ইবাদতের বিনিময়সংক্রান্ত শরিয়তের নীতিমালা :
ইবাদতের বিনিময় গ্রহণসংক্রান্ত শরিয়তের
নীতিমালা হলো নিরেট ইবাদত তথা ইবাদতে মকসুদা যেমন- নামাজ, রোজা, ইতিকাফ
ইত্যাদির ক্ষেত্রে বিনিময় গ্রহণ করা সম্পূর্ণ হারাম।
ইসলামের শুরু থেকে যত দিন ইসলামী খেলাফত
অবশিষ্ট ছিল, তত দিন এই নীতি বহাল ছিল। ইমামগণ ইমামতি করে বিনিময় গ্রহণ করতেন না। কোরআন শিক্ষা দিয়ে বিনিময় নিতেন না।
রাষ্ট্রীয়ভাবে এসবের ব্যবস্থা করা হতো। ইসলামী খেলাফত বিলুপ্তির পর রাষ্ট্রীয়ভাবে শরিয়তের বাধ্যতামূলক ইবাদতগুলোর ব্যবস্থাপনা না থাকায় পরবর্তী ফুকাহাগণ শরিয়তের প্রয়োজনে ইমাম, মুয়াজজিন, কোরআন শিক্ষার মুয়াল্লিমদের বিনিময় গ্রহণে ছাড় দেন। অর্থাৎ এগুলোর ক্ষেত্রে ডক্ট্রিন অব নেসেসিটির ভিত্তিতে বৈধতা প্রদান করেন।এবার আসা যাক তারাবির বিষয়ে। শরিয়ত মতে, তারাবির নামাজ বাধ্যতামূলক হলেও
তারাবিতে খতমে কোরআন বাধ্যতামূলক নয় বিধায় তারাবিতে খতমে কোরআনের বিনিময় এই বৈধতার আওতায় পড়ে না।

♦তারাবিতে কোরআন খতমের বিনিময়ে হাদিয়া দান ও গ্রহণের হুকুম :
ওই নীতিমালার ভিত্তিতে খতম তারাবিতে হাফেজদের বিনিময় বা হাদিয়া দেওয়া-
নেওয়া মুসলিম উম্মাহর ফকিহ, মুহাদ্দিসগণ ঐকমত্যের ভিত্তিতে নাজায়েজ বলেছেন।
এতে না কোনো মাজহাবের মতবিরোধ আছে,
না পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ফকিহগণের মাঝে কোনো মতভেদ আছে। ইমামতির জন্য বেতন ঠিক
করা এবং তা আদায় করা যদিও পরবর্তী ফকিহগণের দৃষ্টিতে জায়েজ; কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো ফকিহ খতমে তারাবির বিনিময় বা হাদিয়া নেওয়া-দেওয়ার অনুমতি দেননি।
সুতরাং খতমে তারাবির বিনিময় দেওয়া-নেওয়া উভয়ই নাজায়েজ ও হারাম। হাদিয়া হিসেবে দিলেও
জায়েজ হবে না। এক মাসের জন্য নিয়োগ দিয়ে কয়েক ওয়াক্ত নামাজ পড়িয়ে বেতন হিসেবে দিলেও জায়েজ নয়। এটা যেভাবেই দেওয়া হোক, তা কোরআন খতমের বিনিময় হিসেবেই স্বীকৃত হবে। এতে কোনো প্রকার হিলা বা কৌশল করার অবকাশ নেই।
★(ফতোয়ায়ে শামী ৬/৫৭,
★আল-বাহরুর রায়েক ৮/২৩,
★মাজমাউল আনহুর ৩/৫৩৩,
★ফতওয়ায়ে হামিদিয়া ২/১৩৭-১৩৮,
★শিফাউল আলীল
★ওয়া বাল্লুল গালিল ১/১৫৪-১৫৫,
★আল ইখতিয়ার লিতালীল মুখতার ২/৬২)


