মাদানী অসিয়তনামা
(কাফন-দাফনের আহকাম সম্বলিত)
দরূদ শরীফের ফযীলত
নবীদের তাজেদার, রাসূলদের সরদার, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করো, আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের উপর রহমত বর্ষণ করবেন।” (আল কামিলু লি ইবনে আদী, ৫ম খন্ড, ৫০৫ পৃষ্ঠা)
صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
اَلْحَمْدُ لِلّٰہِ عَزَّوَجَلَّ এখন ফযরের নামাযের পর মসজিদে নববী শরীফে عَلٰی صَاحِبِہَا الصَّلٰوۃُ وَالسَّلَام বসে “মদীনা মুনাওয়ারা থেকে চল্লিশখানা অসিয়ত” লিখার সৌভাগ্য অর্জন করছি। আফসোস! শত আফসোস! আজ আমার মদীনা মুনাওয়ারাতে উপস্থিতির শেষ সকাল। সূর্য প্রিয় মাহবুব صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর রওজা মোবারকে সালাম পেশ করার জন্য হাজির হতে চলেছে। আহ! আজ রাতেই যদি জান্নাতুল বাক্বীতে সমাহিত হওয়ার কোন ব্যবস্থা না হয়, তবে (আগামীকালই) মদীনা শরীফ ত্যাগ করতে হবে। চোখ অশ্রুসিক্ত, মন অস্থির হয়ে আছে। হায়!
আফসোস চন্দ ঘড়িয়া তয়্যবা কি রাহ গেয়ী হে,
দিল মে জুদায়ী কা গম তুফান মাচা রাহা হে।
আহ! মন ব্যথা বেদনায় নিমজ্জিত। মদীনার বিচ্ছেদের হৃদয় বিদারক চিন্তা আপাদমস্তক বেদনার প্রতিচ্ছবি বানিয়ে দিয়েছে। এমন মনে হচ্ছে যেন মুখের হাসি কেউ ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। আহ! শীঘ্রই মদীনা ছেড়ে যেতে হবে। তখন মন ভেঙ্গে যাবে। আহ! মদীনা থেকে স্বদেশের উদ্দেশ্যে রাওয়ানা হওয়ার মূহুর্তটি এমনি বেদনা দায়ক হয়ে থাকে যে, যেন কোন দুগ্ধপোষ্য শিশুকে তার মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। আর সে খুবই আফসোস করে! কেঁদে কেঁদে বারবার মায়ের দিকে ফিরে দেখছে, হয়ত মা পুনরায় তাকে ডেকে নিবেন…..স্নেহ ভরে তাকে কোলে তুলে নিয়ে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরবে। আর শ্লোক শুনিয়ে আপন মায়াভরা কোলে মধুর ঘুম পাড়াবেন। হায়!
মে শিকাস্তা দিল লিয়ে বাওঝাল কদম রাখতা হুয়া
চল পড়াহো ইয়া শাহানশাহে মদীনা আলওয়াদা
এখন আমি ভারাক্রান্ত অন্তরে আপনাদের খেদমতে ৪০টি অসিয়ত পেশ করছি। দা’ওয়াতে ইসলামীর সাথে সম্পৃক্ত সকল ইসলামী ভাই ও ইসলামী বোনের প্রতিও এমনকি, আমার সন্তান সন্ততি ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা আমার এ অসিয়ত সমূহের প্রতি বিশেষ মনযোগ দিবেন। মদীনার নুরানী মাটিতে, সবুজ গম্বুজ ও মীনারের সুশীতল ছায়াতলে যদি আমার মত পাপি ও গুনাহগারকে সমাহিত করা হতো, তবে কতই না সৌভাগ্য হতো। হায় আফসোস! যদি রাসূলে আকরাম, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নূরানী জালওয়াতে আমার শাহাদাত নসীব হতো এবং জান্নাতুল বাক্বীতে যদি আমার জন্য দু’গজ জমির ব্যবস্থা হতো। তবে উভয় জাহানে আমার সৌভাগ্য আর সৌভাগ্যই হতো। আহ! আর তা না হলে যেখানেই ভাগ্য অবধারিত…….
