আল্লাহর জন্য জীবন মরণ তথা সার্বক্ষণিক আল্লাহর ইবাদাত।



মানুষ যে অবস্থাতে থাকে সে অবস্থানুযায়ী যদি কাজ করে, তাহলে এ সবই আল্লাহর ইবাদাতের অংশে পরিণত হয়।

কুরবানী করার সময় আমরা গুরুত্বপূর্ণ একটি আয়াত পড়ি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতও হল, কুরবানী করার সময় এ আয়াতটি পড়া-



قُلْ إِنّ صلاتِي ونُسُكِي ومحْياي ومماتِي لِلّهِ ربِّالْعالمِين.

‘‘নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সারা জাহানের রব আল্লাহর জন্য’’।

[সূরা আনআম ৬ / ১৬২]।



অতি তাৎপর্যপূর্ণ আয়াত এটি। আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ আদেশ দিয়েছেন, ‘আপনি বলুন, আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সারা জাহানের রব আল্লাহর জন্য।’ তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানী করার সময় এ আয়াতকে পড়া সুন্নাত বলেছেন।







ইখলাসের বরকত

___________

আসলে এ আয়াতে বলা হয়েছে, মুমিনের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর জন্য হওয়া উচিত, চাই সে যে অবস্থায়ই থাকুক। ইবাদতের ক্ষেত্রে তো এ আয়াত সুস্পষ্ট। সকল ইবাদত আল্লাহর জন্য হওয়া জরুরি। ইখলাসের অর্থও এটাই যে, মানুষের প্রতিটি ইবাদতের উদ্দেশ্য হল আল্লাহ তাআলাকে সন্তুষ্ট করা। যা সকল ইবাদতের প্রাণ। সুতরাং কারো ইবাদতে যদি ইখলাস থাকে, তাহলে তা যত ছোটই হোক আল্লাহ তাআলার নিকট অনেক পূণ্য ও প্রতিদানযোগ্য হয়। আর যদি বড় বড় ইবাদতেও ইখলাস না থাকে তবে তা একেবারেই মূল্যহীন।



ইখলাসের গুরুত্বের বিষয়ে একটি ঘটনা

_________

আরবীতে কুরবানীর অর্থ হল, এমন বস্তু যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা হয়। আর ইখলাসের মাধ্যমেই আল্লাহর নৈকট্য অর্জিত হয়। সুতরাং যদি কেউ ছোট কোনো বস্ত্তও কুরবানী করে, আর তাতে ইখলাস থাকে তাহলে তা আল্লাহর নিকট মাকবুল ও গ্রহণযোগ্য হবে। আর যদি বড় বড় পশু কুরবানী করে, কিন্তু তাতে ইখলাস না থাকে, তাহলে এ কুরবানীর কোনোই মূল্য নেই।



সর্বপ্রথম হযরত আদম আলাইহিস সালামের দুই পুত্র কুরবানী করেন। একজনের নাম হাবিল, অপরজনের নাম কাবিল। কাবিল সুস্থ্য ও সবল একটি দুম্বা কুরবানী করেন। হাবিলের কোনো দুম্বা ছিল না। তখনকার সময় এ অনুমতিও ছিল, কুরবানী যদি নফল হয় আর পশু না থাকে তাহলে গম কুরবানী দেয়া যাবে। সে সময়ের নিয়ম ছিল আল্লাহ তাআলা যেই কুরবানী গ্রহণ করতেন, আসমান থেকে আগুন এসে তা জ্বালিয়ে দিত। আর আগুন না আসার অর্থ ছিল, কুরবানী কবুল হয়নি। হাবিল আর কাবিলের কুরবানীর মধ্যে হাবিলের কুরবানীকে আগুন এসে জ্বালিয়ে দিয়েছিল। কাবিলের দুম্বাটি সেভাবেই পড়ে রইল।



আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,



قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبّلَ منْ أَحَدهمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ منَ الْآخَر.

