জানাযার নামাযের বর্ণনা।
জানাযার নামায ফরযে কেফায়া। কিছু লোক মিলিত হয়ে মৃতের জানাযা-নামায ও তার কাফন দাফন সম্পন্ন করে নিলে সবাই দায়মুক্ত হবে। অন্যথায় সবাই গুনাহ্গার হবে। এর ফরয হওয়াকে যে অস্বীকার করে, সে কাফির।
মাসআলাঃ জানাযার নামাযের জন্য জমা’আত পূর্বশর্ত নয়। এক ব্যক্তিও যদি পড়ে নেয়, আদায় হয়ে যাবে।
[দেখুন- আলমগীরী]।
জানাযার নামাযের নিয়্যত।
_______________
نَوَیْتُ اَنْ اُؤَدِّیَ اَرْبَعَ تَکْبِیْرَاتِ صَلٰوۃِ الْجَنَازَۃِ فَرْضِ الْکِفَایَۃِ اَلثَّنَاءِ لِلّٰہِ تَعَالٰی وَالصَّلٰوۃِ عَلٰی النَّبِیِّ وَالدُّعَاءِ لِہَذَا الْمَیِّتِ اِقْتَدَیْتُ بِہَذَا الْاِمَامِ مُتَوَجِّہًا اِلٰی جِہَۃِ الْکَعْبَۃِ الشَّرَیْفَۃِ اَللّٰہُ اَکْبَرُ
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন্ উওয়াদ্দিয়া আরবা’আ তাকবীরা-তি সালা-তিল জানা-যাতি ফারদ্বিল কেফায়াতি আস্সানা-আ লিল্লা-হি তা’আলা ওয়াস্সালাতু আলান্নাবিয়্যি ওয়াদ্দোয়া-আ লি-হাযাল মাইয়্যেতি, ইক্বতাদাইতু বি-হাযা-ল ইমা-মি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা- জিহাতিল কা’বাতিশ্ শারীফাতে আল্লাহু আকবর।
মৃত ব্যক্তি স্ত্রীলোক হলে لِهذا المَيِّتِ (লিহা-যাল্ মাইয়্যেতি)-এর পরিবর্তে لِهذِهِ الْمَيِّتِ (লিহা-যিহিল মাইয়্যেতি) বলতে হবে।
আর ইমাম ইক্বতাদাইতু বিহাযাল ইমাম-এর পরিবর্তে ‘আনা ইমামুন লিমান হাদ্বারা ওয়ামাই ইয়াহদ্বুরু’ বলবেন। জানাযার নামাযের নিয়্যত করে কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলে হাত নামিয়ে যথারীতি নাভীর নিচে বেঁধে নেবে এবং নিম্নলিখিত সানা পড়বে-
سُبْحَانَکَ اللّٰہُمَّ وَبِحَمْدِکَ وَتَبَارَکَ اسْمُکَ وَتَعَالٰی جَدُّکَ وَجَلَّ ثَنَاءُکَ وَلآَ اِلَہَ غَیْرُکَ
উচ্চারণঃ সুবহা-নাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহাম্দিকা ওয়া তাবা-রাকস্মুকা ওয়া তা’আলা- জাদ্দুকা ওয়া জাল্লা সানা-উকা ওয়া লা- ইলা-হা গাইরুকা।
এরপর হাত না উঠিয়ে ‘আল্লাহু আকবর’ বলবে এবং দুরূদ শরীফ পড়বে। ওই দুরূদ শরীফ পড়া উত্তম, যা নামাযে পড়া হয়। অবশ্য, সম্ভব হলে ‘আল্লাহুম্মা সল্লি’র পর ‘ওয়া সাল্লিম’ বর্দ্ধিত করে পড়বে। তখন কামা-সাল্লায়তার সাথে ‘ওয়া সাল্লামতা বৃদ্ধি করবে।
এরপর পুনরায় ‘আল্লাহু আকবর’ বলে এ দো’আটি পড়বে-
