মাসালিকুল হুনাফা ফি ওয়ালিদাইল মোস্তাফা ﷺ ৩য় পর্ব
আল্লাহতায়ালা নবীয়েপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতামাতাকে পূনর্জীবিত করেছেন। অতঃপর তারা নবীজীর উপর ঈমান আনয়ন করেছেন।
হুফফাজে মুহাদ্দিসিনে কিরামদের বিরাট একটি জামাত এ মসলকের প্রতি সমর্থন করেছেন। তাদের মধ্যে ইবনে শাহীন হাফিজ আবু বকর আল খতিব বাগদাদী, সুহাইলী, কুরতুবী, মুহিব তাবারী, আল্লামা নাছিরুদ্দিন বিন আল মুনির প্রমুখ অন্যতম। তারা প্রত্যেকে এ ব্যাপারে দলিল প্রদান করেছেন যা ইবনে শাহীন- الناسخ والمنسوخ গ্রন্থে খতিব আল বাগদাদী السابق والاحق গ্রন্থে এবং দারে কুতনী ও ইবনু আসাকির উভয়ে غرائب গ্রন্থে জয়িফ সনদে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন-
قالت حج بنا رسول الله صلى الله عليه وسلم حجة الوداع فمربى على عقبة بالحجون وهو باك حزين مغتم فنزل فمكث عنى طويلا ثم عاد الى وهو فرح متبسم فقلت له؟ فقال ذهبت لقبر امى فسألت الله ان يحييها فاحياها فامنت بى وردها الله-
অর্থ: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন- বিদায় হজ্জের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে হজ্জ করতে গেলেন। তখন আমাকে নিয়ে হুজুন নামক স্থানে উকবার কাছ দিয়ে গমন করলেন। তখন তিনি খুবই চিন্তিত ও ক্রন্দনরত অবস্থায় ছিলেন। তখন তিনি আমাকে রেখে অন্যথায় চলে গেলেন। দীর্ঘণ পরে যখন আসলেন তখন দেখলাম তিনি ভীষণ খুশি এবং মুচকি হাসছেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ব্যাপার কি। তিনি বললেন আমি আমার মায়ের কবরের কাছে গিয়েছিলাম। অতঃপর আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি যেন তাকে জীবিত করে দেন। তখন আল্লাহ তাকে জীবিত করেছেন। অতঃপর আমার উপর ঈমান আনয়ন করেছেন। অতঃপর আল্লাহ তাকে ফিরিয়ে নিয়েছেন।
মুহাদ্দিসিনে কেরামদরে ঐকমত্য এ হাদিসটি জয়িফ। কেউ কেউ মওজু বলেছেন। তবে সঠিক কথা হল ইহা মওজু নয় জয়িফ। এর উপর আমি পৃথক একটি অধ্যায় রচনা করেছি।
ইমাম সুহাইলী الروض الانف গ্রন্থে সনদসহ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন এ সনদে অজ্ঞাত রাবী রয়েছেন-
ان رسول الله صلى الله عليه وسلم سأل ربه ان يحيى ابويه فاحياهما له فامنأ به ثم اماتهما-
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন তিনি যেন তাঁর পিতা-মাতাকে জীবীত করে দেন। তখন আল্লাহ তাদেরকে জীবীত করে দেন। অতঃপর তারা নবীর প্রতি ঈমান আনয়ন করলেন। অতঃপর তারা মৃত্যুবরণ করলেন।
এ হাদিসটি বর্ণনা করার পর সুহাইলী বলেন- আল্লাহ সর্ব বিষয়ে মতার অধিকারী। তাঁর রহমত ও কুদরতের কাছে কোন কিছুই অসম্ভব নয়। আর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন আল্লাহর এমন প্রিয়পাত্র যার জন্য তিনি তাঁর অনুগ্রহ দ্বারা যে কোন বিষয় নির্দিষ্ট করতে পারেন এবং তাকে যা ইচ্ছা নিয়ামত প্রদান করতে পারেন।
ইমাম কুরতুবী বলেছেন- পুনর্জীবনসংক্রান্ত হাদিস ও ইস্তেগফার নিষেধ এর মধ্যে কোন বিরোধ নেই। কারণ পূণর্জীবন সংক্রান্ত ঘটনা ইস্তেগফারসংক্রান্ত ঘটনার অনেক পরে হয়েছে। যেমন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত হাদিস তার প্রমাণ। তিনি বলেছেন- পূনর্জীবন এর ঘটনা বিদায় হজ্বের সময় ঘটেছিল। এ জন্য ইবনে শাহীন এ হাদিসকে অন্যান্য হাদিসের নাসিখ ও বা রহিতকারী নির্ধারণ করেছেন।
