শরীকানা বা ভাগে কুরবানী শুধু মুসাফিরের জন্য নাকী মুকিমের জন্যও প্রযোজ্য সে সম্পর্কে।
আমাদের সমাজে লামাযহাবীরা বলে থাকে শুধু মাত্র মসাফির অবস্থায় এক গরুতে শরীকানা কুরবানী করা যাবে; মুকীম অবস্থায় করা যাবেনা। মুকীম অবস্থায় এক গরুতে একজনের বেশী কুরবানী করতে পারবেনা। অথচ তাদের এ বক্তব্য সালাফের মতামতের পরিপূর্ণ বিরোধী। তাদের মত এরূপ উদ্ভট মন্তব্য এর আগে কেউ করেনি। না কোন মুহাদ্দীস না কোন ইমাম।
মুহাদ্দীসগণের নীতি হচ্ছে হাদীস দ্বারা তারা যা বুঝেছেন সেটাই তারা শিরোনামে উল্লেখ করেন। তারা যে সকল হাদীস দিয়ে শরীকানা কুরবানী শুধুমাত্র মুকীমের জন্য খাস করে, সেই হাদীসগুলো আনার ক্ষেত্রে মুহাদ্দীসগণ কোথাও ‘সফরে কুরবানী’ বা এই হাদীস সফরের সাথে খাস এমন কথা কোথাও বলেন নি।
এখন আমরা হাদীসটি দেখি,
عن ابن عباس قال: كنا مع رسول الله صلى الله عليه و سلم في سفرِ فحضر الأضحى، فاشتركنا في البقرة سبعة و في البعير عشرة. [رواه الترمذي والنسائي وابن ماجه]
হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমরা সফরে ছিলাম। এমতাবস্থায় কুরবানীর সময় উপস্থিত হল। তাই আমরা একটি গাভীতে সাত জন শরীক হলাম এবং উটে দশ জন।
[সূত্রঃ তিরমিযী, হাদীস ১৫৩৭; নাসাঈ, হাদীস ৪৪০৪; ইবনু মাজাহ, হাদীস ৩১৩১/ মুসনাদ আহমদ ৩/৩০৩]।
হাদীস সম্পর্কে মুহাদ্দীসদের মতামত
__________
মুহাদ্দিসগণ যেহেতু তাঁদের হাদীস গ্রন্থে যেই সব শিরোনাম/অনুচ্ছেদ নির্ধারণ করেন, তাঁদের ফিক্হ তথা বুঝ হিসাবে । তাই আমরা এখানে দেখবো যে, উপরোক্ত হাদীসটি বিভিন্ন মুহাদ্দিসগণ কোন নামের অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন বা তাঁরা সেই অনুচ্ছেদের শিরোনাম কী নির্ণয় করেছেন, যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারব সেটা কোন বিষয়ের হাদীস।
১- ইমাম তিরমিযী (রহ) হাদীসটি যেই অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন, তার শিরোনাম হচ্ছে, ‘باب ما جاء في الاشتراك في الأضحية’। অর্থাৎ কুরবানীতে শরীক হওয়ার অনুচ্ছেদ। অতঃপর তিনি হুদায়বিয়ায় উট ও গরুতে ৭ জন করে শরীক হয়ে কুরবানী করার আর একটি হাদীস বর্ণনা করেন এবং বলেন:
والعمل على هذا عند أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم و غيرهم.
‘এর উপর সাহাবা এবং অন্যান্য আহলে ইলমগণের আমল রয়েছে’।
এই বাক্যটির ব্যাখ্যায় লামজহাবী আলেম মুবারকপূরী বলেন:
قوله (والعمل على هذا عند أهل العلم إلخ) أي على جواز اشتراك السبعة في البعير والبقرة في الهدي والأضحية- تحفة الأحوذي ৫/ ৭৩
‘অর্থাৎ হাদ্ঈ ও কুরবানীর উট ও গরুতে সাত জন শরীক হওয়ার বৈধতার ব্যপারে (আমল রয়েছে)’।
[সূত্রঃ তুহ্ফাতুল আহ্ ওয়াযী,৫/৭৩]।
হযরত ইবনে মাসঊদ রা. থেকে এক বর্ণনা পাওয়া যায়,
308 – قال: وثنا يوسف بن أبي يوسف عن أبيه عن أبي حنيفة، عن حماد، عن إبراهيم، عن ابن مسعود رضي الله عنه أنه قال: «البقرة تجزئ في الأضحى عن سبعة أناس» الآثار لأبي يوسف (ص: 62)
হযরত আবু ইউসূফ র. ইমাম আবু হানীফার সূত্রে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউস রাযি. এর বক্তব্য বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, কুরবানীর ক্ষেত্রে একটি গরু সাতজন ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট।
