হাসনাইনে কারীমের মর্যাদা ও মাহাত্ম্য
(দাওয়াতে ইসলামীর সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমার সুন্নাতে ভরা বয়ান
থেকে সংকলিত)
👉 সংকলকঃ (মাসুম বিল্লাহ সানি) 
[ব্লগার, www.sunnipedia.blogspot.com, www.sunni-encyclopedia.blogspot.com ]
👉 [Apps এর বিকল্প হিসেবে এই PDF থেকে লিখা কপি করতে পারবেন]
____________________________________________



🌀 দরূদ শরীফের ফযীলতঃ ফরমানে মুস্তফা (ﷺ) : “হযরত জিব্রাইল (আঃ) আমাকে আরয করল যে, আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেছেন: হে মুহাম্মদ (ﷺ)! আপনি কি এ কথার উপর সন্তুষ্ট নন যে, আপনার উম্মত আপনার উপর একবার সালাম প্রেরণ করবে, আর আমি তার উপর দশবার সালাম প্রেরণ তথা শান্তি বর্ষণ করব?”

(নাসায়ী, ২২২ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১২৯২)


🌀 রব্বে আ’লা কি নেয়ামত পে আ’লা দরূদ,
হক্ব তাআলা কি মিন্নত পে লাখাে সালাম।

(হাদায়িকে বখশিশ)

পংক্তির ব্যাখ্যা:

হে আমার প্রিয় আক্বা (ﷺ) ! যদি আপনার পবিত্র ঠোঁটদ্বয় দ্বারা এ কথার স্বীকাররােক্তি পাওয়া যায় যে, হ্যাঁ! আপনি আমার সুপারিশ করবেন, তবে আমার গুনাহের আধিক্য আমাকে অস্থির করতে পারবে না।


🌀 ১৪ পৃরার সূরা নাহল ১২৫ নং আয়াত :

(কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আপন প্রতিপালকের পথের দিকে আহ্বান করাে পরিপক্ক কলাকৌশল ও সদুপদেশ দ্বারা) এবং

🌀 বুখারী শরীফের (৪৩৬১নং হাদীসে) বর্ণিত এই ফরমানে মুস্তফা (ﷺ) :

“অর্থাৎ- আমার পক্ষ থেকে পৌছিয়ে দাও যদিও একটি মাত্র আয়াত হয়।


মুহাররামুল হারামের বরকতময় মাস আমাদের মাঝে চলমান। এই মােবারক মাসকে আহলে বাইতে আতহার ও ইমামে আলী মাকাম, ইমাম হাসান ও ইমামে হােসাইন কারীমাঈন, সায়্যিদাঈন, শহীদাঈন কামারাঈন, মুনিরাঈন, তাইয়্যিবাইন, তাহিরাঈনদের সাথে একটি বিশেষ সম্পর্কযুক্ত। আসুন! এই বিষয়ে হাসানাঈনে করীমাঈনের শান ও মহত্ব সম্পর্কে শ্রবন করার সৌভাগ্য অর্জন করি। নবী করীম (ﷺ) এই দু’জনকে খুবই মুহাব্বত করতেন এবং তাঁদের সামন্যতম কষ্টে পতিত হওয়া দেখতে পছন্দ করতেন না।

হাসানাঈনে করীমাঈন এবং ভয়ঙ্কর অজগর !

🌀 হযরত সায়্যিদুনা সালমান ফারসী (রাঃ) বলেন: আমি হুযুর নবীয়ে করীম  (ﷺ) এর দরবারে উপস্থিত ছিলাম, হযরত সায়্যিদুনা উম্মে আইমান ও নবী করীম (ﷺ) এর কাছে আসলেন এবং আবেদন করলেন: হাসান ও হােসাইন (আঃ) হারিয়ে গেছেন। সেই সময় বেলা খুবই অতিবাহিত হয়েছিলাে। তিনি (ﷺ) সাহাবায়ে কিরামদের (রাঃ) বললেন: চলুন আমার সন্তানদের তালাশ করুন, সকলে আলাদা আলাদা রাস্তায় গেলেন আর আমি হুযুর (ﷺ) এর সাথেই চললাম। তিনি (ﷺ) চলতে থাকলেন, এমনকি আমরা একটি পাহাড়ের পাদদেশে এসে উপস্থিত হলাম। (দেখলাম) হাসান ও হােসাইন (আঃ) এক অপরকে জড়িয়ে ধরে আছেন এবং একটি অজগর তাঁদের পাশে লেজের উপর দাঁড়িয়ে আছে। আর তার মুখ দিয়ে আগুনের স্ফুলিঙ্গ নির্গত হচ্ছে। হুযুর (ﷺ) দ্রুত অগ্রসর হলে ঐ অজগরটি হুযুর (ﷺ) কে দেখে জড়সড় হয়ে পাথরের মধ্যে লুকিয়ে গেলাে। হুযুর (ﷺ) হাসানঈনে করীমাঈনের পাশে গেলেন এবং দু’জনকে পৃথক করলেন। তাঁদের চেহারা পরিস্কার করলেন এবং ইরশাদ করলেন: “আমার মা বাবা তােমাদের উপর কুরবান ! তােমরা আল্লাহ্ তাআলার কাছে কতইনা সম্মানিত।”

(মু'জামুল কবির, বাবুল হাসান বিন আলী ইবনে আবি তালিব, ৩/৬৫, হাদীস- ২৬৭৭)

🌀 এ উভয় শাহ্জাদার প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসার প্রমাণ বহন করে। যেমন-

হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ্  (ﷺ) কে আরয করা হলাে: আহলে বাইতদের মধ্যে আপনার সবচেয়ে প্রিয় কে? ইরশাদ করলেন: হাসান ও হােসাইন। তিনি (ﷺ) হযরত সায়্যিদুনা ফাতেমাতুয যাহারা (আঃ) কে ইরশাদ করতেন: আমার সন্তানদের আমার কাছে ডাকো,
অতঃপর তাঁদের ঘ্রাণ নিতেন এবং নিজের বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরতেন।
(তিরমিযী, কিতাবুল মানাকিব আন রাসূলুল্লাহ্, বাবু মানাকিব হাসান ওয়াল হােসাইন, ৫ম খন্ড, ৪২৮ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৭৯৭)

