সব সহীহ হাদিস কি কেবল মাত্র বুখারী আর মুসলিম শরীফেই সংকলিত হয়েছে?
— এর বাইরে কি সহীহ হাদিস নেই?
— মুহাদ্দেসীনে কেরামের দৃষ্টিতে সহীহ হাদিস কাকে বলে?
— সহীহ হাদিস কত প্রকার এবং কি কি?
— গাইরে সহীহ হাদিস কি জাল কিংবা বানোয়াট?
— জাঈফ হাদিসের উপর আমলের বিধান কি?
— এর দ্বারা কি দলীল গ্রহণযোগ্য?
ইউটিউব ভিডিও লিংকঃ https://youtu.be/GIn9RcLwyDQ
এসব প্রশ্নের তাত্মিক বিশ্লেষণ এবং দলীল ভিত্তিক উত্তর পেতে নিচের পোস্টটি পড়ুন, ভিডিওটি দেখুন এবং কপি পেস্ট করে শেয়ার করুণ যাতে অন্যরা সত্য জানতে পারে এবং রাসুল এর হাদিসের প্রতি অবহেলা থেকে বিরত থাকতে পারে।
আল্লামা সাইফুল আযম আল-আজহারী সাহেবের দলীলভিত্তিক ভিডিওর সারসংক্ষেপ নিয়ে এ পোষ্ট তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটি নামিয়ে সংরক্ষণ করে রাখুন। প্রয়োজনে বাতিলদের হাদিস-বিরোধী বক্তব্যে দলীল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। জাযাকাল্লাহ!]
আজকাল বেশ কিছু প্রতিষ্ঠিত হাদিসের ক্ষেত্রে প্রায়ই শোনা যায় “হাদিসটি জাল”, “বানোয়াট” কিংবা “মিথ্যা”। যারা এসব কথা বলেন, হাদিস সম্পর্কে তাদের জ্ঞান নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাদের বেশির ভাগই মাদ্রাসার গণ্ডিতে প্রবেশ করেননি, বরং সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত আর বাংলা তরজমা পড়ে নিজেকে হাদিসে দক্ষ মনে করে থাকেন। হারাকাত (জের-জবর-পেশ) বিহীন আরবি একটি লাইনও তারা পড়তে পারবেন না। উলুমে হাদিসের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় অসংখ্য মুহাদ্দেসীনে কেরাম যুগে যুগে হাদিসের প্রকার ভেদ এবং যাচাই-বাছাইয়ের জন্য কিছু নীতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। হাদিস যাচাইয়ের এ কষ্টি পাথরকে বলা হয় উসুলে হাদিস। আমি সেগুলো উল্লেখ করে এ আর্টিকেলকে লম্বা করতে চাই না। সংক্ষেপে মূল বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সাধারণ মানুষের মনে ব্যাপৃত হাদিস সম্পর্কিত ভুল ধারণাগুলো দূর করতে চাই, ইনশা আল্লাহ্। যাতে সাধারণ মানুষ ভুলবশত কোন হাদিসকে অবহেলা না করেন। কেননা এতে রাসুল ﷺ সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়। আর মানুষকে হাদিসের প্রতি বিমুখ করে দেয়া হয়।
সহীহ হাদিস কাকে বলে এবং প্রকার ভেদ কি কি?
