উপমহাদেশে সৃষ্ট আহলে হাদিস নামধারী বাতীল ফির্কার বেদাতী নামায।

হাদীসের দৃষ্টিকোণ থেকে পায়ের সাথে পা মিলানো:

মূল আলোচনা শুরুর পূর্বে কিছু পরিভাষা সম্পর্কে আলোচনা জরুরি।

আমাদের এই আলোচনা বোঝার জন্যে নিচের আরবী কিছু শব্দের অর্থ ও পরিচিতি জানা আবশ্যক।

১. গলা: আরবী ভাষায় গলার আরবী হলো, উনুকুন (عنق) এর বহুবচন হলো, আ’নাকুন (أعناق)। হাদীসে বহুবচন আ'নাক ব্যবহৃত হয়েছে। ইংরেজীতে একে নেক বলে। আরবী যে কোন ডিকশনারী থেকে দেখে নিতে পারেন, গলার আরবী কী? অথবা উনুকুন শব্দের অর্থ গলা কি না।.
নীচে উনুকুন বা গলার একটি চিত্র দেয়া হলো।
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1902250866757016

২. হাটু: আরবী ভাষায় হাটুর আরবী হলো, রুকবাতুন (ركبة)। যে কোন আরবী অভিধান দেখে আপনিও বের করে নিতে পারেন।
নীচের চিত্র দেখুন।
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1902250896757013

৩. টাখনু বা গোঁড়ালী: মানুষের পায়ের পিছনে যে উত্থিত হাড় থাকে, একেই টাখনু বলেন। টাখনু এর আরবী হলো, কা’বুন(كعب)।
চিত্র দেখুন,
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1902250946757008

৪. কাঁধ: কাঁধের আরবী হলো,  মানকিবুন (منكب)। এর বহুবচন হলো, মানাকিবুন (مناكب)। যে কোন আরবী অভিধান দেখে নিশ্চিত হতে পারেন। চিত্রে কাঁধের পরিচয় দেয়া আছে।
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1902250966757006

সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে হাদীসগুলো ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ছাপা হাদীসের কিতাব থেকে উদ্ধৃতি দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ইসলামী ফাউন্ডেশনের অনুবাদ দেখে তো পুরো হতবাক। এতো জগা-খিচুড়ী অনুবাদ তারা কীভাবে ছেপেছে? ইসলামী ফাউন্ডেশনের ভুল ধরা মূল উদ্দেশ্য নয়। বরং রাসূলে কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) এঁর হাদীসের মৌলিকত্ব ঠিক রাখার জন্য তাদের ভুল নিয়ে আলোচনা করা একান্ত জরুরি। শুধু পায়ের সাথে পা মিলানোর হাদীসগুলোর ক্ষেত্রে তারা কতগুলো ভুল করেছে, স্বচক্ষে দেখুন।

হাদীস অনুবাদে ইসলামী ফাউন্ডেশনের ভুল:
ভুল-১:
আবু দাউদ শরীফের ৬৬৭ নং হাদীসের অনুবাদে ইসলামী ফাউন্ডেশন মারাত্মক ভুল করেছে। এখানে রাসূলে কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) বলেছেন, তোমরা গলার সাথে গলা মিলিয়ে দাড়াও। ইসলামী ফাউন্ডেশন এর অনুবাদ করেছে, তোমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াও। একই ভুল তারা নাসায়ী শরীফের ১ম খন্ড ৩৬৭ পৃষ্ঠার ৮১৬ নং হাদীসের ক্ষেত্রেও করেছে।
তাদের ভুল দু’টি স্বচক্ষে দেখুন:
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1902251013423668

https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1902251043423665

https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1902251070090329

https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1902251123423657

ভুল-২:
ইসলামী ফাউন্ডেশন আরেকটি জগা-খিচুড়ী অনুবাদ করেছে আবু দাউদ শরীফের ৬৬২ নং হাদীসের ক্ষেত্রে। এখানে রাসূলে কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم)  এর হাদীসে রয়েছে, অত:পর আমি মুসল্লীদেরকে কাঁধের সাথে কাঁধ, হাঁটুর সাথে হাঁটু এবং পায়ের টাখনুর সাথে টাখনু মিলিয়ে দাঁড়াতে দেখেছি। এখানে হাঁটুর সাথে হাঁটু মিলানোর অনুবাদ করেছে, পায়ে পা মিলিয়ে দাঁড়াতে দেখেছি। এধরনের ভুল অনুবাদ আমাদের দেশের স্বশিক্ষিত ভাইদের জন্য অশনি সংকেত। যারা আরবী ভাষা, হাদীস ও ফিকহের মূলনীতি ছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদ কিনে নিজেদেরকে মহা পন্ডিত মনে করছে, তাদের পান্ডিত্যের জন্যে এসব ভুল আসলেই অশনি সংকেত।
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1902251150090321

