প্রশ্নঃ বিদআত কাকে বলে?

উত্তরঃ বিদআতের শাব্দিক অর্থ হল নতুন সৃষ্টি, নতুন আবিষ্কার। অর্থাৎ যার কোন অস্থিত্বই ছিল না তার সৃষ্টিকে বিদআত বলে। “বিদয়াত হলো- নমুনা ব্যতীত সৃষ্ট জিনিস |”

★মিছবাহুল লোগাত, পৃঃ ২৭



বিদআতের পারিভাষিক সংজ্ঞাঃ

বিদয়াতের শরীয়তী অর্থ সম্পর্কে বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ্ আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন “প্রকৃতপক্ষে বিদয়াত

হলো- এমন জিনিসের আবির্ভাব, যার নমুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় ছিলনা |”

★ওমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী ৫ম জিঃ পৃঃ৩৫৬



মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যাগন্থ “মিরকাতে”

ﺍﻻﻋﺘﺼﺎﻡ ﺑﺎﻟﻜﺘﺎﺏ ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ

শীর্ষক অধ্যায়ে উল্লেখিত আছে –

ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻨُّﻮَﻭِﻯُّ ﺍَﻟْﺒِﺪْﻋَﺔُ ﻛُﻞُّ ﺷَﻴْﺊٍ ﻋَﻤِﻞَ ﻋَﻠﻰ ﻏَﻴْﺮِ

ﻣِﺜَﺎﻝٍ ﺳَﺒَﻖ

বিদআত সে কাজকে বলা হয়, যা বিগত কোন কিছুর অনুকরণ ছাড়া করা হয়।



প্রশ্নঃ বিদআতের কোন প্রকার আছে?



উত্তরঃ বিদআত ২ প্রকার।

১, বিদআতে হাসানাহ ( ভাল বিদআত)।

২, বিদআতে সায়্যিয়াহ (মন্দ বিদআত)।







# আপত্তিঃ০১ঃ বিদআতের কোন প্রকার নেই। সব বিদআত একই। আপনারা কিসের ভিত্তিতে বিদআতের প্রকারভেদ করছেন?



আপত্তির জবাবঃ

বিদআতের প্রকার হাদিস অনুসারে বিখ্যাত ফক্বীহ,

মুহাদ্দিস ,অালিমগণ করে গেছেন।

যেমন রাসূল ﷺ এরশাদ করেছেন….

ﻣَﻦْ ﺳَﻦَّ ﻓِﻲ ﺍﻹِﺳْﻼﻡِ ﺳُﻨَّﺔً ﺣَﺴَﻨَﺔً ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺟْﺮُﻫَﺎ

ﻭَﺃَﺟْﺮُ ﻣَﻦْ ﻋَﻤِﻞَ ﺑِﻬَﺎ ﺑَﻌْﺪَﻩُ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﻘُﺺَ ﻣِﻦْ

ﺃُﺟُﻮﺭِﻫِﻢْ ﺷَﻲْﺀٌ ﻭَﻣَﻦْ ﺳَﻦَّ ﻓِﻲ ﺍﻹِﺳْﻼﻡِ ﺳُﻨَّﺔً

ﺳَﻴِّﺌَﺔً ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ

ﻭِﺯْﺭُﻫَﺎ ﻭَﻭِﺯْﺭُ ﻣَﻦْ ﻋَﻤِﻞَ ﺑِﻬَﺎ ﻣِﻦْ ﺑَﻌْﺪِﻩِ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ

ﺃَﻥْﻳَﻨْﻘُﺺَ ﻣِﻦْ ﺃَﻭْﺯَﺍﺭِﻫِﻢْ ﺷَﻲْﺀ



অর্থঃ যে ব্যক্তি ইসলামে একটি নতুন ভাল প্রথা আবিষ্কার করল তার জন্য উত্তম প্রতিদান রয়েছে,