আল্লামা নাছিরুদ্দিন ইবনে মুনির মালিকী স্বীয় المقتفى فى شرف المصطفى গ্রন্থে বলেছেন- আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাধ্যমে মৃতকে জীবিত করা ঈসা ইবনে মরিয়ম কর্তৃক মৃতকে জীবিত করার অনুরূপ। অতঃপর তিনি বলেন- হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামাকে যখন কাফিরদের জন্য ইস্তেগফার করতে বারণ করা হল তখন তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন তাঁর পিতা-মাতাকে জীবিত করার জন্য। তখন আল্লাহ তাদেরকে জীবিত করে দিলেন। অতঃপর তারা নবীর প্রতি ঈমান আনয়ন করলেন। অবশেষে মু’মিন হিসেবে ইন্তেকাল করলেন।
ইমাম কুরতুবী বলেন- নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ফজিলত কখনো শেষ হয়নি। অতএব ইহাও আল্লাহর প থেকে একটি ফজিলত ও মর্যাদা। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাঁকে সম্মানিত করেছেন।
তিনি বলেন- নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতা-মাতার পূনর্জীবন লাভ এবং তাঁর প্রতি ঈমান আনয়ন এগুলো বিবেক বুদ্ধি ও শরিয়ত কোনটাই নিষেধ করে না।
যেমন কুরআনুল কারীমে বর্ণিত হয়েছে বনী ইসরাইলের নিহিত ব্যক্তির পূনর্জীবন লাভ এবং তার হত্যাকারীর সংবাদ প্রদান করার ঘটনা।
অনুরূপভাবে ঈসা আলাইহিস সালাম ও মৃতকে জীবীত করেছেন এমনিভাবে আমাদের নবীর হাতে আল্লাহতায়ালা অনেক মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করেছেন। কুরতুবী বলেন- এগুলো যখন প্রমাণিত হল তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অধিক ফজিলত ও মর্যাদার কারণে তাঁর পিতা-মাতাকে পূণর্জীবন করা এবং ঈমান আনয়ন করাতে সমস্যা কোথায়?
হাফিজ ফাতাহ উদ্দিন বিন সাইদুল নাস তদীয় সীরাত গ্রন্থে পূণর্জীবন সংক্রান্ত ঘটনা ও আযাবসংক্রান্ত হাদিসসমূহ বর্ণনার পর বলেছেন কোন কোন আহলে ইলমগণ উল্লেখিত বর্ণনাগুলোর সামঞ্জস্য করতে গিয়ে বলেছেন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র রূহ মোবারক আল্লাহর নিকট ফিরিয়ে নেয়া পর্যন্ত তিনি উচ্চ মর্যাদা ও মহান সম্মানের উচ্চাসনে আরোহন করতে থাকেন।
অতএব ইহাই বলা জায়েয যে উক্ত সম্মান আল্লাহতায়ালা তাঁকে পরবর্তীতে প্রদান করেছিলেন। অর্থাৎ পূনর্জীবন লাভ ও ঈমান আনয়ন ঐ সমস্ত হাদিসের পরবর্তী ঘটনা। সুতরাং এতে কোন সংঘর্ষ নাই। কোন কোন উলামায়ে কেরামগণ এদিকেই ইঙ্গিত করেছেন। তারা হালিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর সংবাদ বর্ণনা করার পর বলেছেন-
هذا جزاء الام عن ارضاعه – لكن جزاء الله عنه عظيم
وكذالك ارجو ان يكون لامه – عن ذاك امنة يد ونعيم
ويكون احياها الا له وامنت – بمحمد فحديثها معلوم
فلربما سعدت به ايضا كما – سعدت به بعد الشقاء حليم
অর্থ: ইহা হচ্ছে দুধমাতার প্রতিদান। বরং আল্লাহর নিকট আরো অধিক প্রতিদান রয়েছে।
আশা করি এমনিভাবে তাঁর আমিনা রাদিয়াল্লাহু আনহা আরো অধিক প্রতিদান প্রদান করা হবে।
আল্লাহ তাঁকে পূনর্জীবিত করেছেন। অতঃপর তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমান এনেছেন। এ হাদিসটি প্রসিদ্ধ।
হালিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা যেমনিভাবে সৌভাগ্য লাভ করেছেন ঠিক তেমনিভাবে তিনিও সৌভাগ্য লাভ করেছেন।
হাফিজ শামসুদ্দিন বিন নাছিরুদ্দিন দামেস্কী স্বীয়- مورد الصادى فى مولد الهادى গ্রন্থে উল্লেখিত হাদিসটি বর্ণনার পর বলেছেন-
حبا الله النبى مزيد فضل – على فضل وكان به رؤوفا
فاحيا امه وكذا ابوه – لايمان به فضلا لطيفا
فسلم فالقديم بذا قدير – وان كان الحديث به ضعيفا
অর্থ: আল্লাহতায়ালা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসংখ্য অগণিত মহব্বত ও অনুগ্রহ করেছেন। তিনি হচ্ছেন অত্যন্ত স্নেহশীল। অতঃপর তিনি তাঁর পিতা-মাতাকে জীবিত করেছেন। সাথে তারা তাঁর প্রতি ঈমান আনেন। ইহা একটি সুক্ষ অনুগ্রহ। অতঃপর তার উপর সালাম। যদিও এ সংক্রান্ত হাদিস জয়িফ।
একদল উলামায়ে কেরাম উল্লেখিত তিনটি মসলককেই শক্তিশালী মনে করেন না। তারা মুসলিমশরীফের হাদিসসহ এ ধরণের বর্ণনাগুলোকে রহিত বা পরিবর্তন না করে প্রকাশ্য অর্থের উপর রেখে দিয়েছেন। তারা বলে এগুলো বর্ণনা করা কারো জন্য জায়েয নয়।
ইমাম সুহাইলী- الروض الانف গ্রন্থে মুসলিমের হাদিসটি উল্লেখ করার পর বলেছেন রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতা-মাতা সম্বন্ধে এ ধরণের মন্তব্য করা আমাদের জন্য উচিত নয়। যেমন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لا تؤذوا الاحياء بسب الاموات-
অর্থ: মৃতদেরকে গালি দেয়ার মাধ্যমে জীবিতদেরকে কষ্ট দিও না।’ আল্লাহতায়ালা বলেছেন-
ان الذين يؤذون الله ورسوله لعنهم الله فى الدنيا والاخرة-
অর্থ: যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয় আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকাল ও পরকালে অভিসম্পাত করেন। (আহযাব- ৫৭)
মালেকী মাযহাবের একজন ইমাম কাজী আবু বকর ইবনুল আরাবিকে জিজ্ঞাসা করা হল ঐ ব্যক্তি সম্বন্ধে যে বলে- নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতা জাহান্নামী। তিনি জবাবে বললেন- من قال ذلك فهو ملعون অর্থ: যে ব্যক্তি ইহা বলবে সে মালউন বা অভিশপ্ত। যেমন আল্লাহতায়ালা বলেন-
ان الذين يؤذون الله ورسوله لعنهم الله فى الدنيا والاخرة-
অর্থ: যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয় আল্লাহ তাদের প্রতি দুনিয়াতে ও আখেরাতে অভিসম্পাত করেন।
তিনি বলেন- রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতা জাহান্নামী এ কথা বলার চেয়ে অধিক কোন কষ্টদায়ক ব্যাপার নেই।
অপর একটি মসলক
=========
তাছাড়া কোন কোন উলামায়ে কেরাম পঞ্চম মত ব্যক্ত করেছেন। তা হলো এ ব্যাপারে চুপ থাকা।
শেখ তাজ উদ্দিন ফাকিহানী الفجر المنير কিতাবে বলেছেন- নবীজীর পিতা-মাতার হাকিকত আল্লাহই ভাল জানেন।
আল বাজী শরহে মুয়াত্তা গ্রন্থে বলেছেন- কোন কোন উলামা বলেছেন- কোন মুবাহ বা বৈধ কাজের মাধ্যমেও নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কষ্ট দেয়া জায়েয নয়। তবে অন্যান্য লোকের বেলায় তা জায়েয। তাই এ কাজে বাঁধা দেয়া যাবে না। এতে মুবাহ আমলকারীর কোন গোনাহ হবে না। যদিও এর মাধ্যমে অন্যের কষ্ট হয়।
এ জন্য নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