হাদীসে কী কী মেলানোর কথা আছে?
কাতার সোজা করা বা পরস্পর মিলে মিলে দাড়ানোর ক্ষেত্রে অনেকগুলো হাদীস রয়েছে। হাদীসগুলোতে শুধু পায়ের সাথে পা মিলানোর কথা নেই। বরং নীচের অঙ্গগুলো পরস্পর মিলিয়ে দাঁড়ানোর কথা রয়েছে।
১. গলার সাথে গলা মিলানো: আবু দাউদ শরীফের ৬৬৭ নং হাদীস ও নাসায়ী শরীফের ৮১৬ নং হাদীসে গলার সাথে গলা মিলিয়ে দাঁড়ানোর কথা রয়েছে।

২. কাঁধে কাঁধ, হাঁটুর সাথে হাঁটু ও পায়ের টাখনুর সাথে টাখনু মিলানো:
আবু দাউদ শরীফের ৬৬২ নং হাদীসে হযরত নু’মান ইবনে বাশীর রা. এর হাদীসে কাধে কাঁধ, হাঁটুর সাথে হাঁটু ও পায়ের টাখনুর সাথে টাখনু মিলানোর কথা রয়েছে।

৩. বোখারী শরীফে হযরত নু’মান্ ইবনে বাশীর রা. এর হাদীসে টাখনুর সাথে টাখুন মিলানোর কথা রয়েছে। এবং হযরত আনাস রা. এর হাদীসে পায়ের সাথে পা মিলানোর কথা রয়েছে।

এসব হাদীস থেকে নামাযে মোট পাঁচটি জিনিস মিলিয়ে দাড়ানোর কথা রয়েছে,
১. গলার সাথে গলা।
২. কাঁধের সাথে কাঁধ।
৩. হাঁটুর সাথে হাঁটু।
৪. টাখনুর সাথে টাখনু।
৫. পায়ের সাথে পা

উপমহাদেশীয় বাতীল ফির্কা আহলে হাদীসরা কী আমল করে?
- আমাদের দেশের আহলে হাদীস নামধারীরা রাসূলে কারিম (صلى الله عليه و آله وسل) এর হাদীসের কোন অংশে আমল করে না। এদের অধিকাংশ পায়ের কনিষ্ঠ আঙ্গুলের সাথে অন্যের পায়ের কনিষ্ঠ আঙ্গুল স্পর্শের চেষ্টা করে। কনিষ্ঠ আঙ্গুল মিলিয়ে দাঁড়ানোর কথা আদৌ কোন হাদীসে নেই।
মানুষের পায়ের সামনের দিক পেছের দিক থেকে বেশ চওড়া ও প্রশস্ত। পায়ের সাথে পা মিলানোর ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই পায়ের এই প্রশস্ত অংশ মিলে যায়। কিন্তু গোঁড়ালীর দিকের  অংশ ফাঁকা থেকে যায়। আর যদি গোঁড়ালীর দিকের অংশ মিলিয়ে দাঁড়াতে যায, তাহলে পা কেবলামুখী থাকে না। পা বাঁকা হয়ে কেবলা থেকে সড়ে যায়। অথচ নামাযে অঙ্গ-প্রতঙ্গ কেবলামুখী রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত।
মোটকথা, উপমহাদেশীয় বাতীল ফির্কা আহলে হাদীস নামধারীরা নামাযে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে কোনভাবেই হাদীসের উপর আমল করে না।
প্রথমত: গলার সাথে গলা মিলানো, কাঁধের সাথে কাঁধ মিলানো, হাঁটুর সাথে হাঁটু মিলানো এবং গোঁড়ালীর সাথে গোঁড়ালী মিলানোর ক্ষেত্রে তাদের একজনও এগুলোর উপর আমল করে না। অর্থাৎ তারা মোট চারটি সুন্নত রীতিমত ছেড়ে দিয়ে থাকে। পায়ের সাথে পা মিলাতে গিয়ে পায়ের অগ্রভাগ মিলিয়ে দাঁড়ায়, অথচ রাসূল স. এর হাদীসে টাখনুর সাথে টাখনু মিলিয়ে দাড়ানোর কথা আছে। তাদের কেউ যদি একই সাথে টাখনু ও পায়ের অগ্রভাগ মিলিয়ে দাঁড়ায়, তাহলে সে আরেকটা সুন্নতের বিপরীত করে। অর্থাৎ এ অবস্থায় তার পা কেবলা থেকে সরে যায়। সুতরাং আহলে হাদীসরা এ মাসআলা মোট ছয়টি সুন্নতের বিপরীত আমল করে।
যথা-
১. তারা গলার সাথে গলা মিলিয়ে দাড়ায় না। অথচ আবু দাউদ ও নাসায়ী শরীফের হাদীসে গলার সাথে গলা মিলিয়ে দাড়ানোর নির্দেশ রাসূলে কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم)দিয়েছেন।