এবং যারা এর উপর আমল করবে তাদের জন্যও উত্তম প্রতিদান রয়েছে। এতে লোকেরা যে অনুযায়ী আমল করেছে,তাকে সব আমলকারীর সমান সওয়াব দেওয়া হবে।আবার তাদেরকে ও কম দেওয়া হবে না। আর যে ইসলামে একটি খারাপ

প্রথা চালু করেছে ও লোকেরা সে অনুযায়ী আমল

করেছে,তাকে সব আমলকারীর সমান পাপ দেওয়া হবে। আবার তাদের পাপে কম করা হবে না।

★সহীহ মুসলিম , ইবনু মাজাহ,১ম খন্ডঃ হাদিসঃ ১৭৩।(সহিহ)।



এর প্রকার প্রসংগে মুহাদ্দিস মুফতিগণ বলেন

সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী কিতাবে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে

ﺛﻢ ﺍﻟﺒﺪﻋﺔ ﻋﻠﻲ ﻧﻮﻋﻴﻦ _ ﺍﻥ ﻛﺎﻧﺖ ﻣﻤﺎ ﻳﻨﺪﺭﺝ

ﺗﺤﺖ ﻣﺴﺘﺤﺴﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﺸﺮﻉ ﻓﻬﻲ ﺑﺪﻋﺔ ﺣﺴﻨﺔ

ﻭﺍﻥ ﻛﺎﻧﺖ ﻣﻤﺎ ﻳﻨﺪﺭﺝ ﺗﺤﺖ ﻣﺴﺘﻘﺒﺢ ﻓﻲ

ﺍﻟﺸﺮﻉ ﻓﻬﻲ ﺑﺪﻋﺔ ﻣﺴﺘﻘﺒﺤﺔ

অতঃপর বিদআত ২ প্রকার। বিদআতটি যদি শরীয়ত সম্মত ভাল কাজের অন্তর্ভুক্ত হয়, তবে তা বিদআতে হাসানাহ বা ভাল বিদআত । আর যদি তা শরীয়তের দৃৃষ্টিতে খারাপ ও জঘন্য কাজ হয় তবে তা বিদআতে মুস্তাকবিহা বা জঘন্য বিদআত।

★উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী



ইমাম শাফেয়ী রহঃ বিদাতের প্রকারের ক্ষেত্রে বলেন

ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲ ﺭﺡ ﻣﺎ ﺍﺣﺪﺙ ﻣﻤﺎ ﻳﺨﺎﻟﻒ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ

ﺍﻭ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﺍﻭ ﺍﻻﺛﺮ ﺍﻭ ﺍﻻﺟﻤﺎﻉ ﻓﻬﻮ ﺿﻼﻟﺔ ﺍﻭ ﻣﺎ

ﺍﺣﺪﺙ ﻣﻦ ﺍﻟﺨﻴﺮ ﻣﻤﺎ ﻻ ﻳﺨﺎﻟﻒ ﺷﻴﺄ ﻣﻦ ﺫﺍﻟﻚ

ﻓﻠﻴﺲ ﺑﻤﺬﻣﻮﻡ _

যে নতুন আবিষ্কৃত কাজ কোরআন সুন্নাহ ও ইজমায়ে উম্মতের বিরোধী উহা গোমরাহ

বিদাত। আর যে নতুন আবিষ্কৃত কাজ কোরআন সুন্নাহ ও ইজমায়ে উম্মতের বিরোধী নয় উহা নিন্দনীয় নয়। বরং উহা ভাল বিদাত।

★মিরকাত শরহে মিশকাত, খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ২১৬ কৃতঃ মোল্লা আলী ক্বারী রহঃ।



