মহিলাদের মাযারে গমন
=====
আজকাল দেখা যায় যে, আউলিয়ায়ে কেরামের মাযারে মেয়ে লোকদের আনাগোনা এমনভাবে বেড়ে গিয়েছে যে, সেখানে পর্দা-পুশিদার কথা দূরে থাক বরং দু’শ্চরিত্রা নারী তাদের কুমতলব সাধনের লক্ষ্যে বিভিন্ন মাযারসমূহকে নিরাপদ আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করছে। ক্ষেত্রবিশেষে মাযারের কথিত মোতাওয়াল্লী, খাদেম ও ওয়ারিশরা টু পাইস কামানোর জন্যে এসব গর্হিত কাজে বাধাতো দেই না বরং অনেক ক্ষেত্রে সহায়তাও করে থাকে। ইমাম আহমদ রেযা রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি এসব বিদআত ও গোমরাহীর বিরুদ্ধে কুরআন, হাদীস এবং ফিক্বহ’র শতাধিক দলীল দিয়ে মুসলিম উম্মাহর মেয়ে-লোকদের কবরস্থান বা মাযারে যাওয়ার ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। তিনি বিখ্যাত গুনিয়া কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘‘এটা জিজ্ঞেস করো না যে, মেয়ে-লোকদের মাযারে (কবরে) যাওয়া জায়েয আছে কি নেই বরং এটা জিজ্ঞেস করো যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে ঐ মেয়েলোকদের উপর কতটুকু লা’নত (অভিসম্পাত) করা হয়। আর কতটুকু বা করা হয় কবরবাসীর পক্ষ থেকে, যখন (কবরে যাওয়ার) ইচ্ছা করে তখন লা’নত শুরু হয়ে যায়। আর প্রর্ত্যাবর্তন করা পর্যন্ত ফেরেশতা লা’নত করতেই থাকেন। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর রওজায়ে আনোয়ার ছাড়া কোন মাযারে যাওয়ার অনুমতি নেই। রওযায়ে আকদাসের যিয়ারত একটি বড়ো সুন্নাত যা ওয়াজিবের কাছাকাছি। কুরআনে করীমে একে (গুনাহর) মাগফিরাতের উসীলা বলেছে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘‘এবং যখন তারা নিজেদের জানের উপর জুলুম করবে, আর আপনার সমীপে হাযির হয়, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে, আর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামও যদি তাদের জন্য সুপারিশ করেন, তাহলে অবশ্যই আল্লাহকে তাওবা কবুলকারী ও অতীব দয়ালু পাবে।’’
হাদীস শরীফে ইরশাদ হচ্ছে ‘‘যে ব্যক্তি আমার পবিত্র রওজা শরীফের যিয়ারত করলো, তার জন্যে আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেলো।
অন্য হাদীসে আছে, ‘‘যে হজ্ব করলো এবং আমার জিয়ারত করলো না, নিশ্চয়ই সে আমার উপর জুলুম করলো।’’ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র কবর শরীফ জিয়ারাত করা একে তো ওয়াজিব আদায় করা; দ্বিতীয়ত তাওবা কবুল হওয়া, তৃতীয়ত শাফায়াত লাভ করা, চতুর্থত (আল্লাহর পানাহ) প্রিয় নবীর সাথে জুলুম করা থেকে বিরত থাকা। কিন্তু অন্যান্য কবর এবং মাযারের ব্যাপারে এমনি তাকিদ যেমন পাওয়া যায় না, তেমনি এতে ফ্যাসাদেরও সম্ভাবনা আছে। কেননা তারা প্রিয়জনদের কবরে ধৈর্য হারিয়ে ফেলবে।
আউলিয়ায়ে কিরামের মাযারে হয়তো না বুঝে বেআদবী করবে অথবা অজ্ঞতার কারণে তাজীমের বেলায় অতিরিক্ত করবে, যেমন সর্বজনজ্ঞান ও দৃষ্ট হয়। [মুহাম্মদ মুস্তফা রেযা খাঁনঃ মালফুজাতে-ই- আ’লা হযরত, পৃষ্ঠা-১২৫]
তাছাড়া এক্ষেত্রে পর্দা-পুশিদার বালাই থাকে না। উল্লেখ্য, পর্দা-পুশিদা এমনিতেই ফরয। সে জন্যে আ’লা হযরত রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি এক্ষেত্রে পর্দার কথা উল্লেখ করেন নি।
ইমাম আহমদ রেযা রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘কবর যিয়ারত করা মেয়েদের জন্য নিষিদ্ধ। হাদীসের মধ্যে আছে-‘‘আল্লাহর লানত (অভিসম্পাত) সেই সমস্ত নারীদের প্রতি, যারা কবর জিয়ারত করতে যায়।’’
ইমাম আহমদ রেযা রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি নারীদের মাযারে যাওয়ার নিষেধ মর্মে একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। এর নাম হচ্ছে-‘‘জামালুন নূর ফী নাহয়িন নিসায়ী আন যিয়ারাতিল কুবূর’’। উক্ত গ্রন্থে তিনি ফিক্বাহর প্রসিদ্ধ কিতাব আইনী ৩য় খণ্ডের বরাত দিয়ে উল্লেখ করেন, ‘‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেছেন, মেয়েলোকের আপাদমস্তক লজ্জার বস্তু। আপনাপন ঘরের মধ্যেই তারা আল্লাহর নিকটবর্তী থাকে। আর যখন ঘর থেকে বেরোয়, তখন তার উপর শয়তান দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।
উল্লেখ্য, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু জুমার দিনে দাঁড়িয়ে কংকর মারতে মারতে মসজিদ থেকে মেয়েলোকদের বের করে দেন।
ইমাম ইবরাহীম নখয়ী, (তাবেয়ী), যিনি ইমাম আবু হানীফা রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি-এর ওস্তাদ ছিলেন, তাঁর ঘরের মেয়ে লোকদেরকে জুমা এবং জামায়াতে যেতে দিতেন না; যখন সেই উত্তম যুগ বড় বেশী ফয়ূজ এবং বরকতের সময়ে নারীদেরকে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে, তাহলে কি এ নষ্টামীর যুগে, ফ্যাসাদের যুগে, এ অল্প সংখ্যক এবং ধারণাকৃত ফুয়ুজাতের বাহানায় মেয়ে-লোকদেরকে অনুমতি দেয়া হবে? আর এই জিয়ারতই বা কিভাবে কবুল করা হবে, যা শরীয়ত তাকিদ দেয় না? বিশেষত এ সমস্ত মেলা-উৎসবে যা খোদাদ্রোহীরা মাযারসমূহে খুলে বসেছে। এটা পবিত্র শরীয়তের সাথে কতটুকু মুনাফেক্বী? [ইমাম আহমদ রেযাঃ জামালুন নূর………দ্রষ্টব্য]
ইমাম আহমদ রেযা রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি ফাতাওয়া-ই রেযভীয়া’র মধ্যে কুরআন, হাদীস এবং ফিক্বাহর বিভিন্ন প্রমাণাদির মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে, মেয়েলোক তথা নারীদের কবরে যাওয়া অবশ্যই না জায়েয ও হারাম।