২. তারা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায় না। অথচ এ সংক্রান্ত প্রায় প্রত্যেকটা হাদীসে কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানোর কথা আছে। তারা উভয় কাঁধের মাঝে এতো বেশি ফাঁকা রাখে যে এর মাঝে অন্তত: দু’জন শয়তান দাড়াতে পারবে। (হাদীসের ভাষ্য অনুযাযী। কারণ হাদীসে রাসূল (صلى الله عليه و آله وسلم)  বলেছেন, উভয় ব্যক্তির মাঝে ফাঁকা থাকলে সেখানে শয়তান প্রবেশ করে)।

৩. তাদের কেউ কখনও হাঁটুর সাথে হাঁটু মিলিয়ে নামায পড়ে না। তারা এ হাদীসের উপর কখনও আমল করে না।

৪. তাদের কেউ কখনও টাখনু বা গোঁড়ালীর সাথে গোঁড়ালী মিলিয়ে দাঁড়ায় না। সুতরাং তারা এক্ষেত্রে সুন্নতের উপর আমল করে না।

৫. নামাযে পায়ের সাথে পা মিলিয়ে দাঁড়ালে অবশ্যই সেটি কেবলা থেকে সড়ে যাবে। এভাবে পা বাঁকা করে নামায পড়া সুন্নতের খেলাফ। অথচ তারা এভাবেই নামায আদায় করে থাকে।

৬. তারা সিজদার সময় পা গুটিয়ে সিজদা করে থাকে। তখন আর তারা পায়ের সাথে পা মিলিয়ে রাখে না। এ অবস্থায় তাদের বক্তব্য অনুযায়ী তারা সুন্নতের খেলাফ আমল করে।

৭. সিজদা থেকে দাঁড়িয়ে তারা পায়ের সাথে পা মিলানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এবং নামাযে প্রত্যেক রাকাতে পায়ের জায়গা পবিবর্তন করে থাকে। এভাবে নামাযে নড়া-চড়া করা সুন্নতের খেলাফ। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের ধীর-স্থিরভাবে নামায আদায় করতে বলেছেন। অথচ খুশু-খুজুর বিপরীতে প্রত্যেক রাকাতে তারা পায়ের জায়গা পরিবর্তন করে এবং এর জন্যে নামাযে নড়া-চড়া করে থাকে।