(১) যদি মূমুর্ষ অবস্থা পাই তবে, ঐ মুহূর্তের যাবতীয় কার্যাবলী সুন্নাত মোতাবেক সম্পাদন করবেন। সম্ভব হলে ডান পার্শ্বে শুয়াবেন, চেহারা কিবলামুখী করে দিবেন। সূরা ইয়াসীন শরীফও পাঠ করে শুনাবেন।
(২) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের পরের সকল কার্যাবলীতেও সুন্নাতের প্রতি লক্ষ্য রাখবেন। যেমন: কাফন-দাফন ইত্যাদি কার্যাবলী তাড়াতাড়ি সম্পাদন করবেন। বেশি লোক সমাগমের আশায় জানাযা, দাফন ইত্যাদি অযথা বিলম্ব করা সুন্নাত নয়। বাহারে শরীয়াত, ৪র্থ খন্ডের উল্লেখিত বিধানাবলী উপর আমল করবেন। বিশেষত জোরালো তাগিদ হলো;কখনো বিলাপ করবে না। কেননা, এটা হারাম এবং জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মতো কাজ।
(৩) কবরের সাইজ ইত্যাদিও যেন সুন্নাত মোতাবেক হয় এবং লাহাদ কবরই তৈরী করবেন, কেননা এটা সুন্নাত।
(৪) কবরের ভিতরের দেয়াল ইত্যাদি যেন কাঁচা মটির হয় (যেভাবে আছে সেভাবেই রেখে দিবেন) । আগুনের পোড়ানো ইট দ্বারা তা পাকা করবেন না। যদি ভিতরে নিতান্তই ইটের দেয়াল করতে হয়, তাহলে মাটির কাদা দ্বারা ভিতরে ভালভাবে লেপে দিবেন।
(৫) সম্ভব হলে কবরের ভিতরের তক্তায় সূরা ইয়াসীন শরীফ, সূরা মুলক ও দরূদে তাজ পাঠ করে ফুঁক দিবেন।
(৬) সুন্নাত মোতাবেক কাফনের ব্যবস্থা সগে মদীনা عُفِىَ عَنْهُ এর (লিখকের) নিজস্ব টাকা থেকেই যেন হয়। আর্থিক অসচ্ছলতার দরুন (সগে মদীনা عُفِىَ عَنْهُ এর নিজস্ব টাকা দ্বারা কাফনের খরচ নির্বাহ করা সম্ভব না হলে) কোন বিশুদ্ধ সুন্নী আকীদা সম্পন্ন ব্যক্তির হালাল উপার্জন থেকেই কাফনের ব্যবস্থা করবেন।
(৭) দাঁড়ি ওয়ালা, পাগড়ীধারী, সুন্নাতের অনুসারী কোন ইসলামী ভাই দ্বারা সুন্নাত মোতাবেক গোসল দিবেন। (সৈয়দ বংশের কোন ব্যক্তি যদি এ গুনাহগারকে গোসল দেয়, তবে সগে মদীনা عُفِىَ عَنْهُ এটাকে নিজের জন্য বেয়াদবী মনে করবে।)
(৮) গোসল দেয়ার সময় পরিপূর্ণভাবে সতর ঢেকে রাখবেন। খয়েরী রঙের কিংবা কোন গাঢ় রঙের দু’টি মোটা চাদর দ্বারা নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত যদি ঢেকে রাখা হয়, তাহলে সতর দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। হ্যাঁ! পানি শরীরের প্রতিটি অঙ্গেই বরং চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত প্রবাহিত হওয়া জরুরী।
(৯) কাফনের কাপড় যদি যমযমের পানি বা মদীনা শরীফের পানি বা উভয়ের পানি দ্বারা সিক্ত করা হয়, তবে তো সৌভাগ্যই। আহ! সৈয়দ বংশের কোন লোক যদি মাথায় সবুজ পাগড়ী পরিয়ে দেন, তাহলে বড়ই সৌভাগ্য হবে।
(১০) মৃত ব্যক্তির গোসলের পর কাফন দ্বারা চেহারা আবৃত করার পূর্বে প্রথমে কপালের উপর শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা “بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحيْمِ” লিখে দিবেন। শুধু ওলামা ও মাশায়িখকে ইমামা (পাগড়ী) সহকারে দাফন করা যেতে পারে। সাধারণ মৃত ব্যক্তিকে পাগড়ী সহকারে দাফন করা নিষেধ।
(১১) অনুরূপভাবে বুকের উপরও لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْ لُ الله صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم লিখে দিবেন।
(১২) কলবের স্থানে یَارَسُوْلَ الله صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم লিখে দিবেন।
(১৩) নাভী ও বুকের মধ্যবর্তী স্থানে কাফনের উপর শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা “ইয়া গাউছে আজম দস্তগীর رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ, ইয়া ইমাম আবু হানিফা رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ, ইয়া ইমাম আহমদ রযা رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ, ইয়া শেখ জিয়া উদ্দীন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ” লিখে দিবেন।
(১৪) (পিঠের অংশ ব্যতীত) নাভী থেকে মাথা পর্যন্ত সম্পূর্ণ কাফনে মদীনা মদীনা লিখে দিবেন। স্মরণ রাখবেন! এসব কিছু কালি দ্বারা নয়, বরং শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারাই লিখবেন। আর সৈয়দ বংশের কোন লোক তা লিখে দিলে বড়ই সৌভাগ্য হবে।