[সূত্রঃ কিতাবুল আসার, পৃ. ৬২, হাদীস ৩০৮]।
এই আসারে মুকিম নাকী মুসাফির পার্থক্য না করেই সাতজন শরীক হবার কথা এসেছে।
২- ইমাম নাসাঈ যেই অনুচ্ছেদে হাদীসটি নিয়ে আসেন, তার নামকরণ করা হয় এই ভাবে: ‘باب ما تجزئ عنه البدنة في الضحايا’। অর্থ, অনুচ্ছেদ, কুরবানীতে একটি উট কত জনের পক্ষে যথেষ্ট’।
[সূত্রঃ সুনানে নাসাঈ, , অনুচ্ছেদ নং ১৫]।
৩- ইবনু মাজাহ আযাহী/কুরবানী অধ্যায়ে যেই অনুচ্ছেদে হাদীসটি উল্লেখ করেন,তার শিরোনাম এইরূপ: ‘باب عن، كم تجزئ البدنة والبقرة’। অর্থ, অনুচ্ছেদ, একটি গরু ও উট কত জনের পক্ষে যথেষ্ট’।
[সূত্রঃ সুনানে ইবনে মাজাহ অনুচ্ছেদ নং ২৬/৫]।
৪- আবু দাউদে অনুচ্ছেদের নামকরণ করেছেন, باب في البقر والجزور عن كم تجزئ “গরু ও উট কত জনের পক্ষে যথেষ্ট” তিনি যাবের রা. এর সূত্রে বর্ণনা করেন।
ইমাম নববী (রঃ) বলেন,
وأجمعوا على أن الشاة لا يجوز الاشتراك فيها وفي هذه الأحاديث أن البدنة تجزي عن سبعة والبقرة عن سبعة وتقوم كل واحدة مقام سبع شياه- شرح النووي على مسلم (9/ 67)
অর্থাৎ, এ বিষয়ে উম্মাতের উলামাগণ একমত যে, ছাগল দিয়ে শরীকানা কুরবানী বৈধ নয়, তবে একটি উটে সাতজন অংশীদার হয়ে এবং একটি গরুতেও সাতজন অংশীদার হয়ে যদি কুরবানী করে তা হলে তা শরীয়ত সম্মত, কারণ উট ও গরুর প্রতিটি ভাগ একটি ছাগলের সমতুল্য।
[সূত্রঃ শরহে মুসলিম ৯/৬৭]।
হুদাইবিয়ার ঘটনায় সাহাবিগণ আল্লাহর রাসূলের সাথে একটি উট ও গরু সাত জনের পক্ষে কুরবানী করেন মর্মে যেই হাদীসটি মুসলিম সহ অন্যান্য মুহাদ্দিস বর্ণনা করেন। সেই সম্পর্কে সাহেবে আউনুল মা’বুদ বলেন:
قال في السبل دل الحديث على جواز الاشتراك في البدنة والبقرة وأنهما يجزيان عن سبعة وهذا في الهدي ويقاس عليه الأضحية بل قد ورد فيها نص -عون المعبود وحاشية ابن القيم (7/ 362)
‘সুবুলে বলা হয়েছেঃ হাদীসটি উট ও গরুতে শরীক হওয়া জায়েজের প্রমাণ এবং উভয়ে সাত জনের পক্ষে যথেষ্ট। এটা হাদঈর ক্ষেত্রে এবং কুরবানীকে এর উপর কিয়াস করা হবে; বরং কুরবানীর সম্পর্কে নাস বা দলীল এসেছে’….।
[সূত্রঃ আউনুল মা’বূদ,৭/৩৬২]।
অতঃপর তিনি ইবনে আব্বাস (রাযি:) থেকে বর্ণিত হাদীসটি উল্লেখ করেন, যাতে গরুতে ৭ জন এবং উটে ১০ জন শরীক হওয়ার বর্ণনা এসেছে।
মুহাদ্দিসগণের উপরোক্ত অনুচ্ছেদ সমূহ ও বিদগ্ধ উলামাগণের ব্যাখ্যানুযায়ী আমরা একথা স্পষ্ট রূপে বুঝতে সক্ষম যে, হাদীসটি থেকে মুকীম ও মুসাফিরের মধ্যে পার্থক্য করা ছাড়াই তাঁরা গরু ও উটের কুরবানীতে শরীক হওয়ার বৈধতা বুঝেছেন। অর্থাৎ হাদীসটি কেবল সফর অবস্থায় কুরবানীতে শরীক হওয়ার সম্পর্কে নির্দিষ্ট, এমন নয়। তাই তাঁদের কেউই এটা সফরের সাথে নির্দিষ্ট, এমন কোন অনুচ্ছেদ লেখেন নি আর না ব্যাখ্যাকারীগণ সেই দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
ইমাম ও ফুকাহাদের মতামত
____________
ইবনে হাযম তার কিতাবে উল্লেখ করেন,
وقال أبو حنيفة، وسفيان الثوري، والأوزاعي، والشافعي، وأحمد، وإسحاق، وأبو ثور، وأبو سليمان: تجزئ البقرة، أو الناقة عن سبعة فأقل أجنبيين وغير أجنبيين يشتركون فيها، ولا تجزئ عن أكثر، ولا تجزئ الشاة إلا عن واحد.- المحلى بالآثار (6/ 45)
