মিথ্যাচারের পোস্টমর্টেমঃ কিতাবুর রুহ কী ইবনুল ক্বাইয়্যিম রহ. এর লিখা নয়?
আরব বিশ্বে কিতাবুর রুহ খুবই গুরুত্বের সাথে মুতালায়া করা হয়। এর উপর Phd (পি.এইচ.ডি.) করানো হয়।
আরবের প্রথম সারির শাইখগন এই কিতাবটি মুতালাআ করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। শামেলাতে এটিকে মৌলিক আক্বিদার কিতাবসমুহের অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়েছে।
এতদসত্ত্বেও নামধারী কতিপয় সালাফি এবং এই উপমহাদেশের দামাল লা মাযহাবি ওহাবীরা তা ইবনুল ক্বাইয়্যিম এর কিতাব নয় বলে জোড় প্রচারণা চালাচ্ছে।
আজ আমরা সেটাই দেখবো, এটা কি সত্যিই ইবনুল কাইয়্যিম এর কিতাব নাকি নয়?
স্বয়ং ইবনুল ক্বাইয়্যিম এর স্বীকারোক্তিঃ ইবনুল ক্বাইয়্যিম “কিতাবুর রুহ” কে তারই লিখা অন্য দুটি কিতাব “আল তিবইয়ান ফি আক্বসাম আল কুরআন” এবং “জালাহ আল আফহাম” এ নিজের কিতাব হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যেমনঃ ইবনুল ক্বাইয়্যিম তার “জালাহ আল আফহাম” কিতাবে আবু হুরাইরা রা. এর একটি হাদিসের আলোচনায় একটা বিষয়কে “কিতাবুর রুহের ” দিকে নিবন্ধন করেন।
সংক্ষিপ্ত আরবি ইবারতটি হলঃ
ﺍﺑﻦ ﺍﻟﻘﻴﻢ ﺭﺣﻤﻪ
ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻗﺪ ﺃﺷﺎﺭ ﺇﻟﻴﻪ ﻓﻲ ﻛﺘﺎﺏ ” ﺟﻼﺀ ﺍﻷﻓﻬﺎﻡ ” ﻓﻲ ﺍﻟﺒﺎﺏ ﺍﻟﺴﺎﺩﺱ ﻓﻲ ﻣﻌﺮﺽ ﺫﻛﺮﻩ ﻟﺤﺪﻳﺚ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ” : ﺇﺫﺍ ﺧﺮﺟﺖ ﺭﻭﺡ ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ ” … ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻓﻘﺎﻝ : ﻭﻗﺪ ﺍﺳﺘﻮﻋﺒﺖ ﺍﻟﻜﻼﻡ ﻋﻠﻰ ﻫﺬﺍ
ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻭﺃﻣﺜﺎﻟﻪ ﻓﻲ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺮﻭﺡ।
[সূত্রঃ জালাহ আল আফহাম: ৬/৬৪৭]।
এই আলোচনাটি বিস্তারিত দেখার লিংকঃ
http://www.saaid.net/Doat/Zugail/61.htm
“কিতাবুর রুহ” মুতায়ালা করার জন্য আরব আলিমদের উৎসাহ দানঃ
শাইখ ইবনে উসাইমীন এর উৎসাহ দানঃ ইবনে কাইয়্যিম এর কিতাব ‘রুহ’
( ﺍﻟﺮﻭﺡ ﻓﻲ ﺍﻟﻜﻼﻡ ﻋﻠﻰ
ﺃﺭﻭﺍﺡ ﺍﻷﻣﻮﺍﺕ ﻭﺍﻷﺣﻴﺎﺀ ﺑﺎﻟﺪﻻﺋﻞ ﻣﻦ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ )
সম্পর্কে আপনার কি মত ? এবং এই কিতাবে মৃতদের যে ঘটনাবলি লেখা হয়েছে সেগুলি কি ছহীহ?