প্রাচ্যের বুখারী শেখ আব্দুল হক মোহাদ্দেস দেহলবী রহঃ বিদাতের প্রকার সম্পর্কে বলেন

ﭘﮭﺮ ﺍﺱ ﺑﺪﻋﺔ ﻣﻴﻦ ﺳﮯ ﺟﻮ ﮐﭽﮫ ﺍﺻﻮﻝ ﮐﮯ

ﻣﻮﺍﻓﻖ ﺍﻭﺭ ﻗﻮﺍﻋﺪ ﺳﻨﺖ ﮐﮯ ﻣﻄﺎﺑﻖ ﻫﻮ ﺍﻭﺭ

ﻛﺘﺎﺏ ﻭ ﺳﻨﺖ ﭘﺮ ﻗﻴﺎﺱ ﻛﻴﺎ ﮔﯿﺎ ﮬﻮ ﺑﺪﻋﺔ

ﺣﺴﻦ ﻛﻬﻼﺗﺎ _ ﺍﻭﺭ ﺟﻮ ﺍﻥ ﺍﺻﻮﻝ ﻭ ﻗﻮﺍﻋﺪ ﮐﮯ

ﺧﻼﻑ ﻫﻮ ﺍﺳﮯ ﺑﺪﻋﺔ ﺿﻼﻟﺔ ﮐﮭﺘﮯ ﮬﯿﮟ .

বিদঅাত বা নবআবিষ্কৃত কাজের মধ্যে যে বিদআত

ধর্মের মূলনীতি, নিয়ম- কানুন ও সুন্নাতের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ এবং কিতাব ও সুন্নাহর উপর কিয়াস

করা হয়েছে তাকে বিদআতে হাসানাহ বা উত্তম বিদাত বলে। আর যে বিদাত এর বিপরীত সেটাকে বিদআতে দালালাহ বা নিকৃষ্ট বিদআত বলে।

★আশিয়াতুল লুমআত, খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ৪২২।



# আপত্তি :০২ঃ যদি তাই হয় তাহলে ( ﻛﻞ ﺑﺪﻋﺔ ﺿﻼﻟﻪ অর্থাত প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহ ) এ হাদিসের কি জবাব দিবেন?



আপত্তির জবাবঃ

অত্র হাদিসের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফের শরাহ

মিরকাত শরীফে বলা হয়েছে

.

ﻛﻞ ﺑﺪﻋﺔ ﺿﻼﻟﻪ ﺍﻱ ﻛﻞ ﺑﺪﻋﺔ ﺳﻴﻯﺔ ﺿﻼﻟﺔ _

ﻟﻘﻮﻟﻪ ﻏﻠﻴﻪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻣﻦ ﺳﻦ ﻓﻲ

ﺍﻻﺳﻼﻡ ﺳﻨﺔ ﺣﺴﻨﺔ ﻓﻠﻪ ﺍﺟﺮﻫﺎ ﻭ ﺍﺟﺮ ﻣﻦ ﻋﻤﻞ

ﺑﻬﺎ

প্রত্যেক বিদআত গোমরাহ এর অর্থ হল প্রত্যেক

বিদআতে সায়্যিয়াহ বা মন্দ বিদআতই গোমরাহ।

বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস শেখ আব্দুল হক মোহাদ্দেস

রহঃ হাদিসখানার ব্যাখ্যায় বলেন

ﻛﻞ ﺑﺪﻋﺔ ﺿﻼﻟﺔ ﻛﺎ ﻛﻠﻴﺔ ﺍﺱ ﺩﻭﺳﺮﻱ ﻗﺴﻢ ﻛﮧ

ﺳﺎﺗﮫ ﺧﺎﺹ ﮨﮯ

অর্থাৎ অত্র হাদীসের ” সমস্ত বিদআতই গোমরাহ ”

এ কথাটি বিদআতের দ্বিতীয় প্রকার ( সায়্যিয়াহ) এর সাথে খাস করা হয়েছে। (অর্থাত বিদআতে হাসানাহ এ হাদিসের অন্তর্ভুক্ত নয়।)

★আশিয়াতুল লুমআত, ১/৪২২



# আপত্তি :০৩

হাদিসে এসেছে নবী ﷺ বলেছেন ” আমার দ্বীনে নতুন কিছু সংযোজন ও সৃষ্টি করবে যা ধর্মের

মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয় সেটি পরিত্যাজ্য ।” এর জবাব

কি?