ঈমামে আযম আবু হানীফা, সুফ্ইয়ান সাওরী, আওযায়ী, শাফেয়ী, আহমদ, ইসহাক্ব, আবু সাউর এবং আবু সুলায়মান বলেন: একটি গরু কিংবা একটি উট সাত কিংবা তার থেকে কম সংখ্যকের পক্ষে যথেষ্ট, তারা পারস্পারিক পরিচিত হোক অথবা না হোক। তারা তাতে শরীক হতে পারে, তবে এর থেকে বেশী সংখ্যার পক্ষে যথেষ্ট হবে না’।
[সূত্রঃ আল্ মুহাল্লা, ইবনু হায্ম,৬/৪৫ পৃঃ]।
ইবনু কুদামাহ (রহ) তাঁর প্রসিদ্ধ মুগনী গ্রন্থে ১৭৬৮ নং মাসআলার ব্যাখ্যায় বলেন:
وجملته أنه يجوز أن يشترك في التضحية بالبدنة والبقرة سبعة، واجبا كان أو تطوعا، سواء كانوا كلهم متقربين -المغني لابن قدامة (9/ 458)
ফলকথা উট ও গরুতে সাত জন শরীক হয়ে কুরবানী দেওয়া বৈধ। সেটা ওয়াজিব হোক কিংবা নফল। তারা সকলে নৈকট্যের আশাবাদী হোক কিংবা কেউ নৈকট্যের আর অন্য কেউ গোশতের। এটাই শাফেয়ী বলেন। মালেক বলেন: হাদ্ঈতে শরীক হওয়া জায়েজ নয়’।
[সূত্রঃ আল মুগনী, ১৩/৩৯২]।
ইনবু হায্ম (রহ) তাঁর আল্ মুহাল্লা গ্রন্থে ৯৮৪ নং মাস্আলা বর্ণনায় বলেন:
[مسألة يشترك في الأضحية الواحدة الجماعة]
984 – مسألة: وجائز أن يشترك في الأضحية الواحدة أي شيء كانت الجماعة من أهل البيت وغيرهم، وجائز أن يضحي الواحد بعدد من الأضاحي «ضحى رسول الله – صلى الله عليه وسلم – بكبشين أملحين» كما ذكرنا آنفا ولم ينه عن أكثر من ذلك، والأضحية فعل خير، فالاستكثار من الخير حسن. -المحلى بالآثار (6/ 45)
‘একটি কুরবানীতে শরীক হওয়া বৈধ, সেই দলটি একটি বাড়ির সদস্য হোক কিংবা বিভিন্ন বাড়ির এবং এক জনের একাধিক কুরবানী করাও বৈধ, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুটি ভেড়া কুরবানী করেন যেমন একটু আগে বর্ণনা করেছি এবং তিনি(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) এর অতিরিক্ত করতে নিষেধ করেননি। কুরবানী একটি সৎ কাজ। আর বেশী বেশী সৎ কাজ করা উত্তম।
উট কিংবা গরুর ভাগে শরীক হয়ে কুরবানী দেয়া সম্পর্কে সউদী স্থায়ী উলামা পরিষদের ফাতওয়াঃ
لفتوى رقم ( 2416 )
س: هل يجوز الاشتراك في الأضحية، وكم عدد المسلمين
الذين يشتركون في الأضحية، وهل يكونون من أهل بيت واحد، وهل الاشتراك في الأضحية بدعة أم لا؟
ج: يجوز أن يضحي الرجل عنه وعن أهل بيته بشاة، والأصل في ذلك ما ثبت عنه صلى الله عليه وسلم أنه كان يضحي بالشاة الواحدة عنه وعن أهل بيته، متفق عليه، وما رواه مالك ، وابن ماجه ، والترمذي وصححه، عن عطاء بن يسار قال: سألت أبا أيوب الأنصاري: كيف كانت الضحايا فيكم على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ قال: كان الرجل في عهد النبي صلى الله عليه وسلم يضحي بالشاة عنه وعن أهل بيته، فيأكلون ويطعمون، حتى تباهى الناس فصاروا كما ترى .
وتجزئ البدنة والبقرة عن سبعة، سواء كانوا من أهل بيت
واحد أو من بيوت متفرقين، وسواء كان بينهم قرابة أو لا؛ لأن النبي صلى الله عليه وسلم أذن للصحابة في الاشتراك في البدنة والبقرة كل سبعة في واحدة، ولم يفصل ذلك. والله أعلم.
وبالله التوفيق وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه وسلم.
প্রশ্ন: কুরবানীতে শরীক হওয়া জায়েজ কি, মুসলিমদের কত সংখ্যক লোক তাতে শরীক হতে পারে, তারা কি এক পরিবারের হবে এবং কুরবানীতে শরীক হওয়ার বিষয়টি কি বিদআত?