اَللّٰہُمَّ اغْفِرْ لِحَیِّنَا وَمَیِّتِنَا وَشَاہِدِنَا وَغَآءِبِنَا وَصَغِیْرِنَا وَکَبِیْرِنَا وَذَکَرِنَا وَاُنْثَانَا اَللّٰہُمَّ مَنْ اَحْیَیْتَہٗ مِنَّا فَاَحْیِہِ عَلَی الْاِسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّیْتَہٗ مِنَّا فَتَوَفَّہٗ عَلٰی الْاِیْمَانِ بَرَحْمَتِکَ یٰاَرْحَمَ الرَّاحِمِیْنَ
উচ্চারণঃ আল্লাহু-মাগ্ফির লিহাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গা-ইবিনা ওয়া ছাগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উন্সা-না। আল্লা-হুম্মা মান আহ্ইয়াইতাহূ মিন্না-ফা আহয়িহী আলাল ইসলাম ওয়া মান তাওয়াফ্ফাইতাহূ মিন্না ফাতাওয়াফ্ফাহু আলাল ঈমান। বিরাহমাতিকা এয়া আরহামার রা-হিমী-ন।
এরপর ‘আল্লাহু আকবর’ তথা শেষ তাকবীর বলবে। অতঃপর সালাম ফেরাবে।
মাসআলাঃ যার উপরোক্ত দোয়া স্মরণ না থাকে, সে অন্য কোন একটি দোয়া মা‘সূরা পড়ে নেবে।
মাসআলাঃ জানাযার চার তাকবীরের মধ্যে কেবল প্রথম তকবীরে হাত উঠাবে, বাকীগুলোতে উঠাবেনা আর চতুর্থ তকবীর বলার সাথে সাথে হাত খুলে নেবে ও সালাম ফেরাবে।
মাসআলাঃ যদি মৃত নাবালেগ হয়, তাহলে তৃতীয় তকবীরের পর এ দো’আ পড়বেঃ
اَللّٰہُمَّ اجْعَلْہُ لَنَا فَرَطًا وَّ اجْعَلْہُ لَنَا اَجْرًا وَّذُخْرًا وَّ اجْعَلْہُ لَنَا شَافِعًا وَّ مُشَفَّعًا
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাজ্’আলহু লানা ফারাত্বাওঁ ওয়াজ্’আলহু লানা- আজরাওঁ ওয়া যুখরাওঁ ওয়াজ’আলহু লানা- শা-ফি‘আওঁ ওয়া মুশাফ্ফা’আ-।
যদি বালিকা হয়, তাহলে উপরোক্ত দো’আহاِجْعَلْهُ এর জায়গায় اِحْعَلْهَا পড়বে। অবশ্য মৃত যদি বালেগ হবার পর পাগল হয়ে যায়, তাহলে তার জানাযা নামাযে না-বালেগ শিশুদের জানাযার দো’আটি পড়লে যথেষ্ট হবে।
[দেখুন- গুনিয়া, বাহার]।
মাসআলাঃ জানাযার নামাযের রোকন অর্থাৎ ফরয দু’টিঃ চার-তকবীর ও ক্বিয়াম। সুন্নাতে মুআক্কাদাহ্ তিনটিঃ ১. আল্লাহ্ তা’আলার সানা পাঠ, ২. দুরূদ শরীফ পড়া ও ৩. মৃত ব্যক্তির জন্য দো’আ করা।
মাসআলাঃ যেহেতু ক্বিয়াম ফরয, সেহেতু বিনা কারণে বসে বা বাহনের উপর নামায পড়লে হবে না। তবে যদি মৃত ব্যক্তির ওলী বা ইমাম অসুস্থতার কারণে বসে নামায পড়ে এবং মুক্তাদীগণ দাঁড়িয়ে পড়ে, তবে নামায শুদ্ধ হবে।
[দেখুন- দুর্রুল মুখতার ও রদ্দুল মুহতার]।
