عَنْ عَبْدِ الله بْنِ عَمرو رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنِّ بنى اِسْرَائِيْل تََفَرَّقَتْ عَلى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِيْنَ مِلَّةٌ وَتَفْتَرِقُ اُمِّتى عَلى ثلاث وسبعين مِلَّةً كلهم فى النار اِلَّا مِلَّة وَاحِدَة قَالُوْا مَنْ هِىَ يَارَسُوْلَ الله قَالَ مَااَنَا عَلَيْهِ وَاَصْحَابِىْ – (مشكوة- صفحه ৩০)

অনুবাদ: হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, বনী ইস্রাইল বাহাত্তর ফির্কা বা দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমার উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে। তাদের মধ্যে একটি দল ব্যতীত অবশিষ্ট সব ফির্কা জাহান্নামী হবে। সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! সেই নাজাত বা মুক্তি প্রাপ্ত দল কোনটি? প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, আমি এবং আমার সাহাবীগণ যে আক্বিদার উপর রয়েছি। (ওই আক্বিদার উপর যে দলটি থাকবে তারাই মুক্তিপ্রাপ্ত দল। [মিশকাত শরীফ: পৃষ্ঠা ৩০]

প্রাসঙ্গিক আলোচনা
বর্ণিত হাদীস শরীফে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী হওয়া প্রমাণ করে। তিনি ভালোভাবে জানতেন যে, তাঁর উম্মতের লোকেরা অদূর ভবিষ্যতে তাঁর প্রদর্শিত ও তাঁর সাহাবীগণের অনুসৃত পথে মতে অটল ও অবিচল থাকবে না। আক্বিদা বিশ্বাসে তারা দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন পথ ও মত অবলম্বন করবে। পরবর্তীতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র ভবিষ্যৎ বাণী অনুযায়ী হয়েছেও তাই। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ইসলামের ছদ্মাবরণে ইসলাম নামধারী বিভিন্ন দল উপদল সৃষ্টি হয়েছে যে সব দল উপদলের সৃষ্ট ভ্রান্ত আক্বিদা বিশ্বাস অনুসরণ করে যুগে যুগে মানুষ পথভ্রষ্ট হয়েছে। নিজেরা জাহান্নামী হয়েছে অন্যদেরকেও জাহান্নামী করেছে। কখনো আল্লাহর জাত ও সিফাত তথা সত্তাগত ও গুণাবলী সংক্রান্ত আক্বিদায় অবিশ্বাস, কখনো সম্মানিত রাসূলগণের নবুয়ত ও রিসালতের সুমহান মর্যাদা ও শান-মানের প্রতি বিষোদঘার, কখনো পূত:পবিত্র চরিত্রের অধিকারী সত্যের মাপকাঠি সম্মানিত সাহাবায়ে কেরামের প্রতি কটূক্তি-ধৃষ্টতা ও বিদ্বেষ পোষণ, কখনো আহলে বায়তে রাসূলের প্রতি অশ্রদ্ধা অসম্মান ও অবমাননা, আবার কখনো আল্লাহর

পুণ্যাত্মা প্রিয় বান্দা সালেহীন-কামেলীন-আউলিয়ায়ে কেরাম বুজুর্গানে দ্বীন ও মযহাব ও ত্বরীকতের সম্মানিত ইমামদের প্রতি অশালীন ও আপত্তিকর মন্তব্য ও বক্তব্য উপস্থাপন, তাদের পবিত্র সত্তার প্রতি কালিমা লেপনের অপপ্রয়াস ও অপচেষ্টা।

যুগে যুগে ওইসব পথভ্রষ্ট সম্প্রদায়গুলোর জাহান্নামী দল হিসেবে তাদের আক্বিদা বিশ্বাস ও স্বরূপ উম্মোচিত হয়েছে, মুতাযিলা, জবরিয়া কদরিয়া, মুরজিয়া, মুশাব্বিহা, রাফেজী, খারেজী, নাজারিয়া-শিয়া, ফারারিয়া, জহমিয়া, কারামিয়া, পরবর্তীতে ওহাবী-নজদী-তাবলীগি, মওদুদী, সালাফী, আহলে হাদীস, গায়রে মুকাল্লিদ, আহলে ক্বোরআন ইত্যাদি ফির্কাগুলোর আক্বিদা-বিশ্বাস পরীক্ষা-নিরীক্ষা-গবেষণা, আলোচনা-পর্যালোচনায় চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত যে, চিন্তা-চেতনা, আক্বিদা-বিশ্বাসে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নবী-রসূল, সাহাবা-অলী ও মুজতাহিদ ইমামগণের প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শনে তাদের সকলের চিন্তাধারা কোনো না কোনোভাবে এক ও অভিন্ন।
একমাত্র নাজাত প্রাপ্ত মুক্তিপ্রাপ্ত দল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, সম্মানিত সাহাবীগণ, আহলে বায়তে রাসূল, মুজতাহিদ-ইমামগণ ও তরীকতের ইমামগণ তথা আউলিয়ায়ে কেরামের অনুসরণকারীদের দল।

