▆ ঈসালে সাওয়াব / সাওয়াব রেসানী ▆
ঈসাল মানে হল, পৌঁছানো। আর সওয়াব মানেতো সওয়াব, পূণ্য।
তাহলে ঈসালে সওয়াব মানে হল, সওয়াব পৌঁছানো।
প্রচলিতভাবে “ঈসালে সওয়াব” বলা হয়, মৃত ব্যক্তির জন্য দুনিয়ায় কোন আমল করে সওয়াব পৌঁছানোকে।
এ ঈসালে সওয়াব শুধু অসংখ্য হাদীস দ্বারা নয়, বরং কুরআনে কারীমের আয়াত দ্বারাও প্রমাণিত।
তাই এটিকে বিদআত বলার কোন সুযোগ নেই।
যে সমস্ত নামধারী আহলে হাদীসরা এটিকে বিদআত বলে, তাদের মৃত্যুর পর তাদের জন্য কুরআন পড়ে দুআ, ইস্তিগফার পড়া, দুআ করে ঈসালে সওয়াব করার কোন প্রয়োজন নেই।
বাকি আমরা যারা ঈসালে সাওয়াব বিশ্বাস করি, তাদের জন্য এভাবে ঈসালে সওয়াব করুন। যেন আল্লাহ তাআলা ঈসালে সওয়াবের বদৌলতে কবরবাসীকে শান্তি পৌঁছান।
কয়েকটি প্রমাণ উপস্থাপন করা হলো,
কুরআনুল কারিম থেকে প্রমাণঃ
الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَالْبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عِندَ رَبِّكَ ثَوَابًا وَخَيْرٌ أَمَلًا [١٨:٤٦]
ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য এবং স্থায়ী সৎকর্মসমূহ আপনার পালনকর্তার কাছে প্রতিদান প্রাপ্তি ও আশা লাভের জন্যে উত্তম।
*_* সূরা কাহাফ; আয়াত ৪৬।
আসুন, দেখে নিই,
আয়াতুল কারিমে বর্ণিত স্থায়ী সৎকর্ম কী?
এক হাদীসে প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) ব্যাখ্যা করেনঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثٍ: إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) ইরশাদ করেন, ব্যক্তি যখন মারা যায়, তখন তার নেক আমল করার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি পথ ছাড়া। একটি হল, সদকায়ে জারিয়া, দ্বিতীয় হল ইলম, যদ্বারা মানুষ উপকার পায়, এবং তৃতীয় হল, নেক সন্তানের দুআ।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৮৪৪,
*_* সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৮৮০,
*_* মুসলিম, হাদীস নং-১৬৩১।
হাদীসুল কারিম থেকে থেকে প্রমাণ
০১.
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: أَنَّ رَجُلًا قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ أُمِّي افْتُلِتَتْ نَفْسُهَا، وَأَظُنُّهَا لَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ، فَهَلْ لَهَا أَجْرٌ إِنْ تَصَدَّقْتُ عَنْهَا؟ قَالَ: «نَعَمْ
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) এর কাছে এসে বলল, আমার আম্মা হঠাৎ ইন্তেকাল করেছেন। [কিছু বলে যেতে পারেননি] আমার ধারণা! তিনি যদি কিছু বলার সুযোগ পেতেন, তাহলে আমাকে তার নামে সদকা করতে বলতেন। তো আমি যদি তার নামে সদকা করি, তাহলে কি এর সওয়াব তিনি পাবেন? রাসূল সাঃ বললেন, হ্যাঁ।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* বুখারী শরীফ, হাদীস নং-১৩৮৮।
০২.
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، أَنَّ امْرَأَةً مِنْ جُهَيْنَةَ، جَاءَتْ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: إِنَّ أُمِّي نَذَرَتْ أَنْ تَحُجَّ فَلَمْ تَحُجَّ حَتَّى مَاتَتْ، أَفَأَحُجُّ عَنْهَا؟ قَالَ: «نَعَمْ حُجِّي عَنْهَا، أَرَأَيْتِ لَوْ كَانَ عَلَى أُمِّكِ دَيْنٌ أَكُنْتِ قَاضِيَةً؟ اقْضُوا اللَّهَ فَاللَّهُ أَحَقُّ بِالوَفَاءِ
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। এক জুহাইনা এলাকার এক মহিলা প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) এঁর কাছে এসে বললেন, আমার আম্মা হজ্ব করার মান্নত করেছিলেন, কিন্তু হজ্ব করার আগেই তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আমি কি এখন তার পক্ষ থেকে তা আদায় করবো?