# জবাবঃ জনাব অত্র হাদিসখানা আপনাদের দলীল নয় বরং আমাদের দলীল। অত্র হাদিসে বলা হয়েছে নতুন আবিষ্কৃত বিষয়টি যদি শরীয়তে না

থাকে কেবল তখনই তা হারাম হবে। আর যদি বিষয়টি শরীয়তে থাকে অর্থাৎ শরীয়ত বিরোধী না হয় তাহলে তা জায়েয। যেমন আমরা মিলাদে কোরআন তিলাওয়াত, দরুদ, নাত ও জিকির করি। এগুলো সবই শরীয়তে আছে । তাই এগুলো বিদআতও নয়। যদিও তর্কের খাতিরে বিদআত

বলি এগুলো শরীয়ত বিরোধী নয়।

সুতরাং তা জায়েয।



★ আমার পক্ষ

থেকে পাল্টা প্রশ্নঃ আপনারা যে দাবী করেন

প্রত্যেক বিদআত বা নতুন আবিষ্কৃত বিষয়ই যদি হারাম হয় তাহলে বর্তমান গাড়ী , জাহাজ, বিমান, মোবাইল, কম্পিউটার সবই নাজায়েয।

এগুলো কেন ব্যবহার করেন ?



# ওহাবী ভাই জবাব দিল:

ভাই এগুলো হল দুনিয়াবি বিদআত । ধর্মীয় বিদআত নয়। হারাম বিদআত হল দ্বীনের মধ্যে আবিষ্কৃত বিদআত । যে বিদআতে সওয়াবের

আশা করা হয় তাহাই হারাম। সুতরাং মোবাইল, যানবাহন ইত্যাদি সাওয়াবের নিয়তে ব্যবহার করা হয় না। সুতরাং তা দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই এগুলো জায়েয।



★ আমার প্রতিউত্তর ও প্রশ্নঃ

(ক) বাহ! দ্বীনের মধ্যে বিদআত আর দ্বীনের বাইরে বিদআত । তার মানে আপনাদের মতে বিদআত দুই প্রকার। দ্বীনের মধ্যে ও দ্বীনের বাইরে(দুনিয়াবি) । অথচ একটু আগে বললেন বিদআতের কোন প্রকার নেই। “কুল্লু বিদআতুন দালালাহ ” প্রত্যেক বিদআতই হারাম। এখন এ হাদিস কোথায় ??



(খ) দ্বীনের মধ্যে বিদআত আর দুনিয়াবি বিদআত ,

এ ব্যাখ্যা কোন কিতাবে পেলেন?



(গ) কিছুক্ষণের জন্য ধরে নিলাম মোবাইল,

কম্পিউটার, যানবাহন দুনিয়াবি এতে সাওয়াবের নিয়ত নাই তাই জায়েয। কিন্তু বিশ্ব ইজতেমা, মাদ্রাসার বার্ষিক সভা, সিরাতুন্নবী ﷺ এগুলো কি দুনিয়াবি? এগুলো দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়?



# ওহাবী ভাই জবাব দিলঃ

বিশ্ব ইজতেমা, মাদ্রাসার সভা এগুলো সওয়াবের

নিয়তে নয় এবং এগুলোকে দ্বীনের অংশ মনে করা হয় না। তাই তা জায়েয।



★আমার পক্ষ থেকে জবাব ও প্রশ্নঃ

খুবই হাস্যকর একটা জবাব দিলেন। বিশ্ব ইজতেমায় এত বয়ান, কাগজ দেখে দেখে ২,৩

ঘন্টা আখেরী মুনাজাত, বার্ষিক সভায় সারাদিন

ব্যাপী কোরআন তেলাওয়াত এগুলো সওয়াবের

জন্য নয়? তাহলে সব লোক দেখানো? ব্যবসার

জন্য ?



