প্রতিদিন ৩ কোটি ২৪ লাখ নেকী অর্জন করুন
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ তাআলার রহমতের উপর কুরবান! তিনি আমাদের জন্য নেকী অর্জন করা, মর্যাদা বৃদ্ধি করা এবং গুনাহ ক্ষমা করানোকে কতই সহজ করে দিয়েছেন। কিন্তু আফসোস! এত সহজ করে দেয়া সত্ত্বেও আমরা অলসতার মধ্যে রয়েছি। বর্ণিত হাদীস শরীফে আযানের উত্তর প্রদানের যে ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে তার বিস্তারিত বর্ণনা লক্ষ্য করুন।اَللهُ اَكْبَرُ اَللهُ اَكْبَرُ এখানে দু’টি শব্দ এভাবে পূর্ণ আযানের ভিতর ১৫টি শব্দ রয়েছে। যদি কোন ইসলামী বোন এক ওয়াক্ত নামাযের আযানের উত্তর দেয় অর্থাৎ মুয়াজ্জিন যা বলে তার পুনরাবৃত্তি করে তখন তার ১৫ লাখ নেকী অর্জন হবে। ১৫ হাজার মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং ১৫ হাজার গুনাহ ক্ষমা হয়ে যাবে। আর ইসলামী ভাইদের জন্য এসব কিছুর দ্বিগুণ ফযীলত অর্জন হবে। ফজরের আযানে দু’বার اَلصَّلٰوۃُ خَیْرٌ مِّنَالنَّوْم রয়েছে। আর এভাবে ফযরের আযানে ১৭টি শব্দ হলো, তাহলে ফযরের আযানের উত্তর প্রদানে ১৭ লাখ নেকী, ১৭ হাজার মর্যাদা বৃদ্ধি এবং ১৭ হাজার গুনাহের ক্ষমাপ্রাপ্তি অর্জিত হলো। আর ইসলামী ভাইদের জন্য এর দ্বিগুণ। ইকামাতের মধ্যেও দুইবার قَدْ قَامَتِ الصّلٰوۃ রয়েছে। ইকামাতের মধ্যেও ১৭টি শব্দ হলো সুতরাং ইকামাতের উত্তর প্রদানের সাওয়াবও ফজরের আযানের উত্তর প্রদানের সমপরিমাণ।
[মোটকথা;যদি কোন ইসলামী বোন গুরুত্ব সহকারে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আযান ও ইকামাতের উত্তর দিতে সফলকাম হয়ে যায় তবে তার প্রতিদিন এক কোটি বাষট্টি লাখ নেকী, এক লাখ বাষট্টি হাজার মর্যাদা বৃদ্ধি এবং এক লাখ বাষট্টি হাজার গুনাহ্ ক্ষমা হয়ে যাবে এবং ইসলামী ভাইদের এর দ্বিগুণ অর্থাৎ ৩ কোটি ২৪ লাখ নেকী অর্জন হবে। ৩ লাখ ২৪ হাজার মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং ৩ লাখ ২৪ হাজার গুনাহ ক্ষমা হয়ে যাবে।]
আযানের উত্তর প্রদানকারী জান্নাতী হয়ে গেলো
হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা ر رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ বলেন যে, এক ব্যক্তির প্রকাশ্যভাবে কোন অধিক পরিমাণ নেক আমল ছিলো না, ঐ ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে রাসূলুল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم সাহাবায়ে কিরামদের عَلَیۡہِمُ الرِّضۡوَان উপস্থিতিতেই অদৃশ্যের সংবাদ দিতে গিয়ে ইরশাদ করেন: “তোমরা কি জানো! আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন।” এতে লোকেরা অবাক হয়ে গেলো, কেননা বাহ্যিকভাবে তার কোন বড় আমল ছিলো না। সুতরাং এক সাহাবী رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ তাঁর ঘরে গেলেন এবং তাঁর বিধবা স্ত্রী رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہَا কে জিজ্ঞাসা করলেন: “তার কোন বিশেষ আমল আমাকে বলুন”। তখন সে উত্তর দিল: “তার এমন কোন বিশেষ বড় আমল আমার জানা নেই, শুধু এতটুকু জানি যে, দিন হোক বা রাত যখনই তিনি আযান শুনতেন তখন অবশ্যই উত্তর দিতেন।” (তারিখে দামেশক লিইবনে আসাকির, ৪০তম খন্ড, ৪১২, ৪১৩ পৃষ্ঠা) আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক আর তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।