(১৫) উভয় চক্ষুর উপর মদীনা শরীফের কাটা, খেজুরের বিচি রেখে দিবেন।
(১৬) জানাযার লাশবাহী খাট বহন করে নিয়ে যাওয়ার সময়ও সকল সুন্নাতের প্রতি যথেষ্ট লক্ষ্য রাখবেন।
(১৭) জানাযার লাশবাহী খাট বহন করে নিয়ে যাওয়ার সময় সকল ইসলামী ভাই এক সাথে ইমামে আহলে সুন্নাতের লিখিত দরূদ শরীফের কসীদা “কা’বে কে বদরুদ দোজা তুম পে করোড়ো দুরূদ” পাঠ করবেন। (এটা ছাড়াও অন্যান্য নাত ইত্যাদি পড়বেন। কিন্তু শুধুমাত্র ওলামায়ে আহলে সুন্নাতের নাতই পাঠ করবেন)
(১৮) কোন বিশুদ্ধ সুন্নী আকীদা সম্পন্ন আমলধারী আলিম বা সুন্নাতের পরিপূর্ণ অনুসারী কোন ইসলামী ভাই অথবা উপযুক্ত থাকলে আপন সন্তানদের মধ্যে কেউ জানাযার নামায পড়াবেন। কিন্তু আমার একান্ত ইচ্ছা হচ্ছে, সৈয়দ বংশের কোন ব্যক্তি দ্বারা আমার জানাযার নামায পড়ানো।
(১৯) সৈয়দ বংশের সম্মানিত ব্যক্তিরা নিজেদের পবিত্র হাত দ্বারা আমাকে কবরে নামিয়ে মহান প্রতিপালকের নিকট সোপর্দ করলে সৌভাগ্য হবে।
(২০) কবরের চেহারার দিকস্থ দেয়ালে তাক বানিয়ে সেখানে সুন্নাতের পরিপূর্ণ অনুসারী কোন ইসলামী ভাইয়ের হাতে লিখিত আহাদ নামা, নালাইন শরীফের নকশা, সবুজ গম্বুজ শরীফের নকশা, শাজারা শরীফ, নকশে হারকারা ইত্যাদি তাবাররুকাত রেখে দিবেন।
(২১) জান্নাতুল বাক্বীতে দাফনের সুব্যবস্থা হলে বড়ই সৌভাগ্য হবে। তবে সেখানে দাফন করবেন নতুবা আল্লাহ্র কোন ওলির কবরের পাশে, তাও সম্ভব না হলে ইসলামী ভাইগণ যেখানেই ভালো মনে করবেন! সেখানেই আমাকে দাফন করবেন, তবে কারো জবর দখলকৃত জমিতে দাফন করবেন না। কেননা তা হারাম।
(২২) (দাফনের পর) কবরে আযান দিবেন।
(২৩) সৈয়দ বংশের কোন ব্যক্তি দ্বারা তালকীন করালে ধন্য হবো।
তালকীনের ফযীলত: নবী করীম, রউফুর রহীম, রাসূলে আমীন, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যখন তোমাদের কোন মুসলমান ভাই মৃত্যু বরণ করে, আর তাকে কবরে সমাহিত করার পর তোমাদের মধ্যে একজন তার কবরের শিয়রে দাঁড়িয়ে বলবে: হে অমুকের ছেলে অমুক! তখন সে তা শুনতে পাবে, কিন্তু উত্তর দিবে না। অতঃপর যখন আবারো বলবে: হে অমুকের ছেলে অমুক! তখন মৃত ব্যক্তি সোজা হয়ে বসে পড়বে। আবার যখন বলবে: হে অমুকের ছেলে অমুক! তখন সে বলবে: আল্লাহ্ তাআলা তোমার উপর দয়া করুক। তুমি আমাকে শিখিয়ে দাও। কিন্তু মৃত ব্যক্তির একথা তোমরা শুনতে পাবে না। অতঃপর সে (অর্থাৎ- যিনি তালকীন করাবেন তিনি) বলবে:
اُذْكُرْ مَاخَرَجْتَ عَلَيْهِ مِنَ الدُّنْيَا: شَهَادَةَ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ (صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم) وَاَنَّكَ رَضِيْتَ بِاللهِ رَبًّا وَّبِالْاِسْلَامِ دِيْنًا وَّ بِمُحَمَّدٍ (صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم) نَبِيًّا وَّ بِالْقُرْاٰنِ اِمَامًا ـ
অনুবাদ: “তুমি তা স্মরণ করো, যা বলে তুমি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছ অর্থাৎ একথা সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم তাঁর বান্দা ও রাসূল এবং এটাও বলো যে, তুমি আল্লাহ্কে প্রতিপালক হিসেবে, ইসলামকে আল্লাহ্র মনোনীত ধর্ম হিসেবে, হযরত মুহাম্মদ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে আল্লাহ্র প্রেরিত রাসূল হিসেবে এবং কুরআন মজীদকে ইমাম হিসেবে মনে-প্রাণে স্বীকৃতি দিয়েছ এবং এর উপর সন্তুষ্ট ছিলে।” তালকীনকারী এ কথা বলার পর মুনকার-নকীর ফিরিশতাদ্বয় একে অপরের হাত ধরে বলবেন: চলো আমরা চলে যাই। তার পাশে বসে থেকে আমাদের কোন লাভ নেই যাকে লোক দলীল শিখিয়ে দিয়েছে। এক ব্যক্তি রহমতে আলম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নিকট আরয করল, যদি তার মায়ের নাম জানা না থাকে, তখন কিভাবে তালকীন করাবে? রাসূলুল্লাহ্ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “হাওয়া رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہَا এর দিকে সম্পর্কিত করবে।” (আল কবীর লিত তাবরানী, ৮ম খন্ড, ২৫০ পৃষ্ঠা, হাদীস-৭৯৭৯)
