ফয়যানে জুমা
জুমার দিন দরূদ শরীফ পাঠের ফযীলত
নবীদের সুলতান, রহমতে আলামিয়ান, সরদারে দো-জাহান, মাহবুবে রহমানصَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর জুমার দিন দুইশত বার দরূদ শরীফ পাঠ করবে, তার দুইশত বছরের গুনাহ্ মাফ হয়ে যাবে।” (জমউল জাওয়ামেয় লিস সুয়ূতী, ৭ম খন্ড, ১৯৯ পৃষ্ঠা, হাদীস-২২৩৫৩)
صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আমরা কতই না সৌভাগ্যবান যে, আল্লাহ্ তাআলা তাঁর প্রিয় হাবীব صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর ওসিলায় আমাদেরকে বরকতময় জুমার নিয়ামত দ্বারা ধন্য করেছেন। আফসোস! আমরা অকৃতজ্ঞরা অন্যান্য দিনের মতো জুমার দিনটিকেও অলসতার মধ্যে অতিবাহিত করি। অথচ জুমার দিন ঈদের দিন, জুমার দিন সকল দিনের সরদার, জুমার দিনে জাহান্নামের আগুন প্রজ্বলিত করা হয় না, জুমার রাতে জাহান্নামের দরজা খোলা হয় না, জুমাকে কিয়ামতের দিন নববধূর মতো উঠানো হবে, জুমার দিনে মৃত্যুবরণকারী সৌভাগ্যবান মুসলমান শহীদের মর্যাদা লাভ করে এবং কবরের আযাব থেকে নিরাপদ হয়ে যায়। প্রসিদ্ধ মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত হযরত আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর বর্ণনা অনুসারে;“জুমার দিন হজ্ব হলে সেটার সাওয়াব সত্তরটি হজ্জের সাওয়াবের সমপরিমাণ হবে। জুমার দিনের একেকটি সৎকাজের সাওয়াব সত্তরগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। (যেহেতু জুমার দিনের মর্যাদা অনেক বেশি, তাই) জুমার দিনে গুনাহের শাস্তিও সত্তর গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। (মীরআত, ২য় খন্ড, ৩২৩, ৩২৫, ৩২৬ পৃষ্ঠা)
বরকতময় জুমার ফযীলত সম্পর্কে আর কী বলব? আল্লাহ্ তাআলা পবিত্র কুরআনে “সুরাতুল জুমা” নামে পরিপূর্ণ একটি সূরা অবতীর্ণ করেছেন। যা কুরআনুল করীমের ২৮তম পারায় শোভা পাচ্ছে। আল্লাহ তাআলা “সুরা- জুমা”এর নবম আয়াতে ইরশাদ করেন:
يَاۤ اَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰہِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۹﴾
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ:হে ঈমানদারগণ! যখন নামাযের আযান হয় জুমা দিবসে, তখন আল্লাহর যিকরের দিকে দৌঁড়াও এবং বেচা-কেনা পরিত্যাগ করো, এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জানো।
হুযুর পুরনূর ﷺ প্রথম জুমা কখন আদায় করেছিলেন?