গুনাহে গদা কা হিসাব কিয়া উহ আগর ছে লাখ্ ছে হে ছিওয়া
মগর এ্যায় আফুঊ তেরে আফ্উ কা তো হিসাব হে না শুমার হে
صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
আযান ও ইকামাতের উত্তর প্রদানের পদ্ধতি
মুয়াজ্জিন সাহেবের উচিত, আযানের শব্দগুলো একটু থেমে থেমে বলা। اَللهُ اَكْبَرُ اَللهُ اَكْبَرُ (এখানে দুটি শব্দ কিন্তু) উভয়টাকে মিলিয়ে (সাক্তা না করে এক সাথে পড়ার কারণে) এটা একটি শব্দ হয়। উভয়টি বলার পর সাক্তা করবেন (অর্থাৎ থেমে যাবেন) । আর সাক্তার পরিমাণ হচ্ছে যে, উত্তর প্রদানকারী যেন উত্তর দেয়া শেষ করতে পারে। সাক্তা না করাটা মাকরূহ, আর এ ধরণের আযান পুনরায় দেয়া মুস্তাহাব। (দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৬৬ পৃষ্ঠা) উত্তর প্রদানকারীর উচিত, যখন মুয়াজ্জিন সাহেব اَللهُ اَكْبَرُ اَللهُ اَكْبَرُ বলে সাক্তা করবেন অর্থাৎ চুপ হয়ে যাবেন তখন اَللهُ اَكْبَرُ اَللهُ اَكْبَرُ বলা। অনুরূপভাবে অন্যান্য শব্দাবলীরও উত্তর প্রদান করবে। যখন মুয়াজ্জিন প্রথমবার اَشْہَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ الله বলবে তখন আপনি এভাবে বলবেন,
صَلَّی اللهُ عَلیْكَ یَارَسُوْلَ الله (অনুবাদ: ইয়া রাসূলাল্লাহ صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আপনার উপর দরূদ।) যখন দ্বিতীয়বার বলবে তখন আপনি বলবেন:
قُرَّۃُ عَیْنِیْ بِكَ یَا رَسُوْلَ اللهِ (অনুবাদ: ইয়া রাসূলাল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আপনার নিকট আমার চোখের শীতলতা রয়েছে।) আর এ দুইটা বলার সময় প্রত্যেকবার বৃদ্ধাঙ্গুলীর নখকে চোখে লাগিয়ে নিবেন এবং পরে বলবেন:
اَللّٰہُمَّ مَتِّعْنِیْ بِالسَّمْعِ وَالْبَصَرِ (হে আল্লাহ! আমার শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তির দ্বারা আমাকে কল্যাণ দান করো।) (রদ্দুল মুখতার, ২য় খন্ড-৮৪ পৃষ্ঠা)
حَیَّ عَلَی الصَّلٰوۃএবং حَیَّ عَلَی الفَلَاح এর উত্তরে (চারবার)
لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّۃَ اِلَّا بِالله বলবেন এবং উত্তম হচ্ছে যে উভয়টা বলা। (অর্থাৎ মুয়াজ্জিন যা বলে তাও বলা এবং لَاحَوْل ও বলা) বরং সাথে এটাও বৃদ্ধি করে নিন:
مَاشَآءَ اللهُ کَانَ وَمَالَمْ یَشَأْ لَمْ یَکُنْ (অর্থাৎ-আল্লাহ্ যা ইচ্ছা করেছেন তা হয়েছে, যা ইচ্ছা করেননি তা হয়নি। (রদ্দুল মুহতার ও দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৮২ পৃষ্ঠা। ফতোওয়ায়ে আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৫৭ পৃষ্ঠা)
اَلصَّلٰوْۃُ خَیْرٌ مِّنَ النَّوْم এর উত্তরে বলবেন:
صَدَقْتَ وَبَرِرْتَ وَبِالْحَقِّ نَطَقْتَ (অনুবাদ: তুমি সত্য ও সৎ এবং তুমি সত্য বলেছ।)
(রদ্দুল মুহতার ও দুররে মুখতার, ৮৩ পৃষ্ঠা)
ইকামাতের উত্তর দেয়া মুস্তাহাব। এর উত্তরও আযানের মতই। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে قَدْقَامَتِ الصَّلٰوۃُ এর উত্তরে বলবেন:
اَقَامَہَا اللهُ وَاَدَامَہَا مَادَامَتِ السَّمٰوٰتُ وَالْاَرْض (অনুবাদ: আল্লাহ্ তাআলা তাকে প্রতিষ্ঠিত রাখুন যত দিন আসমান ও যমীন বিদ্যমান থাকে।) (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৫৭ পৃষ্ঠা)
