কোরআন শরীফ পড়া বা স্পর্শ করার দশটি আদব
(১) যার উপর গোসল ফরয তার জন্য মসজিদে প্রবেশ করা, তাওয়াফ করা, কোরআন শরীফ স্পর্শ করা, কোরআন শরীফ স্পর্শ না করে এর কোন আয়াত বা সূরা মুখস্থ পড়া, কোরআন শরীফের কোন আয়াত লিখা, আয়াতের তাবিজ লিখা (এটা ঐ অবস্থায় হারাম যখন কাগজ স্পর্শ করা পাওয়া যাবে। যাতে আয়াতে কোরআন আছে আর যদি কাগজ স্পর্শ না করে লিখে তাহলে জায়েয) (অপ্রকাশিত ফতোওয়ায়ে আহলে সুন্নাত) এমন তাবিজ স্পর্শ করা, এমন আংটি স্পর্শ করা বা পরিধান করা যাতে কোরআন শরীফের আয়াত বা হুরুফে মুকাত্তিয়াত লিখিত আছে সম্পূর্ণরূপে হারাম। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩২৬ পৃষ্ঠা) (মোম দ্বারা জামানো, প্ল্যাস্টিক দ্বারা মোড়ানো কাপড় বা চামড়াতে সেলাই করা তাবিজ স্পর্শ করলে বা গাঁয়ে দিলে কোন অসুবিধা নেই।)
(২) যদি কোরআন শরীফ জুজদানের (গিলাফ) মধ্যে থাকে, তাহলে অযু বা গোসল বিহীন অবস্থায় জুজদান স্পর্শ করলে কোন অসুবিধা নেই। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩২৬ পৃষ্ঠা)
(৩) অনুরূপভাবে অযু বা গোসলবিহীন অবস্থায় এমন কাপড় বা রুমাল দ্বারাও কোরআন শরীফ স্পর্শ করা জায়েয যা নিজের বা কোরআন শরীফের অধীনে নয়। (প্রাগুক্ত)
(৪) জামার আস্তিন, (ওড়না, শাড়ি) আঁচল ইত্যাদি দ্বারা এমন কি চাদরের এক পার্শ্ব কাঁধের উপর রেখে অন্য পার্শ্ব দ্বারাও কোরআন শরীফ স্পর্শ করা হারাম। কেননা, এ সমস্ত কাপড় পরিধানকারীর অধীনস্থ। (প্রাগুক্ত)
(৫) দোয়ার নিয়্যতে বা বরকত লাভের উদ্দেশ্যে কোরআন শরীফের কোন আয়াত অযু বা গোসলবিহীন অবস্থায় পাঠ করলে কোন অসুবিধা নেই। যেমন দোয়া বা বরকতের লাভের উদ্দেশ্যে بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحيْمِ পড়লে বা শোকরিয়া জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ পড়লে বা কোন মুসলমানের মৃত্যুর সংবাদ বা কোন দুঃখজনক সংবাদ শুনে اِنَّا لِلّٰهِ وَ اِنَّاۤ اِلَيْهِ رٰجِعُوْنَ পড়লে বা প্রশংসার নিয়্যতে সম্পূর্ণ সূরা ফাতিহা বা আয়াতুল কুরসী বা সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করলে এবং ঐগুলো পাঠ করার মধ্যে কোরআন তিলাওয়াতের নিয়্যত না থাকলে অযু বা গোসলবিহীন অবস্থায় পাঠ করাতে কোন অসুবিধা নেই। (প্রাগুক্ত)
(৬) প্রশংসার নিয়্যতে ‘قُلْ’ শব্দ ব্যতীত তিন قُلْ অর্থাৎ সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করা যাবে। কিন্তু ‘قُلْ’ শব্দ সহ প্রশংসার নিয়তেও ঐ তিনটি সুরা পাঠ করা যাবে না। কেননা, তখন তা কোরআনের আয়াত হিসেবে বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে নিয়্যত কার্যকর হবে না। (প্রাগুক্ত)
