যারা সব সময় বলে আমি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ ছাড়া আর কিছু মানি না এবার দেখব কে কে মানে? আর কে কে অমান্য করে?

,






‘সলাত নামাজ’ ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ। মুসলমান মাত্রই নামাজে বিশ্বাসী। মুসলমানের বড় একটা অংশ হচ্ছে আবেগপ্রবণ। ধর্মীয় বিষয়কে তারা অত্যন্ত শ্রদ্ধা করে।


@ Salat নামাজ (https://www.facebook.com/SalatPrayers) @ নামের যদি একটা পেইজ হয় তাহলে সাধারণ মুসলমান (যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ সম্পর্কে অজ্ঞ) অন্ধভক্তের মত তাদের শেয়ার করা সব কিছু বিশ্বাস করবে। এই শ্রেণীর লোক গুলো কখনো ঐরকম পেইজের বলা বা শেয়ার করা কোন তথ্যের সত্যমিথ্যা যাচাই করতে পারে না। সমাজে এই শ্রেণির লোক সংখ্যাই বেশি।


স্বল্প সংখ্যক কিছু অসাধু লোক সাধারণ মুসলমানের এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে।


আজ এ রকম একটা পেইজের কথা বলব,

বাংলার সালাফী, আহলে হাদিসদের দ্বারা পরিচালিত @ Salat নামাজ (https://www.facebook.com/SalatPrayers) @ পেইজ থেকে ২৬শে ফেব্রুয়ারি নিচের হাদীছ শরীফ শেয়ার করেছে,


///// যে ব্যক্তি জন্মদিন, মৃত্যুদিন, বিবাহ বার্ষিকী, কুলখানি বা কোনও দিবস পালন করেছে ততবার সে বিদআত করেছে। আমার সুপারিশ তার জন্য প্রযোজ্য নয়।

দলিল হিসেবে দেয়া হয়েছেঃ- বুখারী শরীফ- ২৬৯৭, মুসলিম শরীফ – ১৭১৮, মিশকাত শরীফ – ১৪০ /////

পোস্ট লিংকঃ- http://bit.ly/2FO96K6 , আর্কাইভ – http://archive.is/MfkwM


উপরের হাদীছ শরীফ পড়ে সাধারণ মানুষ সবাই মনে করছে ইসলামে জন্মদিন, মৃত্যুদিন, বিবাহ বার্ষিকী সহ যাবতীয় দিবস পালন ইসলামে জায়েজ নেই। যে এসব পালন করবে সে জান্নাতেই যেতে পারবে না !?! (নবীজী উনার সুপারিশ ব্যতীত কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না।)


উক্ত হাদীছ শরীফ এর কি আসলে কোন অস্তিত্ব আছে? চলুন দেখে যাক রেফারেন্স দেয়া উক্ত কিতাবে এমন হাদীছ শরীফ আছে কিনা? আমি সালাফী, আহলে হাদিসদের হাদীছ শরীফ ওয়েব সাইট থেকে রেফারেন্স দিচ্ছি। আপনাদের যাদের কাছে মূল কিতাব আছে তারা মূল কিতাব থেকেই দেখুন।


১। বুখারী শরীফ। (ইসলামি ফাউন্ডেশন) http://prntscr.com/irq65a

২। বুখারী (আহলে হাদিসদের) http://prntscr.com/irq778

৩। মুসলিম শরীফ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) http://prntscr.com/irq8ch

৪। মুসলিম শরীফ (হাঃ একাডেমী) http://prntscr.com/irq9c4

৫। মিশকাত শরীফ (http://prntscr.com/irqaao)


কি দেখতে পেলেন? কোথাও এমন কোন হাদীছ শরীফ এর বর্ণনা পাওয়া গেল না। পাবেন কিভাবে ? এটা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাদীছ শরীফ নয়। এই জাল, বানোয়াট হাদীছ শরীফ ‘আহলে হাদিস, সালাফী’দের নিজস্ব প্রডাক্ট। এর সাথে মুসলমানদের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। সম্পূর্ণই হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপরে মিথ্যে অপবাদ। (নাউযুবিল্লাহ!) এমনকি এই জাল হাদিস পবিত্র কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ খিলাফ, বিপরীত।


****


উক্ত জাল হাদীছে দাবী করা হয়েছে ইসলামে কোন দিবস পালন জায়েজ নেই। এই দাবী সম্পূর্ণই পবিত্র কুরআন শরীফ এর বিপরীত দাবী। কেননা বিশেষ দিবস সমূহ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,


وَذَكِّرْهُم بِأَيَّامِ اللَّهِ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ


>>> অর্থ: “আর তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার দিবসসমূহকে স্মরণ করিয়ে দিন। নিশ্চয়ই উক্ত দিবসসমূহের মধ্যে প্রত্যেক ধৈর্যশীল-শোকরগোযার বান্দাদের জন্যে নিদর্শনাবলী (নিয়ামত) রয়েছে।” [সূরা ইবরাহীম শরীফ, আয়াত শরীফ: ৫]


****


জন্মদিন পালন সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ থেকে দলিল দেখুন,


পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ হয়েছে-


>>> “আর শান্তি বর্ষিত হোক আমার উপরে যে দিন আমার জন্ম হয়েছিলো, আর যে দিন আমি ইন্তেকাল করবো । আর যে দিন আমাকে পুনরুত্থিত করা হবে জীবিত অবস্থায় । (পবিত্র সূরা মারইয়াম : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)


>>> “আমার প্রতি সালাম (অবারিত শান্তি) যেদিন আমি বিলাদতী শান (জন্মদিবস) প্রকাশ করি, যেদিন আমি বিছালী শান (দুনিয়া থেকে বিদায়) প্রকাশ করবো এবং যেদিন আমি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবো।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা মারইয়াম : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)


,


এবার পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে দেখুন,

হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেই জন্মদিন পালন করেছেন।


>> “হযরত আবূ ক্বতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার দিনে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি জওয়াবে বলেছিলেন, ইহা এমন একখানা দিন যে দিনে আমি দুনিয়ায় বিলাদতী শান (দুনিয়ায় আগমন) মুবারক প্রকাশ করেছি এবং এ দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত প্রকাশ করা হয়েছে তথা এ দিনে আমার উপর পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল শুরু হয়েছে।” (সহীহ মুসলিম – পরিচ্ছেদ: ইস্তিহবাবু ছিয়ামি ছালাছাতি আইয়ামিন মিন্ কুল্লি শাহরিন ওয়া ছাওমি ইয়াওমি আরাফাতা ওয়া আশূরা ওয়াল ইছনাঈন ওয়াল খমীছ- হাদীস নম্বর ১১৬১ // মুসলিম শরীফ ইসলামিক সেন্টারঃ নাম্বার – ২৬১৬)


রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার করা আমলকে বিদআত, কাফের মুশরিকদের অনুসরণ বলা লোক গুলো কি কুফরি করছে না ?? কোন সাহসে সুন্নত আমলকে বিদআত বলে ??


,


আজ ছিল পবিত্র জুমুয়া বার। এই দিনকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলা হয়। জুমুয়ার দিন ঈদ বা বিশেষ হওয়ার ৫টি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে ২টি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার এই দিনে দুনিয়ায় আগমন এবং বিদায় গ্রহণ।


>> ১.”তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছে, জুমুয়ার দিন। এদিনে আদম আলাইহিস সালাম পয়দা হয়েছেন এবং এদিনেই তিনি ওফাত বা ইন্তেকাল লাভ করেন! [সহীহ নাসায়ী শরীফ -জুমুয়ার অধ্যায়]


>> ২. “এ জুমুয়ার দিন হচ্ছে এমন একটি দিন, যেদিনকে আল্লাহ পাক ঈদের দিন সাব্যস্ত করেছেন!” [সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ; মুসনাদে আহমদ শরীফ; মিশকাত শরীফ – জুমুয়ার অধ্যায়]


****


জন্মদিন পালন করা বিদআত বা কাফের মুশরিকদের অনুসরণ দাবী করা সম্পূর্ণই পবিত্র কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ বিরোধী দাবী। এর সাথে ইসলামের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নাই।


তবে বেপর্দা হয়ে, গানবাজনা করে, কেক কেটে জন্মদিন পালন ইসলামে জায়েজ নাই। শুধু জন্মদিন নয় শরিহতের খিলাফ কিছু করে কোন কিছু করা ইসলামে জায়েজ নাই।


এই ‘সালাফী, আহলে হাদিস’রাই সারাদিন অমুকটা হাদিস জাল, তুমটা হাদিস জাল বলে বেড়ায়। (মূলত তাদের অজ্ঞতার কারণে বলে থাকে। বুখারী, মুসলিম শরীফের বাহিরে কোন হাদীছ শরীফের রেফারেন্স দিলেই জ্বাল বলে। ক্ষেত্রবিশেষ চিপায় পরলে এই কিতাবের হাদীছ শরীফও জাল বলে।)


তবে সবাই যে এদের মত ধোঁকাবাজদের ধোঁকায় পরে এমন নয়। কিছু অল্প সংখ্যক মানুষ আছেন যারা সব সময় সঠিক বিষয় খোঁজে। ঐ পোস্টের কমেন্ট বক্সে তেমন কিছু লোক দেখবেন। যারা সাথে সাথে হাদীছ শরীফ খুঁজে না পেয়ে কমেন্ট বক্সে বলে গেছে। কিন্তু পোষ্টদাতারা তাদের জাল, বানোয়াট হাদিস তথা ভ্রান্ত মতবাদের উপর অটল রয়েছে। এতদিনে নিজেদের ভুল স্বীকার করেনি। উক্ত পোস্ট রিমুভও করেনি।


মহান আল্লাহ পাক এই সমস্ত বিভ্রান্ত ছড়ানো লোকদের হিদায়াত দান করুন।



Top