হাদিস শরীফ নং-০১
ইমাম আবূ দাউদ(রা.) মুহাম্মদ ইবনে আলা,ইবনু আবি যিয়াদ,যায়দ ইবনে হুুব্বাব,আবদুর রহমান ইবনে ছাওবান,ছাওবান ও মাকহুল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম এর সূতে বর্ণনা করেন- হযরত মাকহুল( রা.)বলেন, আমাকে হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর সঙ্গী আবূ আয়েশা(রা.) জানিয়েছেন যে, হযরত সাঈদ ইবনে আ’স (রা.) হযরত আবূ মূছা আশ’আরী (রা.) এবং হযরত হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান(রা.) এর নিকট জিজ্ঞেস করলেন যে, রাসুলে করীম সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহা এবং ঈদুল ফিতরের নামাজ কিভাবে তাকবীরে তাহরীমা বলতেন।তখন আবূ মূছা আশ’আরী (রা.) বললেন- রাসুলে করীম সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাজার নমাজের মত চার তাকবীর বলতেন।তখন হুযায়ফা ইবনে ইয়ামন( রা.) বলেন- আবূ মূছা আশ’আরী(রা.) সত্য কথা বলেছেন।তখন হযরত আবূ মূছা আশ’আরী(রা.) বললেন- এভাবে আমিও ঈদের নামাজে তাকবীর বলতাম যখন আমি বসরায় আমীর হিসেবে নিয়োজিত ছিলাম।হযরত আবূ আয়েশা(রা.) বলেন,হযরত সাঈদ ইবনে আ’স( রা.)যখন হযরত আবূ মূছা আশ’আরী(রা.) কে জিজ্ঞেস করছিলেন তখন আমি উপস্থিত ছিলাম।
★আবূ দাউদ শরীফঃ ১ম খন্ড,১৬৩পৃঃ,মাকতাবা-ই- রহিমীয়া, দেওবন্দ কর্তৃক মুদ্রিত।প্রকাশকাল ১৩৯২ হিজরী।

উল্লেখ্য,
প্রত্যেক রাকাতে চার তকবির অর্থাৎ প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরীমা ও অতিরিক্ত তিন তাকবীর ১+৩=৪।
দ্বিতীয় রাকাতে কেরাতের পর অতিরিক্ত তিন তাকবীর ও রুকুর তাকবীর ৩+১=৪।
★*উপরোক্ত হিসেব পেশ করেছেন ইমাম হাফেজ ইবনে হাজর আসকালানী(রা.) তিনি বলেন,
“অর্থাৎ চার তাকবীর থেকে বুঝা যাচ্ছে এতে তাকবীরে তাহরীমাও অন্তর্ভুক্ত।আর অতিরিক্ত হল তিন তাকবীর।
★★মিরকাত শরহে মিশকাতঃ৩য় খন্ড,৫৪৭পৃঃ।

★★হাদিস নং-০২
হযরত ইমাম আবদুর রাযযাক ইবনুল জুরাইজ, আবদুল করীম ইবনে মুখারেক,ইবরাহীম নাখয়ী, আলক্বামা ইবনে কায়স, আসওয়াদ ইবনে ইয়াজিদ ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম এর সুত্রে বর্ননা করেন-(ঈদের নামাযের) প্রথম রাকাতে রুকু এবং তাকবীরে তাহরীমা সহ পাঁচ তাকবীর।।দ্বিতীয় রাকাতে রুকু এর তাকবীর সহ চার তাকবীর।
★★মুছান্নাফে আবদির রাযযাকঃ৩য় খন্ড,পৃঃ২৯২।হাদিস নং-৫৬৮৫
আলোচ্য হাদিসে প্রথম রকাতে পাঁচ তাকবীর।তাকবীরে তাহরীমা- ১। অতিরিক্ত -৩,রুকু এর তাকবীর-১। মোট ১+৩+১=৫। দ্বিতীয় রাকাতে চার তাকবীর অতিরিক্ত ৩ ও রুকু এর ১ তাকবীর ৩+১=৪।