উত্তর: [তারা প্রথমে একটি ছাগলের কুরবানী, যা একটি বাড়ির সদস্যদের পক্ষে যথেষ্ট তা উল্লেখ করেন, অতঃপর বলেন] এবং একটি উট ও একটি গরু সাত জনের পক্ষে যথেষ্ট। সেই সাত জন একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হোক কিংবা বিভিন্ন পরিবারের, তাদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকুক কিংবা না থাকুক; কারণ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবিদের মধ্যে প্রত্যেক সাত জনকে একটি উটে ও গরুতে শরীক হওয়ার অনুমতি দেন। ওয়াল্লাহু আ’লাম।
[সূত্রঃ ফাতাওয়াল্ লাজনা আদ্দায়িমাহ,১১/৪০১-৪০২,ফাতওয়া নং ২৪১৬]।
এই মত পোষণকারীদের বলবো:
১- কুরআন-সুন্নাহকে বুঝার ব্যাপারে সালাফী নীতি হচ্ছে, তা ঐভাবে বুঝা যে ভাবে আমাদের পূর্বসুরীগণ বুঝেছেন। এই নীতির আলোকে আমরা উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে তাঁদের মতামত ভাল ভাবে জানতে পারছি যে, তাঁরা কেউই এই মত প্রকাশ করেন নি যে, ভাগা কুরবানীর বিষয়টি মুসাফিরের সাথে সম্পৃক্ত; বরং তারা বিষয়টি আম/ব্যাপক হিসাবে বুঝেছেন এবং তা মুক্বীমদের জন্যেও প্রযোজ্য মনে করেছেন। আর তারা যেভাবে বুঝতেন সেভাবে বুঝাই উত্তম।
২- যদি এই কারণে শরীকানায় কুরবানী করাকে সফরের সাথে খাস করা হয় যে, এটা সফরে ঘটেছিল মুকীম অবস্থায় ঘটেনি। তাহলে বলবো: নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন কাজ সফরে সংঘটিত হলে সেটা কি সফরের সাথে খাস হয়ে যায়, না বিধানটি আম/অনির্দিষ্ট থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত তা দলীলের মাধ্যমে খাস না করা হয়?
আসলে নবী কারিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) এর কথা, কাজ ও সম্মতি অনির্দিষ্ট অর্থেই ব্যবহৃত হয়, যতক্ষণে নির্দিষ্টের প্রমাণ না পাওয়া যায়। তাই উসূলে ফিক্হের একটি মূল কায়েদা হচ্ছে ‘‘আল্ ইবরাতু বি উমূমিল্ লাফযি বি খসূসিস্ সাবাব’ অর্থ, শব্দের অনির্দিষ্ট বিবেচ্য নির্দিষ্ট কারণ নয়’। অর্থাৎ অনির্দিষ্ট তথা আম শব্দ ও বিধান অনির্দিষ্ট হিসাবেই প্রযোজ্য হবে, যদিও বিধানটি বা শব্দটি কোন নির্দিষ্ট কারণে বলা হয়ে থাকে। তাই কুরবানীতে শরীক হওয়ার ঘটনাটি যদিও একটি খাস অবস্থা অর্থাৎ সফরাবস্থায় ঘটেছে কিন্তু সেটা সেই অবস্থার সাথে খাস/নির্দিষ্ট হবে না বরং আম/অনির্দিষ্ট হিসাবে প্রযোজ্য হবে।
৩- সফর অবস্থায় ভাগা কুরবানীকে খাসকারী সম্মানিত লেখক বলেন: ‘বিগত বিদ্বানগণের যুগে সম্ভবত: মুক্বীম
অবস্থায় ভাগা কুরবানীর প্রশ্ন উত্থাপিত হয় নি’। [সূত্রঃ মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীকা/১৯] আমি বলবো: উত্থাপিত হয়েছে যেমন হাদ্ঈ ও উযহিয়্যার হাদীসগুলি দ্বারা প্রমাণিত। তাছাড়া প্রাচীন ফুকাহাগণ এই মর্মে মতামত পেশ করেছেন যে, উত্তম কুরবানী কি? তাতে তাঁরা উট-গরুর ভাগের কথা উল্লেখ করেছেন। ইবনু কুদামাহ বলেন: ‘সর্ব্বোত্তম কুরবানী হচ্ছে উটের কুরবানী, অতঃপর গরু, তার পর ছাগল, তারপর উটের অংশ তারপর গরুর অংশ। এটা আবু হানীফা ও শাফেয়ীর মন্তব্য’।
[দেখুন,মুগনী,১৩/৩৬৬]।
৪- উপরোক্ত লেখক মুকীম অবস্থায় শরীকানায় কুরবানী চলবে না মর্মে একটি যুক্তি পেশ করে লিখেন: ‘এক্ষণে যদি আমরা ভাগা কুরবানী করি, তাহলে পশুর হাড়-হাড্ডি ও গোশত ভাগ করতে পারবো, কিন্তু তার জীবন ভাগ করতে পারব কি’? [মাসায়েলে কুরবানী/২০] আমি বলবো: এটি একটি কেয়াস। এর প্রয়োজন এই স্থানে তেমন নেই। তবে যেহেতু তিনি নিজেই এটা স্বীকার করেন যে, সফর অবস্থায় একটি গরু বা উটে সাত জন শরীক হতে পারে, সেহেতু বলা উচিৎ হবে যে, যদি সফর অবস্থায় একটি পশুর জীবন ৭ ভাগ হতে পারে, তো মুকীম অবস্থায় অসুবিধা কোথায়?
