ঈদের নামাযের পদ্ধতি
দরূদ শরীফের ফযীলত
রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসূলে আকরাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি জুমার রাত ও জুমার দিন আমার উপর একশত বার দরূদ শরীফ পড়বে, আল্লাহ্ তাআলা তার ১০০টি অভাব পূরণ করবেন। (তার মধ্যে) ৭০টি আখিরাতে আর ৩০টি দুনিয়াতে।” (তারিখে দিমিশ্ক লি ইবনে আসাকির, ৫৪তম খন্ড, ৩০১ পৃষ্ঠা, দারুল ফিক্র বৈরুত)
صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
অন্তর জীবিত থাকবে
মদীনার তাজেদার, রাসূলদের সরদার, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে (অর্থাৎ-ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাত দু’টিতে) সাওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে জেগে থেকে ইবাদত করেছে, তার অন্তর ঐ দিন মরবেনা, যেদিন মানুষের অন্তর মরে যাবে।” (ইবনে মাজাহ, ২য় খন্ড, ৩৬৫ পৃষ্ঠা হাদীস নং-১৭৮২, দারুল মারেফা বৈরুত)
জান্নাত ওয়াজীব হয়ে যায়
অন্য এক জায়গায় হযরত সায়্যিদুনা মু‘আয বিন জাবাল رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ বলেন: “যে ব্যক্তি পাঁচটি রাতে জেগে থাকে (অর্থাৎ-জেগে সারা রাত ইবাদতে কাটায়) তার জন্য জান্নাত ওয়াজীব হয়ে যায়। (সে রাতগুলো হলো, ) যিলহজ্জ শরীফের ৮, ৯ ও ১০ তারিখের রাত, (তিন রাততো এভাবে হলো) আর ৪র্থ রাতটি হলো ঈদুল ফিতরের রাত এবং ৫ম রাতটি হলো শাবানের ১৫ তারিখ রাত (অর্থাৎ-শবে বরাত) । (আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ২য় খন্ড, ৯৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২)
ঈদের নামাযের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পূর্বেকার সুন্নাত
হযরত সায়্যিদুনা বুরাইদা رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ থেকে বর্ণিত; নবীয়ে রহমত, শফীয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত, হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ঈদুল ফিতরের দিন কিছু খেয়ে নামাযের উদ্দেশ্যে তাশরীফ নিয়ে যেতেন। আর ঈদুল আযহার দিন নামায শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু খেতেন না। (তিরমিযী, ২য় খন্ড, ৭০ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৫৪২, দারুল ফিক্র বৈরুত) বুখারী শরীফের বর্ণনায় হযরত সায়্যিদুনা আনাস رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ থেকে বর্ণিত; হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ঈদুল ফিতরের দিন কয়েকটি খেজুর না খেয়ে (নামাযের উদ্দেশ্যে) তাশরীফ নিয়ে যেতেন না। আর খেজুরের সংখ্যা বিজোড় হতো। (বুখারী শরীফ, ১ম খন্ড, ৩২৮ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৯৫৩)
ঈদের নামাযের উদ্দেশ্যে যাওয়া আসার সুন্নাত সমূহ
হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ থেকে বর্ণিত, মদীনার তাজেদার, রাসূলদের সরদার, হুযুরে আনওয়ার صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ঈদের দিন (ঈদের নামাযের উদ্দেশ্যে) এক রাস্তা দিয়ে (তাশরীফ নিয়ে) যেতেন এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসতেন। (তিরমিযী, ২য় খন্ড, ৬৯ পৃষ্ঠা হাদীস নং-৫৪১)
ঈদের নামাযের পদ্ধতি
প্রথমে এভাবে নিয়্যত করুন, আমি আল্লাহ্র ওয়াস্তে কিবলামূখী হয়ে এই ইমামের পিছনে অতিরিক্ত ছয় তকবীরের সাথে ঈদুল ফিতরের অথবা ঈদুল আযহার দুই রাকাত নামাযের নিয়্যত করছি।” অতঃপর কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে اَللهُ اَكْبَرُ বলে স্বাভাবিকভাবে নাভীর নিচে হাত বেঁধে নিবেন এবং সানা পড়বেন। এরপর কান পর্যন্ত হাত উঠাবেন এবং اَللهُ اَكْبَرُ বলে হাত (না বেঁধে) ঝুলিয়ে রাখবেন। অতঃপর কান পর্যন্ত পুনরায় হাত উঠাবেন এবং اَللهُ اَكْبَرُ বলে ঝুলিয়ে রাখবেন। অতঃপর আবার কান পর্যন্ত হাত উঠাবেন এবং اَللهُ اَكْبَرُ বলে হাত বেঁধে নিবেন। অর্থাৎ-১ম তাকবীরের পর হাত বাঁধবেন, এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় তাকবীরে হাত (না বেঁধে) রাখবেন এবং ৪র্থ তাকবীরে হাত বেঁধে নিবেন। এটাকে এভাবে স্মরণ রাখবেন, দাঁড়ানো অবস্থায় তাকবীরে পর যেখানে কিছু পড়তে হবে সেখানে হাত বাঁধতে হবে আর যেখানে পড়তে হবে না সেখানে হাত ঝুলিয়ে রাখতে হবে। অতঃপর ইমাম সাহেব তাআউয়ুজ ও তাসমিয়াহ (অর্থাৎ আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ) নিম্নস্বরে পড়বেন এবং সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরাকে (উচ্চ স্বরে) পড়বেন, এরপর রুকু করবেন। দ্বিতীয় রাকাতে প্রথমে সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সুরাকে উচ্চস্বরে পড়বেন। অতঃপর তিনবার কান পর্যন্ত হাত উঠাবেন এবং প্রতিবারে اَللهُ اَكْبَرُ বলবেন। এ সময় হাত বাঁধবেন না বরং ঝুলিয়ে রাখবেন। এরপর ৪র্থ তাকবীরে হাত উঠানো ছাড়াই اَللهُ اَكْبَرُ বলে রুকুতে চলে যাবেন এবং নিয়মানুযায়ী নামাযের বাকী অংশটুকু সম্পন্ন করবেন। প্রত্যেক দুই তাকবীরের মাঝখানে তিনবার “سُبْحٰنَ الله” বলার পরিমাণ সময় নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৮১ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৫১ পৃষ্ঠা)
ঈদের নামায কার উপর ওয়াজীব?