———-
মুহাদ্দেসীনে কেরামের ঐক্যমতে সহীহ হাদিসের গ্রন্থ ৬ টি। কিন্তু অধুনা কিছু গোষ্ঠী কেবল বুখারি আর মুসলিম শরীফের বাইরে আর কোন হাদিস মানতে চান না। মুহাদ্দেসীনে কেরাম, আইম্মায়ে কেরামসহ গ্রহণযোগ্য সকল স্কলারদের সমষ্টিগত ঐক্যমতের ভিত্তিতে সহীহ হাদিসের গ্রন্থ ৬টি, “সিহাহ সিত্তা” নামে যা পরিচিত। আল্লাহ্ পাক কুরআনে বলে দেননি কেবল বুখারি আর মুসলিমই সহীহ। রাসুল ﷺও বলে যাননি কেবল মাত্র বুখারি-মুসলিমই সহীহ। যাদের মতামত এবং এজমার উপর ভিত্তি করে বুখারি আর মুসলিমকে সহীহ গ্রন্থ হিসেবে গণ্য করা হয়, তাঁদের মতামতেই সহীহ হাদিসের গ্রন্থ ৬টি। যথাঃ বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, নাসাঈ শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ ও ইবনে মাজাহ শরীফ। উল্লেখ্য, এর বাইরেও আরো অনেক হাদিস সংকলন রয়েছে যেগুলোতে অসংখ্য সহীহ হাদিস বিদ্যমান। যার আলোচনা নিচে আসছে।
ইমাম বুখারী রহঃ নিজেই তার বুখারী শরীফের ভূমিকায় উল্লেখ করেছেন যে তিনি তাঁর সংকলনে সব সহীহ হাদিস লিপিবদ্ধ করেননি, এর বাইরেও অনেক সহীহ হাদিস রয়েছে। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী তিনি সনদসহ প্রায় ৩ লক্ষ হাদিস মুখস্ত জানতেন যার মধ্যে প্রায় এক লক্ষ সহীহ। বুখারী শরীফে তাকরার অর্থাৎ পুনরাবৃত্তি ব্যতীত প্রায় ২৭৬১ হাদিস রয়েছে, এবং তাকরারসহ হাদিসের সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। তাহলে ইমাম বুখারী রহঃ এর ভাষ্য অনুযায়ী বাকি ৯৬ হাজার সহীহ হাদিস কোথায় গেল? সিহাহ সিত্তার সবগুলো গ্রন্থের তাকরার (পুনরুল্লেখ) ব্যতীত হাদিসের সমষ্টি মাত্র ৩০১১৯। ইমাম বুখারী রহঃ এর দেয়া শর্তানুযায়ী এক লক্ষ সহীহ হাদিসের বাকিগুলো তাহলে কোথায়? যারা বুখারী-মুসলিম ব্যতীত অন্য হাদিসকে অস্বীকার করেন, তারা ইমাম বুখারী রহঃ এর ভাষ্যানুযায়ী প্রায় ৯৫ হাজার সহীহ হাদিসকে অস্বীকার করেন। আর যারা সিহাহ সিত্তার বাইরে সহীহ হাদিস মানেন না, তারা প্রায় ৭০ হাজা সহীহ হাদিসকে অস্বীকার করেন।
সহীহ হাদিস কাকে বলে তা জানার আগে জানতে হবে সনদ এবং মতন কি। হাদিসের দুটি অংশ থাকে, একটি সনদ আর অন্যটি মতন। হাদিসের যে অংশে বর্ণনাকারীদের কথা থাকে সে অংশকে বলা হয় সনদ, chain of narration আর হাদিসের যে অংশে রাসুল ﷺ এর কথা থাকে (যেমন ক্বালা রাসুলুল্লাহি ﷺ এর পর) সে অংশকে বলা হয় মতন। হাদিস বিশারদগণ যুগে যুগে গবেষণা এবং যাচাই বাছাই করে হাদিসের সনদের উপর তাঁদের রায় দিয়েছেন, মতনের উপর নয়। অর্থাৎ রাসুল ﷺ এর বাণী সকল সমালোচনার ঊর্ধ্বে।
উলুমে হাদিসের নতুন পদ্ধতি (methodology) প্রবর্তন করে যিনি উলুমে হাদিসকে প্রবর্তন করেছেন তিনি হলেন ইমাম তাকিউদ্দীন ইবনে সালাহ রহঃ। তাঁকে উলুমে হাদিসের প্রতিষ্ঠাতা জনক বলা হয়। পরবর্তীতে হাদিসের উপর যিনিই কিতাব লিখেছেন তিনিই ইবনে সালাহ রহঃকে উদ্ধৃত করে উসুলে হাদিস বর্ণনা করেছেন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম তুরকুমালী, ইমাম নববী, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী, ইমাম যাইনুদ্দীন আল-ইরাকী, ইমাম জারকাশি, ইমাম ইবনে কাসীর, ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন, আলী বিন আল-মাদিনী, মুসলিম বিন হাজ্জাজ, আত-তিরমিযী, ইমাম