প্রকৃতপক্ষে ইসলামের সঠিক রূপরেখা চিন্তা-চেতনা ও বিধি-বিধানের যথার্থ অনুসরণকারীদের নাম আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত। কাজেই যারা ইসলামের সঠিক আক্বিদার অনুসরণ করেন সকল ক্ষেত্রে। প্রিয় রাসূলের প্রতি তাজিম ও অন্তরাত্মার গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদন, সাহাবা-তাবেঈ, তাবে-তাবেঈন ও মুজতাহিদ ইমামগণের অনুসৃত মতাদর্শ যারা অনুসরণ করেন তারাই সুন্নী মুসলমান। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের পরিচয় موسوعة للاديان والمذاهب কিতাবে নিুরূপ উপস্থাপিত হয়েছে-
اهل السنة والجماعة هم المتمسّكون سنة رسول الله صلى الله عليه وسلم التاركون بدع المبتدعين بعده الثابتون مع اهل الجماعة فاصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم هم الجماعة الذين قال فيهم صلى الله عليه وسلم- (ماانا عليه واصحابى عيه اليوم)
অর্থাৎ যারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র সুন্নাতের উপর আমলকারী, বদমাযহাবী পথভ্রষ্টদের পরিহারকারী, যারা সর্বদা জামাতের উপর অটল অবিচল, জামাতি দ্বারা সম্মানিত সাহাবীগণের অনুসারী দল যাদের প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যারা আমি ও আমার সাহাবীগণের অনুসারী। (তারাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত)।

শিয়া মতবাদ
শিরোনামে বর্ণিত, বাহাত্তারটি জাহান্নামী দলের অন্যতম শিয়া ফির্কা। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদা ও আদর্শ বিরোধী ক্বোরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী একটি পথভ্রষ্ট সম্প্রদায় ও ভ্রান্ত মতবাদের নাম শিয়া। ইসলামের ইতিহাসে এ দলটি প্রাচীন বাতিল দল হিসেবে পরিচিত।

শিয়া শব্দটি আরবি, এর আভিধাকি অর্থ অনুসারী দল। এ দলের অনুসারীদের সহজভাবে পরিচয়ের উপায় হচ্ছে, যারা আহলে বায়তে রাসূল ও হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র প্রতি অতিভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে পক্ষান্তরে হযরত আবু বকর সিদ্দিক, হযরত ফারুকে আজম ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ও হযরত ওসমানগণি জিন্নুরাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুম এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। তাঁদের প্রতি গালমন্দ করেন, তাঁদের প্রতি অশালীন কটূক্তি তীব্র সমালোচনা করেন ইতিহাসে তারা শিয়া নামে পরিচিত।


ছদ্মবেশী মুসলমান ইয়াহুদী থেকে কৃত্রিমভাবে ইসলাম গ্রহণকারী আবদুল্লাহ্ ইবনে সাবা শিয়া ফির্কার মূল প্রবক্তা। ইসলামের তৃতীয় খলিফা আমিরুল মুমিনীন হযরত ওসমান জিন্নুরাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র শাহাদাতের পর হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র ক্ষমতা সুসংহত হওয়ার পূর্বেই হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র বিচারের জোর দাবী জানানো হয়। উক্ত বিচার হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র প্রতি আনুগত্যের পূর্বশর্ত হিসেবে আরোপ করা হয়। মুনাফিক আবদুল্লাহ্ ইবনে সাবা এ দাবীর পেছনে ইন্ধন জোগাতে শুরু করলো।