দুই ঈদের (অর্থাৎ-ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার) নামায ওয়াজীব। যাদের উপর জুমার নামায ওয়াজীব শুধুমাত্র তাদের জন্য (ঈদের নামায ওয়াজীব) । ঈদের নামাযে আযানও নেই, ইকামতও নেই। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৭৯ পৃষ্ঠা)
ঈদের নামাযে খোৎবা সুন্নাত
দুই ঈদের নামায আদায়ের শর্তাবলী জুমার নামাযের ন্যায়। শুধুমাত্র এতটুকুই পার্থক্য যে, জুমার নামাযে খোৎবা শর্ত আর ঈদের নামাযে খোৎবা সুন্নাত। জুমার খোৎবা নামাযের আগে আর ঈদের খোৎবা নামাযের পর দিতে হয়। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৮১ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৬০ পৃষ্ঠা)
ঈদের নামাযের সময়
এই দুই ঈদের নামাযের সময় হলো, সূর্য এক বর্শা পরিমাণ উপরে উঠার (অর্থাৎ-সূর্যোদয়ের ২০ অথবা ২৫ মিনিট) পর থেকে দাহওয়ায়ে কুবরা” অর্থাৎ-শরয়ীভাবে অর্ধ্বদিন পর্যন্ত। কিন্তু ঈদুল ফিতরের নামায একটু দেরীতে আর ঈদুল আযহার নামায তাড়াতাড়ি আদায় করা মুস্তাহাব। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৮১ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৬০ পৃষ্ঠা)
ঈদের জামাআত কিছু অংশ পাওয়া গেলে তখন……?
ইমামের প্রথম রাকাতের তাকবীর সমূহের পর যদি মুক্তাদী (নামাযে) সম্পৃক্ত হয় তখন ঐ সময়ই (তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া অতিরিক্ত) তিনটি তাকবীর বলবে যদিও ইমাম ক্বিরাত পড়া শুরু করে দেয়। ইমাম যদিও তিনটির চেয়ে অতিরিক্ত বলে থাকেন তবুও মুক্তাদী তিনটিই বলবে এবং যদি তার তাকবীর বলার পূর্বেই ইমাম রুকুতে চলে যায় তাহলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীর না বলে ইমামের সাথে রুকুতে চলে যাবে এবং সেখানেই তাকবীর গুলো বলবে। যদি ইমামকে রুকুতে পাওয়া যায় এবং মুক্তাদীর এই প্রবল ধারণা জন্মে যে, তাকবীরগুলো বলার পরও ইমামকে রুকুতে পাওয়া যাবে তাহলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলবে এবং তারপর রুকুতে যাবে আর যদি তা না হয় তবে (اَللهُ اَكْبَرُ) বলে রুকুতে চলে যাবে এবং সেখানে তাকবীরগুলো পড়বে। যদি রুকুতে তাকবীরগুলো শেষ করার পূর্বেই ইমাম রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে নেন তখন বাকী তাকবীর সমূহ রহিত হয়ে যাবে। (অর্থাৎ অবশিষ্ট তাকবীর সমূহ এখন আর বলবে না) । আর যদি ইমাম রুকু থেকে উঠার পর মুক্তাদী জামাআতে সম্পৃক্ত হয়, তবে এখন আর তাকবীর বলবে না বরং (ইমাম সালাম ফেরানোর পর) যখন আপনার অবশিষ্ট নামায পড়বেন তখন তা বলবেন। রুকুতে তাকবীর বলার কথা যেখানে বলা হয়েছে সেখানে হাত উঠাবে না আর যদি মুক্তাদী দ্বিতীয় রাকাতে জামাআতে সম্পৃক্ত হয়, তাহলে প্রথম রাকাতের তাকবীরগুলো এখন বলবে না বরং যখন তার না পাওয়া রাকাতটি আদায় করার জন্য দাঁড়াবে তখন তাকবীরগুলো বলবে। দ্বিতীয় রাকাতের তাকবীরগুলো যদি ইমামের সাথে পাওয়া যায় তবে ভাল আর তা না হলে এক্ষেত্রে তা-ই প্রযোজ্য হবে যা প্রথম রাকাতের ক্ষেত্রে বর্ণিত হয়েছে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৮২ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৬৪ পৃষ্ঠা। আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৫১ পৃষ্ঠা)
ঈদের জামাআত পাওয়া না গেলে তখন কি করবে…?
