سم الله الرحمن الرحيم
وَأَنَّا لَا نَدْرِي أَشَرٌّ أُرِيدَ بِمَنْ فِي الْأَرْضِ أَمْ أَرَادَ بِهِمْ رَبُّهُمْ رَشَدًا (১০) وَأَنَّا مِنَّا الصَّالِحُونَ وَمِنَّا دُونَ ذَلِكَ كُنَّا طَرَائِقَ قِدَدًا (১১) وَأَنَّا ظَنَنَّا أَنْ لَنْ نُعْجِزَ اللَّهَ فِي الْأَرْضِ وَلَنْ نُعْجِزَهُ هَرَبًا (১২) وَأَنَّا لَمَّا سَمِعْنَا الْهُدَى آمَنَّا بِهِ فَمَنْ يُؤْمِنْ بِرَبِّهِ فَلَا يَخَافُ بَخْسًا وَلَا رَهَقًا (১৩) وَأَنَّا مِنَّا الْمُسْلِمُونَ وَمِنَّا الْقَاسِطُونَ فَمَنْ أَسْلَمَ فَأُولَئِكَ تَحَرَّوْا رَشَدًا (১৪) وَأَمَّا الْقَاسِطُونَ فَكَانُوا لِجَهَنَّمَ حَطَبًا (১৫) وَأَن لَّوِ اسْتَقَامُوا عَلَى الطَّرِيقَةِ لَأَسْقَيْنَاهُمْ مَاءً غَدَقًا (১৬)
তরজমা : আল্লাহ্ তাআলা এরশাদ করেছেন এবং এ যে, আমাদের জানা নেই যে, পৃথিবীবাসীর জন্য কোন অমঙ্গল এর ইচ্ছা করা হয়েছে কিংবা তাদের প্রতিপালক তাদের কোন মঙ্গল চেয়েছেন। (১১) আর অবশ্যই আমাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক সৎকর্মপরায়ন রয়েছে আর কিছু সংখ্যক রয়েছে অন্য ধরনের, আমরা ছিলাম বিভিন্ন পথে বিভক্ত। (১২) এবং এ যে, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস হয়েছে যে, আমরা কখনো পৃথিবীতে মহান আল্লাহকে অপারগ করতে পারব না এবং পলায়ন করেও তাঁেক অপারগ করতে পারব না। (১৩) আর অবশ্যই আমরা যখন হিদায়াতের বাণী শুনেছি তখন সেটার প্রতি ঈমান আনয়ন করেছি। অতঃপর যে কেউ আপন প্রতিপালকের উপর ঈমান আনয়ন করে, তখন তার না আছে ঈমান হ্রাস পাবার ভয় এবং না বৃদ্ধি পাবার। (১৪) এবং এ যে, অবশ্যই আমাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক রয়েছে মুসলমান এবং কিছু সংখ্যক জালিম, সুতরাং যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে, তারা সৎপথ সন্ধান করে বেছে নিয়েছে।(১৫) আর বাকী রইল জালিম, তারা জাহান্নামের ইন্ধন হয়েছে। (১৬) আর (বলুন, আমার নিকট ওহী করা হয়েছে যে,) যদি তারা সৎপথে স্থির থাকত, তবে আমি তাদেরকে প্রচুর পানি বর্ষণে সিক্ত করতাম। [১০-১৬ নম্বর আয়াত, সূরা আল-জিন]
আনুষঙ্গিক আলোচনা
وانّا ظننا ان لن نعجز الله فى الارض
