শবে বরাতে জাগরণ করলে জান্নাতের সু-সংবাদ:-

হযরত মু‘আয রা. বর্ণনা করেন,রাসূল স. ইরশাদ করেন- যে

ব্যক্তি পাঁচ রাত ইবাদত বন্দেগীতে কাটাবে তার জন্য

জান্নাত অবধারিত। ১. জিলহজ্জের আট তারিখের রাত। ২.

আরাফার রাত। ৩. ঈদুল আযহার রাত। ৪. ঈদুল ফিতরের রাত।

৫. শাবানের মধ্য রাত অর্থাৎ শবে বরাত। (আত-তারগীব

ওয়াত তারহীব: ২/১৫২)

হযরত ইবনে ওমর (রঃ) বলেনঃ পাঁচটি রজনীতে দুআ করা

হলে তা কখনো ফেরত দেয়া হয় না (অবশ্যই ক্ববুল হয়) জুমআর

রাত্র, রজবের প্রথম রাত, শাবানের পঞ্চদশ রাত এবং দুই

ঈদের রাত।

( ইমাম বায়হাকী তাঁর শুয়াবুল ঈমানে; আব্দুর রাজ্জাক তাঁর

মুসনাদে )

===== # রাতে ইবাদত করা

হযরত আলা ইবনে হারিস ( রহমতুল্লাহি আলাইহি ) থেকে

বর্ণিত, হযরত আয়িশা ( রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা )

বলেন, একবার রাসূল ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম ) নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সিজদা করেন যে,

আমার ধারণা হয় তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন

উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তখন তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি

নড়ল। যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ

করলেন, তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা বা ও

হুমাইরা! তোমার কি এ আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহ ও তাঁর

রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি বললাম, তা নয়, ইয়া

রাসূলাল্লাহ! আপনার দীর্ঘ সিজদা দেখে আমার আশংকা

হয়েছিল, আপনি মৃত্যু বরণ করেছেন কিনা। নবীজী

( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) জিজ্ঞেস করলেন,

তুমি কি জান এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর

রাসূল ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) ভাল

জানেন। রাসূল ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম )

বললেন, এটা হল অর্ধ শাবানের রাত। আল্লাহ তাআলা অর্ধ

শাবানে তাঁর বান্দাদের প্রতি নজর দেন এবং

ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের

প্রতি অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদেরকে ছেড়ে

দেন তাদের অবস্থাতেই। ( বায়হাকী, ৩য় খন্ড-৩৮২পৃ )

এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হল, এ রাতে দীর্ঘ নফল নামাজ

পড়া উত্তম, যাতে সিজদাও দীর্ঘ হবে। এছাড়াও এ রাতে

কুরআন তেলাওয়াত, যিকির আযকার ইত্যাদি আমল করা যায়।

শবে বরাতের নামাজ বিষয়ে একটি অলোচনা পাবেন এই

লিন্কে:-

http://hifazat-e-islam.blogspot.com/2013/06/blog-post_23.html

==== # পরদিন রোযা রাখা

হযরত আলী ( রাদীয়াল্লাহু তাআলা আনহু ) থেকে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম )

বলেছেন,পনেরো শাবানের (চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত)

যখন আসে, তখন তোমরা রাতটি ইবাদত বন্দেগীতে কাটাও

এবং দিনে রোযা রাখ। কেননা এ রাতে সূর্যাস্তের পর

আল্লাহ তাআলা পড়থম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোন

ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করবো।

আছে কি কোন রিযিকপ্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দিব।

এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা মানুষের

প্রয়োজনের কথা বলে তাদেরকে ডাকতে থাকেন। ( সুনানে

ইবনে মাজাহ, হাদীস-১৩৮৪, বাইহাকী-শুআবুল ঈমান,

হাদীস-৩৮২৩ )

ইমরান ইবনে হোসায়েন (রা.) বলেছেন যে, “রসূলে

পাক (স.) তাকে অথবা অপর কাউকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি

কি শাবান মাসের মধ্যভাগে (শব-ই- বরাতের) রোজা

রেখেছিলে? তিনি বললেন, না। তখন রসূলে পাক (স.) বললেন,

যখন তুমি রাখনি তখন দু’দিন (রোজার শেষে) রোজা

রেখে দিও” (মুসলীম শরীফ,হাদীস নং-২৬২২,২৬২৩,২৬২৪,ই

ফা)