ইমাম নামায পড়ে নিলেন আর এমতাবস্থায় কোন ব্যক্তি অবশিষ্ট রয়ে গেলো। চাই সে শুরু থেকেই জামাআতে সম্পৃক্ত হতে না পারুক অথবা অংশগ্রহণ করল কিন্তু কোন কারণে নামায ভঙ্গ হয়ে গেলো, তাহলে সে অন্য কোন জায়গায় নামায পাওয়া গেলে নামায আদায় করে নেবে, অন্যথায় জামাআত ছাড়া নামায পড়া যাবে না। তবে উত্তম এটাই যে, সে চার রাকাত চাশ্তের নামায আদায় করে নেবে। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৬৭ পৃষ্ঠা)
ঈদের খোৎবার হুকুম
নামাযের পর ইমাম সাহেব দুইটি খোৎবা পড়বেন এবং জুমার খোৎবায় যে সমস্ত কাজ সুন্নাত, ঈদের খোৎবায়ও তা সুন্নাত। আর যেগুলো জুমার খোৎবায় মাকরূহ ঈদের খোৎবায়ও সেগুলো মাকরূহ। শুধু দুইটি বিষয়ে পার্থক্য রয়েছে, যার মধ্যে একটি হচ্ছে; জুমার খোৎবা দেয়ার পূর্বে খতিবের (মিম্বরে) বসা সুন্নাত আর ঈদের নামাযে না বসাটা সুন্নাত। দ্বিতীয়টি হচ্ছে; ঈদের প্রথম খোৎবার পূর্বে ৯ বার এবং দ্বিতীয় খোৎবার পূর্বে ৭ বার এবং মিম্বর থেকে অবতরণের পূর্বে ১৪ বার (اَللهُ اَكْبَرُ) বলা সুন্নাত আর জুমার খোৎবাতে এরকম বিধান নেই। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৮৩ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৬৭ পৃষ্ঠা। আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৮৫ পৃষ্ঠা)
ঈদের ২০টি সুন্নাত ও আদব
(১) ক্ষৌরকর্ম সম্পাদন করা (তবে ঈদের দিন এইসব কাজ (সুন্নাত) মুস্তাহাব, বাবরী চুল রাখবেন, ইংলিশ কাট নয়) , (২) নখ কাটা, (৩) গোসল করা, (৪) মিসওয়াক করা, (এটা ওযুর জন্য যে মিসওয়াক করা হয়, তা ব্যতীত) (৫) উত্তম কাপড় পরিধান করা, নতুন থাকলে নতুন, নতুবা ধোলাই করা) (৬) খুশবু লাগানো, (৭) আংটি পরা, (যখনই আংটি পরবেন, তখন এ কথার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখবেন যে, শুধু সাড়ে চার মাশাহ্ (রত্তি) থেকে কম ওজন রূপার একটি মাত্র আংটি যেন হয়। একটির চেয়ে বেশি যেন না হয় এবং আংটিতে পাথরও যেন একটি হয়। একাধিক পাথর যাতে না হয়। পাথর ছাড়াও যেনো না পরা হয়। পাথরের ওজনের কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ নেই। রূপার আংটি অথবা বর্ণিত পরিমাণ ওজনের রূপা ইত্যাদি ব্যতীত অন্য কোন ধাতব পদার্থের আংটি পুরুষ পরতে পারবে না) , (৮) ফজরের নামায মহল্লার মসজিদে আদায় করা, (৯) ঈদুল ফিতরের নামাযের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পূর্বে কয়েকটা খেজুর খেয়ে নেয়া, তিন, পাঁচ, সাত কিংবা কম বেশি, কিন্তু বিজোড় হওয়া চাই; খেজুর না থাকলে কোন মিষ্টি জাতীয় জিনিস খেয়ে নেবে। যদি নামাযের পূর্বে কিছুই না খায়, তবুও গুনাহ হবে না; কিন্তু ইশা পর্যন্ত না খেলে ‘ইতাব’ (তিরস্কার) করা যাবে, (১০) ঈদের নামায ঈদগাহে আদায় করা, (১১) ঈদগাহে পায়ে হেটে যাওয়া, (১২) যানবাহনে করে গেলেও ক্ষতি নেই; কিন্তু যে পায়ে হেটে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে, তার জন্য পায়ে হেটে যাওয়া উত্তম। আর ফেরার পথে যানবাহন করে ফিরলেও ক্ষতি নেই, (১৩) ঈদের নামাযের জন্য এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা, (১৪) ঈদের নামাযের পূর্বে সদকায়ে ফিতর আদায় করা। (এটাই উত্তম, তবে ঈদের নামাযের পূর্বে দিতে না পারলে পরে দিয়ে দিবেন) (১৫) আনন্দ প্রকাশ করা, (১৬) বেশি পরিমাণে সদকা দেয়া, (১৭) ঈদগাহে প্রশান্ত মনে, হাসোউজ্জল ও দৃষ্টিকে নিচু করে যাওয়া, (১৮) ফিরার সময় পরস্পর পরস্পরকে মুবারকবাদ দেয়া, (১৯) ঈদের নামাযের পর মুসাহাফা অর্থাৎ হাত মিলানো ও মুয়ানাকা অর্থাৎ আলিঙ্গন করা, যেমন-সাধারণতঃ মুসলমানদের মধ্যে এটার প্রচলন রয়েছে, এরূপ করাটা উত্তম কাজ, কারণ এতে খুশী প্রকাশ পায়। কিন্তু ‘আমরাদ’ বা সুদর্শন বালকের সাথে গলা মিলানো ফিৎনার আশঙ্কা থাকে। (২০) ঈদুল ফিতরের নামাযের জন্য যাওয়ার সময় রাস্তায় নিম্নস্বরে তাকবীর বলবে আর ঈদুল আযহার নামাযের জন্য যাওয়ার পথে উচ্চরবে তাকবীর বলবে। তাকবীর হচ্ছে নিম্নরূপ:
اَللهُ اَكْبَرُ ط اللهُ اَكْبَرُ ط لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ ط اَللهُ اَكْبَرُ وَلِلّٰهِ الْحَمْدُ ط
অনুবাদ: আল্লাহ্ তাআলা মহান, আল্লাহ্ তাআলা মহান, আল্লাহ্ তাআলা ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নেই, আল্লাহ্ তাআলা মহান, আল্লাহ্ তাআলা মহান, আল্লাহ্ তাআলার জন্যই সমস্ত প্রশংসা। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৭৯-৭৮১ পৃষ্ঠা। আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৫২ পৃষ্ঠা, দারুল ফিক্র বৈরুত)