(উত্তর) বইটিতে ভালো ভালো কথা আছে, যে ব্যক্তি বইটি পড়বে সে ইবনে কাইয়্যিম এর কথা জানতে পারবে, তবে এই বইতে যে মৃত ব্যক্তিদের ব্যাপারে স্বপ্নের বর্ণনাগুলি করা হয়েছে তাতে মানুষের মনে কবরের ভয় হতে পারে আর মানুষকে কবরের ভয় দেখানোর দরকার আছে, ভাল ঘটনাবলি মাধ্যমে। তবে এই বইয়ের ঘটনাগুলি কতটুকু সত্য তা আল্লাহ ভাল জানেন, ছহীহর কোন প্রমান নেই।
[সূত্রঃ শাইখ ইবনে উসাইমীন,
ﻓﺘﺎﻭﻯ ﻧﻮﺭ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺪﺭﺏ
ﻟﻠﻌﺜﻴﻤﻴﻦ,
২ য় খণ্ডের ৬১-৬২ পৃষ্ঠা, ফাতওয়া নং ৬৬৮]।
শাইখ বিন বায এর উৎসাহ দানঃ
সঊদী আরবের সাবেক মুফতীয়ে আ’যম (Grand Mufti) শায়খ বিন বায ওহাবী বলেছেন,
ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺮﻭﺡ ﻻﺑﻦ
ﺍﻟﻘﻴﻢ ﻛﺘﺎﺏ ﻋﻈﻴﻢ، ﻛﺘﺎﺏ ﻋﻈﻴﻢ ﺍﻟﻔﺎﺋﺪﺓ
অর্থাৎ “ইবনুল কাইয়্যিমের কিতাবুর রূহ অনেক মহান একটি কিতাব। গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুত ফায়দা ওয়ালা কিতাব।”
উল্লেখ্য, শায়খ বিন বায “কিতাবুর রূহ” এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। সকলকে মুতালা’আ (study) করতে বলেছেন। আর বলেছেন,
ﻭﻟﻜﻦ ﻟﻴﺲ ﻛﻞ ﻣﺎ ﻓﻲ
ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﺻﺤﻴﺤﺎً ؛ ﻷﻥ ﻛﻞ ﻋﺎﻟﻢ ﻳﺨﻄﺊ
অর্থাৎ “কিতাবে ইবনুল কাইয়্যিম যা বলেছেন, সবই সহীহ নয়। কেননা, সকল আলেমেরই ত্রুটি ও পদস্খলন রয়েছে।”
বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ
link-01:
link-02 :
গবেষণার দ্বারাও প্রমাণিত, কিতাবুর রুহ ইবনুল ক্বাইয়্যিম এরই কিতাবঃ
কিতাবুর রুহ” কিতাবটি ইবনুল ক্বাইয়্যিম এর লিখা কি না এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাউদ ইসলামিক ইউনিভার্সিটির অনুষদ সদস্য ড. মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-খুদাইরি বলেনঃ
ﻧﻌﻢ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻫﻮ ﻟﻺﻣﺎﻡ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﻘﻴﻢ –ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ- ، ﻭﻗﺪ ﺃﺛﺒﺖ ﺫﻟﻚ ﺟﻤﻊ ﻣﻦ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ، ﻭﻗﺪ ﺗﻢ ﺩﺭﺍﺳﺔ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻭﺗﺤﻘﻴﻘﻪ ﻓﻲ ﺭﺳﺎﻟﺔ ﺩﻛﺘﻮﺭﺍﻩ ﻣﻦ ﺟﺎﻣﻌﺔ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺳﻌﻮﺩ ﺍﻹﺳﻼﻣﻴﺔ، ﻗﺎﻡ ﺑﻬﺎ ﺩ. ﺑﺴﺎﻡ ﻋﻠﻲ ﺳﻼﻣﺔ ﺍﻟﻌﻤﻮﺵ، ﻭﻃﺒﻊ ﻋﺎﻡ
1410 ﻫـ، ﻭﺃﺛﺒﺖ ﺃﻥ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻻﺑﻦ ﺍﻟﻘﻴﻢ
অর্থঃ হ্যা, এই কিতাবটি ইবনুল ক্বাইয়্যিম এরই কিতাব যা অসংখ্য গবেষকের দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। ড. বাসাম আলি এই কিতাবটি নিয়ে ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাউদ ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করেছেন এবং PHD করেছেন। যা ১৪১০ হিঃ প্রকাশিত হয়েছে এবং যাতে প্রমাণ করা হয়েছে যে, “কিতাবুর রুহ” ইবনুল ক্বাইয়্যিম এরই লিখা কিতাব।
আরও বিস্তারিত দেখুনঃ
এই লিংকে–
কিতাবুর রুহ কী ইবনে তাইমিয়া এর সাথে সাক্ষাতের পূর্বে লিখা?