স্মরণ রাখবেন! অমুকের ছেলে অমুকের স্থলে মৃত ব্যক্তি ও তার মায়ের নাম নিবে, যেমন-হে মুহাম্মদ ইল্ইয়াস বিন আমেনা। আর মৃত ব্যক্তির মায়ের নাম জানা না থাকলে মায়ের নামের স্থলে হাওয়া رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہَا এ নাম নিবে। তালকীন কেবলমাত্র আরবী ভাষায়ই পড়বেন।
(২৪) যারা আমাকে ভালবাসেন, তারা সম্ভব হলে আমার দাফনের পর ১২ দিন পর্যন্ত, আর তা সম্ভব না হলে কমপক্ষে ১২ ঘন্টা হলেও আমার কবরের চার পাশে বসে যিকির, দরূদ, কুরআন তিলাওয়াত ও নাত ইত্যাদির মাধ্যমে আমার (অন্তরকে) মনোরঞ্জন করতে থাকবে। اِنْ شَآءَ اللّٰہ عَزَّوَجَلَّ এতে নতুন জায়গায় আমার মন বসে যাবে। তবে উক্ত সময়েও আর সর্বদাই জামাআত সহকারে নামায আদায়ের প্রতি যতœবান হবেন।
(২৫) আমার উপর কারো ঋন থাকলে তা আমার সম্পদ থেকে পরিশোধ করবেন। আর যদি আমার সম্পদ না থাকে, তাহলে আমার সন্তান সন্ততি জীবিত থাকলে তারা নতুবা অন্য কোন ইসলামী ভাই দয়া করে নিজের সম্পদ থেকে আমার ঋন পরিশোধ করবেন। আল্লাহ্ তাআলা মহান প্রতিদান দান করবেন। (বিভিন্ন ইজতিমাতে ঘোষণা করে দিবেন যে, কেউ আমার দ্বারা মনে কষ্ট পেয়ে থাকলে কিংবা আমার দ্বারা কারো হক ধ্বংস হয়ে থাকলে, সে যেন আমাকে (মুহাম্মদ ইল্ইয়াস কাদেরীকে) ক্ষমা করে দেয়। আর কেউ আমার নিকট কর্জ পেয়ে থাকলে সে যেন তাড়াতাড়ি আমার ওয়ারিশদের সাথে যোগাযোগ করে তা নিয়ে নেয় অথবা যেন ক্ষমা করে দেয়।)
(২৬) অধিকহারে আমার প্রতি (ইছালে সাওয়াব করবেন) সাওয়াব পৌঁছাতে থাকবেন এবং আমাকে মাগফিরাতের দোয়া দ্বারা ধন্য করতে থাকবেন। এটা আমার জন্য বড়ই দয়া হবে।
(২৭) সকলেই মসলকে আ’লা হযরত অর্থাৎ- আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মতাদর্শের উপর অটল থাকবেন এবং ইমামে আহলে সুন্নাত মাওলানা শাহ্ আহমদ রযা খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর বিশুদ্ধ ইসলামী শিক্ষা মোতাবেক (সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবেন) আমল করবেন।
(২৮) বদ মাযহাব ও বদ আকীদা পোষণকারী ব্যক্তিদের সংস্পর্শ থেকে সর্বদা কয়েক শত মাইল দূরে থাকবেন, কেননা তাদের সঙ্গ খাতিমা বিল খায়ের তথা ঈমানের সাথে মৃত্যু হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আখিরাত বরবাদ হওয়ার কারণ।
(২৯) তাজদারে মদীনা, রাহাতে কলবো সীনা, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর ভালবাসা এবং সুন্নাতের উপর সর্বদা দৃঢ়ভাবে অটল থাকবেন।
(৩০) সুন্নাত ও ওয়াজিব সহ পাঁচ ওয়াক্ত নামায, রমযানের রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি ফরয সমূহ যথাযথ আদায় করবেন। এতে কোন রকমের অলসতা প্রদর্শন করবেন না।
(৩১) গুরুত্বপূর্ণ অসিয়ত: সর্বদা দা’ওয়াতে ইসলামীর মারকযী মজলিশে শুরার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করবেন। এর প্রত্যেক রুকন ও নিজের নিগরানের শরীয়াত সম্মত যাবতীয় আদেশ নিষেধের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করবেন। শরীয়াত সম্মত কারণ ব্যতীত মজলিশে শূরা কিংবা দা’ওয়াতে ইসলামীর যে কোন যিম্মাদারের কেউ বিরোধীতা করলে আমি তার উপর অসন্তুষ্ট, সে আমার যতই নিকটতম বন্ধু হোক না কেন।
(৩২) প্রত্যেক ইসলামী ভাই সপ্তাহে কমপক্ষে একবার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এলাকায়ী দাওরা বরায়ে নেকীর দা’ওয়াতে অংশ গ্রহণ করবেন এবং প্রতি মাসে কমপক্ষে তিন দিন, ১২ মাসে ৩০ দিন এবং জীবনে একাধারে কমপক্ষে ১২ মাস মাদানী কাফেলাতে সফর করুন। প্রত্যেক ইসলামী ভাই ও প্রত্যেক ইসলামী বোন নিজের চরিত্র সংশোধনের উপর অবিচল থাকার জন্য দৈনন্দিন মাদানী ইনআমাতের রিসালা পূরণ করে, প্রতি মাসে আপন যিম্মাদারের নিকট জমা দিবেন।