‘‘[হাবিল আর কাবিল] তারা দু’জন কুরবানী করেছিল। তাদের একজনের কুরবানী কবুল হয়েছে। অপরজনের কুরবানী কবুল হয়নি।’’

[সূরা মায়িদা ৫ / ২৭]।

তখন কাবিল, যার কুরবানী কবুল হয়নি সে হাবিলকে বলল, আমি তোমাকে হত্যা করব। ঘটনা দীর্ঘ। বলার উদ্দেশ্য হল, বাহ্যিক দৃষ্টিতে কাবিলের কুরবানী ছিল অনেক দামি। আর হাবিলের কুরবানী খুবই সাধারণ। কিন্তু তা সত্ত্বেও হাবিলের সাধারণ কুরবানী কবুল হল। বুঝা গেল ইখলাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

জীবনে প্রতিটি কাজই আল্লাহর জন্য হওয়া উচিত

স্মরণ রাখা দরকার, ইবদাতের মধ্যে ইখলাস আবশ্যক।

যেমন কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-



قُلْ إِنّ صلاتِي ونُسُكِي

‘‘আমার নামায, আমার কুরবানী’’

কিন্তু সামনে যে আশ্চর্য কথা বলা হয়েছে তা হল,



ومحْياي ومماتِي لِلّهِ ربِّ الْعالمِين.

‘‘আমার জীবন ও আমার মরণ সারা জাহানের রব আল্লাহর জন্য।’’

[সুরা আনআম, ৬ /১৬২]।

অর্থাৎ ইবাদত ব্যতিত জীবনের সাথে সম্পৃক্ত অন্য সকল কাজও রাববুল আলামীনের জন্য হওয়া উচিত।

খাওয়া, পান করা, ঘুমানো, জাগ্রত হওয়া, উপার্জন করা, হাসা ও কথা বলা সবই আল্লাহর জন্য হওয়া উচিত। যদিও বাহ্যত মনে হয় এ সকল কাজ নিজের জন্য। কিন্তু যদি মানুষ ইচ্ছা করে, নিয়তকে শুধরে নিয়ে এ সকল কাজও আল্লাহর জন্য করতে পারে। সব কাজ যখন আল্লাহর জন্য হবে, সেগুলোও  নেক আমলে পরিণত হবে এবং সেগুলোর জন্য পূণ্য ও প্রতিদান দেওয়া হবে।



নফসের হক

_________

উদাহরণ স্বরূপ, মানুষ ক্ষুধার কারণে আহার করে। বাহ্যত তা তো খাদ্য গ্রহণ, প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ। তখন যদি একটু সময়ের জন্য কেউ ভাবে, আল্লাহ তাআলা আমার উপর আমার নফসের কিছু হক রেখেছেন। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,



إن لنفسك عليك حقا.

 ‘‘তোমার উপর তোমার নফসেরও হক রয়েছে।’’

নফসের হক হল, তাকে উপযোগী খাদ্য দেওয়া। কারণ এ নফস আমার মালিকানাধীন নয়। এটাও তাঁরই দান। আমার নিকট আমানতমাত্র। খাদ্যও তাকে এ নিয়তে দিতে হবে, যেন এর মাধ্যমে ইবাদতের শক্তি হয়। কোনো ব্যক্তির যদি ক্ষুধা লাগে, আর খাদ্য তার নিকট থাকার পরও না খেয়ে ক্ষুধার্ত থাকে। এ অবস্থায় ক্ষুধার কারণে তার মৃত্যু হয় তাহলে স্মরণ রাখবেন, সে গুনাহগার হবে। এ মৃত্যু একটি নিকৃষ্ট মৃত্যু বলে বিবেচিত হবে।