মাসআলাঃ যার কয়েক তকবীর বাদ পড়ে গেছে, সে ইমাম সালাম ফিরানোর পর বাদ পড়া তকবীরগুলো বলে নেবে। আর যদি এ ভয় হয় যে, পড়তে গেলে দু‘আ পূর্ণ করার আগে লোকেরা মুর্দাকে কাঁধে উঠিয়ে নেবে, তাহলে কেবল তাকবীর বলে নেবে এবং দো’আ বাদ দেবে।
[দেখুন- দুর্রুল মুখতার]।
মাসআলাঃ যে ব্যক্তি চতুর্থ তকবীর বলার পর আসলো, ইমাম তখনও সালাম ফেরাননি, তাহলে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে জম’আতে শরীক হয়ে যাবে এবং ইমামের সালাম ফেরানোর পর তিনবার ‘আল্লাহ আকবর’ বলে নেবে।
[দেখুন- দুর্রুল মুখতার]।
মাসআলাঃ যে সব বিষয় দ্বারা অন্যান্য নামায ভঙ্গ হয়ে যায়, ওইসব বিষয় দ্বারা জানাযার নামাযও ভঙ্গ হয়ে যায়। শুধু একটি বিষয় যে, মহিলা পুরুষের পাশাপাশি হয়ে গেলে, এতে জানাযার নামায ভঙ্গ হবে না।
[দেখুন- আলমগীরী]।
মাসআলাঃ জানাযার নামাযের জন্যও ওইসব পূর্বশর্ত প্রযোজ্য, যেগুলো অন্যান্য নামাযের জন্য নির্ধারিত। যেমন- ১. পবিত্র হওয়া, (নামাযীর শরীর, কাপড় ও নামাযের জায়গা পাক হওয়া), ২. সতর ঢাকা, ৩. ক্বেবলার দিকে মুখ করা ও ৪. নিয়্যত করা। অবশ্য জানাযার জন্য সময় নির্দিষ্ট নেই এবং তকবীরেই তাহরীমা পৃথক রোকন বা পূর্বশর্ত নয়; বরং প্রথম তাকবীরও জানাযার চার তাকবীরের শামিল।
[দেখুন- রদ্দুল মুহ্তার]।
জানাযার পূর্বশর্ত হচ্ছে মৃতকে গোসল করানো এবং পবিত্র কাফন পরিধান করানো। জানাযা সামনে থাকা এবং জানাযা মাটির উপর রাখা। কোন জন্তু ইত্যাদির উপর রাখা হলে, নামায হবে না।
মাসআলাঃ প্রত্যেক মুসলমানের জানাযার নামায যেন পড়া হয়, যদিও সে বড় গুনাহ্গার হয়। তবে কয়েক প্রকার গুনাহগারের নামায পড়তে নেই। যেমন ১. বিদ্রোহী, যে বরহক্ব ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বের হলো এবং সেই বিদ্রোহী অবস্থায় মারা গেলো এবং ২. ডাকাত, যে ডাকাতি করা অবস্থায় মারা যায়।
[দেখুন- আলমগীরী, দুর্রুল মুখতার, বাহার]।
মাসআলাঃ জানাযার নামাযে ইমামতির হক সর্বাগ্রে ইসলামী শাসকের। অতঃপর ক্বাযীর। এরপর জুমু’আর ইমামের। তারপর মহল্লার ইমামকে অগ্রাধিকার দেয়া মুস্তাহাব। তবে মহল্লার ইমাম ওলী অপেক্ষা উত্তম হতে হবে, অন্যথায় ওলী উত্তম।
[দেখুন- গুনিয়া, দুর্রুল মুখতার]।
মাসআলাঃ মৃত ব্যক্তির নিকটাত্মীয় অনুপস্থিত এবং দূর সম্পর্কীয় আত্মীয় উপস্থিত রয়েছে। এক্ষেত্রে দূর সম্পর্কীয় আত্মীয়ই নামায পড়াবে। অনুপস্থিত বলতে এতটুকু দুরত্বকে বুঝানো হয়, যেখান থেকে আসার অপেক্ষা করা ক্ষতিকর।
