জুমার খুতবা
^^^^^^^^^^
১ম জুমা, জুমাদা আল উখরা, 23 February

ইসলামে প্রতিবেশী ও তার অধিকার
*********************************
সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আযহারী
সহকারী অধ্যাপক, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ. খতীব, মুসাফির খানা জামে মসজিদ, নন্দন কানন, চট্রগ্রাম

সম্মানিত মুসল্লীবৃন্দ! আমরা আজ আলোচনা করব এমন একটি বিষয়ে প্রতিটি মানুষ যার প্রয়োজন অনুভব করে প্রতিটি মুহূর্তে। যে বিষয়ে সচেতন ও দায়িত্ববান না হলে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তার আশা করা যায় না। বরং বলা যায় জীবনে পূর্ণতাই আসে না। জীবনকে অর্থবহ ও অনাবিল সুখময় করতে হলে সে বিষয়ে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হয় যথাযথভাবে। বিষয়টির সাথে আমরা সকলেই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিষয়টি হলো, ‘প্রতিবেশী ও তার অধিকার’।

মানুষ হিসাবে আমাদেরকে সমাজবদ্ধ জীবন যাপন করতে হয়। আমাদের সমাজে বসবাস করতে গেলে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। সমাজ ব্যবস্থায় একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে আমাদের প্রতিবেশী। প্রতিবেশী ভালো হলে সামাজিক জীবন সুন্দর ও মধুময় হয়। এর বিপরীতে প্রতিবেশী মন্দ হলে সমস্যার কোনো শেষ থাকে না। এক প্রতিবেশী অন্য প্রতিবেশী ও তার সন্তানদের মাঝে প্রভাব বিস্তার করে থাকে, পরস্পর মেলা-মেশা ও দেখা-সাক্ষাতের কারণে। সে হিসেবে প্রতিবেশী যদি সৎ হয় তাহলে ব্যক্তির ঘর ও পরিবার নিরাপদ হয়ে যায়। আর যদি অসৎ হয়, তাহলে উদ্বেগ উৎকন্ঠা ও অকল্যাণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ভালো প্রতিবেশী তার প্রতিবেশীর গোপন বিষয় অবহিত হলে গোপন রাখে। আর অসৎ প্রতিবেশী তা প্রকাশ ও প্রচার করে বেড়ায়। ভালো প্রতিবেশী ভালো কাজে সাহায্য করে, সৎ উপদেশ দেয়। আর অসৎ প্রতিবেশী ধোঁকা দিয়ে বিপদে ফেলার চেষ্টা করে। তাই ইসলামে প্রতিবেশী নির্বাচনের প্রতি অত্যাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সুতরাং প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য হল, সব সময় সৎ প্রতিবেশী বেছে নেয়ার দিকে দৃষ্টি দেয়া; যে তার অধিকারগুলো আদায় করবে; এবং তাকে কষ্ট দেবে না; যে তাকে বিভিন্ন কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে। বলা হয় ‘বাড়ি বানানোর পূর্বে প্রতিবেশী নির্বাচন কর’।

প্রতিবেশী কারা?
—————–
প্রিয় হাযেরীন! প্রতিবেশী মূলত নিজ বাড়ির আশে পাশে বসবাসকারীকে বলা হয়। কেউ বলেছেন: নিজের বাড়ীর চতুর্দিকে চল্লিশ ঘর পর্যন্ত হচ্ছে প্রতিবেশীর সীমানা। আবার কেউ বলেন, যে তোমার সাথে ফজর পড়ল সেই তোমার প্রতিবেশী, ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতামত হচ্ছে, নিজের বাড়ীর পাশে যার বাড়ী সেই আসল প্রতিবেশী। সে হিসেবে নিজ বাড়ীর সাথে লাগানো বা কাছাকাছি প্রতিবেশীর প্রতি দূরের প্রতিবেশীর চেয়ে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে। যে ব্যক্তি সমাজে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী প্রতিবেশী, সেই প্রতিবেশী। সফর সঙ্গী অথবা কাজের সঙ্গীকেও প্রতিবেশী বলা হয়। অনুরূপভাবে বাজার, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির অভিন্নতার দিক থেকেও প্রতিবেশী হতে পারে। নিজ দেশের পার্শ্ববর্তী দেশও প্রতিবেশীর অন্তর্ভুক্ত।

