♣অনুপম শাস্তি ♣

হযরত   সায়্যিদুনা   জুনাইদ    বাগদাদী   رَحْمَۃُ  اللّٰہِ   تَعَالٰی عَلَیْہِ  বলেন:     ইবনুল  কুরাইবী  رَحْمَۃُ    اللّٰہِ  تَعَالٰی  عَلَیْہِ  বর্ণনা  করেন;    একবার  আমার   স্বপ্নদোষ   হলো,  আমি তখন   গোসল   করার     ইচ্ছা     পোষণ   করলাম।   প্রচন্ড শীতের    রাত     ছিলো।      তাই    আমার    নফস    আমাকে পরামর্শ    দিলো:     “এখনও     রাতের    অনেকাংশ    বাকী আছে,  এত তাড়াতাড়ি করার কী প্রয়োজন?  সকালে প্রশান্ত মনে গোসল করে নিতে পারবে।”

আমি    তাড়াতাড়ি    আমার   নফসকে   একটি   অনুপম  শাস্তি  দেয়ার   শপথ   করলাম।   তা   হলো:  আমি  প্রচন্ড শীতের মধ্যেই কাপড় সহ গোসল করব  এবং গোসল করার    পর   কাপড়   না   নিংড়িয়ে     ভিজা    কাপড়েই  থাকব এবং শরীরেই  সে ভিজা কাপড় শুকাব,  বাস্তবে  আমি  তাই  করলাম।  যে  দুষ্ট  নফস    আল্লাহ্  তাআলার কাজে অলসতা করার জন্য  প্ররোচনা দিয়ে  থাকে তার এরূপ শাস্তিই হয়ে  থাকে।  (কিমিআয়ে  সাআদাত,  ২য় খন্ড, ৮৯২ পৃষ্ঠা)

আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর  বর্ষিত  হোক এবং  তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা   হোক।   اٰمِين  بِجا  هِ النَّبِىِّ الْاَمين   صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم اٰمِين   بِجا هِ النَّبِىِّ الْاَمين  صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم

প্রিয়      ইসলামী    ভাইয়েরা!    আপনারা    দেখলেন    তো! আমাদের          পূর্ববর্তী          বুযুর্গরা          তাঁদের          নফসের  ধোঁকাবাজীকে  দমন   করার  জন্য  কত  বড়   বড়  কষ্ট সহ্য     করেছিলেন।     বর্ণিত    ঘটনা     থেকে      সে    সকল ইসলামী ভাইদের শিক্ষা  গ্রহণ করা  উচিত, যারা  রাতে স্বপ্নদোষ   হওয়ার    পর    পরকালের    ভয়ানক    লজ্জাকে ভুলে  গিয়ে  শুধুমাত্র  পরিবারের  সদস্যদের  লজ্জায়  বা  অলসতার  কারণে গোসল থেকে  বিরত থেকে  ফযরের নামাযের     জামাআত    নষ্ট       করে।    এমনকি    আল্লাহর  পানাহ!  নামায পর্যন্তও কাযা  করে  ফেলে। যখন  কোন কারণে     গোসল   ফরয  হবে  তখনই  আমাদের  গোসল করে       নেয়া    উচিত।    হাদীস    শরীফে     বর্ণিত     আছে: “ফিরিশতারা  সে  ঘরে  প্রবেশ  করে  না,  যে  ঘরে  ছবি,  কুকুর   ও  জুনুবী   ব্যক্তি (অর্থাৎ এমন ব্যক্তি  যার উপর স্ত্রী    সহবাস     বা    স্বপ্নদোষ      বা     যৌন    উত্তেজনাবশত বীর্যপাত হওয়ার কারণে গোসল ফরয হয়েছে) রয়েছে। (সুনানে       আবু       দাউদ,        ১ম       খন্ড,        ১০৯       পৃষ্ঠা, হাদীস-২২৭)