[দেখুন- রদ্দুল মুহতার]।
মাসআলাঃ মহিলার কোন ওলী না থাকলে, স্বামী নামায পড়াবে। স্বামীও না থাকলে প্রতিবেশী পড়াবে। অনুরূপ পুরুষের ক্ষেত্রেও ওলী না থাকলে প্রতিবেশী অন্যান্যদের উপর অগ্রাধিকার পাবে।
[দেখুন- দুর্রুল মুখতার, বাহার]।
মাসআলাঃ মহিলা ও শিশুগণ জানাযার নামাযের ওলী হওয়ার যোগ্যতা রাখে না।
মাসআলাঃ জানাযার নামাযে তিন কাতার করা উত্তম। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, যার নামায তিন কাতারে পড়া হবে তার মাগফিরাত হয়ে যাবে। যদি সর্বমোট সাতজন হয়ে থাকে, তাহলে একজন ইমাম হবে তিনজন প্রথম কাতারে, দু’জন দ্বিতীয় কাতারে এবং একজন তৃতীয় কাতারে দাঁড়াবে।
[সূত্রঃ গুনিয়া, বাহার]।
মাসআলাঃ ইমাম মৃত ব্যক্তির বুকের সামনে দাঁড়ানো মুস্তাহাব। মৃত ব্যক্তি থেকে দূরে না হওয়া চাই।
মাসআলাঃ মসজিদে জানাযার নামায যে কোন অবস্থায় মকরূহে তাহরীমী। লাশ মসজিদের ভিতরে হোক বা বাইরে অথবা সব নামাযী মসজিদের ভিতরে হোক বা কিছু অংশ।
[দেখুন- দুর্রুল মুখতার]।
মাসআলাঃ জুমু’আর দিন কেউ মারা গেলে, জুমু’আর আগে কাফন-দাফনও নামায সম্পন্ন করে নিতে পারলে, করে নেয়া চাই। জুমু’আর পর বেশী লোক হবে, এ ধারণায় রেখে দেয়া মাকরূহ।
[দেখুন- রদ্দুল মুহতার]।
মাসআলাঃ মৃত ব্যক্তিকে যদি নামায না পড়ে দাফন করা হয় ও মাটি চাপাও দিয়ে দেয়া হয়, তাহলে তার কবরের উপর নামায পড়বে। যদি মৃত দেহ ফেটে যাওয়ার সন্দেহ না হয়, আর যদি মাটি না দিয়ে থাকে, তাহলে বের করে নামায পড়ার পর দাফন করবে।
[দেখুন- রদ্দুল মুহতার, দুর্রুল মুখতার]।
মাসআলাঃ মুসলমানদের শিশু বা মুসলমান মহিলার শিশু জীবিত জন্ম গ্রহণ করার পর মারা গেলে, তাকে গোসল ও কাফন দেয়া হবে এবং নামায পড়বে আর যদি মৃত জন্ম হয়, তাহলে এমনি গোসল করিয়ে পবিত্র কাপড়ে জড়িয়ে দাফন করে ফেলবে। তার জন্য নামায ও সুন্নাত তরীক্বা মত গোসল ও কাফনের প্রয়োজন নেই।
মাসআলাঃ যে শিশুর মাথা বের করে জন্ম হলো এবং বুক বের হওয়া পর্যন্ত জীবিত ছিল অতঃপর মারা গেল, তাহলে ওকে জীবিত জন্ম হয়েছে বলে ধরা হবে। আর যে শিশুর পা বের করে জন্ম হলো এবং কোমর বের হওয়া পর্যন্ত জীবিত ছিল অতঃপর মারা গেল, তাহলে তাকেও জীবিত ধরা হবে। যদি উল্লেখিত পরিমাণ বের হওয়ার আগে মারা যায়, যদিওবা ক্রন্দন করে থাকে, তবুও তাকে মৃত জন্ম হয়েছে বলে ধরা হবে।
