সাহাবীদের যামানায় মাযহাব ছিলঃ

১/ ইবনু তাইমিয়াহ এর কিতাব থেকে সরাসরি প্রমাণঃ
______________________________
ওয়াহাবী, লা মাযহাবী মানে মাযহাব নিয়ে তামাশা,
টিটকারী ও অস্বীকারকারী ফেতনাবাযদের ইমাম, তাদের শায়েখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ স্বীকার করেছেন, সাহাবায়ে কেরামের যামানায় মাযহাব ছিল। তিনি তার কিতাবে সাহাবাদের কথা বলতে গিয়ে “মাযহাব” শব্দটি স্বয়ং উল্লেখ করেছেন।
ইবনু তাইমিয়্যাহ বলেন, কোর’আনে কারীমের কোন একটি আয়াতের তাফসীরের ব্যাপারে যদি সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীগণ এবং ইমামগণের কোন কাওল বা বানী থাকে, আর অন্য কোন
দল যদি তাদের নিজেদের মাযহাবের পক্ষে অন্য কোন কাওল বা কথা দ্বারা ঐ আয়াতের তাফসীর করে, যা সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীগণের মাযহাবের বিরুদ্ধে চলে যায়, তবে তা হবে বেদ’আতীদের কাজ। তিনি তার কিতাবে “মাযাহিবুস সাহাবাহ” অর্থাৎ সরাসরি “মাযাহিব” শব্দ উল্লেখ করেছেন। মাযাহিব বহুবচন। একবচনে মাযহাব। অর্থাৎ তিনি প্রমাণ করেছেন, সাহাবায়ে কেরামের যুগে ও মাযহাব বিদ্যমান ছিল।
রেফারেন্সঃ
মাজমু উল ফাতাওয়াঃ খন্ড ১৩
___________________
ঠিক তেমনি তিনি ফেকহী মাস’আলার ক্ষেত্রে ও
সাহাবীদের মাযহাব রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।
এখানে ও তিনি সরাসরি ‘মাযহাব’ শব্দটি উল্লেখ করেছেন।
রেফারেন্সঃ
মাজমু উল ফাতাওয়াঃ খন্ড৩২, নিকাহ অধ্যায়।
++++++++++++++++++++++
২/ আলী বিন মাদীনী রাহিমাহুল্লাহ এর কিতাব
থেকে প্রমাণঃ
____________________________________
আলী বিন মাদীনী রাহিমাহুল্লাহ হচ্ছেন, বিশ্ববিখ্যাত
মুহাদ্দিস ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ উস্তাদ। তিনি তাঁর কিতাবে এ নিয়ে বিস্তারিত
আলোচনা করে প্রমাণ করেছেন, সাহাবায়ে কেরামের যুগে মাযহাব বিদ্যমান ছিল। আলী বিন মাদীনী বলেন, সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে মাত্র তিনজন সাহাবী ছিলেন, যাদের মাযহাবকে বাকী সকলে অনুসরণ করতেন। যে তিনজন সাহাবীর মাযহাবকে অনুসরণ করা হত, তারা হচ্ছেন,
১/ আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু
২/যায়েদ বিন সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু
৩/আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু।
আলী বিন মাদীনী বলেছেন,
এই তিনজন সাহাবীর প্রত্যেকের ছিলেন অনুসারীগণ। একেক দল সাহাবায়ে কেরাম একেক সাহাবীর মাযহাব অনুসরণ করতেন এবং ঐ সাহাবীর ফতোয়া মেনে চলতেন এবং একই ফতোয়া দিয়ে অন্যদেরকে ফতোয়া দিতেন।
রেফারেন্সঃ
কিতাবুল ইলাল পৃষ্ঠা : ১০৭-১৩৫
____________________________
তাহলে কী দাঁড়ালো?
সাহাবাদের তিনটি মাযহাব প্রমাণিত হলোঃ
১/হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রা) এর
মাযহাবঃসাহাবাগণের মধ্য থেকে এই মাযহাবের
আলাদা অনুসারী ছিলেন। তাঁরা আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রা) এর মাযহাবকে ফলো করতেন
এবং সে অনুসারে ফতোয়া দিতেন। এ মাযহাব যারা অনুসরণ করতেন তারা হলেন নিন্মোক্ত ছয়জন।
আলকামাহ (মৃত্যু : ৬২ হিজরী),
আসওয়াদ (মৃত্যু : ৭৫ হিজরী),
মাসরূক (মৃত্যু : ৬২ হিজরী),
আবীদাহ (মৃত্যু : ৭২ হিজরী),
আমর ইবনে শারাহবীল (মৃত্যু : ৬৩ হিজরী) ও
হারিস ইবনে কাইস (মৃত্যু : ৩৬ হিজরী)।
লক্ষ্য করুন,
এখানে আরেক বিষয় প্রমাণিত হয়ে গেল, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রা) এর অনুসারীগণ তাঁর তাকলীদ করতেন। অর্থাৎ কোন প্রকার যাচাই বাচাই না করে সরাসরি তাঁর ফতোয়া তাঁরা মেনে নিতেন।