প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) ইরশাদ করলেন, হ্যাঁ, তুমি তার পক্ষ থেকে আদায় কর। তোমার মায়ের যিম্মায় যদি ঋণ থাকতো, তাহলে কি তুমি তা আদায় করতে না? তেমনি এটাও আদায় কর। কারণ আল্লাহ তাআলাই অধিক হক রাখেন যে, তার সাথে কৃত অঙ্গিকার পূর্ণ করা হবে।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* বুখারী শরীফ, হাদীস নং-১৮৫২।
০৩.
عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: تُوُفِّيَ رَجُلٌ فَغَسَّلْنَاهُ، وَحَنَّطْنَاهُ، وَكَفَّنَّاهُ، ثُمَّ أَتَيْنَا بِهِ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي عَلَيْهِ، فَقُلْنَا: تُصَلِّي عَلَيْهِ؟ فَخَطَا خُطًى، ثُمَّ قَالَ: ” أَعَلَيْهِ دَيْنٌ؟ ” قُلْنَا: دِينَارَانِ، فَانْصَرَفَ، فَتَحَمَّلَهُمَا أَبُو قَتَادَةَ، فَأَتَيْنَاهُ، فَقَالَ أَبُو قَتَادَةَ: الدِّينَارَانِ عَلَيَّ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” حَقُّ الْغَرِيمُ، وَبَرِئَ مِنْهُمَا الْمَيِّتُ؟ ” قَالَ: نَعَمْ، فَصَلَّى عَلَيْهِ، ثُمَّ قَالَ بَعْدَ ذَلِكَ بِيَوْمٍ: ” مَا فَعَلَ الدِّينَارَانِ؟ “فَقَالَ: إِنَّمَا مَاتَ أَمْسِ، قَالَ: فَعَادَ إِلَيْهِ مِنَ الْغَدِ، فَقَالَ: لَقَدْ قَضَيْتُهُمَا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” الْآنَ بَرَدَتْ عَلَيْهِ جِلْدُهُ “،
হযরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মারা গেলে আমরা তার গোসল দিলাম। তারপর কাফন পড়িয়ে প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) এঁর কাছে নিয়ে এলাম। যেন তিনি তার উপর জানাযা পড়েন। আমরা হযরতকে জানাযা পড়াতে অনুরোধ করলাম।
প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) কয়েক কদম আগে বাড়লেন। তারপর তিনি বললেন, তার উপর কি কোন ঋণ আছে? আমরা বললাম, দুই দিনার ঋণ আছে। একথা শুনে প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) ফিরে গেলেন। তখন আবু কাতাদা রাঃ বললেন, আমি তা পরিশোধ করে দিব। ঋণের হক আদায় করে তুমি মৃতকে ঋণমুক্ত করবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তারপর প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) তার জানাযা পড়ালেন। তারপর একদিন পর প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) জিজ্ঞাসা করলেন, ঋণ কি আদায় হয়েছে? আবু কাতাদা বললেন, তিনিতো গতকাল মারা গেছেন। তারপর একদিন পর আবার জিজ্ঞাসা করলেন। তখন জবাবে বলা হল, আদায় করা হয়েছে। তখন প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) ইরশাদ করলেন, এখন উক্ত ব্যক্তির আত্মাকে শান্ত করেছো।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৪৫৩৬।
০৪.
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: شَهِدْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْأَضْحَى بِالْمُصَلَّى، فَلَمَّا قَضَى خُطْبَتَهُ نَزَلَ مِنْ مِنْبَرِهِ وأُتِيَ بِكَبْشٍ فَذَبَحَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ، وَقَالَ: «بِسْمِ اللَّهِ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ، هَذَا عَنِّي، وَعَمَّنْ لَمْ يُضَحِّ مِنْ أُمَّتِي
হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) এর সাথে ঈদুল আযহায় নামাযে শরীক ছিলাম। যখন খুতবা শেষ হল। তখন তিনি মিম্বর থেকে নামলেন। তারপর তার কাছে একটি ভেড়া আনা হল। তারপর তিনি তা জবাই করলে নিজ হাতে। জবাইকালে বললেন, বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, এটি আমার এবং আমার ঐ উম্মতীর পক্ষ থেকে যারা কুরবানী করতে পারেনি।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* আবু দাউদ, হাদীস নং-২৮১০
০৫.
عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ الْعَلَاءِ بْنِ اللَّجْلَاجِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ لِي أَبِي: ” يَا بُنَيَّ إِذَا أَنَا مُتُّ فَأَلْحِدْنِي، فَإِذَا وَضَعْتَنِي فِي لَحْدِي فَقُلْ: بِسْمِ اللهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُولِ اللهِ، ثُمَّ سِنَّ عَلَيَّ الثَّرَى سِنًّا، ثُمَّ اقْرَأْ عِنْدَ رَأْسِي بِفَاتِحَةِ الْبَقَرَةِ وَخَاتِمَتِهَا، فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ ذَلِكَ
হযরত আব্দুর রহমান বিন আলা বিন লাজলাজ, তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, আমার পিতা আমাকে বলেছেন, হে বৎস! আমি যখন মারা যাবো, তখন আমার জন্য “লাহাদ” কবর খুড়বে। তারপর আমাকে যখন কবরে রাখবে তখন পড়বে “বিসমিল্লাহি ওয়াআলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ” তারপর আমার উপর মাটি ঢালবে। তারপর আমার মাথার পাশে সূরা বাকারার শুরু এবং শেষাংশ পড়বে। কেননা, আমি রাসূল সাঃ থেকে এমনটি বলতে শুনেছি।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৪৫১,
*_* সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৭০৬৮।
আল্লামা হায়ছামী রহঃ বলেনঃ
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ، وَرِجَالُهُ مُوَثَّقُونَ.
এ হাদীস ইমাম তাবারানী তার কাবীরে নকল করেছেন, এবং তার প্রতিটি রাবী সিকা।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-৪২৪৩।
০৬.
ابْنَ عُمَرَ، يَقُولُ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِذَا مَاتَ أَحَدُكُمْ فَلَا تَحْبِسُوهُ، وَأَسْرِعُوا بِهِ إِلَى قَبْرِهِ، وَلْيُقْرَأْ عِنْدَ رَأْسِهِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ، وَعِنْدَ رِجْلَيْهِ بِخَاتِمَةِ الْبَقَرَةِ فِي قَبْرِهِ
হযরত ইবনে উমর রাঃ বলেন, প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) ইরশাদ করেছেন, যখন কোন ব্যক্তি মারা যায়, তখন তাকে আটকে রেখো না, বরং দ্রুত তাকে কবরস্ত কর। আর তার কবরের মাথার পাশে দাঁড়িয়ে সূরা ফাতিহা এবং পায়ের পাশে দাঁড়িয়ে সূরা বাকারার শেষ অংশ তিলাওয়াত কর।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-১৩৬১৩,
*_* শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৮৮৫৪।
০৭.
عَنْ أَبِي أُسَيْدٍ مَالِكِ بْنِ رَبِيعَةَ قَالَ: بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ جَاءَهُ رَجُلٌ مِنْ بَنِي سَلَمَةَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَبَقِيَ مِنْ بِرِّ أَبَوَيَّ شَيْءٌ أَبَرُّهُمَا بِهِ مِنْ بَعْدِ مَوْتِهِمَا؟ قَالَ: «نَعَمْ، الصَّلَاةُ عَلَيْهِمَا، وَالِاسْتِغْفَارُ لَهُمَا، وَإِيفَاءٌ بِعُهُودِهِمَا مِنْ بَعْدِ مَوْتِهِمَا، وَإِكْرَامُ صَدِيقِهِمَا، وَصِلَةُ الرَّحِمِ الَّتِي لَا تُوصَلُ إِلَّا بِهِمَا»
হযরত আবূ সাঈদ আসসায়েদী রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একদা প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) এঁর কাছে ছিলাম। এমতাবস্থায় বনী সালামা গোত্রের একজন ব্যক্তি আসল। লোকটি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা মাতার ইন্তেকালের পর তাদের জন্য কোন নেক কাজ করার কি সুযোগ আছে?