আযানের ১৪টি মাদানী ফুল
(১) জুমাসহ পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায যখন মসজিদে সময় মত জামাআতে ঊলার (প্রথম জামাআত) সাথে আদায় করা হয় তখন এর জন্য আযান দেয়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, যার হুকুম ওয়াজিবের মতই। যদি আযান দেয়া না হয় তাহলে ঐ এলাকার সকল মানুষ গুনাহগার হবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৪৬৪ পৃষ্ঠা)
(২) যদি কোন লোক শহরের মধ্যে ঘরে নামায আদায় করে তাহলে ঐ এলাকার মসজিদের আযান তার জন্য যথেষ্ট, তবে আযান দেয়া মুস্তাহাব। (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৬২৭৮ পৃষ্ঠা)
(৩) যদি কোন ব্যক্তি শহরের বাহিরে বা গ্রামে, বাগান বা ক্ষেত ইত্যাদিতে থাকে এবং ঐ স্থানটি যদি নিকটবর্তী হয় তাহলে শহর বা গ্রামের আযান যথেষ্ট হবে, এরপরও আযান দেয়াটা উত্তম আর যদি নিকটবর্তী না হয় তার জন্য ঐ আযান যথেষ্ট নয়। নিকটবর্তী হওয়ার সীমা হচ্ছে, ঐ আযানের শব্দ ঐ স্থানে পৌঁছা। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৫৪ পৃষ্ঠা)
(৪) মুসাফির যদি আযান ও ইকামাত উভয়টা ছেড়ে দেয় অথবা ইকামাত না দেয় তাহলে মাকরূহ হবে। আর যদি শুধু ইকামাত দেয় তবে মাকরূহ হবে না কিন্তু উত্তম হচ্ছে যে, আযানও দেয়া। চাই সে একা হোক বা অন্যান্য সহযাত্রীরা সেখানে উপস্থিত থাকুক। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৪৭১ পৃষ্ঠা। রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৭৮ পৃষ্ঠা)
(৫) সময় শুরু হওয়ার পরই আযান দিবে। যদি সময়ের পূর্বেই আযান দিয়ে দেয় অথবা সময় হওয়ার পূর্বে আযান শুরু করেছে আর আযানের মাঝখানে সময় হয়ে গেলো উভয় অবস্থায় আযান পুনরায় দিতে হবে। (আল হিদায়া, ১ম খন্ড, ৪৫ পৃষ্ঠা) মুয়াজ্জিন সাহেবদের উচিত যে, তারা যেন সর্বদা সময়সূচীর ক্যালেন্ডার দেখতে থাকেন। কোন কোন স্থানে মুয়াজ্জিন সাহেবগণ সময়ের পূর্বেই আযান শুরু করে দেয়। ইমাম সাহেব ও কমিটির নিকটও মাদানী অনুরোধ থাকবে যে, তারাও যেন এ মাসআলার প্রতি গভীর দৃষ্টি রাখে।
(৬) মহিলাগণ নির্দিষ্ট সময়ানুসারে নামায পড়ুক বা কাযা নামায আদায় করুক তাদের জন্য আযান ও ইকামাত দেয়া মাকরূহ। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৭২ পৃষ্ঠা)
(৭) মহিলাদের জন্য জামাআতের সাথে নামায আদায় করা না জায়েয তথা অবৈধ। (প্রাগুক্ত, ৩৬৭ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৫৮৪ পৃষ্ঠা)
(৮) বিবেকবান ছোট ছেলেরাও আযান দিতে পারবে। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৭৫ পৃষ্ঠা)
(৯) বিনা অযুতে আযান দিলে শুদ্ধ হবে তবে বিনা অযুতে আযান দেয়া মাকরূহ। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৪৬৬ পৃষ্ঠা। মারাকিউল ফালাহ, ৪৬ পৃষ্ঠা)
(১০) হিজড়া, ফাসিক যদিও আলিম হোক, নেশাখোর, পাগল গোসল বিহীন এবং অবুঝ বাচ্চাদের আযান দেয়া মাকরূহ। এসকল ব্যক্তিরা আযান দিলে তাদের সবার আযানের পুনরাবৃত্তি করতে হবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৪৬৬ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৭৫ পৃষ্ঠা)