হাকীম, আল-বাগদাদী রাহিমাহুমুল্লাহিম আজমাঈন। হাদিস শাস্ত্রের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের জন্য পুরো মুসলিমবিশ্ব এঁদের কাছে আজীবন ঋণী থাকবে। এমনকি অমুসলিম গবেষকগণও অবাক বিস্ময় প্রকাশ করেছেন যে মুসলিম পণ্ডিতগণ হাদিস শাস্ত্রের এ ধরণের মৌলিক গবেষণালব্ধ সূক্ষ্ম এবং বিশুদ্ধ বিশ্লেষণের মাধ্যমে সুচারুরূপে নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর বাণীকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
হাদিসের প্রকারভেদ
——
কোন হাদিস সহীহ কিংবা গাইরে সহীহ নির্ধারিত হয় হাদিসের সনদ অনুসারে। অর্থাৎ হাদিস বর্ণনাকারীদের গ্রহণযোগ্যতার উপর। সে হিসেবে মুহাদ্দেসীনে কেরামগণের ঐক্যমতে হাদিসকে তাঁরা প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করেছেন যথাঃ
====
১) সহীহ এবং ২) গাইরে সহীহ।
====
সহীহ হাদিস ওইসব হাদিস যেসব হাদিসের বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে কোন রকমের ত্রুটি কিংবা আপত্তি পরিলক্ষিত হয়নি। অর্থাৎ একটি হাদিস সহীহ বলার মাধ্যমে বুঝানো হয় যে হাদিসটির সনদ ত্রুটিমুক্ত।
তবে মনে রাখতে হবে হাদিসের এই প্রকারভেদকে বোঝানোর জন্য হাদিসের পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। উসুলে হাদিসের এই পরিভাষাকে অনুবাদ করতে গিয়ে “গাইরে সহীহ”কে “জাল” কিংবা “বানোয়াট” হিসেবে উল্লেখ করলে তা হাদিসের ব্যাপারে মিথ্যাচার করা হবে। অথচ আফসোস! বর্তমান যুগে অনেকেই উসুলে হাদিস বা হাদিসের এই বিজ্ঞান সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকায় “গাইরে সহীহ”কে জাল এবং বানোয়াট হিসেবে সচরাচর প্রচার করে থাকেন। এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন খুবই জরুরী। না হয় সাধারণ মানুষ ভুলবশতঃ নবী করীম ﷺ এর অনেক গ্রহণযোগ্য এবং প্রতিষ্ঠিত হাদিসের প্রতি উন্নাসিতা প্রকাশ করবে। যা হবে রাসুল ﷺ এর প্রতি সরম বেয়াদবি।
গাইরে সহীহ
====
গাইরে সহীহ হাদিসকে আবার মোটামুটি কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন ১) হাসান ২) দ্বাঈফ ৩) মাওদ্বু ইত্যাদি। মনে রাখতে হবে, মুহাদ্দেসীনে কেরামের ঐক্যমত্যে দ্বাঈফ কিংবা আরো নিম্ন পর্যায়ের কোন হাদিস একাধিক সুত্রে পাওয়া গেলে উক্ত হাদিসকে হাসান পর্যায় নিয়ে আসা হয়। যেমনটি আগে বলা হয়েছে, দ্বাঈফ হাদিসের বাংলা অনুবাদ দুর্বল করা সমীচীন হবে না। কেননা, এটি উসুলে হাদিসের পরিভাষা, যদিও দ্বাঈফ শব্দের একটি অর্থ দুর্বল। যেমন সালাহ, হাজ্ব, জাকাত, সাওম এসব ইসলামী শব্দের মৌলিক অর্থ থাকার পরও এসব শব্দ ইসলামী পরিভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, এর সরাসরি কোন অনুবাদ করা যায় না। এসব শব্দকে ইসলামী পরিভাষা হিসেবেই বুঝতে হয়। তদ্রূপভাবে হাদিসের ক্ষেত্রে “দ্বাঈফ” হাদিস শাব্দিক অর্থে দুর্বল হাদিস নয়। যেসব হাদিসের রাবি বা বর্ণনাকারী হাসান পর্যায়ের গুণসম্পন্ন নন সেইসব বর্ণনাকারীর বর্ণিত হাদিসকে দ্বাঈফ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তবে মওদ্বু হাদিসের সংজ্ঞায় বলা হয়ে থাকে যে, যেসব রাবি জীবনে কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে রাসুল ﷺ এর নামে মিথ্যা রটনা করেছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে তার বর্ণিত হাদিসকে মওদ্বু হাদিস বলা হয়। এরূপ ব্যক্তির বর্ণিত হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়। মুহাদ্দেসীনে কেরামের ভাষ্যমতে গাইরে সহীহ হাদিসে বর্ণনায় প্রায় ৪৯ প্রকারের ত্রুটি রয়েছে। ত্রুতির প্রকারভেদে হাদিসটি গ্রহণযোগ্য কিনা তা বিবেচনা করা হয়।
