জুমার খুতবা
ঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁ
৪র্থ জুমা, শাওয়াল ১৪৩৯ হি: জুন, ২০১৮ সাল
বিষয়: অল্পে তুষ্টি মু’মিন চরিত্রের অন্যতম ভূষণ।
******************************************
সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আয্হারী
খতিব, মুসাফিরখানা জামে মসজিদ, নন্দনকানন, চট্টগ্রাম। সহকারী অধ্যাপক, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
জীবন-জীবিকার তাগিদে অর্থের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ইসলামে বিষয়টি আরো তাৎপর্যপূর্ণ। ইসলামে অর্থবিত্ত মহান আল্লাহর নিয়ামত। এ নিয়ামত অর্জনে ইসলাম সবল, সক্ষম প্রত্যেক অনুসারীকে উৎসাহ করেছে। তবু মানবজীবনে চাহিদার কোনো শেষ নেই। যার অর্থকড়ি যত বেশি তার চাহিদাও তত বেশি। হাদিস শরিফে এসেছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” يَكْبَرُ ابْنُ آدَمَ وَيَكْبَرُ مَعَهُ اثْنَانِ: حُبُّ المَالِ، وَطُولُ العُمُرِ ” رَوَاهُ شُعْبَةُ، عَنْ قَتَادَةَ) صحيح البخاري – الحدود (৬৪২১) صحيح مسلم – الزكاة (১০৩১) سنن الترمذي – الزهد (২৩৯১) سنن النسائي – آداب القضاة (৫৩৮০) مسند أحمد – باقي مسند المكثرين (২/৪৩৯)
“মানুষ যতই বৃদ্ধ হয়, তার মধ্যে দুটি বস্তুর আকাক্সক্ষা ‘যুবক’ হতে থাকে-দীর্ঘায়ু ও অর্থমোহ।”(বুখারী, হা-৬৪২১, মুসলিম, হা-১০৩১)
মৃত্যুর পর মানুষের মুখে মাটি পড়া পর্যন্ত চাহিদা বাড়তেই থাকে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষ চাইতেই থাকে। যেহেতু মানুষের এই চাহিদা কখনো শেষ হওয়ার নয়, তাই তা সীমিত রাখার মধ্যেই মানবজীবনে সুখ আসে।
অল্পে তুষ্টি মু’মিন চরিত্রের অন্যতম ভূষণ। কারণ প্রকৃত মু’মিন সর্বদা নিজেকে মহান স্রষ্টার নে‘আমতে ডুবে আছে বলে অনুভব করে। তাই সে সবসময় কৃতজ্ঞতা পরায়ণ হয়। সে যখন যা পায় তাকেই নিজের জন্য মহান প্রভুর পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ হিসেবে গণ্য করে। তাই সে না পাওয়া বা বঞ্চিত হওয়ার মর্মপীড়ায় ভোগে না। আর যে কোন মূল্যে এটি আমার পেতেই হবে এরূপ চিন্তায়ও মরিয়া হয়ে যায় না।
অবশ্য ঈমানের গুণ অনুপস্থিত হলে মানুষের অবস্থা হয় ভিন্নরূপ। আর তা হলো এই যে, সে যত কিছুই পাক, যত কিছুরই মালিক হোক কিছুতেই তার তৃপ্তি হয় না। সর্বাবস্থায় সে আরো চাই, আরো চাই বলে জপতে থাকে। হাদীসের ভাষায়,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَوْ كَانَ لِابْنِ آدَمَ وَادٍ مِنْ ذَهَبٍ الْتَمَسَ مَعَهُ وَادِيًا آخَرَ وَلَنْ يَمْلَأَ فَمَهُ إِلَّا التُّرَابُ ثُمَّ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَى مَنْ تَابَ) مسلم (১০৪৮) عن ابْنَ عَبَّاسٍ يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لَوْ أَنَّ لِابْنِ آدَمَ مِلْءَ وَادٍ مَالًا لَأَحَبَّ أَنْ يَكُونَ إِلَيْهِ مِثْلُهُ وَلَا يَمْلَأُ نَفْسَ ابْنِ آدَمَ إِلَّا التُّرَابُ وَاللَّهُ يَتُوبُ عَلَى مَنْ تَابَ) البخاري (৬৪৩৭) ومسلم (১০৪৯(
পাহাড়সম সোনার মালিক হলেও বনিআদম আকাঙ্ক্ষা করবে যে, আমার যদি আরো আরো.. থাকতো। আর বনি আদমের আরো চাওয়ার এই আকাঙ্ক্ষা মাটি ছাড়া আর কিছু দিয়ে পূর্ণ হবে না। অর্থাৎ মৃত্যু অবধি তার এটিই হবে আকাঙ্ক্ষা।(বুখারী, হা-৪৬৩৭, মুসলিম, হা-১০৪৯)
এই প্রবণতাই মানুষকে মহান আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। আর দুনিয়ার ভোগ বিলাসে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে। সে শুধুই অন্যের সাথে নিজের বিলাসী আয়োজনকে তুলনা করে বেড়ায়। যখন দেখে অমুকের এটা আছে, সেটা আছে, তখন ভাবে তাহলে আমার কেন এটা সেটা থাকবে না?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: ্রإِذَا نَظَرَ أَحَدُكُمْ إِلَى مَنْ فُضِّلَ عَلَيْهِ فِي الْمَالِ وَالْخَلْقِ، فَلْيَنْظُرْ إِلَى مَنْ هُوَ أَسْفَلَ مِنْهُ مِمَّنْ فُضِّلَ عَلَيْهِগ্ধ( صحيح البخاري – الرقاق (৬১২৫) صحيح مسلم – الزهد والرقائق (২৯৬৩) مسند أحمد – باقي مسند المكثرين (২/৩১৪) مسند أحمد – باقي مسند المكثرين (২/৪৮২)
‘তোমাদের কেউ যখন ধন-সম্পদ ও সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্যে যারা তার চেয়ে এগিয়ে তাদের দিকে তাকায় তখন সে যেন তাদের দিকেও তাকায় যারা তার চেয়ে পিছিয়ে।’ (বুখারী, হা-৬১২৫, মুসলিম, হা-২৯৬৩)
অন্য বর্ণনায় আল্লাহর নে‘আমতকে তুচ্ছজ্ঞান না করার পন্থা হিসেবে নিজের চেয়ে অধিক নে‘আমতপ্রাপ্তদের দিকে না তাকিয়ে কম নে‘আমতপ্রাপ্তদের দিকে তাকাতে বলা হয়েছে।” انْظُرْ إِلَى مَنْ هُوَ دُونَكَ ، وَلا تَنْظُرْ إِلَى مَنْ هُوَ فَوْقَكَ ، فَإِنَّهُ أَجْدَرُ أَنْ لا تَزْدَرِيَ نِعْمَةَ اللَّهِ
সুখের সন্ধানে মানুষ আজ ব্যাকুল হয়ে ফিরছে। সব কিছুতেই একটা অপূর্ণতা ভাব দেখা যায়। চারদিকে বিরাজ করছে হাহাকার। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী জীবনধারায় সাদাসিধা ভাব নিয়ে আসা। অল্পতেই তুষ্ট থাকা। অল্পে তুষ্ট থাকলে জীবন আরো উপভোগ্য হয়ে উঠবে।
ভারসাম্যপূর্ণ ও মধ্যমপন্থার জীবনদর্শন ইসলাম। বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ি কোনোটিই অনুমোদিত নয় ইসলামে। পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا‘এমনইভাবে আমি তোমাদের মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি।’ (সুরা বাকারা : ১৪৩)
তাই কৃপণতা ও অপব্যয় রোধ করতেই হবে। কার্পণ্য ও অপব্যয়ের মাঝখানে রয়েছে মিতব্যয়িতা। এটাই আদর্শ সমাজের চলার পথ। হাজার বছরের অভিজ্ঞতা এই পথকে করেছে শাণিত। সহজে সম্মানে এই পথ সমান প্রার্থিত। মানবতার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হযরত মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
مَا عَالَ مَنِ اقْتَصَدَ. [ رواه الإمام أحمد في مسنده (৪২৬৯)، والطبراني في الكبير (১০১১৮)، والأوسط (৫০৯৪) عن ابن مسعود رضي الله عنه ، وضعفه الهيثمي في مجمع الزوائد (১০/২৫২)
‘যে ব্যক্তি মধ্যপন্থায় চলে সে অভাবে পড়ে না।’ (আহমদ, হা-৪২৬৯, ইহয়াউল উলুম-৩:২৫৫)
অন্য একটি হাদিসের ভাষ্য আরো উদ্দীপক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
الاقتصاد نصف العيش، وحسن الخلق نصف الدين [ رواه الخطيب في تاريخ بغداد (১২/১১) عن أنس رضي الله عنه بإسناد ضعيف.]
‘উত্তম জীবনাচার সুন্দর পথ এবং মধ্যপন্থা নবুওয়তের সত্তর ভাগের একটি।’ (খতীব বাগদাদী: ১১/১২, আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৪৬৮)
মহানবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামআরো ইরশাদ করেন,
্রالاقتصاد في النفقة نصف المعيشة، والتودد إلى الناس نصف العقل، وحسن السؤال نصف العلمগ্ধ رواه الطبراني في الأوسط (৬৭৪৪)، وفي مكارم الأخلاق (১৪০)، والبيهقي في الشعب (৬১৪৮) عن ابن عمر رضي الله عنهما بإسناد ضعيف.
‘খরচে মধ্যপন্থা জীবিকার অর্ধেক; মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব বিবেকের অর্ধেক আর উত্তম প্রশ্ন ইলমের অর্ধেক।’ (তবরানী: আওসাত, হা-৬৭৪৪, শুয়াবুল ঈমান, হা-৬১৪৬, আল-মাকাসিদ : হাদিস : ১৪০)
বলার অপেক্ষা রাখে না, মিতব্যয়িতার দুই প্রান্তের একটি কার্পণ্য আর অপরটি অপচয়। দুটিই ঘৃণ্য ও অনাকাক্সিক্ষত। কার্পণ্যের প্রতি অগাধ ঘৃণা জানিয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ – رضي الله عنه – قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم: ্রخَصْلَتَانِ لَا يَجْتَمِعَانِ فِي مُؤْمِنٍ: الْبُخْلُ, وَسُوءُ الْخُلُقِগ্ধ. رواه البخاري في ” الأدب المفرد ” ( رقم ২৮২ ) و الترمذي ( ১/৩৫৫ ) و أبو سعيد ابن الأعرابي في ” معجمه ” ( ১০৯/২ ) و الدولابي ( ২/১২৫ ) و القضاعي ( ২৪/১ ) عن صدقة بن موسى عن مالك بن دينار عن عبد الله بن غالب عن أبي سعيد الخدري مرفوعا . و قال الترمذي : حديث غريب لا نعرفه إلا من حديث صدقة بن موسى ” .
‘কোনো মুমিন বান্দার মধ্যে দুটি চরিত্রের সমাবেশ হতে পারে না। কৃপণতা ও মন্দ স্বভাব।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ : হাদিস : ২৮২)
আর আল্লাহ তাআলা কৃপণকে সতর্ক করেছেন এভাবে,
وَأَمَّا مَن بَخِلَ وَاسْتَغْنَىٰ (৮)وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَىٰ (৯) فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَىٰ (১০( وَمَا يُغْنِي عَنْهُ مَالُهُ إِذَا تَرَدَّىٰ (১১)
‘কেউ কার্পণ্য করলে এবং নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে আর যা উত্তম তা অস্বীকার করলে-তার জন্য আমি সুগম করে দেব কঠোর পথ। যখন সে ধ্বংস হবে, তার সম্পদ তার কোনো কাজে আসবে না।’ (সুরা লাইল : ৮-১১)
عَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: ্রلَيْسَ الغِنَى عَن كَثرَةِ العَرَض، وَلكِنَّ الغِنَى غِنَى النَّفْسِ গ্ধ.