# ওহাবী ভাই জবাব দিল:

মানলাম এগুলো সাওয়াবের জন্য করা হয়। কিন্তু

এগুলোকে আমরা দ্বীনের অংশ ( ফরজ, ওয়াজিব,সুন্নাত বা নফল ) মনে করি না।

বরং এগুলো দ্বীনের সহায়ক। যেমন আযানের

জন্য মাইক ব্যবহার করা, দ্বীন প্রচারের জন্য

ইজতেমা করা, এলম শিক্ষা দিতে মাদ্রাসার

সভা করা।

( সিরাতুন্নবী ﷺ টা পড়ে জবাব দিব এখন যুক্তি নাই :D)

কিন্তু আপনারা মিলাদকে নফল বলেন, তাই এটা দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল তাই নাজায়েয।



★ আমার জবাবঃ

(ক)

বিদআতকে দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত তথা নফল মনে করলে হারাম হবে আর নফল মনে না করলে জায়েয হবে এগুলো সব আপনাদের বানানো ফতোয়া। এরকম আজগবি ফতোয়া কোন

ফতোয়ার কিতাবে আছে? অথচ ফতোয়ার কিতাবে আছে, যে বিদআত কোরআন সুন্নাহ ইজমার বিপরীত নয় তা জায়েয। আর আপনারা বলছেন আপনাদের মনগড়া ফতোয়া। এটাই কি ইসলাম?



(খ) আপনাদের যুক্তি যতই বানোয়াট হোক তবুও

এর জবাব আমি দিব। আপনারা বলছেন

আপনারা ইজতেমা, সভাকে নফল মনে করেন না। কারণ এগুলো ধর্মের সহায়ক। কিন্তু ইসলামী শরীয়তের ফয়সালা কি জানেন? শরীয়তের ফয়সালা হল কোন সওয়াবের কাজ করার

জন্য যে কাজটা করা হয় তাও সওয়াবের অন্তর্ভুক্ত

হয়ে যায়। আর তা কমপক্ষে নফল ইবাদত হয়ে যাবে। যেমন হাটা চলা মুবাহ কাজ। কিন্তু আপনি যখন মসজিদ যাওয়ার জন্য হাটবেন তখন আপনার হাটা নফল ইবাদত হয়ে যাবে।

এখানে হেটে যাওয়াটা মসজিদে পৌছার সহায়ক কিন্তু তা নফল বা মুস্তাহাব হয়ে যায়।



এ প্রসংগে ফক্বীহগণের বক্তব্য দেখুন।

(১)

মোল্লা আলী ক্বারী রহঃ তার বিখ্যাত গ্রন্হ মিরকাত

শরহে মিশকাতে বর্ণনা করেছেন ﺍﻥ ﺍﻟﻤﺒﺎﺡ ﺍﺫﺍ ﻗﺼﺪ ﺑﻪ

ﻭﺟﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﺎﺭ ﻃﺎﻋﺔ অর্থাত্ নিশ্চয়ই কোন মুবাহ বা বৈধ

কাজের মাধ্যমে যখন আল্লাহর সন্তুষ্টি ইচ্ছা করা হয় ,তখন উহা ইবাদতে পরিণত হয় ।

★ [মিরকাতশরহে মিশকাত , খন্ড ৬ পৃঃ ১৮২ ].