[দেখুন- দুর্রুল মুখতার, রুদ্দুল মুহতার]।
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার নিয়ম।
______________________
যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেবে, সে প্রথমে ওযূ করে নেবে। গোসলের স্থানের চারিদিকে পর্দার ব্যবস্থা করে নিতে হবে। কুল (বড়ই) পাতার সিদ্ধ পানি দ্বারা গোসল করাতে হয়। এটা না পেলে সাদা পানি ব্যবহার করতে পারবে। প্রথমে মৃত ব্যক্তিকে খাটের উপর শায়িত করে নাভী হতে হাঁটু পর্যন্ত কাপড় দিয়ে ঢেকে দেবে। তারপর পায়খানা-প্রসাবের স্থান এক খণ্ড কাপড় দ্বারা মসেহ্ করবে। মৃত ব্যক্তির গুপ্তস্থানের দিকে একেবারেই দৃষ্টিপাত করবেনা। তারপর ওযূ করাবে। ওযূর মধ্যে প্রথমে মুখ তারপর দুই হাত কুনুই পর্যন্ত ধৌত করবে। অতঃপর মাথা মসেহ্ করবে। এর পর উভয় পা ধৌত করবে। মুখ ও নাকের ভিতর পানি দেবে না। কাপড় ভিজিয়ে মুখ ও নাকের ভিতর মুছে নেবে। মাথা ও দাড়ি সাবান দ্বারা ধৌত করবে। তৎপর মৃতকে বাম করটে শুইয়ে ডান পার্শ্বে পানি ঢালবে, যাতে সমস্ত শরীর ভাল মতে ধোয়া যায়। তাপর মৃতকে হেলান দিয়ে বসিয়ে আস্তে আস্তে পেটে চাপ দিতে হয়। এতে মল বের হলে ধুয়ে ফেলবে। এ জন্য ওযূ বা গোসল পুনরায় করাতে হবে না। গোসলের পর শুকনা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে ফেলবে। নখ কাটবে না। দাড়ি ও মাথায় চিরুনী ব্যবহার করবে না। মাথায় ও দাঁড়িতে আতর-গোলাপ লাগাবে। সাজ্দার জায়গায় কর্পুর লাগাবে। পুরুষকে পুরুষ লোক দ্বারা এবং স্ত্রীলোককে স্ত্রীলোক দ্বারা গোসল দিতে হয়; কিন্তু নাবালেগকে উভয়েই গোসল দিতে পারে। স্বামী স্ত্রীকে গোসল দিতে পারবে না। স্বামী মৃত স্ত্রীকে দেখতে ও কবরে নামাতে পারবে এবং স্ত্রীর খাট বহন করতে পারবে।
কাফন/
পুরুষ মৃতের কাফন তিনখানা কাপড় দ্বারা দেওয়া সুন্নত।
যথাঃ
১ লেফাফা- এটা সর্ব প্রথম বিছাতে হয়। এটা মৃত ব্যক্তির দেহ হতে কিছু বেশী লম্বা রাখতে হয়; যাতে দুই প্রান্তে বাঁধতে অসুবিধা না হয়,
২. ইযার- এটা মৃত ব্যক্তির মাথা হতে পা পর্যন্ত লম্বা হতে হবে এবং
৩. কামীছ- এটা গলা হতে পা পর্যন্ত লম্বা রাখতে হয়, কিন্তু আস্তিন ও কল্লি বিহীন হতে হবে।
মেয়েলোকের জন্য পাঁচ খানা কাপড় দ্বারা কাফন দেওয়া সুন্নত।
যথাঃ
১. পিরহান,
২. ইযার,
৩. ওড়না বা সেরবন্দ- এর দ্বারা মাথা ঢাকতে হয়। এটা দুই হাত দৈর্ঘ্য ও আধ হাত চওড়া হবে,
৪. লেফাফা; ইযার ও লেফাফা মাথা হতে পা পর্যন্ত লম্বা হওয়া আবশ্যক এবং
৫. সীনাবন্দ- এটা দৈর্ঘ্যে তিন হাত লম্বা এবং বগল হতে হাঁটু পর্যন্ত হতে হবে। আর্থিক অভাব হলে পুরুষের জন্য দুই কাপড়, যথা- ইযার ও লেফাফা এবং স্ত্রীলোকের জন্য তিন কাপড় যথা- ইযার, লেফাফা ও সেরবন্দ দিলেও চলবে।
কাফন বিছানোর নিয়ম/
পুরুরুষের জন্যঃ খাটের উপর প্রথমে লেফাফা, লেফাফার উপর ইযার এবং ইযারের উপর কোর্তার অর্ধেক এমনভাবে বিছাবে যাতে মৃতকে কোর্তার উপর রাখলে অবশিষ্টাংশ মাথার উপর দিয়ে আনলে বরাবর হয়ে গায়ে লাগে। ইযারকে প্রথমে বামদিক হতে জড়িয়ে, পরে ডান দিক হতে জড়াবে, তারপর লেফাফাও বামদিক হতে জড়িয়ে, পরে ডান দিক হতে জড়াবে। কাফন খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে মাথা, বুক ও পায়ের নিকট সুতা দ্বারা বেঁধে দেবে।
স্ত্রীলোকের জন্যঃ প্রথমে সীনাবন্দ, তারপর লেফাফা, তারপর ইযার অতঃপর পিরহান বিছিয়ে মৃতকে সেগুলোর উপর শোয়াবে। তারপর প্রথমে পিরহান পরাবে। মাথার চুলগুলি দুইভাগ করে উভয় কাঁধের দিক হতে এনে পিরহানের উপর রাখবে। অতঃপর সেরবন্দ দ্বারা মাথা জড়িয়ে দু’পাশ হতে এনে বুকের উপর রাখবে আর ইযারকে বাম দিক হতে জড়িয়ে পরে ডান দিক হতে জড়াবে। তারপর লেফাফাও এইরূপে জড়াবে। সবশেষে সেরবন্দ দ্বারা মাথা জড়িয়ে দু’পাশ হতে এনে বুকের উপর রেখে সীনাবন্দ জড়াবে। কাফনের উপর আতর গোলাপ লাগাবে।
দাফন/
মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখা-
প্রথমে কবরের মধ্যে মৃত ব্যক্তির দুইজন পরহেযগার নিকটতম আত্মীয় নেমে দাঁড়াবে; উপর হতে অন্য লোকে মৃতকে ধরে তাদের হাতে দেবে। কবরে নামানোর সময় নিচের দোয়াটি পড়বেঃ
بِسْمِ اللّٰہِ وَعَلٰی مِلَّۃِ رَسُوْلِ اللّٰہِ
উচ্চারণঃ বিস্মিল্লাহি ওয়া’আলা মিল্লাতি রাসূ-লিল্লাহ।
অর্থঃ আল্লাহ্ তা’আলার নামে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের প্রচারিত ধর্মের উপর।
মৃতের মাথা কবরের উত্তর প্রান্তে ক্বেব্লামুখী করে রাখবে। স্ত্রীলোককে কবরে নামানোর সময় কবরের চতুর্দিকে পর্দা করতে হবে। মৃত স্ত্রীলোককে কবরে নামানোর জন্য যাদের সঙ্গে বিবাহ (মুহরিম) জায়েয নাই তারা কবরে নামবে। তাদের কেউ না থাকলে পরহেযগার লোক কবরে নামাবে। তারপর যথানিয়মে দাফন কার্য সম্পন্ন করবে।