মহান আল্লাহর পবিত্র বাণী “এবং আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস হয়েছে যে, আমরা কখনো মহান আল্লাহকে অপারগ করতে পারব না পৃথিবীতে এবং পলায়ন করেও কখনো তাঁকে অপারগ করতে পারবে না।”-এর ব্যাখ্যায় মুফাসসেরীনে কেরাম উল্লেখ করেছেন – মহান আল্লাহকে পৃথিবীতে অপারগ করার মর্ম হলো আল্লাহ কর্তৃক সৃষ্টি ও পরিচালনাধীন পৃথিবীপৃষ্ঠে আল্লাহ রাব্বুল আ‘লামীনের আদেশ-নিষেধ, বিধি-বিধান, অকার্যকর করে দেয়া আল্লাহর ইচ্ছা অভিপ্রায় উদ্দেশ্যাবলী বাস্তবায়নে অন্তরায় সৃষ্টি করা। আল্লাহর মোকাবেলায় অন্য কোন সত্তার উদ্দেশ্য-লক্ষ্য স্থায়ীভাবে কার্যকর করা ইত্যাদি। (নাউজুবিল্লাহ) একক অদ্বিতীয় সর্বশক্তিমান স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আ‘লামীনের সৃষ্ট ও লালিত পালিত মানব-জিন কিংবা অন্য কোন সৃষ্টির পক্ষে কখনো সম্ভবপর নয় সৃষ্টিরাজীর উপর ¯্রষ্টার উদ্দেশ্য অভিপ্রায় বাস্তবায়নে অন্তরায় সৃষ্টি করা কিংবা স্রষ্টটার নির্ধারিত পরিকল্পনা ও বিধি-বিধান অকার্যকর করা। সুষ্ঠু, সুনির্দিষ্ট ও সুপরিকল্পিত পন্থায় চন্দ্র-সূর্যের উদয়াস্ত দিবা-রজনী, মাস-বছর-শতাব্দী ইত্যাদি গমনাগমন, শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা ইত্যাদি ঋতু বৈচিত্রের বৈচিত্র্যময় বহিঃপ্রকাশ আসমানের বারি বর্ষণ আর জমিনের হরেক রকম ফল-মূল-শস্য উৎপাদন, সমুদ্রের ঝড়-ঝাঞ্ছা- জলোচ্ছাস ইত্যাদি মহান আল্লাহর সার্বভৌম কুদরতের সুস্পষ্ট নিদর্শন। যাতে কারো পক্ষ থেকে কোন প্রকারের হস্তক্ষেপ অসম্ভব-অকল্পনীয়। উদ্ধৃত আয়াতে খোদায়ী কুদরতের এই অমোঘ ও বাস্তব সত্য প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। (সুবহানাল্লাহ্)

“আল্লাহ হতে পলায়ন” মানে আল্লহর সৃষ্ট জগৎ ও কৃতিত্ব হতে পলায়ন। কোন সৃষ্টির পক্ষে কোন রূপে ¯্রষ্টার মালিকানাধীন জগৎ ও কর্তৃত্ব হতে কোনভাবে পলায়ন করা অসম্ভব-অকল্পনীয়। কারন, নভোমণ্ডল, ভূ-মণ্ডল, বায়ুমণ্ডল, চন্দ্র-সূর্য-নক্ষত্র, উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম, উর্ধ্ব -অধ এক কথায় দৃশ্যমান-অদৃশ্য সবই আল্লাহর কর্তৃত্ব ও পরিচালনাধীন। যেমন কুরআনে কারীমে এরশাদ হয়েছে- ولله ملك السموات والارض অর্থাৎ নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলের সালতানাত একমাত্র আল্লাহ তা‘য়ালারই কতৃত্বাধীন। অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছে- ولله ملك السموات وما فى الارض অর্থাৎ আসমান-যমিনে বিদ্যমান সবকিছুই একমাত্র মহান আল্লাহরই মালিকানাধীন। সূরা আর-রাহমানে এরশাদ করেন-
يامعشر الجنّ والإنس استطعتم ان تنفذوا من اقطار السموات والارض فانفذوا لا تنفذون الا بسلطان-
অর্থাৎ হে জিন ও ইনসানের দল! যদি তোমাদের পক্ষে এটা সম্ভপর হয় যে, তোমরা আসমানসমূহ ও যমিনের প্রান্তগুলো থেকে বের হয়ে যাবে, তাহলে বের হয়ে যাও! বের হয়ে যেখানেই যাবে সেখানে তাঁরই রাজত্ব বিরাজমান।
উপরিউক্ত আয়াতের মাধ্যমে খোদায়ী চ্যালেঞ্জ এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয় মানব-দানবসহ কোন সৃষ্টির পক্ষে ¯্রষ্টার কৃপা- করুণা কিংবা কর্তৃত্বের আওতাবহির্ভূত হওয়া সম্ভবপর নয় মোটেও। বসবাসের জন্য বাসস্থান জীবন রক্ষার তাগিদে রুটি-রুজি জীবিকার জন্য কর্মসংস্থান আর শ^াস-প্রশ^াসের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য বায়ু প্রবাহ ইত্যাদি সবই তো ¯্রষ্টার কৃপার-করুণার দান-অনুদান। সুতরাং সেই ¯্রষ্টাকে অস্বীকার বা বিস্মিত হয়ে তাঁর আদেশ-নিষেধ, বিধি-বিধান অমান্য করে আত্মরক্ষার চিন্তা ভাবনা অবাস্তব ও অলীক কল্পনা বৈ আর অন্য কিছু নয়।
মহান সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাব্বুল আ‘লামীনের কৃপা-করুণা, কিংবা কর্তৃত্বের আওতাবহির্ভূত হয়ে অস্তিত্ব রক্ষা করা যেহেতু অসম্ভব-অকল্পনীয় তখন তাঁরই প্রতি আকৃষ্ট ও আত্মসমর্পণ করত তাঁরই বিধি-বিধান পালনে অনুগত-বাধ্যগত হয়ে তাঁরই স্মরণে জীবনে চর্চায় আত্মনিয়োগ করাই বাস্তবতার দাবীও শ্রেয়। তাইতো আল্লাহ তা‘য়ালার আহ্বান- ففرّوا الى الله অর্থাৎ- তোমরা আল্লাহরই দিকে ছুটে এসো। মানব কুলের অভ্যন্তরীণ শত্রু নফসে আম্মারা আর বাইরের শত্রু জিন-ইনসান শয়তানের পেটে রাখা হাজারো ফাঁদ থেকে কুফর-শিরক পাপাচারের অন্ধকার গলি থেকে নিজকে মুক্ত করে ঈমান-ইসলাম, আল্লাহ-রাসূলের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আলোকিত জীবন গঠনে উদ্যোগী হওয়াই মানব জীবনের চূড়ান্ত সাফল্য। (আলহামদুলিল্লাহ) যেমন এরশাদ হয়েছে- قد افلح من تزكّى অর্থাৎ- “সেই সফলকাম হয়েছে যে নিজেকে কুফর-শিরক সহ সকল প্রকার পাপাচার হতে পবিত্র পরিশুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে।
ধর্মহীনতা থেকে ধর্মপরায়নতার প্রতি, ভোগ-বিলাসিতা হতে ত্যাগ ও সংযমের প্রতি, বেপরোয়া ও উশৃঙ্খল জীবন ত্যাগ করে সুন্নাতে রাসূলের অনুকরনে শরীয়ত সমৃদ্ধ সুশৃঙ্খল জীবন চর্চার প্রতি, ইহকাল নির্ভর জীবন সাধনা হতে পরকাল নির্ভর জীবন দর্শনের প্রতি জাগতিক সুখ-শান্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিতকারী জীবনধারা হতে পরকালীন চিরস্থায়ী সুখ-শান্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিতকারী নবী-অলি প্রদর্শিত জীবন ধারার প্রতি আকৃষ্ট হতে পারাই মানব জীবনের চূড়ান্ত সাফল্যময় কল্যাণকামী জীবন। মহান আল্লাহ সকলকে এর প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়ে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
Top