সালাফীরা একটি নিরেট মিথ্যা তথ্য সমাজে প্রচার করে নিজেদের ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে।
ইবনুল কাইয়্যিম এর কিতাবুর রুহ নাকি ইবনে তাইমিয়া এর সাথে সাক্ষাতের পূর্বে লেখা। এটি একটি ডাহা মিথ্যা কথা। বরং ইবনুল কাইয়্যিম এর আর-রুহ কিতাবটি ইবনে তাইমিয়া এর ইন্তেকালের পরে লেখা কিতাব।
নিচের ঘটনাটি থেকেই এটা স্পষ্ট সাবিত হয়, ইবনে তাইমিয়া এর ইন্তেকালের পরে ইবনুল ক্বাইয়্যিম এই কিতাবটি লিখেছিলেন।
ইবনুল কাইয়্যিম কিতাবুর রুহে লিখেছেন,
ﻭﺃﻣﺎ ﻣﻦ ﺣﺼﻞ ﻟﻪ ﺍﻟﺸﻔﺎﺀ
ﺑﺈﺳﺘﻌﻤﺎﻝ ﺩﻭﺍﺀ ﺭﺃﻯ ﻣﻦ ﻭﺻﻔﻪ ﻟﻪ ﻓﻲ ﻣﻨﺎﻣﻪ ﻓﻜﺜﻴﺮ ﺟﺪﺍ ﻭﻗﺪ ﺣﺪﺛﻨﻰ ﻏﻴﺮ ﻭﺍﺣﺪ ﻣﻤﻦ ﻛﺎﻥ ﻏﻴﺮ ﻣﺎﺋﻞ ﺇﻟﻲ ﺷﻴﺦ ﺍﻹﺳﻼﻡ ﺍﺑﻦ ﺗﻴﻤﻴﺔ ﺃﻧﻪ ﺭﺁﻩ ﺑﻌﺪ ﻣﻮﺗﻪ ﻭﺳﺄﻟﻪ
ﻋﻦ ﺷﻲﺀ ﻛﺎﻥ ﻳﺸﻜﻞ ﻋﻠﻴﻪ ﻣﻦ ﻣﺴﺎﺋﻞ ﺍﻟﻔﺮﺍﺋﺾ ﻭﻏﻴﺮﻫﺎ ﻓﺄﺟﺎﺑﻪ ﺑﺎﻟﺼﻮﺍﺏ ﻭﺑﺎﻟﺠﻤﻠﺔ ﻓﻬﺬﺍ ﺃﻣﺮ ﻻ ﻳﻨﻜﺮﻩ ﺇﻻ ﻣﻦ ﻫﻮ ﺃﺟﻬﻞ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺑﺎﻷﺭﻭﺍﺡ ﻭﺃﺣﻜﺎﻣﻬﺎ ﻭﺷﺄﻧﻬﺎ
ﻭﺑﺎﻟﻠﻪ ﺍﻟﺘﻮﻓﻴﻖ
অর্থাৎ, স্বপ্নের মাধ্যমে প্রাপ্ত ওষুধের দ্বারা আরোগ্য লাভের অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। ইবনে তাইমিয়া এর ভক্ত ছিল না, এমন অনেকেই আমার কাছে বর্ণনা করেছে, তার মৃত্যুর পরে তাকে স্বপ্নে দেখেছে। তার কাছে বিভিন্ন জটিল মাসআলা-মাসাইল জিজ্ঞাসা করেছেন। যেমন, উত্তরাধিকার (ফারাইজ) বন্টন সম্পর্কিত মাসআলা। তিনি এগুলোর সঠিক উত্তর দিয়েছেন। মোটকথা, এ বিষয়গুলি যারা অস্বীকার করে, তারা রুহ ও এর বিভিন্ন কার্য সম্পর্কে সবচেয়ে মূর্খ।
[সূত্রঃ কিতাবুর রুহ, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, পৃ.৪৮]।
সালাফীদের মিথ্যা দাবী অনুযায়ী ইবনুল কাইয়্যিম . ইবনে তাইমিয়া এর সাথে সাক্ষাতের পূর্বে যদি কিতাবুর রুহ লিখে থাকেন, তাহলে ইবনে তাইমিয়া এর মৃত্যুর পরের স্বপ্নের কথা তিনি কীভাবে কিতাবুর রুহতে নিয়ে এলেন?
_______________
বই: রূহের রহস্য (কিতাবুর রূহ/আর্ রূহ)
লেখক: হাফিয ইবনুল ক্বাইয়্যুম
ডাউনলোড লিঙ্ক: xeroxtree.com/pdf/ruher_rohosso.pdf
সাইজ 12.5 mb, পেজ: ৪১৭, ফাইল টাইপ: পিডিএফ।
______________