______________
আমাদের সমাজে লামাযহাবীরা বলে থাকে শুধু মাত্র মসাফির অবস্থায় এক গরুতে শরীকানা কুরবানী করা যাবে; মুকীম অবস্থায় করা যাবেনা। মুকীম অবস্থায় এক গরুতে একজনের বেশী কুরবানী করতে পারবেনা। অথচ তাদের এ বক্তব্য সালাফের মতামতের পরিপূর্ণ বিরোধী। তাদের মত এরূপ উদ্ভট মন্তব্য এর আগে কেউ করেনি। না কোন মুহাদ্দীস না কোন ইমাম।
মুহাদ্দীসগণের নীতি হচ্ছে হাদীস দ্বারা তারা যা বুঝেছেন সেটাই তারা শিরোনামে উল্লেখ করেন। তারা যে সকল হাদীস দিয়ে শরীকানা কুরবানী শুধুমাত্র মুকীমের জন্য খাস করে, সেই হাদীসগুলো আনার ক্ষেত্রে মুহাদ্দীসগণ কোথাও ‘সফরে কুরবানী’ বা এই হাদীস সফরের সাথে খাস এমন কথা কোথাও বলেন নি।
এখন আমরা হাদীসটি দেখি,
عن ابن عباس قال: كنا مع رسول الله صلى الله عليه و سلم في سفرِ فحضر الأضحى، فاشتركنا في البقرة سبعة و في البعير عشرة. [رواه الترمذي والنسائي وابن ماجه]
হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমরা সফরে ছিলাম। এমতাবস্থায় কুরবানীর সময় উপস্থিত হল। তাই আমরা একটি গাভীতে সাত জন শরীক হলাম এবং উটে দশ জন।
[সূত্রঃ তিরমিযী, হাদীস ১৫৩৭; নাসাঈ, হাদীস ৪৪০৪; ইবনু মাজাহ, হাদীস ৩১৩১/ মুসনাদ আহমদ ৩/৩০৩]।
হাদীস সম্পর্কে মুহাদ্দীসদের মতামত
__________
মুহাদ্দিসগণ যেহেতু তাঁদের হাদীস গ্রন্থে যেই সব শিরোনাম/অনুচ্ছেদ নির্ধারণ করেন, তাঁদের ফিক্হ তথা বুঝ হিসাবে । তাই আমরা এখানে দেখবো যে, উপরোক্ত হাদীসটি বিভিন্ন মুহাদ্দিসগণ কোন নামের অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন বা তাঁরা সেই অনুচ্ছেদের শিরোনাম কী নির্ণয় করেছেন, যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারব সেটা কোন বিষয়ের হাদীস।
১- ইমাম তিরমিযী (রহ) হাদীসটি যেই অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন, তার শিরোনাম হচ্ছে, ‘باب ما جاء في الاشتراك في الأضحية’। অর্থাৎ কুরবানীতে শরীক হওয়ার অনুচ্ছেদ। অতঃপর তিনি হুদায়বিয়ায় উট ও গরুতে ৭ জন করে শরীক হয়ে কুরবানী করার আর একটি হাদীস বর্ণনা করেন এবং বলেন:
والعمل على هذا عند أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم و غيرهم.
‘এর উপর সাহাবা এবং অন্যান্য আহলে ইলমগণের আমল রয়েছে’।
এই বাক্যটির ব্যাখ্যায় লামজহাবী আলেম মুবারকপূরী বলেন:
قوله (والعمل على هذا عند أهل العلم إلخ) أي على جواز اشتراك السبعة في البعير والبقرة في الهدي والأضحية- تحفة الأحوذي ৫/ ৭৩
‘অর্থাৎ হাদ্ঈ ও কুরবানীর উট ও গরুতে সাত জন শরীক হওয়ার বৈধতার ব্যপারে (আমল রয়েছে)’।
[সূত্রঃ তুহ্ফাতুল আহ্ ওয়াযী,৫/৭৩]।
হযরত ইবনে মাসঊদ রা. থেকে এক বর্ণনা পাওয়া যায়,
308 – قال: وثنا يوسف بن أبي يوسف عن أبيه عن أبي حنيفة، عن حماد، عن إبراهيم، عن ابن مسعود رضي الله عنه أنه قال: «البقرة تجزئ في الأضحى عن سبعة أناس» الآثار لأبي يوسف (ص: 62)
হযরত আবু ইউসূফ র. ইমাম আবু হানীফার সূত্রে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউস রাযি. এর বক্তব্য বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, কুরবানীর ক্ষেত্রে একটি গরু সাতজন ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট।
