জুমার খুতবা
******************
৪র্থ জুমা, রবিউল আখের ১৪৩৯ হি:January-2018
বিষয়:জুমার ফযীলত:
জুমার দিন বা শুক্রবার মুসলমানদের একটি সপ্তাহিক গুরুত্বপূর্ণ দিন। প্রতি সপ্তাহে এ দিন ঘুরে আসে আমাদের কাছে অনেক সুযোগের বাহন নিয়ে। আল্লাহ চান কোনো সুযোগে বান্দাকে যেন ক্ষমা করা যায়। আর আল্লাহর বান্দারাও চায় কোনো সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্রষ্টাকে রাযি ও খুশি করা যায়। জুমার দিন এমনি একটি সুযোগের দিন। যাতে অনেক নেক বা নৈকট্য অর্জন করা যায় অল্প সময়ে।
ইসলাম মুসলমানদের জুমআর দিন একতা ও পারস্পরিক সম্প্রীতির প্রতি আহবান করে। এ কারণেই জুমআর দিন মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন। তারা সেদিন আল্লাহর স্মরণ ও গুণকীর্তনে সচেষ্ট হয় এবং দুনিয়াবী কাজ-কর্ম ও ব্যস্ততা পরিত্যাগ করে আল্লাহ প্রদত্ত অপরিহার্য বিধান ফরয নামায আদায় করার জন্য এবং দিলকে ইসলামের আলোয় আলোকিত করার জন্য আল্লাহর ঘর মসজিদে জমায়েত হয়।
আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ইবাদাত হচ্ছে নামায। সপ্তাহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হচ্ছে জুমআর দিন, কারণ এ দিনে আল্লাহ তাআলা মানুষকে সবচেয়ে বেশি নিয়ামাত দান করেছেন এবং করে থাকেন। আর এ জন্যই আল্লাহ তাআলা এ দিনে মানুষের জন্য মর্যাদা সম্পন্ন একটি বিশেষ নামায দান করেছেন। যাকে আমরা জুমআর নামায হিসেবে জানি।
‘জুমা’ এর শাব্দিক বিশ্লেষণ: জুমা অর্থ সমাবেশ, সম্মেলন, একত্রিত হওয়া। আল্লার অপরূপ সৃষ্টি আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করার লক্ষে দেহের বিভিন্ন অংশ সংযোজিত বা জমা করা হয় এই দিনেই। তাই দিনটিকে জুমা নামে নাম করণ করা হয়। আর আল্লাহতায়ালা জগৎ সৃষ্টির পূর্ণতা দান করেছিলেন এই দিনে। এই দিনেই হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হাওয়া আলাইহাস সালামকে জান্নাতে একত্র করেছিলেন এবং এই দিনে মুসলিম উম্মাহ সাপ্তাহিক ঈদ ও ইবাদত উপলক্ষে মসজিদে একত্র হয় বলে দিনটাকে ‘ইয়াওমুল জুমাআ’ বা জুমার দিন বলা হয়। আইয়ামে জাহিলিয়াতে এ দিনকে ‘আরূবা’ বলা হত। জুমুআহ্ ইসলামী নাম।
এই দিনে হযরত আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনে তাঁকে জান্নাতে স্থান দেওয়া হয়েছে এবং এই দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে। এই দিনেই তাঁর তওবা কবুল করা হয় ও এই দিনেই তাঁর রূহ কবজ করা হয়। এই দিনে শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, এই দিনে কিয়ামত হবে। প্রত্যেক নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতা, আকাশ, পৃথিবী, বাতাস, পর্বত ও সমুদ্র এই দিনটিকে ভয় করে। প্রত্যেক সপ্তাহে জুমার দিন আল্লাহতায়ালা বেহেশতিদের দর্শন দেবেন।
অন্য মাসের তুলনায় রমজান মাসের মর্যাদা যেমন, সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় জুমাবারের মর্যাদা ঠিক তেমন। তাছাড়া রমজানের কদরের রাতে যেমনভাবে দোয়া কবুল হয়, ঠিক তেমনি শুক্রবারের সূর্যাস্তের পূর্বক্ষণেও দোয়া কবুল হয়। -(যাদুল মায়াদ: ১/৩৯৮) এই দিনটি ঈদের দিন।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنهما قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : إِنَّ هَذَا يَوْمُ عِيدٍ جَعَلَهُ اللَّهُ لِلْمُسْلِمِينَ، فَمَنْ جَاءَ إِلَى الْجُمُعَةِ فَلْيَغْتَسِلْ ، وَإِنْ كَانَ طِيبٌ فَلْيَمَسَّ مِنْهُ ، وَعَلَيْكُمْ بِالسِّوَاكِ
হযরত ইবনে সাব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে! আল্লাহতায়ালা এই দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য।’ (ইবনু মাযা-১০৯৮)