(৩৩) তাজদারে মদীনা, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর ভালবাসা ও সুন্নাতের বার্তাকে ব্যাপক হারে দুনিয়াতে প্রচার ও প্রসার করতে থাকুন।
(৩৪) মন্দ আকীদা, মন্দ আমল, দুনিয়ার প্রতি অনর্থক ভালবাসা, হারাম সম্পদ ও অবৈধ ফ্যাশন ইত্যাদির বিরুদ্ধে নিজ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন। সুন্দর চরিত্র, সুমিষ্ট মাদানী ব্যবহারের মাধ্যমে নেকীর দাওয়াতের সাড়া জাগাতে থাকবেন।
(৩৫) রাগ, বদমেজাজ ও খিটখিটে স্বভাব ইত্যাদি কাছেও আসতে দিবেন না, অন্যথায় দ্বীনের কাজ করা আপনার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
(৩৬) আমার লিখনী ও বয়ানের ক্যাসেট সমূহ দ্বারা দুনিয়াবী ধন সম্পদ উপার্জন করা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকার জন্য আমার ওয়ারিশদের প্রতি আমার মাদানী অনুরোধ রইল।
(৩৭) আমার পরিত্যক্ত সম্পদ ইত্যাদির ক্ষেত্রে শরীয়াত নির্দেশিত পন্থার উপরই আমল করবেন।
(৩৮) কেউ আমাকে ভালমন্দ বলে থাকলে কিংবা গালি বা আঘাত দিয়ে থাকলে কিংবা আমার মনে যেকোন ভাবে কষ্ট দিয়ে থাকলে আমি আল্লাহ্ তাআলার ওয়াস্তে তাকে অগ্রিম ক্ষমা করে দিলাম।
(৩৯) আমাকে কষ্ট দানকারী লোকদের থেকে কোনরূপ প্রতিশোধ নিবেন না।
(৪০) অবশ্য যদি কেউ আমাকে শহীদ করে দেয়, তাহলে আমার পক্ষ থেকে তাকে আমার যাবতীয় প্রাপ্য ক্ষমা করে দিলাম। আমার ওয়ারিশদেরকেও আমি অনুরোধ করছি, তারা যেন তাকে ক্ষমা করে দেয়। তাজেদারে মদীনা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর শাফায়াতের বদৌলতে যদি আমি হাশরের মাঠে বিশেষ অনুগ্রহ প্রাপ্ত হই, তাহলে اِنْ شَآءَ اللّٰہ عَزَّوَجَلَّ আমি আমার হত্যাকারী তথা আমাকে শাহাদাতের অমীয় সুধা পানকারীকেও জান্নাতে নিয়ে যাবো, শর্ত হলো; যদি সে ঈমান সহকারে মৃত্যুবরণ করে থাকে। (যদি বাস্তবেই আমাকে শহীদ করে দেয়া হয়, তবে সে কারণে কোন ধরণের দাঙ্গা হাঙ্গামা, অবরোধ ও হরতাল ইত্যাদি করবেন না। হরতালের নামে জোর জবরদস্তি মূলক মুসলমানদের ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়া, তাদের জান মালের ক্ষতি সাধন করা, দোকান পাঠ ও গাড়িতে পাথর নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগ করা, যানবাহন ভাংচুর করা, দেশে অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করা, মানুষের অযথা হক নষ্ট করা ইত্যাদির মত ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপকে ইসলামের কোন মুফতিই বৈধ বলে ফতোয়া দিতে পারবেন না। এরূপ হরতাল সম্পূর্ণরূপে হারাম ও জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মতো কাজ।
হায়! গুনাহ্ সমূহের মার্জনাকারী ক্ষমাশীল দয়ালু মালিক আল্লাহ্ তাআলা যদি আমি গুনাহগার ও পাপীকে তাঁর প্রিয় মাহবুব صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর উসিলায় ক্ষমা করে দিতেন। হে আমার প্রিয় আল্লাহ্! যতদিন পর্যন্ত আমি জীবিত থাকি ততদিন পর্যন্ত আমাকে রাসূল صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর ভালবাসায় মত্ত রাখো, যেন মদীনার স্মরণ করতে থাকি, নেকীর দাওয়াতের জন্য সচেষ্ট রাখো, মাহবুব صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর শাফায়াত নসীব করো এবং আমাকে বিনা হিসাবে ক্ষমাও করে দাও। জান্নাতুল ফিরদাউসেও প্রিয় মাহবুব صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর প্রতিবেশি হওয়ার সুযোগ দান করো।
হায়! যদি সর্বদাই প্রিয় মাহবুব صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم দীদার লাভে ধন্য থাকতে পারতাম। হে আল্লাহ্! তোমার হাবীবের উপর আমার অসংখ্য দরূদ ও সালাম প্রেরণ করো। তাঁর সকল উম্মতকে ক্ষমা করে দাও।اٰمِين بِجا هِ النَّبِىِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم
ইয়া ইলাহী! যব রযা খোয়াবে ঘিরাছে ছর উঠায়ে,
দৌলতে বেদারে ইশ্কে মুস্তফা কা সাথ হো।
“মাদানী অসিয়তনামা” প্রথমবার মুর্হারামুল হারাম, ১৪১১ হিজরী মোতাবেক ১৯৯০ইং-তে মদীনা শরীফে বসে লিখা হয়েছিল। কিন্তু মাঝে মধ্যে এতে সামান্য সংশোধন করা হয়েছে। বর্তমানে সংশোধিত আকারেই মাদানী অসিয়তনামা উপস্থাপন করা হয়েছে।
صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
অসিয়ত ক্ষমা প্রাপ্তির মাধ্যম
রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সম, রাসূলে আকরাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে (ব্যক্তি) অসিয়ত করার পর মৃত্যু বরণ করলো, সে সোজা রাস্তা ও সুন্নাতের উপর আমল করেই মৃত্যু বরণ করল এবং তার মৃত্যু তাকওয়া ও শাহাদাতের উপরই হলো এবং সে যেন ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েই মৃত্যুবরণ করলো।” (ইবনে মাজাহ, ৩য় খন্ড, ৩০৪ পৃষ্ঠা, হাদীস-২৭০১)
কাফন-দাফনের নিয়মাবলী
পুরুষের সুন্নাত মোতাবেক কাফন
পুরুষের জন্য সুন্নাত মোতাবেক কাফন তিনটি। যথা- (১) লিফাফাহ (চাদর) , (২) ইযার (তাহবন্দ) ও (৩) কামীস (জামা) ।
মহিলাদের সুন্নাত মোতাবেক কাফন
মহিলাদের জন্য সুন্নাত মোতাবেক কাফন পাঁচটি। যথা- (১) লিফাফাহ, (২) ইযার, (৩) কামীস, (৪) সীনাবন্ধ ও (৫) ওড়না।
হিজড়া অর্থাৎ মেয়েলি স্বভাবের পুরুষদেরকেও মহিলাদের অনুরূপ পাঁচটি কাফন পরাতে হবে।
কাফনের বিস্তারিত বিবরণ
(১) লিফাফাহ অর্থাৎ চাদর: মৃত ব্যক্তির দেহের দৈর্ঘ্য হতে এতটুকু পরিমাণ বড় হতে হবে, যাতে উভয় প্রান্তে বাঁধা যায়।
(২) ইযার অর্থাৎ তাহ্বন্দ: মাথার চুল থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত হতে হবে অর্থাৎ লিফাফাহ হতে এতটুকু পরিমাণ ছোট হতে হবে যা বন্ধনের জন্য অতিরিক্ত রাখা হয়েছিল।
(৩) কামীস বা জামা: গর্দান থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত হতে হবে এবং সামনে ও পিছনে উভয়দিকে সমান হতে হবে। এতে কল্লি ও আস্তিন থাকতে পারবে না। পুরুষদের কামীস কাঁধের উপরিভাগে আর মহিলাদের কামীস সীনার দিকে ছিড়তে হবে।
(৪) সীনাবন্ধ: এটা মহিলাদের স্তন থেকে নাভী পর্যন্ত হতে হবে। তবে রান পর্যন্ত হওয়াই উত্তম। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৮১৮ পৃষ্ঠা)
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার নিয়মাবলী
আগরবাতি বা লোবান বাতির ধোঁয়া দ্বারা তিন বা পাঁচ বা সাতবার গোসলের খাটে ধোঁয়া দিতে হবে অর্থাৎ তিন বা পাঁচ বা সাতবার আগর বা লোবান বাতিকে খাটের চারপাশে ঘুরাতে হবে। অতঃপর মৃত ব্যক্তিকে খাটের উপর এভাবে শোয়াতে হবে যেভাবে কবরে তাকে শোয়ানো হয়। কাপড় দ্বারা নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত সতর ঢেকে রাখতে হবে। (বর্তমানে গোসল দেয়ার সময় সাদা কাপড় দ্বারা মৃত ব্যক্তির সতর এমনভাবে ঢেকে রাখা হয়, যার ফলে পানি ঢালার সাথে সাথেই তার লজ্জাস্থান ভেসে উঠে। তাই খয়েরী বা গাঢ় রঙের কোন মোটা কাপড় দ্বারা তার সতর এমনিভাবে ঢেকে রাখতে হবে, যাতে পানি ঢালার পর তার লজ্জাস্থান ভেসে না উঠে। কাপড় ডাবল করে দিয়েই সতর ঢেকে রাখা উত্তম।) অতঃপর গোসলদানকারী ব্যক্তি নিজ হাতে একটি কাপড় জড়িয়ে প্রথমে তাকে উভয় দিকে ইস্তিন্জা করাবেন (অর্থাৎ পানি দ্বারা তাকে শৌচ কর্ম করাবেন) তারপর নামাযের অযুর মত তাকে অযু করাবেন অর্থাৎ তিনবার মুখমন্ডল, কনুইসহ তিনবার উভয় হাত, অতঃপর মাথা মাসেহ ও তিনবার উভয় পা ধুইয়ে দিবেন। মৃত ব্যক্তিকে অযু করানোর সময় প্রথমে উভয় হাত কবজি পর্যন্ত ধৌত করা, কুলি করানো ও নাকে পানি দেয়া আবশ্যক নয়। তবে কোন কাপড় বা রুইয়ের পুটলি ভিজিয়ে তা দ্বারা দাঁত, মাড়ি ঠোঁট ও নাকের ছিদ্র ইত্যাদি মুছে দেয়া উত্তম। তারপর মৃত ব্যক্তির চুল, দাঁড়ি থাকলে তা ধুইয়ে দিবেন। অতঃপর মৃত ব্যক্তিকে বাম কাতে শোয়ায়ে কুল (বরই) পাতা দিয়ে গরম করা পানি, আর তা পাওয়া না গেলে বিশুদ্ধ মৃদু গরম পানি মাথা থেকে পা পর্যন্ত তার শরীরে উপর এমনিভাবে ঢেলে দিবেন যাতে পানি তক্তা পর্যন্ত পৌছে যায়। অতঃপর তাকে ডান কাতে শোয়ায়ে অনুরূপভাবে পানি ঢেলে দিবেন। তার পর হেলান দিয়ে তাকে বসিয়ে