২/ হযরত যায়েদ বিন সাবিত (রা) এর মাযহাবঃ যায়েদ বিন সাবিত (রা) এর এই মাযহাবের আলাদা অনুসারী ছিলেন। তারা এই মাযহাবকে ফলো করতেন এবং সে অনুসারে ফতোয়া প্রদান করতেন। যায়েদ বিন ছাবিত রা. এর যে শাগরিদগণ তাঁর মাযহাবের অনুসারী ছিলেন এবং তাঁর মত ও সিদ্ধান্তসমূহ সংরক্ষণ ও প্রচার প্রসারে মগ্ন ছিলেন তাঁরা বারো জন। তাদের নাম উল্লেখ করার পর ইবনুল মাদীনী রাহ. লেখেন, এই বারো মনীষী ও তাদের মাযহাবের বিষয়ে সবচেয়ে বিজ্ঞ ছিলেন
ইবনে শিহাব যুহরী (৫৮-১২৪ হিজরী),
ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ আনসারী (মৃত্যু : ১৪৩ হিজরী),
আবুয যিনাদ (৬৫-১৩১ হিজরী),
আবু বকর ইবনে হাযম (মৃত্যু ১২০ হিজরী)।
লক্ষ্য করুন,
এখানে ও প্রমাণিত হয়ে গেল, যায়েদ বিন সাবিত (রা) এর অনুসারীগণ তাঁর তাকলীদ করতেন। অর্থাৎ কোন প্রকার যাচাই বাচাই না করে সরাসরি তাঁর ফতোয়া মেনে নিতেন।

৩/হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা) এর মাযহাব। এই মাযহাবের ও একইভাবে আলাদা অনুসারী ছিলেন। তাঁরা শুধু আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা) এর মাযহাবকে ফলো করতেন এবং সে অনুসারে ফতোয়া দিতেন।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.এর যে শাগরিদগণ তার মত ও সিদ্ধান্তসমূহ
সংরক্ষণ ও প্রচারে মগ্ন ছিলেন, সে অনুযায়ী ফতওয়া দিতেন এবং তার অনুসরণ করতেন, তাঁরা ছয়জন।
লক্ষ্য করুন,
এখানে ও প্রমাণিত হয়ে গেল, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা) এর অনুসারীগণ তাঁর তাকলীদ করতেন। অর্থাৎ কোন প্রকার যাচাই বাচাই না করে তারা সরাসরি তাঁর ফতোয়া মেনে নিতেন।
এ লেখাটি পড়ার পর যে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে গেলোঃ
_______________________________
মাযহাব নতুন উদ্ভাবিত কোন বিষয় নয়। সাহাবীগণের যামানায় মাযহাব বিদ্যমান ছিলো। গোটা কয়েক সাহাবী ফতোয়া প্রদান করতেন আর বাকী সকলে তাদের ফতোয়া অনুসরণ করতেন। নির্দ্বিধায় তা মেনে নিতেন।
সুতরাং—
১/কেউ যদি মাযহাব অস্বীকার করে, সে প্রকারান্তরে সাহাবী ও তাবেয়ীগণের পথ ও
মতকে অস্বীকার করলো।
২/ কেউ যদি মাযহাব নিয়ে টিটিকারী, টাট্টা, উপহাস করে, তবে সে প্রকারান্তরে সাহাবা ও তাবেয়ীগণের পথ ও মত নিয়ে টাট্টা মশকরা করলো।
৩/ মাযহাব নিয়ে এমন বেয়াদবীপূর্ণ কথা যে বলে,
তাকে ভালভাবে চিনে রাখা প্রয়োজন। কারণ এই লোক সাহাবাদের সম্পর্কে আপনার আমার
মনে শয়তানী ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করতে পারে।
আমাদেরকে সঠিক পথ থেকে ছিটকে দিতে পারে।
অনুরোধঃ
লেখাটি শেয়ার করে নেবেন।
Top