কদমবুসির বিরোদ্ধে আলবানীর মনগড়া তাহহীকের জবাব:
পর্ব নং-১
আমাদের দেশের কতিপয় আহলে হাদিস ও দেওবন্দী ভাই নিম্নের হাদিসটি দিয়ে কদমবুসির বিরোদ্ধে দলিল দেন। ইমাম তিরমিযি (রহ.) সংকলন করেন-
عَنْ أَنَسٍ، قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ الرَّجُلُ مِنَّا يَلْقَى أَخَاهُ أَوْ صَدِيقَهُ أَيَنْحَنِي لَهُ؟ قَالَ: "لَا"، قَالَ: أَفَيَلْتَزِمُهُ، وَيُقَبِّلُهُ؟ قَالَ: "لَا"، قَالَ: فَيَأْخُذُهُ بِيَدِهِ وَيُصَافِحُهُ؟ قَالَ: "نَعَمْ
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (দ.)! আমাদের কোন ব্যক্তি যখন তার কোন ভাই বা বন্ধুর সাথে সাক্ষাত করবে, তখন সে কি মাথা ঝুঁকাবে বা তাকে জড়িয়ে ধরবে বা চুমু খাবে? তিনি বললেন, না। লোকটি বলল, তাহলে কি কেবল হাত ধরবে ও মুছাফাহা করবে? রাসূল (দ.) বললেন, হ্যাঁ। (তিরমিযি, মিশকাত, হা/৪৬৮০, কিতাবুল আদাব, মুছাফাহা ও মু‘আনাকা অনুচ্ছেদ-৩, সুনানে তিরমিযি, হা/২৭২৮)
এ হাদিস দিয়ে আমাদের কতিপয় হযরতগণ বলে থাকেন কাউকে চুমু দেওয়ার কথা যেহেতু এ হাদিসে নবীজী অনুমতি দেননি, সেহেতু কারও পায়ে চুমু দেয়া বৈধ নয়।
সনদ বিশ্লেষণ:
এ হাদিসটি ইমাম তিরমিযির পাশাপাশি ইমাম বায়হাকী (রহ.)ও সংকলন করেছেন। বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম যায়লাঈ (রহ.) লিখেন-
وَرَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ، وَقَالَ: تَفَرَّدَ بِهِ حَنْظَلَةُ السَّدُوسِيُّ، وَكَانَ قَدْ اخْتَلَطَ فِي آخِرِ عُمْرِهِ، ذَكَرَهُ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ.
-‘‘হাদিসটি ইমাম বায়হাকী সংকলন করেছেন, এ হাদিসটি ‘হানযালা সাদুসী-ই’ একমাত্র বর্ণনাকারী, আর তার শেষ বয়সে স্মৃতিশক্তি নষ্ট হওয়ায় সে হাদিস বিশৃঙ্খলা করে ফেলতেন, এমনটি ইমাম বায়হাকী তার শুয়াবুল ঈমানে উল্লেখ করেছেন।’’ (ইমাম যায়লাঈ, নাসবুর রায়্যাহ, ৪/২৫৭ পৃ.)
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহ. লিখেন-
وَاسْتَنْكَرَهُ أَحْمَدُ لِأَنَّهُ مِنْ رِوَايَةِ السَّدُوسِيِّ وَقَدْ اخْتَلَطَ وَتَرَكَهُ يَحْيَى الْقَطَّانُ.
-‘‘ইমাম আহমদ রহ. সাদুসী এর এ হাদিসকে ইনকার করেছেন, কেননা শেষ বয়সে তার স্মৃতিশক্তিলোপ পাওয়ায় সে হাদিস বিশৃখঙ্খল করে ফেলতেন, ইমাম ইয়াহইয়া কাত্তান রহ. তার হাদিস পরিত্যাগ করতেন।’’ (ইবনে হাজার আসকালানী, তালখিসুল হুবাইর, ৩/৩১৭ পৃ. হা/১৪৯১)
সাহাবী হযরত আনাস (রা.)-এর ছাত্র হানযালা এর ব্যাপারে এখানে ইমাম যায়লাঈ ও আসকালানী সামান্য আলোচনা করেছেন। ইমাম ইবনে আদি (রহ.) তার জীবনীতে উল্লেখ করেন-
ابن الدورقي سمعت يَحْيى يقول حنظلة
بن عُبَيد الله السدوسي ليس حديثه بشَيْءٍ.
-‘‘মুহাদ্দিস ইবনে দুরকী বলেন, আমি ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন রহ. কে বলতে শুনেছি, সাদুসী তার হাদিস কোন বস্তুই না।’’ (ইবনে আদি, আল-কামিল, ৩/৩৪০ পৃ. ক্রমিক. ৫৩৮) আরেকটি ইবারত দেখলেই বুঝতে পারবেন উপরের এ হাদিসটির মান কোন পর্যায়ের। ইমাম ইবনে আদি রহ. তার জীবনী আলোচনার এক পর্যায়ে লিখেন-
الفضل بن زياد سمعت أحمد بن حنبل وَسُئِل عن حنظلة السدوسي فقال هذا حنظلة بن عُبَيد الله روى، عَن أَنَس أحاديث مناكير
-‘‘মুহাদ্দিস ফযল ইবনে যিয়াদ বলেন, আমি ইমাম আহমদ রহ. কে বলতে শুনেছি, তাকে রাবী হানযালা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এ ‘হানযালা বিন উবায়দুল্লাহ’ হযরত আনাস রা. হতে মুনকার বা আপত্তিকর হাদিস বর্ণনা করতো।’’ (ইমাম ইবনে আদি, আল-কামিল, ৩/৩৪০ পৃ. ক্রমিক. ৫৩৮) এরপর ইমাম ইবনে আদি (রহ.) এ হাদিসটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বুঝা গেল এ হাদিসটি মুনকার।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এ পর্যালোচনা দেওয়ার একটাই উদ্দেশ্যে, আহলে হাদিস আলবানীর মুখোশ উন্মোচন করা। আলবানী এ হাদিসটিকে কদমবুসির বিরোদ্ধে দলিল পেশ করার জন্য মিশকাতের তাহকীকে একে (حسن أَو صَحِيح) হাসান অথবা সহীহ বলে মনগড়া তাহকীক করেছেন। (আলবানী, মিশকাতের তাহকীক, ৩/১৩২৭ পৃ. হা/৪৬৮০, মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন, দ্বিতীয় প্রকাশ. ১৯৮৫ খৃ.) আবার সুনানে তিরমিযির তাহকীকে আবার একে শুধু হাসান বলেছেন। (সুনানে তিরমিযি, হা/২৭২৮)
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! বুঝতে বাকি রইল না যে আহলে হাদিস আলবানী একজন ধোঁকাবাজ, নিজের মতকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বা ফায়দা হাসিলের জন্য মুনকার হাদিসকেও সহীহ বলতে একটুও চিন্তা করেন না। এটাই স্বাভাবিক যে ঘরি মেকানিকের কাছে কি আর হাদিসের আমানত পাওয়ার আশা করা যায়!
(ধারাবাহিক চলবে)
(যে কেউ এটি কপি করতে পারবেন)

Top