শুক্রবারের দিন যোহরের নামাযের পরিবর্তে জুমার নামাযকে ফরয করা হয়েছে। জুমার দুই রাকাত ফরয নামায ও ইমামের খুতবাকে যোহরের চার রাকাত ফরয নামাজের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। সপ্তাহের এদিনে জুমার খতিব উম্মতের যাবতীয় প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোরআন ও হাদিসের আলোকে নির্দেশনা ও সমাধানমূলক উপদেশ দেবেন তাঁর খুতবায়।
জুমার নামাজের সূচনা:
————————
প্রথম হিজরীতে হিজরতের পরপর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মদীনা আগমনের সাথে সাথে জুমা ফরয হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম জুমা পড়েছিলেন মদীনার কুবা মসজিদে ও মসজিদে নববীর মধ্যবর্তী ‘বনু সালেম ইবনে আউস’ গোত্রে (ইবনু শাইবা, তারীখুল মদীনা : ১/৬৮)। বর্তমানে এ জায়গায় নির্মিত মসজিদটির নাম ‘মসজিদে জুমা’। এরপর তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে জুমা আদায় শুরু করেন। (বুখারী : ৮৯২, ইফা ৮৪৮, আধুনিক ৮৪১)।
জুমা ও জোহরের মধ্যে পার্থক্য:
——————————–
জুমা ও জোহরের মধ্যে পাঁচটি পার্থক্য আছে- (১) জোহর সকল বিবেক সম্পন্ন মুমিন নর-নারীর উপর ফরজ, আর জুমা সকলের উপর ফরজ নয়; (২) জোহর হল মূল সালাত, আর জুমা হল জোহরের পরিবর্তে; (৩) জুমার কিরাত প্রকাশ্যে আর জোহরের কিরাত চুপে চুপে; (৪) জুমার ফরজ দুই রাকাত, আর জোহরের ফরজ চার রাকাত; (৫) জুমায় খুৎবা আছে কিন্তু জোহরে কোনো খুৎবা নেই।
জুমা যার উপর ফরয: হুঁশ-জ্ঞান সম্পন্ন ও স্বাধীন প্রত্যেক বালেগ মুসলমান পুরুষদের উপর জুমা ফরজ। এ বিষয়ে সারকথা হচ্ছে, যার মধ্যে নিম্নে বর্ণিত শর্তগুলো একযোগে পাওয়া যায় তার উপর জুমা ফরজ। ১. মুসলমান হওয়া (কারণ ইসলাম গ্রহণ ছাড়া কোনো ইবাদতই কবুল হয় না)। ২. বালেগ হওয়া (তবে নাবালেগ শিশু জুমা পড়লে সওয়াব পাবে)। ৩. হুঁশ জ্ঞান থাকা (কারণ বেহুঁশ বা পাগলের কোনো ইবাদত নেই)। ৪. পুরুষ হওয়া (মেয়েদের উপর জুমা ফরজ নয়)। ৫. স্বাধীন হওয়া (গোলাম বা ক্রীতদাস হলে জুমা ফরজ হয় না)। ৬. মুকীম হওয়া (মুসাফির অবস্থায় জুমা ফরজ হয় না)। ৭. শরয়ী উজর না থাকা (অসুস্থ, ভয়ভীতি বা নিরাপত্তাহীনতায় না থাকা)।
জুমার সালাতের ওয়াক্ত:
————————-
অধিকাংশ আলেমের মতে, জুমা ও যোহরের সময় একই। যখন যোহরের শুরু হয় জুমাও তখনই শুরু হয়। অর্থাৎ ঠিক দুপুরে সূর্য মাথার উপর থেকে পশ্চিমে কিছুটা ঢলে পড়লে জুমার সময় শুরু হয় (বুখারী : ৪১৬৮)।
জুমার ফযীলত:
—————–
পবিত্র কুরআন ও হাদিসে জুমার দিনের বহু ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, وَالسَّمَاءِ ذَاتِ الْبُرُوجِ . وَالْيَوْمِ الْمَوْعُودِ . وَشَاهِدٍ وَمَشْهُودٍ “শপথ গ্রহ-নক্ষত্রের কক্ষপথবিশিষ্ট আকাশের এবং প্রতিশ্রুত দিবসের। এবং সেই দিবসের যা উপস্থিত হয় এবং যাতে উপস্থিত হয়। (বুরুজ-১-৩) عَنْ أَبِي مَالِكٍ الْأَشْعَرِيّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّه عَلَيْهِ وَسَلّمَ الْيَوْمُ الْمَوْعُودُ يَوْمُ الْقِيَامَةِ وَالشّاهِدُ يَوْمُ الْجُمُعَةِ وَالْمَشْهُودُ يَوْمُ عَرَفَةَ এ আয়াতে শাহিদ (যে দিবস উপস্থিত হয়) বলে জুমার দিনকে বোঝানো হয়েছে। সুতরাং এতেই জুমার দিনের গুরুত্ব বুঝে আসে। কারণ গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়েরই শপথ করা হয়। এ আয়াতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জুমার দিনের শপথ করছেন।
আল্লাহ কুরআনে ইরশাদ করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ – فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
