। ইবনে হাজার আসকালানী রহ. হযরত জাবির রা. থেকে মওকুফ সূত্রে বর্ণনা করেছেন, যেটি মরফু এর হুকুমে। সুতরাং ঘটনার প্রামাণ্যতার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
(((((ঘটনাটির অনুরূপ বর্তমান সময়ের একটি কারামত )))))
শহীদ হওয়ার তিন দিন পরে পিতার সাথে মুসাফাহা
“আমার নিকট বিশিষ্ট মুজাহিদ ওমর হানিফ বর্ণনা করেছে, ১৯৮০ সালে রাশিয়া আফগানিস্তানে একটি বড় সেনাদল পাঠায়। তাদের সাথে সত্তরটি ট্যাং ছিল। সাথে বিপুল পরিমাণ অন্যান্য সমরাস্ত্র ছিল। এ সেনাদলকে বারটি হেলিকপ্টার নিরাপত্তা দিচ্ছিল। তাদের মোকাবেলায় ১১৫ জনের একটি মুজাহিদ বাহিনী অগ্রসর হয়। কাফেরদের সাথে প্রচন্ড লড়াই হয়। অবশেষে শত্রু পরাজিত হয়ে পলায়ন করে। মুজাহিদ বাহিনী তাদের ১৩ টি ট্যাং ধ্বংস করে। মুজাহিদদের মাঝে ৪ জন শাহাদাৎ বরণ করে। এদের মাঝে ইবনে জান্নাত গুল নামে এক ভাই ছিলেন। আমরা তাকে যুদ্ধের ময়দানে দাফন করে আসি। তিন দিন পরে আমরা সেখানে গিয়ে তাকে তার পিতার কবরস্থানে দাফনের জন্য স্থানান্তর করি। তার পিতা জান্নাত গুল এসে ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ” প্রিয় ছেলে !, তুমি যদি শহীদ হয়ে থাকো, তাহলে আমাকে তোমার শাহাদাতের একটি নিদর্শন দেখাও? হঠাৎ শহীদ ছেলেটি হাত বাড়িয়ে তার পিতার সাথে মুসাফাহা করল এবং তাকে সালাম দিল। এমনকি মুসাফাহা করে পনের মিনিট যাবৎ পিতার হাত ধরে রাখল। এরপর হাত তার ক্ষতস্থানে রাখল। শহীদের পিতা পরে বলেছেন, ছেলে মুসাহাফা করার সময় এতো জোরে চাপ দিচ্ছিল যে আমার হাত ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকা হচ্ছিল। উমর হানিফ বলেন, এই ঘটনা আমি নিজের চোখে দেখেছি। [সূত্র : আয়াতুর রহমান ফি জিহাদিল আফগান, পৃ. ১০২-১০৩]
——————————————————————————————————————————- ——————————————————
((((( কারামত অস্বীকার করে কারা? )))))
[ ১]. সালাফীদের ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন,
فقالت طائفة: لا تخرق العادة إلا لنبي، وكذبوا بما يذكر من خوارق السحرة، والكهان، وبكرامات الصالحين، وهذه طريقة أكثر المعتزلة، وغيرهم كأبي محمد بن حزم، وغيره
একদল বলেছে কোন নবী ব্যতীত অন্যদের হাতে অপ্রাকৃতিক ঘটনা ঘটবে না। তারা যাদুকর, গণক ও নেককার বুযুর্গদের হাতে সংগঠিত সকল অপ্রাকৃতিক ঘটনা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। এটি অধিকাংশ মু’তাজিলা, ইবনে হাজাম যাহেরী ও অন্য কিছু লোকের মতবাদ।
দেখুন, আন-নুবুয়াত, পৃ.৫, মাজমু্উল ফাতাওয়া, খ.১৩, পৃ.৯০
[২] ইমাম আব্দুল গাহের বাগদাদী রহ. বলেন,
وأنكرت القدرية كرامات الأولياء لأنهم لم يجدوا في أهل بدعتهم ذا كرامة
কাদেরিয়া ফেরকা ওলীদের কারামত অস্বীকার করেছে। কেননা এই বেদয়াতীরা নিজেদের মধে্য কারামতের অধিকারী কাউকে দেখেনি।
উসুলুদিদ্দীন, পৃ.১৭৫
[৩]. ইবনে হাজার আল-হাইতামী মক্বী রহ. বলেন,
كرامات الأولياء حق عند أهل السنة والجماعة خلافاً للمخاذيل المعتزلة والزيدية
আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের নিকট ওলীদের কারামত সত্য। মু’তাজিলা ও যায়দী শিয়াদের মতবাদ হলো এরা কারামত অস্বীকার করে।
আল-ফাতাওয়াল হাদিসিয়্যা, পৃ.১০৭-১০৮। দারুল মা’রেফা, বৈরুত।
উপরের আলোচনা দ্বারা বুঝা গেল, বিদআতী, যায়দী শিয়া, মু’তাজেলা ও কাদেরিয়া ফেরকারা কারামত অস্বীকার করে।
—————————————— —————————————— —————
ফাযায়েলে হজ্জে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা) এর কবর থেকে হাত বের হওয়ার ঘটনাটির সারসংক্ষেপঃ
[১] ঘটনাটির সনদ ১০০% সহিহ
[২] ঘটনাটির মতন সহিহ হাদিস দ্বারা এবং বর্তমান সময়ের কারামত দ্বারাও সাবেত (প্রমাণিত)।
[৩] সুতরাং এটি একটি সহিহ কারামত।
[৪] আবার আমরা উপরের আলোচনা থেকে দেখেছি যে, কারামত অস্বীকার করে বিদআতী এবং মু’তাজিলা কাদেরিয়া ফিরকারা।
হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা.