(৭) অযু বিহীন কোরআন শরীফ বা কোরআন শরীফের কোন আয়াত স্পর্শ করা হারাম। তবে কোরআন শরীফ স্পর্শ না করে মুখস্থ বা দেখে দেখে পড়াতে কোন অসুবিধা নেই। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩২৬ পৃষ্ঠা)
(৮) যে পাত্র বা বাটিতে কোরআন শরীফের কোন আয়াত বা সূরা লিখিত আছে, তা অযু ও গোসলবিহীন অবস্থায় স্পর্শ করা হারাম। (প্রাগুক্ত)
(৯) কোরআন শরীফের সূরা বা আয়াত লিখিত পাত্র বা বাটি ব্যবহার করা সকলের জন্য মাকরূহ তবে বিশেষ করে আরোগ্য লাভের নিয়্যতে তাতে পানি নিয়ে পান করলে কোন অসুবিধা নেই।
(১০) ফার্সী, উর্দূ, বাংলা বা যে কোন ভাষাতেই কোরআন শরীফ অনুবাদ হোক না কেন, কোরআন শরীফের সে অনুবাদও পড়া ও স্পর্শ করার হুকুম কোরআন শরীফের হুকুমেরই অনুরূপ। অর্থাৎ তাও বিনা অযু ও বিনা গোসলে স্পর্শ ও পড়া যাবে না। (প্রাগুক্ত)
অযু ছাড়া ধর্মীয় কিতাবাদি স্পর্শ করা
অযুবিহীন কিংবা যার উপর গোসল ফরয হয়েছে তার জন্য ফিকাহ, তাফসীর ও হাদীসের কিতাবাদি স্পর্শ করা মাকরূহ। তবে যদি সে সমস্ত কিতাবাদি কোন কাপড় দ্বারা যদিও তা পরিহিত বা মাথা বা কাঁধে জড়ানো হোক না কেন, স্পর্শ করা হয় তাহলে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু সে সমস্ত কিতাবে কোরআন শরীফের আয়াত বা আয়াতের অনুবাদ থাকলে তা হাতে স্পর্শ করা হারাম। (প্রাগুক্ত)
বিনা অযুতে ইসলামী বই, রিসালা, সংবাদপত্র ইত্যাদি পড়া ও স্পর্শ করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা অপরিহার্য। কেননা, তাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোরআন শরীফের আয়াত বা আয়াতের তরজমা (অনুবাদ) বিদ্যমান থাকে।
অপবিত্র অবস্থায় দরূদ শরীফ পাঠ করা
যার উপর গোসল ফরয হয়েছে তার জন্য দরূদ শরীফ, দোয়া ইত্যাদি পড়াতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু সর্বোত্তম হলো, অযু বা কুলি করে পড়া। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩২৭পৃষ্ঠা) আযানের জবাব দেয়াও তার জন্য জায়িয। (ফতোওয়ায়ে আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৩৮ পৃষ্ঠা)
আঙ্গুলে কালির (INK) দাগ জমে থাকলে তখন?
রান্নাকারীর নখে আটা, লিখকের নখে কালির দাগ এবং সর্ব সাধারনের গায়ে মশা-মাছির বিষ্টা লেগে থাকলে এবং গোসল করার সময় তা দৃষ্টি গোচর না হলে গোসল হয়ে যাবে। তবে দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর তা পরিস্কার করে নেয়া এবং সে স্থান ধৌত করে নেয়া আবশ্যক। আর ঐগুলো বিদ্যমান থাকা অবস্থায় যে নামায আদায় করা হয়েছিল তা শুদ্ধ হয়ে যাবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩১৯ পৃষ্ঠা)
ছেলেমেয়ে কখন বালিগ (প্রাপ্ত বয়স্ক) হয়?