🌀 প্রখ্যাত মুফাস্সীর, হাকীমুল উম্মত, মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন এই হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় বলেন: ভালবাসার অনেক প্রকারবোদ রয়েছে:
সন্তানদের ভালবাসা এক রকম, স্ত্রীর সাথে ভালবাসা এক রকম, বন্ধু-বান্ধবের সাথে ভালবাসা এক ধরণের। সন্তানদের মধ্যে প্রিয় হলেন হযরত হাসান ও হােসাইন, পবিত্র বিবিগণের মধ্যে হযরত (সায়্যিদতুনা) আয়েশা সিদ্দিকা, প্রিয়দের মধ্যে প্রিয় আল্লাহ্ রাব্বল আলামীন, বন্ধুদের মধ্যে হযরত আবু বকর সিদ্দিক অত্যধিক প্রিয় ছিলাে।
আরাে বলেন: হুযুর (ﷺ), তাঁদের কেনইবা শুকবেন (ঘ্রাণ নিবেন) না, তাঁরা দু’জনতাে হুযুর (ﷺ) এর ফুল ছিলাে, ফুলকে তাে ঘ্রাণই নেয়া হয়। তাঁদেরকে বুকের মধ্যে লাগানাে ও জড়িয়ে ধরা অত্যধিক ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।
এ থেকে জানা গেলাে যে, ছােট শিশুদের ঘ্রাণ নেয়া, তাদের আদর করা, তাঁদের জড়িয়ে ধরা, বুকে লাগানাে, রাসূল (ﷺ) এর সুন্নাত।

(মিরআতুল মানাজিহ, ৮/৪১৮)

🌀 কিয়া বাত ওয়া উচ চমনিস্তানে করম কি,
যাহরা হে গুলে জিসমে হাসান আউর হােসাইন ফুল। (হাদায়িকে বখশিশ)

🌀 নাম, কুনিয়্যাত ও উপাধী।

হাসানাঈনে করীমাঈনদের মধ্যে বড় হলাে হযরত হাসান মুজতবা (আঃ)। তাঁর কুনিয়্যাত বা উপনাম হলাে “আবু মুহাম্মদ” এবং উপাধী “তাক্বা” ও “সায়্যিদ”। প্রকাশ “রাসূল (ﷺ) এর দৌহিত্র। তাঁকে “রাইহানাতুর রাসূল”ও বলা হয়। তিনি জান্নাতের যুবকদের সর্দার। তাঁর জন্ম তৃতীয় হিজরী ১৫ই রমজানুল মােবারক রাতে মদীনায়ে তায়্যিবায় হয়। হুযুর সায়্যিদী আলম (ﷺ) সপ্তম দিবসে তাঁর আক্বিক্বা করেন এবং মাথার চুল কর্তন করেন। আর নির্দেশ দিলেন যে, চুলের ওজনের সম পরিমাণ রূপা সদকা করা হােক।

(তারিখে খােলাফা, বাবু হাসান বিন আলী বিন আবি তালিব, ১৪৯ পৃষ্ঠা। রওজাতুশ শুহাদা সপ্তম পরিচ্ছেদ, ১ম খন্ড, ৩৯৬ পৃষ্ঠা)

🌀 তাঁর নাম রেখেছিলেন ইমামুল আম্বিয়া (ﷺ)। বিস্তারিত ঘটনা অনেকটা এ রকম, হযরত সায়্যিদাতুনা আসমা উমাইস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর দরবারে হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হাসান (আঃ) এর জন্মের সুসংবাদ পৌঁছিয়ে ছিলেন। তখন হুযুর পুরনূর (ﷺ) উপস্থিত হলেন এবং ইরশাদ করলেন: “আসমা আমার বংশধরকে নিয়ে আসাে। হযরত আসমা (রাঃ) (ইমামে হাসানকে) একটি কাপড়ে জড়িয়ে হুযুর সায়্যিদী আলম (ﷺ) এর খিদমতে উপস্থিত হলেন।
তিনি (ﷺ) ডান কানে আযান এবং বাম কানে তাকবির দিলেন। আর হযরত সায়্যিদুনা মাওলা আলীয়ুল মুরতাদ্বা (আঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন তুমি এ প্রিয় পুত্র সন্তানের কি নাম রেখেছ? বিনিত ভাবে আরয করলেন: ইয়া রাসুলাল্লাহ্ (ﷺ) আমার কেমন সাহস যে, আযান এবং অনুমতি ছাড়া নাম রেখে দেবাে। কিন্তু এবার নিজেই আরয করলেন: তবে আমি ভেবেছিলাম যে, “হারাব” নাম রাখবাে। বাকী হুযুর (ﷺ) এর মর্জি। তখন তিনি (ﷺ) তাঁর নাম “হাসান” রাখলেন।
(সাওয়ানেহে কারবালা, ৯২ পৃষ্ঠা)

🌀 ওহ হাসান মুজতবা সায়্যিদুল আসখিয়া,
রাকিবে দোশে ইজ্জত পে লাখাে সালাম।
(হাদায়িকে বখশিশ)
পংক্তির ব্যাখ্যা:
হে ইমাম হাসান মুজতবা যিনি দানবীদের সর্দার।
যিনি নিজ নানা জান এর মােবারক কাঁধে আরােহন করে ঘুরে বেড়াতেন। সেই পবিত্র সত্তার উপর লাখাে সালাম।

🌀 তাঁর ছােট ভাই সায়্যিদুশ শুহাদা, রাকিবে দেশে মুস্তফা, সায়্যিদুনা ইমাম হােসাইন (আঃ) এর জন্ম মদীনায়ে মুনাওয়ারায়।  চতুর্থ হিজরীর ৫ শাবানুল মুয়াজ্জমে হয়। হুযুর (ﷺ) তাঁর নাম “হােসাইন” ও “শাব্বির” রেখেছিলেন এবং তাঁর উপনাম “আবু আব্দুল্লাহ্”, উপাধি “সিবতে রাসূল্লাহ্” অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর দৌহিত্র এবং “রাইহানাতুর রাসূল” অর্থাৎ রাসূল (ﷺ) এর ফুল এবং তাঁর বড় ভাইয়ের মতাে তিনিও জান্নাতি যুবকদের সদর।

(আসাদুল গালিব, বাবুল হাসান, ওয়াল হােসাইন, ১১৭৩। নাল হােসাইন ইবনে আলী, ২৫,২৬ পৃষ্ঠা। সিররে আলীয়ুল নিবলা, ২৭০, আল হােসাইলুল শাহীদ, ৪র্থ খন্ড, ৪০২,৪০৪ পৃষ্ঠা)

🌀 নাম কেমন হওয়া চাই?