থেকে বর্ণিত, রাসূল স. বলেন,
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺇِﺳْﺤَﺎﻕُ ﺑْﻦُ ﺇِﺳْﻤَﺎﻋِﻴﻞَ ،
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻭَﻛِﻴﻊٌ ، ﻭَﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦُ ﻧُﻤَﻴْﺮٍ
, ﻋَﻦِ ﺍﻟﺮَّﺑِﻴﻊِ ﺑْﻦِ ﺳَﻌْﺪٍ ﺍﻟْﺠُﻌْﻔِﻲِّ ،
ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺑْﻦِ ﺳَﺎﺑِﻂٍ ،
ﻋَﻦْ ﺟَﺎﺑِﺮِ ﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﻗَﺎﻝَ :
ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ
” : ﺣَﺪِّﺛُﻮﺍ ﻋَﻦْ ﺑَﻨِﻲ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴﻞَ ،
ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻓِﻴﻬِﻢُ ﺍﻷَﻋَﺎﺟِﻴﺐُ ، ﺛُﻢَّ
ﺃَﻧْﺸَﺄَ ﻳُﺤَﺪِّﺙُ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺧَﺮَﺟَﺖْ
ﺭُﻓْﻘَﺔٌ ﻣَﺮَّﺓً ﻳَﺴِﻴﺮُﻭﻥَ ﻓِﻲ ﺍﻷَﺭْﺽِ
ﻓَﻤَﺮُّﻭﺍ ﺑِﻤَﻘْﺒَﺮَﺓٍ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ
ﻟِﺒَﻌْﺾٍ : ﻟَﻮْ ﺻَﻠَّﻴْﻨَﺎ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ ﺛُﻢَّ
ﺩَﻋَﻮْﻧَﺎ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﻌَﻠَّﻪُ ﻳُﺨْﺮِﺝُ ﻟَﻨَﺎ ﺑَﻌْﺾَ
ﺃَﻫْﻞِ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟْﻤَﻘْﺒَﺮَﺓِ ﻓَﻴُﺨْﺒِﺮُﻧَﺎ ﻋَﻦِ
ﺍﻟْﻤَﻮْﺕِ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﺼَﻠُّﻮﺍ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ
ﺛُﻢَّ ﺩَﻋَﻮْﺍ ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻫُﻢْ ﺑِﺮَﺟُﻞٍ
ﺧِﻼﺳِﻲٍّ ﻗَﺪْ ﺧَﺮَﺝَ ﻣِﻦْ ﻗَﺒْﺮٍ
ﻳَﻨْﻔُﺾُ ﺭَﺃْﺳَﻪُ ، ﺑَﻴْﻦَ ﻋَﻴْﻨَﻴْﻪِ ﺃَﺛَﺮُ
ﺍﻟﺴُّﺠُﻮﺩِ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﻫَﺆُﻻﺀِ ﻣَﺎ
ﺃَﺭَﺩْﺗُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﻫَﺬَﺍ ؟ ﻟَﻘَﺪْ ﻣِﺖُّ ﻣُﻨْﺬُ
ﻣِﺎﺋَﺔِ ﺳَﻨَﺔٍ ﻓَﻤَﺎ ﺳَﻜَﻨَﺖْ ﻋَﻨِّﻲ
ﺣَﺮَﺍﺭَﺓُ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕِ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔِ ،
ﻓَﺎﺩْﻋُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺃَﻥْ ﻳُﻌِﻴﺪَﻧِﻲ ﻛَﻤَﺎ
ﻛُﻨْﺖُ ” .
“তোমরা বনী ইসরাইলদের ঘটনা
বর্ণনা করো। কেননা তাদের মাঝে
অনেক আশ্চর্যজনক ঘটনা সংগঠিত
হয়েছে। এরপর রাসূল স. একটি ঘটনা
বর্ণনা করলেন,
একদা বনী ইসরাইলের কয়েকজন বন্ধু
ভ্রমণে বের হল। তারা একটি
কবরস্থান দিয়ে অতিক্রম করছিল ।
তারা একে -অপরকে বলল, “আমরা যদি,
দু’রাকাত নামায আদায় করে আল্লাহর
কাছে দুয়া করি, তাহলে আল্লাহ
তায়ালা হয়তো কবরের কোন ব্যক্তিকে
আমাদের সামনে উপস্থিত করবেন। সে
মৃত্যু সম্পর্কে আমাদেরকে বলবে।
তারা দু’রাকাত নামায আদায় করল।
এরপর আল্লাহর কাছে দুয়া করল। হঠাৎ
এক ব্যক্তি মাথা থেকে মাটি
পরিষ্কার করতে করতে কবর থেকে
বের হয়ে এল। তার কপালে সিজদার
চিহ্ন ছিল। সে বলল, তোমরা কী
চাও? আমি একশ বছর পূর্বে মৃত্যুবরণ
করেছি। এখনও আমার দেহ থেকে মৃত্যুর
যন্ত্রনা উপশমিত হয়নি। আল্লাহর
কাছে দুয়া করো, যেন তিনি আমাকে
পূর্বের স্থানে (কবরে) ফেরত পাঠিয়ে
দেন”
যেসব বিখ্যাত মুহাদ্দিস হাদীসটি
তাদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন,
১. ইবনে আবিদ দুনিয়া রহ., মান আশা
বা’দাল মাউত। হাদীস নং ৫৮
২. মুসনাদে আব্দ ইবনে হুমাইদ,
হাদীস নং ১১৬৪
৩.ফাওয়াইদু তামাম আর-রাজী,
হাদীস নং ২১৭
৪. আল-জামে লি আখলাকির রাবী,
খতীব বাগদাদী, হাদীস নং ১৩৭৮
৫. আল-বা’স, ইবনে আবি দাউদ, হা.৫
৬.আজ-জুহদ, ইমাম ওকী ইবনুল
জাররাহ, হাদীস নং৮৮
৭. আজ-জুহদ, ইমাম আহমাদ ইবনে
হাম্বল রহ.
৮. মাজালিস মিন আমালি ইবনে
মান্দাহ, ইবনে মান্দাহ, হাদীস নং
৩৯৩
৯. আল-মাতালিবুল আলিয়া, ইবনে
হাজার আসকালানী রহ. হাদীস নং
৮০৭
১০. ফুনুনুল আজাইব, হা.১৯
১১. শরহুস সুদুর, জালালুদ্দীন সুয়ূতী
রহ. পৃ.৪২-৪৩
ঘটনাটি বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত।
তামাম আর-রাজী এটি সরাসরি রাসূল
স. থেকে বর্ণনা করেছেন। ইবনে
হাজার আসকালানী রহ. হযরত জাবির
রা. থেকে মওকুফ সূত্রে বর্ণনা
করেছেন, যেটি মরফু এর হুকুমে।
সুতরাং ঘটনার প্রামাণ্যতার
ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
এবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওসাল্লাম সম্পর্কে মতিউর
রহমান মাদানী কি ফতোয়া
দিবে ???
মাদানী সাহেবের কাছে আরো
কয়েকটি প্রশ্ন
রাসূল স. এধরনের ঘটনা বর্ণনা করে
উম্মতকে কুফুরী শিক্ষা দিয়েছেন?
মুহাদ্দিসগণ ঘটনাটি তাদের কিতাবে
উল্লেখ করে কুফুরী প্রচার করেছেন?
বিখ্যাত ইমামগণ এই ঘটনার মূল
বিষয় তথা কবর থেকে কেউ বের হয়ে
কথা বলার উপর কোন আপত্তি করেননি।
এটি অসম্ভব কিংবা এটি কুফুরী-
শিরকী বলা তো দূরের বিষয়। সুতরাং
নতুনভাবে এটাকে কুফুরী -শিরকী বলে
সেসব ইমামদেরকে কেন অভিযুক্ত
করছেন? ঘটনাটি যদি কুফুরী-শিরকী
হয়, তাহলে যেসব মুহাদ্দিস এই ঘটনা
তাদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন, এবং
এর উপর কোন অভিযোগ করেননি, তারা
সকলেই কি কুফুরী-শিরকী করেছেন?
মূল ঘটনা যদি কুফুরী-শিরকী হয়,
তাহলে এর সনদ দেখার কোন প্রয়োজন
নেই। কেননা, কুফুরী বিষয় বিশুদ্ধ
সূত্রে বর্ণিত হলেও কুফুরী, দুর্বল
সনদে রর্ণিত হলেও কুফুরী। সুতরাং মূল
ঘটনা যদি কুফুরী-শিরকী হয়, তাহলে
উপর্যুক্ত ইমাম ও মুহাদ্দিসগণ
সম্পর্কে আপনার বা আপনাদের ফতোয়া
জানতে চাই।
ইবনুল কাইয়্যিম জাওযিয়্যাহ এর
কিতাবে বর্ণিত এ ধরণের ঘটনাঃ
“””””””””””””””
“””””””””””””””
“””””””””””””””
“”””””””””””””””””””
ফাযায়েলে হজ্জে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কবর থেকে হাত বের হওয়ার ঘটনা নিয়ে লা-মাজহাবীদের অপপ্রচার এবং আমাদের দাঁত ভাঙ্গা জবাব
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম জাওযিয়্যাহ ইবনে
তাইমিয়া এর খাছ সাগরিদ
ছিলেন রবং তিনি বাংলাদেশের
আহলে হাদীসদের কাছেও অনেক
মান্যবর একজন আলেম। ইবনুল
কাইয়্যিম রাহঃ ও কবর থেকে সম্পূর্ণ
মানুষ বের হওয়ার বিভিন্ন
রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন যার কিছু
রাসূল স. থেকে বর্ণনা করা হয়েছে
কিছু সাহাবী থেকে এবং কিছু
সালাফদের থেকে। আমরা এর একটি
রেওয়াত এখানে উল্লেখ করবো
ইনশাআল্লাহ।
ইবনুল কাইয়্যিম কিতাবুল কুবুর
এর রেফারেন্সে তার কিতাবুর রুহ এ
লেখেন –
এক ব্যাক্তির চাক্ষুষ ঘটনাঃ
আল্লামা শা’বী রাহঃ এক ব্যাক্তির
ঘটনা বর্ণনা করেছেন যে,তিনি নবী
করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওসাল্লামকে বললেন, (হে আল্লাহর
রাসূল!) আমি বদরের পাশদিয়ে
অতিক্রম করছিলাম। এমন সময় দেখতে
পেলাম এক ব্যাক্তি মাটি ভেদ করে
বের হচ্ছে এবং এক ব্যাক্তি হাতে
হাতুরী দিয়ে আঘাত করছে।পিটুনি
খেতে খেতে সে মাটিতে ধুকে পড়ছে।
আবার বের হচ্ছে , আবার ঢুকছে। নবী
করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম
বললেন এ হল আবু জাহল । কিয়ামত
পর্যন্ত তাকে এরুপে শাস্তি প্রদান
করা হবে। (কিতাবুর রুহ, পৃ-১০০)।
আরব বিশ্বেতো কিতাবুর রুহ খুব
গুরুত্বের সাথে মুতালায়া করা হয়।
শায়খ মুহাম্মদ ইবনে সালেহ আল
উসাইমিন কিতাবুর রহঃকে খুব
গুরুত্বের সাথে মুতালায়া করতে
বলেছেন। এছাড়া কিতাবুর রুহ
সামেলাতেও রয়েছে। তাও আবার
আক্বিদার কিতাব হিসেবে। মতিউর
রহমান মাদানী ফাযায়েলের কিতাব
‘ফাযায়েলে হজ্বে’ বর্ণিত কবর থেকে
হাত বের হওয়ার ঘটনা বর্ণনার
কারণে যে মন্তব্য করেছেন ঠিক একই
মন্তব্য কি আক্বিদার কিতাব কিতাবুর
রুহ এর ক্ষেত্রে দিতে পারবেন ???
এবং এ কিতাবের লেখক ইবনুল কাইউম
রাহঃ সম্পর্কে তানি কি ফতোয়া
দিবেন ? ইবং ইবনে উসাইমিন সহ
অন্যান্ন যে সায়খগণ এ কিতাব
মুতালায়া করতে বলেছেন তাদের
ক্ষেত্রেই বা কি ফতোয়া দিবেন ???
ইবনে তাইমিয়া এর বক্তব্য
থেকেও বুঝা যায় যে আল্লাহ চাইলে
মৃত্যুর পর সম্পূর্ণ মানুষও চলে আসতে
পারেঃ
“””””””””””””””
“””””””””””””””
“””””””””””””””
“””””””””””””””
“””””””””””””””
“”””””””””””””
ইবনে তাইমিয়া বলেন –
অনেককে দেখতে পাবে, তাদের নিকট
কেউ ওলী বা বুজুর্গ হওয়ার মানদন্ড
হল, তাদের কাছ থেকে কিছু কাশফ
প্রকাশিত হওয়া। অস্বাভাবিক ও
অপ্রাকৃতিক ঘটনা সংঘঠিত হওয়া।
যেমন, কারও দিকে ইঙ্গিত করলে
সাথে সাথে মৃত্যুবরণ করা। অথবা
বাতাসে উড়ে মক্কায় বা অন্য কোথাও
যাওয়া । অথবা কখনও পানির উপর
হাটা। বাতাস থেকে পাত্র পানি
দ্বারা পূর্ণ করা। অদৃশ্য থেকে টাকা-
পয়সা এনে খরচ করা। অথবা হঠাৎ
মানুষের চোখ থেকে অদৃশ্য হওয়া।
অথাব তার অনুপস্থিতে কিংবা তার
মৃত্যুর পরে তাকে কেউ ডাক দিলে
উপস্থিত হওয়া এবং ঐ ব্যক্তির
প্রয়োজন পুরণ করা। মানুষের চুরি হয়ে
যাওয়া জিনিসের সংবাদ বলে দেয়া।
অদৃশ্য কোন বিষয়ের বর্ণনা দেয়া।
অসুস্থ কারও সম্পর্কে সংবাদ দেয়া।
ইত্যাদি।
এগুলোর কোনটি সংগঠিত হওয়া কখনও
এটা প্রমাণ করে না যে, এ ব্যক্তি
আল্লাহর ওলী। বরং সমস্ত ওলী-বুজুর্গ
এ বিষয়ে একমত যে, কেউ যদি
বাতাসে উড়ে, পানির উপর চলে
তাহলে দেখতে হবে, সে রাসূল স. এর
প্রকৃত অনুসারী কি না? শরীয়তের
প্রকাশ্য বিধি-বিধান সে অনুসরণ
করছে কি না? যদি এগুলো না থাকে
তাহলে তার মাধ্যমে ধোকায় পড়া
যাবে না। ওলীদের কারামত এসব
বিষয় থেকে অনেক বড়। এধরনের
অস্বাভাবিক বিষয় যার থেকে
প্রকাশিত হয়, সে কখনও আল্লাহর ওলী
হতে পারে, আবার আল্লাহর শত্রুও হতে
পারে। কেননা এধরনে বিষয় অনেক
কাফের, মুশরিক, আহলে কিতাব ও
মুনাফিক থেকে প্রকাশিত হয়ে থাকে।
অনেক বিদয়াতী থেকে এগুলো
প্রকাশিত হয়। কখনও এগুলো শয়তানের
পক্ষ থেকে হয়ে থাকে।
সুতরাং এই ধারণা করা সমীচিন নয়
যে, এধরনের কোন ঘটনা কারও থেকে
প্রকাশিত হলেই সে আল্লাহর ওলী।
বরং কোন ব্যক্তিকে তার গুণাবলী,
কুরআন-সুন্নাহের অনুসরণের দ্বারা
আল্লাহর ওলী গণ্য করা হবে। ইমানের
নূর ও কুরআনের নূর দ্বারা তাদেরকে
চেনা সম্ভব। এবং বাতেনী ইমানের
হাকিকত দ্বারা তাদের বাস্তবতা
অনুধাবন করা হয়। সেই সাথে প্রকাশ্য
শরীয়তের বিধি-বিধান ওলী হওয়ার
অপরিহার্য অংশ।
[মাজমুয়াতুল ফাতাওয়া, খ.১১,
পৃ.২১৩]
ইবনে তাইমিয়া কিছু অস্বাভাবিক
ঘটনার উদাহরণ দিয়েছেন, যেগুলো
অপ্রাকৃতিক ঘটনা হিসেবে ঘটতে
পারে। তিনি স্পষ্টভাষায় বলেছেন,
ওলীদের কারামত এসব উদাহরণ
থেকেও অনেক বড়। ইবনে তাইমিয়া
রহ. যেসব উদাহরণ দিয়েছেন, এর
মাঝে আমাদের আলোচ্য বিষয়ের সাথে
সংশ্লিষ্ট একটি উদাহরণ রয়েছে।
সেটি হল, কোন মৃত ব্যক্তি উপস্থিত
হওয়া। একজন মৃতব্যক্তি কারও সামনে
উপস্থিত হওয়াটা সম্ভব। এটি
কারামত হিসেবে যে কোন ওলীর
ক্ষেত্রে ঘটতে পারে। এধরনের
কারামত প্রকাশিত হওয়া শরীয়তে
অসম্ভব নয়। বরং এর চেযে বড়
কারামত সংঘঠিত হতে পারে। ইবনে
তাইমিয়া রহ. এর বক্তব্য থেকে
বিষয়টি সুস্পষ্ট।
এ বিষয়ে আক্বিদাগত কিছু মৌলিক
কথাঃ
“””””””””””””””””””””””””””””””””””””””
আমরা বিশ্বাস করি, ওলীদের থেকে
মৃত্যুর পূর্বে যেমন কারামত প্রকাশিত
হতে পারে, তাদের মৃত্যুর পরেও
কারামত প্রকাশিত হতে পারে। এটিই
আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকিদা।
মৃত্যুর পরে কারামত প্রকাশিত হবে
না, বা হওয়া অসম্ভব, এজাতীয় ধ্যান-
ধারণা রাখা কুরআন ও সুন্নাহের বড়
একটি অংশ অস্বীকারের নামান্তর।
একইভাবে নবীদের থেকে তাদের
জীবদ্দশায় যেমন মু’জিযা প্রকাশিত
হতে পারে, তাদের ইন্তেকালের পরেও
প্রকাশিত হতে পারে। কারণ কারামত
একমাত্র আল্লাহর ক্ষমতা ও ইচ্ছায়
সংঘঠিত হয়। এতে বান্দার ক্ষমতা ও
ইচ্ছার কোন প্রভাব নেই। আল্লাহ কখন
কার মাধ্যমে কোন কারামতের প্রকাশ
ঘটাবেন তিনিই ভালো জানেন।
এক্ষেত্রে বান্দা শুধুমাত্র উপলক্ষ।
সুতরাং মৃত্যুর পূর্বেও যেমন আল্লাহর
ক্ষমতা ও ইচ্ছায় কারামত প্রকাশিত
হয়, তেমনি মৃত্যুর পরেও আল্লাহর
ইচ্ছা ও ক্ষমতায় কারামত প্রকাশিত
হতে পারে। আল্লাহ তায়ালা চাইলে
মৃত্যুর পরও রুহ,দেহ বা প্রতিচ্ছবির
মাধ্যমে কারামত সংগঠিত করতে
পারেন। অর্থাৎ আল্লাহ চাইলে মৃত্যুর
