অমুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়া শিশুর শিশুকালেই মারা গেলে পরকালীন অবস্থান প্রসঙ্গ।
অমুসলিম পরিবারে কোন শিশু জন্ম নেয়া কোন অপরাধ নয়। এতে শিশুটিরও কোন দোষ নেই। এ কারণেই হাদীসে পরিস্কার বলা হয়েছে প্রতিটি শিশু যার ঔরষেই জন্ম গ্রহণ করুক না কেন, সে নাবালক থাকা অবস্থায় মুসলিমই থাকে। তারপর বড় হলে তার পিতা মাতা তাকে ইহুদী খৃষ্টান ইত্যাদি কাফির বানায়।
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ
ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : « ﻛُﻞُّ ﻣَﻮْﻟُﻮﺩٍ ﻳُﻮﻟَﺪُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻔِﻄْﺮَﺓِ،
ﻓَﺄَﺑَﻮَﺍﻩُ ﻳُﻬَﻮِّﺩَﺍﻧِﻪِ، ﺃَﻭْ ﻳُﻨَﺼِّﺮَﺍﻧِﻪِ، ﺃَﻭْ ﻳُﻤَﺠِّﺴَﺎﻧِﻪِ، ﻛَﻤَﺜَﻞِ
ﺍﻟﺒَﻬِﻴﻤَﺔِ ﺗُﻨْﺘَﺞُ ﺍﻟﺒَﻬِﻴﻤَﺔَ ﻫَﻞْ ﺗَﺮَﻯ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺟَﺪْﻋَﺎﺀَ
হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, প্রত্যেক নবজাতক ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। এরপর তার মাতাপিতা তাকে ইয়াহুদী বা খৃষ্টান অথবা অগ্নি উপাসকরূপে রূপান্তরিত করে। যেমন চতুষ্পদ জন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে [জন্মগত] কানকাটা দেখেছ?
[সূত্রঃ বুখারী, হা/ ১৩৮৫]।
উক্ত সন্তান যদি ঐ শিশু তথা নাবালেগ অবস্থায় মারা যায়, তাহলে সে জান্নাতী হবে। কিন্তু বালেগ হবার পর, যখন তার বিবেক বুদ্ধি জাগ্রত হয়। তখন আল্লাহর দেয়া আকল দিয়ে তার রবকে চিনে নেয়া দায়িত্ব।
মানুষকে আল্লাহ তাআলা অন্যান্য সকল প্রাণী থেকে আলাদা করেছেন আকল দিয়ে। মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। কারণ হল, মানুষের আকল-বুদ্ধি, বিবেক আছে। অন্য কোন প্রাণীর তা নেই। একজন সুস্থ্য বিবেক সম্পন্ন মানুষই বুঝতে পারবে যে, সামান্য একটি গাড়ি ইচ্ছেমত চলতে পারে না। নিজে নির্মিত হতে পারে না, এর জন্য নির্মাতা লাগে, গাড়ি চলতে ড্রাইভার লাগে। তো এ বিশ্ব চরাচর, এ সুবিশাল সৌর জগত, অসংখ্য গ্রহ নক্ষত্র এসব কিছুই নিজে নিজে সৃষ্টি হতে পারে না। নিশ্চয় কোন নিপূণ কারিগর তার সুনিপূণ হাতে নির্মাণ করেছেন। স্বাভাবিক বিবেকই ব্যক্তিকে এক মহান স্রষ্টার অস্তিত্ব বিশ্বাসের দিকে নিয়ে যাবে। এরপর তার অনুসন্ধিৎসা সত্য ধর্ম খুঁজে নিতে সহায়তা করবে। এ কারণে প্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় কোন ব্যক্তি যদি এক আল্লাহর উপর বিশ্বাস করা ও তার সময়কার সত্য ধর্মের উপর ঈমান আনয়ন করা ছাড়াই মৃত্যু বরণ করে, তাহলেই কেবল সে জাহান্নামী হবে। নাবালেগ তথা শিশু অবস্থায় কাফির ব্যক্তির সন্তান মারা গেলে উক্ত শিশুর কোন শাস্তি নেই।
সহীহ বুখারীর ১৩৮৬ নং বর্ণনায় একটি দীর্ঘ হাদীস এসেছে। যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম মেরাজের ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
দীর্ঘ হাদীসের এক পর্যায়ে এসেছেঃ “আমরা চলতে চলতে একটি সবুজ বাগানে উপস্থিত হলাম। এতে একটি বড় গাছ ছিল। গাছটির গোড়ায় একজন বয়ঃবৃদ্ধ লোক ও বেশ কিছু বালক বালিকা ছিল।……..”।
মুবারক হাদিসটির ব্যাখ্যায় পরে এসেছে-“গাছের গোড়ায় যে বৃদ্ধ ছিলেন, তিনি ইবরাহীম আলাইহি সালাম এবং তাঁর চারপাশের বালক-বালিকারা মানুষের সন্তান”।
[সূত্রঃ সহীহ বুখারী, হা/ ১৩৮৬, ইফাবা-১৩০৩]।
উক্ত হাদীসে এসেছে মানুষের শিশু সন্তানরা জান্নাতে ইবরাহীম 'আলাইহিস সালাম এর কাছে থাকবে।
হাদীসে শব্দ হল, মানুষ। মানুষের মাঝে মুসলিম ও বিধর্মী সবাই শামিল। এ কারণেই ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি 'আলাইহি বিধর্মীদের নাবালগ মৃত সন্তানদের জান্নাতী হবার বক্তব্যকে বিশুদ্ধ বলেছেন।
ﻭﺍﻟﺜﺎﻟﺚ ﻭﻫﻮ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﺍﻟﺬﻯ ﺫﻫﺐ ﺍﻟﻴﻪ ﺍﻟﻤﺤﻘﻘﻮﻥ
ﺍﻧﻬﻢ ﻣﻦ ﺍﻫﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ( ﺷﺮﺡ ﺍﻟﻨﻮﻭﻯ ﻋﻠﻰ ﺻﺤﻴﺢ ﻣﺴﻠﻢ - 2/337
______