اذا اراد على بن ابى طالب ان بتزوج ابنة ابى جهل انما فاطمة بضعة منى وانى لا احرم ما احل الله ولكن والله لا تجتمع ابنة رسول الله وابنة عدو الله عند رجل ابدا-
অর্থ: যখন আলী বিন আবি তালিব আবু জেহেলর মেয়েকে বিবাহ করতে ইচ্ছা করলেন তখন নবীজী বললেন- নিশ্চয় ফাতিমা আমার কলিজার টুকরা। আল্লাহ যা হালাল করেছেন আমি তা হারাম করব না। তবে আল্লাহর কসম রাসূলুল্লাহর মেয়ে ও আল্লাহর দুশমনের মেয়ে কখনো কোন লোকের নিকট একত্রিত হতে পারবে না।
অতএব এ ব্যাপারে হুকুম হলো মুবাহ কাজের মাধ্যমে ও নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কষ্ট দেয়া জায়েয নাই। যেমন আল্লাহর বাণী ‘নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয় তাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ।’
ইবনে আসাকির তদীয় তারিখ গ্রন্থে ইয়াহইয়া বিন আব্দুল মালিক বিন আবি গুনিয়ার সূত্রে বর্ণনা করেছেন-
قال حدثنا نوفل بن الفرات- وكان عاملا لعمر بن عبد العزيز قال: كان رجل من كتاب الشام مأمونا عندهم- استعمل رجلا على كورة الشام وكان ابوه يزن بالمنانية- فبلغ ذلك عمربن عبد العزيز فقال ماحملك على ان تستعمل رجلا على كورة من كور المسلمين كان ابوه يزن بالمنانية؟ قال اصلح الله امير المؤمنين وما على كان ابو النبى صلى الله عليه وسلم مشركا- فقال عمرأه! ثم سكت ثم رفع رأسه فقال اقطع لسانه أأقطع يده ورجله؟ أأضرب عنقه؟ ثم قال لا تلى لى شيئا ما بقيت-
অর্থ: তিনি বলেন- আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন নওফেল বিন ফুরাত। তিনি ছিলেন উমর বিন আব্দুল আযিয রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কর্মচারী। তিনি বলেন শ্যাম দেশের একজন লোক যিনি তাদের নিকট বিশ্বস্ত ছিলেন। তিনি সেখানে এমন একজন ব্যক্তিকে কর্মচারী নিযুক্ত করলেন যার পিতা ছিল একজন অগ্নিপূজক। এ খবরটি উমর বিন আব্দুল আযিযের নিকট পৌঁছল। তখন তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন- তিনি কিভাবে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় এমন ব্যক্তিকে নিযুক্ত করলেন যার পিতা ছিল একজন অগ্নিপূজক? তখন সে ব্যক্তি বলল- আল্লাহ আমিরুল মো’মিনীনকে বিশুদ্ধ করুক। এতে আমার কি ত্রুটি হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতাও মুশরিক ছিলেন। তখন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন- আহ! অতঃপর নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। কিছুণ পর মাথা উত্তোলন করে বললেন- আমি কি তার জিহবা কেটে ফেলব?। আমি কি তার হাত পা কেটে ফেলব? আমি কি তার গর্দান উড়িয়ে দেব? অতঃপর বললেন- আমি তোমাকে এ পদে রাখার মত আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
ইমাম সুয়ুতির কবিতা
========
ইমাম সুয়ুতি বলেন- আমাকে অনুরোধ করা হয়েছে যেন উক্ত মাসআলার উপর কিছু কবিতা রচনা করি এবং এর মাধ্যমে আমার আলোচনা সমাপ্ত করি। তাই আমি লিখেছি।
কবিতার অনুবাদ
=======