এ জীবন আল্লাহর আমানত। এর মাধ্যমে অনশনেরও হুকুম জানা গেল। অনেকে না খাওয়ার সংকল্প করে বসে। কারণ তারা নিজের জীবনকে তাদের মালিকানাধীন মনে করে। তাই যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই চলে। মানুষের মধ্যে এ ব্যাধিও আছে, যদি অনশন করা অবস্থায় কেউ মৃত্যুবরণ করে, তারা তাকে শহীদ বলতে থাকে- দাবী আদায়ের জন্য সে জীবন দিয়েছে। এটা মনেও হয় না সে হারাম মৃত্যু বরণ করেছে। কারণ, আল্লাহ তাআলার হুকুম ছিল, আমি এ জীবন তোমাকে দান করেছি আমানতের ভিত্তিতে, তার উপর তোমার কিছু হক রয়েছে।

আল্লাহ তাআলার ইরশাদ-



يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيم.

‘‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্ত্ত থেকে আহার কর ও সৎকর্ম কর; তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবগত।’’

[সূরা মুমিনূন ২৩ / ৫১]।

এ  প্রাণ আমি তোমাদেরকে এ জন্যই দান করেছি, যেন তোমরা তাকে ভাল ভাল আহার করাও এবং পাশাপাশি উত্তম থেকে উত্তম আমল কর। এ প্রাণ তোমাদেরকে এজন্য দেওয়া হয়নি, ক্ষুধার্ত রেখে তাকে ধ্বংস করবে। সুতরাং মানুষের এ চিন্তা, আমার জীবন আমার মালিকানাধীন, সম্পূর্ণ ভুল। তাই আহার গ্রহণের সময় যদি এ নিয়ত করা হয়, আল্লাহর দেওয়া হুকুম পালনের জন্য আমি আহার করছি, তবে এ আমল আল্লাহর জন্য হবে এবং এ আমলের জন্য পূণ্য ও সাওয়াব হবে। খাওয়ার সময় এ নিয়তও করে নিন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও আহার করতেন। বিরোধীরা আপত্তি তুলল, এ আবার কেমন নবী আমাদের মত আহার করে! আমাদের মত বাজারে চলাফেরা করে! কারণ, তারা মনে করত, আসমান থেকে কোনো ফিরিশতা নবী হয়ে আসবেন। যার পানাহারের প্রয়োজন হবে না। অথচ মানুষের নিকট নবী পাঠানো হয় যেন তারা বুঝতে পারে নবীগণ ভিন্ন কোন মাখলূক নন। তারা তোমাদেরই একজন। যত ধরনের চাহিদা ও ইচ্ছা তোমাদের আছে সব কিছুই তাদেরও আছে এবং তারা পানাহারও করেন। সুতরাং এ দৃষ্টিকোণ থেকে পানাহার করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত।



খানা খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়ার কারণ

________

খানা খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া উচিত। বিসমিল্লাহ পড়ার হুকুম এ জন্য নয় যে, বিসমিল্লাহ একটি মন্ত্র। বরং আমাদের মনোযোগ এ দিকে আকর্ষণ করার জন্য, যে আহার আমি গ্রহণ করছি তা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই গ্রহণ করছি। এ খাবার তাঁরই দান। তাঁরই আদেশ। তাঁর নবীর সুন্নাত। খাওয়া শেষে আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া করব। দোয়া পড়ব।



الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا...

তাহলে এ পানাহার আল্লাহ তাআলার জন্য হবে। তেমনই ঘুমের আমল।

ঘুম বাহ্যিকভাবে প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ। তবে ঘুম যদি এ নিয়তে হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,



إن لعينك عليك حقا.