হযরত আবূ-হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘‘বিষয় সম্পদের আধিক্য ধনাঢ্যতা নয়, প্রকৃত ধনাঢ্যতা হলো অন্তরের ধনাঢ্যতা।’’ [সহীহুল বুখারী ৬৪৪৬, মুসলিম ১০৫১, তিরমিযী ২৩৭৩, ইবনু মাজাহ ৪১৩৭, আহমাদ ৭২৭৪, ৭৫০২, ২৭৩৯১, ৮৮১৭, ৯৩৬৪, ৯৪২৫]
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনযাত্রা দেখলে এ সত্যটি আরও ধ্রæব হয়ে ওঠে। আল্লাহর প্রিয় বন্ধু ও উভয় জগতের বাদশা হওয়া সত্তে¡ও তাঁর জীবনধারা ছিল অতি সাধারণ। প্রাচুর্যের খনিতে পরিপুষ্ট হওয়ার সুযোগ থাকার পরও সাদাসিধে ও আড়ম্বরহীন জীবনকে নিজের জন্য বেছে নিয়েছিলেন তিনি। জাগতিক উচ্চবিলাস ও প্রতিষ্ঠার ভাবনা তাঁর মধ্যে ছিলই না।
عن عُرْوَةَ عَنْ عائشة رضي اللَّه عنها، أَنَّهَا كَانَتْ تَقُولُ: وَاللَّه يَا ابْنَ أُخْتِي إِنْ كُنَّا لَنَنْظُرُ إلى الهِلالِ ثمَّ الهِلالِ. ثُمَّ الهلالِ ثلاثةُ أَهِلَّةٍ في شَهْرَيْنِ. وَمَا أُوقِدَ في أَبْيَاتِ رسولِ اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم نارٌ قُلْتُ: يَا خَالَةُ فَمَا كَانَ يُعِيشُكُمْ؟ قالتْ: الأَسْوَدَانِ: التَّمْرُ وَالمَاءُ إِلاَّ أَنَّهُ قَدْ كَانَ لرسول اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم جِيرانٌ مِنَ الأَنْصَارِ. وَكَانَتْ لَهُمْ مَنَائِحُ وَكَانُوا يُرْسِلُونَ إِلى رسولِ اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم مِنْ أَلبانها فَيَسْقِينَا
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু‘‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি (একবার) উরওয়াহ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহুকে বললেন, ‘হে ভগিনীপুত্র! আমরা দু’মাসের মধ্যে তিনবার নয়া চাঁদ দেখতাম। কিন্তু এর মধ্যে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গৃহসমূহে (রান্নার) জন্য আগুন জ্বালানো হত না।’ উরওয়াহ বললেন, ‘খালা! তাহলে আপনারা কী খেয়ে জীবন কাটাতেন?’ তিনি বললেন, ‘কালো দু’টো জিনিস দিয়ে। অর্থাৎ শুকনো খেজুর আর পানিই (আমাদের খাদ্য হত)। অবশ্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিবেশী কয়েকজন আনসারী সাহাবীর দুগ্ধবতী উটনী ও ছাগী ছিল। তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য দুধ পাঠতেন, তখন তিনি আমাদেরকে তা পান করাতেন।’ [সহীহুল বুখারী ২৫৬৭, ৬৪৫৮, ৬৪৫৯, মুসলিম ২৯৭২, তিরমিযী ২৪৭১, ইবনু মাজাহ ৪১৪৪, ৪১৪৫, আহমাদ ১৩৭১২, ১৩৮৯৯, ১৪০৪০, ২৪২৪৭, ২৪৯৬৩, ২৫৪৭৩, ২৫৫৪৬]
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَت: تُوُفِّي رَسُولُ اللهِ ﷺ وَدِرْعُهُ مَرْهُونَةٌ عِنْدَ يَهُودِي في ثَلاثِينَ صَاعاً مِنْ شَعِير .
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইন্তিকাল করেন, তখন তাঁর বর্ম মুবারক ত্রিশ সা’ যবের বিনিময়ে এক ইয়াহুদীর নিকট বন্ধক রাখা ছিল।’ [সহীহুল বুখারী ২০৬৮, ২০৯৬, ২২০০, ২২৫১, ২২৫২, ২৩৮৬, ২৫০৯, ২৫১৩, ২৯১৬, ৪৪৬৭, মুসলিম ১৬০৩, নাসায়ী ৪৬০৯, ৪৬৫০, ইবনু মাজাহ ২৪৩৬, আহমাদ ২৩৬২৬, ২৪৭৪৬, ২৫৪০৩, ২৫৪৬৭]
عَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَت: كَانَ فِرَاشُ رَسُولِ اللهِ ﷺ مِنْ أُدْمٍ حَشْوُهُ لِيفٌ.
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিছানা মুবারক চামড়ার তৈরী ছিল এবং তার ভিতরে ছিল খেজুর গাছের ছোবড়া।’ [সহীহুল বুখারী ৬৪৫৬, মুসলিম ২০৮২, তিরমিযী ১৭৬১, আবূ দাউদ ৪১৪৬, ৪১৪৭, ইবনু মাজাহ ৪১৫১, আহমাদ ২৩৬৮৯, ২৩৭৭২, ২৩৯৩০, ২৪২৪৭, ২৫২০১, ২৫২৪৫, ১৯/৫১৪।]
عَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَت: مَا شَبِعَ آلُ مُحَمَّدٍ ﷺ مِنْ خُبْزِ شَعِيرٍ يَوْمَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ حَتَّى قُبِضَ . متفقٌ عَلَيْهِ . وفي رواية: مَا شَبِعَ آلُ محَمّدٍ ﷺ مُنْذُ قَدِمَ المَدِينَةَ مِنْ طَعَامِ البُرِّ ثَلاثَ لَيَالٍ تِبَاعاً حَتَّى قُبِضَ .
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু’আনহা বলেন, ‘মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিজন তাঁর ইন্তিকাল পর্যন্ত ক্রমাগত দু’দিন যবের রুটি পরিতৃপ্ত হয়ে খেতে পাননি।’ [সহীহুল বুখারী ৫৪১৬, ৫৪২৩, ৫৪৩৮, ৬৪৫৪, ৬৬৮৭, মুসলিম ২৯৭০, তিরমিযী ২৩৫৭, নাসায়ী ৪৪৩২, ইবনু মাজাহ ৩১৫৯, ৩৩১৩, ৩৩৪৪, ৩৩৪৬, আহমাদ ২৩৬৩১, ২৩৮৯৯, ২৪১৪৪, ২৪৪৪১, ২৪৪৪২, ২৪৫২৬, ২৪৬৯৮, ২৫১০১৩, ২৫২২৩, ২৫২৯৭, দারেমী ১৯৫৯]
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিজন মদীনায় আগমনের পর থেকে তাঁর ইন্তিকাল পর্যন্ত ক্রমাগত তিনদিন পর্যন্ত গমের রুটি পরিতৃপ্ত হয়ে খেতে পাননি।
হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহুমা বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধারে কয়েক রাত অনাহারে কাটাতেন এবং পরিবার-পরিজনরা রাতের খাবার পেতেন না। আর তাদের অধিকাংশ রুটি হত যবের।’ [তিরমিযী ২৩৬০, ইবনু মাজাহ ৩৩৪৭, আহমাদ ২৩০৩, ৩৫৩৫]
আল্লাহর প্রিয় বন্ধুর শিক্ষায় শিক্ষিত সাহাবায়ে কেরামও ছিলেন ইসলামের এ প্রেরণা বাস্তবায়নের উত্তম নমুনা। তাঁদের জীবনধারাও ছিল নবীজির আদলে সাবলীল ও অনাড়ম্বর। অল্পতেই তাঁরা অনেক তুষ্ট হতেন। এজন্য তাঁদের জীবন ছিল স্বস্তি ও শান্তিতে প্রাচুর্যময়।
عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: خَيْرُكُمْ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ يَكُونُ بَعْدَهُمْ قَوْمٌ يَشْهَدُونَ وَلَا يُسْتَشْهَدُونَ، وَيَخُونُونَ وَلَا يُؤْتَمَنُونَ، وَيَنْذُرُونَ وَلَا يَفُونَ، وَيَظْهَرُ فِيهِمْ السِّمَنُ
হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘‘আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম যুগ হল আমার সাহাবীদের যুগ। অতঃপর তৎপরবর্তী (তাবেয়ীদের) যুগ।’’ ইমরান বলেন, ‘নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামতাঁর যুগের পর উত্তম যুগ হিসাবে দুই যুগ উল্লেখ করেছেন, না তিন যুগ তা আমার জানা (স্মরণ) নেই।’ ‘‘অতঃপর তোমাদের পর এমন এমন কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা সাক্ষ্য দেবে অথচ তাদেরকে সাক্ষী মানা হবে না। তারা খেয়ানত করবে এবং তাদের নিকট আমানত রাখা যাবে না। তারা আল্লাহর নামে মানত করবে কিন্তু তা পুরা করবে না। আর তাদের দেহে স্থূলত্ব প্রকাশ পাবে।’’ [সহীহুল বুখারী ২৬৫১, ৩৬৫০, ৬৪২৮, ৬৬৯৫, মুসলিম ২৫৩৫, তিরমিযী ২২২১, ২২২২, নাসায়ী ৩৮০৯, আবূ দাউদ ৪৬৫৭, আহমাদ ১৯৩১৯, ১৯৩৩৪, ১৯৪০৫, ১৯৪৫১]
ফাদ্বালাহ ইবনে ‘উবাইদ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন লোকদের নামায পড়াতেন, তখন কিছু লোক ক্ষুধার কারণে (দুর্বলতায়) পড়ে যেতেন, আর তাঁরা ছিলেন আহলে সুফ্ফাহ। এমনকি মরুবাসী বেদুঈনরা বলত, ‘এরা পাগল।’ একদা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায সেরে তাদের দিকে মুখ ফিরালেন, তখন বললেন, ‘‘তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে যা রয়েছে, তা যদি তোমরা জানতে, তাহলে তোমরা এর চাইতেও অভাব ও দারিদ্র্য পছন্দ করতে।’’ [তিরমিযী ২৩৬৮, আহমাদ ২৩৪২০]
عَن أَبي سَعِيدٍ المَقبُرِيِّ، عَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّهُ مَرَّ بِقَومٍ بَيْنَ أَيدِيهِمْ شَاةٌ مَصْلِيَّةٌ، فَدَعَوْهُ فَأبَى أَنْ يأْكُلَ . وَقَالَ: خَرَجَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مِنَ الدُّنْيَا وَلَمْ يَشْبَعْ مِنْ خُبْزِ الشَّعيرِ .
আবূ সা‘ঈদ মাক্ববুরী বলেন, একদা আবূ হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু একদল লোকের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, যাদের সামনে ভুনা বকরী ছিল। তারা তাঁকে (খেতে) ডাকল। তিনি খেতে রাজী হলেন না এবং বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন অথচ তিনি কোন দিন যবের রুটিও পেট পুরে খাননি।’ [সহীহুল বুখারী ৫৪১৪]
ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহুর স্ত্রীর একবার ইচ্ছে হলো কিছু মিষ্টি জাতীয় খাবার রান্না করে পরিবারের সবাইকে খাওয়াবেন। স্বামীকে এ ইচ্ছের কথা জানালেন। খলিফা সাফ জবাব দিলেন, মিষ্টির জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তা আমার কাছে নেই। তিনি খলিফার সঙ্গে কথা আর না বাড়িয়ে সংসারের দৈনন্দিন খরচ থেকে অল্প অল্প করে রেখে মিষ্টি কেনার পয়সা জমালেন। একদিন খলিফাকে তিনি আনন্দের সঙ্গে সংবাদটি দিলেন। কিন্তু এবার খলিফা গম্ভীর হয়ে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গে রাজকোষে খবর পাঠালেন। রাজকোষের কর্মচারী খলিফার বাড়িতে এসে হাজির হলেন। খলিফাপতœী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন, খলিফা তার সঞ্চিত অর্থ রাজকোষের লোকদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। স্ত্রীর সঞ্চিত অর্থ রাজকোষে জমা দিয়ে খলিফা আবুবকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু বললেন, এই সঞ্চয়ের ঘটনায় প্রমাণ হলো যে, এ পরিমাণ অর্থ বায়তুল মাল থেকে না তুললেও আমার সংসারের খরচ চলবে। অতিরিক্ত সম্পদ আমি কিছুতেই রাজকোষ থেকে গ্রহণ করতে পারি না।
সময়ের স্রোতধারায় আবিলতাযুক্ত জীবনবোধে বর্তমানে ইসলামের সেই আদর্শিক শিক্ষাটা আর অবশিষ্ট নেই। মুসলমানরা আজ ভোগ-বিলাসের সম্ভারে ডুবে আছে। সাদাসিধে অল্পেতুষ্টির জীবনের কাহিনী আজ অলিক ও অকল্পনীয় মনে হবে। বৈষয়িকতার প্রাবল্যের কারণে জীবনের সুখ-শান্তি আজ অনুপস্থিত। শান্তির সন্ধানে মানুষ আজ ব্যাকুল হয়ে ফিরছে। সবকিছুতেই একটা অপূর্ণতা ও খাই খাই ভাব অনুভব করা যাচ্ছে। চারদিকে বিরাজ করছে হাহাকার। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় ইসলামের প্রেরণা অনুযায়ী জীবনধারায় সাদাসিধে ভাব নিয়ে আসা। অল্পতেই তুষ্ট থাকা। অল্পে তুষ্ট থাকলে জীবনটুকু হবে আরও উপভোগ্য। কারণ ক্ষণস্থায়ী এই দুনিয়ায় চাওয়ার মাত্রাটা বাড়িয়ে লাভ নেই। যাওয়ার সময় খালি হাতেই যেতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন, وَمَا مِن دَآبَّةٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا عَلَى ٱللَّهِ رِزۡقُهَا অর্থাৎ “আর ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী কোন এমন প্রাণী নেই যে, তার রুযী আল্লাহর দায়িত্বে নেই।” (সূরা হূদ, ৬ আয়াত)
তিনি আরো এরশাদ করেন, لِلۡفُقَرَآءِ ٱلَّذِينَ أُحۡصِرُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ لَا يَسۡتَطِيعُونَ ضَرۡبٗا فِي ٱلۡأَرۡضِ يَحۡسَبُهُمُ ٱلۡجَاهِلُ أَغۡنِيَآءَ مِنَ ٱلتَّعَفُّفِ تَعۡرِفُهُم بِسِيمَٰهُمۡ لَا يَسَۡٔلُونَ ٱلنَّاسَ إِلۡحَافٗاۗ
অর্থাৎ “(দান) অভাবগ্রস্ত লোকদের প্রাপ্য; যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে, জীবিকার সন্ধানে ভূপৃষ্ঠে ঘোরা-ফেরা করতে পারে না। তারা কিছু চায় না বলে, অবিবেচক লোকেরা তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে। তুমি তাদেরকে তাদের লক্ষণ দেখে চিনতে পারবে; তারা লোকদের কাছে নাছোড়বান্দা হয়ে যাচ্ঞা করে না।” (সূরা বাক্বারাহ ২৭৩ আয়াত)
তিনি অন্যত্র এরশাদ করেন, وَٱلَّذِينَ إِذَآ أَنفَقُواْ لَمۡ يُسۡرِفُواْ وَلَمۡ يَقۡتُرُواْ وَكَانَ بَيۡنَ ذَٰلِكَ قَوَامٗا অর্থাৎ “যারা ব্যয় করলে অপচয় করে না, কার্পণ্যও করে না; বরং তারা এ দুয়ের মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করে।” (সূরা ফুরকান ৬৭ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় এরশাদ করেন,
وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ . مَآ أُرِيدُ مِنۡهُم مِّن رِّزۡقٖ وَمَآ أُرِيدُ أَن يُطۡعِمُونِ
অর্থাৎ “আমি সৃষ্টি করেছি জ্বিন ও মানুষকে কেবল এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে। আমি তাদের নিকট হতে জীবিকা চাই না এবং এও চাই না যে তারা আমার আহার্য যোগাবে।” (সূরা যারিয়াত ৫৬-৫৭ আয়াত)
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمْرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أن رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: ্রقَدْ أفْلَحَ مَنْ أسْلَمَ، وَكَانَ رِزْقُهُ كَفَافاً، وَقَنَّعَهُ اللهُ بِمَا آتَاهُ গ্ধ.
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল ‘আস রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘‘সে ব্যক্তি সফলকাম, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাকে পরিমিত রুযী দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে তাকে তুষ্ট করেছেন।’’ [মুসলিম ১০৫৪, তিরমিযী ২৩৪৮, ইবনু মাজাহ ৪১৩৮, আহমাদ ৬৫৭২]
وَعَن أَبي أُمَامَة رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: يَا ابْنَ آدَمَ، إنَّكَ أَنْ تَبْذُلَ الفَضْلَ خَيرٌ لَكَ، وَأنْ تُمسِكَهُ شَرٌ لَكَ، ولاَ تُلاَمُ عَلَى كَفَافٍ، وَابْدأ بِمَنْ تَعُولُ
হযরত আবূ উমামাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘‘হে আদম সন্তান! উদ্বৃত্ত মাল (আল্লাহর পথে) খরচ করা তোমার জন্য মঙ্গল এবং তা আটকে রাখা তোমার জন্য অমঙ্গল। আর দরকার মত মালে নিন্দিত হবে না। প্রথমে তাদেরকে দাও, যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে।’’ [মুসলিম ১০৩৬, তিরমিযী ২৩৪৩, আহমাদ ২১৭৫২]
وَعَن عُبيْدِ اللهِ بنِ مِحْصَنٍ الأَنصَارِيِّ الخَطمِيِّ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: مَنْ أصْبَحَ مِنْكُمْ آمِناً في سِربِهِ، مُعَافَىً في جَسَدِهِ، عِنْدَهُ قُوتُ يَوْمِهِ، فَكَأنَّمَا حِيزَتْ لَهُ الدُّنْيَا بِحَذَافِيرِهَا
হযরত উবাইদুল্লাহ ইবনে মিহসান আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার ঘরে অথবা গোষ্ঠীর মধ্যে নিরাপদে ও সুস্থ শরীরে সকাল করেছে এবং তার কাছে একদিনের খাবার আছে, তাকে যেন পার্থিব সমস্ত সম্পদ দান করা হয়েছে।’’ [তিরমিযী ২৩৪৬, ইবনু মাজাহ ৪১৪১]
وَعَن أَبي مُحَمَّدٍ فَضَالَة بنِ عُبَيدٍ الأنصاريِّ رضي الله عنه: أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: ্রطُوبَى لِمَنْ هُدِيَ لِلإسْلاَمِ، وَكَانَ عَيْشُهُ كَفَافاً وَقَنِعَ গ্ধ.
হযরত আবূ মুহাম্মাদ ফাদ্বালা ইবনে উবাইদ আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘‘তার জন্য শুভ সংবাদ যাকে ইসলামের পথ দেখানো হয়েছে, পরিমিত জীবিকা দেওয়া হয়েছে এবং সে (যা পেয়েছে তাতে) পরিতুষ্ট আছে।’’ [তিরমিযী ২৩৪৯, আহমাদ ২৩৪২৬]
قَالَ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ : مَا مَلَأَ آدَمِيٌّ وِعَاءً شَرًّا مِنْ بَطْنٍ بِحَسْبِ ابْنِ آدَمَ أُكُلَاتٌ يُقِمْنَ صُلْبَهُ فَإِنْ كَانَ لَا مَحَالَةَ فَثُلُثٌ لِطَعَامِهِ وَثُلُثٌ لِشَرَابِهِ وَثُلُثٌ لِنَفَسِهِ
হযরত আবূ কারীমা মিক্বদাদ ইবনে মা’দীকারিব রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘কোন মানুষ এমন কোন পাত্র পূর্ণ করেনি, যা পেট চাইতে মন্দ। মানুষের জন্য তার মেরুদÐ সোজা (শক্ত) রাখার জন্য কয়েক গ্রাসই যথেষ্ট। যদি অধিক খেতেই হয়, তাহলে পেটের এক তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য হওয়া উচিত।’’ [তিরমিযী ২৩৮০, ইবনু মাজাহ ৩৩৪৯, আহমাদ ১৬৭৩৫]
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ ، قَالَ : ذَكَرَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا عِنْدَهُ الدُّنْيَا ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” أَلَا تَسْمَعُونَ أَلَا تَسْمَعُونَ إِنَّ الْبَذَاذَةَ مِنَ الْإِيمَانِ ، إِنَّ الْبَذَاذَةَ مِنَ الْإِيمَانِ يَعْنِي التَّقَحُّلَ “)أخرجه أبو داود، أول كتاب الترجل، (৬/২৩৮)، برقم: (৪১৬১)،
হযরত আবূ উমামাহ ইয়াস ইবনে সা‘লাবাহ আনসারী হারেসী রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ তাঁর নিকট দুনিয়ার কথা আলোচনা করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা কি শুনতে পাও না? তোমরা কি শুনতে পাও না? আড়ম্বরহীনতা ঈমানের অঙ্গ। আড়ম্বরহীনতা ঈমানের অঙ্গ।’’ অর্থাৎ বিলাসহীনতা। [আবূ দাউদ ৪১৬১, ইবনু মাজাহ ৪১১৮]
অপ্রয়োজনে চাওয়ার নিন্দাবাদ
حكيم بن حزام رضي الله عنه قال : سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَعْطَانِي , ثُمَّ سَأَلْتُهُ فَأَعْطَانِي ثُمَّ سَأَلْتُهُ فَأَعْطَانِي , ثُمَّ قَالَ : يَا حَكِيمُ , إنَّ هَذَا الْمَالَ خَضِرَةٌ حُلْوَةٌ فَمَنْ أَخَذَهُ بِسَخَاوَةِ نَفْسٍ بُورِكَ لَهُ فِيهِ , وَمَنْ أَخَذَهُ بِإِشْرَافٍ لَمْ يُبَارَكْ لَهُ فِيهِ وَكَانَ كَاَلَّذِي يَأْكُلُ وَلَا يَشْبَعُ , وَالْيَدُ الْعُلْيَا خَيْرٌ مِنْ الْيَدِ السُّفْلَى . قَالَ حَكِيمُ : فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ , وَاَلَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لَا أَرْزَأُ أَحَدًا بَعْدَكَ شَيْئًا حَتَّى أُفَارِقَ الدُّنْيَا . فَكَانَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يَدْعُوَ حَكِيمًا لِيُعْطِيَهُ الْعَطَاءَ فَيَأْبَى أَنْ يَقْبَلَ مِنْهُ شَيْئًا . ثُمَّ إنَّ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ دَعَاهُ لِيُعْطِيَهُ فَأَبَى أَنْ يَقْبَلَهُ , فَقَالَ : يَا مَعْشَرَ الْمُسْلِمِينَ , أُشْهِدُكُمْ عَلَى حَكِيمٍ أَنِّي أَعْرِضُ عَلَيْهِ حَقَّهُ الَّذِي قَسَمَ اللَّهُ لَهُ فِي هَذَا الْفَيْءِ فَيَأْبَى أَنْ يَأْخُذَهُ . فَلَمْ يَرْزَأْ حَكِيمٌ أَحَدًا مِنْ النَّاسِ بَعْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى تُوُفِّيَ)رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ وَمُسْلِمٌ .(
হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর নিকট কিছু চাইলে তিনি আমাকে দিলেন। আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন। আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন। অতঃপর বললেন, ‘‘হে হাকীম! এ সম্পদ শ্যামল-সুমিষ্ট। যে ব্যক্তি (লোভহীন) প্রশস্ত হৃদয়ে তা গ্রহণ করবে, তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি অন্তরের লোভসহ গ্রহণ করবে, তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হবে না। আর সে হবে এমন ব্যক্তির মত, যে খায় কিন্তু তার ক্ষুধা মেটে না। উপর হাত নিচু হাত হতে উত্তম।’’ (দাতা গ্রহীতা হতে উত্তম।)
হাকীম বলেন, আমি বললাম, ‘যিনি আপনাকে সত্যসহকারে পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম! ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার পর মৃত্যু পর্যন্ত আমি কারো কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করব না।’ তারপর হযরত আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু হাকীমকে অনুদান গ্রহণের জন্য ডাকতেন, কিন্তু তাঁর নিকট থেকে কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করতেন। অতঃপর হযরত উমার রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু তাঁকে কিছু দেওয়ার জন্য ডাকলেন, কিন্তু তিনি তাঁর নিকট থেকেও কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করলেন। হযরত উমার রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু বললেন, ‘‘হে মুসলিমগণ! হাকীমের ব্যাপারে আমি তোমাদেরকে সাক্ষী বানাচ্ছি যে, আমি তাঁর কাছে ‘ফাই’ থেকে তাঁর প্রাপ্য পেশ করছি, কিন্তু সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করছে।’’ (সত্য সত্যই) হাকীম নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কোন মানুষের নিকট থেকে কিছু গ্রহণ করেননি। [সহীহুল বুখারী ১৪২৮, ১৪৭২, ২৮৫০, ৩১৩৪, ৬৪৪১, মুসলিম ১০৩৪, ১০৩৫, তিরমিযী ২৪৬৩, নাসায়ী ২৫৩১, ২৫৩৪, ২৫৪৩, ২৫৪৪, ২৬০১, ২৬০২, ২৬০৩, আবূ দাউদ ১৬৭৬, আহমাদ ৭১১৫, ৭৩০১, ৭৩৮১, ৭৬৮৩, ৮৪৮৭, ৮৫২৬, ৮৮৭৮, দারেমী ১৬৫০, ১৬৫১, ১৬৫২, ১৬৫৩, ২৭৫০]
وَعَن حَكِيمِ بنِ حِزَامٍ رضي الله عنه، أنّ النَّبيَّ ﷺ، قَالَ: ্রاليَدُ العُلْيَا خَيْرٌ مِنَ اليَدِ السُّفْلَى، وَابْدَأ بِمَنْ تَعُولُ، وَخَيْرُ الصَّدَقَةِ مَا كَانَ عَنْ ظَهْرِ غِنىً، وَمَنْ يَسْتَعْفِفْ يُعِفَّهُ اللهُ، وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ اللهُ গ্ধ.
হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেন, ‘‘উপরের (দাতা) হাত নিচের (গ্রহীতা) হাত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে আছে তাদেরকে আগে দাও। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থেকে সাদকাহ করা উত্তম। যে ব্যক্তি (হারাম ও ভিক্ষা করা থেকে) পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন এবং যে পরমুখাপেক্ষিতা থেকে বেঁচে থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবশূন্য করে দেন।’’ [সহীহুল বুখারী ১৪২৮, ১৪৭২, ২৭৫০, ৩১৪৩, ৬৪৪১, মুসলিম ১০৩৪]
وَعَن أَبي عَبدِ الرَّحمٰنِ مُعَاوِيَةَ بنِ أبي سُفيَانَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: ্রلاَ تُلْحِفُوا في الْمَسْأَلَةِ، فَوَاللهِ لاَ يَسْأَلُنِي أَحَدٌ مِنْكُمْ شَيْئاً، فَتُخْرِجَ لَهُ مَسْأَلَتُهُ مِنِّي شَيْئاً وَأنَا لَهُ كَارِهٌ، فَيُبَارَكَ لَهُ فِيمَا أعْطَيْتُهُ গ্ধ.
হযরত আবূ আব্দুর রহমান মুআবিয়া ইবনে আবূ সুফয়ান রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘‘তোমরা নাছোড় বান্দা হয়ে যাচ্ঞা করো না। আল্লাহর কসম! তোমাদের মধ্যে যে কেউ আমার নিকট কোন কিছু চাইবে, অতঃপর আমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও যদি আমার কাছ থেকে কিছু বের হয় (কাউকে কিছু দিই), তাহলে তাতে বরকত হবে না।’’ [মুসলিম ১০৩৮, নাসায়ী ২৫৯৩, আহমাদ ১৬৪৫০, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৯১, দারেমী ১৬৪৪]
عن َأَمِينٌ عَوْفُ بْنُ مَالِكٍ الْأَشْجَعِيُّ قَالَ كُنَّا عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهم عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تِسْعَةً أَوْ ثَمَانِيَةً أَوْ سَبْعَةً فَقَالَ أَلَا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللَّهِ وَكُنَّا حَدِيثَ عَهْدٍ بِبَيْعَةٍ فَقُلْنَا قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ثُمَّ قَالَ أَلَا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللَّهِ فَقُلْنَا قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ثُمَّ قَالَ أَلَا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللَّهِ قَالَ فَبَسَطْنَا أَيْدِيَنَا وَقُلْنَا قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَعَلَامَ نُبَايِعُكَ ” عَلَى أَنْ تَعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ، وَالصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ وَتُطِيعُوا ، وَأَسَرَّ كَلِمَةً خَفِيَّةً ، وَلَا تَسْأَلُوا النَّاسَ شَيْئًا ، فَلَقَدْ رَأَيْتُ بَعْضَ أُولَئِكَ النَّفَرِ ، يَسْقُطُ سَوْطُ أَحَدِهِمْ ، فَمَا يَسْأَلُ أَحَدًا يُنَاوِلُهُ إِيَّاهُ ” .
হযরত আবূ আব্দুর রহমান ‘আওফ ইবনে মালিক আশজা‘ঈ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ৯ জন অথবা ৮ জন অথবা ৭ জন লোক ছিলাম। তিনি বললেন, ‘‘তোমরা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বায়‘আত করবে না?’’ (হাদীসের বর্ণনাকারী বলেন) অথচ আমরা কিছু সময় পূর্বেই তাঁর হাতে বায়‘আত করে ফেলেছি। সুতরাং আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা তো আপনার হাতে বায়‘আত করে ফেলেছি।’ পুনরায় তিনি বললেন, ‘‘তোমরা কি রাসূলুল্লাহর হাতে বায়‘আত করবে না?’’ সুতরাং আমরা নিজেদের হাতগুলো বিস্তার করলাম এবং বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা আপনার হাতে বায়‘আত করেছি। সুতরাং এখন কোন্ কথার উপর আপনার হাতে বায়‘আত করব?’ তিনি বললেন, ‘‘এ কথার উপর যে, তোমরা এক আল্লাহর উপাসনা করবে এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না, পাঁচ ওয়াক্তের নামায পড়বে এবং আল্লাহর আনুগত্য করবে।’’ আর একটি কথা তিনি চুপিসারে বললেন, “তোমরা লোকদের নিকট কোন কিছু চাইবে না।” অতঃপর আমি (বায়‘আত গ্রহণকারীদের) মধ্যে কিছু লোককে দেখছি যে, তাঁদের মধ্যে কারো চাবুক যদি যমীনে পড়ে যেত, তাহলে তিনি কাউকে তা উঠিয়ে দিতে বলতেন না। (বরং স্বয়ং সওয়ারী থেকে নেমে তা উঠিয়ে নিতেন।) [মুসলিম ১০৪৩, নাসায়ী ৪৬০, আবূ দাউদ ১৬৪২, ইবনু মাজাহ ২৮৬৭, আহমাদ ২৩৪৭৩]
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ النَّبيَّ ﷺ، قَالَ:্র لاَ تَزَالُ الْمَسْأَلةُ بأَحَدِكُمْ حَتَّى يَلْقَى اللهَ تَعَالَى وَلَيْسَ فِي وَجْهِهِ مُزْعَةُ لَحْمٍ গ্ধ. متفقٌ عَلَيْهِ
হযরত ইবনে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামইরশাদ করেন,‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সর্বদা ভিক্ষা করতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করে তো (সে এই অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে,) তার চেহারায় কোন মাংস টুকরা থাকবে না।’’ [সহীহুল বুখারী ১৪৭৫, ৪৭১৮, মুসলিম ১০৪০, নাসায়ী ২৫৮৫, আহমাদ ৪৬২৪, ৫৫৮৪]
أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ وَهُوَ عَلَى المِنْبَرِ، وَذَكَرَ الصَّدَقَةَ وَالتَّعَفُّفَ عَنِ الْمَسْأَلَةِ: ্রاليَدُ العُلْيَا خَيْرٌ مِنَ اليَدِ السُّفْلَى গ্ধ وَاليَدُ العُلْيَا هِيَ المُنْفِقَةُ، وَالسُّفْلَى هِيَ السَّائِلَةُ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের উপর আরোহণ করে বললেন এবং তিনি সাদকাহ ও ভিক্ষা করা থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে আলোচনা করলেন। (এই সুযোগে) তিনি বললেন, ‘‘উঁচু হাত নিচু হাত চেয়ে উত্তম, আর দানকারীর হাত হচ্ছে উঁচু হাত এবং ভিক্ষাকারী হাত হচ্ছে নিচু হাত।’’ [সহীহুল বুখারী ১৪২৯, মুসলিম ১০৩৩, নাসায়ী ২৫৩৩, আবূ দাউদ ১৬৪৮, আহমাদ ৪৪৬০, ৫৩২২, ৫৬৯৫, ৬০০৩, ৬৩৬৬, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৮১, দারেমী ১৬৫২]
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: ্রمَنْ سَألَ النَّاسَ تَكَثُّراً فإنَّمَا يَسْألُ جَمْراً ؛ فَلْيَسْتَقِلَّ أَوْ لِيَسْتَكْثِرْ গ্ধ.
হযরত আবূ হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘‘যে ব্যক্তি মাল বৃদ্ধি করার জন্য মানুষের নিকট ভিক্ষা করে, সে আসলে আগুনের অঙ্গার ভিক্ষা করে থাকে। ফলে (সে এখন তা) অল্প ভিক্ষা করুক অথবা বেশী।’’ [মুসলিম ১০৪১, ইবনু মাজাহ ১৮৩৮, আহমাদ ৭১২৩]
وَعَن سَمُرَةَ بنِ جُنْدُبٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: ্রإنَّ المَسْأَلَةَ كَدٌّ يَكُدُّ بِهَا الرَّجُلُ وَجْهَهُ، إِلاَّ أنْ يَسْأَلَ الرَّجُلُ سُلْطاناً أَوْ في أمْرٍ لاَ بُدَّ مِنْهُ গ্ধ.
হযরত সামুরাহ ইবনে জুন্দুব রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘‘ভিক্ষা করা এক জখম করার কাজ, তা দ্বারা মানুষ নিজ চেহারাকে জখম করে। কিন্তু সে ব্যক্তি যদি বাদশাহর কাছে চায় অথবা নিরুপায় হয়ে চায় (তাহলে তা স্বতন্ত্র)।’’ [তিরমিযী ৬৮১, নাসায়ী ২৫৯৯, ২৬০০, আহমাদ ১৯৬০০, ১৯৭০৭]
وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: ্রمَنْ أصَابَتْهُ فَاقَةٌ فَأنْزَلَهَا بالنَّاسِ لَمْ تُسَدَّ فَاقَتُهُ، وَمَنْ أنْزَلَهَا باللهِ، فَيُوشِكُ اللهُ لَهُ بِرِزْقٍ عَاجِلٍ أَوْ آجِلٍ গ্ধ.
হযরত ইবনে মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘‘যে অভাবগ্রস্ত হয় এবং তার অভাব লোকদের নিকট প্রকাশ করে, তার অভাব দূর করা হয় না। আর যে ব্যক্তি তা আল্লাহর নিকট প্রকাশ করে, আল্লাহ তাকে শীঘ্র অথবা বিলম্বে জীবিকা প্রদান করেন।’’ [তিরমিযী ২৩২৬, আবূ দাউদ ১৬৪৫, আহমাদ ৩৫৮৮, ৪২০৭]
وَعَن ثَوبَانَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: ্রمَنْ تَكَفَّلَ لِي أنْ لاَ يَسْأَلَ النَّاسَ شَيْئاً، وَأتَكَفَّلُ لَهُ بِالْجَنَّةِ ؟ গ্ধ فَقُلتُ: أنَا، فَكَانَ لاَ يَسْأَلُ أحَداً شَيْئاً .
হযরত সাওবান রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার জন্য এ কথার জামিন হবে যে, সে লোকদের নিকট কোন কিছু চাইবে না, আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হব।’’ আমি বললাম, ‘আমি (এর জামিন)।’ সুতরাং সাওবান কারো নিকট কোন কিছু চাইতেন না। [আবূ দাউদ ১৬৪৩, নাসায়ী ২৫৯০, ইবনু মাজাহ ১৮৩৭]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِي اللَّهم عَنْهم أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهم عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَيْسَ الْمِسْكِينُ الَّذِي يَطُوفُ عَلَى النَّاسِ تَرُدُّهُ اللُّقْمَةُ وَاللُّقْمَتَانِ وَالتَّمْرَةُ وَالتَّمْرَتَانِ وَلَكِنِ الْمِسْكِينُ الَّذِي لَا يَجِدُ غِنًى يُغْنِيهِ وَلَا يُفْطَنُ بِهِ فَيُتَصَدَّقُ عَلَيْهِ وَلَا يَقُومُ فَيَسْأَلُ النَّاسَ
হযরত আবূ হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘‘এক গ্রাস ও দু’গ্রাস এবং একটি খেজুর ও দু’টি খেজুরের জন্য যে লোকের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় সে মিসকীন নয়। (আসলে) মিসকীন তো সেই, যার কাছে (অপর থেকে) অমুখাপেক্ষী হওয়ার মত মাল নেই এবং (বাহ্যতঃ) তাকে গরীবও বুঝায় না যে, তাকে সাদকাহ দেওয়া যাবে। আর সে উঠে লোকের কাছে চায়ও না।’’ [সহীহুল বুখারী ১৪৭৯, ১৪৭৬, ৪৫৩৯, মুসলিম ১০৩৯, নাসায়ী ২৫৭১, ২৫৭২, ২৫৭৮, আবূ দাউদ ১৬৩১, আহমাদ ৭৪৮৬, ২৭৪০৪, ৮৮৬৭, ৮৮৯৫, ৯৪৫৪, মুওয়াত্তা মালিক ১৪৩৭, দারেমী ১৬১৫]
অতএব সত্যিকার মু’মিন হয়ে থাকলে যে অবস্থায় আছি তাতেই আমরা তুষ্ট থাকবো। তাহলে মহান আল্লাহও আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন এবং আমাদের প্রতি তাঁর নে‘আমত আরো বাড়িয়ে দিবেন।
ঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁ
৪র্থ জুমা, শাওয়াল ১৪৩৯ হি: জুন, ২০১৮ সাল
বিষয়: অল্পে তুষ্টি মু’মিন চরিত্রের অন্যতম ভূষণ।
******************************************
সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আয্হারী
খতিব, মুসাফিরখানা জামে মসজিদ, নন্দনকানন, চট্টগ্রাম। সহকারী অধ্যাপক, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
জীবন-জীবিকার তাগিদে অর্থের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ইসলামে বিষয়টি আরো তাৎপর্যপূর্ণ। ইসলামে অর্থবিত্ত মহান আল্লাহর নিয়ামত। এ নিয়ামত অর্জনে ইসলাম সবল, সক্ষম প্রত্যেক অনুসারীকে উৎসাহ করেছে। তবু মানবজীবনে চাহিদার কোনো শেষ নেই। যার অর্থকড়ি যত বেশি তার চাহিদাও তত বেশি। হাদিস শরিফে এসেছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” يَكْبَرُ ابْنُ آدَمَ وَيَكْبَرُ مَعَهُ اثْنَانِ: حُبُّ المَالِ، وَطُولُ العُمُرِ ” رَوَاهُ شُعْبَةُ، عَنْ قَتَادَةَ) صحيح البخاري – الحدود (৬৪২১) صحيح مسلم – الزكاة (১০৩১) سنن الترمذي – الزهد (২৩৯১) سنن النسائي – آداب القضاة (৫৩৮০) مسند أحمد – باقي مسند المكثرين (২/৪৩৯)
“মানুষ যতই বৃদ্ধ হয়, তার মধ্যে দুটি বস্তুর আকাক্সক্ষা ‘যুবক’ হতে থাকে-দীর্ঘায়ু ও অর্থমোহ।”(বুখারী, হা-৬৪২১, মুসলিম, হা-১০৩১)
মৃত্যুর পর মানুষের মুখে মাটি পড়া পর্যন্ত চাহিদা বাড়তেই থাকে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষ চাইতেই থাকে। যেহেতু মানুষের এই চাহিদা কখনো শেষ হওয়ার নয়, তাই তা সীমিত রাখার মধ্যেই মানবজীবনে সুখ আসে।
অল্পে তুষ্টি মু’মিন চরিত্রের অন্যতম ভূষণ। কারণ প্রকৃত মু’মিন সর্বদা নিজেকে মহান স্রষ্টার নে‘আমতে ডুবে আছে বলে অনুভব করে। তাই সে সবসময় কৃতজ্ঞতা পরায়ণ হয়। সে যখন যা পায় তাকেই নিজের জন্য মহান প্রভুর পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ হিসেবে গণ্য করে। তাই সে না পাওয়া বা বঞ্চিত হওয়ার মর্মপীড়ায় ভোগে না। আর যে কোন মূল্যে এটি আমার পেতেই হবে এরূপ চিন্তায়ও মরিয়া হয়ে যায় না।
অবশ্য ঈমানের গুণ অনুপস্থিত হলে মানুষের অবস্থা হয় ভিন্নরূপ। আর তা হলো এই যে, সে যত কিছুই পাক, যত কিছুরই মালিক হোক কিছুতেই তার তৃপ্তি হয় না। সর্বাবস্থায় সে আরো চাই, আরো চাই বলে জপতে থাকে। হাদীসের ভাষায়,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَوْ كَانَ لِابْنِ آدَمَ وَادٍ مِنْ ذَهَبٍ الْتَمَسَ مَعَهُ وَادِيًا آخَرَ وَلَنْ يَمْلَأَ فَمَهُ إِلَّا التُّرَابُ ثُمَّ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَى مَنْ تَابَ) مسلم (১০৪৮) عن ابْنَ عَبَّاسٍ يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لَوْ أَنَّ لِابْنِ آدَمَ مِلْءَ وَادٍ مَالًا لَأَحَبَّ أَنْ يَكُونَ إِلَيْهِ مِثْلُهُ وَلَا يَمْلَأُ نَفْسَ ابْنِ آدَمَ إِلَّا التُّرَابُ وَاللَّهُ يَتُوبُ عَلَى مَنْ تَابَ) البخاري (৬৪৩৭) ومسلم (১০৪৯(
পাহাড়সম সোনার মালিক হলেও বনিআদম আকাঙ্ক্ষা করবে যে, আমার যদি আরো আরো.. থাকতো। আর বনি আদমের আরো চাওয়ার এই আকাঙ্ক্ষা মাটি ছাড়া আর কিছু দিয়ে পূর্ণ হবে না। অর্থাৎ মৃত্যু অবধি তার এটিই হবে আকাঙ্ক্ষা।(বুখারী, হা-৪৬৩৭, মুসলিম, হা-১০৪৯)
এই প্রবণতাই মানুষকে মহান আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। আর দুনিয়ার ভোগ বিলাসে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে। সে শুধুই অন্যের সাথে নিজের বিলাসী আয়োজনকে তুলনা করে বেড়ায়। যখন দেখে অমুকের এটা আছে, সেটা আছে, তখন ভাবে তাহলে আমার কেন এটা সেটা থাকবে না?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: ্রإِذَا نَظَرَ أَحَدُكُمْ إِلَى مَنْ فُضِّلَ عَلَيْهِ فِي الْمَالِ وَالْخَلْقِ، فَلْيَنْظُرْ إِلَى مَنْ هُوَ أَسْفَلَ مِنْهُ مِمَّنْ فُضِّلَ عَلَيْهِগ্ধ( صحيح البخاري – الرقاق (৬১২৫) صحيح مسلم – الزهد والرقائق (২৯৬৩) مسند أحمد – باقي مسند المكثرين (২/৩১৪) مسند أحمد – باقي مسند المكثرين (২/৪৮২)
‘তোমাদের কেউ যখন ধন-সম্পদ ও সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্যে যারা তার চেয়ে এগিয়ে তাদের দিকে তাকায় তখন সে যেন তাদের দিকেও তাকায় যারা তার চেয়ে পিছিয়ে।’ (বুখারী, হা-৬১২৫, মুসলিম, হা-২৯৬৩)
অন্য বর্ণনায় আল্লাহর নে‘আমতকে তুচ্ছজ্ঞান না করার পন্থা হিসেবে নিজের চেয়ে অধিক নে‘আমতপ্রাপ্তদের দিকে না তাকিয়ে কম নে‘আমতপ্রাপ্তদের দিকে তাকাতে বলা হয়েছে।” انْظُرْ إِلَى مَنْ هُوَ دُونَكَ ، وَلا تَنْظُرْ إِلَى مَنْ هُوَ فَوْقَكَ ، فَإِنَّهُ أَجْدَرُ أَنْ لا تَزْدَرِيَ نِعْمَةَ اللَّهِ
সুখের সন্ধানে মানুষ আজ ব্যাকুল হয়ে ফিরছে। সব কিছুতেই একটা অপূর্ণতা ভাব দেখা যায়। চারদিকে বিরাজ করছে হাহাকার। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী জীবনধারায় সাদাসিধা ভাব নিয়ে আসা। অল্পতেই তুষ্ট থাকা। অল্পে তুষ্ট থাকলে জীবন আরো উপভোগ্য হয়ে উঠবে।
ভারসাম্যপূর্ণ ও মধ্যমপন্থার জীবনদর্শন ইসলাম। বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ি কোনোটিই অনুমোদিত নয় ইসলামে। পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا‘এমনইভাবে আমি তোমাদের মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি।’ (সুরা বাকারা : ১৪৩)
তাই কৃপণতা ও অপব্যয় রোধ করতেই হবে। কার্পণ্য ও অপব্যয়ের মাঝখানে রয়েছে মিতব্যয়িতা। এটাই আদর্শ সমাজের চলার পথ। হাজার বছরের অভিজ্ঞতা এই পথকে করেছে শাণিত। সহজে সম্মানে এই পথ সমান প্রার্থিত। মানবতার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হযরত মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
مَا عَالَ مَنِ اقْتَصَدَ. [ رواه الإمام أحمد في مسنده (৪২৬৯)، والطبراني في الكبير (১০১১৮)، والأوسط (৫০৯৪) عن ابن مسعود رضي الله عنه ، وضعفه الهيثمي في مجمع الزوائد (১০/২৫২)
‘যে ব্যক্তি মধ্যপন্থায় চলে সে অভাবে পড়ে না।’ (আহমদ, হা-৪২৬৯, ইহয়াউল উলুম-৩:২৫৫)
অন্য একটি হাদিসের ভাষ্য আরো উদ্দীপক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
الاقتصاد نصف العيش، وحسن الخلق نصف الدين [ رواه الخطيب في تاريخ بغداد (১২/১১) عن أنس رضي الله عنه بإسناد ضعيف.]
‘উত্তম জীবনাচার সুন্দর পথ এবং মধ্যপন্থা নবুওয়তের সত্তর ভাগের একটি।’ (খতীব বাগদাদী: ১১/১২, আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৪৬৮)
মহানবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামআরো ইরশাদ করেন,
্রالاقتصاد في النفقة نصف المعيشة، والتودد إلى الناس نصف العقل، وحسن السؤال نصف العلمগ্ধ رواه الطبراني في الأوسط (৬৭৪৪)، وفي مكارم الأخلاق (১৪০)، والبيهقي في الشعب (৬১৪৮) عن ابن عمر رضي الله عنهما بإسناد ضعيف.
‘খরচে মধ্যপন্থা জীবিকার অর্ধেক; মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব বিবেকের অর্ধেক আর উত্তম প্রশ্ন ইলমের অর্ধেক।’ (তবরানী: আওসাত, হা-৬৭৪৪, শুয়াবুল ঈমান, হা-৬১৪৬, আল-মাকাসিদ : হাদিস : ১৪০)
বলার অপেক্ষা রাখে না, মিতব্যয়িতার দুই প্রান্তের একটি কার্পণ্য আর অপরটি অপচয়। দুটিই ঘৃণ্য ও অনাকাক্সিক্ষত। কার্পণ্যের প্রতি অগাধ ঘৃণা জানিয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ – رضي الله عنه – قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم: ্রخَصْلَتَانِ لَا يَجْتَمِعَانِ فِي مُؤْمِنٍ: الْبُخْلُ, وَسُوءُ الْخُلُقِগ্ধ. رواه البخاري في ” الأدب المفرد ” ( رقم ২৮২ ) و الترمذي ( ১/৩৫৫ ) و أبو سعيد ابن الأعرابي في ” معجمه ” ( ১০৯/২ ) و الدولابي ( ২/১২৫ ) و القضاعي ( ২৪/১ ) عن صدقة بن موسى عن مالك بن دينار عن عبد الله بن غالب عن أبي سعيد الخدري مرفوعا . و قال الترمذي : حديث غريب لا نعرفه إلا من حديث صدقة بن موسى ” .
‘কোনো মুমিন বান্দার মধ্যে দুটি চরিত্রের সমাবেশ হতে পারে না। কৃপণতা ও মন্দ স্বভাব।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ : হাদিস : ২৮২)
আর আল্লাহ তাআলা কৃপণকে সতর্ক করেছেন এভাবে,
وَأَمَّا مَن بَخِلَ وَاسْتَغْنَىٰ (৮)وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَىٰ (৯) فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَىٰ (১০( وَمَا يُغْنِي عَنْهُ مَالُهُ إِذَا تَرَدَّىٰ (১১)
‘কেউ কার্পণ্য করলে এবং নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে আর যা উত্তম তা অস্বীকার করলে-তার জন্য আমি সুগম করে দেব কঠোর পথ। যখন সে ধ্বংস হবে, তার সম্পদ তার কোনো কাজে আসবে না।’ (সুরা লাইল : ৮-১১)
عَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: ্রلَيْسَ الغِنَى عَن كَثرَةِ العَرَض، وَلكِنَّ الغِنَى غِنَى النَّفْسِ গ্ধ.