“হে মুমিনগণ! জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরা জুমআ : আয়াত ৯-১০)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَال: قَالَ رَسُول اللهِ ্রخَيْرُ يَومٍ طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ يَوْمُ الجُمُعَةِ: فِيهِ خُلِقَ آدَمُ، وَفِيهِ أُدْخِلَ الجَنَّةَ، وَفِيهِ أُخْرِجَ مِنْهَاগ্ধ. رواه مسلم
হযরত আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, “যার উপর সূর্য উদিত হয়েছে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হল জুমার দিন। এই দিনে হযরত আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনে তাঁকে জান্নাতে স্থান দেওয়া হয়েছে এবং এই দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে।” (মুসলিম ৮৫৪, তিরমিযী ৪৮৮, ৪৯১, নাসায়ী ১৩৭৩, ১৪৩০, আহমাদ ৭৬৩০, ৮১৪১, ৯৯৩০, ১০১৬৭, ১০২৬৭, ১০৫৮৭, ২৭৬০৮, ২৭২৩৪ )
জুমা আদায় না করার ভয়াবহ পরিনতি:
————————————————-
وعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ، وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا: أَنَّهُمَا سَمِعَا رَسُولَ اللهِ، يَقُوْلُ عَلَى أَعْوَادِ مِنْبَرِهِ: ্রلَيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ عَنْ وَدْعِهِمُ الجُمُعَاتِ أَوْ لَيَخْتِمَنَّ اللهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ ثُمَّ لَيَكُونُنَّ مِنَ الغَافِلِينَগ্ধ. رواه مسلم
হযরত আবূ হুরাইরা ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর কাঠের মিম্বার শরীফের উপর দাঁড়ানো অবস্থায় এ কথা বলতে শুনেছেন যে, “লোকেরা যেন জুমআ ত্যাগ করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকে; নচেৎ আল্লাহ অবশ্যই তাদের অন্তরে মোহর লাগিয়ে দেবেন, তারপর তারা অবশ্যই উদাসীনদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বে।” (মুসলিম ৮৬৫, নাসায়ী ১৩৭০, ইবনু মাজাহ ৭৯৪, ১১২৭, আহমাদ ২১৩৩, ২২৯০, ৩০৮৯, ৫৫৩৫, দারেমী ১৫৭০)
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : مَنْ تَرَكَ الْجُمُعَةَ ثَلَاثًا مِنْ غَيْرِ ضَرُورَةٍ طَبَعَ اللَّهُ عَلَى قَلْبِهِ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “অলসতা-অবহেলা করে যে ব্যক্তি তিন জুমাহ পরিহার করবে আল্লাহ তার ক্বলবে মহর মেরে দিবেন।” (আবু দাউদ,তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজা, দারেমী, হা:সহীহ, মিশকাত হা:নং ১৩৭১)
عن طارق بن شهاب ، عن النبي صلى الله عليه وسلم : الجمعةُ حقٌ واجبٌ على كلِّ مسلمٍ في جماعةٍ إلا أربعةً : عبدٌ مملوكٌ ، أو امرأةٌ ، أو صبيٌّ ، أو مريضٌ ”
أخرجه أبوداود (১০৬৭) ، والطبراني في ” الكبير ” (৮/৩৮৫ـ৩৮৬) رقم (৮২০৬) ، والدارقطني (২/৩) ، والبيهقي في ” السنن الكبرى” (৩/১৭২ ، ১৮৩) وفي ” السنن الصَّغير ” (১/২৩৬) رقم (৬০৭) ، وفي ” المعرفة ” (৪/২৩০) ، وكذا ضياء الدين المقدسي في ” الأحاديث المختارة ” (৮/১০৯) جميعاً من طريق إسحاق بن منصور ، عن هُرَيْم بن سفيان ، عن إبراهيم بن محمد بن المُنْتَشِر،عن قيس بن مسلم ،
হযরত তারেক ইবনে শিহাব (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ক্রীতদাস, মহিলা, নাবালেগ বাচ্চা ও অসুস্থ ব্যক্তিÍএই চার প্রকার মানুষ ছাড়া সকল মুসলমানের ওপর জুমার নামাজ জামাতে আদায় করা অপরিহার্য কর্তব্য (ফরয)। (আবু দাউদ : ১০৬৭, মুসতাদরেকে হাকেম : ১০৬২ , আস্-সুনানুল কাবীর : ৫৫৮৭)
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : مَنْ تَرَكَ ثَلاَثَ جُمُعَاتٍ مِنْ غَيْرِ عُذْرٍ كُتِبَ مِنَ المُنَافِقِينَ .
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া জুমার নামাজ বর্জন করবে, তার নাম মুনাফিক হিসেবে এমন দপ্তরে লিপিবদ্ধ হবে, যা মুছে ফেলা হবে না এবং পরিবর্তন ও করা যাবে না। (তাফসিরে মাজহারি ,খ- : ৯ , পৃষ্ঠা : ২৮৩)
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رضي الله عنه أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لِقَوْمٍ يَتَخَلَّفُونَ عَنْ الْجُمُعَةِ: لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ آمُرَ رَجُلًا يُصَلِّي بِالنَّاسِ ثُمَّ أُحَرِّقَ عَلَى رِجَالٍ يَتَخَلَّفُونَ عَنْ الْجُمُعَةِ بُيُوتَهُمْ
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এ মর্মে হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সমস্ত লোক জুমার নামাজ থেকে দূরে থাকে (পড়ে না) তাদের সম্পর্কে বলেছেন, নিশ্চয়ই আমার ইচ্ছা হয় যে আমি কাউকে নামাজ পড়ানোর আদেশ করি, সে মানুষকে নামাজ পড়াক। অতঃপর যে সমস্ত লোক জুমার নামাজ পড়ে না, আমি তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিই। (মুসলিম : ৬৫২, মুসনাদে আহমাদ : ৩৮১৬, মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা : ৫৫৩৯, আসু-সুনানুল কুবরা : ৪৯৩৫)
দশ দিনের গুনাহ মাফ হয়ঃ
—————————-
জুমার দিনের আদব যারা রক্ষা করে তাদের দশ দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: ্রمَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الوُضُوءَ ثُمَّ أَتَى الجُمُعَةَ، فَاسْتَمَعَ وَأَنْصَتَ، غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الجُمُعَةِ وَزِيادَةُ ثَلاَثَةِ أيَّامٍ، وَمَنْ مَسَّ الحَصَى، فَقَدْ لَغَاগ্ধ. رواه مسلم
হযরত আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু সম্পাদন করে জুমার নামায পড়তে আসবে এবং নীরবে মনোযোগ-সহকারে (খুতবা) শুনবে, তার সেই জুমআ হতে পরবর্তী জুমার মধ্যবর্তী সময়সহ আরও তিন দিনের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি কাঁকর স্পর্শ করবে, সে বাজে কাজ করবে।” (মুসলিম ৮৫৭, তিরমিযী ৪৯৮, আবূ দাউদ ১০৫০, ইবনু মাজাহ ১০৯০, আহমাদ ৯২০০)
দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহের কাফফারাঃ
—————————————————–
জুমার সালাত আদায়কারীদের জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী গুনাহের কাফফারা স্বরূপ।
وعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: ্রالصَّلَوَاتُ الخَمْسُ، وَالجُمُعَةُ إِلَى الجُمُعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتُنِبَتِ الكَبَائِرُগ্ধ. رواه مسلم
হযরত আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, “পাঁচ অক্ত নামায, এক জুমআ হতে পরের জুমআ পর্যন্ত, এক রমযান হতে অন্য রমযান পর্যন্ত (কৃত নামায-রোযা) সেগুলির মধ্যবর্তী সময়ে সংঘটিত (ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র) পাপ-রাশির প্রায়শ্চিত্ত (মোচন-কারী) হয় (এই শর্তে যে,) যখন মহাপাপ তথা কবীরাহ গুনাহ থেকে বিরত থাকা যাবে।” (মুসলিম ২৩৩, তিরমিযী ২৪১, ইবনু মাজাহ ১০৭৬, আহমাদ ৭০৮৯, ৮৪৯৮, ৮৯৪৪, ৯০৯২, ১০১৯৮, ২৭২৯০)
হযরত আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন
مَنْ اغْتَسَلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ ، وَلَبِسَ مِنْ أَحْسَنِ ثِيَابِهِ ، وَمَسَّ مِنْ طِيبٍ إِنْ كَانَ عِنْدَهُ ، ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ ، فَلَمْ يَتَخَطَّ أَعْنَاقَ النَّاسِ ، ثُمَّ صَلَّى مَا كَتَبَ اللَّهُ لَهُ ، ثُمَّ أَنْصَتَ إِذَا خَرَجَ إِمَامُهُ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ صَلَاتِهِ كَانَتْ كَفَّارَةً لِمَا بَيْنَهَا وَبَيْنَ جُمُعَتِهِ الَّتِي قَبْلَهَا )رواه أبو داود (২৯০(
যে জুমার দিন গোসল করে, এরপর তার পোশাক পরিধান করে, তার কাছে সুগন্ধি থাকলে তা ব্যবহার করে, এরপর ধীরস্থিরভাবে জুমার দিকে যায়, কাউকে ডিঙ্গিয়ে (সামনে) যাওয়া থেকে বিরত থাকে, কাউকে কষ্ট দেয় না, তাওফীক মতো রুকু (নামায আদায়) করে, এরপর ইমাম নামায সমাপ্ত করা পর্যন্ত অপেক্ষা করে, তার দুই জুমার মাঝে যা (গুনাহ) হয়েছে তা মাফ করে দেওয়া হয়।(মুসনাদে আহমদ ৫/১৯৮ (২১৭২৯)
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: ্রإِذَا جَاءَ أَحَدُكُمُ الجُمُعَةَ فَلْيَغْتَسِلْগ্ধ. متفقٌ عَلَيْهِ
হযরত ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, “তোমাদের কেউ যখন জুমাতে আসার ইচ্ছা করবে, তখন সে যেন গোসল করে।” (সহীহুল বুখারী ৯১৯, ৮৭৭, ৮৯৪, তিরমিযী ৪৯৩, নাসায়ী ১৩৭৬, ১৪০৫, ১৪০৭, ইবনু মাজাহ ১০৮৮, আহমাদ ৩০৫০, ৪৪৫২, ৪৫৩৯, ৪৯০১, ৪৯২৩, ৪৯৮৫, ৪৯৮৮, মুওয়াত্তা মালিক ২৩১, দারেমী ১৫৩৬)
وَعَنْ أَبي سعيدٍ الخُدْرِي رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: ্রغُسْلُ يَوْمِ الجُمُعَةِ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُحْتَلِمٍগ্ধ. متفقٌ عَلَيْهِ
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, “প্রত্যেক সাবালকের উপর জুমার দিনের গোসল ওয়াজিব।” (সহীহুল বুখারী ৯১৯, ৮৭৭, ৮৯৪, তিরমিযী ৪৯৩, নাসায়ী ১৩৭৬, ১৪০৫, ১৪০৭, ইবনু মাজাহ ১০৮৮, আহমাদ ৩০৫০, ৪৪৫২, ৪৫৩৯, ৪৯০১, ৪৯২৩, ৪৯৮৫, ৪৯৮৮, মুওয়াত্তা মালিক ২৩১, দারেমী ১৫৩৬)
এখানে ওয়াজিবের অর্থ মুস্তাহাব ধরা হয়েছে। এর মানে প্রকৃত ওয়াজিব নয়; যা ত্যাগ করলে কঠোর শাস্তির উপযুক্ত হতে হয়। ওয়াজিব না হওয়ার প্রমাণ পরবর্তী হাদিস।
وَعَنْ سَمُرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: ্রمَنْ تَوَضَّأَ يَوْمَ الجُمُعَةِ فَبِهَا وَنِعْمَتْ وَمَنِ اغْتَسَلَ فَالغُسْلُ أَفْضَلُগ্ধ رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن
হযরত সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে ওযু করল তাহলে তা যথেষ্ট ও উত্তম। আর যে গোসল করল, (তার) গোসল হল সর্বোত্তম।”(তিরমিযী ৪৯৭, আবূ দাউদ ৩৫৪, নাসায়ী ১৩৮০, আহমাদ ১৯৫৮৫, ১৯৬১২, ১৯৬৬১, ১৯৬৬৪, ১৯৭৪৬)
وَعَنْ سَلمَانَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: ্রلاَ يَغْتَسِلُ رَجُلٌ يَومَ الجُمُعَةِ، وَيَتَطَهَّرُ مَا اسْتَطَاعَ مِن طُهْرٍ، وَيَدَّهِنُ مِنْ دُهْنِهِ، أَوْ يَمَسُّ مِنْ طِيبِ بَيْتِهِ، ثُمَّ يَخْرُجُ فَلاَ يُفَرِّقُ بَيْنَ اثنَيْنِ، ثُمَّ يُصَلِّي مَا كُتِبَ لَهُ، ثُمَّ يُنْصِتُ إِذَا تَكَلَّمَ الإمَامُ، إِلاَّ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الجُمُعَةِ الأُخْرَىগ্ধ. رواه البخاري
হযরত সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, “যে কোন ব্যক্তি জুমার দিন গোসল ও সাধ্যমত পবিত্রতা অর্জন করে, তেল লাগায় অথবা নিজ ঘরের সুগন্ধি (আতর) ব্যবহার করে, অতঃপর (মসজিদে) গিয়ে দু’জনের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি না করেই (যেখানে স্থান পায়, বসে যায়) এবং তার ভাগ্যে যত রাকআত নামায জোটে, আদায় করে। তারপর ইমাম খুতবা আরম্ভ করলে নীরব থাকে, সে ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট জুম‘আ থেকে পরবর্তী জুম‘আ পর্যন্ত কৃত সমুদয় (ছগীরা) গুনাহ-রাশিকে মাফ করে দেওয়া হয়।” (সহীহুল বুখারী ৮৮৩, ৯১০, নাসায়ী ১৪০৩, আহমাদ ২৩১৯৮, ২৩২০৬, ২৩২১৩, দারেমী ১৫৪১)
কুরবানী করার সমান সওয়াব অর্জিত হয় মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে ফেরেশতারা অগ্রগামীদের নাম তালিকাভুক্ত করেনঃ
————————————————–
মুমিনের সাপ্তাহিক ঈদ সমাবেশ জুমার নামাজে আগেভাগে হাজির হওয়া এবং মনোযোগসহকারে জুমার বয়ান ও খুতবা শ্রবণ করার বিশেষ গুরুত্ব ও ফযিলতের কথা বলা হয়েছে। হাদিসের বর্ণনায় আছে যে, জুমার জামাতের সময় মসজিদের দ্বারদেশে রহমতের ফেরেশতাগণ অবস্থান গ্রহণ করে কে কখন হাজির হচ্ছে তা লক্ষ্য করেন। যারা নিতান্ত বিনয়, নম্রতা ও বিশেষ মনোযোগর সাথে জুমার হাজিরা দেন তাদের নাম রহমতপ্রাপ্ত বান্দাদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করে রাখেন। আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকে শান্তির একটি আবাহ সৃষ্টি হয়। তাতে ইবাদতে মনোনিবেশ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়।