সদরুল আফাযীল হযরত আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: হুযুরে আকরাম, নূরে মুজাস্সাম, শাহে বনী আদম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم যখন হিজরত করে মদীনা শরীফ তাশরীফ আন ছিলেন তখন রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ (৬২২ খ্রীষ্টাব্দ) রোজ সোমবার চাশতের (দ্বিপ্রহর) সময় ‘কুবা’নামক স্থানে অবস্থান করেন।সোম, মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার সেখানে অবস্থান করেন এবং মসজিদের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। জুমার দিন তিনি মদীনা শরীফ যাওয়ার সংকল্প করলেন। বনী সালেম ইবনে আউফ এর “বতনে ওয়াদী”এলাকায় জুমার সময় উপস্থিত হলে ঐ জায়গায় লোকেরা মসজিদ তৈরী করলেন এবং তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم সেখানে জুমা আদায় করেন এবং খোৎবা দেন। (খাযায়েনুল ইরফান, ৮৮৪ পৃষ্ঠা)
اَلْحَمْدُ لِلّٰہ عَزَّوَجَلَّ আজও ঐ স্থানে সুন্দর “জুমা মসজিদ” বিদ্যমান রয়েছে। যিয়ারতকারীগণ বরকত লাভের জন্য সে মসজিদটির যিয়ারত করেন এবং সেখানে নফল নামায আদায় করেন।
জুমার অর্থ
প্রখ্যাত মুফাস্সীর, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: যেহেতু সেদিনই (জুমার দিন) সমস্ত সৃষ্ট জীবের অস্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটেছে, সেদিনই হযরত সায়্যিদুনা আদম عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام এর মাটি একত্রিত করা হয়, আর সেদিনই লোকেরা একত্রিত হয়ে জুমার নামায আদায় করে। এই কারণে সে দিনকে জুমা বলা হয়। ইসলামের পূর্বে আরবরা এটাকে ‘আরুবা’ নামে অভিহিত করতো। (মিরাতুল মানাজিহ, ২য় খন্ড, ৩১৭ পৃষ্ঠা)
হুযুর পুরনূর ﷺ সর্বমোট কয়টি জুমা আদায় করেছিলেন?
প্রখ্যাত মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: নবী করীম, রউফুর রহীম, রাসূলে আমীন صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم প্রায় ৫০০টি জুমার নামায আদায় করেন। কেননা, জুমা হিজরতের পর শুরু হয় আর হিজরতের পর হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم দশ বছর সময়কাল পর্যন্ত জাহেরী জিন্দেগীতে ছিলেন।ঐ সময়ে জুমার সংখ্যা৫০০ ওয়াক্তই হয়। (মীরআত, ২য় খন্ড, ৩৪৬ পৃষ্ঠা। লুময়াত লিশ শায়খ আব্দুল হক দেহলভী, ৪র্থ খন্ড, ১৯০ পৃষ্ঠা, হাদীস-১৪১৫)
তিন জুমা অলসতায় বর্জনকারীর অন্তরে মোহর
রাসূলে আকরাম, নূরে মুজাস্সাম, শাহে বনী আদম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি অলসতার কারণে তিন জুমার নামায পরিত্যাগ করবে, আল্লাহ্ তাআলা তার অন্তুরে মোহর মেরে দিবেন।” (সুনানে তিরমিযী, ২য় খন্ড, ৩৮ পৃষ্ঠা হাদীস-৫০০) জুমা ফরযে আইন, এর ফরযিয়্যত (অর্থাৎ ফরয হওয়ার ভিত্তি) যোহর থেকেও বেশি সুদৃঢ় আর এর অস্বীকারকারী কাফির। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৫ পৃষ্ঠা।বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৬২ পৃষ্ঠা)
প্রত্যেক জুমার দিন ১ কোটি ৪৪ লক্ষ জাহান্নামীদের মুক্তি
সুলতানে মদীনা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “জুমার দিনের রাত-দিন ২৪ ঘন্টার মধ্যে এমন কোন ঘন্টা নেই, যার মধ্যে প্রতিনিয়ত ৬ লক্ষ দোযখীকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না, যাদের উপর জাহান্নাম ওয়াজীব হয়ে গেছে।” (মুসনাদে আবু ইয়ালা, ৩য় খন্ড, ২৯১, ২৩৫ পৃষ্ঠা, হাদীস-৩৪২১, ৩৪৭১)
কবরের আযাব থেকে মুক্ত
প্রিয় আক্বা, মক্কী মাদানী মুস্তফা, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন কিংবা জুমার রাতে মৃত্যুবরণ করবে, সে কবরের আযাব থেকে মুক্তি পাবে এবং কিয়ামতের দিন সে এমনভাবে উঠবে যে, তার উপর শহীদদের মোহর থাকবে।” (হিলআতুল আউলিয়া, ৩য় খন্ড, ১৮১ পৃষ্ঠা, হাদীস-৩৬২৯)
দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ সমূহের ক্ষমা
হযরত সায়্যিদুনা সালমান ফারসী رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ থেকে বর্ণিত;মদীনার তাজেদার, রাসূলদের সর্দার, উভয় জগতের মালিক ও মুখতার صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে, যথাসাধ্য পবিত্রতা অর্জন করে, তৈল মালিশ করে, ঘরে সুগন্ধি যা পায় তা লাগায় অতঃপর নামাযের জন্য ঘর থেকে বের হয়, এবং পাশাপাশি বসা দুইজন ব্যক্তিকে সরিয়ে তাদের মাঝখানে না বসে। তার উপর ফরযকৃত জুমার নামায আদায় করে এবং ইমাম যখন খোৎবা পড়ে তখন চুপ থাকে, তাহলে তার এই জুমা এবং পরবর্তী জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ্ সমুহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।” (সহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, ৩০৬ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৮৮৩)
২০০ বছরের ইবাদতের সাওয়াব
হযরত সায়্যিদুনা সিদ্দীকে আকবর ও হযরত সায়্যিদুনা ইমরান বিন হোসাইনرَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُمَا বর্ণনা করেন;প্রিয় রাসূল, রাসূলে মাকবুল, হুযুর পুরনূরصَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে তার গুনাহ ও ত্রুটি সমূহ মুছে দেয়া হয় এবং যখন (মসজিদের দিকে) চলা শুরু করে, তখন প্রতিটি কদমে ২০টি নেকী লিখা হয়। (আল মুজামুল কবীর, ১৮তম খন্ড, ১৩৯ পৃষ্ঠা, হাদীস-২৯২) অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, প্রত্যেক কদমে ২০ বছরের আমলের (সাওয়াব) লিখা হয়। আর যখন নামায শেষ করে তখন সে ২০০ বছরের আমলের সাওয়াব পায়। (আল মু’জামুল আওসাত, ২য় খন্ড, ৩১৪ পৃষ্ঠা, হাদীস-৩৩৯৭)
মরহুম পিতা-মাতার নিকট প্রত্যেক জুমাতে আমল পেশ করা হয়
নবী করীম, রউফুর রহীম, রাসূলে আমীন صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন:“প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার আল্লাহ্ তাআলার দরবারে মানুষের আমল সমূহ পেশ করা হয় এবং প্রতি জুমাবার আম্বিয়ায়ে কিরাম عَلَیۡہِمُ الصَّلٰوۃُ وَالسَّلَام ও পিতামাতার সামনে আমল সমূহ পেশ করা হয়। তারা নেকী সমূহের উপর সন্তুষ্ট হন এবং তাদের চেহারার পরিচ্ছন্নতা ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। সুতরাং তোমরা আল্লাহ্ তাআলাকে ভয় করো এবং তোমাদের মৃতদেরকে নিজেদের গুনাহ্ দ্বারা কষ্ট দিও না।” (নাওয়াদিরুল উসূল লিল হাকীমিত তিরমিযী, ২য় খন্ড, ২৬০ পৃষ্ঠা)
দুই জুমার মধ্যবর্তী দিন সমূহে নূর
হযরত সায়্যিদুনা আবু সাঈদ رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ থেকে বর্ণিত; নবী করীম, রউফুর রহীম, রাসূলে আমীন صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন ‘সুরা কাহাফ’ পাঠ করবে, দুই জুমার মধ্যবর্তী দিন সমূহ তার জন্য নূর দ্বারা আলোকিত থাকবে।” (আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, ৩য় খন্ড, ৩৫৩ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৫৯৯৬)
কা’বা পর্যন্ত নূর
অপর বর্ণনায় রয়েছে;“যে ব্যক্তি জুমার রাতে (অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের মধ্যবর্তী রাতে) ‘সুরাতুল কাহাফ’ পাঠ করবে, তার জন্য সেখান থেকে কা’বা শরীফ পর্যন্ত নূর দ্বারা আলোকিত হবে।” (সুনানে দারমী, ২য় খন্ড, ৫৪৬ পৃষ্ঠা, হাদীস-৩৪০৭)
সূরা হা-মীম আদ্ দুখান এর ফযীলত