পরও কবর থেকে কারো হাত বা সম্পূর্ণ
দেহও বের হয়ে আসতে পারে।এটা
কারামত হিসেবেও করতে পারেন
আবার কোন কিছুর নিদর্শণ হিসেবেও
করতে পারেন।এর বেশ কিছু উদাহারণ
পুর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এ
ধরণের ঘটনাকে অসম্ভব মনে করলে
হাদীসে বর্ণিত ঘটনা সমূহকেও
অসম্ভব মনে করতে হবে।(নাউযুবিল্লাহ)
——————————————————————————————————————————–
ফাজায়েলে হজ্বে বর্ণিত কবর থেকে হাত বের হওয়ার ঘটনা – একটি ফতোয়ার এলমি পর্যালোচনা
============================================================================
সৌদী আরবের স্থায়ী গবেষণা ও ফতোয়া কমিটির ফতোয়াঃ
এ ঘটনাটি উল্লেখ করে এক ব্যক্তি সৌদি আরবের স্থায়ী গবেষণা ও ফতোয়া কমিটির নিকট কিছু প্রশ্ন করে। প্রশ্নগুলো নিম্নরুপ –
১। এটি কী কোন সত্য ঘটনা নাকি ভিত্তিহীন গল্প?
২। সুয়ূতী রচিত “আল হাওয়ী” কিতাবটির সম্বন্ধে আপনাদের মত কী যেটির মধ্যে এই কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে?
৩। যদি এই গল্প সঠিক না হয়, এমন কোন ঈমামের পেছনে নামাজ পড়া জায়েজ হবে কী যেই এই গল্পটি বয়ান ও বিশ্বাস করেন?
৪। এমন কিতাব কোন মসজিদের ধর্মীয় আলোচনা সভায় পড়া জায়েজ হবে কী, যেহেতু ব্রিটেনে তাবলীগ গ্রুপগুলি মসজিদে এই কিতাবটি পড়ে থাকে? এই বইটি সৌদী আরবেও ব্যাপক প্রচলিত, বিশেষ করে মদীনা মুনাওয়ারাতে কারণ এর লেখক দীর্ঘ সময়ের জন্য সেখানে বসবাস করতেন।
এর জবাবে সৌদি আরবের স্থায়ী গবেষণা ও ফতোয়া কমিটি যে ফতোয়া দেয় না নিম্নরুপ –
“এই গল্পটি মিথ্যা এবং একদম ভিত্তিহীন। মৃতব্যাক্তি সম্বন্ধে সাধারণ নিয়ম হচ্ছে, নবী-রাসুল বা সাধারণ মুসলিম যেই হোন না কেন, তিনি তাঁর কবরে নড়া-চড়া করতে পারেন না। যে বর্ণনা করা হয় যে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাফেঈ-র জন্যে বা অন্য কারো জন্যে তাঁর হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন – এটি সত্য নয়; বরং এটি একটি ভিত্তিহীন বিভ্রম, যা কোনমতেই বিশ্বাস করা উচিত নয়।
তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবু বকর (রা) এর জন্যে তাঁর হাত বাড়িয়ে দেন নি, উমার (রা) এর জন্যে দেন নি, অথবা অন্য কোন সাহাবীর জন্যেও না। কারোই উচিত হবে না সুয়ূতীর কিতাব “আল-হাওয়ী” থেকে এই কাহিনী বর্ণনা করে বিভ্রান্ত হওয়া, কেননা অনেক আলেমদের মতে, সুয়ূতী তার কিতাবে বর্ণিত বর্ণনা গুলোর বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করেন নি। তাছাড়া, যে ঈমাম এ কাহিনী বিশ্বাস করে তার পেছনে সলাত আদায় করাও জায়েজ হবে না, কারণ সে তার আক্কিদাগত দিক থেকে ত্রুটিপূর্ণ এবং কুসংস্কারে বিশ্বাসী।
ফাজায়েলে আমল বা এই জাতীয় কিতাব মসজিদে বা অন্য কোথাও পড়া জায়েজ নয় যার মধ্যে কুসংস্কার রয়েছে এবং মানুষের কাছে মিথ্যা প্রচার করে, কারণ এসব মানুষকে বিভ্রান্ত করে ও তাদের মধ্যে কুসংস্কার ছড়ায়।
আল্লাহ্ সুবহানা ওয়া তাআলা যেন সকল মুসলিমদেরকে সত্যের পথে পরিচালিত করেন। তিনি সর্বশ্রোতা ও উত্তরদাতা। আল্লাহ্ আমাদের সাফল্য দান করুন। আল্লাহ্ সুবহানা ওয়া তাআলার শান্তি ও দয়া বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবার ও সাহাবীগণের উপর।”
(ফতোয়া নং ২১৪১২)
ফতোয়াটির লিঙ্কঃ
আরবি ফতোয়ার লিঙ্ক
ইংলিশ অনুবাদের লিঙ্ক
বাংলা অনুবাদের লিঙ্ক
এবার মূল আলোচনায় আসি
এতক্ষন আমরা ‘ফাজায়েলে হজ্বে’ বর্ণিত ঘটনাটি এবং এর বিপরীতে সৌদি আরবের কেন্দ্রিয় ফতোয়া বোর্ডের ফতোয়া দেখলাম। এবার আমরা হুজ্জতের(দলিলের) আলোকে এ ফতোয়া কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা যাচাই করবো ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশের আহলে হাদীসরাই মূলত এ ফতোয়া পেশ করে সাধারণ মানুষদের দাওয়াত ও তাবলীগের মত আজিমুস্বান কাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। যদিও তারা সর্বদা তাদের এলমি অযোগ্যতার কারণে তাকলীদের বিপরীতে ইত্তিবাকে পেশ করে থাকে কিন্তু এ ফতোয়ার ক্ষেত্রে তারা ইত্তিবাকে ফেলে তাকলিদের পথকেই বেছে নিয়েছে। কারণ এ ফতোয়ায় কোন দলিল পেশ করা না হলেও তারা একে ওহির মত প্রচার করে যাচ্ছে। এবার আমরা এ ফতোয়াকে দলিলের মানদন্ডে যাচাই করবো ইনশাআল্লাহ।