(২) শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস রহঃ তার রচিত মেশকাত শরীফের শরাহ আশিয়াতুল লুমআত

গ্রন্হে বর্ণনা করেন …

ﻣﺒﺎﺡ ﺍﻣﻮﺭ ﺍﮔﺮ

ﭼﮧ ﺑﻈﺎﻫﺮ ﻗﺒﻴﻠﺔ ﺷﻬﻮﺍﺕ ﻧﻔﺴﺎﻧﻲ ﻣﻴﮟ ﺳﮯ ﻫﻮﮞ ﺟﺐ ﻭﻩ ﻧﻴﺖ ﻋﺒﺎﺩﺕ ﭘﺮ

ﻣﺸﺘﻤﻞ ﻫﻮﮞ ﺗﻮ ﻣﺴﺘﺤﺎﺏ ﮐﮯ ﺯﻣﺮﻩ ﻣﻴﮟ ﺩﺍﺧﻞ ﻫﻮ ﺟﺎﺗﮯ ﻫﻴﮟ _ ﺍﻭﺭ

ﻋﺎﺩﺍﺕ ﻋﺒﺎﺩﺕ ﻛﻲ ﺣﻴﺜﻴﺖ ﺍﺧﺘﻴﺎﺭ ﻛﺮ ﻟﻴﺘﻲ ﻫﻴﮟ _

অর্থাত্ মুবাহ বা এমন কাজ সমুহ যা শরীয়তে নিষিদ্ধ নয় , এরকম কাজ যদিও প্রকাশ্যভাবে নিজের কামনা বাসনা পূরনের অন্তর্ভূক্ত হয় । যখন

উহা ইবাদতের নিয়তে পালন করা হয় , তখন

উহা মুস্তাহাব হিসেবে গন্য হয় । এবং তা আদত

বা ইবাদতের মর্যাদা লাভ করে ।

★ [আশিয়াতুল লুমআত উর্দু খন্ড ২ পৃঃ ৯০০].



(৩)

ফতোয়ায়ে শামীর কুরবানী শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে …

ﻓﺎﻥ ﺍﻟﻨﻴﺎﺕ ﺗﺠﻌﻞ ﺍﻟﻌﺎﺩﺍﺕ ﻋﺒﺎﺩﺍﺕ _ সৎ নিয়্যত

অভ্যাসকে ইবাদতে পরিণত করে ।

★[কিতাবুল আদহিয়্যাহ , ফতোয়ায়ে শামী ।]



সুতরাং যে কাজই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের

আশা করা হয় তা ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।

ওহাবী ভাইদের আর কোন রাস্তা আছে?

থাকলে বলেন বন্ধ করে দিচ্ছি। এখন দেখি সাহাবাগণ ভাল বিদআত গ্রহণ করেছেন কি না ।



.১) হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাঃ কতৃক বিদআতে হাসানাহ গ্রহণ। বুখারী শরীফের দ্বিতীয় খন্ড ﻛﺘﺎﺏ ﻓﻀﺎﺋﻞ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ এর ﺟﻤﻊ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ শীর্ষক অধ্যায়ে আছে-

হযরত সিদ্দিক (রা:) হযরত যায়েদ ইবনে ছাবেত (রা:) কে যখন কুরআনে পাক একত্রিত করার হুকুম দিলেন, তখন তিনি আরয করলেন।

ﻛﻴﻒ ﺗﻔﻌﻞﻭﻥ ﺷﻴﺌﺎ ﻟﻢ ﻳﻔﻌﻠﻪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻫﻮ

ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺧﻴﺮ

আপনি এমন কাজ (বিদআত) কেমনে করবেন, যা হুযুর ﷺ করেননি? হযরত সিদ্দিক (রা:) ফরমালেন, আল্লাহর শপথ এটা ভাল কাজ।

অর্থাৎ হযরত যায়েদ ইবনে ছাবেত হযরত সিদ্দীক (রা:) এর সমীপে আরয করলেন, কুরআন একত্রিতকরণ হচ্ছে বিদআত। তাই আপনি কেন বিদআতে হাত দিচ্ছেন। তখন হযরত সিদ্দীক রা:) ইরশাদ ফরমালেন- বিদআত বটে তবে উত্তম বিদআত। এর থেকে প্রমাণিত হলো সাহাবায়ে কিরাম বিদআতে হাসানা গ্রহণ করেেছন ।



