بسم الله الرحمن الرحيم
يَا أَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ (১) قُمِ اللَّيْلَ إِلَّا قَلِيلًا (২) نِصْفَهُ أَوِ انْقُصْ مِنْهُ قَلِيلًا (৩) أَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا (৪) إِنَّا سَنُلْقِي عَلَيْكَ قَوْلًا ثَقِيلًا (৫) إِنَّ نَاشِئَةَ اللَّيْلِ هِيَ أَشَدُّ وَطْئًا وَأَقْوَمُ قِيلًا (৬) إِنَّ لَكَ فِي النَّهَارِ سَبْحًا طَوِيلًا (৭) وَاذْكُرِ اسْمَ رَبِّكَ وَتَبَتَّلْ إِلَيْهِ تَبْتِيلًا (৮) رَبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ فَاتَّخِذْهُ وَكِيلًا (৯) وَاصْبِرْ عَلَى مَا يَقُولُونَ وَاهْجُرْهُمْ هَجْرًا جَمِيلًا (১০) وَذَرْنِي وَالْمُكَذِّبِينَ أُولِي النَّعْمَةِ وَمَهِّلْهُمْ قَلِيلًا (১১)
يَا أَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ (১) قُمِ اللَّيْلَ إِلَّا قَلِيلًا (২) نِصْفَهُ أَوِ انْقُصْ مِنْهُ قَلِيلًا (৩) أَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا (৪) إِنَّا سَنُلْقِي عَلَيْكَ قَوْلًا ثَقِيلًا (৫) إِنَّ نَاشِئَةَ اللَّيْلِ هِيَ أَشَدُّ وَطْئًا وَأَقْوَمُ قِيلًا (৬) إِنَّ لَكَ فِي النَّهَارِ سَبْحًا طَوِيلًا (৭) وَاذْكُرِ اسْمَ رَبِّكَ وَتَبَتَّلْ إِلَيْهِ تَبْتِيلًا (৮) رَبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ فَاتَّخِذْهُ وَكِيلًا (৯) وَاصْبِرْ عَلَى مَا يَقُولُونَ وَاهْجُرْهُمْ هَجْرًا جَمِيلًا (১০) وَذَرْنِي وَالْمُكَذِّبِينَ أُولِي النَّعْمَةِ وَمَهِّلْهُمْ قَلِيلًا (১১)
অনুবাদ: (আল্লাহ্ এরশাদ করেন) হে বস্ত্রাবৃত্ত! (অর্থাৎ মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম) রাতে দণ্ডায়মান হোন কিছু অংশ বাদ দিয়ে অর্ধরাত অথবা তা থেকেও কিছু কম অথবা তদপেক্ষা বেশী কুরআন খুব থেমে থেমে পাঠ করুন। নিশ্চয় আমি (আল্লাহ্) অনতিবিলম্বে আপনার উপর একটা গুরুভার বাণী অবতীর্ণ করবো। নিশ্চয় (এবাদতের উদ্দেশ্যে) রাত্রিতে উঠা, তা অধিক চাপ সৃষ্টি এবং বাণী খুব সরলভাবে বহির্গত হয়। নিশ্চয় দিবাভাগে রয়েছে আপনার দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা আপনি আপনার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করুন এবং একাগ্রচিত্তে তাঁরই দিকে মনোনিবেশ করুন। তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের অধিকর্তা, তিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। অতএব তাকেই গ্রহণ করুন কর্মবিদায়করূপে এবং কাফিরদের উক্তিসমূহে ধৈর্যধারণ করুন আর তাদেরকে ভালোভাবে পরিহার করুন এবং আমার উপর ছেড়ে দিন ওইসব অস্বীকারকারী ধনশীল লোকদেরকে আর তাদেরকে স্বল্প অবকাশ দিন।
[সূরা আল মুয্যাম্মিল ১ – ১১ নম্বর আয়াত] আনুষঙ্গিক আলোচ
না