তার সুদূর প্রসারী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু হলো। নানামূখী চক্রান্তে সে সফল হলো, বিভিন্ন পর্যায়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও বিরোধ সৃষ্টিতে সফলকাম হলো। নিজেদের দলকে হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু এর স্বপক্ষীয় ও অনুসারী বলে দাবী করে- ইসলামের প্রথম ও দ্বিতীয় খলিফার উপর হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে শ্রেষ্ঠত্ব আরোপ করা হলো। এ চরমপন্থি শিয়ারা পরবর্তীতে ৬৩টি শাখা উপশাখায় বিভক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ইমামিয়া, ইসমাইলীয়া, ইসনাআশারিয়া, কারামাতিয়া শিয়াগণই অধিক পরিচিত ও কুফরী আক্বিদায় বিশ্বাসী।

শিয়াদের ভ্রান্ত কুফরি আক্বিদা সমূহ
১. হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু আল্লাহর মনোনীত নবী, হযরত জিব্রাঈল আলায়হিস্ সালাম ভুল করে মুহাম্মদের কাছে ওহী নিয়ে এসেছেন।
২. হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু রেযওয়াহ্ নামক পাহাড়ে জীবিত অবস্থায় আছেন। তিনি পুনর্বার পৃথিবীতে আগমন করবেন। [কিসানিয়া] ৩. ক্বোরআনে সতের হাজার আয়াত ছিল। প্রথম তিন খলিফা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য আয়াত গোপন করেছে ও বাদ দিয়েছে। ক্বোরআন শরীফে ‘সূরা বেলায়ত’ নামে একটি সূরাও ছিল। শিয়াদের ইমাম নূবী তাবরুসী ফাসলুল খেতাব কিতাবে নিুোক্ত কথাকে সূরা বেলায়ত থেকে বাদ দেয়া হয়েছে মর্মে উল্লেখ করেন-
ياايهاالذين امنوا امنوا بالنبى وبالولى بعثاهما بهدايتكم الى صراط مستقيم-
[সূত্র: ইরানী ইনকিলাব, পৃষ্ঠা ২৭৮] ৩. আবু বকর, ওমর ও ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম জোরপূর্বক হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে খিলাফত ছিনিয়ে নিয়েছে। (নাঊ’যুবিল্লাহ)
৫. হযরত আলী রাদ্বি. মানুষ নয়, স্বয়ং আল্লাহ্ হযরত আলী রাদি. রূপধারণ করে পৃথিবীতে এসেছেন।
৬. প্রিয়নবীর ওফাতের পর সাহাবায়ে কেরাম নিষ্পাপ ইমাম হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র হাতে বায়াত না করার কারণে কাফির ও মুরতাদ হয়ে গেছেন।
[শিয়া সুন্নী ইখতিলাফ: পৃষ্ঠা-১২] ৭. শিয়াদের একটি শাখা ইসমাঈলিয়ারা আক্বিদা পোষণ করে তাদের ইমাম ইসমাঈল শেষনবী। (নাঊ’যুবিল্লাহ)
[মুসলিম সাংস্কৃতির ইতিহাসি: ২৩৩] ৮. শিয়াদের কলেমা হচ্ছে-
لااله الا الله محمد رسول الله وعلى خليفة الله-
৯. নিকাহে মুতা বা সাময়িক বিয়ে জায়েয।
[ইসলাম আওর খোমেনী মাযহাব: পৃষ্ঠা ৪৩৮] ১০. ইমামদের নিকট ফেরেশতার মাধ্যমে ওহী আসে। তারা হালালাকে হারাম এবং হারামকে হালাল করতে পারেন।
১১. শিয়া নেতা ইমাম খোমেনী ‘কাশফুল আসরার’ কিতাবে লিখেছে আবু বকর, ওমর, ওসমান ও আবু ওবাইদা ও অন্যান্য সাহাবারা অন্তর থেকে ঈমান আনেননি। (নাঊ’যুবিল্লাহ)
এ জাহান্নামী ফির্কা শিয়াদের কুফরি আক্বিদার কিঞ্চিৎ মাত্র আলোকপাত হলো। ভবিষ্যতে তাদের স্বরূপ উম্মোচনে আরো লিখার আশাবাদ ব্যক্ত করছি। সম্প্রতিক সময়ে সুন্নী লেবেলে ওইসব মুনাফিক চক্রের চক্রান্ত থেকে সুন্নী মুসলমানরা সাবধান থাকুন।
Top