সহীহ হাদিসের প্রকারভেদ
=====
সমস্ত ইমাম এবং মুহাদ্দেসীনে কেরামের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সহীহ হাদিসের ৭টি প্রকারভেদ রয়েছে। যথাঃ-
১। যেসব হাদিস ইমাম বুখারি এবং ইমাম মুসলিম রাহিমাহুমাল্লাহ তাঁদের নিজেদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন। ২। যেসব হাদিস ইমাম বুখারি রহঃ তাঁর নিজের কিতাবে উল্লেখ করেছেন কিন্তু ইমাম মুসলিম রহঃ তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেন নি।
৩। যেসব হাদিস ইমাম মুসলিম রহঃ নিজের কিতাবে উল্লেখ করেছেন, কিন্তু ইমাম বুখারি রহঃ তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেন নি।
৪। যেসব হাদিস ইমাম বুখারি এবং ইমাম মুসলিমের রহঃ এর দেয়া শর্তানুযায়ী সহীহ কিন্তু তাঁদের কেউই ওই হাদিস নিজেদের কিতাবে উল্লেখ করেন নি। [গুরুত্বপূর্ণ প্রকার]
৫। যেসব হাদিস ইমাম বুখারি রহঃ এর শর্তানুযায়ী সহীহ কিন্তু তিনি নিজের কিতাবে উক্ত হাদিস উল্লখে করেন নি।
৬। যেসব হাদিস ইমাম মুসলিম রহঃ এর শর্তানুযায়ী সহীহ কিন্তু তিনি নিজের কিতাবে উক্ত হাদিস উল্লেখ করেন নি।
৭। সেসব হাদিস যেগুলো ইমাম বুখারি এবং ইমাম মুসলিম রহঃ ব্যতীত অন্যান্য মুহাদ্দেসীনে কেরাম প্রদত্ত শর্তানুযায়ী সহীহ।
এ কারণে যারা বলে বেড়ান তারা বুখারি এবং মুসলিম ব্যতীত অন্য কোন গ্রন্থের হাদিস মানেন না, তারা না জেনেই রাসুল ﷺ এর প্রতি অন্যায় করছেন। ইমাম কাসীর বায়েসুল হাসিসে বুখারি এবং মুসলিম ব্যতীত আরো যেসব কিতাবে সহীহ হাদিস পাওয়া যায় সেসব গ্রন্থের বিস্তারিত তালিকা দিয়েছেন।
রাসুল ﷺ ফেতনার দিকে ইংগিত করে বলে গিয়েছেন এমন এক যুগ আসবে যখন খুব শান ও শওকতপূর্ণ কিছু আলেম বড় বড় চেয়ারে আসীন হবে। তাদেরকে যখন সুন্নাতের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হবে হাদিস থেকে প্রমানি হুজুর ﷺ এই জিনিসকে হালাল করেছেন এবং ওই জিনিসকে হারাম করেছেন। এ কথা শোনার পর তারা চেয়ারে টেক লাগিয়ে বসে বলবে, আমরা এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল নই, আমরা তো ওইটাকেই হালাল মনে করি যা কুরআন হালাল করেছে। কিংবা আমরা তো ওইটাকেই হারাম মানি যা কুরআন হারাম বলেছে। [সুনানে আবু দাউদের হাদিসের সারসংক্ষেপ]
আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে সত্য জানার তৌফিক দান করুণ এবং সত্যের উপর বহাল রাখুক। আমীন!
[এই গুরুত্বপূর্ণ বয়ানটি শুনুন। হাদিস সম্পর্কে সব ভুল ধারণা দূর হয়ে যাবে। কেবলমাত্র কিছু অনুবাদ গ্রন্থ আর অনলাইনে লেকচার শুনে যে কেউ মুফতি আর মুহাদ্দিস সেজে বসেন। তা যে কত ভয়ংকর তা অনুধাবন করতে পারবেন। যাদের মনে রাসূল ﷺ প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা রয়েছে তারা কখনই রাসূলের সুন্নাহকে অবহেলা করতে পারেন না।
উলুমে হাদিস সম্পর্কে জানুন এবং নিজের ঈমান, আক্বীদা ও আমলকে হেফাজত করুণ! জাযাকাল্লাহু খাইরান!]
— এর বাইরে কি সহীহ হাদিস নেই?
— মুহাদ্দেসীনে কেরামের দৃষ্টিতে সহীহ হাদিস কাকে বলে?
— সহীহ হাদিস কত প্রকার এবং কি কি?
— গাইরে সহীহ হাদিস কি জাল কিংবা বানোয়াট?
— জাঈফ হাদিসের উপর আমলের বিধান কি?
— এর দ্বারা কি দলীল গ্রহণযোগ্য?
ইউটিউব ভিডিও লিংকঃ https://youtu.be/GIn9RcLwyDQ
এসব প্রশ্নের তাত্মিক বিশ্লেষণ এবং দলীল ভিত্তিক উত্তর পেতে নিচের পোস্টটি পড়ুন, ভিডিওটি দেখুন এবং কপি পেস্ট করে শেয়ার করুণ যাতে অন্যরা সত্য জানতে পারে এবং রাসুল এর হাদিসের প্রতি অবহেলা থেকে বিরত থাকতে পারে।
আল্লামা সাইফুল আযম আল-আজহারী সাহেবের দলীলভিত্তিক ভিডিওর সারসংক্ষেপ নিয়ে এ পোষ্ট তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটি নামিয়ে সংরক্ষণ করে রাখুন। প্রয়োজনে বাতিলদের হাদিস-বিরোধী বক্তব্যে দলীল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। জাযাকাল্লাহ!]
আজকাল বেশ কিছু প্রতিষ্ঠিত হাদিসের ক্ষেত্রে প্রায়ই শোনা যায় “হাদিসটি জাল”, “বানোয়াট” কিংবা “মিথ্যা”। যারা এসব কথা বলেন, হাদিস সম্পর্কে তাদের জ্ঞান নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাদের বেশির ভাগই মাদ্রাসার গণ্ডিতে প্রবেশ করেননি, বরং সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত আর বাংলা তরজমা পড়ে নিজেকে হাদিসে দক্ষ মনে করে থাকেন। হারাকাত (জের-জবর-পেশ) বিহীন আরবি একটি লাইনও তারা পড়তে পারবেন না। উলুমে হাদিসের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় অসংখ্য মুহাদ্দেসীনে কেরাম যুগে যুগে হাদিসের প্রকার ভেদ এবং যাচাই-বাছাইয়ের জন্য কিছু নীতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। হাদিস যাচাইয়ের এ কষ্টি পাথরকে বলা হয় উসুলে হাদিস। আমি সেগুলো উল্লেখ করে এ আর্টিকেলকে লম্বা করতে চাই না। সংক্ষেপে মূল বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সাধারণ মানুষের মনে ব্যাপৃত হাদিস সম্পর্কিত ভুল ধারণাগুলো দূর করতে চাই, ইনশা আল্লাহ্। যাতে সাধারণ মানুষ ভুলবশত কোন হাদিসকে অবহেলা না করেন। কেননা এতে রাসুল ﷺ সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়। আর মানুষকে হাদিসের প্রতি বিমুখ করে দেয়া হয়।
সহীহ হাদিস কাকে বলে এবং প্রকার ভেদ কি কি?
———-
মুহাদ্দেসীনে কেরামের ঐক্যমতে সহীহ হাদিসের গ্রন্থ ৬ টি। কিন্তু অধুনা কিছু গোষ্ঠী কেবল বুখারি আর মুসলিম শরীফের বাইরে আর কোন হাদিস মানতে চান না। মুহাদ্দেসীনে কেরাম, আইম্মায়ে কেরামসহ গ্রহণযোগ্য সকল স্কলারদের সমষ্টিগত ঐক্যমতের ভিত্তিতে সহীহ হাদিসের গ্রন্থ ৬টি, “সিহাহ সিত্তা” নামে যা পরিচিত। আল্লাহ্ পাক কুরআনে বলে দেননি কেবল বুখারি আর মুসলিমই সহীহ। রাসুল ﷺও বলে যাননি কেবল মাত্র বুখারি-মুসলিমই সহীহ। যাদের মতামত এবং এজমার উপর ভিত্তি করে বুখারি আর মুসলিমকে সহীহ গ্রন্থ হিসেবে গণ্য করা হয়, তাঁদের মতামতেই সহীহ হাদিসের গ্রন্থ ৬টি। যথাঃ বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, নাসাঈ শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ ও ইবনে মাজাহ শরীফ। উল্লেখ্য, এর বাইরেও আরো অনেক হাদিস সংকলন রয়েছে যেগুলোতে অসংখ্য সহীহ হাদিস বিদ্যমান। যার আলোচনা নিচে আসছে।
ইমাম বুখারী রহঃ নিজেই তার বুখারী শরীফের ভূমিকায় উল্লেখ করেছেন যে তিনি তাঁর সংকলনে সব সহীহ হাদিস লিপিবদ্ধ করেননি, এর বাইরেও অনেক সহীহ হাদিস রয়েছে। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী তিনি সনদসহ প্রায় ৩ লক্ষ হাদিস মুখস্ত জানতেন যার মধ্যে প্রায় এক লক্ষ সহীহ। বুখারী শরীফে তাকরার অর্থাৎ পুনরাবৃত্তি ব্যতীত প্রায় ২৭৬১ হাদিস রয়েছে, এবং তাকরারসহ হাদিসের সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। তাহলে ইমাম বুখারী রহঃ এর ভাষ্য অনুযায়ী বাকি ৯৬ হাজার সহীহ হাদিস কোথায় গেল? সিহাহ সিত্তার সবগুলো গ্রন্থের তাকরার (পুনরুল্লেখ) ব্যতীত হাদিসের সমষ্টি মাত্র ৩০১১৯। ইমাম বুখারী রহঃ এর দেয়া শর্তানুযায়ী এক লক্ষ সহীহ হাদিসের বাকিগুলো তাহলে কোথায়? যারা বুখারী-মুসলিম ব্যতীত অন্য হাদিসকে অস্বীকার করেন, তারা ইমাম বুখারী রহঃ এর ভাষ্যানুযায়ী প্রায় ৯৫ হাজার সহীহ হাদিসকে অস্বীকার করেন। আর যারা সিহাহ সিত্তার বাইরে সহীহ হাদিস মানেন না, তারা প্রায় ৭০ হাজা সহীহ হাদিসকে অস্বীকার করেন।
সহীহ হাদিস কাকে বলে তা জানার আগে জানতে হবে সনদ এবং মতন কি। হাদিসের দুটি অংশ থাকে, একটি সনদ আর অন্যটি মতন। হাদিসের যে অংশে বর্ণনাকারীদের কথা থাকে সে অংশকে বলা হয় সনদ, chain of narration আর হাদিসের যে অংশে রাসুল ﷺ এর কথা থাকে (যেমন ক্বালা রাসুলুল্লাহি ﷺ এর পর) সে অংশকে বলা হয় মতন। হাদিস বিশারদগণ যুগে যুগে গবেষণা এবং যাচাই বাছাই করে হাদিসের সনদের উপর তাঁদের রায় দিয়েছেন, মতনের উপর নয়। অর্থাৎ রাসুল ﷺ এর বাণী সকল সমালোচনার ঊর্ধ্বে।
উলুমে হাদিসের নতুন পদ্ধতি (methodology) প্রবর্তন করে যিনি উলুমে হাদিসকে প্রবর্তন করেছেন তিনি হলেন ইমাম তাকিউদ্দীন ইবনে সালাহ রহঃ। তাঁকে উলুমে হাদিসের প্রতিষ্ঠাতা জনক বলা হয়। পরবর্তীতে হাদিসের উপর যিনিই কিতাব লিখেছেন তিনিই ইবনে সালাহ রহঃকে উদ্ধৃত করে উসুলে হাদিস বর্ণনা করেছেন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম তুরকুমালী, ইমাম নববী, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী, ইমাম যাইনুদ্দীন আল-ইরাকী, ইমাম জারকাশি, ইমাম ইবনে কাসীর, ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন, আলী বিন আল-মাদিনী, মুসলিম বিন হাজ্জাজ, আত-তিরমিযী, ইমাম হাকীম, আল-বাগদাদী রাহিমাহুমুল্লাহিম আজমাঈন। হাদিস শাস্ত্রের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের জন্য পুরো মুসলিমবিশ্ব এঁদের কাছে আজীবন ঋণী থাকবে। এমনকি অমুসলিম গবেষকগণও অবাক বিস্ময় প্রকাশ করেছেন যে মুসলিম পণ্ডিতগণ হাদিস শাস্ত্রের এ ধরণের মৌলিক গবেষণালব্ধ সূক্ষ্ম এবং বিশুদ্ধ বিশ্লেষণের মাধ্যমে সুচারুরূপে নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর বাণীকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
হাদিসের প্রকারভেদ
——
কোন হাদিস সহীহ কিংবা গাইরে সহীহ নির্ধারিত হয় হাদিসের সনদ অনুসারে। অর্থাৎ হাদিস বর্ণনাকারীদের গ্রহণযোগ্যতার উপর। সে হিসেবে মুহাদ্দেসীনে কেরামগণের ঐক্যমতে হাদিসকে তাঁরা প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করেছেন যথাঃ
====
১) সহীহ এবং ২) গাইরে সহীহ।
====
সহীহ হাদিস ওইসব হাদিস যেসব হাদিসের বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে কোন রকমের ত্রুটি কিংবা আপত্তি পরিলক্ষিত হয়নি। অর্থাৎ একটি হাদিস সহীহ বলার মাধ্যমে বুঝানো হয় যে হাদিসটির সনদ ত্রুটিমুক্ত।
তবে মনে রাখতে হবে হাদিসের এই প্রকারভেদকে বোঝানোর জন্য হাদিসের পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। উসুলে হাদিসের এই পরিভাষাকে অনুবাদ করতে গিয়ে “গাইরে সহীহ”কে “জাল” কিংবা “বানোয়াট” হিসেবে উল্লেখ করলে তা হাদিসের ব্যাপারে মিথ্যাচার করা হবে। অথচ আফসোস! বর্তমান যুগে অনেকেই উসুলে হাদিস বা হাদিসের এই বিজ্ঞান সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকায় “গাইরে সহীহ”কে জাল এবং বানোয়াট হিসেবে সচরাচর প্রচার করে থাকেন। এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন খুবই জরুরী। না হয় সাধারণ মানুষ ভুলবশতঃ নবী করীম ﷺ এর অনেক গ্রহণযোগ্য এবং প্রতিষ্ঠিত হাদিসের প্রতি উন্নাসিতা প্রকাশ করবে। যা হবে রাসুল ﷺ এর প্রতি সরম বেয়াদবি।
গাইরে সহীহ
====
গাইরে সহীহ হাদিসকে আবার মোটামুটি কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন ১) হাসান ২) দ্বাঈফ ৩) মাওদ্বু ইত্যাদি। মনে রাখতে হবে, মুহাদ্দেসীনে কেরামের ঐক্যমত্যে দ্বাঈফ কিংবা আরো নিম্ন পর্যায়ের কোন হাদিস একাধিক সুত্রে পাওয়া গেলে উক্ত হাদিসকে হাসান পর্যায় নিয়ে আসা হয়। যেমনটি আগে বলা হয়েছে, দ্বাঈফ হাদিসের বাংলা অনুবাদ দুর্বল করা সমীচীন হবে না। কেননা, এটি উসুলে হাদিসের পরিভাষা, যদিও দ্বাঈফ শব্দের একটি অর্থ দুর্বল। যেমন সালাহ, হাজ্ব, জাকাত, সাওম এসব ইসলামী শব্দের মৌলিক অর্থ থাকার পরও এসব শব্দ ইসলামী পরিভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, এর সরাসরি কোন অনুবাদ করা যায় না। এসব শব্দকে ইসলামী পরিভাষা হিসেবেই বুঝতে হয়। তদ্রূপভাবে হাদিসের ক্ষেত্রে “দ্বাঈফ” হাদিস শাব্দিক অর্থে দুর্বল হাদিস নয়। যেসব হাদিসের রাবি বা বর্ণনাকারী হাসান পর্যায়ের গুণসম্পন্ন নন সেইসব বর্ণনাকারীর বর্ণিত হাদিসকে দ্বাঈফ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তবে মওদ্বু হাদিসের সংজ্ঞায় বলা হয়ে থাকে যে, যেসব রাবি জীবনে কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে রাসুল ﷺ এর নামে মিথ্যা রটনা করেছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে তার বর্ণিত হাদিসকে মওদ্বু হাদিস বলা হয়। এরূপ ব্যক্তির বর্ণিত হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়। মুহাদ্দেসীনে কেরামের ভাষ্যমতে গাইরে সহীহ হাদিসে বর্ণনায় প্রায় ৪৯ প্রকারের ত্রুটি রয়েছে। ত্রুতির প্রকারভেদে হাদিসটি গ্রহণযোগ্য কিনা তা বিবেচনা করা হয়।
সহীহ হাদিসের প্রকারভেদ
=====
সমস্ত ইমাম এবং মুহাদ্দেসীনে কেরামের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সহীহ হাদিসের ৭টি প্রকারভেদ রয়েছে। যথাঃ-
১। যেসব হাদিস ইমাম বুখারি এবং ইমাম মুসলিম রাহিমাহুমাল্লাহ তাঁদের নিজেদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন। ২। যেসব হাদিস ইমাম বুখারি রহঃ তাঁর নিজের কিতাবে উল্লেখ করেছেন কিন্তু ইমাম মুসলিম রহঃ তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেন নি।
৩। যেসব হাদিস ইমাম মুসলিম রহঃ নিজের কিতাবে উল্লেখ করেছেন, কিন্তু ইমাম বুখারি রহঃ তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেন নি।
৪। যেসব হাদিস ইমাম বুখারি এবং ইমাম মুসলিমের রহঃ এর দেয়া শর্তানুযায়ী সহীহ কিন্তু তাঁদের কেউই ওই হাদিস নিজেদের কিতাবে উল্লেখ করেন নি। [গুরুত্বপূর্ণ প্রকার]
৫। যেসব হাদিস ইমাম বুখারি রহঃ এর শর্তানুযায়ী সহীহ কিন্তু তিনি নিজের কিতাবে উক্ত হাদিস উল্লখে করেন নি।
৬। যেসব হাদিস ইমাম মুসলিম রহঃ এর শর্তানুযায়ী সহীহ কিন্তু তিনি নিজের কিতাবে উক্ত হাদিস উল্লেখ করেন নি।
৭। সেসব হাদিস যেগুলো ইমাম বুখারি এবং ইমাম মুসলিম রহঃ ব্যতীত অন্যান্য মুহাদ্দেসীনে কেরাম প্রদত্ত শর্তানুযায়ী সহীহ।
এ কারণে যারা বলে বেড়ান তারা বুখারি এবং মুসলিম ব্যতীত অন্য কোন গ্রন্থের হাদিস মানেন না, তারা না জেনেই রাসুল ﷺ এর প্রতি অন্যায় করছেন। ইমাম কাসীর বায়েসুল হাসিসে বুখারি এবং মুসলিম ব্যতীত আরো যেসব কিতাবে সহীহ হাদিস পাওয়া যায় সেসব গ্রন্থের বিস্তারিত তালিকা দিয়েছেন।
রাসুল ﷺ ফেতনার দিকে ইংগিত করে বলে গিয়েছেন এমন এক যুগ আসবে যখন খুব শান ও শওকতপূর্ণ কিছু আলেম বড় বড় চেয়ারে আসীন হবে। তাদেরকে যখন সুন্নাতের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হবে হাদিস থেকে প্রমানি হুজুর ﷺ এই জিনিসকে হালাল করেছেন এবং ওই জিনিসকে হারাম করেছেন। এ কথা শোনার পর তারা চেয়ারে টেক লাগিয়ে বসে বলবে, আমরা এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল নই, আমরা তো ওইটাকেই হালাল মনে করি যা কুরআন হালাল করেছে। কিংবা আমরা তো ওইটাকেই হারাম মানি যা কুরআন হারাম বলেছে। [সুনানে আবু দাউদের হাদিসের সারসংক্ষেপ]
আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে সত্য জানার তৌফিক দান করুণ এবং সত্যের উপর বহাল রাখুক। আমীন!
[এই গুরুত্বপূর্ণ বয়ানটি শুনুন। হাদিস সম্পর্কে সব ভুল ধারণা দূর হয়ে যাবে। কেবলমাত্র কিছু অনুবাদ গ্রন্থ আর অনলাইনে লেকচার শুনে যে কেউ মুফতি আর মুহাদ্দিস সেজে বসেন। তা যে কত ভয়ংকর তা অনুধাবন করতে পারবেন। যাদের মনে রাসূল ﷺ প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা রয়েছে তারা কখনই রাসূলের সুন্নাহকে অবহেলা করতে পারেন না।
উলুমে হাদিস সম্পর্কে জানুন এবং নিজের ঈমান, আক্বীদা ও আমলকে হেফাজত করুণ! জাযাকাল্লাহু খাইরান!]