‘‘নিশ্চয়ই তোমার উপর তোমার চোখের হক রয়েছে।’’

[সূত্রঃ তবারানী আওসাত, হাদীস: ৭৬৩৩]।

তাহলে এ ঘুমও আল্লাহ তাআলার জন্য হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই যে সরকারী এক মেশিন দান করেছেন। জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের সঙ্গ দিচ্ছে। তার না সার্ভিসের প্রয়োজন হচ্ছে, না তেলের প্রয়োজন হচ্ছে। সুতরাং এর হক হল তাকে একটু বিশ্রাম দেওয়া।

এমনিভাবে পরিশ্রমের বাহ্যিক উদ্দেশ্য হল টাকা উপার্জন করা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যদি নিয়ত করা হয়, আল্লাহ তাআলা আমার নফস ও আমার পরিবারের যে হকগুলো আমার উপর আবশ্যক করেছেন, তা সুচারুরূপে আদায় করার জন্য উপার্জন করারও প্রয়োজন আছে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অন্যান্য ফরযের পর বড় ফরয হল হালাল উপার্জন করা। সুতরাং এ নিয়তের কারণে কাজকর্ম ও ব্যবসা-বাণিজ্যেও পূণ্য ও সাওয়াব হবে। মোটকথা, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জীবনের এমন কোনো কাজ নেই যেগুলোর নিয়তকে শুধরে নিলে আল্লাহর জন্য হয় না।



মৃত্যু আল্লাহর জন্য কীভাবে হবে

____________

আয়াতের শব্দ وَمَمَاتِي অর্থাৎ মৃত্যুও আল্লাহর জন্য -এর উদ্দেশ্য হল, হয়ত আল্লাহর রাহে জিহাদ করতে করতে জীবন বিলিয়ে দেওয়া। যদি জিহাদের সুযোগ না হয়, তাহলে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছার উপর সন্তুষ্ট থাকা, যখন আল্লাহ তাআলা আমার ব্যাপারে ভাল মনে করবেন আমাকে মৃত্যু দান করবেন।

যদিও মৃত্যুর কামনা করতে নিষেধ করা হয়েছে, কিন্তু তার জায়গায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দোয়া পড়ার উৎসাহ প্রদান করেছেন।



اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الحَيَاةُ خَيْرًا لِي، وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الوَفَاةُ خَيْرًا لِي.

‘‘হে আল্লাহ যে পর্যন্ত আমার জন্য জীবিত থাকা উত্তম হবে, সে পর্যন্ত আমাকে জীবিত রাখ। যখন আমার মৃত্যুরবণ আমার জন্য ভাল হবে, আমাকে মৃত্যু দাও।’’

[সূত্রঃ জামে তিরমিযী, হাদীস ৯৭০]।



সুতরাং মানুষ যখন নিজের জীবন ও মরণকে আল্লাহর হাতেই ছেড়ে দিবে তখন তার জীবিত থাকাও আল্লাহর জন্য হবে, মৃত্যুবরণ করাও আল্লাহর জন্য হবে।

কোনো অবস্থাতেই মুমিনের ক্ষতি নেই।

একটা সময় ইচ্ছা করেই অনুশীলন করা দরকার যে, জীবনের প্রতিটি কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তে করব। যদি এটা করে নেওয়া যায়, তাতে সকল জায়েয কাজে সাওয়াব হবে। কারণ মুমিনের কোন অবস্থাতেই ক্ষতি নেই। সে যদি আনন্দের সময় আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করে, তাও ইবাদত হয়। আর যদি দুশ্চিন্তার সময় ধৈর্য ধারণ করে,



إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ

পড়ে এবং আল্লাহ তাআলার সিদ্ধান্ত ও ইচ্ছার নিকট নিজেকে অর্পণ করে দেয়, তার ব্যাপারে কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,



إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَاب.

‘‘ধৈর্যশীলদেরকে বে-হিসাব প্রতিদান দেওয়া হবে।’’

[সূরা যুমার ৩৯ / ১০]।

অর্থাৎ আল্লাহর জন্য যেকোনো জিনিসেই ধৈর্য ধারণ করা হবে আল্লাহ তাআলা তাকে অপরিমিত দান করবেন।



সুন্নাতের উপর আমলকারী ব্যক্তি দূরে অবস্থান করেও রসূলের নিকটবর্তী।

____________

হযরত মুআয বিন জাবাল রা. একজন প্রসিদ্ধ ও প্রিয় সাহাবী ছিলেন। তার কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মনের কথাও বলতেন। আবার কখনো কখনো তাকে শাসনও করতেন।

