হযরত আবু যর (রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) হতে বর্ণিত,

তিনি পবিত্র ক্বাবা ঘরের দরজা হাত

দিয়ে ধরা অবস্থায় বলেন, আমি নবীয়ে পাঁক

(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা)

কে বলতে শুনেছি, তোমাদের মধ্যে আমার

আহ্লে বায়তের দৃষ্টান্ত হযরত নুহ (আলাহিস সালামের)

জাহাজের মত । যে এতে আরোহন

করেছে সে মুক্তি পেয়েছে, আর যে এটা থেকে মুখ

ফিরিয়ে নিয়েছে, সে ধ্বংস হয়েছে। [মুসনাদে ইমাম

আহমদ : সুত্র : মিশকাত শরীফ ৫৭০ পৃষ্ঠা ]

বর্ণনা কারীর নাম জুনদুব ইবনে জুনাদা। উপনাম আবু যর

সমাধিক পরিচিত। গিফার গোত্রের লোক

হিসেবে তাকে আল গিফারী বলা হত। ইসলামের

সূচনালগ্নেই তিনি ইসলাম গ্রহন করেন। সিরাতের

কিতাব সমূহে তাঁকে পঞ্চম

সনে তিনি মদীনা মুনাওয়ারায় আগমন করার পর সর্বক্ষন

রাসুলে পাকের সহচর্যে থাকতেন। যাতুর

রিক্বা যুদ্ধে যাত্রাকালে নবী করিম (সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লামা) তাকে মদিনা শরিফের

আমির নিযুক্ত করেন। একজন সাধক, পন্ডিত

পাশাপাশি মিতব্যয়ী ও সংযমী হিসেবে তাঁর

খ্যাতি ছিল। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিতে পুঁজিবাদী অর্থনীতির

চরম বিরোধীতা পরিলক্ষিত হয়। তিনি রাসুলে পাক

(সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) থেকে সর্বমোট

২৮১ টি হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি ইসলামের বহু খিদমত

আনজাম দিয়ে পরিশেষে হযরত উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু

আনহুর) খিলাফত আমলে হিজরী ৩২ সনে ৮ যিলহজ্ব

ইনতেকাল করেন।





প্রাসংঙ্গিক আলোচনা:-

হযরত নূহ (আলাইহিস সাল্লাম) এর যামানার তুফান

ইতিহাস বিখ্যাত এক ঘটনা। নূহ (আলাইহি সালাম) এর

প্রতি অবাধ্য লোকদেরকে শাস্তি প্রদানের

লক্ষ্যে মহান রাব্বুল আলামীন সেই তুফান রূপী আযাবের

ব্যবস্থা করেছিলেন। পাশাপাশি অনুগত

উম্মতকে পরিত্রান প্রদানের লক্ষে একটি জাহাজ

নিমর্াণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। স্বীয় নবী নূহ

(আলাইহিস সালাম) কে। যথারীতি জাহাজ তৈরি শেষ

হলে রজব মাসের দুই তারিখে প্লাবণ আরম্ভ হয়। অনুগত

উম্মত আর দুনিয়ার যাবতীয় পশু- পাখীর এক

জোড়া করে এবং বিভিন্ন প্রকার ফল-মূলের গাছের

চারা ঐ জাহাজে উঠানো হলো। সে দিন যারা হযরত নূহ

(আলাইহি ওয়া সাল্লামা) এর সেই জাহাজে আরোহন

করেছিলেন বা করার সুযোগ পেয়েছিল।

তারা মুক্তি পেয়েছিল। পক্ষান্তরে যারা এতে আরোহন

করেনি, তারা জ্বলোচ্ছাসে ডুবে মরেছিল। এমন কি ঐ

ডুবন্তদের মধ্যে হযরত নূহ (আলাইহি ওয়া সাল্লামা) এর

এক স্ত্রী ও পুত্র কোনানা-ও ছিল। কারন

তাদেরকে বারবার বলার পরও জাহাজে আরোহন করেনি।

দীর্ঘ ছয়মাস পর তুফান শেষ হল আর অবাধ্যরা ধ্বংস

হয়ে গেল।

হযরত নূহ (আলাইহিস সালাম) এর উম্মত এর মাঝে তুফান

এসেছিল শেষ যামানার

উম্মতে মুহাম্মদী (সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লামা) এর উপর তুফান

আসতে পারে এটা নিশ্চিত জানতেন রাসুলে পাক

(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা)। তবে হযরত নূহ

(আলাইহিস সালামের) উম্মতের তুফানটা ছিল বাহ্যিক

তথা প্রকাশ্য; কিন্তু উম্মতে মুহাম্মদী (সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লামা) এর উপর

তুফানটা হবে অপ্রকাশ্য যা দেখা যাবে না। তাদের

ঈমান আকি্বদার উপর বয়ে যাবে সেই মহাপ্লাবন।

সে প্লাবনের শ্রোতে হারিয়ে যাবে অনেকের মুল্যবান

ঈমান। তাই অনেক আগেই পবিত্র হাদীস শরীফের

বাণীতে উম্মতে মুহাম্মদীর (সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লামা) এর ধ্বংসাত্মক তুফান

হতে মুক্তির ঠিকানা-ও দেখিয়ে গেছেন দয়াল

নবী রহমাতুলি্লল আলামীন সরকারে দোআলম হযরত

মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লামা)।

নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা)

ইরশাদ করেন। প্লাবন হতে রক্ষা কল্পে হযরত নূহ

(আলাইহিস সালাম) যেমন মুক্তির জাহান নিমর্াণ

করেছিলেন তেমনি আমি আমার বিপদগ্রস্ত উম্মতের

জন্য মুক্তির জাহাজ তথা আমার

আহলে বাইতকে রেখে গেলাম। আমার আহলে বাইতের

সাথে যাদের সম্পর্ক থাকবে তারা মুক্তি পাবে।

আহলে বায়তের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:-

প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু

আনহু) এবং তাবেঈ হযরত মুজাহিদ, হযরত ক্বাতাদাহ

(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) সহ অন্যান্য

মুফাস্সিরে কিরামের মতে আহলে বায়ত

বলতে আলে আবা (চাদরাবৃত) কে বুঝানো হয়েছে। এখন

প্রশ্ন চাদর আবৃতকারা ? তার বর্ণনা অন্য একটি হাদীস

শরীফে এসেছে-উম্মুল মুমিনীন হযরত

আশেয়া সিদ্দিকা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)

বর্ণনা করেন, একদা রাসুলে আকরাম (সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লামা) ভোর বেলায় তাঁর হুজরায়

প্রবেশ করলেন। ঐ সময় তাঁর দেহ

মোবারকে কালো নকশা বিশিষ্ট চাদর ছিল। কিছুক্ষন

পর হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহা)

আসলে নবীজি তাঁকে চাদরের ভেতরে অনর্্তুভূক্ত

করে নেন। এরপর আসলেন হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু

তাআলা আনহু)। নবী আকরাম (সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লামা) তাঁকেও চাদরের ভিতর প্রবেশ

করালেন। অত:পর হযরত হাসান-হুসাঈন (রাদ্বিয়াল্লাহু

আনহুমা) উভয়ে আসলে তাঁদেরও চাদরে আবৃত করে নিলেন

আর পবিত্র কোরআনের আয়াত তিলাওয়াত করলেন।

এই আয়াতের দ্বিতীয় অংশ ইন্না মা উরিদুদুল্লাহ

থেকে-

অর্থাৎ হে নবী পরিবারে সদস্যবর্গ। আল্লাহ কেবল চান

তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দুর

করতে তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে। অত:পর

দোয়া করলেন-

আল্লাহুম্মাহুয়া আহলুল বাইতে ওয়া ………ফাঝিব আনহুম

রিজছা ওয়া তাহহির হুম তাহিরা অর্থাৎ হে আল্লাহ !

এরাই আমার আহলে বাইত এবং ঘনিষ্ঠজন। আপনি এদের

থেকে অপবিত্রতা দুরীভূত করুন আর

এদেরকে পরিপূর্ণভাবে পবিত্র করুন। কেউ কেউ বলেন এই

দোআ করার পরই উল্লেখিত আয়াত অবতর্ীণ হয়েছিল।

আহলে বায়তের মুহাব্বত স্বয়ং নবীজীর (সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লামা) এর সুন্নাত।

হযরত আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত,

উল্লেখিত আয়াত নাযিল হবার পর হতে নবী আকরাম

(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) হযরত

খাতুনে জান্নাতে মা ফাতেমাতুয

যাহরা (রাদ্বিয়অল্লাহু আনহার) ঘরের পাশ

দিয়ে যাবার সময় বলতেন আস্সালামু ইয়া আহলাল

বাইতি ওয়া ইউত্বাহহিরুকুম তাতহীরা। হযরত

ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর মতে এই আমল

সাতদিন পর্যন্ত জারি ছিল।

আহলে বায়তের প্রতি মহব্বত মুক্তির পথ:-

হযরত জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি বিদায়

হজ্বে আরাফতের দিন হুজুর পাক (সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লামা) কে ক্বাসওয়া নামক উষ্ট্রীয়

উপর আরোহনরত অবস্থায় বলতে শুনেছি- হে লোকেরা!