পেটের নিচের অংশের উপর আস্তে আস্তে হাত দ্বারা মালিশ করবেন। পেট হতে কিছু বের হলে তা ধুইয়ে পরিস্কার করে দিবেন। এমতাবস্থায় তাকে পুনরায় অযু ও গোসল করানোর প্রয়োজন নেই। অতঃপর মাথা থেকে পা পর্যন্ত তার শরীরের উপর তিনবার কাপুরের পানি ঢেলে দিবেন এবং কোন পবিত্র কাপড় দ্বারা তার শরীর আস্তে আস্তে মুছে নিবেন। মৃত ব্যক্তির সমস্ত শরীরে একবার পানি প্রবাহিত করা ফরয আর তিনবার প্রবাহিত করা সুন্নাত। (মৃতের গোসলদানে অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত করবেন না। মনে রাখবেন! আখিরাতে এক বিন্দু বিন্দুর হিসাব হবে)
পুরুষকে কাফন পরানোর পদ্ধতি
আগর বা লোবান বাতির ধোঁয়া দ্বারা কাফনকে এক বা তিন বা পাঁচ বা সাতবার ধোঁয়া দিবেন। অতঃপর কাফন এমনভাবে বিছাবেন যে, প্রথমে খাটে লিফাফা অর্থাৎ বড় চাদর, এর উপর ইযার বা তাহবন্দ এবং এর উপর কামীস রাখবেন। অতঃপর মৃত ব্যক্তিকে কাফনের উপর শোয়ায়ে তাকে কামীস পরাবেন। এখন দাঁড়িতে (আর দাঁড়ি না থাকলে চিবুকে) ও সমস্ত শরীরে সুগন্ধি মালিশ করে দিবেন। কপাল, নাক, হাত, হাঁটু ও পা ইত্যাদি অঙ্গ যা দ্বারা সিজদা করা হয় তাতে কাপুর লাগিয়ে দিবেন। অতঃপর তাহবন্দ প্রথমে বাম দিক থেকে তারপর ডান দিক থেকে জড়াবেন। শেষে লিফাফাহ বা চাদরও প্রথমে বাম দিক থেকে তারপর ডান দিক থেকে জড়াবেন মাথা ও পায়ের দিকে বেঁধে দিবেন। যেন ডান দিকের অংশ উপরে থাকে।
মহিলাদেরকে কাফন পরানোর নিয়ম
মহিলাদেরকে কামীস পরিধান করিয়ে তাদের চুলগুলোকে দুইভাগে বিভক্ত করে কামীসের উপর দিয়ে বুকের উপরে রেখে দিবেন। তারপর অর্ধ পিঠের নিচে ওড়না বিছিয়ে তা মাথার উপর দিয়ে এনে মুখের উপর নিকাবের মতো করে দেন, যেন বুকের উপর থাকে। ওড়নার দৈর্ঘ্য হতে হবে অর্ধ পিঠ থেকে বুক পর্যন্ত এবং প্রস্থ হতে হবে এক কানের লতি থেকে অপর কানের লতি পর্যন্ত। কতিপয় লোকেরা মহিলারা জীবদ্দশায় যেভাবে মাথায় ওড়না পরিধান করতো সেভাবেই মহিলাদেরকে ওড়না পরিধান করান। কিন্তু এটা সুন্নাতের পরিপন্থী। অতঃপর পুরুষদের ন্যায় ইযার ও লিফাফাহ জড়াবেন। অবশেষে সবগুলোর উপরে স্তনের উপরিভাগ থেকে রান পর্যন্ত সীনাবন্ধ জড়ায়ে সূতা বা রশি দ্বারা বেধে দিবেন।)
জানাযার নামাযের পর দাফন
(১) জানাযার লাশবাহী খাট কবরের নিকট কিবলার দিকে রাখা মুস্তাহাব যাতে মৃত ব্যক্তিকে কিবলার দিক থেকে কবরে নামানো যায়। কবরের পায়ের দিকে জানাযার খাট রেখে মাথার দিক থেকে মৃত ব্যক্তিকে কবরে নামাবেন না।
(২) প্রয়োজনানুসারে দুইজন বা তিনজন সবল ও নেককার ব্যক্তি কবরে নেমে লাশ নামাবেন। মহিলার লাশ মুহরিম ব্যক্তিই নামাবেন। মুহরিম না থাকলে অন্যান্য আত্মীয়রা, তারাও না থাকলে কোন পরহেজগার ব্যক্তির মাধ্যমে মহিলার লাশ কবরে নামাবেন। ( )
(৩) মহিলার লাশ কবরে নামানোর সময় থেকে তক্তা লাগানোর সময় পর্যন্ত কোন কাপড় দ্বারা কবর ঘিরে রাখবেন।
(৪) মৃত ব্যক্তিকে কবরে নামানোর সময় এ দোয়াটি পাঠ করবেন:
بِسْمِ اللهِ وَ بِا للهِ وَعَلٰى مِلَّتِ رَسُوْلِ اللهِ
(৫) মৃত ব্যক্তিকে কবরে ডান কাতে রেখে তার মুখ কিবলার দিকে করে দিবেন এবং কাফনের বাঁধনগুলো খুলে দিবেন। কেননা, এখন আর বাঁধনের প্রয়োজন নেই, বাঁধন না খুললেও কোন অসুবিধা নেই। ( )
(৬) কাঁচা ইট দ্বারা কবরের মুখ বন্ধ করে দিবেন। মাটি নরম হলে কবরের মুখে কাঠের তক্তা ব্যবহার করাও জায়েজ। (
(৭) তারপর কবরে মাটি দিবেন এ ক্ষেত্রে মুস্তাহাব হলো, উভয় হাত দ্বারা মাথার দিক থেকে তিনবার মাটি ফেলা। প্রথমবার مِنْهَا خَلَقْنٰكُمْ বলবেন, দ্বিতীয় বার وَفِيْهَا نُعِيْدُكُمْ ও তৃতীয়বার وَمِنهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً اُخْرٰى বলবেন। অবশিষ্ট মাটিগুলো কোদাল ইত্যাদি দ্বারা ফেলবেন।
(৮) যতটুকু মাটি কবর থেকে বের করা হয়েছিল, তার চেয়ে অধিক মাটি কবরে ফেলা মাকরূহ।
(৯) কবর উটের কুঁজের ন্যায় ঢালু করবেন। চার কোণা বিশিষ্ট করবেন না। (যেমন বর্তমানে দাফনের কিছুদিন পর অনেকেই ইট ইত্যাদি দ্বারা কবরকে চার কোণা বিশিষ্ট করে থাকে।)