يَا أَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ উদ্ধৃত আয়াতে উল্লেখিত مُزَّمِّل ও পরবর্তী সূরায় উক্ত مدّثر উভয় শব্দ সমার্থক। এর অর্থ হলো চাদরাবৃত,বস্ত্রাবৃত ইত্যাদি। مُزَّمِّل ও مدّثر দ্বারা রাসূলে খোদা হাবীবে কিবরিয়া আহমদে মুজতবা মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করা হয়েছে। এই আয়াতের ব্যাখ্যা মুফাসসিরীনে কেরাম উল্লেখ করেছেন, এভাবে সম্বোধন করার মধ্যে বিশেষ এক করুণা ও অনুগ্রহের বহিঃপ্রকাশ রয়েছে। নিতান্ত করুণা প্রকাশার্থে ¯েœহ ভালাবাসায় আপ্লুত হয়ে সাময়িক অবস্থার দ্বারাও কাউকে সম্বোধন করা হয়ে থাকে। [তাফসীরে রুহুল মায়ানী] পবিত্র কুরআনুল কারীমের আদ্যোপান্ত পর্যালোচনায় প্রতিভাত হয়, সকল নবী- রাসূল আলাইহিমুস্ সালামকে তাদের নাম মোবারক দ্বারা সম্বোধন করা হয়েছে, বলা হয়েছে- ওহে আদম! ওহে নূহ! ওহে ইব্রাহিম! ওহে মূসা! ওহে ঈসা! (আলাইহিমুস সালাম)। কিন্তু কোরআনে কারীমের কোন সূরা কিংবা আয়াতে পরম প্রিয়তম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লামকে ওহে মুহাম্মদ! কিংবা ওহে আহমদ! বলে সম্বোধন করা হয়নি বরং সর্বত্র প্রশংসাসূচক ও গুণবাচক নাম মোবারক দুরূদ স্বীয় রাসূলকে সম্বোধন করত এরশাদ হয়েছে – ওহে নবী অর্থাৎ (অদৃশ্য জ্ঞানের সংবাদদানকারী সত্তা!) ওহে রাসূল অর্থাৎ (রেসালাতের সুমহান জিম্মাদার সত্তা) ওহে মুয্যাম্মিল, ওহে মুদ্দাস্সির। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার প্রিয়তম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লামকে তো মূল নাম মোবারক দ্বারা সম্বোধন করেন। কুরআনে হাকীমের কোথাও আবার মানবকুলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন যেন নবীকে এভাবে সর্বসাধারণের ন্যায় মূল নাম মোবারক সহকারে সম্বোধন করা না হয়। যেমন ১৮ পারার সূরা আন নূর এর ৬৩ নম্বর আয়াতে এরশাদ হয়েছে لَا تَجْعَلُوا دُعَاءَ الرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًا
অর্থাৎ রাসূল (দ.) এর আহ্বানকে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে তেমনি স্থির করোনা যেমন তোমরা একে অপরকে ডেকে থাক। [সূরা আন নূর ৬৩ নম্বর আয়াত] এ আয়াতের মর্মবাণীর আলোকে প্রমাণিত হয় – ওহে মুহাম্মদ! ওহে আহমদ! বলে সম্বোধন করা সম্পূর্ণরূপে হারাম। এ বিষয়টি সংক্ষেপে ছন্দাকারে দেওয়ানে আজিজী নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন ইমামে আহলে সুন্নাত গাজিয়ে দ্বীন-মিল্লাত আল্লামা শেরে বাংলা আজিজুল হক আলকাদেরী (রহ.)। যেমন -نداكردن بان اسم محمد- صريح ممنوع بتنزيل محمد অর্থাৎ পবিত্র কুরআনের নির্দেশনার আলোকে ইয়া মুহাম্মদ! বলে সম্বোধন করা সম্পূর্ণরূপে হারাম,নিষিদ্ধ। মূল “নবুওয়ত – রেসালাত” এর ক্ষেত্রে প্রেরিত সকল নবী- রাসূল এক সমান হলেও মর্যাদায় শ্রেষ্ঠত্বে সবাই একই মানের নন। বরং তাদের মধ্যে মর্যাদাগত ব্যবধান ও তারতম্য রয়েছে। যেমন সূরা বাকারার ২৫৩ নম্বর আয়াতে এরশাদ হয়েছে – تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ مِنْهُمْ مَنْ كَلَّمَ اللَّهُ وَرَفَعَ بَعْضَهُمْ دَرَجَاتٍ অর্থাৎ এই রাসূলগণ আমি তাদের কাউকে কারো উপর মর্যাদাবান করেছি। তাঁদের মধ্যে কেউতো হল এমন, যার সাথে আল্লাহ কথোপকথন করেছেন, আর কাউকে উচ্চতর করেছেন অসংখ্য মর্যাদায় – শ্রেষ্ঠত্বে।
[সূরা বাকারা, ২৫৩ নম্বর আয়াত] উদ্বৃত আয়াত সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত ও প্রমাণিত করে যে, আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস্ সালাম এর মধ্যে মর্যাদাগত ব্যবধান বিদ্যমান। তাঁদের মধ্যে সায়্যেদেনা ইব্রাহিম (আ.) কে মহান আল্লাহ খলিলুল্লাহ ও জাদ্দুল আম্বিয়া (অর্থাৎ আল্লাহর প্রিয় দোস্ত ও নবী রাসূলগণের দাদা) নামে বিশেষ মর্যাদায় মহিমান্বিত করেছেন। আর মূসা আলাইহিস্ সালাম কে কালিমুল্লাহ এ বিশেষ মর্যাদার অভিধায় অভিহিত করেছেন। আর তাফসীরে রুহুল বয়ান, খাযায়েনুল ইরফান ও নূরুল ইরফানসহ অনেক তাফসিরে রয়েছে – وَرَفَعَ بَعْضَهُمْ دَرَجَاتٍ দ্বারা রাসূলে আকরাম নূরে মুজাস্সাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বুঝানো হয়েছে। আর دَرَجَاتٍ শব্দটি جمع كثرت তথা আধিক্যজ্ঞাপক বহুবচন, ৩য় অর্থ হলো অসংখ্য মর্যাদার স্তর । অতএব মহান আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রিয়তম দোস্ত নবীগণের নবী, রাসূলকুল সরদার রহমতে আলম নূরে মুজাস্সাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অসংখ্য অগণিত অপরিসীম মর্যাদায় মহিমান্বিত করে ¯্রষ্টার পরে সকল সৃষ্টির শীর্ষে অতুলনীয় অনুপম করে ধন্য করেছেন। (সুবহানাল্লাহ)।
[সূরা আল মুয্যাম্মিল ১ – ১১ নম্বর আয়াত] আনুষঙ্গিক আলোচ
না
يَا أَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ উদ্ধৃত আয়াতে উল্লেখিত مُزَّمِّل ও পরবর্তী সূরায় উক্ত مدّثر উভয় শব্দ সমার্থক। এর অর্থ হলো চাদরাবৃত,বস্ত্রাবৃত ইত্যাদি। مُزَّمِّل ও مدّثر দ্বারা রাসূলে খোদা হাবীবে কিবরিয়া আহমদে মুজতবা মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করা হয়েছে। এই আয়াতের ব্যাখ্যা মুফাসসিরীনে কেরাম উল্লেখ করেছেন, এভাবে সম্বোধন করার মধ্যে বিশেষ এক করুণা ও অনুগ্রহের বহিঃপ্রকাশ রয়েছে। নিতান্ত করুণা প্রকাশার্থে ¯েœহ ভালাবাসায় আপ্লুত হয়ে সাময়িক অবস্থার দ্বারাও কাউকে সম্বোধন করা হয়ে থাকে। [তাফসীরে রুহুল মায়ানী] পবিত্র কুরআনুল কারীমের আদ্যোপান্ত পর্যালোচনায় প্রতিভাত হয়, সকল নবী- রাসূল আলাইহিমুস্ সালামকে তাদের নাম মোবারক দ্বারা সম্বোধন করা হয়েছে, বলা হয়েছে- ওহে আদম! ওহে নূহ! ওহে ইব্রাহিম! ওহে মূসা! ওহে ঈসা! (আলাইহিমুস সালাম)। কিন্তু কোরআনে কারীমের কোন সূরা কিংবা আয়াতে পরম প্রিয়তম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লামকে ওহে মুহাম্মদ! কিংবা ওহে আহমদ! বলে সম্বোধন করা হয়নি বরং সর্বত্র প্রশংসাসূচক ও গুণবাচক নাম মোবারক দুরূদ স্বীয় রাসূলকে সম্বোধন করত এরশাদ হয়েছে – ওহে নবী অর্থাৎ (অদৃশ্য জ্ঞানের সংবাদদানকারী সত্তা!) ওহে রাসূল অর্থাৎ (রেসালাতের সুমহান জিম্মাদার সত্তা) ওহে মুয্যাম্মিল, ওহে মুদ্দাস্সির। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার প্রিয়তম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লামকে তো মূল নাম মোবারক দ্বারা সম্বোধন করেন। কুরআনে হাকীমের কোথাও আবার মানবকুলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন যেন নবীকে এভাবে সর্বসাধারণের ন্যায় মূল নাম মোবারক সহকারে সম্বোধন করা না হয়। যেমন ১৮ পারার সূরা আন নূর এর ৬৩ নম্বর আয়াতে এরশাদ হয়েছে لَا تَجْعَلُوا دُعَاءَ الرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًا
অর্থাৎ রাসূল (দ.) এর আহ্বানকে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে তেমনি স্থির করোনা যেমন তোমরা একে অপরকে ডেকে থাক। [সূরা আন নূর ৬৩ নম্বর আয়াত] এ আয়াতের মর্মবাণীর আলোকে প্রমাণিত হয় – ওহে মুহাম্মদ! ওহে আহমদ! বলে সম্বোধন করা সম্পূর্ণরূপে হারাম। এ বিষয়টি সংক্ষেপে ছন্দাকারে দেওয়ানে আজিজী নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন ইমামে আহলে সুন্নাত গাজিয়ে দ্বীন-মিল্লাত আল্লামা শেরে বাংলা আজিজুল হক আলকাদেরী (রহ.)। যেমন -نداكردن بان اسم محمد- صريح ممنوع بتنزيل محمد অর্থাৎ পবিত্র কুরআনের নির্দেশনার আলোকে ইয়া মুহাম্মদ! বলে সম্বোধন করা সম্পূর্ণরূপে হারাম,নিষিদ্ধ। মূল “নবুওয়ত – রেসালাত” এর ক্ষেত্রে প্রেরিত সকল নবী- রাসূল এক সমান হলেও মর্যাদায় শ্রেষ্ঠত্বে সবাই একই মানের নন। বরং তাদের মধ্যে মর্যাদাগত ব্যবধান ও তারতম্য রয়েছে। যেমন সূরা বাকারার ২৫৩ নম্বর আয়াতে এরশাদ হয়েছে – تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ مِنْهُمْ مَنْ كَلَّمَ اللَّهُ وَرَفَعَ بَعْضَهُمْ دَرَجَاتٍ অর্থাৎ এই রাসূলগণ আমি তাদের কাউকে কারো উপর মর্যাদাবান করেছি। তাঁদের মধ্যে কেউতো হল এমন, যার সাথে আল্লাহ কথোপকথন করেছেন, আর কাউকে উচ্চতর করেছেন অসংখ্য মর্যাদায় – শ্রেষ্ঠত্বে।
[সূরা বাকারা, ২৫৩ নম্বর আয়াত] উদ্বৃত আয়াত সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত ও প্রমাণিত করে যে, আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস্ সালাম এর মধ্যে মর্যাদাগত ব্যবধান বিদ্যমান। তাঁদের মধ্যে সায়্যেদেনা ইব্রাহিম (আ.) কে মহান আল্লাহ খলিলুল্লাহ ও জাদ্দুল আম্বিয়া (অর্থাৎ আল্লাহর প্রিয় দোস্ত ও নবী রাসূলগণের দাদা) নামে বিশেষ মর্যাদায় মহিমান্বিত করেছেন। আর মূসা আলাইহিস্ সালাম কে কালিমুল্লাহ এ বিশেষ মর্যাদার অভিধায় অভিহিত করেছেন। আর তাফসীরে রুহুল বয়ান, খাযায়েনুল ইরফান ও নূরুল ইরফানসহ অনেক তাফসিরে রয়েছে – وَرَفَعَ بَعْضَهُمْ دَرَجَاتٍ দ্বারা রাসূলে আকরাম নূরে মুজাস্সাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বুঝানো হয়েছে। আর دَرَجَاتٍ শব্দটি جمع كثرت তথা আধিক্যজ্ঞাপক বহুবচন, ৩য় অর্থ হলো অসংখ্য মর্যাদার স্তর । অতএব মহান আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রিয়তম দোস্ত নবীগণের নবী, রাসূলকুল সরদার রহমতে আলম নূরে মুজাস্সাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অসংখ্য অগণিত অপরিসীম মর্যাদায় মহিমান্বিত করে ¯্রষ্টার পরে সকল সৃষ্টির শীর্ষে অতুলনীয় অনুপম করে ধন্য করেছেন। (সুবহানাল্লাহ)।
হযরাতে সুফিয়ায়ে কেরাম আলোচ্য আয়াত يَا أَيُّهَا الْمُزَّمِّل এর ব্যাখ্যায় বলেছেন ওহে চাদরাবৃত সত্তা মানে বশারিয়াতের তথা মানবীয় চাদর মুড়ি দিয়ে মাখলুকের মাঝে শুভাগমনকারী নবী , অথবা ওহে বস্ত্রাবৃত সত্তা মানে ওহে ইবাদত-রেয়াজত এর পোশাক পরিধানকারী মাহবুব।
[তাফসীরে আযীযি শরীফ] قُمِ اللَّيْلَ إِلَّا قَلِيلًا
উদ্ধৃত আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরিনে কেরাম উল্লেখ করেছেন ওহে মুয্যাম্মিল তথা চাদরাবৃত সত্তা। এই বিশেষ ভঙ্গিতে সম্বোধন করে রাসূলে আকরাম নূরে মুজাস্সাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাহাজ্জুদের আদেশ করা হয়েছে। ইসলামের শুরুতে তখন পর্যন্ত পাঞ্জেগানা নামায ফরজ ছিলনা, পাঞ্জেগানা নামায মেরাজের রাত্রিতে ফরজ হয়েছিল।
উম্মুল মু‘মিনীন আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) ও অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের আলোকে ইমাম বাগাভী (র.) বলেন, এই আয়াতের আলোকে তাহাজ্জুদ অর্থাৎ রাত্রির নামায রাসুলে আকরাম ও সকল উম্মতের উপর ফরজ ছিল।
উল্লিখিত আয়াতে তাহাজ্জুদের নামায কেবল ফরজই করা হয়নি বরং তাতে রাত্রির কমপক্ষে এক চতুর্থাংশ ইবাদতে মশগুল থাকাও ফরজ করা হয়েছে। কারণ আয়াতের মূল আদেশ হচ্ছে, কিছু অংশ বাদে সমস্ত রাত্রি নামাযে মশগুল থাকা।
ইমাম বাগাভী (রহ.) বলেন এ আদেশ পালনার্থে রাসূলে আকরাম নূরে মুজাস্সাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম (রা.) অধিকাংশ রাত্রি তাহাজ্জুদের নামায আদায় করতেন। ফলে তাদের পদযুগল মোবারক ফুলে যায় এবং আদেশটি বেশ কষ্ঠসাধ্য প্রতীয়মান হয়। পূর্ণ এক বছর পর এ সূরার শেষাংশ فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنْهُ (অর্থাৎ কুরআনের যতটুকু তোমাদের জন্য সহজ ততটুকু আবৃত্তি কর )অবতীর্ণ হলে দীর্ঘক্ষণ নামাযে দণ্ডায়মান থাকার বাধ্যবাধকতা রহিত করে দেয়া হয় এবং বিষয়টি ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিয়ে ব্যক্ত করা হয় যে, যতক্ষণ নামায পড়া সহজ মনে হয় ততক্ষণ নামায পড়াই তাহাজ্জুদের জন্য যথেষ্ট। এ বিষয়বস্তু আবু দাউদ ও নাসায়ি শরীফে আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন – মে’রাজের রাত্রিতে পাঞ্জেগানা নামায ফরজ হওয়ার আদেশ অবতীর্ণ হলে তাহাজ্জুদের আদেশ রহিত হয়ে যায়। তবে এরপরও তাহাজ্জুদ নামায সুন্নাত হওয়া ও এর অপরিসীম ফজিলত বহাল থাকে। কারণ রাসূলে আকরাম নূরে মুজাস্সাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম নিয়মিতভাবে তাহাজ্জুদের নামায আদায় করতেন।
[তাফসিরে মাযহারী] নিয়মিতভাবে তাহাজ্জুদ আদায়কারীর ফজিলত ও মর্তবা আল্লাহ্ – রাসূলের দরবারে অপরিসীম। রিজিক ফরাগত হওয়া, শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত থাকা, মুখমণ্ডল উজ্জ্বল আভায় উদ্ভাসিত হওয়া, কবর সুপ্রশস্ত হওয়া ছাড়া ও মহান আল্লাহ্র নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের বড় সহায়ক ও মহা অবলম্বন নিয়মিতভাবে তাহাজ্জুদ আদায় করা। তাইতো রাসূলে আকরাম নূরে মুজাস্সাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায়ের তাগিদ দিয়ে এরশাদ করেছেন – عليكم بقيام الليل فانه دأب الصالحين قبلكم অর্থাৎ নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায়কে নিজেদের জন্য আবশ্যক করে নাও। কেননা এ নামায তোমাদের পূর্ববর্তী সকল বুযুর্গানে দ্বীনের ত্বরিকা , শরীরের রোগ প্রতিরোধ ও আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের মোক্ষম অবলম্বন।
মহান আল্লাহ্র দরবারে আকুল আকুতি, তিনি যেন সবাইকে এ মহান নেয়ামত নিয়মিত আদায় করার তাওফিক নসীব করেন। আমিন।