ছেলের ১২ বছর আর মেয়ের ৯ বছরের কম বয়স পর্যন্ত কখনো বালিগ বালিগা (প্রাপ্ত বয়স্ক) হয় না এবং ছেলে মেয়ে উভয়েই হিজরী সন অনুসারে পরিপূর্ণ ১৫ বছরে অবশ্যই শরয়ী বালিগ বালিগা। যদিও বালিগ হওয়ার নিদর্শন প্রকাশ না পায়। এই বয়সের মধ্যে যদি নিদর্শন পাওয়া যায়, অর্থাৎ ছেলে বা মেয়ের ঘুমন্ত বা জাগ্রত অবস্থায় বীর্যপাত (অর্থাৎ মনি বের হয়) বা মেয়ের হায়েজ (ঋতুস্রাব) হয়। অথবা সহবাসের মাধ্যমে ছেলে মেয়েকে গর্ভবতী করে দিলো। অথবা সহবাসের কারণে মেয়ে গর্ভবতী হয়ে গেলো। তাহলে নিঃসন্দেহে তারা বালিগ বালিগা এবং যদি নিদর্শন না থাকে, কিন্তু তারা নিজেরাই বলছে আমরা বালিগ বালিগা এবং বাহ্যিক ভাবে তাদের কথা মিথ্যা প্রতিপন্ন করা যাচ্ছে না। তখনো তাদেরকে বালিগ বালিগা হিসেবে গন্য করা হবে এবং প্রাপ্ত বয়ষ্কের সমস্ত হুকুম আহকাম তাদের উপর প্রয়োগ হবে। আর ছেলের দাঁড়ি গোফ বা মেয়ের স্তন বৃদ্ধি হোক বা না হোক কোন কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১৯তম খন্ড, ৬৩০ পৃষ্ঠা)
কিতাবাদি রাখার নিয়ম
(১) সবার উপরে কোরআন শরীফ রাখতে হবে, এর নিচে তাফসীর, এর নিচে হাদীস, এর নিচে ফিকাহ, এর নিচে অন্যান্য ইসলামী বই রাখতে হবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩২৭ পৃষ্ঠা)
(২) কিতাবের উপর অন্য কোন জিনিস এমন কি কলমও রাখা যাবে না, বরং যে সিন্দুক বা আলমারিতে কিতাব রাখা হয়েছে তার উপরেও কিছু রাখা যাবে না। (প্রাগুক্ত, ৩২৮ পৃষ্ঠা)
ধর্মীয় বইয়ের পাতা দিয়ে ঠোঙা বানানো
(১) মাসয়ালার বা ধর্মীয় বইয়ের পাতা দিয়ে ঠোঙা বানানো, যে দস্তরখানা বা বিছানাতে কোন পংক্তি ইত্যাদি লিখা থাকে তা ব্যবহার করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩২৮ পৃষ্ঠা)
(২) প্রত্যেক ভাষার বর্ণমালার প্রতি আদব রক্ষা করা উচিত। (বিস্তারিত জানার জন্য ফয়যানে সুন্নাতের ‘ফয়যানে বিসমিল্লাহ’ অধ্যায়টি ভালভাবে পড়ে নিন)
(৩) জায়নামাযের কোণায় সচরাচর কোম্পানীর নামের চিট (কাপড়ের টুকরো) সেলাই করা থাকে। তা ছিড়ে ফেলে দিন।
জায়নামাযে কা’বা শরীফের ছবি
যে সমস্ত জায়নামাযে পবিত্র কা’বা শরীফের বা সবুজ গুম্বজের নকশা অংকিত থাকে, সে সমস্ত জায়নামাযে নামায পড়লে পবিত্র নকশাতে পা বা হাঁটু পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই নামাযে এরূপ নকশাযুক্ত জায়নামায ব্যবহার করা উচিত নয়। (ফতোওয়ায়ে আহলে সুন্নাত)
কুমন্ত্রণার একটি কারণ
গোসলখানাতে প্রস্রাব করলে মনে ওয়াসওয়াসার (কুমন্ত্রণার) সৃষ্টি হয়। হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ বিন মুগাফ্ফাল رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ হতে বর্ণিত: “রাসূলে আকরাম, নূরে মুজাস্সাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم গোসলখানাতে প্রস্রাব করা থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি আরো বলেন: এতে সচরাচর মনে ওয়াসওয়াসার (কুমন্ত্রণার) সৃষ্টি হয়।” (সুনানে আবু দাউদ, ১ম খন্ড, ৪৪ পৃষ্ঠা, হাদীস-২৭)
(১) যার উপর গোসল ফরয তার জন্য মসজিদে প্রবেশ করা, তাওয়াফ করা, কোরআন শরীফ স্পর্শ করা, কোরআন শরীফ স্পর্শ না করে এর কোন আয়াত বা সূরা মুখস্থ পড়া, কোরআন শরীফের কোন আয়াত লিখা, আয়াতের তাবিজ লিখা (এটা ঐ অবস্থায় হারাম যখন কাগজ স্পর্শ করা পাওয়া যাবে। যাতে আয়াতে কোরআন আছে আর যদি কাগজ স্পর্শ না করে লিখে তাহলে জায়েয) (অপ্রকাশিত ফতোওয়ায়ে আহলে সুন্নাত) এমন তাবিজ স্পর্শ করা, এমন আংটি স্পর্শ করা বা পরিধান করা যাতে কোরআন শরীফের আয়াত বা হুরুফে মুকাত্তিয়াত লিখিত আছে সম্পূর্ণরূপে হারাম। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩২৬ পৃষ্ঠা) (মোম দ্বারা জামানো, প্ল্যাস্টিক দ্বারা মোড়ানো কাপড় বা চামড়াতে সেলাই করা তাবিজ স্পর্শ করলে বা গাঁয়ে দিলে কোন অসুবিধা নেই।)
(২) যদি কোরআন শরীফ জুজদানের (গিলাফ) মধ্যে থাকে, তাহলে অযু বা গোসল বিহীন অবস্থায় জুজদান স্পর্শ করলে কোন অসুবিধা নেই। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩২৬ পৃষ্ঠা)
(৩) অনুরূপভাবে অযু বা গোসলবিহীন অবস্থায় এমন কাপড় বা রুমাল দ্বারাও কোরআন শরীফ স্পর্শ করা জায়েয যা নিজের বা কোরআন শরীফের অধীনে নয়। (প্রাগুক্ত)
(৪) জামার আস্তিন, (ওড়না, শাড়ি) আঁচল ইত্যাদি দ্বারা এমন কি চাদরের এক পার্শ্ব কাঁধের উপর রেখে অন্য পার্শ্ব দ্বারাও কোরআন শরীফ স্পর্শ করা হারাম। কেননা, এ সমস্ত কাপড় পরিধানকারীর অধীনস্থ। (প্রাগুক্ত)
(৫) দোয়ার নিয়্যতে বা বরকত লাভের উদ্দেশ্যে কোরআন শরীফের কোন আয়াত অযু বা গোসলবিহীন অবস্থায় পাঠ করলে কোন অসুবিধা নেই। যেমন দোয়া বা বরকতের লাভের উদ্দেশ্যে بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحيْمِ পড়লে বা শোকরিয়া জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ পড়লে বা কোন মুসলমানের মৃত্যুর সংবাদ বা কোন দুঃখজনক সংবাদ শুনে اِنَّا لِلّٰهِ وَ اِنَّاۤ اِلَيْهِ رٰجِعُوْنَ পড়লে বা প্রশংসার নিয়্যতে সম্পূর্ণ সূরা ফাতিহা বা আয়াতুল কুরসী বা সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করলে এবং ঐগুলো পাঠ করার মধ্যে কোরআন তিলাওয়াতের নিয়্যত না থাকলে অযু বা গোসলবিহীন অবস্থায় পাঠ করাতে কোন অসুবিধা নেই। (প্রাগুক্ত)
(৬) প্রশংসার নিয়্যতে ‘قُلْ’ শব্দ ব্যতীত তিন قُلْ অর্থাৎ সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করা যাবে। কিন্তু ‘قُلْ’ শব্দ সহ প্রশংসার নিয়তেও ঐ তিনটি সুরা পাঠ করা যাবে না। কেননা, তখন তা কোরআনের আয়াত হিসেবে বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে নিয়্যত কার্যকর হবে না। (প্রাগুক্ত)
(৭) অযু বিহীন কোরআন শরীফ বা কোরআন শরীফের কোন আয়াত স্পর্শ করা হারাম। তবে কোরআন শরীফ স্পর্শ না করে মুখস্থ বা দেখে দেখে পড়াতে কোন অসুবিধা নেই। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩২৬ পৃষ্ঠা)
(৮) যে পাত্র বা বাটিতে কোরআন শরীফের কোন আয়াত বা সূরা লিখিত আছে, তা অযু ও গোসলবিহীন অবস্থায় স্পর্শ করা হারাম। (প্রাগুক্ত)
(৯) কোরআন শরীফের সূরা বা আয়াত লিখিত পাত্র বা বাটি ব্যবহার করা সকলের জন্য মাকরূহ তবে বিশেষ করে আরোগ্য লাভের নিয়্যতে তাতে পানি নিয়ে পান করলে কোন অসুবিধা নেই।
(১০) ফার্সী, উর্দূ, বাংলা বা যে কোন ভাষাতেই কোরআন শরীফ অনুবাদ হোক না কেন, কোরআন শরীফের সে অনুবাদও পড়া ও স্পর্শ করার হুকুম কোরআন শরীফের হুকুমেরই অনুরূপ। অর্থাৎ তাও বিনা অযু ও বিনা গোসলে স্পর্শ ও পড়া যাবে না। (প্রাগুক্ত)
অযু ছাড়া ধর্মীয় কিতাবাদি স্পর্শ করা
অযুবিহীন কিংবা যার উপর গোসল ফরয হয়েছে তার জন্য ফিকাহ, তাফসীর ও হাদীসের কিতাবাদি স্পর্শ করা মাকরূহ। তবে যদি সে সমস্ত কিতাবাদি কোন কাপড় দ্বারা যদিও তা পরিহিত বা মাথা বা কাঁধে জড়ানো হোক না কেন, স্পর্শ করা হয় তাহলে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু সে সমস্ত কিতাবে কোরআন শরীফের আয়াত বা আয়াতের অনুবাদ থাকলে তা হাতে স্পর্শ করা হারাম। (প্রাগুক্ত)
বিনা অযুতে ইসলামী বই, রিসালা, সংবাদপত্র ইত্যাদি পড়া ও স্পর্শ করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা অপরিহার্য। কেননা, তাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোরআন শরীফের আয়াত বা আয়াতের তরজমা (অনুবাদ) বিদ্যমান থাকে।
অপবিত্র অবস্থায় দরূদ শরীফ পাঠ করা
যার উপর গোসল ফরয হয়েছে তার জন্য দরূদ শরীফ, দোয়া ইত্যাদি পড়াতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু সর্বোত্তম হলো, অযু বা কুলি করে পড়া। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩২৭পৃষ্ঠা) আযানের জবাব দেয়াও তার জন্য জায়িয। (ফতোওয়ায়ে আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৩৮ পৃষ্ঠা)
আঙ্গুলে কালির (INK) দাগ জমে থাকলে তখন?
রান্নাকারীর নখে আটা, লিখকের নখে কালির দাগ এবং সর্ব সাধারনের গায়ে মশা-মাছির বিষ্টা লেগে থাকলে এবং গোসল করার সময় তা দৃষ্টি গোচর না হলে গোসল হয়ে যাবে। তবে দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর তা পরিস্কার করে নেয়া এবং সে স্থান ধৌত করে নেয়া আবশ্যক। আর ঐগুলো বিদ্যমান থাকা অবস্থায় যে নামায আদায় করা হয়েছিল তা শুদ্ধ হয়ে যাবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩১৯ পৃষ্ঠা)
ছেলেমেয়ে কখন বালিগ (প্রাপ্ত বয়স্ক) হয়?
ছেলের ১২ বছর আর মেয়ের ৯ বছরের কম বয়স পর্যন্ত কখনো বালিগ বালিগা (প্রাপ্ত বয়স্ক) হয় না এবং ছেলে মেয়ে উভয়েই হিজরী সন অনুসারে পরিপূর্ণ ১৫ বছরে অবশ্যই শরয়ী বালিগ বালিগা। যদিও বালিগ হওয়ার নিদর্শন প্রকাশ না পায়। এই বয়সের মধ্যে যদি নিদর্শন পাওয়া যায়, অর্থাৎ ছেলে বা মেয়ের ঘুমন্ত বা জাগ্রত অবস্থায় বীর্যপাত (অর্থাৎ মনি বের হয়) বা মেয়ের হায়েজ (ঋতুস্রাব) হয়। অথবা সহবাসের মাধ্যমে ছেলে মেয়েকে গর্ভবতী করে দিলো। অথবা সহবাসের কারণে মেয়ে গর্ভবতী হয়ে গেলো। তাহলে নিঃসন্দেহে তারা বালিগ বালিগা এবং যদি নিদর্শন না থাকে, কিন্তু তারা নিজেরাই বলছে আমরা বালিগ বালিগা এবং বাহ্যিক ভাবে তাদের কথা মিথ্যা প্রতিপন্ন করা যাচ্ছে না। তখনো তাদেরকে বালিগ বালিগা হিসেবে গন্য করা হবে এবং প্রাপ্ত বয়ষ্কের সমস্ত হুকুম আহকাম তাদের উপর প্রয়োগ হবে। আর ছেলের দাঁড়ি গোফ বা মেয়ের স্তন বৃদ্ধি হোক বা না হোক কোন কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১৯তম খন্ড, ৬৩০ পৃষ্ঠা)
কিতাবাদি রাখার নিয়ম
(১) সবার উপরে কোরআন শরীফ রাখতে হবে, এর নিচে তাফসীর, এর নিচে হাদীস, এর নিচে ফিকাহ, এর নিচে অন্যান্য ইসলামী বই রাখতে হবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩২৭ পৃষ্ঠা)
(২) কিতাবের উপর অন্য কোন জিনিস এমন কি কলমও রাখা যাবে না, বরং যে সিন্দুক বা আলমারিতে কিতাব রাখা হয়েছে তার উপরেও কিছু রাখা যাবে না। (প্রাগুক্ত, ৩২৮ পৃষ্ঠা)
ধর্মীয় বইয়ের পাতা দিয়ে ঠোঙা বানানো
(১) মাসয়ালার বা ধর্মীয় বইয়ের পাতা দিয়ে ঠোঙা বানানো, যে দস্তরখানা বা বিছানাতে কোন পংক্তি ইত্যাদি লিখা থাকে তা ব্যবহার করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩২৮ পৃষ্ঠা)
(২) প্রত্যেক ভাষার বর্ণমালার প্রতি আদব রক্ষা করা উচিত। (বিস্তারিত জানার জন্য ফয়যানে সুন্নাতের ‘ফয়যানে বিসমিল্লাহ’ অধ্যায়টি ভালভাবে পড়ে নিন)
(৩) জায়নামাযের কোণায় সচরাচর কোম্পানীর নামের চিট (কাপড়ের টুকরো) সেলাই করা থাকে। তা ছিড়ে ফেলে দিন।
জায়নামাযে কা’বা শরীফের ছবি
যে সমস্ত জায়নামাযে পবিত্র কা’বা শরীফের বা সবুজ গুম্বজের নকশা অংকিত থাকে, সে সমস্ত জায়নামাযে নামায পড়লে পবিত্র নকশাতে পা বা হাঁটু পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই নামাযে এরূপ নকশাযুক্ত জায়নামায ব্যবহার করা উচিত নয়। (ফতোওয়ায়ে আহলে সুন্নাত)
কুমন্ত্রণার একটি কারণ
গোসলখানাতে প্রস্রাব করলে মনে ওয়াসওয়াসার (কুমন্ত্রণার) সৃষ্টি হয়। হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ বিন মুগাফ্ফাল رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ হতে বর্ণিত: “রাসূলে আকরাম, নূরে মুজাস্সাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم গোসলখানাতে প্রস্রাব করা থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি আরো বলেন: এতে সচরাচর মনে ওয়াসওয়াসার (কুমন্ত্রণার) সৃষ্টি হয়।” (সুনানে আবু দাউদ, ১ম খন্ড, ৪৪ পৃষ্ঠা, হাদীস-২৭)