[সূত্রঃ কিতাবুল আসার, পৃ. ৬২, হাদীস ৩০৮]।
এই আসারে মুকিম নাকী মুসাফির পার্থক্য না করেই সাতজন শরীক হবার কথা এসেছে।
২- ইমাম নাসাঈ যেই অনুচ্ছেদে হাদীসটি নিয়ে আসেন, তার নামকরণ করা হয় এই ভাবে: ‘باب ما تجزئ عنه البدنة في الضحايا’। অর্থ, অনুচ্ছেদ, কুরবানীতে একটি উট কত জনের পক্ষে যথেষ্ট’।
[সূত্রঃ সুনানে নাসাঈ, , অনুচ্ছেদ নং ১৫]।
৩- ইবনু মাজাহ আযাহী/কুরবানী অধ্যায়ে যেই অনুচ্ছেদে হাদীসটি উল্লেখ করেন,তার শিরোনাম এইরূপ: ‘باب عن، كم تجزئ البدنة والبقرة’। অর্থ, অনুচ্ছেদ, একটি গরু ও উট কত জনের পক্ষে যথেষ্ট’।
[সূত্রঃ সুনানে ইবনে মাজাহ অনুচ্ছেদ নং ২৬/৫]।
৪- আবু দাউদে অনুচ্ছেদের নামকরণ করেছেন, باب في البقر والجزور عن كم تجزئ “গরু ও উট কত জনের পক্ষে যথেষ্ট” তিনি যাবের রা. এর সূত্রে বর্ণনা করেন।
ইমাম নববী (রঃ) বলেন,
وأجمعوا على أن الشاة لا يجوز الاشتراك فيها وفي هذه الأحاديث أن البدنة تجزي عن سبعة والبقرة عن سبعة وتقوم كل واحدة مقام سبع شياه- شرح النووي على مسلم (9/ 67)
অর্থাৎ, এ বিষয়ে উম্মাতের উলামাগণ একমত যে, ছাগল দিয়ে শরীকানা কুরবানী বৈধ নয়, তবে একটি উটে সাতজন অংশীদার হয়ে এবং একটি গরুতেও সাতজন অংশীদার হয়ে যদি কুরবানী করে তা হলে তা শরীয়ত সম্মত, কারণ উট ও গরুর প্রতিটি ভাগ একটি ছাগলের সমতুল্য।
[সূত্রঃ শরহে মুসলিম ৯/৬৭]।
হুদাইবিয়ার ঘটনায় সাহাবিগণ আল্লাহর রাসূলের সাথে একটি উট ও গরু সাত জনের পক্ষে কুরবানী করেন মর্মে যেই হাদীসটি মুসলিম সহ অন্যান্য মুহাদ্দিস বর্ণনা করেন। সেই সম্পর্কে সাহেবে আউনুল মা’বুদ বলেন:
قال في السبل دل الحديث على جواز الاشتراك في البدنة والبقرة وأنهما يجزيان عن سبعة وهذا في الهدي ويقاس عليه الأضحية بل قد ورد فيها نص -عون المعبود وحاشية ابن القيم (7/ 362)
‘সুবুলে বলা হয়েছেঃ হাদীসটি উট ও গরুতে শরীক হওয়া জায়েজের প্রমাণ এবং উভয়ে সাত জনের পক্ষে যথেষ্ট। এটা হাদঈর ক্ষেত্রে এবং কুরবানীকে এর উপর কিয়াস করা হবে; বরং কুরবানীর সম্পর্কে নাস বা দলীল এসেছে’….।
[সূত্রঃ আউনুল মা’বূদ,৭/৩৬২]।
অতঃপর তিনি ইবনে আব্বাস (রাযি:) থেকে বর্ণিত হাদীসটি উল্লেখ করেন, যাতে গরুতে ৭ জন এবং উটে ১০ জন শরীক হওয়ার বর্ণনা এসেছে।
মুহাদ্দিসগণের উপরোক্ত অনুচ্ছেদ সমূহ ও বিদগ্ধ উলামাগণের ব্যাখ্যানুযায়ী আমরা একথা স্পষ্ট রূপে বুঝতে সক্ষম যে, হাদীসটি থেকে মুকীম ও মুসাফিরের মধ্যে পার্থক্য করা ছাড়াই তাঁরা গরু ও উটের কুরবানীতে শরীক হওয়ার বৈধতা বুঝেছেন। অর্থাৎ হাদীসটি কেবল সফর অবস্থায় কুরবানীতে শরীক হওয়ার সম্পর্কে নির্দিষ্ট, এমন নয়। তাই তাঁদের কেউই এটা সফরের সাথে নির্দিষ্ট, এমন কোন অনুচ্ছেদ লেখেন নি আর না ব্যাখ্যাকারীগণ সেই দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
ইমাম ও ফুকাহাদের মতামত
____________
ইবনে হাযম তার কিতাবে উল্লেখ করেন,
وقال أبو حنيفة، وسفيان الثوري، والأوزاعي، والشافعي، وأحمد، وإسحاق، وأبو ثور، وأبو سليمان: تجزئ البقرة، أو الناقة عن سبعة فأقل أجنبيين وغير أجنبيين يشتركون فيها، ولا تجزئ عن أكثر، ولا تجزئ الشاة إلا عن واحد.- المحلى بالآثار (6/ 45)