হাদিস নং-০৩
হযরত ইমাম ইবনু আবি শায়বা- হুশায়ম, মুজালিদ, শা’বী ও হযরত মাসরুক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম এর সুত্রে বর্ণনা করেন।হযরত মাসরুক (রা.) বলেন- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রা.) দুই ঈদের তাকবীর আমাদেরকে নয়টি শিক্ষা দিতেন।প্রথম রাকাতে পাঁচ তাকবীর এবং শেষ রাকাতে চার তাকবীর।আর তিনি দুই রাকাতে কেরাতের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেন।অর্থাৎ প্রথম রাকাত শেষ হতো কেরাতের মাধ্যমে আর দ্বিতীয় রাকাত শুরু হতো কেরাতের মাধ্যমে।
★মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বাঃ২য় খন্ডঃপৃ-১৭২। হাদিস নং-৫৭৪৬।

আলোচ্য হাদিস শরীফে বর্ণিত নয় তাকবীরের হিসাব নিম্নরুপঃ
প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরীমা এর -১, অতিরিক্ত এর -৩,রুকু এর-১। ১+৩+১=৫।

দ্বিতীয় রাকাতে অতিরিক্ত এর-৩, রুকু এর-১,।
৩+১=৪

আলোচ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণ হল ঈদের নামাজে তাকবীর সর্বমোট-৬।


★হাদিস নং-০৪
হযরত ইমাম হাফেজ আবু বকর আহমদ ইবনে হোসাঈন ইবনে আলী বায়হকী(রা.)
হযরত আবু যাকারিয়া ইবনে আবি ইসহাক আলমুযাক্কী, আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইয়াকুব,মুহাম্মদ ইবনে আবদিল ওয়াহহাব, জাফর ইবনে আউন, মিস’আর মা’বাদ ইবনে খালেদ ও করদুছ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম এর সূত্রে বর্ননা করেন হযরত কুরদুছ(রা.) বলেন- হযরত সাঈদ ইবনে আ’স(রা.) ঈদুল আযহা এর পূর্বে আগমন করলেন এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ,হযরত আবূ মূসা আশ’আরী ও হযরত আবু মাসউদ আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম এর নিকট লোক পাঠিয়ে ঈদের তাকবীর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন।তখন শেষোক্ত দুইজন সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ( রা.) দিকে নিক্ষেপ করলেন।অর্থাৎ এই বিষয়ে ওনাকেই জবাব দিতে বললেন।তখন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ( রা.) বললেন- আপনি নামাজে দাঁড়াবেন,তারপর চার তাকবীর বলবেন।অতঃপর কেরাত পড়বেন এবং পঞ্চম তাকবীর তাকবীর বলে রুকু করবেন।তারপর (প্রথম রাকাত শেষ করে) দাঁড়াবেন।তৎপর কেরাত পড়বেন।অতঃপর চার তাকবীর বলবেন।চতুর্থ তাকবীর এর মাধ্যমে রুকু করবেন।
★আস সুনানুল কোবরা লিল বায়হকীঃ৩য় খন্ড, পৃঃ২৯০;২৯১
প্রথম রাকাতে চার তাকবীর বলতে ঃ তাকবীরে তাহরীমা এর-১,অতিরিক্ত এর-৩, রুকু এর-১ তাকবীর। ১+৩+১=৫।
দ্বিতীয় রাকাতে কেরাতের পর চার তাকবীর হলঃ অতিরিক্ত এর-৩, রুকু এর-১ তাকবীর।
৩+১=৪।
এতেও প্রমাণিত হয় ঈদের নামাযে অতিরিক্ত ৬টি তাকবীর।।

