পবিত্র রমজান মাসের পর গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের সময় হলো জিলহজ মাসের প্রথম ১০দিন। এই দিনগুলোর ইবাদত আল্লাহতায়ালার নিকট অতি প্রিয়।


মুসনাদে বাজ্জার ও সহিহ ইবনে হিব্বানে সাহাবি হজরত জাবের (রা.) থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম দিনসমূহ হলো- এই দশক। অর্থাৎ জিলহজের প্রথম দশ দিন। স্বয়ং আল্লাহতায়ালা এই মাসের প্রথম দশটি রাতের শপথ করেছেন, এমনকি ভিন্ন ভিন্নভাবে জোড় ও বেজোড় রাতসমূহের শপথও করেছেন। -সূরা ফাজর : ২-৩


সূরা হজ এর ২৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, তারা আল্লাহর নামের স্মরণ করে নির্দিষ্ট দিনসমূহে। সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, নির্দিষ্ট দিন বলে এখানে জিলহজের প্রথম দশককে বুঝানো হয়েছে। -ইবনে কাসির


সহিহ বোখারির বর্ণনামতে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ভালো আমলের জন্য আল্লাহর নিকট এই দিনগুলোর চেয়ে প্রিয় কোনো দিন নেই; সাহাবারা প্রশ্ন করলেন- এমনকি আল্লাহর রাহে জিহাদও এই দিনসমূহের ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়? জবাবে ইরশাদ হলো- না, অন্য সময়ে আল্লাহর রাহে জিহাদও এই দশকের ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়। অবশ্য যে ব্যক্তি জান ও মাল নিয়ে আল্লাহর রাহে জিহাদ করতে বের হয়েছেন এবং তার কোনোটি নিয়েই ফিরতে পারেননি, তার কথা   ভিন্ন।


প্রসিদ্ধ হাদিস বিশারদ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, জিলহজের প্রথম দশটি দিনের বিশেষ গুরুত্বের কারণ হলো- এই দিনগুলোতে ইসলামের ৫টি রুকনের সমাহার রয়েছে। যেমন ঈমান ও সালাত অন্য দিনগুলোর মতো এদিন গুলোতেও বিদ্যমান। জাকাত বছরের অন্য যেকোনো সময়ের মতো এসময়েও প্রদান করা যায়। আরাফার দিনে রোজার নির্দেশনার ফলে ইসলামের আরেকটি রোকন- রোজারও নজীর এই দশকে পাওয়া যায়। আর পঞ্চম রুকন বা হজও। অন্যদিকে কোরবানির বিধান তো কেবল এই দশকেই পালনযোগ্য। তাছাড়া এই দশকেই রয়েছে আরাফা ও কোরবানির দিন, আরাফার দিনের দোয়াকে শ্রেষ্ঠ দোয়া বলা হয়েছে। আর কোরবানির দিনকেও বছরের সেরাদিন বলে আবু দাউদ ও নাসাঈর এক হাদিসে বর্ণিত আছে। সুতরাং মাস হিসেবে রমজান আর দিন হিসেবে এই দশক শ্রেষ্ঠ ও সর্বাপেক্ষা মর্যাদাপূর্ণ। তাই একজন মুসলিমকে ইবাদতের এই সুবর্ণ সময়ের সদ্ব্যবহার করে অন্য সময়ের আমলের ঘাটতি পূরণ করার জন্য প্রস্তুত হওয়া উচিত।


আক্ষেপের বিষয় হলো- কোরআন-হাদিসে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়া এই ইবাদতের সময় সম্পর্কে সমাজের খুব স্বল্পসংখ্যক মানুষই ধারণা রাখেন। জিলহজ মাসের প্রথম দশকের উল্লেখযোগ্য ১০টি আমল হলো-


১. সামর্থ্যবান হলে হজ পালন করা। -সূরা আল ইমরান: ৯৭‍


২. কোরবানি করা। -সূরা কাউসার ও তিরমিজি


৩. অধিক পরিমাণে আল্লাহতায়ালার নামের জিকির করা। -সূরা হজ : ২৮
বর্ণিত আয়াতে অবশ্য নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নামের জিকির করার কথা বর্ণিত হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ তাফসিরবিদ উলামায়ে কেরামের অভিমত হলো- ‘নির্দিষ্ট দিনসমূহ’ বলতে জিলহজের প্রথম দশ দিনকে বুঝানো হয়েছে।


৪. অধিক পরিমাণে নেক আমল করা। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
৫. পাপের পথ না মাড়ানো। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
৬. কোরবানি করতে ইচ্ছুক ব্যক্তির এই দশদিন- নখ, চুলসহ শরীর থেকে কোনো কিছু কর্তন না করা। -সহিহ মুসলিম


৭. বেশি বেশি তাকবির, তাহমিদ ও তাহলিল পাঠ করা। যেমন- আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ। – আবু দাউদ


image


৮. আরাফার দিন ফজর হতে আইয়ামে তাশরিকে (ঈদের দিন ও তার পরে আরো তিন দিন) প্রতি নামাজের পর উল্লেখিত তাকবিরটি পাঠ করা। -আবু দাউদ


৯. আরাফার দিনে রোজা রাখা। সহিহ মুসলিমের এক বর্ণনায় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি মনে করি, তার বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা এক বছর পূর্বের ও এক বছর পরের গুনাহ মাফ করে দিবেন। আরাফার দিন ছাড়াও ঈদের দিন ছাড়া প্রথম দশকের বাকি দিনগুলোতেও রোজা রাখাকে মোস্তাহাব বলেছেন ইমাম নববি (রহ.)। কেননা নফল রোজাও নেক আমলের শামিল। হাদিসে এই দশকে সাধারণভাবে নেক আমলের প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। অবশ্য হাদিসে স্বতন্ত্র নির্দেশ থাকায় আরাফার দিনের রোজা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।


১০. ঈদের দিনের যাবতীয় সুন্নতসমূহ পালনে সচেষ্ট হওয়া।


প্রিয় পাঠক! জিলহজ মাস তো কতোবারই এসেছে আমাদের জীবনে। কিন্তু আমরা কী পেরেছি জিলহজ মাসের এসব আমলসমূহ পালন করতে? কে জানে আগামী জিলহজ আমাদের জীবনে আসবে কি-না? সুতরাং সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় কিন্তু এখনই।


Top