ঈমামে আযম আবু হানীফা, সুফ্ইয়ান সাওরী, আওযায়ী, শাফেয়ী, আহমদ, ইসহাক্ব, আবু সাউর এবং আবু সুলায়মান বলেন: একটি গরু কিংবা একটি উট সাত কিংবা তার থেকে কম সংখ্যকের পক্ষে যথেষ্ট, তারা পারস্পারিক পরিচিত হোক অথবা না হোক। তারা তাতে শরীক হতে পারে, তবে এর থেকে বেশী সংখ্যার পক্ষে যথেষ্ট হবে না’।
[সূত্রঃ আল্ মুহাল্লা, ইবনু হায্ম,৬/৪৫ পৃঃ]।
ইবনু কুদামাহ (রহ) তাঁর প্রসিদ্ধ মুগনী গ্রন্থে ১৭৬৮ নং মাসআলার ব্যাখ্যায় বলেন:
وجملته أنه يجوز أن يشترك في التضحية بالبدنة والبقرة سبعة، واجبا كان أو تطوعا، سواء كانوا كلهم متقربين -المغني لابن قدامة (9/ 458)
ফলকথা উট ও গরুতে সাত জন শরীক হয়ে কুরবানী দেওয়া বৈধ। সেটা ওয়াজিব হোক কিংবা নফল। তারা সকলে নৈকট্যের আশাবাদী হোক কিংবা কেউ নৈকট্যের আর অন্য কেউ গোশতের। এটাই শাফেয়ী বলেন। মালেক বলেন: হাদ্ঈতে শরীক হওয়া জায়েজ নয়’।
[সূত্রঃ আল মুগনী, ১৩/৩৯২]।
ইনবু হায্ম (রহ) তাঁর আল্ মুহাল্লা গ্রন্থে ৯৮৪ নং মাস্আলা বর্ণনায় বলেন:
[مسألة يشترك في الأضحية الواحدة الجماعة]
984 – مسألة: وجائز أن يشترك في الأضحية الواحدة أي شيء كانت الجماعة من أهل البيت وغيرهم، وجائز أن يضحي الواحد بعدد من الأضاحي «ضحى رسول الله – صلى الله عليه وسلم – بكبشين أملحين» كما ذكرنا آنفا ولم ينه عن أكثر من ذلك، والأضحية فعل خير، فالاستكثار من الخير حسن. -المحلى بالآثار (6/ 45)
‘একটি কুরবানীতে শরীক হওয়া বৈধ, সেই দলটি একটি বাড়ির সদস্য হোক কিংবা বিভিন্ন বাড়ির এবং এক জনের একাধিক কুরবানী করাও বৈধ, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুটি ভেড়া কুরবানী করেন যেমন একটু আগে বর্ণনা করেছি এবং তিনি(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) এর অতিরিক্ত করতে নিষেধ করেননি। কুরবানী একটি সৎ কাজ। আর বেশী বেশী সৎ কাজ করা উত্তম।
উট কিংবা গরুর ভাগে শরীক হয়ে কুরবানী দেয়া সম্পর্কে সউদী স্থায়ী উলামা পরিষদের ফাতওয়াঃ
لفتوى رقم ( 2416 )
س: هل يجوز الاشتراك في الأضحية، وكم عدد المسلمين
الذين يشتركون في الأضحية، وهل يكونون من أهل بيت واحد، وهل الاشتراك في الأضحية بدعة أم لا؟
ج: يجوز أن يضحي الرجل عنه وعن أهل بيته بشاة، والأصل في ذلك ما ثبت عنه صلى الله عليه وسلم أنه كان يضحي بالشاة الواحدة عنه وعن أهل بيته، متفق عليه، وما رواه مالك ، وابن ماجه ، والترمذي وصححه، عن عطاء بن يسار قال: سألت أبا أيوب الأنصاري: كيف كانت الضحايا فيكم على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ قال: كان الرجل في عهد النبي صلى الله عليه وسلم يضحي بالشاة عنه وعن أهل بيته، فيأكلون ويطعمون، حتى تباهى الناس فصاروا كما ترى .
وتجزئ البدنة والبقرة عن سبعة، سواء كانوا من أهل بيت
واحد أو من بيوت متفرقين، وسواء كان بينهم قرابة أو لا؛ لأن النبي صلى الله عليه وسلم أذن للصحابة في الاشتراك في البدنة والبقرة كل سبعة في واحدة، ولم يفصل ذلك. والله أعلم.
وبالله التوفيق وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه وسلم.
প্রশ্ন: কুরবানীতে শরীক হওয়া জায়েজ কি, মুসলিমদের কত সংখ্যক লোক তাতে শরীক হতে পারে, তারা কি এক পরিবারের হবে এবং কুরবানীতে শরীক হওয়ার বিষয়টি কি বিদআত?