জুমার দিন শয়তান বাজারগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং লোকজনকে কাজে কর্মে ব্যস্ত করে তোলে। আর ফেরেশতাগণ মসজিদের দরজায় উপস্থিত হয়ে হাজিরা লিপিবব্ধ করতে থাকেন মুসল্লিগণের পর্যায়ক্রমে উপস্থিতি। যারা খুতবা শুরু হওয়ার পরে এসে তাড়াহুড়া করে সামনে আসতে চেষ্টা করে, হাদিস শরিফে তাদের প্রতি কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। জুমার দিনে ফেরেশতাগণ বিশেষ রেজিস্টার নিয়ে মসজিদের প্রতিটি দরজায় দাঁড়িয়ে যান। তাঁরা মসজিদে আগমনকারী মুসল্লিদের নাম পর্যায়ক্রমে লিপিবদ্ধ করতে থাকেন। অতঃপর যখন ইমাম সাহেব এসে যান, তখন তারা রেজিস্টার বন্ধ করে খুতবা শুনতে থাকেন।
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: ্রمَنِ اغْتَسَلَ يَومَ الجُمُعَةِ غُسْلَ الجَنَابَةِ، ثُمَّ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الأُولَى فَكَأنَّمَا قَرَّبَ بَدَنَةً، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الثَّانِيَةِ، فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ بَقَرَةً، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الثَّالِثَةِ، فَكَأنَّمَا قَرَّبَ كَبْشاً أَقْرَنَ، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الرَّابِعَةِ، فَكَأنَّمَا قَرَّبَ دَجَاجَةً، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الخَامِسَةِ، فَكَأنَّمَا قَرَّبَ بَيْضَةً، فَإِذَا خَرَجَ الإمَامُ، حَضَرَتِ المَلاَئِكَةُ يَسْتَمِعُونَ الذِّكْرَগ্ধ. متفقٌ عَلَيْهِ .
হযরত আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিন নাপাকির গোসলের ন্যায় গোসল করল এবং (সূর্য ঢলার সঙ্গে সঙ্গে) প্রথম অক্তে মসজিদে এল, সে যেন একটি উট দান বা সাদকাহ করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় সময়ে এলো, সে যেন একটি গাভী দান করল। যে ব্যক্তি তৃতীয় সময়ে এলো, সে যেন একটি শিংবিশিষ্ট দুম্বা দান করল। যে ব্যক্তি চতুর্থ সময়ে এলো, সে যেন একটি মুরগী দান করল। আর যে ব্যক্তি পঞ্চম সময়ে এলো, সে যেন একটি ডিম দান করল। তারপর ইমাম যখন খুতবা প্রদানের জন্য বের হন, তখন (লেখক) ফেরেশতাগণ যিকির শোনার জন্য হাজির হয়ে যান।” (সহীহুল বুখারী ৮৮১, ৯২৯, ৩২১১, মুসলিম ৮৫০, ১৮৬০, তিরমিযী ৪৯৯, নাসায়ী ৮৬৪, ১৩৭৫-১৩৮৮, আবূ দাউদ ৩৫১, ইবনু মাজাহ ১০৯২, আহমাদ ৭২১৭, ৭৪৬৭, ৭৫২৮, ৭৬৩০, ৭৭০৮, ৯৫৮২, ৯৬১০, ১০১৯০, মুওয়াত্তা মালিক ২২৭, দারেমী ১৫৪৩)
দু:খের বিষয় বর্তমানে জুমার নামাজ মুসলমানদের কাছে আজানের পরও মসজিদগুলো ফাঁকা থাকে। খুৎবার শেষ পর্যায়ে তড়িঘড়ি করে মুসল্লিরা মসজিদে প্রবেশ করে যা ধর্মীয় দৃষ্টিতে অপছন্দনীয়।
জুমার দিনে দোয়া কবুল:
———————–
জুমাবারের ফযিলতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হলো, এই দিনে এমন একটা সময় আছে, যখন মুমিন বান্দা কোনো দোয়া করলে মহান আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেন।
وَعَنْه أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم ذَكَرَ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَقَالَ: ্রفِيهَا سَاعَةٌ لاَ يُوَافِقُهَا عَبْدٌ مُسْلِمٌ، وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي يَسْألُ اللهَ شَيْئاً، إِلاَّ أَعْطَاهُ إِيَّاهُগ্ধ وَأشَارَ بيَدِهِ يُقَلِّلُهَا. متفقٌ عَلَيْهِ