কুরবানী ঈদের একটি মুস্তাহাব
“ঈদুল আযহা (অর্থাৎ কুরবানীর ঈদ) সমস্ত হুকুম ঈদুল ফিতরের মতই। শুধু কিছু বিষয়ে পার্থক্য রয়েছে, যেমন-কুরবানীর ঈদে মুস্তাহাব হচ্ছে; কুরবানী করুক বা না করুক নামাযের পূর্বে কিছু না খাওয়া আর যদি খেয়েও নেয় তাহলেও কোন মাকরূহও নয়।
তাকবীরে তাশরিকের ৮টি মাদানী ফুল
(১) যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখের ফযর থেকে শুরু করে ১৩ তারিখের আছর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্তের ফরয নামাযের পর মসজিদে জামাআত সহকারে আদায়রত নামাযীদেরকে একবার উচ্চ আওয়াজে তাকবীর বলা ওয়াজীব এবং তিনবার বলা উত্তম। আর একেই তাকবীরে তাশরীক বলা হয় এবং সেটি হচ্ছে:
اَللهُ اَكْبَرُ ط اللهُ اَكْبَرُ ط لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ ط اَللهُ اَكْبَرُ وَلِلّٰهِ الْحَمْدُ ط
(তানবীরুল আবছার সম্বলিত, ৩য় খন্ড, ৭১ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৭৯-৭৮৫পৃষ্ঠা)
(২) তাকবীরে তাশরীক সালাম ফেরানোর পরপরই বলা ওয়াজীব। অর্থাৎ-যতক্ষণ পর্যন্ত এমন কোন আমল না হয় যার কারণে (নামাযরত অবস্থায় হলে) নামায পুনরায় আদায় করতে হয়। যেমন-মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলো কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে ওযু ভেঙ্গে ফেলল, চাই ভুল করে কথা বলুক, তবে তাকবীর রহিত হয়ে গেলো। আর যদি বিনা ইচ্ছায় ওযু ভেঙ্গে যায় তবে (তাকবীর) বলে নিবে। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৭৩ পৃষ্ঠা) (৩) শহরের মধ্যে অবস্থানরত মুকীম ব্যক্তির জন্য তাকবীরে তাশরীক ওয়াজীব, অথবা যে তার পেছনে ইকতিদা করল (তার জন্যও) । ঐ ইকতিদাকারী চাই মুসাফির হোক কিংবা গ্রামের অধিবাসী হোক এবং যদি সে ইকতিদা না করে তবে তার (অর্থাৎ মুসাফির ও গ্রামের অধিবাসীর) উপর ওয়াজীব নয়। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৭৪ পৃষ্ঠা)
(৪) মুকিম যদি মুসাফিরের পিছনে ইকতিদা করে তবুও তার উপর (মুকিমের উপর) তাকবীরে তাশরীক আদায় করা ওয়াজীব, যদিও ঐ মুসাফির ইমামের জন্য ওয়াজীব নয়। (দুররে মুখতার রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৭৪ পৃষ্ঠা) (৫) নফল, সুন্নাত এবং বিতরের তাকবীর ওয়াজীব নয়। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৮৫ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৭৩ পৃষ্ঠা) (৬) জুমার পরও ওয়াজীব এবং ঈদের নামাযের (কুরবানীর ঈদ) পরও বলে নিন। (প্রাগুক্ত) (৭) মাসবুক (যার এক বা ততোধিক রাকাত ছুটে গেছে) এর উপরও তাকবীর ওয়াজীব। কিন্তু সালাম ফিরানোর পর বলবে। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৭৬ পৃষ্ঠা) (৮) মুনফারিদ (অর্থাৎ-একাকী নামায আদায়কারী) এর উপর ওয়াজীব নয়। (আল জাওহারাতুন নাইয়িরাহ্, ১২২ পৃষ্ঠা) কিন্তু এরপরও বলে নিন, কেননা সাহিবাইন (অর্থাৎ ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ رَحِمَہُمُ اللہُ تَعَالٰی) এর মতে; তার উপরও ওয়াজীব। (বাহারে শরীয়াত, ১ম অংশ, ৭৭৬ পৃষ্ঠা) (ঈদের ফযীলত সম্বলিত বিস্তারিত বিষয়াবলী জানার জন্য ফয়যানে সুন্নাতের অধ্যায় “ফয়যানে রমযান” থেকে “ফয়যানে ঈদুল ফিতর” পড়ে নিন।)
হে আমাদের প্রিয় আল্লাহ্! আমাদেরকে বরকতময় ঈদের খুশী সুন্নাতানুসারে পালন করার তাওফীক দান করো! আমাদেরকে মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ এবং তাজেদারে মদীনা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর দীদার লাভের প্রকৃত ঈদ বা খুশী বার বার দান করো।
তেরি যবকে দীদ্ হোগী যভী মেরি ঈদ হোগী,
মেরে খোয়াব মে তু আ-না মাদানী মদীনে ওয়ালে।
দরূদ শরীফের ফযীলত
রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসূলে আকরাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি জুমার রাত ও জুমার দিন আমার উপর একশত বার দরূদ শরীফ পড়বে, আল্লাহ্ তাআলা তার ১০০টি অভাব পূরণ করবেন। (তার মধ্যে) ৭০টি আখিরাতে আর ৩০টি দুনিয়াতে।” (তারিখে দিমিশ্ক লি ইবনে আসাকির, ৫৪তম খন্ড, ৩০১ পৃষ্ঠা, দারুল ফিক্র বৈরুত)
صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
অন্তর জীবিত থাকবে