নিশ্চয় যিনি নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেছেন, তিনি তাঁর মাধ্যমে মানব ও জ্বীন জাতিকে পরিত্রান দিয়েছেন। তাঁর পিতা ও মাতা সম্পর্কে আহলে ইলমগণ তাদের কিতাবাদীতে সুস্পষ্ট বর্ণনা করে গেছেন। অতএব একটি জামাত তাদেরকে ঐ দলে রেখেছেন যাদের কাছে কোন আহবানকারীর সংবাদ পৌঁছেনি। সুতরাং যাদের নিকট কোন আহ্বানকারী আগমন করেনি তাদের হুকুম হলো তাদের কোন আযাব নাই। শাফেয়ী মাযহাবের সমস্ত উলামাগণ এ মতকে গ্রহণ করেছেন এবং আশআরীগণও এ মতকে সমর্থন করেছেন।
সূরা ইসরার মধ্যে এ ব্যাপারে হুজ্জত বা দলিল রয়েছে। অনুরূপ হাদিসের মধ্যেও স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। কোন কোন আহলে ফিকহগণ এর ব্যাখ্যায় বলেছেন ইহা একটি অতীব সুক্ষ ও মৌলিক বিষয়। তাদের মধ্যে ইমাম ফখরুদ্দিন রাযী অন্যতম। তিনি চমৎকার ভাষায় শ্রুতাদের জন্য ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর পিতৃপুরুষ প্রত্যেকেই ছিলেন ফিতরাতের উপর বিশ্বাসী। তাদের প থেকে কোন শত্রুতা বা কুফুরি প্রকাশ পায়নি। প্রাথমিক উলামাগণ বলেছেন নবী মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পূর্বপুরুষগণ সবাই তাওহীদের উপর বিশ্বাসী হানিফ সম্প্রদায় ছিলেন। আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ পর্যন্ত কেউ মুশরিক কিংবা নাস্তিক ছিলেন না।
যেমন সূরা তাওবায় রয়েছে মুশরিকগণ হলেন অপবিত্র। অতএব তারা প্রত্যেকেই ছিলেন পবিত্রতার গুণে গুণান্বিত।
সূরা শুরাতে রয়েছে- ‘তাকাল্লুবাকা ফিস সাজিদীন’ অতএব তারা প্রত্যেকেই ছিলেন হানিফ বা একনিষ্ট।
ইহা হচ্ছে শেখ ফখরুদ্দিন রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বক্তব্য। তিনি তাঁর আসরার গ্রন্থে ইহা বর্ণনা করেছেন। তাঁর উপর রহমত বর্ষিত হোক। অবশেষে অধিপতি তাকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন। তাকে যেন আল্লাহ জান্নাতুন নাঈম নসিব করেন।
অতএব জাহিলিয়াতের যুগে এমন কিছু লোক বিদ্যমান ছিলেন, তারা সঠিক দ্বীন ও হিদায়তের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। যায়দ বিন আমর এবং ইবনুল নওফেল তাদের অন্যতম।
এমনিভাবে আবু বকর সিদ্দিক। তিনিও কখনো শিরক করেননি। ইমাম সুবুকি তার বক্তব্যে এভাবে তাফসির করেছেন। আশআরীসহ অন্যান্য ইমামগণ ইহা গ্রহণ করেছেন। যখন সন্তুষ্টির চক্ষু সদা সর্বদা সিদ্দিকের প্রতি অবধারিত। এবং তিনি দীর্ঘ হায়াত পর্যন্ত সত্যনিষ্ট ছিলেন। তিনি হিদায়ত দানকারী নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সোহবতে এসেছেন। সুতরাং জাহিলিয়াত যুগে তিনি ভ্রান্ত পথে ছিলেন না। এবং আমিনা রাদিয়াল্লাহু আনহা দেখেছিলেন অসংখ্য কুদরত যা বর্ণনাতীত। অন্য একটি জামাতের মত হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতা মাতাকে পূণর্জীবন করা হয়েছে। অতঃপর তারা ঈমান আনয়ন করেছেন। ইবনে শাহীন এ ব্যাপারে সনদসহ একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। যদিও হাদিসটি জয়িফ পর্যায়ের।
উল্লেখিত মসলকগুলি থেকে যে কোন একটি মসলক অনুসরণ করলেই যথেষ্ট। সুতরাং কিভাবে ইহা অস্বীকার করবে। যদি কেউ এ গুলোতে সন্তুষ্ট না হয় তবে তার জন্য চুপ থাকাটাই আদব। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ইনসাফ কোথায়? আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি সালাত প্রেরণ করেন। তিনি সত্য ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে আরো একটি হাদিস