হযরত আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা জুমার দিন সম্বন্ধে আলোচনা করতে গিয়ে এরশাদ করলেন, “এতে এমন একটি মুহূর্ত আছে, কোন মুসলিম ব্যক্তি যদি ঐ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে নামায অবস্থায় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে আল্লাহ তাকে তা দান করে থাকেন।” এ কথা বলে তিনি স্বীয় হাত মুবারক দ্বারা ইঙ্গিত করলেন, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত। (সহীহুল বুখারী ৯৩৫, ৫২৯৫, ৬৪০০, মুসলিম ৮৫২, তিরমিযী ৪৯১, নাসায়ী ১৪৩০-১৪৩২, আবূ দাউদ ১০৪৬, ইবনু মাজাহ ১১৩৭, আহমাদ ৭১১১, ৭৪২৩, ৭৬৩১, ৭৭১১, ৭৭৬৪, ৮৯৫৩, ৮৯৮৬, ৯৮৭৪, ৯৯২৯, ৯৯৭০, ১১২৩০, মুওয়াত্তা মালিক ২২২, ২৪২, দারেমী ১৫৬৯)
জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সে মহামূল্যবান সময় কোনটা? এ সম্পর্কে ৪৫টা মতামত পাওয়া যায়। তবে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মত হলো, আসরের নামাযের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময় দোয়া কবুলের সময়। হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, জুমার দিনের কাঙ্ক্ষিত সময়টা হলো আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। (মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা : ৫৪৬০ , তিরমিজি : ৪৮৯)
কারও কারও মতে: সেই মুহূর্তটুকু ইমামের মিম্বারে বসা থেকে নিয়ে নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়ের ভিতরে।
وَعَنْ أَبِي بُرْدَةَ بنِ أَبِي مُوسَى الأَشعَرِيِّ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ عَبدُ اللهِ بنُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا: أَسَمِعْتَ أَبَاكَ يُحَدِّثُ عَنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فِي شَأْنِ سَاعَةِ الجُمُعَةِ ؟ قَالَ: قُلْتُ: نَعَمْ، سَمِعْتُهُ يَقُوْل: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يَقُوْلُ: ্রهِيَ مَا بَيْنَ أَنْ يَجْلِسَ الإِمَامُ إِلَى أَنْ تُقْضَى الصَّلاَةُগ্ধ. رواه مسلم
হযরত আবূ বুর্দাহ ইবনে আবূ মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বললেন, ‘আপনি কি জুমার দিনের বিশেষ মুহূর্ত সম্পর্কে আপনার পিতাকে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করতে শুনেছেন?’ তিনি বলেন, আমি বললাম, ‘হ্যাঁ। আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ কথা বলতে শুনেছি যে, “সেই মুহূর্তটুকু ইমামের মিম্বারে বসা থেকে নিয়ে নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়ের ভিতরে।” (মুসলিম ৮৫৩, আবূ দাউদ ১০৪৯)
জুমার দিনে ও রাতে দরূদ শরিফ পাঠের ফজিলত:
—————————————————–
জুমার দিনে ও রাতে বেশি করে দরূদ শরিফ পাঠ করার বিশেষ ফজিলতের কথা বলা হয়েছে।
وَعَنْ أَوسِ بنِ أَوسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :্রإِنَّ مِنْ أَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنَ الصَّلاَةِ فِيهِ ؛ فَإِنَّ صَلاَتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّগ্ধ. رواه أَبُو داود بإسناد صحيح
হযরত আওস ইবনে আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, “তোমাদের দিনগুলির মধ্যে সর্বোত্তম একটি দিন হচ্ছে জুমার দিন। সুতরাং ঐ দিনে তোমরা আমার উপর বেশী বেশী দরূদ পাঠ কর। কেননা, তোমাদের পাঠ করা দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়।” (আবূ দাউদ ১০৪৭, ১৫৩১, নাসায়ী ১৩৭৪, ইবনু মাজাহ ১৬৩৬, আহমাদ ১৫৭২৯, দারেমী ১৫৭২)
وعن أوس بن أوس رضي الله عنه: قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مِنْ أَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فِيهِ خُلِقَ آدَمُ وَفِيهِ قُبِضَ وَفِيهِ النَّفْخَةُ وَفِيهِ الصَّعْقَةُ فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنْ الصَّلَاةِ فِيهِ فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَكَيْفَ تُعْرَضُ صَلَاتُنَا عَلَيْكَ وَقَدْ أَرَمْتَ؟-يعني بَلِيتَ- فَقَالَ: إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أن تأكل أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ. فَنَبِيُّ اللَّهِ حَيٌّ يُرْزَقُ.