প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) ইরশাদ করলেন : তাদের জন্যে (নামে/পক্ষে) নামায পড়ে [ঈসালে সওয়াব করে] তাদের জন্য (নামে/পক্ষে) ইস্তিগফার কর। তাদের অঙ্গিকার ওয়াদাগুলো (তাদের পক্ষে) পূর্ণ কর। তাদের সম্পর্কিত আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখ। তাদের বন্ধুদের সাথে ভাল ব্যবহার কর।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩৬৬৪,
*_* সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫১৪২।
ইসালে সাওয়াব বিষয়ে
ইজমা
والمعتمد فى المذاهب الاربعة ان ثواب القراءة يصل الى الاموات، لانه هبة ودعاء بالقرآن الذى تتنزل الرحمات عند تلاوته، وقد ثبت فى السنة النبوية وصول الدعاء والصدقة للميت، وذلك مجمع عليه
চার ইমামগণের নিকট যে কথাটি গ্রহণযোগ্য, তা হল, কুরআনুল কারীমের তিলাওয়াতের সওয়াবও মৃতের কাছে পৌঁছে। কেননা, এটি কুরআনে কারীমের হাদিয়া এবং দুআ। যা তিলাওয়াতকালে আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হয়। যেহেতু মাইয়্যেতের জন্য সদকা এবং তার জন্য দুআ করলে তা মৃতের কাছে পৌঁছার বিষয়টি হাদীসে নববী দ্বারা প্রমাণিত। এর উপরই উম্মতের ইজমা।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* তাফসীরে মুনীর-১৪/১৪০, ডঃ ওহাবাতুজ জুহাইলী]
কিন্তু
একটি প্রশ্ন
কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে
وَأَن لَّيْسَ لِلْإِنسَانِ إِلَّا مَا سَعَىٰ [٥٣:٣٩]
এবং মানুষ তাই পায়,যা সে করে।
*_* সূরা নজম; আয়াত ৩৯।
এ আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, ব্যক্তি যা করে কেবল এর সওয়াবই সে পাবে। একজনের সওয়াবের কাজ অন্যের জন্য কোন কাজে আসবে না।
তাই ঈসালে সওয়াব দ্বারা মৃত ব্যক্তি কোন ফায়দা পাবে না।
প্রশ্নটির উত্তর,
আয়াত বুঝতে হবে সালফে সালেহীনের বুঝ অনুপাতে। নতুবা তা মনগড়া, বিদা'আত হবে।
উক্ত আয়াতের দ্বারা উদ্দেশ্য কারা?
আল্লামা কুরতুবী রহঃ তাফসীরে কুরতুবীতে লিখেনঃ
وَقَالَ الرَّبِيعُ بْنُ أَنَسٍ: (وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسانِ إِلَّا مَا سَعى) يَعْنِي الْكَافِرَ وَأَمَّا الْمُؤْمِنُ فَلَهُ مَا سَعَى وَمَا سَعَى لَهُ غَيْرُهُ. قُلْتُ: وَكَثِيرٌ مِنَ الْأَحَادِيثِ يَدُلُّ عَلَى هَذَا الْقَوْلِ، وَأَنَّ المؤمن يصل إليه ثَوَابِ الْعَمَلِ الصَّالِحِ مِنْ غَيْرِهِ،
রবী’ বিন আনাস বলেন, “এবং মানুষ তাই পায়, যা সে করে” কথার দ্বারা উদ্দেশ্য হল কাফের।
অর্থাৎ কাফেররা যা করে শুধু এতটুকুই সে পাবে। কিন্তু মুমিনরা সে যা করে তার সওয়াবও পায়, আবার অন্যের কৃত সওয়াব ও পায়।
আমি [ইমাম কুরতুবী] বলি, অনেক হাদীস এ বিষয়টির প্রমাণ বহন করে। নিশ্চয় মুমিনের জন্য অন্যের কৃত নেক আমলের সওয়াবও পৌঁছে।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* তাফসীরে কুরতুবী-১৭/১১৪।
উপরোক্ত দলীল প্রমাণাদীর মাধ্যমে আশা করি বিষয়টি পরিস্কার হয়ে গেছে যে, মৃতের জন্য ঈসালে সওয়াব করা কুরআন ও হাদীস এবং ইজমায়ে উম্মাহ দ্বারা প্রমাণিত।
তাই,
ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে যেসব কাজ করা যায়ঃ
০১. মৃতের নামে সদকা করা।
০২. কুরবানী করা।
০৩. মৃতের জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা।
০৪. মৃতের জন্য দুআ করা।
০৫. ইস্তিগফার করা।
০৬. হজ্ব করা।
ইত্যাদি পূণ্যের কাজ করে মৃত ব্যক্তির জন্য ঈসালে সওয়াব করা যায়। যা কুরআন ও হাদীসের মাধ্যমে সুষ্পষ্টরূপে প্রমাণিত।
এটি অস্বিকার করা মানেই হল মূলত কুরআন ও হাদীসকেই অস্বিকার করা।
আল্লাহ তাআলা আমাদের মৃত্যুর পরও এমন ঈসালে সওয়াব যেন কবরে থেকে পাই সেই তৌফিক আমাদের দান করুন।