হযরত সায়্যিদুনা আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত; হুযুর পুরনূর (ﷺ) ইরশাদ করেন: “কিয়ামতের দিন তােমাদের নিজের এবং নিজ পূর্ব পুরুষদের নামে ডাকা হবে, তাই নিজের উত্তম নাম রাখাে।”

(সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুল আদব, বাবু ফি তাকইয়াবিল ইসমা, ৩৭৪ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪৯৪৮)

নাম সম্পর্কে আরাে মজাদার এবং অভাবনীয় বিষয় জানার জন্য মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ১৮০ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “নাম রাখনে কি আহকাম” অধ্যায়ন করুন।

হাদীসের আলােকে হাসান ও হােসাইনের ফযিলত:

🌀 হুযুর (ﷺ) এর বাণী শ্রবন করি:
"যে এই দু’জনকেই ভালবাসলাে, মূলত সে আমাকেই ভালবাসলাে এবং যে এই দু’জনের সাথে শত্রুতা পােষণ করলাে, মূলত সে আমার সাথেই শত্রুতা পােষণ করলাে।”

(ইবনে মাজাহ্, কিতাবুস সুন্নাহ্, বাবু ফি ফাযায়ীলে আসহাবে রাসূলুল্লাহ্, ১/৯৬, হাদীস- ১৪৩)

🌀 "হাসান ও হােসাইন (রাঃ) দুনিয়ায় আমার দু’টি ফুল।”

(সহীহ বুখারী, কিতাবু ফাযায়ীলে আসহাবে নবী, বাব মানাকিবে হাসান ওয়া হােসাইন, ২য় খন্ড, ৫৪৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৭৫৩)

🌀 আশিকে সাহাবা ও আহলে বাইত, ইমামে আহলে সুন্নাত, সায়্যিদী আ’লা হযরত (রহঃ) রাসুল (ﷺ) দরবারে আবেদন করেছেন:

উন দো কা সদকা জিন কো কাহা মেরে ফুল হে,
কিজিয়ে ওয়া কো হাশর মে খান্দা মিছালে গুল। (হাদায়িকে বখশিশ)

🌀 "হাসান ও হােসাইন (আঃ) জান্নাতি যুবকদের সর্দার।”

(তিরমিযী, ৫ম খন্ড, ৪২৬ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৭৯৩)

🌀 ইমাম হাসান ও ইমাম হােসাইন (আঃ) কে ভালবাসা ওয়াজিব: হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন: যখন এই আয়াতে মােবারকা নাজিল হয়:
"আপনি বলুন, আমি আমার দ্বীন প্রচারের বিনিময়ে তােমাদের নিকট থেকে কোন পারিশ্রমিক চাই না,
কিন্তু নিকটাত্মীয়ের প্রতি ভালবাসা। (সূরা শুরা ২৩)

🌀 তখন সাহাবায়ে কিরামগণ এ আবেদন করলাে: ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (ﷺ)! আপনার ঐ নিকটাত্মীয়রা কারা, যাদেরকে ভালবাসা আমাদের জন্য ওয়াজিব? হুযুর পুরনূর (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “আলীউল মুরতাদ্বা, ফাতেমাতুয যাহারা এবং তাঁদের দুই ছেলে (অর্থাৎ হযরত সায়্যিদুনা হাসান ও ইমাম হােসাইন।”

(মু'জামুর কবির, বাবুল হা, হাসান বিন আলী বিন আবি তালিব, ৩/৪৭, হাদীস- ২৬৪১)

🌀 বুলালাে হাম গরীবোঁ কো বুলালাে ইয়া রাসূলাল্লাহ! পায়ে শাব্বির ও শাব্বার ফাতেমা হায়দার মদীনে মে। (ওয়াসায়িলে বখশিশ)।

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! জানা গেল যে, আহলে বাইতের ভালবাসা ওয়াজিব এবং প্রয়ােজন।
নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত  (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "কোন বান্দা পরিপূর্ণ মু'মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে তার প্রাণের চেয়ে বেশি ভালবাসবে না।এবং আমি তার নিজ সত্ত্বর চেয়ে বেশি প্রিয় হবাে না। এবং আমার সন্তান তার নিজের সন্তান থেকে বেশি প্রিয় হবে না। এবং আমার আহলে বাইত তার আপন পরিবারের চেয়ে বেশি প্রিয় ও ভালবাসার পাত্র হবে না।”

(শুয়াবুল ঈমান, বাবু ফি হক্কুন নবী, ২/১৭৯, হাদীস- ১৫০৫)

পবিত্র আহলে বাইতের ফযীলত

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা!
🌀 পবিত্র আহলে বাইতের শানে আল্লাহ্ তাআলা পারা ২২, সূরা আহযাবের ৩৩নং আয়াতে ইরশাদ করেন:

" আল্লাহ্ তাে এটাই চান, হে নবীর পরিবারবর্গ যে, তােমাদের থেকে প্রত্যেক অপবিত্রতা দূরীভূত করে দেবেন এবং তােমাদেরকে পবিত্র করার মত পবিত্র করবেন।





🌀 অধিকাংশ মুফাসরিনে কিরামের মতে এই আয়াতে মােবারকা হযরত সায়্যিদুনা আলীউল মুরতাদ্বা, হযরত সায়্যিদাতুনা ফাতেমা যাহরা (আঃ) , হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হাসান (আঃ) এবং হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হােসাইন (আঃ) দের শানে নাযিল হয়েছে। ইমাম আহমদ (রহঃ) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন; এই আয়াত পাঞ্জাতন পাকের শানে নাযিল হয়। পাঞ্জাতন দ্বারা উদ্দেশ্য হুযুর নবী করীম (ﷺ)  এবং হযরত আলী, হযরত ফাতেমা, হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমা হােসাইন (আঃ) ।

[ইমাম নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী (রহঃ) - সাওয়ানেহে কারবালা, ৭৯,৮০]

🌀 অন্য এক বর্ণনায় এও রয়েছে যে, হুযুর (ﷺ) এদের সাথে নিজের অন্য শাহজাদা আর নিকটাত্মীয় এবং পবিত্র বিবিদেরও অন্তর্ভুক্ত করেন।

(আস সাওয়ায়েকে মুহরিকা আল বাবুল হাদী আশার, ফসলুল আউয়াল, ১৪৪ পৃষ্ঠা)

🌀 আয়াতে মােবারকার তাফসীরে ইমাম তাবারানী (রহঃ) বলেন: অর্থাৎ হে আলে রাসূল (ﷺ)! আল্লাহ্ তাআলা চায় যে, আপনাদের নিকট থেকে মন্দ কথা, খারাপ বিষয় সমূহ দূরে রাখবেন এবং আপনাদের গুনাহের ময়লা আবর্জনা থেকে পুতঃ পবিত্র করে দেবেন।

(তারাবানী, পারা- ২২, আহযাব, আয়াত- ৩৩, ১০ম খন্ড, ২৯৬ পৃষ্ঠা)

🌀 সদরুল আফাযীল ইমাম সায়্যিদ মুফতি মুহাম্মদ নাঈম উদ্দিন মুরাদাবাদী (রহঃ) বলেন:

এই আয়াত আহলে বাইতে কিরামদের ফযীলতের উৎস এবং জানা গেল যে, সকল মন্দ চরিত্র এবং অবস্থা থেকে এদের বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। অনেক হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, আহলে বাইত জাহান্নামের জন্য হারাম (অর্থাৎ আহলে বাইতরা জান্নাতি) এবং এটাই সেই পবিত্রকরণের উপকারীতা এবং এটিই পরিণাম। আর যা তাঁদের পবিত্র অবস্থার যােগ্য নয় তা থেকে আল্লাহ্ তাআলা তাঁদের বাঁচিয়ে রাখতেন।