ড. বকর আবু যায়েদের বিশ্লেষণ:
সৌদি সর্বোচ্চ মুফতী বোর্ডের সদস্য ড. বকর আবু যায়েদ তার “লা জাদিদা ফি আহকামিস সালাহ” (নামাযের মাসআলায় কোন নতুনত্ব নেই) বইয়ে পায়ের সাথে পা মিলানোকে একটি নতুন সৃষ্ট আমল বলেছেন। তিনি বলেছেন, বর্তমানে নতুন সৃষ্ট এ আমলের সাথে রাসূল (صلى الله عليه و آله وسلم)  এর সুন্নাতের কোন সম্পর্ক নেই।
ড. বকর আবু যায়েদ লিখেছেন,
“কাতারের নিজের পা পাশের ব্যক্তির পায়ের সাথে এমনভাবে জড়িয়ে রাখা যেন তা পুরোপুরি সেটে থাকে, এরূপ করাটা প্রকাশ্য ভুল। এক ধরনের বাড়াবাড়ি এবং একটা নব্য ধারণা (বিদয়াত)। এর দ্বারা সুন্নাহ পালনে এক ধরনের গোঁড়ামী, বাড়াবাড়ি ও অহেতুক বিরক্তির সৃষ্টির হয়। শরীয়তবিরোধী বিষয়কে শরীয়ত মনে করে তা নিয়ে ব্যস্ত থাকা হয়। এছাড়াও মুসল্লীদের কাতারের মাঝে ফাঁকা জায়গা সৃষ্টি করা হয়। কাজেই এটা সুন্নতের নামে বাড়াবাড়ি, যা শরীয়ত অনুমোদন করেনি।

দ্বিতীয়ত: রাসূল (صلى الله عليه و آله وسلم) যেমন কাঁধ ও গোঁড়ালী মিলিয়ে দাঁড়াতে বলেছেন, একইভাবে গলার সাথে গলা মিলিয়ে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন নাসায়ী শরীফে (হাদীস নং ৮১৪) হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস রয়েছে। রাসূল (صلى الله عليه و آله وسلم)  এর এসকল নির্দেশের অর্থ হলো, কাতার সোজা করবে, বরাবর দাঁড়াবে, আকা-বাকা করবে না এবং কাতারের মাঝে ফাঁকা রাখবে না। কিন্তু এসব নির্দেশ থেকে কখনও এটা প্রমাণিত হয় না যে, বাস্তবিক রাসূলে কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم)  এসব অঙ্গ স্পর্শ করে দাঁড়াতে বলেছেন। কেননা গলার সাথে গলা মেলানো অসম্ভব। সব সময় কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে রাখাটাও এক ধরনের অস্বাভাবিক ব্যাপার। তেমনি হাঁটুর সাথে হাঁটু মেলানো অসম্ভব। দাঁড়ানো অবস্থায় গোঁড়ালীর সাথে গোঁড়ালী মেলানোও সাধারণত সম্ভব নয়। এগুলো পরস্পর মেলানো যেমন অসম্ভব তেমনি নামাযে এগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকাটাও শরীয়ত পরিপন্থী।
সুতরাং স্পষ্ট বিষয় হলো, গলা, কাঁধ, হাঁটু ও গোঁড়ালী মেলানো একই পর্যায়ের। এগুলো দ্বারা রাসূল (صلى الله عليه و آله وسلم) এর মূল উদ্দেশ্য হলো, কাতার সোজা করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা, কাতারকে বরাবর ও সামন্তরাল করা। কাতারের কোথাও আঁকা-বাঁকা বা বক্রতা না থাকা। সেই সাথে কাতারের মাঝে ফাঁকা না রাখা। এটিই মুলত: রাসূল (صلى الله عليه و آله وسلم) এর বক্তব্যের উদ্দেশ্য।