প্রতিবেশী মুসলিমও হতে পারে আবার অমুসলিমও। পূন্যবানও হতে পারে আবার পাপীও। প্রতিবেশীই হচ্ছে মানুষের সবচেয়ে নিকট জন, যিনি তার খবরাখবর সম্পর্কে অন্যদের তুলনায় বেশি জানেন। তাই ইসলাম ধর্মে প্রতিবেশীর অত্যধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং তার অধিকারকে খুব বড় করে দেখা হয়েছে।

প্রতিবেশী কয় প্রকার:
———————-
প্রতিবেশী তিন প্রকার। এক ধরনের প্রতিবেশী আছে যার অধিকার তিনটি। আর সে হলো নিকটাত্মীয়-মুসলমান-প্রতিবেশী। তার অধিকার তিনটি হলো: আত্মীয়তা, ইসলাম ও প্রতিবেশীত্ব। আরেক ধরনের প্রতিবেশী আছে যার অধিকার দু’টি। আর সে হলো অনাত্মীয় মুসলিম প্রতিবেশী। এ প্রতিবেশীর অধিকার হলো প্রতিবেশীত্ব ও ইসলাম। আরেক ধরনের প্রতিবেশী রয়েছে, যার অধিকার একটি। আর সে হলো অমুসলিম প্রতিবেশী। এ প্রতিবেশীর অধিকার শুধু প্রতিবেশীত্ব।

প্রতিবেশী সম্পর্কে আমাদের ইসলাম কী বলে?
——————————————–
আজকে আমরা সেই সম্পর্কে জানতে এবং তার উপর আমলের চেষ্টা করব। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন: وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ۖ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَىٰ وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ مَن كَانَ مُخْتَالًا فَخُورًا “তোমরা ইবাদত কর আল্লাহর, তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না। আর সদ্ব্যবহার কর মাতা-পিতার সাথে, নিকট আত্মীয়ের সাথে, ইয়াতীম, মিসকীন, নিকট আত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সাথে। নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদেরকে যারা দাম্ভিক, অহঙ্কারী” (সূরা আন নিসা : ৩৬)।

সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ :” مَا زَالَ جِبْرِيلُ يُوصِينِي بِالْجَارِ حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ”“জিবরীল আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে অনবরত অসিয়ত করতে থাকেন, এমনকি এক পর্যায়ে আমার ধারণা হয়েছিল, আল্লাহ তা‘আলা তাকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেবেন” (বুখারী ৬০১৪ ও মুসলিম ২৬২৪)

হযরত আবু হুরায়রারাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يُؤْذِ جَارَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ(صحيح البخاري – الدعوات (৬০১৮) صحيح مسلم – المساجد ومواضع الصلاة (৬৬০) صحيح مسلم – المساجد ومواضع الصلاة (৬৬০) صحيح مسلم – فضائل الصحابة (২৪৮০) صحيح مسلم – فضائل الصحابة (২৪৮১) صحيح مسلم – فضائل الصحابة (২৪৮১) صحيح مسلم – فضائل الصحابة (২৪৮১) مسند أحمد – باقي مسند المكثرين (৩/১০৮) مسند أحمد – باقي مسند المكثرين (৩/১৮৮))
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন কল্যাণমূলক কথা বলে না হয় নিশ্চুপ থাকে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন স্বীয় প্রতিবেশীর সম্মান রক্ষা করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন নিজ মেহমানের মেহমানদারী করে’ (বুখারী-৬০১৮ ও মুসলিম-৬৬০.২৮৮০,২৮৮১)।

প্রকৃত ঈমানদার মানুষের দ্বারা কখনো তার প্রতিবেশী কষ্ট পেতে পারে না। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পাক জবানে ইরশাদ করেন:
وعن أَبي هريرة رضي اللَّه عنه أَن النَّبيَّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم قَالَ: “واللَّهِ لاَ يُؤْمِنُ، واللَّهِ لاَ يُؤْمِنُ،”قِيلَ: منْ يارسولَ اللَّهِ؟ قَالَ:”الَّذي: لاَ يأْمنُ جارُهُ بَوَائِقَهُ،” مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. وفي رواية لمسلمٍ:”لا يَدْخُلُ الجنَّة مَنْ لاَ يأْمنُ جارُهُ بوَائِقهُ ”
“আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। প্রশ্ন করা হলো- হে আল্লাহর রাসূল! ‘কোন ব্যক্তি? তিনি ইরশাদ করেন: “যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ নয়।” (সহীহুল বুখারী ৬০১৬)