হাদিস নং-০৫
হযরত ইমাম আবুল কাছেম তাবরানী(রা.) তাঁর সংকলিত “আলামু’জামুল কবীর” এ হযরত কুরদুছ (রা.) এর সূত্রে বর্ণনা করেন- তিনি বলেন ওয়ালীদ ইবনে ওকাবা লোক পাঠালেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রা.),হযরত হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান,হযরত আবূ মুছা আশ’আরী ও হযরত আবূ মাসউদ আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম এর নিকট এশার পরে – অতঃপর বললেন নিশ্চয় এটা মুসলমানদের ঈদ।অতএব, ঈদের নামাজ কিভাবে পড়বে।তখন উপস্থিত সবাই বললেন আবু আবদির রহমান অর্থাৎ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রা.) কে জিজ্ঞেস করুন।তখন তাঁর নিকট প্রশ্ন করলেন।অতঃপর তিনি বললেন- ইমাম সাহেব দাঁড়াবেন এবং চার তাকবীর বলবেন।তারপর সূরা ফাতেহা পাঠ করবেন এবং মুফাচ্ছাল সুরা-(সূরা বাকারা থেকে হুজুরাত পর্যন্ত তেওয়ালে মুফাচ্ছাল, হুজুরাত থেকে ‘লামইয়াকুন’ আওছাতে মুফাচ্ছাল, লাইমইয়াকুন থেকে শেষ পর্যন্ত ক্বেছারে মুফাচ্ছাল) থেকে একটি পাঠ করবেন।তারপর শেষ রাকাতে চার তাকবীর বলে রুকু করবেন।ঐগুলো মোট ৯ তাকবীর দুই ঈদের নামাজে উপস্থিত কেউ এ বক্তব্য কে অস্বীকার করলেন না।
★তোহফাতুল আহওয়াযী শরহে জামে-এ- তিরমিযী, :১ম খন্ড,পৃঃ ৩৭৮
প্রকাশকঃদারুল কিতাবিল আরবী,বৈরুত,লেবানন।
কৃতঃ আহলে হাদিসের বিশিষ্ট আলেম মৌঃ আবদুর রহমান মুবারক পুরী

প্রথম রাকতে চার তাকবীর বলতে ঃতাকবীর তাহরীমা এর -১।অতিরিক্ত এর-৩। ১+৩=৪
দ্বিতীয় রাকাতে চার রাকতে বলতে বলতে- অতিরিক্ত এর-৩ তাকবীর ও রুকুর ১ তাকবীর। ৩+১=৪।এতে প্রমাণিত হল ঈদের নামাজে অতিরিক্ত তাকবীর হল ৬ টি।

৬ তাকবীরের অধিক তাকবীর সম্মিলিত হাদিস সমুহঃ
——————————————
একঃ
হযরত আয়েশা সিদ্দীকা(রা.) থেকে বর্ণিত আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ কর্তৃক সংকলিত।এতে প্রথম রাকতে ৭ তাকবীর, দ্বিতীয় রাকতে ৫ তাকবীর।উক্ত হাদিসের সনদ বা বর্ণনা সূত্রে আবদুল্লাহ ইবনে লেহইয়া সম্পর্কে হাদিস বিশারদগণের বিরুপ মন্তব্য বিদ্যমান।তদুপরি এর সনদে এদতেরার বিদ্যমান।অর্থাৎ বর্ণনাকারীর নামে সমস্যা রয়েছে।
ইমাম দারে কুতনী(রা.) তাঁর “ইলাল” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
ইমাম তিরমিযী(রা.) তাঁর “আল ইলালুল কোবরা” কিতাবে বলেছেন যে ইমাম বোখারী(রা.) উক্ত হাদিসটিকে “দয়ীফ” বলে মন্তব্য করেছেন।

দুইঃ
ইমাম আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ(রা.) হযরত আমর ইবনে আ’স থেকেও ১২ তাকবীর সম্পর্কে হাদিস বর্ণনা করেছেন।ঐ হাদিসের সনদে আবদুল্লাহ ইবনে আবদির রহমান তাফেয়ী নামক বর্ণনাকারী বিদ্যমান।তাকে ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মুঈন”দয়ীফ” বলে মন্তব্য করেছেন।
ইমাম নাসাঈ ও ইমাম আবু হাতেম(রা.) উভয়ে তায়েফী কে হাদিস বর্ণনায় শক্তিশালী নয় বলে মন্তব্য করেছেন।
★তোহফাতুল আহওয়াযী শরহে জামে তিরমিযীঃ১ম খন্ড,পৃঃ ৩৭৭।
Top