======# কবর জিয়ারত:

হযরত আয়েশা রা. বলেন, একরাতে আমি রাসূল স.কে

বিছানায় পেলাম না। তাই (খোজার উদ্দেশ্যে) বের হলাম।

তখন দেখতে পেলাম,তিনি জান্নাতুল বাকীতে আছেন।

আমাকে দেখে তিনি বলে উঠলেন, তুমি কি এ আশঙ্কা

করছো যে, আল্লাহ এবং তার রাসূল তোমার প্রতি অবিচার

করবেন ? আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল ! আমি ধারণা

করছিলাম, আপনি আপনার অন্য স্ত্রীর ঘরে তাশরীফ

নিয়েছেন। রাসূল স. বলেন শাবানের পনের তারিখ রাতে

আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং ‘বনু

কালব’ গোত্রের ভেড়ার পশমের চেয়েও অধিক সংখ্যক

লোককে মাফ করে দেন। (তিরমিযী শরীফ: ১/১৫৬)





░▒▓█►হাদীসটির ব্যাপারে মুহাদ্দিসদের অভিমত

ইবনে হিবক্ষান র. আয়েশা রা. এর হাদীসটিকে হাসান

বলেছেন। (শরহুল মাওয়াহিবিল লাদুনিয়্যাহ: ৭/৪৪১

প্রশ্নঃ শাবানের মধ্যরাত্রি উদযাপন করা যাবে কিনা?

উত্তরঃ শাবানের মধ্যরাত্রি পালন করার কি হুকুম এ নিয়ে

আলেমদের মধ্যে ২টি মত রয়েছে:

সম্মিলিত ইবাদত:

এক. শা‘বানের মধ্য রাত্রিতে মাসজিদে জামাতের সাথে

নামায ও অন্যান্য ইবাদত করা জায়েয । প্রসিদ্ধ তাবেয়ী

খালেদ ইবনে মি‘দান, লুকমান ইবনে আমের সুন্দর পোশাক

পরে, আতর খোশবু, শুরমা মেখে মাসজিদে গিয়ে মানুষদের

নিয়ে এ রাত্রিতে নামায আদায় করতেন। এ মতটি ইমাম

ইসহাক ইবনে রাহওয়ীয়াহ থেকেও বর্ণিত হয়েছে।

(লাতায়েফুল মা‘আরেফ পৃঃ১৪৪)।

একক ইবাদত:

দুই. শা‘বানের মধ্যরাত্রিতে ব্যক্তিগতভাবে ইবাদত

বন্দেগী করা জায়েয। ইমাম আওযা‘য়ী, ইবনে তাইমিয়া,

এবং আল্লামা ইবনে রজব (রাহমাতুল্লাহি আলাইহিম) এ মত

পোষণ করেন। তাদের মতের পক্ষে তারা যে সমস্ত হাদীস

দ্বারা এ রাত্রির ফযীলত বর্ণিত হয়েছে সে সমস্ত সাধারণ

হাদীসের উপর ভিত্তি করে ব্যক্তিগতভাবে ইবাদত করাকে

জায়েয মনে করেন।

শবে বরাতে তাবেয়ীগণের আমলঃ

তাবেয়ী কারাঃ

তাবেয়ী হচ্ছেন তারা যারা রাসূলে পাক (সাঃ) এর

সাক্ষাৎ লাভ করতে পারেননি তবে সাহাবায়ে কেরামের

সাক্ষাৎ লাভ করেছেন,তাদের নিকট থেকে তালীম গ্রহণ

করেছেন এবং তাদের আদর্শ অনুসরণ করেছেন।

তাবেয়ীগণ শবে বরাতে ইবাদাতে মশগুল থাকতেন।

তারা এ রাত উপলক্ষে যা করতেনঃ

১। নতুন কাপড় পরিধান করতেন ২।

চোখে সুরমা লাগাতেন

৩।সারা রাত মসজিদে অবস্থান করে ইবাদাতে কাটিয়ে

দিতেন।

হাম্বলী মাযহাবের বিশ্বখ্যাত ইমাম ইবনু রাজাব

হাম্বলীর লিখিত লাতাইফুল মাআরিফ, পেইজ নং ২৬৩

তাবেয়ীগণের যারা এমন আমল করতেন, তাদের কয়েকজনের

নাম উল্লেখ করছি।– খালিদ বিন মা’দান (রাঃ)- তিনি

শাম প্রদেশের ইমাম ছিলেন। তিনি সাহাবায়ে কেরামের

মহান চ্রিত্রের বর্ণনা করতেন। যেসকল সাহাবায়ে কেরাম

থেকে তিনি হাদীস বর্ণনা করেছেন তাঁরা হলেন- ছাওবান,

আবু উমামাহ, মুয়াবিয়া, আবু হুরায়রা, মিকদাম,ইবনু

উমার,উতবাহ,ইবনু আমর, জুবাইর বিন নুফাইর, হুজর বিন হুজর,

রাবীয়াহ,খিয়ার বিন সালামাহ,ইবনু আবী হিলাল,আমর

বিন আসওয়াদ,কাসীর বিন মুররাহ, আবু বাহরিইয়্যাহ প্রমুখ।

সুত্রঃ সিয়ারু আলামীন নুবালা, আত তাবাকাতুছ ছানিয়াহ

তিনি এমন নির্ভরযোগ্য ইমাম যে ইমাম বুখারী (রা) তাঁর

থেকে বর্ণিত হাদীস সংকলন করেছেন। দেখুন- সহীহ

বুখারী,কিতাবুল জিহাদি ওয়াস সিয়ারি-২৭৬৬

মাকহুল(রা)- ইমাম মাকহুল(রা) সম্পর্কে ইমাম যুহরি

বলেন,সারা দুনিয়ায় আলেম হলেন চারজন- মদিনা শরীফে

সায়ীদ বিন মুসায়্যিব,কুফা নগরীতে শাবী, বসরা নগরীতে

হাসান বসরী এবং শাম প্রদেশে মাকহুল(রা)। তিনি

ছিলেন শামের সবচেয়ে বড় ফকীহ। সুত্রঃ সিয়ারু আলামীন

নুবালা, আত তাবাকাতুছ ছানিয়াহ তাদের সাথে আরো

অনেকে সারা রাত মসজিদে অবস্থান করে ইবাদাতে

কাটিয়ে দিতেন। শবে বরাত উপলক্ষে মসজিদে যাওয়া,নফল

ইবাদাত করা হচ্ছে সালফে সালেহীনের অনুসরণ করা।

করণীয়:-

*কুরআন তেলোয়াত করা

*গোসল করা

*মা-বাবা থেকে ক্ষমা চাওয়া

*দান সদকা করা।(গরীব দু:খী কে,মাজারে নয় )

*পরিবারের জন্য সতদার নিয়তে ভালো খাবারের ব্যবস্তা

করা।

*গরীব দু:খী মানুষকে খাওয়ানো

ইত্যাদি…

বর্জনীয়:

এ রাতে একটি কুসংস্কার হল আতশবাজি। এটা এমন

একটি বাজে কাজ, যাতে দুনিয়ার ফায়দাও নেই,

আখিরাতেও ফায়দা নেই। আছে কেবল অপচয়,

অপব্যয়, পাপ, আরও আছে বিধর্মী, অগ্নিপূজকদের

অনুকরণ। এই বরকতময় রাতে আল্লাহ এবং তাঁর

ফিরিশতাগণ দুনিয়াবাসীদের প্রতি রহমত বিতরণ

করতে তশরীফ আনেন। বান্দাগণকে দান গ্রহণের জন্য

অবিরত আহবান করতে থাকেন। আমাদের ছেলে-

মেয়েরা আল্লাহ্র তাজাল্লী, নূর ও রহমতের অংশ

নেওয়া, তাঁর দান গ্রহণ, তাঁর নূরে নূরানী হওয়ার

পরিবর্তে আতশবাজীর দ্বারা তার প্রতি পরিহাস ও

বিদ্রূপ প্রদর্শন করছে, এই অবস্থা কি সঙ্গত?

এটা রোধ করার কোন দায়িত্ব কি অভিভাবকগণের

স্কন্ধে নেই। একদিকে ইবাদত অন্যদিকে পরিহাস!

দুটি এক সঙ্গে চলতে দেয়া কি উচিত?

আরো একটি কুসংস্কার হল আলোকসজ্জা করা।

প্রয়োজনাতিরিক্ত বাতি জ্বালানো শরীয়তের

দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। এটা অপচয়ও বটে। আল

মুফতীতে বলা হয়েছে যে, এটা দূষণীয়।

Top