♦গোসলের পদ্ধতি ♦

মুখে উচ্চারণ না করে প্রথমে মনে মনে এভাবে নিয়্যত করুন,   আমি   পবিত্রতা  অর্জনের  জন্য   গোসল  করছি।  তারপর উভয়   হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার    ধৌত   করুন। তারপর  ইস্তিন্জার   স্থান   যদিও  নাপাকী    থাকুক  বা  না  থাকুক, তারপর শরীরের  কোথাও  নাপাকী থাকলে  তা দূরীভূত    করুন।    অতঃপর   নামাযের    অযুর   মত    অযু  করুন।     কিন্তু    পা    ধৌত     করবেন     না।      তবে    চৌকি ইত্যাদির     উপর     গোসল     করলে     পাও     ধুয়ে     নিন।  অতঃপর    শরীরে   তৈলের     ন্যায়   পানি     মালিশ   করুন বিশেষ  করে  শীতকালে।  (এই  সময়  শরীরে  সাবানও  মালিশ করতে  পারবেন) অতঃপর তিনবার ডান কাঁধে, তিনবার বাম কাঁধে এবং তিনবার মাথা ও সমস্ত শরীরে পানি   প্রবাহিত  করুন।   তারপর   গোসলের  স্থান   থেকে সরে দাঁড়ান। অযু করার সময় যদি পা ধুয়ে না থাকেন তাহলে    এখন   পা    ধুয়ে    নিন।      গোসল   করার    সময় কিবলামুখী হবেন না। হাত দ্বারা সমস্ত শরীর ভালভাবে মেজে নিন। এমন জায়গায় গোসল করা উচিত যেখানে কারো দৃষ্টি  না   পড়ে। যদি তা  সম্ভব  না  হয় পুরুষেরা  নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত একটি মোটা কাপড় দ্বারা সতর ঢেকে   নেবে।   আর   মোটা   কাপড়   পাওয়া   না   গেলে  প্রয়োজনানুসারে  দুইটি  বা  তিনটি  কাপড়  দ্বারা  সতর  ঢেকে    নেবে।    কেননা,    গোসল    করার    সময়    পরনে  পাতলা কাপড়  থাকলে  পানি  পড়ার সাথে  সাথে   তা শরীরের   সাথে  লেগে  যায়  এবং  আল্লাহ্র  পানাহ!   হাঁটু, উরু  ইত্যাদির    আকৃতি   প্রকাশ  পায়।  মহিলাদের  জন্য তো সতর ঢাকার ক্ষেত্রে আরো বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা     প্রয়োজন।    গোসল     করার    সময়    কোন     রকম কথাবার্তা বলবেন না এবং কোন দোয়াও পড়বেন না। গোসলের  পর    তোয়ালে,   গামছা  ইত্যাদি  দ্বারা   শরীর মুছতে         কোন        অসুবিধা        নেই।         গোসলের        পর তাড়াতাড়ি কাপড়  পরিধান  করে নিন  এবং মাকরূহ সময়    না  হলে  গোসলের  পর   দু’রাকাত  নফল  নামায আদায়   করা    মুস্তাহাব।   (আলমগিরী,     ১ম     খন্ড,   ১৪ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩১৯ পৃষ্ঠা)

♠গোসলের ফরয তিনটি ♠

(১) কুলি করা, (২) নাকে পানি দেয়া, (৩) সমস্ত শরীরে পানি    প্রবাহিত   করা।   (ফতোওয়ায়ে   আলমগিরী,  ১ম খন্ড, ১৩ পৃষ্ঠা)

★ কুলি করা

মুখে সামান্য পানি নিয়ে সামান্য নড়াচড়া করে ফেলে দেয়ার   নাম   কুলি  নয়।   বরং  মুখের  ভিতরের    প্রতিটি  অংশে,   প্রান্তে  ও    ঠোঁট  হতে  কণ্ঠনালীর   গোঁড়া  পর্যন্ত প্রতিটি স্থানে পানি পৌঁছাতে হবে। একিভাবে চোয়ালের পিছনে,  গালের   ভিতরস্থ   চামড়াতে,   দাঁতের   ছিদ্র  ও  গোঁড়াতে, জিহ্বার প্রত্যেক পিঠে এবং গলার  গভীরেও পানি     পৌঁছাতে     হবে।     রোযা     অবস্থায়     না    থাকলে  গড়গড়া করাও সুন্নাত। দাঁতের ফাঁকে সুপারির দানা, বিচির  খোসা  ইত্যাদি   আটকে  থাকলে    তা   বের   করে ফেলা আবশ্যক।  তবে   বের করে  নেয়াতে যদি ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, তাহলে মাফ।  গোসলের পূর্বে    দাঁতের ছিদ্রে  খোসা   ইত্যাদি     অনুভূত  না  হওয়ার  কারণে  তা  নিয়েই নামায আদায় করা হলো কিন্তু  নামায আদায়ের পর তা অনুভূত  হলো, তাহলে  তা  বের  করে  সেখানে   পানি   পৌঁছানো   ফরয।   তবে   ঐগুলো   দাঁতের   ফাঁকে  থাকা অবস্থায় পূর্বে যে  নামায আদায় করা হয়েছিল তা শুদ্ধ  হয়ে  যাবে।  যে   পরা   দাঁত   বিভিন্ন  উপাদান  দ্বারা  জমানো হয়েছিল  বা  তার  দ্বারা বাঁধানো হয়েছিল   কুলি করার   সময়   ঐ   উপাদান   বা   তারের   নিচে    পানি    না পৌঁছলেও    মাফ।   (ফতোওয়ায়ে   রযবীয়া,    ১ম    খন্ড, ৪৩৯-৪৪০   পৃষ্ঠা।  বাহারে  শরীয়াত,   ১ম  খন্ড,  ৩১৬  পৃষ্ঠা)   গোসলে    যে   ভাবে   একবার   কুলি    করা   ফরয, অযুতে সে ভাবে তিনবার কুলি করা সুন্নাত।

★ নাকে পানি দেওয়া

তাড়াতাড়ি নাকের মাথায় সামান্য পানি লাগিয়ে নিলে নাকে   পানি   দেয়া   বলা   যায়   না   বরং   নাকের   ভিতর  যতটুকু  নরম  জায়গা  আছে  তাতে  এবং  শক্ত  হাঁড়ের  শুরু      পর্যন্ত    পানি    পৌঁছানো     আবশ্যক।     আর    সেটা  এইভাবে   হতে    পারে  যে,  নাকে   পানি   নিয়ে   নিঃশ্বাস টেনে      উপরে     নিয়েই     নাকের     সম্পূর্ণ      স্থানে       পানি পৌঁছানো।   এটা     স্মরণ   রাখবেন!   নাকের   ভিতর   চুল পরিমাণ স্থানও  যাতে অধৌত থেকে না যায়। অন্যথায় গোসল   আদায়   হবে   না।   নাকের   ভিতর   যদি   শ্লেষ্মা  শুকিয়ে যায়, তাহলে তা বের করে নেয়া ফরয। নাকের ভিতরের     লোমগুলোও     ধৌত    করা    ফরয।    (বাহারে শরীয়াত, ৪৪২-৪৪৩ পৃষ্ঠা)

★ সমস্ত শরীরে পানি প্রবাহিত করা

মাথার     চুল  থেকে   পায়ের   তালু  পর্যন্ত    সম্পূর্ণ  শরীরে প্রতিটি অংশে এবং  প্রতিটি  লোমে  পানি  প্রবাহিত করা আবশ্যক।  শরীরে কিছু স্থান এমনও আছে যেগুলোতে   সতর্কতার সাথে পানি পৌঁছানো না হলে তা শুষ্ক থেকে যায়  ফলে  গোসল  আদায়  হয়  না।  (বাহারে  শরীয়াত,  ১ম খন্ড, ৩১৭ পৃষ্ঠা)


♠গোসলের  ক্ষেত্রে  পুরুষ  ও মহিলা  উভয়ের জন্য    ২১টি সতর্কতা ♠

❃পুরুষের মাথার চুল যদি বেনী   বাঁধা   হয়,  তাহলে  তা খুলে চুলের  গোঁড়া  থেকে  আগা পর্যন্ত পানি   পৌঁছানো ফরয।    ❃   মহিলাদের   জন্য   শুধুমাত্র    চুলের     গোঁড়া  ভিজিয়ে নেয়া আবশ্যক। চুলের খোঁপা বা বেনী খোলার প্রয়োজন নেই। তবে খোঁপা যদি এমন  শক্তভাবে বাধা  হয়   যে,   তা  খোলা  ব্যতীত  চুলের  গোঁড়া  পর্যন্ত  পানি পৌঁছানো  অসম্ভব,   তাহলে  খোঁপা    খুলে   নিতে   হবে।  ❃যদি কানের দুল এবং নাকের ফুলের ছিদ্র থাকে এবং সেটা যদি বন্ধ না থাকে, তাহলে তাতে পানি  পৌছানো ফরয। অযুতে শুধু  নাকের  ফুলের ছিদ্রে এবং   গোসলে নাক  ও  কান  উভয়ের  ছিদ্রে  পানি  প্রবাহিত  করুন।  ❃  ভ্রু,  গোঁফ  ও  দাঁড়ির  প্রত্যেক  লোমের  গোঁড়া  থেকে  আগা   পর্যন্ত  এবং ঐগুলোর  নিচের  চামড়া ধৌত করা  আবশ্যক। ❃কানের প্রত্যেক অংশ এবং কানের ছিদ্রের মুখ ধৌত করতে হবে,  ❃কানের পিছনের  চুল  থাকলে তা   সরিয়ে  সেখানে  পানি  পৌঁছাতে  হবে।  ❃চিবুক  ও  গলার    সংযোগস্থলে    চেহারা    উত্তোলন    করেই    ধৌত  করতে হবে, ❃  উভয় হাত  ভালভাবে  উত্তোলন  করেই বগল ধৌত  করতে হবে, ❃ বাহুর প্রত্যেক পার্শ্ব   ধৌত  করতে হবে, ❃ পিঠের প্রতিটি অংশ ধৌত করতে হবে, ❃  পেটের  ভাঁজ  উঠিয়েই  পেট  ধৌত  করতে  হবে,  ❃  নাভীতেও   পানি   পৌঁছাতে   হবে,   যদি   নাভিতে    পানি  পৌঁছার ক্ষেত্রে সন্দেহ সৃষ্টি হয় তাহলে নাভিতে  আঙ্গুল ঢুকিয়েই  নাভি ধৌত করতে   হবে,  ❃   শরীরের প্রতিটি লোম গোঁড়া থেকে আগা   পর্যন্ত ধৌত  করতে হবে, ❃ উরু  ও  তল পেটের সংযোগস্থল ধৌত    করতে  হবে, ❃ বসে   গোসল   করলে   উরু   ও  গোড়ালীর  সংযোগ  স্থল ধৌত করার প্রতি  লক্ষ্য  রাখতে    হবে, ❃  বিশেষ করে  দাঁড়িয়ে        গোসল       করার       সময়        উভয়       নিতম্বের সংযোগস্থলে পানি  পৌঁছানোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে, ❃  উরুর মাংসল গোলাকার অংশে এবং  ❃ গোড়ালীর গোলাকার      অংশে     পানি    প্রবাহিত    করতে    হবে,    ❃ পুরুষাঙ্গ     ও     অন্ডকোষের     নিম্নাংশ     পর্যন্ত     এবং     ❃  অন্ডকোষের   নিচের    স্থান   সমূহ   গোড়া    পর্যন্ত   ধৌত করতে হবে। ❃ যার খতনা করা  হয়নি তার পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগের  চামড়া   যদি   উপর   দিকে    উত্তোলন   করা যায়,    তাহলে   চামড়া    উপর   দিকে   উত্তোলন    করেই পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ ধৌত করতে  হবে এবং  পুরুষাঙ্গের চামড়ার  ভিতরও  পানি   পৌঁছাতে   হবে।  (সংক্ষেপিত  বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩১৭-৩১৮ পৃষ্ঠা)

♦(পর্দানশীন) মহিলাদের জন্য ৬টি সতর্কতা ♦

(১)   ঝুলন্ত   স্তনদ্বয়কে    উত্তোলন   করেই  সেখানে   পানি প্রবাহিত করতে হবে, (২) স্তন ও পেটের সংযোগ রেখা ধৌত করতে হবে, (৩)  যোনির বাইরের  প্রতিটি  অংশ, প্রতিটি পার্শ্বের  উপর  থেকে নিচ পর্যন্ত ভালভাবে ধৌত করতে  হবে,   (৪)  যোনির  ভিতরে   আঙ্গুল    ঢুকিয়ে   তা ধৌত  করা  ফরয  নয়  বরং   মুস্তাহাব।  (৫)   হায়েজ    ও  নিফাসের   রক্ত   বন্ধ হওয়ার  পর গোসল করলে একটি পুরাতন কাপড় দ্বারা যোনি পথের ভিতর থেকে রক্তের চিহ্ন পরিস্কার করে  নেয়া  মুস্তাহাব। (বাহারে  শরীয়াত,  ১ম খন্ড, ৩১৮ পৃষ্ঠা)

নখের  সাথে  লেগে থাকে তা নখ থেকে ছাড়িয়ে  নেয়া ফরয নতুবা গোসল আদায় হবে না। তবে মেহেদীর রং থাকলে তাতে কোন অসুবিধা নেই।

♣ক্ষতস্থানের ব্যান্ডেজ ♣

ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ, পট্টি ইত্যাদি বাঁধা থাকলে এবং তা খুলতে    গেলে   ক্ষতি     বা   অসুবিধার   সম্ভাবনা   থাকলে গোসল করার সময় পট্টি বা ব্যান্ডেজের উপরই মাসেহ করলে  যথেষ্ট  হবে। অনুরূপ  শরীরে  কোন  স্থানে  রোগ বা ব্যথার কারণে পানি প্রবাহিত করা ক্ষতিকর হলে সে স্থানের   সম্পূর্ণ   অঙ্গেই    মাসেহ   করে    নিবে।   পট্টি     বা ব্যান্ডেজ   প্রয়োজনের অতিরিক্ত স্থান বেষ্টন   করে বাঁধা উচিত  নয়। কেননা,  তাতে মাসেহ শুদ্ধ   হবে  না।  যদি  প্রয়োজনের অতিরিক্ত স্থান বেষ্টন করে পট্টি বাঁধা ছাড়া উপায় না থাকে,  যেমন বাহুতে আঘাত প্রাপ্ত হলো কিন্তু গোলাকার করেই বাহুতে  পট্টি  বাঁধা হলো,  ফলে বাহুর অক্ষত  অংশও   পট্টির    আওতায়  চলে  এল    এবং   পট্টি দ্বারা  আবৃত হয়ে   পড়ল, এমতাবস্থায় পট্টি খোলা যদি সম্ভবপর হয় তাহলে পট্টি খোলেই সে অক্ষতস্থান ধৌত করা ফরয। আর যদি পট্টি খোলা অসম্ভব হয় বা সম্ভব হলেও পুনরায়  সে   রকম করে  বাঁধা  অসম্ভব  হয় এবং তাতে ক্ষতস্থানের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে তাহলে সম্পূর্ণ পট্টির     উপরই   মাসেহ    করলে    চলবে।    শরীরের    সে অক্ষত  অংশও   আর  ধৌত  করতে  হবে  না।   (প্রাগুক্ত,  ৩১৮ পৃষ্ঠা)

♦গোসল ফরয হওয়ার পাঁচটি কারণ ♦

(১) যৌন উত্তেজনার ফলে বীর্য স্বস্থান থেকে পুরুষাঙ্গ বা যোনিপথ  দিয়ে বের  হলে।   (২)  স্বপ্নদোষ  হলে  অর্থাৎ ঘুমন্ত  অবস্থায়  বীর্যপাত   হলে।  (৩)   মহিলার  যৌনাঙ্গে  পুরুষাঙ্গের  অগ্রভাগ তথা কর্তিত অংশ প্রবেশ  করালে। কামোত্তেজনা    বশত হোক বা  না হোক  এবং  বীর্যপাত হোক   বা    না  হোক  সর্বাবস্থায়   উভয়ের   উপর  গোসল  ফরয। (৪) হায়েজ তথা ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর, (৫) নিফাস তথা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যে রক্ত বের হয় তা   বন্ধ   হওয়ার    পর।   (বাহারে   শরীয়াত,   ১ম    খন্ড, ৩২১-৩২৪ পৃষ্ঠা)






♣নিফাসের প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা ♠

অধিকাংশ   মহিলাদের   মধ্যে   এটা   প্রসিদ্ধ   যে,   সন্তান  ভূমিষ্ঠ     হওয়ার       পর      মহিলারা      চল্লিশ       দিন     পর্যন্ত আবশ্যিকভাবে    অপবিত্র    থাকে।    এটা     সম্পূর্ণ     ভুল,  বিস্তারিত  ব্যাখ্যা লক্ষ্য  করুন: সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মহিলাদের    যে  রক্ত বের হয়  তাকে  নিফাস বলে। এর সর্বোচ্চ  সময়সীমা   চল্লিশ  দিন।  সন্তান  ভূমিষ্ঠ  হওয়ার  চল্লিশ  দিন  পরও  যদি   ঐ  রক্ত  দেখা  যায়   তাহলে  তা রোগ  হিসেবে  বিবেচিত  হবে।  সুতরাং  চল্লিশ দিন  পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথেই মহিলাদেরকে গোসল করে   পাক পবিত্র   হতে   হবে।  আর   যদি  চল্লিশ  দিন  পূর্ণ   হওয়ার আগেই  ঐ  রক্তস্রাব  বন্ধ  হয়ে  যায়,  চাই  সন্তান  ভূমিষ্ঠ  হওয়ার  এক    মিনিট   পরেই    বন্ধ  হোক   না  কেন,  বন্ধ হওয়ার   সাথে   সাথেই   গোসল  করে   নিতে   হবে  এবং নামায রোযা  যথারীতি   পালন করতে    হবে। আর যদি  চল্লিশ  দিনের  ভিতরে  রক্ত  একবার  বন্ধ  হয়ে  পুনরায়  আবার  দেখা   যায়,  তাহলে  সন্তান   ভূমিষ্ঠ  হওয়ার   পর থেকে শেষ রক্ত  বন্ধ হওয়ার সময় পর্যন্ত সম্পূর্ণ সময়ই নিফাসের  সময়সীমাতে গণ্য হবে। যেমন সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার   পর    দুই   মিনিট   পর্যন্ত   রক্ত    দেখা    গিয়েছিল তারপর বন্ধ হয়ে গেলো এবং সন্তানের মা গোসল করে পবিত্র     হয়ে    নামায-রোযা    ইত্যাদি    যথারীতি     পালন করতে   লাগলো।    চল্লিশ   দিন   পূর্ণ   হওয়ার     মাত্র   দুই মিনিট  বাকী ছিলো   পুনরায়  আবার   রক্ত দেখা গেলো, তাহলে পূর্ণ  চল্লিশ দিনই নিফাসের  সময়সীমাতে   গণ্য  হবে   এবং  চল্লিশ    দিন   যাবৎ  যে  নামায  রোযা  পালন করা হয়েছিল তা   সবই  বৃথা  যাবে।  সে   সময়ের মধ্যে উক্ত  মহিলা   কোন  ফরয  বা ওয়াজীব নামায  বা রোযা কাযা   দিয়ে   থাকলে   তা   পুনরায়   আদায়   করে   দিতে  হবে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া হতে সংকলিত, ৪র্থ খন্ড, ৩৫৪-৩৫৬ পৃষ্ঠা)

♥পাঁচটি প্রয়োজনীয় মাসয়ালা ♥

(১)   যৌন   উত্তেজনার  কারণে  বীর্য  স্বস্থান    ত্যাগ  করে বের   হয়নি  বরং  ভারী   বোঝা  উঠানোর কারণে বা উঁচু  স্থান  থেকে  নামার  কারণে  বা  মলত্যাগের  জন্য  জোর  দেয়ার   কারণে   বীর্য   বের হলো,  গোসল ফরয হবে না কিন্তু অযু ভেঙ্গে যাবে। (২) যদি যৌন উত্তেজনা ব্যতীত এমনিতেই বীর্যের ফোঁটা পড়ে যায় এবং  প্রস্রার সময় বা  যে  কোন  সময়  উত্তেজনা  ব্যতীত  এমনিতেই  তার  বীর্যের  ফোঁটা   বের  হয়ে  থাকে,  তাহলে  গোসল   ফরয হবে  না  কিন্তু   অযু  ভেঙ্গে   যাবে।  (৩)  যদি  স্বপ্ন  দোষ    হওয়ার  কথা মনে  আছে কিন্তু  এর  কোন  চিহ্ন কাপড়  ইত্যাদিতে দেখা গেলো না, গোসল ফরয হবে না। (৪) নামাযের   মধ্যে   যৌন    উত্তেজনার   কারণে   বীর্য  স্বস্থান ত্যাগ  করতে  অনুভব   হলো  কিন্তু   বের  হওয়ার   পূর্বেই নামায শেষ করে ফেলল,  নামায  শেষ করার   পর  বীর্য বের হলো। নামায   হয়ে যাবে  কিন্তু তার উপর   গোসল ফরয  হবে।  (বাহারে  শরীয়াত,  ১ম   খন্ড,  ৩২১-৩২২  পৃষ্ঠা)    (৫)    হস্ত    মৈথুনের    মাধ্যমে    বীর্যপাত    ঘটালে  গোসল    ফরয   হয়।    হস্তমৈথুন     করা    একটি   গুনাহের কাজ।    হাদীস    শরীফে    হস্ত    মৈথুনকারীকে    মালাঊন  (অভিশপ্ত)  আখ্যায়িত   করা   হয়েছে।    (আমালী   ইবনে বুশরান,  ২য়  খন্ড, ৫  পৃষ্ঠা, নম্বর- ৪৭৭।    হাশিয়াতুত  তাহতাবী     আলা   মারাকিউল   ফালাহ,   ৯৬    পৃষ্ঠা)   হস্ত মৈথুনের   দ্বারা  পুরুষত্ব   দূর্বল  হয়ে  পড়ে,  ফলে  মানুষ বিবাহের  যোগ্যতা  হারিয়ে  ফেলে   এবং   বিবাহ  করতে ভয় পায়।

♣হস্ত মৈথুনের শাস্তি♣

আ’লা   হযরত,  ইমামে  আহলে   সুন্নাত,  মাওলানা  শাহ আহমদ রযা    খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی   عَلَیْہِ  এর খেদমতে আরয করা  হলো: এক ব্যক্তি হস্ত মৈথুন করে,  সে এই খারাপ   অভ্যাস   থেকে    বিরত  থাকে  না।  প্রত্যেকবার  তাকে বুঝানো হয়েছে, এখন  আপনি বলুন, তার হাশর কিরূপ হবে এবং তাকে সে অভ্যাস থেকে মুক্তি লাভের জন্য কি দোয়া পড়তে হবে?

আ’লা হযরতের জবাব: সে গুনাহগার ও অপরাধী।  সে কাজ    বারবার  করার  কারণে  কবীরা   গুনাহকারী  এবং ফাসিক        সাব্যস্ত        হবে।        হাশরের        ময়দানে        হস্ত  মৈথুনকারীরা   গর্ভিত  হাত  নিয়ে   উঠবে।  ফলে  বিশাল জনসম্মুখে  তাদের    অপদস্ত  হতে  হবে।  যদি   তারা   এ কাজ   থেকে   তাওবা   না   করে,   আর   আল্লাহ   তাআলা  যাকে   ইচ্ছা   শাস্তিও   দিতে   পারেন   এবং     যাকে   ইচ্ছা ক্ষমাও    করে   দিতে   পারেন।   এ  অভ্যাস  থেকে  মুক্তি  লাভের    জন্য  হস্ত  মৈথুনকারী ব্যক্তিদের সর্বদা لَا حَوْل শরীফ   পাঠ    করা   উচিত।   যখন   শয়তান     তাদের    এ খারাপ    কাজের    প্রতি   প্ররোচিত   করবে,   তখন   সাথে সাথে আল্লাহ  তাআলার প্রতি ধ্যানমগ্ন হয়ে অধিকহারে لَا    حَوْل    শরীফ    পাঠ    করবে।     সর্বদা     পাঁচ      ওয়াক্ত  নামাযের ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে। ফযরের নামাযের পর   নিয়মিত  সূরায়ে  ইখলাস পাঠ করবে।  وَ اللهُ  تَعَالٰی اَعْلَمُ  (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২২তম খন্ড, ২৪৪ পৃষ্ঠা)

শাজরায়ে  আত্তারীয়্যার  ২১  পৃষ্ঠাতে  উল্লেখ  আছে:  যে  ব্যক্তি প্রতিদিন  ফযরের  নামাযের     পর এগারবার সূরা ইখলাস  পাঠ  করবে,  শয়তান  তার  সৈন্য  সামন্ত   দ্বারা  গুনাহ  করানোর  শত  চেষ্টা    করলেও  তার   দ্বারা   গুনাহ করাতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজ ইচ্ছায় গুনাহ না করে।

♣প্রবাহিত পানিতে গোসল করার পদ্ধতি ♣

যদি প্রবাহিত  পানি যেমন    সমুদ্রের পানি,   নদীর পানি  ইত্যাদিতে   গোসল করলে  কিছুক্ষণ  পানিতে  ডুব দিয়ে থাকলে তিনবার ধৌত  করা,  ধারাবাহিক, অযু  ইত্যাদি সুন্নাত     আদায়     হয়ে     যাবে,     তিনবার     ধৌত     করার  প্রয়োজন  নেই। আর যদি পুকুর ইত্যাদির বদ্ধ পানিতে গোসল করা হয় তাহলে তিনবার ডুব দিলে বা তিনবার স্থান   পরিবর্তন   করলে   তিনবার   ধৌত    করার    সুন্নাত  আদায় হয়ে যাবে।

রাসুলুল্লাহ    صَلَّی     اللّٰہُ    تَعَالٰی    عَلَیْہِ    وَاٰلِہٖ    وَسَلَّم   ইরশাদ করেছেন:     “যে  ব্যক্তির নিকট  আমার আলোচনা হলো আর  সে  আমার  উপর   দরূদ   শরীফ  পাঠ  করলো   না, তবে সে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কৃপণ  ব্যক্তি।” (আত্  তারগীব ওয়াত্ তারহীব)

বৃষ্টির   পানিতে   (নল    বা     ফোয়ারার   নিচে   দাঁড়ানো) প্রবাহিত    পানির    মধ্যে    দাঁড়ানোর    হুকুমের    মতো।  প্রবাহিত  পানিতে   অযু  করলে   কিছুক্ষণ   অঙ্গ    পানিতে ডুবিয়ে  রাখলে  তিনবার  ধৌত   করা   হয়ে  যাবে।   আর স্থির   পানিতে   অযু    করলে     অঙ্গকে    তিনবার   পানিতে ডুবালে তিনবার ধৌত করার (সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে) ।  (বাহারে শরীয়াত,  ১ম  খন্ড,   ৩২০ পৃষ্ঠা)  যেখানেই  অযু  বা  গোসল   করে  থাকুক  না  কেন   তাকে  অবশ্যই কুলি করতে হবে এবং নাকে পানি দিতে হবে।

♣ফোয়ারা (প্রস্রবন) প্রবাহিত পানির হুকুমের অন্তর্ভূক্ত ♣

ফতোওয়ায়ে     আহলে    সুন্নাতে    (অপ্রকাশিত)    উল্লেখ   আছে:     ফোয়ারার     (প্রস্রবনের)     নিচে      গোসল      করা প্রবাহিত পানিতে  গোসল করার মতো। সুতরাং  অযু ও গোসল  করতে  যতটুকু  সময়ের  প্রয়োজন  হয়  ততটুকু  সময়  পর্যন্ত  ঝর্ণা ধারার  নিচে   অবস্থান করলে তিনবার ধৌত করার সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। অতঃপর “দুররে মুখতার”এ উল্লেখ  আছে:  যদি  কেউ  প্রবাহিত পানিতে  বা    বড়  হাউজে  বা  ঝর্ণাধারার   নিচে   অযু  ও   গোসল করার সময় পর্যন্ত অবস্থান করে তাহলে  সে  পূর্ণ সুন্নাত আদায় করল।  (দুররে   মুখতার, ১ম  খন্ড, ৩২০  পৃষ্ঠা)


♦♦♦

স্মরণ রাখবেন! গোসল এবং অযুতে কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া আবশ্যক।

ফোয়ারাতে গোসল করার সময় সতর্কতা অবলম্বন

যদি       আপনার       ঘরের       গোসল       খানায়         ফোয়ারা  (SHOWER)  থাকে, তাহলে ফোয়ারামুখী হয়ে উলঙ্গ অবস্থায় গোসল করার সময় ভালভাবে লক্ষ্য   রাখবেন, যেন  আপনার  মুখ  বা  পিঠ  কিবলার  দিকে  না  থাকে।  ইস্তিঞ্জাখানাতেও অনুরূপ সতর্কতা   অবলম্বন   করবেন। কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ থাকার অর্থ হলো ফোয়ারার ৪৫০    ডিগ্রী    কোণের   ভিতরে     গোসল   করা,   সুতরাং সতর্কতা   অবলম্বন  করতে  হবে   যেন  ফোয়ারার  ৪৫০ ডিগ্রী   কোণের    বাইরে   থেকে   গোসল    করা    না    হয়। অনেক লোক এ মাসয়ালা সম্পর্কে অজ্ঞ।

W.C  কমোট  (ওয়াটার  ক্লজেট)  এর   দিক  ঠিক  করে  নিন

দয়া করে নিজ ঘরের W.C কমোট  ও ফোয়ারার  দিক যদি   তা  ভুল  স্থাপিত  হয়,   তাহলে  তা  সংশোধন  করে নিন।  সর্বাধিক সতর্কতা অবলম্বনের পন্থা হলো, W.C  কমোট এর মুখ কিবলার  দিক হতে ৯০০ ডিগ্রী কোনে স্থাপন করা অর্থাৎ যেদিকে নামাযে সালাম ফিরানো হয় সেদিকে স্থাপন করা। রাজ মিস্ত্রিরা সাধারণত  নির্মাণের সহজতা ও মানান সইয়ের জন্য কিবলার আদবের প্রতি তোয়াক্কা  করে  না।  মুসলমানদের  ঘর  নির্মানের  সময়  ঘরের    অনাবশ্যক     চাকচিক্যের    পরিবর্তে   পরকালের প্রকৃত   সৌন্দর্যের  প্রতি   লক্ষ্য  রেখে    ঘর     নির্মাণ  করা উচিত



Top