♦পবিত্র কোরআন-সুন্নাহর আলোকে ফকিহদের মতামত :
এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর স্পষ্ট
বিধানাবলি এবং এর ভিত্তিতে ফকিহগণ কী মত
পোষণ করেন, তার প্রতিও সামান্য আলোকপাত
করা হলো-
* আবদুর রহমান ইবনে শিবল (রা.) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ -কে বলতে শুনেছি, তোমরা কোরআন পড়ো। তবে তাতে বাড়াবাড়ি করো না। এর প্রতি বিরূপ হয়ো না। কোরআনের বিনিময় ভক্ষণ করো না এবং এর
দ্বারা সম্পদ কামনা করো না।
★★(মুসনাদে আহমদ ৩/৪২৮,
হাদিস : ১৫৫২৯;
★★মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৫/২৪০)

♦ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তোমরা কোরআন পড়ো এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করো। তোমাদের পরে এমন জাতি আসবে, যারা কোরআন পড়ে মানুষের কাছে প্রার্থনা করবে। -★★(মুসনাদে আহমদ ৪/৪৩৭, হাদিস : ১৯৯১৭)

♦ আবদুল্লাহ ইবনে মা’কাল (রা.) থেকে বর্ণিত,
তিনি এক রমজানে লোকদের নিয়ে তারাবি পড়ালেন। এরপর ঈদের দিন উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ (রা.) তাঁর কাছে একজোড়া কাপড় এবং ৫০০ দিরহাম পাঠালেন। তখন তিনি কাপড় জোড়া এবং দিরহামগুলো এই বলে ফেরত দিলেন, আমরা কোরআনের বিনিময় গ্রহণ করি না।
★★(মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৫/২৩৭, হাদিস : ৭৮২১)

এরূপ আরো বহু হাদিস ও দলিল প্রমাণের
আলোকে উম্মতের ফকিহগণ তারাবিতে পবিত্র
কোরআন খতমের বিনিময়ে বা হাদিয়া দেওয়া-
নেওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম বলেছেন।
==========
তারাবি নামাজ পড়িয়ে, দ্বীনি ইলম শিক্ষা দিয়ে,
ইমামতি করে, আজান দিয়ে, ফতোয়া দিয়ে, ওয়াজ
মাহফিল করে, কোরআন খতম করে পারিশ্রমিক গ্রহণনকরা জায়েজ। এ ব্যাপারে অসংখ্য কিতাবের
নির্ভরযোগ্য দলিল রয়েছে। এর মধ্যে এখানে কিছু দলিল উপস্থাপন করা হলো।

♦ওলামায়ে মুতায়াখখেরিনের মতে_ আজান, একামত, ওয়াজ, শিক্ষকতা, হজ, জিহাদ, কোরআন ও ফিকহ শিক্ষা দিয়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা বৈধ।
(★★তাফসিরে হাক্কি, ৯ম খ-, ২৫৭ পৃষ্ঠা,
★★তাফসিরে রুহুল বায়ান, ৬ষ্ঠ খ-, ১৭০ পৃষ্ঠা)। ★★বাহরুর রায়েক, ১৩তম খ-, ৩৪৮ পৃষ্ঠা;
★★ রদ্দুল মুখতার, ১৫তম খ-, ৪৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে, ওলামায়ে মুতায়াখখেরিন ফতোয়া দিয়েছেন, আজান, ইমামতি, শিক্ষাদানের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েজ। হাশিয়াতু রদ্দিল মুখতার আলাদ দুররিল মুখতার ৪র্থ খন্ডে ২২১ পৃষ্ঠায় ফতোয়া এসেছে, ইবাদতের কাজের বিনিময় পারিশ্রমিক গ্রহণ করা বৈধ। ইমাম,মুফতি, ওয়ায়েজের জন্য হাদিয়া গ্রহণ করা বৈধ।
★★(রদ্দুল মুখতার, ২১তম খ-, ৩২১ পৃষ্ঠা)।

Top