♥কিতাবের নামঃ চুপ থাকার ফযীলত
♦♦মূলঃ ইমাম জালাল উদ্দীন সৈয়ুতী রহঃ (ওফাতঃ৯১১ হিজরী)
♠অনুবাদকঃ মুহাম্মদ হাসিব আল হাশেমী
♣♣প্রথম ১০টি উপদেশঃ
চুপ থাকাতে মুক্তি রয়েছে
=====
ইমাম আহমদ, দারেমী, তিরমিযী, ইবনে আবিদ দুনিয়া এবং বায়হাক্বী ‘শুয়াবুল ঈমান’-এ হযরত সাইয়্যেদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আমর رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُمَا বলেন, হুযুর নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেনঃ مَنْ صَمَتَ نَجَا “যে চুপ থেকেছে সে নাজাত পেয়েছে”।
[তিরমিযী, কিতাবু সিফাতিল কিয়ামাহ, ৪/২২৫, হাদীসঃ ২৫০৯, দারেমী, কিতাবুর রাকা-ইক, ২/২৯৯, হাদীসঃ ২৭১৩, ইবনুল মুবারক, আয-যুহদ, ৩৮৫, ইমাম আহমদ, মুসনাদ, ২/১৫৯, ইবনে আবিদ দুনিয়া, আস-সামত, ৪৩, হাদীসঃ ১০]
নিরাপত্তাপ্রার্থী চুপ থাকুক
======
ইবনে আবিদ দুনিয়া, বায়হাক্বী ‘শুয়াবুল ঈমান’- এ, কাযায়ী- ‘মুসনাদুশ শিহাব’ –এ বর্ণনা করেনঃ-
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَسْلَمَ فَلْيَلْزَمِ الصَّمْتَ
হযরত সাইয়্যিদুনা আনাস বিন মালিক رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُمَا বর্ণনা করেন, হুযুর নবী পাক صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেনঃ “যে নিরাপদ থাকতে চায় তার চুপ থাকা আবশ্যক”।
[মুসনাদ আবী ইয়া’লা, মুসনাদ আনাস বিন মালিক, ৩/২৭১, হাদীসঃ ৩৫৯৫]
শরীরের ওপর হালকা এবং মীযানে ভারী
======
ইবনে আবিদ দুনিয়া বর্ণনা করেনঃ-
عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَلَا أُعْلِمُكَ بِعَمَلٍ خَفِيفٍ عَلَى الْبَدَنِ، ثَقِيلٍ فِي الْمِيزَانِ؟ قُلْتُ: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ هُوَ الصَّمْتُ، وَحُسْنُ الْخُلُقِ، وَتَرْكُ مَا لَا يَعْنِيكَ
হযরত সাইয়্যেদুনা আবু যার গীফারী رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বলেনঃ হুযুর নবীয়ে রাহমাত صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আমাকে বলেছেনঃ “আমি কি তোমাকে এমন আমল বলে দেব না যা শরীরের ওপর হালকা আর আমলের মীযানে (দাড়িপাল্লায়) ভারী?” আমি আরয করলামঃ কেন নয়? তিনি صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم বললেনঃ “তা (আমল) হল চুপ থাকা, উত্তম চরিত্র তৈরী করা এবং অনর্থক কাজ ছেড়ে দেয়া।”
[ইবনে আবী দুনিয়া, কিতাবুস সামত ওয়া আদাবুল লিসান, ৭/৮৭, হাদীসঃ ১১২, হায়ছমী, মাজমাউয যাওয়াইদ, ১০/৩০১, মুনযিরী, আত তারগীব ওয়াত তারহীব, ৪/৭, গাযালী, ইহইয়াউল উলুম, ৩/১০৯]
সহজ ইবাদত
====
ইবনে আবিদ দুনিয়া বর্ণনা করেনঃ-
عَنْ صَفْوَانَ بْنِ سُلَيْمٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِأَيْسَرِ الْعِبَادَةِ وَأَهْوَنِهَا عَلَى الْبَدَنِ: الصَّمْتُ وَحُسْنُ الْخُلُقِ
হযরত সাইয়্যিদুনা সাফওয়ান ইবনে সুলাইম رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বর্ণনা করেন যে, হুযুর নবী আকরাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেনঃ “আমি কি তোমাদের এমন ইবাদতের ব্যাপারে বলব না যা সহজ এবং শরীরের ওপর খুবই হালকা? তা হল চুপ থাকা এবং সুন্দর চরিত্র।
[ইবনে আবী দুনিয়া, কিতাবুস সামত ওয়া আদাবুল লিসান, ৭/৪৬, হাদীসঃ ২৭, সুয়ূতী, জামেউস সগীর, হাদীসঃ ২৭৫৯, সুয়ূতী, দুররুল মনছুর, ২/৭৫, গাযালী, ইহইয়াউল উলুম, ৩/৯৫]
চুপ থাকার নসীহত
=====
ইবনে নাজ্জার বর্ণনা করেনঃ- হযরত সাইয়্যেদুনা আবু যার গীফারী رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ থেকে বর্ণিত,
اُوْصِيْكَ بِحُسْنَ الْخُلُقِ، وَالصَّمْتِ، هُمَا أَخَفُّ الأعْمَالِ عَلَى الأبْدَانِ (وَأَثْقَلَهُمَا) فِيْ الْمِيْزَانِ
“আমি বারগাহে রিসালাতে আরয করলামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم! আমাকে কোন নসীহত করুন।” তিনি صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এরশাদ করলেনঃ “আমি তোমাকে সুন্দর চরিত্র গঠন ও চুপ থাকার নসীহত করছি। এই দুটি আমল শরীরের ওপর সবচেয়ে হালকা আর মীযানে খুব ভারী।”
[কানযুল উম্মাল, কিতাবুল আখলাক্ব, ৩/২৬৫, হাদীসঃ ৮২০২]
সবচেয়ে উত্তম এবং সহজ আমল
=====
ইবনে আবিদ দুনিয়া বর্ণনা করেনঃ- হযরত সাইয়্যেদুনা ইমাম শাবী’ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ হতে বর্ণিত হুযুর পূরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এক সাহাবীকে এরশাদ করলেনঃ
أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى أَحْسَنِ الْعَمَلِ وَأَيْسَرِهِ؟ قَالَ: بَلَى بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي(يا رسول الله) قَالَ: حُسْنُ الْخُلُقِ، وَطُولُ الصَّمْتِ، عَلَيْكَ بِهِمَا فَإِنَّكَ لَنْ تَلْقَى اللَّهَ بِمِثْلِهِمَا
“আমি কি তোমাকে সবচেয়ে উত্তম এবং সহজ আমলের ব্যাপারে বলে দেব না? সাহাবী আরয করলেনঃ আমার পিতা মাতা আপনার ওপর কোরবান! কেন নয়। অবশ্যই বলুন। হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেনঃ “তা হল উত্তম চরিত্র এবং দীর্ঘ চুপ থাকা। দুটোকেই আবশ্যিকভাবে গ্রহণ করে নাও কারণ তুমি আল্লাহ عَزَّوَجَلَّ এঁর দরবারে ঐ দুটোর মত (অর্থাৎ তার চেয়ে বেশী) অন্য কোন আমল নিয়ে যেতে পারবে না।
[ইবনে আবী দুনিয়া, কিতাবুস সামত ওয়া আদাবুল লিসান, ৭/৩৪৬, হাদীসঃ ৬৫০]
সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন ইবাদত
=====
আবু নুয়াইম ‘তারিখে আসবাহান’-এ বর্ণনা করেনঃ-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الصَّمْتُ أَرْفَعُ الْعِبَادَةِ
হযরত সাইয়্যেদুনা আবু হোরায়রা رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ এরশাদ করেন যে, প্রিয় নবী মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেনঃ “চুপ থাকা সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত।”
(তারিখে ইস্পাহান লি আবী নু’য়াইম, ২/৩৪, হাদীসঃ ৯৯৯, আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল-বাযিয়ার)
আলেমের সৌন্দর্য আর জাহেলের পর্দা
=====
আবুশ শায়খ বর্ণনা করেনঃ- হযরত সাইয়্যেদুনা মুহরিয ইবনে যুহায়র আসলামী رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বর্ণনা করেনঃ মুস্তফা জানে রহমত صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেনঃ
الصَّمْتُ زَيْنٌ لِلْعَالِمِ، وَسِتْرٌ لِلْجَاهِلِ
“চুপ থাকা হলো আলেমের সৌন্দর্য আর জাহেলের পর্দা।”
[জামেউস সগীর, পৃঃ ৩১, হাদীসঃ ৫১৫৯; আবু শায়খ, (মুহরিয বিন যুহায়র হতে)
বায়হাক্বী, শুয়াবুল ঈমান, ৭/৮৬, হাদীসঃ ৪৭০১ (সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা থেকে)]
চুপ থাকা চরিত্র সমূহের সরদার
======
ইমাম দায়লামী ‘মুসনাদুল ফিরদাউস’-এ বর্ণনা করেনঃ- হযরত সাইয়্যদুনা আনাস বিন মালেক رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বর্ণনা করেনঃ আল্লাহ عَزَّوَجَلَّ এঁর মাহবুব صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেনঃ
الصَّمْتُ سَيِّدُ الأَخْلاَقِ
“চুপ থাকা আখলাকসমূহের (সকল চরিত্রের) সরদার।”
(মুসনাদুল ফিরদাউস, ২/৩৬, হাদীসঃ ৩৬৬৬)
কথা (মানুষকে) দোযখে উল্টো মুখ করে ফেলবে
======
আবুল কাসিম আল-যুজাজি ‘আমালিয়াহ’ কিতাবে এবং ইমাম তাবরানী বর্ণনা করেনঃ-