ড. বকর আবু যায়েদ আরও লিখেছেন,
“ইমাম বোখারী রহমাতুল্লাহি 'আলাইহি তাঁর কিতাবে অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়েছেন,
কাঁধের সাথে কাঁধ ও পায়ের সাথে পা মেলানোর অধ্যায়। নু’মান ইবনে বাশীর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি আমার এক সাথীকে দেখেছি, সে তার সাথীর পায়ের গোঁড়ালীর সাথে গোঁড়ালী মিলিয়েছে”।
ইমাম বোখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর এই শিরোনাম সম্পর্কে হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
এর দ্বারা বাস্তবে পায়ের সাথে পা মেলানো উদ্দেশ্য নয়, বরং উদ্দেশ্য হলো, কাতার সোজা করার ব্যাপার অধিক গুরুত্ব প্রদান এবং কাতারের মাঝে ফাঁকা জায়গা বন্ধের ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান।
[সূত্রঃ ফাতহুল বারী, খ.২,পৃ.২৪৭।]
ইমাম বোখারীর শিরোনাম সম্পর্কে ইবনে হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি যে ব্যাখ্যা উল্লেখ করেছেন এটি সঠিক। এর প্রমাণ হলো, ইমাম বোখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি হযরত নু’মান ইবনে বাশীর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর যে আংশিক হাদীস উল্লেখ করেছেন, ইমাম আবু দাউদসহ অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ এর পূর্ণরুপ উল্লেখ করেছেন। যেমন আবু দাউদ (হাদীস নং ৬৪৮) ইবনে খোজাইমা (হাদীস নং ১৬০) ও দারে কুতনী ( খ.১, পৃ.২৮২)।
সকলেই হযরত নু’মান ইবনে বাশীর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর হাদীস উল্লেখ করেছেন এভাবে,
“আমি কোন কোন ব্যক্তিকে দেখেছি, তারা কাঁধের সাথে কাঁধ, হাঁটুর সাথে হাঁটু এবং গোঁড়ালীর সাথে গোঁড়ালী লাগিয়েছে”। এটি আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত হাদীসের শব্দ। বাহ্যত: হাঁটুর সাথে হাঁটু মেলানো অসম্ভব। সুতরাং স্পষ্ট বোঝা যায়, এ হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, কাতার সোজা করা, বক্রতা না রাখা এবং ফাঁকা জায়গা না রাখা। বাস্তবে অঙ্গগুলোকে অন্যের অঙ্গের সাতে স্পর্শ বা মিলানো উদ্দেশ্য নয়”।

মূল বইযের স্ক্রিনশট:
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1902251173423652

https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1902251200090316

https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1902251230090313
সারকথা হলো, রাসূল (صلى الله عليه و آله وسلم)  কখনও উম্মতকে অসম্ভব জিনিসের নির্দেশ দিতে পারেন না। রাসূল (صلى الله عليه و آله وسلم)  নামাযে এমন কোন জিনিসকে সুন্নত বলেন নি যেটা পালন করা অসম্ভব, যেটা অস্বাভাবিক ও বিরক্তিকর। আমাদের উপমহাদেশীয় আহলে হাদীস নামধারীরা এসব হাদীসের কোন অংশের উপর আমল না করে তারা নতুন একটি বিদয়াত চালু করেছে। তারা গলার সাথে গলা মেলানো, হাঁটুর সাথে হাঁটু, গোঁড়ালীর সাথে গোঁড়ালী মেলানোর কথা আদৌ বলে না। এমনকি তাদের দু’জন মুসল্লীর কাঁধের মাঝে এতো বেশি ফাঁকা থাকে যে, অনায়াসে এক ব্যক্তি সেখানে দাঁড়াতে পারে। এভাবে রাসূল (صلى الله عليه و آله وسلم) এর অনেকগুলো সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নতুন বিদয়াত চালু করার কী অর্থ আছে?
শরীয়তে রাসূল (صلى الله عليه و آله وسلم) যেহেতু কোন অসম্ভব কাজের নির্দেশ দিতে পারেন না, অথচ এক্ষেত্রে তিনি অনেকগুলো অসম্ভব নির্দেশ দিয়েছেন, সুতরাং এখানে নির্দ্বিধায় বলা যায়, রাসূল (صلى الله عليه و آله وسلم) এসব শব্দ বাস্তবে মেলানো উদ্দেশ্য নেননি। বরং এগুলো ব্যবহার করে তিনি কাতার সোজার করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন।
উপমহাদেশীয় আহলে হাদীস নামধারীরা যদি গোঁড়ামী করে তাদের বিদয়াত চালু রাখতে চায়, তাহলে তাদেরকে বলবো, রাসূল (صلى الله عليه و آله وسلم) যেভাবে নামায পড়তে বলেছেন, সেভাবে দু’রাকাত নামায পড়ে দেখান। গলার সাথে গলা মিলিয়ে, হাঁটুর সাথে হাঁটু মিলিয়ে, গোঁড়ালীর সাথে গোঁড়ালী মিলিয়ে এবং কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে তারা যদি দাড়াতে সক্ষম হয়, তাহলে তাদের এই বিদয়াতের একটা গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব হতো।