প্রতিবেশীর অসুবিধা হয় এমন কাজ করা যাবে না, যেমনঃ কথা ও কাজের মাধ্যমে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া, অর্থাৎ তাকে অভিশাপ দেওয়া, তার গীবত করা, কটুকথা বলা, নিন্দা করা, গোয়েন্দাগিরি করা, পরনিন্দা করা, তিরস্কার করা, উত্ত্যক্ত করা, গালি দেয়া, কুৎসা রটানো, খোঁটা দেয়া, গোলযোগ ও মনোমালিন্য সৃষ্টি করা, উপহাস করা, ছিদ্রান্বেষণ করা ইত্যাদি।

এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আরয করলেন,
وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال : قَالَ رَجُلٌ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ! إِنَّ فُلَانَةَ – يُذْكَرُ مِنْ كَثْرَةِ صَلَاتِهَا وَصِيَامِهَا وَصَدَقَتِهَا – غَيْرَ أَنَّهَا تُؤْذِي جِيرَانَهَا بِلِسَانِهَا ؟ قَالَ : هِيَ فِي النَّارِ .قَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ! فَإِنَّ فُلَانَةَ – يُذْكَرُ مِنْ قِلَّةِ صِيَامِهَا وَصَدَقَتِهَا وَصَلَاتِهَا – وَإِنَّهَا تَصَدَّقُ بِالْأَثْوَارِ مِنْ الْأَقِطِ وَلَا تُؤْذِي جِيرَانَهَا بِلِسَانِهَا ؟ قَالَ : هِيَ فِي الْجَنَّةِ )رواه أحمد في “المسند” (২/৪৪০) وصححه المنذري في “الترغيب والترهيب” (৩/৩২১) ، والألباني في “السلسلة الصحيحة” (رقم/১৯০)
‘হে আল্লাহর প্রিয় রাসূল! অমুক মহিলা প্রচুর নফল নামায, রোযা ও সদকার জন্য প্রসিদ্ধ কিন্তু প্রতিবেশীকে কটুকথা বলার মাধ্যমে কষ্ট দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে জাহান্নামে যাবে। লোকটি আবার আরয করলেন, ‘হে আল্লাহর প্রিয় রাসূল! অমুক মহিলা সম্পর্কে খ্যাতি রয়েছে যে, সে নফল নামায, রোযা ও সদকা করে; কিন্তু নিজের জিহ্বা (কথা) দিয়ে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়না। আল্লাহর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে জান্নাতে যাবে।’ (আহমদ ২/৪৪০)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন,
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَوَّلُ خَصْمَيْنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ جَارَانِ ( رواه أحمد (১৭৪১০) والطبراني في المعجم الكبير (৮৩৬) و(৮৫২) قال المنذري: رواه أحمد واللفظ له والطبراني بإسنادين أحدهما جيد. الترغيب والترهيب (৩৮৬৬) وقال الهيثمي: رواه أحمد بإسناد حسن. مجمع الزوائد ১০/৬৩২)
কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে দুই ব্যক্তির মামলা আল্লাহর আদালতে বিচারার্থে পেশ করা হবে তারা হবে দু’জন প্রতিবেশী। (আহমদ,হা-১৭৪১০, ত্বাবরানী: মুজামুল কবীর, হা-৮৩৬, ৮৫২)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা থেকে বর্ণিত,
قالَ عَلَيْهِ الصَّلاةُ والسَّلامُ “ما ءامَنَ بِي مَنْ باتَ شَبْعانَ وجارُهُ جائِعٌ إِلى جَنْبِهِ وهُوَ يَعْلَمُ بِهِ” (رواه البخاري في ” الأدب المفرد ” ( ১১২ ) و الطبراني في ” الكبير ” ( ৩ / ১৭৫/ ১ ) و الحاكم ( ৪ / ১৬৭ ) و كذا ابن أبي شيبة في ” كتاب الإيمان ” ( ১৮৯ / ২ و الخطيب في ” تاريخ بغداد ” ( ১০ / ৩৯২ ) و ابن عساكر ( ৯ / ১৩৬ / ২ )و الضياء في ” المختارة ” ( ৬২ / ২৯২ / ১ ))
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: “সেই ব্যক্তি মু’মিন হতে পারে না, যে ব্যক্তি নিজে পেট ভরে পানাহার করে, কিন্তু তার পার্শ্বেই প্রতিবেশী খাদ্যের অভাবে অভুক্ত থাকে।” (বুখারী: আদব আল মুফরাদ-১১২, হাকেম-৪/১৬৭, , ত্বাবরানী: মুজামুল কবীর, ৩/১৭৫ )।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন,
أَن الْجَار الْفَقِير يتَعَلَّق بالجار الْغَنِيّ يَوْم الْقِيَامَة وَيَقُول يَا رب سل هَذَا لم مَنَعَنِي معروفه وأغلق عني بَابه (إحياء علوم الدين : جـ২صـ২১৩) الحقوق الإسلامية: المصري، ج২، ص৫৮৬)
‘দরিদ্র প্রতিবেশী কিয়ামতের দিন ধনী প্রতিবেশীকে জাপটে ধরে বলবেঃ হে আল্লাহ, এই ভাইকে তুমি সচ্ছল বানিয়েছিলে এবং সে আমার নিকটেই থাকত; কিন্তু আমি ভুখা থাকতাম আর সে পেটপুরে খেত। তাকে জিজ্ঞেস করো, কেন সে আমার ওপর দরজা বন্ধ করে রাখত এবং আমাকে বঞ্চিত করত।(ইহয়াউল উলূম ২/২১৩)

উপঢৌকন প্রদান করাঃ
———————–
প্রতিবেশীকে মাঝে মাঝে কিছু উপহার প্রদান করা উচিৎ। এর মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ক, ভালোবাসা বৃদ্ধি পায় ও দ্ব›দ্ধ নিরসন হয়। الأدب المفرد للبخاري ৫৯৪، السنن الكبرى للبيهقي ১২২৯৭ وحسّنه الألباني في صحيح الجامع ৩০০৪.) تهادَوْا تحابُّوا
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পরকে উপঢৌকন দাও, তাতে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।’ (বুখারী: আদব আল মুফরাদ-৫৯৪, বায়হাক্বী: সুনান আল কুবরা, হা-১২২৯৭, )

حديث أبي ذر -رضي الله تعالى عنه- قال: قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم “يَا أَبَا ذَرٍّ إِذا طَبَخْتَ مَرَقَةً فَأَكْثِرْ مَاءَها وَتَعَاهَدْ جِيرَانَكَ” فكان فيما بعد إذا طبخ لحما أكثر ماءه وأهدى إلى جيرانه ويقول: إِنَّ خَلِيلِي أَوْصَانِي: ্রإِذَا طَبَخْتَ مَرَقًا فَأَكْثِرْ مَاءَهُ، ثُمَّ انْظُرْ أَهْلَ بَيْتٍ مِنْ جِيرَانِكَ فَأَصِبْهُمْ مِنْهَا بِمَعْرُوفٍগ্ধ( أخرجه مسلم، كتاب البر والصلة، باب الوصية بالجار، (৪/২০২৫)، رقم: (২৬২৫.)
হযরত আবূ যার রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “হে আবূ যার! যখন তুমি ঝোল (ওয়ালা তরকারি) রান্না করবে, তখন তাতে পানির পরিমান বেশী কর। অতঃপর তোমার প্রতিবেশীর বাড়ীতে রীতিমত পৌছে দাও। (মুসলিম, ৪/২০২৫, হা- ২৬২৫)

حديث أبي هريرة أن النبي -صلى الله عليه وسلم- قال: “يَا نِسَاء المُسْلِماتِ لاَ تَحْقِرنَّ جارَةٌ لِجارتِهَا ولَوْ فِرْسِنَ شاةٍ” (أخرجه البخاري، كتاب الأدب، باب: لا تحقرن جارة لجارتها (৮/১০)، رقم: (৬০১৭)، ومسلم، باب الحث على الصدقة ولو بالقليل ولا تمتنع من القليل لاحتقاره (২/৭১৪)، رقم: (১০৩০))
হযরত হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: “হে মুসলিম রমণীগণ! কোন প্রতিবেশী যেন অপর প্রতিবেশীর দেয়া কোন উপঢৌকনকে তুচ্ছ মনে না করে। যদিও তা একটি বকরীর সামান্য পায়াও হয়।” (বুখারী ২৫৬৬ ও মুসলিম ১০৩০)

وعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قالت: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ لِي جَارَيْنِ فَإِلَى أَيِّهِمَا أُهْدِي؟ قَالَ صلى الله عليه وسلم: إِلَى أَقْرَبِهِمَا مِنْكِ بَابًا ( رواه البخارى -২৪৫৫)
হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহা বলেন, আমি হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসুল! আমাদের দুজন প্রতিবেশী আছেন। আমি উপঢৌকন পাঠাতে চাই একজনের কাছে। এখন আমি কার কাছে পাঠাবো? আল্লাহর প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাবে বললেন, “ঐ প্রতিবেশীকে পাঠাবে, যার ঘর তোমার ঘরের অধিক নিকটে।” (বুখারী ৬০২০,২২৫৯, আবূ দাউদ ৫১৫৫)

প্রতিবেশী অমুসলিম হলেও:
عَنْ مُجَاهِدٍ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرٍو ذُبِحَتْ لَهُ شَاةٌ فِي أَهْلِهِ فَلَمَّا جَاءَ قَالَ ” أَهْدَيْتُمْ لِجَارِنَا الْيَهُودِيِّ ؟ أَهْدَيْتُمْ لِجَارِنَا الْيَهُودِيِّ ؟ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ ( مَا زَالَ جِبْرِيلُ يُوصِينِي بِالْجَارِ حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ ) .رواه الترمذي – ১৯৪৩ )
হযরত ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমার একজন ইহুদি প্রতিবেশী ছিল। যখনই তাঁর বাড়ীতে ছাগল জবাই হতো, তিনি বলতেন, আমার ইহুদি প্রতিবেশীকে কিছু গোশত দিয়ে আস (তিরমিযী, হা-১৯৪৩)।

وعن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما عن رسول الله صلى الله عليه وسلم أنه قال: خَيْرُ الْأَصْحَابِ عِنْدَ اللَّهِ خَيْرُهُمْ لِصَاحِبِهِ وَخَيْرُ الْجِيرَانِ عِنْدَ اللَّهِ خَيْرُهُمْ لِجَارِهِ ( رواه أحمد (৬৫৬৬) والبخاري في الأدب (১১৫) والترمذي(১৬৪৪) وحسنه والدارمي (২৪৩৭) وابن خزيمة (২৫৩৯) والحاكم(১৬২০) والطبري في تفسيره ৮/৩৪৫ وصححه وقال المناوي: إسناده صحيح. )
ইবনে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,“আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম সঙ্গী সে, যে তার সঙ্গীর কাছে উত্তম। আল্লাহর নিকট সেই প্রতিবেশী সর্বোত্তম, যে তার প্রতিবেশীর দৃষ্টিতে সর্বাধিক উত্তম।”(তিরমিযী ১৯৪৪, আহমাদ ৬৫৬৬, দারমী ২৪৩৭, বুখারী: আদব আল মুফরাদ-১১৫,)

عَنْ أَبِي صَالِحٍ ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ إِذَا أَنَا عَمِلْتُ بِهِ دَخَلْتُ الْجَنَّةَ , قَالَ : ” كُنَّ مُحْسِنًا ” , قَالَ : كَيْفَ أَعْلَمُ أَنِّي مُحْسِنٌ ؟ , قَالَ : ” سَلْ جِيرَانَكَ ، فَإِنْ قَالُوا : إِنَّكَ مُحْسِنٌ فَأَنْتَ مُحْسِنٌ ، وَإِنَّ قَالُوا : إِنَّكَ مُسِيءٌ فَأَنْتَ مُسِيءٌ (” .ورواه الحاكم في المستدرك رقم الحديث: ১৩৩১)
একবার এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে আরয করলেন, হে আল্লাহর প্রিয় রাসূল, আমাকে এমন একটি কাজ বলে দিন, যা করলে আমি জান্নাতে যেতে পারব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পরোপকারী হও। লোকটি আরয করলেন, আমি কিভাবে বুঝব পরোপকারী হয়েছি কি না? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমার প্রতিবেশীর কাছে জিজ্ঞেস করো সে যদি বলে যে, তুমি পরোপকারী, তাহলে তুমি পরোপকারী (হাকেম, হা-১৩৩১)।

প্রতিবেশীর প্রতি অন্য কর্তব্যগুলো হলো:
——————————————
প্রতিবেশীকে সালাম দেওয়া, তার সালামের উত্তর দেয়া, কেউ অসুস্থ হলে তার সেবা-সুশ্রুষা করা, বিভিন্ন উপলক্ষে তাকে দাওয়াত দেয়া এবং তার দাওয়াতে অংশ গ্রহণ করা, প্রয়োজনে সাহায্য করা, কোন জিনিস ব্যবহার করতে চাইলে তা দেয়া, ইত্যাদি। প্রতিবেশীর দুঃখ-কষ্টে যেমন সহমর্মিতা দেখাতে হবে তেমনি তার ভাল কোন সংবাদ যেমন-সন্তান জন্ম নিলে, তার সন্তান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে, কারো বিয়ে হলে এবং এ জাতীয় উপলক্ষে তাকে মোবারকবাদ জানানো এবং বরকতের দোয়া করতে হ
Top