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ ذَاتَ يَوْمٍ عَلَى رَاحِلَتِهِ فَقَلَ لَهُ معاذ بن جبل: أىُّ الاعْمال أفضل؟ فَأَشَارَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى فِيهِ قَالَ: الصَّمْتُ إِلَّا مِنْ خَيْرٍ. قَالَ: وَهَلْ يُؤَاخَذُنُا الله بِمَا (تَكَلَّمَ) بِهِ أَلْسِنَتُنَا؟ فَضَرَبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ على فَخِذَ مُعَاذٍ، ثُمَّ قَالَ: «يَا مُعَاذُ ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ وَهَلْ يُكَبَّ النَّاسِ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ فِي جَهَنَّمَ إِلَّا مَا نَطَقَتْ بِهِ أَلْسِنَتُهُمْ فَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ (وَالْيَوْمِ الْآخِرِ) فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَسْكُتْ عَنْ شَرٍّ، قُولُوْا خَيْرًا تَغْنَمُوا وَاسْكُتُوا عَنْ شَرٍّ تَسْلَمُوا»
হযরত সাইয়্যেদুনা উবাদাহ ইবনে ছামিত رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বর্ণনা করেন, আল্লাহ عَزَّوَجَلَّ এঁর প্রিয় হাবীব صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم একদিন ঘরের বাইরে তাশরীফ নিয়ে গেলেন আর বাহনে (ঘোড়ায়) আরোহন করলেন। তখন হযরত সাইয়্যেদুনা মু’আয ইবনে জাবাল رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ আরয করলেনঃ কোন আমল সবচেয়ে উত্তম? তিনি صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم পবিত্র নূরানী মুখ (ঠোঁট) মোবারকের দিকে ইশারা করে বললেনঃ নেকীর কথা ব্যাতীত চুপ থাকা।” আরয করলেনঃ আমারা জবান থেকে যা কিছু বলি, আল্লাহ عَزَّوَجَلَّ কি তার জন্য আমাদের পাকড়াও করবেন? তখন সরকারে দো জাহা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم তাঁর রান মোবারকের ওপর হাত মেরে ইশারা করেলেনঃ “হে মু’আয! তোমার ওপর তোমার মা কাঁদুক! জবান দ্বারা বলা কথাই মানুষকে জাহান্নামে উল্টো মুখ করে ফেলে দেবে। পরে যে আল্লাহ عَزَّوَجَلَّ ও আখিরাতের ওপর ঈমান রাখে তাঁর উচিৎ ভালো কথা বলে অথবা খারাপ কথা থেকে বিরত থাকে। (অতঃপর ইরশাদ করেনঃ) ভালো কথা বলো তাহলে ভালো থাকবে আর খারাপ কথা থেকে (বিরত থেকে) চুপ থাক তাহলে নিরাপদে থাকবে।
(মুসতাদরাক হাকেম, কিতাবুল আদব, ৪/৩১৯, হাদীসঃ ৭৭৭৪)
♣♣দ্বিতীয় ১০টি উপদেশঃ
৪০ হাজার আওলাদের ইজতিমা (ঘটনা)
=======
ইবনে আসাকির থেকে বর্ণিতঃ-
عنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ , رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ , قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا أَهْبَطَ اللَّهُ تَعَالَى آدَمَ إِلَى الأَرْضِ مَكَثَ فِيهَا مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَمْكُثَ ثم قاله لَهُ بَنُوهُ: يَا أَبَانَا تَكَلَّمْ. قَالَ فَقَامَ خَطِيبًا فِي أَرْبَعِينَ أَلْفًا مِنْ وَلَدِهِ، وَوَلَدِ وَلَدِهِ، وَوَلَدِ وَلَدِ وَلَدِهِ، وَوَلَدِ وَلَدِ وَلَدِ وَلَدِهِ، فَقَالَ: إِنَّ اللَّهَ أَمَرَنِي فَقَالَ يَا آدم أقل كلامك حتى تَرْجِعْ إِلَى جِوَارِي
হযরত সাইয়্যেদুনা আনাস رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বর্ণনা করেন, নূরে পায়কার صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ عَزَّوَجَلَّ যখন হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) কে যমীনে নামালেন তখন যত আল্লাহ عَزَّوَجَلَّ চাইলেন ততক্ষন যমীনে থাকেন। একদিন তাঁর আওলাদগণ তাঁকে বললেনঃ হে সম্মানিত পিতা! আমাদের কিছু বলুন। তিনি (আলাইহিস সালাম) তাঁর সকল পুত্র, পৌত্র এবং প্রপৌত্রদের ৪০ হাজারকে একত্র করে খুতবা (বক্তব্য) দিয়ে ইরশাদ করলেনঃ আল্লাহ عز وجل আমাকে হুকুম দিয়েছেন যে, “হে আদম! কথা কম কর। এই আমল তোমাকে আমার নিকটে (অর্থাৎ জান্নাতের দিকে) ফিরিয়ে দেবে।
(তারিখে বাগদাদ, ৭/৩৩৮, হাদীসঃ ৩৮৪৩; আবু আলী মুয়াদ্দিব হাসান বিন শাবীব)
আব্বাজান! আপনি কথা বলেন না কেন? (ঘটনা)
======
খতিব বাগদাদী ‘তারিখে বাগদাদ’ –এ এবং ইবনে আসাকীর বর্ণনা করেনঃ-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: لَمَّا أَهْبَطَ اللَّهُ آدَمَ إِلَى الأَرْضِ أَكْثَرَ ذُرِّيَتَهُ، فَاجْتَمَعَ إِلَيْهِ ذَاتَ يَوْمٍ وَلَدُهُ وَوَلَدُ وَلَدِهِ، وَوَلَدُ وَلَدِ وَلَدِهِ فَجَعَلُوا يَتَحَدَّثُونَ حَوْلَهُ وَآدَمُ سَاكِتٌ لا يَتَكَلَّمُ فَقَالُوا: يَا أَبَانَا مَا لَنَا نَحْنُ نَتَكَلَّمُ وَأَنْتَ ساكت لا تتكلم؟ قَالَ: يَا بَنِيَّ إِنَّ اللَّهَ لَمَّا أَهْبَطَنِي مِنْ جِوَارِهِ إِلَى الأَرْضِ عَهِدَ إِلَيَّ فَقَالَ: يَا آدَمُ أَقِلَّ الْكَلامَ حَتَّى تَرْجِعَ إِلَى جِوَارِي
হযরত সাইয়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ হতে বর্ণিত যে, হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) যখন পৃথিবীতে পাঠানো হয় তখন তাঁর অনেক বংশধর হয়। একদিন তাঁর পুত্র, পৌত্র (নাতি), প্রপৌত্র (নাতির ছেলে) সবাই তাঁর নিকট একত্র হয়ে কথা বলতে লাগল আর তিনি (আলাইহিস সালাম) চুপ থাকেন এবং কোন কথা বলেন নি। আওলাদগণ আরয করলেনঃ আব্বাজান! কি ব্যাপার! আমরা কথা বলছি আর আপনি চুপ করে আছেন? হযরত সাইয়্যিদুনা আদম (আলাইহিস সালাম) ইরশাদ করেনঃ হে আমার পুত্রগণ! যখন আল্লাহ عَزَّوَجَلَّ আমাকে তাঁর নৈকট্য (অর্থাৎ জান্নাত) থেকে পৃথীবিতে পাঠান তখন আমার থেকে এই ওয়াদা নিয়েছেন যে, হে আদম! কথা কম বলো যতক্ষন আমার নৈকট্যে ফিরে আস।
(তারিখে বাগদাদ, ৭/৩৩৯, হাদীসঃ ৩৮৪৩; আবু আলী মুয়াদ্দিব হাসান বিন শাবীব)
শয়তান কে তাড়ানোর ব্যবস্থাপত্র (Prescription)
=======
তাবরানী বর্ণনা করেনঃ
عنْ أبي ذر (رضى الله عنه) قال قال (لي) رَسُولَ اللَّهِ (صلى الله عليه وسلم) عَلَيْكَ بطول الصَّمْتِ إِلَّا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّهُ مَطْرَدَةٌ لِلشَّيْطَانِ عَنْكَ وَعَوْنٌ لَكَ عَلَى أَمْرِ دِينِكَ
হযরত সাইয়্যিদুনা আবু যার গিফারী رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বর্ণনা করেনঃ মাক্কী মাদানী মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আমাকে ইরশাদ করেছেনঃ “তোমার ওপর নেকীর কথা বলা ছাড়া (অন্য সময়) দীর্ঘ চুপ থাকা আবশ্যিক করে নাও। কারণ, এটি শয়তানকে তোমার নিকট থেকে দূর করে দেবে আর দ্বীনি কাজকর্মে তোমার সাহায্যকারী হবে।
(সহীহ ইবনে হিব্বান, কিতাবুল বিররু ওয়াল ইহ্সান, ১/২৮৭, হাদীসঃ ৩৬২)
হিকমতের ১০টি অংশ
=====
হযরত সাইয়্যিদুনা আবু হোরায়রা رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বর্ণনা করে, রাসূলে পাক صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেনঃ হিকমতের ১০টি অংশ আছে। ৯টি অংশ একাকীত্বের মধ্যে আর ১টি অংশ চুপ থাকাতে আছে।
(মুসনাদুল ফিরদাউস, ১/৩৫২, হাদীসঃ ২৫৯৩)
না বলাতে নয় গুণ
======
হযরত সাইয়্যিদুনা উহায়ব ইবনে ওয়ারদ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ বলা হয়ে থাকে যে, হিকমতের ১০ টি অংশ আছে। ৯ টি অংশ চুপ থাকাতে আর এক অংশ একাকী থাকাতে আছে। সুতরাং আমি আমার নফসের আরোগ্য চুপ থাকা দ্বারা করতে চাইলাম কিন্তু আমি তাতে কামিয়াবী হাসিল করতে পারি নি। তারপর আমি একাকীত্ব গ্রহন করলাম। তাতে আমার হিকমতের ৯ অংশও মিলে গেল (এ দ্বারা বোঝা গেল, সত্যিই হিকমতের ৯ অংশ একাকীত্বে আছে যেমনটি পূর্বের হাদীসে আছে)। হযরত সাইয়্যিদুনা উহায়ব ইবনে ওয়ারদ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ একজন জ্ঞানী ব্যক্তির বানী আছে যে, ইবাদত বা হিকমতের ১০ টি অংশ ৯ টি অংশ চুপ থাকে দশম অংশ একাকীত্বে আছে।