সৌদী আরবের স্থায়ী গবেষণা ও ফতোয়া কমিটির ফতোয়া বনাম সহীহ এলমি তাহকিক
সনদের মানদন্ডে ঘটনাটির অবস্থান
(১) সৌদি ফতোয়া বোর্ডের মত – “ এই গল্পটি মিথ্যা এবং একদম ভিত্তিহীন ”।
আমাদের কথাঃ কোন একটি রেওয়ায়েত কখন মিথ্যা এবং একদম ভিত্তিহীন হয় ? যখন এর কোন সনদ থাকে না বা এর সনদে চরম মিথ্যুক রাবী থাকে। তাই এ ঘটনার সনদের আলোচনা আগে হওয়া দরকার। এরপর এ ঘটনার ব্যাপারে আকীদাগত আলোচনায় আগাবো ইনশাআল্লাহ।
ঘটনাটির সনদঃ
ইমাম জালালুদ্দিন সূয়তী(রহ) তার শায়েখ কামাল উদ্দিন থেকে,তিনি শায়েখ শামসুদ্দিন জাযিরী থেকে,তিনি শায়েখ য্যনুদ্দিন থেকে,তিনি শায়খ ইযুদ্দিন আহমদ ফারূকী থেকে,তিনি তাঁর পিতা শায়েখ আবু ইসহাক ইবরাহীম থেকে ও তিনি তাঁর শায়েখ ইযুদ্দিন ওমর (রহ) এর সনদে তাঁর কিতাব “শরফে মুখতেম” নামক কিতাবে উল্লখে করেছেন। সাইয়েদ আহমাদ কবীর রেফায়ী(রহ) এর “আল-বুরহানুল মুয়াইয়াদ” নামক কিতাবের ভূমিকায় এই কাহিনী আছে।
এ সনদে এমন একজন রাবিও নেই যার জন্য এ ঘটনা ভিত্তিহীন বলে দেওয়া যায়। বরং এর মধ্যে অনেকেই হাদীসের বড় বড় ইমাম ছিলেন।
অন্যান্ন যারা এ ঘটনাকে সঠিক জেনে তাদের কিতাবে বর্ণনা করেছেন –
০১ তিরইয়াকুল মুহিব্বীন – শেখ তকী উদ্দীন ওয়াসেতী
০২ আন্নাফহাতুল মিসকিইয়্যাহ – শেখ ইজ্জুদ্দীন
০৩ ওয়াযায়েফে আহমাদী – শেখ ছায়াদী
০৪ আততানবীর – আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী
০৫ তাবাকাতুল কাওয়াকিব – আল্লামা মানাবী
০৬ আত তাজকিরাহ – শেখ আততার
০৭ ইজাবাতুতদ্দায়ী – শেখ আবুল কাসিম বরজঞ্জী
০৮ মানাকিবুস সালিহীন – ইমাম শা’রানী
০৯ রওযাতুল ইয়ান – শেখ মুসেলী
১০ সেহাহুল আখবার – শেখ সিরাজুদ্দীন রেফায়ী
১১ সাওয়াদুল আইনাইন – ইমাম রাফেয়ী কাযবিনী
১২ বাহজাতুল কুবরা – শেখ মুহাম্মাদ ওয়াসেতী
১৩ আসরারে রাহমানী – শেখ সাবী মিসরী
১৪ আননাজমু সাব্বায়ী – শেখ ঈদ হুসাইনী
১৫ শারহুশ শিফা – আল্লামা খাফফাজী
১৬ উম্মুল বারাহীন – হাফেয মাজদ বিন কাসিম ওয়াসেতী
১৭ খাযানাতুল আসীর – শেখ আলী ওয়াসেতী
১৮ কামুসূল আশেকীন – শেখ আব্দুল মুনইম দামেস্কী
১৯ মজলিসে রেফায়ী – আল্লামা সামেরায়ী
২০ আততারীকাতুর রেফাইয়্যাহ – শেখ আব্দুল হুদা ছায়াদী
২১ মুকাদ্দিমাতুল বুরহান – শরফুদ্দীন ওয়াসেতী
২২ বুনইয়ানুল মুশাইয়্যাদ – আল্লামা যাফর আহমাদ উসমানী
২৩ কাশফুন্নেকাব – শেখ আব্দুল কাদের তাবারী
২৪ রবিউল আশেকীন – শেখ আলী হাদ্দাদী
২৫ হায়াতুস সাইয়্যেদ রেফায়ী – শেখ ইউনুস সামেরায়ী
সনদের দিক দিয়ে এ ঘটনাকে আক্রান্ত করতে চাইলে সে চিন্তা অবশ্যই মাথা থেকে মুখে ফেলতে হবে। এ ঘটনার ব্যাপারে সৌদি ফতোয়া বোর্ড আক্বিদার ক্ষেত্রে যে সকল বাড়াবাড়ি করেছে তা দালিল সহকারে উল্লেখ করলে ব্যাপারটি একদম স্পষ্ট হবে যে এ ঘটনার সাথে না কোন আক্বিদাগত বিরোধ আছে আর না সনদগত বিরোধ।
আক্বিদার মানদন্ডে ঘটনাটির অবস্থান
(২) সৌদি ফতোয়া বোর্ডের জবাবঃ “ মৃতব্যাক্তি সম্বন্ধে সাধারণ নিয়ম হচ্ছে, নবী-রাসুল বা সাধারণ মুসলিম যেই হোন না কেন, তিনি তাঁর কবরে নড়া-চড়া করতে পারেন না। যে বর্ণনা করা হয় যে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাফেঈ-র জন্যে বা অন্য কারো জন্যে তাঁর হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন – এটি সত্য নয়; বরং এটি একটি ভিত্তিহীন বিভ্রম, যা কোনমতেই বিশ্বাস করা উচিত নয়। ”
আমাদের কথাঃ
হাদীসের আলোকে কবরে নাড়াচড়া
আমরা বলবো সৌদি ফতোয়া বোর্ডের এ কথা হুজ্জতের সাথে সাংঘর্ষিক। এ ফতোয়া প্রদানে যে শায়খগণ ছিলেন তাদের নিকট ছোট্ট একটি প্রশ্ন করতে চাই, রাসূল স. মিরাজের রাতে মুসা আ.কে তার কবরে ‘দাড়িয়ে’ নামাজ পড়তে দেখেছেন। মুসলিম শরীফসহ বহু হাদীসের কিতাবে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনাটি নিম্নরুপ –
مَرَرْتُ عَلَى مُوسَى لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي عِنْدَ الْكَثِيبِ الأَحْمِرِ وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেনঃ- যেই রাতে আমাকে মি’রাজে নেয়া হলো সেই রাতে যখন আমি মূসা (আ.) এর নিকট এলাম এমতাবস্থায় যে, তিনি লাল বালুকাস্তুপের নিকট স্বীয় কবরে দাঁড়িয়ে নামায পড়ছিলেন। ( দেখুনঃ- সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৮১ । মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১২৫০৪ । সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১৬৩১ । )
মুসা আ. যে তার কবরে দাড়িয়ে নামাজ পড়ছিলেন, এটা কি আপনারা বিশ্বাস করেন, না কি অস্বীকার করেন? এটা কে সম্ভব বলেন না কি অসম্ভব বলেন? এটিকে কি কুসংস্কার বলে ছুড়ে ফেলার ফতোয়া দেন? এখানেতো কবরে নামায পড়ার ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে,আর নামায পড়লে হাত-পা তো অবশ্যই নড়বে। তাহলে আপনাদের কথা অনুযায়ি এধরনের ঘটনা বিশ্বাস করলে তার পিছে নামায হবে না। রাসূল স. মুসা আ. এর কবরে নামাযের ঘটনা বর্ণনা করেছেন, রাসূল স. এর পিছে কি সাহাবাদের নামায হয়েছে? এধরনের ঘটনা বর্ণনা করে হাদীসের কিতাবগুলো কি উম্মতের মাঝে কুসংস্কার ছড়িয়েছে? হাদীসের কিতাব কি তাহলে উম্মতের আকিদা নষ্ট করেছে? আপনারা ফতোয়া দিয়েছেন, যেসব কিতাবে এই জাতীয় ঘটনা থাকবে সেগুলো পড়া জায়েজ নয়। তাহলে মুসলিম,মুসনাদে আহ্মাদ,সুনানে নাসায়ী পড়া কি বৈধ? আপনাদের ফতোয়াটি শুধু আহমাদ রিফায়ী রহ. এর ঘটনা সংশ্লিষ্ট নয়, আপনারা স্পষ্ট লিখেছেন, যেসব কিতাবে এজাতীয় ঘটনা থাকবে সেগুলো মসজিদে বা অন্য কোথাও পড়া জায়েয নয়।
সালাফদের বর্ণনায় কবরে নাড়াচড়া
শুধুমাত্র হাদীস নয় এ ধরণের ঘটনা (কবরের মধ্যে নামায পড়া-নড়াচড়া করা) পরবর্তিতে সালাফগনও বর্ণনা করেছেন। যেমন –
আল্লামা আবু নুয়াইম নিজ সনদে ইয়াসার ইবনে হুবাইশ থেকে, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন,
عن يسار بن حبيش عن أبيه قال أنا والذي لا إله إلا هو أدخلت ثابت البناني في لحده ومعي حميد ورجل غيره فلما سوينا عليه اللبن سقطت لبنه فإذا به يصلي في قبره فقلت للذي معي ألا تراه قال اسكت فلما سوينا عليه وفرغنا أتينا ابنته فقلنا لها ما كان عمل ثابت قال وما رأيتم فأخبرناها فقالت كان يقوم الليل خمسين سنة فإذا كان السحر قال في دعائه اللهم إن كنت أعطيت أحدا الصلاة في قبره فأعطينها فما كان الله ليرد ذلك الدعاء
অর্থ: একমাত্র ইলাহ আল্লাহ তায়ালার শপথ, আমি, হুমাইদ ও আরেক ব্যক্তি সাবেত আল-বুনানীকে দাফন করার উদ্দেশ্যে তার কবরে অবতরণ করি। আমরা যখন দাফন সমাধা করে কবরে ইট বিছিয়ে দিলাম। উপর থেকে একটি ইট সরে গেল। আমরা আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম যে সে কবরে নামায আদায় করছে। আমি আমার সঙ্গীকে বললাম, তুমি তাকে দেখছো? সে বলল, চুপ করো। আমরা সঠিকভাবে দাফন সম্পন্ন করে তার মেয়ের নিকট এলাম। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, সাবেতের আমল কী ছিল? আমরা যা দেখেছি, তার কাছে বলা হল। সে বলল, সে পঞ্চাশ বছর যাবৎ রাত জেগে নামায আদায় করতো। ফজর হলে সে দুয়া করতো, হে আল্লাহ, আপনি যদি কবরে কাউকে নামায পড়ার সুযোগ দেন, তাহলে আমাকে সেই সুযোগ দিন। সুতরাং আল্লাহ তার দুয়া প্রত্যাখ্যান করেননি।
-আহওয়ালুল কুবুর, পৃ.৭০
-শরহুস সুদুর, জালালুদ্দীন সুয়ূতী, পৃ.১৮৮ ।
-মুখতাসারু সাফওয়াতিস সাফওয়া, খ.১, পৃ.২৯৬।
আশ্চর্যের বিষয় হল, সালাফীদের অনুসরণীয় শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদী তার ‘আহকামু তামান্নিল মাউত’ কিতাবে এই বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন। আহকামু তামান্নিল মাউত শায়খ জদীর নিজের হাতের লেখা। এটি তাহকীক করেছে আব্দুর রহমান ইবনে মুহাম্মাদ সাদহান ও শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনে জিবরীন। এর ৪০ পৃষ্ঠায় এ ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।
কবরের মধ্যে নড়াচড়ার কারণে যদি সৌদি ফতোয়াবোর্ড ফাজায়েলে হজ্বের বর্ণনার ক্ষত্রে ‘ভিত্তিহীন বিভ্রম, যা কোনমতেই বিশ্বাস করা উচিত নয়’ বলতে পারে তাহলে কবরে নামায পড়ার (নাড়াচড়া করা) রেওয়ায়েতে সমুহের ক্ষত্রেও কি ‘ভিত্তিহীন বিভ্রম, যা কোনমতেই বিশ্বাস করা উচিত নয়’ বলা যাবে ??? তাহলেতো রাসূল স. থেকে বর্ণিত রেওয়াতের ক্ষত্রেওতো এরকমটা বলতে হবে (নাউযুবিল্লাহ)।
শুধু হাত নয় পূর্ণ দেহ কবর থেকে বের হওয়ার ঘটনা হাদিসে রয়েছে
ফাজায়েলে হজ্বেতো শুধুমাত্র হাত বের হওয়ার ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লামতো কবর থেকে সম্পূর্ণ দেহ বের হওয়ার ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
হাদীসটি নিম্নরুপ –
হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল স. বলেন,
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ ، وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ نُمَيْرٍ , عَنِ الرَّبِيعِ بْنِ سَعْدٍ الْجُعْفِيِّ ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَابِطٍ ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ ، قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” حَدِّثُوا عَنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ ، فَإِنَّهُ كَانَتْ فِيهِمُ الأَعَاجِيبُ ، ثُمَّ أَنْشَأَ يُحَدِّثُ ، قَالَ : خَرَجَتْ رُفْقَةٌ مَرَّةً يَسِيرُونَ فِي الأَرْضِ فَمَرُّوا بِمَقْبَرَةٍ ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ : لَوْ صَلَّيْنَا رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ دَعَوْنَا اللَّهَ لَعَلَّهُ يُخْرِجُ لَنَا بَعْضَ أَهْلِ هَذِهِ الْمَقْبَرَةِ فَيُخْبِرُنَا عَنِ الْمَوْتِ ، قَالَ : فَصَلُّوا رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ دَعَوْا ، فَإِذَا هُمْ بِرَجُلٍ خِلاسِيٍّ قَدْ خَرَجَ مِنْ قَبْرٍ يَنْفُضُ رَأْسَهُ ، بَيْنَ عَيْنَيْهِ أَثَرُ السُّجُودِ ، فَقَالَ : يَا هَؤُلاءِ مَا أَرَدْتُمْ إِلَى هَذَا ؟ لَقَدْ مِتُّ مُنْذُ مِائَةِ سَنَةٍ فَمَا سَكَنَتْ عَنِّي حَرَارَةُ الْمَوْتِ إِلَى السَّاعَةِ ، فَادْعُوا اللَّهَ أَنْ يُعِيدَنِي كَمَا كُنْتُ ” .
“তোমরা বনী ইসরাইলদের ঘটনা বর্ণনা করো। কেননা তাদের মাঝে অনেক আশ্চর্যজনক ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। এরপর রাসূল স. একটি ঘটনা বর্ণনা করলেন,
একদা বনী ইসরাইলের কয়েকজন বন্ধু ভ্রমণে বের হল। তারা একটি কবরস্থান দিয়ে অতিক্রম করছিল । তারা একে -অপরকে বলল, “আমরা যদি, দু’রাকাত নামায আদায় করে আল্লাহর কাছে দুয়া করি, তাহলে আল্লাহ তায়ালা হয়তো কবরের কোন ব্যক্তিকে আমাদের সামনে উপস্থিত করবেন। সে মৃত্যু সম্পর্কে আমাদেরকে বলবে।
তারা দু’রাকাত নামায আদায় করল। এরপর আল্লাহর কাছে দুয়া করল। হঠাৎ এক ব্যক্তি মাথা থেকে মাটি পরিষ্কার করতে করতে কবর থেকে বের হয়ে এল। তার কপালে সিজদার চিহ্ন ছিল। সে বলল, তোমরা কী চাও? আমি একশ বছর পূর্বে মৃত্যুবরণ করেছি। এখনও আমার দেহ থেকে মৃত্যুর যন্ত্রনা উপশমিত হয়নি। আল্লাহর কাছে দুয়া করো, যেন তিনি আমাকে পূর্বের স্থানে (কবরে) ফেরত পাঠিয়ে দেন”
যেসব বিখ্যাত মুহাদ্দিস হাদীসটি তাদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন,
১. ইবনে আবিদ দুনিয়া রহ., মান আশা বা’দাল মাউত। হাদীস নং ৫৮
২. মুসনাদে আব্দ ইবনে হুমাইদ, হাদীস নং ১১৬৪
৩.ফাওয়াইদু তামাম আর-রাজী, হাদীস নং ২১৭
৪. আল-জামে লি আখলাকির রাবী, খতীব বাগদাদী, হাদীস নং ১৩৭৮
৫. আল-বা’স, ইবনে আবি দাউদ, হা.৫
৬.আজ-জুহদ, ইমাম ওকী ইবনুল জাররাহ, হাদীস নং৮৮
৭. আজ-জুহদ, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ.
৮. মাজালিস মিন আমালি ইবনে মান্দাহ, ইবনে মান্দাহ, হাদীস নং ৩৯৩
৯. আল-মাতালিবুল আলিয়া, ইবনে হাজার আসকালানী রহ. হাদীস নং ৮০৭
১০. ফুনুনুল আজাইব, হা.১৯
১১. শরহুস সুদুর, জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহ. পৃ.৪২-৪৩
ঘটনাটি বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত। তামাম আর-রাজী এটি সরাসরি রাসূল স. থেকে বর্ণনা করেছেন। ইবনে হাজার আসকালানী রহ. হযরত জাবির রা. থেকে মওকুফ সূত্রে বর্ণনা করেছেন, যেটি মরফু এর হুকুমে। সুতরাং ঘটনার প্রামাণ্যতার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।