সম্ভবত নবম হিজরীর ঘটনা। দ্বীনী কাজের প্রয়োজনে তাকে ইয়ামান পাঠানো হয়। সেখানে একজন শাসকের প্রয়োজন ছিল, যিনি শাসনকার্য পরিচালনা করবেন, আবার মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষা দায়িত্বও আদায় করবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মনোনয়ন দৃষ্টি হযরত মুআয বিন জাবাল রা.-এর প্রতি পড়ল। ফলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি ইয়ামান চলে যাও। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এ অবস্থায় মদীনা থেকে বিদায় দিলেন যে, হযরত মুআয বিন জাবাল রা. ঘোড়ায় সাওয়ার আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঘোড়ার লাগাম ধরে দূর পর্যন্ত বিদায় জানানোর জন্য যাচ্ছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহীর মাধ্যমে এও জানতে পেরেছিলেন, তিনি আর অল্প দিনই দুনিয়াতে থাকবেন। এদিকে মুআয বিন জাবাল রা.-এর তাড়াতাড়ি ফেরার কোনো সম্ভাবনা ছিল না। এজন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাঁটতে হাঁটতে হযরত মুআয বিন জাবাল রা.-কে বললেন, হে মুআয! এই হয়ত তোমার  ও আমার শেষ দেখা। এরপর হয়ত তুমি আমাকে আর দেখতে পাবে না।  হযরত মুআয রা.-এর মত জীবন উৎসর্গকারী সাহাবী এতক্ষণ নিজেকে সংযত রেখেছেন, কিন্তু যখন এ কথা শুনলেন, হে মুআয! আজকের পরে হয়ত তুমি আমাকে আর দেখতে পাবে না। হযরত মুআয রা.-এর চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরও চোখে পানি এল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, মুআয! যদিও তুমি আমার থেকে দূরে কিন্তু স্মরণ রেখো-



إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِي الْمُتَّقُونَ مَنْ كَانُوا وَحَيْثُ كَانُوا

‘‘মুত্তাকীরাই আমার নিকটতম ব্যক্তি, তারা যে-ই হোক, যেখানেই থাকুক।’’

[সূত্রঃ মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২০৫২]।

সুতরাং যে ব্যক্তি সুন্নাতের উপর আমল করবে, সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে, চাই সে যতই দূরে থাকুক। আর যে সুন্নতের উপর আমল করবে না, সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দূরে, যদিও সে মদীনাতেই থাকে।



এক আশ্চর্য ঘটনা

___________

এক নবী প্রেমিক নবী কারিম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা মুবারকে যখনই উপস্থিত হতেন, সাধারণত রওজা মুবারকের বেষ্টনী থেকে একটু দূরে একটি খাম্বার পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন। একদিন তিনি বললেন, একবার আমি মনে মনে বলছিলাম, তোমার দিল কত পাষাণ সবাই তো বেষ্টনীর পাশে গিয়ে বসে পড়ে আর তুমি সামনেই যাও না। পিছনেই থাক? তখন অনুভব হল, রওজা মুবারক থেকে আওয়াজ আসছে, যে আমার সুন্নাত অনুযায়ী আমল করে সে আমার নিকটবর্তী। চাই সে বাহ্যিকভাবে যত দূরেই হোক। আর যে আমার সুন্নাত অনুযায়ী আমল করে না, সে আমার থেকে দূরে। চাই সে আমার রওজার বেষ্টনী জড়িয়ে ধরে থাকুক।

মোটকথা, মুমিনের জীবন-উদ্দেশ্য হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত অনুযায়ী আমল করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।



কবি বলেন,



نہ تو ہے ہجر  ہی اچھا،  نہ وصال  اچھا

يار جس حال ميں رکھے وہی حال اچھا

না বিচ্ছেদ, না মিলন/ বন্ধু যেভাবে রাখে সেভাবেই ভাল।



মুহাববাতের প্রকৃত দাবি

________

সাহাবায়ে কেরাম রাযিআল্লাহু আনহুমকে দেখুন! মক্কা মদীনায় জন্মগ্রহণ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্যে ধন্য হয়েছেন। কিন্তু তাদের মৃত্যুকালীন অবস্থা হল, কেউ তো কনস্টান্টিনেপলে মৃত্যু বরণ করছেন। কেউ সিন্ধুতে এসে শহীদ হয়েছেন। অথচ মুহাববাতের দাবি তো ছিল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে থাকবেন সেখান থেকে কেউ একটুও দূরে যাবেন না। তবে তারা মুহাববাতের আসল দাবি কী তা জানতেন। মুহাববাতের মূল দাবি তো এটা নয়, মাহবুবের সাথেই লেগে থাকবে। বরং মুহাববাতের দাবি হল, মাহবুবের সন্তুষ্টি অনুযায়ী কাজ করা।

সুতরাং মুমিন যদি আল্লাহ তাআলার হুকুম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের অনুসারী হয়, তাহলে সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটবর্তী, চাই সে বাহ্যত যত দূরেই হোক।



কবির ভাষায়,



وہ وفا سے خوش نہ ہوں تو پھر وفا کچھ بھینہيں

মুহাববাত সমর্পণ ও সন্তুষ্টি ছাড়া আর কী?/ তিনি যদি সন্তুষ্টই না হন তাহলে আর ওফাদারি কী?



নেক কাজ করতে না পারার আফসোসে কামারের মর্যাদা বৃদ্ধি পেল

___________

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রাহমাতুল্লাহি আলাইহিকে এক ব্যক্তি স্বপ্নে দেখল, লোকটি তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, আপনার সাথে আল্লাহ তাআলা কেমন আচরণ করেছেন? তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা বড় দয়ার আচরণ করেছেন। তবে আমার প্রতিবেশী কামার যে মর্যাদা পেয়েছে, তা আমার ভাগ্যে জুটেনি। কারণ, সে কামার হওয়া সত্ত্বেও যখনই তার কানে ‘হাইয়া আলাসসালাহ’ -এর আওয়াজ পৌঁছত। হাতুড়ি মাথার উপর থাকলেও তা লোহায় না মেরে পিছনে ফেলে দিত। নামাযের জন্য চলে যেত। আর সে তার স্ত্রীকে বলত, আমি তো দিনরাত দুনিয়ার পিছনেই ব্যস্ত থাকি তাই অমুক আল্লাহর বান্দা যেভাবে রাতভর নামাজ পড়ে সেভাবে নামায পড়ার সুযোগ আমার হয়ে উঠে না! আমিও অবসর পেলে আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারকের মত রাতের বেলা ইবাদত করতাম! আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি তোমার এ আফসোসের প্রতিদান দিলাম। তোমাকে আমি ঐ মর্যাদা দান করলাম, যা আমি আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারককেও দান করিনি।



প্রতিদিনের আমল

_________

এক মু'মিন বান্দা নাসীহাত করে বলতেন, যখন তুমি ফজরের নামায আদায় করবে, অন্তরে একবার নিয়ত করে নাও, আজ আমি যে কাজই করব আল্লাহর জন্য করব। এরপর যখন নিজের অফিসে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হবে, এ নিয়ত করবে, আমি আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব আদায় করার জন্য যাচ্ছি। এতে এমনিতেই অন্তরে এ অনুভূতি সৃষ্টি হবে যে, এ কাজ আমি আল্লাহর জন্য করছি। তাই তাঁর দেয়া দায়িত্ব তাঁর হুকুম অনুযায়ী করব। ফলে ঘুষ, মিথ্যা, ধোঁকার মত গোনাহে লিপ্ত হবে না। আবার যখন ঘরে ফিরে আসবে, ঘরে প্রবেশের পূর্বে এ নিয়ত করে নাও, আমি আমার পরিবারের সাথে কথাবার্তা, হাসিখুশি আল্লাহর হুকুমের কারণে করব। এরপর রাতে এ বিষয়গুলোর হিসাব নিবে, আমি কি নিয়ত অনুযায়ী আমল করেছি, না করিনি? যে কাজগুলো নিয়ত অনুযায়ী হবে সে ব্যাপারে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর। আর যে কাজগুলো নিয়ত অনুযায়ী হয়নি, তার জন্য ইসতেগফার কর। এ ইসতেগফার ও তাওবার বরকতে মর্যাদার একটি স্তর বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহ তাআলার ক্ষমা নসিব হবে। আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা খুবই প্রিয়।

এটাকে নিজের প্রতিদিনের মামূল বানিয়ে নিন। আর সকালে উঠে এ আয়াত পড়ে নিন,



إِنّ صلاتِي ونُسُكِي ومحْياي ومماتِي لِلّهِ ربِّ الْعالمِين.

‘‘আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সারা জাহানের রব আল্লাহর জন্য।’’

[সুরা আনআম, ৬ / ১৬২]।

এর দ্বারা লাভ হবে, ইনশাআল্লাহ ধীরে ধীরে গাফলতের হালাত শেষ হয়ে যাবে। আর আল্লাহ তাআলার সুন্নাত হল, যে তার রাস্তায় চলতে শুরু করে, পড়ে-উঠে হলেও সে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছেই যায়। বরং আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেন, যে আমার রাস্তায় মেহনত করে, আমি তার হাত ধরে আমার রাস্তায় নিয়ে যাই। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,



وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا.

 ‘‘যারা আমার পথে চেষ্টা করে, আমি তাদেরকে অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করবো।’’

[সূরা আনকাবুত ২৯ / ৬৯]।



তিনি বলেন, বাচ্চা যখন হাঁটতে শুরু করে, প্রথমেই হাঁটতে পারে না। বরং পড়ে-ওঠে, পড়ে-ওঠে হাঁটতে থাকে। সামনে মা-বাবা তাকে ডাকে। হাঁটতে হাঁটতে যখনই পড়তে যায়, মা-বাবা তাকে অগ্রসর হয়ে ধরে ফেলে, তাকে পড়তে দেয় না। তাহলে দয়ার সাগর, আরহামুর রাহিমীন নিজ বান্দাকে কীভাবে ছেড়ে দিবেন? কীভাবে পড়তে দিবেন?

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আমল করার তাওফীক দান করুন। তাঁর সন্তুষ্টির জন্য বেঁচে থাকার ও মৃত্যুবরণ করার আগ্রহ দান করুন। আমীন।

___________

"বান্দার নামে - আল্লাহর নামে কোরবানী" শীর্ষক বিতর্ক প্রসঙ্গে।



মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,



إِنّ صلاتِي ونُسُكِي ومحْياي ومماتِي لِلّهِ ربِّ الْعالمِين.

‘‘আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সারা জাহানের রব আল্লাহর জন্য।’’

[সুরা আনআম, ৬ /১৬২]।

উক্ত আয়াতে কারিমার অর্থ ও উদ্দেশ্য না বুঝার কারণে অনেকে "বান্দার নামে কোরবানী - আল্লাহর নামে কোরবানী" অহেতুক বিতর্কের অবতারণা করে থাকে।

মূর্খতাবশতঃ উক্ত আয়াতে কারিমার অপব্যাখ্যা করে "নামে" শব্দটিকে বিতর্কিত করার প্রয়াস পেয়েছে।



"নামে" শব্দটির কতিপয় ব্যবহার দেখা যাক

___________

১/ "উদ্দেশ্য করে" অর্থে - আমি তোমার নামে খারাপ কথা বলি নি।

 অর্থাৎ আমি তোমাকে উদ্দেশ্য করে খারাপ কথা বলি নি।



২/ পক্ষ থেকে বা হিসেবে (on one's account) বা খাতে - আমার নামে ৫০০ টাকা জমা করুন।

অর্থাৎ আমার পক্ষ থেকে বা আমার হিসেবের খাতে ৫০০ টাকা জমা করুন।



৩/ ইবাদাত অর্থে - আল্লাহর নামে শুরু করছি।

"নামে" শব্দটি ইবাদাত বুঝাতে কেবল আল্লাহকে বুঝায়।



৪/ "নামে" দ্বারা "হয়ে বা পক্ষে বা পক্ষ থেকে" বুঝিয়ে বাংলা ভাষায় এর বহুল ব্যবহার রয়েছে  -

ক) আমার নামে (হয়ে) তার কাছে অনুরোধ জানাবে।

খ) তার নামে (হয়ে) অনুরোধ না করলেও চলবে।

আবার, জন্যে অর্থে- তার নামে (জন্যে) অনুরোধ না করলেও চলবে।

ইত্যাদি।

গ) মৃত আত্মীয় স্বজনের নামে (হয়ে / জন্যে) আল্লাহর ওয়াস্তে খাবারের ব্যবস্থা করা সাওয়াবের কাজ।

ঘ) নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে নিজের নামে (পক্ষ থেকে) আল্লাহর ওয়াস্তে কুরবানি করা ওয়াজিব।

ঙ) নবীজি সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এর নামে (অর্থাৎ তাঁর হয়ে বা তাঁর পক্ষ থেকে) আল্লাহর ওয়াস্তে কুরবানি দেয়াতে দোষের কিছু নেই।



পক্ষান্তরে

এ কথাটিকে সাধারনত সংক্ষেপে এইরুপ বলা হয়ে থাকে, "নবীজি সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এর নামে কুরবানি দেয়াতে দোষের কিছু নেই"।



এইরুপ ব্যবহার দ্বারা বান্দাকে খোদা সাব্যস্ত করা হয় না, বরং বান্দার হয়ে আল্লাহর বন্দেগীর উদ্দেশ্যে "অমুকের নামে" শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।



কোরবানির পশুকে জবেহকালে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার (আল্লাহর নামে, আল্লাহ্ মহান, সর্বশক্তিমান) বলে জবেহ করা হয়।



কোরবানীর পশু নিজ হাতে যবাই করলে দুআ স্বরূপ নিম্নের বাক্যটি পাঠ করা হয়ঃ



أللهم تقبل هذا مني ومن أهل بيتي

অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনি ইহা আমার পক্ষ হতে এবং আমার পরিবারের সকল সদস্যের পক্ষ হতে কবুল করুন।

অথঃপর ছুরি চালানোর সময় বলা হয়ঃ



 بسم الله والله أكبر



আর অন্য কেউ যবাই করলে বলা হয় أللهم تقبل هذا عن فلان অর্থাৎ হে আল্লাহ আপনি এই কোরবানী অমুকের পক্ষ হতে কবুল করুন।



কাজেই, আল্লাহর ওয়াস্তে নিজের বা অপরের নামে তথা অপরের হয়ে বা অপরের পক্ষ থেকে কোরবানি করা, এইরুপে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ ব্যতীত কারো নামে কোনো দোকানের নামকরণ করা, আল্লাহর ওয়াস্তে মনে মনে নিয়্যাত করে কারো পক্ষ থেকে হয়েছে বুঝাতে কারো নামে রাস্তার নামকরন করা, আল্লাহর ওয়াস্তে কারো নামে ভবনের নামকরণ করা, সাওয়াব পৌঁছানোর নিয়াতে কারো নামে তথা কারো হয়ে সাদকায়ে জারিয়ার সাওয়াব হবে এমন কিছু করা, আল্লাহর ওয়াস্তে কারো হয়ে তথা আল্লাহর ওয়াস্তে কারে নামে কোনো ইবাদাত করা শিরক্ নয়।

Top