(ইমাম নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী (রহঃ) - সাওয়ানেহে কারবালা, ৮২ পৃষ্ঠা)

🌀 হযরত সায়্যিদুনা আবু হােরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত; একদা তাজেদারে রিসালাম, শাহানশাহে নবুয়ত, নবীয়ে রহমত (ﷺ) এর সাথে ইশার নামায আদায় করছিলাম। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) যখন সিজদায় গেলেন তখন ইমাম হাসান ও ইমাম হােসাইন (আঃ) হুযুর পুরনূর (ﷺ) এর পিঠ মােবারকে আরােহন করলেন। তিনি (ﷺ) সিজদা থেকে মাথা উঠালেন তখন তাদেরকে নম্রভাবে ধরে জমিনে বসিয়ে দিলেন। অতঃপর যখন তিনি (ﷺ) দ্বিতীয়বার সিজদায় গেলেন তখন ইমাম হাসান ও ইমাম হােসাইন (আঃ) দ্বিতীয়বার এমনই করল, এমনকি তিনি (ﷺ) নামায পরিপূর্ণ করলেন এবং তাঁরা উভয়কে আপন রান মােবারকে বসালেন।

(মুসনদে আহমদ, আবু হােরাইরা, ৩/৫৯৩, হাদীস- ১০৬৬৪, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৫/৫১৬)

🌀 এভাবে শৈশবকালে একবার খুতবা চলাকালীন উভয় শাহ্জাদা মসজিদে আগমন করলেন, তখন নবী করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) খুতবা বন্ধ রেখে তাঁদের নিকট গেলেন এবং তাদেরকে উঠিয়ে নিজের সামনে বসালেন।

(তিরমিযী, ৫ম খন্ড, ৪২৯ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৭৯৯)

🌀 হুযুর পুরনূর (ﷺ) এর ইমাম হাসানের প্রতি বিশেষ মুহাব্বত

হযরত সায়্যিদুনা ওরওয়াহ বিন যুবাইর (রাঃ) নিজের পিতা থেকে বর্ণনা করেন: একবার ছরকারে দো’আলম, নূরে মুজাস্সম (ﷺ) ইমাম হাসান (আঃ) কে চুমু দিলেন, তাঁর ঘ্রাণ নিলেন এবং বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন ঐ সময় তিনি (ﷺ) এর পাশে এক আনছারী সাহাবী দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ওনাকে ইমাম হাসান (আঃ) এর প্রতি এমন মুহাব্বত দেখে আরয করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (ﷺ) ! আমার একটি ছেলে আছে। সে এখন বালেগ হয়েছে। কিন্তু আমি তাকে কখনাে চুমু দিয়নি। তিনি (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “যদি আল্লাহ্ তাআলা তােমার অন্তর থেকে মুহাব্বত তুলে নেয়, তবে এতে আমার কি করার আছে।”

(আল মুস্তাদরাক, মিন ফাযায়ীলিল হাসান বিন আলী, ১ম খন্ড, ৪র্থ খন্ড, ১৬১ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪৮৪৬)

🌀 আ’লা হযরত (রহঃ) এর রিসালা “আওলাদ কি হুকুক” যেটা মাকতাবাতুল মদীনা থেকে সহজভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। এটির অধ্যয়নও উপকারী সাবস্ত হবে আসুন! এখন শুনি, বাচ্চাদের খুশি করার কি ফযীলত। যেমন

🌀 হযরত সায়্যিদুনা আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) বর্ণনা করেন; মদীনার তাজেদার, রাসূলদের সরদার, হুযুরে আনওয়ার (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “নিঃসন্দেহে জান্নাতে একটি ঘর রয়েছে, যাকে “আল ফারহ্” বলা হয়। তাতে ঐ সকল লােক প্রবেশ করবে যারা বাচ্চাদেরকে খুশি করে থাকে।”

(জামে সগীর, ১৪০ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৩২১)

🌀 আ’লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ ওয়া খাঁন (রহঃ) এক প্রশ্নের জবাবে পিতার উপর সন্তানদের হক সমূহ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন: পিতা আল্লাহর এ আমানতের সাথে স্নেহ ও মমতা সহকারে আচরণ করবে। তাদেরকে মুহাব্বত করবে। শরীরের সাথে লাগাবে, কাঁধের উপর আরােহন করাবে। তাদের সাথে খেলা করা, আনন্দ দানকারী কথাবার্তা, তাদের মনখুশি, মনে আনন্দ প্রদান, লালন পালন, সুরক্ষার ব্যাপারে সর্বদা এমনকি নামায ও খুতবায়ও খেয়াল রাখবে, নতুন ফল-ফলাদি তাদেরকে দিবে। কেননা, তারাও তাজা ফল, নতুনকে নতুন জিনিস দেয়া যথাযথ। কখনাে কখনাে সামর্থ্য অনুযায়ী তাদেরকে শিরনী ইত্যাদি খাওয়ানাে। পরিধানের জন্য, খেলার জন্য জিনিস (যা) শরয়ীভাবে বৈধ দিতে থাকুন। খুশী প্রদানের জন্য মিথ্যা ওয়াদা করবেন না বরং বাচ্চাদের সাথে ঐ ওয়াদা করবেন, যা করার ইচ্ছা রাখবে। বাচ্চা বেশি হলে তবে যে জিনিস দিবেন। সবাইকে সমান ও এক রকম দিবেন। এককে অপরের উপর অনর্থক (ধর্মীয়ভাবে মর্যাদা প্রদান ব্যতীত) প্রাধান্য দিবেন না।

(ফতােওয়ায়ে রবীয়া, ২৪/৪৫৩)

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আসুন! নবী করীম (ﷺ) এর হাসানাঈনে করীমাঈনের প্রতি মুহাব্বতের আরেকটি দিক শুনি। যেমনঃ

🌀 হুযুর (ﷺ) এ হাসানাঈনে করীমাঈনকে ফুক দিতেন:

হযরত সায়্যিদুনা ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত; রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সম (ﷺ) হযরত সয়্যিদুনা ইমাম হাসান ও ইমাম হােসাইন (আঃ) কে কলেমাতে তাউয (নিরাপত্তার বাক্য সমূহ) সহকারে ফুক দিতেন। তিনি (ﷺ) ইরশাদ করেন: “তােমাদের সম্মানীত দাদাজান অর্থাৎ হযরত ইসহাক (আঃ) এসব কলেমা (বাক্য) দ্বারা ফুঁক দিতেন।
অর্থাৎ আমি আল্লাহ তাআলার পরিপূর্ণ বাক্য সমূহের মাধ্যমে সমস্ত শয়তান ও বিষাক্ত জন্তু এবং সকল বদনযর থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”

(বুখারী, কিতাবুল আহাদীসুল আম্বিয়া, ২/৪২৯, হাদীস- ৩৩৭১)

🌀 প্রসিদ্ধ মুফাস্সীর হাকীমুল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন (রহঃ) এ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় বলেন: কলেমাতুল্লাহ্ (আল্লাহর কলেমা সমূহ) দ্বারা উদ্দেশ্য আল্লাহ্ তাআলার সকল নাম)। কেননা, তা সকল অপূর্ণতাও ক্ষতি থেকে পবিত্র। এজন্য সেগুলােকে পরিপূর্ণ ও স্বয়ং সম্পূর্ণ বলা হয়। যেভাবে আল্লাহ্ তাআলার আশ্রয় প্রার্থনা করা জরুরী সেভাবে তাঁর নাম মােবারকের মাধ্যমেও আশ্রয় প্রার্থনা করা উচিৎ। আরাে বলেন: জ্বিন ও বদনারের মাধ্যমেও মানুষ অসুস্থ হয়ে যায়। জ্বিনের প্রভাব কুরআন দ্বারা সাব্যস্ত।

(মিরআতুল মানাজিহ, ২য় খন্ড, ৪০৯ পৃষ্ঠা)

কুরআন শরীফে রােগ সমূহের আরােগ্য রয়েছে:

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! বর্ণিত ঐ হাদীস শরীফ দ্বারা ফুক ইত্যাদির বৈধতার প্রমাণ পাওয়া যায়। আমাদের প্রিয় আক্বা (ﷺ) নিজের নাতিদেরকে ফুক দিতেন। কুরআনুল করীমের আয়াতে মােবারকার মাধ্যমে রােগীদের উপর পাঠ করে ফুক দেওয়া সম্পর্কিত অনেক বর্ণনা বিদ্যমান রয়েছে। এমনকি

🌀 উম্মুল মু'মিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) বর্ণনা করেন: যখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর পরিবার বর্গের মধ্যে কেউ অসুস্থ হতাে তখন তিনি (ﷺ) তার উপর সূরা নাস এবং সূরা ফালাক্ব পাঠ করে ফুক দিতেন।

(মুসলিম, কিতাবুস সালাম, বাবু রকিয়াতুল মরিয বিল মাওয়াত, ওয়ান নফছ, ১২০৫ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২১৯২)।

🌀 আ’লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ ওয়া খাঁন (রহঃ) বলেন: বৈধ তাবীজ যা কুরআন শরীফ বা আল্লাহর নাম সমূহ বা যিকির ও দোয়া সম্বলিত হয়ে থাকে, সে তাবীজ ব্যবহারে কোন সমস্যা নেই বরং মুস্তাহাব। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এমন পরিস্থিতিতে ইরশাদ করেছেন যে,
"যে ব্যক্তি আপন মুসলমান ভাইয়ের উপকার সাধন করতে পারে (তবে তাকে) উপকার করা উচিৎ।"

(মুসলিম, কিতাবুস সালাম, বাবু ইসতিহবাবু রুকাইয়াতু মিনাল আইন... ১২০৭ পৃষ্ঠা, ফতােওয়ায়ে আফ্রিকা, ১৬৮ পৃষ্ঠা)

অবশ্য শরীয়াত বিরােধী তাবীজ সমূহ এবং শরয়ী বিরুদ্ধ বাক্য সমূহ দ্বারা ফুক দেয়া অবৈধ যেমন-

🌀 আ’লা হযরত (রহঃ) বলেন: তা উদ্দেশ্য যার জন্য ঐ তাবীজ বা আমল করা হয়। যদি তা শরীয়াত বিরুদ্ধ হয়, অবৈধ হয়ে যাবে। যেমন মহিলারা স্বামীকে বশ করার জন্য তাবীজ করিয়ে থাকে। এটা শরীয়াতের হুকুমের বিপরীত। একইভাবে পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া তথা বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করার জন্য আমল ও তাবীজ (স্বামী, স্ত্রীর) মধ্যে বিশৃংখলা সৃষ্টি করাও হারাম।

 (ফতওয়ায়ে রযবীয়া, ২৪তম খন্ড, ১৯৬ পৃষ্ঠা)

🌀 আশিকে সাহাবা ও আহলে বাইত, আ’লা হযরত (রহঃ) লিখেন:

মাদুম না থা ছায়াহে শাহে ছাকলাঈন, উছ নূর কি জালওয়া গাহ্ থে জাতে হাসানাঈন।
তামছিল নে উছ ছায়া কে দো হিচ্ছে কি,
আধে ছে হাসান বনি হে আধে ছে হােসাইন।

চার লাইনের ব্যাখ্যা:

এমনিতে তাে সুলতানে মদীনা (ﷺ) এর মােবারক ছায়া সূর্যের কিরণ ও চাঁদের আলাের মাধ্যমে জমিনে পড়েনি। কিন্তু যখন তাঁর ছায়ার সমূদ্র হাসানাঈনে করীমাঈনের (আঃ) দের উপর পড়ল তাে বক্ষ পর্যন্ত ইমাম হাসান মুজতাবা (আঃ) তিনি (ﷺ) এর সাথে সাদৃশ্য হয়ে গেল এবং ইমাম হােসাইন (আঃ) তিনি (ﷺ) এর বক্ষ থেকে পা পর্যন্ত সাদৃশ্য হয়ে গেল।

🌀 কসীদায়ে নূরের মধ্যে সায়্যিদী আ’লা হযরত লিখেনঃ

এক সীনা থক মুশাবা এক ওয়াহা ছে পায়াে থক, হুসনে সবতিন উনকি জামাে মে হে নিমা নূর কা।
ছাফ শেকলে পাক হে দুনাে কে মিলনে ছে ইয়া,
খতে তাওয়াম মে লিখা হে ইয়ে দো ওয়ারকা নূর কা।

স্মরণ রাখবেন! সায়্যিদী আ’লা হযরত (রহঃ) এর পংক্তি সমূহ কুরআন ও হাদীসের অনুবাদের আলােকে এবং বুযুর্গদের বাণী ও স্থান অনুযায়ী। আ’লা হযরত (রহঃ) হাসানাঈনে করীমাঈন (আঃ) দের প্রিয় আক্বা (ﷺ) এর প্রতি সাদৃশ্যটা এমনিতে লিখে দেননি। বরং তিরমিযী শরীফের মধ্যে রয়েছে।

সায়্যিদুল আউলিয়া, মাওলা মুশকিল কুশা, শেরে খােদা হযরত সায়্যিদুনা আলী মুরতাজা (ﷺ) বলেন: ইমাম হাসান (আঃ) বক্ষ ও মাথার মধ্যভাগ মাহবুবে রহমান (ﷺ) এর সাথে খুবই সদৃশ ছিল এবং ইমাম হােসাইন (আঃ) বক্ষ থেকে নিচ অংশ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর সাথে খুবই সদৃশ্য ছিল। | প্রসিদ্ধ মুফাস্সীর, হাকীমুল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন (রহঃ) এই হাদীসে পাকের ব্যাখ্যায় বলেন: স্মরণ রাখবেন! হযরত ফাতেমা যাহরা (আঃ) মাথা থেকে পা পর্যন্ত অবিকল মুস্তফা (ﷺ) এর সদৃশ্য ছিলেন এবং তিনি (আঃ) এর পুত্রগণ অর্থাৎ হাসানাঈনে করীমাঈন উভয়ের মধ্যে এই সাদৃশ্যতা বন্টন করে দেওয়া হয়েছে। হযরত ইমাম হােসাইনের পায়ের গােচা থেকে গােড়ালী পর্যন্ত সম্পূর্ণ হুযুর (ﷺ) এর সাথে সাদৃশ্য পূর্ণ ছিল। হুযুর (ﷺ) এর সাথে কুদরতী সাদৃশ্যটাও আল্লাহ্ তাআলার নেয়ামত এবং যে আমলটি হুযুরের সাথে সাদৃশ্য হয় তাে তার ক্ষমা হয়ে যায়, তবে যাকে আল্লাহ্ তাআলা তাঁর মাহবুবের সাথে সাদৃশ্য করেছেন। তাহলে তার প্রতি ভালবাসার কি অবস্থা হবে।

(মিরআত শরহে মিশকাত, ৮ম খন্ড, ৪৮০ পৃষ্ঠা)

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর ইন্তেকালের পরেও সাহাবীগণ (রাঃ) তিনি (ﷺ) এর পরিবারবর্গ বিশেষ করে হাসানাঈনে করীমাঈনদের খুব বেশি দেখাশুনা করতেন।

🌀 ইমাম হাসানের প্রতি সিদ্দিকে আকবর (রাঃ) এর ভালবাসা

হযরত সায়্যিদুনা আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) যখন আমীরুল মু'মিনীন ও খলিফাতুল মুসলীমিনের সিংহাসনের আসনে আসীন হলেন। তখন রাসূলে করীম (ﷺ) এর প্রতি সম্পর্কের কারণে তিনি (ﷺ) পবিত্র আহলে বাইতগণের খুবই দেখাশুনা করতেন এবং আহলে বাইতের ব্যাপারে বলতেন: নবী করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) এর আত্মীয় স্বজন আমার কাছে আমার আত্মীয়স্বজনের চেয়ে অধিক প্রিয়।

(বুখারী, কিতাবুল মগজী, বাব হাদীস বনি নদ্বীর, ৩য় খন্ড, ২৯ পৃষ্ঠা, হাদীস-৪০৩৬)

🌀 ইমাম হােসাইনের প্রতি ফারুকে আযম (রাঃ) এর অকৃত্রিম ভালবাসা

হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হােসাইন (আঃ) বলেন: আমি একদিন আমীরুল মু'মিনীন হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম (রাঃ) এর ঘরে গেলাম, কিন্তু তিনি  হযরত আমীরে মুয়াবিয়া (রাঃ) এর সাথে আলাদা ভাবে আলােচনায় ব্যস্ত ছিলেন এবং ওনার ছেলে আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) দরজায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর সে ফিরে আসতে লাগল, তখন তার সাথে আমিও ফিরে আসতে লাগলাম। পরে আমীরুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম (রাঃ) এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে আমি বললাম: হে আমীরুল মু'মিনীন! আমি আপনার নিকট এসে ছিলাম। কিন্তু আপনি হযরত আমীরে মুয়াবিয়া (রাঃ) এর সাথে আরােচনায় ব্যস্ত ছিলেন। (আমি ভেবেছিলাম যখন ছেলের ভিতরে যাবার অনুমতি নেই সেখানে আমার কিভাবে?) এই কারণে আমিও তার সাথে ফিরে এসেছি। তখন ফারুকে আযম (রাঃ) বললেন: হে আমার পুত্র হােসাইন! আমার সন্তানের চেয়ে অধিক হকদার এই কথার উপর যে আপনি ভিতরে চলে আসবেন। আর আমাদের মাথায় যে চুল রয়েছে, আপনাদের সদকায় তাে সব কিছু উৎপন্ন হয়।

(তারিখ ইবনে আসাকির, ১৪তম খন্ড, ১৭৫ পৃষ্ঠা)

🌀 ইমাম হাসানের প্রতি শেরে খােদার ভালবাসাঃ

হযরত সায়্যিদুনা আসবাগ বিন নুবাতা (রাঃ) বলেন: একবার হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হাসান মুজতবা (আঃ) অসুস্থ হয়ে পড়লেন, তখন হযরত সায়্যিদুনা আলী মুরতাজা (আঃ) তাঁর সেবায় তাশরীফ নিয়ে গেলেন। আমিও তাঁর সাথে সেবার জন্য গেলাম। হযরত সায়্যিদুনা আলী মুরতাজা (আঃ) তাঁর অবস্থা জিজ্ঞাসা করে বললেন: হে রাসূলের নাতি! আপনার অবস্থা কেমন? উত্তর দিলেন: ভাল আছি। তিনি বললেন: যদি আল্লাহ্ তাআলা চান। তাে ভাল হয়ে যাবেন। তার পর হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হাসান (রাঃ) আরজ করলেন: আমাকে হেলান দিয়ে বসান। হযরত সায়্যিদুনা আলী (রাঃ) তাঁকে বুকে ঠেস লাগিয়ে বসিয়ে দিলেন। তারপর হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হাসান (রাঃ) বললেন:

একদিন আমাকে নানাজান, রহমতে আলামীন (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “হে আমার পুত্র! জান্নাতে একটি গাছ রয়েছে়। পরীক্ষায় নিমজ্জীত লােকদের কিয়ামতের দিন ঐ বৃক্ষের নিচে একত্রিত করা হবে। ঐ সময় তখন না মীযান রাখা হবে না আমল নামা খােলা হবে। তাদেরকে পরিপূর্ণ ভাবে প্রতিদান দেওয়া হবে।” তার পর ছরকারে দো’আলম (ﷺ) এই আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করেন:
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ:
"ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের প্রতিদান পরিপূর্ণ ভাবে দেওয়া হবে অগণিত ভাবে।" (যুমর, আয়াত- ১০)

(কিতাবুদ দোয়া লিত তাবারানী, ৩৪৭ পৃষ্ঠা)

🌀 আল্লাহ্ তাআলার মাহবুব (ﷺ) ইরশাদ করেন: “যখন কিয়ামতের দিন রােগী ও মুসীবত গ্রস্থদেরকে সাওয়াব প্রদান করা হবে, তখন সুস্থ লােকেরা প্রত্যাশা করবে, হায়! দুনিয়ার মধ্যে যদি আমাদের চামড়া কাঁচি দিয়ে কাটা হতাে।”

(সুনানে তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ১৮০ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৪১০)

🌀 প্রসিদ্ধ মুফাসসীর হকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন (রহঃ) এই হাদীসে পাকের শব্দ; “হায়! দুনিয়াতে আমাদের চামড়া কাঁচিতে কেটে যেত” এই ব্যাপারে বলেন: অর্থাৎ প্রত্যাশা ও আখাঙ্ক্ষা করবে যে, আমাদের উপরও দুনিয়ায় এই ধরণের রােগ এসে যেত, তবে আমরাও ঐ সাওয়াব আজ পেতাম। যা অন্য রােগাক্রান্ত ও বিপদগ্রস্থ ব্যক্তি পাচ্ছে।
(মিরআত, ২য় খন্ড, ৪২৪ পৃষ্ঠা)

🌀 কাফেরদের প্রফুল্ল্য জীবনের হিকমত:

অনেক সময় মুসলমান নিজের রিক্তহস্ততা ও কাফেরদের আরাম আয়েশ ও প্রফুল্ল্য জীবন দেখে কুমন্ত্রণার স্বীকার হয়ে যায় এবং তার মনে বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন সৃষ্টি হয়। অথচ এতে আল্লাহ্ তাআলার অনেক বড় হেকমত গােপন রয়েছে। হযরত সায়্যিদুনা ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন: এক নবী (আঃ) আল্লাহ্ তাআলার দরবারে আরয করলেন: হে আমার প্রতিপালক! মুমিন বান্দা তােমার অনুসরণ করে এবং তােমার নাফরমানী থেকে বেঁচে থাকে। আর কাফের তােমার অনুসরণ করে না, বরং তােমার নাফরমানির উপর সাহস করে থাকে। কিন্তু তাকে মুসীবত থেকে দূরে রাখ এবং তার জন্য দুনিয়াকে প্রশস্থ করে দাও। (এতে কি হিকমত রয়েছে) আল্লাহ্ তাআলা তাঁর উপর ওহী অবতরণ করলেন: বান্দাও আমার, আর মুসীবতও আমার ইচ্ছাধীন এবং সকলে আমার প্রশংসার সাথে আমার তাসবীহ করে থাকেন।
মুমিনীনের দায়িত্বে যে গুনাহ রয়েছে তা আমি দুনিয়াতে দূরীভূত করে তাকে পরীক্ষায় পতিত করি। আর এই পরীক্ষা ও মুসীবত তার গুনাহর কাফফারা হয়ে যায়। এমনকি সে যখন আমার সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন আমি তাকে নেকীর পুরস্কার দেব আর কাফেরের দুনিয়াবী ভাবে কিছু নেকী হয়ে থাকে, তবে আমি তার জন্য রিযিক প্রশস্থ ও মুসীবতকে দূরে রাখি, আর এই ভাবে আমি তার নেকীর পুরস্কার দুনিয়াতে দিয়ে দিই। এমনকি সে যখন আমার সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন তার গুনাহের কারণে তাকে শাস্তি দিব।

🌀 হাসানাঈনে করীমাঈনগণের একে অপরের প্রতি ভালবাসাঃ

হযরত সায়্যিদুনা আবু হােরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “কোন মুসলমানের জন্য এই ব্যাপারটি জায়েয নেই যে সে তার নিজের ভাইয়ের সাথে তিনদিন ও তিনরাতের চেয়ে বেশি সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করবে। এদের মধ্যে যে কথা বলার জন্য এগিয়ে আসবে, সে জান্নাতে যাওয়ার সময় অগ্রগামী হবে। হযরত আবু হােরাইরা (রাঃ) বলেন: আমার নিকট এই কথা পৌঁছেছে যে হযরত হাসানাঈনে করীমাঈগণ একে অপরের সামান্য মন মালিন্য হয়ে গেছে। আমি ইমাম হােসাইন (রাঃ) এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করলাম: লােকেরা আপনাদের অনুসরণ করে, আর আপনারা একে অপরের প্রতি অসন্তুষ্ট, সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন। আপনি এখনি ইমাম হাসান (রাঃ) এর কাছে যাবেন এবং তাঁকে সন্তুষ্ট করবেন। কেননা, আপনি তাঁর ছােট, ইমাম হােসাইন (রাঃ) বলেন:
যদি আমি নবী করীম (ﷺ) কে এটা ইরশাদ করতে না শুনতান যে, “যখন দুই ব্যক্তির মাঝে যখন সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তবে তাদের মধ্যে যে কথাবার্তা প্রথমে শুরু করবে সে প্রথমে জান্নাতে যাবে।” আমি সাক্ষাৎ করার জন্য অবশ্যই প্রথমে যেতাম কিন্তু আমি এই কথাকে পছন্দ করব না যে, তাঁর আগে আমি জান্নাতে চলে যাবাে।
হযরত আবু হােরাইরা (রাঃ) বলেন: এর পরে আমি হযরত ইমাম হাসান (রাঃ) এর দরবারে উপস্থিত হই, আর তাঁকে সমস্ত ঘটনা শুনালাম। ইমাম হাসান (রাঃ) বললেন: ইমাম হােসাইন যে কথাই বলেছে, তাই সঠিক তারপর তিনি ইমাম হােসাইন (রাঃ) এর নিকট তাশরীফ নিলেন। তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করলেন, আর এ ভাবেই দুই ভাই আপােষ করে নিলেন।
(যখায়েরিল ওবাবা, ২৩৮ পৃষ্ঠা)

সম্পর্ক ছিন্নকারী ক্ষমা থেকে বঞ্চিত।

🌀 ফরমানে মুস্তফা (ﷺ) “সােমবার ও বৃহস্পতিবার আল্লাহ্ তাআলার সামনে লােকদের আমল পেশ করা হয়। তখন আল্লাহ্ তাআলা পরস্পর শত্রুতা ও সম্পর্ক ছিন্নকারীদের ছাড়া বাকী সবাইকে ক্ষমা করে দেন।”

(মুজামুল কবির লিত তাবারানী, ১ম খন্ড, ১৬৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪০৯)

🌀 হযরত সায়্যিদুনা আমশ (রাঃ) থেকে বর্ণিত; হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) একবার সকালে মজলিশে তাশরীফ আনলেন, তিনি বললেন: আমি সম্পর্ক ছিন্নকারীকে আল্লাহ্ তাআলার শপথ দিচ্ছি! সে যেন এখান থেকে উঠে যায়। কেননা, আমরা আল্লাহ্ তাআলার কাছে মাগফিরাতের দোয়া করব। আর সম্পর্ক ছিন্নকারীর জন্য আসমানের দরজা বন্ধ থাকে এবং সে যদি এখানে অবস্থান করে, তাহলে রহমত বর্ষণ হবে না আর আমাদের দোয়া কবুল হবে না।

(আল মুজামুল কবির, ৯ম খন্ড, ১৫৮ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৮৭৯৩)।