হযরত আবূ-হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘‘বিষয় সম্পদের আধিক্য ধনাঢ্যতা নয়, প্রকৃত ধনাঢ্যতা হলো অন্তরের ধনাঢ্যতা।’’ [সহীহুল বুখারী ৬৪৪৬, মুসলিম ১০৫১, তিরমিযী ২৩৭৩, ইবনু মাজাহ ৪১৩৭, আহমাদ ৭২৭৪, ৭৫০২, ২৭৩৯১, ৮৮১৭, ৯৩৬৪, ৯৪২৫]
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনযাত্রা দেখলে এ সত্যটি আরও ধ্রæব হয়ে ওঠে। আল্লাহর প্রিয় বন্ধু ও উভয় জগতের বাদশা হওয়া সত্তে¡ও তাঁর জীবনধারা ছিল অতি সাধারণ। প্রাচুর্যের খনিতে পরিপুষ্ট হওয়ার সুযোগ থাকার পরও সাদাসিধে ও আড়ম্বরহীন জীবনকে নিজের জন্য বেছে নিয়েছিলেন তিনি। জাগতিক উচ্চবিলাস ও প্রতিষ্ঠার ভাবনা তাঁর মধ্যে ছিলই না।
عن عُرْوَةَ عَنْ عائشة رضي اللَّه عنها، أَنَّهَا كَانَتْ تَقُولُ: وَاللَّه يَا ابْنَ أُخْتِي إِنْ كُنَّا لَنَنْظُرُ إلى الهِلالِ ثمَّ الهِلالِ. ثُمَّ الهلالِ ثلاثةُ أَهِلَّةٍ في شَهْرَيْنِ. وَمَا أُوقِدَ في أَبْيَاتِ رسولِ اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم نارٌ قُلْتُ: يَا خَالَةُ فَمَا كَانَ يُعِيشُكُمْ؟ قالتْ: الأَسْوَدَانِ: التَّمْرُ وَالمَاءُ إِلاَّ أَنَّهُ قَدْ كَانَ لرسول اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم جِيرانٌ مِنَ الأَنْصَارِ. وَكَانَتْ لَهُمْ مَنَائِحُ وَكَانُوا يُرْسِلُونَ إِلى رسولِ اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم مِنْ أَلبانها فَيَسْقِينَا
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু‘‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি (একবার) উরওয়াহ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহুকে বললেন, ‘হে ভগিনীপুত্র! আমরা দু’মাসের মধ্যে তিনবার নয়া চাঁদ দেখতাম। কিন্তু এর মধ্যে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গৃহসমূহে (রান্নার) জন্য আগুন জ্বালানো হত না।’ উরওয়াহ বললেন, ‘খালা! তাহলে আপনারা কী খেয়ে জীবন কাটাতেন?’ তিনি বললেন, ‘কালো দু’টো জিনিস দিয়ে। অর্থাৎ শুকনো খেজুর আর পানিই (আমাদের খাদ্য হত)। অবশ্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিবেশী কয়েকজন আনসারী সাহাবীর দুগ্ধবতী উটনী ও ছাগী ছিল। তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য দুধ পাঠতেন, তখন তিনি আমাদেরকে তা পান করাতেন।’ [সহীহুল বুখারী ২৫৬৭, ৬৪৫৮, ৬৪৫৯, মুসলিম ২৯৭২, তিরমিযী ২৪৭১, ইবনু মাজাহ ৪১৪৪, ৪১৪৫, আহমাদ ১৩৭১২, ১৩৮৯৯, ১৪০৪০, ২৪২৪৭, ২৪৯৬৩, ২৫৪৭৩, ২৫৫৪৬]
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَت: تُوُفِّي رَسُولُ اللهِ ﷺ وَدِرْعُهُ مَرْهُونَةٌ عِنْدَ يَهُودِي في ثَلاثِينَ صَاعاً مِنْ شَعِير .
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইন্তিকাল করেন, তখন তাঁর বর্ম মুবারক ত্রিশ সা’ যবের বিনিময়ে এক ইয়াহুদীর নিকট বন্ধক রাখা ছিল।’ [সহীহুল বুখারী ২০৬৮, ২০৯৬, ২২০০, ২২৫১, ২২৫২, ২৩৮৬, ২৫০৯, ২৫১৩, ২৯১৬, ৪৪৬৭, মুসলিম ১৬০৩, নাসায়ী ৪৬০৯, ৪৬৫০, ইবনু মাজাহ ২৪৩৬, আহমাদ ২৩৬২৬, ২৪৭৪৬, ২৫৪০৩, ২৫৪৬৭]
عَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَت: كَانَ فِرَاشُ رَسُولِ اللهِ ﷺ مِنْ أُدْمٍ حَشْوُهُ لِيفٌ.
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিছানা মুবারক চামড়ার তৈরী ছিল এবং তার ভিতরে ছিল খেজুর গাছের ছোবড়া।’ [সহীহুল বুখারী ৬৪৫৬, মুসলিম ২০৮২, তিরমিযী ১৭৬১, আবূ দাউদ ৪১৪৬, ৪১৪৭, ইবনু মাজাহ ৪১৫১, আহমাদ ২৩৬৮৯, ২৩৭৭২, ২৩৯৩০, ২৪২৪৭, ২৫২০১, ২৫২৪৫, ১৯/৫১৪।]
عَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَت: مَا شَبِعَ آلُ مُحَمَّدٍ ﷺ مِنْ خُبْزِ شَعِيرٍ يَوْمَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ حَتَّى قُبِضَ . متفقٌ عَلَيْهِ . وفي رواية: مَا شَبِعَ آلُ محَمّدٍ ﷺ مُنْذُ قَدِمَ المَدِينَةَ مِنْ طَعَامِ البُرِّ ثَلاثَ لَيَالٍ تِبَاعاً حَتَّى قُبِضَ .
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু’আনহা বলেন, ‘মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিজন তাঁর ইন্তিকাল পর্যন্ত ক্রমাগত দু’দিন যবের রুটি পরিতৃপ্ত হয়ে খেতে পাননি।’ [সহীহুল বুখারী ৫৪১৬, ৫৪২৩, ৫৪৩৮, ৬৪৫৪, ৬৬৮৭, মুসলিম ২৯৭০, তিরমিযী ২৩৫৭, নাসায়ী ৪৪৩২, ইবনু মাজাহ ৩১৫৯, ৩৩১৩, ৩৩৪৪, ৩৩৪৬, আহমাদ ২৩৬৩১, ২৩৮৯৯, ২৪১৪৪, ২৪৪৪১, ২৪৪৪২, ২৪৫২৬, ২৪৬৯৮, ২৫১০১৩, ২৫২২৩, ২৫২৯৭, দারেমী ১৯৫৯]
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিজন মদীনায় আগমনের পর থেকে তাঁর ইন্তিকাল পর্যন্ত ক্রমাগত তিনদিন পর্যন্ত গমের রুটি পরিতৃপ্ত হয়ে খেতে পাননি।
হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহুমা বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধারে কয়েক রাত অনাহারে কাটাতেন এবং পরিবার-পরিজনরা রাতের খাবার পেতেন না। আর তাদের অধিকাংশ রুটি হত যবের।’ [তিরমিযী ২৩৬০, ইবনু মাজাহ ৩৩৪৭, আহমাদ ২৩০৩, ৩৫৩৫]
আল্লাহর প্রিয় বন্ধুর শিক্ষায় শিক্ষিত সাহাবায়ে কেরামও ছিলেন ইসলামের এ প্রেরণা বাস্তবায়নের উত্তম নমুনা। তাঁদের জীবনধারাও ছিল নবীজির আদলে সাবলীল ও অনাড়ম্বর। অল্পতেই তাঁরা অনেক তুষ্ট হতেন। এজন্য তাঁদের জীবন ছিল স্বস্তি ও শান্তিতে প্রাচুর্যময়।
عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: خَيْرُكُمْ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ يَكُونُ بَعْدَهُمْ قَوْمٌ يَشْهَدُونَ وَلَا يُسْتَشْهَدُونَ، وَيَخُونُونَ وَلَا يُؤْتَمَنُونَ، وَيَنْذُرُونَ وَلَا يَفُونَ، وَيَظْهَرُ فِيهِمْ السِّمَنُ
হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘‘আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম যুগ হল আমার সাহাবীদের যুগ। অতঃপর তৎপরবর্তী (তাবেয়ীদের) যুগ।’’ ইমরান বলেন, ‘নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামতাঁর যুগের পর উত্তম যুগ হিসাবে দুই যুগ উল্লেখ করেছেন, না তিন যুগ তা আমার জানা (স্মরণ) নেই।’ ‘‘অতঃপর তোমাদের পর এমন এমন কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা সাক্ষ্য দেবে অথচ তাদেরকে সাক্ষী মানা হবে না। তারা খেয়ানত করবে এবং তাদের নিকট আমানত রাখা যাবে না। তারা আল্লাহর নামে মানত করবে কিন্তু তা পুরা করবে না। আর তাদের দেহে স্থূলত্ব প্রকাশ পাবে।’’ [সহীহুল বুখারী ২৬৫১, ৩৬৫০, ৬৪২৮, ৬৬৯৫, মুসলিম ২৫৩৫, তিরমিযী ২২২১, ২২২২, নাসায়ী ৩৮০৯, আবূ দাউদ ৪৬৫৭, আহমাদ ১৯৩১৯, ১৯৩৩৪, ১৯৪০৫, ১৯৪৫১]
ফাদ্বালাহ ইবনে ‘উবাইদ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন লোকদের নামায পড়াতেন, তখন কিছু লোক ক্ষুধার কারণে (দুর্বলতায়) পড়ে যেতেন, আর তাঁরা ছিলেন আহলে সুফ্ফাহ। এমনকি মরুবাসী বেদুঈনরা বলত, ‘এরা পাগল।’ একদা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায সেরে তাদের দিকে মুখ ফিরালেন, তখন বললেন, ‘‘তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে যা রয়েছে, তা যদি তোমরা জানতে, তাহলে তোমরা এর চাইতেও অভাব ও দারিদ্র্য পছন্দ করতে।’’ [তিরমিযী ২৩৬৮, আহমাদ ২৩৪২০]
عَن أَبي سَعِيدٍ المَقبُرِيِّ، عَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّهُ مَرَّ بِقَومٍ بَيْنَ أَيدِيهِمْ شَاةٌ مَصْلِيَّةٌ، فَدَعَوْهُ فَأبَى أَنْ يأْكُلَ . وَقَالَ: خَرَجَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مِنَ الدُّنْيَا وَلَمْ يَشْبَعْ مِنْ خُبْزِ الشَّعيرِ .
আবূ সা‘ঈদ মাক্ববুরী বলেন, একদা আবূ হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু একদল লোকের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, যাদের সামনে ভুনা বকরী ছিল। তারা তাঁকে (খেতে) ডাকল। তিনি খেতে রাজী হলেন না এবং বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন অথচ তিনি কোন দিন যবের রুটিও পেট পুরে খাননি।’ [সহীহুল বুখারী ৫৪১৪]
ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহুর স্ত্রীর একবার ইচ্ছে হলো কিছু মিষ্টি জাতীয় খাবার রান্না করে পরিবারের সবাইকে খাওয়াবেন। স্বামীকে এ ইচ্ছের কথা জানালেন। খলিফা সাফ জবাব দিলেন, মিষ্টির জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তা আমার কাছে নেই। তিনি খলিফার সঙ্গে কথা আর না বাড়িয়ে সংসারের দৈনন্দিন খরচ থেকে অল্প অল্প করে রেখে মিষ্টি কেনার পয়সা জমালেন। একদিন খলিফাকে তিনি আনন্দের সঙ্গে সংবাদটি দিলেন। কিন্তু এবার খলিফা গম্ভীর হয়ে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গে রাজকোষে খবর পাঠালেন। রাজকোষের কর্মচারী খলিফার বাড়িতে এসে হাজির হলেন। খলিফাপতœী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন, খলিফা তার সঞ্চিত অর্থ রাজকোষের লোকদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। স্ত্রীর সঞ্চিত অর্থ রাজকোষে জমা দিয়ে খলিফা আবুবকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু বললেন, এই সঞ্চয়ের ঘটনায় প্রমাণ হলো যে, এ পরিমাণ অর্থ বায়তুল মাল থেকে না তুললেও আমার সংসারের খরচ চলবে। অতিরিক্ত সম্পদ আমি কিছুতেই রাজকোষ থেকে গ্রহণ করতে পারি না।
সময়ের স্রোতধারায় আবিলতাযুক্ত জীবনবোধে বর্তমানে ইসলামের সেই আদর্শিক শিক্ষাটা আর অবশিষ্ট নেই। মুসলমানরা আজ ভোগ-বিলাসের সম্ভারে ডুবে আছে। সাদাসিধে অল্পেতুষ্টির জীবনের কাহিনী আজ অলিক ও অকল্পনীয় মনে হবে। বৈষয়িকতার প্রাবল্যের কারণে জীবনের সুখ-শান্তি আজ অনুপস্থিত। শান্তির সন্ধানে মানুষ আজ ব্যাকুল হয়ে ফিরছে। সবকিছুতেই একটা অপূর্ণতা ও খাই খাই ভাব অনুভব করা যাচ্ছে। চারদিকে বিরাজ করছে হাহাকার। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় ইসলামের প্রেরণা অনুযায়ী জীবনধারায় সাদাসিধে ভাব নিয়ে আসা। অল্পতেই তুষ্ট থাকা। অল্পে তুষ্ট থাকলে জীবনটুকু হবে আরও উপভোগ্য। কারণ ক্ষণস্থায়ী এই দুনিয়ায় চাওয়ার মাত্রাটা বাড়িয়ে লাভ নেই। যাওয়ার সময় খালি হাতেই যেতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন, وَمَا مِن دَآبَّةٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا عَلَى ٱللَّهِ رِزۡقُهَا অর্থাৎ “আর ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী কোন এমন প্রাণী নেই যে, তার রুযী আল্লাহর দায়িত্বে নেই।” (সূরা হূদ, ৬ আয়াত)
তিনি আরো এরশাদ করেন, لِلۡفُقَرَآءِ ٱلَّذِينَ أُحۡصِرُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ لَا يَسۡتَطِيعُونَ ضَرۡبٗا فِي ٱلۡأَرۡضِ يَحۡسَبُهُمُ ٱلۡجَاهِلُ أَغۡنِيَآءَ مِنَ ٱلتَّعَفُّفِ تَعۡرِفُهُم بِسِيمَٰهُمۡ لَا يَسَۡٔلُونَ ٱلنَّاسَ إِلۡحَافٗاۗ
অর্থাৎ “(দান) অভাবগ্রস্ত লোকদের প্রাপ্য; যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে, জীবিকার সন্ধানে ভূপৃষ্ঠে ঘোরা-ফেরা করতে পারে না। তারা কিছু চায় না বলে, অবিবেচক লোকেরা তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে। তুমি তাদেরকে তাদের লক্ষণ দেখে চিনতে পারবে; তারা লোকদের কাছে নাছোড়বান্দা হয়ে যাচ্ঞা করে না।” (সূরা বাক্বারাহ ২৭৩ আয়াত)
তিনি অন্যত্র এরশাদ করেন, وَٱلَّذِينَ إِذَآ أَنفَقُواْ لَمۡ يُسۡرِفُواْ وَلَمۡ يَقۡتُرُواْ وَكَانَ بَيۡنَ ذَٰلِكَ قَوَامٗا অর্থাৎ “যারা ব্যয় করলে অপচয় করে না, কার্পণ্যও করে না; বরং তারা এ দুয়ের মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করে।” (সূরা ফুরকান ৬৭ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় এরশাদ করেন,
وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ . مَآ أُرِيدُ مِنۡهُم مِّن رِّزۡقٖ وَمَآ أُرِيدُ أَن يُطۡعِمُونِ
অর্থাৎ “আমি সৃষ্টি করেছি জ্বিন ও মানুষকে কেবল এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে। আমি তাদের নিকট হতে জীবিকা চাই না এবং এও চাই না যে তারা আমার আহার্য যোগাবে।” (সূরা যারিয়াত ৫৬-৫৭ আয়াত)
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمْرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أن رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: ্রقَدْ أفْلَحَ مَنْ أسْلَمَ، وَكَانَ رِزْقُهُ كَفَافاً، وَقَنَّعَهُ اللهُ بِمَا آتَاهُ গ্ধ.
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল ‘আস রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘‘সে ব্যক্তি সফলকাম, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাকে পরিমিত রুযী দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে তাকে তুষ্ট করেছেন।’’ [মুসলিম ১০৫৪, তিরমিযী ২৩৪৮, ইবনু মাজাহ ৪১৩৮, আহমাদ ৬৫৭২]
وَعَن أَبي أُمَامَة رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: يَا ابْنَ آدَمَ، إنَّكَ أَنْ تَبْذُلَ الفَضْلَ خَيرٌ لَكَ، وَأنْ تُمسِكَهُ شَرٌ لَكَ، ولاَ تُلاَمُ عَلَى كَفَافٍ، وَابْدأ بِمَنْ تَعُولُ
হযরত আবূ উমামাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘‘হে আদম সন্তান! উদ্বৃত্ত মাল (আল্লাহর পথে) খরচ করা তোমার জন্য মঙ্গল এবং তা আটকে রাখা তোমার জন্য অমঙ্গল। আর দরকার মত মালে নিন্দিত হবে না। প্রথমে তাদেরকে দাও, যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে।’’ [মুসলিম ১০৩৬, তিরমিযী ২৩৪৩, আহমাদ ২১৭৫২]
وَعَن عُبيْدِ اللهِ بنِ مِحْصَنٍ الأَنصَارِيِّ الخَطمِيِّ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: مَنْ أصْبَحَ مِنْكُمْ آمِناً في سِربِهِ، مُعَافَىً في جَسَدِهِ، عِنْدَهُ قُوتُ يَوْمِهِ، فَكَأنَّمَا حِيزَتْ لَهُ الدُّنْيَا بِحَذَافِيرِهَا
হযরত উবাইদুল্লাহ ইবনে মিহসান আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার ঘরে অথবা গোষ্ঠীর মধ্যে নিরাপদে ও সুস্থ শরীরে সকাল করেছে এবং তার কাছে একদিনের খাবার আছে, তাকে যেন পার্থিব সমস্ত সম্পদ দান করা হয়েছে।’’ [তিরমিযী ২৩৪৬, ইবনু মাজাহ ৪১৪১]
وَعَن أَبي مُحَمَّدٍ فَضَالَة بنِ عُبَيدٍ الأنصاريِّ رضي الله عنه: أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: ্রطُوبَى لِمَنْ هُدِيَ لِلإسْلاَمِ، وَكَانَ عَيْشُهُ كَفَافاً وَقَنِعَ গ্ধ.
হযরত আবূ মুহাম্মাদ ফাদ্বালা ইবনে উবাইদ আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘‘তার জন্য শুভ সংবাদ যাকে ইসলামের পথ দেখানো হয়েছে, পরিমিত জীবিকা দেওয়া হয়েছে এবং সে (যা পেয়েছে তাতে) পরিতুষ্ট আছে।’’ [তিরমিযী ২৩৪৯, আহমাদ ২৩৪২৬]
قَالَ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ : مَا مَلَأَ آدَمِيٌّ وِعَاءً شَرًّا مِنْ بَطْنٍ بِحَسْبِ ابْنِ آدَمَ أُكُلَاتٌ يُقِمْنَ صُلْبَهُ فَإِنْ كَانَ لَا مَحَالَةَ فَثُلُثٌ لِطَعَامِهِ وَثُلُثٌ لِشَرَابِهِ وَثُلُثٌ لِنَفَسِهِ
হযরত আবূ কারীমা মিক্বদাদ ইবনে মা’দীকারিব রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘কোন মানুষ এমন কোন পাত্র পূর্ণ করেনি, যা পেট চাইতে মন্দ। মানুষের জন্য তার মেরুদÐ সোজা (শক্ত) রাখার জন্য কয়েক গ্রাসই যথেষ্ট। যদি অধিক খেতেই হয়, তাহলে পেটের এক তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য হওয়া উচিত।’’ [তিরমিযী ২৩৮০, ইবনু মাজাহ ৩৩৪৯, আহমাদ ১৬৭৩৫]
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ ، قَالَ : ذَكَرَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا عِنْدَهُ الدُّنْيَا ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” أَلَا تَسْمَعُونَ أَلَا تَسْمَعُونَ إِنَّ الْبَذَاذَةَ مِنَ الْإِيمَانِ ، إِنَّ الْبَذَاذَةَ مِنَ الْإِيمَانِ يَعْنِي التَّقَحُّلَ “)أخرجه أبو داود، أول كتاب الترجل، (৬/২৩৮)، برقم: (৪১৬১)،
হযরত আবূ উমামাহ ইয়াস ইবনে সা‘লাবাহ আনসারী হারেসী রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ তাঁর নিকট দুনিয়ার কথা আলোচনা করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা কি শুনতে পাও না? তোমরা কি শুনতে পাও না? আড়ম্বরহীনতা ঈমানের অঙ্গ। আড়ম্বরহীনতা ঈমানের অঙ্গ।’’ অর্থাৎ বিলাসহীনতা। [আবূ দাউদ ৪১৬১, ইবনু মাজাহ ৪১১৮]
অপ্রয়োজনে চাওয়ার নিন্দাবাদ
حكيم بن حزام رضي الله عنه قال : سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَعْطَانِي , ثُمَّ سَأَلْتُهُ فَأَعْطَانِي ثُمَّ سَأَلْتُهُ فَأَعْطَانِي , ثُمَّ قَالَ : يَا حَكِيمُ , إنَّ هَذَا الْمَالَ خَضِرَةٌ حُلْوَةٌ فَمَنْ أَخَذَهُ بِسَخَاوَةِ نَفْسٍ بُورِكَ لَهُ فِيهِ , وَمَنْ أَخَذَهُ بِإِشْرَافٍ لَمْ يُبَارَكْ لَهُ فِيهِ وَكَانَ كَاَلَّذِي يَأْكُلُ وَلَا يَشْبَعُ , وَالْيَدُ الْعُلْيَا خَيْرٌ مِنْ الْيَدِ السُّفْلَى . قَالَ حَكِيمُ : فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ , وَاَلَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لَا أَرْزَأُ أَحَدًا بَعْدَكَ شَيْئًا حَتَّى أُفَارِقَ الدُّنْيَا . فَكَانَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يَدْعُوَ حَكِيمًا لِيُعْطِيَهُ الْعَطَاءَ فَيَأْبَى أَنْ يَقْبَلَ مِنْهُ شَيْئًا . ثُمَّ إنَّ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ دَعَاهُ لِيُعْطِيَهُ فَأَبَى أَنْ يَقْبَلَهُ , فَقَالَ : يَا مَعْشَرَ الْمُسْلِمِينَ , أُشْهِدُكُمْ عَلَى حَكِيمٍ أَنِّي أَعْرِضُ عَلَيْهِ حَقَّهُ الَّذِي قَسَمَ اللَّهُ لَهُ فِي هَذَا الْفَيْءِ فَيَأْبَى أَنْ يَأْخُذَهُ . فَلَمْ يَرْزَأْ حَكِيمٌ أَحَدًا مِنْ النَّاسِ بَعْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى تُوُفِّيَ)رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ وَمُسْلِمٌ .(
হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর নিকট কিছু চাইলে তিনি আমাকে দিলেন। আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন। আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন। অতঃপর বললেন, ‘‘হে হাকীম! এ সম্পদ শ্যামল-সুমিষ্ট। যে ব্যক্তি (লোভহীন) প্রশস্ত হৃদয়ে তা গ্রহণ করবে, তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি অন্তরের লোভসহ গ্রহণ করবে, তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হবে না। আর সে হবে এমন ব্যক্তির মত, যে খায় কিন্তু তার ক্ষুধা মেটে না। উপর হাত নিচু হাত হতে উত্তম।’’ (দাতা গ্রহীতা হতে উত্তম।)
হাকীম বলেন, আমি বললাম, ‘যিনি আপনাকে সত্যসহকারে পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম! ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার পর মৃত্যু পর্যন্ত আমি কারো কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করব না।’ তারপর হযরত আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু হাকীমকে অনুদান গ্রহণের জন্য ডাকতেন, কিন্তু তাঁর নিকট থেকে কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করতেন। অতঃপর হযরত উমার রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু তাঁকে কিছু দেওয়ার জন্য ডাকলেন, কিন্তু তিনি তাঁর নিকট থেকেও কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করলেন। হযরত উমার রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু বললেন, ‘‘হে মুসলিমগণ! হাকীমের ব্যাপারে আমি তোমাদেরকে সাক্ষী বানাচ্ছি যে, আমি তাঁর কাছে ‘ফাই’ থেকে তাঁর প্রাপ্য পেশ করছি, কিন্তু সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করছে।’’ (সত্য সত্যই) হাকীম নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কোন মানুষের নিকট থেকে কিছু গ্রহণ করেননি। [সহীহুল বুখারী ১৪২৮, ১৪৭২, ২৮৫০, ৩১৩৪, ৬৪৪১, মুসলিম ১০৩৪, ১০৩৫, তিরমিযী ২৪৬৩, নাসায়ী ২৫৩১, ২৫৩৪, ২৫৪৩, ২৫৪৪, ২৬০১, ২৬০২, ২৬০৩, আবূ দাউদ ১৬৭৬, আহমাদ ৭১১৫, ৭৩০১, ৭৩৮১, ৭৬৮৩, ৮৪৮৭, ৮৫২৬, ৮৮৭৮, দারেমী ১৬৫০, ১৬৫১, ১৬৫২, ১৬৫৩, ২৭৫০]
وَعَن حَكِيمِ بنِ حِزَامٍ رضي الله عنه، أنّ النَّبيَّ ﷺ، قَالَ: ্রاليَدُ العُلْيَا خَيْرٌ مِنَ اليَدِ السُّفْلَى، وَابْدَأ بِمَنْ تَعُولُ، وَخَيْرُ الصَّدَقَةِ مَا كَانَ عَنْ ظَهْرِ غِنىً، وَمَنْ يَسْتَعْفِفْ يُعِفَّهُ اللهُ، وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ اللهُ গ্ধ.
হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেন, ‘‘উপরের (দাতা) হাত নিচের (গ্রহীতা) হাত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে আছে তাদেরকে আগে দাও। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থেকে সাদকাহ করা উত্তম। যে ব্যক্তি (হারাম ও ভিক্ষা করা থেকে) পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন এবং যে পরমুখাপেক্ষিতা থেকে বেঁচে থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবশূন্য করে দেন।’’ [সহীহুল বুখারী ১৪২৮, ১৪৭২, ২৭৫০, ৩১৪৩, ৬৪৪১, মুসলিম ১০৩৪]
وَعَن أَبي عَبدِ الرَّحمٰنِ مُعَاوِيَةَ بنِ أبي سُفيَانَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: ্রلاَ تُلْحِفُوا في الْمَسْأَلَةِ، فَوَاللهِ لاَ يَسْأَلُنِي أَحَدٌ مِنْكُمْ شَيْئاً، فَتُخْرِجَ لَهُ مَسْأَلَتُهُ مِنِّي شَيْئاً وَأنَا لَهُ كَارِهٌ، فَيُبَارَكَ لَهُ فِيمَا أعْطَيْتُهُ গ্ধ.
হযরত আবূ আব্দুর রহমান মুআবিয়া ইবনে আবূ সুফয়ান রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘‘তোমরা নাছোড় বান্দা হয়ে যাচ্ঞা করো না। আল্লাহর কসম! তোমাদের মধ্যে যে কেউ আমার নিকট কোন কিছু চাইবে, অতঃপর আমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও যদি আমার কাছ থেকে কিছু বের হয় (কাউকে কিছু দিই), তাহলে তাতে বরকত হবে না।’’ [মুসলিম ১০৩৮, নাসায়ী ২৫৯৩, আহমাদ ১৬৪৫০, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৯১, দারেমী ১৬৪৪]
عن َأَمِينٌ عَوْفُ بْنُ مَالِكٍ الْأَشْجَعِيُّ قَالَ كُنَّا عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهم عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تِسْعَةً أَوْ ثَمَانِيَةً أَوْ سَبْعَةً فَقَالَ أَلَا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللَّهِ وَكُنَّا حَدِيثَ عَهْدٍ بِبَيْعَةٍ فَقُلْنَا قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ثُمَّ قَالَ أَلَا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللَّهِ فَقُلْنَا قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ثُمَّ قَالَ أَلَا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللَّهِ قَالَ فَبَسَطْنَا أَيْدِيَنَا وَقُلْنَا قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَعَلَامَ نُبَايِعُكَ ” عَلَى أَنْ تَعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ، وَالصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ وَتُطِيعُوا ، وَأَسَرَّ كَلِمَةً خَفِيَّةً ، وَلَا تَسْأَلُوا النَّاسَ شَيْئًا ، فَلَقَدْ رَأَيْتُ بَعْضَ أُولَئِكَ النَّفَرِ ، يَسْقُطُ سَوْطُ أَحَدِهِمْ ، فَمَا يَسْأَلُ أَحَدًا يُنَاوِلُهُ إِيَّاهُ ” .
হযরত আবূ আব্দুর রহমান ‘আওফ ইবনে মালিক আশজা‘ঈ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ৯ জন অথবা ৮ জন অথবা ৭ জন লোক ছিলাম। তিনি বললেন, ‘‘তোমরা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বায়‘আত করবে না?’’ (হাদীসের বর্ণনাকারী বলেন) অথচ আমরা কিছু সময় পূর্বেই তাঁর হাতে বায়‘আত করে ফেলেছি। সুতরাং আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা তো আপনার হাতে বায়‘আত করে ফেলেছি।’ পুনরায় তিনি বললেন, ‘‘তোমরা কি রাসূলুল্লাহর হাতে বায়‘আত করবে না?’’ সুতরাং আমরা নিজেদের হাতগুলো বিস্তার করলাম এবং বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা আপনার হাতে বায়‘আত করেছি। সুতরাং এখন কোন্ কথার উপর আপনার হাতে বায়‘আত করব?’ তিনি বললেন, ‘‘এ কথার উপর যে, তোমরা এক আল্লাহর উপাসনা করবে এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না, পাঁচ ওয়াক্তের নামায পড়বে এবং আল্লাহর আনুগত্য করবে।’’ আর একটি কথা তিনি চুপিসারে বললেন, “তোমরা লোকদের নিকট কোন কিছু চাইবে না।” অতঃপর আমি (বায়‘আত গ্রহণকারীদের) মধ্যে কিছু লোককে দেখছি যে, তাঁদের মধ্যে কারো চাবুক যদি যমীনে পড়ে যেত, তাহলে তিনি কাউকে তা উঠিয়ে দিতে বলতেন না। (বরং স্বয়ং সওয়ারী থেকে নেমে তা উঠিয়ে নিতেন।) [মুসলিম ১০৪৩, নাসায়ী ৪৬০, আবূ দাউদ ১৬৪২, ইবনু মাজাহ ২৮৬৭, আহমাদ ২৩৪৭৩]
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ النَّبيَّ ﷺ، قَالَ:্র لاَ تَزَالُ الْمَسْأَلةُ بأَحَدِكُمْ حَتَّى يَلْقَى اللهَ تَعَالَى وَلَيْسَ فِي وَجْهِهِ مُزْعَةُ لَحْمٍ গ্ধ. متفقٌ عَلَيْهِ
হযরত ইবনে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামইরশাদ করেন,‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সর্বদা ভিক্ষা করতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করে তো (সে এই অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে,) তার চেহারায় কোন মাংস টুকরা থাকবে না।’’ [সহীহুল বুখারী ১৪৭৫, ৪৭১৮, মুসলিম ১০৪০, নাসায়ী ২৫৮৫, আহমাদ ৪৬২৪, ৫৫৮৪]
أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ وَهُوَ عَلَى المِنْبَرِ، وَذَكَرَ الصَّدَقَةَ وَالتَّعَفُّفَ عَنِ الْمَسْأَلَةِ: ্রاليَدُ العُلْيَا خَيْرٌ مِنَ اليَدِ السُّفْلَى গ্ধ وَاليَدُ العُلْيَا هِيَ المُنْفِقَةُ، وَالسُّفْلَى هِيَ السَّائِلَةُ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের উপর আরোহণ করে বললেন এবং তিনি সাদকাহ ও ভিক্ষা করা থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে আলোচনা করলেন। (এই সুযোগে) তিনি বললেন, ‘‘উঁচু হাত নিচু হাত চেয়ে উত্তম, আর দানকারীর হাত হচ্ছে উঁচু হাত এবং ভিক্ষাকারী হাত হচ্ছে নিচু হাত।’’ [সহীহুল বুখারী ১৪২৯, মুসলিম ১০৩৩, নাসায়ী ২৫৩৩, আবূ দাউদ ১৬৪৮, আহমাদ ৪৪৬০, ৫৩২২, ৫৬৯৫, ৬০০৩, ৬৩৬৬, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৮১, দারেমী ১৬৫২]
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: ্রمَنْ سَألَ النَّاسَ تَكَثُّراً فإنَّمَا يَسْألُ جَمْراً ؛ فَلْيَسْتَقِلَّ أَوْ لِيَسْتَكْثِرْ গ্ধ.
হযরত আবূ হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘‘যে ব্যক্তি মাল বৃদ্ধি করার জন্য মানুষের নিকট ভিক্ষা করে, সে আসলে আগুনের অঙ্গার ভিক্ষা করে থাকে। ফলে (সে এখন তা) অল্প ভিক্ষা করুক অথবা বেশী।’’ [মুসলিম ১০৪১, ইবনু মাজাহ ১৮৩৮, আহমাদ ৭১২৩]
وَعَن سَمُرَةَ بنِ جُنْدُبٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: ্রإنَّ المَسْأَلَةَ كَدٌّ يَكُدُّ بِهَا الرَّجُلُ وَجْهَهُ، إِلاَّ أنْ يَسْأَلَ الرَّجُلُ سُلْطاناً أَوْ في أمْرٍ لاَ بُدَّ مِنْهُ গ্ধ.
হযরত সামুরাহ ইবনে জুন্দুব রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘‘ভিক্ষা করা এক জখম করার কাজ, তা দ্বারা মানুষ নিজ চেহারাকে জখম করে। কিন্তু সে ব্যক্তি যদি বাদশাহর কাছে চায় অথবা নিরুপায় হয়ে চায় (তাহলে তা স্বতন্ত্র)।’’ [তিরমিযী ৬৮১, নাসায়ী ২৫৯৯, ২৬০০, আহমাদ ১৯৬০০, ১৯৭০৭]
وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: ্রمَنْ أصَابَتْهُ فَاقَةٌ فَأنْزَلَهَا بالنَّاسِ لَمْ تُسَدَّ فَاقَتُهُ، وَمَنْ أنْزَلَهَا باللهِ، فَيُوشِكُ اللهُ لَهُ بِرِزْقٍ عَاجِلٍ أَوْ آجِلٍ গ্ধ.
হযরত ইবনে মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘‘যে অভাবগ্রস্ত হয় এবং তার অভাব লোকদের নিকট প্রকাশ করে, তার অভাব দূর করা হয় না। আর যে ব্যক্তি তা আল্লাহর নিকট প্রকাশ করে, আল্লাহ তাকে শীঘ্র অথবা বিলম্বে জীবিকা প্রদান করেন।’’ [তিরমিযী ২৩২৬, আবূ দাউদ ১৬৪৫, আহমাদ ৩৫৮৮, ৪২০৭]
وَعَن ثَوبَانَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: ্রمَنْ تَكَفَّلَ لِي أنْ لاَ يَسْأَلَ النَّاسَ شَيْئاً، وَأتَكَفَّلُ لَهُ بِالْجَنَّةِ ؟ গ্ধ فَقُلتُ: أنَا، فَكَانَ لاَ يَسْأَلُ أحَداً شَيْئاً .
হযরত সাওবান রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার জন্য এ কথার জামিন হবে যে, সে লোকদের নিকট কোন কিছু চাইবে না, আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হব।’’ আমি বললাম, ‘আমি (এর জামিন)।’ সুতরাং সাওবান কারো নিকট কোন কিছু চাইতেন না। [আবূ দাউদ ১৬৪৩, নাসায়ী ২৫৯০, ইবনু মাজাহ ১৮৩৭]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِي اللَّهم عَنْهم أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهم عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَيْسَ الْمِسْكِينُ الَّذِي يَطُوفُ عَلَى النَّاسِ تَرُدُّهُ اللُّقْمَةُ وَاللُّقْمَتَانِ وَالتَّمْرَةُ وَالتَّمْرَتَانِ وَلَكِنِ الْمِسْكِينُ الَّذِي لَا يَجِدُ غِنًى يُغْنِيهِ وَلَا يُفْطَنُ بِهِ فَيُتَصَدَّقُ عَلَيْهِ وَلَا يَقُومُ فَيَسْأَلُ النَّاسَ
হযরত আবূ হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআ’লা ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘‘এক গ্রাস ও দু’গ্রাস এবং একটি খেজুর ও দু’টি খেজুরের জন্য যে লোকের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় সে মিসকীন নয়। (আসলে) মিসকীন তো সেই, যার কাছে (অপর থেকে) অমুখাপেক্ষী হওয়ার মত মাল নেই এবং (বাহ্যতঃ) তাকে গরীবও বুঝায় না যে, তাকে সাদকাহ দেওয়া যাবে। আর সে উঠে লোকের কাছে চায়ও না।’’ [সহীহুল বুখারী ১৪৭৯, ১৪৭৬, ৪৫৩৯, মুসলিম ১০৩৯, নাসায়ী ২৫৭১, ২৫৭২, ২৫৭৮, আবূ দাউদ ১৬৩১, আহমাদ ৭৪৮৬, ২৭৪০৪, ৮৮৬৭, ৮৮৯৫, ৯৪৫৪, মুওয়াত্তা মালিক ১৪৩৭, দারেমী ১৬১৫]
অতএব সত্যিকার মু’মিন হয়ে থাকলে যে অবস্থায় আছি তাতেই আমরা তুষ্ট থাকবো। তাহলে মহান আল্লাহও আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন এবং আমাদের প্রতি তাঁর নে‘আমত আরো বাড়িয়ে দিবেন।