إسناده صحيح ، و قد أعل بما لا يقدح كما بينته في كتابي ” صحيح أبي داود ” ( ৯৬২ ) و ” تخريج المشكاة ” ( ১৩৬১ ) و ” صحيح الترغيب ” ( رقم ৬৯৮ )
হযরত আওস ইবনে আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে শুক্রবার শ্রেষ্ঠ দিন। এই দিন আল্লাহ তায়ালা হযরত আদমকে সৃষ্টি করেন, তাকে মৃত্যু দেন, ইসরাফীল আলাইহিস সালাম এই দিন শিংগায় ফুঁ দেবেন এবং এই দিন (শিংগার ধ্বনিতে) সকল প্রাণী অচেতন হয়ে যাবে। অতএব, এই দিন তোমরা আমার ওপর বেশি করে দরূদ পড়, কেননা জুমুয়ার দিন আমার ওপর তোমাদের দরূদ আমার কাছে পৌঁছানো হয়। উপস্থিত লোকেরা বললোঃ মাটিতে আপনার হাড়গোড় মিশে যাওয়ার পর কীভাবে আপনার কাছে আমাদের দরূদ পাঠানো হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ তায়ালা আমাদের দেহ খাওয়াকে মাটির ওপর হারাম করে দিয়েছেন, নবীগন তাঁদের কবরশরীফে জীবিত, তাঁদেরকে রিযক দেয়া হয়। ” [আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ, ইবনে হাব্বান]
ما روى البيهقي في ” سننه ” (৫৯৯৪) عَنْ أنس رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: ্রأَكْثِرُوا عَلَيَّ الصَّلاَةَ فِي يَوْمِ الْجُمُعَةِ، وَلَيْلَةِ الْجُمُعَةِ، فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ كُنْتُ لَهُ شَهِيدًا، أوَ شَافِعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِগ্ধ.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, জুমার দিনে ও রাতে আমার প্রতি বেশি করে দরূদ শরিফ পাঠ করো। যে ব্যক্তি এরূপ দরূদ শরিফ পাঠ করবে, হাশরের ময়দানে আমি তার জন্য আল্লাহ সামনে সাক্ষ্য প্রদান করব এবং সুপারিশ করব। (বাইহাকি শরিফ-৫৯৯৪)
নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুসংবাদের ভিত্তিতেই সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আবেদ-জাহেদ বান্দাগণ জুমা দিবসে সর্বাধিক দরূদ শরিফ পড়ে আসছেন। অত্যধিক দরূদ পঠিত হয় বলেই জুমার দিনকে ইয়াওমুজ্জাহারা অর্থাৎ ফুলেল দিবস এবং জুমার রাতকে লাইলাতুজ জাহরা বা ফুলেল রজনী নামে অভিহিত করা হয়। দুনিয়ার জীবনে হেদায়তের পথ প্রদর্শক এবং আখেরাতের চিরস্থায়ী শান্তি ও মুক্তির ঠিকানা জান্নাতের জিম্মাদার হরিত নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি দরূদ শরিফ ও সালাম পেশ করতে থাকা প্রত্যেক মুমিন নর-নারীদের জন্য পরম সৌভাগ্যের বিষয়। বিশেষ সময় ও দিনক্ষণের প্রতি লক্ষ্য রেখে দরূদ শরিফ বেশি করে পড়ার চেষ্টা করা সবারই একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য।
জুমাতে যা অবশ্যই বর্জনীয়:
——————————————
চুপ কর-একথাও বলা যাবে না:
—————————————
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : إذَا قُلْتَ لِصَاحِبِكَ : أَنْصِتْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَالإِمَامُ يَخْطُبُ ؛ فَقَدْ لَغَوْتَ .
হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, জুমার দিন খুৎবা চলাকালে তুমি যদি তোমার সাথিকে শুধু বল যে “চুপ কর” তাহলেও তুমি একটা বাজে কাজ করলে। (বুখারী আধুনিক প্রকা:হা:নং৮৮১,মুসলিম হা:নং৮৫১,মিশকাত আলবানী হা:নং১৩৮৫) অর্থাৎ চুপ কর-একথাও বলা যাবে না।
মসজিদে মানুষের কাঁধ ডিঙ্গিয়ে সামনে যাওয়া নিষেধ:
—————————————————————
عن عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُسْرٍ رضي الله عنه قال : جَاءَ رَجُلٌ يَتَخَطَّى رِقَابَ النَّاسِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ ، فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( اجْلِسْ ، فَقَدْ آذَيْتَ ) روى أبو داود (১১১৮) وابن ماجه (১১১৫)
আব্দুল্লাহ বিন বুসর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদা জুমার দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুৎবা দিচ্ছিলেন এমন সময় মানুষের কাঁধ ডিঙ্গিয়ে একটি লোক এগিয়ে এলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, “তুমি বস, তুমি মানুষকে কষ্ট দিয়েছ।” (আবুদাউদ, নাসাঈ, ইবনু খুজাইমা, ইবনু হিব্বান,সহীহ আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব)