কিতাবঃ হায়াতুল আম্বিয়া (আলাইহিস সালাম)
লেখকঃ ইমাম বায়হাকী (রহঃ)
হাদিস নং ১ :
হযরত সাবেত আল বুনানী রাদ্বিয়ালাহু তা‘আলা আনহু হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলইিহি ওয়ালিহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
“নবীগণ তাঁদের কবর শরীফে জীবিত এবং তারা সেখানে নামায আদায় করেন।”
হাদীস নং ২ :
হযরত সাবেত আল বুনানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হযরত আনাস ইবনে মালেকরাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
“নবীগণ তাঁদের নিজ নিজ কবর শরীফে জীবিত, এবং তারা নামায আদায় করেন ৷”
হাদীস নং-৩
হযরত আবুল মালীহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
“নবীগণ তাঁদের কবর শরীফে জীবিত, তাঁরা (সেখানে) নামায আদায় করেন ৷”
হাদীস নং ৪ :
হযরত সাবেত আলু বুনানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হযরত আনাস ইবনে মালেকরাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
“নিশ্চয় নবীগণ আলাইহিমুস সালামকে তাঁদের কবর শরীফে চল্লিশ রাত্রির পর আর রাখা হয় না, বরং তাঁরা মহান আল্লাহর কুদরতের সামনে নামায পড়তে থাকেন, যতক্ষণ না সিঙ্গায় কুঁক দেয়া হবে ৷”
এ হাদীস শরীফ যদি উপরোক্ত বাক্যে হুবহু সহীহ হয়, তাহলে এর মর্মার্থ আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন ৷ তবে হতে পারে শুধু এ যাবতকাল সময়ে
তাঁরা তাঁদের কবর শরীফে নামায আদায় করতে পারেন না; কিন্তু এ নির্ধারিত সময়ের পর তাঁরা আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল্লা’র মহান কুদরতের
সমীপে সদা-সর্বদা নামায পড়তে থাকেন, যা আমরা প্রথম হাদীসে উল্লেখ করেছি ৷
আবার কখনও তার উদ্দেশ্য এও হতে পারে যে, তাঁদের রূহ সহ দেহ মুবারক ঊর্ধ্ব জগতে উত্তোলিত হয়।
হাদীস নং ৫ :
হযরত সা‘ঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন,
“কোন নবী আলায়হিস সালাম নিজ কবর শরীফে চল্লিশ রাতের বেশী অবস্থান করেন না; বরং তাঁদেরকে উত্তোলন করা হয় ৷ ফলে তাঁরা অন্যান্যদের ন্যায় জীবিত হয়ে যান। তাঁরা বিচরণ করতে থাকেন ওই সকল স্থানগুলোতে, যেখানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁদেরকে অবতরণ করাণ ৷
যেভাবে আমরা মিরাজ ও অন্যান্য হাদীসে তার বর্ণনা পেয়েছি ৷ যেমন নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মি’রাজ রজনীতে দেখতে পেলেন যে, হযরত মূসা আলায়হিস সালাম তাঁর কবর শবীফে দাঁড়িয়ে নামায পড়ছেন ৷ আবার কিছুক্ষণ পর তাঁকে অন্যান্য নবীগণের আলায়হিস সালাম এর সাথে ‘বাইতুল মুকাদ্দাস’ শরীফে সমবেতভাবে উপস্থিত দেখতে পেলেন ৷ আবার ওই সকল নবী-রাসূলকে বিভিন্ন আসমানেও দেখতে পেলেন ৷ আল্লাহ তা‘আলা যা চান তাই করেন ৷ ”
নিশ্চয় নবীগণ আলায়হিস সালাম যে তাঁদের নিজ নিজ কবর শরীফে জীবিত এ সম্পর্কে অসংখ্য দলীল ও প্রমাণ বিশুদ্ধ হাদীস শরীফ থেকে পাওয়া যায় ৷ তারমধ্যেঃ
হাদীস নং-৬
হযরত সুলাইঁমান আত্ তাইমী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু সাহাবী হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমাকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর
কয়েকজন সম্মানিত সাহাবী সংবাদ দিয়েছেন যে,“যে রাতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে মি’রাজ করানো হল সে রাতে তিনি হযরত মূসা আলায়হিস সালাম-এর পাশ দিয়ে গমন করার সময় দেখতে পেলেন- তিনি (আলায়হিস সালাম) নিজ কবর শরীফে নামায পড়ছেন৷”
হাদীস নং- ৭
হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,”আমি হযরত মূসা আলায়হিস সালাম- এর পাশ দিয়ে গমন করেছি, আর তিনি ওনার নিজ কবরে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করছেন।”
হাদীস নং ৮ :
হযরত সাবিত আল বুনানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হযরত আনাস ইবনে মালেকরাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাই়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,”মি’রাজ রজনীতে আমি একটি লাল বালির টিলার নিকট আসলাম, যেখানে হযরত মূসা আলায়হিস সালাম এর কবর শরীফ অবস্থিত, আর দেখলাম- হযরত মুসা আলায়হিস সালাম তাঁর নিজ কবর শরীফে দাঁড়িয়ে নামায আদায়
করছেন ৷”
হাদীস নং-৯
হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
“ইসরা ও মি’রাজ শেষে ফিরে এসে কোরাইশদের নিকট এ ঘটনা বর্ণনার এক পর্যায়ে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমি আমাকে হিজর’ (কা’বার অদূরে) নামক স্থানে দেখতে পেলাম। যখন আমি কোরাইশদের নিকট আমার ইসরা ও মি’রাজের ঘটনা বর্ণনা
করছিলাম ।তখন তারা আমাকে বায়তুল মুকাদ্দাস বিষয়ক এমন কিছু প্রশ্ন করলো যে সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। তাই আমি চিন্তিত হয়ে গেলাম। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা বাইতুল মুকাদ্দাসকে আমার জন্য উন্মোচিত করে দিলেন, যাতে আমি তা দেখতে পাই । সুতরাং তারা বায়তুল মুকাদ্দাস নিয়ে তারা যে কোন প্রশ্ন করল আমি তাদের যথাযথ উত্তর দিলাম।এ রজনীতে আমি আমাকে নবীগণ আলায়হিস সালাম-এর একটি সমাবেশে দেখতে পেলাম । আবার দেখতে পেলাম যে, হযরত মূসা আলায়হিস সালাম দাঁড়িয়ে নামায আদায় করছেন। তিনি কোকড়ানো চুলধারী উপমাযোগ্য সুদর্শন পুরুষ, যাকে দেখতে শানুয়া গোত্রের
লোকদের মত মনে হয়।ওদিকে হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম আলায়হিস সালামও দাঁড়িয়ে নামায পড়ছেন, যিনি আকৃতির দিক থেকে ওরওয়া ইবনে মাসউদ আস সাকাফীর সদৃশ।
আবার দেখতে পেলাম, হযরত ইবরাহীম আলায়হিস সালামকে, তিনিও দাঁড়িয়ে নামায আদায় করছেন, যিনি দেখতে তোমাদের সাথে যিনি আছেন। (অর্থাৎ প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহ তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) তার সদৃশ।
অতঃপর নামাযের সময় হলো, আমি তাদের ইমামতি করলাম । আমি যখন নামায থেকে অবসর হলাম তখন আমাকে কেউ বলল. হে হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা! উনি হলেন মালেক, জাহান্নামের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা।
তার সাথে সালাম আদান-প্রদান করুন। আমি যখন তার দিকে ফিরলাম তখন তিনি আমাকে প্রথমে সালাম দিলেন।
এ হাদীস ইমাম মুসলিম তার সহীহ মুসলিম-এ আবদুল আযীয থেকে বর্ণনা করেন।
হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব ও অন্যান্যদের বর্ণনা মতে- নবী করীম সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য নবীগণ আলায়হি সালাম-এর সাথে বায়তুল মুকাদ্দাস-এর মসজিদে মিলিত হন । আর হযরত
আবু যার রাদিয়াল্লাহ তাআলা আনহু ও মালেক ইবনে সা’সা’আহ রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহু বর্ণিত মি’রাজ সংক্রান্ত হাদীস শরীফে উল্লেখ
রয়েছে-
“নবী করীম সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য নবীগণের সাথে আসমানগুলোতে সাক্ষাত করেন এবং তিনি সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে কথা বলেন তারাও তাঁর সাথে কথাবার্তা বলেন।”
উপরোল্লেখিত সব হাদীসই সহীহ ও বিশুদ্ধ। এগুলোর পরস্পরের মধ্যে কোন বিরোধ নেই ।
তিনি সাল্লাল্লাহ তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত মূসা আলায়হিস সালামকে এদিকে নিজ কবর শরীফে দাঁড়িয়ে নামায পড়তে দেখেছেন, আবার আসমান ও বাইতুল মুকাদাসেও। অর্থাৎ তিনি নিজ কবর শরীফে নামাজ আদায় করার পর তাকে অন্যান্য নবীগণের সাথে বায়তুল মুকাদ্দাস-এ পরিভ্রমণ করানো হয় যেভাবে আমাদের প্রিয় নবীকে রাতের সামান্য সময়ের মধ্যে বায়তুল মুকাদ্দাস শরীফে উপস্থিত করা হয় ।
তাই তিনি তাদেরকে সেখানে দেখতে পান। অত:পর তাদেরকে আসমানের দিকে উর্ধগমন করানো হয় যেভাবে আমাদের প্রিয়নবীকে
মি’রাজ বা উৰ্ধগমন করানো হয়েছে। তাই তিনি তাদেরকে সেখানেও দেখতে পান।
যা বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত ।
সুতরাং তাদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে উপস্থিত হওয়াটা যুক্তি ও বিবেকের দিক থেকে স্বাভাবিক, কোন অবস্থাতে অসম্ভব নয়; যার সমর্থনে সর্বাধিক সত্যবাদী নবীর অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
উপরোক্ত সকল হাদীস ইন্তিকালের পর নবীগণ আলায়হিস সালাম-এর সশরীরে জীবিত থাকার অকাট্য প্রমাণবহ। এ বক্তব্যের সমর্থনে নিচের
হাদীস শরীফও প্রমাণ স্বরূপ পেশ করা যায়ঃ
হাদিস ১০ :
হযরত আওস ইবনে আওস আস-সাকাফী রাদিয়াল্লাহ তাআলা আনহু বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন,
“তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন
হলো- জুমার দিন,
– এ দিনে হযরত আদম আলায়হিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
– এ দিনে তার ইন্তিকাল হয়েছে,
– এ দিনেই (কিয়ামতের) সিঙ্গায় ফুক দেয়া হবে এবং
– এ দিনেই সকলে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়বে। তাই
তোমরা এ দিনে আমার প্রতি অধিকহারে দুরূদ-সালাম পাঠ কর। কেননা তোমাদের সালাত-সালাম আমার নিকট পেশ করা হয়। তাঁরা বললেন,
“ইয়া রাসুলাল্লাহ! কিভাবে আপনার প্রতি আমাদের সালাত-সালাম পেশ
করা হবে? অথচ আপনি ইন্তিকাল করবেন এবং আপনার দেহ মুবারক ক্ষয়প্রাপ্ত ও জীর্ণ হয়ে যাবে? তখন উত্তরে নবী করীম সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন, নিশ্চই মাটির উপর নবীগণ আলায়হিস সালাম-এর দেহ মুবারককে স্পর্শ করা বা গ্রাস করাকে আল্লাহ তা’আলা হারাম (নিষেধ) করে দিয়েছেন ।”
এ হাদীস ইমাম আবু দাউদ তাঁর সুনানে বর্ননা করেছেন।
হাদীস নং-১১:
হযরত আবু মাসউদ আনসারী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন,”তোমরা আমার প্রতি জুমার দিন অধিক পরিমাণে সালাত-সালাম প্রেরণ করো, কেননা যে কেউ আমার প্রতি জুমার দিনে দুরূদ-সালাম পাঠ করবে তার ওই দুরূদ সালাম আমার প্রতি অবশ্যই পেশ
করা হবে।”
হাদীস নং-১২:
হযরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
আমার প্রতি প্রত্যেক জুমার দিনে অধিক পরিমাণে দুরূদ সালাম প্রেরণ করো,
কেননা আমার উম্মতের সালাত-সালামসমূহ আমার নিকট প্রত্যেক জুমাবারে পেশ করা হয় । সুতরাং আমার উম্মতের মধ্যে যে আমার প্রতি সর্বাধিক সালাত-সালাম প্রেরণকারী হবে, সে কিয়ামতের দিন আমার সর্বাধিক নিকটবর্তী হবে ।
হাদীস নং-১৩:
প্রিয়নবীর খাদিম হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আন থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, কিয়ামতের দিনের সকল স্থানে তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই আমার সর্বাধিক নিকটতম স্থানে থাকবে, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে আমার প্রতি সর্বাধিক সালাত-সালাম প্রেরণকারী ছিল । আর যে ব্যক্তি আমার প্রতি প্রত্যেক জুমার দিনে ও জুমার রাতে একশত বার দুরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তা’আলা ওই ব্যক্তির ১০০ টি চাহিদা পূরণ করবেন- যার ৭০ টি আখিরাতের চাহিদা এবং ৩০ টি দুনিয়ার চাহিদা। অত:পর আল্লাহ তা’আলা ওই সালাত- সালাম সংরক্ষণ ও পৌছানোর জন্য এক ফেরেশতা নিয়োজিত করবেন, যিনি তা আমার কবর শরীফে ওইভাবে প্রবেশ করাবে, যেভাবে তোমাদের কারও নিকট হাদিয়া উপঢোকনসমূহ প্রবেশ করানো হয়। আর ওই ফেরেশতা আমাকে সংবাদ দেবেন যে ব্যক্তি আমার প্রতি সালাত-সালাম প্রেরণ করেছে তার নাম, তার
পিতাবংশ, গোত্র, অঞ্চলসহ সমুদয় বিষয়ে । অত:পর তা আমি আমার নিকট রক্ষিত শ্বেত কাগজে লিপিবদ্ধ করে রাখি ।
হাদীস নং-১৪:
হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,”তোমরা তোমাদের ঘরকে কবরে পরিণত করো না এবং আমার কবর শরীফকে ঈদে রূপান্তর করো না বরং তোমরা আমার প্রতি সালাত সালাম প্রেরণ করো, কেননা তোমরা যেখানে থাকো না কেন তোমাদের সালাত-সালাম আমার প্রতি প্রেরণ করা হয়।”
ব্যাখ্যাঃ
“তোমরা তোমাদের ঘরকে কবর বানিও না” মানে – কবরে যেভাবে নামাজ পড়া হয় না সেভাবে তোমাদের ঘরকেও কবরের মত নামাযবিহীন করোনা, বরং তোমরা মসজিদের পাশাপাশি তোমাদের ঘরেও কিছু নফল নামায পড়ো।
আর “আমার কবরকে ঈদে পরিণত কর না” মানে – যেভাবে বৎসরে মাত্র দু’বার সমবেত হয়, তোমরা আমার কবর শরীফকেও তেমন করোনা; বরং বসরের সব সময় আমার রওযা শরীফ যেয়ারতে এসো। আর যাদের পক্ষে সম্ভব না হয়, আর যখন তোমরা অনুপস্থিত থাক, তাহলে তোমরা বিশ্বের যে প্রান্তে থাকোনা কেন তোমরা আমার প্রতি দুরূদ ও সালাম প্রেরণ করতে থাকো কারণ তোমাদের সালাত সালাম পৌছানো হয়।
হাদীস নং-১৫:
হযরত আবু হোরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন।
“যে কেউ আমার প্রতি সালাম প্রেরণ করবে, আল্লাহ তা’আলা তখন আমার
রূহকে ফিরিয়ে দেন, যাতে আমি ওই ব্যক্তির সালামের জবাব দিতে পারি।”
এ হাদীসের মর্মার্থ (আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন): ‘আল্লাহ তা’আলা এর অনেক পূর্বে আমার দেহে আমার রূহকে ফিরিয়ে দিয়েছেন, তাই আমি
সালাম প্রদানকারীর সালামের উত্তর দিই ।
হাদীস নং-১৬ :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
“নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলায় এমন কিছু ফেরেশতা আছেন, যারা সর্বদা সারা বিশ্বে বিচরণ করে ৷ তারা আমার প্রতি আমার উম্মতদের সালাত-সালামসমূহ্ পৌছিয়ে দেয়।”
হাদীস নং-১৭ :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা বলেন, “হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর যে কোন উম্মত তাঁর প্রতি সালাত-সালাম পেশ করবে, অবশ্যই তা তাঁর নিকট প্রেরণ করা হবে ৷ সালাত-সালামের জন্য নিয়োজিত ফেরেশতা তাঁকে (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) গিয়ে বলেন, “ ইয়া রাসূলাল্লাহ অমুক ব্যক্তি আপনার প্ৰতি এ এ পরিমাণ সালাত-সালাম প্রেরণ করেছে ৷”
হাদীস নং-১৮
হযরত আবু হোরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি আমার রাওযা শরীফে উপস্থিত হয়ে আমার প্রতি সালাত-সালাম পেশ করে আমি তা শুনতে পাই । আর যখন কোন ব্যক্তি অনুপস্থিত থেকে শ করে আমি তা শুনতে পাই । আর যখন কোন ব্যক্তি অনুপস্থিত থেকে আমার প্রতি সালাত-সালাম পেশ করে তা আমার নিকট পৌছানো হয় ।
হাদীস নং-১৯
হযরত সুলাইমান ইবনে সুহায়ম রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে স্বপ্নে দেখলাম, তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম-“ইয়া রাসুলাল্লাহ! যে সমস্ত লোক আপনার রওযা পাকে উপস্থিত হয়ে আপনাকে সালাম প্রদান করেন আপনি কি তাদের সালাম বুঝতে পারেন? রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, হ্যাঁ। আমি তা শুনতেও পারি, বুঝতেও পারি এবং
তাদের সালামের উত্তরও দেই।”
হাদীস নং-২০:
হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন,একদা দু’ ব্যক্তির মধ্যে ঝগড়া লাগল- একজন মুসলমান আর অপরজন ইয়াহুদী। মুসলিম লোকটি বলল, ঐ আল্লাহ তা’আলার শপথ, যিনি হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে সারা বিশ্ববাসীর জন্য চয়ন করে নিয়েছেন। এ কথার দৃঢ়তা প্রকাশের জন্য ওই ব্যক্তি নানা ধরনের কসম ও শপথ করে বসেছে। অন্যদিকে ইয়াহুদী লোকটি বলল,ওই আল্লাহর শপথ, যিনি হযরত মূসা আলায়হিস সালামকে বিশ্ববাসীর জন্য চয়ন করে নিয়েছেন। । একথা শুনে মুসলিম লোকটি ইয়াহুদী লোকটিকে একটি চড় মেরে দিল। তখন ওই ইয়াহুদী রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গিয়ে তার এবং ওই মুসলমানের মধ্যে যা ঘটেছিল তা বিস্তৃতভাবে বললো। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তোমরা আমাকে হযরত মূসা আলায়হি সালাম-এর উপর শ্রেষ্ঠত্ব বা প্রাধান্য দিওনা। কেননা, কিয়ামত দিবসে মানুষদেরকে সংজ্ঞাহীন করে ফেলা হবে। তখন আমিই সর্বপ্রথম সংজ্ঞা ফিরে পাব, দেখবো হযরত মূসা আলায়হিস সালাম আরশের পায়া ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি জানিনা তিনি কি যারা সংজ্ঞাহীন হয়েছে তাদের সাথে সংজ্ঞাহীন হয়ে আমার পূর্বেই আবার সংজ্ঞা ফিরে পেয়েছেন, নাকি আল্লাহ তা’আলা তাকে এ সংজ্ঞাহীনতা থেকে রেখেছেন?
এ হাদীস ইমাম বোখারী তার সহীহ বোখারীতে হযরত আবুল ইয়াশান ও ইমাম মুসলিম তার সহীহতে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবদুর রহমান থেকে বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং-২১
হযরত আবু হোরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
তোমরা আল্লাহর নবীগণের মধ্যে কাউকে অন্য কারও উপর প্রাধান্য দিওনা। কেননা যখন শিঙ্গায় ফুক দেয়া হবে, তখন আসমান ও যমীনের সকলে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়বে, কিন্তু আল্লাহ তা’আলা যাদের চান তারা ছাড়া।
অত:পর এতে পুনরায় ফুক দেয়া হবে তখন আমিই সর্বপ্রথম সজাগ হবো, অথবা আমি সর্বপ্রথম যারা জাগ্রত হবে তাদের দলে
থাকবো। হঠাৎ আমি দেখতে পাবো যে, হযরত মূসা আলায়হিস সালাম আরশে ‘আযীমকে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। তাই আমি জানিনা তিনি কি তুর পাহাড়ে যে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেছিলেন তার কারণে এখানে সংজ্ঞাহীন হননি, নাকি তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে আমার আগেই জাগ্রত হয়ে গেছেন?
এ হাদীস শরীফ প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা’আলা নবীগণ আলায়হিস সালাম এর নিকট তাদের রূহকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। ফলে তারা মহান আল্লাহর নিকট জীবিত, শহীদগণের ন্যায় । অত:পর যখন শিঙ্গায় প্রথমফুক দেয়া হবে তখন তারাও অন্যান্যদের ন্যায় সংজ্ঞাহীন হয়ে যাবেন।
অতএব, এটা কোন অবস্থাতেই মৃত্যু হতে পারে না; বরং তা হলো অনুভূতি শক্তি হারিয়ে ফেলা মাত্র । আর হযরত মূসা আলায়হিস সালামকে
এ সংজ্ঞাহীনতা থেকে আল্লাহ তা’আলা মুক্ত রেখেছেন। কেননা আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন, “কিন্তু আল্লাহ যাকে চান সে ছাড়া।”
সূরা নামল, আয়াত-৮৭)
সুতরাং আল্লাহ তা’আলা এ অবস্থায় হযরত মূসা আলায়হিস সালাম-এর অনুভূতি শক্তি নিয়ে নেবেন না, বরং ভুর পাহাড়ের ওই সংজ্ঞাহীনতাকে এখানে গণ্য করা হবে ।
বলা হয়ে থাকে যে, ‘সূরা নামল’-এর আয়াতের ভাষ্য মতে- শহীদগণও এ সংজ্ঞাহীনতা থেকে মুক্ত থাকবেন এবং যার সমর্থনে মরফু’ পর্যায়ের হাদীস শরীফ বর্ণিত রয়েছে।
লেখকঃ ইমাম বায়হাকী (রহঃ)
হাদিস নং ১ :
হযরত সাবেত আল বুনানী রাদ্বিয়ালাহু তা‘আলা আনহু হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলইিহি ওয়ালিহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
“নবীগণ তাঁদের কবর শরীফে জীবিত এবং তারা সেখানে নামায আদায় করেন।”
হাদীস নং ২ :
হযরত সাবেত আল বুনানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হযরত আনাস ইবনে মালেকরাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
“নবীগণ তাঁদের নিজ নিজ কবর শরীফে জীবিত, এবং তারা নামায আদায় করেন ৷”
হাদীস নং-৩
হযরত আবুল মালীহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
“নবীগণ তাঁদের কবর শরীফে জীবিত, তাঁরা (সেখানে) নামায আদায় করেন ৷”
হাদীস নং ৪ :
হযরত সাবেত আলু বুনানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হযরত আনাস ইবনে মালেকরাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
“নিশ্চয় নবীগণ আলাইহিমুস সালামকে তাঁদের কবর শরীফে চল্লিশ রাত্রির পর আর রাখা হয় না, বরং তাঁরা মহান আল্লাহর কুদরতের সামনে নামায পড়তে থাকেন, যতক্ষণ না সিঙ্গায় কুঁক দেয়া হবে ৷”
এ হাদীস শরীফ যদি উপরোক্ত বাক্যে হুবহু সহীহ হয়, তাহলে এর মর্মার্থ আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন ৷ তবে হতে পারে শুধু এ যাবতকাল সময়ে
তাঁরা তাঁদের কবর শরীফে নামায আদায় করতে পারেন না; কিন্তু এ নির্ধারিত সময়ের পর তাঁরা আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল্লা’র মহান কুদরতের
সমীপে সদা-সর্বদা নামায পড়তে থাকেন, যা আমরা প্রথম হাদীসে উল্লেখ করেছি ৷
আবার কখনও তার উদ্দেশ্য এও হতে পারে যে, তাঁদের রূহ সহ দেহ মুবারক ঊর্ধ্ব জগতে উত্তোলিত হয়।
হাদীস নং ৫ :
হযরত সা‘ঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন,
“কোন নবী আলায়হিস সালাম নিজ কবর শরীফে চল্লিশ রাতের বেশী অবস্থান করেন না; বরং তাঁদেরকে উত্তোলন করা হয় ৷ ফলে তাঁরা অন্যান্যদের ন্যায় জীবিত হয়ে যান। তাঁরা বিচরণ করতে থাকেন ওই সকল স্থানগুলোতে, যেখানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁদেরকে অবতরণ করাণ ৷
যেভাবে আমরা মিরাজ ও অন্যান্য হাদীসে তার বর্ণনা পেয়েছি ৷ যেমন নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মি’রাজ রজনীতে দেখতে পেলেন যে, হযরত মূসা আলায়হিস সালাম তাঁর কবর শবীফে দাঁড়িয়ে নামায পড়ছেন ৷ আবার কিছুক্ষণ পর তাঁকে অন্যান্য নবীগণের আলায়হিস সালাম এর সাথে ‘বাইতুল মুকাদ্দাস’ শরীফে সমবেতভাবে উপস্থিত দেখতে পেলেন ৷ আবার ওই সকল নবী-রাসূলকে বিভিন্ন আসমানেও দেখতে পেলেন ৷ আল্লাহ তা‘আলা যা চান তাই করেন ৷ ”
নিশ্চয় নবীগণ আলায়হিস সালাম যে তাঁদের নিজ নিজ কবর শরীফে জীবিত এ সম্পর্কে অসংখ্য দলীল ও প্রমাণ বিশুদ্ধ হাদীস শরীফ থেকে পাওয়া যায় ৷ তারমধ্যেঃ
হাদীস নং-৬
হযরত সুলাইঁমান আত্ তাইমী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু সাহাবী হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমাকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর
কয়েকজন সম্মানিত সাহাবী সংবাদ দিয়েছেন যে,“যে রাতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে মি’রাজ করানো হল সে রাতে তিনি হযরত মূসা আলায়হিস সালাম-এর পাশ দিয়ে গমন করার সময় দেখতে পেলেন- তিনি (আলায়হিস সালাম) নিজ কবর শরীফে নামায পড়ছেন৷”
হাদীস নং- ৭
হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,”আমি হযরত মূসা আলায়হিস সালাম- এর পাশ দিয়ে গমন করেছি, আর তিনি ওনার নিজ কবরে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করছেন।”
হাদীস নং ৮ :
হযরত সাবিত আল বুনানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হযরত আনাস ইবনে মালেকরাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাই়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,”মি’রাজ রজনীতে আমি একটি লাল বালির টিলার নিকট আসলাম, যেখানে হযরত মূসা আলায়হিস সালাম এর কবর শরীফ অবস্থিত, আর দেখলাম- হযরত মুসা আলায়হিস সালাম তাঁর নিজ কবর শরীফে দাঁড়িয়ে নামায আদায়
করছেন ৷”
হাদীস নং-৯
হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
“ইসরা ও মি’রাজ শেষে ফিরে এসে কোরাইশদের নিকট এ ঘটনা বর্ণনার এক পর্যায়ে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমি আমাকে হিজর’ (কা’বার অদূরে) নামক স্থানে দেখতে পেলাম। যখন আমি কোরাইশদের নিকট আমার ইসরা ও মি’রাজের ঘটনা বর্ণনা
করছিলাম ।তখন তারা আমাকে বায়তুল মুকাদ্দাস বিষয়ক এমন কিছু প্রশ্ন করলো যে সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। তাই আমি চিন্তিত হয়ে গেলাম। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা বাইতুল মুকাদ্দাসকে আমার জন্য উন্মোচিত করে দিলেন, যাতে আমি তা দেখতে পাই । সুতরাং তারা বায়তুল মুকাদ্দাস নিয়ে তারা যে কোন প্রশ্ন করল আমি তাদের যথাযথ উত্তর দিলাম।এ রজনীতে আমি আমাকে নবীগণ আলায়হিস সালাম-এর একটি সমাবেশে দেখতে পেলাম । আবার দেখতে পেলাম যে, হযরত মূসা আলায়হিস সালাম দাঁড়িয়ে নামায আদায় করছেন। তিনি কোকড়ানো চুলধারী উপমাযোগ্য সুদর্শন পুরুষ, যাকে দেখতে শানুয়া গোত্রের
লোকদের মত মনে হয়।ওদিকে হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম আলায়হিস সালামও দাঁড়িয়ে নামায পড়ছেন, যিনি আকৃতির দিক থেকে ওরওয়া ইবনে মাসউদ আস সাকাফীর সদৃশ।
আবার দেখতে পেলাম, হযরত ইবরাহীম আলায়হিস সালামকে, তিনিও দাঁড়িয়ে নামায আদায় করছেন, যিনি দেখতে তোমাদের সাথে যিনি আছেন। (অর্থাৎ প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহ তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) তার সদৃশ।
অতঃপর নামাযের সময় হলো, আমি তাদের ইমামতি করলাম । আমি যখন নামায থেকে অবসর হলাম তখন আমাকে কেউ বলল. হে হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা! উনি হলেন মালেক, জাহান্নামের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা।
তার সাথে সালাম আদান-প্রদান করুন। আমি যখন তার দিকে ফিরলাম তখন তিনি আমাকে প্রথমে সালাম দিলেন।
এ হাদীস ইমাম মুসলিম তার সহীহ মুসলিম-এ আবদুল আযীয থেকে বর্ণনা করেন।
হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব ও অন্যান্যদের বর্ণনা মতে- নবী করীম সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য নবীগণ আলায়হি সালাম-এর সাথে বায়তুল মুকাদ্দাস-এর মসজিদে মিলিত হন । আর হযরত
আবু যার রাদিয়াল্লাহ তাআলা আনহু ও মালেক ইবনে সা’সা’আহ রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহু বর্ণিত মি’রাজ সংক্রান্ত হাদীস শরীফে উল্লেখ
রয়েছে-
“নবী করীম সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য নবীগণের সাথে আসমানগুলোতে সাক্ষাত করেন এবং তিনি সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে কথা বলেন তারাও তাঁর সাথে কথাবার্তা বলেন।”
উপরোল্লেখিত সব হাদীসই সহীহ ও বিশুদ্ধ। এগুলোর পরস্পরের মধ্যে কোন বিরোধ নেই ।
তিনি সাল্লাল্লাহ তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত মূসা আলায়হিস সালামকে এদিকে নিজ কবর শরীফে দাঁড়িয়ে নামায পড়তে দেখেছেন, আবার আসমান ও বাইতুল মুকাদাসেও। অর্থাৎ তিনি নিজ কবর শরীফে নামাজ আদায় করার পর তাকে অন্যান্য নবীগণের সাথে বায়তুল মুকাদ্দাস-এ পরিভ্রমণ করানো হয় যেভাবে আমাদের প্রিয় নবীকে রাতের সামান্য সময়ের মধ্যে বায়তুল মুকাদ্দাস শরীফে উপস্থিত করা হয় ।
তাই তিনি তাদেরকে সেখানে দেখতে পান। অত:পর তাদেরকে আসমানের দিকে উর্ধগমন করানো হয় যেভাবে আমাদের প্রিয়নবীকে
মি’রাজ বা উৰ্ধগমন করানো হয়েছে। তাই তিনি তাদেরকে সেখানেও দেখতে পান।
যা বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত ।
সুতরাং তাদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে উপস্থিত হওয়াটা যুক্তি ও বিবেকের দিক থেকে স্বাভাবিক, কোন অবস্থাতে অসম্ভব নয়; যার সমর্থনে সর্বাধিক সত্যবাদী নবীর অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
উপরোক্ত সকল হাদীস ইন্তিকালের পর নবীগণ আলায়হিস সালাম-এর সশরীরে জীবিত থাকার অকাট্য প্রমাণবহ। এ বক্তব্যের সমর্থনে নিচের
হাদীস শরীফও প্রমাণ স্বরূপ পেশ করা যায়ঃ
হাদিস ১০ :
হযরত আওস ইবনে আওস আস-সাকাফী রাদিয়াল্লাহ তাআলা আনহু বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন,
“তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন
হলো- জুমার দিন,
– এ দিনে হযরত আদম আলায়হিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
– এ দিনে তার ইন্তিকাল হয়েছে,
– এ দিনেই (কিয়ামতের) সিঙ্গায় ফুক দেয়া হবে এবং
– এ দিনেই সকলে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়বে। তাই
তোমরা এ দিনে আমার প্রতি অধিকহারে দুরূদ-সালাম পাঠ কর। কেননা তোমাদের সালাত-সালাম আমার নিকট পেশ করা হয়। তাঁরা বললেন,
“ইয়া রাসুলাল্লাহ! কিভাবে আপনার প্রতি আমাদের সালাত-সালাম পেশ
করা হবে? অথচ আপনি ইন্তিকাল করবেন এবং আপনার দেহ মুবারক ক্ষয়প্রাপ্ত ও জীর্ণ হয়ে যাবে? তখন উত্তরে নবী করীম সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন, নিশ্চই মাটির উপর নবীগণ আলায়হিস সালাম-এর দেহ মুবারককে স্পর্শ করা বা গ্রাস করাকে আল্লাহ তা’আলা হারাম (নিষেধ) করে দিয়েছেন ।”
এ হাদীস ইমাম আবু দাউদ তাঁর সুনানে বর্ননা করেছেন।
হাদীস নং-১১:
হযরত আবু মাসউদ আনসারী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন,”তোমরা আমার প্রতি জুমার দিন অধিক পরিমাণে সালাত-সালাম প্রেরণ করো, কেননা যে কেউ আমার প্রতি জুমার দিনে দুরূদ-সালাম পাঠ করবে তার ওই দুরূদ সালাম আমার প্রতি অবশ্যই পেশ
করা হবে।”
হাদীস নং-১২:
হযরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
আমার প্রতি প্রত্যেক জুমার দিনে অধিক পরিমাণে দুরূদ সালাম প্রেরণ করো,
কেননা আমার উম্মতের সালাত-সালামসমূহ আমার নিকট প্রত্যেক জুমাবারে পেশ করা হয় । সুতরাং আমার উম্মতের মধ্যে যে আমার প্রতি সর্বাধিক সালাত-সালাম প্রেরণকারী হবে, সে কিয়ামতের দিন আমার সর্বাধিক নিকটবর্তী হবে ।
হাদীস নং-১৩:
প্রিয়নবীর খাদিম হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আন থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, কিয়ামতের দিনের সকল স্থানে তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই আমার সর্বাধিক নিকটতম স্থানে থাকবে, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে আমার প্রতি সর্বাধিক সালাত-সালাম প্রেরণকারী ছিল । আর যে ব্যক্তি আমার প্রতি প্রত্যেক জুমার দিনে ও জুমার রাতে একশত বার দুরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তা’আলা ওই ব্যক্তির ১০০ টি চাহিদা পূরণ করবেন- যার ৭০ টি আখিরাতের চাহিদা এবং ৩০ টি দুনিয়ার চাহিদা। অত:পর আল্লাহ তা’আলা ওই সালাত- সালাম সংরক্ষণ ও পৌছানোর জন্য এক ফেরেশতা নিয়োজিত করবেন, যিনি তা আমার কবর শরীফে ওইভাবে প্রবেশ করাবে, যেভাবে তোমাদের কারও নিকট হাদিয়া উপঢোকনসমূহ প্রবেশ করানো হয়। আর ওই ফেরেশতা আমাকে সংবাদ দেবেন যে ব্যক্তি আমার প্রতি সালাত-সালাম প্রেরণ করেছে তার নাম, তার
পিতাবংশ, গোত্র, অঞ্চলসহ সমুদয় বিষয়ে । অত:পর তা আমি আমার নিকট রক্ষিত শ্বেত কাগজে লিপিবদ্ধ করে রাখি ।
হাদীস নং-১৪:
হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,”তোমরা তোমাদের ঘরকে কবরে পরিণত করো না এবং আমার কবর শরীফকে ঈদে রূপান্তর করো না বরং তোমরা আমার প্রতি সালাত সালাম প্রেরণ করো, কেননা তোমরা যেখানে থাকো না কেন তোমাদের সালাত-সালাম আমার প্রতি প্রেরণ করা হয়।”
ব্যাখ্যাঃ
“তোমরা তোমাদের ঘরকে কবর বানিও না” মানে – কবরে যেভাবে নামাজ পড়া হয় না সেভাবে তোমাদের ঘরকেও কবরের মত নামাযবিহীন করোনা, বরং তোমরা মসজিদের পাশাপাশি তোমাদের ঘরেও কিছু নফল নামায পড়ো।
আর “আমার কবরকে ঈদে পরিণত কর না” মানে – যেভাবে বৎসরে মাত্র দু’বার সমবেত হয়, তোমরা আমার কবর শরীফকেও তেমন করোনা; বরং বসরের সব সময় আমার রওযা শরীফ যেয়ারতে এসো। আর যাদের পক্ষে সম্ভব না হয়, আর যখন তোমরা অনুপস্থিত থাক, তাহলে তোমরা বিশ্বের যে প্রান্তে থাকোনা কেন তোমরা আমার প্রতি দুরূদ ও সালাম প্রেরণ করতে থাকো কারণ তোমাদের সালাত সালাম পৌছানো হয়।
হাদীস নং-১৫:
হযরত আবু হোরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন।
“যে কেউ আমার প্রতি সালাম প্রেরণ করবে, আল্লাহ তা’আলা তখন আমার
রূহকে ফিরিয়ে দেন, যাতে আমি ওই ব্যক্তির সালামের জবাব দিতে পারি।”
এ হাদীসের মর্মার্থ (আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন): ‘আল্লাহ তা’আলা এর অনেক পূর্বে আমার দেহে আমার রূহকে ফিরিয়ে দিয়েছেন, তাই আমি
সালাম প্রদানকারীর সালামের উত্তর দিই ।
হাদীস নং-১৬ :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
“নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলায় এমন কিছু ফেরেশতা আছেন, যারা সর্বদা সারা বিশ্বে বিচরণ করে ৷ তারা আমার প্রতি আমার উম্মতদের সালাত-সালামসমূহ্ পৌছিয়ে দেয়।”
হাদীস নং-১৭ :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা বলেন, “হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর যে কোন উম্মত তাঁর প্রতি সালাত-সালাম পেশ করবে, অবশ্যই তা তাঁর নিকট প্রেরণ করা হবে ৷ সালাত-সালামের জন্য নিয়োজিত ফেরেশতা তাঁকে (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) গিয়ে বলেন, “ ইয়া রাসূলাল্লাহ অমুক ব্যক্তি আপনার প্ৰতি এ এ পরিমাণ সালাত-সালাম প্রেরণ করেছে ৷”
হাদীস নং-১৮
হযরত আবু হোরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি আমার রাওযা শরীফে উপস্থিত হয়ে আমার প্রতি সালাত-সালাম পেশ করে আমি তা শুনতে পাই । আর যখন কোন ব্যক্তি অনুপস্থিত থেকে শ করে আমি তা শুনতে পাই । আর যখন কোন ব্যক্তি অনুপস্থিত থেকে আমার প্রতি সালাত-সালাম পেশ করে তা আমার নিকট পৌছানো হয় ।
হাদীস নং-১৯
হযরত সুলাইমান ইবনে সুহায়ম রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে স্বপ্নে দেখলাম, তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম-“ইয়া রাসুলাল্লাহ! যে সমস্ত লোক আপনার রওযা পাকে উপস্থিত হয়ে আপনাকে সালাম প্রদান করেন আপনি কি তাদের সালাম বুঝতে পারেন? রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, হ্যাঁ। আমি তা শুনতেও পারি, বুঝতেও পারি এবং
তাদের সালামের উত্তরও দেই।”
হাদীস নং-২০:
হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন,একদা দু’ ব্যক্তির মধ্যে ঝগড়া লাগল- একজন মুসলমান আর অপরজন ইয়াহুদী। মুসলিম লোকটি বলল, ঐ আল্লাহ তা’আলার শপথ, যিনি হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে সারা বিশ্ববাসীর জন্য চয়ন করে নিয়েছেন। এ কথার দৃঢ়তা প্রকাশের জন্য ওই ব্যক্তি নানা ধরনের কসম ও শপথ করে বসেছে। অন্যদিকে ইয়াহুদী লোকটি বলল,ওই আল্লাহর শপথ, যিনি হযরত মূসা আলায়হিস সালামকে বিশ্ববাসীর জন্য চয়ন করে নিয়েছেন। । একথা শুনে মুসলিম লোকটি ইয়াহুদী লোকটিকে একটি চড় মেরে দিল। তখন ওই ইয়াহুদী রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গিয়ে তার এবং ওই মুসলমানের মধ্যে যা ঘটেছিল তা বিস্তৃতভাবে বললো। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তোমরা আমাকে হযরত মূসা আলায়হি সালাম-এর উপর শ্রেষ্ঠত্ব বা প্রাধান্য দিওনা। কেননা, কিয়ামত দিবসে মানুষদেরকে সংজ্ঞাহীন করে ফেলা হবে। তখন আমিই সর্বপ্রথম সংজ্ঞা ফিরে পাব, দেখবো হযরত মূসা আলায়হিস সালাম আরশের পায়া ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি জানিনা তিনি কি যারা সংজ্ঞাহীন হয়েছে তাদের সাথে সংজ্ঞাহীন হয়ে আমার পূর্বেই আবার সংজ্ঞা ফিরে পেয়েছেন, নাকি আল্লাহ তা’আলা তাকে এ সংজ্ঞাহীনতা থেকে রেখেছেন?
এ হাদীস ইমাম বোখারী তার সহীহ বোখারীতে হযরত আবুল ইয়াশান ও ইমাম মুসলিম তার সহীহতে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবদুর রহমান থেকে বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং-২১
হযরত আবু হোরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
তোমরা আল্লাহর নবীগণের মধ্যে কাউকে অন্য কারও উপর প্রাধান্য দিওনা। কেননা যখন শিঙ্গায় ফুক দেয়া হবে, তখন আসমান ও যমীনের সকলে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়বে, কিন্তু আল্লাহ তা’আলা যাদের চান তারা ছাড়া।
অত:পর এতে পুনরায় ফুক দেয়া হবে তখন আমিই সর্বপ্রথম সজাগ হবো, অথবা আমি সর্বপ্রথম যারা জাগ্রত হবে তাদের দলে
থাকবো। হঠাৎ আমি দেখতে পাবো যে, হযরত মূসা আলায়হিস সালাম আরশে ‘আযীমকে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। তাই আমি জানিনা তিনি কি তুর পাহাড়ে যে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেছিলেন তার কারণে এখানে সংজ্ঞাহীন হননি, নাকি তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে আমার আগেই জাগ্রত হয়ে গেছেন?
এ হাদীস শরীফ প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা’আলা নবীগণ আলায়হিস সালাম এর নিকট তাদের রূহকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। ফলে তারা মহান আল্লাহর নিকট জীবিত, শহীদগণের ন্যায় । অত:পর যখন শিঙ্গায় প্রথমফুক দেয়া হবে তখন তারাও অন্যান্যদের ন্যায় সংজ্ঞাহীন হয়ে যাবেন।
অতএব, এটা কোন অবস্থাতেই মৃত্যু হতে পারে না; বরং তা হলো অনুভূতি শক্তি হারিয়ে ফেলা মাত্র । আর হযরত মূসা আলায়হিস সালামকে
এ সংজ্ঞাহীনতা থেকে আল্লাহ তা’আলা মুক্ত রেখেছেন। কেননা আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন, “কিন্তু আল্লাহ যাকে চান সে ছাড়া।”
সূরা নামল, আয়াত-৮৭)
সুতরাং আল্লাহ তা’আলা এ অবস্থায় হযরত মূসা আলায়হিস সালাম-এর অনুভূতি শক্তি নিয়ে নেবেন না, বরং ভুর পাহাড়ের ওই সংজ্ঞাহীনতাকে এখানে গণ্য করা হবে ।
বলা হয়ে থাকে যে, ‘সূরা নামল’-এর আয়াতের ভাষ্য মতে- শহীদগণও এ সংজ্ঞাহীনতা থেকে মুক্ত থাকবেন এবং যার সমর্থনে মরফু’ পর্যায়ের হাদীস শরীফ বর্ণিত রয়েছে।