মদীনার তাজেদার, রাসূলদের সরদার, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে (অর্থাৎ-ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাত দু’টিতে) সাওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে জেগে থেকে ইবাদত করেছে, তার অন্তর ঐ দিন মরবেনা, যেদিন মানুষের অন্তর মরে যাবে।” (ইবনে মাজাহ, ২য় খন্ড, ৩৬৫ পৃষ্ঠা হাদীস নং-১৭৮২, দারুল মারেফা বৈরুত)
জান্নাত ওয়াজীব হয়ে যায়
অন্য এক জায়গায় হযরত সায়্যিদুনা মু‘আয বিন জাবাল رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ বলেন: “যে ব্যক্তি পাঁচটি রাতে জেগে থাকে (অর্থাৎ-জেগে সারা রাত ইবাদতে কাটায়) তার জন্য জান্নাত ওয়াজীব হয়ে যায়। (সে রাতগুলো হলো, ) যিলহজ্জ শরীফের ৮, ৯ ও ১০ তারিখের রাত, (তিন রাততো এভাবে হলো) আর ৪র্থ রাতটি হলো ঈদুল ফিতরের রাত এবং ৫ম রাতটি হলো শাবানের ১৫ তারিখ রাত (অর্থাৎ-শবে বরাত) । (আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ২য় খন্ড, ৯৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২)
ঈদের নামাযের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পূর্বেকার সুন্নাত
হযরত সায়্যিদুনা বুরাইদা رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ থেকে বর্ণিত; নবীয়ে রহমত, শফীয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত, হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ঈদুল ফিতরের দিন কিছু খেয়ে নামাযের উদ্দেশ্যে তাশরীফ নিয়ে যেতেন। আর ঈদুল আযহার দিন নামায শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু খেতেন না। (তিরমিযী, ২য় খন্ড, ৭০ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৫৪২, দারুল ফিক্র বৈরুত) বুখারী শরীফের বর্ণনায় হযরত সায়্যিদুনা আনাস رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ থেকে বর্ণিত; হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ঈদুল ফিতরের দিন কয়েকটি খেজুর না খেয়ে (নামাযের উদ্দেশ্যে) তাশরীফ নিয়ে যেতেন না। আর খেজুরের সংখ্যা বিজোড় হতো। (বুখারী শরীফ, ১ম খন্ড, ৩২৮ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৯৫৩)
ঈদের নামাযের উদ্দেশ্যে যাওয়া আসার সুন্নাত সমূহ
হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ থেকে বর্ণিত, মদীনার তাজেদার, রাসূলদের সরদার, হুযুরে আনওয়ার صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ঈদের দিন (ঈদের নামাযের উদ্দেশ্যে) এক রাস্তা দিয়ে (তাশরীফ নিয়ে) যেতেন এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসতেন। (তিরমিযী, ২য় খন্ড, ৬৯ পৃষ্ঠা হাদীস নং-৫৪১)
ঈদের নামাযের পদ্ধতি
প্রথমে এভাবে নিয়্যত করুন, আমি আল্লাহ্র ওয়াস্তে কিবলামূখী হয়ে এই ইমামের পিছনে অতিরিক্ত ছয় তকবীরের সাথে ঈদুল ফিতরের অথবা ঈদুল আযহার দুই রাকাত নামাযের নিয়্যত করছি।” অতঃপর কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে اَللهُ اَكْبَرُ বলে স্বাভাবিকভাবে নাভীর নিচে হাত বেঁধে নিবেন এবং সানা পড়বেন। এরপর কান পর্যন্ত হাত উঠাবেন এবং اَللهُ اَكْبَرُ বলে হাত (না বেঁধে) ঝুলিয়ে রাখবেন। অতঃপর কান পর্যন্ত পুনরায় হাত উঠাবেন এবং اَللهُ اَكْبَرُ বলে ঝুলিয়ে রাখবেন। অতঃপর আবার কান পর্যন্ত হাত উঠাবেন এবং اَللهُ اَكْبَرُ বলে হাত বেঁধে নিবেন। অর্থাৎ-১ম তাকবীরের পর হাত বাঁধবেন, এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় তাকবীরে হাত (না বেঁধে) রাখবেন এবং ৪র্থ তাকবীরে হাত বেঁধে নিবেন। এটাকে এভাবে স্মরণ রাখবেন, দাঁড়ানো অবস্থায় তাকবীরে পর যেখানে কিছু পড়তে হবে সেখানে হাত বাঁধতে হবে আর যেখানে পড়তে হবে না সেখানে হাত ঝুলিয়ে রাখতে হবে। অতঃপর ইমাম সাহেব তাআউয়ুজ ও তাসমিয়াহ (অর্থাৎ আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ) নিম্নস্বরে পড়বেন এবং সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরাকে (উচ্চ স্বরে) পড়বেন, এরপর রুকু করবেন। দ্বিতীয় রাকাতে প্রথমে সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সুরাকে উচ্চস্বরে পড়বেন। অতঃপর তিনবার কান পর্যন্ত হাত উঠাবেন এবং প্রতিবারে اَللهُ اَكْبَرُ বলবেন। এ সময় হাত বাঁধবেন না বরং ঝুলিয়ে রাখবেন। এরপর ৪র্থ তাকবীরে হাত উঠানো ছাড়াই اَللهُ اَكْبَرُ বলে রুকুতে চলে যাবেন এবং নিয়মানুযায়ী নামাযের বাকী অংশটুকু সম্পন্ন করবেন। প্রত্যেক দুই তাকবীরের মাঝখানে তিনবার “سُبْحٰنَ الله” বলার পরিমাণ সময় নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৮১ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৫১ পৃষ্ঠা)
ঈদের নামায কার উপর ওয়াজীব?