উত্তর: [তারা প্রথমে একটি ছাগলের কুরবানী, যা একটি বাড়ির সদস্যদের পক্ষে যথেষ্ট তা উল্লেখ করেন, অতঃপর বলেন] এবং একটি উট ও একটি গরু সাত জনের পক্ষে যথেষ্ট। সেই সাত জন একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হোক কিংবা বিভিন্ন পরিবারের, তাদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকুক কিংবা না থাকুক; কারণ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবিদের মধ্যে প্রত্যেক সাত জনকে একটি উটে ও গরুতে শরীক হওয়ার অনুমতি দেন। ওয়াল্লাহু আ’লাম।
[সূত্রঃ ফাতাওয়াল্ লাজনা আদ্দায়িমাহ,১১/৪০১-৪০২,ফাতওয়া নং ২৪১৬]।
এই মত পোষণকারীদের বলবো:
১- কুরআন-সুন্নাহকে বুঝার ব্যাপারে সালাফী নীতি হচ্ছে, তা ঐভাবে বুঝা যে ভাবে আমাদের পূর্বসুরীগণ বুঝেছেন। এই নীতির আলোকে আমরা উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে তাঁদের মতামত ভাল ভাবে জানতে পারছি যে, তাঁরা কেউই এই মত প্রকাশ করেন নি যে, ভাগা কুরবানীর বিষয়টি মুসাফিরের সাথে সম্পৃক্ত; বরং তারা বিষয়টি আম/ব্যাপক হিসাবে বুঝেছেন এবং তা মুক্বীমদের জন্যেও প্রযোজ্য মনে করেছেন। আর তারা যেভাবে বুঝতেন সেভাবে বুঝাই উত্তম।
২- যদি এই কারণে শরীকানায় কুরবানী করাকে সফরের সাথে খাস করা হয় যে, এটা সফরে ঘটেছিল মুকীম অবস্থায় ঘটেনি। তাহলে বলবো: নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন কাজ সফরে সংঘটিত হলে সেটা কি সফরের সাথে খাস হয়ে যায়, না বিধানটি আম/অনির্দিষ্ট থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত তা দলীলের মাধ্যমে খাস না করা হয়?
আসলে নবী কারিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) এর কথা, কাজ ও সম্মতি অনির্দিষ্ট অর্থেই ব্যবহৃত হয়, যতক্ষণে নির্দিষ্টের প্রমাণ না পাওয়া যায়। তাই উসূলে ফিক্হের একটি মূল কায়েদা হচ্ছে ‘‘আল্ ইবরাতু বি উমূমিল্ লাফযি বি খসূসিস্ সাবাব’ অর্থ, শব্দের অনির্দিষ্ট বিবেচ্য নির্দিষ্ট কারণ নয়’। অর্থাৎ অনির্দিষ্ট তথা আম শব্দ ও বিধান অনির্দিষ্ট হিসাবেই প্রযোজ্য হবে, যদিও বিধানটি বা শব্দটি কোন নির্দিষ্ট কারণে বলা হয়ে থাকে। তাই কুরবানীতে শরীক হওয়ার ঘটনাটি যদিও একটি খাস অবস্থা অর্থাৎ সফরাবস্থায় ঘটেছে কিন্তু সেটা সেই অবস্থার সাথে খাস/নির্দিষ্ট হবে না বরং আম/অনির্দিষ্ট হিসাবে প্রযোজ্য হবে।
৩- সফর অবস্থায় ভাগা কুরবানীকে খাসকারী সম্মানিত লেখক বলেন: ‘বিগত বিদ্বানগণের যুগে সম্ভবত: মুক্বীম
অবস্থায় ভাগা কুরবানীর প্রশ্ন উত্থাপিত হয় নি’। [সূত্রঃ মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীকা/১৯] আমি বলবো: উত্থাপিত হয়েছে যেমন হাদ্ঈ ও উযহিয়্যার হাদীসগুলি দ্বারা প্রমাণিত। তাছাড়া প্রাচীন ফুকাহাগণ এই মর্মে মতামত পেশ করেছেন যে, উত্তম কুরবানী কি? তাতে তাঁরা উট-গরুর ভাগের কথা উল্লেখ করেছেন। ইবনু কুদামাহ বলেন: ‘সর্ব্বোত্তম কুরবানী হচ্ছে উটের কুরবানী, অতঃপর গরু, তার পর ছাগল, তারপর উটের অংশ তারপর গরুর অংশ। এটা আবু হানীফা ও শাফেয়ীর মন্তব্য’।
[দেখুন,মুগনী,১৩/৩৬৬]।
৪- উপরোক্ত লেখক মুকীম অবস্থায় শরীকানায় কুরবানী চলবে না মর্মে একটি যুক্তি পেশ করে লিখেন: ‘এক্ষণে যদি আমরা ভাগা কুরবানী করি, তাহলে পশুর হাড়-হাড্ডি ও গোশত ভাগ করতে পারবো, কিন্তু তার জীবন ভাগ করতে পারব কি’? [মাসায়েলে কুরবানী/২০] আমি বলবো: এটি একটি কেয়াস। এর প্রয়োজন এই স্থানে তেমন নেই। তবে যেহেতু তিনি নিজেই এটা স্বীকার করেন যে, সফর অবস্থায় একটি গরু বা উটে সাত জন শরীক হতে পারে, সেহেতু বলা উচিৎ হবে যে, যদি সফর অবস্থায় একটি পশুর জীবন ৭ ভাগ হতে পারে, তো মুকীম অবস্থায় অসুবিধা কোথায়?
______________