হযরত সায়্যিদুনা আবু উমামা رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ থেকে বর্ণিত; রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, শাহে বনী আদম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন কিংবা জুমার রাতে সূরা হা-মীম আদ্ দুখান পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন।” (আল মুজামুল কবীর লিত্ তাবরানী, ৮ম খন্ড, ২৬৪পৃষ্ঠা, হাদীস-৮০২৬) অপর বর্ণনায় রয়েছে, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। (তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ৪০৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৮৯৮)
৭০ হাজার ফিরিশতার ক্ষমা প্রার্থনা
নবী করীম, রউফুর রহীম, রহমাতুল্লিল আলামীন صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি জুমার রাতে ‘সূরা হা-মীম আদ দুখান’ পাঠ করবে, তার জন্য সত্তর হাজার ফিরিশতা সকাল পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা করবে।” (সুনানে তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ৪০৬ পৃষ্ঠা, হাদীস-২৮৯৭)
সমস্ত গুনাহের ক্ষমা
হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ থেকে বর্ণিত;প্রিয় আক্বা, উভয় জগতের দাতা, মাদানী মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন ফযরের নামাযের পূর্বে তিনবার-اَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِىْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ وَاَتُوْبُ اِلَيْهِ পাঠ করবে তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। যদিও তা সমুদ্রের ফেনার চেয়েও অধিক হয়। (আল মু’জামুল আউসাত লিত তাবারানী, ৫ম খন্ড, ৩৯২ পৃষ্ঠা, হাদীস-৭৭১৭)
জুমার নামাযের পর
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের ২৮ তম পারার সূরা জুমার দশম আয়াতে ইরশাদ করেন:
فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰہِ وَ اذۡکُرُوا اللّٰہَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ﴿۱۰﴾
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: অতঃপর যখন নামায শেষ হলো, তখন ভূ-পৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো আর আল্লাহ্কে খুব স্মরণ করো! এ আশায় যে, সাফল্য লাভ করবে।
সদরুল আফাযিল হযরত আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদীرَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে খাযাইনুল ইরফানের মধ্যে বলেন:‘জুমার নামাযের পর জীবিকা অর্জনের কাজে লিপ্ত হওয়া, কিংবা জ্ঞানার্জন, রোগীর সমবেদনা, জানাযায় অংশগ্রহণ, আলিম ওলামাদের সাক্ষাৎ ও অনুরূপ সৎকাজের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হয়ে পূণ্য অর্জন করো।’
ইলমে দ্বীনের মজলিশে শরীক হওয়া
জুমার নামাযের পর ইলম চর্চার মজলিসে অংশগ্রহণ করা মুস্তাহাব। যেমনিভাবে- হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ এর বাণী হচ্ছে: “এই আয়াতে শুধুমাত্র বেচা-কেনা এবং দুনিয়াবী উপার্জন উদ্দেশ্য নয় বরং জ্ঞান অর্জন করা, আপন ভাইদের সাথে সাক্ষাত করা, রোগীদের সেবা করা, জানাযায় অংশগ্রহণ করা এবং এই ধারণের অন্যান্য সৎকাজ।” (কিমিআয়ে সাআদাত, ১ম খন্ড, ১৯১ পৃষ্ঠা)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! জুমার নামায আদায় করা ওয়াজীব হওয়ার জন্য ১১টি শর্ত রয়েছে। সেখান থেকে একটিও বাদ পড়লে জুমার নামায ফরয হবে না। এরপরও যদি কেউ জুমার নামায আদায় করে তাহলে হয়ে যাবে। প্রত্যেক বিবেকবান, সুস্থ বিবেক সম্পন্ন, প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের জন্য জুমার নামায আদায় করা উত্তম। অপ্রাপ্ত বয়স্ক জুমার নামায আদায় করলে তা নফল হিসাবে গণ্য হবে কেননা তার উপর জুমা ফরয নয়। (রদ্দুল মুহতার ও দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩০ পৃষ্ঠা)