ড. বকর আবু যায়েদের বক্তব্য অনুযায়ী নামাযে পায়ের সাথে পা মিলিয়ে দাঁড়ালে যেসব সুন্নাহ বিরোধী কাজ হয়:
১. এটি ইসলামে নতুন সৃষ্ট একটি মতবাদ। সুন্নাহ পালনে নতুন সৃষ্ট এসব মাসআলা অবশ্যই বর্জনীয়।
২. এভাবে দাঁড়ানোটা এতটা অস্বাভাবিক যে, এতে নিজে যেমন কষ্টের মুখোমুখি হয়, অন্যকে কষ্টের মধ্যে ফেলে দেয়।
৩. নামাযে খুশু-খুজুর বিপরীতে পা মিলানো নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়।
৪. উভয় মুসল্লীর মাঝে অস্বাবাবিক পরিমাণ ফাঁকা জায়গা থাকে। মুসল্লী যখন সিজদায় যায় তখন বোঝা যায় তাদের মাঝে কতো ফাঁকা জায়গা রয়েছে।
৫. সিজদা থেকে দাঁড়িয়ে নতুনভাবে পা মেলানোর জন্য পায়ের জায়গা বদল করতে হয়। এর জন্যে অনর্থক নড়া-চড়া করতে হয়। এটি কখনও সুন্নাহ হতে পারে না।
৬. সর্বোপরি এভাবে দাঁড়ানোর কারণে পায়ের অগ্রভাগ কেবলামুখী থাকে না।
৭. নতুন বিদয়াত চালু করতে গিয়ে অন্যায়ভাবে অন্যের পা পাড়ানো হয়। এগুলি সব সুন্নাহ বিরোধী কাজ।
এছাড়া উপমহাদেশীয় আহলে হাদীস নামধারীদের মতে মহিলা ও পুরুষের নামায একই রকম।
সুতরাং তাদের পুরুষরা যেমন পা চ্যাগিয়ে দাঁড়ায়, তাদের মহিলারা এভাবে দাঁড়ায় কি না?
তাদের মহিলারা যদি এভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, তাহরে এর চেয়ে নোংরা দৃশ্য আর হতে পারে না। ইসলাম কখনও এ ধরনের নোংরামি সমর্থন করে না।
দ্বিতীয় পর্বে ইবনে বাজ এর বক্তব্য আলোচনা করা হয়েছে। তিনি এভাবে পুরুষের দাঁড়ানোকেই নোংরা বলেছেন। সুতরাং মহিলার দাঁড়ানো সম্পর্কে কী বলতেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

জঘন্য ধোঁকাবাজি:
উপমহাদেশীয় আহলে হাদিস নামধারীরা পায়ের সাথে পা মেলোনোর বিদয়াত চালু করার জন্য জঘন্য ধোকাবাজির আশ্রয় নিয়েছে। তারা কিছু ছবি একেছে, যেখানে কাঁধে সাথে কাঁধ ও পায়ের সাথে পা মিলিয়ে দাঁড়ানোর চিত্র রয়েছে। অথচ এটি একটি মারাত্মক ধোঁকা। এভাবে চিত্র আঁকা সম্ভব হলেও বাস্তবে নামাযে দাড়ানো অসম্ভব। পায়ের সাথে পা মিলালে অবশ্যই কাঁধের মাঝে ফাঁক তৈরি হবে। আর বাস্তবে ছবির পা আর মানুষের পা এক নয়। মানুষ পায়ের অগ্রভাগ মিলালে পিছনের দিকে ফাঁকা থাকবে। আবার পিছনের গোঁড়ালীর সাথে গোঁড়ালী মিলালে পা কেবলা থেকে সড়ে যাবে। সুতরাং এসব ধোঁকাবাজীর আশ্রয় নিয়ে কখনও একটি বিদয়াতকে সুন্নত বানানো যাবে না।
আল্লাহ পাক আমাদেরকে এসব বিদয়াত বর্জন করে সুন্নাহের উপর আমলের তৌফিক দান করুন। আমীন।
নিচের লিংকের চিত্র দু'টি অবশ্যই দেখে নিবেন-
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1902251293423640

https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1902251340090302
___________
উপমহাদেশে সৃষ্ট আহলে হাদিস নামধারী বাতীল ফির্কার বেদাতী নামায।
নোটঃ ০১.
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1902817210033715
নোটঃ ০২.
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1902818620033574
___________

Top