আমি তোমাদের

মধ্যে যা রেখে যাচ্ছি যদি তোমরা তা দৃঢ়ভাবে ধারন

কর তাহলে পথভ্রষ্ট হবে না। তা হল আল্লাহর কিতাব

এবং আমার বংশধর তথা আহলে বায়ত। [তিরমিযী শরীফ,

মিশকাত শরীফ- ৫৬৫ পৃষ্ঠা]

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত,

তিনি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লামা এরশাদ করেছেন-তোমরা মহান

আল্লাহকে ভালবাসো কারণ তিনি তোমাদেও

প্রতি তাঁর নিয়ামত দ্বারা অনুগ্রহ কওে থাকেন। আর

মহান আল্লাহর

ভালবাসা পেতে হলে আমাকে ভালবাসো, আর আমার

ভালবাসা পেতে হলে আমার আহলে বায়ত তথা আমার

বংশধরকে ভালবাসো।সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী,

মিশকাত পৃঃ- ৫৭৩)

হযরত উসামা ইবনে যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত-

তিনি বলেন-

অতপর নবীজী এরশাদ করলেন এই দুইজন (ইমাম হাছান

(রাঃ) ও ইমাম হোসাইন (রাঃ) আমার সনত্দান

এবং আমার প্রাণের মা’মনি ফাতেমা’র (রাঃ) সনত্দান।

হে আমার আল্লাহ! নিশ্চয় আমি এই দুইজনকে ভালবাসি।

আপনিও এই দুইজনকে ভালবাসুন, আর আপনি তাকেও

ভালবাসুন যে এই দুইজনকে ভালবাসে।

(তিরমিজী মিশকাত পৃঃ ৫৭০ )

ইলালা ইবনে মুররা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লামা এরশাদ করেন- হোসাইন আমার

থেকে আর আমি হোসাইন থেকে।

যে হোসাইনকে ভালবাসবে আল্লাহ

তায়ালা তাকে ভালবাসবেন। (তিরমিজী মিশকাত

পৃঃ ৫৭১।)

হযরত আব্দুল মুত্তালিব ইবনে রাবিয়াহ (রাঃ)

থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লামা বিশেষ একটি ঘটনার পর

অত্যনত্দ রাগান্বিত হয়ে গেলেন এবং প্রিয় নবীজির

চেহারা মোবারক রাগে লাল হয়ে গেল,এমতাবস্থায়

সরকারে দোজাঁহা সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহর কসম করে হযরত

আব্বাস (রাঃ) কে লক্ষ্য করে এরশাদ করলেন- ততক্ষণ

পযনর্ত্দ কোন ব্যক্তির কলবে ঈমান প্রবেশ করবেনা,

যতক্ষণ না সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টির

উদ্দেশ্যে আপনাদেরকে তথা আমার

বংশধরকে ভালবাসবে। (তিরমিজী,মিশকাত পৃঃ ৫৭০।)

হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] বলেন-ঐ

সত্বার কসম ! যাঁর হাতে আমার প্রান। আমার নিকট

আমার আত্বীয় অপেক্ষা নবী-ই-করীম (সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লামা) এর আত্মীয় অধিক প্রিয় ।

[ বুখারি শরীফ]

এভাবে আরো বহু রেওয়ায়াত আছে।

যে গুলো দ্বারা প্রমাণিত হয় যে হযতর আবু বকর সিদ্দিক

(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ও হযরত ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু

আনহু) এর অন্তরে আহলে বাইতের প্রতি অকৃত্রিম

শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতেন।

একদা হযরত আবু হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর

চাদরের আঁচল দ্বারা হযরত ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু

আনহু) চরণ যুগল হতে ধুলাবালি মুছে পরিস্কার

করে দিচ্ছিলেন, এতে একটু বিচলিত হয়ে হযরত ইমাম

হোসাঈন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, হে আবু

হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) আপনি এ কি করছেন ?

হযরত আবু হোরাইরা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বললেন,

হে সাহেবজাদা ! আমাকে ক্ষমা করুন। আপনার

পদমর্যাদা সম্পর্কে আমি জানি।

লোকেরা যদি তা জানতো তাহলে তারা আপনাকে

কাঁধে নিয়ে ঘুরাফেরা করত। (আল্লাহু আকবার)

এভাবে নবী বংশের সদস্যদের

মর্যাদা যুগে যুগে মহামনিষীদের নিকট স্বীকৃত ছিল। বড়

বড় মুহাদ্দিস, ফক্বীহ, মুফাসসির, কবি- সাহিত্যিক আর

ইতিহাসবিদগন তাঁদের ক্ষুরধার লেখনীতে তার

নমুনা উপস্থাপন করেছেন স্ব- স্ব গ্রন্থে।

[ইতিহাসবেত্তাগন লিখেছেন, খলিফা হিশাম

ইবনে আবদুল মালেক যখন হজ্বে গমন করলেন, তখন

তিনি হাজরে আসওয়াদে চুম্বনের জন্য প্রানপন

চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছিলেন মানুষের প্রচন্ড ভিড়ের

কারণে। মনে মনে কিছু ক্ষোভ আর অভিমানে অপেক্ষার

প্রহর গুনছিলেন। আর তার সাথে ছিল সিরিয়ার একদল

মানুষ। এমন সময় আওলাদে রাসুল ইমাম জয়নুল আবেদিন

(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) তাওযাফ এর জন্য যেই মাত্র

হাজরে আসওয়াদের দিকে আসলেন তাওয়াফ

কারী মানুষরা আপনার

আপনিতে জায়গা খালি করে দিলেন আর তিনি সহজেই

হাজরে আসওয়াদের দিকে আসলেন তাওয়াফ

কারী মানুষরা আপনা আপনিতে জায়গা খালী করে

দিলেন আর তিনি সহজেই হাজরে আসওয়াদ চুম্বন

দিলেন। এ অবস্থা দেখে জনৈক সিরিয়াবাসী বলল,

তিনি কে ? যাকে মানুষ এতো সম্মান করছে। অথচ

খলিফার প্রতি এতটুকু কেউ শ্রদ্ধা দেখাচ্ছে না ?

খলিফা চেনার পরও বললেন, আমি তাকে চিনি না। তখন

ঐ জায়গায় আরবের একজন প্রসিদ্ধ কবি ফরযদক্ব হাযির

ছিলেন।

তিনি অনেকটা প্রতিবাদী কন্ঠে কাব্যকরে বলে উঠলেন-

হাজাল্লাজি তাআরিফু বাতাহাউ ওয়া তৌআত

ওয়া বাইতু ইয়ারিফাহ ওয়াল হিল্লু ওয়াল হারাম।]

অর্থাৎ তিনি তো ঐ ব্যক্তিত্ব, যাকে মক্কার

উপত্যকা এবং তার ধুলাবালি চিনে। বাইতুল্লাহর হিল্ল

এবং হেরেম শরীফও যাকে চিনে। (ওয়াহ সুবহানাল্লাহ)

এর পর আরেকটা পংক্তিতে বলেন, তিনিই ফাতেমাতুয

যাহরার পুত্র। যদি না জান, তাহলে জেনে নাও তাঁর

মাতামহ (অর্থাৎ, নানাজান) খাতামুন নাবীয়্যিন

(অর্থাৎ শেষ নবী)

প্রবিত্র কোরআন-সুন্নাহর অসংখ্য দলিল

দ্বারা প্রমানিত রাসুল পাক (সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লামা)- এর নিকটাত্মীয়দের

ভালবাসা উম্মতের ওপর ওয়াজিব। এ পর্যায়ে পবিত্র

কোরআনে এরশাদ হয়েছে।

“কুল লা আসলালুকুম আলাইহে আজরান ইল্লাল

মুযাদ্দাতা ফিল কুরবা”

আল্লাহ তায়ালা বলেন হে রাসুল। আপনি বলুন হে মানুষ

আমি তোমাদেরকে (পথ প্রদর্শন ও ধর্মপ্রচার)-এর

বিনিময়ে তোমাদের নিকট হতে আমার আত্মীয়

(বংশধরদের প্রতি মুহাব্বত ছাড়া) অন্য কোন প্রতিদান

চাই না।

এই আয়াতে কারিমা নাযিল হবার পর

সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ

(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা)। আপনার

আত্মীয় কারা, যাদের প্রতি ভালবাসা, সৌহর্াদ্য

আমাদের উপর ফরয করা হয়েছে ? নবী আকরাম

(সাল্লাল্লাহু আলাইহিহু ওয়া সাল্লামা) এরশাদ

করলেন। তারা হল আলী, ফাতেমা, আর তাদের

সন্তানদ্বয় (ইমাম হাসান ও হুসাইন। [যারক্কানী আলাল

মাওয়াইক্বে মুরিক্বা]

হযরত আল্লমা কাযী সানা উল্লাহ

পানীপথি (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর উস্তাদ

মির্যা মাযহার

জানে জাঁনা (রাহমাতুল্লাহে আলাইহি) বলতেন।

আহলে বায়তের প্রতি ভালবাসা ঈমানের ভিত্তি। ঐ

মহাত্বগণের ভালবাসা ব্যতিত আমার কোন আমলই

নাজাতের উসিলা নয়।

তিনি আহলুল বায়তের প্রতি মুহাব্বতের কারনে সৈয়দ

জাদাদের প্রতিও অগাধ সম্মান প্রদর্শন করতেন।

এমনকি পাঠদানের সময় যদি আশ-

পাশে আওলাদে রাসুলের কোন ছোট

শিশুকে খেলাধুলা করতে দেখতেন

সাথে সাথে তিনি দাঁিড়য়ে তাদেরকে সম্মান করতেন

এবং যতক্ষন তাঁকে দেখা যেত দাঁিড়য়ে থাকতেন।

(আখবারূর আখতার পৃষ্ঠা ২৪১)

যুগশ্রেষ্ঠ ইমাম ও মুফাসসিরগন

যদি আওলাদে রাসুলকে এভাবে সম্মান করেন

তাহলে আমাদের কি করা উচিত

সেটা ভেবে দেখা দরকার। অধিকন্তু ফিৎ-ফ্যাসাদের এই

সময়ে আমাদের ঈমান-আকি্বদাকে মজবুত করার জন্য

এবং গোমরাহী থেকে বেচে থাকার অন্যতম ওসীলা হল

আল্লাহর রাসূলের আওলাদগন দ্বীন ও মাযহাবের

দায়িত্ব নিয়ে মানবজাতিকে হিদায়াতের নিরলস

খিদমত আনজাম দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের সানি্নধ্য

যারা অর্জন

করতে পারবে নি:সন্দেহে তারা সৌভাগ্যবান।

পক্ষান্তরে যারা সুযোগ পাওয়ার পরও এ নিয়ামত

হাতছাড়া করে ফেলেছে তারা হতভাগ্য। অবশ্য,

যদি কেউ নিজেকে আওলাদ-ই-রাসুল বলে দাবি করে, অথচ

বাতিল আক্কিদার অনুসারী এবং শরীয়তের বিধি-

বিধান মেনে চলে না, তাকে সংশোধন করাই হবে তার

প্রতি সম্মান দেখানো। তাকে নির্বিচারে সম্মানের

ক্ষেত্রে সর্তক থাকা জরুরী। যদি সে/তারা সংশোধন

না হয় তবে আহলে বায়ত’এর ব্যক্তিবর্হিভূত

বলে বিবেচনা হবে। আর একটা বিষয় সাবধান। আমাদের

দেশ-সহ অন্যান্য দেশে কিছু লোক

আছে যারা কিনা তাদের নামের আগে “সৈয়দ” ব্যবহার

করে। অথচ দুই-তিন পুরুষ না, তার পিতার দিকে গেলেই

সব গোমর ফাঁক হযে যায়। অর্থাৎ বুঝা যায় সে প্রকৃত

আওলাদে রাসূল (সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লামা) কি না।

সুতরাং আওলাদে রাসূল (সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়াসাল্লামা) চিনতে এ থেকেও আমাদের

সাবধান হতে হবে। আল্লাহ্ পাঁক রাব্বুল আলামীন

আমাদের সবাইকে আওলাদে রাসুলের (সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লমা) সাথে সম্পর্ক

রেখে জাগতিক ও পরলৌকিক মুক্তি অর্জনের তাওফিক

দান করুন। আমিন





Top