(২) হযরত ওমর রাঃ কতৃক বিদআতে হাসানাহ গ্রহণ। মিশকাত শরীফের ﻗﻴﺎﻡ ﺷﻬﺮﺭﻣﻀﺎﻥ

শীর্ষক অধ্যায়ে আছে- হযরত উমর রাঃ স্বীয় খিলাফাতের যুগে নিয়মিতভাবে জামাআত সহকারে ৩০ দিনই তারাবীর নামায চালু করেন

এবং জামাত অনুষ্ঠিত হতে দেখে বলেছেন

ﻧﻌﻤﺖ ﺍﻟﺒﺪﻋﺔ

ﻫﺬﻩ –

এটা কতইনা ভাল বেদআত!

দেখুন হযরত উমর রা: নিজেই নিজের প্রচলিত

কাজকে বিদআত হাসানা বলে প্রশংসা করেছেন।



(৩) জুমার খোতবার আযান সর্বপ্রথম চালু করেন হযরত উসমান রাঃ। যা প্রথম দুই খলীফার আমলে ছিল না। ওহাবী ভাইয়েরা এখন সাহাবাগণকে কি বলবেন?



বিদআত বিষয়ে শরীয়তের ফয়সালাঃ

এক্ষেত্রে শরীয়তের ফয়সালা হল কোন কাজ বিদআত হওয়ার কারণে জায়েয বা না জায়েয হয়না। নাজায়েয তখনই হবে যখন কাজটা কোরআন সুন্নাহ ইজমা কিয়াসের বিরোধী হবে।

আপনারা ভাল বিদআত ও খারাপ বিদআতকে একই দৃৃষ্টিতে দেখছেন। সাহাবাগণ যদি ভাল বিদআত গ্রহণ করেন আর খারাপ বিদআত

বর্জন করেন তাহলে আপনারা আপত্তি

করার কে? আর আপনারা যে বিদআত করেন তার কি জবাব দিবেন?



আপনাদের পালনীয় কিছু

বিদআত দেখুন।

১, তারাবিহ ৩০ দিন জামআতে পড়া বিদআত,

২,কোরআন তেলাওয়াতের পর সাদাকাল্লাহুল আজিম বলা বিদআত,

৩, সাহাবাগণের নামের পর রদিয়াল্লাহু আন্হ

বলা বিদআত,

৪, কারো নামের পর “রহঃ বলা, হাফিজাল্লাহ

বলা ” বিদআত,

৫, কনফারেন্সে হাত তালি দেওয়া বিদআত,

৬, খোতবার আযান বিদআত,

৭, কোরআন একত্রিকরণ বিদআত,

৮, কোরআনে হরকত বিদআত,

৯, বিশ্ব ইজতেমা বিদাআত,

১০, বিশ্ব ইজতেমায় আখেরী মুনাজাত বিদআত,

১১, মাদ্রাসার বার্ষিক সভা বিদআত,

১২, পিস টিভি বিদআত,

১৩, ইসলামিক কনফারেন্স বিদআত,

১৪, ইসলামিক কনসার্ট বিদআত, ১৫, মাদ্রাসা নির্মাণ

বিদআত,

১৬, সিরাতুন্নবী ﷺ পালন বিদআত ,

১৭, তাবলীগি চিললা বিদআত,

১৮ , ১ দিনের চিললা , ৩ দিনের চিললা, ৪০ দিনের চিললা বিদআত,

১৯, জিহাদের নাম দিয়ে মসজিদে বোমা

ফাটিয়ে মুসল্লি হত্যা নিৎকৃষ্ট বিদআত,

২০, জঙ্গিবাদ করে পাকিস্তানের মত সচল মুসলিম রাষ্ট্রকে অচর করে আমেরিকার দালালী করা নিৎকৃষ্ট বিদআত। এগুলোর কি জবাব

দিবেন ???

কোন উত্তর আছে ?????

Top