========
ইমাম বায়হাকী শুয়াবুল ঈমান গ্রন্থে বলেছেন আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন আবুল হোসাইন বিন বাশরান, তিনি আবু জাফর বাযযার থেকে, তিনি ইয়াহইয়া বিন জাফর থেকে, তিনি যায়দ বিন হাব্বাব থেকে, তিনি ইয়াসিন বিন মায়াজ থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ বিন কাবিদ থেকে, তিনি তলক বিন আলী থেকে, তিনি বলেন আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لو ادركت والدى او احدهما وانا فى صلاة العشاء- وقد قرأت فيها بفاتحة الكتاب تنادى يا محمد لاجبتها لبيك-
অর্থ: যদি আমার পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে পেতাম এমতাবস্থায় আমি ইশার নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠে রত। তখন যদি হে মুহাম্মদ বলে ডাকতেন তাহলে আমি লাব্বাইক বলে জবাব দিতাম। ইমাম বায়হাকী বলেন- উক্ত হাদিসের সনদে ইয়াসিন বিন মায়ায জয়িফ।
ফায়দা-১
====
আযরুকী ‘তারিখে মক্কাহ’ গ্রন্থে বলেছেন- আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন মুহাম্মদ বিন ইয়াহইয়া, তিনি আব্দুল আযিয বিন ইমরান থেকে, তিনি হিশাম বিন আসিম আল আসলামী থেকে তিনি বলেন- কুরাইশগণ যখন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরোদ্ধে উহুদ যুদ্ধে বের হল, তখন তারা আবওয়া নামক স্থানে অবস্থান করল। তখন হিন্দা বিনতে উতবা আবু সুফিয়ান বিন হারবকে বলল- যদি তোমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জননী আমিনা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর কবর অন্বেষন করতে। কারণ ইহা আবওয়াতেই রয়েছে। তাহলে যদি তোমাদের কেউ বন্দি হয় তবে এর বিনিময়ে তোমরা তাকেসহ সমস্ত মানুষকে মুক্ত করতে পারবে। আবু সুফিয়ান ব্যাপারটি কুরাইশদেরকে বলল। তখন তারা বলল, আমাদের জন্য এ দরজাটি মুক্ত কর না। তাহলে বনু বকর গোত্র আমাদের মৃতদেরকে অন্বেষণ করবে।
ফায়দা-২
====
রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতা আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কয়েকটি পঙ্ক্তি, যা সালাহ সাফদী তাঁর ‘তাযকিরাহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন-
لقد حكم السارون فى كل بلدة – بأن لنا فضلا على سادة الارض
وان ابى ذو المجد والسؤدد الذى- يشاربه ما بين نشز الى خفض
وجد وأباء له اثلوا العلا - قديما بطيب العرق الحسب المحض
অর্থ: সারুন সকল দেশে এ নির্দেশ প্রদান করলেন যে, পৃথিবীর বুকে সবার উপরে আমাদের মর্যাদা।
আমার পিতা হচ্ছেন এমন সম্মানী ব্যক্তি, তিনি উঁচু নিচু সবার উপরে কর্তৃত্ব করেছেন।
আমার দাদা ও পূর্বপুরুষদের রয়েছে সুউচ্চ মর্যাদা। প্রাচীনকাল থেকেই তারা পবিত্র ও বিশুদ্ধ বংশের অধিকারী।
ফায়দা-৩
====
ইমাম মুত্তাফিক উদ্দিন বিন কুদামাহ আল হাম্বলী المقنع গ্রন্থে বলেছেন-
ومن قذف ام النبى صلى الله عليه وسلم قتل مسلما كان او كافرا
অর্থ: যে ব্যক্তি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মায়ের প্রতি অপবাদ দিবে তাকে হত্যা করা হোক। হোক সে মুসলিম অথবা কাফির।