অসন্তুষ্ট আত্মীয়দের সাথে আপােষ করে নিন।

🌀 হুযুর পুরনূর (ﷺ) ইরশাদ করেন:
"যে আল্লাহ্ তাআলার জন্য বিণয় অবলম্বন করে, আল্লাহ্ তাআলা তাকে মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।”
(শুয়াবুল ঈমান)

🌀 হযরত সায়্যিদুনা ফকীহ আবুল লাইছ ছমরকন্দি (রহঃ) বলেন:
"আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষার মধ্যে ১০টি উপকার রয়েছে:
* আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন হয়,
* লােকদের খুশির কারণ হয়,
* ফেরেস্তারা খুশি হন,
* মুসলমানদের পক্ষ থেকে ঐ ব্যক্তির প্রশংসা হয়,
* শয়তান এতে কষ্ট পায়,
* হায়াত বৃদ্ধি হয়,
* রিযিকে বরকত হয়,
* মৃত বাবা-মা খুশি হন,
* একে অপরের প্রতি ভালবাসা বৃদ্ধি হয়,
* মৃত্যুর পর তার সাওয়াবের মধ্যে বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। কেননা, লােকেরা তার হকের মধ্যে দোয়া করে থাকেন।

(তাম্বীহুল গাফেলীন, ৭৩ পৃষ্ঠা)

🌀 তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যে (ব্যক্তি) আমার সুন্নাতকে ভালবাসল সে (মূলত) আমাকে ভালবাসল আর যে আমাকে ভালবাসল, সে জান্নাতে আমার সাথে থাকবে।”
(মিশকাতুল মাসাবিহ, ১ম খন্ড, ৫৫ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১৭৫)

আংটি পরিধানের মাদানী ফুল:

🌀 পুরুষের জন্য স্বর্ণের আংটি পরিধান করা হারাম। (অপ্রাপ্তবয়স্ক) ছেলেকে স্বর্ণ-রৌপ্যের অলংকার পরানাে হারাম। যে ব্যক্তি পরাবে সে গুনাহ্গার হবে। লােহার আংটি জাহান্নামীদেরই অলংকার।

(তিরমিযী, ৩য় খন্ড, ৩০৫ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১৭৯২)

🌀 পুরুষদের জন্য সেরূপ আংটিই জায়েয যেগুলাে (লেডিস ষ্টাইলের নয়) জেন্টস ষ্টাইলের। অর্থাৎ তা হবে কেবল এক পাথর বিশিষ্ট। আর যদি তাতে একের অধিক (কয়েকটি) পাথর থাকে, তাহলে তা রূপার হয়ে থাকলেও পুরুষদের জন্য নাজায়েয।
(রদুল মুহতার, ৯ম খন্ড, ৫৯৭ পৃষ্ঠা)

★ পাথর বিহীন আংটি পরিধান করা নাজায়েয। কেননা, এটি কোন আংটি নয়, বরং রিং।

★ হুরূফে মুকাত্তাআত-খুদিত (পবিত্র কুরআন শরীফের বিভিন্ন সূরার প্রারম্ভিক বিচ্ছিন্ন বর্ণ-খুদিত) আংটি ব্যবহার করা জায়েয। কিন্তু হুরূফে মাকাআত-খুদিত আংটি অযুবিহীন অবস্থায় পরিধান করা, স্পর্শ করা অথবা মুসাফাহাকালে হাত মিলানাে ব্যক্তিটির এই আংটিখানা অযুবিহীন অবস্থায় স্পর্শ হয়ে যাওয়া জায়েয নেই।) অনুরূপ পুরুষদের জন্য একাধিক (জায়েয) আংটি পরিধান করা কিংবা (একাধিক) রিং পরিধান করা নাজায়েয।

★ এক পাথর বিশিষ্ট রূপার একটি আংটি যদি ৪ গ্রাম ৩৭৪ মিলিগ্রাম হতে কম ওজনের হয়ে থাকে তাহলে সেটি পরিধান করা জায়েয। যদিও তা মােহরের প্রয়ােজনে না হয়ে থাকে। কিন্তু তা পরিহার করা (অর্থাৎ যার ষ্টাম্পের প্রয়ােজন নেই, তার পক্ষে জায়েয আংটিও পরিধান না করাই) উত্তম। আর (যাকে আংটি দিয়ে ছাপ দিতে হয় অর্থাৎ আংটিকে মােহর হিসাবে ব্যবহার করতে হয়, তার পক্ষে) মােহরের প্রয়ােজনে কেবল জায়েযই নয় বরং সুন্নাত।

★ অবশ্য অহংকার প্রদর্শনের জন্য কিংবা মেয়েদের মত টিপ-টাপ ষ্টাইলের অথবা অন্য কোন ঘৃনিত উদ্দেশ্যে একটি আংটিই বা কেন, এরূপ উদ্দেশ্য নিয়ে তাে স্বাভাবিক কাপড়চোপড় পরিধান করাও নাজায়েয।

(ফতওয়ায়ে রবীয়া, ২২তম খন্ড, ১৪১ পৃষ্ঠা)

★ দুই ঈদে আংটি পরিধান করা মুস্তাহাব।

(বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৭৯, ৭৮০ পৃষ্ঠা)

★ আংটি পরিধান করা কেবল তাদের জন্যই সুন্নাত, যাদের মােহর করার প্রয়ােজন রয়েছে (অর্থাৎ ষ্টাম্প হিসাবে ব্যবহার করার)। যেমন; সুলতান, কাজী, আলিম-ওলামা যাঁরা ফতােয়ায় মােহর ব্যবহার করেন। এরা ব্যতীত অন্যান্যদের জন্য যাদের মােহরের প্রয়ােজন নেই, তাদের জন্য সুন্নাত নয়। অবশ্য পরিধান করা জায়েয।
(আলমগিরী, ৫ম খন্ড, ৩৩৫ পৃষ্ঠা)

★ মান্নতের কিংবা ফুক দেওয়া ধাতুর (METAL) তৈরি চেইন পুরুষের পক্ষে পরিধান করা নাজায়েয ও গুনাহ্। অনুরূপ ভাবে মদীনা মুনাওয়ারা কিংবা আজমীর শরীফের রূপার অথবা অন্য যেকোন ধাতুর রিং এবং ষ্টাইল করে তৈরি করা আংটি পরাও জায়েয নেই।

★ অসংখ্য সুন্নাত শিখার জন্য মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ২টি কিতাব
(১) ৩১২ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “বাহারে শরীয়াত” ১৬তম খন্ড
(২) ১২০ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব ‘সুন্নাত ও আদব হাদিয়া দিয়ে সংগ্রহ করে পাঠ করুন।

সুন্নাত প্রশিক্ষনের একটি সর্বোত্তম মাধ্যম হচ্ছে দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলা সমূহতে আশেকানে রাসুলদের সাথে সুন্নাতে ভরা সফর করা।



Top