মৃত বাচ্চাদের জানাযার বিধান
মুসলমানদের বাচ্চা জীবিত জন্ম হলো, অর্থাৎ-শরীরের অধিকাংশ অংশ বাহির হওয়া পর্যন্ত জীবিত ছিলো অতঃপর মারা গেলো, তবে তার গোসল ও কাফন দিতে হবে এবং তার জানাযার নামায আদায় করতে হবে। আর যদি শরীরে অধিকাংশ অংশ বের হওয়ার পূর্বেই মারা যায় তবে তাকে ঐ অবস্থায় গোসল দিয়ে একটি কাপড়ে জড়িয়ে দাফন করে দিবে। তার জন্য সুন্নাত মোতাবেক গোসল ও কাফন নেই এবং নামাযও পড়া হবে না। মাথার দিক থেকে অধিকাংশের সীমা হচ্ছে;মাথা থেকে সীনা (বুক) পর্যন্ত। অতএব যদি তার মাথা বের হয়েছিল এবং চিৎকার করে কান্না করলো কিন্তু সীনা পর্যন্ত বের হওয়ার পূর্বেই মারা গেলো তবে তার জানাযা আদায় করা যাবে না। পায়ের দিক থেকে অধিকাংশের সীমা হচ্ছে পা থেকে কোমর পর্যন্ত। বাচ্চা জীবিত জন্ম হোক বা মৃত বা অপূর্ণাঙ্গ অবস্থায় প্রসব হোক তার নাম রাখতে হবে এবং তাকে কিয়ামতের দিন উঠানো হবে। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ১৫২, ১৫৪ পৃষ্ঠা।বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৮৪১ পৃষ্ঠা)
জানাযার লাশবাহী খাট কাঁধে নেয়ার সাওয়াব
হাদীসে পাকে রয়েছে: “যে ব্যক্তি জানাযাকে নিয়ে চল্লিশ কদম চলবে তার চল্লিশটি কবীরা গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হবে।” হাদীস শরীফে এটাও রয়েছে: “যে ব্যক্তি জানাযার চারটি পায়াকে কাঁধে নিবে আল্লাহ্ তাআলা তাকে পরিপূর্ণ (অর্থাৎ- স্থায়ী) ক্ষমা করে দিবেন।” (আল জাওহারাতুন নায়্যারাহ্, ১ম খন্ড, ১৩৯ পৃষ্ঠা। দুররে মুখাতার, ৩য় খন্ড, ১৫৮-১৫৯ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৮২৩ পৃষ্ঠা)
জানাযার লাশবাহী খাট কাঁধে নেওয়ার পদ্ধতি
জানাযা কাঁধে নেওয়া ইবাদত। সুন্নাত হচ্ছে: একের পর এক চারটি পায়াকে কাঁধে নেয়া এবং প্রতিবারে দশ কদম করে চলা। পূর্ণ সুন্নাত হচ্ছে: প্রথমে মাথার দিকের ডান পাশ কাঁধে নিবে এরপর ডান পায়ের দিকের ডান পাশ, অতঃপর মাথার দিকের বাম পাশ এবং সর্বশেষে পায়ের দিকের বাম পাশ কাঁধে বহন করবে এবং দশ কদম করে চলবে তাহলে মোট চল্লিশ কদম হবে। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৬২ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৮২২ পৃষ্ঠা) অনেকেই জানাযার শোভাযাত্রায় ঘোষণা করে থাকে যে, দুই কদম করে করে চলুন! তাদের উচিত হচ্ছে এভাবে ঘোষণা করা: “দশ কদম করে চলুন।”
বাচ্চার জানাযা বহন করার পদ্ধতি
ছোট বাচ্চার জানাযাকে যদি এক ব্যক্তি হাতে করে নিয়ে পথ চলে, এতে কোন অসুবিধা নেই আর তাই এক জনের পর অন্যজন করে হাতে নিয়ে পথ চলতে থাকুন। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৬২ পৃষ্ঠা) মহিলাগণ (ছোট হোক বা বড়, কারো) জানাযার সাথে যাওয়া না-জায়িয ও নিষিদ্ধ। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ১৬২ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৮২৩ পৃষ্ঠা)
জানাযার নামাযের পর ফিরে আসার মাসয়ালা
যে ব্যক্তি জানাযার সাথে রয়েছে তার জন্য জানাযার নামায আদায় না করে ফিরে আসা উচিত নয়। নামাযের পর মৃত ব্যক্তির অভিভাবকদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ফিরে আসতে পারবে আর দাফনের পর অনুমতির প্রয়োজন নেই। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ১৬৫ পৃষ্ঠা)
স্বামী কি তার স্ত্রীর জানাযার লাশবাহী খাট কাঁধে নিতে পারবে?
স্বামী তার স্ত্রীর জানাযা কাঁধে নিতে পারবে, কবরে নেমে রাখতেও পারবে এবং মুখও দেখতে পারবে। শুধুমাত্র গোসল দেয়া এবং বিনা পর্দায় (আবরণ ব্যতীত) শরীর স্পর্শ করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। স্ত্রী তার স্বামীকে গোসল দিতে পারবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৮১২, ৮১৩ পৃষ্ঠা)
মুরতাদের জানাযার নামাযের শরয়ী হুকুম
মুরতাদ এবং কাফিরের জানাযার নামাযের একই হুকুম। ধর্ম পরিবর্তন করে খ্রীষ্টান হয়ে যাওয়া ব্যক্তির জানাযার নামায আদায়কারীদের ব্যাপারে কৃত এক প্রশ্নের উত্তর প্রদান করতে গিয়ে সায়্যিদী আ’লা হযরত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত হযরত আল্লামা মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ ফতোওয়ায়ে রযবীয়ার ৯ম খন্ডের ১৭০ পৃষ্ঠাতে বলেন: যদি শরয়ী দলীল দ্বারা প্রমাণিত হয় মৃত ব্যক্তি (আল্লাহ্র পানাহ) ধর্ম পরিবর্তন করে খ্রীষ্টান হয়ে গিয়েছেন, তবে অবশ্যই তার জানাযার নামায এবং মুসলমানদের মত তার কাফন-দাফন করা সব অকাট্য হারাম। আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন:
وَ لَا تُصَلِّ عَلٰۤی اَحَدٍ مِّنۡہُمۡ مَّاتَ اَبَدًا وَّ لَا تَقُمۡ عَلٰی قَبۡرِہٖ ؕ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আর তাদের মধ্যে কারো মৃতের উপর কখনো (জানাযার) নামায পড়বেন না এবং না তার কবরের পাশে দাঁড়াবেন। (পারা: ১০, সূরা- তাওবা, আয়াত-৮৪)
কিন্তু নামায আদায়কারীরা যদি তার খ্রীষ্টান হয়ে যাওয়ার কথা না জানে আগের জানা মতে তাকে মুসলমান মনে করত। তার (মৃতের) কাফন-দাফন ও নামায পর্যন্ত ঐ ব্যক্তির নিকট তার খ্রীষ্টান হয়ে যাওয়ার প্রমাণিত হয়নি। তবে এই সব কর্মকান্ডে সে এখনও অপারগ এবং নির্দোষ। কেননা তার জানা মতে সে মুসলমান ছিলো। এসব কর্মকান্ড সম্পাদন করা এমনিতেই তার উপর আবশ্যক ছিলো। হ্যাঁ যদি সেও তার খ্রীষ্টান হওয়ার ব্যাপারে জানতো। এতদসত্ত্বেও সে জানাযার নামায, কাফন-দাফন ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করে, অকাট্য ভাবে মারাত্মক গুনাহ এবং কঠিন আযাবে লিপ্ত হলো। যতক্ষণ পর্যন্ত তাওবা করবে না, তার পিছনে নামায আদায় করা মাকরূহ। কিন্তু মুরতাদের কর্মকান্ড এর পরেও পরীক্ষা করা জায়েয নয়, কেননা এসব লোকও এই গুনাহ দ্বারা কাফির হবে না। আমাদের পবিত্র শরীয়াত সহজ সরল পথ। শরীয়াতের কোন বিষয়ে অতিরঞ্জিত করা বা কমিয়ে ফেলা পছন্দ করে না। অবশ্য যদি প্রমাণিত হয়ে যায় যে, সে তাকে খ্রীষ্টান জেনে না শুধু বরং অজানা ও অজ্ঞতার কারণে কোন দুনিয়াবী উদ্দেশ্য এমনকি নিজে তাকে খ্রীষ্টান হওয়ার কারণে সম্মানের পাত্র এবং কাফন-দাফন এবং জানাযার নামাযের উপযুক্ত মনে করে তবে যাদের এরকম ধারণা হবে তারা সকলে কাফির ও মুরতাদ হয়ে গেলো। আর তাদের সাথে ঐ সকল আচরণ করা ওয়াজীব যা মুরতাদের সাথে করা হয়। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া)
আল্লাহ তাআলা ১০ পারার সূরাতুত তাওবার ৮৪ নং আয়াতে ইরশাদ করেন:
وَ لَا تُصَلِّ عَلٰۤی اَحَدٍ مِّنۡہُمۡ مَّاتَ اَبَدًا وَّ لَا تَقُمۡ عَلٰی قَبۡرِہٖ ؕ اِنَّہُمۡ کَفَرُوۡا بِاللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖ وَ مَا تُوۡا وَ ہُمۡ فٰسِقُوۡنَ ﴿۸۴﴾
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আর তাদের মধ্যে কারো মৃতের উপর কখনো (জানাযার) নামায পড়বেন না এবং না তার কবরের পাশে দাঁড়াবেন। নিশ্চয় তারা আল্লাহ্ ও রাসুলকে অস্বীকার করেছে এবং নির্দেশ অমান্য করার ফাসিকী (কুফরীর) মধ্যেই তারা মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। (পারা: ১০, সূরা-তাওবা, আয়াত- ৮৪)
সদরুল আফাযিল হযরত আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈমউদ্দিন মুরাদাবাদী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন: অত্র আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হলো যে; কাফিরের জানাযার নামায কোন অবস্থায় জায়েয নেই এবং কাফিরের কবরে দাফন ও যিয়ারতের জন্য দাঁড়ানো নিষিদ্ধ। (খাযায়িনুল ইরফান, ৩৭৬ পৃষ্ঠা) হযরত সায়্যিদুনা জাবির বিন আবদুল্লাহ رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُمَا থেকে বর্ণিত; প্রিয় নবী, রাসুলে আরবী, হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “সে যদি অসুস্থ হয়ে যায় তবে তাকে দেখতে যেও না। মারা গেলে জানাযাতে অংশগ্রহণ করো না। (ইবনে মাজাহ, ১ম খন্ড, ৭০ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৯২)