আমীন।
ঈসাল মানে হল, পৌঁছানো। আর সওয়াব মানেতো সওয়াব, পূণ্য।
তাহলে ঈসালে সওয়াব মানে হল, সওয়াব পৌঁছানো।
প্রচলিতভাবে “ঈসালে সওয়াব” বলা হয়, মৃত ব্যক্তির জন্য দুনিয়ায় কোন আমল করে সওয়াব পৌঁছানোকে।
এ ঈসালে সওয়াব শুধু অসংখ্য হাদীস দ্বারা নয়, বরং কুরআনে কারীমের আয়াত দ্বারাও প্রমাণিত।
তাই এটিকে বিদআত বলার কোন সুযোগ নেই।
যে সমস্ত নামধারী আহলে হাদীসরা এটিকে বিদআত বলে, তাদের মৃত্যুর পর তাদের জন্য কুরআন পড়ে দুআ, ইস্তিগফার পড়া, দুআ করে ঈসালে সওয়াব করার কোন প্রয়োজন নেই।
বাকি আমরা যারা ঈসালে সাওয়াব বিশ্বাস করি, তাদের জন্য এভাবে ঈসালে সওয়াব করুন। যেন আল্লাহ তাআলা ঈসালে সওয়াবের বদৌলতে কবরবাসীকে শান্তি পৌঁছান।
কয়েকটি প্রমাণ উপস্থাপন করা হলো,
কুরআনুল কারিম থেকে প্রমাণঃ
الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَالْبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عِندَ رَبِّكَ ثَوَابًا وَخَيْرٌ أَمَلًا [١٨:٤٦]
ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য এবং স্থায়ী সৎকর্মসমূহ আপনার পালনকর্তার কাছে প্রতিদান প্রাপ্তি ও আশা লাভের জন্যে উত্তম।
*_* সূরা কাহাফ; আয়াত ৪৬।
আসুন, দেখে নিই,
আয়াতুল কারিমে বর্ণিত স্থায়ী সৎকর্ম কী?
এক হাদীসে প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) ব্যাখ্যা করেনঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثٍ: إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) ইরশাদ করেন, ব্যক্তি যখন মারা যায়, তখন তার নেক আমল করার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি পথ ছাড়া। একটি হল, সদকায়ে জারিয়া, দ্বিতীয় হল ইলম, যদ্বারা মানুষ উপকার পায়, এবং তৃতীয় হল, নেক সন্তানের দুআ।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৮৪৪,
*_* সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৮৮০,
*_* মুসলিম, হাদীস নং-১৬৩১।
হাদীসুল কারিম থেকে থেকে প্রমাণ
০১.
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: أَنَّ رَجُلًا قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ أُمِّي افْتُلِتَتْ نَفْسُهَا، وَأَظُنُّهَا لَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ، فَهَلْ لَهَا أَجْرٌ إِنْ تَصَدَّقْتُ عَنْهَا؟ قَالَ: «نَعَمْ
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) এর কাছে এসে বলল, আমার আম্মা হঠাৎ ইন্তেকাল করেছেন। [কিছু বলে যেতে পারেননি] আমার ধারণা! তিনি যদি কিছু বলার সুযোগ পেতেন, তাহলে আমাকে তার নামে সদকা করতে বলতেন। তো আমি যদি তার নামে সদকা করি, তাহলে কি এর সওয়াব তিনি পাবেন? রাসূল সাঃ বললেন, হ্যাঁ।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* বুখারী শরীফ, হাদীস নং-১৩৮৮।
০২.
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، أَنَّ امْرَأَةً مِنْ جُهَيْنَةَ، جَاءَتْ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: إِنَّ أُمِّي نَذَرَتْ أَنْ تَحُجَّ فَلَمْ تَحُجَّ حَتَّى مَاتَتْ، أَفَأَحُجُّ عَنْهَا؟ قَالَ: «نَعَمْ حُجِّي عَنْهَا، أَرَأَيْتِ لَوْ كَانَ عَلَى أُمِّكِ دَيْنٌ أَكُنْتِ قَاضِيَةً؟ اقْضُوا اللَّهَ فَاللَّهُ أَحَقُّ بِالوَفَاءِ
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। এক জুহাইনা এলাকার এক মহিলা প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) এঁর কাছে এসে বললেন, আমার আম্মা হজ্ব করার মান্নত করেছিলেন, কিন্তু হজ্ব করার আগেই তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আমি কি এখন তার পক্ষ থেকে তা আদায় করবো?
প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) ইরশাদ করলেন, হ্যাঁ, তুমি তার পক্ষ থেকে আদায় কর। তোমার মায়ের যিম্মায় যদি ঋণ থাকতো, তাহলে কি তুমি তা আদায় করতে না? তেমনি এটাও আদায় কর। কারণ আল্লাহ তাআলাই অধিক হক রাখেন যে, তার সাথে কৃত অঙ্গিকার পূর্ণ করা হবে।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* বুখারী শরীফ, হাদীস নং-১৮৫২।
০৩.
عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: تُوُفِّيَ رَجُلٌ فَغَسَّلْنَاهُ، وَحَنَّطْنَاهُ، وَكَفَّنَّاهُ، ثُمَّ أَتَيْنَا بِهِ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي عَلَيْهِ، فَقُلْنَا: تُصَلِّي عَلَيْهِ؟ فَخَطَا خُطًى، ثُمَّ قَالَ: ” أَعَلَيْهِ دَيْنٌ؟ ” قُلْنَا: دِينَارَانِ، فَانْصَرَفَ، فَتَحَمَّلَهُمَا أَبُو قَتَادَةَ، فَأَتَيْنَاهُ، فَقَالَ أَبُو قَتَادَةَ: الدِّينَارَانِ عَلَيَّ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” حَقُّ الْغَرِيمُ، وَبَرِئَ مِنْهُمَا الْمَيِّتُ؟ ” قَالَ: نَعَمْ، فَصَلَّى عَلَيْهِ، ثُمَّ قَالَ بَعْدَ ذَلِكَ بِيَوْمٍ: ” مَا فَعَلَ الدِّينَارَانِ؟ “فَقَالَ: إِنَّمَا مَاتَ أَمْسِ، قَالَ: فَعَادَ إِلَيْهِ مِنَ الْغَدِ، فَقَالَ: لَقَدْ قَضَيْتُهُمَا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” الْآنَ بَرَدَتْ عَلَيْهِ جِلْدُهُ “،
হযরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মারা গেলে আমরা তার গোসল দিলাম। তারপর কাফন পড়িয়ে প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) এঁর কাছে নিয়ে এলাম। যেন তিনি তার উপর জানাযা পড়েন। আমরা হযরতকে জানাযা পড়াতে অনুরোধ করলাম।
প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) কয়েক কদম আগে বাড়লেন। তারপর তিনি বললেন, তার উপর কি কোন ঋণ আছে? আমরা বললাম, দুই দিনার ঋণ আছে। একথা শুনে প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) ফিরে গেলেন। তখন আবু কাতাদা রাঃ বললেন, আমি তা পরিশোধ করে দিব। ঋণের হক আদায় করে তুমি মৃতকে ঋণমুক্ত করবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তারপর প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) তার জানাযা পড়ালেন। তারপর একদিন পর প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) জিজ্ঞাসা করলেন, ঋণ কি আদায় হয়েছে? আবু কাতাদা বললেন, তিনিতো গতকাল মারা গেছেন। তারপর একদিন পর আবার জিজ্ঞাসা করলেন। তখন জবাবে বলা হল, আদায় করা হয়েছে। তখন প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) ইরশাদ করলেন, এখন উক্ত ব্যক্তির আত্মাকে শান্ত করেছো।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৪৫৩৬।
০৪.
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: شَهِدْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْأَضْحَى بِالْمُصَلَّى، فَلَمَّا قَضَى خُطْبَتَهُ نَزَلَ مِنْ مِنْبَرِهِ وأُتِيَ بِكَبْشٍ فَذَبَحَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ، وَقَالَ: «بِسْمِ اللَّهِ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ، هَذَا عَنِّي، وَعَمَّنْ لَمْ يُضَحِّ مِنْ أُمَّتِي
হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) এর সাথে ঈদুল আযহায় নামাযে শরীক ছিলাম। যখন খুতবা শেষ হল। তখন তিনি মিম্বর থেকে নামলেন। তারপর তার কাছে একটি ভেড়া আনা হল। তারপর তিনি তা জবাই করলে নিজ হাতে। জবাইকালে বললেন, বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, এটি আমার এবং আমার ঐ উম্মতীর পক্ষ থেকে যারা কুরবানী করতে পারেনি।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* আবু দাউদ, হাদীস নং-২৮১০
০৫.
عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ الْعَلَاءِ بْنِ اللَّجْلَاجِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ لِي أَبِي: ” يَا بُنَيَّ إِذَا أَنَا مُتُّ فَأَلْحِدْنِي، فَإِذَا وَضَعْتَنِي فِي لَحْدِي فَقُلْ: بِسْمِ اللهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُولِ اللهِ، ثُمَّ سِنَّ عَلَيَّ الثَّرَى سِنًّا، ثُمَّ اقْرَأْ عِنْدَ رَأْسِي بِفَاتِحَةِ الْبَقَرَةِ وَخَاتِمَتِهَا، فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ ذَلِكَ
হযরত আব্দুর রহমান বিন আলা বিন লাজলাজ, তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, আমার পিতা আমাকে বলেছেন, হে বৎস! আমি যখন মারা যাবো, তখন আমার জন্য “লাহাদ” কবর খুড়বে। তারপর আমাকে যখন কবরে রাখবে তখন পড়বে “বিসমিল্লাহি ওয়াআলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ” তারপর আমার উপর মাটি ঢালবে। তারপর আমার মাথার পাশে সূরা বাকারার শুরু এবং শেষাংশ পড়বে। কেননা, আমি রাসূল সাঃ থেকে এমনটি বলতে শুনেছি।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৪৫১,
*_* সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৭০৬৮।
আল্লামা হায়ছামী রহঃ বলেনঃ
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ، وَرِجَالُهُ مُوَثَّقُونَ.
এ হাদীস ইমাম তাবারানী তার কাবীরে নকল করেছেন, এবং তার প্রতিটি রাবী সিকা।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-৪২৪৩।
০৬.
ابْنَ عُمَرَ، يَقُولُ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِذَا مَاتَ أَحَدُكُمْ فَلَا تَحْبِسُوهُ، وَأَسْرِعُوا بِهِ إِلَى قَبْرِهِ، وَلْيُقْرَأْ عِنْدَ رَأْسِهِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ، وَعِنْدَ رِجْلَيْهِ بِخَاتِمَةِ الْبَقَرَةِ فِي قَبْرِهِ
হযরত ইবনে উমর রাঃ বলেন, প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) ইরশাদ করেছেন, যখন কোন ব্যক্তি মারা যায়, তখন তাকে আটকে রেখো না, বরং দ্রুত তাকে কবরস্ত কর। আর তার কবরের মাথার পাশে দাঁড়িয়ে সূরা ফাতিহা এবং পায়ের পাশে দাঁড়িয়ে সূরা বাকারার শেষ অংশ তিলাওয়াত কর।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-১৩৬১৩,
*_* শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৮৮৫৪।
০৭.
عَنْ أَبِي أُسَيْدٍ مَالِكِ بْنِ رَبِيعَةَ قَالَ: بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ جَاءَهُ رَجُلٌ مِنْ بَنِي سَلَمَةَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَبَقِيَ مِنْ بِرِّ أَبَوَيَّ شَيْءٌ أَبَرُّهُمَا بِهِ مِنْ بَعْدِ مَوْتِهِمَا؟ قَالَ: «نَعَمْ، الصَّلَاةُ عَلَيْهِمَا، وَالِاسْتِغْفَارُ لَهُمَا، وَإِيفَاءٌ بِعُهُودِهِمَا مِنْ بَعْدِ مَوْتِهِمَا، وَإِكْرَامُ صَدِيقِهِمَا، وَصِلَةُ الرَّحِمِ الَّتِي لَا تُوصَلُ إِلَّا بِهِمَا»
হযরত আবূ সাঈদ আসসায়েদী রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একদা প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) এঁর কাছে ছিলাম। এমতাবস্থায় বনী সালামা গোত্রের একজন ব্যক্তি আসল। লোকটি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা মাতার ইন্তেকালের পর তাদের জন্য কোন নেক কাজ করার কি সুযোগ আছে?
প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) ইরশাদ করলেন : তাদের জন্যে (নামে/পক্ষে) নামায পড়ে [ঈসালে সওয়াব করে] তাদের জন্য (নামে/পক্ষে) ইস্তিগফার কর। তাদের অঙ্গিকার ওয়াদাগুলো (তাদের পক্ষে) পূর্ণ কর। তাদের সম্পর্কিত আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখ। তাদের বন্ধুদের সাথে ভাল ব্যবহার কর।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩৬৬৪,
*_* সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫১৪২।
ইসালে সাওয়াব বিষয়ে
ইজমা
والمعتمد فى المذاهب الاربعة ان ثواب القراءة يصل الى الاموات، لانه هبة ودعاء بالقرآن الذى تتنزل الرحمات عند تلاوته، وقد ثبت فى السنة النبوية وصول الدعاء والصدقة للميت، وذلك مجمع عليه
চার ইমামগণের নিকট যে কথাটি গ্রহণযোগ্য, তা হল, কুরআনুল কারীমের তিলাওয়াতের সওয়াবও মৃতের কাছে পৌঁছে। কেননা, এটি কুরআনে কারীমের হাদিয়া এবং দুআ। যা তিলাওয়াতকালে আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হয়। যেহেতু মাইয়্যেতের জন্য সদকা এবং তার জন্য দুআ করলে তা মৃতের কাছে পৌঁছার বিষয়টি হাদীসে নববী দ্বারা প্রমাণিত। এর উপরই উম্মতের ইজমা।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* তাফসীরে মুনীর-১৪/১৪০, ডঃ ওহাবাতুজ জুহাইলী]
কিন্তু
একটি প্রশ্ন
কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে
وَأَن لَّيْسَ لِلْإِنسَانِ إِلَّا مَا سَعَىٰ [٥٣:٣٩]
এবং মানুষ তাই পায়,যা সে করে।
*_* সূরা নজম; আয়াত ৩৯।
এ আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, ব্যক্তি যা করে কেবল এর সওয়াবই সে পাবে। একজনের সওয়াবের কাজ অন্যের জন্য কোন কাজে আসবে না।
তাই ঈসালে সওয়াব দ্বারা মৃত ব্যক্তি কোন ফায়দা পাবে না।
প্রশ্নটির উত্তর,
আয়াত বুঝতে হবে সালফে সালেহীনের বুঝ অনুপাতে। নতুবা তা মনগড়া, বিদা'আত হবে।
উক্ত আয়াতের দ্বারা উদ্দেশ্য কারা?
আল্লামা কুরতুবী রহঃ তাফসীরে কুরতুবীতে লিখেনঃ
وَقَالَ الرَّبِيعُ بْنُ أَنَسٍ: (وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسانِ إِلَّا مَا سَعى) يَعْنِي الْكَافِرَ وَأَمَّا الْمُؤْمِنُ فَلَهُ مَا سَعَى وَمَا سَعَى لَهُ غَيْرُهُ. قُلْتُ: وَكَثِيرٌ مِنَ الْأَحَادِيثِ يَدُلُّ عَلَى هَذَا الْقَوْلِ، وَأَنَّ المؤمن يصل إليه ثَوَابِ الْعَمَلِ الصَّالِحِ مِنْ غَيْرِهِ،
রবী’ বিন আনাস বলেন, “এবং মানুষ তাই পায়, যা সে করে” কথার দ্বারা উদ্দেশ্য হল কাফের।
অর্থাৎ কাফেররা যা করে শুধু এতটুকুই সে পাবে। কিন্তু মুমিনরা সে যা করে তার সওয়াবও পায়, আবার অন্যের কৃত সওয়াব ও পায়।
আমি [ইমাম কুরতুবী] বলি, অনেক হাদীস এ বিষয়টির প্রমাণ বহন করে। নিশ্চয় মুমিনের জন্য অন্যের কৃত নেক আমলের সওয়াবও পৌঁছে।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* তাফসীরে কুরতুবী-১৭/১১৪।
উপরোক্ত দলীল প্রমাণাদীর মাধ্যমে আশা করি বিষয়টি পরিস্কার হয়ে গেছে যে, মৃতের জন্য ঈসালে সওয়াব করা কুরআন ও হাদীস এবং ইজমায়ে উম্মাহ দ্বারা প্রমাণিত।
তাই,
ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে যেসব কাজ করা যায়ঃ
০১. মৃতের নামে সদকা করা।
০২. কুরবানী করা।
০৩. মৃতের জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা।
০৪. মৃতের জন্য দুআ করা।
০৫. ইস্তিগফার করা।
০৬. হজ্ব করা।
ইত্যাদি পূণ্যের কাজ করে মৃত ব্যক্তির জন্য ঈসালে সওয়াব করা যায়। যা কুরআন ও হাদীসের মাধ্যমে সুষ্পষ্টরূপে প্রমাণিত।
এটি অস্বিকার করা মানেই হল মূলত কুরআন ও হাদীসকেই অস্বিকার করা।
আল্লাহ তাআলা আমাদের মৃত্যুর পরও এমন ঈসালে সওয়াব যেন কবরে থেকে পাই সেই তৌফিক আমাদের দান করুন।
আমীন।