দুই ঈদের (অর্থাৎ-ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার) নামায ওয়াজীব। যাদের উপর জুমার নামায ওয়াজীব শুধুমাত্র তাদের জন্য (ঈদের নামায ওয়াজীব) । ঈদের নামাযে আযানও নেই, ইকামতও নেই। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৭৯ পৃষ্ঠা)
ঈদের নামাযে খোৎবা সুন্নাত
দুই ঈদের নামায আদায়ের শর্তাবলী জুমার নামাযের ন্যায়। শুধুমাত্র এতটুকুই পার্থক্য যে, জুমার নামাযে খোৎবা শর্ত আর ঈদের নামাযে খোৎবা সুন্নাত। জুমার খোৎবা নামাযের আগে আর ঈদের খোৎবা নামাযের পর দিতে হয়। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৮১ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৬০ পৃষ্ঠা)
ঈদের নামাযের সময়
এই দুই ঈদের নামাযের সময় হলো, সূর্য এক বর্শা পরিমাণ উপরে উঠার (অর্থাৎ-সূর্যোদয়ের ২০ অথবা ২৫ মিনিট) পর থেকে দাহওয়ায়ে কুবরা” অর্থাৎ-শরয়ীভাবে অর্ধ্বদিন পর্যন্ত। কিন্তু ঈদুল ফিতরের নামায একটু দেরীতে আর ঈদুল আযহার নামায তাড়াতাড়ি আদায় করা মুস্তাহাব। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৮১ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৬০ পৃষ্ঠা)
ঈদের জামাআত কিছু অংশ পাওয়া গেলে তখন……?
ইমামের প্রথম রাকাতের তাকবীর সমূহের পর যদি মুক্তাদী (নামাযে) সম্পৃক্ত হয় তখন ঐ সময়ই (তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া অতিরিক্ত) তিনটি তাকবীর বলবে যদিও ইমাম ক্বিরাত পড়া শুরু করে দেয়। ইমাম যদিও তিনটির চেয়ে অতিরিক্ত বলে থাকেন তবুও মুক্তাদী তিনটিই বলবে এবং যদি তার তাকবীর বলার পূর্বেই ইমাম রুকুতে চলে যায় তাহলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীর না বলে ইমামের সাথে রুকুতে চলে যাবে এবং সেখানেই তাকবীর গুলো বলবে। যদি ইমামকে রুকুতে পাওয়া যায় এবং মুক্তাদীর এই প্রবল ধারণা জন্মে যে, তাকবীরগুলো বলার পরও ইমামকে রুকুতে পাওয়া যাবে তাহলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলবে এবং তারপর রুকুতে যাবে আর যদি তা না হয় তবে (اَللهُ اَكْبَرُ) বলে রুকুতে চলে যাবে এবং সেখানে তাকবীরগুলো পড়বে। যদি রুকুতে তাকবীরগুলো শেষ করার পূর্বেই ইমাম রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে নেন তখন বাকী তাকবীর সমূহ রহিত হয়ে যাবে। (অর্থাৎ অবশিষ্ট তাকবীর সমূহ এখন আর বলবে না) । আর যদি ইমাম রুকু থেকে উঠার পর মুক্তাদী জামাআতে সম্পৃক্ত হয়, তবে এখন আর তাকবীর বলবে না বরং (ইমাম সালাম ফেরানোর পর) যখন আপনার অবশিষ্ট নামায পড়বেন তখন তা বলবেন। রুকুতে তাকবীর বলার কথা যেখানে বলা হয়েছে সেখানে হাত উঠাবে না আর যদি মুক্তাদী দ্বিতীয় রাকাতে জামাআতে সম্পৃক্ত হয়, তাহলে প্রথম রাকাতের তাকবীরগুলো এখন বলবে না বরং যখন তার না পাওয়া রাকাতটি আদায় করার জন্য দাঁড়াবে তখন তাকবীরগুলো বলবে। দ্বিতীয় রাকাতের তাকবীরগুলো যদি ইমামের সাথে পাওয়া যায় তবে ভাল আর তা না হলে এক্ষেত্রে তা-ই প্রযোজ্য হবে যা প্রথম রাকাতের ক্ষেত্রে বর্ণিত হয়েছে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৮২ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৬৪ পৃষ্ঠা। আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৫১ পৃষ্ঠা)
ঈদের জামাআত পাওয়া না গেলে তখন কি করবে…?
ইমাম নামায পড়ে নিলেন আর এমতাবস্থায় কোন ব্যক্তি অবশিষ্ট রয়ে গেলো। চাই সে শুরু থেকেই জামাআতে সম্পৃক্ত হতে না পারুক অথবা অংশগ্রহণ করল কিন্তু কোন কারণে নামায ভঙ্গ হয়ে গেলো, তাহলে সে অন্য কোন জায়গায় নামায পাওয়া গেলে নামায আদায় করে নেবে, অন্যথায় জামাআত ছাড়া নামায পড়া যাবে না। তবে উত্তম এটাই যে, সে চার রাকাত চাশ্তের নামায আদায় করে নেবে। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৬৭ পৃষ্ঠা)
ঈদের খোৎবার হুকুম
নামাযের পর ইমাম সাহেব দুইটি খোৎবা পড়বেন এবং জুমার খোৎবায় যে সমস্ত কাজ সুন্নাত, ঈদের খোৎবায়ও তা সুন্নাত। আর যেগুলো জুমার খোৎবায় মাকরূহ ঈদের খোৎবায়ও সেগুলো মাকরূহ। শুধু দুইটি বিষয়ে পার্থক্য রয়েছে, যার মধ্যে একটি হচ্ছে; জুমার খোৎবা দেয়ার পূর্বে খতিবের (মিম্বরে) বসা সুন্নাত আর ঈদের নামাযে না বসাটা সুন্নাত। দ্বিতীয়টি হচ্ছে; ঈদের প্রথম খোৎবার পূর্বে ৯ বার এবং দ্বিতীয় খোৎবার পূর্বে ৭ বার এবং মিম্বর থেকে অবতরণের পূর্বে ১৪ বার (اَللهُ اَكْبَرُ) বলা সুন্নাত আর জুমার খোৎবাতে এরকম বিধান নেই। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৮৩ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৬৭ পৃষ্ঠা। আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৮৫ পৃষ্ঠা)
ঈদের ২০টি সুন্নাত ও আদব
(১) ক্ষৌরকর্ম সম্পাদন করা (তবে ঈদের দিন এইসব কাজ (সুন্নাত) মুস্তাহাব, বাবরী চুল রাখবেন, ইংলিশ কাট নয়) , (২) নখ কাটা, (৩) গোসল করা, (৪) মিসওয়াক করা, (এটা ওযুর জন্য যে মিসওয়াক করা হয়, তা ব্যতীত) (৫) উত্তম কাপড় পরিধান করা, নতুন থাকলে নতুন, নতুবা ধোলাই করা) (৬) খুশবু লাগানো, (৭) আংটি পরা, (যখনই আংটি পরবেন, তখন এ কথার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখবেন যে, শুধু সাড়ে চার মাশাহ্ (রত্তি) থেকে কম ওজন রূপার একটি মাত্র আংটি যেন হয়। একটির চেয়ে বেশি যেন না হয় এবং আংটিতে পাথরও যেন একটি হয়। একাধিক পাথর যাতে না হয়। পাথর ছাড়াও যেনো না পরা হয়। পাথরের ওজনের কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ নেই। রূপার আংটি অথবা বর্ণিত পরিমাণ ওজনের রূপা ইত্যাদি ব্যতীত অন্য কোন ধাতব পদার্থের আংটি পুরুষ পরতে পারবে না) , (৮) ফজরের নামায মহল্লার মসজিদে আদায় করা, (৯) ঈদুল ফিতরের নামাযের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পূর্বে কয়েকটা খেজুর খেয়ে নেয়া, তিন, পাঁচ, সাত কিংবা কম বেশি, কিন্তু বিজোড় হওয়া চাই; খেজুর না থাকলে কোন মিষ্টি জাতীয় জিনিস খেয়ে নেবে। যদি নামাযের পূর্বে কিছুই না খায়, তবুও গুনাহ হবে না; কিন্তু ইশা পর্যন্ত না খেলে ‘ইতাব’ (তিরস্কার) করা যাবে, (১০) ঈদের নামায ঈদগাহে আদায় করা, (১১) ঈদগাহে পায়ে হেটে যাওয়া, (১২) যানবাহনে করে গেলেও ক্ষতি নেই; কিন্তু যে পায়ে হেটে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে, তার জন্য পায়ে হেটে যাওয়া উত্তম। আর ফেরার পথে যানবাহন করে ফিরলেও ক্ষতি নেই, (১৩) ঈদের নামাযের জন্য এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা, (১৪) ঈদের নামাযের পূর্বে সদকায়ে ফিতর আদায় করা। (এটাই উত্তম, তবে ঈদের নামাযের পূর্বে দিতে না পারলে পরে দিয়ে দিবেন) (১৫) আনন্দ প্রকাশ করা, (১৬) বেশি পরিমাণে সদকা দেয়া, (১৭) ঈদগাহে প্রশান্ত মনে, হাসোউজ্জল ও দৃষ্টিকে নিচু করে যাওয়া, (১৮) ফিরার সময় পরস্পর পরস্পরকে মুবারকবাদ দেয়া, (১৯) ঈদের নামাযের পর মুসাহাফা অর্থাৎ হাত মিলানো ও মুয়ানাকা অর্থাৎ আলিঙ্গন করা, যেমন-সাধারণতঃ মুসলমানদের মধ্যে এটার প্রচলন রয়েছে, এরূপ করাটা উত্তম কাজ, কারণ এতে খুশী প্রকাশ পায়। কিন্তু ‘আমরাদ’ বা সুদর্শন বালকের সাথে গলা মিলানো ফিৎনার আশঙ্কা থাকে। (২০) ঈদুল ফিতরের নামাযের জন্য যাওয়ার সময় রাস্তায় নিম্নস্বরে তাকবীর বলবে আর ঈদুল আযহার নামাযের জন্য যাওয়ার পথে উচ্চরবে তাকবীর বলবে। তাকবীর হচ্ছে নিম্নরূপ:
اَللهُ اَكْبَرُ ط اللهُ اَكْبَرُ ط لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ ط اَللهُ اَكْبَرُ وَلِلّٰهِ الْحَمْدُ ط
অনুবাদ: আল্লাহ্ তাআলা মহান, আল্লাহ্ তাআলা মহান, আল্লাহ্ তাআলা ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নেই, আল্লাহ্ তাআলা মহান, আল্লাহ্ তাআলা মহান, আল্লাহ্ তাআলার জন্যই সমস্ত প্রশংসা। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৭৯-৭৮১ পৃষ্ঠা। আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৫২ পৃষ্ঠা, দারুল ফিক্র বৈরুত)
কুরবানী ঈদের একটি মুস্তাহাব
“ঈদুল আযহা (অর্থাৎ কুরবানীর ঈদ) সমস্ত হুকুম ঈদুল ফিতরের মতই। শুধু কিছু বিষয়ে পার্থক্য রয়েছে, যেমন-কুরবানীর ঈদে মুস্তাহাব হচ্ছে; কুরবানী করুক বা না করুক নামাযের পূর্বে কিছু না খাওয়া আর যদি খেয়েও নেয় তাহলেও কোন মাকরূহও নয়।
তাকবীরে তাশরিকের ৮টি মাদানী ফুল
(১) যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখের ফযর থেকে শুরু করে ১৩ তারিখের আছর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্তের ফরয নামাযের পর মসজিদে জামাআত সহকারে আদায়রত নামাযীদেরকে একবার উচ্চ আওয়াজে তাকবীর বলা ওয়াজীব এবং তিনবার বলা উত্তম। আর একেই তাকবীরে তাশরীক বলা হয় এবং সেটি হচ্ছে:
اَللهُ اَكْبَرُ ط اللهُ اَكْبَرُ ط لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ ط اَللهُ اَكْبَرُ وَلِلّٰهِ الْحَمْدُ ط
(তানবীরুল আবছার সম্বলিত, ৩য় খন্ড, ৭১ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৭৯-৭৮৫পৃষ্ঠা)
(২) তাকবীরে তাশরীক সালাম ফেরানোর পরপরই বলা ওয়াজীব। অর্থাৎ-যতক্ষণ পর্যন্ত এমন কোন আমল না হয় যার কারণে (নামাযরত অবস্থায় হলে) নামায পুনরায় আদায় করতে হয়। যেমন-মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলো কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে ওযু ভেঙ্গে ফেলল, চাই ভুল করে কথা বলুক, তবে তাকবীর রহিত হয়ে গেলো। আর যদি বিনা ইচ্ছায় ওযু ভেঙ্গে যায় তবে (তাকবীর) বলে নিবে। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৭৩ পৃষ্ঠা) (৩) শহরের মধ্যে অবস্থানরত মুকীম ব্যক্তির জন্য তাকবীরে তাশরীক ওয়াজীব, অথবা যে তার পেছনে ইকতিদা করল (তার জন্যও) । ঐ ইকতিদাকারী চাই মুসাফির হোক কিংবা গ্রামের অধিবাসী হোক এবং যদি সে ইকতিদা না করে তবে তার (অর্থাৎ মুসাফির ও গ্রামের অধিবাসীর) উপর ওয়াজীব নয়। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৭৪ পৃষ্ঠা)
(৪) মুকিম যদি মুসাফিরের পিছনে ইকতিদা করে তবুও তার উপর (মুকিমের উপর) তাকবীরে তাশরীক আদায় করা ওয়াজীব, যদিও ঐ মুসাফির ইমামের জন্য ওয়াজীব নয়। (দুররে মুখতার রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৭৪ পৃষ্ঠা) (৫) নফল, সুন্নাত এবং বিতরের তাকবীর ওয়াজীব নয়। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৮৫ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৭৩ পৃষ্ঠা) (৬) জুমার পরও ওয়াজীব এবং ঈদের নামাযের (কুরবানীর ঈদ) পরও বলে নিন। (প্রাগুক্ত) (৭) মাসবুক (যার এক বা ততোধিক রাকাত ছুটে গেছে) এর উপরও তাকবীর ওয়াজীব। কিন্তু সালাম ফিরানোর পর বলবে। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৭৬ পৃষ্ঠা) (৮) মুনফারিদ (অর্থাৎ-একাকী নামায আদায়কারী) এর উপর ওয়াজীব নয়। (আল জাওহারাতুন নাইয়িরাহ্, ১২২ পৃষ্ঠা) কিন্তু এরপরও বলে নিন, কেননা সাহিবাইন (অর্থাৎ ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ رَحِمَہُمُ اللہُ تَعَالٰی) এর মতে; তার উপরও ওয়াজীব। (বাহারে শরীয়াত, ১ম অংশ, ৭৭৬ পৃষ্ঠা) (ঈদের ফযীলত সম্বলিত বিস্তারিত বিষয়াবলী জানার জন্য ফয়যানে সুন্নাতের অধ্যায় “ফয়যানে রমযান” থেকে “ফয়যানে ঈদুল ফিতর” পড়ে নিন।)
হে আমাদের প্রিয় আল্লাহ্! আমাদেরকে বরকতময় ঈদের খুশী সুন্নাতানুসারে পালন করার তাওফীক দান করো! আমাদেরকে মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ এবং তাজেদারে মদীনা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর দীদার লাভের প্রকৃত ঈদ বা খুশী বার বার দান করো।
তেরি যবকে দীদ্ হোগী যভী মেরি ঈদ হোগী,
মেরে খোয়াব মে তু আ-না মাদানী মদীনে ওয়ালে।