শয়তান থেকে জয় লাভের উপায়
======
হযরত সাইয়্যিদুনা আবু সাঈদ খুদরী رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বর্ণনা করেন, মাক্কী মাদানী আক্বা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেনঃ পরহেযগারী গ্রহন কর। এটা সকল নেকীর ভান্ডার। আর নেকীর কথা বলা ব্যাতীত নিজের জবান বন্ধ রাখ কারণ এর মাধ্যমে শয়তানের ওপর জয়ী হবে।
(মুসনাদে আবু ইয়া’লা, মুসনাদে আবু সা’ঈদ খুদরী), ১/২৩৪, হাদীসঃ ৯৯৬)
হযরত সাইয়্যিদুনা আক্বীল ইবনে মুদরিক رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বর্ণনা করেনঃ এক ব্যক্তি হযরত সাইয়্যিদুনা আবু সা’ঈদ খুদরি رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ কে জিজ্ঞাসা করেনঃ আমাকে নসীহত করুন। তিনি বললেনঃ হক কথা বলা ব্যাতীত চুপ থাক। তাহলে এর মাধ্যমে তুমি শয়তানের ওপর জয়ী হবে।
জিজ্ঞাসা করা ছাড়াই জবাব পেয়ে গেল (ঘটনা)
=======
হযরত সাইয়্যিদুনা আনাস বিন মালেক رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বর্ণনা করেনঃ হযরত সাইয়্যিদুনা দাঊদ (আলাইহিস সালাম) হযরত সাইয়্যিদুনা লুকমান (আলাইহিস সালাম) এঁর উপস্থিতিতে নিজের হাত দিয়ে ‘যিরাহ’ (যুদ্ধে ব্যবহৃত লোহার জালির পোষাক) বানাতে গিয়ে একটি গোলাকে আরেকটিতে রাখছিল। এটা দেখে হযরত সাইয়্যিদুনা হযরত লুকমান (আলাইহিস সালাম) খুব অবাক হলেন এবং এর ব্যপারে জিজ্ঞাসা করতে চাইলেন। কিন্তু হিকমত তাকে জিজ্ঞাসা থেকে বিরত রাখল। পরে যখন হযরত সাইয়্যিদুনা দাঊদ (আলাইহিস সালাম) ‘যিরাহ’ বানানো থেকে বিরত হলেন তখন তা পরে ইরশাদ করলেনঃ “এই ‘যিরাহ’ যুদ্ধের জন্য ভালো জিনিস।” এটা শুনে হযরত সাইয়্যিদুনা লুকমান (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ “চুপ থাকা হল হিকমত কিন্তু এর ওপর আমলকারী কম। আমি তাঁর কাছে জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু চুপ থাকি। তারপরও আমার প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেলাম।
(শুয়াবুল ঈমান, বাবু ফি হিফযুল লিসান, ৪/২৬৪, হাদীসঃ ৫০২৬)
কম কথা বলা মানুষ কম
=======
হযরত সায়্যিদুনা আনাস ইবনে মালিক رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ এবং হযরত সাইয়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে ওমর رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বর্ণনা করেন, হুযুর নবীয়ে পাক صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেনঃ “চুপ থাকা হলো হিকমত। আর তার ওপর আমলকারী কম।
উত্তম ঈমান
======
হযরত সাইয়্যিদুনা মু’আয ইবনে জাবাল رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বর্ণনা করেনঃ আমি হুযুর নবীয়ে আকরাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে উত্তম ঈমানের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেনঃ “উত্তম ঈমান হলো তুমি আল্লাহ عَزَّوَجَلَّ এঁর জন্য মুহাব্বত করবে আর তাঁর জন্যই ঘৃণা করবে। নিজের জবান (আল্লাহ আযয ওয়া জাল্লা) যিকির দ্বারা তাজা রাখ। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم! এর সাথে আর কী? ইরশাদ করেনঃ “মানুষের জন্য তা-ই পছন্দ কর যা নিজের জন্য পছন্দ কর। যা নিজের জন্য অপছন্দ কর তা অন্যের জন্যও অপছন্দ কর। আর ভালো কথা বলো অথবা চুপ থাক।
(মুসনাদে ইমাম আহমদ, মুসনাদুল আনসার, হাদীসে মু’আয ইবনে জাবাল, ৮/২৬৬, হাদীসঃ ২২১৯৩)
♣♣তৃতীয় ৬টি উপদেশঃ
‘দোয়ায়ে মুস্তফা’ কার জন্য?
=====
হযরত সাইয়্যিদুনা আনাস ইবনে মালেক رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বর্ণনা করেনঃ হুযুর নবীয়ে আকরাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم তিন বার এই কথা বলেনঃ “আল্লাহ (আযয ওয়া জাল্লা) তাঁর ওপর রহম করুক! যে কথা বলে তো ফায়দা (অর্থাৎ সওয়াব) পায়। চুপ থাকে তো নিরাপদ থাকে।
অতুলনীয় আমল
=====
হযরত সাইয়্যিদুনা আনাস ইবনে মালেক رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم হযরত সাইয়্যিদুনা আবু যার গিফারী رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ কে সাক্ষাত দানে ধন্য করে ইরশাদ করেনঃ “হে আবু যার! আমি কি তোমাকে এমন দুইটি খাসলতের (অভ্যাসের) কথা বলে দেব না যা অন্যান্য খাসলতের তুলনায় শরীরের ওপর হালকা আর আমলের দাড়িপাল্লায় ভারী। আরয করলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم! নিশ্চয়ই বলেন। ইরশাদ করলেনঃ “উত্তম চরিত্র আর দীর্ঘ চুপ থাকা গ্রহন কর। ঐ সত্ত্বার কসম যার কুদরতি কব্জায় আমার জান! মাখলুকের কোন আমল তার মত নয়।
(মুসনাদে আবী ইয়া’লা, মুসনাদে আনাস বিন মালেক, ৩/১৭৪, হাদীসঃ ৩২৮৫)
কওমের সরদারকে হুকুম
========
হযরত সাইয়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে মাস’উদ رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি বারগাহে রিসালাতে হাযির হয়ে আরয করলঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم! আমি আমার ক্বওমের (গোত্রের বা দলের) সরদার। আমি তাদের (ক্বওমের লোকদের) কোন জিনিসের হুকুম দেব? ইরশাদ করেনঃ “তাদের সালাম করার এবং জরুরী কথা ব্যতীত চুপ থাকার হুকুম দাও।”
(মুকারিমুল আখলাক লিল খারাইতি, বাবু হিফযুল লিসান, পৃঃ ৯২, হাদীসঃ ১৯৬)
আঁক্বা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم অনেক বেশি চুপ থাকতেন
======
হযরত সাইয়্যেদুনা জাবের ইবনে সামুরাহ رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বর্ণনা করেন, রাসূলে পাক صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم অনেক বেশি চুপ থাকতেন।
(মুসনাদে ইমাম আহমদ, মুসনাদুল বাসরিয়্যিন, হাদীসে জাবির ইবনে সামুরাহ, ৭/৪০৪, হাদীসঃ ২০৮৩৬)
[প্রখ্যাত মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত, হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান ন’ঈমী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ মিরআতুল মানাজীহ, খন্ড ৮, পৃঃ ৮১ তে এর আলোচনায় বলেনঃ চুপ থাকা অর্থ দুনিয়াবী কথাবার্তা থেকে চুপ থাকা। নাহলে হুযুর আক্বদাস صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এঁর জবান শরীফ আল্লাহ عَزَّوَجَلَّ এঁর যিকিরে তাজা থাকত। প্রয়োজন ছাড়া মানুষের সাথে কথা বলতেন না। এই আলোচনা জায়েয কথাবার্তার। না জায়েয কথা তো পুরো হায়াতে তৈয়্যবাতে কোনদিন আসেই নি। মিথ্যা, গীবত, চুগলী অন্যান্য পুরো হায়াতে মোবারাকাতে একবারও জবান মোবারকে আসে নি। হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আপাদমস্তক হক। তারপরও তার পর্যন্ত বাতিল প্রবেশ করবে কীভাবে।]
হযরত সাইয়্যিদুনা ত্বারিক বিন আশইয়াম رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বর্ণনা করেন, আমরা বারগাহে রিসালাতে বসে থাকতাম। আমরা হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এঁর চাইতে বেশি কাউকে চুপ থাকতে দেখিনি আর যখন সাহাবায়ে কেরাম (আলাইহিমুস সালাম) বেশি কথা বলতেন তখন তিনি صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم হেসে দিতেন।
(মু’জামে কবীর, ৮/৩২০, হাদীসঃ ৮১৯৮)
চারটি সুন্দর মাদানী ফুল
=======
হযরত সাইয়্যিদুনা আনাস বিন মালেক رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বর্ণনা করেন, মুস্তফা জানে রহমত صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেনঃ চারটি ব্যাপার যা একজন ব্যক্তির মধ্যে কমই একত্রিত হতে পারেঃ (১) চুপ থাকা যা ইবাদতের ভিত্তি (২) আল্লাহ عَزَّوَجَلَّ এঁর নিকট মিনতি (৩) দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি (৪) অল্পে তুষ্টি।
(মওসুয়াহ উবনে আবী দুনিয়া, কিতাবুস সামত ওয়া আদাবুল লিসান, ৭/৩১১, হাদীসঃ ৫৬০)
ভালো কথা বলো অথবা চুপ থাক
=======
হযরত সাইয়্যিদুনা আবু হোরায়রা এবং হযসাইয়্যিদুনা শুরাইহ খুযা’ঈ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেনঃ “যে আল্লাহ عَزَّوَجَلَّ এবং আখিরাতের ওপর ঈমান রাখে তাঁর উচিৎ ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।”
(বুখারী, কিতাবুল আদাব, ৪/১৩৬, হাদীসঃ ৬১৩৫, ৬১৩৬ হযরত আবু হোরায়রা হতে)
হযরত সাইয়্যিদুনা হাসান বসরী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বর্ণনা করেনঃ আমাদের এই কথা বলা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এঁর মোবারক ইরশাদ “আল্লাহ عَزَّوَجَلَّ ঐ বান্দার ওপর রহম করুন! যে কথা বলে তো ফায়দা (সওয়াব) পায় আর চুপ থাকে নিরাপদ থাকে।
(শুয়াবুল ঈমান, বাবু হিফযুল লিসান, ৪/২৪১, হাদীসঃ ৪৯৩৪)
♣♣চতুর্থ ১০টি উপদেশ
চুপ থাকাতে নিরাপত্তা আছে
=======
আমীরুল মু’মিনীন হযরত সাইয়্যিদুনা আলীয়্যুল মুরতাদ্বা (কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুল কারীম) বলেনঃ নিজেকে লুকাও, তোমার (খারাপ) আলোচনা করা হবে না। আর চুপ থাক নিরাপদ থাকবে। হযরত সাইয়্যিদুনা ইবনে মাসউদ رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বলেনঃ হে জবান! ভালো কথা বলো, ভালো থাকবে। আর কথা বলো না তাহলে লজ্জিত হওয়া থেকে নিরাপদ থাকবে। হযরত সাইয়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বলেনঃ হে জবান! ভালো কথা বলো, তোমার ভালো হবে। আর খারাপ কথা বলা থেকে চুপ থাক নিরাপদে থাকবে।
হক কথা বলো অথবা চুপ থাক
======
হযরত সাইয়্যিদুনা মায়মূন বিন মিহরান رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বর্ণনা করেনঃ এক ব্যক্তি হযরত সাইয়্যিদুনা সালমান ফারেসী رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ এঁর খিদমতে হাযির হয়ে আরয করলঃ আমাকে নসীহত করুন। তিনি বললেনঃ কথা কম বল। সে আরয করলঃ যে লোকজনের মাঝে থাকে তার কথাবার্তা বলা ছাড়া কোন উপায় নেই। তিনি বলেনঃ যদি কথা বলতেই হয় তাহলে হক কথা বলো অথবা চুপ থাক।
জান্নাতে নিয়ে যাওয়া আমল
=====
হযরত সাইয়্যিদুনা সুফিয়ান ইবনে উয়াইনাহ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বর্ণনা করেনঃ হযরত সাইয়্যিদুনা ঈসা রূহুল্লাহ (আলাইহিস সালাম) এর বারগাহে লোকজন আরজ করলঃ আমাদের এমন আমল বলুন যার মাধ্যমে আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। ইরশাদ করেনঃ কখনও কথা বলো না। লোকজন আরয করলঃ আমরা এর শক্তি রাখিনা। ইরশাদ করলেনঃ তাহলে ভালো কথা ব্যতীত কিছু বলো না।
আমীরুল মু’মিনীন হযরত সাইয়্যিদুনা আলীয়্যুল মুরতাদ্বা (কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুল কারীম) বর্ণনা করেনঃ চুপ থাকা মুহাব্বতের ভিত্তি।
হিকমতের মূল
======
হযরত সাইয়্যিদুনা ওয়াহব ইবনে মুনাব্বিহ رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বর্ণনা করেনঃ সকল ডাক্তারদের (হেকিম বা রোগের চিকিৎসকদের) এর ওপর ঐক্যমত আছে যে, ঔষধের ভিত্তি হল সংযম এবং সকল হেকমতওয়ালাদের এর ওপর ঐক্যমত আছে যে, হিকমতের বুনিয়াদ হলো চুপ থাকা।
কথা বলা রৌপ্য হলে চুপ থাকা স্বর্ণ
=====
হযরত সাইয়্যিদুনা সুলায়মান (আলাইহিস সালাম) ইরশাদ করেনঃ যদি কথা বলা রৌপ্য হয় তাহলে চুপ থাকা স্বর্ণ।
কোন কথাবার্তা রৌপ্য?
======
হযরত সাইয়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহমতুল্লাহি আলাইহি) কে যখন হযরত সাইয়্যিদুনা লুক্বমান (আলাইহিস সালাম) এঁর ঐ কথার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হল যা তিনি তাঁর পুত্রকে বলেছিলেন যে, “যদি কথা বলা রৌপ্য হয় তাহলে চুপ থাকা স্বর্ণ।”, তখন হযরত হযরত সাইয়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহমতুল্লাহি আলাইহি) বললেনঃ “যদি আল্লাহ عَزَّوَجَلَّ এঁর আনুগত্যের ব্যাপারে কথা বলা রৌপ্য হয় তাহলে তাঁর নাফরমানীমূলক কথাবার্তা থেকে চুপ থাকা স্বর্ণ।”
সোহবতের জন্য উত্তম ব্যক্তি
======
আমীরুল মু’মিনীন হযরত সাইয়্যিদুনা উমর ইবনে আব্দুল আযীয رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বলেনঃ “যখন তোমরা অনেক বেশী চুপ থাকা এবং মানুষের নিকট থেকে দূরে থাকা কোন বান্দাকে তখন তার নৈকট্যে (সোহবতে) চলে যাও। কারণ তাঁকে হিকমত দেয়া হয়েছে।
নবীর জন্য নমনীয়তা কিন্তু আমাদের জন্য সতর্কতা
====
হযরত সাইয়্যিদুনা দাঊদ (আলাইহিস সালাম) ইরশাদ করেনঃ “আমি কথা বলে অনেক বার লজ্জিত হয়েছি। কিন্তু চুপ থেকে চুপ থেকে কখনো লজ্জিত হই নি।”
হযরত সাইয়্যিদুনা উহায়ব ইবনে ওয়ারদ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ আমি একাকীত্বকে জবানকে চুপ রাখার মধ্যে পেয়েছি।
ইবাদতের কুঞ্জি (ভান্ডার)
=====
হযরত সাইয়্যিদুনা সুফিয়ান সওরী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ বলা হয় যে, দীর্ঘ চুপ থাকা ইবাদতের ভান্ডার।
ইবাদতের শুরু চুপ থাকাতে তারপর
======
হযরত সাইয়্যিদুনা সুফিয়ান সওরী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ “ইবাদতের শুরু চুপ থাকা। অতঃপর ইলম হাসিল করা এরপর তা মনে রাখা তারপর তার উপর আমল করা। সবশেষে তা ছড়িয়ে দেয়া (প্রচার করা)।
♣♣পঞ্চম ১০টি উপদেশঃ
পূর্বের যমানার নেক লোক কম কথা বলতেন
======
হযরত সাইয়্যিদুনা ইমাম মুজাহিদ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ সলফে সালেহীন (পূর্বের যমানার নেক লোক) কম কথা বলতেন।
হযরত সাইয়্যিদুনা আবদুর রহমান ইবনে শুরাইহ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ যদি মানুষ নিজের জন্য কোন কিছু গ্রহন করত তাহলে চুপ থাকার চেয়ে উত্তম (মর্যাদাপূর্ণ) কোন জিনিষ গ্রহন করত না।
বুদ্ধিমানের সৌন্দর্য
======
হযরত সাইয়্যিদুনা মুসা ইবনে আলী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ “বনী ইসরাঈলের এক রাহেব (অর্থাৎ দুনিয়া থেকে আলাদা থেকে ইবাদতকারী ব্যক্তি) এঁর বানী হল- নারীর সৌন্দর্য লজ্জা আর বুদ্ধিমানের সৌন্দর্য হল চুপ থাকা।”
চুপ থাকা আলেম উত্তম নাকি কথা বলা আলেম? (ঘটনা)
=====
হযরত সাইয়্যিদুনা আবু আবদুল্লাহ খারাশী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ আমি হযরত সাইয়্যিদুনা উমর ইবনে আবদুল আযীয رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ এঁর নিকট আগত এক আলেম সাহেবকে এটা বলতে শুনেছি যে, চুপ থাকা আলেম কথা বলা আলেমের মত (মর্যাদাপূর্ণ)। হযরত সাইয়্যিদুনা উমর ইবনে আবদুল আযীয رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বলেনঃ আমি এটা মনে করি যে, কথা বলা আলেম কিয়ামতের দিন কথা না বলা আলেমের চেয়ে উত্তম হবে। কারণ কথা বলা আলেমের সুগন্ধ (নেক কথাবার্তা) মানুষের নিকট পৌছে কিন্তু চুপ থাকা আলেমের শুধু নিজের ফায়দা হাসিল হয়। ঐ আলেম সাহেব বলেনঃ “আমীরুল মু’মিনীন! তাহলে কথা বলার পরীক্ষা কিভাবে হলো?” এটা শুনে হযরত তিনি رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলেন।
হযরত সাইয়্যিদুনা আবু মুসলিম খাওলানী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ “রোযাদারের ঘুম তাসবীহ স্বরুপ আর রোযাদার সে-ই যে চুপ থাকে আর অনর্থক কথাবার্তা না করে।”
চারজন আলেম আর এক বাদশাহ
===
হযরত সাইয়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ এক বাদশাহর নিকট চারজন আলেম আসলে বাদশাহ তাঁদের বললেনঃ আপনারা একটি একটি কথা বলুন। তাঁদের মধ্যে একজন বললেনঃ আলেমদের উত্তম জ্ঞান হলো “চুপ থাকা”। দ্বিতীয়জন বললেনঃ মানুষের জন্য সবচেয়ে উত্তম ব্যাপার হল, সে তাঁর ক্ষমতা এবং বুদ্ধির সীমা (গভীরতা) জেনে নেয় আর সেই মোতাবেক কথা বলে। তৃতীয়জন বললেনঃ সবচেয়ে সতর্ক ব্যক্তি সে যে মজুদ নেয়ামতের ওপর সন্তুষ্ট হয় না আর তার ওপর ভরসাও করে না। আর তার জন্য কোন কষ্টও করে না। চতুর্থ ব্যক্তি বললেনঃ তকদীরের ওপর সন্তুষ্ট থাকা এবং অল্পে তুষ্ট থাকার চেয়ে বড় শরীরের জন্য আরামদায়ক কোন জিনিস নেই।
বেশী বলাতে মর্যাদা চলে যেতে থাকে
====
হযরত সাইয়্যিদুনা মুসহির رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ “চুপ থাকা নেক লোকদের দোয়া। হযরত সাইয়্যিদুনা সা’সাহ ইবনে সুহান رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ চুপ থাকা ভদ্রতার ভিত্তি।” হযরত সাইয়্যিদুনা মুহাম্মদ ইবনে নযর হারেছী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলতেনঃ “বেশী কথা বলার কারণে মাহাত্ম্য চলে যায়।
চুপ থাকার দুইটি ফায়দা
======
হযরত সাইয়্যিদুনা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ “চুপ থাকাতে মানুষের দুইটি ফায়দা আসিল হয়ঃ (১) দ্বীনে নিরাপত্তা এবং (২) অন্যের কথা বোঝা।” হযরত সাইয়্যিদুনা ফুদ্বায়ল ইবনে ই’য়ায رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ (নফল) হজ্ব, জিহাদ এবং ইসলামী (রাষ্ট্রের) সীমানা পাহাড়া দেওয়াও জবানের হেফাজত করার চেয়ে উত্তম নয়।
মানুষের মধ্যে অন্ধ, বধির, বোবা হয়ে থাকো (ঘটনা)
=====
হযরত সাইয়্যিদুনা ওয়াহ্ব ইবনে মুনাব্বিহ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ এঁর কাছে এক ব্যক্তি বললঃ মানুষের ব্যবহার দেখে আমার মন বলে তাদের সাথে কোন সম্পর্ক না রাখি। তিনি رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ “এমনটা করো না। কারণ, মানুষের তোমার এবং তোমার মানুষের প্রয়োজন। বরং তুমি তাদের মাঝে শুনতে পাওয়া বধির, দেখতে পাওয়া অন্ধ, আর বলতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও বোবা হয়ে যাও।”
চুপ থাকার সময় আকল (বুদ্ধি) উপস্থিত থাকে
====
হযরত সাইয়্যিদুনা উহায়ব ইবনে ওয়ারদ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ মানুষ যখন চুপ থাকে তখন তার সম্পূর্ণ আকল (বিবেক-বুদ্ধি) পরিপূর্ণ রুপে উপস্থিত থাকে। আমীরুল মু’মিনীন হযরত সাইয়্যিদুনা উমর ইবনে আবদুল আযীয رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বলেনঃ “যে তার কথাবার্তাকেও আমল মনে করে সে কম কথা বলে।”
চার বাদশাহ (ঘটনা)
====
হযরত সাইয়্যিদুনা আবু বকর ইবনে ‘আইয়াশ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ চার দেশ- পারস্য, রোম, হিন্দ আর চীনের বাদশাহ এক জায়গায় একত্র হলেন এবং চারজন বাদশাহ এমন চারটি কথা বললেন যেন একই ধনুক থেকে চারটি তীর নিক্ষেপ করলেন। প্রথমজন বললেনঃ আমি কথা বলার চাইতে কথা না বলাতে বেশি সক্ষম। দ্বিতীয় জন বললেনঃ যে কথা আমি মুখ থেকে বের করেছি তা আমার ওপর প্রভাব ফেলে আর যা আমি মুখ থেকে না বের করেছি আমি তার ওপর প্রভাব ফেলি। তৃতীয় জন বললেনঃ আমি কখনো না বলা কোন কথার জন্য লজ্জিত হইনি। কিন্তু বলা কথার কারণে অবশ্যই লজ্জিত হয়েছি। চতুর্থ জন বললেনঃ আমি কথা বলা লোকের ওপর আশ্চর্য হই যে, যদি ঐ কথাই তার তার নিকট ফিরে যায় তাহলে তার ক্ষতি হবে আর যদি না যায় তাহলে কোন ফায়দাও (উপকারও) হবে না।
তাঁদের জবানে হিকমত ভরা কথা এলো
====
হযরত সাইয়্যিদুনা আবু আলী রুযবারী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী লোক চুপ থাকা এবং মনোযোগ ও চিন্তা (ফিকির) করার কারণে হিকমতের ওয়ারিশ (উত্তরাধীকারী) হয়েছে। আল্লাহ عَزَّوَجَلَّ তাঁদের জবানে এত হিকমত হিকমতে ভরা কথা দিয়েছেন যে, ওগুলো সে এবং তাঁর পরওয়ারদেগার ছাড়া অন্য কেউ জানে না।
♣♣ষষ্ঠ ১০টি উপদেশঃ
সাইয়্যিদুনা ইবরাহীম বিন আদহাম চুপ থাকেন (ঘটনা)
====
হযরত সাইয়্যিদুনা ইবরাহীম বিন বাশশার رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ একবার আমরা কিছু মানুষ একত্র হলে প্রত্যেকে কিছু না কিছু কথাবার্তা বলি কিন্তু হযরত সাইয়্যিদুনা ইবরাহীম বিন আদহাম رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ চুপ থাকেন। তিনি কোন কথা বলেন নি। যখন লোকজন চলে গেল তখন আমি এই ব্যাপারে তার সাথে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলে তিনি বলেনঃ “কথাবার্তা বেওয়াকুফের বেওয়াকুফি আর বুদ্ধিমানের বুদ্ধি প্রকাশ করে।” আমি বললামঃ তাহলে আপনি কেন কথা বলেননি? তিনি বলেনঃ “আমি কথা বলে লজ্জিত হওয়ার চেয়ে চুপ থেকে কষ্ট পাওয়াকে পছন্দ করি।
চুপ থাকাই সবর (ধৈর্য)
=====
হযরত সাইয়্যিদুনা বিশর হাফী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ “সবর (ধৈর্য) হলো চুপ থাকা আর চুপ থাকাই হলো সবর (ধৈর্য) আর কথা বলা ব্যক্তি চুপ থাকা ব্যক্তির চেয়ে বেশি পরহেযগার নয়। শুধুমাত্র এমন আলেম যে কথা বলার সময়েই কথা বলে আর চুপ থাকার সময় চুপ থাকে (সে আরো বেশি পরহেযগার)।
চুপ থাকার ছোট ফায়দা হলো নিরাপদে থাকা
====
হযরত সাইয়্যিদুনা আহমদ বিন খাল্লাদ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ এঁর পিতা বলেনঃ চুপ থাকার ছোট (কম সে কম) ফায়দা হল নিরাপদে থাকা আর কথা বলা ব্যক্তির ছোট (কম সে কম) ক্ষতি হলো শর্মিন্দা (লজ্জিত) হওয়া। অনর্থক কথা বলার চেয়ে চুপ থাকা হলো সবচেয়ে বড় হিকমত। আর ইলম (জ্ঞান) ব্যতীত কথা বলা ব্যক্তি ভুল (করা) থেকে বাঁচতে পারে না। জানা কথা বলার চেয়ে চুপ থাকা ব্যক্তিও হিকমত আছে।
পরিপূর্ণ আদবের চারটি ভালো দিক
====
হযরত সাইয়্যিদুনা সাহল ইবনে আবদুল্লাহ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ এই চারটি ভালো দিক থাকলে “আদব” তার পূর্ণতায় পৌছায়ঃ (১) তওবাহ (২) নফসের খাহেশ কে বাধা দেয়া (৩) চুপ থাকা আর (৪) একাকী থাকা।
কামেল (পরিপূর্ণ) মু’মিনের চারটি ভালো দিক
====
হযরত সাইয়্যিদুনা সুফিয়ান বিন উয়াইনাহ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ বর্ণিত আছে যে, মু’মিন ঐ সময় (কামেল) মু’মিন হয় যখন সে চুপ থাকা আয়ত্ত্ব করে। তার কথাবার্তা ভালো হয়। মিথ্যা কথা বলে না। আর পরহেযগারীতে ইখলাছ (বিশুদ্ধতা) থাকে (লোক দেখানো ও রিয়া থেকে বেঁচে থাকে)।
মানুষের মাঝে সতর্ক থাকার মাদানী ফুল
====
হযরত সাইয়্যিদুনা ইবরাহীম বিন আদহাম رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ মজলিসে (অর্থাৎ মানুষের মাঝখানে থাকলে) সতর্কতা ও দুরদর্শিতা হলো এই যে, ভুল থেকে বাঁচার জন্য শুধুমাত্র প্রয়োজনের সময়ই কথা বলে। তুমি যখন কোন বিষয়ের হুকুম দাও তখন বিশ্বাসের সাথে দাও। যখন প্রশ্ন কর তখন স্পষ্ট করে বল। যখন কোন জিনিস চাও তখন ভালো ভাবে চাও। আর যখন কোন কিছুর খবর দাও তখন তাহকীকের (জানার) পর দাও। বেশি কথা বলা থেকে এবং কথাবার্তায় অতিরঞ্জন থেকে বাঁচ কারণ যে বেশি কথা বলে সে ভুলও বেশি করে।
কথা বলা ব্যক্তিও কি নাজাত পাবে?
====
হযরত সাইয়্যিদুনা বিশর হাফী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ হযরত সাইয়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আওন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ চুপ থাকতেন। তাঁর নিকট আরয করা হলো যে, আপনি কেন কথা বলেন না? তিনি বলেনঃ “কথা বলা ব্যক্তিও কি নাজাত পাবে?”
হযরত সাইয়্যিদুনা ইসহাক ইবনে খালাফ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ “কথাবার্তাতে সতর্কতা অবলম্বন করা সোনা – রুপার (কেনার) ব্যপারে সতর্কতার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
২০ বছর যাবৎ চুপ থাকার অভ্যাস
====
হযরত সাইয়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আবু যাকারিয়া দামেশকি رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ আমি ২০ বছর যাবৎ অনর্থক কথা বলা থেকে বাঁচার জন্য চুপ থাকার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার উদ্দেশ্যে কামিয়াব হতে পারিনি। কিন্তু আমি তারপরও তা হাসিল করার চেষ্টা করে যাব। কেউ একজন জিজ্ঞাসা করলঃ সেটা কি? তিনি বলেনঃ অনর্থক কথা থেকে চুপ থাকা।
৪০ বছর মুখে পাথর রেখেছেন
=====
হযরত সাইয়্যিদুনা আরত্বাহ্ ইবনে মুনযির رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ এক ব্যক্তি ৪০ বছর পর্যন্ত মুখে পাথর রেখে চুপ থাকা শিখেন। শুধু খাওয়া, পান করা আর ঘুমানোর জন্য মুখ থেকে পাথর বের করতেন।
পাহাড় খাওয়া জন্তু
====
এক কুরায়শী বুযুর্গ বলেনঃ কোন আলেম সাহেবের নিকট জিজ্ঞেস করা হলো যে, আপনি কেন চুপ থাকেন? তিনি বলেনঃ আমি আমার জবানকে পাহাড় খাওয়া জন্তু হিসেবে পেয়েছি। আমি ভয় করি যে, যদি আমি তাকে খোলা ছেড়ে দেই তাহলে এটা আমাকে কেটে খেয়ে ফেলবে।
♣♣সপ্তম ১০টি উপদেশঃ
বাতাসে চলা মানুষ (ঘটনা)
=====
হযরত সাইয়্যিদুনা ওয়াহব ইবনে মুনাব্বিহ্ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ বনী ইসরাঈলে দুইজন বুযুর্গ ইবাদতের এমন মর্তবায় উপনীত ছিলেন যে, পানিতে চলতেন। একবার তারা সমুদ্রের ওপর চলতে লাগলেন। তখন তারা একজন বুযুর্গকে দেখলেন যে, সে বাতাসে চলছেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলোঃ হে আল্লাহ عَزَّوَجَلَّ এঁর বান্দা! আপনি এই মকামে কিভাবে পৌছালেন? তিনি বলেনঃ দুনিয়ার ওপর কিছুটা সন্তুষ্ট থাক। আমি নিজের নফসকে খাহেশাত (ইচ্ছা) আর জবানকে অনর্থক কথা বলা থেকে বিরত রেখেছি। ঐ কাজে মশগুল হয়ে গেছি যা পরওয়ারদিগার عَزَّوَجَلَّ আমাকে হুকুম দিয়েছেন। আমি চুপ থাকা আয়ত্ব করে রেখেছি। যদি আমি আল্লাহ عَزَّوَجَلَّ এঁর ওপর কোন কথার কসম খেয়ে নেই তো তিনি আমার কসম পুরো করে দেন। যদি তাঁর নিকট চাই তিনি আমাকে দান করেন।
পাখী আওয়াজ করে ফেঁসে গেল! (ঘটনা)
======
হযরত সাইয়্যিদুনা মাখলাদ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ বনী ইসরাঈলে একজন ব্যক্তি এমন ছিলেন, যিনি প্রায় সময়ই চুপ থাকতেন। বাদশাহ এর কারণ জিজ্ঞাসা করার জন্য কাউকে তাঁর নিকট প্রেরন করেন। কিন্তু তিনি কোন কথা বলেননি। অতঃপর বাদশাহ মানুষের সাথে তাকে শিকার করার জন্য প্রেরণ করলেন যদি কোন শিকার দেখে সে কথা বলেন। মানুষ এক পাখিকে অনেক জোড়ে চিৎকার করতে দেখে দ্রুত বায পাখি ছেড়ে দিল যা গিয়ে তাকে ধরে ফেলল। এটা দেখে ঐ ব্যক্তি বলেনঃ প্রত্যেক জিনিসের জন্য চুপ থাকা ভালো (কারণ তাতে নিরাপত্তা আছে), এমনকি পাখির জন্যও।
হযরত সাইয়্যিদুনা ইবরাহীম নখয়ী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ সাহাবায়ে কেরাম (আলাইহিমুর রিদ্বওয়ান) দেঁর মজলিসে যে বেশি চুপ থাকত সে-ই তাঁদের নিকট সবচেয়ে উত্তম হতেন।
দুইটি ভালো দিক
======
হযরত সাইয়্যিদুনা ইয়াহইয়া বিন আবু কাছীর رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ দুইটি জিনিস (অর্থাৎ ভালো দিক) যে ব্যক্তির মধ্যে দেখবে তখন জানবে ঐ দুইটি ছাড়াও তাঁর সকল বৈশিষ্ট্য ভালো হবেঃ (১) জবানকে আয়ত্ত্বে রাখা (২) নামাযের হিফাযত করা।
বড় হেকমত
====
হযরত সাইয়্যিদুনা আবু সালামাহ সান’আনী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ “কম কথা বলা বড় হেকমত। এজন্য, চুপ থাক। কারণ, এটা উত্তম পরহেযগারী। এরা দ্বারা বোঝা হালকা আর গুনাহ্ কম হয়।”
চুপ থাকা শিক্ষা করা অত্যন্ত জরুরী
====
হযরত সাইয়্যিদুনা মারওয়ান ইবনে মুহাম্মদ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বর্ণনা করেনঃ হযরত সাইয়্যিদুনা ইবরাহীম বিন আদহাম رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ এঁর নিকট জিজ্ঞেস করা হলো যে, অমুক ব্যক্তি ইলমে নাহু শিখছে তখন তিনি বললেনঃ “তার চুপ থাকা শিক্ষা করা বেশি জরুরী।”
বলার চেয়ে বেশি শোনার বাসনা রাখ!
====
হযরত সাইয়্যিদুনা আবু দারদা رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বলেনঃ যে ভাবে কথাবার্তা শিক্ষা কর সেভাবে চুপ থাকাও শিক্ষা কর। কেননা, চুপ থাকা অত্যন্ত বড় হিকমত। বলার চেয়ে বেশি শোনার বাসনা রাখ আর অনর্থক জিনিসের ব্যপারে কথাবার্তা একেবারেই না কর।
ইবাদতের নয়টি অংশ চুপ থাকাতে
=====
হযরত সাইয়্যিদুনা আনাস رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বর্ণনা করেন, হুযুর নবীয়ে রাহমাত صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেনঃ ইবাদতের ১০ টি অংশ। নয়টি অংশ চুপ থাকাতে আর একটি অংশ হালাল অর্জনের মধ্যে আছে।
(মুসনাদুল ফিরদৌস, ২/৮৬, হাদীসঃ ৪০৬২)
ভালো থাকার নয়টি অংশ
=====
হযরত সাইয়্যিদুনা ইবনে আব্বাস رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বর্ণনা করেন, রাসূলে পাক صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেনঃ ভালো থাকার ১০ টি অংশ আছে। নয়টি অংশ চুপ থাকায় আর একটি অংশ একাকীত্বে আছে।
(মুসনাদুল ফিরদৌস, ২/৮৫, হাদীসঃ ৪০৫২)
আমীরুল মু’মিনীন হযরত সাইয়্যিদুনা আলীয়্যুল মুরতাদ্বা (কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুল কারীম) বলেনঃ বেশি চুপ থাকাতে ভয় সৃষ্টি হয়।
কথা বলা ঔষধের মত
====
হযরত সাইয়্যিদুনা আমর ইবনুল আছ رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বলেনঃ কথা বলা ঔষধের মত, যা অল্প নিবে উপকার পাবে। আর যদি অনেক বেশি নাও তাহলে তোমাকে মেরে ফেলবে। আমীরুল মু’মিনীন হযরত সাইয়্যিদুনা আলীয়্যুল মুরতাদ্বা মাওলা মুশকিল কুশা (কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুল কারীম) বলেনঃ যখন আকল পরিপূর্ণ হয়ে যায় তখন কথা বলা কম হয়ে যায়।”
বর্ণিত আছে যে, “চুপ থাকা নিরাপত্তার ভান্ডার।”
বাদশাহ বাহ্রাম আর পাখি
====
বর্ণিত আছে যে, বাদশাহ বাহরাম এক রাতে কোন এক গাছের নিচে বসে ছিল তখন সে গাছ থেকে এক পাখির আওয়ায শুনে তীর মেরে তাকে ফেলে দিল। তারপর বললঃ জবানের হিফাযত করা মানুষ এবং পাখি দুজনেরই করা উপকারী। যদি সে (পাখি) তার জবানের হেফাজত করত (আর না বলত) তাহলে ধ্বংস হত না।
♣♣অষ্টম ১০টি উপদেশঃ
মুখ একটি আর কান দুইটি কেন?
====
ইউনানী ডাক্তার বুক্বরাত এক ব্যক্তিকে অনেক বেশি কথা বলতে শুনে বলেনঃ হে অমুক! আল্লাহ عَزَّوَجَلَّ মানুষের জন্য মুখ একটি আর কান দুইটি বানিয়েছেন যাতে কথা বলে কম আর শোনে বেশি।
হযরত সাইয়্যিদুনা ফুযায়ল ইবনে ইয়ায رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ “কথাবার্তা বলা ব্যক্তির ওপর আমাদের বিপদের আশংকা আছে।”
চুপ থাকার ফযীলতের ওপর আরবী কবিতার তর্জমা
নফসের জন্য উত্তম পুঁজি
=====
হযরত সাইয়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ আমি আমার নফসের তরবীয়্যত (বিশুদ্ধতার শিক্ষা) করতে লাগলাম। তখন আল্লাহর ভয়ের পর সর্ব অবস্থায় মিথ্যা আর মানুষের গীবত থেকে বেঁচে থাকাকে নফসের জন্য উত্তম আদব ও পুঁজি পেলাম। মিথ্যা আর গীবত কে আল্লাহ عَزَّوَجَلَّ নিজের কিতাবে হারা ঘোষনা করেছেন। আমি রেযামন্দি ও অসন্তষ্টি দুই অবস্থায়ই নফসকে বললামঃ ইলম আর বুরদবারী (অর্থাৎ সবর ও বিনয়) ভদ্র মানুষের সৌন্দর্য। হে নফস! যদি তোমার কথা রৌপ্য হয় তাহলে চুপ থাকা স্বর্ণ।
সকল ভালো আছে চুপ থাকায় আর একাকীত্বে
====
হযরত সাইয়্যিদুনা মনছুর বিন ইসমাঈল ফক্বীহ্ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ “সকল ভালো আছে চুপ থাকা আর একাকী থাকাতে। যদি তুমি এই দুটি করতে চাও তাহলে অল্প খাদ্যে তুষ্ট থাক।
দুনিয়া ও আখেরাতে প্রসংসার যোগ্য
=====
এক কবি বলেনঃ (১) মানুষ বলেঃ তুমি খুব চুপচাপ থাক। আমি তাদের বলিঃ আমার চুপ থাকা বোবা হওয়া অথবা উদাসীনতার কারণে নয় (২) চুপ থাকা দুনিয়া ও আখেরাতে প্রশংসার যোগ্য। আর আমার কঠিন কথা বলার চেয়ে চুপ থাকা অনেক বেশি পছন্দের। (৩) মানুষের মধ্য থেকে কেউ বললঃ আপনি ঠিক বলেছেন। কিন্তু ভালো কথা বলাতে ক্ষতি কি? আমি বলিঃ তুমি আমাকে হিংস্র বানানোর চেষ্টা করছ। (৪) যে নেকীকে জানেই না আমি তার সামনে নেকীর কথা কী বলব! আমি কি অন্ধের সামনে অন্ধকারে রত্ন ছিটাবো?
কথা বলা বার বার টেনশনে ফেলে দেয়
====
হযরত সাইয়্যিদুনা আবু হাতেম মুহাম্মাদ ইবনে হিব্বান বুসতি رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেন, হযরত সাইয়্যিদুনা মুহাম্মাদ ইবনে আবদিল্লাহ যানজি বাগদাদী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ আমাকে বললেনঃ (১) তুমি চুপ থাকার কারণে হোঁচট খাওয়া থেকে সুরক্ষিত থাকবে আর বেশী বলার কারণে ভীত হয়ে যাবে। (২) এমন কথা বলা থেকে বিরত থাক যা বলার পর তোমার এটা বলতে হয় যে, হায়! আমি যদি এই কথা না বলতাম!
সবচেয়ে বড় রোগী
====
হযরত সাইয়্যিদুনা সালেহ বিন জানাহ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় মুসিবতে পতিত, সবচেয়ে বেশি ক্লান্ত এবং সবচেয়ে বড় রোগী হলো ঐ ব্যক্তি যার মুখ লাগামহীন এবং অন্তর নিয়ন্ত্রনহীন। এমন ব্যক্তি না সঠিক কথা বলতে পারে না চুপ থাকতে পারে। এইজন্য (১) কম কথা বলো এবং কথাবার্তার গুনাহ থেকে (আল্লাহ عز وجل এঁর কাছে) আশ্রয় চাও। কারণ, কিছু মুসিবত কথা বলার সাথে জড়িত। (২) নিজের জবানের হেফাযত কর আর তাকে বিপথে যাওয়া থেকে বাঁচাও যতক্ষন না সে একটি কয়েদীর মত হয়ে যায়। (৩) নিজের অন্তরকে জবানের কাছে সোপর্দ করে দাও আর বলোঃ “তোমাদের দুইজনের ওপর আবশ্যক হলো পরিমাপ করে কথা বলা।”
চুপ থাকা হলো অবুঝের জন্য পর্দা
=====
কবি জারীরের দাদা খাতাফী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ (১) আমি ঐ যুবককে দেখে আশ্চর্য হই, যে না বুঝে কথা বলে নিজেকে অপমানিত করে ফেলে আর তার চুপ থাকাতেও আশ্চর্য হই যে বুঝতে পেরেও চুপ থাকে। (২) অবুঝ ব্যক্তির জন্য চুপ থাকাই হলো পর্দা। নিশ্চয়ই চিন্তার দোষ-ত্রুটি মানুষের কথা বলার মাধ্যমেই প্রকাশ হয়।
চুপ থেকে দোষ-ত্রুটি লুকাও
=====
এক কবি বলেনঃ (১) যতটুকু সম্ভব চুপ থেকে দোষ-ত্রুটি লুকাও। কারণ, চুপ থাকাতে চুপ থাকা ব্যক্তির জন্য অনেক শান্তি রয়েছে। (২) যদি কোন কথার জবাব না জান তাহলে চুপ থাক কেননা অনেক প্রশ্নেরই একমাত্র উত্তর হল “চুপ থাকা”।
কথা বলা যদি রৌপ্য হয় তাহলে চুপ থাকা হলো স্বর্ণ
=======
হযরত সাইয়্যিদুনা আবু নজম হিলাল বিন মুক্বাল্লাদ বিন সা’দ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ (১) মানুষ বলেঃ আপনার চুপ থাকা হলো বঞ্চিত হওয়া। আমি তাদেরকে বলিঃ ”আল্লাহ عز وجل আমার জন্য যা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন তা আমি বিনা চাওয়াতে পেয়ে যাই। (২) আর যদি আমার কথা বলা রৌপ্য হয় তাহলে নিশ্চয়ই চুপ থাকা হলো স্বর্ণ।
আবদুল মালিক শারাকসী বলেনঃ (১) যখন তুমি কিছু বলতে বাধ্য হয়ে যাও তখনও বলো না। বরং চুপ থাকার খুঁটি শক্ত করে ধরে রাখ। (২) যদি তোমার কথা বলা রৌপ্য হয় তাহলে চুপ থাকা হলো স্বর্ণ।
এক কবি বলেনঃ (১) চুপ থাকা আবশ্যক করে নাও আর বিনা কারণে কথা বলো না। কারণ, কথা বলা ব্যক্তি (সর্বদা) ক্লান্ত থাকে। (২) যদি তোমার এই ধারণা হয় যে, কথা বলার তুলনা হলো রৌপ্যের ন্যায় তাহলে বিশ্বাস করে নাও যে, চুপ থাকা হলো স্বর্ণের মত।
চুপ থাকাই হলো উপকার ও নিরাপদে থাকা
====
হযরত সাইয়্যেদুনা আবুল হাসান মারওয়াযী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ (১) তোমার জীবনের কসম! সহ্যকারী ব্যক্তির জন্য সৌন্দর্য হলো সহ্য করার শক্তি। হয় তার অভ্যাস নয়তো অভ্যাস বানাতে হয়। (২) যদি কোন ব্যক্তির চুপ থাকা তার লজ্জার কারণে না হয় তবে নিশ্চয়ই তাঁর চুপ থাকা অনেক উপকারী এবং নিরাপদ।
এক কবি বলেনঃ কম কথা বল। তাতে কথাবার্তার ক্ষতি থেকে নিরাপদে থাকবে। চুপ থাকার জগৎ এই জগৎ (দুনিয়া) থেকে পৃথক (অন্যরকম)।
♣♣নবম ১৪টি উপদেশঃ
চুপ থাকা অনেক বড় অলঙ্কার
=====
হযরত সাইয়্যদুনা আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ (১) যেখানে কথা বলা দরকার নেই সেখানে চুপ করে থাকে মানুষের জন্য অনেক বড় অলঙ্কার। (২) সত্য কথা বলা আমার নিকট কসম খাওয়ার চেয়ে বেশি ভালো। (৩) আর ইজ্জত ও মাহাত্ম মানুষের এমন একটি নিদর্শন যা তার কপালে চমকাতে থাকে।
এক কবি বলেনঃ মুত্তাকী ও পরহেযগার ব্যক্তি নিজের জবানের হেফাযত করার জন্য কথা বলা থেকে বেঁচে থাকে যদিও সে সঠিক কথা বলতে পারে।
“নিশ্চুপ” ও “কথা বলা” ব্যক্তির ঘটনা
====
হযরত সাইয়্যিদুনা আবু হাতেম رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ দুই ব্যক্তি ইলম অর্জন করা শুরু করে। যখন আলেম হয়ে যায় তখন একজন “চুপ থাকা” অবলম্বন করে আরেকজন ”কথা বলায় অভ্যস্ত” হয়ে যায়। সে নিশ্চুপ ব্যক্তিকে একটি কবিতা লিখে পাঠায় যে, “আমি জীবনযাপনের সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি পেয়েছি জবানকে।” নিশ্চুপ ব্যক্তি জবাব দিলেনঃ ”আমি পরিপূর্ণতায় পৌছানোর জন্য জবানকে কাবু রাখার চেয়ে বড় (উপকারী) কিছু পাই নি।
জবানকে নিয়ন্ত্রনকারী-ই নিরাপদে থাকে
====
হযরত সাইয়্যিদুনা সুফিয়ান ইবনে ’উওয়াইনা رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ (১) কুপথে যাওয়া এবং মহব্বত থেকে নিজের মনকে খালি করে দাও আর সালাম দিয়ে এগুলোর পাশ দিয়ে চলে যাও। (২) চুপ থাকার রোগে মৃত্যুবরণ করা তোমার জন্য কথা বলার রোগে মৃত্যুবরণ করার চেয়ে ভালো। (৩) নিশ্চয়ই সেই ব্যক্তি নিরাপদে থাকে যে তার মুখকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখে।
মর্যাদাবান ব্যক্তির পরিচয়
====
হযরত সাইয়্যিদুনা ইবরাহীম বিন হারমাহ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ (১) আমি মানুষকে এক কঠিন অবস্থায় দেখতে পাচ্ছি। এইজন্য তুমি একটি কিনারা (কর্নার) আকড়ে থাক যতক্ষন না অবস্থা শেষ সীমা পর্যন্ত পৌছে না যায়। (২) কারণ, চলে যাওয়া ব্যক্তিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা যায় না। যখন জবান পিছলে যায় তখন কথা মুখ থেকে আলাদা হয়ে যায়। (৩) তুমি প্রত্যেক মর্যাদাবান ব্যক্তিকে ”চুপ থাকতে” দেখবে। আর অন্যকে দেখবে তারা কথা বলে নিজের সম্মান নষ্ট করছে।
বিতর্কে পড়ার চাইতে উত্তম
=====
আরেকজন কবি বলেনঃ (১) মানুষের সাথে ক্ষমাশীল আচরণ কর আর তার জন্য নিজের সম্মান ওয়াকফ করে দাও। (২) নিন্দা বেশি হতে থাকে তখন নিজের কান বন্ধ করে নাও। আর যখন অনর্থক কাজকর্ম হওয়ার আশংকা হয় তখন চুপ থাকা আবশ্যক করে নাও। (৪) কারণ, বিতর্কে পড়ার চেয়ে তোমার জন্য চুপ থাকা বেশি ভালো।
সফল কে?
====
হযরত সাইয়্যিদুনা আবু ‘আতাহিয়াহ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ (১) অনেক বেশী চুপ থাকা ব্যক্তিই সফল আর কথাবার্তার হেফাযতকারীর জন্য কথা বলা জিহাদ স্বরুপ। (২) সব কথার জবাব হয় না আর অপছন্দনীয় কথার জবাব তো চুপ থাকা। হযরত সাইয়্যিদুনা আবু ‘আতাহিয়াহ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ আরও বলেনঃ (১) যখন তুমি কথাবার্তার আসল উদ্দেশ্য পর্যন্ত পৌছে যাও তখন তার চেয়ে বেশি কথা বলার মধ্যে কোন উপকার নেই। (২) আর অকারণ কথা বলার চেয়ে চুপ থাকা মানুষের জন্য ভালো।
নেকীর কথা বল অথবা চুপ থাক
=====
এক কবি বলেনঃ (১) নেকীর কথা বল আর অনর্থক, সন্দেহপূর্ণ কথা, অশ্লীল কথা এবং অন্যের দোষ-ত্রুটি ধরা বন্ধ কর। (২) নিশ্চুপ, ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন, মনোযোগী হয়ে যাও। যদি কথা বলো তাহলে কম কথা বলো আর (৩) না বুঝে যে প্রশ্ন করে তার প্রশ্নের উত্তর দিও না আর যে ব্যপারে তোমাকে জিজ্ঞাসা করা না হয় সে ব্যপারে কথা বলো না।
চুপ থাকাই ভালো
====
উহাইনাহ বিন জুলাহ বলেনঃ (১) যতক্ষন চুপ থাকা কোন দোষ হয়ে না যায় যুবকদের জন্য ততক্ষন চুপ থাকাই ভালো। (২) আর যার কাছে উপকারী আকল না থাকে তার কথা আহাম্মকতাই হবে।
ঠোঁট বন্ধ রাখাতেই নিরাপত্তা রয়েছে
====
এক কবি বলেনঃ (১) যতক্ষন তুমি তোমার ঠোঁট বন্ধ রাখবে ততক্ষন নিরাপদে থাকবে। আর যদি ঠোঁট খুলতেই হয় তাহলে ভালো কথা বলো। (২) দীর্ঘ সময় চুপ হয়ে থাকা আয়ত্বকারী ব্যক্তির উদ্দেশ্য হলো নিন্দা এবং ভালো মন্দ বলা থেকে বেঁচে থাকা। (৩) এই জন্য তুমিও ভালো কথা বলো অথবা এত বেশি কথা বলো না যাতে তোমাকে ভালো মন্দ বলা হয়।
আগে পরিমাপ করো তারপর কথা বলো
====
আবদুল্লাহ ইবনে মু’য়াবিয়া ইবনে জা’ফর বলেনঃ (১) হে মানুষ! কখনো কোন কথা বলো না। কারণ, তুমি জানো না কোন কথা দ্বারা তোমাকে দোষী করা হবে। (২) চুপ থাকার খুঁটি শক্ত করে আঁকড়ে ধর। কারণ, চুপ থাকাতে অনেক হিকমত আছে আর যদি কথা বলতেই হয় তাহলে প্রথমে পরিমাপ কর তারপর কথা বলো। (৩) যখন মানুষ এমন বিতর্কে পড়ে যায় যার সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই তখন সেখান থেকে তুমি চলে যাও।
কথা বলে বার বার পস্তাতে হয়
====
হযরত সাইয়্যিদুনা আবু আতাহিয়াহ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ (১) যদি চুপ থাকা তোমার পছন্দ হয় তাহলে (জেনে রাখ) তোমার আগে নেককার লোকদেরও তা পছন্দ ছিল। (২) আর যদি চুপ থেকে তোমাকে একবার অপমানিত হতে হয় তাহলে বিশ্বাস করো কথা বলে তোমাকে অনেকবার অপমানিত হতে হবে। (৩) নিশ্চয়ই চুপ থাকা হলো নিরাপদে থাকা আর কথা বলে অনেক সময় দুশমনী ও ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। (৪) যখন এক অপদার্থ অন্য অপদার্থের কাছে থাকে তখন ক্ষতি ও অনর্থক কাজই বেশী হয়।
জবানের ব্যপারে কৃপণতা করাই ভালো
====
হযরত সাইয়্যিদুনা ইবরাহীম ইবনে আবু আবলাহ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ (১) যতক্ষন তোমরা জবানের ব্যাপারে “কৃপণতা” করতে থাকবে তক্ষন তা সুরক্ষিত থাকবে। এই জন্য তাকে লাগামহীন ছেড়ে দিও না। (২) চুপ থেকে রহস্যগুলো অন্তরে এমনভাবে গোপন রাখ যেমন ‘যবরজদ (সবুজ রঙের এক প্রকার মূল্যবান পান্না)’ এবং মূল্যবান পাথরকে লুকিয়ে রাখা হয়। (৩) কারণ, যে কথা তুমি ভরা মজলিসে বলে ফেলেছ কিয়ামত পর্যন্ত তা আর ফিরিয়ে নেয়া যাবে না। (৪) যেমনিভাবে পানকৃত পানি ফিরে আসবে না আর বাচ্চা গর্ভে ফিরে যেতে পারবে না।
বুদ্ধিমান ও মূর্খ
====
এক কবি বলেনঃ (১) যে চুপ থাকা আয়ত্ব করল সে ভয়ের কাপড় পড়ে নিল যা মানুষের কাছে তার দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে রাখবে। (২) বুদ্ধিমানের জবান তার অন্তরে আর মূর্খের অন্তর তার মুখে থাকে।
মানুষের চুপ থাকার উদ্দেশ্য
====
এক কবি বলেনঃ হে সালিমাহ! (১) নিজের অভ্যাস ত্যাগ কর আর নিন্দা না কর অথবা তার নিন্দা কর যাকে দুনিয়ার দুর্ঘটনা এমনভাবে ফেলে দিয়েছে যে, এখন আর উঠতে পারে না। (২) আমার ভাগ্য আমাকে সকল প্রকার সম্মান থেকে বাধা দিচ্ছে কিন্তু আমার সাহস সম্মান পর্যন্ত পৌছাতে কোন অবহেলা করতে দেয় না। (৩) যতক্ষন অবস্থা এমন থাকবে ততক্ষন আমি চুপ থাকব আর আজীবন কথা বলার জন্য আমার মুখ খুলব না। (৪) যদি চুপ থাকাতে কোন নিন্দাকারী আমার নিন্দা করে তাহলে আমি তাকে বলবঃ মানুষ অপমান ও এবং লজ্জিত হওয়া থেকে বাঁচার জন্যই চুপ থাকে।
সকল প্রশংসা আল্লাহ عز وجل এঁর জন্য যার তওফীকে কিতাব ”হুস্নুস্ সাম্ত ফিস ছাম্ত” সম্পূর্ণ হলো। অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আমাদের সরদার হযরত মুহাম্মদ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবায়ে কিরামের ওপর।