(১১) যদি মুয়াজ্জিনই ইমাম হন তাহলে তা উত্তম। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৮৮ পৃষ্ঠা)
(১২) মসজিদের বাহিরে কিবলামূখী হয়ে কানে আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে উচ্চ আওয়াজে আযান দিতে হবে, তবে শক্তির অধিক আওয়াজ উঁচু করা মাকরূহ। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৬৮-৩৬৯ পৃষ্ঠা। আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৫৫ পৃষ্ঠা) আযানে কানে আঙ্গুল প্রবেশ করানো সুন্নাত এবং মুস্তাহাব। কিন্তু (আঙ্গুল) হেলানো এবং ঘুরানো অনর্থক কাজ। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৫ম খন্ড, ৩৭৩ পৃষ্ঠা)
(১৩) حَیَّ عَلَی الصَّلٰوۃ ডান দিকে মুখ করে বলবে এবং حَیَّ عَلَی الفَلَاح বাম দিকে মুখ করে বলবে। যদিও আযান নামাযের জন্য না হয়। যেমন (ভূমিষ্ট হওয়ার পর) ছোট বাচ্চার কানে আযান দেয়া হয়। এ ফেরানোটা শুধু মুখের, পুরো শরীর ফিরাবেন না। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৬৬ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৪৬৯ পৃষ্ঠা) অনেক মুয়াজ্জিন “صَلٰوۃ” ও “فَلَاح” বলার সময় চেহারাকে হালকাভাবে ডানে ও বামে একটু করে ফিরিয়ে নেয়, এটা ভুল পদ্ধতি। সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে, প্রথমেই চেহারাকে ভালভাবে ডানে ও বামে ফিরাতে হবে এরপর حَیَّ বলা শুরু করতে হবে।
(১৪) ফজরের আযানে حَیَّ عَلَی الفَلَاح এর পরে اَلصَّلٰوۃُ خَیْرٌ مِّنَ النَّوْم বলা মুস্তাহাব। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৬৭ পৃষ্ঠা) যদি নাও বলে তবুও আযান হয়ে যাবে। (কানুনে শরীয়াত, ৮৯ পৃষ্ঠা)
আযানের উত্তর প্রদানের ৯টি মাদানী ফুল
(১) নামাযের আযান ব্যতীত অন্যান্য আযানের উত্তরও প্রদান করতে হবে, যেমন-সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার সময়কার আযান। (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৮২ পৃষ্ঠা)
আমার আক্বা আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: যখন বাচ্চা ভূমিষ্ট হয়। তাড়াতাড়ি ডান কানে আযান বাম কানে তাকবীর বলবে যেন শয়তানের ক্ষতি এবং উম্মুস সিবয়ান থেকে বাঁচতে পারে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২৪তম খন্ড, ৪৫২ পৃষ্ঠা)
মলফুজাতে আ’লা হযরত ৪১৭ পৃষ্ঠা থেকে ৪১৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে: (মৃগী রোগ) অনেক খারাপ বিপদ। আর যদি বাচ্চাদের হয় তবে এটিকে উম্মুস সিবায়ন বলা হয়, বড়দের হলে মৃগী রোগ বলে।
(২) মুক্তাদীদের উচিত, খুতবার আযানের উত্তর কখনো না দেয়া, এটাই সতর্কতা অবলম্বন। অবশ্য যদি এই আযানের উত্তর অথবা (দুই খুতবার মাঝখানে) দোয়া মনে মনে করে, মুখ দ্বারা মোটেই উচ্চারণ না করে তবে কোন অসুবিধা নেই। আর ইমাম অর্থাৎ খতীব সাহেব যদি মুখ দ্বারা আযানের উত্তর দেয় বা দোয়া করেন তবে তা নিঃসন্দেহে জায়িয। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংশোধিত) , ৮ম খন্ড, ৩৩০-৩০১ পৃষ্ঠা)
(৩) আযান শ্রবণকারীদের জন্য উত্তর প্রদানের হুকুম রয়েছে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৭২ পৃষ্ঠা) অপবিত্র ব্যক্তিরাও (অর্থাৎ-যার উপর সহবাস বা স্বপ্নদোষের কারণে গোসল ফরয হয়েছে) আযানের উত্তর দিবেন। অবশ্য হায়েয, নিফাস বিশিষ্ট মহিলা, খুতবা শ্রবণকারী, জানাযার নামায আদায়রত ব্যক্তি, সহবাসে লিপ্ত বা বাথরুমে রয়েছে এমন ব্যক্তিগণ উত্তর দিবেন না। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৮১ পৃষ্ঠা)
(৪) যতক্ষণ আযান হয় ততক্ষণ পর্যন্ত সালাম, কথাবার্তা ও সালামের উত্তর প্রদান এবং সব ধরণের কাজকর্ম বন্ধ রাখবেন। এমনকি কুরআন তিলাওয়াতও। আযানকে মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করুন এবং এর উত্তর দিন। ইকামাতের সময়ও এভাবে করবেন। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৪৭৩ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৮৬ পৃষ্ঠা। আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৫৭ পৃষ্ঠা)
(৫) আযান প্রদানকালীন সময়ে চলা-ফেরা, খাওয়া দাওয়া, প্লেইট, গ্লাস বা কোন বস্তু উঠানো ও রাখা, ছোট বাচ্চার সাথে খেলা করা, ইশারা-ইঙ্গিতে কথাবার্তা বলা ইত্যাদি সবকিছু বন্ধ রাখাই যথার্থ।
(৬) যে ব্যক্তি আযান চলাকালীন সময়ে কথাবার্তায় ব্যস্ত থাকে, আল্লাহ্র পানাহ তার মন্দ মৃত্যু হওয়ার (অর্থাৎ মৃত্যুর সময় তার ঈমান ছিনিয়ে নেয়ার) আশংকা রয়েছে। (বাহারে শরীয়াত, ১য় খন্ড, ৪৭৩ পৃষ্ঠা)
(৭) রাস্তায় চলাচল করা অবস্থায় যদি আযানের শব্দ কানে আসে তখন উচিত হচ্ছে দাঁড়িয়ে চুপচাপভাবে আযান শুনা এবং এর উত্তর প্রদান করা। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৫৭ পৃষ্ঠা) হ্যাঁ! আযান চলাকালীন সময়ে মসজিদ বা অযুখানার দিকে চলা এবং অযু করাতে কোন সমস্যা নেই। এর মধ্যে মুখে জবাবও দিতে থাকুন।
(৮) আযান চলাকালীন ইস্তিন্জাখানায় যাওয়া উচিত নয়, কেননা ঐখানে আযানের জবাব দিতে পারবে না এবং এটি অনেক বড় সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়া। অবশ্য খুবই প্রয়োজন হলে কিংবা জামাআত না পাওয়ার সম্ভাবনা হলে যেতে পারবেন।
(৯) যদি কয়েকটি আযান শুনেন তাহলে প্রথম আযানের উত্তর দিতে হবে, তবে উত্তম হচ্ছে যে, প্রতিটি আযানের উত্তর প্রদান করা। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৮২ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৪৭৩ পৃষ্ঠা) যদি আযান দেয়ার সময় উত্তর না দিয়ে থাকেন তবে যদি বেশিক্ষণ সময় অতিবাহিত না হয় তাহলে উত্তর দিয়ে দিবেন। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৮৩ পৃষ্ঠা)
ইকামাতের ৭টি মাদানী ফুল
(১) ইকামাত মসজিদের ভিতরে ইমামের ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে দেয়া উত্তম। যদি ঠিক পিছনে সুযোগ পাওয়া না যায় তবে ইমামের ডান দিক থেকে দেয়া উচিত। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া হতে সংগৃহীত, ৫ম খন্ড, ৩৭২ পৃষ্ঠা)
(২) ইকামাত আযানের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৬৮ পৃষ্ঠা)
(৩) ইকামাতের উত্তর দেয়া মুস্তাহাব। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৭৩ পৃষ্ঠা)
(৪) ইকামাতের শব্দাবলী তাড়াতাড়ি বলবেন এবং মাঝখানে “সাক্তা” অর্থাৎ চুপ থাকবেন না। (প্রাগুক্ত, ৪৭০ পৃষ্ঠা)
(৫) ইকামাতের মধ্যেও حَیَّ عَلَی الصَّلٰوۃ ও حَیَّ عَلَی الفَلَاح এর মধ্যে (বর্ণনা মোতাবেক) ডানে বামে মুখ ফিরাবেন। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৬৬ পৃষ্ঠা)
(৬) ইকামাত দেয়ার অধিকার তারই যে আযান দিয়েছে, আযান প্রদানকারীর অনুমতিক্রমে অন্য কেউ ইকামাত দিতে পারবে। যদি বিনা অনুমতিতে ইকামাত দেয় আর মুয়াজ্জিন এটা অপছন্দ করে তবে মাকরূহ। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৫৪ পৃষ্ঠা)
(৭) ইকামাতের সময় কোন ব্যক্তি আসল তখন সে (জামাআতের জন্য) দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করাটা মাকরূহ বরং বসে যাবে একই ভাবে যে সকল লোক মসজিদে রয়েছে তারাও বসা থাকবে এবং ঐ সময় দাঁড়াবে যখন মুয়াজ্জিন حَیَّ عَلَی الفَلَاح পর্যন্ত পৌঁছে, এ হুকুম ইমাম সাহেবের জন্যও। (প্রাগুক্ত, ৫৭ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৪৭১ পৃষ্ঠা)
আযান দেয়ার ১১টি মুস্তাহাব স্থান
(১) (সন্তান ভূমিষ্ট হলে) সন্তানের (২) দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ ব্যক্তির (৩) মৃগী রোগীর (৪) রাগান্বিত ও বদমেযাজী ব্যক্তির এবং (৫) বদমেযাজী জন্তুর কানে আযান দেওয়া (৬) তুমুল যুদ্ধ চলাকালীন সময় (৭) কোথাও আগুন লাগলে (৮) মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর (৯) জ্বিন অত্যাচার করলে (বা যাকে জ্বিনে ধরেছে) (১০) জঙ্গলে রাস্তা ভুলে গেলে এবং কোন পথ প্রদর্শনকারী না থাকলে এ সময়। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৪৬৬ পৃষ্ঠা। রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৬২ পৃষ্ঠা) এমনকি (১১) মহামারী রোগ আসাকালীন সময়ে আযান দেওয়া মুস্তাহাব। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৪৬৬ পৃষ্ঠা। ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংশোধিত) , ৫ম খন্ড, ৩৭০ পৃষ্ঠা)
মসজিদের ভিতরে আযান দেয়া সুন্নাত পরিপন্থী
আজকাল অধিকাংশ মসজিদের ভিতরেই আযান দেয়ার প্রথা চালু রয়েছে যা সুন্নাত পরিপন্থী। “আলমগিরী” ও অন্যান্য কিতাবে উল্লেখ রয়েছে: আযান মসজিদের বাহিরেই দিতে হবে মসজিদের ভিতর আযান দিবেন না। (ফতোওয়ায়ে আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৫৫ পৃষ্ঠা)
আমার আক্বা, আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, আযীমুল বরকত, আযীমুল মারতাবাত, পরওয়ানায়ে শাময়ে রিসালাত, মুজাদ্দিদে দ্বীনো মিল্লাত, হামীয়ে সুন্নাত, হযরত আল্লামা মাওলানা আলহাজ্ব আল হাফিয আল ক্বারী আশ্ শাহ ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “একটি বারের জন্যও এ কথার প্রমাণ নেই যে, হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم মসজিদের ভিতর আযান প্রদান করিয়েছেন।”সায়্যিদী আলা হযরত رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ আরো বলেন: মসজিদের ভিতর আযান দেয়া মসজিদ ও আল্লাহ্ তাআলার দরবারের সাথে বেয়াদবী করা। মসজিদের প্রাঙ্গনের নিচে যেখানে জুতা রাখা হয় ঐ স্থানটি মসজিদের বাহিরের হয়ে থাকে, সেখানে আযান দেয়া বিনাদ্বিধায় সুন্নাত। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংশোধিত) , ৫ম খন্ড, ৪১১, ৪১২, ৪০৮ পৃষ্ঠা) জুমার দ্বিতীয় আযান যা আজকাল (খুতবার পূর্বে) মসজিদের ভিতরে খতিব ও মিম্বরের সামনেই দেয়া হয় এটাও সুন্নাতের পরিপন্থী। জুমার দ্বিতীয় আযানও মসজিদের বাহিরে দিতে হবে তবে মুয়াজ্জিন খতীবের সোজা সামনে থাকবে।
১০০ শহীদের সাওয়াব অর্জন করুন
সায়্যিদী আলা হযরত رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: সুন্নাতকে জীবিত করা তো ওলামায়ে কিরামদের বিশেষ দায়িত্ব এবং যে মুসলমানের পক্ষে করা সম্ভব তার জন্য এটা সাধারণ হুকুম। প্রত্যেক শহরের মুসলমানদের উচিত হচ্ছে যে, আপন শহরে বা কমপক্ষে নিজ নিজ মসজিদ সমূহে (আযান ও জুমার দ্বিতীয় আযান মসজিদের বাহিরে দেয়ার) এ সুন্নাতকে জীবিত করা এবং শত শত শহীদের সাওয়াব অর্জন করা। রাসূলুল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর বাণী হচ্ছে: “যে ফিৎনা-ফ্যাসাদের যুগে আমার সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরবে সে একশত শহীদের সাওয়াব লাভ করবে।” (আয যুহুদুল কবীর লিল বায়হাকী, ১১৮ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২০৭। ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৫ম খন্ড, ৪০৩ পৃষ্ঠা) এ মাসআলাকে বিস্তারিতভাবে জানতে ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংশোধিত) , ৫ম খন্ড, “বাবুল আযান ওয়াল ইকামাত” অধ্যয়ন করুন।
আযানের পূর্বে এই দরূদে পাকগুলো পড়ুন
আযান ও ইকামাতের পূর্বে بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحيْمِ পড়ে দরূদ ও সালামের এ চারটি বচন পড়ে নিন।
اَلصَّلٰوۃُ وَالسَّلَامُ عَلَیْكَ یَارَسُوْلَ الله وَعَلٰی اٰلِكَ وَاَصْحٰبِكَ یَا حَبِیْبَ الله
اَلصَّلٰوۃُ وَالسَّلَامُ عَلَیْكَ یَا نَبِیَّ الله وَعَلٰی اٰلِكَ وَاَصْحٰبِكَ یَانُوْرَ الله
অতঃপর দরূদ ও সালাম এবং আযানের মাঝখানে দূরত্ব রাখার জন্য এ ঘোষণাটি করুন, “আযানের সম্মানার্থে কথাবার্তা এবং কাজ-কর্ম বন্ধ রেখে আযানের উত্তর প্রদান করুন এবং প্রচুর সাওয়াব অর্জন করুন।”এরপর আযান দিন। দরূদ ও সালাম এবং ইকামাতের মাঝখানে এটা ঘোষণা করুন, “ইতিকাফের নিয়্যত করে নিন, মোবাইল থাকলে বন্ধ করে দিন।” আযান ও ইকামাতের পূর্বে তাসমিয়্যাহ (بِسْمِ اللهِ) এবং দরূদ ও সালামের নির্দিষ্ট এ চারটি বচন বলার মাদানী অনুরোধ এই উদ্দীপনা নিয়ে করছি, যেন এভাবে আমার জন্যও কিছু সাওয়াবে জারীয়া অর্জনের ব্যবস্থা হয়ে যায়। আর বিরতি করার পরামর্শ (অর্থাৎ দরূদো সালাম ও আযানের মাঝখানে বিরতি এবং দরূদো সালাম ও ইকামাতের মাঝখানে বিরতি ফতোওয়ায়ে রযবীয়্যার ফয়যান (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া পাঠ করে উপকৃত হয়ে তা) থেকে উপস্থাপন করেছি। যেমন একটি ফতোয়ার উত্তরে ইমামে আহলে সুন্নাত رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “দরূদ শরীফ ইকামাতের পূর্বে পড়াতে কোন অসুবিধা নেই কিন্তু (তারও) ইকামাতের মধ্যে বিরতি দেয়া চাই অথবা দরূদ শরীফের শব্দ যেন ইকামাতের শব্দ থেকে কিছুটা নিম্নস্বরে বলা হয়, যাতে করে তা যে স্বতন্ত্র তা বুঝা যায় এবং সর্বসাধারণ যেন দরূদ শরীফকে ইকামাতের অংশ মনে না করে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংশোধিত) , ৫ম খন্ড, ৩৮৬ পৃষ্ঠা)