(১০) কবর মাটি থেকে এক বিঘত উচুঁ বা এর চাইতেও সামান্য উচুঁ করবেন।
(১১) দাফনের পর কবরের উপর পানি ছিটিয়ে দেয়া সুন্নাত।
(১২) এছাড়াও কবরে জন্মানো গাছের চারা ইত্যাদিতে পানি দেয়ার উদ্দেশ্যে কবরে পানি ছিটানো জায়েজ।
(১৩) বর্তমানে কতিপয় লোক বিনা প্রয়োজনে কবরে যে পানি ছিটায়, এটা মন্দ ও নাজায়িয, ফতোওয়ায়ে রযবীয়া শরীফ, ৯ম খন্ড, ৩৭৩ পৃষ্ঠার মধ্যে তা অপচয় হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
(১৪) দাফনের পর কবরের শিয়রে الٓـمّٓ থেকে مُفْلِحُوْنَ পর্যন্ত এবং পায়ের দিকে اٰمَنَ الرَّسُوْلُ থেকে সূরার শেষ পর্যন্ত পাঠ করা মুস্তাহাব।
(১৫) কবর তালক্বীন করবেন। (তালকীনের নিয়ম পূর্বে বর্ণিত হয়েছে)
(১৬) কবরের শিয়রে দাঁড়িয়ে কিবলামুখী হয়ে আযান দিবেন।
(১৭) কবরের উপর ফুল দেয়া উত্তম। কেননা, যতদিন পর্যন্ত এ ফুল তাজা থাকবে, তা তাসবীহ পাঠ করবে। এতে মৃত ব্যক্তির আত্মা শান্তি পাবে।
নির্বোধ শিশুদেরকে মসজিদে নিয়ে যাওয়াকে
হাদীস শরীফে নিষেধ করা হয়েছে
নবী করীম, রউফুর রহীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “তোমরা মসজিদ সমূহকে শিশু, পাগল, ক্রয়-বিক্রয়, ঝগড়া-বিবাদ, উচ্চ স্বরে কথা বলা, শরীয়াতের শাস্তি কার্যকর করা ও তাওবারী ব্যবহার করা থেকে রক্ষা করো।” (ইবনে মাযাহ, ১ম খন্ড, ৪১৫ পৃষ্ঠা, হাদীস৭৫০)
শিশুর প্রস্রাব ইত্যাদির কারণে মসজিদে অপবিত্র হওয়ার আশঙ্কা থাকলে এরূপ শিশু ও পাগলকে মসজিদে নিয়ে যাওয়া হারাম। আর মসজিদে অপবিত্র হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে তাদরেকে মসজিদে নিয়ে যাওয়া মাকরূহ। যে সমস্ত লোক মসজিদে জুতা নিয়ে যায়, তাদের জুতায় নাজাসাত আছে কিনা তা ভালভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি জুতায় নাজাসাত থাকে, তাহলে তা ভালভাবে পরিস্কার করে নিতে হবে। আর জুতা পরিহিত অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করা বেয়াদবী। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় খন্ড, ৯২ পৃষ্ঠা) শিশু, পাগল, অজ্ঞান ও জ্বিনগ্রস্থ রোগীকে ঝাঁড় ফুঁকের জন্যও মসজিদে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে শরীয়াতের অনুমতি নেই, শিশুদেরকে ভালভাবে কাপড়ে জড়িয়েও মসজিদে নেয়া যাবে না। যদি শিশু ইত্যাদিকে মসজিদে নিয়ে যাওয়ার মত ভুল আপনার থেকে সংঘটিত হয়ে থাকে, তাহলে দয়া করে অনতিবিলম্বে তাওবা করে ভবিষ্যতে আর কখনও তাদেরকে মসজিদে না নেয়ার প্রতিজ্ঞা করে নিন।
এ অধ্যায়টি পাঠকালে কারো সাথে মসজিদে তার শিশু সন্তান থাকলে তার প্রতি আমার সন্নিবদ্ধ অনুরোধ, সে যেন তাড়াতাড়ি তার শিশু সন্তানকে মসজিদের বাইরে নিয়ে আসে। তবে হ্যাঁ মসজিদের আঙ্গিনায় শিশুদেরকে নেয়া যাবে, যদি তাদেরকে নিয়ে মসজিদের ভিতর দিয়ে যেতে না হয়।
তাহিয়্যাতুল অযু
অযু করার পর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ শুষ্ক হওয়ার পূর্বে দুই রাকাত নামায আদায় করা মুস্তাহাব। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৫৬৩ পৃষ্ঠা) হযরত সায়্যিদুনা উকবা বিন আমের رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন: নবী করীম, রউফুর রহীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি অযু করে এবং ভালভাবে অযু করে জাহের ও বাতেনের সাথে মনোযোগী হয়ে দুই রাকাত (নফল নামায) আদায় করবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।” (সহীহ মুসলিম, ১৪৪ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৩৪) গোসলের পরেও দুই রাকাত নামায মুস্তাহাব। অযু করার পর ফরয ইত্যাদি পড়লে তাহিয়্যাতুল অযুর স্থলাভিষিক্ত হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৫৬৩ পৃষ্ঠা) মাকরূহ সময়ের মধ্যে তাহিয়্যাতুল অযু ও গোসলের পরের দুই রাকাত নামায আদায় যাবেনা।
صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد